#নীলবসন্ত
#লেখনীতে_মিথিলা_মিতু
#পর্বসংখ্যা_০৪
সময়টা এখন রাতের দ্বি-প্রহর।রোদেলা ফোন হাতে নিয়ে সময় গুনছে তাহসিন কখন ফোন দিবে।এই ফোনটা গতরাতে তাহসিন তাকে উপহার দিয়েছে।এর আগে কখনো রোদেলা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে নি।তাই এর ব্যবহারও রোদেলা জানে না।তাহসিনই গতরাতে টুকটাক শিখিয়ে দিয়েছে এবং প্রয়োজনীয় কিছু এপস্ও নামিয়ে দিয়েছে। আজ সকাল ভোরেই তাহসিন নিজের কর্মস্থলে ফিরে যায়। যাওয়ার পূর্বে রোদেলাকে বলে যায় নিজের খেয়াল রাখতে, ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করতে।তাহসিন রাতের দিকে সময় পেলে ফোন দিবে।তাহসিন যাওয়ার সময় রোদেলার চোখে দিয়ে অশ্রুর বর্ষণ নামতে চায়।কিন্তু রোদেলা অশ্রুর বর্ষণ হতে দেয় নি।নিজেকে খুব কষ্টে শক্ত রেখেছে।তবে তাহসিন যাওয়ার পর শূন্য ঘরটার দিকে তাকাতেই নিজেকে আর শান্ত রাখতে পারে নি।ঝুম বৃষ্টির ন্যায় তার চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু নামে।নিজেকে বিন্দুমাত্র আটকানোর প্রয়াস করে নি সে।কান্না করতে করতেই একসময় ঘুমিয়ে যায়।শাশুড়ী মায়ের ডাকে তার ঘুম ভাঙে।ঘুম ভাঙতেই বুঝতে পারে বেশ বেলা হয়েছে।গোসল সেরে নামাজ পড়ে খেতে যায়।এরপর শাশুড়ীর সাথেই গল্প করে সময় কাটায়। সারা বিকেল শাশুড়ীর সাথেই সময় কাটে।এরপর সন্ধ্যায় তার শ্বশুড় কর্মস্থল থেকে ফিরলে শ্বশুড়-শাশুড়ী দুইজনের সাথে সময় কাটায়।রাতে খাওয়া-দাওয়া করেই সে রুমে আসে।এর মধ্যে একটা বারও তাহসিন তার খোঁজ নেয় নি। এই যে এখন যে এই ঘরে এলো এখন তাহসিনের সাথে কাটানো মূহুর্তগুলোই বারেবার মানসপটে ভেসে উঠছে। বুকটা মুচড়ে উঠছে তার।সে কী করে এই ঘরটাতে একা থাকবে?তার তো দম বন্ধ লাগছে।খুব করে চাইছে তাহসিনের কন্ঠস্বর শুনতে।কিন্তু সব চাওয়াই কি পূর্ণতা পায়?হয়তো হ্যাঁ নয়তো না।তবে রোদেলার ক্ষেত্রে হয়তো হ্যাঁ।তাইতো তার মনের ইচ্ছা পূর্ণ করতে তার ফোনটা সশব্দে বেজে উঠে।ফোনের স্ক্রিনে “জনাব মাহমুদ” নামটি ভেসে উঠতেই রোদেলার আনন থেকে মন খারাপ সরে গিয়ে ঠোঁট জুড়ে প্রশান্তির হাসি বয়ে গেল।খুশিমনে ফোন রিসিভ করে নিম্নস্বরে সালাম ঠুকলো।তাহসিন সালামের জবাব নিয়ে শুধালো,
-“কেমন আছো?”
রোদেলার মন বলে উঠলো, “ভালো নেই।আপনাকে ছাড়া এই শূন্য ঘরে মোটেও ভালো নেই আমি।” মনের কথা মনেই রইল।মুখে বলল,
-“আলহামদুলিল্লাহ।আপনি?”
ফোনের ওপাশ থেকে তাহসিন বলল,
-“ভালো।কি করো?”
-“এইতো বসে আছি।আপনি?”
-“জরুরি মিটিং সেরে রুমে ফিরলাম মাত্র।”
-“সারাদিন বুঝি খুব ব্যস্ত ছিলেন?”
-“হু।এতদিনের পেইন্ডিং কাজগুলো করতে হয়েছে।সামনেই একটি বড় মিশন আছে।সেটা কামপ্লিট না হওয়া অব্দি কাজের প্রচুর চাপ থাকবে।বুঝোই তো এখানে নিজের আরামের কথা না ভেবে দেশের জন্য প্রাণপনে ছুটতে হয়।”
রোদেলা ছোট্ট করে বলল,
-“হুম।”
-“খাওয়া-দাওয়া করেছো?”
-“হুম।আপনি।”
-“এইতো করছি।বাবা-মা কেমন আছেন?খাওয়া-দাওয়া করেছেন?”
-“আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছেন।হ্যাঁ খাওয়া-দাওয়া করেছেন।এইতো এতক্ষণ বাবা-মায়ের সাথেই ছিলাম। কিছুক্ষণ হলো রুমে এলাম।”
-“ও আচ্ছা।তো ঘুমাও নি কেন?বেশি রাত জাগা ভালো না। জলদি জলদি ঘুমিয়ে পড়বে।আর সকাল সকাল উঠে পড়বে।তবেই না শরীর আর মন দুটোই ভালো থাকবে।”
রোদেলা গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলল,
-“আপনি বলেছিলেন রাতে কল দিবেন তাই আর কী।”
ওপাশ থেকে তাহসিনের তপ্ত শ্বাস ফেলার আওয়াজ শুনা গেল।তাহসিন একটুখানি চুপ থেকে বলল,
-“আগামীকাল থেকে আরও বেশি ব্যস্ত থাকবো।তাই সময় করে ফোন নাও দিতে পারি।রাত এগারোটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়বে।আমি কল দেওয়ার হলে এর আগেই দিব।আর যখন দেখবে এগারোটা পাড় হয়ে গিয়েছে কল দেই নি।তখন বুঝে নিবে সেদিন আর কল দিব না।তাই আমার অপেক্ষায় না থেকে ঘুমিয়ে পড়বে ঠিক আছে?”
-“হু।”
-“ঠিক আছে তবে এখন ঘুমাও।”
রোদেলার কান্না পেল।সবেই তো কল দিল।দুই মিনিট না হতেই ফোন রেখে দিচ্ছে?রোদেলার যে কথা বলার বেশ তেষ্টা পেয়েছে।এত জলদিই কি এই তেষ্টা মিটবে?মিটবে না তো।অপর পাশের লোকটা কি আজ তার মন পড়তে পারছে না?নাকি দূরে গিয়েছে বলে রোদেলার কদর কমে গিয়েছে?রোদেলার ছোট্ট মনে অভিমান জমলো। অভিমানের প্রকোপেই বলল,
-“ঠিক আছে রাখছি।ভালো থাকবেন।আসসালামু আলাইকুম।”
রোদেলা খট করে ফোন রেখে দিল।তাহসিনকে আর কিছু বলার সুযোগ অব্দি দিল না।ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফোনের স্ক্রিনে অনিমেশ তাকিয়ে রইল।ভাবলো এই বুঝি তাহসিন ফের কল দিবে।তার অভিমান ভাঙাবে।কিন্তু না রোদেলা আশাহত হলো।তাহসিন ফোন দিল না।তবে ছোট্ট একটি মেসেজ এলো তাহসিনের নম্বর থেকে,,
-“ঘুমিয়ে পড়ো অভিমানিনী।আজ এমন কেউ নেই যে তার হাতের আঙুল কিংবা হাত মুঠোতে পুরে ঘুমাবে।একা একা ঘুমানোর অভ্যাস করো।”
এই ছোট্ট মেসেজটুকু পড়ে রোদেলার বুক ধুকপুক করে উঠলো।তার মানে রোদেলা যে তাহসিনের হাতের আঙুল ধরে ঘুমাতো সেটা তাহসিন টের পেতো?রোদেলা যেন লজ্জায় মিইয়ে গেল।লোকটা যদি সামনে থাকতো রোদেলার যে কি হতো আল্লাহ মালুম।কুন্ঠায় চোখ তুলে তাকাতে পারতো কি?
★
কেটে গেল আরও দিন পাঁচেক।তাহসিন চলে গিয়েছে সপ্তাহ হতে চললো।সে রাতের পর তাহসিন আর একটাবারের জন্যও রোদেলার ফোনে ফোন দেয় নি।মাঝে দিয়ে একদিন শাশুড়ী মায়ের ফোনে মিনিট দুয়েকের জন্য ফোন দিয়েছিল।তখন কয়েক সেকেন্ডের জন্য কথা হয়েছিল।সে জানিয়ে ছিল সে বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।ফোন দেওয়ার সময় অব্দি পাচ্ছে না।রোদেলা মনে মনে বেশ অভিমান জমায়।প্রতি রাতে কান্না করতে করতে ঘুমায় সে।তার এমন মন খারাপ দেখে শ্বশুড় মশাই তাকে বেশ কয়টা উপন্যাসের বই এনে দেয়।যাতে বই পড়ে সময় কাটিয়ে রোদেলার মনটা ভালো যায়।রোদেলা অবসর সময়ে বই পড়ে।শাশুড়ীর হাতে হাতে টুকটাক কাজ এগিয়ে দেয়।শ্বশুড়-শাশুড়ীর সাথে সময় কাটায়।তবে যা-ই করে দিন কাটায় না কেন এই রাতের প্রহরে সে একাকিত্বে ভোগে।রাতের সময়টা যেন তার কাটেই না।একাকিত্ব এসে তার মনে আঁচড় কাটে।মনে মনে তাহসিনের নামে বেশ অভিমান ঠুকে।সে বুঝে তাহসিনের যে চাকরি সেখানে ব্যস্ত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সে বুঝলেও যে তার মন মানতে চায় না।না ছিল তাহসিনের সাথে পূর্বে সম্পর্ক আর না ছিল পূর্বপরিচিত। অথচ তিনদিনের এই অল্প পরিচিত স্বামী নামক মানুষটার জন্য তার মন পোড়ে।
রোদেলা আজ ঘর গুছাতে যেয়ে একটা নতুন ডায়েরি পেল।সাথে কলমও ছিল।যেটার প্রথম পেইজেই সুন্দর করে তাহসিন মাহমুদ নামটা লেখা।এছাড়া পুরো ডায়েরিটা ছিল সাদা ফকফকা।কলমের কালির কোনো আঁচড়ই নেই। রোদেলা ভাবলো তার সকল অব্যক্ত কথাগুলো সে এই ডায়েরিটাতে টুকে রাখবে।কিন্তু যার ডায়েরি তার থেকে তো অনুমতি নেওয়া লাগবে।রোদেলা গত দুইদিন ধরে তাহসিনের সাথে কোনো প্রকার কথাই বলছে না।যখন দেখে তাহসিন মিনিট খানেকের জন্য তার শাশুড়ী মাকে ফোন করেছে তার সাথেও ওই কয়েক সেকেন্ড কথা বলবে তখনই রোদেলা কাজের বাহানা দিয়ে এড়িয়ে যেত।কথা বলতো না।কিন্তু এখন তো কথা না বলে আর পারছে না।তাই হাজারটা দ্বিধা-দ্বন্ধ নিয়েই তাহসিনের নম্বরে ফোন লাগালো।কয়েকবার রিং হতেই তাহসিন ফোন ধরলো।ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
-“হুম বলো।”
রোদেলা বলল,
-“আপনার ড্রয়ারে একটা ডায়েরি পেয়েছি।সেটা কি আপনার খুব বেশি প্রয়োজন?আমি কি সেই ডায়েরিটা ব্যবহার করতে পারি?”
তাহসিন বলল,
-“সমস্যা নেই তুমি ওই ডায়েরিটা কাজে লাগাও।আমার লাগবে না ওটা।”
-“ধন্যবাদ।”
-“আর কিছু বলবে?”
-“না।”
-“ঠিক আছে রাখছি তবে।মিটিং আছে এখনই।”
তাহসিন ফোন রেখে দিল।রোদেলার অভিমান হলেও কিছু বললো না।এই কয়টাদিনে যেন এসবে নিজেকে বেশ অভ্যস্ত করে নিতে চাইছে।রোদেলা উঠে যেয়ে ডায়েরিটি হাতে নিল সাথে কলমটিও নিল।এরপর বিছানায় এসে বসলো। ডায়েরির প্রথম পৃষ্ঠায় তাহসিনের লেখা নামটি আলতো হাতে ছুয়ে দিল।এরপর তাহসিনের নামের পাশে গুটিগুটি অক্ষরে নিজের নামটি লিখলো।তবে নিজের পুরো নাম লিখলো না।তাহসিনের ডাকা “মায়মূন” নামটিই লিখলো। এরপর অপর পৃষ্ঠা থেকে তারিখ এবং সময়টা লিখে লেখা শুরু করলো,
“প্রিয় স্বামী,
আপনি তো ছিলেন অপরিচিত,অজ্ঞাত এক ব্যক্তি।তবে কেন এত অল্প দিনের আলাপে হয়ে গেলেন আমার হৃদয়ের রাজত্বকারী?আপনার জন্য জমিয়ে রেখেছি অব্যক্ত কিছু অভিমান।কবে দেখা দিয়ে ভাঙাবেন সেই মান?”
এইটুকু লিখেই রোদেলা ডায়েরিটি বন্ধ করে তার বালিশের পাশে রাখলো।এরপর ঘরের আলো নিভিয়ে স্বপ্নালো জ্বালিয়ে বিছানায় এসে নিজের বালিশে মাথা রাখলো। এরপর পাশ থেকে টেনে নিল তাহসিনের বালিশটি।যেটা কিনা ঠাঁই পেল রোদেলার বুকে।বালিশটি জড়িয়ে ধরে সে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।তাহসিন যাওয়ার পর থেকে রোদেলা এমনটাই করে আসছে।এই বালিশটিতে যে তাহসিনের চুলের সুবাস লেগে আছে।যা কিনা রোদেলার নাসারন্ধ্রে পোঁছালেই মনে হয় তাহসিন তার পাশে আছে।তাহসিনকে অনুভব করতে করতেই ঘুমের শহরে সে পাড়ি দেয়।আবার কখনো বা তাহসিনকে অনুভব করতে করতে চোখের জল ফেলে।এইতো এমন ভাবেই কাটছে রোদেলার দিন।
#চলবে
[বি.দ্র:-কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।
#নীল_বসন্ত
#লেখনীতে_মিথিলা_মিতু
#পর্বসংখ্যা_০৫
সময় নদীর স্রোতের মতো প্রবাহিত।সময় থেমে থাকে না। সে চলতে থাকে তার মতো।সময়ের সাথে মানুষের জীবনও চলতে থাকে।কেউ কারো জন্য থেমে থাকে না।তেমনিভাবে রোদেলার জীবনও থেমে নেই।সে নিজেকে যথেষ্ট সংসারী করে নিচ্ছে।এখন আর তাহসিনের সাথে কথা না হলেও তার ততটাও খারাপ লাগে না।সংসারের টুকিটাকি কাজ, শ্বশুড়-শাশুড়ির সাথে সময় কাটানো তারপর উপন্যাসের বই পড়েই তার সময় কাটছে।তাহসিন সপ্তাহে একদিন ফোন করে সবার সাথে অল্পকিছুক্ষণ করে কথা বলে।এছাড়া কারো সাথেই তেমন কথা হয় না।সে তার কর্ম নিয়ে বেশ ব্যস্ত থাকে।রোদেলা এখন নিজেকে বুঝাতে শিখেছে তাহসিন চাইলেই সময় দিতে পারবে না।এর উপর থাকে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে।সেখানে মাঝে মাঝে নেটওয়ার্কেও বেশ বেগ পোহাতে হয়।সবমিলিয়ে রোদেলা নিজেকে দারুণভাবে মানিয়ে নিচ্ছে।এইতো কলেজে ভর্তি হলে সময়টা আরও ভালোভাবে কেটে যাবে।তখন সেও ব্যস্ত হয়ে পড়বে।রেজাল্ট দিবে আগামীকাল।সেটা নিয়েও তার চিন্তার শেষ নেই।রেজাল্ট ভালো করবে কিনা সে চিন্তাও করে। যেহেতু আগামীকাল দুপুরে রেজাল্ট দিবে সেহেতু চিন্তায় আজ রাত আর তার ঘুম আসবে না।চিন্তায় চিন্তায় রাত কেটে যাবে।রোদেলার সংসার জীবনের গ*ত হয়েছে মাস তিনেক।এই তিনমাসে তাহসিনের দেখা নেই।অবশ্য সপ্তাহে যেদিন কল দেয় সেদিন ভিডিও কলেই তাহসিনকে দেখা হয়।রোদেলার প্রায়ই বলতে ইচ্ছে হয় “কবে আসবেন?”কিন্তু আড়ষ্টতা কাটিয়ে বলে উঠতে পারে না।
★
সময়টা এখন মধ্য রাত।ঘড়ির কাটা একটা পেরিয়ে দুইটা ছুঁইছুঁই।তাহসিন ক্লান্ত শরীরে মাত্র তার কোয়ার্টারে ফিরেছে। কোয়ার্টারে ফিরে সে আগে লম্বা একটা শাওয়ার দিল।রুমে আসতেই যেন তার ক্লান্ত শরীর একটুখানি বিশ্রাম খুঁজছে। কিন্তু তাহসিনের হাতে যে ওইটুকু সময় নেই।আগামীকাল ভোরে একটা মিশনে এক্সিকিউট করতে হবে।এখন তার জরুরি কিছু ফাইল চেক দিয়ে তারপর রেস্ট নিতে পারবে। তাহসিন শরীরে ক্লান্তি কাটানোর জন্য রান্নাঘরে যেয়ে ঝটপট এক কাপ চা বানিয়ে নিল।চা খেতে খেতে ফাইলটা চেক দিল।পাশাপাশি কিছু নোট করে রাখলো।অতঃপর ডিনার সেরে বিছানায় এলো।ফোনের দিকে নজর যেতে মনে হলো মায়মূনের সাথে কথা বলে নেওয়া উচিত। আগামীকাল তার মায়মূনের রেজাল্ট বের হবে।এই চিন্তায় যে মেয়েটা মিইয়ে থাকবে সেটা তাহসিনের জানা আছে। আগামীকাল তাহসিন বেশ ব্যস্ত থাকবে।আর যেখানে যাবে সেখানে নেটওয়ার্কের অবস্থা শোচনীয়।তাই হয়তো আগামীকাল আর সে রোদেলার সাথে কথা বলতে পারবে না।তাই ভাবলো আজই একটুখানি কথা বলে অভয় দেওয়া যাক।যে ভাবনা সে কাজ।তাহসিন ফোন কলে যেয়ে “মায়মূন” নামের নম্বরে ফোন বসালো।দু’বার রিং হতেই ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হওয়ার আওয়াজ শোনা গেল। তাহসিন “হ্যালো” বলতেই রোদেলা সালাম দিল।তাহসিন বলল,
-“ঘুমাও নি?”
রোদেলা বলল,
-“না।ঘুম আসছে না।”
-“কেন?রেজাল্ট নিয়ে টেনশন হচ্ছে?”
-“হু।”
-“এত টেনশনের কি আছে হুহ?এক্সাম তো দিয়েই ফেলেছো।এখন টেনশন করে কোনো লাভ হবে?রিলাক্সে থাকো।এত টেনশন করো না।”
-“টেনশন করতে হয় নাকি?এটা তো অটোমেটিক এসে পড়ে।”
-“ভুল বলেছে।মানুষ তার মনকে যেদিকে দিকনির্দেশনা দিবে মন সেদিকে যাবে।তুমি যদি তোমার মনকে বুঝাও চিন্তা করতে।তবে সে চিন্তাই করবে।তুমি যদি বুঝাও শান্ত থাকতে।তবে সে শান্ত থাকবে।মানুষই মূলত তার মনকে পরিচালনা করে।তাই আমার কথা শুনো।তুমি নিজেকে শান্ত রাখো।অযথা চিন্তা করো না।সব ভালো হবে।”
রোদেলা নিচু স্বরে করে বলল,
-“মনকে বুঝানো যুদ্ধ থেকে কম কিছু না।”
তাহসিন শান্ত কন্ঠে বলল,
-“আর সে যুদ্ধেই তোমাকে জয়ী হতে হবে।”
-“হ্যাঁ হতে তো হবেই।একজন বীরের বউ কিনা।”
রোদেলার এই কথায় ওপাশ থেকে তাহসিন ঠোঁট চেপে হাসলো।অডিও কলে থাকায় তা রোদেলা দেখতে পেল না। তাহসিন বলল,
-“তো ডিনার করেছো?”
-“হুম।আপনি?”
-“হুম এইতো করলাম।মা-বাবা কেমন আছে?উনাদের শরীর ঠিক আছে?”
-“হুম আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।”
-“রেজাল্ট দিবে কখন?”
-“দুপুরে।”
-“শুনুন।”
-“হুম ম্যাডাম বলুন।”
-“কালকে একটু আমার আব্বুর বাসায় যাবো?সেখান থেকে স্কুলে যাবো।”
-“রেজাল্ট তো ঘরে বসেই দেখা যাবে।”
-“তা যাবে।কিন্তু স্কুলে গেলে বান্ধুবীদের সাথে দেখা হবে। প্রাক্তন টিচারদের সাথে দেখা হবে।সবাইকে কত্তগুলো দিন দেখি না।”
-“আচ্ছা যেও সমস্যা নেই।”
-“আমি কিন্তু আগামীকাল ফিরবো না।পরশু ফিরবো।একটা দিন রুহির সাথে কাটাতে চাই।অনেকদিন হয়েছে ওকেও দেখি না।”
-“ঠিক আছে।সমস্যা নেই।শুনো,রাখছি তাহলে।ভালো থেকো।আর শুনো, চিন্তা করো না।ঘুমিয়ে পড়ো এখনই। নয়তো শরীর খারাপ করবে।”
রোদেলা বলল,
-“আচ্ছা ঠিক আছে।”
তাহসিন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলো।সে ইচ্ছে করে আগামীকালের মিশনের কথা রোদেলাকে বলে নি।অযথা তাকে নিয়ে চিন্তা করবে।সে পারসোনাল লাইফ আর প্রফেশনাল লাইফ সবসময় আলাদা রাখে।কাজ নিয়েও কখনো রোদেলার সাথে আলোচনা করে না।এমনকি তার মা-বাবার সাথেও না।পারসোনাল লাইফ আর প্রফেশনাল লাইফ দুটোই ভিন্ন।কোনোটার সাথে কোনোটা মিলাতে নেই।
★
পরেরদিন সকালে তাজউদ্দিন মাহমুদ রোদেলাকে নিয়ে দিয়ে আসেন।এরপর উনি উনার কাজে চলে যান।রোদেলা বাসায় কিছুক্ষণ থেকে দুপুরের অল্প কিছুক্ষণ পূর্বে স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হয়।এরপর বান্ধুবীদের সাথে দেখা হয়।সবাই মিলে ওদের স্কুলের টিচারদের সাথে দেখা করে।সেভাবে অনেকটা সময় কেটে যায়।দুপুর দুইটা বাজতে ওরা রেজাল্ট হাতে পায়।রোদেলা জিপিএ ফাইভ পেয়েছে।ওর বান্ধুবীরাও অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে।রোদেলা তো আনন্দে কান্না করে দিয়েছিল।এই পরীক্ষার সময়ও তার সৎ মা তাকে কম খাটায় নি।কাজ শেষ করে পড়েছে।ঠিক মতো পড়তেও দেয় নি।এতকিছুর মাঝে যে সে এতটা ভালো রেজাল্ট করেছে তাতে সে কোটিবার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছে।বাসায় এসে তার রেজাল্টের খবর সবাইকে জানিয়েছে।সবাই খুশি হলেও তার সৎ মা খুশি হয় নি সেটা রোদেলা বেশ বুঝতে পেরেছে।রোদেলা তার শাশুড়ী মাকে ফোন করে জানিয়েছে।নাজমা বেগম শুনে খুবই খুশি হয়েছেন। মএরপর তার শ্বশুড়কে জানিয়েছে।তাজউদ্দিন সাহেবও বেশ খুশি হয়েছেন।রোদেলা ভেবেছিল তাহসিনকে ফোন করবে। পরে ভাবলো তাহসিন ওইসময় ক্যান্টনমেন্টে থাকবে।তাই ফোন না করে মেসেজ করে জানিয়ে দিল। সারাদিন কাটলো অপেক্ষায় অপেক্ষায়।তবুও তাহসিন কল দিল না।রোদেলা ভেবেছে তাহসিন মেসেজ দেখেই কল দিবে।কিন্তু তাহসিন এখনো মেসেজ দেখছে না বিধায় রোদেলার মন বেশ খারাপ হয়ে গেল।সে ভেবেছিল আজকে তার বাবার বাসায় থাকবে।কিন্তু এখন আর এখানে ভালো লাগছে না।নাজমা বেগম আর তাজউদ্দিন সাহেবকে সে মিস করছে।সন্ধ্যার পরেই রোদেলা তাজউদ্দিন সাহেবকে ফোন দিয়ে জানালো তাকে এসে নিয়ে যেতে।তাজউদ্দিন সাহেব বলেছেন এসে নিয়ে যাবেন।রোদেলা ওইটুকু সময় রুহির সাথে কাটালো।অনেকদিন পর রুহি রোদেলাকে পেয়ে খুব খুশি হয়েছিল।চলে যাবে শুনে তার মন খারাপ করছে।কিন্তু কিছুই করার নেই।রোদেলা যেহেতু বলেছে চলে যাবে সেহেতু চলেই যাবে।কেউ আটকাতে পারবে না।
রাত আটটার দিকে এসে তাজউদ্দিন মাহমুদ রোদেলাকে নিয়ে গেলেন।রোদেলা “মাহমুদ ভিলায়” এসে কিছুক্ষণ শ্বশুড়-শাশুড়ির সাথে সময় কাটালো।বউমা এ+ পেয়েছে সে খুশিতে তাজউদ্দিন সাহেব মিষ্টি আনলেন।নিজ হাতে রোদেলাকে খাইয়ে দিলেন।অথচ রোদেলার বাবার এই কাজটি করার কথা ছিল।তিনি এসব কিছুই করলেন না। আসলেই মানুষ পরিবর্তনশীল।রোদেলার যখন মা ছিল তখন বাবা কতই না আদর করতেন।মা মা*রা যাওয়ার পরও বাবা আদর করতেন।কিন্তু তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করার পর থেকে তাকে আর আদর করে না।তার সৎ মা আর রুহিকে নিয়েই তার এখন সময় কাটে।রুহিকে আদর করে সেটা নিয়ে তার মোটেও দুঃখ হয় না।কারণ রুহি মেয়েটার যে বাবার আদর পাওয়া দরকার।বাবা কখনো ওকে বুঝতে দেন না উনি যে রুহির জন্মদাতা পিতা নন।তার সৎ মায়ের প্রথম ঘরের সন্তান রুহি।রুহির বাবা বাইক এক্সিসিডেন্টে মা*রা যান।রুহি তখন বেশ ছোট।তার সৎ মাকে যখন তার বাবা বিয়ে করলো তখনও রুহি বেশ ছোট ছিল।সেই ছোট রুহিই যেন রোদেলার খেলার সাথী হয়ে উঠল।তাই রুহিকে বাবা আদর করেন সেসব নিয়ে তার কখনো খারাপ লাগে না।কিন্তু খারাপ তো লাগে তখনই যখন বাবা নিজের মেয়েকে অবহেলা করেন।আদর করেন না।যেন বোঝা মনে করেন।অথচ তিনি রোদেলার জন্মদাতা। সেসব ভেবেই রোদেলার বেশ মন খারাপ হলো।মন খারাপ যেন আজ রোদেলাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে ধরেছে।একেতে তাহসিন কোনো খবর নিল না।অন্যতে এসব পুরোনো কথা মনে পড়ে আরও খারাপ লাগছে।রোদেলা যেয়ে নিজের রুমে শুয়ে পড়লো।রাতের খাবারের সময় হলে নাজমা বেগম রোদেলাকে ডাকলেন খাবার খাওয়ার জন্য।কিন্তু রোদেলা বলল খাবে না।নাজমা বেগম জোর করে উঠিয়ে নিজ হাতে খাইয়ে দিলেন।তারপর রোদেলার রুম থেকে গেলেন।নাজমা বেগম যাওয়ার পর রোদেলা ফোন চেক করে।দেখে তাহসিন মেসেজ সিন করে রেখেছে।কোনো রিপ্লাই দেয় নি।এবার যেন রোদেলার কান্না পেল সাথে অভিমানও তড়তড় করে বাড়তে লাগলো।রোদেলা মন খারাপ করে ফের ঘুমানোর চেষ্টা করলো এবং সফলও হলো।আসলে মন খারাপের সাথে সাথে যেন মানুষের ঘুমও বেড়ে যায়।আর মন খারাপের সময় আসা এই ঘুম-ই মন খারাপ ভ্যানিশ করে দেয়।
★
তখন গভীর রাত।রোদেলার বেশ শীত শীত অনুভব হচ্ছে। সে ঘুমের মাঝেই হাত-পা গুটিয়ে নিল।হঠাৎ যেন কেউ তাকে চাদরের মতো আষ্ঠেপৃষ্ঠে ধরেছে।এখন আর তার শীত লাগছে না।কেউ যেন ইচ্ছে করেই এমনটা করলো। কারো উষ্ণতায় রোদেলার বেশ আরাম লাগছে।আরামের প্রকোপে যেন সে আরও গভীর ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ তার মস্তিষ্ক সজাগ হলো।মনে পড়লো সে তো একা ঘুমায়। তবে কেন এই মুহুর্তে তার মনে হচ্ছে তাকে কেউ জড়িয়ে নিয়েছে?রোদেলা চট করে চোখ মেলল।পাশে কারো উপস্থিতি টের পেল।সে সত্যিই দেখলো তার শরীরে কম্বল পেঁচানো।বলিষ্ঠ একটা হাত তার পিঠের উপরে।এক মুহুর্তে রোদেলার ঘুম ছুটে গেল।তার মস্তিষ্ক কিছু চিন্তা না করেই ভয় পেয়ে চিৎকার দিতে যাবে এমন সময় বলিষ্ঠ হাতটা তার মুখ চেপে ধরলো।বলল,
-“আরে আরে করছো কি?ভয় পেয়ো না।”
রোদেলার ঘুম এবার ভালো করে ছুটে গেল।খেয়াল করে দেখলো এটা যে তার মাহমুদ সাহেব।রোদেলা অবাকই হলো বটে।তার এখন মনে হচ্ছে সে নির্ঘাত স্বপ্ন দেখছে।এই যে এখনই ঘুম ভেঙে যাবে আর সে দেখবে তার পাশের জায়গাটি শূন্য পড়ে আছে।সত্যিই কি তাই হবে?উহু একদমই নয়।রোদেলা যা দেখছে সবই যে সত্যি।এই যে তাহসিনের কথায় তার হুস এলো।তাহসিন রোদেলা মুখ থেকে হাত সরিয়ে বলল,
-“আমাকে দেখলে সবসময় তোমার ভয় পেতেই হবে হুহ? সবসময় মাথায় রাখবে আমার রুমে আমি ছাড়া অসময়ে কেউই আসবে না।বুঝাতে পেরেছি?”
রোদেলা সে কথার জবাব না দিয়ে বোকা বোকা চেহারা করে বলল,
-“আপনি কি সত্যিই এসেছেন?”
তাহসিন ভ্রু উচিয়ে বলল,
-“বিশ্বাস হচ্ছে না?”
রোদেলা দুইদিকে মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলল,
-“না হচ্ছে না।আমার মনে হচ্ছে আমি আপনাকে স্বপ্ন দেখছি।প্রতিদিন রাতে যেমনটা দেখি।তাই বিশ্বাস করতে পারছি না।”
তাহসিন অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
-“তাই নাকি?আমাকে তুমি স্বপ্নেও দেখো?বাব্বাহ,অসম্ভব ব্যাপার-স্যাপার।তো ম্যাডাম আমাকে নিয়ে কি স্বপ্ন দেখেন জানতে পারি কি?”
-“দেখি কোনো একদিন আপনি হঠাৎ এসে আমাদের সবাইকে চমকে দিয়েছেন।এই যে এখনও যেমনটা দেখছি। তাই তো কোনটা সত্যি কোনটা স্বপ্ন ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।”
তাহসিন রোদেলার কথা শুনে ঠোঁট চেপে হাসলো।তারপর নিজের ডান হাতখানা বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
-“তাহলে আমার হাতটা ধরে দেখো আমি কি সত্যিই এসেছি নাকি স্বপ্নে এসেছি।হাত ধরবে নাকি আঙুল মুঠোতে পুরবে?”
রোদেলা বলল,
-“আপনি স্বপ্নে এসেও এভাবে আমাকে লজ্জা দেন।তাই এখনো বুঝতে পারছি না।”
-“হাত বাড়ালাম তো।এবার ছুঁয়ে দেখো সত্যি এসেছি কিনা।”
রোদেলা কাঁপাকাঁপা হাতে তাহসিনের হাত মুঠো করে ধরলো।দেখতে পেল সে আসলেই তাহসিনকে স্পর্শ করতে পারছে।তার মানে সত্যিই এসেছে?রোদেলা চোখ বড় বড় করে তাহসিনের দিকে তাকিয়ে রইল।বলল,
-“আ..আপনি সত্যিই এসেছেন তবে।”
-“হ্যাঁ সত্যিই এসেছি।ভাবলাম আমার বউ এতো ভালো রেজাল্ট করেছে তাকে যেয়ে একদম সারপ্রাইজ করে দিই। তাই চলে আসা।”
-“কিন্তু আপনি রুমে ঢুকলেন কি করে?”
-“দরজা দিয়ে।হেঁটে হেঁটে ঢুকলাম।আপনি কি দরজা লক করে ঘুমিয়েছিলেন ম্যাডাম?”
রোদেলা মনে করার চেষ্টা করলো।তারপর মনে পড়লো আসলেই তো সে আজকে দরজা না আটকেই ঘুমিয়ে পড়েছে।তার শাশুড়ী ভাত খাইয়ে দিয়ে দরজা চাপিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন।রোদেলা জিজ্ঞেস করলো,
-“কখন এসেছেন?”
-“এসেছি তো ঘন্টার উপরে হবে।এসে মাকে ফোন করে বললাম গেইট খুলতে।তারপর বাসায় এসে ভাত খেলাম। তারপরই রুমে এলাম।”
-“ওহ।আপনি কি করে জানলেন আমি এ বাসাতে?”
-“মা রাতের দিকে আমাকে ফোন করে অনেক বকা দিয়েছিল।বলল,মেয়েটা এত ভালো রেজাল্ট করেছে একটাবারও কি খোঁজ নিয়েছি?তারপর তোমার মন খারাপ। সবকিছুই জানালো। তখনই জানতে পেরেছি তুমি এসে এখানে পড়েছো।আর কিছু জিজ্ঞেস করার আছে?না হলে ঘুমোও।”
রোদেলা ছোট্ট করে বলল,
-“মেসেজ সিন করে রাখা হয়েছিল কেন?”
তাহসিন বলল,
-“সারাদিন অনেক ব্যাস্ত ছিলাম।এরপর রাতে যখন তোমার মেসেজটা দেখি তখন খুব খুশি হয়েছি।ভাবলাম ছুটি তো পেয়েছিই বাসায় যেয়েই সারপ্রাইজ দিই।তাই আর মেসেজের রিপ্লাই দিলাম না।”
রোদেলা বুঝার ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো।তাহসিন বিছানায় পিঠ এলাতে এলাতে বলল,
-“নাও এবার ঘুমোও।ভোর হতে আরও দেরি আছে।”
রোদেলা মাথা নেড়ে এককোনায় গুটিশুটি মে*রে শুয়ে পড়লো।তাহসিন রোদেলাকে বলল,
-“এভাবে ওইদিকে চাপতে থাকলে নির্ঘাত বিছানা থেকে পড়ে হাড়গোড় ভাঙবে।”
রোদেলা লজ্জা পেল।এতগুলো মাস পর তাহসিনের দেখা পেল।লজ্জা তো লাগার কথাই।তাহসিন ফের বলল,
-“ঠিক হয়ে আরাম করে শোও।এই নাও আমার আঙুল মুঠোতে পুরে ঘুমোও।”
রোদেলা লজ্জা পেয়ে চোখ খিচলো।তাহসিন ঠোঁট কামড়ে হাসলো।তাহসিন বিরবির করে বলল,
-“কাছে থাকলে লজ্জা পায়,দূরে গেলে অভিমানে মুখ ফোলায়।কি করলে ভালোবাসবে সেটাই বুঝতে পারছি না।”
ভাগ্যিস কথাটুকু রোদেলার কর্ণগোচর হয় নি।নয়তো সে বেচারি আরো কুন্ঠায় মিইয়ে যেত হাহ।
#চলবে
[বি.দ্র:-কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।