#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব১১
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
তৃধার হাত পা কাঁপছে, শুকনো ঢোক গিললো কয়েকবার বাহিরে ভারি বর্ষন হচ্ছে,জ্ব’রে কাঁপছে আদাভান। আমিনা বেগমের কথা মতো জল পট্টি দিয়েছে সে,তার পরে শরীর মুছতে বলেছে।এটা কি করে করবে তৃধা?তাদের সম্পর্ক তো আর পাঁচ টা স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মতো নয়।
তৃধার কান্না পেয়ে গেলো,এতোটা নিরূপায় এখন অব্দি কখনো হয়নি। আদাভান কে দেখে ওর আজ মায়া একটু বেশিই হচ্ছে, শক্তপোক্ত মানুষটার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না,তৃধার সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগ’ড়া ও করছে না।তৃধা জি’ব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো,নিজেকে বুঝ দিলো এটা তোর কর্তব্য তৃধা একটা মানুষ ম’রে যাচ্ছে যতই না মানিস তোর সাথে তো আদাভানের বিয়ে হয়েছে সে ক্ষেত্রে তার দিকে তাকালে কোনো পা’প তো হবে না।
সুস্থ হওয়ার পর শ”ত্রুতা বজায় রাখিস কেউ কিচ্ছু বলবে না তোকে।
তৃধা বাথরুম থেকে মগে করে পানি নিয়ে আসলো তোয়ালে ভিজিয়ে নিলো।এবার ভয়া’নক কাজ টা করা বাকি।আদাভানের শার্টের বোতামে হাত দিয়ে বেশ কয়েকবার সরিয়ে ফেলেছে।
আদাভান ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকালো তৃধার দিকে,তৃধার অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আদাভান,তার চোখ জোড়া লাল হয়ে আছে,তৃধা বলে উঠলো–,,রুমে যেতে পারবেন আপনি?আমি সাহায্য করছি একটু কষ্ট করে চলুন না!
আদাভানের কাছে তৃধার আবদার টুকু বেশ লাগলো,জ্ব’রের ঘোরেও তার শান্তি শান্তি লাগছে তৃধা কে দেখে।
তৃধা হাত বাড়িয়ে দিলো আদাভানের দিকে,আদাভান বহু কষ্টে নিজেকে সোজা করে তৃধার হাত ধরলো,তৃধা স্বযত্নে নিয়ে গেলো রুমে।আদাভান অবাক হয়ে তাকিয়ে, এই মেয়েটা কে দেখে মনেই হয় না কারো জন্য সে এতোটা ভাবতো কোনো দিন,শুধুই কি দায়বদ্ধতা নাকি অন্য কিছুও আছে? প্রশ্ন জাগে আদাভানের মনে আজ তৃধার সম্পর্কে জানার পর থেকে ওর মন খারা’প।এইটুকু মেয়েটার জীবনে এতোটা কষ্ট? তবুও কতো হাসিখুশি, আদাভান নিজেই তো হাসতে ভুলে গেছে, কষ্টের কাছে পরাজিত হয়ে বসে আছে সেই কবে, দ্বিতীয় বার আর সামনে তাকাতে মনই চায়নি তার!
তৃধা এবার কোমরে দুহাত রেখে বললো–,,দেখুন, আমাকে খারা”প মেয়ে মনে করবেন না।আমার আপনাকে দেখার কোনো ইচ্ছে নেই কিন্তু এখন আপনার শার্ট টা খুলতে হবে!
আদাভান হাসলো,তৃধার রাগে নাকের পাটা ফুলে উঠলো তেড়ে গিয়ে বললো–,,অসুস্থ দেখে ছাড় দিচ্ছি, তাই বলে যা নয় তাই করবেন?হাসছেন কেনো অমন করে।
আদাভান জড়ানো গলায় বললো–,,আচ্ছা আর হাসবো না।তুমি কেনো এসেছো কষ্ট করে?
তৃধা থমকে গেলো আসলেই তো কেনো আসলো উতলা হয়ে?এই লোকটার জন্য ওর মায়া কাজ করছে?হায় সর্ব’নাশ!
তৃধা বলে উঠলো–,,আমি চোখ বন্ধ করছি আপনি শার্ট খুলে ফেলুন।
–,,আমার হাতে একটুও শক্তি নেই,লাগবে না বাদ দাও!
–,,আপনার মা বলেছে,তাই করছি আমার এতো ঠেকা পড়ে নাই।বাহিরের অবস্থা দেখেছেন ডাক্তার আনাও তো সম্ভব না,বাচ্চাদের মতো কাজ করেন কেনো বলুন তো বয়স তো কম হয়নি।ভাললাগে না,নাম মাত্র বউ হয়ে যত জ্বালা হয়েছে আমার।
তৃধা এগিয়ে গিয়ে বললো হাসবেন তো একেবারে হাসবেন না দেখি কাছে আসুন,আমি করে দিচ্ছি।
তৃধা নিজের নার্ভা”সনেস কাটানোর জন্য বক বক করছে, বুুঝতে পেরে আরেক দফা হাসলে আদাভান।তৃধা শার্ট খুলে লম্বা শ্বাস টানলো, চোখ বন্ধ করতেও পারছে না আবার খুলে রাখাতেও সমস্যা।
তৃধা কোনো রকম গা মুছে দিয়ে উঠে পড়লো,এক ছুটে বাথরুমে গিয়ে বুকে ফু দিয়ে বললো–,,আল্লাহ বাঁচাইছে এবারের মতো,আর একটু হইলে দ’ম টা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো!
তৃধা রান্না ঘরে গিয়ে দেখলো রান্না করাইছ আছে,খাবার গরম করে প্লেটে তুলে নিলো।
আদাভান চোখ বুঝে শুয়ে আছে,তৃধা মৃদু স্বরে ডাকলো–,ঘুমিয়ে পড়েছেন?
আদাভান চোখ খুলে তাকালো,তৃধা প্লেট এগিয়ে দিয়ে বললো–,,খেয়ে উদ্ধার করুন এবার!
–,,খেতে ইচ্ছে করছে না,তবে।
তৃধা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
–,,তুমি খাইয়ে দিলে খেতে পারি!
তৃধা অবাক হয়ে বললো–,,পিরি”তের ভুত কবে চাপলো মাথায়?কি সব বলছেন?স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেননি তো আবার,ভুলে যাচ্ছেন আমি আপনার এক মাত্র শ’ত্রু!
আদাভান তৃধার হাত আলতো হাতে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে দিলো।
তৃধার কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে বললো–,,চলো না বন্ধু হয়ে যাই!
তৃধা বলে উঠলো–,,স্যার জ্বর তো এতো বেশি ও না, এখনই আবোল”তাবোল বলা শুরু করেছেন?না জানি বেহু”শ থাকলে কি কি বলতেন!
আদাভান তৃধার হাতে হাত রেখে বললো–,,খাইয়ে দাও না প্লিজ!
তৃধা অপলক তাকিয়ে আদাভানের দিকে,এতো সুন্দর করে ও কথা বলতে পারে? না না তার নিশ্চিত শুনতে ভুল হচ্ছে।
তৃধা কাঁপা হাতে খাবার হাতে তুললো,নিজেকে সব সময় কঠিন করে তৈরি করেছে, যে সময়টাতে বাবা মায়ের তাকে বেশি আদর করার কথা ছিলো সেই সময়টাতে সে পেয়েছে চরম অবহেলা,শৈশবে সে দেখতো সবার আগে তার বোন কে প্রাধান্য দেওয়া হতো,কৈশোরে তার কপালে জুটলো অবহেলা।বাবা মা নিজেদের মন খারা’পের সব টুকু বিদ্বে”ষ তার উপর ঝেড়ে ফেলে দায় মুক্ত হয়ে গেছেন।কখনো তারা খেয়ালই করেনি তৃধার আদো কিছু চাই কিনা,তৃধার পছন্দ, অপছন্দ,সখ,আহ্লাদ বলতে কিছু আছে কিনা।শুধু দায়িত্ব হিসেবে টাকা ধরিয়ে দিতো। কতো দিন মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমানো হয় না মায়ের হাতে কবে শেষ বার খেয়েছে ভুল গেছে তৃধা।
তৃধা যতোটা রাগী ততোটা মায়াময়ী, সবাইকে কড়া করে কথা শুনানোর পর নিজে বসে বসে কাঁদে, মন প্রাণ উজাড় করে কান্না করে,সে ও চায় সবাই কে যত্ন করতে আগলে রাখতে, ও নিজে যা পায়নি তা সবাইকে দিতে।
তৃধার চোখ জলে টলমল করে উঠলো,আদাভান তৃধা কম্পনরত হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ পরে নিজ থেকে টেনে নিয়েই মুখে পুরলো খাবার!
তৃধা কেঁদে ফেললো, এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে।
তৃধা জোড় পূর্বক হেসে বললো–,,যদি বি’ষ মিশিয়ে দেই,আমার হাতে খেতে ভয় করছে না প্রফেসর সাহেব?
আদাভানের শান্ত জবাব–,,আগের তৃধা কে বিশ্বাস করতাম না আমি,এখনকার তৃধা কে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়!
তৃধা আদাভান কে খাওয়ানো শেষ করে ঔষধ বের করে দিলো।পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো–,,মা কে ফোন দিয়ে কথা বলে নিন অনেক চিন্তায় আছেন,আপনাকে তো বড় মানুষ ভাবতাম এখন দেখছি আপনি একটা বাচ্চা,বৃষ্টি তে কেনো ভিজেছেন বলুন তো।কি একটা অবস্থা করেছেন নিজের।
আদাভান গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,যাও গিয়ে আগে খাও।
–,,খেতে ইচ্ছে করছে না।
–,,একটা চ’ড় লাগাবো বেয়াদ”ব।
–,,ঠিকই ভেবেছিলাম আপনি কোনো দিন ভালো হবেন না,এই কি সুন্দর করে কথা বলছিলেন এখনই শয়’তানের আসল রূপ বেরিয়ে এসেছে।ঘুমিয়ে পড়ুন ভালো লাগবে।
–,,তুমি একটু আগে বন্ধুত্ব করেছো,এখনই বন্ধুর সামান্য কথা শুনছো না?আমিও তোমার কথা শুনবো না ঘুমাবো না!
–,,অদ্ভুত আচরন কেনো করছেন আদাভান,আমার না কেমন কেমন যেনো লাগছে।আপনার ভালো কথা আমার সহ্য হচ্ছে না!
তৃধা মাথা চেপে ধরে বললো–,,ওদিকে চাপুন তো ঘুমাবো,আর একটা কথাও যদি বলেছেন তো আপনার মুখ সে”লাই করে দিবো আমি!
আদাভান তৃধার পাশ ঘেঁষে শুয়ে পড়লো, তৃধা এক ঝটকায় দূরে সরে গেলো।আদাভান তৃধার হাত টেনে কাছে এনে বললো–,,শুনো তৃধা,জীবনে অনেক কিছুই ঘটে যা আমরা কোনো দিন কল্পনাতেও ভাবি না,এই দেখো না চাইতেও আমাদের দুজনের জীবন একই সুতায় গেঁথে গেলো,এটা না আমি অস্বীকার করতে পারবো আর না তুমি।আমাদের জীবনের শুরুটা অনেক অসুন্দর দুঃস্বপ্নের মতো,আমি তোমার বন্ধু হয়ে সারাজীবন তোমার পাশে থাকতে চাই।আর আমি যেহেতু বলেছি আমরা আজ থেকে বন্ধু তার মানে বন্ধু, তুমি না করলে তোমার মাথা ফাটি”য়ে দিবো।ত্যা,ড়ামি কম করবে আজ থেকে,তার পরে রইলো আমাদের সম্পর্কের কথা,সব কিছুতে আগে বন্ধুত্ব টা থাকা প্রয়োজন,যদি আমাদের দুজনের কোনো দিন মনে হয় আমরা স্বামী স্ত্রী হিসেবে থাকতে পারবো তখন ওটা নিয়ে ভাবা যাবে,তার আগ পর্যন্ত এসব নিয়ে কোনো কথাই আমরা বলবো না।
যদি কোনো দিন আমাদের মনে কোনো অনুভূতি না জন্মায় তাহলে বন্ধু হয়েই থেকে যাবো আজীবন,সমাজ কি বললো তা নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করে লাভ নেই,নিজের জীবনে তুমি যা যা অর্জন করতে চাও সব কিছুতে পাশে আমাকে পাবে।আমি চাই তুমি অনেক বড় হও, আজ থেকে তোমার সব স্বপ্ন আমার হলো।আমার স্বপ্ন গুলো পুরন করবে তো তৃধা?কথা দিচ্ছি মাঝপথে হাত ছেড়ে দিবো না।আমি মানুষ টা বড্ড অগোছালো এলোমেলো, বলতে পারো খুবই বা’জে তার পরও একটা কথা সত্যি আমি কথা দিলে কথা রাখি!তোমার আশেপাশে সব শূন্য হয়ে গেলেও দেখবে আমি আছি থাকবো সব সময়!
কিন্তু তোমাকেও আমাকে কথা দিতে হবে,আমার কিছু শর্ত আছে সে সব শর্ত তোমাকে মানতে হবে!
তৃধা হা হয়ে তাকিয়ে কথা শুনছে,আদাভান এসব কেনো বলছে হঠাৎ মাথায় কিছুই ঢুকছে না তৃধার।
আদাভান নিজ থেকেই আবার বললো–,
“তোমাকে আমার কাছে আবদার করতে হবে”
“আমাকে বিশ্বাস করতে হবে”
“ছোট বড় যা সমস্যাই থাকুক আমাকে বলতে হবে”
“খারা’প অভ্যাস টা আছে না ওটা ছাড়তে হবে”
“বেশি পাকা”মো করতে পারবে না”
“সব সময় হাসিখুশি থাকতে হবে”
এবং সবার শেষে
“সব সময় আমার সাথেই থাকতে হবে,কখনো আমাকে ছাড়ার কথা চিন্তা করতে পারবে না”
তৃধার এবার সত্যি মাথা ব্যাথা করতেছে কি সব বলছে এই ছেলে অসুস্থ হয়ে কি মাথাটাও ন’ষ্ট হয়ে গেলো নাকি।
তৃধা কোনো কথা বললো না চোখ বন্ধ করে মাথা চেপে ধরে রাখলো।
আদাভান এতোগুলা কথা বলে লম্বা শ্বাস টানলো,সে যে নিজের জীবনে তৃধাকে গ্রহণ করে নিচ্ছে ভেবেই হাসলো,তার নিজেরও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।আদাভান আজ বৃষ্টিতে ভিজেছে নিজের অতীত কে ধুয়েমুছে দিয়েছে চিরতরে, সে তৃধা কে ভালোবাসে না ঠিকই তার পর ও সব সম্পর্কে ভালোবাসা থাকতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই,হোক না তাদের সম্পর্ক টা একটু অন্য রকম!
আদাভান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ভাবলো তৃধা কে সোনালীর বিষয়ে সব কথা জানিয়ে দিবে,তবে সে পাশ ফিরতেই দেখলো তৃধা ঘুমিয়ে পড়েছে।
আদাভানের তুলনায় তৃধা প্রায় নয় বছরের ছোট,মেয়েটার চেহারায় ফুটে উঠে চঞ্চলতা, কি স্নিগ্ধ মায়া উপেক্ষা করা বড় দায়।
আদাভান তৃধার গাল আলতো ছুঁয়ে দিয়ে বললো–,,আমি সব হারিয়ে তোমায় পেয়েছি স্বার্থপ’রের মতো নিজের ভালো থাকা তোমার মাঝে খুঁজেছি।
তুমি ফুল হয়ে সুভাস ছড়াও প্রজাপতি হয়ে ঘুরে বেড়াও আমার এই ছোট্ট জীবনে, আমি চাই খুব করে চাই তুমি থেকে যাও আমার নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে সব কিছুতে!
—————
সকালে ঘুম থেকে উঠে বেশ লজ্জায় পড়লো তৃধা কি ভয়া’নক কান্ড, ভাগ্য ভালো আদাভান এখনো উঠেনি,না হয় কি ভাবতো?
তৃধা দ্রুত উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো নাস্তা বানাতে গেলো দ্রুত।বেশ কিছু সময় পর কলিং বেল বাজলো তৃধা মাথায় উড়না চাপিয়ে দরজা খুলে দেখলো তাদের ডিপার্টমেন্ট হেড এসেছে।
তৃধার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো,ওরা যে বিবাহিত এটা তো কেউ জানে না,এখন না জানি কি সব ভাববেন উনি।
তৃধা তোতলানোর সুরে বললো–,,স্যার আপনি!
মারুফ হেসে বললো–,,কেনো আমার ভাগনের বাসায় আসতে পারি না বুঝি?
তৃধা অবাক নেত্রে তাকিয়ে,তখনই আদাভান চুল ঝাড়তে ঝাড়তে বেরিয়ে এসে বললো–,,আরে মামু তুমি সকাল সকাল!
তৃধা দরজার এক পাশে দাঁড়িয়ে দুজন কে দেখছে।
তৃধার মুখ দেখেই মারুফ হক বললেন–,,নিশ্চয়ই তুই বউ মা কে আমার পরিচয় দিসনি দেখ মেয়েটা কতো ভয় পেয়ে গেছে!
আদাভান তৃধার দিকে তাকিয়ে বললো–,,আমার ছোট মামা!
তৃধা হালকা হেসে বললো–,, ওহ!
তৃধা দ্রুত রান্না ঘরে চলে গেলো,কি যে হচ্ছে রাত থেকে শুধু টা”স্কির উপর টা”স্কি কখন জানি বেহু”শ হয়ে পড়ে যায় তৃধা এর দায়ভার তখন কে নিবে শুনি!
তৃধা ট্রে তে করে নাস্তা নিয়ে বসার ঘরে গেলো,মারুফ হক ভার্সিটিতে যতটা কড়া এখন তার একেবারেই বিপরীত।
তৃধার সাথে নিজ থেকেই গল্পে মেতে উঠলেন তিনি।
তৃধা মনোযোগী শ্রোতার ন্যায় শুনছে।
মারুফ হক এক পর্যায়ে বললেন–,,আর বলিস না মা,তোর শাশুড়ী মানে আমার বোন ছেলে বলতে অজ্ঞান, ফোন দিয়ে দিয়ে কানের পোকা নাড়িয়ে দিলো,তাই তো সকাল সকাল এভাবে আসতে হলো।
আদাভান বলে উঠলো–,,আমি একদম ঠিক আছি মামা,মা ও না অযথা চিন্তা করে।একটু জ্ব’রই তো এসেছিলো ঔষধ খেয়েছি এখন একেবারে গায়েব!
মারুফ হক আনন্দিত হয়ে বললো–,,তাহলে তো আরো ভালো ভাগনে ভার্সিটি থেকে পিকনিক যাবো সবাই।
তুই না করতে পারবি না।তোর মামি কে ছাড়া যাবো ভেবেই খুশি খুশি লাগছে।
তৃধা ফিক করে হেসে বললো–,, স্যার,,,
মারুফ থামিয়ে দিয়ে বললেন–,,স্যার নয় মামা বলো মামা,স্যার ট্যার ওসব ভার্সিটির জন্য তোলা রাখো।
তৃধা হেসে বললো–,, আপনি বেশ মজার মানুষ, আমার কিন্তু কিন্তু আপনাকে অনেক পছন্দ হয়েছে সুইট মামা!
আদাভান মন খারা””প করে বললো–,,আমাকে তো এই অব্ধি পছন্দ হলো না তোমার,মামা কে একদিনেই পছন্দ করে ফেলেছো ভালো ভালো।
মারুফ হেসে বললো–,ভাগনের জ্ব’লছে নাকি?মেয়েদের কাছে তার বাবাই আগে পরে তোর মতো সাইডে ফাই’ডের মানুষ।
বাবার কথা শুনতেই তৃধার মুখ কালো হয়ে গেলো আষাঢ়ের মেঘেরা ভীড় জমালো এই যেনো ঝড়ে যাওয়ার অপেক্ষা।
——————-
তোড়জোড় নিয়ে বাসে উঠে বসছে সবাই,কে কার পাশে বসবে এই নিয়ে চলছে ত”র্ক!পিকনিকে যাচ্ছে কক্সবাজার তাও টানা তিন দিনের ট্যুর।দুইটি বাস ছাড়া হবে।
একটি তে ইতিমধ্যে উঠে বসেছে তৃধা,নাদিম,নোভা,আভা, নিশি,রাদিফ।রাদিফ সুযোগ বুঝে নিশির পাশে সিটে বসে পড়েছে,নাদিম তৃধা পাশাপাশি বসেছে তবে ওদের কোনো ঠিক নেই একেক সময় পরিবর্তন করে বসছে সিট পাশাপাশি তিনটা সিটে বসেছে তারা।
শিক্ষকদের মধ্যে সূচনা ম্যাম আর দানিস স্যার যাওয়ার কথা।
আভা মুখ ফুলিয়ে রেখেছে গতকাল সে শপিং করে যে আকাশী রঙা জামাটা এনেছিলো তা লাগেজে রাখতে ভুলে গেছে নোভা,তা নিয়ে ঝ”গড়া বেধে গেছে প্রায়।নাদিম শেষে না পেরে নোভা কে নিজের পাশে এনে বসিয়েছে তৃধা তে আভার পাশে।
নাদিম নোভা কে পছন্দ করে এটা নোভা জানার পরও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি,কারন তাদের বন্ধুত্বটা আগে নাদিম হয়তো সে কারনেই সরাসরি ওকে কোনো দিন বলেনি, নোভা ও এসব নিয়ে বারাবাড়ি করতে চায় না যত দিন না নাদিম নিজ থেকে তাকে কিছু বলছে।
বাস ছাড়ার আগ মুহুর্তে বাসে উঠে আসলো আদিব তার পেছনে আদাভান।
তৃধা লাফিয়ে গিয়ে আদিব কে বললো–,,ভাইয়া কেমন আছো তুমি?
আদিবের নিজের আপন বোন না হলেও তৃধা কে সে আপন বোনের মতোই ভালোবাসে সবার থেকে বাঁচিয়ে রাখে বোনের গায়ে একটা ফুলের টোকাও বরদাস্ত করে না মানুষ টা।তৃধা কে অনেক গুলো সাবধনতার বানি শুনিয়ে বিদায় হলো আদিব।তাকে আবার এখন কোচিং সেন্টারে যেতে হবে,নামকরা একটা কোচিং এ শিক্ষক হিসেবে যুক্ত আছে দু বছর যাবৎ।
আদাভান গিয়ে সামনের সিটে বসলো তার পাশে সূচনা ম্যাম,মহিলার বয়স বেশি না,নতুন জয়েনিং করেছে, নাদিম তো কবে থেকেই খোঁচা মে’রে মে’রে বলছে–,,মহিলা খারা’প না কিন্তু একটাই সমস্যা অবিবাহিত!আর আদাভান ভাইয়ার সাথে ভাব জমাতে চায় শুধু।
তৃধা প্রতিক্রিয়া দেখাতে চায় না,তার পরও মনের ভেতরটা কেমন জ্ব’লে উঠে ওর!
আদাভানের দিক থেকে কিছু নেই এটা তৃধা বিশ্বাস করে,মানুষ টা কে এখন নতুন করে চিনছে ও,ঠিক অনেকটা অন্য রকম তবে পরিবর্তনটা বেশ রোমাঞ্চকর!
“জীবনের মতো বড় এডভেঞ্চার আর দ্বিতীয় টি নেই”
গান বাজনায় মেতে উঠেছে সবাই,কারো কারো বেসুরো গলায় গান,কারো কারো পেট ফাটিয়ে দেওয়ার মতো জোক’স।নাচানাচি করতে ব্যস্ত সবাই রাতের আকাশ নিস্তব্ধ পথ ওদের কর্মকান্ডের স্বাক্ষী হচ্ছে।
তৃধা এবার উঠে দাড়িয়ে বললো–,,ঘুরতে যাচ্ছি শা’লা আর মন খারা’প করে থেকে কি লাভ জীবন তো একটাই!
বাসের মৃদু আলোতে তৃধার হাস্য উজ্জ্বল মুখ দেখে নিরবে আদাভান ও হাসলো।
তবে তার হাসি দীর্ঘ স্থায়ী হলো না তৃধার দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো তার।
কিছু সময়ের ব্যবধানে বাসের সব লাইট অফ করে দেওয়া হলো,স্টুডেন্ট রা তো চেঁচিয়ে বলে উঠলো –,,ওই মামা লাইট বন্ধ করলেন কেন?
হৈ-হুল্লোড় এর মাঝে তৃধার কানের কাছে এসে থামলো এক শীতল কণ্ঠের কঠিন ধম’ক।তৃধার হার্টবিট ফাস্ট হয়ে গেলো মুহুর্তেই, আদাভান দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,আনন্দ করছো করো,ওড়না যেনো ঠিকঠাক গায়ের উপর থাকে।
আবার যদি একটু উল্টো পাল্টা দেখি তো পরিনাম ভালো হবে না।
ভুলে যাবে না,তুমি আদাভান এরিশের ওয়াইফ।তোমার সম্মানের সাথে তার সম্মান ও জড়িয়ে আছে।তোমার সম্মানই তোমার হাসবেন্ডের সম্মান!
আমার সম্মানের এক ফোঁটা অপ”মান ও আমি সহ্য করবো না, মাইন্ড ইট!
———–
ভোরে হোটেলে উঠেছে সবাই যে যার রুমে জিনিসপত্র রেখেই সূর্য উঠা দেখার জন্য বের হয়েছে।
নিশি,আভা বাসে বমি করে অবস্থা খারা’প করে ফেলেছে।
তার পরও ওদের টেনে টুনে নিয়ে এসেছে বাকিরা।
যে যার মতো ঘুরাঘুরি করছে, বেশির ভাগের হাতেই ক্যামেরা।সমুদ্রের মনোরম কলতান শুনতে তার রেকর্ড করতে ব্যস্ত,উতাল”পাতাল ঢেউ এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে পা।
তৃধা আশেপাশে তাকিয়ে হঠাৎ থমকে গেলো নিশ্চিত হতে দৌড় লাগালো কাঙ্ক্ষিত মানুষটির পানে।
আদাভান খেয়াল করলো তৃধা কোথাও ছুটে যাচ্ছে সে পিছু নিলো, দৌড়ে গিয়ে তৃধার হাত টেনে ধরে বললো–,, এভাবে কোথায় যাচ্ছো বলোতো?
তৃধা দু কদম পিছিয়ে এসে ডেকে উঠলো–,,আপাই!
চলবে,,,,,