নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব-৫৪+৫৫

0
1081

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৫৪ {বোনাস 💜}

আব্রাহামের অফিস নিলামে উঠেছে। হ্যাঁ আব্রাহামের অফিসের ৪ ভাগের ১ ভাগ নিলামে উঠেছে। রাশেদ আজ সকাল থেকেই এগুলো ঝামেলা তে পরে রয়েছে। আর যখন আইরাত তাকে ফোন দেয় তখন রাশেদ আইরাতকে এই কথাই বলে। আর আইরাতের তো এটা শুনে মেজাজ ৪৪০ হয়ে গেছে। আইরাত আর কিছু না বলেই সোজা গাড়ির চাবি টা হাতে নিয়ে বাড়ির বাইরে এসে পরে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। আব্রাহামের অফিসের এক ভাগ নিলামে উঠেছে লাইক সিরিয়াসলি? তীব্র ভাবে গাড়ি ড্রাইভ করে যাচ্ছে আইরাত। প্রায় ২০-২৫ মিনিট পর গাড়ি এসে আব্রাহামের অফিসের সামনে থামে। আইরাত গাড়ির দরজা টা ঠাস করে লাগিয়ে দেয়। আইরাত ভেতরের দিকে হাটা দেয় কিছুদূর যেতে দেখে অফিসের সামনে বেশ কিছু লোক বসে আছে সারিবদ্ধ ভাবে। আর তাদের সবার সামনে দুই-তিনজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত কে দেখতে পেরে রাশেদ তার কাছে আসে। আইরাত কাউকে কিছু না বলেই সোজা সামনে চলে যায়।

আইরাত;; বন্ধ করুন এইসব কিছু। কি হচ্ছে এখানে?

আইরাতের চিল্লানোতে সবাই তার দিকে তাকায়। তাকে দেখে একজন লোক এগিয়ে আসে। লোকটি আজাদ রহমান অর্থাৎ যে এই নিলাম তুলেছেন আরকি।

আজাদ;; কে আপনি? আর এখানে কি চাই?

আইরাত;; কে আমি? যার অফিস কে নিলামে তুলেছেন তার বউ হই আমি। আর এগুলো কি হচ্ছে? বিনা কারো পারমিশনে আপনার সাহস হয় কি করে আব্রাহামের অফিসের এক অংশ নিলামে তুলার।

আজাদ;; আমাদের কাছে পুলিশের পারমিশন আছে।

আইরাত;; তাই না? পারমিশন, তো সেটা পুলিশ কে মোটা অংকের ঘুষ খাইয়ে তো আমিও নিতে পারবো।

আজাদ;; দেখুন….

আর কেউ কিছু বলতে যাবে তার আগেই কিছু পুলিশ অফিসার আসে। তারা আসতেই আজাদ বলে ওঠে….

আজাদ;; স্যার দেখুন আমাদের কাছে আপনার পারমিশন থাকা সত্ত্বেও উনি এসে আমাদের কাজ বাধা দিচ্ছেন।

পুলিশ;; মিসেস আইরাত..

আইরাত;; হুয়াট? (চিল্লিয়ে)

পুলিশ;; দেখুন আসলে…

আইরাত;; কিশের ভিত্তিতে আপনারা নিলামে তুলেছেন?

পুলিশ;; দেখুন অফিসে আগুন লেগেছিলো। আর যে অংশে আগুন লেগেছিলো সেখানে কেউ কাজ করে না। কেবিন গুলো পরে আছে। তবে আগুন লাগলেও সেখানে প্রায় লক্ষ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে। সেই টাকা গুলো অবৈধ।

আইরাত;; অবৈধ রাইট? তো আগে আপনি আমাকে এটা বলুন যে পুলিশ তো আপনি হয়ে গেছেনই কিন্তু খাবার খেয়ে নাকি গরুর ঘাস খেয়ে হয়েছেন কোনটা?

পুলিশ;; এক্সকিউজ মি।

আইরাত;; এক্সকিউজ মি মাই ফুট। তো এইযে আপনি বলছেন না যে অবৈধ টাকা পাওয়া গেছে। সত্যি কথা বলতে এমন টাকা গুলো আপনার বাড়ি তালাশি করলেও পাওয়া যাবে। তো অযথা এতো প্যাচ লাগানো বন্ধ করুন। মিস্টার আজাদ আপনাকে কতো লক্ষ টাকা দিয়েছি নাকি কোটি দিয়েছে কোনটা। আমি তার থেকে ডাবল দিবো আপনাকে। আপনি এখনই আমাকে মিস্টার আজাদের বাড়ি নিলামে তুলার পারমিশন টা দিয়ে দিন।

পুলিশ;; আপনি ক……..

আইরাত;; আব্রাহাম কেমন মানুষ ছিলো বা কোন জগৎ এর মানুষ ছিলো তা আপনি-আমি সবাই জানি। এখানে নতুন করে বলার কিছুই নেই। কিন্তু তাই বলে আব্রাহাম কোন ইলিগ্যাল কাজ করবে তার প্রশ্নই আসে না। টাকারই অফিস। অফিসে টাকার কাজই করা হয় তো টাকা পাওয়া যাবে না আশ্চর্য তো। মানলাম যে কেবিন গুলো তে আগুন লেগেছিলো সেখানে কোন কাজ করা হয় না তাই বলে টাকা থাকবে না এমন কোন কথা আছে নাকি। আর নিলামে তো ওই কেবিন গুলোই তোলা হয়েছে তাই না।

পুলিশ;; আসলে ম্যাম। আচ্ছা আমরা সব আগের মতো করে দিচ্ছে। কোন নিলাম-টিলাম হবে না। সব বন্ধ।

আইরাত;; হ্যাঁ যতো তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দিবেন এইসব ততো তাড়াতাড়ি আপনাদেরই ভালো। আর একটা কথা এখানে না এখনো এমন কোন বিজন্যান ম্যান তৈরি হয়নি যে কিনা আব্রাহামের অফিসের এক অংশ তো দূর অর্ধেক অংশও কিনে নিতে পারবে । (আজাদের দিকে তাকিয়ে)

আইরাত;; এখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চেহারা কি দেখছেন যান এখন থেকে সব। (চিল্লিয়ে)

সবাই সেখান থেকে চলে যায়। আইরাত নিজেও চলে আসতে নিবে তখন পুলিশ অফিসার ডাক দিয়ে ওঠে….

পুলিশ;; ম্যাম!

আইরাত পেছন ঘুরে তাকায়।

পুলিশ;; ম্যাম সরি টু সে বাট আব্রাহাম স্যার তো এখন আর নেই তাহলে উনার এই অফিস- আন্ডারগ্রাউন্ড বা এই এত্তো সব কিছু কীভাবে কি?

আইরাত;; সেই মাথা ব্যাথা আপনার না আমার। আর হ্যাঁ আব্রাহামের আইরাত এখন মরে নি বেঁচে আছে।

এই বলেই আইরাত সেখান থেকে এসে পরে। আইরাত যখন বাইরে আসে তখন রাশেদ তার দিকে তাকিয়ে ছিলো।

আইরাত;; কি হলো?

রাশেদ;; ম্যাম সত্যি বলতে আমি এইটা সামলাতে পারতাম না। একদম সিচুয়েশন বিগড়ে যেতো কিন্তু আপনি….

আইরাত;; হয়েছে। আমি বাড়ি যাচ্ছি। আর যত জলদি সম্ভব ওই পুড়ে যাওয়া কেবিন গুলোকে দ্রুত ঠিক করো। আর হ্যাঁ কাল সকাল বেলা অফিসের যতো প্যান্ডিং ফাইল আছে সব কটা আমার বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবে। এখন থেকেই কাজ করার দরকার নেই। অফিস আগে সম্পূর্ণ রুপে ঠিক হোক তারপর। আপাতত আব্রাহামের ফাইল গুলো বাসায় পৌঁছে দিও।

রাশেদ;; জ্বি ম্যাম আচ্ছা।

তখনই একজন ড্রাইভার কে আইরাতের চোখে পরে। সে অতি দ্রুত কিছুটা লুকিয়েই অফিসের পেছন রাস্তা দিয়ে বের হয়ে গেলো। আইরাতের কাছে ব্যাপার টা কেমন যেনো বাধলো। এই সেই ড্রাইভার টা যে রায়হানের সাথে জড়িত ছিলো। তবে আইরাত তা জানে না আর না ই রাশেদ জানে।

আইরাত;; রাশেদ?

রাশেদ;; জ্বি?

আইরাত;; ওইযে মাত্রই যে ড্রাইভার টা গেলো ও কে? আগে তো দেখি নি।

রাশেদ;; ম্যাম ওর নাম নাফিজ। নতুন ড্রাইভার।

আইরাত;; ওহহ আচ্ছা।

এই বলেই আইরাত গাড়িতে উঠে পরে। তারপর ড্রাইভ করে বাড়ি এসে পরে। বাড়ি এসেই দেখে ইলা গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে।

আইরাত;; এভাবে দাঁড়িয়ে আছো যে? কি হয়েছে?

ইলা;; তুই তখন ওভাবে চলে গেলি কিছু না বলেই। কি হয়েছে আগে তুই বল।

আইরাত;; একটা কথা কি জানো। মানুষ টাকা চিনে। এই কাগজে তৈরি নোট গুলো মানুষের ইমান পর্যন্ত কিনে নিতে পারে। টাকার থেকে বড়ো আর কিছুই না, কিচ্ছু না। কথা গুলো তেতো হলেও সত্য। আর সত্য সবসময় তেতোই হয়।

ইলা;; মানে?

আইরাত;; কিছু না চলো।

ইলা;; তুই রেগে আছিস?

আইরাত;; যার ওপর রাগ করতাম সেই মানুষ টাই যখন আমার কাছে আর নেই তখন রাগ আর কি করে বা কি নিয়েই করবো বলো।

ইলা;; ভেতরে চল।

এভাবেই সেইদিন টা চলে গেলো। পরেরদিন সকালে একজন গার্ড এসে আইরাতের বাসায় অফিসের সব ফাইল গুলো দিয়ে যায়। আইরাত সব ভালোভাবে ফাইলগুলো দেখে। আইরাতের জানা মতে এখানে এখন কোন গরবর নেই। আর আব্রাহাম কখনোই আইরাত কে না জানিয়ে কিছু করতো না। সেটা অফিসের কাজ হোক বা কোন ডিলই সাইন করতে হোক না কেনো সব ব্যাপারেই আইরাতের জানা থাকতো। আর এটাই যেনো আইরাতের জন্য প্লাস পয়েন্ট হয়ে গেছে। আইরাত ফাইল গুলো যখন ওলট-পালট করে দেখছিলো তখন তাদের মাঝখান থেকে আব্রাহামের ওই সিগন্যাচার প্যান টা বের হয় যা দিয়ে আব্রাহাম সবসময়ই সাইন করতো। আইরাত তা হাতে নিয়ে দেখে। মুচকি হেসে ওঠে। আব্রাহাম যেভাবে প্যান ধরতো সেভাবেই ধরার ট্রাই করে কিন্তু পারে না। বেশ কয়েকবার ট্রাই করতে করতে হয়ে যায়। একদিন যে আইরাত অফিসে আব্রাহামের কোর্ট, সাইন করা প্যান এইসব নিয়ে আব্রাহাম পার্ট টু হওয়ার ট্রাই করছিলো হঠাৎ করেই তার সেইদিনের কথা মনে পরে যায়। আইরাত তার আনমনেই হেসে ওঠে।

আইরাত এক ক্ষীন দম ছেড়ে ফাইল গুলো নিয়ে বসে পরে। একটার পর একটা ফাইল চেক করে যাচ্ছে তো করেই যাচ্ছে। উঠার নাম নেই। নেই হাত ব্যাথারও নাম। বেশ সময় পার হয়ে যায় কিন্তু আইরাত তার রুম থেকে বের হয় না। আইরাত বের হচ্ছে না দেখে ইলা আইরাতের রুমে যায়। গিয়ে দেখে আইরাত বসে বসে ফাইল দেখছে, চোখে চশমা।

ইলা;; আইরাত!

আইরাত;; হ্যাঁ এসো (ফাইলের দিকে তাকিয়েই)

ইলা;; কি করিস?

আইরাত;; কাজ করি, অফিসের কাজ।

ইলা;; অফিসের কাজ??

আইরাত;; হ্যাঁ আসলে অনেক গুলো ফাইল পরে ছিলো তো ভাবলাম আমি সব করে দেই। তাই রাশেদকে বলে এসেছিলাম তো তাই ফাইলগুলো দিয়ে গেলো।

ইলা;; হুমম মনমরা হয়ে বসে থাকার চেয়ে ভালো কাজে ব্যাস্ত থাক।

আইরাত;; হুমম।

ইলা;; একটা কথা বলবো?

আইরাত;; হুমম।

ইলা;; তোকে আব্রাহামের মতো লাগছে।

আইরাত তার মাথা তুলে ইলার দিকে তাকায়।

ইলা;; আব্রাহাম নিজেও এভাবে চোখে চশমা পরে সামনে ল্যাপটপ নিয়ে গম্ভীর মুখ বানিয়ে কাজ করতো।

আইরাত;; চশমা টা আব্রাহামেরই।

ইলা;; হুমম বুঝলাম।

এভাবেই সেই বেলা চলে যায়। এখন বিকেল বেলা। আইরাত একটু উঠে ছাদে গিয়ে দাঁড়ায়। বিকেল যেহেতু তাই আকাশ টা সুন্দর লাগছে আরো বেশি। আইরাত ওপরে আকাশের দিকে তাকায়। আকাশ কিছুটা হলুদ-কমলা রঙে রঙ্গিন হয়ে আছে। মৃদু ঠান্ডা বাতাস এসে আইরাতের চুল গুলোকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কয়েক মিনিট পর একজন স্টাফ এসে আইরাতকে এক মগ গরম কফি দিয়ে যায়। আইরাত কতোক্ষন এক ধ্যানে কফির দিকে তাকিয়ে থাকে। কেননা এই সেইম কালারের কফির মগ দুইটা ছিলো। একটা আব্রাহামের আর একটা আইরাতের। সবই আছে শুধু মানুষ টা বাদে। আইরাত বড়ো সড়ো একটা দম ছাড়ে। এমন কোন জিনিস নেই যাতে আব্রাহাম বা তার মেমোরি নেই। সবকিছুতেই আছেই। আইরাতের নিজের মাঝেও আব্রাহামের ছোয়া লেগে আছে। আইরাত দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ গুলো বন্ধ করে নেয়। গাল বেয়ে গড়িয়ে পরে একবিন্দু অশ্রু। সময় যেতে থাকে। সন্ধ্যাও হয়ে যায় কিন্তু আইরাতের ছাদের ওপর থেকে নামার খবর নেই। হঠাৎ করেই হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি নামে। মেঘ করলো না, সাজ করলো না। হঠাৎ করেই তীব্র বৃষ্টি নেমে পরলো। সাথে সাথে এক বিকট শব্দ করে বিদ্যুৎ চমকানোর আওয়াজ আসে। আইরাত তার মাথা নিচে নামিয়ে ফেলে। বৃষ্টির মাঝেই দাঁড়িয়ে থাকে। নড়াচড়া কিছুই নেই। বৃষ্টিরও যেনো আজ আইরাতের ওপর প্রচন্ড মায়া হয়েছে। তাই তো আইরাতের চোখের পানি গুলোকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে সে নিজেও নেমে পরেছে। আইরাত ভিজে একাকার হয়ে গেলো। কেনো জানি না বৃষ্টির সাথে আইরাতের এক আলাদা সম্পর্ক আছে। যখনই আইরাতের মন খারাপ থাকে বা ভেজার ইচ্ছে হয় তখনই বিনা বলে-কয়ে হুটহাট নেমে পরে। তবে এই বৃষ্টি নামলেই আব্রাহামের কথা যেনো আরো প্রবল ভাবে মনে পরে আইরাতের। প্রায় এক ঘন্টার মতো সেখানে তেকে আইরাত নেমে আসে। নিজের রুমে চলে যায়। বাইরে বিদুৎ চমকাচ্ছে। রুমে আইরাত বসে আছে। সে তার চোখ ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে পুরো রুমকে দেখছে। শুধু আর শুধুই আব্রাহামের ছবি। কোন ছবিতে হাসছে, কোন ছবিতে বেশ স্টাইল নিয়ে আছে, কোন ছবিতে ভাবলেশহীন। আবার কোনটাতে আইরাতকে পরম আবেশে আলিঙ্গন করে আছে। এগুলো দেখে এখন এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আইরাত আব্রাহামের একটা জেকেট বের করে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরে। আজ এত্তো গুলো দিন পর তার চোখে কিছুটা ঘুম নেমে এসেছে। এত্তোদিন পর যেনো ঘুমপরি আইরাতের চোখের মাঝে কিছুটা উঁকি দিয়েছে। আইরাত আব্রাহামের জেকেট টা নিজের বুকের সাথে একদম লেপ্টে ধরে শুয়ে থাকে। হঠাৎ ঘুমিয়ে পরে। ঘুমিয়ে পরে এই ভেবেই যে যদি কাল এক নতুন সকালের, নতুন দিনের, নতুন রুপে কিছু ফিরে পায় বা শুরু হয়, যদি!!!

এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে গেলো চার-চারটে মাস।





চলবে~~

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৫৫

দেখতে দেখতেই কেটে যায় চার-চারটে মাস। আইরাত আগে থেকে অনেকটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে। আইরাত-রনিত-ইলা মিলে একটা ছোট্ট পরিবার এখন। আইরাত আব্রাহামের অফিসে যায়। হ্যাঁ, আইরাত নিজে এখন আব্রাহামের অফিস টা পরিচালনা করে। ভবতেই অবাক লাগে তাই না! আব্রাহামের মতো এতো স্ট্রিক্ট তো হতে পারে নি তবে খুব ইজি ভাবেই সব কিছু সামলে নেয়। অফিসের যেই কেবিন গুলো পুড়ে গিয়েছিলো সেগুলো রিকভার করেছে। এখন আর সেগুলো খালি পরে থাকে না। সেগুলো তেও অনেক স্টাফ রা কাজ করে। আব্রাহাম আগে যে যে কাজ গুলো করতো এজ এ হ্যাড লিডার এখন সেই কাজ গুলো আইরাত করে। আব্রাহামের যে কেবিন টা ছিলো এখন তা আইরাতের। অবশ্য সেটা আইরাতেরও কেবিন ছিলো। কেননা দুজনের কেবিন তো একটাই ছিলো। কিচ্ছু পালটায় নি আইরাত। না ই অফিস আর না ই তার অন্য কোন কিছু। তবে কয়েকদিন পর পর শুধু তাদের কেবিন কে সুন্দর করে সাজানো হয় অর্থাৎ গোছগাছ করা হয়। আব্রাহামের প্রত্যেক টা জিনিস আইরাত পরম যত্নে নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। এমন একটা দিনও নেই যে আইরাত এগুলো বের করে আব্রাহামের জন্য নিজের চোখের পানি ফেলে না।

আইরাত;; রনিত স্কুল বন্ধ দেখে একদম বাইরে বাইরে ঘুরবি না।

ইলা;; যা তুই আমি ওকে সামলে নিবো।

আইরাত;; আচ্ছা থাকো তাহলে তোমরা আমি যাই।

আইরাত এই কথা বলেই বের হয়ে পরে অফিসের উদ্দেশ্যে। আইরাত ড্রাইভার কে নেয় না। আর ড্রাইভার বলতে আইরাত শুধু আব্দুল কেই রেখেছে আর গুলোকে বিদায় করে দিয়েছে। তাদের অফিসেই কোন কাজ দিয়েছে। আইরাত গাড়িতে উঠে পরে। এটা আব্রাহামের মেইন গাড়ি। অর্থাৎ আব্রাহামের এটা পারসোনাল গাড়ি ছিলো। আইরাত তাতে উঠে পরে স্টেয়ারিং এ হাত দিয়ে দেয়। আব্রাহামও এভাবেই ড্রাইভ করতো। আইরাত তার পাশের সীটে তাকায়। আইরাতের হঠাৎ মনে পরে যে আব্রাহাম যখন তাকে হুট করেই বাড়ি থেকে নিয়ে এসে পরতো তখন সে গাড়িতে আব্রাহামের সাইডেই বসে থাকতো কত্তো চিল্লাতো কিন্তু আব্রাহাম ছিলো নাছোড়বান্দা। আইরাত ড্রাইভ করে অফিসে পৌঁছে যায়। আইরাত আসতেই রোদেলার দেখা পায়।

রোদেলা;; গুড মর্নিং।

আইরাত;; ভেরি গুড মর্নিং।

রোদেলা;; তোমার কেবিন রেডি।

আইরাত;; কেবিন থেকে কিছু সরানো হয় নি তো?

রোদেলা;; কিচ্ছু না যেমন ছিলো সেম তেমনই। শুধু ডেস্কের কাচ টা পাল্টে আরেকটা কাচ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আইরাত;; আচ্ছা।

রোদেলা;; আমার ফাইল গুলো রেডি।

আইরাত;; কেবিনে দিয়ে এসো। আর রাশেদ কোথায়?

রোদেলা;; ও এসেছে, হয়তো ভেতরে।

আইরাত;; আচ্ছা।

আইরাত ভেতরে চলে যায়। আইরাত ভেতরে যেতেই কেউ কেউ সালাম দিচ্ছে আবার কেউ কেউ মর্নিং উইস করছে। আইরাত সবার উত্তর দিয়েই কেবিনে চলে আসে। কেবিনে এসেই আইরাত থেমে যায়। চারিদিকে চোখ ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখছে। আব্রাহাম থাকতে যেমন ছিলো এখনো হুবাহু সেইম। আইরাত এগিয়ে গেলো সামনে। টেবিলের ওপর আব্রাহাম-আইরাতের একটা ছবি আছে। যেখানে আব্রাহাম তাকে পেছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে আছে। আইরাত তা তার হাতে তুলে নেয়। কতোক্ষন ভরা আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ টুপ করেই এক ফোটা পানি ছবির ওপর পরে। আইরাতের চোখে পানি কিন্তু মুখে ফুটে ওঠেছে এক চিলতে হাসি। আইরাত ছবিটা হাতে নিয়েই দাঁড়িয়ে ছিলো তখনই দরজাতে কড়া নাড়ে রাশেদ।

রাশেস;; ম্যাম ভেতরে আসবো?

আইরাত দ্রুত হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখ মুছে ফেলে।

আইরাত;; হ হ্যাঁ এসো।

রাশেদ;; ম্যাম আসলে আব্রাহাম স্যার যখন লাস্ট একটা ডিল সাইন করছিলো সেইদিন তো ডিল টা বাদ দেওয়া হয়েছিলো। আর সেই লোক গুলো ফরেইন কান্ট্রি থেকে এসেছিলো। সেইদিন তো আর আসতে পারে নি তাই আজ আবার এসেছে।

আইরাত;; বুঝলাম। কেবিনে পাঠিয়ে দিও।

রাশেদ;; জ্বি।

রাশেদ চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পর সেই লোক গুলো আসে।

ক্রিস্টোফ;; হেই মিসেস.আইরাত।

আইরাত;; হ্যালো। কাজের কথায় আসি। এই ডিল টা হবে। আব্রাহামের সাথে আপনাদের কতো লক্ষ টাকার কথা হয়েছিলো?

ক্রিস্টোফ;; আসলে আমিও চাই যাতে এই ডিল টা হোক। কিন্তু আমি শুনেছি আব্রাহাম স্যারের নাকি এক্সিডেন্ট…..

আইরাত;; হ্যাঁ হয়েছে। কিন্তু সবার জন্য আব্রাহাম না থাকলেও আমার জন্য সবসময় আছে আর থাকবে।
এবার বলুন কতো টাকা লাগবে?

ক্রিস্টোফ;; ৩৭ লক্ষ।

আইরাত;; পেয়ে যাবেন।

ক্রিস্টোফ আইরাতের সাথে কথা বলেই বের হয়ে পরলো। আইরাত চেয়ারে মাথা এলিয়ে দেয়। চেয়ার টা রোলিং চেয়ার ঘুড়ে শুধু। আইরাত কিছুটা জানালার কাছে গেলো। সব জানালা গুলোই কাচের। আইরাতের চোখ হঠাৎ নিচের দিকে গেলো। দেখে নাফিজ মানে ওই ড্রাইভার টা কাউকে কিছু না বলেই গাড়ি নিয়ে সোজা বের হয়ে গেলো। আইরাত কিছুটা কপাল কুচকায়। এভাবেই সেই সময় টুকু চলে যায়। বেশ কয়েক ঘন্টা পর আইরাতের কি যেনো কাজের ফলে বাইরে যেতে হয় তাই আইরাত বাইরে নেমে আসে। আইরাত বাইরে যেতেই অফিসের সাইড থেকে বেশ ধস্তাধস্তির আওয়াজ আসে। আইরাত সেদিকে চলে যায়। দেখে একজন লোক নাফিজ কে এক প্রকার থ্রেইট দিচ্ছে আর নাফিজ ভয়ে চুপসে আছে। তাদের কথা গুলো আবছা ভাবে শোনা যাচ্ছে। আইরাত আড়াল থেকে তাদেরই দেখে যাচ্ছে। কথার এক মাঝেই হঠাৎ রায়হানের নাম উঠে আসে। আইরাতের যেন এবার টনক নড়ে। সেই লোক টা নাফিজের কাছ থেকে চলে যায়। নাফিজ যেই তার পেছনে তাকায় তখনই সে আইরাতকে দেখে। এটা দেখেই যেনো নাফিজের আত্না শুকিয়ে যায়। সে খুব বেশি ঘাবড়ে যায়। আইরাত খেয়াল করে দেখে নাফিজের হাতে ড্রাগসও আছে। আইরাত কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই নাফিজ ভয়ার্ত কন্ঠে বলে ওঠে…..

নাফিজ;; ম ম ম্যাম আম আম আমি কিছু জানি না। আমি কি কিছু করি নি। আমি জানি না কিছু। আমাকে ছেড়ে দিন।

আইরাত কিছু বলতেই পারছে না। নাফিজ যে এখন নিজের মাঝে নেই তা তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। ড্রাগস বেশি সময় যাবত না নেওয়ার ফল এইটা। নাফিজ হঠাৎ এক নাগারে আবল-তাবোল বলতে বলতে এমদম রাস্তার মাঝখানে চলে যায়। তখনই আইরাতের পাশে কিছু গার্ড আসে। হঠাৎ নাফিজ বকবক করতে করতে একদম রাস্তার মাঝখানে চলে যায়। আর মূহুর্তেই একটা ট্রাক এসে নাফিজ কে একদম পিশে ফেলে। সোজোরে ধাক্কা দিয়ে ছিটকে নিয়ে যায়। আইরাত মুখে হাত দিয়ে দেয়। সারা রাস্তায় রক্ত ছিটকে পরেছে। নিজের চোখের সামনে এমন এক আকস্মিক ঘটনা দেখে আইরাত অবাক হয়ে গেলো।

গার্ড;; ম্যাম ম্যাম প্লিজ আপনি আগে গাড়িতে উঠুন প্লিজ।

আইরাত;; ওর সাথে আরো একটা লোক ছিলো যে নাফিজ কে ধমকাচ্ছিলো। সব খোজ করো।

গার্ড;; জ্বি।

আইরাতকে দ্রুত গাড়িতে তুলে দিলো গার্ডরা। আইরাত এসে পরে। সে এটাই বুঝতে পারছিলো না যে নাফিজ আইরাতকে দেখে এতো টা ভয় কেনো পেয়ে গিয়েছিলো। আর রায়হানের কথাও তাদের মাঝে উঠেছিলো। কোন না কোন ভাবে এই নাফিজ রায়হানের সাথে জড়িত না তো। আর এখন বা জড়িত থাকলেও কি নাফিজ তো মরলোই আর রায়হান জেলে পরে আছে। আইরাত এইসব কিছুই ভাবছে আর ড্রাইভ করছে।



বেশ কয়েক মাস ধরে রায়হান জেলে পচে মরছে। তাকে জেলের পোশাক পড়ানো হয়েছে। যেনো কোন এক হিংস্র পশু হয়ে গেছে রায়হান। এই জেল থেকে বের হবার জন্য কতো কিছুই না করেছে সে কিন্তু কোন লাভই নেই। জেলের ওই কালো অন্ধকার ঘরে পরে পরে শেষ হয়ে যাচ্ছে সে। এক পুলিশ অফিসার এসে তার চেয়ারে বসে তখন রায়হান জেলের দরজার একদম সামনে এসে দাঁড়ায়।

রায়হান;; বলছি না আমি কিছু করি নি। আমাকে যেতে দে। ভালো হবে না কিন্তু। কত্তো দিন, কত্তোটা দিন ধরে আটকে রেখেছিস। ছেড়ে দে আমায়।

পুলিশ;; লাভ নেই এগুলো কৃত কর্মের ফল।

রায়হান রাগে জেলের লোহা গুলোতে বারি মেরে চিল্লিয়ে ওঠে।

এভাবেই দিন যাচ্ছে। নাফিজের লাশ টা পুলিশ দের দিয়ে দেওয়া হয়েছে। লাশ চেক করার পর স্পষ্ট তার বডিতে ড্রাগস পাওয়া গেছে। আর হ্যাঁ আইরাতের সন্দেহ স্পষ্ট ছিলো৷ নাফিজ রায়হানের সাথে জড়িত ছিলো। রায়হান কে শাস্তি আর কি করে দিবে যেখানে রায়হান শাস্তি পাচ্ছেই, আর নাফিজ মরে ভূত। বাড়ি থেকে অফিস, অফিস থেকে বাড়ি। ব্যাস এই এতো টুকুই থেকে গেছে আইরাতের জীবন। নিজের ইচ্ছে গুলোকে যেনো এক প্রকার মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছে আইরাত। শখ-ইচ্ছে কোন কিছুই আর নিজের মাঝে নেই। তার তো এটাও মনে নেই যে সে প্রাণ খুলে লাস্ট কবে হেসেছিলো। সব কেমন চুপসে গেছে। জীবন থেকে খুশির ঝলকই সরে গিয়েছে। সময় যাচ্ছে দিন যাচ্ছে কিন্তু আইরাত যেমন ছিলো তেমনই। আব্রাহাম কে ভুলতে পারে নি সে আর না ই কখনো পারবে। মাসের পর মাস চলে যায়। কিন্তু কিছুই ঠিক হবার নাম নেই। কেমন যেনো সব এলোমেলো হয়ে গেছে। তবে আইরাত নিজে যেমনই থাকুক না কেনো ইলা বা রনিতের ক্ষেত্রে কোন কমতি রাখেনি। আইরাত নিজে যথেষ্ট হাসি-খুশি থাকে তাদের সামনে। যেনো সে একদম ঠিক আছে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তো সেই কবেই মরে গিয়েছে। তার মাঝেও অনেক দিন চলে গিয়েছে। রনিত আগে থেকে বড়ো হয়েছে।

একদিন আইরাত বসে বসে কাজ করছিলো তখন ইলা আসে আইরাতের রুমে। ইলা এসে আইরাতের পাশে চুপ মেরে বসে আছে তা দেখে আইরাত নিজেই বলে ওঠে।

আইরাত;; দাদি!

ইলা;; হুমম।

আইরাত;; কি বলবে জলদি বলো।

ইলা;; কি করে বুঝলি তুই?

আইরাত;; বুঝি বুঝি সবই বুঝি। এবার বলো।

ইলা;; না মানে বলছিলাম যে না থাক বাদ দে।

আইরাত ল্যাপটপ টা রেখে দিয়ে ইলার দিকে ঘুড়ে তাকায়। তার হাত দুটো নিজের কাছে নিয়ে নেয়।

আইরাত;; বলো তো কি বলবে!

ইলা;; বলবো?

আইরাত;; অবশ্যই।

ইলা;; দেখ কারো জীবন থেমে থাকে না। আব্রাহাম যেমন আমার কাছে প্রিয় ছিলো তুইও তাই। তোরা কেউই আমার কাছে আলাদা ছিলি না। আমি তোর এমন কষ্ট দেখতে পারবো না নিজের চোখের সামনে। আমি জানি যা হয়েছে খুব খারাপ। ধরে নে এটাই লিখা ছিলো কপালে কিন্তু শোন এভাবে একা একা তো আর কারো জীবন কাটে না তাই না। কাউকে না কাউকে লাগেই।

আইরাত;; দা………

ইলা;; আইরাত সোনা আমি বলি তুই আরেকটা বিয়ে করে নে না। এতে তোরই ভালো। জীবনের শেষ বয়সে কাউকে না কাউকে লাগে। তুই আরেকটা বিয়ে কর আইরাত।

আইরাত ইলার হাত গুলো ছেড়ে দেয়। ইলা ভেবেছে আইরাত রাগ করেছে আর এখন আবার পাগলামি শুরু করে দিবে। কিন্তু না আইরাত উলটো ইলার হাত ছেড়ে দিয়ে ইলার কাছে এসে বসে।

আইরাত;; আমি জানি তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো। আমার ভালোই চাও। যা বলেছো তা আমার ব্যাপারে ভেবেই বলেছো। কিন্তু দাদি আগে একটা কথা বলো তো। দাদুভাই যখন তোমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো তখন তুমি একা একা কীভাবে থেকেছো? আবার বিয়ে কেনো করো নি?

ইলা;; নাহ রে 😅। তখন আমাদের তেমন রীতিনীতি ছিলো না। দ্বিতীয় বিয়ে করার মতো এতো পদ্ধতি ছিলো না সেই সময়ে।

আইরাত;; আহা ভুল। কারণ তুমি দাদুভাই কে অন্নেক ভালোবাসতে তাকে ভুলতেই পারো নি। তো তখন আবার এককটা বিয়ে করবে কিভাবে তাই না।

ইলা;;

আইরাত;; আমার অবস্থাও কিছুটা একই রকম। আমার পক্ষে সম্ভব না দাদি। আমি পারবো না আব্রাহামের জায়গায় অন্য কাউকে বসাতে। আমার সেই সাধ্য নেই। আমি যদি মরেও যাই তাহলেও আব্রাহামের স্মৃতি নিয়েই মরবো। আমার আব্রাহামের মতো না কেউ ছিলো, না কেউ আছে আর না ই কেউ হবে। আমি আমার জীবনে আব্রাহাম কে ছাড়া অন্য কাউকে ভাবিতেও পারি না। আমি পারবো না। আমার দ্বারা এটা হবে না দাদি।

ইলা;; হুমম। যা ভালো বুঝিস। আচ্ছা কাজ কর তুই আমি গেলাম।

ইলা উঠে চলে আসে তবে তখন আইরাত আবার ইলাকে পেছন দিক থেকে ডাক দেয়।

আইরাত;; এই যে ইলাবতী!!

ইলা;; কি রে।

এই ইলাবতী ডাক টা ইলার হাসবেন্ডের দেওয়া। তিনিই ডাকতেন শুধু। মাঝে মাঝে আইরাতও ইলা কে এই নাম ধরে ডাক দিয়ে উঠে।

আইরাত;; আজকে না তোমাকে হেব্বি সুন্দর লাগছে 👌

ইলা;; চুপ কর।

ইলার ধমকে আইরাত হেসে দেয়। ইলা রুম থেকে চলে যায়। ইলার চলে যাওয়ার সাথে সাথে আইরাতের মুখের হাসি টাও উধাও হয়ে যায়। আইরাত পাশে তাকিয়ে দেখে আব্রাহামের গিটার টা যা তাকে তার মা দিয়েছিলো। সেইদিনের কথা টা মনে পরে যায় যেদিন আব্রাহাম আইরাতের জন্য গান গেয়েছিলো। আইরাত ফট করে চোখ সরিয়ে ফেলে তা থেকে। চোখের কার্নিশ বেয়ে পানি পরার আগেই আইরাত হাত দিয়ে তা মুছে চোখে চশমা পরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ল্যাপটপের দিকে তাকায়।
সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। আর সবকিছুর সাথে সাথে আইরাত নিজেও। মানুষ পরিবর্তনশীল। আর হবেই না কেনো ঘড়ির কাটা ঘুড়িয়ে, সময় স্রোতের মতো ভেসে গিয়ে কেটে গিয়েছে প্রায় ২ বছর।





চলবে~~