#নীল_বসন্ত
#লেখনীতে_মিথিলা_মিতু
#পর্বসংখ্যা_২২
তখন হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরে রোদেলাকে গোসল করিয়ে দুপুরের খাবার খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে তাহসিন ক্যাম্পে গেল।ক্যাম্পে গিয়ে কিছুক্ষণ পর পরই ফোনে রোদেলার খোঁজ নিয়েছে।রাতে বাসায় ফিরে তাহসিন ভাবলো তার বাবা-মাকে খবরটা জানানো উচিত।কিন্তু কি করে জানাবে সেটাই ভাবছে।তার যে লজ্জা লাগছে।এইদিকে রোদেলাকেও জানাতে বললে রোদেলাও জানালো তারও লজ্জা লাগছে।তাহসিন কি করবে না করবে ভাবতে ভাবতে তার মাকে ফোন করলো।মা-বাবা দুইজনের সাথেই কুশলাদি বিনিময় করলো। এরপর আমতা আমতা করতে থাকলে নাজমা বেগম শুধালেন,
-“কি রে কিছু বলবি?”
তাহসিন বলল,
-“না মানে…মানে।”
-“কি তখন থেকে মানে মানে করছিস?”
-“আসলে মা হয়েছে কি।”
-“আসলে নকলে কি করছিস?”
তাহসিন চট করে রোদেলার দিকে তাকালো।তারপর বলল,
-“তোমার বউমা তোমাকে নাকি কি বলবে।এই নাও মায়মূন মায়ের সাথে কথা বলো।”
শেষ কথাটি রোদেলার উদ্দেশ্যে বলেছে।রোদেলা ঠোঁট জোড়া ফাঁকা করে অবাকচিত্তে তাহসিনের দিকে তাকিয়ে রইল।লোকটা কতটা ধড়িবাজ?নিজে বলতে পারলো না, রোদেলাকে ফাঁসিয়ে দিল।তাহসিন রোদেলার হাতে ফোন দিয়ে বলল,
-“নাও কথা বলো।আমি পাশের রুমে আছি।শাশুড়ী-বউমার কথার মাঝে থেকে আমি কি করবো তাই না?”
কথাটি বলেই চোখ টিপলো।এরপর পকেটে হাত গুজে শিস বাজাতে বাজাতে পাশের রুমে চলে গেল।এদিকে নাজমা বেগম রোদেলাকে শুধালেন,
-“তোরা কি লুকোচ্ছিস বলবি আমাকে?”
-“আসলে মা।”
-“তুইও আবার আসলে-নকলে শুরু করেছিস?”
রোদেলা লম্বা একটা শ্বাস ছেড়ে লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বলল,
-“মা তুমি দাদি হতে চলেছে।”
-“কি বললি মা সত্যি বলছিস?”
রোদেলা উপর-নীচ মাথা নেড়ে বুঝালো সত্যিই।নাজমা বেগম খুবই খুশি হলেন।পাশে থাকা তাজউদ্দিন মাহমুদকেও খুশির খবরটা জানালেন।উনিও খুব খুশি হয়েছেন।রোদেলা সেন্সলেস হয়ে পড়েছিল।এরপর হসপিটালে নেওয়া হয়েছিল সবটাই নাজমা বেগমকে জানালেন।নাজমা বেগম অনেক পরামর্শ দিলেন।বিশেষ করে খাবারের দিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন।অনেকক্ষণ নাজমা বেগমের সাথে রোদেলার কথা হলো।কথা শেষে রোদেলা পাশের রুমে গেল।গিয়ে দেখলো তাহসিন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে।রোদেলা তাহসিনের পাশে যেয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
-“আমাকে ওদিকে ফাঁসিয়ে দিয়ে এখানে এসে চাঁদ দেখা হচ্ছে হ্যাঁ?বদ লোক একটা।”
তাহসিন পিছু ঘুরে হু হা করে হেসে ফেলল।বলল,
-“কি করার ছিল বলো?তুমি ছাড়া ওই রুমে আর কেউ ছিল যে তাকে ফাঁসাবো?আমার লজ্জা করছিল।তাই তোমাকে দিয়ে এলাম।”
-“আমার বুঝি লজ্জা করে না?আচ্ছা একটা কথা।আমার লজ্জা নিয়ে তো খুব কথা শুনাতেন।এখন সে লজ্জাটা আপনার কাছে চলে এসেছে কি করে?লজ্জা না নারীর ভূষণ?তাহলে আপনি লজ্জা পান কেন?”
তাহসিন হা হুতাশ করে বলল,
-“তুমি আমার হওয়ার সাথে সাথে তোমার সবকিছু আমার হয়ে গিয়েছে না?তাহলে লজ্জাটা কেন একার তোমার থাকবে?লজ্জাতেও আমার ভাগ আছে।”
-“তাহলে আমাকে লজ্জা দেওয়ার বেলায় আপনার লজ্জা কোথায় পালায়?”
তাহসিন রোদেলার হাত টেনে এনে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল,
-“শুধুমাত্র তোমার কাছে এলেই আমি নিলজ্জ হয়ে যাই।তা না হলে পুরো দুনিয়ার কাছে ভদ্র-সভ্য,লজ্জা পাওয়া পুরুষ আমি।আর দুনিয়ার সকল পুরুষই বউয়ের কাছে এসেই নিলজ্জ,অসভ্য,অভদ্র হয়ে যায়।তাহলে আমি বাদ যাবো কেন বলো?”
-“ধড়িবাজ লোক একটা।”
তাহসিন শব্দ করে হাসলো।এরপর রোদেলাকে কোলে তুলে নিয়ে নিজেদের রুমে নিয়ে গেল।রুমে নিয়ে রোদেলাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে লাইট অফ করে বিছানায় এলো। এরপর রোদেলার মাথা তাহসিনের কোলের উপর রেখে মাথা আর কপাল ম্যাসাজ করে দিতে দিতে বলল,
-“নাও মায়মূন।এবার আরামে ঘুমোও।আর কোনো কথা না।”
-“আপনার আর কষ্ট করা লাগবে না।আমি এমনিই ঘুমোবো।মাথা ম্যাসাজ না করে পাশে এসে ঘুমোন।”
-“কোনো কথা না মায়মূন।তোমাকে যা বলেছি করো।চুপটি করে ঘুমোও।”
রোদেলা আর কথা বলল না।ঘুমানোর চেষ্টা করলো। রোদেলার ভারী নিঃশ্বাস পড়তেই তাহসিন বুঝতে পারলো রোদেলা ঘুমিয়ে গিয়েছে।তখন তাহসিনও রোদেলার পাশে রোদেলাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।
★
সময়টা এখন বিকেল।শান্ত আর নিহা কোনো এক লেকের ধারে বসে আছে।নিহার আজ কোনো এক অজানা কারণে মন খারাপ লাগছিল।এটা প্রায়ই হয়ে থাকে।হুট হাট কোনো কারণবিহীন মন খারাপ।নিহা ওতটা পাত্তা দেয় নি।তবে শান্তর সাথে যখন কথা হয়েছে আর শান্ত জানতে পারলো তখন শান্ত নিহাকে এই লেকের কাছে আসতে বলল।নিহা তো খুশিতে বাক-বাকুম করে উঠলো।সমস্ত মন খারাপ যেন এক লহমাতেই শেষ।কিছুক্ষণ হয়েছে এই লেকের ধারে তারা এসেছে।এসে থেকেই দুইজনই চুপচাপ।শান্ত নিহাকে বাদাম কিনে দিয়েছে।নিহা চুপচাপ বসে বাদাম চিবাচ্ছে। আরও কিছুক্ষণ এভাবেই চলতে থাকলো।হঠাৎ শান্ত বলে উঠল,
-“জানো নিহা আজ না আমার মায়ের কথা বড্ড মনে পড়ছে।”
নিহা বাদাম মুখে দেওয়া ধরেছিল।শান্তর কথা শুনে তার হাত থেমে গেল।এতদিনের পরিচয়ে শান্ত কখনোই তার ফ্যামিলি বিষয়ক কিছু বলে নি।নিহাও জিজ্ঞেস করে নি। আজ যেহেতু শান্ত নিজ থেকে ফ্যামিলির কথা উঠালো তাহলে শুনাই যাক।নিহা শুধালো,
-“কেন শান্ত?তোমার মা কোথায় গিয়েছেন?”
-“যেখানে গেলে আর ফিরে আসা যায় না সেখানে। পরপারে।”
নিহা করুণ চোখে তাকালো।বলল,
-“তোমার মা নেই?”
-“না নিহা।মা বলে ডাকলে সারা দেওয়ার কেউ নেই।আমার ছোট্ট বেলাতেই মা মা*রা যান।তখন আমার সাত কি আট বছর ছিল।ওতটাও বড় নই।তবে মায়ের কথা স্পষ্ট মনে আছে আমার।”
থেমে বলল,
-“এই যে তোমরা সবাই দেখো আমি বখাটে,খারাপ,বাজে। কিন্তু এই খারাপ হওয়ার পিছনে কি কারণ ছিল জানো তো? আমার যে মা নেই।আমাকে শাসন করারও কেউ নেই। সন্তান ভুল পথে গেলে মায়েরা যেমন শাসন করে সঠিক পথটা দেখিয়ে দেন আমার তো মা ছিল না।এইজন্যই তো সঠিক-ভুল ধরিয়ে দেওয়ারও কেউ ছিল না।মা মা*রা যাওয়ার পর বাবাও কেমন একা একা দিন কাটাতে লাগলেন।আসলে মা আর বাবার সম্পর্কের বিয়ে ছিল।মা মা*রা যাওয়ার পর বাবা অনেকটা ভেঙে পড়লেন।তার যে একটা ছেলে আছে সেটা সে বেমালুম ভুলে গেলেন।আমার বাবা থেকেও ছিল না থাকার মতো।বাবা এক বন্দি জীবন যেন কাটাতে লাগলেন।আমি চাচী,দাদীর কাছে বড় হতে লাগলাম।মা ম*রা ছেলে বলে সবাই খুব আহ্লাদ করতো, আদর করতো।এতটাই আদর করতো যে যখন যা চাইতাম তখন তা-ই আমার সামনে এনে হাজির করতো।আমার কোনো ভুলও তারা দেখতো না।বিকেলে খেলতে গিয়ে মা*রা মা*রি করে আসতাম।কারো নাক ফাটিয়ে দিতাম।বিচার আসতো বাড়িতে।অথচ যারা বিচার নিয়ে আসতো তারাই অপমানিত হয়ে ফিরে যেত।আমি যা করেছি বেশ করেছি এটাই সবাই বলতো।অথচ মা*রামারি করা ভালো না সেটা কেউ বলতো না।সবসময় আমাকে মাথায় তুলে রাখতো। আর অন্যদিকে বাবা কাজ নিয়ে যতটা ব্যস্ত থাকা যায় থাকতেন।বাসায় থাকলে মায়ের কথা মনে পড়বে বিধায় বেশিরভাগ সময় বাহিরে কাটাতেন।আমার কোনো খোঁজ নিতেন না।আমি খেয়েছি কিনা,ঠিকমতো পড়াশোনা করছি কিনা কোনো খবরই নিতেন না।দাদী,চাচা,চাচীর অত্যাধিক আদরে আমি অমানুষ হয়ে গড়ে উঠছিলাম।আমার কাছে মনে হতো আমিই ঠিক আর দুনিয়ার বাকি সবাই ভুল।আমি যা করবো সেটাই সঠিক।”
শান্ত থামলো।পাশ থেকে পানির বোতল নিয়ে পানি খেল। অতঃপর আবার বলা শুরু করলো,
-“তখন আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী।পরীক্ষা শেষ করে আসার সময় এক রিকশা ওয়ালার সাথে ঝামেলা করে তাকে মা*রলাম।এতটাই মা*রলাম যে তাকে হসপিটালে ভর্তি হতে হয়েছিল।বাজারের লোকেরা বিচার নিয়ে বাসায় এলে আমার দাদী আফসোস করে বললেন,
-“মা ম*রা ছেলেটাকে আর কি বলতে পারি?আহারে।”
রিকশা ওয়ালার হসপিটালের যাবতীয় খরচা দাদী দিয়ে দিলেন।অথচ একটা বার আমাকে বললেন না ‘তুই যা করেছিস অন্যায় করেছিস।এসব করিস না।ভালো মানুষ হো।’ এসব না বলে উনি আমাকে বললেন ‘ছেলে মানুষরা রাস্তাঘাটে এমন করেই থাকে।এদের রাগ বেশি।এগুলা নিয়ে ভাবিস না।আমরা আছি না?আমরা থাকতে তোকে কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না।’ আমিও সাহস পেয়ে গেলাম।সে সাহস থেকেই এইরকম অগনিত কত ঘটনা ঘটালাম।তুমি আবার ভেবো মেয়ে সংক্রান্ত কোনো ঘটনা।সবই ছিল মা*রামারি জায়-ঝামেলা এসব।আমাকে কলেজ হতে সব জায়গার সবাই ভয় পেতে থাকলো।আমার মনে হতো আমি যেখানে যাবো সেটা আমার রাজত্ব,আমি সেখানকার রাজা আর বাকি সব আমার প্রজা।সবাই এক নামে চিনতে থাকলো “শান্ত ভাই” বলে।সবাই দেখতে পেল শান্ত ভাই নিষ্ঠুর,হৃদয়হীনা।যাকে না তাকেই মা*রে।কিন্তু এই শান্তও যে মাকে মিস করে কত রাত নির্ঘুমা কাটিয়েছে সেটা কেউ জানে না।মায়ের শাসন না পেয়ে এই শান্ত এমন উচ্ছে গিয়েছিল।সেটার খবরও কেউ জানে না।জানো তো নিহা তুমি আসার আগে কেউ আমাকে বলে নি সবকিছু জোর করে খাটিয়ে পাওয়া যায় না,সম্মান জোর করে পাওয়া যায় না।এর আগে কেউ এমন করে বলে নি নিহা।তুমি যখন বললে এক সপ্তাহ অন্তত কারো সাথে ঝামেলা করতে না। বয়স্কদের মান্য করে চলতে।ছোটদের সাথে স্নেহমাখা ব্যবহার করতে তখনও আমার বিশ্বাসই হয় নি যে এমন ভালো ব্যবহার করে সম্মান আদায় করা যায়।কিন্তু পরেরদিন থেকে যখন তোমার কথামতোই বড়দের সাথে ভালো ব্যবহার করতে লাগলাম।সকলে অবাকই হলো।কেউ কেউ মাথা হাত বুলিয়ে দোয়াও করে দিল।সেদিন যে আমার কি যে শান্তি লেগেছে বিশ্বাস করবে না।সেদিন আমি বুঝতে পারলাম জোর করে সব জয় করা যায় না।ভালোবাসা আর সম্মান দিয়েই সব জয় করা যায়।”
নিহা বিরবির করে বলল,
-“হুম এইজন্যই তো আপনাকে ভালোবাসা দিয়েই জয়ী হতে চাইছি কিন্তু পারছি না শান্ত ভাইই।”
শান্ত নিহার দিকে তাকালো।বলল,
-“কিছু বললে?”
-“না কি বলবো?”
-“হু।”
-“আচ্ছা শান্ত ভাই আপনার মা মা*রা যান কিভাবে?”
-“এ*ক্সিডেন্টে।কার এ*ক্সিডেন্ট।বাবা,আমি আর মা গাড়িতে করে বেরিয়েছিলাম।হঠাৎ মালবাহী ট্রাক সামনে আসায় বাবা টাল সামলাতে না পেরে রাস্তার ধারের গাছের সাথে যেয়ে গাড়ি ধাক্কা লাগে।ঘটনাস্থলেই মা মা*রা যায়।আমি আর বাবা হসপিটালে চিকিৎসাধীন ছিলাম মাস খানেক। এইজন্যই তো বাবা নিজেকে অপরাধী মনে করেন।ভাবেন উনার জন্যই মাকে হারিয়েছেন।মাকে অনেক ভালোবাসতেন কিনা তাই এভাবে মৃ*ত্যুটা মেনে নিতে পারেন নি।”
কথাগুলো শুনে নিহার খুবই খারাপ লাগলো।নিহা যেটা ভেবেছিল সেটাই হলো।প্রত্যেক মানুষের খারাপ হওয়ার পিছনে কোনো না কোনো কারণ থাকে।অযথা কেউ খারাপ পথে যায় না।কেউ অসৎ বন্ধুদের সাথে মিশে ভুল পথে যায়। কেউ বাপ-চাচার নাম-ডাকের তোপে খারাপ হয়,কেউ বা পরিবারের সাথে জেদ করে,আবার কেউ পরিবার কিংবা ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে খারাপ পথ বেছে নেয়। কেউ কেউ আছে যারা শাসনের অভাবে কিংবা অতিরিক্ত আদরে বখে যায়।শান্তর ক্ষেত্রেও তাই হলো।সে শাসনের অভাবেই এমনটা হলো।তা মা মা*রা যাওয়ার পর যাদের কাছে মানুষ হয়েছে তারা যদি একটিবার শান্তকে ন্যায়-অন্যায় শেখাতো।মা ম*রা ছেলে বলে মাথায় না তুলে সঠিক পথটা দেখাতো,যদি তার বাবা তার মাকে হারানোর বিয়োগব্যথায় নিজেকে একা করে না দিয়ে ছেলেটাকে বুকের মাঝে আগলাতো তাহলে নিশ্চয়ই শান্ত আজ বাজে পথের ধারও ধারতে পারতো না।একজন সুপুরুষ হিসেবেই গড়ে উঠতো।পরিবারের অতিরিক্ত আদর আর শাসনবিহীনে সন্তানরা ভুল পথেই যায় সেটার বড় প্রমাণ শান্তর মতো এমন অসংখ্য ছেলে।
#চলবে
[বি.দ্র:-কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]
#নীল_বসন্ত
#লেখনীতে_মিথিলা_মিতু
#পর্বসংখ্যা_২৩
মাঝে দিয়ে কে*টে গেল অনেকগুলো দিন।রোদেলার প্রেগ্ন্যাসির সময়সীমা তিন মাস চলছে।এই গত হওয়া তিনটে মাসে তাহসিন রোদেলার বেশ খেয়াল রাখছে।সকালে ক্যাম্পে যাওয়ার পূর্বে রোদেলাকে নাশতা খাইয়ে যাবে। এরপর দুপুরে খেয়েছে কিনা ফোন দিয়ে জানবে।সন্ধ্যায়ও খোঁজ নিবে।রাতে এসে নিজ হাতে খাইয়ে দিবে।এখন প্রায়ই রোদেলার সাথে সেও নির্ঘুম রাত কাটায়।অনেক সময় রাতে ঘুমানোর সময় রোদেলার বড্ড অস্বস্তি লাগে।ঘুম আসতে চায় না।তখন তাহসিন রোদেলার মাথা ম্যাসাজ করে দেয়। হাত-পায়ের তালুতে তেল ম্যাসাজ করে দেয়।যাতে রোদেলার ঘুম আসে।এই যে রোদেলা হুটহাট মুড সুইং এ ভোগে সেটাও খুব দক্ষতার সাথে সে সামাল দেয়।এই সময়ে হুটহাট মেজাজ খারাপ হবে,কারণ ছাড়াই জেদ লাগবে সেসব তাহসিন জানে।তাই তো সে সময়ে খুব দক্ষ হাতে তার মায়মূনকে সামাল দেয়।রোদেলার সমস্ত আবদার সে রাখার চেষ্টা করে এমনকি রাখেও।এই যেমন আজ রাতে রোদেলা হঠাৎ আবদার করে বসল সে এই রাতের শহর ঘুরে দেখবে। তার চটপটি খাওয়ার ক্রেভিংস হচ্ছে চটপটি খেতে যাবে। কিন্তু তাহসিন ভাবলো এত রাতে বাহিরে তো চটপটি পাওয়া যাবে না।তাই তো সে ঘরেই চটপটি বানিয়ে রোদেলার সামনে হাজির করলো।কিন্তু রোদেলা খুশি হলো না।কারণ তার এই চার দেয়ালের ঘরে দমবন্ধ লাগছে।তাহসিন বলেছে ক্যান্টনমেন্টে ঘুরবে।কিন্তু রোদেলা চাইছে ক্যান্টনমেন্টের বাহিরে যেয়ে ঘুরবে।আর অনেক জেদও ধরলো।এত রাতে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরুতেও তো অনুমতি লাগবে।কিন্তু এখন অনুমতি তো পাবেই না।কিন্তু এইদিকে রোদেলাকেও সামলানো যাচ্ছে না।অতঃপর ভাবলো বেশিক্ষণের জন্য তো যাচ্ছে না।সর্বোচ্চ এক ঘন্টার জন্যই যাবে।তাই এই রিস্কটা নেওয়াই যায়।তাহসিন রোদেলাকে বলল চটপটি খেয়ে নিতে তারপরই যাবে।রোদেলা খু্শি মনে খেল।খাওয়া শেষে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বলল,
-“দারুণ বানিয়েছেন।বাহিরের থেকেও বেশি মজা হয়েছে। এখন থেকে যখন ইচ্ছে করবে খেতে তখনই বানিয়ে দিবেন ঠিক আছে?”
তাহসিন বলল,
-“ঠিক আছে।তুমি শুধু আমাকে বলবে তাহলেই হবে।”
-“এবার চলুন তাহলে।”
-“যেতেই হবে?”
রোদেলা উপর-নীচ মাথা নাড়িয়ে বলল,
-“হ্যাঁ।আমার এখানে দম বন্ধ লাগছে।”
রোদেলা জানে ক্যান্টনমেন্টের রাতগুলো বেশ নিলিপ্ত, হিসেবি হয়।কিন্তু সেই নির্ধারিত গন্ডি ভেঙেই সে আজ এই আবদার জুড়ে দিল।তাহসিনের আর কি করার থাকে? রোদেলা এমনভাবে আবদার করছে না নিয়েও পারা যাবে না।বউয়ের আবদার মেটাতে দায়িত্বশীল মেজরের অফিসিয়ালি একটা নিয়মভঙ্গ করতেই হবে।আজ না হয় সে একজন দায়িত্বশীল স্বামীই হোক।নিজের স্ত্রীর করা আবদারটুকু মেটাক।কি হবে মাঝে মাঝে নির্ধারিত গন্ডির বাহিরে বের হলে?তাহসিন জানে একজন মেজরের কতটা নিয়মানুবর্তি হতে হয়।কিন্তু এই মুহূর্তে সে মেজর হিসেবে নয় একজন স্বামী হিসেবে তার স্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অতএব স্ত্রীর আবদার পূরণ করাই এখন তার দায়িত্ব।পরে যা হবে দেখা যাবে।তাহসিন আর না ভেবে বলল,
-“ঠিক আছে চলো।”
তাহসিন আলমারি থেকে তার লাইসেন্স করা ব্যক্তিগত Glock 17 পি*স্তলটা পকেটে পুড়লো।যেটা সে বাহিরে বের হলেই নিজের সাথে নিয়ে বের হয়।কারণ কখন কোন বিপদ এসে সামনে উপস্থিত হয় তা তো বলা যায় না।সেফটির জন্যই সে এটা নিজের সাথে বহন করে।
রাত প্রায় বারোটা।তাহসিন তার ডিউটি অফ ড্রাইভারকে বলে কালো রঙা গাড়িটি নিয়ে বের হয়েছে।এই গাড়িটি তাকে ব্যাক্তিগত কাজের জন্য দেওয়া হয়েছিল।মাঝে মাঝে ছদ্মবেশে যখন অপারেশনে যায় তখন এটার প্রয়োজন পড়ে।তবে সাথে তার ড্রাইভার সাকিব থাকে।সাকিব সবসময় তটস্থ থাকে তাহসিনের আদেশের।তাহসিন যখন সাকিবের থেকে গাড়ির চাবি আনতে গেল তখন সাকিব বলল,
-“স্যার আপনি একা কোথায় যাবেন?আমিও যাবো আপনার সাথে।এত রাতে বিপদ হতে পারে?”
তাহসিন হাসলো।ছেলেটা সবসময় তার সাথে থাকতে চায়। তাহসিনের বিপদে সে-ই আগে বিপদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াতে চায়।তাহসিনের সকল গুরুত্বপূর্ণ মিশন সম্পর্কে এই ছেলেটি অবগত থাকে।বলা চলে সাকিব তার বিশস্ত ড্রাইভার।তাহসিন বলল,
-“চিন্তা করো না সাকিব।তোমার ভাবীকে নিয়ে এই শহরটা ঘুরিয়ে আনি।একটু হাওয়া-বাতাস খাইয়ে মনটা প্রফুল্ল করে আনি।”
সাকিব বলল,
-“কিন্তু স্যার এত রাতে বের হওয়াটা কি ঠিক হবে?কোনো বিপদ হলে”
-“চিন্তা করো না।কিচ্ছু হবে না।আসছি।”
সাকিবের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি নিয়ে গেইটের পেরিয়ে বের হয়ে গেল।রোদেলা তো বেশ খুশি।এই প্রথমবারের মতোই সে তাহসিনের সাথে গাড়িতে করে ঘুরতে পারছে। ক্যাম্পের সীমানা পেরিয়ে তাহসিন দক্ষ হাতে চট্রগ্রামের পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে দিব্বি ড্রাইভ করে যাচ্ছে। তাহসিন ড্রাইভ করতে করতেই বলল,
-“কি ম্যাডাম এবার খুশি তো?”
-“হুম।এতদিনে যেন প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে পারছি।অনেক শান্তি লাগছে।”
তাহসিন বলল,
-“এখানে একা একা থাকতে থাকতেই এমনটা লাগে।আমার মনে হয় তোমাকে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া উচিত।”
কথাটা শুনা মাত্রই রোদেলা তাহসিনের বাহু জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখে বলল,
-“না আমি বাসায় যাবো না।আপনি আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছেন।আপনাকে না দেখলে শান্তি লাগে না।রাতে আপনার বুকে মাথা রাখা ছাড়া ঘুম আসে না।কি ভাবে থাকবো আমি আপনাকে ছাড়া?”
তাহসিন বলল,
-“আমারও যে বড্ড কষ্ট হবে তোমাকে ছাড়া থাকতে। সেজন্যই তো তোমাকে বাসায় রেখে আসতে পারছি না। যদিও এই সময়টা তোমার বাসায় থাকা উচিত।অন্তত বাসায় সারাক্ষণ মাকে পাবে।কথা বলার মানুষ পেলে।”
-“কিন্তু আপনাকে ছাড়া থাকবো কি করে?তাছাড়াও তো আমার ক্লাস আছে।আমার বোর্ড এক্সাম সামনে।আপনি কি করে এসব বলছেন হুহ?”
তাহসিন হেসে বলল,
-“ওমনি এখন ক্লাস,এক্সাম সবটার কথা মনে পড়ে গেল?না যাওয়ার বাহানা ওমনি মাথায় এসে পড়লো তাই না?”
রোদেলা মুচকি হাসলো।তাহসিনকে বলল,
-“আচ্ছা শুনুন।এই সাবজেক্ট এখন বাদ।আমি আপনাকে ছাড়া কোথাও যাবো না।এটাই ফাইনাল।এই বিষয়ে যেন আর একটা কথাও না শুনি মাহমুদ সাহেব।নয়তো আমি রাগ করবো হুহ।”
-“রাগ করতে হবে না।আর বলবো না।এখানেই থেকে যেও। কিন্তু আজ যে আবদার করলে সেটা আর করো না। প্রতিনিয়ত অফিশিয়াল রুলস ব্রেক করা পসিবল না।”
-“ঠিক আছে।আচ্ছা শুনুন না।”
তাহসিন রোদেলার মতো করেই বলল,
-“হুম বলুন না।”
-“আপনার কি বাবু বেশি পছন্দ?ছেলে নাকি মেয়ে?”
তাহসিন ড্রাইভ করতে করতে বলল,
-“দুটোই।”
-“আপনার ছেলে সন্তান হলে বেশি খুশি হবেন নাকি মেয়ে সন্তান?”
-“মায়মূন আমার তেমন কোনো ইচ্ছা নেই।যে-ই আসুক আমি খুশি মনে তাকে গ্রহণ করে নিব।আমি শুধু চাই যেই আসুক যেন সুস্থভাবে আসুক।আল্লাহ যা দিবেন তাতেই শুকরিয়া।”
রোদেলা মুগ্ধ হলো তাহসিনের কথা শুনে।রোদেলা বলল,
-“আচ্ছা আমাদের যদি ছেলে বাবু হয় তাহলে কি নাম রাখবেন?আর যদি মেয়ে হয় তাহলে কি নাম রাখবেন?”
-“উমম সেটা তো এখনো ভাবি নি।”
-“এখনই ভাবুন।আর এখনই বলুন প্লিজ প্লিজ।”
-“ওকে ওকে।একটু সময় দাও ভাবার।”
-“ঠিক আছে দিলাম।”
তাহসিন রোদেলার দিকে তাকিয়ে বলল,
-“তুমি কোনো নাম ভেবে রেখেছো?”
রোদেলা ডানে-বামে মাথা নাড়লো।বলল,
-“আমি চাই নাম আপনি রাখুন।তাই কোনো নামই ভাবি নি।”
তাহসিন কিছুক্ষণ ভাবলো।এরপর রোদেলার কানে ফিসফিস করে নামগুলো বলল।রোদেলা অবাক হয়ে বলল,
-“বাহ!খুব সুন্দর নাম তো।দেখলেন আপনার উপর এমনি এমনি ভরসা করি আমি হুহ?এইটুকু সময়ের মাঝেই কত সুন্দর নাম ভেবে নিলেন।”
তাহসিন হাসলো।বলল,
-“জানো মায়মূন আমার ভাবতেই অবাক লাগে আর কিছুমাস বাদেই আমাদের সন্তান আমাদের ভালোবাসার প্রতীক হয়ে পৃথিবীতে আগমন করবে।সত্যিই অবাক লাগে।”
রোদেলা বলল,
-“হুম আমারও।জানেন মাহমুদ সাহেব আমি চাই আমাদের সন্তান যেন আপনার মতোই সৎ,আদর্শবান এবং সাহসী হয়।”
তাহসিন বলল,
-“আর আমি চাইবো তাদের মায়ের মতো মিষ্টি,ভালো মনের অধিকারী হয়।”
রোদেলা বলল,
-“তাহলে তাই হবে।আমরা দুইজন মিলে তাদেরকে আমাদের মতোই গড়ে তুলবো।আর তাদের দাদা-দাদী তো আছেনই।তাদের কাছ থেকে আদর্শ শিক্ষা পেয়েই আমাদের সন্তান বেড়ে উঠুক।”
তাহসিন বলল,
-“নিশ্চয়ই।”
জানলার গ্লাস খোলা থাকায় জানালা দিয়ে শোঁ শোঁ করে বাতাস আসছে।যা তাহসিন আর রোদেলার শরীর হিম ধরিয়ে দিচ্ছে।আজ আকাশ অন্ধকারে ছেয়ে আছে।মেঘ চাঁদকে ঢেকে রেখেছে।যার জন্য চাঁদের আলো ধরণীতে পড়ছে না।এই অন্ধকার পাহাড়ি রাস্তায় তাহসিনের গাড়ির হেড লাইটের আলোতেই এগিয়ে যাচ্ছে।এক রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে অন্য পথে দিয়ে তারা ক্যান্টনমেন্টের পথ ধরলো।রোদেলা তাহসিনের কাঁধে মাথা রেখেই কতশত গল্প করে যাচ্ছে।আর তাহসিন মনোযোগী শ্রোতার ন্যায় সেসব শুনছে আর ড্রাইভ করছে।রোদেলা তো কথা বলার ধ্যানেই আছে কিন্তু তাহসিন শুধু রোদেলার কথাই শুনছে না আশেপাশের সবটাই নজরে রাখছে।যাতে হঠাৎ কোনো বিপদ এলে তা মোকাবিলা করতে পারে।এইরকম শুনশান রাস্তায় যেকোনো সময়ই বিপদ হতে পারে।এর উপর তাহসিন হচ্ছে সেনাবাহিনী।এই পদে এসে কতশত শত্রু হয়েছে তার।কখন কে আক্রমণ করে বলা তো আর যায় না।তাহসিন মনে মনে বেশ দোয়া করছে যেন রোদেলার সামনে কোনো বিপদ পড়তে না হয়।কারণ তাহসিন এসবে অভ্যস্ত হলেও রোদেলা কখনোই নিজ চোখে এসবের সাক্ষী হয় নি।এর উপর এখন ওর এই অবস্থা।রোদেলা ভয় পাবে এসবে।তাই সে চাইছে না এইরকম কিছু ঘটুক যেটাতে রোদেলা ভয় পাবে।কিন্তু কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়?তাহসিনের ভয়টাই সত্যি হয়ে গেল। তাহসিন গাড়ির মিররে খেয়াল করলো ওদের অনেকটা পিছনে দুটো বাইক ছুটে আসছে।তাহসিনের মস্তিষ্ক সর্তক করলো।কারণ এই রাস্তায় এইসময়ে বাইক আসার তো কথাই না।তাহসিন ভালো করে খেয়াল করে দেখলো বাইক দুটো দ্রুত গতিতে ওদের দিকেই ছুটে আসছে।এবার তাহসিনের সন্দেহ যেন সত্যি হয়ে গেল।তাহসিন একবার রোদেলার দিকে আড়চোখে তাকালো।রোদেলা এখনও সমানে কথা বলেই যাচ্ছে।তাহসিন জানালার কাচ তুলে দিল।অতঃপর রোদেলার উদ্দেশ্যে বলল,
-“আমাকে শক্ত করে ধরে বসে থাকো।”
রোদেলা তাহসিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“কেন?আমার তো সিট বেল্ট বাঁধাই আছে।”
-“যেটা বলেছি সেটা করো।গাড়ি এখন হাই স্পিডে চালাবো।”
-“কেন?”
তাহসিন রোদেলার প্রশ্নতে যেন মেজাজ হারাচ্ছে।ধমক দিয়ে বলল,
-“কোনো প্রশ্ন নয়।চুপ করে থাকো।আর যেটা বলেছি সেটা করো।”
রোদেলা মুখ ফুলিয়ে তাহসিনের বাহু শক্ত করে চেপে ধরলো।তাহসিন হাই স্পিড তুলে ড্রাইভ করতে থাকলো। পাহাড়ি রাস্তায় এভাবে গাড়ি চালালে যেকোনো সময় বিপদ হতে পারে।কিন্তু আপাতত কিছুই করার নেই।তাহসিন দক্ষতার সাথে হাই স্পিড তুলে শাই শাই করে গাড়ি নিয়ে ছুটলো।কিছুক্ষণের মাথাতেই পিছনে ধাওয়া করা বাইক দুটো থেকে সমানে গু*লি ছুড়তে লাগলো।কিন্তু তাহসিন আঁকাবাঁকাভাবে গাড়ি চালানোতে গু*লি তাদের গাড়িতে কিংবা লাগলো না।গু*লির বিকট শব্দ পেয়ে রোদেলা আঁতকে উঠে পিছু ফিরতে নিলে তাহসিন বলল,
-“মায়মূন পেছনে ফিরো না।মাথা নিচু করে রাখো।দ্যে অ্যার শুটিং।গেট ডাউন প্লিজ।”
রোদেলা তা-ই করলো।মাথা নিচু করে ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
-“এমনটা হচ্ছে কেন মেজর?আমার ভয় লাগছে।”
-“আমি আছি না?ভয় কিসের?কিচ্ছু হতে দিব না।মাথা তুলবে না।”
তাহসিন নিজের পকেট থেকে পি*স্তল বের করে সেও চলন্ত গাড়িতে থেকে গু*লি ছুড়তে থাকলো।এক হাতে ড্রাইভ করছে অন্য হাতে দক্ষতার সাথে গু*লি ছুড়ছে।এ যেন এক প্রকার চলন্ত যু*দ্ধ হচ্ছে।ধাওয়া পালটা ধাওয়া সমানে হচ্ছে। এক সময় গু*লি এসে তাহসিনের গাড়ির পিছনের কাচে লেগে কাচ টুকরো টুকরো হয়ে যায়।তাহসিন হুট করেই ব্রেক করে।রোদেলা এখনো নিচু হয়েই তাহসিনকে ধরে আছে।গু*লির এক একটা বিকট আওয়াজে তার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠছে।হুট করে গাড়ি থামানোতে রোদেলা তাহসিনের দিকে একপলক তাকিয়ে তাহসিনের দৃষ্টি লক্ষ্য করে মাথা হালকা উঁচু করে সামনে তাকিয়ে দেখে সামনে আরও দুটো বাইক।পিছনের বাইক দুটোও এখন ওদের গাড়ির পিছনে। মোটকথা দুইদিক থেকেই ওদেরকে ঘিরে ফেলেছে।রোদেলা ভয়ে তাহসিনের হাত শক্ত করে চেপে ধরলো।চোখ ফুড়ে অশ্রু গড়াচ্ছে।মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে লাগলো।যখন ওদের গাড়ি দুইদিক থেকেই ঘিরে ফেললো তখন তাহসিন চট করে কিছু একটা ভেবে নিল।এরপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে হাই স্পিড তুলে ডান দিকের জঙ্গলের রাস্তা ধরলো।ঘটনাটা এত তাড়াতাড়িই ঘটলো যে আক্রমণকারীরা বুঝে উঠতে পারলো না।আর যখন বুঝতে পারলো তখন ওরা চারটে বাইক তাহসিনের গাড়ির পিছনে ছুটলো।আর অনবরত গু*লি ছুড়তে লাগলো।তাহসিন এত বিপদ দেখে ওদের সেনাবাহিনীর টিমকে জানালো আর লোকেশন বলে দিল। যেভাবে ওরা গু*লি ছুড়ছে এভাবে ছুড়তে থাকলে যেকোনো সময় বিপদ ঘটতে পারে।এই অতর্কিত হামলায় তাহসিনের কপালে ঘাম জমছে।নিজেকে নিয়ে চিন্তা নেই।কিন্তু তার রোদেলাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।এসবে মেয়েটা কেমন ভয়ে গুটিয়ে গিয়েছে।তাহসিন জঙ্গলের পথ ধরেই গাড়ি নিয়ে আঁকাবাঁকা ছুটতে লাগলো।হঠাৎ সে গাড়ি থামাতে পিছনের বাইকগুলোও থেমে গেল।তাহসিন রোদেলাকে বলল,
-“শুনো বাম দিকে একটু এগুলে একটা পরিত্যক্ত বাড়ি দেখতে পাবে।সেখানে যেয়ে আশ্রয় নাও।আমি এদের সামলে আসছি।”
রোদেলা কান্না করে দিয়ে বলল,
-“আমি আপনাকে এই বিপদের মধ্যে রেখে যেতে পারবো না।”
তাহসিম ধমক দিয়ে উঠল।বলল,
-“একটা থাপ্পড় মারবো বেয়াদব।যেটা বলেছি সেটা করো। যাও।এটা আমার আদেশ।হাতে বেশি সময় নেই।কুইক।”
তাহসিন গাড়ি থামানোতে বাইকে থাকা ওরা বুঝতে পারছে না কেন এভাবে গাড়ি থামালো?তাহসিন কি করতে চাইছে সেটাই বুঝার চেষ্টা করছে?তবে কি মেজর তাদের কাছে সারেন্ডার্ড করে নিবে?তারা তাহসিনের গাড়ি বরাবর পিস্তল তাক করে রেখেছে।যেন তাহসিন গাড়ি বেরুলেই তাহসিনকে মে*রে দিতে পারে।এইদিকে তাহসিনের ধমক খেয়ে রোদেলা গাড়ি থেকে নামলো।যেহেতু রাস্তার কোল ঘেঁষে জঙ্গল বয়ে গিয়েছে এর উপর চারপাশ অন্ধকারে ছেয়ে আছে তাই গাড়ির এপাশের জানালাটা যে খোলা হয়েছে সেটা ওরা বুঝতে পারে নি।রোদেলা গাড়ি থেকে নেমেও পিছু ফিরে তাকালে তাহসিন ইশারা করলো যেতে। রোদেলা কান্না করতে করতেই পরিত্যক্ত বাড়িটির দিকে ছুট লাগালো। রোদেলা যাওয়ার পরই তাহসিন গাড়ির দরজা খুলে দুই হাত উঁচু করে বের হলো।আ*ক্রমণকারীরা খুশি হয়ে গেল। মেজর তাদের কাছে সারেন্ডার্ড করছে এর থেকে লজ্জার কিছু আছে?ওরা নিজেদের পি*স্তল নামিয়ে নিল।চার বাইকে দুই জন করে আটজন বাইক থেকে নেমে এলো। আর ওদের এই বোকামিটাই তাহসিন কাজে লাগালো। পকেট থেকে লোড করা পি*স্তলটা নিয়ে ওদের দিকে গু*লি ছুড়তে লাগলো।ঘটনাস্থলে চারজন মা*রা গেল।আর বাকি চারজনও তাহসিনের দিকে গু*লি ছুড়লে তাহসিন গাড়ির সামনে এসে বসে পড়ে আর বাকি চার আ*ক্রমণ কারী পাহাড়ের পাশে উচু টিলায় আশ্রয় নেয়।সেখান থেকে গু*লি ছুড়ে।এইরকম করে কয়েক মিনিটের গু*লিছোড়ার যুদ্ধ হয়। একটা আক্রমণকারীর পরপর দুটো বু*লেট এসে তাহসিনের পায়ে বিদ্ধ হয়।পা থেকে গলগলিয়ে র*ক্ত পড়তে থাকে। তাহসিন আর পেরে উঠে না।সে সেখানেই বসে পড়ে আর সে সুযোগেই বাকি চার আ*ক্রমণকারী তাহসিনকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে।
পরিত্যক্ত বাড়িটিতে থেকে রোদেলা শুধু গু*লির বিকট আওয়াজই শুনছিল।গুলির এই বি*কট আওয়াজে তার বুক ধরফর করছিল।ভয়ে তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।ভয়ে একটা সময় জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে।এইদিকে তাহসিনের পায়ের অবস্থাও শোচনীয়।অন্য দিকে আ*ক্রমণকারী চারজন চারটে পি*স্তল তাহসিনের দিকে তাক করে রেখেছে।ট্রিগার চাপলেই পরপর চারটে বু*লেট তাহসিনের বুক ঝাঝরা করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।তারা কাউন্ট করা শুরু করে দিয়েছে।টিকটিক তিন,টিকটিক দুই,টিকটিক এক ঠ্যাংং।গু*লির বিকট শব্দে পাহাড়ি এই জঙ্গল ভয়ানক অবস্থা যেন ধারণ করেছে।এই নিস্তব্ধ পাহাড়ে এখন গু*লির শব্দ ছাড়া যেন আর কিছুই শুনা গেল না।
#চলবে
[বি.দ্র:-কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।