নীরবে নিভৃতে পর্ব-০৮

0
114

#নীরবে_নিভৃতে
#পর্ব_৮
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

(কঠোরভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য উন্মুক্ত।)

” আমাকে আল্লাহ শাস্তি দিয়েছে গো মেহেকের বাবা। আমি যদি মেহেকের সাথে খারাপ আচরণ না করতাম তাহলে আজ এই দিন দেখতে হতো না। আমার মেয়েটা কোথায় আছে , বেঁচে আছে কি-না তাও জানি না৷ ”
বাড়ির উঠোনে বসে গলা ছেড়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন আনজুম। মিষ্টির বাবা উনাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন কিন্তু এই পরিস্থিতি কোনো মা কি শান্ত হতে পারেন? উঠোনের অন্য দিকে সানভি দাঁড়িয়ে আছে।
” এসব বলে না আনজুম। তুমি যা-ই করো, আমার মিষ্টি তো ছোটো। এতটুকু একটা মেয়ে কী বোঝে! মেয়েটা কেমন আছে, কোথায় আছে কেউ তো খবর জানাতে পারেনি।”

স্বামীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন মিষ্টির মা। সিদ্দিক আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
” হে খোদা! তুমি কোন বিপদে ফেললে? দু’টো মেয়ে আমার নিখোঁজ। এই হতভাগ্য বাবার মনে কী চলছে তুমি তো জানো।”

সানভির দু-চোখ ছলছল করছে বোনদের জন্য। মিষ্টি আর মেহেক দু’জনই সানভির কাছে সমান। দু’টো বোনকে হারিয়ে সানভিরও মন ভেঙে গেছে। তার উপর বাইরে বেরুলে লোকজনের কতো কটু কথা শুনতে হয়। অনেকে তো এটাও বলে যে,

“ প্রথমে বড়ো মেয়েটাকে পাঠিয়েছে পরে ছোটো টাকে। ব্যবসা এখন রমরমা! মাসে মাসে নিশ্চয়ই অনেক টাকা পাঠাচ্ছে হাওলাদার বাড়ির মেয়েরা!”

সানভি এসব কথা শুনেও কিছু বলতে পারে না। কী বলবে? ওদের মতো লোকজনের সাথে কথা বলেও লাভ নেই। তাই চুপ করে থাকে। তবে আল্লাহ চাইলে একদিন ঠিক সবকিছুর জবাব দিবে সানভি।

হঠাৎ বাড়ির সামনে পুলিশের জিপ এসে থামতে দেখে সিদ্দিক আহমেদ স্ত্রীকে রেখে উঠে দাঁড়ালেন। পুলিশ কর্মকর্তা মুয়াজ খান বাড়ির ভেতর এগিয়ে আসছে। মুয়াজ খান এই এলাকার নতুন এসপি। পরিবারসহ এখন এখানেই আছেন।
” স্যার আপনি! কোনো খবর আছে? ”
আনজুম বেগম ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন। সিদ্দিক আহমেদ ইশারায় শান্ত হতে বললেন উনাকে।
” হ্যাঁ একটা নিউজ আছে। ”
” কী?”
সিদ্দিক আহমেদ শুধলেন এবার। সানভি মুয়াজ স্যারের জন্য চেয়ার নিয়ে এসেছে। তিনি বসে বললেন,
” গ্রাম থেকে শহরে যাওয়ার জন্য যেসব বাস আছে আমি সেগুলো সব চেক করেছি। মিষ্টি নামে কোনো যাত্রী যায়নি কিন্তু মিষ্টির মতো একটি মেয়েকে রাত্রি পরিবহনে দেখা গেছে। সাথে একটি ছেলেও ছিলো। বয়স আনুমানিক বিশ হবে। ”
” তাহলে কি মিষ্টি কারো সাথে পালিয়ে গেছে আনজুম?”
” না মিষ্টির বাবা। আমার মেয়ে কারো সাথে প্রেম করতোনা। ”
আনজুমের কথায় এসপি মুয়াজ মৃদু হেসে বললেন,
” দেখুন ম্যাডাম আজকালকার ছেলেমেয়েদের এতো বিশ্বাস করবেন না। আর হ্যাঁ বাসের ড্রাইভারকে থানায় ডেকেছিলাম। উনি বললেন মেয়েটি নিজের ইচ্ছে ছেলেটির সাথে ছিলো। মানে কোনো প্রকার জোরাজোরি ছিলো না তাদের মধ্যে। ”
এসপি মুয়াজের কথায় মিষ্টির মা চুপ হয়ে গেছেন। মেয়েটার সম্পর্ক ছিলো বলতে পারতো! মেনে নিতো না তেমন তো নয়। সবকিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে উনার ।

” ধন্যবাদ স্যার। বাড়ি বয়ে এসে এতকিছু জানানোর জন্য। ”
সিদ্দিক আহমেদ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ প্রকাশ করে বললেন। এসপি মুয়াজ চলে যাওয়ার জন্য এরমধ্যে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছেন।

গোটা একটা দিন চলে গেছে তবুও মেহেকের কোনো খোঁজ পায়নি রোশন। পাওয়ার কথাও না। ঢাকা শহর তো কোনো ছোটো জায়গা না। লিমন,অর্ক সবাই ক্লান্ত। বিকেলের ম্লান রোদ ফুরিয়ে সূর্যাস্ত নামবে শীঘ্রই। রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে বেঞ্চিতে বসেছে ওরা।
” ভাই এখন কী করবেন? এভাবে সাতদিন ঘুরলেও তো আমার ওদের টিকিও খুঁজে পাবো না। ”
” লিমন আমাদের সরাসরি সেইখানেই যাওয়া উচিত যেখানে পল্লবকে পাওয়া যাবে। নরকের কীট তো নরকেই যাবে! ”
লিমন আর অর্ক বুঝে গেছে রোশনের কথা। চায়ের কাপে শেষবারের মতো চুমুক দিয়ে চায়ের মূল্য পরিশোধ করলো অর্ক। রোশন সিগারেট ধরিয়ে ফুঁকছে। লিমন দাঁড়িয়ে বাস আসছে কি-না দেখছে।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। বন্ধু সজলের রুম থেকে বিদায় নিয়ে মেহেককে নিয়ে বেরিয়ে এসেছে পল্লব। বাসে বসে জানালা দিয়ে আশপাশ দেখতে ব্যস্ত মেয়েটা। পল্লব চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে আছে। বাস চলছে তার আপন গতিতে।
” পল্লব ভাই আমরা কোথায় যাচ্ছি? ”
” পার্মানেন্ট থাকার ব্যবস্থা করতে। ”
” উফ সেটা তো আগেও বলেছেন। কিন্তু…. ”
মেহেকের কথা শেষ হওয়ার অপেক্ষা না করে পল্লব বললো,
” দৌলতদিয়া ঘাটে যাচ্ছি, একটা জায়গার নাম। ওখানে তুমি আরামে থাকবে।”
” আমি মানে আপনি থাকবেন না?”
মেহেক ভীত স্বরে প্রশ্ন করলো। পল্লব মুচকি হেসে বলে,
” তুমি আর আমি কি আলাদা বোকা?”
পল্লবের মুখে এহেন কথা শুনে লজ্জা পেলো মেয়েটা। দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে জানালার বাইরে তাকাল আবার।

রাত আটটার দিকে বাস থেকে নামলো দু’জন। এই এলাকাটা কেমন জানি লাগছে মেহেকের কাছে। একটা সরু গলি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ওরা। অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে এখানকার লোকগুলো কেমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। মেয়েরা আরকিছু বুঝতে পারুক আর নাই পারুক পুরুষদের কুদৃষ্টি ঠিক বুঝতে পারে। আর খারাপ স্পর্শও বুঝতে পারে। মেহেকও বেশ বুঝতে পারছে এই জায়গায় কেউ ওকে ভালো নজরে দেখছে না। এসব ভাবতে ভাবতে একটা জায়গায় এসে থামলো ওরা। আশেপাশে মহিলারা সেজেগুজে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েকজন পুরুষ তাদের সাথে হেসেখেলে কথা বলছে। আবার কখনোসখনো মহিলাগুলোকে বাজেভাবে ছুঁয়ে হাসাহাসি করছে দুজনেই।
” পল্লব ভাই এটা কোথায় এসে থামলেন আপনি? আশেপাশের পরিবেশ মোটেও ভালো ঠেকছে না। ”
পল্লবের হাত নিজের হাত থেকে ছাড়িয়ে কিছুটা ভয় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো মেহেক। পল্লব মুচকি হাসলো।
” আরে এটা শহর মেহেক। সবাই যারযার মতো আনন্দ করছে। এখানে গলির মোড়েও প্রেমিক-প্রেমিকা রোমান্স করে। ”
পল্লব যা-ই বলুক মেহেকের ঠিক বিশ্বাস হলোনা। কই রাস্তায় তো মেয়েদের দেখতে দেখতে এলো,সেসব মেয়েরা তো এমন সাজগোছ করা না! আর ছেলেদের সাথে এমনও করে না। বড়োজোর রাস্তায় দু’জন হাত ধরে হেসে হেসে কথা বলেছে। ভালোবেসে হেসে কথা বলা আর কামনাবাসনা নিয়ে কথা বলার পার্থক্য মেহেক বেশ বুঝতে পারছে। পল্লবের কথা বিশ্বাস না করে গলা উঁচিয়ে বলে মেহেক,
” আমি এখানে থাকবো না। এখুনি এখান থেকে চলে যাচ্ছি। আপনিও চলুন।”
মেহেক পল্লবকে এ কথা বলেই হনহনিয়ে চলে যেতে চাইলে পল্লব হাত ধরে আঁটকে দেয়।
” এতদূর যখন নিয়ে এসেছি তখন এমনি এমনি কি যেতে পারবে মেহেক?”
” মানে!”
” মানে খুব সহজ। ওই যে সামনে মেয়েগুলো দেখছো তুমিও আজ থেকে ওদের মতো খদ্দেরদের মনোরঞ্জন করবে। এটাকে বেশ্যালয় বলে বুঝলে? কমসেকম লাখখানেক টাকা তো পাবোই তোমার বদলে। ”
পল্লবের বিশ্রী হাসি আর কথা বলার ধরণে চমকাল মেহেক। রাগে, ঘৃণায় হাত সরিয়ে নিতে চাইলো পল্লবের থেকে।
” ছিহ পল্লব ভাই! আমি ভাবতেই পারছি না… আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না কিন্তু এই পরিবেশে দাঁড়িয়ে অবিশ্বাস করার কোনো সুযোগও নেই। আমি আসলে বোকা। নইলে একবারও ভাবলাম না যে ছেলে ডাকাতদের সাথে কাজ করে সে কীভাবে ভালো হবে! ”
” বুঝতে পারলে তবে একটু দেরিতে।”

মেহেক আচমকা পল্লবের হাতে কামড়ে দিয়ে দৌড়ে পালাতে লাগলো। কিন্তু পল্লবের সাথে দৌড়ে পারলোনা সে। মেহেকের হাতটা এবার শক্ত করে ধরে পল্লব। রাগে হিসিয়ে উঠে বলে,
” এতো তেজ তোর এখনো! জঙ্গলে থাকতে তো সবাই ঠিকই তোকে ভোগ করেছে। তারপরও এতো ন্যাকামি? তোর তো এতদিনে অভ্যাস হয়ে যাওয়ার কথা। ওখানেও সবাই তোর শরীর ভোগ করতো আর এখানেও তাই করবে। এখানে আরো লাভ! টাকা পাবি টাকা!”

” কুত্তারবাচ্চা তুই নিজে যেমন সবাইকে তেমন ভাবিস না। ওরা কেউ আমাকে ভোগ করেনি।”

” ওমা তাই! তা রোশন তোকে না খেয়েই ঘরে আঁটকে রেখেছিল? এটাও বিশ্বাস করা লাগবে? যাগগে সেসব। এখন কান খুলে শোন, আজ আমি তোর সাথে রাত কাটাবো আর কাল থেকে খদ্দেররা। আমার আনা মধু আমি না খেয়ে গেলে তো হয় না, তাই না?”

মেহেক খুব জোরাজোরি করেও নিজেকে পল্লবের থেকে ছাড়াতে পারছেনা। অসহায় লাগছে। চোখ থেকে টপটপ করে অশ্রু ঝরছে। পল্লব মেহেককে টানতে টানতে নিচ্ছে পতিতালয়ের দিকে।
” কাঁদিস না। একটা ভালো খবর শোন, তোর বোন মিষ্টি? ওই সৎ বোন আরকি! মিষ্টি এখন এ পাড়ার নম্বর ওয়ান বেশ্যা। খুব কদর ওর। হবেই না কেনো? মাত্র ষোল বছর বয়স, কচি শরীর। ”
পল্লবের মুখে মিষ্টির কথা শুনে বুক কেঁপে উঠল মেহেকের। মিষ্টির মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। মুহূর্তেই রাজ্যের রাগ এসে জমাট হলো মেহেকের মধ্যে। হাঁটা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পল্লবের বুকে কিল-ঘুষি মারতে মারতে বললো,
” কুত্তারবাচ্চা তোর ঘরে বোন না থাকলেও তো মা আছে! তোর মা’কে বেশ্যা হিসেবে দেখলে কেমন লাগতো তোর? তোদের মতো পুরুষদের জন্য আজ মেয়েরা বেশ্যা নামক তকমা পেয়েছে। তবুও সমাজের চোখে তোরা ভদ্রলোক। হারামি, জানোয়ার একটা তুই। তোর চেয়ে ওই ডাকাত রোশান ঢেরবেশি ভালো। যা করে প্রকাশ্যে করে কিন্তু কোনো ভালো মানুষীর মুখোশ পড়ে থাকে না। ”
মেহেকের হাত দু’টো চেপে ধরে পল্লব। গালে সজোড়ে কষিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। ফলশ্রুতিতে মেহেকের গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ পড়ে গেছে। ব্যথায় চোখ বেয়ে অবিরত অশ্রু ঝরছে। কী করবে এখন! পল্লবের সাথে তো গায়ের জোরে পারছে না।

” বস একটা খবর আছে। ”
নিজের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরে বসে ছিলেন সবুর হোসেন। হঠাৎ ফয়সালের চিন্তিত মুখখানা দেখে উঠে দাঁড়ালেন।
” কী হয়েছে ফয়সাল? রোশনের কোনো খবর?”
” না বস। নদীর ওপারে পুলিশের আনাগোনা দেখা গেছে। ”
ফয়সাল উদ্ধিগ্ন হয়ে বললো। কথাটা শুনে সবুর হোসেন নিজেও চিন্তায় পড়ে গেছেন। রোশন নেই ঠিক এই সময়ই পুলিশের আক্রমণ! ব্যাপারটা কেমন লাগছে। রোশন বলতে গেলে এখানকার প্রাণ। ওর মতো অস্ত্র চালনা করতে আর কেউ পারে না। ওর অনুপস্থিতিতে পুলিশ হামলা করলে লড়াইটা বেশ কঠিন হবে ডাকাত দলের জন্য।
” নদীর সীমানার পাহারা আরো জোরদার করার ব্যবস্থা করতে হবে। সাথে অস্ত্র রাখতে বলবি এক্সট্রা। আমি আসছি, তুই যা।”
” ঠিক আছে। ”
ফয়সাল সবুরের কথামতো এগোলো। সবুর পোশাক বদলে নিলো নিজের। সবাইকে একত্র করে কীভাবে কী করতে হবে সেসবের নির্দেশনা দিতে হবে।

মেহেক যখন টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল পল্লব ঠিক তখুনি হঠাৎ করে লিমন ও অর্ক পল্লবকে ধরে। এখানে ওদের দেখে ভীষণ চমকায় পল্লব। রোশনকে দেখে দেহে যেনো প্রাণ ফিরে পেয়েছে মেহেক। ক্লান্ত চেহারায় কাজল লেপ্টে যাওয়া চোখের দিকে তাকিয়ে আছে রোশন। এই বিধ্বস্ত চেহারায় মেয়েটাকে বেশ মায়াবী লাগছে। কিন্তু ডান পাশের গালের আঙুলের ছাপ দেখে মাথায় রক্ত উঠে গেলো রোশনের। মেহেক কালক্ষেপণ না করে দৌড়ে রোশনের পিছনে গিয়ে দাঁড়াল।

” শান্ত হও সুন্দরী। আমি এসে গেছি। এখন তোমার নয় ওর ভয় পাওয়ার সময়। ”

ঘাড় কাত করে পল্লবের দিকে দৃষ্টিপাত করে বললো রোশন। পল্লব পরবর্তী ঘটনার আঁচ করতে পেরে বললো,

” বস বিশ্বাস করো আমি ওকে বিক্রি করে যা টাকা পাবো তোমাকে ফিফটি পার্সেন্ট দিবো। ”

মেহেক দাঁড় করিয়ে রেখে চোখের পলকের মধ্যে পল্লবের সামনে গিয়ে দাঁড়াল রোশন। অর্ক আর লিমন এমনভাবে ওকে ধরে আছে যে বেচারা নড়তে পর্যন্ত পারছেনা।

” ফিফটি পার্সেন্ট দিবি?”
” হ্যাঁ হ্যাঁ বস। ”
” আমি তোকে হান্ড্রেড পার্সেন্ট ফিরিয়ে দিবো, যেগুলো তুই ওর সাথে করেছিস সববব….”

রোশন নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো পল্লবের গালে। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে কানের মধ্যে যেনো পোকা উড়ে গেলো পল্লবের। মাথা কেমন ঘুরছে। পল্লব কিছু বলতেই যাবে এমন সময় অন্য গালে আরেকটা থাপ্পড় দিলো। পরপর দুই-তিনটা ঘুষি মারলো বুকে। ব্যথায় কিছু বলতে পারছে না পল্লব। আশেপাশের লোকজন নিজেদের কাজকর্ম রেখে ওদের কাজকর্ম দেখছে। পল্লবের কলার ধরে ঝাঁকিয়ে বললো রোশন,
” মেহেকের ইজ্জত বিক্রি করতে এসেছিলি না? নেহাৎ এটা ঢাকা শহরের গলি। খোদার কসম এলাকায় থাকলে এতক্ষণে তোর লাশ ফেলে দিতাম রে। তবুও শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে তাই না?”
রোশনের ঠোঁটের কোণে দুষ্ট হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। লিমনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই লিমনও হাসলো একটু আর সাথে অর্কও। রোশন ঠোঁটের কোণে সিগারেট গুঁজে মেহেকের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। পকেট থেকে লাইটার বের করে সিগারেটে আগুন ধরাতে ধরাতে বললো,
” তুমি ওদিকে তাকিও না এখন। আমাকে দেখো তারচে। দেখো তোমার ত্যাড়ামির জন্য আজ এখানে আসতে হলো আমাদের। ”
মেহেক কিছু বলতে যাবে এর আগেই ওপাশ থেকে পল্লবের চিৎকার শুনতে পেলো।
” লিমন এমন করিস না৷ প্লিজ সবাই দেখছে।”
মেহেক রোশনের পাশ থেকে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে কী হয়েছে। কিন্তু এক নজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হলো মেয়েটা। রোশন জোরে জোরে বললো,
” সবাই দেখবে বলেই তো করছে রে সোনা। এই লিমন সবাইকে ভালো করে দেখা। দেখ এখানে কেউ সমকামী আছে কি-না। ”

লিমন আর অর্ক পল্লবকে বিবস্ত্র করে ফেলেছে ইতিমধ্যে। সবাই হা করে তাকিয়ে দেখছে কীভাবে রাতের শহরে একজন পুরুষকে নগ্ন করা হলো। পল্লব লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে বারবার হাত দিয়ে লজ্জা স্থান ঢাকতে চাইলেও অর্ক আর লিমন সেটা করতে দিচ্ছে না। রোশন মুচকি মুচকি হাসছে মেহেকের দিকে তাকিয়ে। মেহেক তো মাটিতে দৃষ্টি রেখে বোনের কথা ভাবছে।

চলবে,