নীলবসন্ত পর্ব-০২

0
1
নীলবসন্ত

#নীলবসন্ত
#লেখনীতে_মিথিলা_মিতু
#পর্বসংখ্যা_০২

পরেরদিন ভোর ছয়টায় তাহসিনের ঘুম ভাঙলো।সে সবসময় সময়ের প্রতি খেয়াল রাখে।একদম ভোর ভোর
ঘুম থেকে উঠা তার নিয়মের মাঝেই পড়ে।ঘুম ভাঙতেই নিজের শরীরের উপর কিছুর ভর অনুভব করতেই পাশ ফিরে তাকালো।আর তাকাতেই দেখলো রোদেলা তাকে একদম আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছে।অবাকে তার চোখ পুরো ছানাবড়া হয়ে গেল।এই প্রথমবার কোনো মেয়ে তার এতটা সান্নিধ্যে এলো।আচ্ছা রোদেলা যদি জেগে থাকতো তবে কি এভাবে এতটা কাছে আসতো?কিংবা সে যদি জানতে পারে ঘুমের ঘোরে সে তাহসিনের এতটা সান্নিধ্যে এসেছে তখন লজ্জায় তার গালে পলাশ কি ফুটে উঠতো না?লজ্জায় সে কি আর তাহসিনের সামনে আসতে পারতো কখনো? রোদেলার অবস্থা দেখে তাহসিনের হাসি পেল।কেউ এভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমায় বুঝি?রোদেলার হাত-পা তার শরীর থেকে আস্তে করে সরিয়ে দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠলো সে।ফ্রেশ হয়ে ব্যায়াম করতে গেল।যেটা তার প্রতিদিনকার অভ্যাস।

রোদেলার ঘুম ভাঙলো সকাল সাতটায়।ঘুম ঘুম চোখে পাশে তাকাতেই দেখলো তাহসিনের জায়গাটা খালি পড়ে আছে। পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারলো রুমে আপাতত সে ছাড়া কেউ-ই নেই।এতে যেন একটুখানি স্বস্তি পেল।আস্তে করে উঠে পড়নের শাড়িটা ঠিক করলো।এরপর বিছানা গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল।এবার সে পুরো রুম জুড়ে পায়চারি করতে থাকলো।রুম থেকে একা একা বেরুনো কি উচিত হবে নাকি হবে না?সেসব ভেবেই পায়চারি করতে থাকলো। একটা সময় ভাবলো আরও কিছুক্ষণ রুমে অপেক্ষা করবে যদি কেউ আসে।সে তো এই বাড়ির কিছুই চিনে না।তেমন ভাবে কারো সাথে পরিচয়ও নেই।তাহলে একা একা যাওয়াটা কেমন বেমানান না?সে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসলো।এবার পুরো রুমটি সে দেখতে লাগলো।রুমে একটি বেড আছে,একটি আলমিরা,ড্রেসিংটেবিল,বেড সাইডে ছোট্ট একটা টেবিল আছে।রুমের সাথেই এটাচ বাথরুম আছে।তবে বারান্দা নেই।রোদেলা বিছানা থেকে সরে এসে জানালার কাচ সরিয়ে দিল।জানালা খুলতেই সকালে সূর্যের কিরণ এসে ঘর ছুঁয়ে দিল।বাহিরে হালকা হাওয়াও বয়ে যাচ্ছে।এটা হচ্ছে সকালে স্নিগ্ধ সতেজ হাওয়া।রোদেলা প্রাণ ভরে তা উপভোগ করলো।বাড়ির কথা মনে পড়ে গেল। প্রতিদিন ভোর ভোর উঠে নামাজ পড়ে সে আর তার বোন তাদের গ্রামের নদীর পাড়ে চলে যেত।সেখানকার ভোরের হাওয়া শরীরে মাখিয়ে শরীর জুড়াতো সাথে প্রাণটাও জুড়াতো।কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে তারপর বাসায় চলে আসতো।এসেই টুকটাক কাজ শুরু করে দিত।নয়তো মা বেশ বকাবকি করতো।সেসব ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলল।হঠাৎ তার নজর বাহিরে গেল।দেখতে পেল তাহসিন ঘেমে-নেয়ে বাসায় ঢুকছে।তাহসিনকে দেখে যেন সে কিছুটা জমে গেল। ভয়ে নাকি লজ্জায় সেটা বুঝে উঠতে পারলো।সে জানে না কেন সে তাহসিনকে দেখলেই ভয় আর লজ্জায় গুটিয়ে যায়।তাহসিনকে দেখেই গত রাতের কথা মনে পড়ে যায়।সে গতরাতে তাহসিনের হাতের আঙুল মুঠোতে নিয়ে ঘুমিয়েছে ভাবতেই কেমন লজ্জা লাগছে।যদি তাহসিন বুঝতে পেত তখন কি হতো?এসব ভাবনার মাঝেই সে টের পেল তাহসিন রুমে এসেছে।

জানালার পাশে রোদেলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাহসিন এগিয়ে এসে শুধালো,
-“ঘুম থেকে কখন উঠেছো?”

রোদেলা আস্তে করে পিছু মুড়লো।মাথা নিচু করে ছোট্ট করে বলল,
-“কিছুক্ষণ আগে।”

তাহসিন বলল,
-“আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলতে কি প্রবোলেম আছে?”

রোদেলা মাথা নিচু করে দৃষ্টি মেঝেতে নিবদ্ধ করে রাখলো। তাহসিনের প্রশ্নের জবাবে কিছুই বলল না।তাহসিন বলল,
-“সবসময় কি মাথা এভাবে নিচু করে রাখো?”

রোদেলা কিছু না বলে নখ খুটতে লাগলো।তাহসিন বলল,
-“মাথা এভাবে নিচু করে রাখতে রাখতে দেখবে ঘাড় বেঁকে গিয়েছে।সব কথার এন্সার মাথা নিচু করে দিতে হয় না। আর বিশেষ করে আমার সাথে কথা বলার সময় মাথা উঁচু করে আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলবে।ঠিক আছে?”

রোদেলা মাথা একপাশে কাত করে জবাব দিল।তাহসিন ফোস করে শ্বাস ছেড়ে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।মেয়েটার সাথে সে একটু সহজ হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার সামনে এলেই মেয়েটা যেভাবে গুটিয়ে থাকে সেভাবে কি আর আদৌ সহজ হওয়া যাবে?

লম্বা একটা শাওয়ার দিয়ে তাহসিন বের হলো।রুমে এসে দেখলো রোদেলা জানালার পাশে এখনো দাঁড়িয়ে।গায়ে শার্ট জড়াতে জড়াতে বলল,

-“পুরো নাম কি তোমার?”

রোদেলার পুরো নামই তাহসিনের জানা আছে।বিয়ে পড়ানোর সময় কাজী বলেছিল।তখনই সে খেয়াল করেছিল।শুধুমাত্র রোদেলা যাতে একটুখানি সহজ হয় এভাবে ভয় না পায় সে চেষ্টাই করে যাচ্ছে।রোদেলা পিছু ঘুরলো ঠিকই তবে সে-ই একই ভাবে মাথা নিচু করে বলল,

-“মায়মূনা ইসলাম রোদেলা।”

শার্টের বাটন লাগাতে লাগাতে বলল,
-“বাহ!চমৎকার নাম।আমার নাম জিজ্ঞেস করবে না?”

রোদেলা ছোট্ট করে বলল,
-“জানি আমি।”

-“কি নাম আমার?”

-“তাহসিন মাহমুদ।”

-“বাহ একদিনেই দেখি নামও মুখস্থ করে ফেলেছো।”

রোদেলা মাথা নিচু করেই রাখলো।কিছু বলল না।তাহসিন চুল ঠিক করতে করতে বলল,
-“এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছো তাই তো?”

-“জ্বি।”

-“পড়া শোনার ইচ্ছে আছে?”

পড়া শোনার কথা জিজ্ঞেস করতেই রোদেলার চোখ চকচক করে উঠলো।সে চোখ তুলে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ানো লম্বাপুরুষটার পানে চাইলো।সেটা তাহসিন ড্রেসিং টেবিলের আয়নাতেই খেয়াল করলো।আয়নাতে তাকিয়েই ভ্রু উচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-“কি?ইচ্ছে আছে নাকি?”

রোদেলা মাথা উপর-নীচ নাড়ল।বলল,
-“জ্বি আছে।”

তাহসিন মিরর থেকে চোখ সরিয়ে সরাসরি রোদেলার দিকে তাকালো।এরপর বলল,
-“গুড।ওকে তাহলে মাকে বলবো এখানেরই একটা কলেজে তোমাকে ভর্তি করিয়ে দিতে।আসলে তোমার এক্সামের রেজাল্ট প্লাস ভর্তি সবমিলিয়ে তোমার হাতে এখনও তিন মাসের মতো সময় আছে।কিন্তু আমি এবার চলে যাওয়ার পর আগামী চার থেকে পাঁচ মাসের আগে কোনো ছুটিই পাবো না।ডিফেন্সের জবে আহামরি ছুটি থাকে না সেটা নিশ্চয়ই জানো।কি জানো না?”

রোদেলা উপর-নীচ মাথা নাড়লো।যার অর্থ “হ্যাঁ”।এই যে লোকটিকে যে আগামী চার-পাঁচ মাসেও যে দেখবে না সেটা ভেবেই তার কেমন যেন খারাপ লাগছে।অথচ লোকটার সামনে থাকলে সে গুটিয়ে থাকে।কথা বলার শব্দ ফুরায়।কিন্তু এই লোকটার সাথে দেখা হবে না ভেবে আবার তার মনও পুড়ছে।এটাই কি তবে বৈবাহিক বন্ধন?স্বামীর জন্য মন পুড়বে এটাই কি স্বাভাবিক নয়?

আত্মীয়-স্বজন,নতুন কুটুম সবাইকে নিয়ে ওদের বৌভাতের অনুষ্ঠানটি শেষ হলো।বিকেলের দিকে রোদেলার পরিবার মেয়ে আর নতুন জামাইকে নিয়ে নিজেদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলো।যেহেতু তাহসিনের হাতে ছুটি সেহেতু তাহসিন আজকের রাতটা থাকবে আবার আগামীকাল নিজের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হবে।রোদেলাদের বাসাতে যাওয়ার পর রোদেলার সৎ মা জামাইকে দেখে খুশিতে গদগদ হওয়ার ভাব নিল।জামাইয়ের অবস্থান ভালো সেহেতু নিজেরও লাভ এইজন্য জামাইকে হাতে রাখার ধান্দা।তবে ভদ্রমহিলা হয়তো জানেনই না তাহসিন আগেই উনার ব্যাপারে মায়ের কাছ থেকে সবটা জেনে গিয়েছে।তাই উনার এই আলগা আদর ভাবটা তাহসিনের জাস্ট অসহ্য লাগছে। তবুও মুখ ফুটে কিচ্ছুটি বলছে না।

রোদেলার ফুপু,চাচী সকলে মিলে নতুন জামাইয়ের জন্য হরেকরকম রান্না করলেন।রোদেলার বাবা,ফুপা,চাচা, তাহসিন সকলে একসাথে খেতে বসে।রোদেলার সৎ মা জামাই এটা নাও,ওটা নাও এমন করেই যাচ্ছে।শেষে তাহসিন বলল,

-“আমার প্রয়োজন অনুযায়ী আমি নিব।আপনার এত কষ্ট করতে হবে না আন্টি।”

-“সে কী বাবা আমি তো তোমার মায়ের মতোই।আমাকে মা বলে ডাকবে।”

তাহসিন খেতে খেতে বলল,
-“মায়ের মতন আর মায়ের মাঝে আকাশ-পাতাল তফাৎ রয়েছে আন্টি।যদি মা হতেন তাহলে নিশ্চয়ই এত ছোট মেয়েকে বিয়ে দিতে পারতেন না।তাই না?”

মুখের উপর এভাবে উচিত কথা বলাতে রোদেলার সৎ মা সুমি বেগম মুখ ঝামটালেন।কোথায় ভেবেছিল জামাইকে হাতে রাখবেন অথচ এই জামাই যেই তুখোড় তার সাথে পেরে উঠা অসম্ভব।অবশ্য ডিফেন্সের লোক বলে কথা। দুরন্তবাজ তো হবেই।

খাওয়া-দাওয়া শেষে রোদেলার সৎ বোন রুহি এসে তার নতুন দুলাভাইকে বলল,
-“ভাইয়া চলুন বাহিরে হাঁটতে যাবো।আপনারা তো কালকে সকালে নাকি চলে যাবেন।আপনাকে আমাদের গ্রাম দেখানোর তো আর সুযোগই পাবো না।চলুন না ভাইয়া।”

রুহি রোদেলা থেকে অনেকটাই ছোট।ক্লাস ফাইভে পড়ছে।রুহি তাহসিনের সাথে বেশ মিশেছে।তাহসিন বলল,
-“এত রাতে বের হবে ভয় লাগে না তোমার?”

রুহি মিষ্টি করে হেসে বলল,
-“একা একা গেলে তো ভয় লাগবে।কিন্তু এখন তো আমার সাথে আমার মেজর দুলাভাই আছেন।উনার সাথে গেলে একটুও ভয় লাগবে না।উল্টে ভয়রা লেজ গুটিয়ে পালাবে।”

রুহির কথা শুনে তাহসিন হেসে ফেলল।তারপর বলল,
-“তোমার আপু কোথায়?”

-“আপু তো ওই ঘরে ফুপিদের সাথে কথা বলছে।”

তাহসিন একটুখানি নুইয়ে ফিসফিস করে বলল,
-“আস্তে করে যেয়ে তোমার আপুকে নিয়ে আসো।তারপর আমরা হাঁটতে বের হবো।তবে আমি যে ডেকেছি সেটা বলবে না।”

রুহি মাথা নেড়ে বলল,
-“আচ্ছা ঠিক আছে।”

-“আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি।”

রুহি রোদেলাকে আনতে চলে গেল।তাহসিন ঘরের বাহিরে যেয়ে দাঁড়ালো।রাত এখন এগারো থেকে কিছুটা উপরে বাজছে।অথচ এখানকার বেশিরভাগ মানুষই ঘুমে কাবু হয়ে আছে।গ্রামের মানুষ তাড়াতাড়ি ঘুমায় আবার ভোর ভোর উঠে যায়।এই জিনিসটা তাহসিনের কাছে বেশ ভালো লাগে।রাত কম জাগা আর ভোরে ঘুম থেকে উঠা শরীর এবং মন দুইয়ের জন্যই ভালো।বাহিরে জোনাকিরা আলো ছড়াচ্ছে।নাম না জানা কত শত পোকা-পাখি ডাকছে। আকাশের চাঁদ এই সময়টাকে সঙ্গ দিতে কি সুন্দর আলো দিচ্ছে।সব মিলিয়ে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।কিছুক্ষণের মধ্যেই রুহি রোদেলাকে নিয়ে হাজির হয়।সে তাহসিনকে বলে,

-“ভাইয়া আপুকে নিয়ে এসেছি।এবার চলেন।”

তাহসিন হালকা হেসে বলল,
-“হুম।চলো, যাওয়া যাক।”

রুহি হাঁটতে থাকে।আর রোদেলা দাঁড়িয়ে থাকে।রুহি এভাবে কেন টেনে এনেছে সেটা এখনও তার বোধগম্য হচ্ছে না। তাহসিন রোদেলার দিকে তাকিয়ে বলল,
-“কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন মায়মূন?আসো।”

তাহসিনের মুখে নিজের নামটা শুনে শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল শিহরণ বয়ে গেল।সবাই রোদেলাকে রোদেলা কিংবা রোদ বলেই ডাকে।কেউ কখনো মায়মূনা বলে ডাকতো না।অথচ সেখানে তাহসিন মায়মূনা নামটাকে কি সুন্দর করে মায়মূন বলে ডাকলো?এই ডাকে কি এমন ছিল যে রোদেলার কাছে ভালো লাগার অনুভূতি হলো?তাহসিন ফের বলল,

-“কি ভাবছো মায়মূন?”

রোদেলা সব ভাবনা দূরে ঠেলে আমতা আমতা করতে করতে বলল,
-“কোথায় যাবো?”

তাহসিন দুষ্টমি করে বলল,
-“ভূতেদের সাথে দেখা করতে।”

রোদেলা চোখ বড় বড় করে বলল,
-“এ্যাঁ?”

তাহসিন ফিক করে হেসে ফেলল।বলল,
-“মজা করেছি।এমনিই এখানে একটু হাটাহাটি করতে।”

রোদেলা তাহসিনের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।এই দুইদিনে যতটুকু মানুষটাকে দেখেছে এভাবে হাসতে দেখে নি।সবসময় গম্ভীর হয়েই থাকতো।অথচ হুট করেই কেমন করে হেসে ফেলল।উনার হাসিটা এত সুন্দর কেন?যারা হুটহাট হাসে তাদের হাসি বুঝি এতটাই সুন্দর হয়? রোদেলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাহসিন রোদেলার দিকে এগিয়ে এসে আস্তে করে রোদেলার ছোট্ট নরম হাতটা নিজের শক্ত হাতের ভাজে পুরলো।তারপর সামনের দিকে হাঁটা দিল।রোদেলার হৃদযন্ত্রটা কেমন করে যেন দ্রুত স্পদন করছে।মানুষটা তার হাত ধরলো?ধরেছে হাত অথচ কাঁপছে তার হৃদয়।কি অদ্ভুত তাই না?রোদেলা চুপচাপ তাহসিনের সাথে পা মিলিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।আঁড়চোখে তাহসিনের দিকেও তাকাচ্ছে।ওইদিকে রুহি একটু আগে আগে হেঁটে বকবক করেই যাচ্ছে।তাদের গ্রাম সম্পর্কে গল্প শুনিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু এতকিছুতেও তাহসিনের ধ্যান-জ্ঞান সবটাই শুধু রোদেলাতে আছে।এই যে রোদেলার হাতখানা ধরলো তারও যে হৃদস্পদন সমান তালে লাফিয়ে যাচ্ছে।সে যেন কেমন একটা অনুভূতির জোয়ারে দুলছে।

তারা নদীর পাড়ে এলো।থোকা থোকা জোনাকি পোকা উড়ে উড়ে আলো ছড়াচ্ছে।নদীর শীতল হাওয়া শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে।সব মিলিয়ে দারুণ পরিবেশ।তাহসিন রুহির সাথে গল্প করছে।ওইদিকে রোদেলা আঁড়চোখে তাহসিনকে দেখে যাচ্ছে।সরাসরি তাকাতে যে লজ্জা লাগে।মানুষটাকে যতই দেখছে রোদেলার কাছে যেন বেশ ভালো লাগছে।মানুষটা ওতটাও গম্ভীর নয় যতটা রোদেলা ভেবেছিল।রোদেলাকে যেন মানুষটা আজ বারে বারে মুগ্ধ করে দিচ্ছে।

অনেকক্ষণ নদীর কিনারায় বসে থেকে তারা বাসায় ফিরে এলো।যে রুমটাতে রোদেলা আর রুহি ঘুমাতো সেখানেই আজ রোদেলা আর তাহসিনকে থাকতে দেওয়া হলো। তাহসিন ঘুমিয়ে পড়লে রোদেলা গত রাতের মতোই প্রথমে তাহসিনের আঙুল মুঠোতে পুড়লো।তবে পরক্ষণেই আস্তে করে তাহসিনের হাত আলগোছে নিজের হাতের ভাজে মিলিয়ে দিয়ে তবেই ঘুমালো।অথচ আজকেও তাহসিন ঠিকই টের পেল রোদেলা যে তার হাতটা ধরে নিশ্চিন্তে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে।তাহসিন ফোস করে শ্বাস ফেলে রোদেলার দিকে তাকিয়ে বলল,

-“আমাকে তোমার অভ্যেস কোরো না কন্যা।নয়তো আমাকে ছাড়া তোমার দিনগুলো বিবর্ণ হয়ে পড়বে। রঙধনুর সাত রঙের ন্যায় রঙিন হৃদয়ে বিবর্ণতার ছাপ যে বড়ই বেমানান লাগে।সেটা কি তুমি জানো,মেয়ে?”

#চলবে!
[বি.দ্র:-কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।