#নীল_বসন্ত
#লেখনীতে_মিথিলা_মিতু
#পর্বসংখ্যা_২০
তখন ভোর ছয়টা।রোদেলা তাহসিনের সাথে আজ মাঠে এসেছে।ভোর ভোর সেনাদলের সকলকে পুরো মাঠ জুড়ে দৌড়াতে হয়।এটাই যে নিয়ম।তারা সময়ের প্রতি খুবই কঠোর।সময় একটু এদিক-ওদিক হয় না।সব কাজই যেন সময় ধরে হয়।বিশাল লাইন জুড়ে সারিবদ্ধভাবে সকল সেনাবাহিনী দাঁড়িয়ে ছিল।ছয়টা বাজতেই সকলে দৌড়াতে শুরু করলো।রোদেলা মাঠের লাইনের এপাশে দাঁড়িয়ে সেটাই দেখতে লাগলো।হাতে তার ঠান্ডা পানির বোতল। বিশাল মাঠে সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য কয়েক পাক ঘুরলো।দৌড়ানোর সময়টুকু শেষ হতেই তাহসিন ঘামার্ত শরীর নিয়ে মাঠের এপাশে আসলো।যেখানে তার মায়মূন দাঁড়িয়ে আছে।তাহসিনের মুখ চুইয়ে ঘাম পড়ছে।হাত-পিঠ সবই ঘেমে-নেয়ে একাকার।তাহসিন এসে রোদেলার শাড়ির আঁচল দিয়ে ক্লিন শেইভ করা মুখটি মুছতে লাগলো।মুখ টুকু মুছে রোদেলার থেকে পানির বোতলখানা নিয়ে পরম তৃপ্তিতে পানি খেতে লাগল।এই মুহূর্তে যেন পানিটাই অমৃতের ন্যায় লাগছে।পানি কিছুটা নিজের মাথাতেও ঢালল।রোদেলা নিজের শাড়ির আঁচল টেনে তাহসিনের ছোট ছোট ভেজা চুলগুলো পরম যত্নে মুছে দিল।তাহসিন রোদেলার দিকে তাকিয়ে হাসলো।অতঃপর বলল,
-“এইরকম করে বউয়ের যত্ন পেতেও কপাল লাগে।আমার কপালটা কত ভালো তাই না রোদেলা?”
তাহসিন ইচ্ছে করে রোদেলা বলে ডাকলো।দেখতে চাইলো রোদেলা এই ডাক কেমন করে নেয়?রোদেলা ক্ষেপে গেল। রাগী কন্ঠে বলল,
-“এই কে রোদেলা হ্যাঁ?”
তাহসিন ভাবলেশহীন ভাবেই বলল,
-“কে আর?তুমি।তুমিই তো রোদেলা।”
-“দেখুন ঠিক হচ্ছে না কিন্তু।”
-“এ বাবা আমি আবার কি করলাম?”
-“আপনি জানেন না কি করেছেন?আমাকে কেন রোদেলা বলে ডাকলেন হ্যাঁ?ও বুঝেছি তো।পুরনো হয়ে যাচ্ছি কিনা। তাই তো এই নামে ডাকা তাই না?”
তাহসিন রোদেলার কথা শুনে হেসে ফেলল।রোদেলা নাক কুচকে বুকে আড়া আড়িভাবে হাত বেঁধে বলল,
-“ইদানীং আপনি একটু বেশিই হাসছেন।”
তাহসিন হাসতে হাসতেই বলল,
-“কারণ বউ বেশি আদরে রাখছে তো তাই হাসছি।”
-“একদম কথা ঘুরাবেন না।বলুন কেন ডাকলেন রোদেলা বলে?”
তাহসিন মাঠে বসে থেকেই বলল,
-“তোমাকে একটু রাগানোর জন্যই।”
-“আমি কি পাগল?আমাকে রাগাবেন কেন?”
তাহসিন কানে ধরে বলল,
-“সরি বাবা।ভুল হয়েছে আমার।”
-“লজ্জা লাগছে না?আশেপাশে আপনার সিনিয়র-জুনিয়র সবাই আছে।কানে ধরছেন কেন?”
-“লজ্জা লাগবে কেন?বউয়ের কাছে সবাই ভিজাবিড়াল বুঝাছো মায়মূন।”
-“হুম।এবারের মতো মাফ করলাম।আর একদিনও যদি মায়মূন না ডেকে রোদেলা বলে ডাকেন।তবে আপনার খবর আছে এই বলে রাখলাম আমি।”
-“কয়টার খবর ম্যাডাম?”
-“আবার ফাজলামো?”
তাহসিন উঠে দাঁড়ালো।তারপর বলল,
-“আচ্ছা আপাতত আর ফাজলামো করছি না।চলে যাচ্ছি আমি ক্যাম্পে।তুমি বাসায় চলে যাও।বাকি রাগটুকু তুলে রাখো।আমিও আমার ফাজলামোগুলো তুলে রাখলাম। রাতে এসে আবার শুরু হবে ঠিক আছে?”
-“হু সেই অপেক্ষাতেই থাকেন।যাচ্ছি আমি।”
-“ঠিক আছে ম্যাডাম।”
-“তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবেন।”
-“দেখি,চেষ্টা করবো।”
তাহসিন চলে গেল।রোদেলাও চলে এলো।কাল থেকে তার কলেজ খোলা।এই সময়টাতে রান্না-বান্না নিয়েই সে ব্যস্ত থাকবে।আজ সময় পেয়েই তাহসিন নিয়ে এলো তাকে। সময়টা কে*টে গেল সুন্দর ভাবে।এবার বাসায় যেয়ে রান্না বসাতে হবে।
★
এক সপ্তাহ বন্ধের পর আজ রোদেলা আর নিহা কলেজে এলো।রোদেলা আর নিহারও দেখা হলো এক সপ্তাহ পর। নিহার তো অনেক কথাই জমে আছে।রোদেলাকে সামনাসামনি বলবে বলেই ফোনে বলে নি।রোদেলা আসা থেকে নিহা গল্প জুড়ে দিয়েছে।গল্পের মুখ্য বিষয়ই শান্ত।এই অব্দি শান্তর কাহিনিই নিহা বলে যাচ্ছে।শান্তর ফোন নাম্বার কি করে যোগাড় করলো?কিভাবে আইডিতে এড হলো।কি কথা হলো সেসবই।গত চারদিন রোজ নিয়ম করে শান্তর সাথে তার ফোনে কথা হচ্ছে।রোদেলা শুনে বলল,
-“তুমি কি সবকিছু ভেবে-চিন্তেই এগোচ্ছো নিহা?”
-“হুম রোদ সবকিছু ভেবেই এগোলাম।আমি ভেবে দেখেছি এই মানুষটাকে ছাড়া আমার চলবে না।এই মানুষটাকে যেমন আমার প্রয়োজন।তেমনি এই মানুষটারও আমাকে খুব প্রয়োজন।এই মানুষটাকে উপর থেকে যেমন বখাটে, খারাপ মনে হয় সে কিন্তু ততটা খারাপ না রোদ।ট্রাস্ট মি। মানুষটা মনের দিক থেকে খুবই ভালো।আর জানো তো রোদ ভিলেনরা সবার কাছে ভিলেন হলেও নিজের ভালোবাসার কাছে ভালোবাসা হয়েই ধরা দেয়।গোটা জাতি তাদের ভয়ে গুটিয়ে থাকলেও তারা কিন্তু ভালোবাসার মানুষটার কাছে ভিতু।তারা যেন তখন শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে যায়।আর জানো তো এমন বখাটে উন্মাদদের ভালোবাসাই কিন্তু খাটি হয়ে থাকে।তারা হয়তো প্রকাশ করতে পারে না কিংবা প্রকাশ করে না।তবে তারা যাকে ভালোবাসে মন থেকেই ভালোবাসে।আর তারা যেকোনো ভাবেই সে ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে নেয়। প্রয়োজনে গোটা বিশ্বের সাথেও লড়াই করে ভালোবাসার মানুষটাকে এক প্রকার ছিনিয়ে নেয়।তাদের কাছে থাকে না পরিবারের অজুহাত দিয়ে ছেড়ে চলে যাওয়া।কিংবা বেকারত্বের অজুহাত দিয়ে মানুষটাকে দূরে ঠেলে দেওয়া।”
রোদেলা বলল,
-“আমার বান্ধুবীটা যে শান্ত ভাইয়ার প্রেমে ভালোই মজেছে সেটা খুব ভালো বুঝতে পারছি।শান্ত ভাইয়ার প্রেমে পড়ে তিনি প্রেম বিশেষজ্ঞ কমিটিতে যোগদান করেছেন সেটা ঢের বুঝতে পারছি।”
নিহা হাসলো।রোদেলা নিহার কাঁধে হাত রেখে বলল,
-“এগিয়ে যাও নিহা।যেহেতু তোমার মন টানছে সেহেতু মনের জোর দিয়েই এগিয়ে যাও।আর দোয়া করি শান্ত ভাইয়ার ভালোবাসা পেয়ে জয়ী হয়ে ফিরো।”
★
ক্লাস শেষে নিহা আর রোদেলা একসাথে বের হলেও আজ আর একসাথে রিকশা ডেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া হলো না।নিহা রোদেলাকে রাস্তা অব্দি এগিয়ে দিয়ে ফের কলেজ গেইটের কাছে এলো।কারণ সে শান্তর সাথে দেখা করবে।রোদেলা আর দাঁড়ালো না।ওরা দুইজন কথাবার্তা বলবে রোদেলা দাঁড়িয়ে থাকবে বিষয়টা নিজের কাছেই দৃষ্টিকটু লাগে।যতই ওদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক না হোক তবুও তো কেমন লজ্জাজনক ব্যাপার হবে।তাই রোদেলা এসে পড়লো।নিহা গেইটের কাছে এসে এদিক-ওদিক তাকালো।কিন্তু কাঙ্খিত মানুষটিকে পেল না।নিহা ফের কলেজের ভেতরে ঢুকলো।শান্তর ক্লাসের সামনেও গেল। কিন্তু সেখানেও পেল না।নিহার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। পুরো কলেজে শান্তকে খুঁজলো।কিন্তু পেল না।সে আশাহত হয়ে মাঠ পেরিয়ে গেইট দিয়ে বাহিরে বেরিয়ে এলো।রাস্তার ধারের টংয়ের দোকানটাতেও চোখ বুলালো।সে তো কাল রাতেই শান্তকে বলে রেখেছিল আজ তার ক্লাস আছে।শান্ত যেন আজ কলেজে আসে।শান্ত অবশ্য তখনই বলে দিয়েছিল আসবে না।কিন্তু নিহার বিশ্বাস ছিল শান্ত ঠিক আসবে।কিন্তু নিহার বিশ্বাস ভুল প্রমাণিত করে শান্ত সত্যিই আজ আসলো না।নিহার সাথে দেখা দিল না।
নিহা গেইটের বাহিরে এসে যেই না শান্তকে কল দিতে যাবে ঠিক তখনই রাস্তার ওপাড়ে হইচই শুনে এগিয়ে গেল।আর যেয়ে যা দেখতে পেল তা দেখেই নিহা অবাক হয়ে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো।শান্ত একটা ছেলেকে মা*রছে।তা দেখেই নিহার মারাত্মক জেদ উঠলো।কেন সবসময় ওকে মারামারি করতেই হবে?নিহা এগিয়ে যেত কিন্তু এতগুলো মানুষকে পেরিয়ে এগিয়ে গেলে শান্ত নির্ঘাত তাকে অপমান করবে। সেটা মোটেও ভালো দেখাবে না।শান্ত ছেলেটাকে মা*রছে আর অশ্রাব্য ভাষায় বকছে।নিহার এসব কিছুই ভালো লাগছে না।নিহা মন বেজার করে বাসায় চলে এলো।এসে কলেজের পোশাক চেঞ্জ না করেই বিছানায় চুপচাপ শুইয়ে রইল।সে কি ঠিক পথে এগোচ্ছে?এই ছেলেটাকে কি আসলেই ভালো পথে আনা সম্ভব?নিহা যে এখনোই ক্লান্ত হয়ে পড়ছে।কেন এই ছেলেটার সাথে তার দেখা হলো? নিজেকে বেশ ক্লান্ত লাগছে।কিছুই ভালো লাগছে না তার। সবকিছু অসহ্য ঠেকছে।
★
তাহসিন বাসায় ফিরলে রোদেলা কোনো কথা বলল না। তাহসিনের ঠিক বোধগম্য হলো না রোদেলা কেন এত চুপচাপ?বার দুয়েক জিজ্ঞেস করলেও এর কোনো উত্তর মিলল না।রোদেলা তাহসিনকে ভাত দিয়ে নিজেও চুপচাপ খেয়ে নিল।এরপর রুমে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইল। তাহসিন বিছানায় বসে ফোনে কিছু কাজ সারলো।এরপর রোদেলাকে ডাকলো,
-“মায়মূন।এখানে এসো।”
রোদেলা বলল,
-“পারবো না।”
তাহসিন যেন বোকা বনে গেল।কি হলো হুট করে?তাহসিন বলল,
-“কি হয়েছে তোমার?”
-“কিছু না।”
-“তোমাদের মেয়েদের কি এক স্বভাব।কিছু হলে জিজ্ঞেস করলে বলবে “কিছু না,জানি না।” এই শব্দ ছাড়া অন্যকিছু তো বলবেই না।এইদিকে জিজ্ঞেস না করলেও মুখ ফুলাবে। বলবে-কেন কারণ জিজ্ঞেস করা হয় নি?এখন বলো আমরা অসহায় পুরুষেরা কোন দিকে যাবো?”
রোদেলা বারান্দা থেকে এসে দুই হাত কোমড়ে গুজে বলল,
-“এই কি বললেন আপনি?আমার আগে কয়টা মেয়েকে সামাল দিয়েছেন যে মেয়েদের সম্পর্কে এতকিছু জানেন হুহ?”
-“তুমি তো আমার জীবনের প্রথম নারী।কিন্তু জানো তো তোমার আগেও আমার মাকে দেখেছি।আমার মাও বাবার সাথে ঠিক এমনটাই করতো।তার থেকেই জানা।কাজ করে কুল পাই না আবার কিনা কত মেয়েদেরকে সামাল দিব হুহ?কি হয়েছে বলবে তুমি?”
-“সকালে কি বলেছেন মনে আছে?”
তাহসিন একটু ভাবতেই মনে পড়ে গেল সকালের কথা। কপাল চাপড়ে হা হুতাশ করে বলল,
-“অতি সামান্য ঘটনার রেশ ধরে তুমি এখনো রেগে আছো মায়মূন?”
রোদেলা কপাল কুচকে বলল,
-“অতি সামান্য ঘটনা?শুনুন মাহমুদ সাহেব,এটা আপনার কাছে অতি সামান্য ঘটনা হলেও আমার কাছে মোটেও তা নয়।আপনি আমাকে মায়মূন বলে ডেকে এসেছেন।এই প্রথম বারই রোদেলা বলে ডেকেছেন।কেন ডাকবেন?”
-“তখনই তো বললাম দুষ্টামি করে ডেকেছি।”
-“কেন দুষ্টামি করবেন?”
তাহসিন ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
-“কারণ আমার ইচ্ছা।”
-“আপনার ইচ্ছে হলেই এমন দুষ্টামি করতে পারেন না।”
তাহসিন রোদেলার দিকে তাকালো।তারপর বলল,
-“তুমি কি আমার সাথে ঝগড়া করতে চাইছো মায়মূন?”
রোদেলা এবার ঢোক গিলল।তারপর আমতা আমতা করে বলল,
-“আসলে হয়েছে কি আগে যখন দূরে ছিলাম তখন তো অভিমান করতাম,রাগ দেখাতাম।কিন্তু আমাদের মাঝে তো কখনোই ঝগড়া হয় নি।তাই একটু ঝগড়ার ফিলিংসটা নিতে চাইছিলাম।ভালো লাগছে না।খুব ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে মাহমুদ সাহেব।প্লিজ ক্যারি অন।”
তাহসিন ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো।অতঃপর রোদেলার হাত ধরে টেনে এনে কাছে এনে নিজের কোলে বসালো। এরপর দুই হাত দিয়ে রোদেলাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-“আমি ঝগড়া করতে পারি না মায়মূন।”
-“তাহলে কি পারেন?”
তাহসিন রোদেলার চুলে মুখ ডুবিয়ে হাস্কি স্বরে বলল,
-“আদর করতে।”
ব্যাস রোদেলা গলাবাজী এক মূহুর্তেই ফুস।এখন সে কুন্ঠায় যেন জমে যাচ্ছে।তাহসিনের থেকে ছাড়া পেতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।কিন্তু তাহসিন কি ছাড়ার পাত্র?তাহসিন রোদেলাকে শক্ত করেই জড়িয়ে রাখলো।
★
রাত ঘনিয়ে এলো।কিন্তু আজ আর নিহা শান্তকে ফোন করলো না।অভিমান নিয়েই সে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। যখনই দু চোখের পাতা লেগে এলো তখনই তার ফোনটা সশব্দে বেজে উঠলো।নিহা ফোন রিসিভ করে ঘুমুঘুমু কন্ঠেই সালাম দিয়ে শুধালো,
-“কে বলছেন?”
-“অশান্ত বলছি।”
-“ছাতার মাথা।অশান্ত কি কারো নাম হয় নাকি?”
কথাটা বলে নিহা থেমে গেল।তার মাথায় শান্তর নামটা ভেসে উঠল।ঘুম ঘুম চোখেই ফোনের স্ক্রিনে চোখ বুলালো আর যখন বুঝতে পারলো শান্ত তাকে ফোন করেছে তার চোখ থেকে ঘুম পুরো উধাও।নিহা উঠে বসল।বলল,
-“শান্ত ভাই আপনি?আপনি সত্যিই ফোন করেছেন?”
-“না স্বপ্নে ফোন করেছি।”
-“ধুর দুষ্টামি করবেন না তো।যাই হোক আপনি ফোন কেন করেছেন?”
-“প্রতিদিন তুমি যে কারণে ফোন করো সে কারণেই।”
-“আমি তো আপনাকে জ্বালানোর জন্যই ফোন করি।”
-“তাহলে আমিও তাই।তো ব্যাপার কি?আজ যে শান্তকে ডিস্টার্ব না করেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলে?শান্তকে ডিস্টার্ব না করেও তোমার ঘুম আসে বুঝি?”
-“হুম আসে।কারণ আমি আপনার সাথে রাগ করেছি।”
-“কেন রাগ করেছো?”
-“দেখা করেছিলেন আপনি আজ?”
-“আমার কি দেখা করার কথা ছিল?”
-“অবশ্যই ছিল।আমি বলেছি আপনাকে আসতে।অবশ্য আপনি বলেছিলেন আসবেন না।”
-“কিন্তু আমি তো এসেছিলাম।”
-“হুম এসেছিলেন তো।মা*রামা*রি করতেই এসেছিলেন।”
-“আমি তো কলেজের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম।কিন্তু পথিমধ্যে একটা ছেলের সাথে ক্যাচাল লেগে গেল।তাই তো ঝামেলাটা বাঁধলাম।এরপর কলেজে যেয়ে তোমাকে আর পাই নি তো।”
-“আমি তখন কলেজে থাকলে তো আমাকে পাবেন। আপনাকে মা*রামারি করতে দেখেই চলে এসেছি আমি। কেন শান্ত ভাই?আপনাকেই কেন এই মারামারি, ঝামেলা এসবের মধ্যে থাকতে হবে?কেন বলুন?এগুলো না করলে কি আপনার ঘুম আসে না?”
-“আমার কি দোষ?আমাকে দেখলেই মানুষের চুলকানি শুরু হয়ে যায়।তাদের মা*র খেতে ইচ্ছে করে।”
-“হুম মানুষের তো আর কাজ নেই তাই না?আচ্ছা আজকে যে ছেলেটাকে মে*রেছিলেন তাকে কেন মে*রেছিলেন?কি অন্যায় ছিল তার?”
-“দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম।ছেলেটা একদম আমার গায়ের সাথে লেগে গেল।হাতে সিগারেট টানতে টানতে গেল।অথচ আমাকে সালামও দিল না।আমার সামনেই সিগারেট খেতে খেতে যাচ্ছিল।তাই মে*রেছি।আরে বড় ভাইয়ের মতো শাসন করে দিয়েছি।এরপর থেকে যেন দেখা হলে বেয়াদবি না করে সালাম ঠুকে যায়।তুমি ওসবে মাথা ঘামিয়ো না।”
-“শুনুন শান্ত ভাই।সম্মান জিনিসটা না চেয়ে নেওয়ার জিনিস না।এটা মানুষের ভালো কাজে অটোমেটিক এসে পড়ে।আপনি কি মনে করেন আপনাকে যারা সালাম ঠুকে তারা খুব মান্য করে আপনাকে?আরে না শান্ত ভাই।তারা সামনে আপনাকে আসতে-যেতে ঠিকই সালাম দেয়।কিন্তু পিছে পিছে আপনার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে।আর যারা ভালো কাজ করে সম্মান অর্জন করে তাদেরকে মানুষ সামনে-পেছনে সবসময়ই সম্মান করে যায়।আপনি মানুষের উপকার করুন দেখবেন মানুষ আপনাকে এমনিই সম্মান করবে।আপনার চেয়ে নিতে হবে না।ছোটদের সাথে বড় ভাইয়ের মতো স্নেহভরা ব্যবহার করুন দেখবেন তারা আপনাকে বড় ভাইয়ের মতোই সম্মান করবে।আচ্ছা আপনি নিজেই ভাবুন তো আপনার বাবা,দাদার বয়সী লোকেরা আপনাকে ভয় পেয়ে গুটিয়ে থাকে।আপনার ভয়ে সর্বদা তটস্থ থাকে।অথচ ওমন বয়সী মানুষরা আপনার মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দোয়া দেওয়ার কথা।ভাবতে পারছেন শান্ত ভাই আপনি?”
শান্ত চুপ করে রইল।নিহা ফের বলল,
-“শান্ত ভাই একটা কথা রাখবেন?”
-“বলো।”
-“আপনি প্লিজ সবার মনে আর ভয় হয়ে থাকবেন না। একটাবার বড়দের সম্মান আর ছোটদের স্নেহ করে দেখুন না।দেখবেন এখন কি সম্মান পাচ্ছেন তখন তার চেয়ে বহুগুণ সম্মান পাবেন।এখন নামমাত্র সম্মান পাচ্ছেন তখন সত্যিকারের সম্মানই পাবেন।প্লিজ শান্ত ভাই,অনুরোধ করছি আমি।”
-“তুমি সত্যি বলছো তো?সবাই তখন আমাকে সম্মান করবে?”
-“হুম করবে।বহুগুণ সম্মান করবে।আচ্ছা আমার কথা বিশ্বাস না হলে আপনি অন্তত এক সপ্তাহের জন্য তাদের সাথে ভালো আচরণ করে দেখুন।তাহলেই বুঝবেন আমি সত্যি বলছি নাকি মিথ্যে বলছি।”
-“ওকে ডান।তোমার কথা মতো আমি এক সপ্তাহ ওদের সাথে ভালো আচরণ করে ওদের পরীক্ষা করে দেখবো।যদি তোমার কথা সত্যি হয় তবে আমি আর কখনোই ভালো মানুষের গায়ে হাত তুলবো না।বিনা অপরাধে কাউকে শাস্তি দিব না।আমি আমার বয়ঃজ্যোষ্ঠ সকলকে সম্মান করে যাবো আর ছোটদের স্নেহ করবো।আর যদি তোমার কথা মিথ্যে হয় তবে আমি এখন কি খারাপ এরপর এর চেয়ে হাজারগুণ খারাপ হয়ে যাবো।মাথায় রেখো।”
-“ঠিক আছে শান্ত ভাই।আপনার শর্ত আমিও মেনে নিলাম। আর যদি আমার কথা মিথ্যা প্রমাণিত হয় তবে আমিও আর কখনোই আপনাকে ডিস্টার্ব করবো না।আপনাকে আপনার মতোই ছেড়ে দিব।আই প্রমিস।”
নিহা কথাটুকু বলেই ফোন রেখে দিল।এরপর বড় একটা শ্বাস টানলো।তার বিশ্বাস সে-ই বিজয়ী হবে।যাক অন্তত এই উছিলায় শান্তকে লোকেদের সাথে বাজে আচরণ,কথায় কথায় মা*রামারি এসব থেকে তো দূরে সরাতে পারছে। এইভাবেই একটু একটু করে শান্তকে সকল বাজে অভ্যাস থেকে দূরে ঠেলে দিবে।
#চলবে
[বি.দ্র:-কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।
#নোট:-অনেকে হয়তো শান্ত-নিহাকে বেশ পছন্দ করছেন। আবার অনেকে বলছেন মেইন ক্যারেক্টর থেকে সরে গিয়ে ওদের চরিত্র একঘেয়েমি লাগছে।তো তাদের জন্য বলা, আমি জানি আপনারা তাহসিন আর রোদেলা চরিত্রটাকে খুব পছন্দ করেন।দেখুন গল্প তো এক ক্যারেক্টর নিয়েই লেখা যায় না তাই না?এক ক্যারেক্টর নিয়ে লেখলে ঘুরেফিরে এক কাহিনিতেই গল্প আটকে থাকতো।তাই শান্ত আর নিহাকে আনা।আর আমি চেষ্টা করবো তাহসিন-রোদেলা আর শান্ত-নিহা এই দুই জোড়া চরিত্রকেই ফুটিয়ে তোলার।যেমন আজকের পর্বে ওরা দুই জুটিই কিন্তু ছিল।আশা করি আজকের পর্বটি পড়ে আর কেউ আভিযোগ করবেন না।আর দেখুন শান্ত-নিহাকে নিয়ে যেহেতু লেখা শুরুই করেছি সেহেতু ওদের নিয়েও এগিয়ে যেতে হবে তাই না?আমার যে পাঠকরা শান্ত-নিহাকে পছন্দ করেছে তাদের জন্য অন্তত এই জোড়াটাকে এগিয়ে নিতে হবে।আমি ওদের দুই চরিত্রকে নিয়েই এগিয়ে যাবো।এখন যদি শান্ত আর নিহাকে নিয়ে লেখার জন্য অনেকে অভিযোগ করেন তাহলে আমার আর কিছুই বলার থাকে না।তবে যেহেতু মেইন ক্যারেক্টর রোদালা আর তাহসিন। সেহেতু আমি ওদের দিকে বিশেষ নজর দিব।শান্ত-নিহার একটা দিক করে নেই তারপর রোদেলা-তাহসিনই বেশি আসবে।আর খুব শীগ্রই গল্পে টুইস্ট আসবে।এই কথাটা তাদের উদ্দেশ্যেই বলা, যারা গল্পের নতুন টুইস্ট আসার জন্য অপেক্ষায় আছেন।
#নোট ২:-আগামীকাল গল্প আসবে কিনা বলতে পারছি না। আমার বাম চোখ মারাত্মক ব্যাথা করছে,চোখ দিয়ে সমানে পানি পড়ছে।চোখ পুরো লাল হয়ে আছে আজ সারাদিন ধরে।যদি রাতে চোখের ব্যাথা আরও বাড়ে তাহলে হয়তো আগামীকাল গল্প আসার সম্ভাবনা নেই।আর যদি এমনটাই থাকে তবে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো গল্প দেওয়ার। আপনাদের দোয়া কামনা করছি।]#নীল_বসন্ত
#লেখনীতে_মিথিলা_মিতু
#পর্বসংখ্যা_২০
তখন ভোর ছয়টা।রোদেলা তাহসিনের সাথে আজ মাঠে এসেছে।ভোর ভোর সেনাদলের সকলকে পুরো মাঠ জুড়ে দৌড়াতে হয়।এটাই যে নিয়ম।তারা সময়ের প্রতি খুবই কঠোর।সময় একটু এদিক-ওদিক হয় না।সব কাজই যেন সময় ধরে হয়।বিশাল লাইন জুড়ে সারিবদ্ধভাবে সকল সেনাবাহিনী দাঁড়িয়ে ছিল।ছয়টা বাজতেই সকলে দৌড়াতে শুরু করলো।রোদেলা মাঠের লাইনের এপাশে দাঁড়িয়ে সেটাই দেখতে লাগলো।হাতে তার ঠান্ডা পানির বোতল। বিশাল মাঠে সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য কয়েক পাক ঘুরলো।দৌড়ানোর সময়টুকু শেষ হতেই তাহসিন ঘামার্ত শরীর নিয়ে মাঠের এপাশে আসলো।যেখানে তার মায়মূন দাঁড়িয়ে আছে।তাহসিনের মুখ চুইয়ে ঘাম পড়ছে।হাত-পিঠ সবই ঘেমে-নেয়ে একাকার।তাহসিন এসে রোদেলার শাড়ির আঁচল দিয়ে ক্লিন শেইভ করা মুখটি মুছতে লাগলো।মুখ টুকু মুছে রোদেলার থেকে পানির বোতলখানা নিয়ে পরম তৃপ্তিতে পানি খেতে লাগল।এই মুহূর্তে যেন পানিটাই অমৃতের ন্যায় লাগছে।পানি কিছুটা নিজের মাথাতেও ঢালল।রোদেলা নিজের শাড়ির আঁচল টেনে তাহসিনের ছোট ছোট ভেজা চুলগুলো পরম যত্নে মুছে দিল।তাহসিন রোদেলার দিকে তাকিয়ে হাসলো।অতঃপর বলল,
-“এইরকম করে বউয়ের যত্ন পেতেও কপাল লাগে।আমার কপালটা কত ভালো তাই না রোদেলা?”
তাহসিন ইচ্ছে করে রোদেলা বলে ডাকলো।দেখতে চাইলো রোদেলা এই ডাক কেমন করে নেয়?রোদেলা ক্ষেপে গেল। রাগী কন্ঠে বলল,
-“এই কে রোদেলা হ্যাঁ?”
তাহসিন ভাবলেশহীন ভাবেই বলল,
-“কে আর?তুমি।তুমিই তো রোদেলা।”
-“দেখুন ঠিক হচ্ছে না কিন্তু।”
-“এ বাবা আমি আবার কি করলাম?”
-“আপনি জানেন না কি করেছেন?আমাকে কেন রোদেলা বলে ডাকলেন হ্যাঁ?ও বুঝেছি তো।পুরনো হয়ে যাচ্ছি কিনা। তাই তো এই নামে ডাকা তাই না?”
তাহসিন রোদেলার কথা শুনে হেসে ফেলল।রোদেলা নাক কুচকে বুকে আড়া আড়িভাবে হাত বেঁধে বলল,
-“ইদানীং আপনি একটু বেশিই হাসছেন।”
তাহসিন হাসতে হাসতেই বলল,
-“কারণ বউ বেশি আদরে রাখছে তো তাই হাসছি।”
-“একদম কথা ঘুরাবেন না।বলুন কেন ডাকলেন রোদেলা বলে?”
তাহসিন মাঠে বসে থেকেই বলল,
-“তোমাকে একটু রাগানোর জন্যই।”
-“আমি কি পাগল?আমাকে রাগাবেন কেন?”
তাহসিন কানে ধরে বলল,
-“সরি বাবা।ভুল হয়েছে আমার।”
-“লজ্জা লাগছে না?আশেপাশে আপনার সিনিয়র-জুনিয়র সবাই আছে।কানে ধরছেন কেন?”
-“লজ্জা লাগবে কেন?বউয়ের কাছে সবাই ভিজাবিড়াল বুঝাছো মায়মূন।”
-“হুম।এবারের মতো মাফ করলাম।আর একদিনও যদি মায়মূন না ডেকে রোদেলা বলে ডাকেন।তবে আপনার খবর আছে এই বলে রাখলাম আমি।”
-“কয়টার খবর ম্যাডাম?”
-“আবার ফাজলামো?”
তাহসিন উঠে দাঁড়ালো।তারপর বলল,
-“আচ্ছা আপাতত আর ফাজলামো করছি না।চলে যাচ্ছি আমি ক্যাম্পে।তুমি বাসায় চলে যাও।বাকি রাগটুকু তুলে রাখো।আমিও আমার ফাজলামোগুলো তুলে রাখলাম। রাতে এসে আবার শুরু হবে ঠিক আছে?”
-“হু সেই অপেক্ষাতেই থাকেন।যাচ্ছি আমি।”
-“ঠিক আছে ম্যাডাম।”
-“তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরবেন।”
-“দেখি,চেষ্টা করবো।”
তাহসিন চলে গেল।রোদেলাও চলে এলো।কাল থেকে তার কলেজ খোলা।এই সময়টাতে রান্না-বান্না নিয়েই সে ব্যস্ত থাকবে।আজ সময় পেয়েই তাহসিন নিয়ে এলো তাকে। সময়টা কে*টে গেল সুন্দর ভাবে।এবার বাসায় যেয়ে রান্না বসাতে হবে।
★
এক সপ্তাহ বন্ধের পর আজ রোদেলা আর নিহা কলেজে এলো।রোদেলা আর নিহারও দেখা হলো এক সপ্তাহ পর। নিহার তো অনেক কথাই জমে আছে।রোদেলাকে সামনাসামনি বলবে বলেই ফোনে বলে নি।রোদেলা আসা থেকে নিহা গল্প জুড়ে দিয়েছে।গল্পের মুখ্য বিষয়ই শান্ত।এই অব্দি শান্তর কাহিনিই নিহা বলে যাচ্ছে।শান্তর ফোন নাম্বার কি করে যোগাড় করলো?কিভাবে আইডিতে এড হলো।কি কথা হলো সেসবই।গত চারদিন রোজ নিয়ম করে শান্তর সাথে তার ফোনে কথা হচ্ছে।রোদেলা শুনে বলল,
-“তুমি কি সবকিছু ভেবে-চিন্তেই এগোচ্ছো নিহা?”
-“হুম রোদ সবকিছু ভেবেই এগোলাম।আমি ভেবে দেখেছি এই মানুষটাকে ছাড়া আমার চলবে না।এই মানুষটাকে যেমন আমার প্রয়োজন।তেমনি এই মানুষটারও আমাকে খুব প্রয়োজন।এই মানুষটাকে উপর থেকে যেমন বখাটে, খারাপ মনে হয় সে কিন্তু ততটা খারাপ না রোদ।ট্রাস্ট মি। মানুষটা মনের দিক থেকে খুবই ভালো।আর জানো তো রোদ ভিলেনরা সবার কাছে ভিলেন হলেও নিজের ভালোবাসার কাছে ভালোবাসা হয়েই ধরা দেয়।গোটা জাতি তাদের ভয়ে গুটিয়ে থাকলেও তারা কিন্তু ভালোবাসার মানুষটার কাছে ভিতু।তারা যেন তখন শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে যায়।আর জানো তো এমন বখাটে উন্মাদদের ভালোবাসাই কিন্তু খাটি হয়ে থাকে।তারা হয়তো প্রকাশ করতে পারে না কিংবা প্রকাশ করে না।তবে তারা যাকে ভালোবাসে মন থেকেই ভালোবাসে।আর তারা যেকোনো ভাবেই সে ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে নেয়। প্রয়োজনে গোটা বিশ্বের সাথেও লড়াই করে ভালোবাসার মানুষটাকে এক প্রকার ছিনিয়ে নেয়।তাদের কাছে থাকে না পরিবারের অজুহাত দিয়ে ছেড়ে চলে যাওয়া।কিংবা বেকারত্বের অজুহাত দিয়ে মানুষটাকে দূরে ঠেলে দেওয়া।”
রোদেলা বলল,
-“আমার বান্ধুবীটা যে শান্ত ভাইয়ার প্রেমে ভালোই মজেছে সেটা খুব ভালো বুঝতে পারছি।শান্ত ভাইয়ার প্রেমে পড়ে তিনি প্রেম বিশেষজ্ঞ কমিটিতে যোগদান করেছেন সেটা ঢের বুঝতে পারছি।”
নিহা হাসলো।রোদেলা নিহার কাঁধে হাত রেখে বলল,
-“এগিয়ে যাও নিহা।যেহেতু তোমার মন টানছে সেহেতু মনের জোর দিয়েই এগিয়ে যাও।আর দোয়া করি শান্ত ভাইয়ার ভালোবাসা পেয়ে জয়ী হয়ে ফিরো।”
★
ক্লাস শেষে নিহা আর রোদেলা একসাথে বের হলেও আজ আর একসাথে রিকশা ডেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া হলো না।নিহা রোদেলাকে রাস্তা অব্দি এগিয়ে দিয়ে ফের কলেজ গেইটের কাছে এলো।কারণ সে শান্তর সাথে দেখা করবে।রোদেলা আর দাঁড়ালো না।ওরা দুইজন কথাবার্তা বলবে রোদেলা দাঁড়িয়ে থাকবে বিষয়টা নিজের কাছেই দৃষ্টিকটু লাগে।যতই ওদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক না হোক তবুও তো কেমন লজ্জাজনক ব্যাপার হবে।তাই রোদেলা এসে পড়লো।নিহা গেইটের কাছে এসে এদিক-ওদিক তাকালো।কিন্তু কাঙ্খিত মানুষটিকে পেল না।নিহা ফের কলেজের ভেতরে ঢুকলো।শান্তর ক্লাসের সামনেও গেল। কিন্তু সেখানেও পেল না।নিহার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। পুরো কলেজে শান্তকে খুঁজলো।কিন্তু পেল না।সে আশাহত হয়ে মাঠ পেরিয়ে গেইট দিয়ে বাহিরে বেরিয়ে এলো।রাস্তার ধারের টংয়ের দোকানটাতেও চোখ বুলালো।সে তো কাল রাতেই শান্তকে বলে রেখেছিল আজ তার ক্লাস আছে।শান্ত যেন আজ কলেজে আসে।শান্ত অবশ্য তখনই বলে দিয়েছিল আসবে না।কিন্তু নিহার বিশ্বাস ছিল শান্ত ঠিক আসবে।কিন্তু নিহার বিশ্বাস ভুল প্রমাণিত করে শান্ত সত্যিই আজ আসলো না।নিহার সাথে দেখা দিল না।
নিহা গেইটের বাহিরে এসে যেই না শান্তকে কল দিতে যাবে ঠিক তখনই রাস্তার ওপাড়ে হইচই শুনে এগিয়ে গেল।আর যেয়ে যা দেখতে পেল তা দেখেই নিহা অবাক হয়ে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো।শান্ত একটা ছেলেকে মা*রছে।তা দেখেই নিহার মারাত্মক জেদ উঠলো।কেন সবসময় ওকে মারামারি করতেই হবে?নিহা এগিয়ে যেত কিন্তু এতগুলো মানুষকে পেরিয়ে এগিয়ে গেলে শান্ত নির্ঘাত তাকে অপমান করবে। সেটা মোটেও ভালো দেখাবে না।শান্ত ছেলেটাকে মা*রছে আর অশ্রাব্য ভাষায় বকছে।নিহার এসব কিছুই ভালো লাগছে না।নিহা মন বেজার করে বাসায় চলে এলো।এসে কলেজের পোশাক চেঞ্জ না করেই বিছানায় চুপচাপ শুইয়ে রইল।সে কি ঠিক পথে এগোচ্ছে?এই ছেলেটাকে কি আসলেই ভালো পথে আনা সম্ভব?নিহা যে এখনোই ক্লান্ত হয়ে পড়ছে।কেন এই ছেলেটার সাথে তার দেখা হলো? নিজেকে বেশ ক্লান্ত লাগছে।কিছুই ভালো লাগছে না তার। সবকিছু অসহ্য ঠেকছে।
★
তাহসিন বাসায় ফিরলে রোদেলা কোনো কথা বলল না। তাহসিনের ঠিক বোধগম্য হলো না রোদেলা কেন এত চুপচাপ?বার দুয়েক জিজ্ঞেস করলেও এর কোনো উত্তর মিলল না।রোদেলা তাহসিনকে ভাত দিয়ে নিজেও চুপচাপ খেয়ে নিল।এরপর রুমে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইল। তাহসিন বিছানায় বসে ফোনে কিছু কাজ সারলো।এরপর রোদেলাকে ডাকলো,
-“মায়মূন।এখানে এসো।”
রোদেলা বলল,
-“পারবো না।”
তাহসিন যেন বোকা বনে গেল।কি হলো হুট করে?তাহসিন বলল,
-“কি হয়েছে তোমার?”
-“কিছু না।”
-“তোমাদের মেয়েদের কি এক স্বভাব।কিছু হলে জিজ্ঞেস করলে বলবে “কিছু না,জানি না।” এই শব্দ ছাড়া অন্যকিছু তো বলবেই না।এইদিকে জিজ্ঞেস না করলেও মুখ ফুলাবে। বলবে-কেন কারণ জিজ্ঞেস করা হয় নি?এখন বলো আমরা অসহায় পুরুষেরা কোন দিকে যাবো?”
রোদেলা বারান্দা থেকে এসে দুই হাত কোমড়ে গুজে বলল,
-“এই কি বললেন আপনি?আমার আগে কয়টা মেয়েকে সামাল দিয়েছেন যে মেয়েদের সম্পর্কে এতকিছু জানেন হুহ?”
-“তুমি তো আমার জীবনের প্রথম নারী।কিন্তু জানো তো তোমার আগেও আমার মাকে দেখেছি।আমার মাও বাবার সাথে ঠিক এমনটাই করতো।তার থেকেই জানা।কাজ করে কুল পাই না আবার কিনা কত মেয়েদেরকে সামাল দিব হুহ?কি হয়েছে বলবে তুমি?”
-“সকালে কি বলেছেন মনে আছে?”
তাহসিন একটু ভাবতেই মনে পড়ে গেল সকালের কথা। কপাল চাপড়ে হা হুতাশ করে বলল,
-“অতি সামান্য ঘটনার রেশ ধরে তুমি এখনো রেগে আছো মায়মূন?”
রোদেলা কপাল কুচকে বলল,
-“অতি সামান্য ঘটনা?শুনুন মাহমুদ সাহেব,এটা আপনার কাছে অতি সামান্য ঘটনা হলেও আমার কাছে মোটেও তা নয়।আপনি আমাকে মায়মূন বলে ডেকে এসেছেন।এই প্রথম বারই রোদেলা বলে ডেকেছেন।কেন ডাকবেন?”
-“তখনই তো বললাম দুষ্টামি করে ডেকেছি।”
-“কেন দুষ্টামি করবেন?”
তাহসিন ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
-“কারণ আমার ইচ্ছা।”
-“আপনার ইচ্ছে হলেই এমন দুষ্টামি করতে পারেন না।”
তাহসিন রোদেলার দিকে তাকালো।তারপর বলল,
-“তুমি কি আমার সাথে ঝগড়া করতে চাইছো মায়মূন?”
রোদেলা এবার ঢোক গিলল।তারপর আমতা আমতা করে বলল,
-“আসলে হয়েছে কি আগে যখন দূরে ছিলাম তখন তো অভিমান করতাম,রাগ দেখাতাম।কিন্তু আমাদের মাঝে তো কখনোই ঝগড়া হয় নি।তাই একটু ঝগড়ার ফিলিংসটা নিতে চাইছিলাম।ভালো লাগছে না।খুব ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে মাহমুদ সাহেব।প্লিজ ক্যারি অন।”
তাহসিন ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো।অতঃপর রোদেলার হাত ধরে টেনে এনে কাছে এনে নিজের কোলে বসালো। এরপর দুই হাত দিয়ে রোদেলাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
-“আমি ঝগড়া করতে পারি না মায়মূন।”
-“তাহলে কি পারেন?”
তাহসিন রোদেলার চুলে মুখ ডুবিয়ে হাস্কি স্বরে বলল,
-“আদর করতে।”
ব্যাস রোদেলা গলাবাজী এক মূহুর্তেই ফুস।এখন সে কুন্ঠায় যেন জমে যাচ্ছে।তাহসিনের থেকে ছাড়া পেতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।কিন্তু তাহসিন কি ছাড়ার পাত্র?তাহসিন রোদেলাকে শক্ত করেই জড়িয়ে রাখলো।
★
রাত ঘনিয়ে এলো।কিন্তু আজ আর নিহা শান্তকে ফোন করলো না।অভিমান নিয়েই সে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। যখনই দু চোখের পাতা লেগে এলো তখনই তার ফোনটা সশব্দে বেজে উঠলো।নিহা ফোন রিসিভ করে ঘুমুঘুমু কন্ঠেই সালাম দিয়ে শুধালো,
-“কে বলছেন?”
-“অশান্ত বলছি।”
-“ছাতার মাথা।অশান্ত কি কারো নাম হয় নাকি?”
কথাটা বলে নিহা থেমে গেল।তার মাথায় শান্তর নামটা ভেসে উঠল।ঘুম ঘুম চোখেই ফোনের স্ক্রিনে চোখ বুলালো আর যখন বুঝতে পারলো শান্ত তাকে ফোন করেছে তার চোখ থেকে ঘুম পুরো উধাও।নিহা উঠে বসল।বলল,
-“শান্ত ভাই আপনি?আপনি সত্যিই ফোন করেছেন?”
-“না স্বপ্নে ফোন করেছি।”
-“ধুর দুষ্টামি করবেন না তো।যাই হোক আপনি ফোন কেন করেছেন?”
-“প্রতিদিন তুমি যে কারণে ফোন করো সে কারণেই।”
-“আমি তো আপনাকে জ্বালানোর জন্যই ফোন করি।”
-“তাহলে আমিও তাই।তো ব্যাপার কি?আজ যে শান্তকে ডিস্টার্ব না করেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলে?শান্তকে ডিস্টার্ব না করেও তোমার ঘুম আসে বুঝি?”
-“হুম আসে।কারণ আমি আপনার সাথে রাগ করেছি।”
-“কেন রাগ করেছো?”
-“দেখা করেছিলেন আপনি আজ?”
-“আমার কি দেখা করার কথা ছিল?”
-“অবশ্যই ছিল।আমি বলেছি আপনাকে আসতে।অবশ্য আপনি বলেছিলেন আসবেন না।”
-“কিন্তু আমি তো এসেছিলাম।”
-“হুম এসেছিলেন তো।মা*রামা*রি করতেই এসেছিলেন।”
-“আমি তো কলেজের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম।কিন্তু পথিমধ্যে একটা ছেলের সাথে ক্যাচাল লেগে গেল।তাই তো ঝামেলাটা বাঁধলাম।এরপর কলেজে যেয়ে তোমাকে আর পাই নি তো।”
-“আমি তখন কলেজে থাকলে তো আমাকে পাবেন। আপনাকে মা*রামারি করতে দেখেই চলে এসেছি আমি। কেন শান্ত ভাই?আপনাকেই কেন এই মারামারি, ঝামেলা এসবের মধ্যে থাকতে হবে?কেন বলুন?এগুলো না করলে কি আপনার ঘুম আসে না?”
-“আমার কি দোষ?আমাকে দেখলেই মানুষের চুলকানি শুরু হয়ে যায়।তাদের মা*র খেতে ইচ্ছে করে।”
-“হুম মানুষের তো আর কাজ নেই তাই না?আচ্ছা আজকে যে ছেলেটাকে মে*রেছিলেন তাকে কেন মে*রেছিলেন?কি অন্যায় ছিল তার?”
-“দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম।ছেলেটা একদম আমার গায়ের সাথে লেগে গেল।হাতে সিগারেট টানতে টানতে গেল।অথচ আমাকে সালামও দিল না।আমার সামনেই সিগারেট খেতে খেতে যাচ্ছিল।তাই মে*রেছি।আরে বড় ভাইয়ের মতো শাসন করে দিয়েছি।এরপর থেকে যেন দেখা হলে বেয়াদবি না করে সালাম ঠুকে যায়।তুমি ওসবে মাথা ঘামিয়ো না।”
-“শুনুন শান্ত ভাই।সম্মান জিনিসটা না চেয়ে নেওয়ার জিনিস না।এটা মানুষের ভালো কাজে অটোমেটিক এসে পড়ে।আপনি কি মনে করেন আপনাকে যারা সালাম ঠুকে তারা খুব মান্য করে আপনাকে?আরে না শান্ত ভাই।তারা সামনে আপনাকে আসতে-যেতে ঠিকই সালাম দেয়।কিন্তু পিছে পিছে আপনার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে।আর যারা ভালো কাজ করে সম্মান অর্জন করে তাদেরকে মানুষ সামনে-পেছনে সবসময়ই সম্মান করে যায়।আপনি মানুষের উপকার করুন দেখবেন মানুষ আপনাকে এমনিই সম্মান করবে।আপনার চেয়ে নিতে হবে না।ছোটদের সাথে বড় ভাইয়ের মতো স্নেহভরা ব্যবহার করুন দেখবেন তারা আপনাকে বড় ভাইয়ের মতোই সম্মান করবে।আচ্ছা আপনি নিজেই ভাবুন তো আপনার বাবা,দাদার বয়সী লোকেরা আপনাকে ভয় পেয়ে গুটিয়ে থাকে।আপনার ভয়ে সর্বদা তটস্থ থাকে।অথচ ওমন বয়সী মানুষরা আপনার মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দোয়া দেওয়ার কথা।ভাবতে পারছেন শান্ত ভাই আপনি?”
শান্ত চুপ করে রইল।নিহা ফের বলল,
-“শান্ত ভাই একটা কথা রাখবেন?”
-“বলো।”
-“আপনি প্লিজ সবার মনে আর ভয় হয়ে থাকবেন না। একটাবার বড়দের সম্মান আর ছোটদের স্নেহ করে দেখুন না।দেখবেন এখন কি সম্মান পাচ্ছেন তখন তার চেয়ে বহুগুণ সম্মান পাবেন।এখন নামমাত্র সম্মান পাচ্ছেন তখন সত্যিকারের সম্মানই পাবেন।প্লিজ শান্ত ভাই,অনুরোধ করছি আমি।”
-“তুমি সত্যি বলছো তো?সবাই তখন আমাকে সম্মান করবে?”
-“হুম করবে।বহুগুণ সম্মান করবে।আচ্ছা আমার কথা বিশ্বাস না হলে আপনি অন্তত এক সপ্তাহের জন্য তাদের সাথে ভালো আচরণ করে দেখুন।তাহলেই বুঝবেন আমি সত্যি বলছি নাকি মিথ্যে বলছি।”
-“ওকে ডান।তোমার কথা মতো আমি এক সপ্তাহ ওদের সাথে ভালো আচরণ করে ওদের পরীক্ষা করে দেখবো।যদি তোমার কথা সত্যি হয় তবে আমি আর কখনোই ভালো মানুষের গায়ে হাত তুলবো না।বিনা অপরাধে কাউকে শাস্তি দিব না।আমি আমার বয়ঃজ্যোষ্ঠ সকলকে সম্মান করে যাবো আর ছোটদের স্নেহ করবো।আর যদি তোমার কথা মিথ্যে হয় তবে আমি এখন কি খারাপ এরপর এর চেয়ে হাজারগুণ খারাপ হয়ে যাবো।মাথায় রেখো।”
-“ঠিক আছে শান্ত ভাই।আপনার শর্ত আমিও মেনে নিলাম। আর যদি আমার কথা মিথ্যা প্রমাণিত হয় তবে আমিও আর কখনোই আপনাকে ডিস্টার্ব করবো না।আপনাকে আপনার মতোই ছেড়ে দিব।আই প্রমিস।”
নিহা কথাটুকু বলেই ফোন রেখে দিল।এরপর বড় একটা শ্বাস টানলো।তার বিশ্বাস সে-ই বিজয়ী হবে।যাক অন্তত এই উছিলায় শান্তকে লোকেদের সাথে বাজে আচরণ,কথায় কথায় মা*রামারি এসব থেকে তো দূরে সরাতে পারছে। এইভাবেই একটু একটু করে শান্তকে সকল বাজে অভ্যাস থেকে দূরে ঠেলে দিবে।
#চলবে
[বি.দ্র:-কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।
#নীল_বসন্ত
#লেখনীতে_মিথিলা_মিতু
#পর্বসংখ্যা_২১
সময় নদীর স্রোতের ন্যায় বইতে থাকে।সময় থামার নয়। সময় হচ্ছে বহমান।সময় সময়ের মতো বয়ে যায়।আর তার সাথে বয়ে যায় মানুষের জীবনের পথচলাও।দেখতে দেখতে কতগুলো মাস অতিক্রম হয়ে গেল।এই মাসগুলোর সাথে সাথে মানুষের সম্পর্কের বদলও ঘটতে লাগলো।সম্পর্ক হলো আরো গভীর থেকে গভীরতম।রোদেলা আর তাহসিনের সম্পর্কও যেন আরও মিষ্টি-মধুর হয়ে গেল। হাসি-ঠাট্টা,খুনসুটি,ভালোবাসাময় সংসার কাটছে তাহসিন আর রোদেলার।এই তো কিছু মাস আগে ওদের সংসার জীবনের এক বছরও পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।এই এক বছরের মাঝেই দুইজন দুইজনের কতটা কাছের মানুষ হয়ে গেল। অথচ এক বছর পূর্বেও ওরা জানতো না কাউকে যে এতটা ভালোবাসা যায়।প্রেম,ভালোবাসা,সম্পর্কের গভীরতা সম্পর্কে সবটাই ছিল অজানা।দিন যত যায় দুইজনের সম্পর্কের গভীরতা যেন আরো বেড়ে যায়।অন্যদিকে নিহা আর শান্তর সম্পর্কেরও কিছুটা বদল এসেছে।তাদের বেনামি সম্পর্কের একটা নাম হয়েছে।সেটা হচ্ছে বন্ধুত্ব।হ্যাঁ ওদের মাঝে বন্ধুত্বের সম্পর্কটাই গড়ে উঠেছে।যদিও নিহা এখনো শান্তকে ভালোবাসে।তবে শান্ত তাকে ভালোবাসে কিনা সেটা বুঝা দায়।তবে এটা বলা বাহুল্য শান্ত এখন আর আগের মতো নেই।তার চরিত্রের বদল এসেছে।নিহার সাথে যে এক সপ্তাহের চুক্তি হয়েছিল শান্ত সত্যিই সে এক সপ্তাহে কারো সাথে খারাপ আচরণ করে নি।নিহার কথা মতো ওর থেকে বয়সে বড়দেরকে সম্মান দিয়েছে আর ছোটদের ভাই হিসেবে যথেষ্ট স্নেহ করেছে।শান্ত অনুভব করলো আসলেই লোকেদের সম্মান দিলেই সম্মান পাওয়া যায়।শান্ত যেদিন প্রথম বড়দের সাথে সম্মানের সহিতে কথাবার্তা বলছিল তখন তারা নিতান্তই অবাক হয়েছিলই বটে।কেউ যেন নিজের কানকে এবং চোখকে বিশ্বাস করেই উঠতে পারছিল না।যখন বোধ হলো সত্য ঘটনা তখন তারা শান্তকে সে কী স্নেহ,সে কী মমত্ববোধ করলো শান্ত এখনো সেদিনের কথা স্মৃতিচারণ করে।যেদিন শান্ত বুঝতে পারলো অপরের সাথে যেমন আচরণ করবে তেমন আচরণই ফেরত পাবে সেদিন থেকেই নিজেকে পরিবর্তন করা শুরু করলো।শান্ত বুঝলো ওসব মা*রামারি,ঝাগড়া,ঝামেলা করে সম্মান কুড়ানোর থেকে লোকেদের সম্মান আর ভালোবাসার বিনিময়ে সম্মান,ভালোবাসা,স্নেহ পাওয়াটা অনেক শান্তির।তাই শান্ত তার কথা রাখলো।সে আর বিপথে গেল না।এতদিনে যারা শান্তর ভয়ে গুটিয়ে থাকতো তারাই এসে এখন শান্তর সাথে আড্ডায় মজে।অনেক সম্মান করে,স্নেহ করে।মন থেকে ভালোবাসা নিবেদন করে।সে থেকে শান্ত নিহাকে নিজের ভালো বন্ধু হিসেবে মেনে নিল।বন্ধুত্ব করতে এসেও গমগমে কন্ঠে বলল,
-“আমি কিন্তু ওসব প্রেম-ট্রেমে নেই নিহা।আমি শুধু তোমাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে নিতে চাই।তাই ওসবে কিন্তু আমাকে জড়াতে আসবে না।”
নিহা মনে মনে বলল,
-“আমি হয়তো আপনার সামনে আর ভালোবাসা প্রকাশ করবো না।তবে মনে মনে ঠিকই আপনাকেই ভালোবেসে যাবো শান্ত ভাই।”
তবে মুখে বলল,
-“ঠিক আছে শান্ত ভাই।যা বলবেন তা-ই হবে।বন্ধুত্ব হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন এটাই অনেক।”
শান্ত বলল,
-“যেহেতু বন্ধুই হয়ে গিয়েছি সেহেতু ওসব ভাই টাই বলে আর ডাকবে না।নাম ধরেই ডাকবে।কারণ বন্ধুদের নামের পাশে ভাই শব্দটা বেমানান লাগে।”
-“আচ্ছা।”
এভাবেই ওদের বন্ধুত্বটা হয়ে গেল।বন্ধুত্ব এখনো প্রেমের সম্পর্কে রূপ নেয় নি।আদৌ প্রেমের সম্পর্কে রূপ নেবে কিনা সেটাই সন্দেহ।কারণ নিহা এখনো শান্তকে একতরফাই ভালোবেসে যাচ্ছে।তবে শান্তর দিক থেকে এখনো প্রেমজনিত কোনো সংকেত আসে নি।
★
রোদেলার আর নিহা এখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে। সেকেন্ড ইয়ারে উঠে দুইজনেই পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হয়ে যায়।কারণ এইচএসসি পরীক্ষায় তাদের ভালো রেজাল্ট চাই।এই রেজাল্টই ভিত্তি করে তাদের আগামীদিনের পথচলা।তাই দুইজন প্রথম থেকেই ছুটতে যেন পরীক্ষার আগে টেনশনে মানসিক রোগী হতে না হয়।
তখন দুপুর একটা বাজছে।রোদেলা আর নিহা মাত্র ক্লাস শেষ করে বেরিয়েছে।যখন কলেজ গেইট পেরিয়ে বাহিরে বের হলো তখনই রোদেলার মাথাটা কেমন ঝিম মে*রে উঠলো।রোদেলা টাল সামলাতে না পেরে নিহার হাত চেপে ধরলো।মিনিটের মাথায় রোদেলা চেতনা হারানো।হুট করে এমনটা ঘটায় নিহা ভড়কে গেল।নিহা রোদেলাকে মাটিতে বসিয়ে গালে আলতো চাপড় দিতে লাগলো।চোখে মুখে পানি ছিটাতে লাগলো।রোদেলার জ্ঞান ফিরলো না।যেহেতু কলেজ ছুটি হয়ে গিয়েছে আর আজ ওরা লেইট করে বেরিয়েছে সেহেতু কলেজ অনেকটা ফাঁকা বললেই চলে। কেউ এগিয়েও আসছে না।নিহা একা কতটুক পারবে?নিহার কপালে ঘাম জমতে লাগলো।সে চিন্তা করছে কি করা যায়?তার মাথা কাজ করছে না।নিহা যখন ভাবনায় ব্যস্ত তখন তার শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে যেন শান্ত এসে সামনে ধরা দিল।নিহা শান্তকে দেখে ভরসা পেল।শান্ত এসে হাটু মুড়ে বসে অচেতন রোদেলার দিকে তাকিয়ে বলল,
-“ভাবীর কি হয়েছে?”
-“বুঝতে পারছি না।হুট করেই সেন্সলেস হয়ে গেল।”
-“দাঁড়াও।আমি উভার খবর দিচ্ছি।হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।”
শান্ত ছুটাছুটি করতে লাগলো।উভার এলে শান্ত আর নিহা মিলে রোদেলাকে গাড়িতে তুলল।এরপর হসপিটালে নিয়ে গেল।হসপিটালে যেয়ে নিহা রোদেলার ফোন দিয়ে তাহসিনকে ফোন করে সবটা জানালো।আর হসপিটালের লোকেশনও বলে রাখলো।তাহসিন ওদেরকে জানালো তাহসিন কিছুক্ষণের মধ্যেই আসছে।
তাহসিনের সাথে কথা বলা শেষ করে নিহা শান্তর দিকে তাকালো।শান্ত হসপিটালের করিডোরের চেয়ারে বসে আছে।নিহা শান্তর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।আজ যদি এই মানুষ না আসতো তবে নিহা কি করতো?সে কী একা একা পারতো রোদেলাকে নিয়ে হসপিটাল অব্দি পৌঁছাতে? এই পর্যন্ত মানুষটা শুধু তাদের বিপদে যেন ঢাল হয়েই ছুটে আসে।নিহা বুঝতে পারলো মানুষটা বাহির থেকে যতই হম্বিতম্বি করে না কেন?মানুষটার মনটা খুবই ভালো।
★
হঠাৎ করে রোদেলার এই খবর শুনে তাহসিনও বেশ চিন্তিত।কিছুক্ষণের জন্য আর্জেন্ট ছুটির অনুমতি নিয়ে সে হসপিটালে এসেছে।রোদেলার শরীর দুর্বল।তাই স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।জ্ঞান ফিরেছে কিছু মিনিট আগে। তাহসিন এসে রোদেলার কেবিনে ঢুকতে যাবে তার আগেই ডক্টরের তলব পড়লো।তাহসিন রোদেলার কেবিনে না যেয়ে সোজা ডক্টরের কেবিনে গেল।রোদেলার কেবিনে শান্ত আর নিহা আছে।
তাহসিন ডক্টরের রুমের সামনে যেয়ে নক করলে ডক্টর শিরিন ভেতরে আসার অনুমতি দেন।তাহসিনের পড়নে খাঁকি রঙা ইউনিফর্ম।পায়ে বুট।সে সোজা ক্যাম্প থেকেই এসেছে।ইউনিফর্মের নেইম-প্লেটে “মেজর তাহসিন মাহমুদ” নামটি ডক্টর শিরিনের চোখ এড়ালো না।তাহসিনের পোশাকই তাহসিনের মর্যাদা বাড়িয়ে দিল।এসব হসপিটালে রোগী কিংবা তাদের বাড়ির লোকেদের সাথে আহামরি ভালো ব্যবহার করা হয় না। যেহেতু প্রাইভেট হসপিটাল নয়। কিন্তু তাহসিনের পড়নের পোশাক দেখে ডক্টর আর নার্স যেন একটু বেশিই কদর করতে লাগলেন।তাহসিন রুমে গেলে ডক্টর শিরিন খুবই অমায়িক ব্যবহার করেন।নরম কন্ঠে বললেন,
-“স্যার বসুন।”
তাহসিন চেয়ারে বসতে বসতে বলল,
-“স্যার বলতে হবে না।আমি এখানে পেশেন্টের গার্ডিয়ান হিসেবেই এসেছি।তাই ব্যস্ত হবেন না।আর পাঁচটা সাধারণ জনগণের মতোই ট্রিট করুন।”
থেমে,
-“ডক্টর,আমার ওয়াইফের কি হয়েছে?বড় কোনো প্রোবলেম?”
তাহসিনের চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে তাহসিন খুবই চিন্তিত। ডক্টর শিরিন তাহসিনের দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললেন,
-“ঘাবড়াবেন না মিস্টার তাহসিন।চিন্তার কিছু নেই।বরং গুড নিউজ আছে।”
-“গুড নিউজ?”
-“হ্যাঁ।আপনার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট।কংগ্রাচুলেশনস মিস্টার তাহসিন।”
কথাটি শুনা মাত্র তাহসিন যেন কোনোরকম প্রতিক্রিয়া দেখাতে ভুলে গেল।সে ঠিক শুনছে তো?তাহসিন চুপ করে বসে রইল।ডক্টরের সামনে নিশ্চয়ই তার অনুভূতি প্রকাশ করা লজ্জাজনক ব্যাপার হবে।তার ব্যক্তিত্বের সাথে এটা একদম মানানসই নয়।ডক্টর শিরিন বললেন,
-“দেখুন মিস্টার তাহসিন মা হওয়ার সঠিক বয়স হচ্ছে মিনিমাম বিশ বছর।কিন্তু সে তুলনায় আপনার ওয়াইফ অনেকটাই ছোট।তাই বলবো উনার খুব খেয়াল রাখবেন,যত্ন নিবেন।আর হ্যাঁ উনার শরীর কিন্তু দুর্বল আছে।দুর্বলতা থেকেই সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিল।উনার খাবার-দাবারে নজর রাখবেন।খুব সাবধানে রাখবেন।আশা করি আপনি আপনার দায়িত্ব ঠিক ঠাক ভাবে পালন করবেন।”
ডক্টর আরও কিছু পরামর্শ দিলেন।এমনকি এই সময়ে কি কি ব্যায়াম করতে হবে,কি কি খাবার খেতে হবে।কোনটা অনুচিত হবে সবটার একটা লিফলেট তাহসিনের হাতে ধরিয়ে দিল।তাহসিন ডক্টরের দেওয়া লিফলেটটা হাতে নিয়ে ডক্টরের কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো।তাহসিন একদিকে যেমন খুশি হলো অন্যদিকে তার চিন্তাও হচ্ছে।ওর নিজের কি আর একটু সতর্ক থাকা উচিত ছিল না?পরক্ষণেই ভাবলো ডক্টর তো বলেছেই রোদেলার পযার্প্ত খেয়াল রাখলেই সব ঠিক থাকবে।তাহসিন রাখবে,রোদেলার বেশ খেয়াল রাখবে।তাহসিন হাজারটা ভাবনা ভাবতে ভাবতে রোদেলার কেবিনের সামনে এলো।তাহসিনকে কেবিনের সামনে দেখতেই নিহা আর শান্ত কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো।তাহসিনকে দেখে শান্ত সালাম দিয়ে শুধালো,
-“কেমন আছেন ভাইজান?”
-“ভালো আছি।তুমি ভালো তো?”
-“আমি তো বিন্দাস আছি।”
-“থ্যাংক ইয়্যু তোমাদের দুইজনকে।তোমরা সঠিক সময়ে মায়মূনকে হসপিটালে নিয়ে এসেছো।তার জন্য তোমাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।”
নিহা বলল,
-“আরে না ভাইয়া কি যে বলেন না আপনি?রোদ তো আমার ফ্রেন্ড।ফ্রেন্ডের জন্য তো ফ্রেন্ডই এগিয়ে আসবে তাই না?”
তাহসিন নিহার দিকে তাকিয়ে বলল,
-“তুমি নিহা?”
-“জ্বি ভাইয়া।”
-“মায়মূনের কাছে তোমার গল্প অনেক শুনেছি।”
-“আমিও ভাইয়া।তো ভাইয়া ডক্টর কি বলল?”
তাহসিন মাথা চুলকাচ্ছে।কি বলবে সে এখন?বলবে রোদেলা প্রেগন্যান্ট?কিন্তু তারও যে লজ্জা করছে।আচ্ছা সে লজ্জা কেন পাচ্ছে?এটা কি লজ্জা পাওয়ার মতো কোনো কথা?তাহসিন বলল,
-“সেটা মায়মূন তোমাকে বলবে পরে।”
শান্ত বলল,
-“ভাবীকে আজকেই রিলিজ দিবে না?”
-“হ্যাঁ ডক্টর বলেছে বাসায় নিয়ে যেতে।”
তাহসিন পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে শান্তর হাতে দিতে দিতে বলল,
-“তোমরা দুইজন কিছু খেয়ে নিও।”
শান্ত বলল,
-“ছিহ ভাইজান এটা কি করছেন?ভাবীকে হসপিটালে নিয়ে এসেছি বলে এই কাজটা করছেন?”
নিহা বলল,
-“ভাইয়া এটা কিন্তু মোটেও ঠিক হচ্ছে না।”
তাহসিন দুইদিকে মাথা নেড়ে বলল,
-“আরে না না তার জন্য নয়।এটা তোমাদের ট্রিট।”
শান্ত শুধালো,
-“কিসের ট্রিট?”
-“সেটা মায়মূন বলবে পরে।”
নিহার মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল।নিহা মুচকি হেসে বলল,
-“ভাইয়া।”
তাহসিন শুধালো,
-“হ্যাঁ?”
নিহা আস্তে করে বলল,
-“আমি কি খালামনি হতে চলেছি?এই ট্রিট কি তার জন্যই?”
তাহসিন কিছু বলল না।চুপ করে শুধু ঠোঁটে সুক্ষ্ম হাসি খেলে গেল।যেটা দেখে নিহা আর শান্ত দুইজনেই বুঝে ফেলল।দুইজনের খুশিমনে তাহসিনকে অভিনন্দন জানিয়ে তাহসিন থেকে বিদায় নিল।
★
নিহা হসপিটাল থেকে বেরিয়ে বলল,
-“দেখলেন তো আমার বান্ধুবী বিয়ে করে মা-ও হয়ে যাচ্ছে। আমি তো এতদিন এক ধাপ পিছিয়ে পড়েছিলাম।এখন তো দুই ধাপই পিছিয়ে গেলাম শান্ত।”
শান্ত ভাবলেশহীনভাবে বলল,
-“এত আফসোস হলে নিজেই বিয়ে করে নাও না।”
-“আমি তো বিয়ে করতে চাই।কিন্তুউউ যাকে বিয়ে করতে চাই সে-ই তো এখনো আমাকে ভালোবাসছে না।তার জন্যই তো জীবন যুদ্ধে দুই ধাপ পিছিয়ে গেলাম।”
শেষ কথাটুকু নিহা বিরবির করে বলল।তাই শান্ত শুনতে পায় নি।নিহা বলল,
-“যাই হোক আমার কথা বাদ।আপনি বিয়ে করছেন না কেন শান্ত ভাই?ওহ সরি শান্ত।”
-“সময় হলেই করবো।সে নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।”
নিহা হু হা করে হেসে ফেলল।শান্ত ভ্রু গুটিয়ে বলল,
-“এ্যাই দাঁত ক্যালানো বন্ধ করো।এখানে এমন কোনো কথাই হয় নি যার কারণে এভাবে দাঁত ক্যালাতে হবে।”
নিহা হাসতে হাসতেই বলল,
-“আপনার কথা শুনে তো হাসি পাচ্ছে না।হাসি তো পাচ্ছে অন্য একটা কথা মনে করে।”
-“কি কথা?”
নিহা হাসি চেপেচুপে বন্ধ করে বলল,
-“মনে আছে শান্ত ভাই আপনি রোদকে প্রপোজাল দিয়েছিলেন?বিবাহিত মেয়েকে প্রপোজাল দিয়েছেন।এখন সে-ই মা হয়ে আপনাকে মামা হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। ওহ সরি আপনি তো ভাবী বলে ডাকেন তাহলে চাচা হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।শান্ত ভাই আপনি তো পিছিয়ে পড়লেন। জলদি জলদি বিয়ে করেন নয়তো এই মুখ আর কাউকে দেখাতে পারবেন না।লজ্জা লজ্জা।”
থেমে,
-“আরে পাত্রী নিয়ে একদম টেনশন করবেন না।আশেপাশে ভালো করে তাকালেই আমার মতো অনেক সুন্দরী খুঁজে পাবেন শান্ত ভাইই।”
শান্ত নিহাকে তাড়া করে বলল,
-“তবে রে?”
শান্তর তাড়া খেয়ে নিহা হাসতে হাসতেই ছুট লাগালো।আর নিহার পিছনে ছুটলো শান্ত।
★
তাহসিন ওদের সাথে বাহিরে কথা বলার সুবাদে রুমের ভেতরে থাকা রোদেলার কানে ওদের কথাগুলো পৌঁছায় নি। তাই রোদেলা এখনও কিছু জানে না।শান্ত আর নিহাকে বিদায় দিয়ে তাহসিন রোদেলার কেবিনের ভেতরে পা রাখে। রোদেলা বেডে শুয়ে আছে।কারো পদধ্বনিতে রোদেলা কপাল থেকে হাত সরিয়ে পাশে তাকালো।তাহসিনকে দেখে উঠে বসতে চাইলে তাহসিন রোদেলাকে উঠে বসতে সাহায্য করলো।রোদেলা বলল,
-“আপনি কখন এসেছেন?”
-“আরো কিছুক্ষণ আগে।ডক্টরের সাথে এতক্ষণ কথা বলছিলাম।”
-“ও।”
-“মায়মূন।”
-“হু।”
-“আমি তো দিনের বেলায় বাসায় থাকি না।তো ওই সময়টাতে কি তুমি নিজের খেয়াল রাখো না?ঠিক মতো কি খাওয়া-দাওয়া করো না?”
রোদেলা মাথা নিচু করে বলল,
-“করি তো।”
-“একদম মিথ্যে বলবে না মায়মূন।আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলো।”
রোদেলা মেঝেতেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখে বলল,
-“আসলে বাসায় একা একা থাকি তো।তাই খাওয়া-দাওয়ার দিকে নজর থাকে না।ইচ্ছে হলে দুপুরে খাই নয়তো না।”
-“মায়মূন তুমি কি জানো এখন আর এমনটা করলে চলবে না?সময়মতো খাবার খেতে হবে।কারণ তোমার সাথে সাথে যে তোমার গর্বে আর একটি প্রাণও বেড়ে উঠছে।তার দিকে তো নজর দিতে হবে তাই না?”
তাহসিনের কথা কর্ণগোচর হতেই রোদেলা তাহসিনের দিকে চোখে তুলে তাকালো।বলল,
-“মানে?”
-“মায়মূন,ইয়্যু আর প্রেগন্যান্ট।”
রোদেলা অবাক হলো।তাহসিন বলল,
-“তুমি কি কিছুই বুঝে উঠতে পারো নি?”
রোদেলা ডানে-বামে মাথা নাড়লো।তাহসিন ফোস করে শ্বাস ছাড়লো।বলল,
-“বাচ্চা বউ বলে কথা।না বুঝারই কথা।”
তাহসিন চেয়ার ছেড়ে উঠে রোদেলার বেডে যেয়ে বসলো। এরপর দুই হাতের আজলে রোদেলা আনন টেনে এনে কপালে গাঢ় চুমু খেল।এরপর বলল,
-“আমি প্রকাশ করতে পারছি না আমার যে কেমন অনুভূতি হচ্ছে মায়মূন।একদিকে চিন্তাও হচ্ছে তোমার পরিপূর্ণ বয়স হয় নি বলে।অন্যদিকে বাবা হওয়ার যে আনন্দটা হচ্ছে তা আমি প্রকাশ করতে পারছি না মায়মূন।”
থেমে বলল,
-“আমার বুকে একটু মাথাটা রাখবে মায়মূন?”
রোদেলা একটুখানি সামনে এগিয়ে বসে তাহসিনের বুকে আলতোভাবে মাথাটা রাখলো।তাহসিন দুইহাত দিয়ে রোদেলাকে তার বক্ষে জড়িয়ে নিল।দুইজন কিছুক্ষণ এভাবেই থাকলো।নাক টানার শব্দ পেয়ে তাহসিনের ভ্রু গুটিয়ে এলো।যখন বুঝতে পারলো রোদেলা কান্না করছে তখন ব্যতিব্যস্ত হয়ে রোদেলাকে বুক থেকে সরিয়ে সোজা করে বসালো।রোদেলার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল,
-“এ কী মায়মূন কি হয়েছে তোমার?কাঁদছো কেন?”
রোদেলা কান্না ভেজা কন্ঠে বলল,
-“আমার মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে।আমার মায়ের গর্ভে যখন আমি ছিলাম আমার মা যখন তা জানতে পেরেছে তখন নিশ্চয়ই এতটাই খুশি হয়েছিল তাই না মাহমুদ সাহেব?আমার মায়ের সেই ছোট্ট রোদও আজ মা হতে চলেছে।তার গর্ভেও ছোট্ট একটা প্রাণ বেড়ে উঠছে।”
তাহসিন বলল,
-“কান্না করো না মায়মূন।”
রোদেলা তাহসিনের বুকে পুনরায় মাথা রেখে বলল,
-“মা হওয়ার অনুভূতি এতটা সুন্দর কেন মাহমুদ সাহেব?”
-“জানা নেই মায়মূন।বাবা হওয়ার অনুভূতিটাও অন্যরকম সুন্দর।যেটা আমি আজ উপলব্ধি করতে সক্ষম হলাম। পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র,সবচেয়ে অনন্য অনুভূতির একটি হচ্ছে বাবা-মা হওয়া।ইট’স এ্যা ফিলিং দ্যাট ওয়ার্ডস ক্যান হার্ডলি এক্সপ্লেইন।”
#চলবে
[বি.দ্র:-কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।