#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব১
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সকাল এগারোটা হাই তুলতে তুলতে দোতলার সিঁড়ি বেয়ে নামছে তালুকদার বাড়ির বড় মেয়ে তৃধা তালুকদার ।বাড়ির বড় মেয়ে হলেও সে পুরোটাই এলোমেলো অগোছালো, তা নিয়ে বাড়ির সবার অভিযোগের শেষ নেই।
তৃধা নিজের চশমা ঠেলে কিছুটা ঠিক করে খাবার টেবিল থেকে একটা আপেল তুলে নিলো।
তখনই পাশ থেকে তার চাচাতো বোন স্নিগ্ধা বলে উঠলো–,,ছি!ব্রাশ টা অন্তত করে খা।
তৃধা স্নিগ্ধার কথায় একেবারেই পাত্তা দিলো না সে গিয়ে বসলো একেবারে তার দাদীর সামনে, রসিকতা করে বললো–,,তা বুড়ি আজ তোমার তালুকদার মহল এতো সাজানো হচ্ছে কেনো?নতুন করে দাদা ভাই আনবে নাকি?
জোছনা বেগম বাজ’খাঁই গলায় বললো–,,অস”ভ্য ছেম’ড়ি কথার ছিঁড়ি দেখো!আজ তোরে দেখতে আইবো।
কথাটা শোনা মাত্ররোই তৃধার গলায় আপেলের টুকরো আটকে গেলো খুঁক খুঁক করে কেশে উঠলো সে।
জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো –,,কিহ্!
স্নিগ্ধা বুঝতে পারলো এবার এখানে লং’কা কান্ড ঘটবে,তৃধা রেগে গেলো মুহূর্তেই,সে চিৎকার করে করে ডাকলো —,,মা, মা ওই মা তোমার কানে কি কথা যায় না!
রান্না ঘর থেকে ছুটে আসলো রাজিয়া বেগম।
রাজিয়া বেগম বললো–,,কি হয়েছে চেচাঁমেচি করছিস কেনো?
তৃধা যেনো ফুঁসে উঠলো সে জোর গলায় বললো –,,তুমি জানো না কাল আমার ভার্সিটির প্রথম ক্লাস?আমি আজ রাতের বাসে ঢাকা যাবো?
রাজিয়া বেগম আড়চোখে শ্বাশুড়ির দিকে তাকালেন,পরে ধীর কন্ঠে বললেন–,,তো কি হয়েছে?
–,,তোমার পেয়ারের শাশুড়ী মা বললো আমাকে নাকি পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে?কতোবার বলেছি আমি বিয়ে করবো না,করবো না মানে করবো নাই।আমি পড়াশোনা শেষ করতে চাই।কেনো তোমরা এমন করছো বলোতো!
জোছনা বেগম তেঁতো কন্ঠে বললো–,,মাইয়া মাইনসের বিশ্বাস নাই,পড়াশোনার নাম দিয়া গিয়া যে না”গড় জুটাইবো না তার কি ঠিক আছে?
তৃধা চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,এই দেখো দাদী একদম উল্টো পাল্টা কথা বলবে না সবাই কি এক হয় নাকি?তুমিই এসব করেছো না?কিসের এতো শত্রু’তা তোমার আমার সাথে?বলো বলো!
তৃধার কথার মাঝেই কেউ একজন তার গালে ঠা’স করে চ”ড় বসিয়ে দিলো।
তৃধা গালে হাত দিয়ে সামনে তাকিয়ে।জোছনা বেগম ছেলেকে দেখেই না-কি সুরে বললো–,,দেখেছিস আজাদ দেখেছিস?তোর মেয়ে কিভাবে কথা বললো আমার সাথে?আমি কি ওর খারা”প চাই বল!
তৃধা ঘৃ’ণা ভরা চোখে তার বাবার দিকে তাকালো,এই একজন পুরুষ মানুষের জন্য, আজ সে বেশির ভাগ পুরুষ কে একই পাল্লায় মাপে,তিক্ত হয়ে উঠে পুরুষ জাতির প্রতি তার অনুভূতি!
তৃধার বাবা আজাদ কঠিন কন্ঠে বললো–,,তোমার থেকে অনুমতি নিতে হবে আমাকে?আমার মা কে?বিয়ে করবে না তাহলে তোমার পড়াশোনা ও বন্ধ! চলে যাও আমার বাড়ি থেকে।তোমার মতো বেয়া”দব সন্তানের দরকার নেই আমার।রাজিয়া মেয়ে তোমার সামনে দাড়িয়ে বেয়া”দবি করে কি করে?ওকে বলে দাও দুপুরের মধ্যে যাতে তৈরি হয়ে থাকে, আমার বন্ধু তার পরিবার নিয়ে আসবে তাদের সামনে যাতে এরকম অ’সভ্যতা না করে!
আজাদ তালুকদার চলে যেতেই,তৃধা ক্রো’ধে ফে’টে পড়লো।খাবার টেবিলের মাঝ বরাবর গ্লাস ছুঁড়ে মার’লো চেঁচিয়ে বললো-,,যাবো না আমি কিছুতেই যাবো না কারো সামনে,বিয়েও করবো না!
রাজিয়া বেগম মেয়ের হাত চেপে ধরে বললো–,, চল আমার সাথে।
তৃধা বলে উঠলো –,,তোমার মতো এমন ভালো মা আমার দরকার নেই,তুমি কেমন মা হ্যাঁ?নিজের সন্তানের জন্য একটা কথা পর্যন্ত বলতে পারো না?চাই না আমার তোমাদের কাউকে চাই না আমি একাই চলে যাবো আজ থাকবো না ওনার বাড়িতে।বাড়িওলা হয়ে গেছেন কথায় কথায় বাড়ি থেকে বের করে দিবো।থাকলাম না আপনার বাড়িতে আপনি একা থাকুন।আপনার মতো এমন মানুষের সাথে একদিন আর কেউ থাকবে না বলে দিলাম!
রোজিনা বেগম মেয়েকে ঘরে নিয়ে দরজায় খিল দিলেন।
জোছনা বেগম সোফায় বসে নাকি সুরে গুনগুনিয়ে উঠলেন।স্নিগ্ধা বিরক্তিতে মুখ বাঁকালো,সে নিজেও জানে তৃধার পড়াশোনা করার কতোটা ইচ্ছে মেয়েটা কতো করে চেয়েছে পাবলিকে পড়বে।কিন্তু বড় আব্বু মানুষ টা কেমন জানি পরীক্ষা টাই দিতে দেয়নি,বলে দিয়েছেন পড়তে হলে প্রাইভেটে পড়তে হবে!এখন পড়াশোনা করতে দিবে না দেখে কি সুন্দর বাহানা বানালো পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে,যত্তসব!
—————-
এরিশ দাদু ভাই নাত বউয়ের মুখ কি এ জীবনে তুই আর দেখাবি না?মরা’র আগে অন্তত বিয়েটা কর!
এরিশের গম্ভীর চাহনি,তার দাদীর এটা কোনো নতুন কথা না, বিগত তিন বছর ধরেই একই কথা শুনে যাচ্ছে সে।
এরিশের দাদা গোলজার মজুমদার এসে বললো–,, বলে বলে আর লাভ নেই গোলবাহার।তোমার গুনধর নাতি চিরকুমারই থাকতে চায়!
এরিশ তপ্ত শ্বাস ছাড়লো,কিছু সময় পর নিজের মাকে ডেকে বললো–,,মা, আজ রাতে আমি চলে যাবো কাল ভার্সিটিতে ক্লাস করাতে হবে।১ম বর্ষের স্টুডেন্টদের প্রথম ক্লাস!
এরিশের মা ব্যস্ত ছিলেন ননদের ফর’মাইশ খাটতে।এরিশের ফুফু এসেছে আজ দুইদিন,সেদিন থেকে বাড়ির বউদের যেনো শ্বাস নেওয়ার সময় হচ্ছে না।
এরিশের বাবা আশরাফ মজুমদার এসে বললো–,, রাতেই চলে যাচ্ছো?
এরিশ মাথা নাড়লো শুধু,আশরাফ গম্ভীর হয়ে আবার বললেন–,,তুমি এতোটাই অসামা’জিক এরিশ তোমার জন্য আমার সম্মান টা শেষ হয়ে যাবে কবে জানি!
আমার প্রিয় বন্ধু তোমার আজাদ আংকেল আমাদের আজ দাওয়াত করেছেন,সবাই যাবো আশা করি তুমি দ্বিমত করবে না!তোমার কথা মতো তোমাকে আমি বিজনেসে আসতে বাধ্য করিনি নিজের যা পছন্দ তাই করছো,বিয়ে করবে না বলেছো তাতে ও অমত করিনি।চাইবো তুমিও আমার অসম্মান হতে দিবে না!
ইতিমধ্যেই আমিনা বেগম সেখানে আসেন,ছেলের হয়ে তিনিই উত্তর করেন-,,কেনো যাবে না?আমার ছেলে কবে এমন কিছু করেছে বলেন তো যাতে তার বাবার সম্মান নষ্ট হয়?
গোলজার মজুমদার বলে উঠলো–,,বড় বউ মা তোমার ছেলের ই”গোর দামই তো লাখ টাকা!
এরিশ নিজের দাদার ঠেস মা’রা কথা শুনেও চুপ রইলো।
আশরাফ মজুমদার সেখান থেকে বিদায় নিলেন।
আমিনা বেগম ছেলেকে চোখের ইশারায় শান্ত থাকতে বললেন,এরিশ হনহনিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো।
এরিশের তার বাবা,দাদার সাথে কোনো কালেই বনিবনা হয়নি। এতে পুরো বংশের মানুষ হতাশ।বাড়ির বড় ছেলে হয়ে ব্যবসার হাল ধরেনি সে,অন্য একজন কে তো বাড়ি ছাড়তে হয়েছে।কি হবে এই পরিবারের?প্রশ্নটা থেকেই যায় আড়ালে!
————
তৃধার রুমে হুড়মুড় করে ঢুকে স্নিগ্ধা তার পেছনে নাদিম।
নাদিম তৃধার মেজো চাচার ছেলে।কিছু সময় পর আসে নোভা।
নোভা কে দেখে তৃধা বলে উঠলো–,,তুই এখন এখানে?তোর না এখন ঢাকা যাওয়ার কথা।
নোভা বিরক্ত হয়ে বললো–,,তোর ও তো যাওয়ার কথা আর তুই এখন ও বসে আছিস?
নাদিম বলে উঠলো –,,পেত্নি’রে তো বড় আব্বু বিয়ে দিয়ে দিতেছে!
নোভা বিরক্ত হয়ে বললো–,,তুই চুপ থাক।তুই কখন যাবি ওইটা বল?
নাদিম হাই তুলে বললো–,,আমি রাতে যাবো,আমার তো চিন্তা হচ্ছে তৃধার জন্য।আমি শুনেছি বড় আব্বুর বন্ধুর পোলার বয়স ত্রিশ প্লাস!
স্নিগ্ধা হা হয়ে বললো–,,কিহ্?শেষমেশ বুই”ড়া ব্যাটা আনছে ধইরা। আমি নিশ্চিত এগুলা সব দাদীর স্বর”যন্ত্র!
তৃধা এবার কেঁদে ফেললো, সবার সামনে শক্ত রাগী হয়ে থাকলেও বন্ধুদের সামনে কাঁদতে যেনো কোনো মানা নেই।
তৃধা কাঁদতে কাঁদতে বললো–,,আমি কিছুতেই বিয়ে করবো না।আর বু”ড়া ব্যাটা তো আরো আগে না।বলতে পারিস ওই জোছনা বেগম আমার থেকে কোন জন্মের শত্রু”তা শেষ করেতেছে?
স্নিগ্ধা বলে উঠলো–,,আপাই কাঁদিস না। তোরে পালাতে আমি সাহায্য করমু।
নাদিম বলে উঠলো-,,এ্যাহ আইছে সাহসী,বড় আব্বু ধম”ক দিলে পাজা”মা ঢি”লা হয়ে যায় উনি আসছে পালাতে সাহায্য করমু!
নোভা বলে উঠলো-,,এ ছাড়া তো উপায় ও নাই।পালানোই বেস্ট অপশন!
তৃধা বলে উঠলো–,,কিন্তু যাবো কি করে?আজকে তো শুধু দেখতে আসবে,তখন যদি না থাকি তাহলে তো সন্দেহ করবে।একবার পালাতে পারলে নানা ভাইয়ের কাছে চলে যাবো তখন এরা কেউ কিচ্ছু করতে পারবে না।
নাদিম ভেবে বললো–,,শোন তৃধা আজ আমার যাওয়ার কথা থাকলেও আমি যাবো না।মানে বাসা থেকে যাবো ঠিকই গিয়ে থাকবো বন্ধুর বাসায় তুই ভোর বেলা সুযোগ বুঝে পালাবি, প্রয়োজনীয় যা লাগবে তা আগেই লাগেজে করে আমাকে দিয়ে দিবি বুঝলি।
তৃধা বুঝদারের মতো মাথা নাড়লো।তার পর বললো–,,তুই একাই যা আমি একাই যেতে পারবো,তোকে কষ্ট করতে হবে না!
নাদিম বললো–,,এতো বেশি বুঝিস কেনো?রাস্তাঘাটের অবস্থা দেখেছিস?একা যাওয়া সেইফ হবে না আমি নিয়ে যাবো ব্যস আর কোনো কথা না।
নোভা বলে উঠলো –,,ঠিক আছে, আমি গিয়ে হোস্টেলে সব ঠিক ঠাক করে রাখবো,তোরা আসলেই ভার্সিটিতে যাবো কেমন?
রাজিয়া বেগম এসে বললো–,,কি নিয়ে কথা হচ্ছে এখানে?
স্নিগ্ধা বললো–,, বড় মা তুমি?ও আসলে নোভা আপু তৃধা আপুর কাছে এসেছিলো তাকে নিতে,আপু কে দেখতে আসবে তাই নাদিম ভাইয়া কে বলছিলো ওনারা দুইজন এক সাথে ভার্সিটি যাবে!
রাজিয়া বেগম কিছু বললেন না।
তৃধা বলে উঠলো–,, মা আমি ওই বুই”ড়া লোকটাকে কিছুতেই বিয়ে করতে পারবো না।বাবা যাকে তাকে ধরে নিয়ে আসলেই তো হলো না।
রাজিয়া বেগম বিরক্ত হয়ে বললো–,,ছেলেটা ভার্সিটির লেকচারার।দেখতে শুনতে ভালো,ভদ্র আর কি চাই তোমার?আটাশ বছর বয়সে কেউ বু”ড়ো হয়ে যায় না!
নোভা,নাদিম মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো।রাজিয়া বেগম কঠিন সুরে বললো–,, সবাই এবার বাহিরে যাও তৃধা কে তৈরি করতে হবে!
তৃধা নিজের মায়ের এমন ব্যবহার হজম করতে পারলো না,কেনো বুঝতে চাইছে না এরা।
তৃধা শান্ত কন্ঠে বললো–,,মা তুমি চাও না তোমার মেয়ে ভালো থাকুক?
–,, সব বাবা মা ই চায় তাদের সন্তান ভালো থাকুক!
–,,আমার মনে হয় তোমরা চাও না আমি ভালো থাকি,তুমি ও তো বিয়ে করেছো তুমি কি ভালো আছো?নিজের মন কে প্রশ্ন করো মা তুমি কি সত্যি ভালো আছো?আমি চাই না আমার জীবন টা তোমার মতো হোক,কেউ একজন নিয়ম করে আমাকে অযো”গ্য বলে বলে অপ’মান করুক।আমি আগে নিজেকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে চাই যেখানে আমার পরিচয় শুধু আমার নিজের নামে হবে, অন্যের নামে পরিচিত হতে হবে না,অন্যের টাকায় চলতে হবে না।অন্যের বাড়িতে থাকতে হবে না।কথায় কথায় শুনতে হবে না আমার বাড়ি থেকে চলে যাও, তোমার কি মু’রদ আছে এগুলা করার!প্লিজ মা সাহায্য করো আমাকে আমি বিয়েটা করে ভালো থাকবো না।
রাজিয়া বেগম চোখের পানি মুছে বললেন–,,তৃধা শাড়ি পড়।খয়েরী রঙের টা তোকে বেশি মানাবে।
তৃধা অবাক চোখে তাকিয়ে তার মায়ের দিকে।তৃধা হাসলো কিছু সময়ের মাঝেই আবার রাগ এসে ভর করলো তার উপর চাপা সুরে বললো–,, পড়বো না শাড়ি,তুমি যাও!
রাজিয়া বেগম রেগে বললো–,, তোর মতো সন্তান পে’টে ধরেই ভুল করেছি আমি!তোর জন্য মানুষের এতো এতো কথা শুনতে হয় আমাকে,এতো জ্বালা”বি জানলে জন্মের পরই মে”রে ফেলতাম তোকে!
তৃধা নিশ্চুপ হয়ে গেলো পুরো।রাজিয়া বেগম আবার ও শান্ত হয়ে বললেন-,,নিজের বাবার সম্মানের কথাটা ভাব একবার!
তৃধা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো–,, শাড়ি পড়িয়ে দাও!
রাজিয়া বেগম খুশি হয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন।
তিনি তৃধা কে শাড়ি পড়িয়ে দিলেন,চুল আঁচড়ে দিলেন।খুশি মনে বের হলেন ঘর থেকে।
তৃধা দরজা আঁটকে নিজেকে আয়নায় দেখলো,তাচ্ছিল্য হেসে বললো–,, মেয়ে মানুষের স্বপ্ন দেখা বারণ!
ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় পারফিউমের বোতল টা ছুঁড়ে মার’লো তৃধা।চিৎকার করে কাঁদতে চেয়েও পারলো না।এতোটা অসহায় কেনো হয়ে পড়ছে সে,যে মানুষ গুলো তার কথা একবার ভাবলো না, কেনো তাদের সম্মানের কথা ভেবে কেনো তার মন মস্তিষ্ক তাকে এতো টা বাঁধা দিচ্ছে?জীবনের সমীকরণ কেনো এতোটা কঠিন!
ঘরের এক একটা জিনিস ভাঙ্গলো তৃধা,নিজের বাবার এই ঐশ্বর্য কে লা’নত জানিয়ে বললো–,,আপনার এই সম্পদ আপনার এই অহং”কার একদিন আপনার থেকে আপনার সব কে’ড়ে নিবে মিস্টার আজাদ তালুকদার!আপনি নিঃস্ব হয়ে যাবেন,শুধু আফসোস করবেন কেনো ভালোবাসা কে আঁকড়ে ধরলেন না।
স্নিগ্ধা বার বার দরজা ধাক্কালো, এক পর্যায়ে দরজা খুললো তৃধা।স্নিগ্ধা আঁত’কে উঠলো ঘরের অবস্থা দেখে।
স্নিগ্ধা রাগ দেখিয়ে বললো–,, কি করেছিস আপাই?এমা হাত থেকে তো র’ক্ত পড়ছে।
স্নিগ্ধা দ্রুত পায়ে এসে তৃধার হাত চেপে ধরলো,হাতের যা অবস্থা হয়েছে নিশ্চিত সেলাই লাগবে।বেন্ডে’জ করতেও না করলো তৃধা, স্নিগ্ধা জোর করে বেন্ডে’জ করলো।তৃধা কে বাথরুমে নিয়ে তার মুখ মুছে দিলো।
রুমে এসে তৃধা কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,জানো আপাই আজকে না একটা পোস্ট দেখেছি।সেখানে লিখা ছিলো যারা বাবার ভালোবাসা পায় না, তারা স্বামীর ভালোবাসা বেশি পায়,একদম রাজ কপাল হয় বুঝলে?
তৃধা মুচকি হাসলো শুধু।নিচ থেকে স্নিগ্ধার ভাই আবির এসে বললো–,, আপু কে নিয়ে যেতে বলেছে বড় মা।
স্নিগ্ধা আবির কে জিজ্ঞেস করলো–,,এই আদিব ভাইয়া এসেছে রে?
আবির বললো–,,না আসেনি, ভাইয়ার ভার্সিটির পরীক্ষা চলছে।কিন্তু তুমি বার বার ভাইয়ার কথা জিজ্ঞেস করছো কেনো?
স্নিগ্ধা নিজের ভাইয়ের গোয়েন্দা গীরি তে অসন্তুষ্ট, তুই ছোট ছোটর মতো থাক না।
তৃধাকে সাথে নিয়ে নিচে নামলো স্নিগ্ধা।সিঁড়ি শেষ মাথায় আসতেই তৃধার দু পাশে দাড়ালো বাড়ির তিন গিন্নি। স্নিগ্ধা, নাদিম,আবির এক পাশে দাড়ালো।
আজাদ তালুকদার তার দুই ভাই সফিক ও রফিক তালুকদারের সাথে সোফায় বসে আছেন।তাদের পাশেই জোছনা বেগম।
বাকি সব গুলো সোফাতে মজুমদার বাড়ির বড়রা বসে আছে।
তৃধা কে বসানো হলো গোলবাহার বেগমের সাথে।তৃধার ঘোমটা সরাতেই তিনি মাশাআল্লাহ বলে উঠলেন।আমিনা বেগমের ও ছেলের বউ মনে ধরলো।
কিন্তু এরিশ?তাকে তো মিথ্যা বলে এখানে আনা হয়েছে ছেলের যা রাগ এখানে না কিছু করে বসে,চিন্তায় চিন্তায় ভিতরে ভিতরে অস্থির হয়ে পড়ছেন তিনি।
তৃধা পন করেছে ছেলের মুখ দেখবে না তবে কৌতূহল দমিয়ে রাখতে পারলো না,সে সরাসরি সামনে বসে থাকা মানুষটার দিকে তাকালো।মানুষ টার দিকে তাকাতেই দেখলো যুবকটি আগে থেকেই তার দিকে তাকিয়ে। তৃধা লজ্জা পাওয়ার বদলে তার চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো রাগে, এটা তো সেই বেয়া”দব ছেলেটি,গতদিন রাস্তার মোড়ে কি ঝ”গড়া টাই না করলো,ঝ”গড়ায় পারেনি বলে বিয়ে করতে চলে এসেছে!কি সাংঘা”তিক ছেলে।
অন্যদিকে এরিশের মাথা আরো বেশি গরম, একে তো না বলে পাত্রী দেখতে চলে এসেছে।আবার মেয়েটা ও এমন আদব কায়দা তো দূর এর মুখের ভাষার ও ঠিক নেই,মিনিটে বিশ টা গা”লি দেয় এই মেয়ে!না পারছে বলতে না পারছে সইতে!
তৃধা, এরিশ দুজনেই ভাবছে, একবার এখান থেকে যাই বিয়ে করা তো দূর জীবনেও এর মুখ দেখবো না।
তবে তাদের পরিবার আর তাদের ভাগ্য হয়তো অন্য কথাই ভাবছে।
স্নিগ্ধা তো নাদিম কে খোঁচা মে’রে বললো–,, ভাইয়া ছেলেটা কে যতো বুড়ো হবে ভেবেছি ততোটাও না, সুন্দর আছে,বলতে পারো হ্যান্ড”সাম, ড্যা”সিং,কিউ,,,!
নাদিম চাপা ধম’কের সুরে বললো–,, থামবি তুই?কচুর কিউ’টন্যাস দিয়ে কি হবে,তুই জানিস ওই ছেলেটা কে?
স্নিগ্ধা প্রশ্নবৃত্ত চোখে তাকালো নাদিম দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো–,, গতকাল তৃধা এসে বলেছিলো না,একটা শয়”তানের সাথে তার দেখা হয়েছিলো।যাকে হাতে চট’কে চট”কে লবন ছাড়া ভর্তা করে হাঙ’র দিয়ে খাওয়াবে।সে আর কেউ না সামনে বসে থাকা মানুষটি!
স্নিগ্ধা জোরেই বলে উঠলো–,, কিহ্!
সবাই তার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো,স্নিগ্ধা মাথা নিচু করে এদিক ওদিক তাকালো।
গোলজার মজুমদার তখনই সেই বিস্ফো’রণ হওয়ার মতো কথাটি বললো–,,তা বেয়াইন সাহেবা, আপনার কথা মতো কাজি তো আইসা পড়ছে তাইলে এবার বিবাহের কাজটা সেরে ফেলি!
চোখ বড় বড় করে নিজের মায়ের দিকে তাকালো এরিশ।আমিনা বেগম অসহায় হয়ে বুঝালো সে সত্যি কিছু জানে না।এরিশ উঠতে নিলেই তার দাদী তার হাত ধরে বললো–,,দাদু ভাই নিজের বাবার সম্মানের কথা একবার ভাবো!
এরিশ দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,, আর আমার কথা ভাববে না তোমরা কেউ?এই মেয়েকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়!
আমিনা বেগম এসে এরিশের কাঁধে হাত রেখে বললো–,,আমার জন্য, তোর মায়ের জন্য হলেও বিয়েটা কর বাবা,এটা আমার অনুরোধ!
তৃধা তো উঠে দাড়িয়েই পড়েছে,আজাদ তালুকদার চোখ রাঙালো।তৃধা ওসবের তোয়াক্কা করলো না।
জোছনা বেগম,রাজিয়া বেগম তৃধার হাত টেনে বসিয়ে দিলো আবার।
তৃধা মোচড়ানো শুরু করলো রাগী চোখে তাকালো জোছনা বেগমের দিকে,ফোঁ”স ফোঁ”স করতে করতে বললো–,,ম’রে যাবো তবুও এই বিয়ে করবো না!
জোছনা বেগম বললো–,,তুই করবি সাথে তোর দাদা ও করবে!
কাজি সাহেব নিজের কাজ শুরু করলেন,মোচড়ামুচড়ি তে তৃধার হাতে চাপ পড়লো ব্যাথা পেলো তবুও টু শব্দ টুকু করলো না।হাতের ব্যাথার চাইতেও হাজার গুন বেশি ব্যাথা তার বুকে হচ্ছে,আপন মানুষ গুলোর এমন ব্যবাহার মেনে নেওয়া সত্যি কষ্টের!
এরিশ এখনো তৃধার দিকে তাকিয়ে, সবার আগে নজরে এসেছে তৃধার হাতের উপরের শুভ্রতম বে”ন্ডেজ।তার বিরক্ত মাখা চাহনি,রাগে ফুলে উঠা নাক!
কবুল বলার সময় আসলে তৃধা চুপ করে বসে রইলো,দীর্ঘ পনেরো মিনিট পর আজাদ তালুকদার ধম”ক দিয়ে উঠলেন,তৃধা তখনই কাঁপা কন্ঠে বললো–,, কবুল!
এরিশ এখনও গম্ভীর মুখে বসে,তার পালা আসলে,সে কবুল বলে সেখান থেকে উঠে চলে যায়।
তৃধা কে ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়,তৃধার ঘরে অবস্থা দেখে হতাশ হলেন রাজিয়া বেগম,কাজের মহিলা কে দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব পরিষ্কার করালেন।
রাতের খাবার শেষে বসলো দুই পরিবার।মজুমদার বাড়ির সবাই তৃধা কে নিয়ে যেতে চাইলেও জোছনা বেগম বাঁধ সাধলেন বললেন–,,একেবারে আনুষ্ঠানিকতা সেরেই তিনি নাতনি বিদায় দিবেন,আজ রাতে এরিশ এখানে থেকে যাক!
এরিশের সাথে তার চাচাতো ভাই বোন এলিজা,নাজিয়া, নেহাল থেকে গেলো।
এরিশ কে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে তৃধার ঘরে ঢুকিয়ে সব ছোটরা বিদেয় নিলো।
———–
এরিশ রুমে আসতেই তৃধা তেড়ে এসে তার কলার চেপে ধরে বললো–,,অ”সভ্য লোক কেনো বিয়ে করেছেন আমাকে?
এরিশ এমনিতেই রেগে আছে তার উপর এই মেয়ে তার কলার চেপে ধরেছে,মাথা কি করে ঠিক থাকবে।
এরিশ আচমকা তৃধার কোমর শক্ত করে চেপে ধরে,রাগে হিসহিসিয়ে বলে–,,আপনার থেকে বদ”লা নেওয়ার জন্য বিয়ে করেছি!একটা থাপ্প”র মেরে”ছিলেন না আপনি আমাকে?সেই থাপ্প”রের মাশুল আপনি এবার থেকে রোজ দিবেন,আমার বেড পার্ট”নার হবেন সম্পূর্ণ অনিচ্ছায়, এর থেকে বড় থাপ্প”ড় আপনার জন্য আর কি হতে পারে মিসেস তৃধা তালুকদার!
চলবে….