নীড়বৃষ্টি
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
১৮.
আজ সকালে নামাজের জন্য ঘুম থেকে উঠতেই খুব অদ্ভুৎ একটা দৃশ্যর সাক্ষী হলেন নীলা বেগম। ছোট ছেলের রুমের লাইটটা জ্বলছে। লাইট জ্বলে থাকার রহস্য ভেদ করতে উনি অর্ধেক চাপিয়ে রাখা দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দেন। চোখের সামনে দেখা দৃশ্যটা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য ঠেকে না। নীলা বেগম ঘাবড়ে যান। দ্রুত নিজের রুমে ফিরে গিয়ে ওযু করতে উঠা স্বামীকে টেনে আনেন ছেলের রুমে।
নিতুন তখন সোজা হয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ট্যাবে ম্যাথের একটা চ্যাপ্টারের উপর ওয়ান শট ক্লাস করছিল। আচানক আম্মু-আব্বুকে এভাবে হুমড়ি খেয়ে রুমে প্রবেশ করতে দেখে সে নিজেও ঘাবড়ে যায়। চমকে গিয়ে প্রশ্ন করে,
“তোমরা?”
নীলা বেগম জিজ্ঞেস করেন,
“কী করছিস তুই?”
“আমি তো অনলাইন ক্লাসে ম্যাথের একটা চ্যাপ্টারের বেসিক ক্লিয়ার হচ্ছিলাম। তোমরা এভাবে রুমে এলে কেন? কী হয়েছে?”
কামরুজ্জামান সাহেবও স্ত্রী’র মতই তাজ্জব হয়ে ছেলেকে দেখছেন। তবে তিনি এতো নাটকীয়তা করলেন না। বরং স্বাভাবিক স্বরে জিজ্ঞেস করেন,
“এতো সকালে কীভাবে উঠলে তুমি? আবার বসে বসে ক্লাসও দেখছ! হুট করে এই পরিবর্তন কেন?”
নিতুন বিরক্ত হয়। পড়াশোনা না করলেও তাকে কথা শুনতে হয়। এখন পড়তে বসার পরও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সে আসলে যাবেটা কোথায়? মনের বিরক্তি চেপে গিয়ে নিতুন জবাব দেয়,
“মিস বুঝিয়ে গিয়েছে পড়াশোনার ব্যাপারে।”
অয়নও তখন কেবল নামাজের জন্য উঠেছিল। মা বাবার কণ্ঠ শুনে সে রুম থেকে বেরিয়ে ভাইয়ের রুমের দরজার কাছে আসতেই দেখে অসচরাচর দৃশ্যটা। সে-ই সঙ্গে শুনতে পায় নিতুনের বলা কথাটাও। মিস বুঝিয়ে গিয়েছে? স্নেহার বুঝ মেনে নিতুন এই ভোর বেলায় পড়তে উঠেছে?
নিতুন ততক্ষণে বলে চলেছে,
“পা-টা ঠিক হয়ে গেলে নামাজ ধরার চেষ্টা করবো। এখন থেকে একটু মন দিয়ে পড়ারও চেষ্টা করবো।”
নীলা বেগম যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না ছেলের কথা। তিনি প্রশ্ন করে বসেন,
“এসব করার বিনিময়ে কি নতুন গেমিং স্টেশন লাগবে না-কি?”
নিতুন মাথা নেড়ে বলে,
“না। আমি বিনিময়ে কিছু নিলে ব্যাপারটা ইভেন হবে না। তোমরা আমার ফিউচারের জন্য অনেক কিছু ইনভেস্ট করছো। বিনিময়ে আমার দায়িত্ব একটা ভালো রেজাল্ট করা। তাহলে ব্যাপারটা ব্যালেন্সড হবে।”
অয়ন জিজ্ঞেস করে বসে,
“এটা কি তোর মিস বলেছে?”
নিতুন মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানায়। অয়নের স্নেহার প্রতি ভালো লাগাটা দুম করে আরেকটু বেড়ে যায়। আরো একবার মুগ্ধ হয় সে। স্নেহার প্রতি নীলা বেগম এবং কামরুজ্জামান সাহেবও খুশি হয়েছেন। মেয়েটা কীভাবে নিতুনকে বুঝিয়েছে তা জানার আর আগ্রহ নেই তাদের। ছোট ছেলের যে সুবুদ্ধি হয়েছে তাতেই উনারা খুশি।
__________
উত্তপ্ত দুপুরে একটা ভ্যানের সামনে দাঁড়িয়ে নিষ্পলক দৃষ্টিতে নীল রঙা গেটের দিকে তাকিয়ে আছে স্নেহা। হাতে তার একটা ঠান্ডা আখের শরবতের গ্লাস। ছোট ছোট চুমুক বসাচ্ছে সে কিছুক্ষণ পর পর। তার ভঙ্গিমা দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে শরবত খাওয়া তার মূল উদ্দেশ্য নয়। তার উদ্দেশ্য হলো মূলত কিছু একটার বাহানায় এখানে দাঁড়িয়ে সামনের গেটে নজর রাখা।
সময় গড়ায়। তিন মিনিটের মাথায় গেটের ভেতর থেকে একে একে সাদা, নীল রঙের ইউনিফর্ম পরিহিত বাচ্চাদের বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। স্নেহা নড়েচড়ে উঠে। হাতে থাকা গ্লাসের শরবত সম্পূর্ণটা এক চুমুকে শেষ করে দ্রুত। অতঃপর ওড়নাটা তুলে মাথায় দিয়ে সামান্য মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকে পরিচিত মুখ খুঁজতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই গেট দিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় শায়নাকে। স্নেহা কেবল দূর থেকে বাচ্চাটাকে দেখেই স্থির রয়। ভুল করেও এক কদম সামনে বাড়ায় না।
গেটের বাহিরে অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকা বোরকা পরিহিত মোমিনা বেগম ততক্ষণে মেয়ের হাত ধরে বাচ্চাদের ভীড় ঠেলে বেরিয়ে এসেছে। স্কুলের বাহিরেই রাস্তায় সারি ধরে বসা খাবারের স্টলগুলোর একটি থেকে শায়নাকে কুলফিও কিনে দেয়। অতঃপর মা মেয়ে একসঙ্গে একটা রিকশায় উঠে চলে যায়। স্নেহা সম্পূর্ণটা দৃষ্টি দেখে নির্বাক এবং অনুভূতিহীন ভঙ্গিতে। খেয়ালও করে না কখন তার পাশে এসে কেউ দাঁড়িয়ে শরবত অর্ডার দিয়ে খেতে শুরু করেছে। সম্বিত ফিরে পুরুষালি কণ্ঠ শুনে,
“নিজেকে অনুভূতিহীন দেখাতে ভালো লাগে?”
স্নেহা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। দেখে বাঁশের কঞ্চির ন্যায় দেহ গড়নের একটা যুবক তার পাশে দাঁড়িয়ে শরবতের গ্লাসে চুমুক বসাচ্ছে। স্নেহা চেহারাটা এক নজর দেখে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক স্বরে শুধায়,
“লাফাঙ্গা?”
যুবকটা কৌতুক মাখা হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“আমাকে দেওয়া ডাকনাম? ভালো লাগে ডাকতে?”
স্নেহার আচরণে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। সে কোনো উত্তর দেয় না। সাধারণ ভাবেই রাস্তার পাশ ধরে হাঁটা শুরু করে। লাফাঙ্গা ছেলেটা যেন সাহস পায় এতে। সে-ও স্নেহার পিছু নেয়। এক কদম দূরত্ব রেখেই স্নেহার পিছন পিছন হাঁটতে থাকে। লম্বা পথ ধরে হেঁটে স্নেহার মধ্যে ক্লান্তি নেই। তবে লাফাঙ্গাটা কিছুটা হাঁপিয়ে গিয়েছে গরমে। বাইকটা নিয়ে আসলে বোধহয় ভালো হতো। আরো কিছুদূর যেতেই হুট করে লাফাঙ্গা ছেলেটার কদম থেমে যায়। আর হিম্মত থাকে না স্নেহার পিছু নেওয়ার। কারণ স্নেহা ততক্ষণে সাভার মডেল থানার গেট পেরিয়ে থানার সীমানার ভিতরে চলে গিয়েছে।
পুরোটা রাস্তায় ঘুরে না তাকানো স্নেহা এই পর্যায়ে থেমে পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়ায়। দু-হাত বুকের কাছে ভাজ করে অত্যন্ত শীতল দৃষ্টি মেলে দেখতে থাকে গেটের ওপারে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা লাফাঙ্গা ছেলেটাকে। লাফাঙ্গাটাকে প্রথমে বিস্মিত মনে হলেও কিছুক্ষণের মধ্যে বাঁকা হাসতে দেখা যায়। দু হাত প্যান্টের পকেটে গুজে সে-ও স্নেহার পানে তাকিয়ে। স্নেহা মনে মনে একশো একটা বাংলা গালি দেয় লাফাঙ্গাটাকে। বিরক্তি মাত্রারিক্ত বোধ করলে অস্ফুটে উচ্চারণও করে উঠে,
“চ্যাংড়া কোথাকার!”
ঠিক সে-ই মুহূর্তেই পরিচিত স্বর শোনা যায়,
“আপনি এখানে, মিস?”
লাফাঙ্গার থেকে চোখ ফিরিয়ে পাশ ফিরে তাকাতেই পুলিশের পোশাকে অয়নকে দেখতে পায় স্নেহা। অয়নের চোখে মুখে কিছুটা খুশি, বিস্ময়তা এবং উদ্বেগ একইসঙ্গে দেখতে পেয়ে সে বিরক্ত হয়। এই লোক এমন আজিব রিয়েকশন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেন? জবাব না দিয়ে গেটের দিকে তাকাতেই স্নেহা দেখতে পারে ওই অসভ্য ছেলেটা আর নেই। সম্ভবত পুলিশকে দেখতে পেয়ে কেটে পড়েছে। স্নেহাকে এভাবে গেটের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অয়ন প্রশ্ন করে,
“কোনো অসুবিধা হয়েছে?”
স্নেহা রাখঢাক না করে স্বাভাবিক গলায় জবাব দেয়,
“একটা লাফাঙ্গা পিছু পিছু আসছিল।”
অয়নকে সঙ্গে সঙ্গে সরব দেখায়। দ্রুত গেটের দিকে এগিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। চোখে রাগ এবং কণ্ঠে উদ্বেগ,
“পিছু পিছু মানে! কে? কোনটা…”
অয়ন পুরো কথা শেষ করতে পারে না। না পারে সামনে এগিয়ে যেতে। পিছন থেকে একটা ঘর্মাক্ত হাত ততক্ষণে তার ডান হাতের কনুইয়ের জায়গাটা আঁকড়ে ধরে তাকে বাঁধা দিয়ে ফেলেছে। পুলিশ অয়নের পাশাপাশি, প্রেমিক অয়নও ব্যথা সয়ে নেওয়ার অসীম ক্ষমতা রাখে। তাই হাতের ছিলে যাওয়া অংশে এই অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ পেয়েও সে জ্বলুনিটা নীরবে গিলে নেয়। মুখ দিয়ে একটাও টু শব্দ করে না। অয়নকে থামানোর উদ্দেশ্যে ধরা কনুইটা সেকেন্ড ছয়ের মাথায়ই স্নেহা ছেড়ে দেয়। বিরস মুখে বলে,
“নেই এখন। চলে গিয়েছে।”
অয়ন আবেগটুকু চেপে গিয়ে আপাতত কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করে,
“কোনো আজেবাজে কথা বলেছে আপনাকে? পিছু নেওয়া বাদে অন্যভাবে উত্যক্ত করেছে? আমাকে বলুন আপনি।”
স্নেহা বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে স্বাভাবিক গলায় জবাব দেয়,
“সিরিয়াস কিছু না। আমি যাই। আল্লাহ হাফেজ।”
অয়ন দ্রুত ডেকে উঠে,
“মিস?”
স্নেহা ঘুরে তাকায়। অয়ন চটপট নিজের হাতঘড়িতে সময় দেখে নিয়ে প্রশ্ন করে,
“নিতুনকে পড়াতে যাচ্ছেন?”
স্নেহা মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বলে। অয়ন কিছুটা আমতা আমতা করে বলে,
“আমিও বাসায় যাচ্ছি। আপনি চাইলে একসঙ্গে যাওয়া যেতে পারে।”
স্নেহা চোখ কুচকে তাকিয়ে রয়। একসঙ্গে যাওয়ার অফার করা হলো তাকে? সিরিয়াসলি? অয়নের এহেন প্রস্তাবে স্নেহা বিরক্ত হয়। কোনো উত্তর না দিয়ে গেটের বাহিরে যেতে যেতে বিড়বিড়িয়ে উঠে,
“বেডা জাত।”
ওদিকে অয়ন বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে। স্নেহার নিরুত্তর চলে যাওয়াটা যে প্রত্যাখ্যানের সমান সেটা সে বুঝতে পেরেছে। মেয়েটা তাকে গায়ে পড়া স্বভাবের ব্যাটা লোক ভাবলো কি-না কে জানে! কিন্তু অয়ন তো শুধু স্নেহার কথা ভেবেই সাথে যাওয়ার অফার করেছিল। হতাশ ভঙ্গিতে অয়ন নিজেই নিজেকে বলতে থাকে,
“কী ভেবেছিলি, অয়ন? নিতুনের মিস তোর চিন্তার তোয়াক্কা করে নাচতে নাচতে তোর বাইকের পিছনে উঠে বসবে? নিজের মুখ সামলে চল ব্যাটা, প্রেমে পড়ে হাত-পা ভাঙা চলে, তবে অ-প্রেমিকার হাতে মাইর খেয়ে হাত-পা ভাঙা লজ্জাজনক হয়ে যায়।”
__________
নিতুনকে কিছুটা শুধরাতে দেখে স্নেহার হাঁফ ছেড়ে স্বস্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে শান্তি পাচ্ছে না। টেবিলের উপর রাখা ফোনে একটু পরপরই নোটিফিকেশনের টুংটাং শব্দ বেজে উঠছে। স্নেহার যদি টাকার মায়া না থাকতো তাহলে সে এক্ষুণি নিজের রাগ মেটাতে ফোনটাকে তুলে আছাড় মারতো। কিন্তু যেহেতু তার মনে টাকার প্রতি মায়া আছে, তাই সে ফোনটাকে আছাড় মারে না। বরং সামনে খুলে রাখা বইটাকে বন্ধ করে ফোনটা হাতে নেয়। হোয়াটসঅ্যাপে অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে একের পর এক ম্যাসেজ এসে ভিড়ছে। প্রতিটা ম্যাসেজেই স্নেহার প্রতি প্রবল খেয়াল প্রকাশ পাচ্ছে।
নাম্বারটা কার স্নেহার অজানা নয়। বিগত দু তিনদিনে নিজের চারিপাশে একটু খেয়াল রেখে সে জানতে পেরেছে যে এই নাম্বারের মালিক অর্থাৎ লাফাঙ্গা ছেলেটা তারই ইউনিভার্সিটিরই একজন স্টুডেন্ট। স্নেহার সঙ্গে একই ব্যাচের হলেও ডিপার্টমেন্ট ভিন্ন। বাতাসে ভেসে স্নেহার কানে লাফাঙ্গা আখ্যায়িত ছেলেটার নামও এসেছে – আকাশ। তিনদিন পূর্বে শায়নার স্কুলের বাহিরে দেখা দেওয়ার পর থেকে এই অসভ্য আকাশের সাহস যেন কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। ব্লক করলে নাম্বার বদলে স্নেহাকে বিরক্ত করছে। ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনে স্নেহা খেতে বসলে তার বিল আড়াল থেকে মিটিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসে চলার পথে হুটহাট কিছু ছেলেপেলে তাকে ভাবী ডেকে সালাম ঠুকছে।
মোটকথা, ছেলেটা পুরোদমে স্নেহার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিয়ে চলেছে। এটাকে যত্ন বলে? এটাকে প্রেম বলে? এটাকেই কি ছায়া হওয়া বলে? স্নেহা তবে এসব অনুভব করতে পারছে না কেন? উল্টো বিরক্তি এবং জঘন্য রাগ কেন অনুভব করছে সে? কেন এতটা অস্বস্তি অনুভব করছে সে? এই-যে এই ছেলেপেলেগুলো এসব কাজ করে একটা মেয়েকে বুঝাতে চায় যে তারা সে-ই মেয়েটাকে ভালোবাসে, এতে সে-ই মেয়েটা কেমন অনুভব করে তা কখনো জানতে চায় তারা? স্নেহা খুব শক্ত, কিন্তু এই মুহূর্তে সে খুব অসহায় অনুভব করছে। এরকম ছেলেদের সামনে স্নেহা যতই কঠিন সাজুক না কেন, মনে মনে সে ভয় পায়। হাজার হোক এরা তো পুরুষ। এদের মন ক্ষুণ্ন হলে কখন একটা মেয়ের সর্বনাশের নেশায় মতে উঠবে তার তো কোনো ঠিক নেই। এই একটা ক্ষেত্রেই তো স্নেহারা ভয়ে ভেতরে ভেতরে গুমরে মরে। না এদের বিরুদ্ধে কঠিন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়, আর না এদের এসব ফাতরামি সয়ে যাওয়া যায়।
তার উপর স্নেহা জানতে পেরেছে এ-ই ছেলেটা কোন এক এমপির শালা হয়। সে-ই হিসেবে আলাদা দাপট নিয়েই সবসময় ঘুরে বেড়ায়। বেজার মুখে স্নেহা ভাবনা থেকে বেরিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে প্রবেশ করে। আননোন নাম্বার থেকে ভীড় জমানো ম্যাসেজগুলোয় নজর বুলায় সে। সর্বশেষ ম্যাসেজটা এরূপ,
“আমি যে তোমার থেকে বয়সে ছয় মাসের ছোট এই ব্যাপারটা কি কোনোভাবে জানতে পেরেছ? এই কারণে আমার প্রতি অনীহা তোমার? লোকের উদ্ভট কথার ভয় পাচ্ছো?”
স্নেহা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এই নাম্বারটাও ব্লক করে দেয়। ছেলেটা খুবই বেয়াদব, নিজ থেকেই আপনি ছেড়ে তুমিতে নেমে গিয়েছে। মনে মনে স্নেহা জবাব দেয়,
“লোকের উদ্ভট কথাকে নয়, তোকে ভয় পাচ্ছি। তোদের মতো রক্তগরম চ্যাংড়ারা তো আবার প্রত্যাখ্যান হজম করতে পারিস না। নিজেদের মনের ঝাল কখন কীভাবে মেটানোর ফন্দি আঁটবি তার ঠিক নেই। আল্লাহর ওয়াস্তে একটু শান্তি দে ভাই। ছাড় আমার পিছু।”
মনে দুঃশ্চিন্তা নিয়ে স্নেহার আর কিছু পড়া হয় না। টেবিলটা ছেড়ে বিছানায় গিয়ে গায়ে ওড়না টেনে শুয়ে পড়ে। শরীরটা কেমন কাঁপছে। মনে লুকিয়ে রাখা সুপ্ত ভয় থেকে জ্বর আসছে কি-না কে জানে! খালি রুমটায় স্নেহা চোখ বুজে বিড়বিড়িয়ে উঠে,
“জ্বর, আমার থেকে দূরে থাক। আমার কপালে জলপট্টি দেওয়ার মানুষ নেই। তোর সাথে আমার বনে না।”
চলবে…
[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]