নীরবে নিভৃতে পর্ব-১৮

0
114

#নীরবে_নিভৃতে
#পর্ব_১৮
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#স্পেশাল_পর্ব
( কঠোরভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য উন্মুক্ত।)

নিজেকে আপাতত খাটিয়ায় শোয়া লাশ মনে হচ্ছে মেহেকের । ফুল দিয়ে সজ্জিত বিছানায় নতুন বউয়ের বেশে বসে থাকা যেনো ওর জন্য গোসল করিয়ে নতুন কাফনে জড়িয়ে কবরে দিয়ে আসার মতোই। এটা বিয়ে? না! এভাবে কোনো মেয়ের অমতে বিয়ে হতে পারে না। মনে মনে এসব ভাবছে নববধূ। একটা চার্জার লাইট জ্বলছে ঘরের এককোনায় টেবিলের উপর। কী একটা অবস্থা কোনো বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই এখানে। অবশ্য এই জঙ্গলে বিদ্যুৎ আসবেও বা কীভাবে? গরমে হাসফাস লাগছে মেহেকের। আকাশে মেঘ ডাকছে, অল্পবিস্তর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। হয়তো বৃষ্টি হতে পারে রাতে। দুই কামরা বিশিষ্ট টিন শেড বিল্ডিং এ বসে আছে মেহেক। একপাশে বাথরুম আর একপাশে শোয়ার ঘর। ঘরটা আজ ভীষণ সুন্দর লাগছে। বুনোফুলে সেজে উঠেছে বিছানা। হুট করে বিয়েটা করবে বলে বাজার থেকে ফুল আনা হয়নি রোশনের। তবুও এতসব নাম না জানা ফুল দিয়ে বেশ ভালো করেই ঘর সাজিয়েছে মীরা আপু। দরজার ক্যাচক্যাচ আওয়াজে নড়েচড়ে উঠলো মেহেক। বজ্জাত লোকটা এসেছে ভেবে মিথ্যা মিথ্যা ঘুমানোর ভান করবে বলে শুয়ে পড়লো। রোশন ধীর পায়ে ঘরে ঢুকে দরজা আঁটকে দিলো। সাদা রঙের পাঞ্জাবিতে শ্যামবর্ণ রোশনকে ভীষণ সুদর্শন লাগছে আজ। রোশন মেহেকের দিকে এগোলো, বিছানার একপাশে বসলো। মেরুন রঙের জামদানি শাড়ি পরেছে মেয়েটা। এই শাড়িটা কিছুদিন আগে রোশন মেহেককে দিবে বলে কিনে রেখেছিল। কিন্তু পরে ঝামেলা হলো আর দেওয়া হয়নি। তাই আজ এটা পরিয়ে দিতে বলেছিল মীরাকে। মেহেকের গলায়,কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের কণা দেখে রোশন বসা থেকে উঠে ঘরের জানালা দু’টো খুলে দিতে গেলো। জানালা খুলতেই শীতল বাতাস প্রবেশ করছে ঘরে। বাইরে খুব জোরে বাতাস বইছে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ছোঁয়া লেগেছে বৃক্ষরাজিতে।

” সুন্দরী! এভাবে ঢং করে পড়ে থাকলে হবে? কোথায় বসে থাকবে আমি এসে ঘোমটা তুলে মুখ দেখবো! সেসবের তো বালাই নেই, তার উপর ঘুমানোর ভান করছ।”

রোশনের কথায় মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে মেহেকের। এতো ধুরন্ধর কীভাবে হয় একটা মানুষ? শোয়া থেকে উঠে বসলো মেহেক। চোখেমুখে ভীষণ রাগের ছটা। রোশন পাশে বসে হাত ধরলো ওর। কিন্তু মেহেক রোশনের হাত সরিয়ে ফেললো।

” শোয়ার ইচ্ছে থাকলে এমনি শুতেন বিয়ে করার দরকার ছিল না। তবে কেনো এইসব? আমাকে তিলে তিলে মেরে ফেলে আপনার লাভ?”

” ছিহ! মুখের কী ভাষা! শুতে, শুতেন এসব কী বলো হ্যাঁ? বলো যে আদর করার ইচ্ছে থাকলে। আমার মতো ভালো হও সুন্দরী। ”

রোশনের ন্যাকা মার্কা কথাবার্তা শুনতে মোটেও ভালো লাগছে না মেহেকের। মাথায় আগুন জ্বলছে।

” আপনি যান এখন। আমি ঘুমাবো। ”
” কীসব বলতেছ? আজ কীসের ঘুম? আজ পাশা খেলবো রে শ্যাম…….”

” খবরদার! ওই নোংরা শরীর নিয়ে আমার কাছেও আসবেন না আপনি। কত মেয়েদের সাথে ছিলেন তার হিসাব নেই। তার উপর আপনি আমাকে জোর করে বিয়ে করেছেন। আমার বোনের হাত ধরেছিলেন,আপনার লোকজন আমার বাবাকে আঁটকেছিল! কিছু ভুলিনি আমি রোশন হোসেন।”

” বাহ! এতো সম্মান দিচ্ছো? আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না! ডাকাতের বাচ্চা থেকে রোশন হোসেন? বিয়ের আগে কী গালিগালাজটাই না করলে। বিশ্বাস করো,গালি দিলে খুব হট লাগে তোমাকে। একদম আমার মতো হট!”

” অসভ্য লোক।”

রোশন মেহেকের দুই কাঁধে হাত রেখে নাকে নাক ঘষে বলতে লাগলো,
” আমি তো এখনো অসভ্যতা শুরু করিনি সুন্দরী। তবে এখন করবো। তুমি শুধু উপভোগ করো ওকে?”
” কী করবে… ন আ আপনি! দূরে সরুন।”

মেহেক নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় রোশনের থেকে। মুচকি হেসে রোশন বসা থেকে উঠে গিয়ে চার্জার লাইটটা নিভিয়ে আবছা আলোতে এসে বিছানায় বসল আবারো। বাইরের বিদ্যুৎ চমকানির আলোতে মাঝে মধ্যে পুরো ঘর আলোকিত হয়ে যাচ্ছে।

মেহেক কিছু বুঝে উঠার আগেই রোশন ওর পেছনে বসে এক হাত কোমরে দিয়ে অন্য হাতে শাড়ির আঁচল সরিয়ে ফেললো। চমকাল,থমকাল মেহেক। রাগে,ঘৃণায় নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছে ও। রোশন তাতে একটুও বিচলিত না হয়ে আস্তে আস্তে পুরো শাড়িটাই খুলে ফেললো।

” আমি কিন্তু চেঁচাব। বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। তোকে খুন করে ফেলবো আমি। ”

” ওয়েট আমি পাঞ্জাবি খুলি তারপর এসো খুন করতে। তবে তার আগে তোমাকে শান্ত করি।”

বাইরে বৃষ্টির তোপ বেড়েছে। ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। বাতাসের দাপটে জানালা বাড়ি খাচ্ছে। রোশন মেহেকের দুইহাত খাটের সাথে শাড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। মেহেক অসহায়ের মতো চেঁচাচ্ছে। এখানে তো কেউ নেই এই চিৎকার শোনার মতো! রোশন অন্ধকারে হাতড়ে এবার আবারো টর্চ লাইট জ্বেলে দিলো। মুহুর্তেই মেহেকের অর্ধনগ্ন শরীর প্রকাশিত হলো রোশনের সামনে ।

” চুপ করো নয়তো মুখ বাঁধবো সুন্দরী। বাবা শুনলে একটা লাজলজ্জার ব্যাপার। যদিও উনি জানেন উনার ছেলে অনেক ভালো। ”

রোশনের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহেক। যতই যা করুক একজন পুরুষের সামনে নারীর দৈহিক শক্তি কাজ করে না। রোশন নিজের পাঞ্জাবি খুলে দাঁড়ানো অবস্থায়ই মেহেকের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। চোখ সরাতে পারছেনা কিছুতেই। বউটা একটু রোমান্টিক হলে কী এমন ক্ষতি হতো? রোশন বসলো মেহেকের পাশে। মেহেক চুপ করে আছে। দু-চোখ ছলছল করছে।
” হয়েছে আর এমন করে তাকিও না। খুলে দিচ্ছি। মায়া মায়া লাগে কেমন। প্রথম যেদিন এসেছিলে, এই ছলছল নয়নে তাকিয়েই মনটা চুরি করেছিলে। ”

মেহেকের হাতদুটো খুলে দিতে দিতে বললো রোশন। মেহেক চুপ করে আছে। কিন্তু যখনই নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে মুক্ত পেলো তখনই বাঘিনীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো রোশনের উপর। বুকের উপর বসে গলা টিপে ধরলো শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে। রোশন পুরোপুরি শকড তার বউয়ের আচরণে। কিন্তু সময় নিলো না ও, ঝটপট মেহেককে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিলো রোশন। বুকের উপর ঝুঁকে বললো,
” বাব্বাহ! বিয়ে হতে না হতেই একেবারে ডাকাত রাণীর জায়গা নিয়ে নিলে? ”
” পারলে আমাকে ছাড় তারপর দেখ তোর কী অবস্থা করি। একেবারে প্রাণে মেরে ফেলবো। ”
মেহেকের এতো রাগ দেখেও রোশন হাসছে। আর তাতেই মেহেক আরো রাগান্বিত হয়ে যাচ্ছে। রোশনকে খুব করে চাইলেও নিজের উপর থেকে সরাতে পারছেনা মেহেক। রোশন একহাতে মেহেকের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর অন্য হাত দিয়ে মেহেকের দু’টো হাতই মাথার উপর ধরে আছে।

” শান্ত হও সুন্দরী বউ আমার। ”
” আমি মানি না এ বিয়ে…..”
মেহেকের পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই রোশন ওর ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁটের দখলে নিয়ে নিলো। চোখগুলো বড়ো বড়ো হয়ে গেছে মেহেকের। অস্বস্তি লাগছে, ঘৃণা লাগছে। খুব করে চাচ্ছে রোশনের গভীর আলিঙ্গন উপেক্ষা করতে। কিন্তু পারছে না। রোশন উন্মত্ত হয়ে গেছে মেহেকের প্রতি। নিজের মনমতো সময় পর থামলো রোশন। ঠোঁটের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বক্ষ বিভাজনের খাঁজে তাকাল। মেহেক গালাগালি করে যাচ্ছে। রোশন পোশাকের উপর থেকেই বুকের ঠিক মাঝ বরাবর ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। তারপর বসা থেকে উঠে ছেড়ে দিলো তাকে। রোশনকে এভাবে থেমে যেতে দেখে চমকাল মেহেক।
” কী হয়েছে, কেনো হয়েছে, কখন হয়েছে আমি জানি না মেহেক কিন্তু এটা হয়েছে। হ্যাঁ তোমার প্রতি একটা অন্য রকম অনুভূতি কাজ করে আমার। তবে তোমার অনিচ্ছায় এভাবে ইন্টিমেট হতে চাই না আমিও। আমি চাই তুমি নিজে ইচ্ছে করে এসো আমার কাছে। ভালোবাসার দাবি নিয়ে। ”

” আবারো ঢং! ”

চলবে,