১০.
আসসালামু আলাইকুম।আমার নাম প্রত্যুষ।পুরো নাম আহসানুল হক প্রত্যুষ।আমার কোনো পরিচয় নেই।জ্বী।ঠিক শুনেছেন।আমি পরিচয় দেওয়ার মতো তেমন বিশেষ কেউ না।কিন্তু যেহেতু এটা অনুর ডায়েরি,তাই আমি এখানে নিজের একটা পরিচয় দিতেই পারি।আমি অনুর হাসব্যান্ড।এই ডায়েরির মালিক আমার বউ।সুতরাং,সে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া পর্যন্ত আমাদের সমস্ত কিছু আমিই এই ডায়েরিতে লিখে রাখবো।
উফফ! অনুর আপডেটই তো দেওয়া হয় নি।অনু এখন কিছুটা সুস্থ।তাকে গতকাল ডিসচার্জ করা হয়েছে।সে এখন খাম্মার বাড়িতে।আমিও গতকাল সেখানে ছিলাম।আজ অফিস করে বাড়ি এসেছি।আপনাদের সকলের জ্ঞাতার্থে জানাই,আগামী শুক্রবার আমার আর অনুর বিয়ে।খুব বেশি আয়োজন না।তবে খালু চাচ্ছেন মোটামুটি আয়োজন করতে।ঐরকম শুয়ে শুয়ে তো আর বিয়ে হয় না।আত্মীয় স্বজনদেরও তো দাওয়াত করতে হয়।
অনুর ইমপ্রুভমেন্ট হলো সে মাথা নাড়তে পারে,হাত তুলতে পারে,আর পলক ফেলতে পারে।এছাড়া তার আর কোনো ইম্প্রুভমেন্ট নেই।সে হাঁটতেও পারে না,কিছু বলতেও পারে না।নিজে নিজে কিছু করতেও পারে না।সে কেবল শুয়ে শুয়ে গভীর মনোযোগে আমাদের দেখে।আমার সাথে বিয়ে হবে শুনে সে একটু অপ্রস্তুত বোধ করলো।কিছুটা মিইয়ে গেল বোধহয়।বেকুবটা জানে না যে তার ডায়েরি আমি একশোবারের উপরে পড়ে ফেলেছি।সে যে কল্পনায় হাজারবার আমাকে টোপর পরা বর বানিয়ে বসে আছে,সে আমি আরো আগে থেকেই জানি।
আম্মু আমাকে কড়া নোটিশ দিয়েছে।বলেছে,এই কয়দিন নিজের কাজে মন দিতে।অনুদের বাড়িতে এখন অনেক মেহমান।সারাক্ষণ সেখানে গিয়ে অনুর ঘরে যাওয়া যাবে না।আমিও আম্মুর কথা মেনে নিয়েছি।
আসলে আমার মনে হয়,আমাকে যদি এক বছরও অনুর সাথে দেখা করতে না দেয়,তাহলেও আমি হাসিমুখে সেটা মেনে নিবো।অন্তত আমি এইটুক জানতে পারবো যে,অনু ভালো আছে।ঐ বিশ্রী বিশ্রী যন্ত্রগুলো আর তার শরীরের সাথে আটকে নেই।আমার কাছে এর চেয়ে প্রশান্তির আর কিছু হতে পারে না।
আমার মাঝে মাঝে রাতে ঘুম হয় না।এই সমস্যাটা আরো আগের।অনুর ঐ ঘটনার পর থেকে।আমি একটা বাজে স্বপ্ন দেখি।দেখি মাঝরাতে আমার ফোনে একটা কল এসেছে।আমি সেটা রিসিভ করতেই অন্যপাশ থেকে একটা থমথমে পুরুষ কন্ঠ বলে উঠে——–স্যার! অনিমা ম্যাডাম আর রেসপন্স করছেন না।উনি আর নেই।
ঐ ভয়ংকর স্বপ্নটা দেখে আমি ধড়ফড় করে উঠে বসি।তারপর বড় বড় করে শ্বাস নেই।এরপর পানি খাই।তবুও আমার বুকের ভেতর হতে থাকা তোলপাড় থামে না।আমি কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করি।এরপর পুরো রাত নির্ঘুম থাকি।
কেউ জানে না।কিন্তু আম্মু জানে।ঐ দিনগুলোতে আমি কতো হাই পাওয়ারের ড্রাগ নিয়েছি।আমি নিজেও জানি না,কেন আমি অনুর প্রতি এমন উন্মাদ হয়ে যাচ্ছিলাম।কেন অনুর এই ডায়েরি আমাকে দিন দিন অসুস্থ করে দিচ্ছিলো।আমি কিছুই জানি না।
আমি শুধু উপলব্ধি করেছি,অনুর সাথে আমার যেই স্নেহের সম্পর্ক আছে,সেই সম্পর্কে বিয়ের মতো পবিত্র বিষয়টি ঢুকে গেলে খুব একটা অন্যায় কিছু হবে না।আমি যেমন ভালো ভাই হতে পেরেছি,ওমন করে আমি ভালো স্বামীও হতে পারবো।
আমার মনে হয়,জীবনে কিছু ধাক্কা মানুষের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়ায়।অনুর ব্যাপারটাও কিছুটা ওমন।আমি এই চার বছরে ভীষণ বিনয়ী হয়েছি।আমি ধৈর্যশীল হয়েছি।সেই সাথে আমি রাগ নিয়ন্ত্রন করার চমৎকার গুণটি অর্জন করেছি।
আমি আর আম্মুর সাথে বাজে ব্যবহার করি না।আমার মায়া হয় আম্মুর জন্য।আমি কারো সাথেই খুব বেশি রাগ দেখাই না।আমার মনে হতো,আমি যদি বেশি উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করি,তাহলে অনু আর চোখ খুলবে না।অনুর একটু তাকানোর অপেক্ষায় আমি আমার জীবনের একটা লম্বা সময় ধৈর্য ধরেছি,বিনয়ী হয়েছি।
যাক,আপাতত এইটুকু থাকুক।বাকিটা আমি লিখবো আমাদের বিয়ের পর।এখন আমি যাচ্ছি বসুন্ধরাতে।আমার আলমারিতে কোনো পাঞ্জাবি নেই।শুধু শার্ট আর গেঞ্জি।আম্মু ধমক দিয়ে বলছে,আজই যেন একটা পাঞ্জাবি কিনে আনি।
*
*
প্রজ্ঞা ওভেন থেকে কেক নামিয়ে মৃদু শব্দে আর্তনাদ করে উঠলো।সে তাড়াহুড়োয় খালি হাতে মোল্ড ধরেছে।
তার সামনেই জুয়েল বসে বসে ম্যাগাজিন পড়ছিলো।তারা গতকাল রাতে অনিমাদের বাড়িতে এসেছে।তারপর সকাল হতেই প্রজ্ঞা কেক বানানোর তোড়জোড় শুরু করেছে।সে নাকি দারুণ কেক বানায়।জুয়েল সে কথা শুনে অবাক হয়ে বলল——-“তাই নাকি?আমাকে তো কখনো বানিয়ে খাওয়াও নি।”
প্রজ্ঞা লাজুক হাসল।চোখ সরিয়ে বলল——–“আসলে এটা অনুর খুব পছন্দ তো।তাই অনুর ঐ ঘটনার পর আমি আর কেক বানাইনি।আমার কেক বানাতে গেলেই তার কথা মনে পড়ে যেত।”
জুয়েল ম্যাগজিন ছেড়ে প্রজ্ঞার হাতটা টেনে ধরল।তার হাতের ঝ ল সা নো জায়গাটা দেখে বিষাদ গলায় বলল——–“সেকি!পু ড়ে ফেললে তো!”
——-“পু ড় লে? আপনি পু ড়ে যাওয়া বউয়ের ঘর করবেন না?”
——-“আহা! তুমি ব্যথা পাচ্ছো তো।তাই বললাম।”
——-“তেমন কিছু না।”
প্রজ্ঞা আবার কেক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল।জুয়েল তাকে ছাড়লো না।সে খুব যত্নে তার হাতে বার্নল লাগিয়ে দিলো।প্রজ্ঞা হেসে উঠে বলল——-“বড়ো আদিখ্যেতা করেন আপনি!”
সে আবার কাজে মন দেয়।কাল অনুর বিয়ে।কি মজা! কি মজা!
আজ বাড়িতে সবাই মিলে পিকনিকের মতো করবে।প্রজ্ঞা যেহেতু বয়সে বড়ো,তাই সে সবকিছুর দায়িত্ব নিয়েছে।কাবেরী বললেন——-তুই এতো কিছু সামলাতে পারবি না প্রজ্ঞা।
প্রজ্ঞা কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঠিকই সবটা সামলে নিলো।সে কেটারিং সার্ভিসের লোক এনে কয়েক রকম খাবারের বন্দোবস্তো করলো।তারপর ইভেন্ট প্ল্যানারদের এনে অনিমাদের বসার ঘরটা সুন্দর মতো সাজিয়ে নিলো।নিজের হাতে কেক বানালো,আবার বাইরে থেকেও একটা কেক আনলো।তারপর জয়া আর স্মৃতিকে দিয়ে সবার জন্য শরবত বানিয়ে নিলো।চাচিরা সবাই নানারকম পিঠা বানিয়েছে।
সব ঝামেলা মিটিয়ে প্রজ্ঞা গেল হলুদ বাটতে।তার গায়ে জড়ানো শাড়ির রং হালকা সবুজ।সে শাড়ির আঁচলটা ঘুরিয়ে এনে কোমরের এক পাশে গুজে শীল পাটার দিকে এগিয়ে গেল।
জুয়েল এসে দরজার এক কোণে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।প্রজ্ঞা লজ্জা পেল ভীষণ।চাপা চঞ্চল কন্ঠে বলল——আপনি আজকাল বড্ড জ্বালাচ্ছেন আমায়!”
——–“তুমিও।তুমিও আজকাল আমায় খুব জ্বালাচ্ছো প্রজ্ঞা।”
প্রজ্ঞা আর সেদিকে তাকায় না।তার খুশি লাগে।একেবারে নতুন নতুন প্রেমের পড়ার মতো খুশি।অথচ এতো খুশি হওয়ার মতো কিছু হয় নি।জুয়েল আর তার বিয়ের দেড় বছরের মতো হয়ে গেছে।এখন প্রজ্ঞার নতুন করে প্রেমে পড়ার মতো কিছু নেই।অথচ নির্বোধ বোকা কিশোরীদের মতো তার গাল দু’টো বার বার লাল হয়ে যাচ্ছে।
প্রত্যুষ একবার বিকেলে তাদের বাড়ি এলো।প্রজ্ঞা তখন গাদা ফুলের ঝুড়ি নিয়ে এলোপাতাড়ি ছুটছিলো।প্রত্যুষ তাকে দেখেই পথ আটকে দাঁড়ালো।
——এ্যাই এ্যাই।যাচ্ছো কোথায় এভাবে?
প্রজ্ঞা তাকে পাশ কাটাতে কাটাতে ব্যস্ত হয়ে বলল——-বসার ঘরের ওয়ালে ফুল কম হয়েছে।আরো লাগবে ফুল।
——তোমার কানের পেছনে ঐটা কি ফুল?
প্রজ্ঞা থেমে গেল।বোকা বোকা হয়ে কানের কাছে হাত দিতেই একটা গোলাপি রঙের জারবেরা ফুল হাতে উঠে এলো।মনে পড়ল,কিছুক্ষণ আগে জুয়েল সেটা তার মাথায় গুজে দিয়ে গেছে।
প্রজ্ঞা অস্বস্তি মেশানো গলায় বলল——–“কে জানে! মনে করতে পারছি না।”
প্রত্যুষ আপাদমস্তক তাকে দেখে।তারপর কিছু একটা বুঝে ফেলার মতো করে মাথা নেড়ে বলে——–“বলেছিলাম না প্রজ্ঞা?তোমার আসল ট্রিটমেন্ট হলো বিয়ে।দেখলে?মিললো আমার কথা?”
প্রজ্ঞা চোখ তুলে তাকায় তার দিকে।প্রত্যুষের দুই ঠোঁটে একটা স্নিগ্ধ হাসি ঝুলছে।সেই হাসিতে প্রজ্ঞার অস্বস্তি কেটে গেল।মনে হলো,সে কোনো পুরোনো বন্ধুর সাথে কথা বলছে।প্রজ্ঞা উচ্ছল গলায় বলল——–তুমি ঠিকই বলেছো প্রত্যুষ।আমার আসলে একটা মানুষই দরকার ছিলো।”
সে থামল।কিয়ৎক্ষণ পরে উৎসুক হয়ে বলল——–আমাকে দেখে কি বোঝা যায় যে আমি খুব খুশি আছি?
——-একেবারে একশো পার্সেন্ট।তোমার দুই চোখ খুশিতে চকমক করে।
প্রত্যুষ কথা শেষ করে হেসে ফেলল।প্রজ্ঞা নিজেও মন ভরে হাসলো।তারপর ঝুড়ি হাতে বসার ঘরে চলে গেল।প্রত্যুষ একবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে দেখলো।প্রজ্ঞা যে সংসার জীবনে দারুণ সুখী আছে,এটা তাকে প্রশান্তি দেয়।অথচ একটা সময় সে দিনরাত প্রজ্ঞার সাথে ঝগড়া করতো।
এখানে একটা গভীর ভাবনা আছে।
ছোটো বেলায় যাদের সাথে আমাদের একদমই বনিবনা হতো না,একটা সময় বাদে কি করে যেন তারাই আমাদের বড় কাছের মানুষ হয়ে উঠে।
আর সেই বনিবনা না হওয়াটা একসময় হয়ে উঠে আমাদের একাত্মের ভাষা।
উফফ! কঠিন আলোচনা বাদ।এখন আমরা অনুর হলুদসন্ধ্যা উপভোগ করবো।
___
অনিমা দুই হাত দুই পাশে রেখে খাটের উপর শুয়ে ছিল।সে বসতে পারে না নিজ থেকে।কেউ বসিয়ে দিলে চুপচাপ বসে থাকে।সে কথা শোনে।তারপর বাচ্চাদের মতো পলক ফেলে।
বসার ঘর থেকে মাহাদের ঐ কর্কশ কন্ঠস্বর ভেসে আসছে।তারা সাউন্ড বক্সে গান ছেড়ে চিৎকার চেঁচামেচি করছে।অনুর বিয়ে।অথচ সে বাদে বাকি সবার উৎসাহের শেষ নেই।দিবা একটা গোলাপি গাউন কিনেছে তার বিয়ের জন্য।তাদের আয়োজন দেখে অনিমার বলতে মন চাইল—–বিয়ে কি আমার?নাকি তোমাদের?তোমরা এসব কি শুরু করলে?
প্রজ্ঞা তার ঘরে এসে তার হাত ধরে তাকে টেনে তুলল।অনিমা জিজ্ঞাসু হয়ে তার দিকে তাকায়।প্রজ্ঞা বলল—–হলুদ মাখাবো তোর গায়ে।উঠে বয়।
সে অবাক হয়ে তাকে দেখে।প্রজ্ঞা সত্যিই হাতে সামান্য হলুদ নিয়ে তার গালে ছোঁয়ালো।তারপর আস্তে করে তার কপালে একটা চুমু খেল।
অনিমা ছটফট করে উঠল।অপ্রস্তুত হয়ে একটা হাত তার দিকে বাড়িয়ে দিলো।
প্রজ্ঞা চোখ নামিয়ে বলল——-কি করবো?হাত ধরবো?
সে বসে হাসি হাসি মুখে অনিমার হাত ধরল।অনিমা তারপর আলতো করে তার মাথাটা প্রজ্ঞার কাঁধে রাখলো।প্রজ্ঞা নড়ে না,পলক ফেলে না।একটা সময় পর তারা টের পেল,তারা দু’জনই কাঁদছে।প্রজ্ঞা শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে জড়ানো গলায় বলল——-আমি দোয়া করি অনু।তুই খুব খুশি থাক।অবশ্য আমি জানি,তুই খুশিই থাকবি।প্রত্যুষ এই চার বছর যেভাবে তোর অপেক্ষা করেছে,এতে আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি,তুই তার কাছেই সবচেয়ে ভালো থাকবি।”
অনিমা ছলছল চোখে একবার তার দিকে তাকালো।প্রজ্ঞা চোখ মুছে অন্যদিকে দেখে বলল—–আমি খুশি আছি অনু।আমি ভীষণ খুশি।আমি চাই,আমার বরের মতো বর সবার হোক।কিন্তু প্রত্যুষের মতো বর,শুধুমাত্র তোর হোক।”
*
*
এরপর সেই শুক্রবারে বড় সাদামাটাভাবে অনিমা আর প্রত্যুষের রেজিস্ট্রি হয়ে গেল।ডাক্তার ইকবাল সিদ্দিক বলেছিলেন অনিমার সুস্থ হয়ে হাঁটাহাঁটি করতে ছয় মাসের মতো লাগতে পারে।অথবা এক বছর।তার স্নায়বিক জটিলতা তখনও চলমান।
নাজির সাহেব অনুরোধ করলেন,ঐ ছয়টা মাস তিনি মেয়েকে নিজের কাছে রাখবেন।প্রত্যুষ এতে দ্বিমত করেনি।অনিমার শৈশব কৈশোর এই বাড়িতে কেটেছে।এই বাড়িতে তার অনেক স্মৃতি।এমন অবস্থায় এই বাড়িতে থাকার প্রস্তাব খুব বেশি অবান্তর না।এছাড়া তার বাড়িটাও ভীষণ ফাঁকা।আম্মু প্রায় সময় অসুস্থ থাকে।আব্বু থাকে অফিসে অথবা ব্যবসার কাজে অন্য শহরে।সাথে প্রত্যুষের অফিস তো আছেই রোজ রোজ।অনু ঐ বাড়িতে থাকলে তার যত্ন করবে কে?
_____
রাত হয়েছে।অমানিশার নীলচে কালো চাদরে ঢাকা পড়েছে গোটা শহর।
অনিমা বসে বসে জানালা দিয়ে আকাশ দেখছিল।তার খাট থেকে আকাশ একটু দূরে।
তার ইচ্ছে ছিলো টকটকে লাল শাড়ি পরে বিয়ে করার।অথচ সে পরেছে একটা বেগুনি রঙের ঢিলেঢালা চুড়িদার।
প্রত্যুষ ঘরে এলো ক্লান্ত পায়ে।সারাদিন বক বক করতে করতে শরীর ভার হয়ে এসেছে।মাথা ঘুরছে চরকির মতো।প্রত্যুষ আগে কিছুক্ষণ খাটে গিয়ে বসলো।তারপর জিরিয়ে নিয়ে অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল——বল আমাকে কেমন লাগছে?
অনিমা চুপচাপ তাকে দেখে।সে বিরক্ত হয়ে বলল——সারাজীবন এমন দেখেই যাবি হাবলার মতো।
সে কিছুক্ষণ ক্লান্তিতে শ্বাস ফেলে।তারপর আচমকা কিছু একটা ভাবতেই সে এক লাফে উঠে বসে বলে——চল।একটা সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ বানাই।
অনিমা প্রশ্নাত্মক উদ্বিগ্ন চোখে তার দিকে তাকালো।প্রত্যুষ তার কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলল——আমি এখন তোকে কয়েকটা প্রশ্ন করবো।উত্তর যদি হ্যাঁ হয়,তাহলে তুই কয়েকবার চোখের পাতা ফেলবি।আর যদি না হয়,তাহলে শুধু এক বার চোখের পাতা ফেলবি।
অনিমা বড় বড় চোখ করে তাকে দেখে।প্রত্যুষ বলল——কি?মনে থাকবে?
সে তিনবার পলক ফেলল।প্রত্যুষ খুশিতে গদগদ হয়ে বলল——-সাবাশ! তুই সত্যিই ফাস্ট লার্নার।এবার বল,তোর কি শরীর খারাপ লাগছে?
অনিমা একবার পলক ফেলল।প্রত্যুষ হেসে বলল—–এক্সিলেন্ট।এবার বল,আমাকে কি আজ নায়কের মতো সুন্দর লাগছে?
অনিমা সেই আগের মতো একবার পলক ফেলল।তার মুখটা এখন হাসিখুশি দেখাচ্ছে।প্রত্যুষ উদাস মুখে বলল——“যাহ।তুই মিথ্যুক।”
সে কিছুক্ষণ ভাবে।তারপর গম্ভীর হয়ে বলে——–এবার একটা সত্যি সত্যি প্রশ্ন করি।তুই কি আমাকে ভালোবাসিস অনু?
অনিমা ভড়কে গেল হঠাৎ।গোল গোল চোখে প্রত্যুষের দিকে তাকাতেই সে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।তারপর কিয়ৎক্ষণ বাদে একে একে চারবার পলক ফেলে প্রত্যুষের দিকে তাকালো।
ওমনি প্রত্যুষ তার থেকে দূরে সরে এলো।মুখে বিজয়ীর হাসি এনে বলল——-থ্যাঙ্ক ইউ।আমি জানতাম।তুই এটাই বলবি।
ভালো।তোর চয়েজ ভালো।
সে উৎফুল্ল মেজাজে খাটের উপর শোয়।অনিমা চোখ ছোট ছোট করে তাকে দেখে।তার কটমটে মুখটা দেখেই প্রত্যুষ হেসে ফেলল।অকৃত্রিম সহজ স্বরে বলল——-“আচ্ছা যা।আই লাভ ইউ টু।তবুও কান্নাকাটি করিস না আর।”
চলবে-