#নীল_বসন্ত
#লেখনীতে_মিথিলা_মিতু
#পর্বসংখ্যা_৩৭(অন্তিম পর্বের ১ম অংশ)
ক্যালেন্ডারের পরপর চারটে পাতা উলটে চারটে মাসের অতিক্রম হলো।প্রকৃতি জানান দিল নতুন মাসের,নতুন বছরের।আজ সেইদিনটি।যেদিন কিনা একদিকে পুত্রের জন্ম হয়েছে অন্যদিকে পিতা হারানোর সংবাদ এসেছে। পিতা দেখতে পেল না পুত্রকে,পুত্র দেখতে পেল না পিতাকে। পুত্রের জন্ম খুশির সংবাদ নিয়ে এলেও পরক্ষণেই পিতার মৃ*ত্যু সংবাদ আকাশের ঘনঘটা মেঘের ন্যায় সবার মনে প্রভাব ফেলেছিল।আজ একদিকে পুত্রের জন্মের বছর পূর্ণ হলো অন্যদিকে পিতার মৃ*ত্যুর বছর পূর্ণ হলো।প্রকৃতির নিয়ম বড়ই জটিল।
তাহসিনের ছেলে রুহান এখন স্পষ্ট কন্ঠে মা,বাবা,দাদাভাই আর দাদিমা ডাকতে পারে।নতুন নতুন কথাও বলার চেষ্টা করে।তবে সবটা স্পষ্ট আসে না।যেমন ভাতকে ভাতু বলবে, মাংসকে মাংশু বলে ইত্যাদি।সে এখন টুকটুক করে হাঁটাও শিখেছে।টুকটুক করে দুই-তিন পা সামনে আগায় আবার পড়ে যায়।পড়ে গিয়ে নিজে নিজে আবার উঠে দাঁড়ায়।এমন ভাবেই তার দিন কাটছে।আর তাকে নিয়ে তার দাদা,দাদি আর মায়ের দিন কাটছে।
প্রকৃতি নতুন রূপে সেজেছে।নীলিমা আকাশ,নানা রঙের ফুল,নতুন সবুজ পাতা দিয়ে।প্রকৃতি এখন নানা রকম পাখির সুরেলা কন্ঠে মেতে থাকে।কারণ প্রকৃতিতে যে এখন ঋতুরাজ বসন্তের রাজত্ব চলছে।বসন্তের মাঝামাঝি সময় চলছে।সূর্যের আলো তাহসিনের রুমের জানালার পদ্দার ফাঁক গলিয়ে রুমে প্রবেশ করতেই রুহানের ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ভাঙতেই রুহান কেঁদে জানান দিল তার ঘুম ভেঙেছে। রোদেলা রান্নাঘর থেকে ছুটে এলো।এসে ছেলেকে কোলে নিয়ে টুপ করে ছেলের গালে চুমু খেল। অতঃপর ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“জন্মদিনের সকালটা কান্না করে শুরু করতে হলো হুহ? কান্না না করলে হচ্ছিল না আপনার?সবসময় কান্না করেই মাকে আপনার জানান দিতে হবে হু?”
রোদেলা মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে আদুরে কন্ঠে ছেলেকে কথাগুলো বলছিল।রুহান মায়ের কথা শুনতে পেয়েই খিলখিল করে হেসে ফেলল।কথা বুঝুক আর না বুঝুক মাকে পেয়েছে যেন সে সব পেয়ে গিয়েছে।রোদেলা বলল,
-“এই হাসিটুকু দিয়েই সাত খু*ন মাফ তাই না?”
রুহান আবার হাসলো।রোদেলা ছেলেকে বুকে চেপে ধরলো। অতঃপর ছেলেকে ফ্রেশ করিয়ে হলরুমে নিয়ে গেল। হলরুমে তাজউদ্দিন মাহমুদ বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন।রুহান তার দাদাভাইকে দেখেই মিষ্টি করে “দাদাভাই” বলে ডেকে উঠল।রুহানের কন্ঠ শুনে তাজউদ্দিন মাহমুদ খবরের কাগজ থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকান। আর দেখতে পান রুহান উনার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসি দিয়ে আছে।উনিও হেসে হাত বাড়িয়ে বললেন,
-“আমার দাদাভাই ঘুম থেকে উঠে পড়েছে?আসুন দাদাভাইয়ের কোলে আসুন।”
রুহান তার দাদাভাইয়ের কোলে ঝাপ দেয়।রোদেলা রুহানকে দিয়ে রান্না ঘরে গেল।যেয়ে তার শাশুড়ী মাকে বলল,
-“দেখলে তো তোমার নাতির কান্ড?যত অন্যায়ই করবে তারপর হাসি দিয়ে সব মাফ পেয়ে যাবে।”
নাজমা বেগম হাসলেন।বললেন,
-“হ্যাঁ।আমার নাতির এই হাসিটুকু কোটি টাকার সম্পদের চেয়েও বেশি।”
রোদেলা শাশুড়ীর কথায় হাসলো।অতঃপর টেবিলে নিয়ে নাশতা রাখলো।ফের রান্না ঘরে এলে নাজমা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
-“আজ আমার ছেলেটা থাকলে এই সংসারটা পরিপূর্ণ হতো।”
নাজমা বেগম আঁচলে চোখ মুছলেন।রোদেলা নাজমা বেগমকে আলতো জড়িয়ে ধরলো।বলল,
-“বলেছি না এসব ভেবে মন খারাপ করবে না?নিয়তিকে মেনে নাও।দেখো না আমি এখন আর মন খারাপ করি না।নিয়তিকে মেনে নিয়েছি।”
নাজমা বেগম বললেন,
-“আমাদের অগোচরে যে কান্না করিস তা আমি জানি। আমার কাছে লুকিয়ে লাভ নেই রে মা।”
রোদেলা অন্যপ্রসঙ্গে চলে গেল।বলল,
-“মা আসো তো নাশতা করবে।আমার খুব ক্ষিধে পেয়েছে।”
নাজমা বেগমকে নিয়ে সে নাশতার টেবিলে গেল।সবাইকে নাশতা দিয়ে রুহানকে রুহানের জন্য রান্না করা খিচুড়ি খাওয়ালো।অতঃপর নিজে খেল।তাজউদ্দিন মাহমুদ কাজে চলে গেলেন।নাজমা বেগম রুহানকে নিয়ে সময় কাটাতে লাগলেন।আর রোদেলা দুপুরের রান্না চড়িয়ে দিল।কাজ করতে করতে রোদেলা নিজের করুণ ভাগ্যের কথা মনে করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।এই যে একটা বছর হলো তাহসিন নেই এই একটা বছরে তার বাবা তার খোঁজ খবর নেয় নি। ক্যান্টনমেন্ট থেকে যেদিন এসেছে সেদিন শুধু এক পলক এসে নাতিকে দেখে গিয়েছে।অগত্যা মেয়েকে একটু সান্ত্বনার বানী ছুড়ে গিয়েছে।এরপর আর কোনো খোঁজই নেয় নি।হয়তোবা ভেবেছেন মেয়ে আর নাতি যেয়ে উনার ঘাড়ে চাপবেন।যদি মেয়ে আর নাতির খরচা বহন করতে হয় তখন?কিন্তু তিনি হয়তো জানেন না রোদেলার শ্বশুড়-শাশুড়ি শত কষ্ট হলেও রোদেলা আর উনাদের প্রাণপ্রিয় নাতিকে নিজেদের কাছেই রেখে দিবেন।অন্যের বোঝা হতে দিবে না।রোদেলা আর রুহান উনাদের চোখের মণি।তবে রোদেলার জীবনে এসব নিয়ে কোনো আক্ষেপই থাকতো না যদি তাহসিন তার পাশে থাকতো।শুধুমাত্র এই আক্ষেপটাই তাকে সারাজীবন বয়ে বেড়াবে।রোদেলা যখন নিজের জীবনের হিসেব-নিকেশ করতে ব্যস্ত তখনই সশব্দে রোদেলার ফোন বেজে উঠে।রোদেলা ফোন রিসিভ করে। নিহা ভিডিও কল দিয়েছে।নিহার দিনও খুবই ভালো কাটছে।সংসার, পড়াশোনা সব মিলিয়ে ভালোই কাটছে। বলা বাহুল্য এইচএসসি পরীক্ষার তিন মাস পর রেজাল্ট বের হয়েছিল।নিহা জিপিএ ফাইভ পেলেও রোদেলা পায় নি।কারণ রোদেলা যে পরীক্ষার সময় অসুস্থ ছিল।তবুও সে হিসেবে রোদেলার রেজাল্ট ভালো এসেছে।রোদেলার এসেছে ৪.৮২।রোদেলা আর পড়াশোনা করতে চায় নি। তবুও শ্বশুড়-শাশুড়ির জোড়াজুড়িতে এখানের একটা ন্যাশনাল ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।আর নিহা চট্রগ্রামেই পাবলিক ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।
নিহার সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে ফোন নিয়ে যায় রুহানের কাছে।কারণ নিহা রুহানের সাথে কথা বলবে। রোদেলা নাজমা বেগমের কাছে ফোনটা দিয়ে সে ফের রান্না ঘরে চলে আসে।নাজমা বেগম আর রুহানের সাথে নিহা কথা বলতে থাকে।এইদিকে রোদেলা রান্না বান্না সেরে টুকটাক কাজও সেরে ফেলে।সব কাজ শেষ হতে হতে দুপুর হয়।রুহানকে গোসল করিয়ে নিজেও গোসল করে নেয়। অতঃপর রুহানকে খাবার খাইয়ে দিয়ে রোদেলা আর নাজমা বেগম দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়।নাজমা বেগমের রুমে নাজমা বেগমের সাথেই রুহান ঘুমিয়ে যায়।এইদিকে রোদেলা নিজের রুমে চুপচাপ বসে থাকে।তার ভালো লাগছে না বলে সে ঘর থেকে বেরিয়ে বাহিরে চলে আসে। তাদের বাগানের সেই বেঞ্চিতে এসে বসে।যেখানে কিনা বিয়ের একদম প্রথম দিকে তাহসিনের সাথে রাত-বিরেতে এসে বসে থাকতো।
তখন দুপুর প্রায় শেষের দিকে।রোদেলা বেঞ্চিতে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশের রঙ আর তার শাড়ির রঙ মিলে যেন একাকার।এই যে তার পড়নের শাড়িটিও নীল রঙা আর আকাশও নীল আর সাদায় ছেয়ে আছে।রোদেলা অনেকক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।তার চোখের কোণ বেয়ে অশ্রু পড়ছে।আজ আর তার অশ্রু মোছার তাড়া দেখা গেল না।অশ্রু তার চোখের কোণ বেয়ে আরামছে পড়ছে তাতে তার কোনো হেলদোল নেই।রোদেলা আকাশপানে তাকিয়ে বলল,
-“আপনি নেই আজ একটা বছর পূর্ণ হলো।আপনাকে ছাড়া তিনশত পয়ষট্টিটি দিন পাড় করে ফেললাম।অবাক কান্ড তাই না?যে রোদেলা কিনা আপনাকে ছাড়া একটা মূহুর্তও থাকতে পারতো না।সে আজ কিভাবে এত্তগুলা দিন আপনিবিহীন কাটিয়ে ফেলল?তবে এখনকার রোদেলার সাথে অতীতের রোদেলার বড়ই তফাৎ।অতীতের রোদেলা ছিল আপনার আহ্লাদী মায়মূন।যে কিনা অল্পতেই কেঁদেকুটে শেষ হয়ে যেত।অথচ আজ যে আছে সে হচ্ছে রোদেলা শুধুমাত্রই রোদেলা কারো আহ্লাদী মায়মূন নয়।এই রোদেলা এখন অধিক ব্যাথাও হাসিমুখে বরণ করে নিতে পারার ক্ষমতা রাখে।দেখুন মাহমুদ সাহেব আজ আপনার মায়মূন কতটাই না বদলে গিয়েছে।সে এখন আর অল্পতে কষ্ট পায় না।আপনি বলতেন না “মায়মূন,তুমি একজন মেজরের ওয়াইফ।সেটা ভুলে যাবে না।স্ট্রং হও মায়মূন।” দেখেন মাহমুদ সাহেব আজ আপনার মায়মূন সত্যিই স্ট্রং হয়ে গিয়েছে।এখন আর অল্পতে ভেঙে পড়ে না।কিন্তু আফসোস আপনি এই মায়মূনকে দেখলেন না।আপনি এভাবে না চলে গেলে কি খুব বেশি ক্ষতি হতো?কেন চলে গেলেন?আপনি না আমায় কথা দিয়েছিলেন আপনি ফিরে আসবেন?তবে কেন এলেন না?”
থেমে আকাশের দিকেই তাকিয়ে বলল,
-“সবাই বলে বসন্ত মানে রঙিন ফুলের ঋতু।বসন্ত মানেই প্রেম,ভালোবাসা,বেঁচে থাকা।অথচ আমার কাছে বসন্ত মানেই আপনি।তাই তো আপনি হারিয়ে যাওয়ার পর আমার বসন্ত হয়ে গেল বিষাদময় নীল।সবাই বসন্তে নতুন করে বাঁচে অথচ আমি বসন্তে ম*রি এবং ম*রছি।কেননা এইরকম এক বসন্তেই তো আপনি হারিয়ে যান।এই বসন্ত আমাকে ভীষণ পোড়ায়।চাই না এই বসন্ত যে বসন্ত আপনাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে।বসন্তের এই দিনগুলো এলেই ভীষণ করে মনে পড়ে আপনি নেই।আপনার অনুপস্থিতিই আমার বসন্তকে নীল করে দিয়েছে।নয়তো আমার বসন্ত তো ছিল আপনিময় রঙিন।ফিরে আসুন না। ফিরে এসে আমার বসন্তকে রাঙিয়ে দিন না।”
রোদেলা কথাগুলো বলতে বলতে বেঞ্চিতে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো।তার বন্ধ চোখের কোণ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝড়ছে।আজ যেন তার চোখ প্রতিযোগিতায় নেমেছে কতটা অশ্রুর বর্ষণ নামাতে পারে?চোখ বন্ধ করেই রোদেলা বুঝতে পারলো তার পাশে নিশ্চুপে কে যেন বসেছে?তার মস্তিষ্ক আরও জানান দিল সে ব্যাক্তিটি রোদেলার দিকে তাকিয়ে আছে।রোদেলা আর চোখ খুলে দেখার প্রয়োজন মনে করলো না।তার এখন চোখ খুলতে ইচ্ছে করছে না। রোদেলা চোখ তখনই খুলল যখন সে বুঝতে পারলো তার চোখের পানি কেউ সযত্নে মুছে দিচ্ছে।রোদেলা চোখ খুলে পাশে তাকাতেই তার প্রিয় পুরুষটাকে দেখতে পেল।হ্যাঁ তার মাহমুদ সাহেব তার পাশে বসে আছে।ওইতো তার মাহমুদ সাহেব মেজরের মর্যাদাপূর্ণ পোশাকটি পড়ে বসে আছে। যার নেইম-প্লেটে রূপালি অক্ষরে তাহসিন মাহমুদ নামটি লেখা।দেখে মনে হচ্ছে তার মাহমুদ সাহেব যেন সবেই ক্যাম্প থেকে ফিরেছেন।রোদেলা অবাক হলো না।কারণ এমনটা প্রায়ই হয়।সে তার মাহমুদ সাহেবকে দেখে।কিন্তু স্পর্শ করতে গেলেই মাহমুদ সাহেব মিলিয়ে যায়।আজও হয়তো এমনটাই হবে।রোদেলা তার পাশে বসা মাহমুদ সাহেবের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল।সে শুনতে পেল তার মাহমুদ সাহেব বলছে,
-“মায়মূন,আমি ফিরে এসেছি।”
রোদেলা তাচ্ছিল্য করে হাসলো।বলল,
-“কেন মিথ্যে বলছেন?এইতো এখন স্পর্শ করতে যাবো তখনই হারিয়ে যাবেন।গত একটা বছর ধরে তো এমনটাই করছেন।এখন আর আপনাকে বিশ্বাস করি না।চলে যান তো আপনি।আপনার সাথে খুব অভিমান করেছি।আপনি এসেও বারবার হারিয়ে যান।এখনও যাবেন।যাবেনই যেহেতু তাহলে আসেন কেন?এভাবে এসে কেন কষ্ট বাড়ান?আপনি কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেন না।চলে যান।আসা লাগবে না আপনার।”
কথাটা বলে রোদেলা ফের আগের মতো চোখ বন্ধ করলো। তবে বুঝতে পারলো কেউ যাচ্ছে না।রোদেলা সন্দেহ নিয়ে চোখ খুলে দেখতে পেল পাশের জায়গাটি এখনো পূর্ণ আছে।কেউ যায় নি।বরং মানুষটা যেভাবে বসে ছিল সেভাবেই বসে আছে।রোদেলার ভ্রু গুটিয়ে এলো।তার মনে এক ঝাঁক আশা বাঁধলো।সে সন্দেহ নিয়ে শুধালো,
-“মাহমুদ সাহেব আপনি সত্যিই এসেছেন?”
তাহসিন সেই আগের মতোই হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
-“বিশ্বাস না হলে স্পর্শ করে দেখো।”
রোদেলা ঠোঁট ভেঙে কেঁদে উঠল।তার মাহমুদ সাহেব সেই প্রথমদিনগুলোর মতোই যে কথাটা বলল।রোদেলা কাঁপাকাঁপা হাতে তাহসিনের বাড়িয়ে রাখা হাতটা স্পর্শ করলো।অবাক কান্ড আজ আর তাহসিন মিলিয়ে গেল না। সে আজ তাহসিনকে স্পর্শ করতে পেরেছে।রোদেলা কি করবে বুঝতে পারছে না।কিছু না পেয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।তাহসিন চটজলদি রোদেলাকে বুকে জড়িয়ে নিল। তাহসিন বুকটা পেয়ে রোদেলা আরও চিৎকার করে কেঁদে ফেললো।কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলল,
-“মাহ মাহমুদ সাহেব আপনি এসেছেন?সত্যিই এসেছেন?”
তাহসিনের চোখ দিয়েও নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে।সে রোদেলাকে শক্ত করে বুকের মাঝে জড়িয়ে রাখলো।বলল,
-“হ্যাঁ মায়মূন।আমি এসেছি।আমি তোমার কাছে ফিরেছি মায়মূন।”
রোদেলা অঝোরে কাঁদতে লাগলো।এতদিনের জমিয়ে রাখা কান্না গুলো সব উগড়ে দিল।এতদিন রোদেলার কান্নার আওয়াজ ঘরের বাহিরেও অব্দি যায় নি।অথচ আজ সে তাহসিনকে পেয়ে আকাশ-পাতাল কাঁপিয়ে চিৎকার করে কান্না করছে।তাহসিন কিছুতেই রোদেলাকে সামলাতে পারছে না।পারবে কোত্থেকে?সে তো নিজেই কাঁদছে।তার চোখ দিয়েও তো নিঃশব্দে অশ্রুর বর্ষণ বইছে।প্রায় অনেকটা সময় পর রোদেলার কান্না থামলো।রোদেলা তাহসিনের বুক থেকে সরে এলো।এতটাদিন এই লোকটা কোথায় ছিল?তার মনে যে বহু প্রশ্ন আকুলিবিকুলি করছে।রোদেলা কান্না গলায় বলল,
-“মাহমুদ সাহেব আমি না বিশ্বাস করতে পারছি না সত্যিই আপনি এসেছেন?মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি।ঘুম ভাঙলেই যেন আবার বাস্তবে ফিরে আসবো।”
তাহসিন নিজের বাহুতে চোখ মুছলো।বলল,
-“এইবার আমি সত্যিই এসেছি মায়মূন।”
রোদেলা ফের কান্না করে দিল।অতঃপর বেঞ্চি থেকে উঠে ছুটে যাওয়া ধরে আবার থেমে গেল।পিছু ফিরে বলল,
-“আপনাকে আমি বিশ্বাস করি না।মাকে ডাকতে গেলে যদি আপনি আবার হারিয়ে যান তখন?আপনি আমার সাথে চলুন।”
রোদেলার বাচ্চামো দেখে তাহসিন মৃদু হাসলো।বলল,
-“চলো।”
রোদেলা তাহসিনের হাত মুঠোতে পুরে বাসার ভেতরে গেল। হলরুমে থেকে চেঁচিয়ে নাজমা বেগমকে ডাকছে।
-“মা।ও মা।দেখে যাও।মা জলদি আসো না।দেখে যাও একবার।ও মা।”
রোদেলা যেন পাগলের মতো হয়ে গিয়েছে।রোদেলার এতো চেঁচামেচিতে নাজমা বেগম নিজের রুম থেকে ছুটে আসেন। এসে রোদেলাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবেন তার আগেই তাহসিনের দিকে নজর পড়লো।নাজমা বেগম তাহসিনকে দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলেন না।রোদেলা ব্যাপারটা বুঝতে পারলো।রোদেলা বলল,
-“মা আমি বলেছিলাম না উনি ফিরবেন?উনি সত্যিই ফিরেছেন।তোমার ছেলে ফিরে এসেছে মা।দেখো তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।”
রোদেলার কথা শুনে নাজমা বেগম ছেলের কাছে ছুটে এলেন।ছেলেকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলেন। তার পাশাপাশি রোদেলাও কান্না করে দিল।উনাদের কান্নাকাটিতে রুহান উঠে পড়েছে।সে বিছানায় পা ঝুলিয়ে অতঃপর তার টেকনিক খাটিয়ে বিছানা থেকে নেমে পড়ে।তারপর দুই হাতে চোখ ঘষতে ঘষতে গুটিগুটি পায়ে নাজমা বেগমের রুম থেকে বেরিয়ে আসে।রুম থেকে বাইরে এসে তার দাদীমা আর মাকে কাঁদতে দেখে নিজেও ভ্যা করে কেঁদে ফেলে।তার কান্না আওয়াজে সবার দৃষ্টি যায় নাজমার বেগমের রুমের দরজার সামনে।রোদেলা যেয়ে ছেলেকে কোলে তুলে নেয়।তাহসিন ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে।তার যে কেমন অনুভূতি হচ্ছে সেটা সে প্রকাশ করতে ব্যর্থ হবে।নাজমা বেগম ছেলেকে বললেন,
-“তোর ছেলে।যা কোলে নে।”
তাহসিন রুহানের দিকে এগিয়ে গেল।রোদেলা রুহানকে বলল,
-“তোমার বাবা।যাও তার কোলে যাও।”
রুহান ছোট ছোট চোখে তাহসিনের দিকে তাকালো। অতঃপর একটা হাসি দিয়ে চলে গেল।সে তো একে চিনে। কারণ তার মা তাকে সবসময় তাহসিনের ছবি দেখিয়ে বলতো “এটা তোমার বাবা।” তাহসিনের ছবি দেখিয়েই তো রোদেলা ছেলেকে বাবা ডাকটা শিখিয়েছে।ছোট্ট রুহান তার ছোট ছোট দুইহাতে তাহসিনের গালে ধরে বলল,
-“বাব্ববা।”
তাহসিনের প্রাণটা যেন শীতল হয়ে গেল।অশ্রুতে তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।তাহসিন রুহানের গালে,কপালে অনেকগুলো চুমু খেল।রুহানকে সে মন ভরে আদর করলো।নিজের বুকের সাথে একদম মিশিয়ে নিল।তার সন্তান,তার ভালোবাসার চিহ্ন।এই জীবন্ত প্রাণটাকে সে অবশেষে ছুতে পারলো।দীর্ঘ একটা বছর এই প্রাণটার জন্য যে কতটাই না তড়পেছে।অবশেষে আজ সে সকল বিপদ কাটিয়ে তার ছেলের কাছে ফিরতে পারলো।তাহসিন ছেলেকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিল।
নাজমা বেগম তাজউদ্দিন মাহমুদকে কল দিয়েছেন।যদিও উনার ফিরার সময় ঘনিয়ে এসেছে।তবুও নাজমা বেগম উনাকে কল দিয়ে জানালেন তাড়াতাড়ি ফিরতে।নাজমা বেগমের কান্নাভেজা গলা শুনে তাজউদ্দিন মাহমুদ চিন্তায় পড়ে গেলেন।তিনি রওনা হয়েছেন বাড়ির উদ্দেশ্যে।কিছু সময়ের মাঝে তিনি বাড়িতে পৌঁছে যান।হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ছুটে আসেন।ভেতরে এসে শুধান,
-“নাজমা কি হয়েছে?সবাই ঠিক আছে তো?আমার দাদুভাই ঠিক আছে তো?”
এইটুকু বলে তিনি সামনে তাকিয়ে তাহসিনকে দেখে অবাক হন।শুধু মাত্র অবাকই নয় অবাকের শেষ সীমায় যেন অতিক্রম করেন।তিনিও সবার মতো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।তাহসিন ছেলেকে কোলে নিয়েই বাবার কাছে এগিয়ে গেল।এক হাতে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।এবার তাজউদ্দিন মাহমুদ বিশ্বাস করলেন।তিনিও ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন।দাদাভাইয়ের কান্না দেখে রুহান ফের কেঁদে উঠলো।ছোট্ট রুহান বুঝতেই পারছে না সবাই তার মতো কান্না করছে কেন?রুহানের কান্নায় তাজউদ্দিন মাহমুদ কান্না থামিয়ে রুহানকে কোলে নিলেন।রুহানও থেমে গেল।এতগুলো দিন পরে তাহসিনকে ফিরে পেয়ে সবাই আবেগে আপ্লুত হয়ে গেল।কারোই যেন ঠিক ঠাক বিশ্বাস হচ্ছে না তাহসিন সত্যিই ফিরে এসেছে? তাহসিনের ফিরে আসাটা যেন নিতান্তই মিরাক্কেল।ওর ফিরে আসার খুশিতে সবার চোখেই পানি।কারো কান্নাই যেন থামার নয়।একটা বছর ধরে এই পরিবারটা যেন আঁধারে ডুবে ছিল।তাহসিন যেন এক নিমিষেই সকল আঁধার কাটিয়ে আলোকিত করে দিল।
★
সময়টা এখন সন্ধ্যা।পুরো বিকেল কাটলো তাহসিনকে ফিরে পাওয়ার খুশিতে কান্নায় কান্নায়।কান্নাকাটি শেষে তাহসিন নিজের রুমে গেল ফ্রেশ হতে।শাওয়ার সেরে সে ফের হলরুমে এলো।রোদেলা আর নাজমা বেগম মিলে সন্ধ্যার নাশতা বানাচ্ছে।খুশিতে রোদেলার হাত দিয়ে যেন কাজ উঠছে না।রুহান তার দাদাভাইয়ের কোলে বসে ছিল। বাবাকে হলরুমে আসতে দেখে বাবার দিকে ঢ্যাবঢ্যাব করে তাকিয়ে রইল।তাহসিন সোফায় বসে রুহানের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয় এতে রুহানও তার নতুন ছোট ছোট দাঁতগুলো বের করে হেসে ফেলে।অতঃপর দাদার কোল থেকে নেমে তার বাবার কাছে যায়।তাহসিন রুহানকে কোলে নিয়ে বলল,
-“শুভ জন্মদিন আমাদের জুনিয়র তাহসিন।বাবা তোমাকে খুব ভালোবাসে সোনা।”
রুহান ঠোঁট এগিয়ে তাহসিনের গালে চুমু দিল।এইদিকে তাহসিনও রুহানকে আদর করে দিল।আর ওদের বাবা-ছেলের এত মধুর মূহুর্ত দেখে পাশে বসে থাকা তাজউদ্দিন মাহমুদ,আর রান্না ঘর থেকে রোদেলা আর নাজমা বেগমের চোখ জুড়ালো।এই দিনটা দেখার জন্যই তো উনারা কতটাই না ছটফটিয়েছেন।ভেবেছেন বাচ্চাটা বোধহয় তার বাবার আদর থেকে বঞ্চিত হলো।কিন্তু না সৃষ্টিকর্তা যে অন্যকিছু ভেবে রেখেছিলেন।তিনি ঠিকই বাড়ির ছেলেকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দিলেন।কিন্তু তাহসিন এতদিন কোথায় ছিল?কি হয়েছিল কিছুই জানা হয় নি এখনো।ছেলেটা আস্তেধীরে হয়তো সবটাই জানাবে।
রোদেলা কাজ করতে করতে নিহাকে কল দিল।নিহাকে তাহসিনের ফিরার কথা জানালো।নিহা জেনে খুবই খুশি হলো।যেহেতু রোদেলা ব্যস্ত আছে তাই নিহাকে খবরটা জানিয়েই সে ফোন রেখে দিল।নিহাকে জানালো সে সময় করে নিহাকে ঠিক কল দিবে।কথা শেষে চা,নাশতা হাতে হলরুমে এলো।তাজউদ্দিন মাহমুদ আর তাহসিনের হাতে চায়ের কাপ দিল।অতঃপর রুহানকে বলল,
-“মায়ের কোলে আসো বাবা।তোমার জন্য পায়েশ বানিয়েছে খাবে।”
রুহান দুইদিকে মাথা নাড়লো পাশাপাশি রোদেলার বাড়ানো হাতও সরিয়ে দিল।সে তার বাবার কোলেই থাকবে।ছেলের কাহিনি দেখে সবাই হেসে ফেলল।তাহসিন বলল,
-“পায়েশের বাটিটা আমার কাছে দাও।আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”
রোদেলা তা-ই করলো।পায়েশের বাটি তাহসিনের হাতে দিল।তাহসিন দ্রুত চা টা শেষ করে রুহানকে পায়েশ খাইয়ে দিতে লাগলো।তাজউদ্দিন মাহমুদ চায়ে চুমুক দিয়ে তাহসিনের উদ্দেশ্যে বললেন,
-“তাহসিন সেদিন ঠিক কি ঘটেছিল?আর তুমিই বা এতটাদিন কোথায় ছিলে?তুমি সুস্থ থাকলে আমাদের কারো সাথে কেন কোনো যোগাযোগ করো নি?”
তাহসিন ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো।গলা খাঁকারি দিয়ে বলা শুরু করলো সেদিনের ঘটনাটা।
★
____সেদিনের ঘটনা____
সেদিন তাহসিনদের গাড়ি প্রথম গাড়িটা ছাড়ার প্রায় পাঁচ মিনিট পর রওনা হয়।একসাথে ছাড়ার কথা থাকলেও ওইদিকে মেজর রাশেদ তাড়া দেয়।যার দরুন প্রথম গাড়িটা আগে স্টার্ট দেওয়া হয়।এরপর তাহসিনরা সবাই গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিতে পাঁচ মিনিট ব্যয় হয়।পাঁচ মিনিট লেইট হওয়ায় প্রথম গাড়িটা ওদের গাড়ি থেকে অনেকটাই দূরে এগিয়ে যায়।এইদিকে তাহসিনদের গাড়ি অল্প কিছুদূর গেলেই নাজমা বেগমের ফোন আসে।তাহসিন ফোন রিসিভ করলেও নেটওয়ার্কে সমস্যা থাকায় কথা বলতে পারছিল না।একদিকে রোদেলাকে এই অবস্থায় রেখে এসেছে। রোদেলার কিছু হলো না তো?ও ঠিক আছে তো?নইলে তো তার মায়ের এই সময়ে কল দেওয়ার কথা না।তাহসিন চিন্তায় পড়ে গেল।তাহসিন ড্রাইভারকে বলল গাড়ি থামানোর জন্য।গাড়ি থামানো হলে তাহসিন গাড়ি থেকে নেমে একটু কিছুটা দূর গেলে নেটওয়ার্ক পায় আর তার মায়ের ফের ফোন আসে।তাহসিন ফোন রিসিভ করে কথা বলা শুরু করে।যখন শুনেছে তার ছেলে হয়েছে তখন যে সে কতটা খুশি হয়েছে তা বলে প্রকাশ করা যাবে না।মায়ের সাথে কথা বলা অবস্থায়ই তাহসিনদের গাড়িতে বো*মা ব্লাস্ট হয়।তাহসিন যেহেতু গাড়ি থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরত্বে ছিল তাই বোমা ব্লা*স্টে সেও মারাত্মক আহত হলো।সে ছিটকে গিয়ে পড়লো রাস্তার পাশে জঙ্গলে।সাথে সাথেই সে সেন্সলেস হয়ে যায়।এইদিকে গাড়িতে থাকা ড্রাইভার সহ বাকি ছয়জন সকলেই ঘটনাস্থলে মা*রা যায়।কর্ণেল ওসমান রেসকিউ টিম নিয়ে যখন এখানে এসে সবটা জানতে পারেন তখন খুবই শোকাহত হন।তিনি সকলের আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন।কারণ গাড়িতে থাকা সকলের দে*হ পুড়ে গলে গিয়েছে।একেকজনের লা*শের যাতা অবস্থা হয়ে গিয়েছে।প্রথম গাড়িতে থাকা বাকি চার সেনা সদস্যকে কর্ণেল ক্যান্টনমেন্টে পাঠিয়ে দিলেন যেহেতু উনাদের উপরেও বেশ ধকল গিয়েছে।এসবের মধ্যে উনারা ট্রমাটাইজড হয়ে যাবে।তাই ওদেরকে ক্যান্টনমেন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হলো।এইদিকে রেসকিউ টিম ওদের খন্ড-বিখন্ড, গলিত লা*শ উদ্ধার করতে করতে রাস্তার আশেপাশে সবটায় অভিযান চালালো।আর তখনই আহত তাহসিনকে সেন্সলেস অবস্থায় পেল।তারা সঙ্গে সঙ্গে কর্ণেলকে ডাকলো।কর্ণেল তাহসিনকে দেখে আশার আলো দেখতে পান।তাহসিনকে সঙ্গে সঙ্গে এখানকার ভালো একটা হসপিটালে এডমিট করায়।যেহেতু কর্ণেল আর রেসকিউ টিমটা শুধু এখানে ছিল সেহেতু উনারাই তাহসিনের খবরটা জানতো।কর্নেল রেসকিউ টিমের প্রতিটি সদস্যকে নিষেধ করেছেন তাহসিনের কথা যেন বাহিরে কেউ না জানে। ওদেরকে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে।যদি এই কথা বাহিরে বের হয় তবে কর্ণেল ওদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নিবে।কর্ণেলের মাথায় তখন একটা কথাই ঘুরছে তাহসিন মিশনের আসার পূর্বেই বলেছিল দলের কেউ বা কারা ষড়যন্ত্র করছে।এখন তারা ঠিক কারা সেটা তো কর্ণেল এখনো জানেন না।যদি তারা তাহসিনের বেঁচে থাকার কথা শুনে তাহসিনের উপর ফের অ্যাটাক করে তখন?এইদিকে তাহসিনের অবস্থাও বেহাল।তাহসিনের হাত-পা আর পিঠের কিছুটা অংশ পুড়ে গিয়েছে।কানের শ্রবণশক্তিও আংশিক হারিয়ে ফেলেছে।রাস্তার পাশে জঙ্গলে ছিটকে পড়ায় তার ডান হাত ভেঙে গিয়েছে।এছাড়াও মানসিকভাবেও বিধ্বস্ত ছিল।ডাক্তার জানায় জ্ঞান ফিরতে ফিরতে সময় লাগতে পারে।আনুমানিক দুইদিন বা তারও অধিক।যেহেতু শারীরিক আঘাতের সাথে মানসিকভাবে আঘাতও পেয়েছে।এইদিকে কর্ণেল গোপনেই তাহসিনের চিকিৎসা চালিয়ে যায়। কাউকেই তাহসিনের কথা জানায় না।এমনকি তাহসিনের ফ্যামিলিকেও না।যেহেতু সেই ষড়যন্ত্রকারী ওদের দলেই আছে তার মানে সে ক্যাম্পেও থাকে।তাহসিনের ফ্যামিলিও ক্যান্টনমেন্টে থাকে।যদি ওদের কোনোভাবে ক্ষ*তি হয়? ওদের সুরক্ষার কথা ভেবে কর্ণেল এক সপ্তাহের মধ্যে নোটিশ পাঠায় ক্যান্টনমেন্ট ছাড়ার জন্য।রোদেলারা ক্যান্টনমেন্ট ছাড়লে কর্ণেল এবার নিশ্চিন্ত হন।তাহসিন পুরোপুরি রিকভারি করতে করতে প্রায় পাঁচ মাসের মতো লাগে।বলতে গেলে এই পাঁচ মাসে তাহসিন নিজের শরীরের সাথে যুদ্ধ করে গিয়েছে।কর্ণেল মনে আশা নিয়ে সবার অজান্তেই তাহসিনের চিকিৎসা চালিয়ে যান।তাহসিন যখন পুরো সুস্থ হলো তখন তাহসিনকে তার ফ্যামিলি সম্পর্কে অবগত করা হলো।কিন্তু তাহসিন দায়িত্বের খাতিরে ফ্যামিলির সাথে দেখা করতে পারলো না।আগে তার সেই ষড়যন্ত্রকারীকে ধরতে হবে এরপর পালিয়ে যাওয়া সেই ছয় আসামীকে আটক করতে হবে।নয়তো তাহসিনের সাথে তার ফ্যামিলির জীবনেরও ঝুঁকি থেকে যাবে।তাইতো তাহসিন ফ্যামিলির ভালোবাসা আপাতত দূরে ঠেলে সে দেশের কাজে নামে।তাহসিন দূরে থেকেই প্ল্যান করে আর কর্ণেল নতুন টিম গঠন করে তাদের নিয়ে একদম গোপনে প্ল্যান মাফিক কাজ করে যান।তাহসিন কর্ণেলকে জানায় আগে সেই ডক্টরকে পাকড়াও করতে যে কিনা একসাথে মা*রা যাওয়া সেই দুই আসামীর রিপোর্ট দিয়েছিলেন।তাহসিন নব্বই পার্সেন্ট শিওর সে ডাক্তার ভুল রিপোর্ট দিয়েছে। তাহসিনের বিশ্বাস সেই ডাক্তারের কাছে কিছু হলেও জানা সম্ভব।এইদিকে ডাক্তার নাকি চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।সে ডাক্তারের খোঁজ করতে করতে পাড় হলো প্রায় দুই মাস। ডাক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ডাক্তার একজন পুলিশের নাম বলে যে কিনা জেলের ওই দুই আসামির দায়িত্বে ছিল।তার কথাতেই তিনি ভুল রিপোর্ট দেন।আসলে সেই দুই আসামীকে এক প্রকার বি*ষ দেওয়া হয়েছে যেটা কিনা হৃদস্পদন থামিয়ে দিয়ে হার্ট অ্যাটাকের মতো মৃ*ত্যু হয়।সবটা জেনে সে পুলিশকে ধরা হয়।পুলিশকে অনেক জিজ্ঞাসাবাধ করা হলেও তিনি মুখ খুলতে নারাজ।অবশেষে সে পুলিশ যেদিন আসল অপরাধীর নামটা বলেছে সেদিন তাহসিন সবটা রেকর্ড করে মাস্ক,সানগ্লাস আর জ্যাকেটে নিজেকে আবৃত করে ক্যাম্পে আসে।আর ক্যাম্পে এসেই দূর থেকে রোদেলাকে দেখে সে এগিয়ে গেল।ওদেরকে দেখে তাহসিন যেন নিজেকে সামলাতে পারছে না।মন চাইছে ছুট্টে যেয়ে ওদেরকে জড়িয়ে ধরতে।কিন্তু সে সময়টা যে এখনো আসে নি।তাহসিন ওদের পাশ কাটাতে গেলেই রোদেলা হঠাৎ হোচট খেয়ে পড়ে যাওয়া ধরতেই তাহসিন ওকে ধরতে গিয়েও থেমে যায়।রোদেলা নিজেই নিজেকে সামলে নেয়।আর একটু হলেই ছেলেটা কোল থেকে পড়ে যেত।রোদেলাও পড়ে ব্যাথা পেত সেজন্য ওদের সাবধান করতেই তাহসিন দুটো কড়া কথা শুনিয়ে চলে আসে কর্ণেলের রুমে।এইদিকে যখন রোদেলাও কর্ণেলের রুমে যায় আর রুহানও বাবা বাবা বলে ডাকতে থাকে তখন তাহসিনের বড্ড ইচ্ছে করে ছেলেকে বুকে টেনে নিতে।সে খুব কষ্টে নিজেকে সংযত করেছিল।সে ফোনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে রেখেছিল ঠিকই কিন্তু তার শ্রবণ রোদেলার কথার দিকেই ছিল।রোদেলা কর্ণেলের ভবন থেকে বের হয়ে যদি একবার জানালার দিকে তাকাতো তাহলে নিশ্চয়ই দেখতে পেত তাহসিন ওর যাওয়ার পথেই তাকিয়ে আছে।যতক্ষণ পর্যন্ত না চোখের আড়াল হয় ততক্ষণ তাকিয়েই রইল।ও যাওয়ার পর সে কর্ণেলের সাথে জরুরি মিটিং সেরে নেয়। এমনকি এটাও বলে পুলিশ বলেছে এর সাথে মেজর রাশেদই জড়িয়ে আছে।টাকার লোভ তাকে এ কাজ করতে বাধ্য করেছে।আর সেদিন যে ওদের গাড়িতে টাইম বো*ম ফিট করা ছিল সেটা মেজর রাশেদ জানতো।তাই তো নিজেদের গাড়ি আগে ছাড়ার জন্য এতটা ব্যকুল ছিল।এমনকি বো*ম ব্লা*স্ট হওয়ার পর বাকি তিন সেনা সদস্য যখন ছুটে আসে তখন মেজর রাশেদ সেই ছয় আসামীর হাতের হ্যান্ডকাফ খুলে দিয়ে অতঃপর আসে।এ সবটা সম্পর্কেই পুলিশ অবগত ছিলেন।সব ইনফরমেশন কালেক্ট করে মেজর রাশেদকে গ্যাফতার করা হয় এবং মেজর রাশেদ আর সেই পুলিশকে আদালত মৃ*ত্যুদন্ড দেয়।ওদের মতো দেশদ্রোহীর বেঁচে থাকার কোনো রাইটই নেয়।ওদের এই লোভের জন্য ছয় জন সেনাবাহিনী আর ওদের একজন ড্রাইভার মা*রা যায়।শুধুমাত্র তা-ই নয় জেলে থাকা দুই আসামীকে দিয়ে প্রথমে মিথ্যে বলায় এরপর ওদেরকেও মে*রে ফেলা হয়।তাই এদের জন্য মু*ত্যুদন্ডের মতো উপযুক্ত শাস্তি আর হতেই পারে না। তাহসিন,কর্ণেল আর নতুন আরও টিম বানিয়ে গত চার মাস ধরে সে অ*স্ত্রপাচারাকারীদের আসল ঘাঁটি বের করে এবং ওদের গ্যাংয়ের সকলকে গত মধ্য রাতে আটক করে।মিশন শেষ করে সে ভোরেই রওনা হয়।কারণ সে এখন বিপদমুক্ত আর দুপুরের পরেই সে মাহমুদ ভিলায় এসে পৌঁছায়।বাসায় ঢুকতেই বাগানের বেঞ্চিতে রোদেলাকে দেখে এগিয়ে গিয়ে নিশ্চুপে রোদেলার পাশে বসে।
★
__বর্তমান__
তাহসিনের সকল ঘটনা শুনে সবার চোখই ছলছল করছে। তাহসিন একা একা নিজের সাথে কতটাই না যুদ্ধ করে গিয়েছে।ওই সময়ে তার পাশে প্রিয়জন বলতে কেউ ছিল না।এইদিকে যেমন রোদেলা,তাহসিনের মা,বাবা সহ সকলে তাহসিনের বিয়োগব্যাথায় দিশেহারা।অন্যদিকে তাহসিনও সমানে নিজের শরীরের সাথে,নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছিল।কেউই ভালো ছিল না।তাহসিন রোদেলা আর নাজমা বেগমের উদ্দেশ্যে বলল,
-“তোমরা আর কান্না করো না প্লিজ।এই দেখো আমি তো ফিরে এসেছি।এখন আর চিন্তা নেই।”
থেমে রুহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“জানো তো মায়মূন যেদিন আমাদের ছেলে রুহান ক্যান্টনমেন্টে ওভাবে বাবা বাবা বলে ডাকছিল সেদিন আমার নিজেকে সামলাতে অনেক কষ্ট হয়েছিল।ছেলেটা এভাবে ডাকছে অথচ আমি এতটা কাছে থেকেও ছেলের ডাকে সারা দিতে পারলাম না।তোমার কান্নাভেজা চোখগুলোও মুছে দিতে খুব ইচ্ছে করছিল।কিন্তু আমার যে হাত-পা বাঁধা ছিল।আমি চেয়েও পারি নি তোমাদের কাছে এগিয়ে আসতে।”
রোদেলা ভেজা চোখ মুছে বলল,
-“আমার আপনার কন্ঠ শুনেই মনে হয়েছিল ওটা আপনি। তবে আমি ভেবেছি আমি হয়তো ভুল শুনেছি।কারণ আপনাকে আমি প্রায়ই আমার পাশে দেখতাম।আপনার কথা শুনতাম।ভেবেছি সেদিনও সেইম হয়েছে।কিন্তু বুঝতে পারি নি আপনি সত্যিই আমার এতটা কাছে এসেছিলেন।”
#চলবে
#নীল_বসন্ত
#লেখনীতে_মিথিলা_মিতু
#পর্ব:-৩৭(শেষ পর্বের বাকি অংশ)
সবাই মিলে গল্পগুজব করতে থাকে।গল্পগুজবের মাঝেই ডেলিভারি ম্যান এসে তাহসিনের অর্ডারকৃত কেক আর জন্মদিনের যাবতীয় জিনিস দিয়ে যায়।সাথে দিয়ে যায় রুহানের জন্য অর্ডার করা অনেক খেলনা।তাহসিন ট্রেনে থাকতেই এসব অর্ডার করে রেখেছিল।
তাহসিনের হলরুমটা বেলুন দিয়ে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়।কেক কা*টা হয়।রুহান তো খুবই খুশি।সে তো সারাটাক্ষন খিলখিল করে হেসেই চলেছে।খেলনা পেয়েও সে তো বেশ খুশি।
সবাই রাতের খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমাতে চলে গেল। রোদেলার কাছে কি যে শান্তি লাগছে আজ কত্তগুলো দিন পর সে তার মাহমুদ সাহেবকে কাছে পেয়েছে।তাকে স্পর্শ করতে পারছে।রুহান শুয়ে শুয়ে হাত-পা নাড়িয়ে খেলছে। একবার বাবার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসছে তো একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসছে।আবার বাবার গলা জড়িয়ে ধরছে।তাহসিন রুহানের কান্ডে বেশ আনন্দ পাচ্ছে।এইদিকে রোদেলা তো বাবা-ছেলের ভালোবাসা দেখে চোখ জুড়াচ্ছে। এটাই তো দেখতে চেয়েছিল।বাবা-ছেলেকে একসাথে দেখে এখন তার চোখ আর মন দুটোই তৃপ্তি পাচ্ছে।রুহান দুষ্টুমি করতে করতেই বাবার গলা জড়িয়ে একটা সময় ঘুমিয়ে পড়লো।রুহান ঘুমিয়ে পড়তেই তাহসিন রুহানের কপালে আদর দিল।অতঃপর রোদেলার দিকে তাকালো।রোদেলা ওদেরকেই দেখছে।তাহসিন ঠিক আগের মতোই রোদেলার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
-“মায়মূন,বুকে আসো।মরুভূমির বুকে এক পশলা বৃষ্টির ন্যায় এসে আমার এই উত্তপ্ত বুকটা শীতল করে দাও।”
রোদেলা কোনো বাক্যব্যয় না করে তাহসিনের কাছে গিয়ে তাহসিনকে জড়িয়ে ধরলো।তাহসিনের বুকে আবেশে মাথা রাখলো।তাহসিন রোদেলাকে বুকে জড়িয়ে নিল।রোদেলা ডুকরে কেঁদে উঠল।তাহসিন রোদেলার চুলে চুমু খেতে খেতে বলল,
-“প্লিজ মায়মূন কান্না করো না।তোমার চোখের পানি আমি সহ্য করতে পারি না।”
রোদেলা কান্না করতে করতে বলল,
-“কেন একটাবার জানালেন না আপনি আছেন?অন্তত একটাবার জানাতে পারতেন।আপনার অনুপস্থিতিতে আমি ভেতর থেকে কতটা ভঙ্গুর হয়ে গিয়েছিলাম সে খবর কি আপনি রেখেছেন?”
তাহসিন বলল,
-“ভেঙেই মানুষ আবার শক্ত হয়ে গড়ে উঠে।যেমনটা তুমি হয়েছো।আমি তোমার কাছে থাকলে এতটা শক্ত করে নিজেকে গড়ে তুলতে পারতে?”
-“কিন্তু আমি যে দিন দিন একাকিত্বে ডুবে যাচ্ছিলাম সেটার কি হবে?”
-“একাকিত্বকে বিদায় জানাতেই তো এলাম আমি।তুমি ডুবে যাওয়ার আগে প্রতিবার আমি তোমায় তুলে নিব।চিন্তা নেই মায়মূন।কথা দিয়েছিলাম না ফিরে আসবো।সৃষ্টিকর্তা রহম করেছেন তাই তো কথা রাখতে পেরেছি।আর কান্না নয়। আমি এসে পড়েছি না?আমি আমার সেই মায়মূনকে দেখতে চাই যে মায়মূনের ঠোঁট জুড়ে থাকতো স্নিগ্ধমাখা হাসি। দেখতে চাই আমার সেই সপ্তদশী ছোট মায়মূনটাকে যে কিনা কারণে-অকারণে অভিমানে মুখ ফুলাতো,লজ্জার চাদরে নিজেকে আবৃত রাখতো।সেই মায়মূনকেই আবার পেতে চাই।”
রোদেলা তাহসিনের উন্মুক্ত বুকে আকুলিবিকুলি করতে করতে বলল,
-“কিন্তু আপনার সেই সপ্তদশী মায়মূন তো এখন কুড়িতে পা রেখেছে।সে তো এখন আর ছোট নেই।সময়ের সাথে সাথে তার বয়সের বদল ঘটেছে।ঘটেছে তার স্বভাবেও।সে তো এখন শুধুমাত্র কারো আদুরে স্ত্রী নয়।সে এখন কারো মাও।”
তাহসিন হাসলো।বলল,
-“সময়ের সাথে সাথে আমিও বুড়ো হবো।তোমারও বয়স বাড়বে।কিন্তু আমার মায়মূন আমার মনে সেই প্রথমদিনকার মায়মূনই হয়ে থাকবে।যাকে কিনা প্রথমবার দেখে আমার হৃদস্পদন থমকে গিয়েছিল।যাকে দেখে আমার চোখ বেহায়া হয়েছিল,মুখ থেকে নিঃসৃত হয়েছিল মায়মূনকে লজ্জায় ফেলার মতো কথা।যাকে পেয়ে আমার হৃদয় বারবার নিয়ন্ত্রণ হারাতে চাইতো।”
রোদেলা চোখ তুলে তাহসিনের দিকে তাকালো।তাহসিনও রোদেলার দিকেই তাকিয়ে ছিল।যার দরুণ নিশব্দে দুজনার দৃষ্টির বিনিময় হয়ে গেল।তাহসিন রোদেলার কপালে,গালে ঠোঁট ছোয়ালো।অতঃপর অধরে নিজের ওষ্ঠজোড়া দিয়ে রাজত্ব চালালো।রোদেলার অধরসুধা পান করে রোদেলার দিকে তাকিয়ে বলল,
-“ভালোবাসি মায়মূন।”
রোদেলাও একই ভাবে বলল,
-“আমিও আপনাকে ভালোবাসি মাহমুদ সাহেব।”
তাহসিন রোদেলার দিকে তাকিয়েই একটু কাব্যিক ভাবে বলল,
-“আমাদের ভালোবাসাটা ছিল নীল বসন্তের মতোই আবেগঘন এক ঋতু।যেখানে জীবনের সুখ-দুঃখ, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি একসঙ্গে মিশে এক অন্যরকম মায়াজাল তৈরি করে রেখেছিল।”
তাহসিন থামতেই রোদেলাও তাহসিনের চোখের দিকেই তাকিয়ে বলল,
-“আর সে মায়াজালের ভেতরেই ছিল আপনাকে হারানোর ভয় আর ফিরে পাওয়ার এক অসীম প্রতিক্ষা।বসন্তের প্রতিটি দিন ফুড়াতো আপনাকে না পাওয়ার বিরহে।বসন্তের একেকটি দিন বিষাদের নীল রঙ হয়ে এসেছিল আমার জীবনে।অতঃপর ফের আপনি ফিরে এলেন আমার জীবনে রঙিন বসন্ত হয়ে।”
তাহসিন মৃদু হাসলো।এখনো দুইজন দুইজনার দিকেই তাকিয়ে আছে।ওদের এই ভালোবাসাময় চাহনিতে যেন সময়ও থমকে যেতে চাইবে।এতটা যুদ্ধ শেষে ভালোবাসার মানুষ দুটি আবার এক হলো।হ্যাঁ যুদ্ধই তো বটে।এই যে গত একটা বছর ধরে দুইজনেই তো নিজেদের মনের সাথে যুদ্ধ করে গেল।সময়ের সাথে যুদ্ধ করে গেল।রোদেলা নিজের মনকে শক্ত রাখতো, তার বিশ্বাস তার মাহমুদ সাহেব ঠিক ফিরে আসবে।অন্যদিকে তাহসিনও সময়ের সাথেই যুদ্ধ করলো।যে অপেক্ষায় ছিল তার কাঙ্খিত কাজ কবে শেষ হবে আর কবে সে তার পরিবারের কাছে,তার মায়মূনের কাছে ছোটে যাবে।দুইজনই সময়ের পথ চেয়েছিল।
জীবন হচ্ছে একটা যুদ্ধক্ষেত্র।এখানে বেঁচে থাকতে হলে প্রতিনিয়ত লড়াই করেই বেঁচে থাকতে হয়।এখানে সুখটা যেমন হাসিমুখে গ্রহণ করে নেওয়া হয় তেমনি দুঃখটাকেও ধৈর্য্যের সাথে বরণ করে নিতে হয়।সুখ আর দুঃখ এ দুইয়ের মিশ্রণই হচ্ছে জীবন।এখানে সুখ যেমন করে আসে দুঃখও সেভাবেই আগমন করে।সুখ আসেই দুঃখের আগাম বার্তা নিয়ে।আবার দুঃখের প্রস্থানেই সুখের আগমন ঘটে।মানুষ বসন্তের জন্য অপেক্ষা করে।কিন্তু সব বসন্ত রঙ ছড়ায় না, রঙিন হয় না।কখনো কখনো সে তো বিষাদের নীল রঙে এসে ধরা দেয়।যা থেকে মানুষ পালাতে চায় কিন্তু তা কি পারে?উহু একদমই পারে না।সে নীল বসন্তকে আলিঙ্গন করেই জীবনকে এগিয়ে নিতে হয়।
জীবনের সুখটুকু যদি হয় এক টুকরো রঙিন বসন্ত তবে দুঃখটুকু হয় বিষাক্ত নীল বসন্ত।বিষাদের নীল রঙ কাটাতে মানুষ অপেক্ষা করে রঙিন এক বসন্তের আশায়।হয়তোবা নীল রঙ মুছে কোনো এক বসন্ত রঙিন হয়ে ধরা দেয়।তবুও কারো কারো জীবনে কিছু বসন্ত বিষাদের রঙে রাঙানো নীল বসন্ত হয়েই গেঁথে থাকে আমরণ।রঙিন সময় এলেও নীল বসন্তটি থেকে যায় হৃদয়ের গভীরে অমলিন স্মৃতি হয়ে।
______সমাপ্ত______
[বি.দ্র:-কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।