নীড়বৃষ্টি পর্ব-২১

0
4

নীড়বৃষ্টি
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
২১.

বিছানায় এক কাথ হয়ে শুয়ে আছে স্নেহা। পড়াটড়াতে মন বসছে না আজ। দুঃশ্চিন্তায় কাঠ হয়ে আছে বলা যায়। ওই আকাশের কোনো খোঁজ এখনো পায় নি সে। বেঁচে আছে না-কি মরে গিয়েছে তা-ও এখনো নিশ্চিত হওয়া গেলো না। আকাশের বন্ধুকে সে কল করেছে কয়েকবার। কিন্তু ওই ছেলের নাম্বারটা বন্ধ। অন্যদিকে লাফাঙ্গা আকাশের নাম্বারে কল গেলেও কেউ সেটা রিসিভ করছে না। স্নেহার এই ঝামেলা আর সহ্য হচ্ছে না। মনে মনে বিড়বিড় করে চলেছে,

“শালা, মরার হলে মরে যা। আর প্যারা নেওয়া সম্ভব না। মারা খা তুই।”

আজ বহু ধকল গিয়েছে স্নেহার উপর দিয়ে। প্রথম ওই আকাশের নাটক, তারপর জ্বর, তারপর দুঃশ্চিন্তা। স্নেহা যে-ই মুহূর্তেই ভাবে সে এই ঝামেলা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ঘুমাতে যাবে আপাতত, ঠিক সে-ই মুহূর্তেই তার ফোনের নোটিফিকেশনের শব্দ শোনা যায়। স্নেহা ফোন হাতে নেয়। একটি আননোন নাম্বার থেকে হোয়াটসঅ্যাপে তার কাছে ম্যাসেজ এসেছে। এটা আকাশ নয় তো? স্নেহা দ্রুত ম্যাসেজ চেক করে। নাহ, ম্যাসেজ পাঠানো ব্যক্তিটা আকাশ নয়। কিন্তু যে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে সে আকাশেরই একটা ছবি পাঠিয়েছে।

কোনো এক টং দোকানে বসে গালগল্প করতে করতে চা খাচ্ছে। গায়ে তো আজকে দুপুরেরই পোশাক দেখা যাচ্ছে। ছবির সঙ্গে নিচে একটা লিখিত ম্যাসেজ পাঠানো হয়েছে।

“বেঁচে আছে, ঠিক আছে। সুইসাইড এটেম্পটের ব্যাপারটা স্ক্যাম ছিল। হ্যাভ এ গুড স্লিপ নাও।”

স্নেহার মেজাজটা প্রচন্ড পরিমাণে খারাপ হয়। তবে অবাক হয় এই ছবি এবং ম্যাসেজ পাঠানো ব্যক্তিটার নাম দেখে। অয়ন মাহমুদ। এ-ই লোক আকাশের ব্যাপার কী করে জানলো? স্নেহা ম্যাসেজ পাঠিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করে,

“আমার ফোন দেখেছিলেন?”

এক মিনিটের মধ্যেই রিপ্লাই আসে,

“সরি, জি। খোঁজ নিয়ে ক্যাম্পাসের বাহিরে দুপুরের ঘটনাও জানতে পেরেছি। ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আগামীকাল থেকে নিশ্চিন্তে ক্যাম্পাসে যাবেন।”

স্নেহা রিপ্লাই টাইপ করতেই যায়, তবে তার ফোনের কীবোর্ড হ্যাং খেয়ে যায় ততক্ষণে। স্নেহার মেজাজ খারাপ হয়। ঘড়ির দিকে তাকায়। রাত ১০ টার উপর বাজে। এই কীবোর্ড কোন জনমে ঠিক হবে তার নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু আপাতত স্নেহার কথা বলা জরুরী। তাই সে সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপে ভদ্রলোককে কল করে বসে।

অয়ন খাওয়াদাওয়া সেড়ে আব্বুর সঙ্গে বসে রাত দশটার খবর দেখছিল। ঠিক এই সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে স্নেহার কল পেয়ে সে হকচকিয়ে উঠে। দ্রুত ফোন হাতে নিজের রুমে গিয়ে দোর দেয়। নীলা বেগম সবে ছেলের জন্য ঘরে বানানো মিষ্টি বের করে রুমে হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু অয়নকে এভাবে ঝড়ের গতিতে চলে যেতে দেখে তিনি কিছুটা অবাক হয়েই কামরুজ্জামান সাহেবের দিকে তাকান। কামরুজ্জামান সাহেব নিজেও কিছুটা বিস্মিত। সাধারণত কাজ জনিত কোনো কল হলেও অয়ন প্রায় সময় আব্বু, আম্মুর সামনে বসেই কথা বলে। তাহলে আজ এভাবে উঠে যাওয়ার পিছনে কারণ কী? কল দেওয়া বিশেষ ব্যক্তিটা কে?

অয়ন রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দ্রুত আয়নার সামনে দাঁড়ায়। কলটা অডিও হলেও ও এক সেকেন্ডে নিজেকে দেখে নেয়। হ্যাঁ, ঠিকঠাকই লাগছে। সামান্য গলা ঝেড়ে এবার অয়ন কল রিসিভ করে বেশ স্বাভাবিক স্বরে বলে,

“হ্যালো।”

“অনুমতি ছাড়া ফোন ধরার কারণ জানতে পারি?”

অয়ন কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। জানিয়ে ভুল করলো না-কি? ওর নিয়ত তো ভালোই ছিল। অয়ন জবাব দেয়,

“আপনি একজন স্টকারের কথা বলেছিলেন। আপনার সেফটি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চেক করেছি। চেক করেছি বলেই জানতে পেরেছি যে ওই স্টকার আপনাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছে। কী বড়ো মিথ্যাবাদী! চায়ের দোকানে বসে চা খেতে খেতে বন্ধুকে দিয়ে আপনাকে মিথ্যা বলায়।”

আকাশের মিথ্যাচারের কথা শুনতেই স্নেহার মেজাজ আবারও খারাপ হয়ে যায়। সে বিরক্তি নিয়ে বিড়বিড়িয়ে উঠে,

“হারামজাদা কোথাকার!”

কথাটা অয়ন শুনতে পায়। সে ভেবে বসে স্নেহা বুঝি তাকে হারামজাদা বলেছে। তাই সে দ্রুত ক্ষমা চেয়ে বলে,

“আমি সরি… কিন্তু…”

“থামেন, আপনাকে হারামজাদা বলি নি। অনুমতি ছাড়া আমার জিনিসপত্রে কারো হাত দেওয়া আমার পছন্দ না। কিন্তু আপনি ফোন ধরে ভালো করেছেন। নাহলে আমি ভেবে বসে থাকতাম শালা আসলেই মরতে গিয়েছে। এখন ওকে সামনে পেলে নিশ্চিন্তে জুতাতে পারবো। কোনো কনফিউশান থাকবে না মনে।”

অয়ন ছোট করে বলে উঠে,

“মারামারি করতে যাবেন না আপনি। হীতে বিপরীত হতে পারে পরে। তাছাড়া ও আর আপনার সামনে তেমন একটা যাবে বলে মনে হয় না।”

স্নেহা সন্দিহান ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করে,

“ওয়েট, আপনি কিছু করেছেন?”

“না, কিছু করবো কেন? গুন্ডা না-কি আমি? পুলিশের ভাষায় একটু বুঝিয়েছি আরকি।”

“যা-ই হোক, আমাকে এই ঘটনা জানানোর জন্য ধন্যবাদ। বেশ কিছু হেল্প এবং ধার জমা হয়ে গিয়েছে আমার কাছে। আমি খুব দ্রুতই সব ব্যাক করে দিবো। আপনি আপাতত আমার একটা হেল্প ফিরিয়ে দিন। ও-ই আমার ছাতা আগামীকাল নিতুন বা আন্টির কাছে দিয়ে রাখবেন। পড়ানো শেষে আমি নিয়ে নিবো।”

অয়ন চায় না ছাতাটা ফেরত দিতে। না চায়, স্নেহার থেকে কোনো সাহায্য ফেরত নিতে। হিসাবের হালখাতা মিটমাট হয়ে গেলে অসুবিধা। অয়ন চায় লেনাদেনা থাকুক দু’জনের। যেটার উছিলায় কখনো কখনো কথাবার্তা অন্তত বলা যাবে। তাই বানিয়ে চটপট একটা মিথ্যা বলে দেয় সে,

“ওটা তো আমি হারিয়ে ফেলেছি।”

“কীইইহ? কীভাবে? ছাতা কীভাবে হারায়?”

অয়ন পড়ে বিপাকে। বানিয়ে মিথ্যা বলা ঝামেলার কাজ। কিন্তু প্রেমে পড়ার পর থেকে সকাল বিকেল হুটহাট তাকে মিথ্যা বলতে হচ্ছে। তাই সে মনগড়া কাহিনী বানিয়ে বলে,

“সাথে নিয়ে বের হয়েছিলাম। থানায় কোথায় যেন রাখি। তারপর আর খুঁজে পাই নি।”

অয়নের উপর এতক্ষণ মেজাজ খারাপ না হলেও এখন স্নেহার মেজাজ খারাপ হলো। তারই ভুল হয়েছে নিজের ছাতা ফেরত চাওয়া। এরকম আলালের ঘরের দুলালরা একটা ছাতার মূল্য বুঝবে না-কি। এরা একটা হারালে আরেকটা কিনবে। যত জ্বালা, সব স্নেহার মতো মিডেল ক্লাস শ্রেণীর মানুষদের বইতে হয়। স্নেহা আর কথা বাড়ায় না। ডিরেক্ট ‘আল্লাহ হাফেজ’ বলে কলটা কেটে দেয়।

এদিকে কল কেটে যাওয়ায় অয়নের মনটা খারাপ হয়ে যায়। স্নেহার কি মন খারাপ হয়েছে? অয়ন ঘুরে তাকায় নিজের ওয়াড্রবের দিকে। ধীর কদমে এগিয়ে গিয়ে উপরের ড্রয়ারটা খুলে। যত্নে রাখা ছাতাটা হাতে তুলে নিতেই মনে পড়ে যায় বিদ্যুতের ঝলকে দেখা স্নেহার মুখটা। অয়নের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। পরমুহূর্তেই মনে পড়ে যায় আজ সন্ধ্যার দৃশ্য। স্নেহার ওভাবে কান্নায় ভেঙে পড়া। আচ্ছা, স্নেহাকে কি কোনভাবে নিজের বুকটার ভেতর লুকিয়ে ফেলা যায় না? ভাবনাটা অদ্ভুৎ হয়তো, তবে অয়নের এটাই মনে হচ্ছে। ইচ্ছে করছে স্নেহাকে তুলে হৃদয়ের কঠোরে তালা মেরে রেখে দিতে। সেখানে স্নেহা শান্তিতে থাকুক, এতো ঝড়-ঝাপটা স্নেহার কাছে না ভীড়ুক।

__________

একটা ঝকঝকে বিকেল বেলা। মাসুম জীবনটাকে ত্যানাত্যানা বানিয়ে অবশেষে শেষ হলো স্নেহার সেমিস্টার ফাইনাল। নতুন সেমিস্টার শুরু হওয়ার পূর্বে সবাই হল ফেলে ছুটিতে যার যার নীড়ে ফেলেছে। স্নেহার আপন কোনো নীড় নেই। তাই সে হলেই রয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন নিয়ম করে ঘুম থেকে উঠে, নাস্তা করে, পড়াশোনা করে, স্টুডেন্ট পড়াতে যায়, খুব বেশি কখনো ইচ্ছে করলে একা একা রাস্তায় হেঁটে বেড়ায়। স্নেহার জীবন আপাতত এতটুকুতে সীমিত হলেও, স্নেহা কখনো এতটুকু গন্ডির ভেতর থাকবে না।

হলের পড়ার টেবিলের উপর যে বিসিএসের প্রস্তুতির জন্য গাদা গাদা বই, শিট, নোটখাতা জমিয়েছে সে, ওটাই হচ্ছে তার ভবিষ্যৎ। স্নেহা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে। নিজের দমে, নিজের মেধায়, নিজের খরচে। একদিন বড়ো ক্যাডার হয়ে বা সরকারি কোনো পদে কাজ করে সে-ও তার নামমাত্র বাবাকে দেখিয়ে দিবে যে স্নেহা উনার আশ্রয় ছাড়া একা একা কী হতে পারে। এই-যে এখন স্নেহা পায়ে হেঁটে রিকশার ভাড়া বাঁচায়, একদিন এ-ই স্নেহাই গাড়িতে চড়বে। কাদাজল খেয়ে জীবনের সুখ বিসর্জন দিয়ে ভালো রেজাল্টের পিছনে ছোটা স্নেহাটা একদিন ঠিকই আরাম করবে। সে-ই একদিনের অপেক্ষায় কেবল সে।

নিতুনকে পড়ানো শেষে সন্ধ্যায় বেরিয়েছে স্নেহা। এখন রাস্তাঘাটে মোটামুটি সে নির্বিঘ্নেই চলাফেরা করে। সে-ই সুইসাইডের ড্রামার পর থেকেই আকাশকে আর তেমন একটা দেখে নি সে। দূর থেকে দেখলেও আকাশ কখনো চোখ তুলে তার দিকে তাকায় নি বা সামনে আসার সাহস করে নি। স্নেহা মাঝেমধ্যে ভাবে ওই দারোগা দামড়া বাবু এই লাফাঙ্গাকে কী এমন টোটকা খাইয়েছে, যে এ-ই হারামির বাচ্চা একদম সোজা হয়ে গিয়েছে!

রুমমেট ঐন্দ্রিলার মুখে অবশ্য স্নেহা শুনতে পেয়েছিল যে এই আকাশ না-কি এরকম নিঃসঙ্গ মেয়েদের সঙ্গে খাতির জমাতে খুব ভালোবাসে। সে বেছে বেছে এমন মেয়েদের সঙ্গেই প্রেম প্রেম সম্পর্ক বানায় যাদের জীবনে তেমন একটা শোরগোল নেই বা রয়েছে দুঃখের পাহাড়। পরে তাদের আশেপাশে ঘুরঘুর করতে করতে নিজে একটা সময় হয়ে উঠে তাদের ভরসার পাত্র। মূর্খ মেয়ে গুলো আবেগে ভেসে এই ছাগলকে ভরসা করা মাত্রই ফেঁসে যায় জালে। জালে ফেঁসে যাওয়া সে-ই মেয়েগুলোকে শেষ অব্দি আকাশ নিজের বন্ধুর ফ্ল্যাটে নিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়। আর এভাবেই চলছে পাখি শিকারের চক্র।

আকাশের চমৎকার ব্যক্তিত্বের এই বিবরণ শুনে স্নেহা মোটেও অবাক হয় নি সেদিন। চেহারা দেখেই সে বুঝতে পেরেছিল এই ছেলের মধ্যে ঘাপলা আছে। এরকম ছেলেগুলোকে নিয়ে ভেবে স্নেহা নিজের মেজাজ খারাপ করতে চায় না। তবে যেসব মেয়েরা এধরণের ফাঁদে পা দেয়, তাদের প্রতিও স্নেহার কেন সেন সহানুভূতি কাজ করে না। একটা মেয়ের জীবনের আদর্শবাণীই হওয়া উচিত, ‘Never trust yourself with any men.’

কিন্তু না, এই বলদিগুলো আবেগে ভেসে বিশ্বাস, জান, প্রাণ সব লিখে দেয় এই দুই দিনের ছোকরাদের নামে। ছোকরারাও সেটার ফায়দা লুটে। আর মেয়েগুলো খায় মারা। কেন? তোরা বিশ্বাস করবি কেন? একটা আকাশ থেকে টপকানো ছেলে সামান্য পিরিত দেখালেই তোকে গলতে কেন হবে? আচ্ছা, গললি ভালো কথা। প্রেমের দুইদিনের মাথায় ছেলে হাত ধরতে চাইলে কিংবা গা ঘেঁষে বসতে চাইলেও বা, তুই অনুমতি দিবি কেন? ঘুরিয়ে একটা চটকনা মেরে কান তব্দা লাগিয়ে দিতে পারিস না? আর তার থেকেও বড়ো কথা, এই চরিত্রহীন গুলো তোর থেকে আজেবাজে ছবি চাইলেও তুই ব্লক না মেরে ছবি কেন পাঠাবি?

স্নেহা একটা কথাই বিশ্বাস করে – পিরিত দেখানো, হাত ধরতে চাওয়া, আজেবাজে ছবি চাওয়া যেমন একটা পুরুষের অপরাধ। তেমনই সে-ই পিরিত দেখে গলে যাওয়া, নিজের কাছ ঘেঁষার অনুমতি দেওয়া এবং চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রেমের খাতিরে নিজের ব্যক্তিগত ছবি পাঠানোও একটা মেয়ের অপরাধ। এ নিয়ে অন্য কোনো তর্ক মানতে সে রাজি নয়। পৃথিবীর সব পুরুষ হয়তো খারাপ নয়। কিন্তু কে ভালো, কে খারাপ সেটাও তো পরিষ্কার নয়। তাই নিজের নিরাপত্তার দায়ভার নিজেদেরই নেওয়া উচিত।

__________

হাজারো ভাবনায় ডুবে থাকা স্নেহা হাঁটতে হাঁটতে কখন যে মাঝপথে পৌঁছে গিয়েছে খেয়ালই করে নি। যখন সম্বিত ফিরলো তখন টের পেলো সে সুনসান অন্ধকার রাস্তার ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছে। চারিপাশে তেমন একটা মানুষ নেই। স্নেহা বিরক্ত হয়। ইদানিং এই বাজে রোগ হয়েছে তার। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে এমন গভীর ভাবনায় ডুব দেয় যে আশেপাশের কিছু আর খেয়াল থাকে না। স্নেহা ভালো করে রাস্তাটা খেয়াল করতেই বুঝে রিকশা পেতে তার হেঁটে আরো কিছুটা এগোতে হবে।

নিশ্চিত মনে স্নেহা তিন চার কদম এগোতেই হুট করে অনুভব করে, কেউ তাকে অনুসরণ করছে। ব্যাপারটা উপলব্ধি করলেও স্নেহা ফিরে তাকায় না। আকাশ হারামির প্যারা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে তার ঘাড়ে এক নতুন প্যারা এসে জুটেছে। সেটার নাম হলো – অয়ন ভাইয়া। এই লোক বেশ অনেকদিন ধরেই স্নেহাকে এখানে, সেখানে ফলো করে চলেছে। ব্যাপারটা স্নেহা লক্ষ্য করলেও এখনো কিছু বলে নি। কারণ সে জানে এই লোকের নিয়তে ঘাপলা নেই। তাই কেউ যদি মাগনা স্নেহার আশা যাওয়ার পথে গার্ডের ডিউটি পালন করে, সেটা নিয়ে তার আপত্তি করার কিছু নেই।

কিন্তু ঝামেলা হলো অয়ন স্নেহাকে ফলো করলে স্নেহার কখনো ক্রিপি ফিল হয় না। কিন্তু এ-ই মুহূর্তে কেন যেন তার গায়ে ছমছম অনুভূতি হচ্ছে। পিছনে তাকে অনুসরণ করা ব্যক্তিটা আদৌ অয়ন তো? কারণ স্নেহা যখন নিতুনকে পড়াতে যায়, তখন অয়নের আনাগোনা দেখে নি বাসায়। মনে দ্বিধা কাজ করলেও স্নেহা ঘুরে তাকায় না। যে-ই ফলো করছে তাকে বুঝতে দেওয়া ঠিক হবে না যে স্নেহা তার উপস্থিতি টের পেয়েছে। তবে না চাইতেও স্নেহার পায়ের কদমের গতি বাড়ে। সে কিছুটা হন্তদন্ত হয়েই এগিয়ে যেতে নেয়। ঠিক সে-ই মুহুর্তে পিছন থেকে একটা দানবীয় হাত ছুটে আসে। খাবলে ধরে স্নেহার বেণী। এক মুহুর্তের মধ্যে নিজের হাতে লম্বা বেণীটা প্যাঁচিয়ে ধরে স্নেহার মাথা এবং মুখটাকে ফুটপাত সংলগ্ন কাঁচা ইটের তোলা দেয়ালে ঘষা খাওয়ায়। অতর্কিত হামলায় স্নেহা কেবল এক হাতের কনুই তুলে আন্দাজ অনুযায়ী আক্রমণকারীর নাক বরাবর আঘাত করতে পারে।

চলবে…

[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]