#নীলবসন্ত
#লেখনীতে_মিথিলা_মিতু
#পর্বসংখ্যা_১২
কেটে গেল আরও কিছুদিন।নীরবে উলটে গেল ক্যালেন্ডারের পাতা।জানান দিল নতুন মাসের।গ*ত হওয়া কয়েকটি দিনে অনেককিছু পরিবর্তন না হলেও রোদেলা আর তাহসিনের সম্পর্কে অল্পকিছু পরিবর্তন এসেছে।এই যেমন রোদেলা আগে তাহসিনের সাথে বেশি একটা কথা বলতো না।সবসময় চুপচাপ থাকতো।তাহসিনের সাথে কথা বলতে গেলে তার কেমন একটা জড়তা কাজ করতো।কিন্তু এখন আর সে জড়তা কাজ করে না।তাহসিন আর তার সম্পর্ক অনেকটা বন্ধুর মতো হয়ে গিয়েছে।রোদেলা তো এখন তাহসিনের সাথে অনেক গল্প করে।তাদের বয়সের পার্থক্য যে এতটা এখন আর সেটা অনুভবই হয় না।তাহসিন কেমন বন্ধুর মতোই রোদেলার সাথে আচরণ করে। রোদেলার ভালো লাগা,খারাপ লাগা সবটার খোঁজ তাহসিন রাখে।এখানে না আসলে হয়তো রোদেলা তাহসিনের এই বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিত্ব সম্পর্কে জানতোই না।সে তো মনে মনে তার শ্বশুড়-শাশুড়িকে হাজারবার ধন্যবাদ জানায়।তারা যদি জোর করে তাকে এখানে না পাঠাতো তবে তো তাদের সম্পর্ক ওই অভিমান অব্দিই ঠেকে থাকতো।বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কি আর হতো?
★
তখন মধ্য রাত।রোদেলা তাহসিনের জন্য অপেক্ষা করছে। এতগুলো দিন এখানে এসেছে এই অব্দি তাহসিন এতটা দেরি কখনো করে নি।রোদেলার টেনশন বাড়ছে।তাহসিন যাওয়ার পূর্বেই বলে গিয়েছে আজ নাকি কিসের মিশন আছে পাহাড়ি অঞ্চলের দিকে তাই ফিরতে একটু লেইট হতে পারে।এটা নিয়েই এতদিন তাহসিন বেশ ব্যস্ত ছিল। আজ ভোরেই বের হলো।রোদেলাকে জানিয়ে গেল ফিরতে কিছুটা দেরি হতে পারে।তবে এতটা যে দেরি হবে তা রোদেলা বুঝতে পারে নি।চিন্তিত হয়েই যে ফোন হাতে নিল। বার কয়েক তাহসিনের নম্বর ডায়াল করে ফোন ঢুকালো। কিন্তু তাহসিনের ফোন অফ।এইজন্য রোদেলার টেনশন আরও বাড়ছে।রাত তিনটা বেজে আটাশ মিনিট অথচ তাহসিন এখনো বাসায় ফিরে নি।রোদেলা এবার নামাজে দাঁড়ালো।তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লো।দুই হাত তুলে সৃষ্টিকর্তার কাছে তাহসিনের সুস্থতা এবং বিপদমুক্তের ফরিয়াদ করলো।যেন তাহসিন সুস্থভাবে বাসায় ফিরে আসে সে দোয়াই করলো।ফজরের আজান পড়েছে।সে ফজরের নামাজ পড়ে তাহসিনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো। বাসায় এখনো এই খবরটা জানায় নি।নয়তো তার শ্বশুড়-শাশুড়ি চিন্তা করবেন।রোদেলা কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না।এখানে তার তেমন কেউ চেনা-জানা নেই।তাহসিন কখনো কারো সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় নি। রোদেলা একবার ভাবলো তাহসিনের ক্যাম্পে যাবে।পরে আবার মনে পড়লো তাহসিন বার বার করে তাকে নিষেধ করেছে একা একা যেন কখনোই ক্যাম্পের আশেপাশেও না আসে।তাই রোদেলা আপাতত গেল না।রোদেলা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে তাহসিনের পথ চেয়ে আছে।ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।গতরাত থেকে সে এক ফোটা পানিও মুখে নেয় নি।এমনকি একটুখানি ঘুমায়ও নি।কান্না করতে করতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে।তাকে সামলানোর মতো যে কেউ নেই।সে জানে তাহসিন জীবনের কতটা ঝুঁকি নিয়ে দেশের জন্য কাজ করে যায়।সেটা ভেবেই রোদেলার ভয় ঝেকে ধরেছে।তাহসিন ঠিক আছে তো?রোদেলা বাহিরের দিকে তাকিয়েই রইল।কান্না করতে করতে তার শ্বাস নিতে যেন কষ্ট হচ্ছে।একটা সময় এসে সে বিছানাতে একটুখানি পিঠ লাগালো।বিছানাতে পিঠ লাগাতেই যেন তার শরীরটা কেমন ছেড়ে দিল।চোখ খিচে সে বন্ধ করে রাখলো।একটা সময় অচেতন হয়ে গেল।
ঠিক কতটা সময় এভাবে কাটলো তা রোদেলার জানা নেই। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে বিছানাতেই আবিষ্কার করলো।চোখ নিভু নিভু করে খুলে বিরবিরিয়ে তাহসিনকেই ডেকে উঠলো,
-“মাহমুদ সাহেব।আমার মাহমুদ সাহেব কোথায়?আমার তাকে চাই।এক্ষনি চাই।”
এইরকম করে বিরবির করতে থাকলে কেউ তার হাতখানা ধরে বলল,
-“কুল মায়মূন কুল।এইটুকু সময়ের মধ্যে কি করেছো নিজের হুহ?”
রোদেলা পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখলো তাহসিন তার পাশেই বসে আছে।তাহসিনের পড়নে এখনো তার ইউনিফর্মই। রোদেলা আর কিছু না ভেবে দুর্বল শরীরে তাহসিনকে ঝাপটে ধরলো।কান্না করতে করতে হেচকি তুলে ফেলল। বলল,
-“কোথায় ছিলেন আপনি?ঠিক আছেন তো?জানেন কতটা টেনশন হচ্ছিল আমার?”
তাহসিন চোখ খিচে রোদেলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। রোদেলা কান্নায় এতটা বিভর ছিল যে তাহসিনের বুকে মাথা রেখে কাঁদছে সে বুকেরই ক্ষ*ত জায়গা থেকে র*ক্ত পড়ছে সেটা রোদেলা খেয়াল করে নি।একটা সময় একটুখানি ভেজা ভেজা অনুভূত হতেই রোদেলা খেয়াল করলো।আর আঁতকে উঠলো।তাহসিন বলল,
-“ঘাবড়িও না।কিচ্ছু হয় নি।”
রোদেলা তোতলে বলে উঠল,
-“র র*ক্ত।”
-“হুম।তো কি হয়েছে?সামান্য একটু কেটেছে।শুনো তুমি কিন্তু একজন মেজরের ওয়াইফ।স্যো এসব যেকোনো সময় দেখতে প্রস্তুত থাকবে।একদম ভয় পাবে না।আর দেখো তো কেঁদে কুটে নিজের কি অবস্থাটাই না করেছো।এতটা ভীতু কেন তুমি হ্যাঁ?”
রোদেলা সেসব কথায় কানও দিল না।তার নজর তো তাহসিনের শার্টের বোতমের ফাক গলিয়ে র*ক্ত পড়ছে সেখানেই।রোদেলা উঠতে যেয়েও পারলো না।শরীর যে তার বড়ই দুর্বল হয়ে গিয়েছে।তাহসিন বলল,
-“উঠা লাগবে না।শুয়ে থাকো।”
রোদেলা বসেই রইল।তাহসিন উঠে গিয়ে রোদেলাকে এক গ্লাস স্যালাইন বানিয়ে রোদেলার হাতে দিল।এরপর মোবাইলে কি যেন একটা করলো।তারপর রোদেলাকে বলল,
-“একদম নামবে না বলে দিলাম।আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
তাহসিন পোশাক নিয়ে ওয়াশরুমে গেল।রোদেলা সেদিকেই তাকিয়ে রইল।কিছুক্ষণের মাঝে তাহসিন ট্রাউজার পড়ে বেরিয়ে এলো।এরপর ড্রয়ার থেকে ফাস্টএইড বক্স নিয়ে বিছানায় এসে বসলো।হেক্সিসল তুলোতে নিয়ে বুকের যে অংশটাতে কে*টে গিয়েছে সেখানে লাগালো।এরপর সেখানে ব্যান্ডেজ করে।ডান হাতেও লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে নিল।রোদেলা চুপচাপ সবটা দেখলো।কলিং বেলের আওয়াজ পড়তেই তাহসিন উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল।সে কিছুক্ষণ আগেই খাবার অর্ডার দিয়েছিল।এখন এসে পড়েছে।ডেলিভারি বয়কে বিদায় করে ফের রুমে এলো। খাবার প্লেটে বেড়ে রোদেলার সামনে এনে ধরলো।বলল,
-“কাল থেকে কিচ্ছুটি খাও নি তাই না?”
রোদেলা চুপ করে রইল।তাহসিন ফের বলল,
-“একটু কষ্ট করে নিজ হাতে খেয়ে নাও।আমার ডান হাতে তো ব্যান্ডেজ।আমারই এখন চামচ দিয়ে খেতে হবে।নইলে আমিই তোমাকে খাইয়ে দিতাম।”
রোদেলা নিচুস্বরে বলল,
-“আমি ওতটাও দুর্বল নই।খাওয়ার মতো শক্তি অন্তত আছে।আপনার এই কা*টা হাত নিয়ে চামচ দিয়ে খেতে হবে না।দিন আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”
তাহসিন অবাক হওয়ার ভান ধরে বলল,
-“তুমি খাইয়ে দিতে জানো নাকি?বাব্বাহ।আমি তো ভেবেছি শুধু কান্নাই করতে জানো।”
তাহসিনের সূক্ষ্ম খোচাটা রোদেলা ঠিক বুঝতে পারলো। তবে বিপরীতে কিছুই বলল না।পাশ থেকে পানি নিয়ে হাত ধুয়ে তাহসিনের মুখের সামনে খাবার তুলে ধরলো।তাহসিন রোদেলার দিকে তাকিয়েই খাবার মুখে নিল।অপলক রোদেলার দিকে তাকিয়ে রইল।এভাবে তাকানোতে রোদেলার লজ্জা লাগছে।তাই বলল,
-“এভাবে কি দেখছেন?”
তাহসিন ভণিতাবিহীন বলল,
-“দেখছি আমার বউটাকে।যে কিনা আমাকে না পেয়ে কেঁদেকুটে নিজেকে অসুস্থ বানিয়ে ফেলেছে।আমার তো মনে হচ্ছে…”
-“কি মনে হচ্ছে?”
-“স্যি’জ বিগেনিং টু লাভ মি।”
রোদেলা গুটিয়ে এলো।সত্যিই কি সে তাহসিনকে ভালোবাসতে শুরু করেছে?আচ্ছা যদি ভালোবাসা না-ই বা থাকতো তবে কেন সে এতটা চিন্তায় অস্থির হয়ে গিয়েছিল? শুধুই কি বন্ধুত্বের খাতিরে?নাকি এখানে সত্যিই ভালোবাসা লুকিয়ে আছে?
★
খাওয়া-দাওয়া শেষে তাহসিন সবটা সুন্দরভাবে গুছিয়ে রেখে বিছানায় এসে পিঠ লাগালো।তখন সময়টা বিকেল। রোদেলাকেও পাশে এসে চুপচাপ শুয়ে থাকতে বলল। রোদেলা অমান্য করলো না।তাহসিনের কথামতো পাশে এসেই শুয়ে থাকলো।তাহসিন বলল,
-“আমার মাথাটা না খুব ব্যাথা করছে একটু হাত বুলিয়ে দিবে?”
রোদেলা উঠে বসলো।তারপর পাশে বসেই তাহসিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া ধরতেই তাহসিন রোদেলার কোলে নিজের মাথাটা রাখলো।রোদেলা হা করে তাহসিনের দিকে তাকিয়ে রইল।তাহসিন তাড়া দিল।বলল,
-“কি হলো?”
রোদেলা বলল,
-“হু কিছু না।”
রোদেলা তাহসিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো। আলতো হাতে তাহসিনের কপাল চেপে দিল।রোদেলা তাহসিনকে জিজ্ঞেস করলো,
-“গতরাত থেকে পুরো ঘটনাটা বলবেন একটু?”
তাহসিন বলল,
-“গতকাল বলে গিয়েছিলাম না একটা মিশন আছে?তো আমাদের টিম মেম্বারদের নিয়ে সেখানে যাই।একটা মেম্বারের একটুখানি ভুলের জন্য টেরোরিস্টরা আচ পেয়ে যায়।ঘটনার এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়।এরপর ওদেরকে ধরতে আমরা সক্ষম হই।একটুখানি মারামারি হওয়ার সময় আমার হাত কে*টে যায়।আর বুকে আঘাত লাগে।এইরকম টুকটাক ব্যাথা সবাই পেয়েছে।আর এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।এইরকম ছোট খাটো ক্ষ*ত আরও অনেকবারই হয়েছে।ওখানে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না।পাহাড়ি অঞ্চল তো তার জন্য,বুঝেছো?এইজন্যই গতরাতে তোমাকে আমি কল দিয়ে জানাতে পারি নি যে গতরাতে ফিরতে পারবো না। সকল কাজ মিটিয়ে আজ দুপুরেই বাসায় ফিরলাম। কয়েকবার বেইল বাজানোর পরও যখন দেখি দরজা খুলছো না তখন ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে আসি।আর রুমে এসে দেখি তুমি এলোমেলো ভাবে বিছানায় পড়ে আছো।কাছে যেয়ে ডাকতেই বুঝতে পারি সেন্সলেস হয়ে আছো।পরে ঠিক করে শুইয়ে দেই।জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করি।আর তার কিছুক্ষণ পরেই তো জ্ঞান ফিরলো।”
তাহসিন একটু থেমে বলল,
-“এতটা টেনশন করো কেন আমার জন্য তুমি?শুনো সামনে আরও এইরকম সময় আসবে।তুমি আর কখনো এতটা টেন্সড হবে না ঠিক আছে?”
-“আমার যে ভয় লাগে।”
-“ভয়ের কিচ্ছু নেই বোকা মেয়ে।”
-“তবুও তো।”
-“তবুও তো কি হ্যাঁ?যদি এইরকম করো তবে আমি তোমাকে বাসায় রেখে আসবো কিন্তু।এখানে একা একা থাকার দরকার নেই।”
রোদেলা তড়িঘড়ি করে বলল,
-“না না।আমি এখানেই থাকবো।আমি বাসায় যাবো না।”
-“এখানে থাকতে হলে ভয়কে জয় করতে হবে।পারবে না?”
-“হুম পারবো।”
-“ভেরি গুড।শুনো আগামীকাল আমরা বাসায় ফিরবো। আমাকে কয়েকদিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে।তাই ভাবছি বাসায় যেয়ে ওই কয়েকদিন কাটিয়ে আসবো।আর শুনো ভুলেও বাবা-মাকে গতকালের ঘটনা বলতে যাবে না।উনারা চিন্তা করবেন বুঝলে?”
-“আচ্ছা ঠিক আছে।”
-“হুম দেখি তো এবার তুমিও একটু ঘুমাও।আর কষ্ট করা লাগবে না।”
রোদেলা চুপচাপ তাহসিনের পাশে এসে শুয়ে পড়ে।তাহসিন এগিয়ে এসে রোদেলার একদম পাশ ঘেঁষে শুয়ে পড়ে। রোদেলা কিছু বলতে যেয়েও বলে নি।কারণ তাহসিনের এতটা সান্নিধ্যে তার ওতটাও খারাপ লাগে নি।বরং তাহসিনকে পাশে পেয়ে তার শান্তি লাগছে।
#চলবে
#নীলবসন্ত
#লেখনীতে_মিথিলা_মিতু
#পর্বসংখ্যা_১৩
তাহসিন এক সপ্তাহের ছুটি পেয়েছিল।এই ছুটির উছিলায় সে রোদেলাকে নিয়ে নিজের বাসা থেকে ঘুরে এসেছে।ছুটি শেষ হওয়ার ঠিক একদিন আগে তাহসিন রোদেলাকে নিয়ে ফের চট্রগ্রামে ফিরেছে।এরপর থেকে রোদেলা তাহসিন দুজনেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।রোদেলা রোজ সকালে কলেজে যায়।বাসায় ফিরতে ফিরতে তার দুপুর গড়ায়।অন্যদিকে তাহসিন সকালে চলে যায়।তার ফিরতে ফিরতে রাত হয়।সকালে বের হওয়ার আগে দুইজন হাতে হাতে কাজ করে সকালের নাস্তা আর দুপুরের খাবার রান্না করে ফেলে।পড়াশোনা প্লাস সংসার জীবন রোদেলার বেশ ভালোই কাটছে।সাথে তাহসিনের সাথে খুনসুটি।এভাবেই ওদের দিন কাটতে লাগলো।হঠাৎ এক সন্ধ্যায় রোদেলার বেশ গা কাঁপিয়ে জ্বর উঠে।বাসায় সে একা।এইদিকে রোদেলার যদি একবার জ্বর উঠে তো তার দিন-দুনিয়ার কোনো হুস থাকে না।সন্ধ্যার পর থেকে সে বিছানায় শুয়ে আছে আর জ্বরের ঘোরে আবোল-তাবোল বকে চলেছে। জ্বরে তার শরীর পুড়ে যাচ্ছে।অথচ পাশে একটা মানুষ অব্দি নেই।এমন করেই তার সন্ধ্যা কাটলো,রাতও ঘনিয়ে এলো।জ্বরের প্রকোপে দাঁতের সাথে দাঁত শক্ত করে লেগে রইল।হাটু গুটিয়ে বুকের সাথে লাগিয়ে এইটুকুনি হয়ে শুয়ে রইল।তাহসিন বাসায় ফিরে রোদেলার এতটা খারাপ অবস্থা দেখে সাথে সাথে ডাক্তার ডাকলো।ডাক্তার এসে রোদেলার জ্বর মেপে দেখলো অনেক সিরিয়াস অবস্থা।ডাক্তার কিছু ঔষধ লিখে দিল।এরপর তাহসিনকে বলল,
-“মিষ্টার তাহসিন আপনার ওয়াইফের অবস্থা কিন্তু বেগতিক।যে করেই হোক ওনার টেম্পারেচার কমাতে হবে। বুঝতেই তো পারছেন নয়তো বিপদ হবে।আপনার দায়িত্ব ওনার টেম্পারেচার কমানোর।”
ডাক্তার আরও কিছু পরামর্শ দিয়ে চলে গেলেন।তাহসিন জানে শরীরের তাপমাত্রা এতটা বেড়ে গেলে কি করনীয়। তবে রোদেলার অনুমতি ছাড়া ব্যাপারটা কেমন যেন লাগছে।পরক্ষণেই ভাবলো রোদেলা তার ওয়াইফ।তাই এতে কোনো দোষ নেই।তাহসিন ডক্টররে এগিয়ে দিয়ে এসে আসার সময়ে ডক্টরের লিখে দেওয়া ঔষধ নিয়ে ফিরলো। এরপর রোদেলার কপালে হাত দিয়ে দেখলো শরীর এখনও আগুনের মতো গরম।তাহসিন রোদেলার গায়ের উপর থেকে ভারী কম্বলখানা সরিয়ে একটু ঝুঁকে রোদেলাকে দুইহাতে পাজা কোলে করে নিয়ে ওয়াশরুমে গেল।সেখানে গিয়ে রোদেলাকে বসালো।এরপর অনেকক্ষণ ধরে রোদেলার মাথায় পানি দিল।হালকা ঠান্ডা পানি শরীরে লাগতেই রোদেলা শিউরে উঠলো।তাহসিন রোদেলাকে ঝরনার নিচে শক্ত করে ধরে দাঁড় করালো।এরপর ঝরনা ছেড়ে দিল।সাথে সাথেই বৃষ্টির মতো ফোটা এসে রোদেলাকে ভিজিয়ে দিল।রোদেলার সাথে তাহসিনও ভিজে উঠলো।পানি শরীরে লাগতেই অর্ধচেতন রোদেলা কেঁপে উঠলো।তাহসিন রোদেলাকে শক্ত করে ধরে অনেকক্ষণ ঝরনার নিচে দাঁড়িয়ে রইল।এরপর রুমে এনে রোদেলার মাথা ভালো করে মুছে দিল।পোশাক বদলাতে যেয়েই ঝামেলা বাঁধলো।প্রথমত তাহসিনের সংকোচ লাগছে, দ্বিতীয়ত সে শাড়ি পড়াতে পারে না।কি করবে না করবে ভেবে ভেবে কিছুটা সময় পাড় করলো।এরপর লম্বা শ্বাস টানলো।হাত বাড়িয়ে রুমের লাইট অফ করে ঢিম লাইট জ্বালিয়ে দিল।অতঃপর রোদেলার শাড়ির সেফটিপিন খুলে দিতে শাড়ির আঁচল মেঝেতে গড়ালো।অর্ধচেতন রোদেলা ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে।তাহসিন একে একে রোদেলার সমস্ত বসন-ভূষণ খুলে ফেললো।এরপর রোদেলাকে ভারী একটা কম্বলে জড়িয়ে বিছানায় নিয়ে শোয়ালো।রোদেলার ভেজা শাড়ি ওয়াশরুমে রেখে আসলো।কাজগুলো তাহসিন দম আটকে যেন করলো।এই ফার্স্ট টাইম কোনো মেয়েকে এভাবে স্পর্শ করলো।যদিও এই মেয়েটা তার ওয়াইফ।তার সম্পূর্ণ রাইট আছে।তবুও রোদেলার অনুমতিবিহীন কাজটা করতে তার খারাপ লাগলোই বটে।তবে কিচ্ছু করার নেই। তাহসিন নিজের ভেজা পোশাক বদলে ট্রাউজার আর পাতলা ফিনফিনে একটা টি-শার্ট গায়ে জড়ালো।শীতের রাতে গোসল করাতে বেশ ঠান্ডা লাগার কথা অথচ তাহসিনের ততটাও ঠান্ডা লাগছে না।পোশাক বদলিয়ে রুমে এসে সেও রোদেলাকে পেঁচিয়ে দেওয়া কম্বলের তলায় লুকিয়ে পড়লো এবং রোদেলাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলো।রোদেলার শরীর এখনো অনেক গরম আছে।যা কিনা তাহসিনের কাছে অসহনীয় মনে হচ্ছে।তবুও তাহসিন চুপ করে তার অর্ধাঙ্গিনীকে জড়িয়ে শুয়ে রইল।
★
তখন সকাল সাতটা।তাহসিনের ঘুম ভেঙেছে সেই ছয়টায়। তবে ঘুমিয়েছে বললে ভুল হবে।চোখ লেগে আসলেও কিছুক্ষণ পর পর জেগে চেক করেছে রোদেলার তাপমাত্রা স্বাভাবিকে এসেছে কিনা।ভোরের দিকে রোদেলার তাপমাত্রা স্বাভাবিকে আসে তা বুঝতে পেরে তাহসিন স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে।তখনই সে নিশ্চিন্তে ঘুমালো।ছয়টার দিকে তাহসিনের ঘুম ভাঙতেই সে মেইল করে জানিয়ে দেয় তার ছুটি প্রয়োজন।ভাগ্য সহায় ছিল উপরমহল তাহসিনের মেইলটা এক্সসেপ্ট করে। তাহসিন ঠিক এক ঘন্টা ধরে রোদেলার দিকে তাকিয়ে আছে।একদিনের জ্বরের চোটে রোদেলার মুখশ্রী কেমন শুকিয়ে গিয়েছে।ঠোঁটটা কেমন শুষ্ক খড়খড়ে হয়ে আছে। শুষ্ক ঠোঁটের দিকে নজর যেতেই তাহসিন যেন নিজের সত্তাকে হারিয়ে ফেলল।সে কিছু চিন্তা না করেই রোদেলার শুষ্ক ঠোঁটে নিজের ওষ্ঠজোড়া ডুবিয়ে দিল।প্রায় মিনিট দুয়েক ধরে রোদেলার অধরসুধা পান করতে লাগলো।যার দরুণ রোদেলার ঘুম ছুটে গেল।ঘুম কাটতেই রোদেলা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে চোখ খিচে ফেলল।তাহসিন যখন বুঝতে পারলো রোদেলা জেগে গিয়েছে তখন যেন তার হুস ফিরলো।সেও যেন লজ্জা পেয়ে উঠলো।তাহসিন পরিস্থিতি সামাল দিতে রোদেলার কপালে গালে হাত ছোয়াতে ছোয়াতে বলল,
-“জ্বর কমেছে?এখন কেমন লাগছে তোমার?”
রোদেলা আস্তে করে বলল,
-“ভালো।”
তাহসিন বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল,
-“আমাকে তো তুমি পুরো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে।হুট করে এমন জ্বরও হয়?”
রোদেলা কিছু বলল না।তাহসিন বলল,
-“শুয়ে থাকো।রেস্ট নাও।আমি নাস্তা বানিয়ে আনছি। একদম উঠবে না বলে দিলাম।”
রোদেলা ঘাড় কাত করে বলল,
-“আচ্ছা।”
তাহসিন চলে গেল রান্নাঘরে।এইদিকে রোদেলা সত্যিই চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইল।তাহসিন এক কাপ কফি বানালো নিজের জন্য।অন্যচুলায় রোদেলার জন্য স্যুপ বানাতে লাগলো।কফি আর স্যুপ হাতে কিছুক্ষণের মাঝেই সে রুমে এলো।এসে দেখে রোদেলা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।তাহসিন স্যুপের বাটিটা সাইড টেবিলে রেখে বলল,
-“উঠো।খেয়ে তারপর মেডিসিন নাও।”
রোদেলা চোখ মেললো।তারপর তাহসিনের কথায় উঠতে যাবে তখনই নিজের অবস্থা দেখে শরীরে প্যাচানো কম্বল শক্ত করে ধরে রাখলো।চোখ বড় বড় করে তাহসিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“আ আমার শাড়ি কই?”
তাহসিন মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,
-“এক মিনিট দিচ্ছি।এক্সচুয়ালি ডক্টর বলছেন তোমার শরীরের তাপমাত্রা কমাতে।তোমার শরীরে তাপমাত্রা খুব বেশি মাত্রায় ছিল তাই এই রাতে শাওয়ার দিতে হয়েছিল। এইজন্য মানে…”
কথা সম্পূর্ণ আর করলো না।এইটুকু কথা বলতে বলতে ওয়ারড্রব থেকে শাড়ি নামিয়ে এনে রোদেলার পাশে রাখলো।তারপর বলল,
-“তুমি চেঞ্জ করে নাও।আমি পাশের রুমে আছি।চেঞ্জ করা হলে ডেকে দিও কেমন?”
তাহসিন কফি হাতে বাহিরে চলে গেল।রোদেলা তাড়াতাড়ি কোনরকমে শাড়ি গায়ে প্যাচালো।এরপর তাহসিনকে ডাকলে তাহসিন ভেতরে আসে।এরপর রোদেলার পাশে বসে রোদেলাকে স্যুপ খাইয়ে দেয়।রোদেলা মাথা নামিয়ে বিনাবাক্যে খেয়ে নেয়।সে লজ্জায় তাহসিনের চোখে চোখ রাখতে পারছে না।তার যে কতটা লজ্জা লাগছে।তার এই অবস্থায় তাহসিন একই কম্বলের নিচে ঘুমিয়েছে ভাবতেই কেমন গা শিউরে উঠছে।কেমন নতুন নতুন অনুভূতির সাথে সে পরিচিত হচ্ছে।তার বুকে যেন দ্রিম দ্রিম করে শব্দ হচ্ছে। তাহসিন সম্পূর্ণ স্যুপ খাইয়ে দিয়ে এরপর রোদেলাকে ঔষধ খাইয়ে দিল।রোদেলাকে রেস্ট নিতে দিয়ে সে রান্নাঘরে গেল দুপুরের খাবার বানাতে।এইদিকে রোদেলা কুন্ঠায় তাহসিনের কাছে আর যেতে পারলো না।রুমেই বসে রইল।তার এই লজ্জা কবে কাটবে সেটা তার জানা নেই।
★
সেদিনের পর কেটে গেল এক সপ্তাহ।রোদেলা তিনদিনের মাথাতেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেল।তাহসিন একদিনের ছুটি নিয়েছিল বিধায় রোদেলার কাছে সে থাকতে পারলো না। তবে রাতে এসে রোদেলার বেশ খোঁজ নিত।কিন্তু রোদেলার এখনো লজ্জা কাটে নি।সে লজ্জায় আড়ষ্টতায় তাহসিনের সাথে আগের মতো কথা বলতে পারে না।তাহসিন সামনে এলে মাথা নিচু করে থাকবে।তাহসিন কিছু জিজ্ঞেস করলে জবাব দিবে নয়তো চুপ হয়ে থাকবে।এই জিনিসটা তাহসিনের কাছে ভালো লাগে না।সে চাচ্ছে রোদেলা তার সাথে সহজ হোক কিন্তু রোদেলা নিজেকে যেভাবে গুটিয়ে রাখছে এভাবে তো সহজ হওয়া যাবে না তাই না?তাহসিন ভাবলো এভাবে গুটিয়ে থাকলে তাদের কখনোই কাছে আসাআসি হবে না।কোনো একজনকে তো লজ্জা কাটিয়ে কাছে আসার আহবান করতে হবে।না হয় তাহসিনই আসুক আগে।
এখন মাঘ মাসের প্রায় শেষ ভাগ।শীতকালের প্রায় শেষ সময়।কয়েকদিন পর থেকে ফাল্গুন মাস শুরু হবে।প্রকৃতিতে বসন্ত আসবে।চারদিকে ফুলে ফুলে ভরা থাকবে।প্রকৃতি সাজবে নিজের মতো করে।ভালোবাসার মৌসুম শুরু হবে। আর পহেলা ফাল্গুনেই রোদেলার আঠারোতম জন্মদিন।তাই তাহসিন ভাবলো সেদিনই সে তার ভালোবাসার কথাটা রোদেলাকে জানাবে।হাতে আছে আর মাত্র দিন ছয়েক।
★
অবশেষে কাঙ্ক্ষিত সেই দিনখানা চলে এলো।গত ছয়দিনে রোদেলা আগের থেকে কিছুটা স্বাভাবিক হলো।এখন তাহসিনের সাথে আগের মতোই কথাবার্তা বলে।আজ রোদেলার জন্মদিনের প্রথম প্রহর শুরু।ঠিক বারোটা বাজতেই তাহসিন বাসায় এসে পড়লো।কলিং বেইল চাপতেই রোদেলা দরজা খুলে দিল।দরজা খুলতেই তাহসিন সশব্দে বলে উঠল,
-“শুভ জন্মদিম মিসেস মাহমুদ।জন্ম দিনের অসংখ্য শুভেচ্ছা জানাই আপনাকে।দীর্ঘ আয়ু নিয়ে বাঁচুন,আনন্দের সাথে বাঁচুন।”
তাজা লাল গোলাপের বুকেটা রোদেলার দিকে বাড়িয়ে দিল।রোদেলা কল্পনাও করে নি তার জন্মদিনের প্রথম প্রহরে কেউ এভাবে সারপ্রাইজ দিবে।কখনো তো এভাবে কেউ সারপ্রাইজ দেয় নি তাই সে কখনো এসবের কল্পনাও করে নি।তবে আজ তার স্বামীর থেকে এইরকম সারপ্রাইজ পেয়ে তার চোখ যেন ছলছল করে উঠলো।রোদেলা ঠোঁটে দারুণ হাসি ফুটিয়ে ফুলের বুকেটা নিল এবং বলল,
-“ধন্যবাদ জনাব মাহমুদ।”
তাহসিন হেসে রোদেলার হাতে একটা শাড়ির প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-“নিন ম্যাডাম জলদি করে তৈরি হয়ে নিন তো।আর একটু সারপ্রাইজ আছে যে।”
রোদেলা শাড়ির প্যাকেটটা খুলে দেখলো খুব সুন্দর নীল রঙা শাড়ি আছে তাতে।প্যাকেটটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।রোদেলা যেতেই তাহসিন দ্রুত হাতে ওদের রুমটা সুন্দর করে সাজিয়ে ফেললো।রুম জুড়ে মোমবাতি জ্বালালো,লাভ শেইফের রেড কালারের কিছু বেলুন রুমজুড়ে ছড়িয়ে দিল।রুমের আলো বন্ধ করে দিল।রুমে এখন মোমবাতির হলুদাভ আলো জ্বলছে।যা দেখতে এক অন্যরকম সুন্দর লাগছে।কিনে আনা ছোট্ট কেকটুকু টেবিলে রাখলো।রোদেলা শাড়ি পড়ে নিজেকে পরিপাটি করে বের হলো।আর রুমে আসতেই তার ঠোঁটজোড়া ফাঁকা হয়ে গেল।এইটুকু সময়ের মধ্যে তাহসিন কত সুন্দর করেই না রুমটা সাজালো।তাহসিন রোদেলার দিকে মোহনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।সে যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে।নিজেকে সামলে রোদেলাকে তাড়া দিল।বলল,
-“এসো জলদি।কেক কা*টো।”
রোদেলা কেক কাটলো।তাহসিনকে খাইয়ে দিল।তাহসিনও রোদেলাকে কেক খাইয়ে দিল।এরপর তাহসিন রেস্টুরেন্ট থেকে আনা খাবার প্লেটে বেড়ে রোদেলাকে নিজ হাতে যত্ন করে খাইয়ে দিল।নিজেও খেল।অতঃপর রোদেলার দিকে বড় একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিল।রোদেলার বার্থডে গিফট। রোদেলা প্যাকেটটি খুলে দেখলো সেখানে আঠারোখানা উপন্যাসের বই।সাথে আঠারো মুঠো রং-বেরঙের কাঁচের খাঁজকাটা চুড়ি।তাহসিন জানতো রোদেলা বই আর চুড়ি খুবই পছন্দ করে।তাহসিনের আনা সবগুলো বই-ই রোদেলার উইশলিস্টের।রোদেলা এতটা খুশি হলো যে তার চোখ দিয়ে পানি এসে পড়লো।তাহসিন সযত্নে তা মুছিয়ে দিল।এরপর রোদেলার হাতদুটি সযত্নে নিজের হাতের ভাজে পুরে নিয়ে রোদেলার চোখের দিকে তাকিয়ে ঘোরলাগা কন্ঠে ডাকলো,
-“মায়মূন।”
রোদেলা তাহসিনের দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে জবাব দিল,
-“হু।”
তাহসিন রোদেলার দিকে তাকিয়েই ঘোরলাগা কন্ঠে বলল,
-“এই তাহসিন মাহমুদ তোমাকে ভালোবাসে।প্রচন্ড ভালোবাসে।যতটা ভালোবাসলে অন্যকাউকে ভালোবাসার স্বাদ জাগে না ততটাই ভালোবাসে।”
রোদেলা মুচকি হেসে চোখ নামিয়ে রাখলো।তাহসিনের এই সরাসরি স্বীকারোক্তি শুনে রোদেলার কেমন যেন ভালো লাগার শিহরণ বয়ে গেল।এতটা সহজভাবে ভালোবাসার স্বীকারোক্তি ক’জন দিতে পারে?রোদেলার ঘোর কাটলো তাহসিনের পরের কথাটা শুনে।তাহসিন কেমন যেন আবদার করে বলল,
-“আমি তোমাকে ভালোবাসতে চাই মায়মূন।একটা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যেমন ভালোবাসা গড়ে উঠে তেমন করেই ভালোবাসতে চাই।আমাদের সম্পর্কটা সহজ করতে চাই। আমি চেয়েছিলাম প্রথমে তোমার বন্ধু হতে।তোমাকে একটা নির্দিষ্ট সময় দিতে।অনেকটাই তো সময় দিয়েছি।তুমি কি আমার ভালোবাসা গ্রহণ করতে প্রস্তুত মায়মুন?”
রোদেলা মাথা নিচু করে চুপ করে থাকলো।চুপ করেই যেন তাহসিনকে সম্মতি দিল।তাহসিন সম্মতি পেয়ে রোদেলার হাত দুটো ঠোঁটের কাছে নিয়ে আলতো করে হাতে অধর ছুঁইয়ে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিল।এরপর রোদেলার কপালেও অধর ছোঁয়ালো।ছোট্ট রোদেলাকে একটু একটু করে নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিল।নিজের মতো করে তার মায়মূনকে ভালোবাসতে লাগলো।
বাহিরে বসন্তের শীতল বাতাস বইছে।কোথা থেকে যেন ফুলের সুবাস আসছে।দূরে কোথাও নাম না জানা পাখি ডাকছে।বারান্দার ওপাশে পদ্মবীলের উপর চাঁদ আলো ছড়াচ্ছে।চাঁদের আলোয় পদ্মবিলের পানি ঝিলমিল করে উঠছে।এইদিকে চাঁদের আবছায়া আলো ঘরেও প্রবেশ করছে।ঘরে মোমবাতির হলুদাভ আলো নিভু নিভু জ্বলছে। আর এত সুন্দর একটা রজনীকে সাক্ষী রেখে দুই মানব-মানবী নিজেদের ভালোবাসা একে অপরের নামে সপে দিচ্ছে।
#চলবে
[বি.দ্র:-কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।