নীল সাঁঝের উজান পর্ব-৩৭+৩৮+৩৯

0
37

#নীল_সাঁঝের_উজান
#পর্বঃ৩৭
#লেখনীতে_তানিয়া_রহমান

” মিলির মেজর হার্টএট্যাক হয়েছে সাঁঝ। ডাক্তার বলেছে আগামী চব্বিশ ঘণ্টা না যাওয়া অবধি কিছু বলা যাচ্ছে না। অবস্থা ভালো না। মেয়েটাতো এমনিতেই নিস্তেজ আর দূর্বল ছিলো আবার তার মধ্য বেচেঁ ফেরার জন্য নতুন যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাকে। তুমি ওর বাবা-মাকে খবর দাও। তাদের হসপিটালে আসা প্রয়োজন। আমি ওরে নিয়ে সিটি হসপিটালে এসেছি। তুমিও চলে এসো”।

রায়হান ফোনে কথাগুলো বলছিলো সাঁঝকে। রায়হানের যখন দিশেহারা অস্থির অবস্থা তখন তার মনে হলো মিলির বাবা-মাকে তাদের মেয়ের খবর জানানো হয়নি এখনও। অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। তারাও হয়তো মেয়ের জন্য চিন্তা করছে। তাড়াহুড়ো করে কাউকে কল দেওয়া হয়নি। মিলির ব্যাগটা রায়হানের সাথেই ছিলো। রায়হান ব্যাগ হাতড়ে ফোনটা বের করে। ফোন লক কিন্তু সাইড বাটনে প্রেস করে দেখতে পেলো ত্রিশটা মিসড কল উঠে আছে। এর মধ্য রায়হানের ফোন বেজে উঠে। ফোন হাতে নিয়ে দেখতে পায় সাঁঝ কল করছে। এতো বড় একটা দুশ্চিন্তার কথা কিভাবে বলবে রায়হান কথা গোছাতে পারছিলো না কিন্তু কথাতো বলতে হবেই। মিলির অসুস্থতার খবর জানাতে হবে। কলটা রিসিভ করার সাথে সাথেই সাঁঝ বললো

“ভাইয়া আপনারা কোথায় এখন? ডাক্তার দেখানো কি শেষ হয়নি? আন্টি মিলিকে ফোন দিচ্ছে অনেকক্ষন ধরে কিন্তু ও ফোন উঠাচ্ছে না। আংকেল আন্টি দুজনেই অনেক চিন্তা করছে ওর জন্য। ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছে হয়তো। আপনি ওরে বলেন আন্টিকে কল ব্যাক করতে। আন্টি চিন্তা করতেছে খুব”।

রায়হান কথা জড়িয়ে আসছে। গলা কাপঁছে কিন্তু কোন উপায় নেই। তাকে বলতেই হবে। রায়হান স্থির হয়ে সাঁঝকে বললো

” একটা খারাপ কিছু হয়েছে সাঁঝ। মিলি ভালো নেই “।

সাঁঝ বুঝতে পারলো না। হ্যাঁ মিলির সাথে খারাপ কিছুইতো হচ্ছে। মেয়েটা ভালো নেই একদম। এই জন্যইতো তাকে ডাক্তার দেখানো হচ্ছে যাতে কিছুটা হলেও সুস্থ বোধ করে। সাঁঝ বললো

” ডাক্তার কি বললো ভাইয়া? ওর মানসিক অবস্থা কেমন”?

রায়হান বললো

” মিলি খুব অসুস্থ সাঁঝ। ওরে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে। তুমি ওর মা-বাবাকে খবর দাও সিটি হসপিটালে আসার জন্য”।

সাঁঝের বুকটা কেপেঁ উঠে। কি হলো এইটুকু সময়ের মধ্য? মেয়েটা এতো অসুস্থ হয়ে গেলো কি করে? কাপাঁ কাঁপা গলায় অস্থির হয়ে রায়হানকে বললো

” কি হয়েছে মিলির “?

রায়হান স্থির গলায় সাঁঝকে উপরের কথাগুলো বুঝিয়ে বলে। সাথে এটাও বলে ঘটনার সূত্রপাত কোথায় থেকে হয়েছে। বলতে গিয়ে রায়হানের মেজাজটা আরও বিগড়ে গেলো। আজাদের সেই কুৎসিত চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। রায়হানের যে কি ইচ্ছে হচ্ছে সেটা একমাত্র সেই জানে। কোনরকমে রাগ সংযত করে বললো

” দেরি করোনা সাঁঝ। চলে আসো “।

রায়হান কল কে’টে দেয়। এসব শুনে সাঁঝ আর স্থির থাকতে পারলো না। জোরে চিৎকার করে ডুকরে কেদেঁ উঠলো। তার চিৎকারের আওয়াজ শুনে উজান ঘর থেকে বের হয়ে বাহিরে আসে। এসে দেখে সাঁঝ মেঝেতে বসে ডুকরে কাঁদতেছে। উজান দ্রুত এগিয়ে যায় নিজের বউয়ের কাছে। কি হয়েছে উজান জানে না তবে এটা বুঝতে পারছে খুবই খারাপ কিছু। সেতো মিলিকে ফোন করতে বাহিরে এসেছিলো। মিলিতো রায়হান ভাইয়ের সাথে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলো। মিলির কিছু হয়েছে নাকি? উজান বউকে দুহাতে জড়িয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো

” কি হয়েছে সাঁঝ? কাদঁছো কেনো ? কোনো খারাপ কিছু হয়েছে”?

সাঁঝ কান্নার তোড়ে কিছুই বলতে পারছিলো না। গলায় কথা আটকে যাচ্ছে তবুও কোন রকমে উজানকে জড়িয়ে ধরে বললো

” মিলি হসপিটালে ভর্তি। মেজর হার্ট এট্যাক করেছে। সেন্স নেই। ডাক্তার বলেছে চব্বিশ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না। অবস্থা স্থিতিশীল নয়”।

উজান যেনো বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো। মেয়েটা শারীরিক এবং মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরেছে এটা জানতো উজান। এতো বড় একটা অসুস্থতার মুখোমুখি হবে সেটা ভাবতেও পারেনি। শোক সইবার শক্তি অনেকের জন্য খুব নিদারুণ সাজা হয়ে যায় মাঝে মাঝে। মানুষ যখন কাউকে কষ্ট দেয় তখন আগে পিছে ভাবে না যে বিপরীত পাশের মানুষের কি হবে? কিভাবে সহ্য করবে? কতটা সহনীয় হবে তার দেওয়া কষ্ট সেই মানুষটার জন্য। বুকের ভেতর কিভাবে এই ভারটা বয়ে বেড়াবে আজীবন। সেওতো কষ্ট পেয়েছে কত বার কত রকম ভাবে। এখনো পাচ্ছে। একটা বাচ্চার জন্য বুকের মধ্য হাহাকার করে উঠে তার থেকে থেকে। একটা মেয়ে বউ হয়ে তার জীবনে এসেছে। নতুন করে এই ভাঙা আর পোড়া হৃদয় সারাতে। দিনশেষে সেওতো একটা মেয়ে একজন নারী। মায়ের জাত। তারও হয়তো ইচ্ছে করে মা হতে। মানুষের জীবন এতো নাটকীয়। সবাই ভালো আছে আবার তারাই কেউ ভালো নেই। উজান সাঁঝকে বুকের মধ্য জড়িয়ে সামলে নেয়। উজান বউয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো

“কেদোঁনা সাঁঝ। শান্ত হও। আংকেল আন্টিকে জানাও ব্যাপারটা। উনারা মেয়ের জন্য চিন্তা করছেন। তাদের আগে বল। মিলি কোথায়”?

উজানের কথায় সাঁঝ একটু শান্ত হয়। ওর হুশ ফেরে যে এখনো আংকেল আন্টি জানে না মিলির এই অবস্থা। উজান ফোন এগিয়ে দেয়। সাঁঝ মিলির মাকে ফোন করে সবটা জানায়। রায়হান তাকে যেভাবে বলেছে পুরোটাই হুবুহু জানায় তাদের। তারপরে তাদের হসপিটালে আসতে বলে। উজান সবটা শোনার পর বলে

” এই অস’ভ্য কা’পুরুষের এতো বড় সাহস হলো কিভাবে যে একটা মেয়েকে ভরা রাস্তায় এইভাবে হ্যারেস করার?এতো কিছু করেও শান্তি হয়নি এখন মেয়েটার জানের পিছে পরেছে। ওর নামে তো থানায় হ’ত্যা মামলা চেষ্টার অভিযোগ তুলে মামলা করা উচিত “।

সাঁঝ বললো

” ভাইয়া একা হসপিটালে আছে। আমরা কেউ না গেলে ভাইয়া আসতে পারবেনা। বাচ্চারাও অনেকক্ষন ধরে তাদের বাবাকে দেখেনি। আমরা কেউ না গেলে ভাইয়া বাড়িতে আসতে পারছে না বাচ্চাদের কাছে। যদিও বাবা-মা সামলে নিবে তবুও ভাইয়ার থাকাটা বেমানান হয়ে যাবে। ভাইয়া যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে ব্যাপারটা সামলানোর”।

উজান হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। তারপর তারা মিলিকে দেখতে যাওয়ার উদ্দেশ্য হাসপাতালের জন্য রওনা হলো। হাসপাতাল বেশি দূরে নয়। পঁচিশ মিনিট পরে তারা পৌছেঁ গেলো। রিসিপশন থেকে জেনে নিলো মিলিকে কোথায় রাখা হয়েছে। আইসিইউ এর সামনে আসতেই করিডোরে দেখতে পেলো রায়হান ডাক্তার এর সাথে কথা বলছে। সেই সময় মিলির বাবা-মাও হন্তদন্ত হয়ে এসে দাঁড়ালেন তাদের সাথে। সাঁঝকে দেখে মিলির মা বললেন

“আমার মেয়ে কোথায় সাঁঝ? কেমন আছে”?

তাদের কথা শুনতে পেয়ে রায়হান আর ডাক্তার তাদের দিকে তাকায়। রায়হান ইশারা করে এগিয়ে আসতে। সাঁঝ মিলির বাবা-মাকে নিয়ে এগিয়ে আসে। ডাক্তার বলে

” আপনারা পেশেন্টের কে হোন? বাবা-মা”?

তারা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়। ডাক্তার একটা লম্বা শ্বাস টানে। তারপর বলে

“দেখুন আমি আপনাদের অস্থিরতা বুঝতে পারছি। মেয়ের অসুস্থতার খবর নিশ্চয়ই শুনেই এসেছেন। পেশেন্ট শক থেকে হার্ট এট্যাক করেছে। টেষ্ট করে যা বুঝলাম তার আগে থেকে এমন কোন সমস্যা ছিলো না তবে হ্যা ইদানীং সে মানসিক ভাবে ভালোতো মোটেও ছিলো না যার প্রভাব শরীরে পড়েছে। এই জন্য সে এই শকটা সামলে উঠতে পারেনি। চব্বিশ ঘন্টা আমরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি। আপনারা উপরওয়ালাকে বেশি বেশি ডাকুন। পেশেন্ট যেন নিজে থেকেই এই ধাক্কাটা সামলানোর জন্য মনোবল পায় “।

মিলির বাবা বলে

” আমার মেয়েটা বাঁচবেতো ডাক্তার”?

ডাক্তার বললেন

“আপনারা দোয়া করুন বেশি বেশি। বাবা-মার দোয়া উপরওয়ালা চাইলে অবশ্যই সাড়া দিবেন “।

ডাক্তার চলে গেলো। রায়হান এতোক্ষন ধরে মিলির বাবা-মাকে দেখছিলেন। এইটা দেখে রায়হানের মনে পড়ে সোমা যখন খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পরলো তখন তার বাবা-মাও এইভাবে একরাশ আশায় বুক বেধেঁ বিধ্বস্ত অবস্থায় ডাক্তারের সাথে কথা বলেছিলেন কিন্তু ডাক্তার তাদের আশাহত করেছিলো। সেদিনটার কথা মনে হলে আজও বুকের ভেতর তীব্র চাপা ব্যাথা অনুভুত হয় তার। সব নিমেষেই শেষ হয়ে গেলো এক ঝটকায়। ছেলেমেয়ে দুটো মা হারা হলো চিরতরে। মেয়েটাতো নিজের মাকে দেখাতো দূর মা কি জিনিস সেটাই বুঝলো না। নিজের চেয়ে তার কাছে বাচ্চাদের বেশি হতভাগ্য বলে মনে হয় তার। দেশে ফেরার পর সে চেষ্টা করছে বাচ্চাদের সময় দিতে কিন্তু মায়ের অভাব বাবা দিয়ে পূরন হবে না। মাতো মা’ই হয়। তাদের মাতো লাখে একটা ছিলো। রায়হানকে চুপ করে থাকতে দেখে উজান এগিয়ে আসলো তার কাছে। উজান বললো

” কি ভাবছেন ভাইয়া? ভাইয়া আপনাকে অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে। আপনি বরং বাড়ি চলে যান। বাচ্চারাও অনেকক্ষন বাবাকে দেখেনি। আপনি আসার পর আপনার মেয়েতো আমাকে ভুলেই গেছে। আগে দেখলেই ছুটে চলে আসতো এখন আপনার কোলে চড়ে বসে থাকে”।

রায়হান হালকা হাসার চেষ্টা করে। মেয়েটা তার মায়ের মতো হয়েছে। এই কাঁদে আবার এই হেসে বুকে লেপ্টে থাকে। বাচ্চাদের অনেকক্ষন দেখাও হয়নি আবার মিলিকে এই অবস্থায় রেখে যেতেও মন সায় দিচ্ছে না। রায়হান ভাবলো তার অভিভাবক এসে গেছে আবার সাঁঝ আর উজানও আসছে। সে বাড়ি যেতেই পারে। সাঁঝ তাদের দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো

“তোমরা কি নিয়ে কথা বলছো? ভাইয়া আপনি অনেক ক্লান্ত। বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নেন”।

রায়হান বললো,

” যাবো বাড়িতে কিন্তু তার আগে থানায় যাবো একবার”।

সাঁঝ বললো

” কেনো ভাইয়া”?

রায়হান স্থির গলায় বললো

” মাঝ রাস্তায় মিলিকে অসম্মান করে তাকে হেনস্তা করা এবং হ’ত্যার চেষ্টা করার অভিযোগে আজাদের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করতে”।

চলবে…………

#নীল_সাঁঝের_উজান
#পর্বঃ৩৮
#লেখনীতে_তানিয়া_রহমান

” আচ্ছা মা আমার কি অপ’রাধ ছিলো বলোতো যে এইরকম একটা অমানুষের সাথে আমার বিয়ে হয়েছিলো? আমিতো নিজের কাছে সৎ ছিলাম,তোমাদের কাছে ছিলাম এমনকি পুরো দুনিয়ার মানুষের কাছেই স্বচ্ছ ছিলাম। তাহলে সময় কেন আমার সাথে সবচেয়ে অমানবিক আচরণ করলো? আমি এই প্রশ্নের কোন উত্তর পাইনা। এক সকালে ঘুম থেকে উঠলাম। তুমি এসে বললে মেয়েদের একটা সময় পরের বাড়িতে যেতে হয়। এটাই নিয়ম। আমাকেও যেতে হবে। আমি মেনে নিলাম। তোমাদের কথায় রাজি হলাম। তাহলে সেই পরের বাড়িটা আমার আমার জন্য পরের বাড়ি হয়েই রয়ে গেলো। আপন হলো নাতো। যে মানুষ এর সাথে বিয়ে হলো সেতো আমারে নিঃস্ব করে দিয়ে চলে গেলো। আমি নিজের সাথে হওয়া এই অবিচার শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম মা। কিছুই পারলাম না মা। এমন কেন হলো মা”?

হসপিটালের বিছানায় শুয়ে আছে এক নারী যার জীবনটা নরকে রুপান্তরিত করতে এক মুহুর্তও ভাবেনি এক কা’পুরুষ। একজন পুরুষ যার মধ্য কোনো বিবেকবোধ নাই আর না আছে মনুষ্যত্ব। যে দিনের পর দিন আরও বেশি অমানুষে পরিণত হচ্ছে। প’শুর চেয়েও নিম্নস্তরে যার মন মানসিকতা চলে যাচ্ছে দিনের পর দিন। হাতে ক্যানোলা চলছে। গায়ে সুক্ষ্ম ব্যাথা সেই সাথে মাথা ঝিম ধরে আছে। শরীরটা দূর্বল তার জন্য চোখটা খুলে রাখতেও কষ্ট হচ্ছে। চব্বিশ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষনে থাকার পর আইসিইউ থেকে মিলিকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে। মিলির বাবা-মা মেয়েকে অল্প কিছুক্ষণের জন্য দেখার অনুমতি পেয়েছে। মেয়েকে দেখার সাথে সাথেই তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার সবচেয়ে শান্ত স্থির আর লক্ষ্মী মেয়েটা আজকে জীবন মর”ণের সাথে লেয়াই করছে। একেকটা দিন এক যুগের মতো মনে হচ্ছে। মেয়ের সুখের কথা ভেবে ভালো পাত্র মনে করে মেয়েকে যার সাথে বিয়ে দিলো সেই ছেলেই মেয়েকে আজ এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে। বাবা-মা কে মেয়ে কোন আবেগ অনুভূতি কিছুই প্রকাশ করলো না শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। মিলির মা মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন

“এখন কেমন লাগছে মা”?

এই একটা কথাই যেন মিলিকে আরও বেশি দূর্বল করে দিলো। অন্যসময় হলে মিলি বলতো আনি ভালো আছি মা। বেশ আছি। আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না। সময় থাকতে বেচেঁ গেছি কিন্তু আজকে মিলির মনে হচ্ছে এতোদিন সে যা বলতো মিথ্যা বলতো।সে ভালো নেই একদম নেই। তাকে ভালো থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। এক অমানুষ তাকে ভালো থাকতে দিচ্ছে না। মিলি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। বুকে একটা চাপা ব্যাথা হচ্ছে তার। চোখের কোণ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরছে। কান্নার পানিতে বালিশ ভিজে যাচ্ছে। একদিনে মিলি যেন আরও শুকিয়ে গেছে। বিধ্বস্ত মিলি আরও বেশি বিপর্যস্ত হয়ে পরেছে। মেয়ের চোখে পানি দেখে মিলির বাবা-মাও অস্থির হয়ে গেলেন। মেয়েকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা তাদের জানা নেই। তারাও স্তব্ধ হয়ে আছেন। তাদের নিজেদেরই মেয়ের এই অবস্থার জন্য দায়ী এবং অপ”রাধী মনে হচ্ছে এখন। মিলি মা-বাবার কথায় উপরের কথাগুলো বলে একটা লম্বা শ্বাস টেনে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। এখন আর তার কোনো কথা বলার ইচ্ছা হচ্ছে না। সে একা থাকতে চায়। মিলির বাবা-মাও আর কিছু বলার সাহস করলেন না। এরই মধ্য দরজায় টোকা পরলো। ডাক্তার এসেছে চেক আপ করার জন্য। ডাক্তার মিলিকে পরীক্ষা করলো। তারপর বললো

” আপনি অনেক সাহসী একজন মানুষ মিস মিলি। আপনি যেভাবে লড়াই করলেন এই চব্বিশ ঘন্টা তা অনেক প্রশংসনীয়। যে অবস্থায় আপনাকে এখানে আনা হয়েছিলো আমাদেরতো ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিলেন আপনি। আপনার ফিরে আসাটা সত্যিই অবাক করার মতো। এতোগুলো মানুষ আপনার জন্য প্রার্থনা করেছেন। সৃষ্টিকর্তা সবার আর্জি মঞ্জুর করেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য মি.রায়হান সাহেবের। উনি আপনাকে সময়মতো এখানে না আনলে হয়তো একটা অঘটন ঘটে যেতো। নিজ দায়িত্ব নিয়ে উনি আপনার চিকিৎসা শুরু করিয়েছিলেন। আপনার অভিভাবক আসতে দেরি হয়েছে কিন্তু চিকিৎসা যথাসময়ে শুরু হয়েছে। আমি আপনার কেস হিস্ট্রিটা শুনলাম। দেখুন মানুষের জীবন পরিবর্তনশীল। আজ যে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে আপনি যাচ্ছেন কাল এই সময়টা ফুরিয়ে একটা ভালো সময় আসবে। খারাপ সময়টা থাকবে না। আপনার কষ্ট আমরা হয়তো আপনার মতো করে বুঝতে পারবোনা কিন্তু এইটুকু উপলব্ধি করতে পারি আপনি বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। এইভাবে কষ্ট পাবেন না। মনোবল বাড়াতে হবে তবেই প্রতিপক্ষকে হারানো যাবে”।

ডাক্তারের কথায় মিলি যেন কিছুটা শক্তি ফিরে পেলো মনে হচ্ছে। এতোক্ষন নিজেকে যতটা দূর্বল মনে হচ্ছিলো এখন তেমনটা লাগছে না। হালকা মনে হচ্ছে। রায়হান মানুষটা আসলেই ভালো মনে হয়েছে তার কাছে। তাকে বুঝে। তার সাথে কথা বললে অন্যরকম একটা শান্তি লাগে মিলির। পজিটিভ ভাইব আসে মনের মধ্য। হাসি খুশি থাকে অনেকটা। সেদিনও তারা ভালোই ছিলো। হঠাৎ করে এক অমানুষ এসে সেই ভালো সময়টা দুর্বিষহ করে তুললো। মিলি মনে করার চেষ্টা করলো আজাদ যখন তাকে সেই অকথ্য ইংগিতে কথাগুলো বলছিলো রায়হান ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। সেই মানুষটা এখন কোথায়? তাকে কি আর দেখতে আসবে না? রায়হানকে দেখতে ইচ্ছে করছে মিলির খুব। মানুষটা এতো কিছু করলো তার জন্য। অবশ্য মিলিতো তার কেউ নয়। সে আবার মিলিকে দেখতে আসবেই বা কেন। তবুও চোখ বারবার যাচ্ছে দরজার কাছে। যদি হঠাৎ করে আসে রায়হান। যদি সে এসে একটু বলে মিলি কেমন আছেন। তাহলে মিলি সুস্থ হয়ে যেতো কিন্তু সে কি আসবে? ডাক্তার মিলির দিকে তাকিয়ে আছেন। মিলির চোখ মুখে কেমন যেন একটা অস্থিরতা৷ কিছু জানতে চায় এমন। ডাক্তার বললেন

“মিস মিলি আপনি কি কাউকে খুঁজছেন”?

মিলি চমকে উঠে ডাক্তারের কথায়। হ্যা সে আসলেই খুঁজছে একজনকে। রায়হানকে খুঁজছে সে। মিলি ইতস্তত করে বলে

” ডাক্তার আমার বান্ধবী বা রায়হান সাহেব তারা কি কেউ পরে এসেছিলো আর?

ডাক্তার বললো

“রায়হান সাহেব এখনো আসেননি তবে ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন। আর আপনার বান্ধবী কাল প্রায় অনেকক্ষনই ছিলেন স্বামী সহ। পরে উনার স্বামীর অফিসের ব্যস্ততার জন্য উনাকে যেতে হয়েছে তবে উনি আসবে আবার আপনাকে দেখতে “।

মিলির খুব অভিমান হয় ডাক্তারের কথা শুনে। আসতে যখন পারবেনা তখন ফোন করেছে কেন? এতো আহ্লাদ করতেতো কেউ বলেনি তাকে। একবার এসে দেখে গেলেইতো পারতো। অভিমানে গাল ফুলিয়ে ফেলে সে। এরই মধ্য কেবিনের দরজায় টোকা পরে। মিলি চোখ ফিরিয়ে দেখে রায়হান এসেছে। তখন মিলির কাছে মনে হয় এতোক্ষন যে চোখ একজন মানুষকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলো তার দেখা পেলো। মিলি মনে মনে অদ্ভুত একটা শান্তি পাচ্ছে। চোখ মুখের বির্বণতা অস্থিরতা কমতে শুরু করলো। মিলির মনে এতোক্ষন যে অভিমানের ছায়া ভর করেছিলো তা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করলো। মিলির এমন কেন মনে হচ্ছে মিলি তা জানে না। বুঝতেও পারছে না। আপাতত তার মনে এবং গায়ে এতো শক্তি নেই সে এর মানে বের করবে। তবে রায়হান রুমে ঢুকার পর আরও দুজন প্রবেশ করলো তার সাথে। দুজন পুলিশ অফিসার এসেছে তার সাথে৷ পুলিশকে দেখে মিলি অবাক হয়। হাসপাতালে পুলিশ কেন? আর তার কেবিনেই বা কেন? রায়হানই বা পুলিশের সাথে কি করছে? এতো কিছুর মধ্য পুলিশ অফিসার ডাক্তারকে বললো

” আমরা মিলির সাথে দুই মিনিট কথা বলতে চাই। উনার বেশি সময় নিবো না। শুধু একটা জবানবন্দি নিবো”।

ডাক্তার বললেন

” ঠিক আছে। তবে রোগী উত্তেজিত হয়ে পড়ে এমন কিছু বলবেন না। উনি এখনো অনেক দূর্বল”।

পুলিশ অফিসার হ্যা সুচক মাথা নাড়ায়। ডাক্তার চলে যায়। তবে মিলির বাবা-মা আর রায়হান সাথে থাকে। পুলিশ অফিসার মিলিকে প্রশ্ন করে

” মিস মিলি রায়হান সাহেব বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। আজাদ সাহেব আপনাকে হেনস্তা এবং আপনার জীবন সংকটে ফেলেছেন এই মর্মে। আপনি যদি এই বিষয় নিয়ে আমাদের সত্যতা যাচাই করতে সাহায্য করতেন খুবই ভালো হতো”।

মিলি রায়হানের দিকে তাকায়। মিলি বুঝতে পারে ও এইজন্যই এতো ব্যস্ততা। এই জন্যই তার আসতে এতো দেরি হলো। এই মানুষটাকে যত দেখছে অবাক হচ্ছে মিলি। মিলি পুলিশ অফিসার কে সম্মতি দিয়ে পুরো ঘটনার আদ্যোপান্ত বললো। পুলিশ নোট করলো মিলির জবানবন্দি। তারপর পুলিশ চলে গেলো। যাওয়ার আগে রায়হানকে বললো

“খুব তাড়াতাড়ি তারা আজাদকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করবে”।

পুলিশ অফিসার চলে গেলে মিলি রায়হানকে বললো

” আসবেন না যখন তখন ডাক্তারকে ফোন করার কি দরকার ছিলো। না আসলেই পারতেন। ম’রে গেলেও কি আসতেন না একবার দেখতে”?

চলবে………

#নীল_সাঁঝের_উজান
#পর্বঃ৩৯
#লেখনীতে_তানিয়া_রহমান

” তোমাকে কে বললো আমি ডাক্তারকে শুধু তোমার খবর নেওয়ার জন্যই ফোন করে দায়সারা কাজ সারতে চেয়েছিলাম? আমার দেরিতে আসার কারন আরও আছেতো।হাতের অনেক কাজ পেন্ডিং ছিলো। অফিসিয়াল কাজ শেষ করতে হয়েছে। বাচ্চাদের সময় দিতে হয়েছে। মেয়ে হওয়ার পরতো তাকে সময় দেওয়া হয়নি। বাবা হিসেবে আমি ঠিকমতো কোন দায়িত্বই পালন করিনি। সোমা বেচেঁ থাকাকালীন তার কাধেঁই সব দায়িত্ব দিয়ে দিনের পর দিন বিদেশে ছিলাম। বউ বাচ্চা কিভাবে আছে ভালো আছে না খারাপ আছে সব কথার বিনিময় মতো ফোনে। তারা কি আসলেও ভালো আছে নাকি সেটা আমার কাছেই শুধু দেখাচ্ছে এইটা বুঝার জন্য যে চেষ্টা করা দরকার সেটা আমার পক্ষ থেকে হেলা ফেলা করেছিলাম বলেই সোমার অনুপস্থিতি আমাকে মাঝে মধ্য অসহায় করে তোলে। দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত আমি এই জন্যই নিয়েছিলাম যাতে বাচ্চাদের সাথে থাকতে পারি। দুইটা অবুঝ বাচ্চা আমার মাকেতো হারিয়েছেই এখন যদি বাবাকেও না পায় নিজের সন্তানদের এই মুখ আমি কি করে দেখাবো এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছিলাম বলেই আমি সব ছেড়ে দেশে এসেছি। তবে সিদ্ধান্ত আরও আগে নিলে সোমাকে আমার প্রতি এতো অভিযোগ নিয়ে চলে যেতে হতো না”।

রায়হানের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো এতোক্ষন মিলি। হঠাৎ করে রায়হানের প্রতি যে অভিমান জন্মেছিলো তা পানি হয়ে গেলো। আসলেই কি অভিমান করা তার সাজে? অভিমান কারা করে আর কিসের জন্য করে? অভিমান রাগ তাদের সাথেই করা যায় যার সাথে কোনো না কোন সম্পর্কের অধিকার আছে। রায়হান তার কেউ হয় না। শুধু নামমাত্র বান্ধবীর দুলাভাই হয় এই চেনা পরিচয়ে কারো সাথে অভিমান করা সাজে না তার। তবুও অভিমান কেনো হলো তার। মিলি শান্ত গলায় বললো

” আপনি সোমা আপুকে খুব ভালোবাতেন তাই না”?

রায়হান বেডের পাশে থাকা টুলটা টেনে বসে। মিলির দিকে তাকায়। একদিনে মেয়েটার অবস্থা আরও কাহিল হয়ে গেছে। বয়স যেন আরও দ্বিগুণ হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। মুখটা ফ্যাকাশে রক্তশুন্য লাগছে। বুঝায় যাচ্ছে কি বিধ্বস্ত অবস্থায় আছে সে। কি বড় একটা ঝড় গেছে তার উপর দিয়ে। একটা সাদা বিছানায় লম্বা সাদা চাদরে ঢেকে আছে সে। স্যালাইন ড্রিপ চলছে। রায়হান স্মিত হেসে মিলির দিকে তাকিয়ে বললো

” সোমাকে খুব ভালোবাসতাম কিন্তু তার সাথে সবচেয়ে বড় বেইনসাফিটা আমি নিজেই করেছি৷ দিনের পর দিন বিদেশে থেকে তার ভালোবাসাকে যোগ্য সম্মান দেইনি। তার যখন আমাকে খুব প্রয়োজন ছিলো তখন আমি পাশে থাকিনি। মানসিকভাবে সংসারের রাজনীতির কবলে পরে সে যখন সন্তান নিয়ে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো তখন আমি স্বার্থপরের মতো দূরে থেকে শুধু শব্দ দিয়ে শান্তনা দিয়ে গেছি। এইদিকে যে আমার মানুষটা ভেঙে যাচ্ছিলো ভেতর থেকে দিনের পর দিন সেটা আমি টেরই পাইনি “।

মিলি লম্বা একটা শ্বাস টানে। তার কাছে রায়হানের কথা শুনে হলো জীবিত অবস্থায় মানুষ এর যতটা গুরুত্ব থাকে তখন তাকে যেভাবে অগ্রাহ্য করা হয় তার মৃত্যু”র পর মানুষ তার চেয়ে পাচঁগুন বেশি তাকে মনে করে হাহাকার করে। আচ্ছা সে ম’রে গেলে কি আজাদ তাকে মুল্যায়ন করবে? সেদিন ভরা রাস্তায় যেভাবে তাকে লোক সমাগমের মধ্য অকথ্য ভাষায় কথাগুলো বললো তার কি কখনো এই বোধশক্তি হবে যে সে কি বড় একটা অন্যায় করেছে আমার সাথে? মিলি রায়হানকে প্রশ্ন করলো

” আপনি আজাদকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে এতো মরিয়া হয়ে গেলেন কেনো”?

রায়হান বললো

” এরকম অমানুষ আর পাগলা লাগামহীন কু”কু’রকে এভাবে রাস্তায় মানুষের মধ্য একা ছাড়তে নেই। কখন কিভাবে কাকে কা’ম”ড় দিয়ে বসবে তার ঠিক নাই। সে এই আলো হাওয়া বাতাসে শুদ্ধ অক্সিজেন নেওয়ার মতো যোগ্য না। তার প্রাপ্য স্থানেই তাকে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি”।

মিলি জিজ্ঞাসু চোখে রায়হানের দিকে তাকায়। রায়হান মিলির চোখের ভাষা বুঝতে পেরে তাকে বললো

” কাল হসপিটাল থেকে বাড়ি ফেরার পথে থানা হয়ে বাড়ি ফিরেছি। শান্তি পাচ্ছিলাম না। মনের মধ্য খোচাঁচ্ছিলো আমার চোখের সামনে এতো বড় একটা কান্ড হয়ে গেলো অথচ তোমাকে বাচাঁতে পারলাম না। তাই আজাদের আসল শ্বশুর বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করেই বাড়ি ফিরেছি। আমার অনুমান ভুল না হলে পুলিশ তার ঠিকানায় পৌঁছে গেছে”।

মিলি হতাশ হয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললো

” এসব থানা, পুলিশ, মামলা এবং আদালত করে কি হবে? সেইতো তাদের তরফ থেকে বলা হয় আপোষ করতে। যদি রাজি না হই তখন আরও কত অকথ্য কথা আর খোঁচা শুনতে হবে। এগুলোতো আগেও হয়েছিলো। লাভ বিশেষ হয়নি। উচিত শিক্ষা পায়নি বলেই আরও বেশি অমানুষে পরিনত হচ্ছে”।

রায়হান স্থির গলায় বলে

“এবার সে সুযোগ নেই। এবারের মামলার বিষয় আরও গুরুতর। এই বিষয় নিয়ে আপোষ হওয়ার সুযোগ নেই”।

মিলি কাঁদছে। আবারও তার চোখ ছাপিয়ে কান্না আসছে। গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। গলায় দলা পেকে আছে। একটা সুস্থ স্বাভাবিক সংসারইতো সে আজীবন চেয়ে এসেছিলো। কান্না আটকাতে চেয়েও ফুপিঁয়ে কেদেঁ উঠলো সে। রায়হান বিষয়টা বুঝতে পেরে বললো

” আর কত কাঁদবে মিলি? কেদেঁ নিজেকে এতো দূর্বল করে নিজের শরীর ও মনের ক্ষতি ছাড়া তুমি আর কিছুইতো করছেন না। আমার মনে হয়েছিলো তুমি অনেক সাহসী একজন মানুষ কিন্তু যা দেখছি তাতে আমার ভাবনা পরিবর্তন করতে হবে দেখতেছি। এতো ছিচকাদুঁনে মেয়ে হলে কিভাবে কঠিন সময়গুলোতে নিজেকে সামলাবে তুমি ? নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে। আত্নবিশ্বাসী হতে হবে। সমালোচনার মুখোমুখি হয়ে লড়াই করতে হবে তবেই না মানুষ তোমাকে সাহসী বলবে”।

মিলি চোখ রাঙিয়ে নাক টেনে বললো

“আমি ভীতু। আমার সাহস নেই? আমি ছিচকাদুঁনে? এতো বড় কথা আপনি বলতে পারলেন আমাকে”?

রায়হান যেনো মজা পেলো মিলির এই কথায়। সেতো এটাই চেয়েছিলো যেন মিলি এই কথায় রেগে যায়। তার জিদ উঠে। রায়হান সোজাসাপ্টা বললো

” অবশ্যই পারলাম। আমি একটা কথাও ভুল বলিনি। তুমি নিজেই ভেবে দেখো এযাবৎ যা যা করেছেন নিজের সাথে আর যে হাল বানিয়েছেন নিজের তাতে তোমাকে সাহসী বলা যায় কিনা? সাহসী হইলে কেউ নিজের জীবনকে এভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে? কেউ নিজেকে বার বার আঘা’ত করতে চায়? কেউ এভাবে ভেঙে পড়ে? এই যে হার্টএট্যাক করে হসপিটালে আধম’রা হয়ে পরে আছো তোমাকে আমার এখন কেমন ভাবা উচিত”?

মিলি আর কিছু বলার মতো শব্দ খুঁজে পেলোনা। গত কয়েকদিন ধরে সে সত্যিই নিজের সাথে যা করেছে তাতে অন্তত তাকে আর সাহসী বলা চলে না কিন্তু কি করবে সে? নিজেকে সামলানো কঠিন থেকে কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো তার কাছে। সব কিছু অসহ্য লাগে তার। কেমন দিশেহারা পাগল পাগল লাগে নিজেকে। মাথা কাজ করে না। মিলি চুপ করে আছে। এখন তার আর কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। মিলিকে চুপ করে থাকতে দেখে রায়হান বললো

“আসছি এখন। আমাকে অফিসে যেতে হবে। নতুন চাকরি। শুরুতেই কাজে গাফিলতি করলে মান ইজ্জত থাকবে না”।

মিলি অবাক হয়ে চেয়ে তাকায় রায়হানের দিকে। অফিস ও নতুন চাকরি মানে তার চাকরি হয়েছে। মিলি বলে

” কবে হলো চাকরি?

রায়হান বললো

” গত কাল রাতে মেইল চেক করতে গিয়ে দেখি কোম্পানি থেকে অফার লেটার এসেছে। ইন্টারভিউ অনেক আগেই দিয়েছিলাম কিন্তু মেইল এসেছে কালকে। আজকে একবার যেতে বলেছে। সেখানেই যেতে হবে। থাকো আসছি। বেশি চিন্তা করোনা। নিজের খেয়াল রেখো”।

মিলি অবচেতন মনে বলে উঠে

“আপনি কি আর আসবেন না আমাকে দেখতে?

অন্যদিকে

বাড়িতে আজাদের বাবা না থাকায় ছেকেকে ডেকে পাঠিয়েছিলো আজাদের মা। অনেকদিন ছেলে বাড়িতে আসেনা। কি খাচ্ছে কোথায় আছে কোন খোঁজ পাওয়া যায়না তার। ছেলের জন্য মন কাঁদে তার। কি এক মেয়ের পাল্লায় পরে নিজের ঘর সংসার সব শেষ করলো সে। ছেলেকে দেখে আতঁকে উঠেন তিনি। এই কি অবস্থা ছেলের। চেহারাতে মা’রের দাগ। কপালের কোনায় জ”খ’ম। কে মে’রেছে তার ছেলেকে এভাবে? ছেলের এই হাল দেখে আজাদ কে জিজ্ঞেস করলো

” তোর এই অবস্থা কেনো? কোথায় কার সাথে মারপিট করে এসেছিস? তুই কি শুধরাবি না? একটু কি শান্তি দিবি না আমাকে? ঘর ছাড়াতো তোর বাপ তোকে করেই দিয়েছে। এখন কি চাস তোর চিন্তায় আমিও ম’রে যাই? নিজের এতো সুন্দর জীবনটা নিজের হাতে নষ্ট করলি তুই। বল কে তোর এই অবস্থা করেছে?

আজাদ চোখ মুখে রাগ নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বলে

” তোমার পুরনো বউমা নতুন প্রেমিক জুটিয়েছে সে এই হাল করেছে। আগে ভরা রাস্তায় নিজে পায়ের জুতা খুলে মে’রেছে তারপর তার নতুন নাগরকে দিয়ে পি’টিয়েছে “।

চলবে……………