#নীল_বসন্ত
#লেখনীতে_মিথিলা_মিতু
#পর্বসংখ্যা_৩৪
🍀পরের দিন রোদেলা রুহানকে নিয়ে ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।যদিও নিহাকে সাথে আনতো।তবে নিহার মন খারাপ দেখে আনলো না।কারণ রোদেলা জানে ক্যান্টনমেন্টে এলে রোদেলারই মন খারাপ হয়ে যাবে।তখন নিহা কি করবে?নিহার তো তখন আরও খারাপ লাগবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে রোদেলা একটু একা ক্যান্টনমেন্টে সময় কাটাতে চায়।রোদেলা পুরনো দিনের স্মৃতিগুলো মনে করতে চায়।সে চায় না ওই সময় কেউ এসে তাকে সান্ত্বনা দিক।তাই সাথে সে কাউকেই আনলো না। ছোট্ট রুহানকে নিয়ে সে সকাল সকালই বেরিয়ে পড়েছে। তখন ঘড়িতে বাজে সবে আটটা।ছোট্ট রুহান গাড়িতে চড়তে পেরে যেন বেশ খুশি।সে খিলখিল করে হেসে সে খুশিরই জানান দিচ্ছে।এইদিকে রোদেলার মনটা বেশ ভার হয়ে আছে।কি করে নিজেকে সামলাবে?এতদিনে নিশ্চয়ই ওদের রুমে অন্য কেউ শিফট হয়েছে।তাদের সুন্দর স্মৃতিগুলো রুম থেকে মুছে গিয়েছে।তা ভেবেই রোদেলা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
★
বেলা প্রায় দশটার দিকে শান্ত নিহাদের বাসায় হাজির হয়েছে।তখন নিহার বাবা নাজির সাহেব আর নিহার ভাই নাজমুল হলরুমে বসে চা খেতে খেতে নিহার বিয়ের কার্ড ছাপানোর আলোচনা করছিল।শান্তকে দেখে নিহার ভাই বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।নিহার ভাই শান্ত সম্পর্কে অবগত আছে।সবটাই মারিয়ার কাছ থেকে শুনেছে।সে মোটামুটি রাজি ছিল।কারণ বোন যে তার প্রাণ।বোনের জন্য সে সবই করতে পারে।আর সেও তো লাভ ম্যারেজ করেছে।তাই সে জানে ভালোবাসার মানুষটাকে হারানোর কথা উঠলে বুকে কতটা ব্যাথা উঠে।সে তার বাবাকেও রাজি করাতো।কিন্তু নিহার ভালোবাসাটা এক তরফা।তাই নাজমুল এটাতে এগোলো না।শান্ত এসে নিহার বাবাকে সালাম দিলে নিহার বাবা সালামের জবাব নিলেন।নিহার ভাই নাজমুল হেসে বলল,
-“কেমন আছো শান্ত?”
শান্ত মলিন হেসে বলল,
-“এইতো ভালো।”
শান্তর চেহারা কেমন ফ্যাকাসে লাগছে।মনে হচ্ছে কতরাত যেন ঘুমায় নি।নাজমুল বলল,
-“বসো।”
শান্ত চুপচাপ বসলো।নাজমুল বলল,
-“কিছু বলবে?”
শান্ত আশেপাশে তাকালো।মনে মনে সে নিহাকে খুঁজছে। আমতা আমতা করে বলল,
-“আসলে হ্যাঁ।”
শান্ত কোনো ভনিতা ছাড়াই সরাসরি নিহার বাবার উদ্দেশ্যে বলল,
-“আঙ্কেল আপনার কাছে একটা আবদার নিয়ে এসেছি।”
নাজির সাহেবের ভ্রু গুটিয়ে এলো।শান্তর সাথে তো তার আবাদারের মতো এমন সম্পর্ক নেই।তাহলে ছেলেটা বলছেটা কি?তিনি জানতে চাইলেন,
-“কিসের আবদার?”
-“আমি নিহাকে ভালোবাসি আঙ্কেল।ওকে আমি বিয়ে করতে চাই।”
নাজমুলের চোখ বড় হয়ে গেল।এই ছেলে এতদিন কি করেছিল?এখন এই সময়ে এসে এমন আবদার করছে কেন?আগে এলে নাজমুল নিশ্চয়ই হেল্প করতে পারতো। কিন্তু এখন তো পরিবারের মান-সম্মানের কথা উঠে আসে। এইদিকে শান্তর কথা শুনে নাজির সাহেবের মাথায় রাগ চেপে যায়।তিনি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গর্জন করে বললেন,
-“বেয়াদব ছেলে।তোমার সাহস হলো কি করে আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে এসব বলার?বেরিয়ে যাও।”
নাজির সাহেবের গর্জনে পুরো হল রুম কেঁপে উঠল।রান্নাঘর থেকে হন্তদন্ত হয়ে মারিয়া আর তার শাশুড়ী ছুটে এলো। শান্তকে দেখে মারিয়াও অবাক।এই ছেলে আজ কেন এলো?এনগেজডমেন্টের আগের দিন রাতে মারিয়া শান্তকে ফোন করে বলেছে অব্দি নিহা তাকে অনেক ভালোবাসে। এভাবে নিহাকে কষ্ট দিতে না।এনগেজমেন্ট হওয়ার আগে হলেও শান্ত যেন নিহার বাসায় এসে সবটা জানায়।কিন্তু তখন শান্ত তার সিদ্ধান্ত কিছুই জানায় নি।শুধুমাত্র নিহার হবু বরের খোঁজ খবর,আর ছবিটা মারিয়ার কাছ থেকে নিয়েছে।
শান্ত বলল,
-“আঙ্কেল আমি কিন্তু ভালো ছেলে না।জাস্ট ফর্মালিটির জন্য আমি আপনাকে আমার ডিসিশনটা জানিয়েছি।এবার আপনি মানলেও নিহাকে আমি বিয়ে করবো আর না মানলেও আমিই বিয়ে করবো।প্রয়োজনে নিহাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করবো।আমি নিহাকে ভালোবাসি।আমি কোনো কাপুরুষ নই যে নিজের ভালোবাসাকে অন্য পুরুষের নামে সপে দিব।”
এবার নাজমুলের রাগ উঠলো।নাজমুল কঠোর কন্ঠে বলল,
-“এতদিন এই কথা মনে পড়ে নি?এতদিন কোথায় ছিলে? এতই যখন ভালোবাসো তোমার মানুষটা এখন অন্য কারো বাগদত্তা সেটা মাথায় নেই?”
-“ভাইয়া আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করবো।আমার এক্সাম চলছে ভাইয়া।ভেবেছি এক্সাম শেষ হওয়ার পর বাবাকে নিয়ে বিয়ের প্রপোজাল পাঠাবো।কিন্তু নিহা হুট করেই এমন একটা খবর জানালো আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারলাম না।হাতে সময়ও ছিল না।আর গতকাল এলে অতিথিদের সামনে নিশ্চয়ই আপনাদের মান-সম্মান ক্ষুন্ন হতো তাই না?আপনাদের কথা ভাবতে যেয়েই আমার বউকে অন্য পুরুষ আংটি পড়িয়ে দিল।”
শেষ কথাটা আফসোসের স্বরে বলল।শান্তর শেষ কথাটা শুনে মারিয়া ঠোঁট চেপে হাসলো।মারিয়া দৌড়ে উপরে গেল। নিহাকে খবর দিতে।নিহা জানেও না মারিয়া যে সেদিন শান্তর সাথে কথা বলেছে।নিহার বাবা শান্তকে ধমকে বললেন,
-“স্টুপিড ছেলে।আমার মেয়েকে বউ বলার অধিকার দিল কে?”
-“চিন্তা করিয়েন না আঙ্কেল কিছুক্ষণ পরই বিয়ে করে অধিকারের সাথে ওকে আমার সাথে নিয়ে যাবো।”
-“বেরিয়ে যাও।এক্ষুনি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও।”
-“যাবো তো।আমার বউকে নিয়েই যাবো।”
নাজির সাহেব ছেলের উদ্দেশ্যে বললেন,
-“নাজমুল তুমি কেন কিছু বলছো না?”
নাজমুল তার বাবাকে বলল,
-“বাবা একটু শান্ত হও।”
-“কিসের শান্ত হবো?কোথা থেকে কোন ছেলে এসে তোমার বোনকে বিয়ের করবে বলছে।তারপরও বলছো শান্ত হতে?”
শান্ত টিপ্পনী কেটে বলল,
-“শান্ত তো আমি।আপনি কেন শান্ত হতে যাবেন আঙ্কেল? আর এই কোথাকার কোন ছেলেটাই কিছুক্ষণ পর আপনার ঘরের জামাই হয়ে যাবে।”
-“দেখলে তো কতটা বেয়াদব।”
এইদিকে নিহার মা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন।স্বামীর ভয়ে কোনো কথাই বলতে পারছেন না।দেখা যাবে শান্তকে ভালোভাবে কিছু একটা বলতে যাবে আর তার স্বামী ধমকে উঠবে।তখন?তবুও এতক্ষণ চুপ করে থেকে এখন তিনি মোলায়েম কন্ঠে শান্তকে বললেন,
-“বাবা কেন পাগলামি করছো?নিহা তো তোমার বন্ধু তাই না?আর নিহার তো এনগেজমেন্ট হয়ে গিয়েছে।”
নিহার মায়ের কথা শুনে নিহার বাবা ধমকে উঠে বললেন,
-“তুমি এত কোমল স্বরে ছেলেটার সাথে কথা বলছো কেন?”
শান্ত সেদিকে পাত্তা দিল না।সে নরম কন্ঠে নিহার মায়ের উদ্দেশ্যে বলল,
-“আন্টি আমি সত্যিই নিহাকে ভালোবাসি।নিহা আমাকে সুন্দর একটা জীবন দান করেছে।ওর জন্যই আমি সকল বাজে কাজ থেকে দূরে সরে আসতে পেরেছি।ও আমাকে শিখিয়েছে কি করে মানুষকে সম্মান দিতে হয়?কি করে মানুষের ভালোবাসা আদায় করতে হয়।যেদিন থেকে এসব শিখলাম সেদিন থেকে ও আমার ভালো বন্ধু হয়ে গেল।ঠিক কবে আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি বুঝে উঠতে পারি নি।আর যখন বুঝতে পারলাম তখন দেরি হয়ে গিয়েছে।নিহাকে জানানোর সুযোগটা অব্দি পেলাম না।প্লিজ আন্টি বুঝার চেষ্টা করুন।নিহাকে আমার খুবই প্রয়োজন।”
-“কিন্তু আপনাকে আমার প্রয়োজন নেই।”
দোতলা থেকে নামতে নামতে নিহা কঠোর কন্ঠে জবাবটা দিল।শান্ত সিড়ির দিকে তাকালে দেখতে পেল নিহা সিড়ি ভেঙে নামছে তার পিছু মারিয়া নামছে।নিহা শান্তর মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়ে বলল,
-“কেন এসেছেন আপনি?”
-“তোমাকে বিয়ে করতে।”
কাটকাট গলায় জবাব দিল।নিহা বলল,
-“কিন্তু আমি তো চাই না আপনাকে বিয়ে করতে।আমি এখন অন্যকারো বাগদত্তা।অন্য কারো আমানত।আমি তার আমানত খেয়ানত করতে পারি না নিশ্চয়ই?চলে যান আপনি।”
-“যাবো তো।তোমাকে নিয়েই যাবো।”
-“আমি যাবো না আপনার সাথে।”
-“ভালোবাসো না আমায়?”
-“জানি না।”
-“জানা লাগবে না।বিয়ের পর জানলেই হবে।”
-“বললাম তো আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।”
শান্ত বলল,
-“তুমি করবে তোমার বাপও করবে।”
এই কথা শুনে নাজির সাহেব খুকখুক করে কেশে উঠলেন। শান্ত বলল,
-“না মানে তুমি করবে আর তোমার বাবা নিজ হাতে আমার হাতে তোমাকে তুলে দিবে।”
নাজির সাহেব বলে উঠলেন,
-“মগের মুলুক নাকি?আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।”
শান্ত আস্তে করে বলল,
-“বিয়ে ঠিক হয়েছে মাই ফুট।ওই শালা এখনো ফোন দিয়ে বিয়ে ভাঙার কথা বলছে না কেন?”
শান্তর আস্তে বলা কথাটি নিহার কর্ণগোচর হয়ে গেল।তার ভ্রু কুঞ্চন হয়ে গেল।কিছু বলতে যাবে এমন সময় নিহার বাবাকে পাত্রপক্ষ কল দিল।আর জানালেন তারা এখানে ছেলে বিয়ে দিবে না।বিয়ে ভাঙার কথা বলে দিলেন।শান্ত খুশি মনে যেয়ে নাজির সাহেবের উদ্দেশ্যে বলল,
-“এবার নিশ্চয়ই আপনার সমস্যা নেই আমাকে মেনে নিতে রাইট?”
নাজির সাহেব বললেন,
-“কক্ষণো না।আমার মেয়েকে প্রয়োজনে সারাজীবন আমার কাছে রেখে দিব।তবুও তোমার কাছে বিয়ে দেব না।”
নিহা শান্তর উদ্দেশ্যে বলল,
-“আমিও আপনাকে বিয়ে করবো না।”
শান্ত আস্তে করে বলল,
-“বাপ-বেটি দুইটাই হিটলারের হিটলার।”
শান্ত নাজমুল আর মারিয়ার উদ্দেশ্যে বলল,
-“ভাইয়া-ভাবী আপনারা প্লিজ উনাকে রাজি করান।আর নিহাকে আমি দেখছি।”
শান্ত হাত ধরে জোর করে নিহাকে উপরে নিয়ে গেল। এইদিকে নিহার বাবা নাজমুলকে বলল,
-“ওকে আটকাও।”
নাজমুল বলল,
-“বাবা তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো।আমার কথা শুনো।প্লিজ বাবা আমি রিকুয়েষ্ট করছি।”
ছেলের কথায় তিনি সোফায় বসলেন।ওইদিকে শান্ত নিহাকে রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলল,
-“কি সমস্যা তোর?ভাব বেড়ে গেছে?”
নিহার রাগে-অভিমানে অন্যদিকে ফিরে রইল।যে কোনো সময়েই কান্না করে দিতে পারে।শান্ত বলল,
-“এই আমার দিকে তাকা।তাকা বলছি।খুব তো বলতিস শান্ত ভাই ভালোবাসি।তাহলে এখন যখন আমি ভালোবাসা নিয়ে এলাম তখন কেন ফিরিয়ে দিচ্ছিস?”
নিহা এবার শান্তর দিকে তাকালো।শান্তকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে হাতের আঙুলের আংটিটা দেখিয়ে বলল,
-“এতই যখন ভালোবাসেন তাহলে আমার হাতে অন্য পুরুষ রিং পরিয়ে গেল কেন?কেন অন্য পুরুষের বাগদত্তা হতে হলো?”
কান্না করে দিয়ে বলল,
-“জানেন এই রিংটা পড়ার আগ অব্দিও আমি আশা নিয়ে বসেছিলাম আপনি আসবেন।সবটা আটকে দিবেন।অথচ আমার ভাবনা ভুল হলো।হেরে গেলাম আমি সাথে হেরে গেল আমার ভালোবাসাও।পরাজয় গ্রহণ করে অন্য কারো বাগদত্তা হয়ে গেলাম।”
শান্ত ধমকে উঠে বলল,
-“এ্যাই একদম চুপ।কি তখন থেকে অন্য কারো বাগদত্তা অন্য কারো বাগদত্তা বলছো?ভুলে গিয়েছো কিছুক্ষণ আগেই তোমার বিয়ে ভেঙে গিয়েছে?তুমি এখন আর অন্য কারো নয়।তুমি শুধুই আমার।”
কথাটা বলতে বলতে পকেট থেকে সেই রুমালটা বের করলো।যেটা কিনা কোনো একদিন নিহা তার হাতে পেঁচিয়ে দিয়েছিল।নিহা সেই রুমলটা দেখে বলল,
-“এটা আপনার কাছে?আপনি না এটা ফেলে দিয়েছিলেন?”
শান্ত ডানে-বামে মাথা নাড়িয়ে বলল,
-“উহু ফেলি নি।বরং যত্ন করে সবসময় এই রুমালটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছি।”
-“তাহলে মিথ্যে কেন বলেছিলেন?”
-“কারণ রুমালটা তোমাকে ফেরত দিতে চাইছিলাম না।”
-“কেন?”
-“এই প্রথমবার কেউ আমাকে এত যত্ন করে আমার ক্ষ*ত হাতে রুমালটা পেঁচিয়ে দিয়েছে।যেখানে শান্তর থেকে সবাই দূরে দূরে থাকতো।শান্তর ক্ষ*ত কেউ দেখতো না।সেখানে প্রথমবারের মতো কোনো মেয়ে আমার ক্ষ*ততে নিজে কষ্ট পেল।আমার কষ্ট কমাতে নিজের প্রিয় রুমালটা দিয়ে আমার হাতে পেঁচিয়ে দিতে দুবার ভাবলো না।আবার বলল ডাক্তার দেখিয়ে নিতে যাতে ক্ষ*তটা সেরে যায়।আমার জন্য এতটা মায়া করলো তাই তার দেওয়া এই জিনিসটা আমি আমার কাছে রেখে দিলাম।আর তোমাকে বললে তুমি রুমালটা চাইতে আমি ফেরত দিতাম না।তুমি উলটো পালটা ভেবে নিতে।ভাবতে আমি বোধহয় তোমাকে পছন্দ করি। কিন্তু সত্যি বলতে তখন এমন কিছুই জন্মায় নি।”
নিহা শান্তর দিকে কান্নাভেজা চোখে তাকিয়ে বলল,
-“তাহলে কবে জন্মিয়েছে?”
-“যেদিন তুমি প্রথমবারের মতো আমার সামনে শাড়ি পড়ে এসেছিলে।ক্যান্টনমেন্টে ঘুরতে যাওয়ার দিনটি।সে দিনেই তোমাকে আমার বেশ মনে ধরেছিল।এর আগে তোমাকে আমি বন্ধুর নজরেই দেখতাম।কিন্তু সেদিন বারবার চেয়েও আমি তোমার থেকে নজর সরাতে পারছিলাম না।সেদিনই ভালোলাগা কাজ করেছিল।আর ধীরে ধীরেই তা ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে।”
-“তাহলে আমাকে জানালেন না কেন?”
-“জানানোর আগেই তো বিয়ের খবর নিয়ে আমার সামনে হাজির হয়েছিলে।”
-“তাহলে আটকালেন না কেন?”
-“আটকিয়ে তখন কি হতো?পরিস্থিতি সামাল দিতে পারতে? আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছিল হুট করে ওই খবরটা পেয়ে আমি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম।কি করবো না করবো কিচ্ছু মাথায় আসছিল না।”
-“গতকালও তো আসেন নি।”
-“গতকাল তো ওই ছেলের সকল খোঁজ খবর বের করতেই ব্যাস্ত ছিলাম।”
-“ইনফরমেশন পেয়ে কি করলেন?বিয়ে ভেঙে দিলেন?”
শান্ত মাথা চুলকালো।বলল,
-“হ্যাঁ।যা ভয় দেখেয়েছি না মনে হয় না এর পর থেকে সহজে বিয়ের পাত্রী দেখতে নামবে হাহ।”
থেমে বলল,
-“যাই হোক আর কোনো প্রশ্ন নয়।রাজি হয়ে যাও।বিয়ে করতে এসেছি তোমায়।এখনো কি রাজি হবে না?”
নিহা বলল,
-“না।যতটা কষ্ট দিয়েছেন আমাকে তার এক ভাগ কষ্ট আপনাকে অনুভব করাই আগে।তারপর ভাবা যাবে।”
-“এ্যাহ আসছে আমাকে কষ্ট অনুভব করাতে হুহ।রাজি হলে হো না হলে নাই।তোকে আমি আজই বিয়ে করবো?”
-“থ্রে*ট দিচ্ছেন?”
-“হ্যাঁ দিচ্ছি।তোর কোনো সমস্যা?”
-“তুই তুকারি করছেন কেন?”
-“তুই না আমার বন্ধু।বন্ধুকে তুই-তুকারি করবো না তো কি করবো?আর বয়সেও তো ছোট।”
নিহার ভ্রু গুটিয়ে তাকিয়ে রইল।শান্ত নিহার দিকে এগিয়ে নিজেদের মাঝের দূরত্ব গুচিয়ে নিল।এরপর নিহার দিকে তাকিয়ে ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-“আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি নিহা।তুমি সত্যিই প্রমাণ করে দিলে ভালোবাসা সঠিক হলে পূর্ণতা নিশ্চিত।”
#চলবে
[বি.দ্র:-কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]
#নীল_বসন্ত
#লেখনীতে_মিথিলা_মিতু
#পর্বসংখ্যা_৩৫
রোদেলা নিহাদের বাসা থেকে বের হওয়ার সময়ই কর্ণেল ওসমানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে এসেছে।যাতে ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে আসতে সমস্যা না হয়।তিনি আগে থেকেই অনুমতির ব্যবস্থা করে রেখেছেন।তাই রোদেলারও ভেতরে আসতে সমস্যা হলো না।রোদেলা এসে ঘুরে ঘুরে ক্যান্টনমেন্টটা দেখছে।তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। বুকের মাঝে চিনচিন ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে।রোদেলা হেঁটে হেঁটে ওদের কোয়ার্টারটার কাছে এলো।সিড়ি ভেঙে উপরেও চলে এসেছে।রুমটা এখন তালাবদ্ধ আছে তাই ভেতরে ঢুকতে পারলো না।দরজার সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রুহানকে বলল,
-“দেখেছো বাবা।এই রুমটাতে আমি আর তোমার বাবা থাকতাম।তোমাকেও নিয়েও থাকার কথা ছিল।কিন্তু সে ভাগ্য তো আর হলো না।”
কথাটা বলে রোদেলার বুক ফুড়ে দীর্ঘ একটা শ্বাস বের হয়ে এলো।তালাবন্ধ দরজাটার দিকে কিছুপল চেয়ে থেকে নেমে এলো।অতঃপর পদ্মবিলের সে জলাশয়টার কাছে গেল। সেখানে যেয়ে ছেলেকে নিয়ে বসলো।আর পুরনো স্মৃতিতে ডুব দিতে লাগলো।এখানেই সে প্রথমবারের মতো তাহসিনকে ভালোবাসার স্বীকারোক্তি দিয়েছিল।এই স্থানটাতেই দাঁড়িয়ে বলেছিল,
-“শুনছেন।আমি আপনাকে বড্ড ভালোবাসি।”
এই জায়গাটি তাদের কত মধুময় স্মৃতির সাক্ষী আছে।কত শত সময় যে এইখানটাতে কেটেছে কত ভালো মুহূর্ত যে এই জায়গাটাতে কেটেছে তা বলার বাহিরে।আজ সবই স্মৃতি।
★
শান্ত নিহাকে নিয়ে উপরে যাওয়ার পর নাজমুল তার বাবাকে বলল,
-“বাবা শান্তকে মেনে নাও না।দেখো শান্তকে নিহা ভালোবাসে।তোমার উচিত নিহার ভালোবাসাকে সম্মান জানানোর।”
নাজির সাহেব বললেন,
-“কিসের সম্মান হ্যাঁ?এই বখাটে বেয়াদব ছেলেটাকে আমি কিছুতেই মেনে নিব না।তার উপর এই ছেলে বেকার।”
মারিয়া বলল,
-“বাবা শান্ত ভাইয়া তো এখনও স্টুডেন্ট।পড়াশোনা শেষ হলে নিশ্চয়ই তিনি কাজ করবেন।”
-“ওতদিনে আমার মেয়ে কি করে থাকবে?আমার মেয়ের খরচ বহন করার ক্ষমতা ওই ছেলের আছে নাকি হু?আর ওই ছেলের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে কিছুই জানি না। আচার-আচরণ দেখে তো মনে হয় বস্তির কোথাও থাকে। ওই ছেলের সাথে কিছুতেই আমার মেয়েকে বিয়ে দিব না। এটাই শেষ কথা।”
নাজমুল বাবার সামনে হাটু মুড়ে বসে সযত্নে বাবার হাতটা নিজের দুহাতের ভাজে নিল।অতঃপর মোলায়েম কন্ঠে বলল,
-“বাবা তোমার মনে আছে ছোট বেলায় যখন আমরা দুই ভাই-বোন কোনো খেলনার জন্য বায়না ধরতাম তখন তুমি ওই খেলনাটা আমাদের সামনে এনে হাজির করতে।যাতে ওই খেলনা না পাওয়ার জন্য আমাদের মনে আক্ষেপ তৈরি না হয়।শুধুই কি খেলনা?ছোট থেকে এই বয়স অব্দি যখন যেটা চেয়েছি সেটাই তুমি আমাদেরকে দিয়েছে।যেন আমরা না পাওয়ার দহনে আক্ষেপ না করি।আমাদের কষ্ট তুমি সহ্য করতে পারো না।আচ্ছা বাবা তুমিই বলো আমরা যখন কাউকে ভালোবাসি তখন তো তাকে পাওয়ার আশাই স্বপ্ন বুনি।আর যখন বুঝতে পারি তাকে পাওয়া হবে না।তখন বুকের মাঝে হারানো যে ব্যাথাটা উঠে না সেটা ওই খেলনা বলো আর যাই বলো ওইগুলা থেকে হাজার গুণ বেশি কষ্টদায়ক হয়।খেলনা না পাওয়াত সামান্য কষ্টই সহ্য করতে পারবে না বলে বায়না করা সবকিছু সামনে এনে দিতে। তাহলে এখন ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে না পাওয়া তো তার থেকেও বেশি কষ্টের।সে কষ্ট কি করে সহ্য করবে?বলো না বাবা।”
থেমে,
-“বাবা তোমার মনে আছে আমি যখন মারিয়াকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম তখন কিন্তু আমিও বেকার ছিলাম।মারিয়ার বাবা যখন বেকার ছেলের হাতে মেয়েকে দিতে নারাজ ছিলেন তখন তুমি কত সুন্দর করেই না উনাকে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছো।আর আজ দেখো আমি কত ভালো একটা জব করি।এই বেকারত্বের জন্য যদি প্রিয় মানুষটাকে হারাতে হয় তবে এই কষ্ট সারাজীবন তড়পে বেড়ায়।বাবা আমি কষ্ট পাবো ভেবে তুমি নিজে মারিয়ার বাবার সাথে কথা বলে আমাদের দুইজনের বিয়ে দিয়েছো। তাহলে আমার বোনটাও তো সেই একই কষ্ট পাবে।বরং আমার বোনটা আরও বেশি পাবে।আমি কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা রাখলেও সে কিন্তু তা পারে না।সে অল্পতেই ভেঙে পড়ে।সেটা তো তুমি জানো।তাহলে তার কষ্ট কি করে সহ্য করবে?বাবা মেনে নাও না।সম্পর্ক কি আর এতকিছু ভেবে হয়?আর আমার বিশ্বাস শান্ত যেমনই হোক না কেন নিহাকে সে যথেষ্ট ভালো রাখবে।সে ছেলে এতটা সাহসের সাথে সকলের সামনে এসে বুক ফুলিয়ে নিজের ভালোবাসার কথা জানাতে পারে সে ছেলে আর যাই করুক ঠকানোর ব্যাক্তি না।”
এভাবে অনেক বুঝিয়ে নাজমুল তার বাবাকে রাজি করিয়ে ফেলে।নাজমুলের বাবা শান্তর পরিবারের সাথে কথা বলতে চান।শান্ত আর নিহাকে হলরুমে ডেকে আনা হলো।নাজমুল বলল,
-“শান্ত তোমার বাবার ফোন নম্বরটা দাও।আমার বাবা তোমাদের ব্যাপারে কথা বলবেন।”
শান্ত বলল,
-“আমার বাবা আসছেন।আমি একটু আগেই ফোন করে বলেছি কাজী নিয়ে আসতে।তিনি এইতো কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পড়বেন।”
নাজির সাহেব বললেন,
-“কাজী নিয়ে আসছে মানে?”
শান্ত লাজুক হেসে বলল,
-“কাজীকে কেন আনা হয়?বিয়ে পড়াতে আসছেন।বলেছি না আমি আমার বউকে সাথে নিয়েই ফিরবো।”
নাজির সাহেব বললেন,
-“তুমি বললেই হবে নাকি?আমার মেয়েকে আমি এভাবে বিয়ে দেব না।আমার অনেক রিলেটিভ আছে।সবাইকে দাওয়াত করে ধুমধাম আয়োজনে বিয়ে দেব।”
-“কিন্তু শ্বশুড় আব্বু আমি তো এভাবে এখন বিয়ে করবো না।কাজী আসবেন।বিয়ে পড়াবেন।এরপর আমি আমার বউকে সাথে নিয়ে যাবো।আপনাকে বিশ্বাস নেই।দেখা যাবে আমার বউকে রেখে যাবো আপনি সে সুযোগে অন্য কারো সাথে আমার বউকে বিয়ে দিয়ে দিবেন।সে রিস্ক আমি নেব না।সচেতন স্বামী কিনা।”
নাজির সাহেব খিটমিট করে নাজমুলের উদ্দেশ্যে বললেন,
-“নাজমুল এই ছেলে এসব কি বলছে?এই ছেলের মুখে লাগাম লাগাতে বলো।”
শান্ত বলল,
-“আমি কি গরু নাকি যে মুখে লাগাম লাগাবো?”
খিটমিট করলেন।তবে কিছু বললেন না।শান্ত বলল,
-“আমি চাচ্ছি না এখন বিয়ের কোনো অনুষ্ঠান করতে। কারণ এখন ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করার মতো সামর্থ্য নেই আমার।আর চাচ্ছি না বাবার টাকায় এত ধুমধাম করে অনুষ্ঠান করতে।কারণ বাবার টাকায় ফুটানি দেখানোর মতো ছেলে আমি না।যখন আমি প্রতিষ্ঠিত হবো তখন না হয় অনুষ্ঠান করবো।তাই এখন ঘরোয়াভাবেই বিয়ে করতে চাই।এতে নিহার কোনো আপত্তি নেই।আর আশা করি আপনাদেরও কোনো আপত্তি থাকবে না।”
নাজমুল নাজির সাহেবের উদ্দেশ্যে বলল,
-“বাবা রাজি হয়ে যাও।ওরা যেহেতু এভাবে চাইছে তাহলে এভাবেই বিয়েটা হোক।”
নাজির সাহেব নিঃশব্দে মাথা নাড়লেন।এইদিকে নিহা,মারিয়া আর নিহার মা চুপচাপ দাঁড়িয়ে উনাদের কথা শুনছিলেন।কিছুক্ষণের মধ্যেই শান্তর বাবা কাজীকে নিয়ে হাজির হন।শান্তর বাবাকে দেখে নাজির সাহেবের মুখ হা হয়ে যায়।শান্তর বাবা একজন সনামধন্য ব্যাবসায়ী।সেই সুবাদে নাজির সাহেব খুব ভালো করেই চিনেন।এমন একজন ব্যাক্তির ঘরে এমন বেপরোয়া পুত্র কিভাবে হয়েছে তা ভেবেই কপালে হাত।নাজির সাহেব এতক্ষণ মন থেকে নারাজ থাকলেও শান্তর বাবাকে দেখে এবার মন থেকে খুশি।শান্তর বাবা বেশ ভালো মানুষ।নিহা নিশ্চয়ই খুব ভালো থাকবে।এবার তিনি নিশ্চিন্ত।
★
প্রায় অনেকটা সময় রোদেলা পদ্মবিলের বাঁধানো ঘাটে সময় কাটিয়েছে।অতঃপর রুহানকে নিয়ে উঠে চলে এসেছে।তার এখন ফিরতে হবে।ফিরার আগে কর্ণেলের সাথে একবার দেখা করে যাবে।অনেকটা সময় হয়েছে এখানে এসেছে।রোদেলা শেষবারের মতো কোয়ার্টারের বিল্ডিংটার দোতলায় চোখ বুলালো।আবার কবে আসা হবে জানা নেই।আর কেনই বা আসবে?তার মাহমুদ সাহেব তো নেই।সে তো ফিরে এলো না।তাহলে কার জন্যই বা আসবে? রোদেলা অনেকটা অন্যমনস্ক হয়েই হাঁটছিল।কোলে ছোট্ট রুহান।অন্যমনস্ক থাকায় এলোমেলোভাবে পা ফেলছিল। যার দরুণ হোঁচট খেয়ে পড়তে পড়তে বেঁচে গিয়েছে।সে নিজেকে সামলে নিল।হঠাৎ ঝাঁকি খেয়ে ছোট্ট রুহান কেঁদে উঠল।রুহানকে রোদেলা শক্ত করে বুকে চেপে ধরলো।আর একটু হলেই সে রুহানকে নিয়ে পড়ে যেত।ভাগ্যিস নিজেকে সামলে নিয়েছিল।রোদেলা রুহানের কপালে-গালে চুমু দিয়ে রুহানের কান্না থামানোর চেষ্টা করলো।এমন সময়ই পাশ থেকে গমগমে স্বরের একটা পুরুষ কন্ঠ ভেসে এলো,
-“হ্যেই বি কেয়ারফুল।ওয়াচ ইয়্যুর স্টেপ।হোল্ডিং এ্যা বেবি বয় নিডস এক্সট্রা এ্যাটেনশন।”
কথাটি বলেই লোকটা গটগট পায়ে হেঁটে চলে যাচ্ছিল। এইদিকে লোকটার কন্ঠ শুনে রোদেলার বুকটা ধ্বক করে উঠলো।এই কন্ঠ যে তার খুবই পরিচিত।এই কন্ঠের মালিক যে তার কাছের মানুষটার।রোদেলা চোখ তুলে লোকটার দিকে তাকালো।লোকটা ততক্ষণে বড় বড় পা ফেলে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে।লোকটার মাথায় ক্যাপ, মুখ মাস্কে ঢাকা,চোখ ঢাকা রোদচশমায়।গায়ে ব্ল্যাক জ্যাকেট পরিহিত। রোদেলা অবাকপানে লোকটার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।রুহানের কান্নার আওয়াজে তার ধ্যান ভাঙলো। রোদেলা রুহানকে ফের শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলো।তার বুক এখনো ধ্বক ধ্বক করছে। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছে তাহসিন তাকে ধমকের সাথে কথাগুলো বলেছে। কিন্তু তার ভাবনা যে ভুল।সারাটাক্ষন তাহসিনকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে এখন যার না তার কন্ঠই তাহসিনের মতো ঠেকে।এই যেমন এখন ঠেকলো।কিন্তু এটা তো সত্য নয়। কারণ তাহসিন হলে নিশ্চয়ই তার পাশ কাটিয়ে না যেয়ে তাকে জড়িয়ে নিত।তার ছেলেকে দেখতে পেয়ে আনন্দে আটখানা হতো।কিন্তু কই তা তো হলো না?লোকটা তো গটগট পায়ে চলে গেল।রোদেলা ফোস করে শ্বাস ছেড়ে কর্ণেল ওসমানের কেবিনের দিকে পা বাড়ালো।রুমের সামনে যেয়ে নক করতেই কর্ণেল ভেতরে আসার পারমিশন দেন।রোদেলা ভেতরে ঢুকে কর্ণেলকে সালাম দিয়ে সামনে তাকাতেই অবাক হলো।কারণ কিছুক্ষণ আগের সে লোকটা এখানেও?সে কর্ণেল ওসমানের কেবিনে বসে আছে।এইদিকে রোদেলাকে দেখে কর্ণেল শুধালেন,
-“কেমন আছো মা?”
রোদেলা মলিন হেসে বলল,
-“ভালো আছি স্যার।আপনি ভালো তো?”
-“হ্যাঁ ভালো।”
কর্ণেল ওসমান রোদেলার সাথে আরও কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলতে লাগলো।এইদিকে ছোট্ট রুহান রোদেলার কোলে থেকে মুখে আঙুল পুরে অনবরত বাব্ববা বাব্বা করছে। নতুন নতুন সে কথা বলা শিখেছে কিনা।কর্ণেল হেসে রোদেলার উদ্দেশ্যে বললেন,
-“ছেলে তো মাশা আল্লাহ বাবাকে ডাকা শিখে গিয়েছে।”
রোদেলা মলিন হেসে বলল,
-“কিন্তু তার বাবা তো ছেলের ডাক শুনলো না স্যার।ছেলেটা বাবাকে ডাকা শিখলো অথচ বাবার আদরটুকু পেল না।”
কর্ণেল বললেন,
-“মা মন খারাপ করো না।মনে রাখবে সৃষ্টিকর্তা যা করেন ভালো জন্যই করেন।”
রোদেলা পালটা প্রশ্ন ছুড়লো।বলল,
-“কিন্তু ওর বাবাকে হারানোর মাঝে কোন ভালোটাই বা লুকিয়ে ছিল স্যার?”
কর্ণেল কিছু বললেন না।রোদেলার ফোন আসে।মারিয়া ফোন করেছে।রোদেলা ফোন রিসিভ করলেই মারিয়া জানালো জলদি বাড়িতে ফিরতে নিহার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। রোদেলা বাসায় ফিরলে সবটা জানাবে।রোদেলা জানালো সে এখনোই ফিরছে।কর্ণেল থেকে বিদায় নিয়ে রোদেলা বের হয়ে এলো।তবে বের হওয়ার আগে রোদেলা একবার লোকটার দিকে তাকালো।লোকটা বসে বসে ফোনে কি যেন করছে।রোদেলা এখন পুরোই শিওর হয়ে গেল লোকটা আর যাই হোক তার মাহমুদ সাহেব নয়।কারণ মাহমুদ সাহেব হলে এভাবে পিঠ ঘুরিয়ে বসে থাকতো না।রোদেলা চলে এলো।ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠলো।নিহার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে মানে কি?ওইদিকে আবার কি ঘটলো?
#চলবে
[বি.দ্র:-কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]
#নীল_বসন্ত
#লেখনীতে_মিথিলা_মিতু
#পর্বসংখ্যা_৩৬
রোদেলা এসে দেখলো নিহা লাল টুকটুকে বউ সেজে বসে আছে।হলরুম দিয়ে ঢুকতেই সফেদ পাঞ্জাবি পড়া শান্তকে দেখে সে কিছুটা আঁচ করতে পারলো।অতঃপর নিহার রুমে এসে দেখে মারিয়া নিহাকে বউ সাজাচ্ছে।লাল শাড়িতে নিহাকে বেশ সুন্দর লাগছে।রোদেলা আসতেই নিহা রোদেলাকে ঝাপটে ধরলো।নিহার চোখে অশ্রু টলমল করছে।করবে না-ই না কেন?সে যে এতটা কষ্টের পর তার ভালোবাসার মানুষটাকে পেতে চলেছে।রোদেলাকে মারিয়া সবটুকু ঘটনা বলল।রোদেলা জেনে খুবই খুশি হয়েছে। এইদিকে ছোট্ট রুহান নিহার দিকে ঢ্যাবঢ্যাব করে তাকিয়ে আছে।নিহাকে হয়তোবা এমন করে সাজে দেখে সে বুঝার চেষ্টা করছে।নিহা হাত বাড়ালেই মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে নিহার কোলে চলে গেল।
খুব সাধারণ ঘরোয়াভাবেই নিহার বিয়েটা হচ্ছে।নিহার খুব কাছের আত্মীয় যেমন ওর ফুপু,মামাদের দাওয়াত করা হলো।ওইদিকে শান্তর চাচা,মামারাও এলেন।সবাই উপস্থিত হলে কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন।বিয়ে শেষে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হলো।আজই নিহাকে শান্তদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে।যাওয়ার পূর্বে নিহা তার মা,বাবা,ভাই,ভাবীকে জড়িয়ে ধরে কান্না করলো। রোদেলাকে জড়িয়ে ধরেও অনেকটা সময় কান্না করলো। বিদায় দিতে দিতে বিকেল হলো।শান্তদের বাসা নিহাদের বাসা থেকে খুব বেশি দূরে নয়।দশ মিনিটের পথ।গাড়ি যেয়ে শান্তদের প্রাসাদের মতো বিশাল বাড়ির সামনে থামলো। গাড়ি থেকে নেমে নিহার চোখ পুরো কপালে।শান্তদের বাড়িটি পুরো রাজপ্রাসাদের মতো বড়।বিশাল গেইটের সামনে দুইদিকে দুই দারোয়ান পাহারা দেয় বাড়ি।একপাশে গাড়ি রাখার গ্যারেজও আছে।অথচ শান্ত যে এতটা ধনী পরিবার থেকে বিলং করে সেটা কখনোই তার আচার-আচরণ দেখে বুঝার উপায় নেই।একদম সাধারণের মতো থাকে।নিহা গাড়ি থেকে নেমে যখন শান্তদের বাসার দিকে তাকিয়ে ছিল ঠিক তখনই শান্ত তার পাশে এসে দাঁড়ালো।নিহা শান্তর দিকে তাকালে শান্ত মুচকি হেসে নুইয়ে নিহাকে পাজাকোলে নিয়ে হাঁটা দিল।নিহার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।লোকটার কি একটু লজ্জা লাগে না?পিছনেই তার বাবা,চাচা,মামা আছেন।শান্ত সেদিকে পরোয়াও করলো না। নিহাকে নিয়ে হলরুমে এনে সোফায় বসালো।ওর চাচী,মামী শরবত আর নানা পদের মিষ্টি হাতে নিয়ে এগিয়ে এলো। নতুন বউ আর বরকে মিষ্টি,শরবত খাইয়ে দিল।নতুন বউ দেখতে আশেপাশের মানুষ ভিড় জমালো।শান্ত এতে কিছুটা বিরক্তও হলো বটে।কোথায় সে একটু বউয়ের সাথে আলাদাভাবে সময় কাটাবে তা না এই মানুষগুলোর এখনই উদয় হলো?শান্ত বিরক্তি চেপে গেল।সিড়ি ভেঙে নিজের রুমে চলে গেল।লম্বা একটা শাওয়ার দিয়ে ট্রাউজার আর টি-শার্ট গায়ে জড়ালো।সারাটাদিনটাই ঝামেলায় ঝামেলায়। এখন একটু নিশ্চিন্ত।গত দুই রাত চিন্তায় তার যেন ঘুমই হয় নি।যেদিন নিহার তাকে জানালো এনগেজডমেন্ট সেদিন রাতেই মারিয়ার থেকে ওই পাত্রের সব ডিটেইলস বের করলো।এরপরের দিন বিকেলে সেই পাত্রপক্ষের বাড়িতে গিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে এলো।যেহেতু পাত্রের বাবা শান্তকে বখাটে গু*ন্ডা হিসেবে চিনে তাই ওর সাথে ঝামেলা বাড়ালো না।বিয়ে ভেঙে দিতে রাজি হলো।এরপর শান্ত বাসায় এসে তার বাবাকে জানালো সে বিয়ে করবে।হুট করে শান্তর এমন সিদ্ধান্তে সবাই অবাকই হলো।তবে বাঁধা দিল না মেনেই নিল।শান্ত রাতেই প্ল্যান সাজালো সে আগে নিহার বাড়িতে যাবে।সবাইকে রাজি করাবে।এরপর রাজি হলে তার বাবাকে বলবে কাজীকে নিয়ে যেতে।আর যদি রাজী না হয় তবে তুলে নিয়ে এনে বিয়ে করবে।সবটা ঠিকঠাক মতো হবে তো?সেটা ভেবেই নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দিয়েছিল।
★
শান্তর দাদিমা এসে নিহার পাশে বসলেন।বৃদ্ধা অনেকটা অসুস্থই বটে।এই অসুস্থ শরীর নিয়েই হলরুমে ছুটে এলেন নাতবউকে দেখবে বলে।তিনি নিহার চিবুক ধরে বললেন,
-“মাশা আল্লাহ।আমার নাতির পছন্দ আছে।কেমন পুতুলের লাহান বউ বিয়া কইরা নিয়া আইছে।”
বৃদ্ধার কথা শুনে নিহার লাজুক হাসলো।বৃদ্ধা ফের বললেন,
-“শুন নাতবৌ আমার নাতি কিন্তু এক্কেরে খাঁটি মানুষ।মনটা বেশ ভালো।ভাগ্য করে নাতিরে পাইছোস।ওর মন মতো চলিস বোন।দুইজন মানাই গুছাই খুব ভালো থাকিস।আমার নাতি ছোডকালে মারে হারাইছে।হেরপর থিকা নাতিরে দেখি নাই হাসতে-খেলতে।কিন্তু তুই যহন এলি তহন আমার নাতির মুখে চান্দের হাসি দেখছি।দুইজন খুব ভালো থাকবি।দোয়া কইরা দিলাম।”
শান্তর চাচী এসে নিহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শাশুড়ীর উদ্দেশ্যে বললেন,
-“আমাদের শান্তটা কিন্তু মিষ্টি একটা বউ নিয়ে এসেছে। একদম চাঁদের মতো সুন্দর দেখতে।তাই না মা?”
-“হ।দেখতে হইবো না।নাতিডা কার হুহ।”
শান্তর চাচী হাসলেন।শান্তর বাবা নিহার উদ্দেশ্যে বললেন,
-“মা তোমার যখন যেটা প্রয়োজন হবে সেটা আমাদেরকে জানাবে।আমরা আছি তো।কোনো সংকোচ করবে না। আমরা তোমার আপন মানুষই।”
নিহা মাথা নাড়লো।সত্যিই তার বড় ভাগ্য এমন একটা পরিবার পেয়েছে।শান্তর চাচাতো বোন এসে বলল,
-“আমি ভাবীকে ফ্রেশ হতে নিয়ে যাচ্ছি।এই ভারী শাড়িতে ভাবীর বোধহয় কষ্ট হচ্ছে।”
শান্তর চাচী বললেন,
-“হ্যাঁ হ্যাঁ নিয়ে যা।”
শান্তর চাচতো বোন সাথে মামাতো বোন দুইজন মিলে নিহাকে উপরে নিয়ে গেল।শান্তর চাচাতো বোনের রুমেই নিয়ে গেল।শান্তর চাচাতো বোন নিহার হাতে সুতির একটা শাড়ি দিয়ে বলল,
-“ভাবী যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।অনেকটা ধকল গিয়েছে তোমার উপর।এবার ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও।”
নিহা শাড়ি হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যাওয়া ধরতেই শান্ত এসে বাঁধ সাধলো।বলল,
-“এ্যাই একদম শাড়ি চেঞ্জ করবে না।”
নিহা থতমত খেয়ে গেল।বলল,
-“কেন?”
শান্ত একবার তার বোনদের দিকে তাকালো।যারা কিচ্ছু বুঝতে না পেরে অবাক চোখে শান্তর দিকে তাকিয়ে আছে। শান্ত নিহার কানে ফিসফিস করে বলল,
-“ব্রাইড আনবক্সিং করার দায়িত্ব শুধুমাত্র হাসবেন্ডদের উপরে বর্তায়।এটা বলা চলে হাসবেন্ডের হক।তাহলে তুমি কেন আমার হক মে*রে খাবে নিহা?দিস ইজ নট ফেয়ার।”
অবাক,হতবাক আর এক ঝাঁক লজ্জায় নিহা গুটিয়ে গেল। লোকটা বড় পাজি আছে।শান্ত নিহার হাত থেকে টান দিয়ে শাড়ি সরিয়ে বোনদেরকে দিয়ে বলল,
-“এ্যাই ও এখন ফ্রেশ হবে না।লাগেজটা আমার রুমে পাঠিয়ে দে।”
শান্তর চাচাতো বোন বলল,
-“ভাবী কি এতক্ষণ এই ভারী শাড়ি পড়ে থাকবে?”
-“হ্যাঁ থাকবে।”
শান্তর মামাতো বোন বলল,
-“কেন?”
-“কারণ আমি বলেছি।”
-“কিন্তু ভাবীর তো অসুবিধা হবে।”
শান্ত নিহার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বলল,
-“তোমার অসুবিধা হবে?”
নিহা বার দুয়েক ডানে-বামে মাথা নাড়লো।শান্ত বোনদের উদ্দেশ্যে বলল,
-“দেখলি তো?এবার যা দুইজন মিলে লাগেজ আমার রুমে দিয়ে আয়।”
শান্তর চাচাতো বোন বলল,
-“আমরা যাই।আর তুমি বউয়ের সাথে সময় কাটাবে তাই না?তা তো হবে না ভাইয়া।রাতের আগে তোমার বউকে তুমি পাবে না।তোমার বউ এখন আমাদের সাথে সময় কাটাবে। তুমি তোমার লাগেজ নিয়ে বিদেয় হও।”
-“বেশি সাহস হয়ে গিয়েছে তাই না?”
-“হ্যাঁ তাই।”
বোনদের সাথে কিছুক্ষণ ঝগড়া করে হেরে শান্ত লাগেজ হাতে নিজের রুমে চলে গেল।শান্ত যাওয়ার পরে শান্তর দুই কাজিন নিহার সাথে গল্পগুজব করতে লাগলো।যেহেতু রুমে এসি চলছে তাই ভারী শাড়িতেও নিহার খারাপ লাগছে না। ওইদিকে লোক খবর দেওয়া হয়েছে শান্তর রুমটা ফুল দিয়ে সাজিয়ে দেওয়ার জন্য।দুইজন লোক মিলে শান্তর রুমটা ফুল দিয়ে সজ্জিত করে দিচ্ছে।
★
রাত এগারোটা বাজতেই নিহাকে শান্তর রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।পুরো রুমে তাজা ফুলের সুবাস ছড়িয়ে আছে।নিহাকে বড় ঘোমটা টেনে বিছানার একদম মাঝে বসিয়ে রেখে শান্তর দুইবোন বাহির থেকে দরজা ঘিরে রাখে।উদ্দেশ্যে শান্ত এলে টাকা নিয়ে তবেই রুমে প্রবেশ করতে দিবে।শান্ত আরও আধ ঘন্টা পরে আসে।রুমের সামনে ওদেরকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শুধায়,
-“কি ব্যাপার?তোরা এখানে কেন?”
শান্তর মামাতো বোন বলল,
-“টাকা ছাড়া রুমে প্রবেশ নিষিদ্ধ।ভাবী কিন্তু ভেতরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।তাড়াতাড়ি টাকা দাও আমরা পথ ছাড়ি।”
-“রুম আমার,বউও আমার তাহলে তোদের টাকা দিতে হবে কেন?”
শান্তর চাচাতো বোন বলল,
-“ভাইয়া এত কথার এন্সার দিতে পারবো না।তুমি টাকা দিবে এটাই শেষ কথা।নয়তো আমরা এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবো ওইদিকে ভাবী রুমে অপেক্ষা করতে থাকবে। অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়েও যেতে পারে।”
শান্ত ফোস করে শ্বাস ছেড়ে বলল,
-“কত চাই?”
-“দশ হাজার।”
শান্ত বলল,
-“কিহ?এ্যাই তোরা কোন মুখে টাকা চাচ্ছিস?রুম তোরা সাজিয়েছিস হুহ?রুম সাজাতেও বাহির থেকে লোক হায়ার করতে হয়েছে।তাহলে এটা তোদের কিসের দাবী হুহ?”
-“তুমি টাকা দিবে নাকি এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবো?”
-“এতো টাকা দিতে পারবো না।তোরা বাচ্চা মানুষ।দশ টাকা দিচ্ছি।চকলেট কিনে খাস।”
শান্তর চাচাতো বোন বলল,
-“ছিহ ভাইয়া।তুমি এতটা কিপটে জানতাম না তো।দশ টাকার চকলেট পাওয়া যায়?”
শান্তর মামাতো বোন বলল,
-“ভাইয়া যত কথা বাড়াবে তত লেইট হবে।আমরা তো আমাদের দাবি ছাড়বোই না।এর থেকে ভালো দিয়ে দাও।”
শান্ত ওয়ালেট থেকে এক হাজার টাকার পাঁচটা কচকচে নোট ওদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-“এবার দরজা ছাড়।”
-“দশ চাইলাম দিলে পাঁচ?কি আর করার?থাক বাকি পাঁচ মাফ করে দিলাম।”
শান্ত ভ্রু গুটিয়ে বলল,
-“পাঁচ হাজার যে দিয়েছে এটাই শুকরিয়া কর।নির্ঘাত বউটা রুমের ভেতরে একা বসে আছে দেখে নয়তো এটাও পেতি না হুহ।”
ওরা মুচকি হেসে চলে গেল।এটাই ঢের।ওরা গেলে শান্ত রুমের ভেতরে পা রাখলো।দরজা লক করে বিছানায় বসে থাকা নিহার দিকে এগিয়ে গেল।সে নিহার একদম মুখোমুখি বসলো।দুই হাত দিয়ে নিহার ঘোমটা সরাতেই নিহা নড়েচড়ে বসলো।সে শান্তকে সালাম দিল।শান্ত সালামের জবাব নিয়ে গালে হাত দিয়ে অপলক নিহার দিকে তাকিয়ে রইল।এতে নিহা সংকোচ বোধ করছে।নিহা নিচু কন্ঠে শুধালো,
-“এভাবে কি দেখছেন?”
শান্ত দৃষ্টি না সরিয়েই বলল,
-“আমার বউকে।”
-“প্লিজ অন্যদিকে তাকান।লজ্জা লাগছে।”
শান্ত বিরক্ত বোধ করে বলল,
-“উফফ ডিস্টার্ব করো না তো।চুপ করে বসে থাকো।”
নিহা আর কিছু বলল না।মাথা নিচু করে বসে রইল।সে লজ্জায় শান্তর দিকে তাকাতেও পারছে না।শান্তর দৃষ্টির কোনো নড়চড় হলো না।এভাবে অনেকটা সময় কেটে গেল। শান্ত এবার এগিয়ে নিহার কপালে শব্দ করে চুমু খেল। বলল,
-“আমার প্রাণটাকে যেন আমি ফিরে পেলাম।”
নিহা মৃদু হাসলো।শান্ত বলল,
-“চলো তাহলে ব্রাইডকে আনবক্সিং করা যাক।”
নিহা কুন্ঠায় গুটিয়ে এলো।তার বুক দ্রিমদ্রিম করছে।শান্ত ঠোঁট কামড়ে হেসে নিহাকে কোলে করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে নিয়ে চেয়ারে বসালো।এবার সে একে একে নিহার দোপাট্টা সরিয়ে চুলের ক্লিপ খুলতে লাগলো।নিহার পড়নের অর্নামেন্টসগুলোও সযত্নে খুলে দিল।অতঃপর নিহার মেক আপ রিমুভ করে দিতে দিতে বলল,
-“নিহা।”
নিহা ছোট্ট করে বলল,
-“হু।”
-“ভালোবাসতে দিবে তোমায়?”
শান্তর কথার ধরণেই বুঝে গেল শান্ত কি বুঝাতে চাইছে? তাই তো নিহা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল।অতঃপর তার প্রতিশোধ নেওয়ার কথা মনে পড়ে গেল।এই লোকটা নিহাকে তো খুব কষ্ট দিয়েছে।লোকটার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কতটাই না অপেক্ষা করতে হয়েছে।তাহলে সে কেন এত সহজে লোকটার কাছে ধরা দিবে?প্রশ্নই উঠে না।নিহা শান্তর চোখে চোখ রেখে বলল,
-“এত সহজে তো ধরা দিচ্ছি না মিস্টার অশান্ত।কম অপেক্ষা করান নি আমায়।বড় কাঠখড় পোহাতে হয়েছে আমাকে।প্রেমে পড়তে যেমন সময় নিয়েছেন এবার ভালোবাসা পেতেও সময় নিন।তারপর বুঝবেন অপেক্ষা করার জ্বালা কতটা।”
শান্ত বলল,
-“এ্যাহ আসছে রে।ভেবেছিলাম জোর করে বিয়ে করবো সেটা তো হলো না।এবার দেখছি জোর করে বাসরটা সারতেই হবে।কি আর করার?আমাকে তো ভালো হতে দিবে না।সব জায়গাতেই জোর খাটাতে হচ্ছে।”
-“জোর খাটাবেন যখন তখন অনুমতি নিতে আসছেন কেন?”
শান্ত টি-শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বলল,
-“আরে বুঝো নাই ব্যাপারটা?এটা তো জাস্ট ফর্মালিটি।”
নিহা শান্তর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল,
-“অসভ্য বাদর লোক।”
-“অভদ্র কথাটাও যুক্ত করতে।এটা বাদ রাখলে কেন?”
নিহা মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকালো।শান্ত বলল,
-“এভাবে রাগ করে থেকো না।রাগী চেহারায় তোমাকে আরও বেশি মোহনীয় লাগে।তখন আরও বেশি ভালোবাসতে ইচ্ছে হবে।”
নিহা কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না।লোকটা একটু বেশিই কি ঠোঁটকা*টা নয়?যাই হোক,যেমনই হোক এই লোকটা তো তারই,তার একান্ত ব্যক্তিগত মানুষ তাই না?
শান্ত মোলায়েম স্বরে ডেকে উঠল,
-“বউ।”
শান্তর মুখে বউ ডাকটা একটু বেশিই যেন ভালো লাগছে। শান্তর ডাকে নিহা আর মুখ ঘুরিয়ে থাকতে পারলো না।সে শান্তর দিকে তাকালো।শান্ত হাটু ঘেরে বসে নিহার কোলে আলতোভাবে মাথা রাখলো।বলল,
-“তুমি আমার আঁধার জীবনে ভালোবাসা নামক আলো নিয়ে এসেছো।যে আলো আমার জীবনের সমস্ত আঁধার সরিয়ে আলোকিত করে দিয়েছে।এক সময় যে জীবন একাকিত্বে ঢাকা ছিল,সেটা আজ তোমার উপস্থিতিতে উজ্জ্বল হয়ে গিয়েছে।আমার জীবন নিয়ে আর কোনো আক্ষেপ নেই।তোমাকে পেয়ে আমি পূর্ণ।তুমি আমার জীবনে না এলে হয়তোবা বেঁচেই থাকতাম কিন্তু জীবনের আসল মানেটাই বুঝতাম না।”
শান্ত থামলো।নিহার কোল থেকে মাথা তুলে নিহার হাত দুটো ঠোঁটের কাছে নিয়ে আলতো চুমু খেল।অতঃপর নিহার হাত দুটো নিজের হাতের ভাজে পুরে নিহার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“আমাদের জীবনের এই বিশেষ রাতটিকে সাক্ষী রেখে আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, পৃথিবীতে আমার নিঃশ্বাস যতদিন পড়বে ততদিন আমি তোমার পাশে থাকবো,তোমার সাথেই বাঁচবো।আর তোমাকে আমার সবটুকু দিয়েই ভালোবেসে যাবো।”
নিহার চোখ ছলছল করছে।এই মানুষটাকে অবশেষে সে নিজের করে পেল।মানুষটার ভালোবাসাও পেল।কষ্টের পরই সুখের দেখা মিলে এটা আসলেই বাস্তব সত্য কথা।এই যে নিহা এতদিন কষ্ট করে গেল।তার বিনিময়ে এখন এই মানুষটার সীমাহীন ভালোবাসা পেল।শান্ত নিহার ভেজা চোখের পাপড়িতে আলতো চুমু খেল।বলল,
-“এখন থেকে আর কান্না নয়।তোমার চোখে অশ্রু নয় বরং খুশির ছলকানিই মানায়।তোমার ঠোঁটে হাসির রেখাটুকু আজীবন দেখতে চাই পাখি।কষ্ট হলেও সবসময় তোমার ঠোঁটের ভাঁজের ওই স্নিগ্ধ হাসিটুকু ফুটিয়ে রাখবে।”
নিহা মাথা নাড়লো।শান্ত ফের নিহাকে কোলে নিয়ে বিছানায় গেল।লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জ্বালালো।অতঃপর নিহার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে এই সুন্দর রজনীকে সাক্ষী রেখে নিজের মাঝের সবটুকু ভালোবাসার উন্মাদনা নিহার মাঝে বিলিয়ে দিল।এই সুন্দর প্রকৃতি,এই সুন্দর রজনী সাক্ষী হলো চার দেয়ালের ভেতরে একজোড়া মানব-মানবীর পূর্ণতাময় ভালোবাসার।
#চলবে
[বি.দ্র:-কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।