নীড়ের খোঁজে ২ পর্ব-০৮

0
32

#নীড়ের_খোঁজে
#সিজন_দুই
পর্বঃ০৮
#জান্নাতুল_বিথী

বিয়ে বাড়ির সকাল, অথচ মাথা ব্যাথার জন্য তুহা মাথা তুলতে পারছে না। হঠাৎ এতো মাথা ব্যাথার কারণ উদঘাটন করতে পারেনি সে। রুমের আসে পাশে কেউ নেই, শৈবাল কোথায় জানা নেই তার। ঘুম থেকে উঠার পর থেকেই তার চেহারা দেখেনি। তুহা কোনো রকমে উঠে গোসল করে আবার এসে শুয়ে পড়ে।

নিজের বাড়ির মানুষ গুলোকে খুব মিস করে। তার এমন মাথা ব্যাথা থাকলে নিজের সেবা করার জন্যই দুইজন আলাদা মানুষ থাকতো। আর এখানে একজন মানুষকেও খুঁজে পাওয়া মুসকিল। দীর্ঘশ্বাসের সাথে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। পানি গড়িয়ে পড়ার আগেই মুছে নেয় সে। দুর্বলতা প্রকাশ করতে চায়না সে। মাথা ব্যাথা নিয়েই কাতরাতে।

ঘণ্টা খানেক পরে রুমে আসে শৈবাল। তার সারা শরীর ঘামে ভিজে আছে। হয়তো কাজে ব্যস্ত ছিলো। সে রুমে ঢুকে তুহাকে শুয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে বলে,

“কি ব্যাপার এখনো শুয়ে আছো কেনো? উঠে নাস্তা করবা কখন?”

জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনা তুহা। চুপচাপ চোখ বন্ধ করে নেয়। তুহার কাণ্ডে মেজাজ কিছুটা খারাপ হয়ে যায় শৈবালের। তারপরো নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে তুহার পাশে বসে মাথায় হাত দেয়। নরম স্বরে বলে,

“মাথা ব্যাথা করছে তোমার? খুব বেশি খারাপ লাগছে?”

তুহা বিরবির করে আওড়ায়,

“আমার এসব কোলাহল সহ্য হয় না। আমি বাড়ি যাবো। আমাকে প্লিজ বাড়িতে পৌঁছে দেন।”

শৈবালের নিজেকে অসহায় মনে হয়। একদিকে এতো ক্লোজ বন্ধুর বিশেষ দিন আরেকদিকে মেয়েটা বাড়ি যেতে চায়। কি করা উচিত তার? এভাবে কিভাবে চলে যাবে? জিহাদ ও বা কি ভাববে? সব ভাবনা এক সাথে মাথায় আসতেই বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ায় শৈবাল। তুহাকে কিছু না বলেই প্রস্থান করে সেথা হতে।
.
“সমুদ্র সম্রাটের থেকে এখন পর্যন্ত কতো টাকা নিয়েছো তুমি?”

অবাক হয় পাপিয়া। কি জবাব দিবে সে? আর তাকে এসব কেনো জিজ্ঞেস করছে তার স্বামী? সোহেল সব কিছু জেনে যায়নি তো? কথাটা মনে আসতেই কথা ঘুরাতে উঠে পড়ে লাগে সে। কি থেকে কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। একসময় নিজেকে স্বাভাবিক করে জানায়,

“সমুদ্রের কাছ থেকে আমি টাকা নিতে যাবো কেনো সোহেল? আমার বাবার কি টাকা পয়সা কম নাকি?”

“তাকে ছেড়ে হঠাৎ আমাকে বিয়ে করেছো কেনো? আমি যতোদূর জানি সমুদ্র ওয়েল স্টাবলিশ একটা ছেলে। ডাক্তার মানুষ, ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ডও ভালো। তাহলে আমাকে বিয়ে করার কারণ কি?”

ভড়কে যায় পাপিয়া৷ ঠোঁটের আগায় যুতসই উত্তর খুঁজে পায় না। বুকের ভেতর ভয়েরা খামছে ধরে। বারবার এটা কেনো মনে হয় সোহেল সব কিছু জেনে নিয়েছে। কিন্তু কিভাবে সম্ভব তা? যা ঘটার সব ঘটেছে বাংলাদেশে। এখন তারা মালেশিয়াতে আছে৷ কিভাবে সম্ভব ভাবতে ভাবতে সে উত্তর দেয়,

“সমুদ্র আমার সাথে বেঈমানী করছে। ডাবল টাইমিং করছে আমার সাথে। তাছাড়া বাবা মেনে নেয়নি আমাদের সম্পর্ক!”

আড়ালে হাসে সোহেল। বড্ড বেশি বো*কা মনে হয় পাপিয়াকে। যে মেয়ে একটা ছেলেকে মৃ*ত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে নিজে বিয়ের পীড়িতে বসেছে সে কিভাবে এতোটা বোকা হয়? পাপিয়াকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। তার ভিন্ন পরিকল্পনা আছে!
.
তুহার ডানপাশে আঁধ শোয়া হয়ে মোবাইল টিপছে শৈবাল। মেয়েটা নাস্তা করে মেডিসিন নিয়ে কেবল ঘুমিয়েছে। মেয়েটা কি অভিমান করেছে? তার মাথা ব্যাথা শুনেও শৈবাল কিছু করেনি। বরং রুম থেকে বের হয়ে গিয়েছে। এটা কি অভিমান করার জন্য যুতসই কারণ হতে পারেনা? তাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় দেখেছে, রাগে কাঁপতেও দেখেছে। শুধু দেখেনি অভিমান করতে।

তবে কি শৈবালের অবচেতন মনটা তুহার অভিমানী মুখশ্রী দেখতে চায়? মেয়েটা অভিমান করতে জানে? মনে তো হয় জানে না। এসব উল্টা পাল্টা ভাবতে ভাবতে ফোন বসায়। ওই পাশের মানুষটা ফোন রিসিভ করতেই সে আওড়ায়,

“ওই দিকের কি খবর? সব ঠিকঠাক আছে?”

“সেসব কিছু জানিনা আমি। যেটুকু জানতে চাইছি তা কিভাবে বের করবা সেটা তুমি জানো।”

….

“তোমার বক্তৃতা শুনতে ফোন করিনি আমি। শর্টকার্টে কথা শেষ করো।”

…..

“ওর দায়িত্ব তোমাকে দিলাম। তাকে তুমি কিভাবে ট্রিট করবা তা তোমার ব্যাপার। কেঁ*টে পানিতেও ভাসিয়ে দিতে পারো। সব কিছু তোমার উপর নির্ভর করছে!”

…..

“সমুদ্র ম*রে গিয়েছে। তাকে নিয়ে কথা বলার মুড নাই। রাখছি পরে কথা হবে।”

ভেতরটায় তি*ক্ততায় ভরে যায় শৈবালের। এই নি*ষ্ঠুর দুনিয়াতে এতো বেশি ক*ষ্ট কেনো? কেনো এক রত্তি শান্তি নাই? কেনো প্রিয় মানুষ গুলো সুস্থ থাকেনা সব সময়?
.
তুহার যখন ঘুম ভাঙে তখন চারদিকে কড়া রোদের তেজ। প্রথমে সে কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা। পরে মনে পড়ে নিজের মাথা ব্যাথার কথা। জিহাদের কাজিন কণার নাস্তা দিয়ে মেডিসিন দেওয়ার কথা। মেডিসিন নেওয়ার পরেই সে মূলত আবার ঘুমায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে এখন দুপুর আড়াইটা বাজে।

কি আশ্চর্য এতো বেলা হয়ে গেলো অথচ তাকে কেউ ডাকতে আসেনি কেনো? মাথা কিছুটা হালকা লাগছে এখন। তাই উঠে কোনো রকমে চোখে মুখে পানি দিয়ে বাহিরে যায় সে। সারা বাড়ি জনমানবশূন্য। সবাই কনে পক্ষের বাড়িতে হয়তো। তুহা হতাশ হয়। দোতলার একটা রুমে থাকতে দিয়েছে তাদেরকে। নিচে খু**ন হয়ে গেলেও হয়তো টের পাওয়া যাবেনা। তুহা নিচে নামতেই সামনে পড়ে জিহাদের মা। ভদ্রমহিলা তাকে দেখে এক গাল হেসে বলে,

“তুমি তো অসুস্থ চিলে তাই তোমাকে ডাকতে নিষেধ করেছি। কি একটা অবস্থা দেখো তো মা, তুমি নতুন বউ এসেছো অথচ আমি ব্যস্ততার জন্য তোমাকে একটু সময়ও দিতে পারছি না।”

“আরে অসুবিধা নাই আন্টি, সবার অবস্থাই তো বুঝতে হবে।”

তুহার উত্তরে সন্তুষ্ট হয় ভদ্রমহিলা। মৃদু হেসে বলে,

“চলো খাবে, তোমার তো এখনো খাওয়া হয়নি। বিকেলে হয়তো শৈবাল চলে যেতে পারে।”

অবাক হয় তুহা, তাদের তো এতো তাড়াতাড়ি যাওয়ার কথা ছিলো না। তাহলে হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত নিলো কেনো? মনের প্রশ্ন মনে রেখে দেয় তুহা। চুপচাপ খেতে বসে। ক্ষুধায় পেঁটের ভিতরে ইঁদুর দৌড়ায় মনে হয়। খাওয়ার ফাঁকে টুকটাক কথা হয়। শৈবাল, জিহাদকে নিয়ে নানা ধরণের কথা বলে। কথা মূলভাব এই যে শৈবাল, জিহাদ আর সমুদ্র স্কুলজীবন থেকে বন্ধু। জিহাদকে চিনলেও এখনো সমুদ্রের ব্যাপারে কিছু জানেনা সে। ছেলেটা কে বা বিয়ে বাড়িতে আসেনি কেনো? এসব ব্যাপারে প্রশ্ন করবে ভেবেও আর করা হয় নি।

খানিকক্ষণ বাদে শৈবাল আসে। শুভ্র রঙা পাঞ্জাবি তে তাকে স্নিগ্ধ পুরুষ লাগছে। দুই হাতা ফোল্ড করা। হাতে ফোন, চোখে চশমা। সারাক্ষণ এই ফোনের মাঝে বসে থাকে। কে জানে এই ফোনে কি আছে।

শৈবাল এগিয়ে এসে তুহার দিকে এক পল তাকিয়ে শুধায়,

“রেডি হয়ে নাও আমরা বের হবো একটু পরে।”

একটু পর আবার নিজেই বলল,

“আমার হসপিটালে ইমার্জেন্সি কাজ পড়ে গিয়েছে। পরে তো আবার কারণ জিজ্ঞেস করতে করতে কানের পোকা মাথায় তুলে ফেলবা!”

বিরক্ত হয় তুহা। তার মোটেও ইচ্ছে ছিলোনা পুনরায় প্রশ্ন করার। শৈবাল শাহরিয়ার যে সব সময় এক লাইন বেশি বুঝে তা আরো একবার প্রমাণিত হয়েছে। সে বিরক্ত স্বরে বলেই ফেলে,

“অপ্রয়োজনে কথা বলেন কেনো? আপনার কথা গুলো হাম্বা স্বরে আমার নিকট পৌঁছায়। বিরক্ত হই আমি!”

চলবে,,,,,,,