নীলাবতী পর্ব-০৪

0
167

#নীলাবতী
[পর্ব – ৪]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

নীলা মারিয়ার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে, আর মারিয়া ভয়ে পিছিয়ে যেতে থাকে।

— নীলা আমাকে প্লিজ ছেড়ে দে।

— মারিয়া তুই কি ভাবছিস আমি তোকে মারার জন্য এখানে আসছি? তাহলে ভুল। তুই শুধু আমার ফ্রেন্ড না তুই আমার বোন। তোর উপরে আমার কোনো রাগ নেই। শুধু আমি একটা কথা বলার জন্য এখানে আসছি সেটা হলো তুই কাজটা ঠিক করিস নাই। ভালো থাকিস।

এই কথা বলে নীলা মারিয়ার বাসা থেকে চলে গেলো। রাত তখন প্রায় ১২টা বাজে। নীলা একা একা রাস্থা দিয়ে হেটে যাচ্ছে এমন সময় নীলার সামনে একটা কালো গাড়ি এসে দাঁড়িয়ে যায়। নীলা গাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকে। এমন সময় গাড়ি থেকে নেমে আসে ইন্সপেক্টর নিহান। নীলা নিহানকে দেখে পালিয়ে যাবে এমন সময় নিহান নীলাকে ডাক দিয়ে বলল।

— নীলা দাড়াও তুমি। আমি তোমাকে গ্রেফতার করতে আসিনি। আমার কথা শোনো।

নীলা কোনো কথা না শুনে দৌড়াতে শুরু করে। নীলার পিছনে নিহান ও দৌড়ে চলে যায়। নীলা নিহানের দৌড়ের সাথে পেরে উঠেনা। যতই হোক পুরুষ মানুষ! কিছুক্ষণের মধ্যেই নীলাকে ধরে ফেলে নিহান।

— নীলা তুমি পালাচ্ছো কেন? আমি কি বললাম শোনোনি?

— পুরুষের উপরে আমার কোনো বিশ্বাস নাই। এরা মেয়েদের ঠকাতে পারে মিথ্যে কথা বলে।

— সবাই তো এক না।

— সবাই এক। স্যার আমাকে যেতে দিন। আমার আরো কিছু কাজ বাকি আছে। তারপর আমি নিজেই যাবো থানায়।

— আমি তোমাকে গ্রেফতার করতে আসিনি। আর আমি এখন অফ ডিউটিতে আছি। আমি এখানে আসছি শুধুই তোমার সাথে দেখা করার জন্য।

— কি জন্য?

— তুমি আমার সাথে গাড়িতে এসে বসো।

— গাড়িতে কেন? এখানেই বলুন। আমি গাড়িতে উঠবো না।

— ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আমি তোমাকে জেলে নিয়ে যাবো না।

নীলা আর কোনো কথা না বলে নিহানের সাথে গাড়িতে উঠে বসে। নিহান গাড়ি চালিয়ে নীলাকে নিয়ে নদীর পাড়ে নিয়ে গেলো।

— নীলা নামো গাড়ি থেকে।

নীলা গাড়ি থেকে নেমে যায়। এবার দুজনেই নদীর খুব কাছে গিয়ে বসে।

— আপনি আমাকে এখানে কেন নিয়ে আসলেন?

— নীলা তুমি আমাকে তোমার বন্ধু মনে করতে পারো। মনে করো আমি পুলিশ নই। আমি একটা জিনিস জানতে চাই এতো গুলো খুনের রহস্য কি? কেন তুমি মানুষ খু*ন করছ? আমি তোমার ব্যপারে অনেক খোঁজ নিয়েছি। আমি যতোটা শুনেছি। তুমি তো আগে এমন ছিলেনা। হঠাৎ করে কি হয়ে গেলো? কেন তুমি নিজের স্বামীকে ও হত্যা করলে?
তুমি আমাকে সব বলো। আমি কথা দিচ্ছি আমি তোমার পাশে আছি সব সময়।

— স্যার আমি না এখন আর কাওকে বিশ্বাস করতে পারিনা। যাকে বিশ্বাস করি সে আমার বিশ্বাস ভেঙে দেয়। মানুষ আসলেই মানুষের বিশ্বাস নিয়ে খেলা করতে ভালোবাসে। আমি আর ঠকতে চাইনা স্যার। অনেক ঠকেছি আর নাহ।

— আমাকে তুমি বিশ্বাস করতে পারো। আমি তোমার সব অতীত জানতে চাই নীলা। তোমার সাথে কি এমন হয়েছে যার জন্য আজ তোমার এমন পরিনতি। তুমি আমাকে সব বলো।

নীলার চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে।

— কান্না কেন করছো তুমি? আমাকে সব খুলে বলো। তোমার চোখে কান্না মানায় না।

— স্যার আপনি কি বিশ্বাস করবেন কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে অন্যের হাতে তুলে দেয়? কোনো স্বামী কি পারে তার স্ত্রীকে অন্য একটা লোকের হাতে তুলে দিতে? তাও স্ত্রীর অজান্তে। আপনি কি মেনে নিতে পারবেন আপনার স্ত্রীকে অন্য কেউ ধর্ষণ করলে।

— আমি বুঝলাম না তোমার কথা৷

— তাহলে শোনেন,,

ফ্ল্যাশব্যাক
______________

নীলা আর নিলয়ের বিয়ে পারিবারিক ভাবেই হয়। পারিবারিক ভাবে বিয়েও হলেও দুজনের মধ্যে খুব ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে। নিলয় একটা অফিসে চাকরি করে। সেখানকার বস অনেক প্রভাবশালী। নিলয় আর নীলা পরিবার নিয়ে খুব ভালো ভাবে দিন কাটাতে থাকে। নিলয় বিয়ের জন্য অফিস থেকে ১ মাসের ছুটি নিয়েছে। দুই দিন পরে নিলয়ের ডিউটি শুরু হওয়ার কথা। নিলয় নীলা তার পরিবারের নিয়ে এক সাথে খেতে বসেছে। নিলয় খাবার খেতে খেতে বলল — দুই দিন পরে আমার ডিউটি শুরু হয়ে যাবে। আমি চাইছি কালি চলে যাবো। ওখানে বাসা ঠিকঠাক করতে আমার এক দিন লেগে যাবে।

নিলয়ের বাবা বলল — নিলয় তুই এক কাজ কর, তুই বউমাকে সাথে নিয়ে যাহ। তাহলে তোর জন্য ভালো হবে। হোটেলের খাবার ও তোকে আর খেতে হবে না। বউমা রান্না করবে।

— কিন্তু বাবা তোমাদের কে দেখবে?

— আমাদের নিয়ে চিন্তা করিস না। আমরা ঠিক ভাবেই থাকতে পারবো। আর মাঝে মাঝেই তোর বাসা থেকে ঘুরে আসবো।

— তাহলে বাবা চলো সবাই মিলে চলে যায়। বাসায় তো আরো দুইটা রুম আছেই খালি। আমি না হয় সেটাও নিয়ে নেবো।

— অহেতুক টাকা খরচ না করাই ভালো। সামনে তোর ভবিষ্যৎ আছে সেটাও ভাবতে হবে। আর আমি এখান থেকে চলে গেলে বাড়িঘর কে দেখবে? তার ছেয়ে ভালো তুই বউমাকে সাথে নিয়ে যাহ। আমাদের তো সব সময় কথা হবে।

— ঠিক আছে বাবা।

সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলো। নিলয় রুমে গিয়ে নীলাকে বলল — নীলা তুমি আমাদের জামাকাপড় গুলো ঘুছিয়ে নাও। সকালে বের হতে হবে। ওখানে গিয়ে রুম পরিষ্কার করতে হবে। আরো অনেক কাজ আছে।

— সমস্যা নাই আমি সব গুছিয়ে নিচ্ছি।

এই কথা বলে নীলা সব কিছু ভালো ভাবে গুছিয়ে নেয়। এবার দুজনেই খাটের উপরে এসে বসে। নিলয় নীলাকে বলল — নীলা চলো আমরা ছাদে যাই৷ আজ আকাশে চাঁদ উঠেছে।

নীলা একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিলয়ের সাথে ছাদের উপরে চলে গেলো। দুজনেই ছাদের এক কোণে গিয়ে বসে।

— নীলা আজ তোমাকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। জানো নীলা আমি কখনও ভাবিনি তোমার মতো কেউ আমার জীবনে আসবে। জানো আমি না অনেক হ্যাপি।

— আমিও অনেক হ্যাপি। তোমার মতো একজন মানুষের স্ত্রী হতে পেরে।

— নীলা তোমার চুল গুলো একটু ছেড়ে দাও।

নিলয়ের কথা শুনে নীলা একটা মুচকি হাসি দিয়ে চুল গুলো ছেড়ে দেয়। হালকা হাওয়ায় নীলার চুল উড়তে থাকে। আর সেই চুল নিলয়ের মুখে এসে পড়ছে।

অনেক্ক্ষণ দুজনে ছাদের উপরে বসে গল্প করলো। চাঁদ দেখল। এর পর দু-জনে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নীলা। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলয়কে ডেকে তুলে। এবার দুজনেই রেডি হয়ে মা-বাবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা তাদের বাসায় পৌছে গেলো। রুমে গিয়ে নীলা দেখে রুমের অবস্থা নাজেহাল।

— এই-যে মিস্টার! এখানে কি আগে মানুষ থাকত?

— তো কি থাকতো হ্যাঁ?

— রুমের যে অবস্থা দেখে মনে হয়না কোনো মানুষ এখানে থাকতো।

নিলয় একটা হাসি দিয়ে বলল — ব্যাচেলর ছিলাম বুঝতে পারছ তো! ডিউটি শেষ করে এসে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যেতাম।

— এখন থেকে এসব আর চলবে না। মনে থাকে যেনো। আর হ্যাঁ অফিস থেকে খুব তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে হবে৷ বেশি দেরি করলে কিন্তু বাসায় ঢুকতে দেবোনা এই বলে দিলাম।

আসতে না আসতেই শুরু হয়ে গেলো রাজত্ব! আল্লায় ভালো যানে কি আছে কপালে। মনে মনে বলল নিলয়।

— ওকে মেডাম আপনি যা বলবেন তাই হবে। এখন দু’জন মিলে রুম পরিষ্কার করি।

— তোমাকে লাগবে না আমি একাই পারবো। তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে আসো আগে।

— ঠিক আছে।

এই কথা বলে নিলয় ফ্রেশ হতে চলে গেলো। আর নীলা ঘর ঘোচাতে থাকে।

চলবে?

রি-চেক করা হয়নি।