নীরদ ক্লেশের অন্ত পর্ব-১৮+১৯

0
157

#নীরদ_ক্লেশের_অন্ত
[পর্ব-১৮]
লেখিকা-নামীরা অন্তিকা

[প্রাপ্তমনস্কদের জন্য উন্মুক্ত]
“স্বামীদেরকে বউয়ের কাছেই অসভ্য হতে হয়। অন্যথায় দেখা যাবে অন্য নারীর কাছে অসভ্যতামি করলে বউ খুন্তি দিয়ে পে’টানো শুরু করে দিচ্ছে। তোমার হাতে খুন্তি পে’টা হতে চাইনা দেখেই তো একমাত্র তোমার কাছেই নিজেকে অসভ্য রূপে সাজাই।”(মৃদু হেসে)

শেরহামের এহেন কথায় মিটমিট করে হেসে উঠলো সারু। শেরহামের বুকে আঙ্গুল দিয়ে লাভ আঁকতে আঁকতে হেসে বলে উঠলো,,

“অন্য নারীর কাছে গিয়ে দেখুন না, শুধু খুন্তি কেনো প্রয়োজন পড়লে হারপিক মাখিয়ে টয়লেট মাজার ব্রাশ দিয়ে পে’টাবো।”(হেসে)

শেরহাম চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“আচ্ছা জী, আমাকে হারপিক মাখানো টয়লেট মাজার ব্রাশ দিয়ে পে’টাবে! এতো বড় সাহস তোমার। তোমার শাস্তি আমাকে তেরোটা বাচ্চার বাবা বানানো, হুহ।”

সারু বেশ জোরেই হেসে উঠলো। শেরহামের বুকে আলতো করে থা’প্প’ড় মে’রে বলে উঠলো,,

“সবার পটি, হিসু কিন্তু আপনাকে দিয়েই পরিষ্কার করাবো জনাব, তখন কিন্তু আমার সাহায্য পাবেন না।”

শেরহাম বাঁকা হেসে বলল,
“হুহ তোমার সাহায্য কে নিবে? বাচ্চাদের পটি পরিষ্কার করার জন্য দরকার পড়লে আবার বিয়ে করবো, সমস্যা কই।”

সারু ভ্রু কুঁচকে মুখ ফুলিয়ে শেরহামের বুকে শক্ত করে আঙ্গুল দেবে বলে উঠলো,,

“মনে হচ্ছে হারপিক মাখানো টয়লেট মাজার ব্রাশের কথা ভুলে গিয়েছেন। একদম মুখে ঘষে দেবো বলছি আরেকবার বিয়ে করার কথা বললে।”(মুখ ফুলিয়ে)

শেরহাম সারুর এহেন কাণ্ডে হেসে দিলো। সারুর নাকের সাথে নিজের নাক ঘষে বলে উঠলো,,

“তোমায় উপেক্ষা করে অন্য নারীকে বিয়ে করার কথা মাথায় আনলে সেদিন আমার মৃ’ত্যু হোক সারুউউউ।”(গলার স্বর টেনে)

“বাবাহ হঠাৎ যেন অনেক বউপ্রেমী হয়ে গেলেন জনাব। এই বউপ্রেমী যদি আগে হতেন তাহলে এতদিনে আমরা হ্যাপি কাপল হইতাম উইথ দুই ছেলেমেয়ে।”(মুখ ভেঙিয়ে)

শেরহাম সারুকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো। দুহাত সারুর কাঁধে রেখে ঝুঁকে সারুর চোখে চোখ রেখে বল উঠলো,,

“সেদিন সন্ধ্যায় যেভাবে সিডিউজ করেছিলেন ম্যাডাম, নিজেকে কিভাবে সামলিয়েছিলাম তা একমাত্র আমিই জানি। আপনার তখন আমার ভালোবাসা পাওয়ার সময় ছিলোনা, তাই সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকতাম আপনার সামনে। পাছে যদি আপনার মায়ায় গভীর ভাবে নিজেকে আবৃত করে আপনার উপর একটু বেশিই অধিকার খাটিয়ে ফেলি এই ভয়ে। কিন্তু ঠোঁ’টকা’টা আপনি, বরাংবার চু’মু খাবো চু’মু খাবো মুখ ফসকে বলে ফেলতেন। আর এখন তো আপনাকে চু’মু খাওয়ার কথা বললে আপনি মুখ বাঁকান!”

সারু আচরণ গত এই কথাতেও মুখ বাঁকালো। শেরহাম সারুর মুখ বাঁকানো দেখে হেসে উঠল।

“হয়েছে আর মুখ বাঁকানো লাগবেনা, রেডি হয়ে নাও। আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরোবো।”

সারু ঠোঁট উল্টে বলল,,

“এসেছি তো একদিনও ঠিক মতো হয়নি, এর মাঝেই যাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। সমস্যাটা কি?”(ঠোঁট উল্টে)

“সমস্যাটা হচ্ছে উৎস চৌধুরী। ওপেনলি থ্রেট দিয়েছে আমাকে আর আদিতকে যে স্নিগ্ধাকে যেভাবেই হোক বিয়ে করবেন। এমনিতেও ফুলের মন মেজাজ ভালো নেই। এতটা দিন অনেক বার হাসানোর চেষ্টা করেছি, তবুও একবারের জন্যও হাঁসেনি ফুল। যেই ফুল সবসময় দুরন্তপনা বজায় রেখে অন্যকে হাসাতো সে ফুল গত দুমাসে একবারও হাঁসেনি। কতটা মানসিক যাতনায় আছে আমার ফুল! এমতাবস্তায় উৎস চৌধুরী ফুলকে জোর করে বিয়ে করার কথা বলছে, ভাবো ফুল কতটা ভয় পাচ্ছে? তাছাড়া উৎস চৌধুরীকে সুবিধার মনে হচ্ছেনা। ওনার জন্য ফুল এখানে সেইফ নয়। তাই যেতে হচ্ছে, ফুলকে নিয়ে আর কোনো রিস্ক নিতে চাইনা। আমার ফুল ভালো নেই, আমি চাইনা নতুন কোনো মানসিক যাতনা আমার ফুলটাকে ঝরিয়ে দিক।”

সারু শেরহামের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। শেরহাম সারুর এহেন দৃষ্টিতে মৃদু হাসলো, দুহাতে সারুর গাল স্পর্শ করে বলে উঠলো,,

“দাভাই হিসেবে আমি এই কথাগুলো বলেছি, তবে শেরহাম হিসেবে যদি বলি তাহলে এটাই বলবো উৎস চৌধুরী সব দিক দিয়েই পারফেক্ট এবং ফুলের জন্যও পারফেক্ট। কিন্তু ফুল এখন ঠিক নেই এবং আগামীর কোনো পরিস্থিতির জন্যও প্রস্তুত নয়। উৎস চৌধুরীর চোখে আমি ফুলের জন্য ভালোবাসা দেখেছি, নিখুঁত ভালোবাসা। কিন্তু যেভাবে জোর করে বিয়ে করার কথা হুমকি ধামকি দিচ্ছেন এটাতে ফুল আরও বেশি মানসিক যাতনায় ভুগবে। যার পরিণতি ফুলের জন্য ভালো হবেনা।”

“বুঝতে পেরেছি, এখন সরুন আমি রেডি হবো। খালি সুযোগ পেলেই এমনভাবে চেপে ধরেন কেনো?”

শেরহাম ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,
“আমার বউ আমি চেপে ধরবো, এটা একান্ত আমার ইচ্ছা। তুমি এই সম্পর্কে বলার কেউ হওনা।”

“এহহ ঢং।”(মুখ বাকিয়ে)

সারু আর দাঁড়ালোনা, শেরহামকে ঠেলে সব গোছগাছ করা শুরু করলো। শেরহাম কিছুক্ষন সারুর দিকে চেয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।


কথামতো সবাই ঘন্টাখানেকের মধ্যে রেডি হয়ে বেরোলো বাড়ি ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। ইলাও ওদের সাথেই ফিরে যাচ্ছে। দুটো গাড়ির মধ্যে একটিতে স্নিগ্ধা, কল্যাণী, মিতালি, নেহাল রায় বসেছেন। আরেকটিতে সারু, শেরহাম, আদিত ও ইলা বসেছে। শেরহাম ড্রাইভারের পাশের সিটে বসেছে। পেছনের সিটে জানালার পাশে বসেছে সারু। মাঝখানে ইলা বসেছে আর ইলার পাশে আদিত।
আদিতের পাশে বসে ইলা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলো। আদিতকে বিরক্ত করার জন্য বারবার আদিতের দিকে চেপে বসছে, আর আদিত বেচারা ভ্রু কুঁচকে মুখ গম্ভীর করে ইলার দিকে চেয়ে আছে। ইলা আদিতের এমন মুখশ্রী বেশ উপভোগ করছে।
এদিকে আদিতের আর সহ্য হচ্ছেনা, মেয়েটা কিছুক্ষন পরপরই আদিতের দিকে সরে আসছে। তার উপর চুলের ক্লিপ খুলে দিয়েছে, বাতাসের সাথে সাথে ইলার চুল উড়াউড়ি শুরু করেছে সেই সাথে আদিতের মুখে আছড়ে পরছে। আদিত খুবই বিরক্ত, ইলা ইচ্ছে করেই আদিতকে বিরক্ত করছে। কিয়ৎক্ষণ আদিত ইলার দিকে চেয়ে রইলো ভ্রু কুঁচকে, ইলা আদিতের মুখশ্রী পানে চেয়ে মিটমিট করে হাসছে। কি ভেবে আদিত বাঁকা হাসি দিলো, তা দেখে ইলা ভ্রু কুঁচকালো। কিছুক্ষনের মধ্যেই টের পেলো আদিত ইলার কোমরে হাত দিয়ে ইলাকে নিজের দিকে মিশিয়ে নিয়েছে। চোখ বড়োবড়ো করে তাকালো ইলা, আদিত বাঁকা হেসে ফিসফিস করে বলে উঠলো,,

“অনেক শখ না আমার শরীরের সাথে মিশে যাওয়ার, ভালোভাবে মিশতে পারছিলেনা দেখে নিজ উদ্যোগে তোমাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলাম।” (ফিস ফিস করে )

ইলার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো আদিতের ছোঁয়ায়। ঢোক গিলে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো ইলা। মুখে আলতো হাসি রেখে বলে উঠলো,,

“আমিতো আপনার ছোঁয়াই পেতে চাই জ আঁকার জা ন, জান।”(আলতো হাসি দিয়ে)

আদিত ইলার এহেন কথায় খুশি হলোনা যেন। আদিত ভেবেছিলো পাল্টা বিরক্ত করবে ইলাকে। কিন্তু ইলা, মেয়েটা তো আস্ত ঠোঁ’টকা’টা বে’শরম! কই চার বছর আগ অব্দিও তো লজ্জাবতী ফুলের মতো ছিল। ভালোবাসি বললেও তো লজ্জায় নুইয়ে যেত। কিন্তু এখন! এখন মেয়েটা বেশরমের মতো কথা বলছে।
আদিত দাঁতে দাঁত চেপে রাগত স্বরে বলে উঠলো,,

“আগে তো ভালোবাসি বললেও লজ্জায় লাল নীল হয়ে যেতে। এখন, এখন তোমার লজ্জা কোথায় গেছে? মুখে আটকাচ্ছেনা এভাবে বলতে? লজ্জাবিহীন মেয়ে।”(রাগত স্বরে)

ইলা শান্ত স্বরে আলতো হাসি দিয়ে কথাটা বললেও ভেতরে ভেতরে পাগলের মতোন হাসছে। পুনরায় ইলা বলে উঠল,,

“প্রেমিকের কাছে কিসের লজ্জা জান? আপনি আমার কাছে, আমি আপনার কাছে লজ্জা পেলে আমার শাশুড়িমা ঠাম্মি কিভাবে হবেন? ভারী আশ্চর্য কথা বলেন।”(শান্ত স্বরে)

আদিত দাঁত কিড়মিড় করে উঠলো, ইলার কোমর থেকে হাত সরিয়ে বিরক্ত সহিত বলে উঠলো,,

“অসভ্য মেয়ে, মুখে লাগাম টানো নয়তো..”

আদিতকে কথা শেষ না করতে দিয়ে ইলা ধীর কণ্ঠস্বরে বলে উঠলো,,

“নয়তো? নয়তো কি চু’মু খেয়ে মুখে লাগাম টেনে দিবেন? হাউ রোমান্টিক! আপনার মতো রোমান্টিক একটা হ্যান্ডসামকে পেয়ে আমি নিজেকে খুউউউব ভাগ্যবতী মনে করছি। আহা চিত্ত জুড়িয়ে শীতল স্রোত বয়ে যাচ্ছে।”(ধীর কণ্ঠস্বরে)

আদিত কঠোর চাহনিতে ইলার চোখে চোখ রাখতেই ইলা চোখ টিপ দিলো। আদিত বিড়বিড়িয়ে “অসহ্যকর” বলে নজর সরিয়ে বাহিরে রাখো। আর ইলা সে তো দিব্যি আরামে আদিতের গা ঘেঁষে রইলো।

এদিকে আদিত ইলার কান্ড পুরোটাই আড়চোখে দেখলো সারু। সারুর প্রচুর হাসি পাচ্ছে ওদের এহেন কাণ্ডে। আদিত ইলার কথাবার্তা সবটা না শুনলেও ইলা আদিতকে ‘জান’ বলে কিছু বলছে এটুকু শুনতে পেয়েছে। আদিতের মুখোভঙ্গি দেখে প্রচুর হাসি পেয়েছিলো সারুর। সারু ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো, আদিত ইলার উপর কোনো বিষয় নিয়ে অভিমান করে আছে বেশ বুঝতে পারলো সারু।

“গোটা পৃথিবীতে খুঁজো, আমার মতো কে তোমারে এতো ভালোবাসে।
এই মনের ঘরে এসো, এই বুঁকেরই বা পাশেতে তোমার নামই জপে।”

ইলা ফিসফিস করে আদিতের কাঁধে থুতনি রেখে গেয়ে উঠলো। আদিত ভ্রু কুঁচকে ইলার মুখশ্রী পানে চেয়ে রইলো। ইলা আলতো হাসলো।

চলবে..?

#নীরদ_ক্লেশের_অন্ত
[পর্ব-১৯]
লেখিকা-নামীরা অন্তিকা

“ত্যাড়ামি বাদ দিয়ে বাড়ি গিয়ে সোজা টালবাহানা ছাড়া আমায় বিয়ে করবেন, অন্যথায় আপনাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলবো।”(বজ্র কণ্ঠে)

ইলার বাক্য বচনে আদিত ভ্রু না কুঁচকে পারলোনা। বাজ খাই কণ্ঠে বলে উঠলো,,

“এই মেয়ে এই, মেয়ে হয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করার থ্রেট দিচ্ছ। কানের নিচে একটা দিলে কান্না করতে করতে বিছানায় সাগর তৈরী করে ফেলবে। নিজের লিমিট ক্রস করতে আসবেনা।”(বাজ খাই কণ্ঠে)

ইলা মুখে হাত দিয়ে মিটমিট করে হাসলো, মুখে হাসি বিদ্যমান রেখে বলে উঠলো,,

“আমি তো জানি আমি লিমিট ক্রস করলে আপনি রেগে আমায় বিয়ে করে ফেলবেন অতঃপর আমাদের ডজনখানেক বেবি হবে। আয়হায়, মে তো ফিদাআআ হো গ্যায়া।”(মিটমিট করে হেসে)

আদিত মুখোভঙ্গি এমন করলো যেন রাজ্যের বিরক্ত সে ইলার উপরে। জানালার দিকে মুখ করে আদিত বিড়বিড়িয়ে বলে উঠলো,,

“ন্যাকাষষ্ঠী জানি কোথাকার।”(বিড়বিড়িয়ে)

ইলা এক গাল হেসে আদিতের এক হাত জড়িয়ে ধরলো, আদিত ছাড়িয়ে নিতে গিয়েও নিলোনা।
আদিত মূলত ইলাকে চায়, ভীষণ ভাবে চায়। কিন্তু তার জীবনে সে যে পাপ করেছে, সে পাপের আঁচ সে ইলাকে স্পর্শ করতে দিতে চায়না। সবটা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো আদিত।

এদিকে সারু মুখ গোমড়া করে একবার শেরহামের দিকে তাকাচ্ছে একবার জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাচ্ছে তো আরও একবার আড়ি পেতে আদিত ইলার কথাবার্তা শোনার চেষ্টা করছে। বিরক্তিতে সারুর চোখ মুখ কুঁচকে এলো। বিড়বিড়িয়ে বলে উঠলো,,

“ভাল্লাগেনা, এভাবে কতক্ষন বসে থাকা জায়গা! এই লোক পাশে থাকলেও বসে থাকা যেত, কি একা একা একজোড়া কবুতরের পাশে বসে ওদের ঠোকরা ঠুকরি দেখছি।”(বিড়বিড়িয়ে)


কক্সবাজার টু ঢাকা জার্নি করে প্রায় সকলেই ক্লান্ত। রাত হয়ে এসেছে অনেকটা। কল্যাণী ইলাকে রায় বাড়িতে থাকতে বললেন কিন্তু ইলা থাকবেনা, সে বাড়িতেই যাবে। শেষে কল্যাণী আদিতকে বললেন ইলাকে বাড়িতে ছেড়ে আসতে। আদিত একনজর ইলার দিকে তাকিয়ে গাড়ির উদ্দেশ্যে গিয়ে বসলো। ইলা মৃদু হেসে গাড়িতে গিয়ে উঠলো।


খাওয়ার টেবিলে প্লেটের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে সারু। এতদিন যা খেত তারচেয়েও দুই গুণ বেশি খাবার প্লেটে। সারু অসহায় চোখে পাশে বসা শেরহামের দিকে তাকালো। শেরহাম ইশারা করলো খাওয়া শুরু করতে।
সারু একে একে কল্যাণী, নেহাল রায়, স্নিগ্ধা, আদিত ও মিতালির দিকে তাকালো। মিতালির দিকে তাকাতেই মিতালি বলে উঠলেন,,

“সবার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলে কি তোমার প্লেটের সব খাবার উধাও হয়ে যাবে? এসব তোমাকে খেয়ে শেষ করতে হবে। তাই তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু করো।”

সারুর আর করার কিছুই রইলোনা। সবাই একসাথে জেকে ধরেছে তাকে সব খাবার শেষ করানোর জন্য। অগত্যা সারুকে খাওয়া শুরু করতে হলো। সারুর নজর গেলো কল্যাণীর পাশে থাকা স্নিগ্ধার দিকে। স্নিগ্ধা মুখে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে চেয়ে আছে তার দিকে। সারু ভাবলো, স্নিগ্ধার সাথে তার ভালো সম্পর্ক। কিন্তু স্নিগ্ধার সাথে হয়ে যাওয়া ঘটনার পর স্নিগ্ধা একেবারে নিশ্চুপ নির্বাক হয়ে গেছে। সারু চেয়েও স্নিগ্ধার সাথে তেমন কথা বলতে পারেনি। সব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো সারু। মৃদু কণ্ঠস্বরে বলে উঠলো,,

“এতসব আমি কিভাবে খাবো! আমার পক্ষে সম্ভব নয়..”(মৃদু কণ্ঠস্বরে)

সারুর কথা পুরোপুরি শেষ না হতেই হুট করে স্নিগ্ধা বলে উঠলো।

“দাভাই খাইয়ে দিলে নিশ্চয়ই খাবে। দাভাই বৌদিকে খাইয়ে দাও।”(থেমে থেমে)

খাওয়া বাদ দিয়ে সবাই স্নিগ্ধার দিকে তাকালো। মেয়েটা আজ এতটা দিন পর নিজ ইচ্ছাকৃত কিছু বলেছে। এদিকে সবাইকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে স্নিগ্ধা অস্বস্তিতে মাথা নিচু করে ফেললো। কল্যাণী হালকা কেঁশে বলে উঠলেন,,

“স্নিগ্ধা মা যেহেতু বলেছে শেরহাম নিজ হাতে খাইয়ে দে সারুকে।”(হালকা কেঁশে)

সারু শেরহামের দিকে আড়চোখে তাকালো। শেরহাম হালকা হেসে সারুর প্লেট থেকে এক লোকমা নিয়ে সারুর মুখের সামনে ধরলো। সারু শেরহামের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।
শেরহাম ইশারা করলো মুখ হা করতে। সারু মুখ হা করে খাবার টুকু খেয়ে নিলো। খাবার শেষ হতেই স্নিগ্ধা বললো,,

“এই না বললে সবটা খেতে পারবেনা, দাভাই খাইয়ে দিতেই তো সবটা খেতে নিলে।”

স্নিগ্ধার কথায় বেশ লজ্জা পেলো সারু। খাওয়ার টেবিলে শশুর শাশুড়ি, জেঠি শাশুড়ি, ভাসুর এতগুলো মানুষের সামনে শেরহামের হাতে খাবার খেলো। ভাবতেই সারুর কান গরম হয়ে এলো।

“বৌদি আজকে আমি তোমার সাথে ঘুমাবো।”(নিচু স্বরে)

স্নিগ্ধা একথা বলে নীরবে উঠে ধীর পায়ে নিজের কক্ষের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলো। কল্যাণী বহুদিন পর মেয়েটাকে এমন নিজ ইচ্ছায় কথা বলতে ও সারুর সাথে একসাথে ঘুমাবার কথা বলতে দেখে খুশি হলেন। কল্যাণী মনে প্রাণে চাইছেন স্নিগ্ধা আবারো আগের মতন প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক।
সারু বেশ খুশি হলো, অনেকদিন পর স্নিগ্ধার সাথে ঘুমাবে। আসলে ঘুমাবে কম গল্প করবে বেশি। সারু উৎফুল্ল মনে নেচে উঠে স্নিগ্ধার ঘরের দিকে আগত হতে নিলেই শেরহাম চাপা স্বরে বলে উঠলো,,

“প্রথমে ঘরে এসো এরপর স্নিগ্ধার ঘরে যেও। আর দ্রুত উঠা চলা করবেনা একদম।”(চাপা স্বরে)

সারু যেতে নিয়েও ভ্রু কুঁচকে মুখ গম্ভীর করে তাদের ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। শেরহামও সারুর পিছু পিছু উঠে গেলো। টেবিলে বসে থাকা মিতালি, কল্যাণী ও নেহাল রায় মিটমিট করে হাসলেন। আদিতের খাওয়াও প্রায় শেষ। আদিত উঠে যেতে নিলে কল্যাণী কড়া গলায় আদেশের স্বরে বলে উঠলেন,,

“যেখানে বসে আছিস সেখানেই বসে থাক, ঘরের দিকে এক পাও বাড়াবিনা।”

আদিত ভ্রু কুঁচকে সদ্য টেবিল থেকে উঠতে যাবে এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। কল্যাণীর এমন কড়া কণ্ঠের আদেশ সূচক বাণী শুনে চুপচাপ ভ্রু কুঁচকে। কল্যাণী কণ্ঠে কঠোরতা বজায় রেখে বলে উঠলেন,,

“সবটা কি পুতুল খেলা পেয়েছিস? মেয়েটা তোকে ভালোবাসে। তোর জন্য পারফেক্ট। যথেষ্ট সরল, ভদ্রসভ্য, শান্তশিষ্ট। সবাইকে মান্য করে চলে। তুমিও ওকে ভালোবাসো, সেখানে কেনো তুমি ওকে বিয়ে করবেনা বলছো? সমস্যাটা কোথায়? বয়স তো তোমার কম হয়নি! আমার কি ছেলে বউকে আদর যত্ন করতে ইচ্ছে হয়না?”(কড়া কণ্ঠে)

আদিত বুঝলো ইলাকে বিয়ে করার কথা বলছেন কল্যাণী। তবুও আদিত ভাবটা এমন করলো যেন কল্যাণী কোন মেয়ের কথা বলছে বুঝতে পারছেনা আদিত। সরল কণ্ঠে বলে উঠলো,,

“কোন মেয়ের কথা বলছো মা?”(সরল কণ্ঠে)

কল্যাণী রাগ দেখালেন। রাগান্নিত স্বরে বলে উঠলেন,,

“নাটক করবেনা একদম, তুমি ভালো করেই বুঝেছো কোন মেয়ের কথা বলছি। ইলার কথা বলছি, শুনো আমি তোমার কোনো বাহানা দেখতে চাইনা। সামনের মাসেই তোমার আর ইলার বিয়ে হবে এন্ড দ্যাট’স মাই ফাইনাল ডিসিশন।”(রাগান্নিত স্বরে)

আদিত মুহূর্তের মাঝেই ভাবনায় হারালো। কিয়ৎক্ষণ অতিবাহিত হতেই আদিতের মুখশ্রীতে রাজ্যের গম্ভীরতা ভর করলো। গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,,

“নেক্সট মান্থ ১ তারিখেই আমি কানাডা ফিরছি।”(গম্ভীর স্বরে)

কল্যাণী সহ মিতালি, নেহাল রায় অবাক হলেন। ভড়কে যাওয়া দৃষ্টিতে চাইলেন আদিতের দিকে। কল্যাণী অবাকের স্বরে বলে উঠলেন,,

“নেক্সট মান্থ কানাডা ফিরছি মানে! তুই আবার আমাদের ছেড়ে চলে যাবি?”(অবাক স্বরে)

“একেবারের জন্য তো যাচ্ছিনা। নেহাৎ কলেজের প্রিন্সিপালের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক তাই আমাকে চারমাসের লম্বা ছুটি দিয়েছেন। সময় ফুরিয়ে আসছে, আমাকে নেক্সট মান্থ যেতে হবে মা।”(গম্ভীর কণ্ঠস্বরে)

কল্যাণী নিশ্চুপ হয়ে রইলেন। হঠাৎ ওনার বিপুল রায়ের কথা মনে পড়লো। মানুষটাকে বহুদিন হলো দেখেনি কল্যাণী। কণ্ঠস্বর অব্দি শুনতে পায়নি।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কল্যাণী বলে উঠলেন,,

“ঠিক আছে, যেও। তবে শীঘ্রই বাংলাদেশ ব্যাক করে এখানেই কোনো জব করো।”(দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে)

কল্যাণী নিজের কথা বলে আর বসে থাকলেন না। টেবিলের এটো প্লেটগুলো নিয়ে রান্না ঘরের দিকে গেলেন। মিতালি কল্যাণীকে সাহায্য করার জন্য কল্যাণীর পিছু পিছু গেলেন। নেহাল রায় আদিতের কাঁধে হাত রেখে “এবার আর দূরত্ব তৈরী করোনা। দাভাইকে সঙ্গে করে নিয়ে এসো।” বলেই নিজের ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন। একা আদিত খাবার টেবিলে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। শেষে ফোঁস করে একটা শ্বাস ত্যাগ করে দেও তার কক্ষের দিকে পা বাড়ালো।


“স্নিগ্ধার কাছে যাচ্ছ ভালো কথা, রাত জেগে গল্প করতে যেন না দেখি। এখন রাত জাগলে তোমার জন্য প্রব্লেম হবে সেই সাথে স্নিগ্ধারও প্রব্লেম হবে। দ্রুত ঘুমিয়ে পড়বে।”(কড়া কণ্ঠে)

সারু চোখ মুখ কালো করে মেঝের দিকে চেয়ে রইলো। কতক্ষন ধরে লোকটা কড়া গলায় কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। এদিকে সারুর এমন মুখোভঙ্গি দেখে শেরহাম কড়া কণ্ঠেই বলে উঠলো,,

“এদিকে তাকাও, তাকাও বলছি।”(কড়া কণ্ঠে)

সারু তাকালোনা। শেরহাম দুহাতে সারুর গাল স্পর্শ করে সারুর মুখশ্রী নিজের দিকে ফেরালো। সারু নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা না করে চোখ বন্ধ করে আছে। এর মানে সে বুঝাতে চাচ্ছে কিছুতেই শেরহামের দিকে তাকাবেনা। শেরহাম মৃদু হেসে দিলো সারুর মুখোভঙ্গি দেখে। সারুকে নিজের সাথে মিশিয়ে ঠোঁ’ট বাড়িয়ে আলতো করে চু’মু খেলো সারুর ঠোঁ’টে। সারু ফট করে চোখ মেলে তাকালো। নিজের দুগাল থেকে শেরহামের হাত সরিয়ে বলে উঠলো,,

“এসব চু’মু’টু’মু খাওয়ার চিন্তা ভাবনা ভুলেও করবেন না। ঠোঁটে একদম ২৪ ঘন্টা থাকার লিপস্টিক লাগিয়ে দিবো হুহ। কোথাও নিজের মুখ দেখাতে পারবেন না। সরুন, যাচ্ছি আমি।”

“আমাকে বাবা বানানোর শাস্তি কিন্তু আরও বাড়বে।”

“হুহ, পারেনই তো শুধু এই এক কথা বলতে।”

“শুধু বলতে নই, কাজেও দেখাবো। এখন চু’মু দেও আমাকে।”

“আচ্ছা দিব চোখ বন্ধ করুন।”

সারুর সরল কথায় শেরহাম সত্যিই নিজের চোখ বন্ধ করলো। সারু শেরহামের কান মলে আর এক সেকেন্ডও দাঁড়ালোনা। দ্রুত পদে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। এদিকে শেরহাম আহ শব্দ করে চোখ মেলে দেখলো সারু পালিয়েছে। দরজার দিকে তাকাতে দেখলো সারু মাথা ঢুকিয়ে উঁকি দিয়ে তাকে মুখ ভেঙালো। শেরহাম এগিয়ে যেতে নিলে সারু দৌড় দিলো স্নিগ্ধার রুমের উদ্দেশ্যে।
শেরহাম বিড়বিড়িয়ে বললো,,

“শান্তিতে কোনোকালেই এঁকে চু’মু খেতে পারলাম না। কোনো না কোনো ভাবে বাগড়া দিবেই দিবে। চু’মু খেতে গেলেই শিং মাছের মতো নড়াচড়া করবার, উফফ।”(বিড়বিড়িয়ে)

চলবে…?