#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৬০
আইরাত তার আব্রাহাম কে দুহাত দিয়ে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে রেখেছে। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদেই চলেছে। আব্রাহাম তাকে কিছু একটা বলতে গিয়েও আবার থেমে যায়। আইরাত যে এভাবে ঠিক কতোক্ষন আব্রাহাম কে জড়িয়ে ধরে ছিলো তা তার
খেয়াল নেই। আইরাত একটু শান্ত হয়ে এলে হঠাৎ আব্রাহাম তাকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেয়। আইরাত তার মাথা টা তুলে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আব্রাহাম কিছুটা কপাল কুচকে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে। আব্রাহাম আইরাত কে নিজের থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে কঠোর কন্ঠে বলে ওঠে…..
আব্রাহাম;; কি হচ্ছে এগুলো আর কে আপনি?
আইরাত;; আব..আব্রাহাম আপ আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না। আমি, আমি আইরাত আব্রাহাম। আমি আপনার আইরাত।
আব্রাহাম;; Ohh i see, তো আপনিই সেই আইরাত। আইরাত চৌধুরী গ্রুপের ওনার?!
আইরাত;; আব্রাহাম চৌধুরী গ্রুপের ওনার।
আব্রাহাম;; So how can i help you?
আইরাত;; মানে কি আব্রাহাম? আপনি কি বলছেন এইসব? আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না। আব্রাহাম প্লিজ এমন করবেন না। আপনি কেনো এগুলো বলছেন?
আব্রাহাম;; হুয়াট আমি কি করছি? করেছেন তো আপনি মানে চেনা নেই জানা নাই হুট করেই এভাবে অচেনা এক ছেলেকে এসে জড়িয়ে ধরেছেন। নূন্যতম ম্যানার্স নেই আপনার?
আইরাত;; এইসব কি যা তা বলছেন আপনি? আপনি আমাকে চিনতে পারছে না ? কি করে সম্ভব এটা। আব্রাহাম প্লিজ।
আব্রাহাম;; আমার নাম অর্নীল, আব্রাহাম না। যদিও অনেকে আব্রাহামও ডাকে।
আইরাত;; নাম চেঞ্জ করলেই সবকিছু চেঞ্জ হয় না।
আব্রাহাম;; ম্যানেজার আমাকে বলেছিলো আপনার কথা। বলতে গেলে আমার সামনে আপনার এক প্রকার প্রশংসার ঝুড়িই নিয়ে বসেছিলেন আমি তখন ভেবেছি আপনি বেশ বুঝমান একজন মেয়ে। But i was wrong আপনি তো পাগল মনে হচ্ছে। মানে আমি এর আগে কখনো আপনাকে দেখিও নি আর আপনি আজ কিনা??
আইরাত;; আপনি আব্রাহাম, আপনি আমার হাসব্যান্ড আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী। দুই বছর আগে আপনার একটা কার এক্সিডেন্ট হয়েছিলো। মনে আছে আপনার? আপনি কেনো আমাকে চিনতে পারছেন না?
আব্রাহাম;; চেনার প্রশ্নই আসে না। দেখুন আপনার হয়তো কোথাও কোন বিরাট ভুল হচ্ছে।
আইরাত;; না, আমি সবক্ষেত্রে ভুল হতে পারি কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে না। আমি ঠিকই আছি।
আব্রাহাম;; হে লিসেন আমি আপনাকে চিনি না আর এর আগে কখনো দেখিও নি ওকে।
আইরাত ঝট করে আব্রাহামের কাছে এসে পরে। আইরাত তার দু হাত দিয়ে আব্রাহামের দুই গালে ধরে।
আইরাত;; কেনো আব্রাহাম, কেনো আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না বলুন তো। আমি কি করেছি। আমি তো জানতাম যে আপনার কিছু হয় নি। পুলিশ রা তাদের কাজ প্রোপার ভাবে করতেই পারে নি। আপনি জানেন না, আপনার বিন্দুমাত্র ধারণাও নেই যে আমি আপনাকে ছাড়া কি হালে থেকেছি, কিভাবে লাইফ লিড করেছি। আপনি এতো টা দিন কোথায় ছিলেন বলুন তো? কেনো আমার কাছে একটাবারের জন্যও আসেন নি? আপনি জানেন না যে আমি আপনাকে কত্তো জায়গায় খুজেছি, কত্তো ভাবেই না খুজেছি কিন্তু আমি পাই নি আপনাকে। আপনার দাদি আপনাকে ছাড়া যে কি হালে আছে তা আমি বলতে পারবো না। আর কাল, কাল যখন আমি আপনাকে কনসার্টে দেখি আমার নিজেরই তখন কোন সেন্স ছিলো না। আব্রাহাম প্লিজ আর দূরে দূরে থাকবেন না।
আব্রাহাম আইরাতের হাত দুটো নিজের গাল থেকে নামিয়ে দেয়।
আব্রাহাম;; দেখুন মিস. সরি মিসেস. আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে আমি আপনার হাসবেন্ড না। হ্যাঁ মানলাম আমার নামও আব্রাহাম কিন্তু এক নামে হাজার মানুষ থাকে। আর রইলো চেহারার কথা, পৃথিবীতে না একই রকম চেহারার মানুষ ৭ জন থাকে ওকে।
আইরাত;; ৭ জন কেনো ৭০০ মানুষ থাকলেও আমি আমার আব্রাহাম কে চিনতে কখনোই ভূল করবো না। আপনি আমার আব্রাহাম।
আব্রাহাম;; ও হ্যালো, সবকিছুর একটা লিমিট থাকে ওকে। এবার কিন্তু বেশ বারাবারি করে ফেলছেন আপনি। আমি যদি আগে জানতাম যে আপনি এমন আধাপাগল আর একটা পাগলের সাথে আজ আমার এপোয়েন্টমেন্ট আছে তাহলে আমি ম্যানেজার কে হ্যাঁ জীবনেও বলতাম না।
আইরাত;; কিন্তু আম…….
আব্রাহাম;; আমি আব্রাহাম চৌধুরী অর্নীল। প্রোফেশন সিংগিং এন্ড রোকস্টার। আমার ড্রিম এগুলো ওকে, আমার প্যাসান। আমি কোন আইরাত নামে কাউকে চিনি না। আপনার হাসব্যান্ডের সাথে আমার চেহরা মিলে যায় আর এটা পুরোপুরি একটা কাকতালীয় ব্যাপার ছাড়া কিছুই না। এতে এতো হাইপার হবার কি আছে। রিলেক্স ইয়ার।
আইরাত অবাক হয়ে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে আর আব্রাহাম পুরো একটা চিল মুডে কাচের একটা ডেস্কের ওপর থেকে এলকোহলের গ্লাস টা নিয়ে চুমুক দেয়। আইরাতের এবার রাগ লাগছে সে গিয়ে সোজা আব্রাহামের হাত ধরে থামিয়ে দেয়।
আইরাত;; মিথ্যা বলার আর জাগয়া খুঁজে পান না তাই না। আপনি আমাকে শিখাচ্ছেন। শুনুন আমি জানি আপনিই আব্রাহাম। অযথা আমাকে উলটা-পাল্টা বুঝানো বন্ধ করুন।
আইরাত যে আব্রাহামের হাত ধরে আছে তাতে আব্রাহাম তার দিকে এক ভ্রু উঁচু করে তাকায়। সে একবার আইরাতের দিকে আরেকবার নিজেদের হাতের দিলে তাকাচ্ছে। আইরাত এলকোহলের গ্লাস সহ আব্রাহামের হাত টা নিজের হাত দিয়ে থামিতে রেখেছে।
আব্রাহাম;; বাই দি ওয়ে একটা জিনিস আপনার পছন্দ হলো খুব। তা হচ্ছে আপনার চোখের পানি। আপনাকে কান্নারত অবস্থায় দারুণ মানায়। আই উইস আপনি আপনার সারাজীবন এই কান্না করতে করতেই কাটিয়ে দিবেন। আর হ্যাঁ নিজের চোখের পানি দিয়ে আমার গায়ের শার্ট টা খানিক ভিজিয়ে দেওয়ার জন্য থেংক্স। আমি চাই যে মেয়েরা যেনো কিছু না কিছু একটা চিহ্ন আমাতে রেখে যায়।
আইরাত;; হুয়াট?
আব্রাহাম;; একচুয়ালি ইউ নো হুয়াট, আমি তোমার নামে অনেক কিছু শুনেছি। তুমি করেই বললাম এখন কেননা আপনি ডাক টা আমার সাথে যায় না। আর মেয়েদের বেলায় তো মোটেও না। আর মেয়েরা যখন একদম ইমোশনাল হয়ে আমার কাছে এসে নিজের মায়া কান্না শুরু করে দেয় না। আহা, কি যে ভালো লাগে।
আইরাত;; মেয়েদের ব্যাপারে অনেক এক্সপেরিয়েন্স আছে বুঝি?
আব্রাহাম;; থাকতে হয় মিসেস.আইরাত।
আইরাত;; আপনি এমন কেনো করছেন আমার সাথে? আপনার সবই মনে আছে আমি জানি। তবুও এমন কেনো করছেন আপনি?
আব্রাহাম;; আমি কি করেছি। আমি যতদূর জানি আমি তোমার সাথে এখনো তেমন কিছুই করি নি আইরাত। একবার করা শুরু করে দিলে থামা মুশকিল। তবে করেছো তো তুমি। এসেই সোজা আমাকে আষ্টেপৃষ্টে আকড়ে ধরেছো। জিনিস টা আমার কাছে Unexpected ছিলো। তবে Unexpected হলেও
I really like it…
আইরাত;; আব্রাহাম….
আব্রাহাম;; আমি তোমাকে চিনি না, আমদের এই প্রথম দেখা। আর আমি কারো হাসবেন্ড না। বিয়েই হলো না আর হাসবেন্ড।
আইরাত;; আব্রাহাম আপনি আমার কথা ট………..
আব্রাহাম;; Get lost…
আইরাত;; আব্রা……
আব্রাহাম;; I said get lost…
আইরাত আব্রাহামের দিকে এগিয়ে আসে।
আইরাত;; ফ্ল্যাট থেকে তাড়াতে পারলেন কিন্তু নিজের জীবন আর আপনার থেকে দূর কখনোই তাড়াতে পারবেন না। মনে রাখবেন। একবার হারিয়েছি আমি আর পারবো না। আর এবার যখন পেয়ে গেছি তো আমিও দেখবো মিস্টার আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী যে আপনি দূরে কি করে যান আমার থেকে। পাগলামি তো কেবল শুরু শেষ হতে অনেক দেরি।
এই বলেই আইরাত চলে আসতে নেয় কিন্তু আবারও থেমে যায়।
আইরাত;; ওহহ হ্যাঁ আরেকটা কথা। এই যে বাইরে যে আপনি Don’t Disturb এর লগো দিয়ে রেখেছেন না তা অতি দ্রুত সরিয়ে দিন। কেননা ডিস্টার্ব নিজেই এসে পরেছে আপনার লাইফে। তা আমি। আপনি তো আমার আব্রাহাম ই তাতে যতো যাই ই বলেন না কেনো। আর হ্যাঁ মেয়েরা না মেয়ে হবে শুধু। আর সেটাও এই আমিই।
এই বলেই আইরাত আব্রাহামের দিকে একটা সুক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার রুম ত্যাগ করে।
আব্রাহাম;; Attitude level high 🔥…!
।
।
আইরাত নিজের চোখে সানগ্লাস টা পরে দ্রুত পায়ে বাইরে এসে নিজের গাড়িতে উঠে পরে। বেশকিছু সময় পর নিজের অফিসেও চলে যায়। আইরাত যখন অফিসে ঢুকছিলো তখন তার মুখে ঝুলে ছিলো এক চিলতে হাসির ছাপ। সবাই কিছুটা অবাক ভাবেই আইরাতকে দেখছিলো। কেননা কেউ আইরাত কে কখনো হাসতে দেখেনি অর্থাৎ বিনা কারণে সে মোটেও হাসে না। আইরাত নিজের কেবিনে চলে যায় সোজা। তার কয়েক মিনিট পর কেবিনে রাশেদ আসে।
রাশেদ;; ম্যাম কি খবর? আব্রাহাম স্যার?
আইরাত;; কে বলেছে সে আব্রাহাম!
রাশেদ;; জ্বি??
আইরাত;; উনি তো আব্রাহাম নন উনি তো অর্নীল।
রাশেদ;; কিন্তু…৷
আইরাত;; এটা ওর কথা। এটা ওর মতামত। যখন তাকে এটা বলি যে সে আব্রহাম। তখন সে পরিষ্কার ভাবে সাফ মানা করে দেয় যে সে আব্রাহাম নয় বরং অর্নীল। আরো আমকে নানা কথা বলে।
রাশেদ;; তাহলে কি শুধু শুধু আমরা ভুল ভাবছি?
আইরাত;; না রাশেদ, মোটেও না। আমার ভুল হতেই পারে না। সে আব্রাহাম। আমার কাছ থেকে বাচার জন্য সে এইসব বলছে। আর হ্যাঁ এখন শুধু দেখে যাও, আমি তো আব্রাহাম কে তার নিজের মুখে স্বীকার করিয়েই ছাড়বো যে ওই আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী। জেদ একবার যখন ধরেছি তো ধরেছিই।
রাশেদ;; কিন্তু স্যার আপনাকে চিনতে মানা করছেন কেনো? স্যার তো আপনাকে পাগলের মতো করে ভালোবাসে।
আইরাত;; জানি না রাশেদ, আমার এগুলো ভাবতে আর ভালো লাগে না। যাই হোক যে যেই ভাষার কথা বুঝে তার সাথে সেই ভাষাতেই কথা বলতে হয়। ত্যাড়া তো আব্রাহাম আগে থেকেই। একবার সোজা করেছিলাম এবার না হয় আবার করবো। রাশেদ?
রাশেদ;; জ্বি ম্যাম!
আইরাত;; আরে পার্টি এরেঞ্জ করো ইয়ার। আর এর চিফ গেস্ট হবে আব্রাহাম ওপস সরি অর্নীল।
রাশেদ;; ম্যাম পার্টি মানে কেনো?
আইরাত;; এই ধরো খুশিতে।
যেই বলা সেই কাজ। রাশেদ সহ বাকি স্টাফ রা সবাই সবকিছু এরেঞ্জ করে ফেলে।
।
।
অন্যদিকে আব্রাহাম তার রুমে হাতে একটা বল নিয়ে দেওয়ালে জোরে জোরে মারছে সেই বল আবার আব্রাহামের দিকে ফিরে আসলে সে তা ক্যাচ ধরে ফেলছে। মুখে তার গম্ভীর ভাব, কপাল টুকু কুচকে রেখেছে। যেনো বেশ রেগে আছে। তখনই রুমে কেউ আসে। এসেই সোজা আব্রাহামের পেছনে কোমড়ে দুহাত রেখে দাঁড়িয়ে পরে। আব্রাহাম বুঝলো যে এটা কে হতে পারে৷
আব্রাহাম;; কি চাই এখানে তোর?
রাত্রি;; রেগে আছিস?
আব্রাহাম;; না।
রাত্রি;; হয়েছে, আমি জানি। আমাকে শেখাস না।
আব্রাহাম;; কাজ থাকলে বল নয়তো বের হো।
রাত্রি;; এই এই কি বললি আমি বের হবো মানে। তুই বের হো।
আব্রাহাম;; ভালো লাগে না সবসময় ফাইজলামি রাত্রি।
সে খেয়াল করলো যে আব্রাহাম বল দিয়ে দেওয়ালে একটার পর একটা আঘাত করেই যাচ্ছে। রাত্রি এবার গিয়ে কোন কথা না বলে আব্রাহামের সামনে দাঁড়িয়ে পরে। আব্রাহাম থেমে যায়। হাতে বল টা নিয়ে রাত্রির দিকে চোখ তুলে তাকায়।
রাত্রি;; কিছু বলছি আমি।
আব্রাহাম;; আমি কি বলেছি যে আমি বয়রা?
রাত্রি;; এমন করছিস কেনো? কিছু কি হয়েছে?
আব্রাহাম;; এদিকে আয়।
রাত্রি;; কি?
আব্রাহাম;; এদিকে আয়।
আব্রাহাম রাত্রির হাত ধরে নিজের পাশে বসিয়ে দেয়।
(আর এই রাত্রির কাহিনী পরে জানতে পারবেন সবাই)
রাত্রি;; কি হয়েছে?
আব্রাহাম রাত্রির হাত ধরে…
আব্রাহাম;; একটা কাচা ঘা তে বারবার আঘাত করলে আঘাত টা কিন্তু কাচাই রইয়ে যায় ভালো হয় না। আর সেই ঘা তে কিছু কিছু মানুষ এসে স্যাভলনের মতো কাজ করে।
রাত্রি;; কি বলছিস এইসব কাচা ঘা, স্যাভলন কি? তোর হাত কোথাও কেটেছে নাকি?
আব্রাহাম;; আব্বে ঢাক্কান তুই বুঝবি না। ছাড় বাদ দে।
রাত্রি;; আচ্ছা শোন মা তোর জন্য কষা মাংস পাঠিয়েছে। খেয়ে নিস।
আব্রাহাম;; দেখেছিস আন্টি আমাকে কত্তো ভালোবাসে তোর মতো সবসময় পিছে লেগে থাকে না আমার।
রাত্রি;; কেনো যে পিছে লেগে থাকি তা তো তুই আর বুঝিস না।
আব্রাহাম;; আন্টির শরীর কেমন এখন?
রাত্রি;; আগে থেকে অনেক ভালো।
এভাবেই সেই সময় টুকু কেটে যায়। রাত্রি চলে যায়। সন্ধ্যার দিকে আব্রাহামের কাছে একটা ইনভিটেশন কার্ড আসে।
গার্ড;; ম্যা আই কাম ইন স্যার?
আব্রাহাম;; হুমম।
গার্ড;; স্যার আপনার জন্য এটা এসেছে।
আব্রাহামের দিকে একটা কার্ড এগিয়ে দিয়ে গার্ডটা চলে যায়। আব্রাহাম কার্ড টা খুলে। ওপরে সুন্দর করে লিখা “আব্রাহাম চৌধুরী গ্রুপ” আর তা থেকে একটা পার্টি এরেঞ্জ করা হয়েছে। সেখানে তাকে এস এ চিফ গেস্ট হিসেবে ডাকা হয়েছে। আব্রাহাম যেই না কার্ড টা ছুড়ে ফেলে দিতে যাবে তখনই আইরাতের ফোন। আব্রাহাম পিক করে।
আইরাত;; হ্যালোওওওওওও জামাইজান।
আব্রাহাম;; What the hell is this!?
আইরাত;; না না হেল না। আপনি আসবেন পার্টি তে।
আব্রাহাম;; যাবো না আমি।
আইরাত;; ভেবে দেখুন আপনি আসবেন নাকি আমি আপনার কাছে যাবো। আর হ্যাঁ আমি যদি আপনার কাছে আসি তাহলে কিন্তু তা বেশি একটা ভালো হবে না আপনার জন্য।
আব্রাহাম;; আমার পেছনে লাগতে না আসলেই ভালো হবে।
আইরাত;; আর যদি লাগি তো?
আব্রাহাম;; বরবাদ করে দেবো।
আইরাত;; অনেক আগেই হয়ে গেছি। তবে এবার যদি আপনার নিজ হাতে হই তাহলে আর ক্ষতি কি!
আব্রাহাম;; এতো বাঁকা স্বভাবের কেনো তুমি?
আইরাত;; আরে আপনার কাছ থেকেই তো শিখেছি।
আব্রাহাম;; ওকে ফাইন আসবো আমি।
আইরাত;; আহা, আসবো না এসে পরুন। ওয়েট করছি।
এই বলেই আইরাত ফোন কেটে দেয়। আর আব্রাহাম চোখ বন্ধ করে একটা ক্ষীন দম ছাড়ে। আর ওদিকে আইরাত পার্টির A-Z সব আব্রাহামের পছন্দ মতো করে সব। ব্যাসিক্যালি একটা টেস্ট করার জন্যই। আব্রাহাম ব্লেক কালারের পেন্ট, আর এশ কালারের শার্ট পরে তার ওপরে ব্রাউন কালারের জেকেট। ব্যাস সে রেডি। আব্রাহাম চলে যায় গাড়িতে করে। বেশ সময় পর সে আইরাতের অফিসে এসেও পরে। আব্রাহাম যখন আসে তখন দেখে অফিসের সামনে কমপক্ষে ৫০ জনের মতো ছিলো তাকে স্বাগত জানানোর জন্য। তবে আব্রাহাম কেনো জানি নিজেকে সবার সামনে খারাপ প্রমাণ করতে চাইছে। আব্রাহাম যখন দেখে যে এতো গুলো মানুষ তাকে স্বাগত জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে আছে তখন আব্রাহাম ইচ্ছে করেই হাতে একটা স্যাম্পেনের বোতল নিয়ে নেয় যাতে সবাই ভাবে যে আব্রাহাম ড্রিং & ড্রাইভ করেছে। আব্রাহাম গাড়ি থেকে নেমে পরে। ওপরের জেকেট টা তার কাধে ঝুলানো, শার্টের হাতা গুলো ফোল্ড করা, চোখ থেকে চশমা টা খানিক নাকের ডগায় নামানো, ঠোঁটে বাকা হাসি আর হাতে স্যাম্পন। আব্রাহামের বাইরে নামতেই যেমন সবাই বড়ো সড়ো ক্রাশ খেলো তেমনই সবাই বেশ অবাক হলো। দু দুটো মানুষের মাঝে এতো টা মিল কি করে সম্ভব? সবার সাথে সাথে সেখানে রাশেদ নিজেও ছিলো আব্রাহাম কে স্বাগত জানানোর জন্য। কিন্তু আব্রাহামের এমন লুক দেখে রাশেদ যেনো এখানেই মাথা ঘুড়ে পরে যাবে এমন অবস্থা। আব্রাহাম বুঝলো যে সবাই তাকে তাদের চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে। কিন্তু রাশেদ অবাক হয়েই আব্রাহামের দিকে এক তোড়া ফুল নিয়ে এগিয়ে গেলো।
রাশেদ;; ওয়েলকাম ব্যাক স্যার।
আব্রাহাম;; হুয়াট?
রাশেদ; আই মিন, ওয়েলকাম স্যার।
আব্রাহাম;; থ্যাংক্স।
আর বাকি সবাই কিছু বলবে তার আগেই আব্রাহাম চলে যায় ভেতরে। আশে পাশে আব্রাহামের অনেক গার্ড রা রয়েছে। যে জায়গায় পার্টি এরেঞ্জ করা হয়েছে সেখানে শুধু সাদা ধবধবে লাইট। সবকিছুই বেশ ক্লাসি। এখানে অনেক মানুষ রয়েছে। আব্রাহাম যেই না হলরুমে ঢুকে তার সাথে সাথেই সবার নজর আব্রাহামের দিকে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসেবে একটা সফট মিউজিক চালু করা হয়েছে। অনেকেই এসে আব্রাহামের সাথে ছবি ক্লিক করছে আবার অটোগ্রাফ চাচ্ছে। তবে এতো সবকিছুর মাঝে আইরাত নেই। আব্রাহাম খেয়াল করলো যে কি রকম এক অদ্ভুত নজরে যেন সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। যাই হোক আব্রাহাম হেসে হেসে সবার সাথে টুকটাক কথা বলছিলো তখনই আইরাত ওপরের সিড়ি দিয়ে নিচে নামা শুরু করে দেয়। আব্রাহাম তার সরু দৃষ্টিতে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাত একটা ব্লেক কালারের ফুল হাতা ওয়ালা গাউন পরেছে। তবে তা বেকল্যাস। চুল গুলো হালকা ভাবে খোপার মতো করে ওপরে বাধা, চারিদিকে চুল গুলো কিছুটা ছড়িয়ে পরেছে। কানে সাদা স্টোনের দুল আর গলায় হালকার মাঝে একটা ন্যাকলেস। সিম্পলের মাঝেও দারুন ফুটে ওঠেছে। আইরাত হেটে এসে আব্রাহামের কাছে আসে। আব্রাহাম তার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকলে আইরাত আব্রাহামের সামনে তুরি বাজায়। আব্রাহামের হোস আসে।
আইরাত;; জামাইজান, আমাকে দেখে বুঝি হোস উড়ে গেছে?
আব্রাহাম;; হীরে থাকতে আমি কয়লার দিকে কেনো তাকাবো বলোত?
আইরাত;; ওহহ আচ্ছা,,
আইরাত আব্রাহামের কাছে চলে যায় কিছুটা। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আস্তে করে আব্রাহামের চোখে তার চোখগুলো রেখে বলে ওঠে….
আইরাত;; মনে রাখবেন কয়লার খনি থেকেই কিন্তু হীরের জন্ম।
আব্রাহাম;; এতো তেজ?
আইরাত এবার দূরে সরে আসে,
আইরাত;; তেজ না থাকলে আপনার সাথে পারবো কি করে বলুন। বাঘ যতোই গর্জন করুক না কেনো বাঘীনির কাছে সবসময় সে ভেজা বিড়াল বুঝলেন।
আব্রাহাম;; বাই দি ওয়ে পার্টির এরেঞ্জম্যান্ট করেন সুন্দর।
আইরাত;; থাংকু।
আব্রাহাম;; কি?
আইরাত;; আমি এভাবেই বলি।
আইরাত আর আব্রাহাম কথা বলছিলো আসলে কথা না এক প্রকার কথা কাটাকাটি ই করছিলো তখনই আব্রাহামের পাশ দিয়ে একটা মেয়ে হেটে যায়। যাওয়ার সময় সে আব্রাহাম কে খানিক হাত তুলে হাই দিয়ে যায়। আর আব্রাহামও হেসে তাকে হাই বলে। শুধু তাই না….
আব্রাহাম;; হে হাই বিউটিফুল।
আব্রাহাম তো এটা বলে দাঁড়িয়েই ছিলো কিন্তু আইরাত তো রাগে আগুন। তখনই হুট করে আইরাতের ডাক পরে তাই আইরাত চলে যায়। যাওয়ার আগে আব্রাহাম কে একটা রাগি লুক দিয়ে যায়। তবে এর পরেই বাধে আরেক গন্ডগোল।
।
।
।
।
চলবে~~
#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৬১
আইরাত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবার সাথেই হাসি মুখে কুশল বিনিময় করছিলো। তার ফাঁকে ফাঁকেই বাকা চোখে আবার আব্রাহামের দিকে নজর দিচ্ছে। অনেকে তাদের হাতে ড্রিংক্স নিয়ে আছে, কথার বলার মাঝে মাঝে তাতে চুমু দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ সফট মিউজিকের তালে তালে নিজেদের পার্টনারের সাথে কপল ডান্স করছে। আইরাতের কথা বলা শেষ হলে সে আব্রাহামের দিকে তাকায়। দেখে যে সে বসে বসে ফোন ঘাটছে। আইরাত ধীর পায়ে তার দিকে এগিয়ে যায়।
আইরাত;; হেই জামাইজান!!
আব্রাহাম;; উফফ বিরক্তিকর…
আইরাত;; এখানে এতো ভালো পার্টি রেখে ফোনে কি করা হচ্ছে?
আব্রাহাম;; Mind your own business girl….
আইরাত;; Yes, i am… আমার কাজই তো আপনার পেছনে লাগা আর আপনার সাথে চিপকে থাকা। আপনি কি করছেন না করছেন সেদিকে খেয়াল রাখা। আর আমি তো তাই করছি তাই না।
আব্রাহাম;; হুমম।
আব্রাহাম এবার আইরাতের দিকে তকায়। আব্রাহামের চোখ গুলো আইরাতের সারা মুখে বিচরণ করে চলেছে।
আব্রাহাম;; কিছু একটা মিস্টেক আছে।
আইরাত;; কি?
আব্রাহাম;; তোমার কানের ঝুমকো তে একটা হুয়াইট স্টোন কম আছে মানে গায়েব আর কি।
আইরাত;; এত্তো ক্ষুদ্র একটা জিনিস এত্তো সুক্ষ্ম ভাবে লক্ষ্য করলেন? কেনো বলুন তো?
আব্রাহাম;; আমি মেয়েদেরই বেশি লক্ষ্য করি।
আইরাত;; চোখ দুটো যখন কাটা চামচ দিয়ে বের করে মার্বেল খেলবো তখন লক্ষ্য কইরেন বেশি করে 🙂৷
আব্রাহাম;; হাহ্
তখনই রোদেলা আইরাতের কাছে আসে। অফিসের পরবর্তী প্রজেক্ট যার সাথে সাইন করার কথা উনি এসেছেন। তাই সৌজন্যের খাতিরে দেখা তো করতেই হবে। আইরাত একবার আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে রোদেলার সাথে চলে যায়। তখনই একজন লোক আসে। তিনি আইরাতের সাথে কথা বলেন। এক সময় হ্যান্ডশেক করেন। তারপর আরো কিছুক্ষন সময় কথা বলে চলে আসেন। তারপরেই সেখানে আহসান যায় অর্থাৎ আইরাত যাকে ভাই বলে ডাকে সেই আর কি। আইরাত তো আহসানের সাথে বেশ ফ্রি। তারা দুইজন মিলে বেশ আড্ডা দিচ্ছে। কথা বলার এক সময় আইরাতের মাথার সাইডের কিছু ক্লিপ খুলে যায়। আহসান সেগুলো আইরাতকে ইশারা দিয়ে দেখিয়ে দেয়। আইরাত ঠিক করতে না পারলে আহসান আইরাতের মাথায় হাত দিয়ে ঠিক করে দেয়।
আহসান;; আরে এইদিকের ক্লিপ গুলো খুলে গেছে তো।
আইরাত;; আরে ধুরু ভেজাল।
আহসান;; নাও এবার ঠিক আছে।
আইরাত;; থাংকু ভাইয়া।
আহসান;; ওয়েলকাম বইনা।
আইরাত আর আহসান মিলে আবার কথা বলা শুরু করে দেয়। তবে এখানেই কেউ একজন তাদের দেখে রাগে ফেটে পরছে। তবে তা প্রকাশ করছে না। তার কয়েক মিনিট পরেই ঠাস করে কিছু একটা ভেঙে যাওয়ার শব্দ আসে৷ আইরাত সহ বাকি সবাই সেদিকে তাকায়। দেখে আব্রাহাম তার মাথা নিচু করে বসে আছে তবে তার হাতের অবস্থা খারাপ। আব্রাহামের হাতে একটা এলকোহলের গ্লাস ছিলো আব্রাহাম তা তার হাতের চাপেই ফাটিয়ে দিয়েছে। গ্লাস টা হাতের মাঝেই ভেঙে খানখান হয়ে গিয়েছে৷ মূহুর্তেই আব্রাহামের হাত থেকে রক্ত পরা শুরু করে দেয়। কাচের টুকরো গুলো নিচে পরে আছে। আইরাত তো এটা দেখেই কপাল কুচকে চিন্তা মাখা মুখ নিয়ে আব্রাহামের কাছে আসে। এসেই আব্রাহামের হাত ধরে ফেলে।
আইরাত;; আব্রাহাম!! কি করলেন এটা আপনি? এভাবে হাতের মাঝে রেখেই কেউ গ্লাস ভাঙে নাকি। আপনার ভাংচুর করতে মন চাচ্ছে আমাকে একবার বলে দিতেন। আমি হাজার হাজার জিনিস হাজির করে দিতাম কতো ভাংবেন আপনি। কিন্তু এভাবে??
আব্রাহাম ঝট করে আইরাতের কাছ থেকে নিজের হাত টা ছাড়িয়ে নেয়। সেখান থেকে উঠে চলে যেতে নেয় তবে আইরাত থমিয়ে দেয়। আব্রাহাম শুধু টিস্যু দিয়ে কো রকমে হাত টা পেচিয়ে নেয়। আইরাতও কিছু বলে না। আব্রাহাম এভাবে রেগে কেনো গেলো আইরাত তাই বুঝে উঠতে পারলো না। সময় এভাবেই কিছুক্ষন চলে যায়। তারপর আইরাত খেয়াল করে যে আব্রাহাম জমিয়ে একটা মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করছে। আর ওই মেয়ে হেসে হেসে ফেটে পরছে। আইরাত এগুলো দেখে সরু চোখে তাদের দিকে তাকায়। কিন্তু আইরাতও তো কম না। আইরাত গিয়ে সফট মিউজিক বাদ দিয়ে ধুম ধারাক্কা গান বাজাতে বলে আসে। প্রথমে “mujhe to teri lat lag gayi” গান লাগিয়ে আসে আর তারপর
” Avi toh party shuru huyi hain ” আইরাত নিজেও গানের তালে তালে গা দুলাচ্ছে রোদেলা আর বাকি যারা ছিলো তাদের সাথে। মানে আব্রাহাম কে সে ইগ্নোর করেও করছে না। সে দেখাতে চাচ্ছে যে আব্রাহাম যা ইচ্ছে করুক গা আইরাত তো নিজের মতো করে আছেই। She Don’t give a damn about him…. আইরাতের এমন করাতে পুরো পার্টির হুলিয়া-নশকা সব পালটে গেছে। আইরাত আরো একটু বেপরোয়া ভাব ধরে, পার্টি তে অনেক ছেলে ছিলো তারাও তাদের মতো করে রয়েছে। যদিও তারা আইরাতের কাছে আসার চেষ্টা করেছে কিন্তু আইরাত কাউকে পাত্তাই দিচ্ছে না। আইরাত এমন করছে আর আড়চোখে আব্রাহাম কে দেখছে। কিন্তু আব্রাহাম আগে যেমন ছিলো এখনো সেইম। সে আরো উলটা অন্য দিকে ঘুড়ে ড্রিং করছে। এতে আইরাত নিজের মনে মনে আব্রাহাম কে একটা ভেংচি কেটে দেয়। তিবে প্রকৃতপক্ষে কিন্তু আব্রাহামের নজর আইরাতের দিকে আছেই। অর্থাৎ দুইজনই ছুপা রুস্তাম। দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু বুঝতে কেউই কাউকে দিচ্ছে না। কেউ কারো থেকে একবিন্দুও কম না। একসময় গান অফ হয়ে যায়। সবাই মিলে কিছুটা চিল্লিয়ে উঠে। আর একসাথে কড়তালি দেয়। এবার আব্রাহাম ঘুড়ে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাত নিজেও আব্রাহামের দিকে তাকায়। আইরাত হেটে আব্রাহামের কাছে আসে। এসে আব্রাহামের পাশে দাঁড়িয়ে পরে। দুজনই চুপ। হঠাৎ আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাতের কেনো যেনো মনে হচ্ছে যে পাশ থেকে কেউ একজন তার দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত ফট করে মাথা ঘুড়িয়ে তার সাইডে তাকায় দেখে আব্রাহাম তার দিকে ঘোর লাগা নয়নে তাকিয়ে আছে। আইরাত তার চোখ গুলো নামিয়ে নিজের গলা কিছুটা খাকাড়ি দিয়ে ওঠে। কিন্তু আব্রাহাম হুট করেই আইরাতের দিকে এগোতে লাগে। আইরাত এটা বুঝতে পেরে পাশে তাকায়। আব্রাহাম ক্রমশ তার দিকে এগিয়ে আসছে। আব্রাহামের চোখ গুলো আইরাতের ঠোঁটের দিকে স্থীর। আইরাত কিছুটা হকচকিয়ে ওঠে। সে ভেবেছে হয়তো আব্রাহাম কিছু একটা করে বসবে এখানেই কিন্তু আইরাতের ধারনা কে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আব্রাহাম করে উল্টো কাজ। আইরাতের গলাতে একটা ব্লেক কালারের স্কাফ ছিলো। আব্রাহাম সেটা আস্তে করে টান দিয়ে নিয়ে নেয়। তার এমন কান্ডে আইরাত কপাল কুচকে তাকায়। আব্রাহাম কিছু না বলেই আইরাতের ওই স্কাফ টা নিয়ে নিজের হাতের ক্ষত স্থানে বেধে নেয়। আব্রাহামের এমন করাতে আইরাত বেশ অবাকই হয়। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়েই তার হাতে স্কাফ টা বেধে নেয়। আইরাত অবাক দৃষ্টিতে একবার আব্রাহামের দিকে আরেকবার তার হাতের দিকে তাকাচ্ছে। অবশেষে আব্রাহাম স্কাফের শেষ অংশ টা তার হাতে বেধে আইরাতের দিকে তাকিয়ে একটা ডোন্ট কেয়ার ওয়ালা ভাব নিয়ে চলে আসে। আইরাত আব্রাহামের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকায়।
আব্রাহাম হেটে হেটে পার্কিং প্লেসে চলে যায় একা। সবসময় নিজের সাথে গার্ড নিয়ে ঘুরতে কার ভালো লগে। আর আব্রাহাম নিজেই এনাফ অবশ্যই তার অন্য কাউকে দরকার পরে না। আব্রাহাম নিজের গাড়ির কাছে চলে যায়। জেকেট টা গাড়ির ভেতরে সীটের ওপরে রেখে দেয়। আর এখানেই গোন্ডগোল টা পাকে। আব্রাহাম তার হাতে একটা সিগারেট নিয়ে নেয়। গাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে সে। লাইটার দিয়ে সিগারেট টা জ্বালিয়ে নিলো। ব্যাসিক্যালি আব্রাহাম স্মোক করে না, খুবই কম। সিগারেটের কয়েক পাফ নিতেই আব্রাহামের কেনো জানি মনে হলো যে তার পেছনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহামের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাকে তা পরিষ্কার জানান দিচ্ছে। আব্রাহামের কাছে ব্যাপার টা আরো বেশি ক্লিয়ার হয়ে যায় যখন আব্রাহাম তার সামনে থাকা আরেকটা গাড়ির সাইড গ্লাসে ঠিক তার পেছনেই একটা লোকের অবয়ব দেখতে পায়। লোকটি আব্রাহাম কে আঘাত করতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম ঝট করে তার পেছন ঘুড়ে লোকটির হাত ধরে ফেলে। লোকটির হাতে শক্ত কিছুটা একটা ছিলো যা দিয়ে সে আব্রাহাম কে আঘাত করতে চেয়েছিলো। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠে নি। আব্রাহাম তার এক হাত দিয়ে লোকটার গলা পেচিয়ে ধরে। এতে লোকটার শ্বাস আটকে আসতে শুরু করলো। আব্রাহাম কিছুক্ষন বেশ শক্তি দিয়ে লোকটিকে চেপে রাখে। যখন লোকটির অবস্থা বেগতিক তখন আব্রাহাম তাকে ছেড়ে দূরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। লোকটি ভয়ার্ত চোখে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে ছিলো। তখনই আব্রাহাম তার পকেট থেকে একটা রিভলবার বের করে। রিভলবার টা বের করে সোজা সেই লোকটির মাথা বরাবর তাক করে ধরে। সামনে থাকা লোকটি তো ভয়ে কাদো কাদো অবস্থা। আব্রাহাম হঠাৎ তার রিভলবার টা আস্তে আস্তে নিচে নামিয়ে এনে লোকটির পা বরাবর তাক করে ধরে। লোকটি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম শুট করে দেয় তার পায়ে। লোকটি অসহ্য ব্যাথায় চিল্লিয়ে উঠে। আব্রাহাম এবার তার এক পা ভাজ করে লোকটির সামনে বসে পরে। রিভলবার দিয়ে নিজের মাথার সাইডে কিছুটা স্লাইড করে আবার সরু দৃষ্টিতে লোকটির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে…….
আব্রাহাম;; দেখ, না আমি তোকে চিনি আর না ই তুই আমাকে চিনিস। নাকি তুই আমাকে চিনিস আচ্ছা যাই হোক। তোর কোন ক্ষতি আমার জানা মতে আমি করি নি। তাহলে কেনো, কেনো আমাকে মারতে এখানে এসেছিস বলতো। মানে তোর সাথে আমার কোন রকম কোন শত্রুতা নেই তারপরেও তুই আমাকে মারতে এসেছিস। শখ জেগেছে তোর মরার। কেনো অযথা নিজের মৃত্যুর দিকে পা বাড়াচ্ছিস বল তো। আজ ছেড়ে দিলাম এরপর বিনা কথায় সোজা ওপরে বুঝলি। গার্ড…
আব্রাহামের একটা গার্ড এসে সেই লোকটিকে নিয়ে যায়। আব্রাহাম আবার তার পেছনের পকেটে রিভলবার টা তুলে রেখে দেয়। তারপর সে নিজেও চলে যায়। কিন্তু খানিক দূর থেকে কেউ খুটিয়ে খুটিয়ে আব্রাহাম কে আর তার কাজ কে দেখছে। আর তা হলো আইরাত নিজেই। আইরাতের সাথে রাশেদও রয়েছে। আইরাত আর রাশেদ মূলত একটা গাড়িতে। আর হ্যাঁ যেই লোকটিকে পাঠানো হয়েছিলো আব্রাহাম কে মারার জন্য সে আর কেউ না আইরাত নিজে ইচ্ছে করেই পাঠিয়েছিলো। যদিও সে জানতো যে এই লোকটা আব্রাহামের ধারে-কাছেও যেতে পারবে না তবুও কিছু জিনিস লক্ষ্য করার জন্য আইরাত এই কাজ টা করেছে। আব্রাহামের সেখান থেকে চলে যেতেই আইরাতের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সে যা ভেবেছিলো তাই হয়েছে। আব্রাহামের ব্যাপারে আইরাতের সন্দেহটা যেনো আরো গাঢ় হয়ে গেলো।
রাশেদ;; ম্যাম স্যার তো……
আইরাত;; তুমি খেয়াল করেছো কিছু?
রাশেদ;; জ্বি ম্যাম অর্নীল স্যার যেভাবে রিভলবার ধরেছিলো আব্রাহাম স্যারের রিভলবার ধরার স্টাইলও পুরোই এক। ইভেন স্যার যে শুট করলো মানে সব একই।
আইরাত;; সবচেয়ে বড়ো কথা হচ্ছে আব্রাহামের সব রিভলবার গুলোর ওপর একটা গোল্ডেন কালারের চ্যাক থাকতো। এবারও কিন্তু তার ব্যাতিক্রম নয়। ওর হাতে যে রিভলবার টা ছিলো তাতেও গোল্ডেন কালারের একটা চ্যাক রয়েছে।
রাশেদ;; হুমমম।
আইরাত;; ও আমার আব্রাহাম ই রাশেদ। ও যতোই না বলুন আমাকে। আমি ওকে চিনি।
তারকিছুক্ষণ পর আইরাত আর রাশেদও সেখান থেকে এসে পরে। আইরাত যখন তার বাসায় আসে তখন দেখে ইলা বসে আছে।
আইরাত;; কি করছো?
ইলা;; কিছু না।
আইরাত;; মুখ টা এমন শুকনো কেনো?
ইলা;; আজ টিভিতে একজন কে দেখি।
আইরাত;; কাকে? (কানের দুল খুলতে খুলতে)
ইলা;; নাম ছিলো আব্রাহাম চৌধুরী কি কি যেনো একটা!
আইরাত;; অর্নীল।
ইলা;; হ্যাঁ
আইরাত;; ও কোন অর্নীল টর্নীল না ও আব্রাহাম ই।
ইলা;; কি করে সম্ভব এটা? আমাদের হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে। চেহারাতে মিল থাকে না মানুষের।
আইরাত;; চেহারাতে মিল থাকে কিন্তু গলার স্বর, হাটা চলা, কথা বলা, রাগি ভাব, ভেশ-ভুষা, মানে এত্তো মিল কীভাবে। আর মিল দেখেই যে আমি বলছি আব্রাহাম তা না আমার মন বলে সে আব্রাহাম।
ইলা;; তা তাহলে এ এতোদিন আম আমাদের কাছে এলো না কেনো? (কেদে)
আইরাত;; জানি না। কেনো এমন করছে তাও জানি না। এতো উঁচু খাদ থেকে পরে কীভাবে কি হলো কোথায় ছিলো মানে কিচ্ছু জানি না। তবে আমি শুধু এই টুকুই জানি যে ও আব্রাহাম। আর হ্যাঁ তুমি দেখো আমি তো ওর মুখ দিয়ে এটা স্বীকার করিয়েই ছাড়বো যে ও আব্রাহাম।
ইলা;; তুই, তুই কি ওর সাথে দেখা করিস?
আইরাত;; হ্যাঁ।
ইলা;; কেমন আছে ও?
আইরাত;; হ্যাঁ বেশ ভালো, আমাকে খারাপ রেখে অনেক ভালোই আছে ও।
ইলা;; তুই যা ফ্রেশ হয়ে নে। খাবি আয়।
আইরাত;; খেতে ইচ্ছে করছে না দাদি। কাল আবার সকাল সকাল যেতে হবে তবে কাল অফিসে যাবো না। কাল বাইরে থাকবো।
ইলা;; কোথায় যাবি?
আইরাত;; আব্রাহামের কনসার্ট আছে,, কনসার্ট বলতে ওর একটা শো আছে। সেখানে বেশ কিছু মানুষ থাকবে তাই।
ইলা;; ওহহ আচ্ছা।
আইরাত ওপরে তার রুমে চলে গেলো। কাপড় চেঞ্জ না করেই বিছানাতে গা এলিয়ে দিলো। ভালো লাগছে না। আইরাত এক সময় আব্রাহাম কে ফোন দিলো। ফোন তিনবার কেটে অফ হয়ে যায় তবে ধরে না। আইরাতও হাল ছাড়ার পাত্রি না সে লাগাতার ফোন দিতেই থাকলো। এক সময় ফোন রিসিভ হয়।
আব্রাহাম;; হ্যালো… (ভারি গলায়)
আইরাত;; এই কোথায় আপনি এতো দেরি কেনো ফোন ধরতে??
আব্রাহাম;; দেরি করি বা ফোন না ই ধরি তাতে তোমার কি। মানুষকে বিরক্ত করা ছাড়া আর কি কোন কাজ নেই তোমার?
আইরাত;; আরে না না মানুষকে না শুধু আপনাকে।
আব্রাহাম;; কি বলবে জলদি বলো।
আইরাত;; না মানে আসলে ইয়ে মানে….
আব্রাহাম;; না মানে ইয়ে এগুলো বাদ দিয়ে বলো তো কি বললে।
আইরাত;; মিস ইউ 😒😒
আব্রাহাম;; ঘুমাও রাত হয়েছে।
আইরাত;; আপনি তো আগে এতো আনরোমান্টিক ছিলেন না আব্রাহাম। আপনি এমন হলেন কেনো বলুন তো। আয় হায় আমি শেষ,, আমি তো আমার এমন জামাই কে চাই নি। এত্তো আনরোমান্টিক কেনো আপনি ধুর।
আব্রাহাম;; আইরাত কিছু কি খেয়েছো?
আইরাত;; না তো।
আব্রাহাম;; তাহলে এগুলো কি আবোল তাবোল বকছো। চুপচাপ গিয়ে ঘুমাও যাও।
আইরাত কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই সে আব্রাহামের পাশ থেকে কিছুটা মেয়েলি আওয়াজ শুনতে পায়। আইরাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম তাকে বায় বলে ফোন কেটে দেয়। আইরাত কপাল কুচকে হাতে থাকা ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। যাই হোক এইসব ভাবনা আইরাত তার মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে পরেরদিন সকালের কথা ভাবতে থাকে। আব্রাহাম কে আরো একটু ভালো ভাবে প্যাচে ফেলতে হবে তার।
।
।
।
।
চলবে~~