নীরবে নিভৃতে পর্ব-০৭

0
133

#নীরবে_নিভৃতে
#পর্ব_৭
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

(কঠোরভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য উন্মুক্ত।)

প্রায় ছয় ঘন্টা বাসে জার্নি করে অবশেষে গন্তব্যে পৌঁছল পল্লব ও মেহেক। গুলিস্তানে এক বন্ধুর রুম এক রাতের জন্য ম্যানেজ করেছে পল্লব। হোটেলে গেলে ঝামেলা হতে পারে ভেবেই এই ব্যবস্থা। মেহেকের অবশ্য এসবও ভালো লাগছে না। কারণ এখানে ব্যাচেলর রুমে নিয়ে এসেছে ওকে। পরিবার নিয়ে থাকলে আলাদা বিষয় হতো। তবুও কিছু করার নেই এখন। ডাকাতদের সাথে থাকার চেয়ে কিছুদিন পল্লবের সাথে ঢাকা থাকা ঢেরবেশি ভালো। পল্লবের বন্ধু সজল ওদেরকে রুম বুঝিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলো কিছুক্ষণ আগেই। রুমটা খুব একটা বড়ো না। খাটও নেই, ফ্লোরে তোশক পেতে ঘুমায় সজল।
” মেহেক লম্বা জার্নি করলে। যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি ততক্ষণে একটু শুয়ে থাকি।”

মেহেক কী বলবে বুঝতে পারছে না। কোনো পোশাক তো আনা হয়নি ওর! কী পরবে এখন? পল্লব মেহেকের নীরবতা দেখে ফের বললো,

” কী হয়েছে? কোনো সমস্যা? ”
” আসলে আমার তো কোনো পোশাক…. ”
” ওও বুঝতে পেরেছি। আচ্ছা তুমি কিছুক্ষণ একা রুমে থাকতে পারবে? আমি গিয়ে আশেপাশে কোথায় শপিংমল আছে দেখি। আপাতত চলার মতো কিছু পোশাক কিনে আনি।”

রুমে একা থাকার কথা শুনতেই চমকে উঠল মেহেক। এ-র আগে কখনো শহরে আসেনি। তার উপর এরকম একটা বদ্ধ ঘরে একা! কিন্তু কী আর করার।
” ঠিক আছে। কিন্তু আপনি তাড়াতাড়ি আসবেন কিন্তু। ”
পল্লব বসা থেকে উঠে মুচকি হেসে বললো,
” যাবো আর আসবো। তুমি দরজা আঁটকে দাও। আর হ্যাঁ আমি ডাক না দিলে দরজা খুলবে না। এমনকি সজল ডাকলেও না। ওকে?”
” ঠিক আছে। ”
পল্লব বেরিয়ে যেতেই মেহেক দরজা আঁটকে দিলো। ঘরটা ভালো করে দেখতে লাগলো। সবকিছু এলোমেলো। বিছানায় চাদরটাও একপাশে সরে আছে। বসে বসে কী করবে ভেবে ঘরটা মোটামুটি গোছানোর কথা ভাবলো মেহেক। বিছানা গোছাতে গিয়ে বালিশের নিচে একটা প্যাকেট পেয়ে চমকাল মেয়েটা। এই প্যাকেট এখানে কেনো ভাবতেই মেরুদণ্ড বেয়ে ভয়ের শীতল স্রোত নেমে গেল। সজল কি মেয়েদের রুমে নিয়ে এসে ডেট করে? হ্যাঁ সেজন্যই তো এসব প্যাকেট রাখা। এইজন্যই হয়তো পল্লব সজল আসলেও দরজা খুলে দিতে মানা করে গেলো। পল্লবের কথা ভাবতেই ভালা লাগা কাজ করছে মেহেকের। ছেলেটা ওর জন্য কতটা ভাবে! অথচ আবেগি মন পল্লবের বাকি খামতি খুঁজে পেলো না আজ। ভাবনাচিন্তা রেখে প্যাকেটটা জায়গা মতো রেখে বাকি ঘরটা গোছানো শেষ করে মেহেক।

চারদেয়ালে বন্দি মিষ্টি। ঘরের দেয়ালে মেয়েদের নগ্ন ও অর্ধনগ্ন ছবিতে ভরপুর। বিছানায় সেজেগুজে বসে আছে সে। চেহারায় মলিনতা স্পষ্ট সাথে যন্ত্রণার ছাপ। কড়া মেকআপেও সেইসব ঢাকা সম্ভব হয়নি। যেকেউ দেখার মন দিয়ে দেখলেই বুঝতে পারবে। কোমর পর্যন্ত সাধের চুলগুলো ঘাড় পর্যন্ত নামাতে হয়েছে তাকে। শাড়ি পরে থাকলেও ব্লাউজের গলা এতোটা বড়ো যে বক্ষ বিভাজনের খাঁজ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আর শরীরে আঘাতের চিহ্নগুলোও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। দরজা খোলাই আছে। বিছানার চাদর খামচে ধরে বারবার দরজার দিকে তাকিয়ে দেখছে মিষ্টি। মাঝবয়েসী এক লোক হেলেদুলে ঘরে প্রবেশ করে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বিশ্রীভাবে হেসে দরজা আঁটকে দিলো। মিষ্টি কাঁদতে লাগলো ভয়ে। তবে নিঃশব্দে। দিনে একজন, রাতে একজন এসব সহ্য হয় না এতটুকু শরীরে। লোকটা আস্তে করে মিষ্টির পাশে বসে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। মিষ্টি মাথা নুইয়ে বসেই আছে। কিছু করার নেই এখন আর। প্রথম দু’দিন জেদ করে না খেয়ে ছিলো, প্রচুর মারধর খেয়েছে। কিন্তু শরীর আর সইতে পারেনি পরে। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল তিন দিনের দিন। আর সেই চেতনাহীন অবস্থায়ই তার ঘরে প্রথম কাস্টমার পাঠিয়েছিল এখানকার মাসী রিনা। কিশোরী বয়সেই নিজের ইজ্জত হারিয়ে মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে গেলো মিষ্টি। তাতে অবশ্য এখানকার কারে কিছু যায় আসে না। বয়স কম হওয়ায় সব কাস্টমার মিষ্টিকেই বিছানার সঙ্গী হিসেবে চায়। সেভাবে বলতে গেলে এ পাড়ায় এখন মিষ্টির অনেক দাম। মাত্র এক সপ্তাহে হাইপে উঠে গেছে ও।
” এই মাগী ব্লাউজ খোল। খুলে টুলে রাখলে খেতে সুবিধা হয়। এই বয়সে ঢং করে খোলাখুলি করতে ভাল্লাগে না। ”
লোকটার নোংরা কথায় চোখ বন্ধ করে ফেলে মিষ্টি। আহারে জীবন! কোথায় ছিলো আর কোথায় এলো? মিষ্টির নীরবতা দেখে লোকটা ক্ষেপে গেলো কিছুটা। নিজে নগ্ন হয়ে মিষ্টিকেও নগ্ন করে ফেললো সে। পশুর মতো খুবলানো শুরু করলো মিষ্টির নরম দেহ টাকে। মেয়েটা চোখ বন্ধ করে ফেলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে কেবল। নিজের বাবার বয়সী লোকের সাথে এভাবে বিছানা গরম করতে হবে কখনো ভাবতেও পারেনি মিষ্টি। যদি মাটি ফেটে দুভাগ হয়ে যেতো এখন তবে জ্যন্ত মাটির নিচেই ঢুকে যেতো।

ঠিক আধঘন্টা পরে পল্লব রুমে ফিরলো নতুন জামাকাপড় নিয়ে। মেহেক খুশি হলো ওর পছন্দের রঙের থ্রিপিস পেয়ে। পল্লবের এতো গুণ আগে কেনো চোখে পড়েনি ভেবে আফসোসও হচ্ছে। রুমে ফিরে আগে পল্লব গোসল সেড়ে নিলো তারপর মেহেক। খাওয়াদাওয়া হোটেলে গিয়েই করলো দু’জন। রাতে রুমে ফিরে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো দু’জন। পল্লব মেহেককে বিছানায় শুতে বলে নিজে একটা পাতলা কম্বল পেতে শুয়েছে। মনে মনে একটু অস্বস্তি থাকলেও পল্লবের এমন সিন্ধান্তে অনেক দিন পর একটা শান্তির ঘুম দেয় মেহেক।

পূর্ব আকাশে সূর্যের আলো দেখা যাচ্ছে। শহরের বুকে সূর্যের আলো ফুটতেই যে যার মতে ব্যস্ত হয়ে উঠে। কেউ দোকান খুলতে যায় কেউবা সবজি বিক্রি করতে। আবার কেউ কেউ স্কুল-কলেজে যায় আবার কেউ অফিসে। ভোররাতে বাস থেকে একটা যাত্রী ছাউনিতে বসে ছিলো রোশন, লিমন আর অর্ক। গতকাল মেহেককে কোথাও খুঁজে না পেয়ে শেষমেশ নদীর পাড়ের পাহারাদারকে ধরে রোশন। প্রথম প্রথম কেউ কিছু স্বীকার না করলেও বন্দুকের নলের সামনে মুখ খুলতে বাধ্য হয়।

” মেহেক কোথায় গেছে বল। আর সাথে কে ছিলো? ”
রোশনের তিরিক্ষি মেজাজে আজ সবাই ভয়ে চুপসে গেছে। ওকে এতটা রাগ করতে কেউ কখনো দেখেনি। দুজনের মধ্যে থেকে একজনের কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রোশন। লোকটা ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।
” বলছি বলছি ভাই। ওই পল্লব! ওর সাথে গেছে আপা। ”
পল্লবের নাম শুনে মোটেও চমকায়নি রোশন। এরকম কিছু হতে পারে ভেবেই তো মেহেককে পল্লবের সামনে যেতেও মানা করেছিল। কিন্তু ঘাড়ত্যাড়া মেয়েটা তাই করলো। মনে মনে মেহেককে কিছু বকাঝকা করে নিলো রোশন।
” কোথায় গেলে পাবো?”
” ঢাকা গেছে কিন্তু ঠিক কোন জায়গায় জানি না।”
” ওকে। বাকিটা আমি খুঁজে নিবো। ”
রোশনের কথায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো লোক দু’টো। কিন্তু পরক্ষণেই আশপাশের গাছের ডালে বসে থাকা সব পাখি উড়ে গেলো। গুলির আওয়াজে ভয় পেয়েছে ওর। সরাসরি মাথায় গুলি করায় বেশিক্ষণ লাগেনি দু’টো মানুষ লাশে পরিণত হতে। রোশন ঘাড় কাত করে সিগারেটের পশ্চাৎ দেশে সুখটান দিয়ে বললো,
” লাশ দু’টো নদীতে ভাসিয়ে দে। আর সবাই মনে রাখ বিশ্বাসঘাতকার ফল ঠিক এটাই। ”

এতো বড়ো শহরে ওদেরকে কোথায় খুঁজে পাবে সেই নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছে রোশন। তাছাড়া বাইরে আসায় ধরা পড়ার একটা চান্স তে থাকেই!
” ভাই আমরা এহন কই যামু?”
অর্ক কথা বলার সময় আঞ্চলিক ভাষা এবং আধুনিক ভাষার সংমিশ্রণ ঘটায়।
” দেখি! চল আগে একটা ট্যাক্সি পাই কি-না। ”
রোশনসহ সবাই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। কত গাড়ি যাওয়া আসা করছে।

” আমাকে আল্লাহ শাস্তি দিয়েছে গো মেহেকের বাবা। আমি যদি মেহেকের সাথে খারাপ আচরণ না করতাম তাহলে। আজ আমার মেয়েটা কোথায়, বেঁচে আছে কি-না তাও জানি না৷ ”

চলবে