নীড়বৃষ্টি পর্ব-২৩

0
5

নীড়বৃষ্টি
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
২৩.

সামিউলকে খুন করে ফেলার জন্য অয়নের হাত, মন এবং মস্তিষ্ক নিশপিশ করছে। ইচ্ছে করছে এখনই ছুটে গিয়ে জানোয়ারটাকে লাথি দিতে দিতে মেরে ফেলতে। কিন্তু মনের ইচ্ছাকে পাথর চাপা দিয়ে থাকতে হচ্ছে তার। হাজার হোক অয়ন আইনের লোক। আইনের প্রতি তার রয়েছে তীব্র শ্রদ্ধা। এভাবে আইনের বাহিরে গিয়ে নিজ থেকে কাউকে ধরে পেটানো কিংবা মারাটা হয়ে যাবে আইনবিরোধী কাজ। এতে অয়ন নিজেই অপরাধী হয়ে যাবে।

তবে খুন করতে না পারলেও সামিউলকে মোটেও ছেড়ে দিচ্ছে না অয়ন। সে আইনের পথ ধরেই হাঁটছে। প্রথমত হসপিটাল থেকে জোগাড় করেছে ডক্টরের দেওয়া মেডিকো লিগ্যাল সার্টিফিকেটের কাগজ। যেখানে স্পষ্ট করে ডক্টর আঘাতের স্থিতি, ধরন এবং অভ্যন্তরীণ ক্ষতি সম্পর্কে লিখে দিয়েছেন। অতঃপর নিজ থানায়, নিজের তত্ত্বাবধানেই ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট তথা এফআইআর দায়ের করানোর জন্য সে-ই রিকশাওয়ালা এবং ভদ্রমহিলার সাহায্য নিয়েছে অয়ন। এফআইআর দায়ের হতেই তদন্ত শুরু করে দিয়েছে সে ইতিমধ্যে। তাছাড়া নিজ তাগিদে বিভিন্ন প্রমাণও সঞ্চয় করে ফেলেছে অয়ন। উল্লেখ্যভাবে এই প্রমাণও সে সংরক্ষিত করেছে যে সামিউল রিহাব থেকে পালিয়ে এসেছে। বাদবাকি সামিউলকে গ্রেফতার করা থেকে শুরু করে রিমান্ডে নেওয়ার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া অয়ন নিজেই সম্পন্ন করিয়েছে।

এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াতে অয়নের সাক্ষাৎ হয় সামিউলের মা বাবার সঙ্গেও। তাদের মধ্যে রয়েছে সামিউলকে বাঁচানোর তৎপরতা। চোখে নিজেদের কুলাঙ্গার ছেলের জন্য অশ্রুও জমা রয়েছে। সে-ই দৃশ্য দেখে অয়নের ভয়ংকর মেজাজ খারাপ হয়। কখনো কখনো ছেলেমেয়েরা বিপথে যাওয়ার পিছনে একাই দায়ী হয় না। তাদের পিছনে হাত থাকে এরকম পিতা মাতারও। অয়ন সে-ই সঙ্গে আরেকটা জিনিসও লক্ষ্য করে। সামিউলকে রক্ষা করতে মরিয়া স্বামী স্ত্রী একবারও স্নেহা ঠিক আছে কি-না সেটা জানতে অব্দি চাইলো না। জানতে চায় নি, মেয়েটার উপর তাদের জানোয়ার ছেলে কি বর্বর আঘাত করেছে। ঘৃণায় অয়নের বুক ভার হয়ে আসে।

স্নেহার অবস্থা এখনো পুরোপুরি ঠিক হয় নি। হসপিটালেই আছে মেয়েটা। অয়ন হসপিটালে যায়, বাহিরে ঘোরাফেরা করে, দূর থেকে স্নেহাকে দেখে চলে আসে। অয়নের কেন যেন মনে হচ্ছে এই সময় স্নেহার সামনে যাওয়া ঠিক হবে না। তা-ই সে সময় দিচ্ছে মেয়েটাকে। তবে স্নেহাকে দূর থেকে দেখে সে খুব অবাক। এই মেয়ে কী সিমেন্ট দিয়ে তৈরী কি-না অয়নের জানা নেই। এতো বড়ো একটা ঘটনার পরও স্নেহাকে বিশেষ বিচলিত দেখাচ্ছে না। সে দিনের বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়েই পাড় করে হাসপাতালে। যতটুকু সময় জেগে থাকে ততক্ষণ বেশ স্বাভাবিক স্নেহা রূপেই থাকে।

ডক্টর জানিয়েছে সৌভাগ্য বশত পেটে লাগা লাথিটা ভেতরে গুরুতর কোনো ক্ষতি করে নি। তবে একেবারে যে ক্ষতি করে নি তা-ও নয়। একটা মেয়ের শরীরের অন্যতম নাজুক জায়গা হচ্ছে তলপেট। সেখানে পাওয়া আঘাতের রেশ এতো সহজে কাটার নয়। ওষুধ পত্র এবং বেশ কিছু নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। তাছাড়া স্নেহার হাতে, পায়ে, কনুইয়ে এবং মুখের ক্ষত সাড়তেও মোটামুটি ভালোই সময় লাগবে।

গত দু’দিন ধরে অয়নের সারাদিন ধরে বাসার বাহিরে ব্যস্ত সময় কাটানোটা নীলা বেগমের চোখ এড়ায় নি। তিনি লক্ষ্য করেছেন, ছেলেকে ইদানিং খুব চিন্তিত দেখায়। কী হয়েছে জানতে চাইলে বলে পরে সময় হলে জানাবে। সময় হলে অয়ন কী জানাবে আপাতত সেটা নীলা বেগমের কাছে জরুরী নয়। তিনি কেবল মনে মনে প্রার্থনা করেন যেন সব ঠিক থাকে।

আজ রাতের খাবার শেষে অয়ন কিছুক্ষণ পায়চারি করে এসে নিতুনের রুমে হাজির হয়। নিতুন তখন বিছানায় বসে সম্পাদ্য করছিল। ভাইয়ের অনাকাঙ্ক্ষিত আগমনে সে চোখ তুলে তাকায়। কিছুটা অবাক হয় যখন দেখে তার বাবু ভাই রুমের দরজা ভেতর থেকে লক করছেন। নিতুন কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করে,

“তুমি এভাবে চোরের মতো এলে কেন, ভাইয়া?”

অয়ন এগিয়ে এসে নিতুনের মুখোমুখি বসে বলে,

“চটপট একটা সাজেশন দে তো।”

নিতুন ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,

“আম্মু-আব্বুর অতি বুদ্ধিমান এবং শিক্ষিত ছেলের আমার থেকে সাজেশন দরকার? বাব্বাহ! তা কোন টপিকে সাজেশন চাইতে এসেছ?”

অয়ন কিছুটা লাজ লজ্জার মাথা খেয়েই বলে,

“কাউকে পছন্দ করলে কীভাবে বলতে হয়?”

নিতুন তখনও কপাল কুচকে ভাইয়ের পানে তাকিয়ে আছে। অয়নের ভাইয়ের এই তাকিয়ে থাকাটা পছন্দ হয় না। সে সুযোগে সামান্য হুমকি ঝেড়ে বলে,

“জীবনে একটা প্রেম তো করেছিস। আমি নিশ্চিত এই ব্যাপারে তোর ভালোই অভিজ্ঞতা আছে। তাই জানতে চাইছি।”

নিতুন এবার অবাক হয়। ভাইয়া তার এক্সের ঘটনা জানে? কিন্তু কীভাবে? মনে জাগা প্রশ্নে নিতুন নিজেই বিরক্ত হয়। সে এতো অবাক হচ্ছে কেন? ভাইয়া পুলিশ মানুষ। চোখের আড়ালে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিজের নখদর্পনে রাখাই তার কাজ। নিতুন তাই আর ভাইকে রাগিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করে না। বরং ভাইয়ের প্রশ্নের উত্তর দেয়,

“কাউকে পছন্দ করলে মুখ দিয়ে বলতে হয়।”

অয়ন রাগ নিয়ে কটমট করে তাকায়। নিতুন দ্রুত নিজের উত্তর ঠিক করে ফের বলে,

“যাকে পছন্দ করো তার বয়সের উপর ডিপেন্ড করে। যদি মেয়ের বয়স আঠারো থেকে বিশের ঘরে হয়, তাহলে তোমাকে লুতুপুতু ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজ করতে হবে। যেমন তুমি তাকে ছাড়া বাঁচবে না টাইপ কথাবার্তা। আবার মেয়ের বয়স যদি একুশ থেকে চব্বিশ হয়, সেই ক্ষেত্রে তোমার কথার টোন আরেকটু ভিন্ন হতে হবে। এখানে বাঁচা মরা নিয়ে কিছু বলা যাবে না। আর মেয়ের বয়স যদি পঁচিশ থেকে তোমার বয়সী হয় তাহলে কোনো কথা নেই, ডিরেক্ট বিয়ের প্রোপজাল দিতে হবে। লাস্টলি যদি এই তিনটার একটাও না হয় এবং মেয়ে সিনিয়র হয়, তাহলে তোমাকে ফ্লার্টিং এর উপর পিএইচডি আগে করতে হবে…”

নিতুনের এতো এতো কথা অয়নের যথার্থ মনে হয় না। তাই সে সরাসরি জানায়,

“মেয়েটা যদি তোর মিস স্নেহা হয়?”

কাছে কি কোথাও বড়সড় বিস্ফোরণ হয়েছে? কে জানে! নিতুনের এমনটাই মনে হলো মাত্র। স্নেহা মিস? তার মিস? ওই পাষাণপ্রিয়াকে বাবু ভাইয়া পছন্দ করে? এতটা দুঃসাহসী তার ভাই? নিতুন ছোটখাটো ঢোক গিলে বলে,

“মানুষটা যদি স্নেহা মিস হয়, তাহলে দুই ঠোঁট সেলাই করে জীবন বাঁচানো ফরজ।”

অয়ন রেগে গিয়ে বলে,

“আমি সিরিয়াস, নিতুন।”

নিতুন প্রশ্ন করে,

“তো আমি কি মজা করছি? আমিও খুব সিরিয়াস। দেখো, আমি কি হাসছি?”

অয়ন বিরক্তিতে বলে,

“তোর কাছে আসাটাই ভুল হয়েছে আমার।”

“আমার কাছে সাজেশন চাইতে আসা নয়, বরং ভুল মানুষের প্রেমে পড়াটা তোমার ভুল হয়েছে। তুমি যদি বলতে তুমি ক্যাটরিনা কাইফকে পটাতে চাও, তা-ও কোনো উপযোগী বুদ্ধি দেওয়া যেতো। কিন্তু তুমি যার নাম নিয়েছো তাকে পটানো তো দূরে থাক, তার কথা ভাবলেও ভয়ে আমার পেট চিপ দিচ্ছে। তুমি চিনো না মিসকে। খুব জঘন্যভাবে রিজেক্ট খাবে তুমি। তা-ই ভাই হিসেবে বলছি, রিজেক্ট খেয়ে ইজ্জত হারাতে না চাইলে মিসকে ভুলে যাও।”

“রিজেক্ট কেন হবো? আমি খারাপ না-কি? আমাকে অপছন্দ করার কোন কারণ দেখছি না। তাছাড়া আই লাভ হার। কনফেস করা উচিত।”

“আহারে, আমার আওয়ারা ভাই। তোমার যা মন চায় করো। মারাটা যখন খাবে, তখন কেদেও কূল পাবে না। শুধু এটা খেয়াল রাখবে তোমার এই কাজে যেন স্নেহা মিস রেগে না যায়। পরে যদি তোমার রাগ আমার পিঠে স্কেল ভেঙে মিটায়? না, ভাই। উনার মাইর খাওয়ার থেকে আমি নিমপাতা কাঁচা খাওয়া প্রেফার করি…”

নিতুনের থেকে হতাশ হয়ে অয়ন নিজের রুমে ফিরে আসে। স্নেহাকে আগামীকাল হসপিটাল থেকে রিলিজ দিবে। হসপিটাল থেকে মেয়েটা আবার হলে ফিরে যাবে। হলে কে মেয়েটার খেয়াল রাখবে? উঁহু, অয়ন আর দেরি করবে না। সে কালই নিজের মনের কথা জানিয়ে দিবে। স্নেহা হয়তো এখন তাকে ভালোবাসে না। কিন্তু দুটো দিন অয়নকে নিয়ে ভাবলে ভালো না বেসে পারবেই না। এতটুকু ভরসা অয়নের নিজের প্রতি আছে।

পরের দিন সকালের দৃশ্য। স্নেহা হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ পেয়েছে আজ। সেদিনের বিধ্বস্ত জামাটা ব্যাগে ভরে একটা সুতির কামিজ পরেছে সে। মধ্যে একদিন হল থেকে ঐন্দ্রিলা এসেছিল তাকে দেখতে। কোথা থেকে কীভাবে খবর পেয়েছে সেটা স্নেহার জানা নেই। তবে ঐন্দ্রিলাকে সে বলেছিল যেন রুম থেকে তার দুটো কামিজ সম্ভব হলে নিয়ে আসে। মেয়েটা গতকাল স্নেহার জন্য তাই কামিজ নিয়ে এসেছিল। সেখান থেকেই একটা কামিজ পরে হলে ফেরার প্রস্তুতি নিয়েছে স্নেহা৷

তবে হসপিটালের একাউন্ট কাউন্টারে যেতেই স্নেহার মেজাজ খারাপ হয়, যখন দেখে কেউ না-কি তার বিল পরিশোধ করে দিয়েছে। বিলটা কে পরিশোধ করেছে জানতে চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পেছন থেকে অয়ন এসে হাজির হয়ে জানায়,

“আমি।”

স্নেহা ঘুরে তাকায়। দেখে পরিপাটি বেশে ভদ্র বাবু সেজে দাঁড়িয়ে থাকা অয়নকে। স্নেহার মনে পড়ে যায় সেদিন সন্ধ্যার ঘটনা। এই লোকটা এসে সাহায্য করেছিল বলেই আজ স্নেহা বেঁচে আছে। কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে বেশি রূঢ় আচরণ না করলেও স্নেহা কঠিন গলায় বলে,

“যতটুকু সাহায্য করেছেন সেটুকুর জন্য ধন্যবাদ। তবে বিল পে করার ব্যাপারটা আমার পছন্দ হয় নি। আমার কাছে এখন ক্যাশ এতটুকু আছে, রাখুন। বাকিটা আমি হলে গিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছি।”

অয়ন টাকাটা নেয় না। বরং সেটা ফিরিয়ে দিয়ে স্নেহাকে বলে,

“আপাতত এসব থাকুক? পরে না-হয় এই ব্যাপারে কথা বলি? চলুন, হলে ফেরা যাক। একসঙ্গে যেতে আপত্তি নেই তো? আসলে তাহলে যাওয়ার পথে আপনার সঙ্গে কিছু জরুরী কথা সেড়ে নিতাম।”

স্নেহা এক মুহূর্ত অয়নকে দেখে নিয়ে রাজি হয়। আপাতত টাকা নিয়ে জোরাজুরি করে না সে। একেবারে হলে পৌঁছেই না-হয় পরে পুরোটা একসঙ্গে এই লোকের হাতে তুলে দিবে। অয়ন সঙ্গে করে বাইক এনেছিল। কিন্তু স্নেহার বাইকে উঠতে আপত্তি। অয়ন রিকশা ডাকবে কি-না জিজ্ঞেস করে। স্নেহার এরকম র‍্যান্ডম লোকের সঙ্গে রিকশাতে বসা নিয়েও রয়েছে বিরোধ। তা-ই কিছুটা হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে অয়ন প্রস্তাব রাখে,

“তাহলে দুই মিনিট এখানে দাঁড়িয়েই আমার জরুরী কথাটা শেষ করি? তারপর আপনাকে রিকশা ডেকে দেই? এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে আপত্তি নেই তো?”

স্নেহা আর নাকোচ করে না। অয়ন এই মুহূর্তে কিছুটা নার্ভাস অনুভব করছে। কীভাবে কী বলবে মনে মনে সাজানোর চেষ্টা করে সে। কিন্তু খুব একটা সুন্দর করে কথা গুছিয়ে উঠতে পারে না। অস্থির অনুভব করে। আশেপাশে নজর বুলাতে নিয়েই তার চোখ পড়ে একটা গাছের দিকে। নাম না জানা একটা সাদা ফুলের গাছ। অয়নের নিজের উপর মেজাজ খারাপ হয়। মনের কথা জানানোর সময় ফুল দেওয়া জরুরী শুনেছিল সে। কিন্তু তাড়াহুড়োতে এবং টেনশনে সে ফুল কিনে আনতে ভুলে গিয়েছে। এখন কী করা যায়?

দুই মিনিট ভেবে অয়ন স্নেহাকে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে বলে ছুটে যায় সেই ফুলের গাছটির কাছে। একে একে অনেকগুলো পাতা সহ ফুল ছিঁড়ে সে একটা তোড়া বানায় নিজ হাতে। অতঃপর সেটা নিয়ে স্নেহার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,

“স্নেহা, আমাকে বিয়ে করবেন? আমি ভালো রাখতে জানি। আপনাকে ভালো রাখবো। এই ফুলগুলো নিন। আমি সত্যিই ভালোবাসি।”

খুব একটা গোছালো প্রস্তাব নয়। তবে অয়নের কথাগুলো স্পষ্ট। স্নেহা নীরবে শুনে তা। খুব একটা যে অবাক হয়েছে সে তা নয়। কারণ বিগত ক’দিন ধরেই সে ব্যাপারটা আঁচ করতে পারছিল। আজ যখন ব্যাপারটার খোলাসা হলো তখন সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। অয়নের হাতে থাকা ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

“এটা ধুতুরা ফুল। আগাগোড়া বিষাক্ত এটা৷ নেক্সট টাইম কাউকে প্রেম নিবেদন করতে গিয়ে ফুলের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। কপালে না-হয় শনি নিশ্চিত। মনে থাকবে?”

স্নেহার কথা শুনে অয়ন চট করে হাত থেকে ফুল গুলো ফেলে দেয়। সম্পূর্ণ মুখটায় তার অনামিশা নেমে এসেছে। এই লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়া কি তার নসিবে ছিল? তা-ও এমন একটা মুহুর্তে? নাহ, হার মানা যাবে না। অয়ন প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে কিছুটা গলা ঝেড়ে বলে,

“ফুল নয় আমার অনুভূতি জরুরী। যে-ই যুগে কোনো জিনিসপত্রের গ্যারান্টি নেই, সেখানে আমার অনুভূতির লাইফটাইম গ্যারান্টি দিচ্ছি আমি। আপনি বাজার থেকে কেনা সবজিতে খাঁদ পাবেন, কিন্তু আমার ভালোবাসায় পাবেন না। আপনার মনে হয়তো এখন আমাকে নিয়ে তেমন অনুভূতি নেই। কিন্তু দুটো দিন সময় নিয়ে ভেবে দেখুন আমাকে নিয়ে। আপনিও আমার প্রেমে পড়ে যাবেন, আমার বিশ্বাস।”

অয়নের এসব উদ্ভট কথা শুনে স্নেহার মেজাজ খারাপ হয়। সে সেটা চেপে রাখতে পারে না। কিছুটা ঝাঁঝালো স্বরেই উত্তর দেয়,

“তো? আমি কী করবো? আপনার মনে প্রেম আছে দেখে আমার মনেও থাকবে এটা সংবিধানের কত নাম্বার পয়েন্টে লেখা আছে? আপনার মনে মানুষকে বিলানোর মতো মধু আছে। আমি এতো মধু নিয়ে ঘুরি না।”

চলবে…

[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]