নীড় হারা পাখি পর্ব-৩০+৩১

0
277

#নীড়_হারা_পাখি (কপি করা নিষেধ)
#৩০তম_পর্ব

তুরান যে টাকা দিয়েছে সেটা রিক্সায় খরচ না করে দুটো মিষ্টি কিনেছে। অভিলাষার কালোজাম খুব প্রিয়। মেয়েটির হাস্যজ্জ্বল মুখখানা দেখার লোভ তার এতোটা হাটার ক্লান্তিটাও উধাও করে দিয়েছে। এর মাঝেই একটি জিপ বিকট শব্দ করে থামলো তিমিরের সামনে। আকস্মিক ঘটনায় চমকে উঠলো তিমির। হাত থেকে মিষ্টির প্যাকেটটা পড়ে গেলো। খানিকটা রাগ ও হল। কিন্তু সেই রাগ দেখাতে পারল না। তারপূর্বেই ভয়ে মুখখানা শুকিয়ে আসল। কারণ তার সম্মুখে দাঁড়াল, তার সেই কোম্পানির ডিরেক্টরের ছোট ভাই শাহাদাত ইসলাম। তার এখন জেলে থাকার কথা। যতদূর জানা ছিলো মাদক পা/চা/রের কেসটি এখনো রফাদফা হয় নি। উপরন্তু শাহাদাতের বেইল হবার ও সম্ভাবনা নেই। তাহলে সে এখানে কেনো? তিমিরের মুখে চরম ভীতি প্রকাশ পেলো। মনআকাশে নিকষকালো ভয়ের কালো মেঘ জমেছে। শাহাদাতের ঠোঁটে লেপ্টে আছে কুৎসিত হাসি। হাসি কখনো শিরদাঁড়া কাঁপিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে এটা জানা ছিলো না তিমিরের। আজ জানলো, হয়তো রাখে। কারণ এখন তিমিরের বুকের কোনো এক প্রকোষ্টে জমে থাকা ভয়টা তার ভেতরটাকে বিষিয়ে তুলছে। তাই শাহাদাত এখন তার কাছে যমতুল্য। শাহাদাত কিছুটা এগিয়ে এসে শ্লেষ্মাজড়িত কন্ঠে বলল,
“ভালো আছো তিমির?”

তিমিরের গলা শুকিয়ে এলো। কপালে জমল শীতল ঘাম। কোনো মতে বলল,
“আপনি এখানে?”
“আশা কর নি, তাই না? আমিও আশা করি নি। ভেবেছিলাম ঐ জেলেই আমাকে সারাটাজীবন কাটাতে হবে। ভাগ্যিস বিশাল বাঁচিয়ে দিলো আমাকে”

তিমিরের বুঝতে বাকি রইলো না সে বাহিরে কেনো। বিশাল তার দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়েছে। কিছু কিছু মানুষ সর্বদা ভয়ে থাকতে চায়। ভয়ে বাঁচতে চায়। তাদের সম্মুখে মুক্তির দ্বার থাকলেও তারা নির্ভীক হতে পারে না। বিশাল সেই গোত্রের মানুষ। তিমির অন্তস্থল থেকে অসহায়ত্ব দীর্ঘশ্বাস রুপে বের হলো। শাহাদাতের ভেতর এক অদ্ভুত আত্মতৃপ্তি। কিছু কিছু মানুষ যেমন ভয়ে বাঁচে তেমনি কিছু কিছু মানুষ সর্বদা ভয় দেখাতে ভালোবাসে। শাহাদাত তাদের ই একজন। সে তার বিশ্রী হাসি চওড়া করে বলল,
“তুমি কি ভয় পাচ্ছো আমায়? ভয় পেও না। আমি তোমাকে কিছুই করবো। শুধু একটা অনুরোধ, ক্রাইম ব্রাঞ্চ থেকে তোমার কাছে ফোন আসবে। সম্ভবত তোমাকে সাক্ষী দিতে বলতে পারে। প্রত্যক্ষদর্শী যে তুমি। তোমার কাজ শুধু এটুকু হবে তুমি মানা করে দিবে। দেখো আমি চাইলেই তোমাকে মে/রে ফেলতে পারি। কিছু ছুচো মে/রে হাত নোংরা করবো না। ভাইয়া অনেক রেগে আছে। তুমি আমার অনুরোধটা মেনে নাও। এতে তোমার লাভ, ব্রিফকেস পৌছে যাবে তোমার বাড়ি। আর না মানতে চাইলেও আমার আপত্তি নেই। শুনেছি তোমার স্ত্রী গর্ভবতী, একটি বোন পাগল, একজন প্রতিদিন এই রাস্তায় কলেজে যায়। কখন কি হয় বলা তো যায় না। তুমি বুদ্ধিমান ছেলে। আশাকরি বুঝেছো। আজকে আসি? আবার দেখা হবে”

শাহাদাতের মুখশ্রী স্থির। সে কি সুন্দর শান্ত কন্ঠে কথাগুলো বলল। কিন্তু সেই কথায় শিরদাঁড়ায় বেয়ে হিমস্রোত নেমে গেলো তিমিরের। তার কান গরম হয়ে গিয়েছে। চোখ বিস্ফারিত হয়ে চেয়ে আছে। মুখে কোনো কথা নেই। বুক কাঁপছে ক্রমশ। শাহাদাত নিজের জিপে উঠে পড়লো। পুরোনো বন্ধুর মতো হাত নাড়িয়ে বিদায় নিলো। তিমির দাঁড়িয়ে রইলো সেখানেই। নিরব, স্তব্ধ_____________

*******

রাতের আকাশে এক বিন্দু আলো নেই। সবটুকু শুষে নিয়েছে কৃষ্ণ রজনী। অভিলাষা একটি জামার কাজ শেষ করেছে। বসে থাকতে থাকতে পিঠ লেগে এসেছে। তবুও মুখে তৃপ্তির হাসি। সে তার বান্ধবী, মাহিরার বুটিকে কাজটি নিয়েছে। এই জামাটি নিয়ে মোট চারটি জামা এই সপ্তাহে শেষ করেছে। এইসব পৌছে দেবার দায়িত্ব সুরভীর। সে মাহিরার কাছ থেকে কাপড় সুতো নিয়ে আসে, অভিলাষার কাজ শেষ হলে পৌছে দেয়। অবশেষে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অভিলাষাকে সহায়্তা করবে। প্রথমে এক সপ্তাহে একটি দিত, এখন একসপ্তাহে চার থেকে পাঁচটি জামা শেষ করে। ধীরে ধীরে অভিলাষার কাছে হাজার পাঁচেক টাকা জমেছে। তবে এগুলো তিমিরের আড়ালে করে সে। সেদিন তো প্রায় ধরাই পড়ে গিয়েছিলো। তখন সামলাতে বলেছে, “আমার তো কাজ নেই, তাই তিতির, ভাবির পুরানো জামায় কাজ করছি”

তিমির ও ঘাটায় না। একটি মানুষ কতদিন নিষ্ক্রিয় থাকবে। অভিলাষা কাপড়টি গুছিয়ে রাখতেই দরজায় খট করে শব্দ হল। মিষ্টির প্যাকেট হাতে তিমির ঢুকেছে। তবে মুখে হাসি নেই। শুষ্ক মুখখানা ক্লান্তিতে মিয়ে আছে। অভিলাষা হাসিমুখে বলল,
“কেমন হল পরীক্ষা?”
“হু?”

অভিলাষার কন্ঠে যেনো সম্বিত ফিরলো তিমিরের। ম্লান স্বরে বলল,
“ভালো, তুমি এখনো এগুলো করছো?”
“এই যে শেষ হয়ে গেছে”
“খেয়েছো কিছু?”
“হ্যা, ভাবি ফল কেটে দিলো তো। তোমাকে ক্লান্ত লাগছে খুব”
“হাত জেগেছি তো তাই, তোমার জন্য মিষ্টি এনেছি। কালোজাম”
“টাকা পেলে কোথায়?”

অভিলাষার প্রশ্নে স্মিত হাসল। তারপর বিদ্রুপের কন্ঠে বলল,
“বেকার বলে বউকে খাওয়াতে পারবো না, এমনটা নয় কিন্তু”
“আমি তা বলি নি”
“জানি, ভাইয়া টাকা দিয়েছিলো। সেটা দিয়েই কিনেছি”
“তুমি হেটে এসেছো?”

অভিলাষার কন্ঠে সূক্ষ্ণ বিষাদের ছাপ। তিমির শার্ট বদলে তার গা ঘেষে বসল। তারপর বলল,
“কি হল? মুখ ফুলালে যে?”
“কি দরকার ছিলো মিষ্টি কেনার? একেই পরীক্ষার দখল। তারপর কতটা রাস্তা হেটে এলে। শুধু শুধু?”
“মোটেই না, আমার আম্মার জন্য এনেছি। এহ শুধু শুধু! শোনো মহিলা, হতে পারি আমি বাইরের গরীব কিন্তু ভেতর থেকে আমি বাদশাহ। আমি জানি আমার আম্মার মিষ্টি ভালো লাগে”
“আদিক্ষেতা”
“হিংসে হচ্ছে? দেখ আম্মা, তুই আসিস নি এখন ই তোর মা হিংসে করছে। আসলে না জানি কি করবে”

অভিলাষার বাড়ন্ত পেটে আলতো স্পর্শ করে কথাখানা বলল তিমির। অভিলাষা খিলখিল করে হেসে উঠল। মানুষটা পারেও, যেনো সত্যি সত্যি তার মেয়ে তার সম্মুখে বসা। এমন বাবা পাওয়াও ভাগ্যের ব্যাপার। অভিলাষা খানিকটা থেমে বলল,
“একটা কাজ করবে?”
“কি?”
“ওখানে একটা বাক্স আছে। একটু নিয়ে আসবে?”

ড্রেসিং টেবিলের দিকে দেখিয়ে বলল অভিলাষা। তিমির ও বিনা প্রশ্নে বাক্সটি নিয়ে আসল। তারপর অভিলাষা সেটা খুলতেই তার মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো। সেখানে বেশ কিছু একশত, দুইশত টাকার নোট। তিমির প্রশ্ন করার আগেই অভিলাষা বলল,
“এখন থেকে হেঁটে আসবে না”
“এতোগুলো টাকা তোমার কাছে?”

তিমিরের কন্ঠে সন্দেহ। কপালে তীব্র ভাঁজ। অভিলাষা বলল,
“আমার কামাই এর টাকা এগুলো। বলবো বলবো করে বলি নি। আমি টুকটাক সেলাই এর কাজ করি। সেখান থেকেই”

হঠাৎ করেই তিমিরের মুখশ্রী হয়ে গেলো কঠিন। অভিলাষা কথা শেষ করার পূর্বেই ভরাট কন্ঠে বলতে লাগল,
““আমি খুব অপদার্থ তাই না? এতোই অপদার্থ যে নিজের প্রেগন্যান্ট স্ত্রীর টাকায় চলতে হবে আমাকে?”……………

চলবে

#নীড়_হারা_পাখি (কপি করা নিষেধ)
#৩১তম_পর্ব

হঠাৎ করেই তিমিরের মুখশ্রী হয়ে গেলো কঠিন। অভিলাষা কথা শেষ করার পূর্বেই ভরাট কন্ঠে বলতে লাগল,
“আমি খুব অপদার্থ তাই না? এতোই অপদার্থ যে নিজের প্রেগন্যান্ট স্ত্রীর টাকায় চলতে হবে আমাকে?”

তিমিরের কন্ঠটা বড্ড বেক্ষাপ্পা শোনালো। তিমির মাটির দিকে তাকানো। অভিলাষা কিছুটা নড়ে চড়ে উঠলো। ধীর স্বরে বলল,
“এই প্রশ্নটা বেমানান নয়?”
“বেমানান নয় কি? আগে তো আমাকে জিজ্ঞেস করতে, মতামত নিতে। আজ এতোটাই বেকার হয়ে গেলাম যে জিজ্ঞেস করা অবধি জরুরি মনে করলে না”
“তুমি ভুল বুঝছো, এমনটা মোটেই নয়। আমি তোমাকে জানাতে চাই নি, তুমি বারণ করবে বলে। অন্য কোনো কারণে নয়”
“বুঝলাম”

বলেই উঠে দাঁড়ালো তিমির। মৃদু কন্ঠে বলল,
“ওই টাকাগুলো রেখে দাও। আর তোমার বান্ধবীকে জানিয়ে দিবে তুমি আর কাজ করবে না”
“কেনো?”
“আমি এতোটাও কাপুরুষ নই যে স্ত্রীর টাকায় চলবো”
“আমার টাকায় তোমাকে চলতে হবে এমন কথাতো আমি বলি নি। দাম্পত্য মানেই দুজনের প্রত্যয়ের মিলন। তাহলে আমার তোমার তো আসার কথা নয়। আমি আমাদের জন্যই এই টাকাগুলো উপার্জন করেছি। এখানে কাপুরুষত্ব কিসের! তুমি উপার্জন কর বা আমি এক কথা কি নয়?”
“না এক নয়”

কঠিন স্বরে কথাখানা বলল তিমির। তিমিরের কন্ঠের ঝাঁঝে চমকে উঠল অভিলাষা। আজ বড্ড অপরিচিত লাগছে তিমিরকে। এই তিমিরকে চিনতে পারছে না। তিমিরের কি কিছু হয়েছে? অভিলাষা শান্ত কন্ঠে বলল,
“তুমি কিছু নিয়ে চিন্তিত? কিছু হয়েছে কি?”

তিমির অনিমেষ নয়নে কিছু সময় তাকালো অভিলাষার দিকে। খুব নিপুনভাবে দেখলো মেয়েটিকে। তারপর কিছু না বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। তিমিরের আচারণ অবাক করলো অভিলাষাকে। তিমির তো এমন নয়। তাহলে আজ কি হল!

*******

বসার ঘরে গম্ভীর মুখে বসে আছেন শেফালী বেগম। রাহাত সাহেবের মুখে চিরচারিত হাসির লহর। তিনি প্রচন্ড খুশি। টপাটপ রসগোল্লা মুখে তুলছেন। আর এক একটা কথা বলে হো হো করে হাসছেন। তার কথায় তাল মিলিয়ে শফিক সাহেব ও হাসছেন। তুরানের মুখ গম্ভীর। কথা নেই। সে তীর্যক দৃষ্টিতে দেখছে রোদ্দুরকে। সিমসাম শার্ট ছেলেটির বদনে। মুখে স্নিগ্ধ হাসি। হিমা বেগম জোর করছে কিছু খাওয়ার জন্য। ছেলেটি হাসি মুখে তা মেনে নিচ্ছে। তুরান কখনো ভাবে নি ছেলেটি সত্যি সত্যি নিজের মা-বাবাকে নিয়ে আসবে। ব্যাপারটা কল্পনাতীত ছিলো। আর অবাককর ঘটনা শেফালী বেগম এসেছেন ও। তবুও সে স্থির নয়। কারন মহিলা খুব ই প্যাঁচ ধরা গোছের। কোনো একটা অপ্রীতিকর ঘটনা করবেন না সেই বিশ্বাস নেই। এদিকে থেকে থেকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করছেন শেফালী বেগম। কিন্তু তার অগ্নিদৃষ্টিকে পাত্তা দিচ্ছেন না রাহাত সাহেব। কারোর বাসায় এলে একটু মেপে খেতে হয় কথাটা তিনি মানতে নারাজ। আরে ভাই, সামনে খাবার দেওয়া হয়েছে তো দেখানোর জন্য নয়। খাওয়ার জন্য। তাহলে মেপে খাওয়া কেনো। সাত নম্বর মিষ্টিটা মুখে তুলতেই যাবেন শেফালী বেগম দাতে দাত চেপে বললেন,
“কি হচ্ছে কি? ডায়াবেটিস তোমার। গোপাগপ খাচ্ছো।“
“ছেলের বিয়ে আর বাপ খাবে না? এ তো তোমার জু লু ম, আর একটা মিষ্টিতে কি যায় আসে, তাই না বেয়াই সাহেব?”

রাহাত সাহেবের কথায় কিছুটা হলেও অপ্রস্তুত হলেন শফিক সাহেব। শুধু হাসি ঠোঁটে লেপ্টে বললেন,
“লজ্জা করবেন না, খান”
“বউ মা কোথায়, দেখছি না?”

রাহাত সাহেবের প্রফুল্লতা সহ্য হচ্ছে না শেফালী বেগমের। কিন্তু দাঁতে দাঁত পিষে আছেন। কারণ রাগ মানেই হেরে যাওয়া। মুখ বন্ধ করে সয়ে নিক। সবার দিন আসে। এখন কোনঠাসা করলেও একদিন তারও হবে। এর মাঝেই সুরভী নিয়ে এলো তুলিকাকে। সাদা শাড়ি পরণে, লম্বা চুল খোঁপায় বাঁধা। সাজবিহীন কোমল মুখশ্রীকে নিমেষহীন চোখে দেখছে রোদ্দুর। সবাই হ্যাংলা বললেও কি কিছু যায় আসে। সাদায় মেয়েটিকে শ্বেতপদ্মের মতো লাগছে। “তুলির আঁচড়ের শ্বেতপদ্ম”। ইচ্ছে হলো কাজলটিকা দিতে, সুন্দর জিনিসে নজর লাগে বেশ। তুলিকাকে বসানো হল রোদ্দুরের বিপরীতে। ভীত, থমথমে নারীটি একনজর তাকালো রোদ্দুরের দিকে। রোদ্দুরের শান্ত দৃষ্টিতে নিজেকে খোঁজার চেষ্টা করছে। তার অবুঝ হৃদয় সামাজিক নিয়ম জানে না। শুধু জানে এখানে বসতে হবে। কারণ ভাবি বলেছে। সুরভী তার পাশে দাঁড়ানো। তুলিকার হাত তার হাতে। শেফালী বেগমকে দেখে যেনো সেই বাঁধন শক্ত হল। সুরভী ইশারার বোঝালো,
“ভয় নেই”

কথা আগালো। বিয়ের কথা। রোদ্দুর দেরি করতে চাচ্ছে না। যত তাড়াতাড়ি হবে সেটাই ভালো। তুরান এই মাঝে বলে উঠল,
“আমার বোনের মানসিক অবস্থা আপনাদের জানা। লুকোনোর কিছুই নেই। তবুও যেহেতু বিয়েটা হচ্ছে, তাই আমার একটি অনুরোধ তাকে সুস্থ হবার সুযোগ দিবেন”
“তুমি চিন্তা করো না, বউ না মেয়ে নিচ্ছি”

রাহাত সাহেবের কথায় মৃদু হাসল তুরান। রোদ্দুর তখন নির্লিপ্ত স্বরে বলল,
“তুলিকার সাথে আমার কথা আছে, একটু একাকীত্ব চাই”
“লজ্জার মাথা খেয়েছো নাকি?”

শেফালী বেগম সাথে সাথেই বাঁহ সাধলেন। কিন্তু রোদ্দুর তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
“লজ্জার কি আছে? যাকে বিয়ে করছি তার সাথে কথা থাকবে না? আর তুলিকার সাথে কথাটা বলা প্রয়োজন”

শেফালী বেগম কিছু বলার আগেই রাহাত সাহেব অনুমতি দিলেন। সুরভী দুজনকে নিয়ে গেলো ছাদে। বিকেলের তখন শেষ প্রহর। পশ্চিম আকাশ যেনো সিঁদুরখেলায় লিপ্ত। সূর্যের তীব্র রঙ ছড়িয়ে যাচ্ছে সর্বত্র। তেজহীন আলো আঁছড়ে পড়ছে তুলিকার গায়ে। সমীরের বেগ শিথিল। রোদ্দুর নিষ্পলক চোখে দেখছে তুলিকাকে। তুলিকার সেদিকে নজর নেই। সে দেখতে মগ্ন মুক্ত আকাশ। রোদ্দুর ধীর কন্ঠে বলল,
“তোমার হাতটা ধরতে চাই, অনুমতি দিবে তুলিকা?”

তুলিকার ধ্যান ভাঙ্গলো। গোলগোল ঘোলাটে চোখে রোদ্দুরের প্রতিবিম্ব। রোদ্দুর আবার বলল,
“আমি কিন্তু তোমাকে একেবারে নিজের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। তোমার সর্বত্রে আমার বিস্তার থাকবে। আপত্তি থাকলে বলে দাও। কিন্তু সময় শুধু এখন ই। এরপর আর সেই সুযোগ নেই”
“মানে?”
“মানে এখন থেকে আমার কাছে থাকবে। আমার সাথে”
“মা বকবে না”
“বিয়ে হচ্ছে তো, বকবে কেনো?”
“আমি তোমার বউ হব?”
“সন্দেহ আছে?”

তুলিকা উত্তর দিলো না। বউ বর খেলা তো কিছুদিন আগেও খেলেছিলো। সে জানে বউ এর মানে। কিন্তু বউ কি সে সত্যি হতে পারবে? রোদ্দুর কিছুটা এগিয়ে এলো। আলতো হাতে কপালে লেপ্টে থাকা অবাধ্য কিছু চুলকে ঠেলে দিলো কানের পেছনে। তারপর ফিসফিসিয়ে বলল,
“আমাদের একটা ছোট্ট সংসার হবে। যেখানে থাকবো তুমি আমি আর তুলতুল। তুমি আমার সাথে থাকবে না মায়াবন বিহারিনী? আমার পৃথিবীটা যে তুমি ছাড়া রিক্ত। তুমি যে এই শূন্যতার পূর্ণতা”

তুলিকা নিষ্পলক নয়নে দেখছে শ্যাম পুরুষকে। চোখ জ্বালা করছে। হৃদয় কাঁপছে। অনুভূতিগুলো দলা পাকাচ্ছে। মনে হচ্ছে মানুষটির কন্ঠ কাঁপছে। তার আকুতিময় চোখকে কি ফিরিয়ে দেওয়া যায়?

*****

হাতে একখানা পত্র। সাদা কাগজে গুটি গুটি করে লেখা। তিতির কাগজটি হাতে নিয়ে বসে আছে। পড়বে কি না সেই দ্বিধায় সে পিষছে। কারণ কাগজের নিচের নামটি তার সহ্য হয় না………

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি