নৈঃশব্দ্যের প্রেমালাপ পর্ব-১২

0
1

#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব১২
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
এক ছুটে পাশে থাকা যুবকটি আদাভান কে আচমকা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

আদাভান আকষ্মিক ঘটনায় থমকায়,তার হৃৎস্প’ন্দন বাড়ে অস্বাভাবিক মাত্রায়, তৃধার সেদিকে খেয়াল নেই,সে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে নিজের বোন কে।

জোবান কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো–,,এরিশ ভাইয়া!

আদাভানের কানে বাজলো কন্ঠস্বর,এ ও হতে পারে?আদাভান দ্রুত নিজের থেকে ছাড়ালো যুবকটিকে,নিজের হাত ছেলেটার মুখে স্পর্শ করে আরেক দফা জড়িয়ে ধরে বললো–,,কোথায় ছিলি এতো গুলো বছর?ভাইকে এতো সহজে ভুলে গেলি?কোথায় কোথায় খুঁজিনি তোকে বল আমি,আমাকে না জানিয়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারলি তুই?ভাইয়ের প্রতি এই বিশ্বাস তোর!

জোবানের চোখে জল নিজেকে সামলে বলে উঠলো–,,আমি মৃধাকে ভালোবাসি ভাইয়া, সবাই ওকে এতো এতো অপমান করলো মেনে নিতে পারিনি আমি,দাদু ভাই আমাকে বাসা থেকে বের করে দিলো,যাকে নিজের থেকে বেশি সম্মান করেছি ভালোবেসেছি,সারাজীবন ওনার একটা একটা কথা আমি মেনে চলেছি,কোনো অবাধ্যতা করিনি কিন্তু আমার একটা সিদ্ধান্ত উনি মেনে নিতে পারলেন না,আমার ভালোবাসার মানুষ কে মেনে নিতে অস্বীকার করে দিলো।আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছি এটাই যদি আমার অপরা’ধ হয়ে থাকে তো থাকলাম না মজুমদার বাড়ি, জে’দ চেপেছিলো মাথায় যেখানে আমার আর আমার স্ত্রীর কোনো সম্মান নেই সেখানে থাকবো না আমি, তাই চলে এসেছি!

আদাভান কথা হারালো, তার ভাইয়ের জন্য গর্ব হচ্ছে আজ।ভাইয়ের প্রতি থাকা অভিমান কমে গেলো মুহুর্তেই,সব রাগ অভিমান গিয়ে জমা পড়লো গোলজার মজুমদারের নামে।তবে আদাভান খুশি তার ভাই সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষ পেয়েছে যে তার খারা’প সময়ে ও তার পাশে ছিলো,অযুহাত দেখিয়ে হাত ছেড়ে দেয়নি!

আদাভান হেসে বললো–,,দেখি কে উনি, যে আমার ভোলাভালা ভাইটার মন কেঁড়ে”ছে।

জোবান উল্টো ঘুরে যেই না মৃধা কে ডাকতে যাবে তখনই তৃধা এসে বললো–,,প্রফেসর, আমার বোনের সাথে পরিচিত হন আমার বড় বোন মৃধা তালুকদার!

আদাভানের চোখ আকষ্মিক ভাবে বড় বড় হয়ে গেলো,তৃধা মৃধার চেহারায় কতো মিল।

আদাভান ভ্রু বাঁকিয়েই জিজ্ঞেস করলো –,,তোমরা টুইন?

তৃধা হেসে বললো–,,না স্যার,আপাই তো আমার থেকে অনেক বড়।

জোবান বলে উঠলো–,,তোমরা কি পূর্ব পরিচিত?ভাইয়া তুমি মৃধা কে আগে থেকে চিনতে?

মৃধা বলে উঠলো–,,তুমি উনাকে ভাইয়া বলছো কে উনি?

আদাভান বলে উঠলো–,,জোবান তার মানে তৃধার বড় বোন মৃধা তোর ওয়াইফ?

তৃধা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে,আদাভানের ভাইয়ের সাথে ওর বোনের বিয়ে হয়েছে!

মৃধা বলে উঠলো–,,তৃধা তো আপনার স্টুডেন্ট ভাইয়া,,,,

নাদিম পেছন থেকে বলে উঠলো–,,তৃধা স্যারের বউ!

নাদিমের কথা শুনে তৃধা চোখ রাঙালো নোভা মুখ টিপে হাসলো,নিশি হাঁপাতে হাঁপাতে বললো–,,ভাই তোরা এতো জোরে কেন দৌড়রাস আমার মতো বাচ্চা টা কি তোদের সমান দৌড়াতে পারে!

রাদিফ এসে নিশি কে হাতে বাতাস করে দিতে দিতে বললো–,,খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি?

আভা নাক মুখ কুঁচকে বললো–,, তোদের এই ন্যাকার ষষ্ঠী প্রেমটা একটু বন্ধ রাখ,এখানে কি হচ্ছে আগে জানতে দে!

নাদিম কে দেখে মৃধা এগিয়ে এসে আলতো জড়িয়ে ধরে বললো–,কেমন আছিস নাদুস নুদুস!

নাদিম কথা বললো না,নাক ফুলিয়ে রেখেছে আর ফোঁ’স ফোঁ’স করছে।নোভা নাদিমের মুখের অবস্থা দেখে হাসি আর আটকাতে পারলো না হো হো করে হেসে বললো–,,মৃধা আপাই তোমার ভাইয়ের পুরনো রোগ এখনো সারেনি,দেখে ঠিক আগের মতোই নাক ফুলায়!

মৃধা চমকে উঠে বললো–,,নুভু পাখি!
আভা পেছন থেকে বললো–,,আমাকে কেউ মনেই রাখলো না!

মৃধা দুজনকে একসাথে জড়িয়ে ধরে বললো–,,সবাইকেই মনে রেখেছি আমি।

নাদিম এবার বলে উঠলো–,,তুমি আমার সাথে কথা বলবা না বলে দিচ্ছি,একদম রাগ ভাঙ্গাতে আসবে না বলে রাখছি,আদিব ভাইয়া তো তোমার উপর আরো বেশি রাগ করে আছে,স্নিগ্ধাও!

মৃধার মনের ভেতরটা হু হু করে উঠলো,কতোটা দিন পর ভাই বোনদের দেখছে,রোজ রোজ বাড়ির জন্য, বাবা,মা ভাই,বোন সবার জন্য কতোটা ছ’টফ’ট করেছে সে,শুধু মন চাইতো ছুটে চলে যেতে তবুও বাবার প্রতি অভিমান তার হাত পা বেঁধে দিতো অদৃশ্য ভাবে!

আদাভান,জোবান মনোযোগ দিয়ে ভাই বোনদের মিলনমেলা দেখছে।তৃধা ফোন এগিয়ে দিলো মৃধার দিকে,মৃধা প্রশ্নাত্মোক চোখে তাকিয়ে, তৃধা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বললো–,,আমার ভাইয়ের বউ তোমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে!

মৃধা অবাক কন্ঠে বললো–,, আদিব্বার বাচ্চা বিয়ে করে ফেলছে!

ফোনের অপর প্রান্ত থেকে কড়া কন্ঠে আদিব বলে উঠলো–,,ফ”কিন্নি আমি কি তোর মতো?

মৃধা ফোন কে’ড়ে নিলো তৃধার থেকে ভিডিও কলে আদিব কে দেখা যাচ্ছে,মৃধার চোখ ছলছল করে উঠলো সে কেঁদে উঠে বললো–,কেমন আছিস বল?

আদিবের অভিমানী কন্ঠ–,,এতোদিন পর?আমাকে ও বিশ্বাস করিস না ভালো তো!এতোদিন যখন কথা বলিস নি এখন আর বলার দরকার নাই।

মৃধা আদর মাখা কন্ঠে বললো–,,ছোট ভাই আমার,বোনকে ক্ষ’মা করা যায় না!

নাদিম ফোন কে’ড়ে নিয়ে বললো–,,মেলো”ড্রামা বন্ধ করো তোমরা, তোমাদের এসব মায়া মহব্বত দেখলে আমার গাঁ জ্ব’লে।

নোভা বলে উঠলো–,,তুই তো জন্মগত হিং’সুটে!

নাদিম ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো–,,এই ভাইয়া তুমি এবার বিদায় হও, এখন তোমার বউয়ের পালা,সে ও তো তার বরের বোন কে দেখতে চায়!

মৃধা বলে উঠলো–,,স্নিগ্ধা ময়নাটা কতো বড় হয়েছে রে?

আদিব ওপাশ থেকে রসিকতা করে বললো–,,তোমার ভাইয়ের বউ হতে পারবে এবার বুঝো কতোটুকু বড় হয়েছে!

কথাটা বলে ফট করে ফোন কে’টে দিলো আদিব।
স্নিগ্ধার সাথে কথা বলে এক পাশে তাকালো মৃধা,জোবানের সাথে বাকিদের পরিচয় করিয়ে দিলো।

আদাভান তৃধার হাত চেপে কিছুটা দূরে নিয়ে গিয়ে বললো–,,তোমার যে বড় বোন আছে বলোনি তো,বাড়ির কেউ ও তো তার কথা বললো না!

তৃধা উল্টো প্রশ্ন করলো–,,জোবান ভাইয়া সত্যি আপনার ভাই?না মানে কতো ভদ্র ভালো,মিষ্টি করে কথা বলে,আপনি তো একটা…।

আদাভান রাগী দৃষ্টিতে তাকালো,তৃধা মেকি হেসে মাথা চুলকে বললো–,,এমনে তাকান কেন?

মৃধা আর জোবান কে তৃধা আর আদাভানের বিয়ে থেকে শুরু করে পরবর্তী সব ঘটনা খুলে বলে দ’ম ফেললো নাদিম।
নোভা হতাশ কন্ঠে বললো–,, বুঝলে আপাই এদের হিসাব কিছুতেই মিলাতে পারি না!

মৃধা আ”তঙ্কিত কন্ঠে বললো–,, আমাদের সাথে যে তোদের দেখা হয়েছে বাড়ির বড়দের বলবি না।কারন আমাদের কে উনারা মেনে নেননি,যদি জানে আমি তৃধার বোন তখন হয়তো ওদের বিয়ে নিয়ে টানাটানি লাগবে।

জোবান বলে উঠলো–,,আমার ভাই কা”পুরুষ না মৃধা,আমি আমার দাদুর মুখের উপর কথা বলতে না পারলেও ভাই অন্যরকম,নিজের বউয়ের অসম্মান কোনো দিন হতে দিবে না সে!

মৃধা মন খারা’প করে বললো–,,আমি চাই না ওরাও পরিবার থেকে আলাদা হোক,সবাইকে ছাড়া থাকা কতোটা কষ্টের তা আমি জানি!

জোবান মৃধার বাহু আঁকড়ে ধরে বললো–,,চিন্তা করো না তো, কিচ্ছু হবে না,সব ঠিক হয়ে যাবে!

ওদের কথা বলার মাঝে জোবানের নাম ধরে ডাকলো কেউ,বাকিরা সবাই ও সেদিকে মনোযোগ দিলো,তৃধা আদাভানের কানেও আসলো ডাক।

জোবানের কলিগের কোল থেকে হাত নাড়ছে একটি ছোট্ট শিশু,রাসেল এসে জোবানের সামনে জিদান কে নামিয়ে দিয়ে বললো–,,এই যে তোমার ছেলে তোমাকে ফেরত দিয়ে গেলাম ভাই,ওকে সামলানো আমার দ্বারা হবে না!

মৃধা হেসে বললো–,, ভাইয়া আপনাকে আগেই তো বলেছি,ছেলেটা হয়েছে দুষ্টু নাম্বার ওয়ান!

জোবান শাসানোর ভঙ্গিতে বললো–,,এই আমার ছেলেকে কিছু বলবা না বলে দিচ্ছি!

তৃধার তো মনের ভেতর যেনো লাড্ডু ফুটেছে বাচ্চা ওর কি যে পছন্দ ‌!দিন দুনিয়া ভুলে দিলো এক দৌড়, এসে জিদান কে কোলে নিয়ে বললো–,,আপাই এই কিউটের ডিব্বা টা কি আমার বাবাই?তুমি ওর কথা এতোক্ষণ বলবে না?যাও তোমার সাথে আর কথা নাই আমার।

ছেলে শিশুটি তৃধার দিকে তাকিয়ে চোখের পলক ফেললো বার বার।তৃধা গালে হাত দিয়ে বললো–,,জানটুস!

আদাভানের মুখের অবস্থা হয়েছে দেখার মতো,তৃধা এবার টুপ করে পর পর কয়েকটা চুমু খেয়ে ফেললো জিদানের গালে।

আদাভান নড়েচড়ে দাঁড়ালো,বাকিরা ওদের দুজন কে দেখতে ব্যস্ত,সবাই মুখ চেপে হাসছে।
জোবান বলে উঠলো–,,ভাইয়া নিজের ছেলেকে এতো হিং’সে করছো অন্য মানুষ হলে কি করতে?

আদাভান কপাল কুঁচকে তাকালো,জিদান তৃধার চুমু দেওয়া গাল হাত দিয়ে মুছে ফেললো ততক্ষণাৎ।

আদাভানের ঠোঁটে এবার ফুটলো হাসি,তৃধা নাক ফুলিয়ে বললো–,, মুছলি কেনো পুচকু, আমি দু বেলা দাঁত ব্রাশ করি,একদম ফ্রেশ এন্ড ইনটে’ক চুমু!

আদাভান তৃধার কোল থেকে জিদান কে নিতে নিতে বললো–,,চুমু অপাত্রে দান করলে এমনই হবে!

তৃধা নাক ফুলালো,মৃধা হেসে বললো–,,তুই তো ছোট বেলা এমনই করতি,একেবারে ছোট বেলা তো তাও দুই একজন দিতে পেরেছে,জিদানের বয়সে আসতে আসতে তোকে চুমু দেওয়া তো দূর ছুঁতে ও পারেনি কেউ,ভো করে দৌড় মা’রতি,নয়তো কি যে কান্না!

আদাভান উৎফুল্লতার সাথে বললো–,,সত্যি!

তৃধা আদাভানের দিকে তাকালো তখনই,বাকিরা তো হো হো করে হেসে দিলো।

আদাভান নিজেকে নিজেই মনে মনে গা’লি দিলো,ওর মুখ কবে থেকে যে এরকম বেফাঁ”স কথা বার্তা বলা শুরু করেছে আল্লাহ জানে,এরকম চলতে থাকলে মানসম্মান আর কিছু থাকবে না।

জিদান আদাভানের দিকে তাকিয়ে আদো আদো গলায় বললো–,, পা…পা!

তৃধা লাফিয়ে উঠে বললো–,,আপাই ও কথা বলতে পারে?আমাকে কি বলে ডাকবে?

নোভা কপাল চাপড়ালো এই মেয়ে তো আগের রূপে ফিরে যাচ্ছে,ম্যাচিউরিটির ম ও তো অবশিষ্ট থাকবে না আর!

আদাভান জোবান কে জিজ্ঞেস করলো–,,কোথায় উঠেছিস?

জোবান বললো ওই তো বীচে”র পাশের টায়,নোভা বলে উঠলো–,,আমরা ও তো ওটাতেই ভাইয়া।বেশ ভালো হলো তো রাতে আড্ডা দেওয়া যাবে!

নিশি হেসে বললো–,,এবার তো শিক্ষাসফর না আমাদের ফ্যামিলি ট্যুর হয়ে গেছে কি বলিস?

হাসি আড্ডায় কে’টে গেলো আরো কিছু সময়।ক্লান্ত হয়ে যে যার রুমে চলে গেলো ওরা।
তৃধা,নিশি,নোভা,আভা এক রুমে এরকম চারজন চারজন করে একটা রুম বুক করা হয়েছে,শিক্ষকরাও একই তলায় আছে।অসুবিধে হয়নি কারোই ঘুরতে এসে থাকা নিয়ে তেমন একটা ভাবেই না কেউ।

তৃধা বিছানায় বসে ভাবছে আপুর কথা তার মাকে বলা উচিত কি না,মা তো এখন নানা ভাইয়ের কাছেই থাকে।তার পরও তৃধার মন সায় দিলো না,তবে প্রশ্ন ও জাগে আর কতো দিন?আপা দুলাভাই কি কোনো দিন বাড়ি ফিরবে না!
জোবান ভাই তো তার দেবর ও হয়,জোবানের মা বাবাও কি তার বাবার মতো সন্তানের সুখের চাইতে বেশি নিজেদের সম্মান নিয়ে ভাবে?জিদান কে দেখলে ও কি ওরা রাগ করে থাকতে পারবে?বাচ্চাদের প্রতি ও কি মানুষের রাগ জমা থাকতে পারে!

তৃধা চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।
————–
সন্তর্পণে একটা আবছা অব’য়ব আদাভানের ফ্লাটে ঢুকলো,অন্ধকার হাতরে কিছু খুঁজলো,কাঙ্ক্ষিত জিনিস না পেয়ে ক্রো’ডে সামনে থাকা চেয়ারে লা’থি মে’রে বসলো আগত ব্যক্তি।

তার কাজ শেষ করে বেরিয়েও গেলো দ্রুত।
শুন’শান রাস্তায় কালো রঙা গাড়িটাতে উঠতে উঠতে কাউকে ফোন করলো মানুষটি বলে উঠলো–,,কাজ শেষ,আর মাত্ররো সাতদিন তার পরই তোমার কাজ শুরু, ভুল যেনো না হয়।

—————
রাত এগারোটা ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে দরজার কাছে আসলো তৃধা,নোভা ঘুমাচ্ছে,নিশি বাথরুমে আভা মোবাইল হাতে নেটওয়ার্ক খুঁজছে, সিম বন্ধ হয়ে গেছে দেখে ওর মেজা”জ চ”ড়ে আছে।

তৃধা ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো–,,কে? কি চাই?

আদাভান গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,দরজা খুলো।

তৃধা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বললো–,,আদাভান?

আদাভান ছোট করে জবাব দিতেই তৃধা দরজা খুলে বের হলো,তৃধা হাই তুলে সামনে তাকালো,হুট করেই তৃধার মনে পড়লো তার পড়নের কাপড় চোপড় সব ঠিক আছে তো?

ভয়া”র্ত দৃষ্টিতে তৃধা নিজের দিকে তাকালো,আরেকবার আদাভানের দিকে,আদাভানের এমন ভাব তার কোনো কিছুতে কিছু যায় আসে না।তবে তৃধার মন তো রকেটের গতিতে উল্টো পাল্টা ভেবে বসে আছে,পড়নে তার ঢিলেঢালা সবুজ রঙের টি-শার্ট সাথে কালো রঙের প্লাজু,গলার ওড়না আবার হলুদ রঙের।তৃধার মনে হলো এই সং সেজে এখানে আসার আগে কেনো ভাবলো না।তার চেয়ে বড় কথা টি-শার্ট পড়ে এই প্রথম এই ব্যাটার সামনে এসেছে তৃধা, না জানি কি বলে বসে।

তৃধার ঘুম ফুড়ুৎ হয়ে গেলো নিমিষেই। শুকনো ঢোক গিলে বললো–,,কিছু বলবেন স্যার?

আদাভান স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিলো–,,আসো আমার সাথে।

তৃধা আশেপাশে তাকিয়ে বললো–,, স্যার কেউ দেখলে কি মনে করবে?আপনার রেপুটে”শনের ও একটা ব্যপার আছে।

আদাভানের গম্ভীর কন্ঠস্বর–,,রেপুটে’শন ধুয়ে কি পানি খাবো?আর কে কি মনে করলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না।তুমি আমার বিয়ে করা বউ, পর”নারী নিয়ে তো যাচ্ছি না। যত্তসব ফাউ”ল কথা না বলে আসো বলছি!

তৃধা মনে মনে বলে উঠলো –,,আল্লাহ এই ব্যাটা”রছেলে ফ্রাই”প্যান বলে কি?উঠাও উঠাও আমারে তোমার তরে, এর মাথা”মোতা নষ্ট হইয়া গেছে নিশ্চিত,আমার মতো মেয়েটারে বউ বউ বলে চিল্লাচ্ছে কেনো আমাকে কি দেখতে কোনো দিক দিয়ে বউ বউ লাগে?এ কেমন অবিচার!

আদাভান আবার ধম’কের সুরে বললো–,,কি হলো আসছো না কেনো?

তৃধা মুখ ফসকে বলে ফেললো–,,এভাবেই?

আদাভান ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো–,,ঠিকঠাকই তো আছে চলো।

অন্য দিকে তৃধার কথোপকথনে ঘুম নাই হয়ে গেছে নোভার,আভা তো মোবাইল ছেড়ে ছুঁড়ে কথা শুনতে ব্যস্ত।নিশি তো চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে, স্যারের এমন রাইতের বেলা প্রেম জাগলো কেন,কি যে হচ্ছে এদের মধ্যে কে জানে,দেখে মনে হয় জাত শ”ত্রু, নামটাও শুনতে পছন্দ করে না আবার দেখো কি অবস্থা পি”রিত এক্কেবারে উত”লাইয়া পড়ছে!

তৃধার হাত আদাভান ধরে নিজের সাথে নিয়ে যাচ্ছে, তৃধার অবস্থা বেহা’ল আদাভানের যে কি হইছে কে জানে, ও নিজেও ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না এই ছেলেকে!

আদাভান নিজের রুমে গিয়ে থামলো একেবারে,তৃধা কে বসিয়ে দিয়ে বললো–,,রাতে খাওয়া হয়েছে ঠিক মতো?

তৃধা উপর নিচ মাথা নাড়লো,আদাভান জিজ্ঞেস করলো–,,কফি খাবে?

তৃধা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,আদাভান কপি কাপ এগিয়ে দিয়ে বললো–,,এমন এমন লুক দিচ্ছো যেনো আমাকে প্রথমবারের মতো দেখছো।

তৃধা পায়ের উপর পা তুলে বসে বললো–,,প্রথমই তো দেখছি স্যার,আপনার এতো ভালোমানুষি দেখে অভ্যাস নেই তো এটাই প্রথম!

আদাভান নিঃশব্দে হাসলো,কিছু বলতে চাইছিলাম তোমাকে।

–,,বলুন।

–,,ওই আসলে যেহেতু আমরা এই সম্পর্কটাতে সব সময়ের মতো থাকার কথা ভেবেই নিয়েছি তো,আমি চাই না আমার অতীত পরবর্তীতে আমাদের সম্পর্কে কোনো বাঁধা হয়ে আসুক।অতীত নিয়ে পরে থাকিনি আমি কখনো,তবে বলতে পারো ভালোবাসা বিয়ে এসবের প্রতি বিশ্বাস উঠে গেছে সেই কঠিন অতীত টার জন্যই।

তৃধা মনোযোগী হলো কেনো যেনো মনের ভিতর অজানা ভয় কাজ করছে তার।

আদাভান আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফোনটা বেজে উঠলো আদাভান বিরক্তিতে চ মূলক শব্দ করে উঠলো,মোবাইলে মেজো চাচ্চু লিখা দেখে অবাক হলো সচারাচর ফোন করেন না তিনি বেশ ব্যস্ত মানুষ।

আদাভান দ্রুত রিসিভ করে কানে ধরলো–,,আসসালামু আলাইকুম চাচ্চু।
বুলবুল মজুমদার হেসে সালামের জবাব দিলেন,তার পর বললেন–,,বউ মা আছে তোর সাথে?

আদাভান তৃধার দিকে তাকিয়ে বললো–,, হ্যাঁ আছে তো।

বুলবুল বললেন–,,তাহলে লাউডস্পিকারে দে তোদের দুজনের সাথেই কথা আছে আমার।

তৃধা ভ্রু কুঁচকালো,অপর পাশ থেকে বুলবুলের কন্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে–,,দুদিন পর আলিজা কে দেখতে আসবে পাত্র পক্ষ,তোমাদের দুজনকেই উপস্থিত থাকতে হবে।বড় ভাই ভাবি হিসেবে এটা তোমাদের দায়িত্ব ছোট বোনের গুরুত্বপূর্ণ দিনে তার পাশে থাকা!

আদাভান মোটেও খুশি হলো না,সে সরাসরি জিজ্ঞেস করলো–,, আলিজার মত নিয়েছো তো চাচ্চু?ও যদি না চায় তাহলে কারো কথায় প্রভাবিত হয়ে ওকে এসব করতে বাধ্য করবে না বলে রাখছি!

বুলবুল মজুমদার তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বললো–,,ছেলেটার পাশে দাঁড়াতে পারিনি,পিতা হিসেবে ব্যর্থ আমি ছেলের ছোট্ট ভুলটা সেদিন ক্ষমা করতে পারিনি।তবে মেয়ের ক্ষেত্রে এরকম কোনো কিছুই করবো না আমি, আলিজা কে জিজ্ঞেস করেছি ওর ব্যক্তিগত কোনো পছন্দ নেই।মেয়ে যেহেতু একদিন তো বিয়ে দিতেই হবে, পাত্র ভালো দেখতে আসবে শুধু আলিজার পছন্দ না হলে এই বিয়ে হবে না কথা দিচ্ছি!

আদাভান প্রসন্ন চিত্তে হাসলো,তৃধা আদাভানের হাসির দিকে তাকিয়ে, নির্মল সুন্দর হাসি!

আদাভান ফের বললো–,,আমার ভাই ফিরে আসলে তাকে মেনে নিবে তো?কোনো প্রশ্ন করা ছাড়া!

বুলবুল মজুমদার হাসলেন ভাইপো টা হয়েছে মনের মতো,ঠিক বুঝে যায় সব কিছু,ছেলের জন্য কি বাবা মায়ের কম পু’ড়ে?জোবানের মা রোজ কেঁদে বালিশ ভেজায় স্বামী হিসেবে অসহায় হয়ে থাকে সে স্ত্রী কে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই তার। মেয়েটার বড্ড অভিমান জমেছে একমাত্র ভাইকে মেনে না নেওয়ায়।এতো এতো দুঃখের ভার আর কতো সইবেন তিনি?পরিবার বুঝি এমনি দুঃখ লুকিয়ে ও হাসতে হয় সবাই কে ভালো রাখতে,পরিবার মানেই ত্যাগ।সবাই একটু একটু করে ত্যাগের মাধ্যমেই গড়ে তুলে এক সুন্দর পরিবার!

বুলবুল মজুমদার বললেন–,,ছেলে আমার ফিরে আসুক এতোটুকুই চাই,মরা”র আগে একবার দেখে যেতে পারলেই শান্তি!

তৃধার চোখ জলে ভরে উঠলো,এদিকে ছেলে কষ্ট পাচ্ছে অন্য দিকে বাবা মা। তবুও তো জোবান ভাইয়ার কথা তার বাবা মা মনে রেখেছে। আর তার আপাই?তাকে তো তার বাবা মনে করা দূর বাড়িতে নামটাও কেউ উচ্চারণ করে না।তার পরিবারের মানুষ গুলো বড়ই অদ্ভুত মাথায় তুলতে যেমন সময় নেয় না তেমনই ছুঁড়ে ফেলতেও বেশি সময় নেয় না!অদ্ভুত অমীমাং”সিত পরিবারের এই সমীকরণ কি কোনো দিনও সমাধান করা সম্ভব! তবুও তৃধা চায় তার আপাই অনেক বেশি ভালো থাকুক,যা যা ও পায়নি সবই ওর আপাই পেয়েছে আবার হারিয়েছে,পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা”টা বড় কঠিন। সে তো কিছুই পায়নি তার ওতোটা দুঃখ নেই,নিজের বোনের প্রতি রাগ ও পুষে রাখেনি আর।ওর বোনেরই বা কি দোষ সে তো আর কাউকে জোর করে বলেনি তৃধা কে ভালোবেসো না,তৃধাই হয়তো এরকম যার জন্য তাকে কেউ ভালোবাসে না,সহানুভূতি আর দয়া করতে চায় যা আবার তৃধা গ্রহন করতে চায় না।

তৃধা চোখ মুছে লম্বা শ্বাস টানলো এতো গভীর ভালোবাসার বোঝ হয়তো তৃধা সামলাতে পারবে না তাই সৃষ্টিকর্তা তার কপালে ভালোবাসা রাখেনি, এতেই সে খুশি যা হয় তা তো ভালোর জন্যই,জীবনের বাকি সময়টাও না হয় এভাবেই পার করে দিবে!

তৃধা চোখ বন্ধ করে আছে,হঠাৎ শীতল স্পর্শ পেয়ে শিউরে উঠলো,চোখ খুলে তাকালো আদাভান ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো–,,কাঁদছো কেনো বোকা মেয়ে?

তৃধা মাথা নিচু করলো কিছু বললো না,আদাভান মজার ছলে বললো–,,গরম গরম তৃধা কে বেশ মিস করছি,তাকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছো বলোতো?

তৃধা এবার চোখ তুলে তাকালো–,,আপনি তো বললেন আমরা বন্ধু, আমি ও মন থেকে মেনে নিয়েছি আপনাকে বন্ধু হিসেবে।বন্ধুদের সামনে আমি আসলে যেমন তেমনই থাকি, শক্ত”পোক্ত থাকার নাটক তাদের সামনে আমি করি না।

তৃধার সহজসরল স্বীকারোক্তি আদাভানের হৃদয় ছুঁয়ে গেলো।এই মেয়েটা কে কিছুদিন আগেও সে কতোটা খারা”প ভাবতো! ভেবেই আদাভান আত্মগ্লানিতে ভুগলো।

—,,তৃধা!

আদাভানের সম্মোহনী কন্ঠস্বর তৃধার মনোযোগ কে’ড়ে নিলো, তৃধার মস্তিষ্ক আভাস দিলো নতুন কিছুর।

তৃধা অপলক তাকিয়ে আদাভানের দিকে,আদাভান পাশে বসে বললো–,,আমার সাথে থাকবে তো সব সময়?আমাদের উপর এখন একটা দায়িত্ব আছে জোবান আর মৃধা কে বাড়িতে তাদের সম্মান ফিরিয়ে দেওয়া।জানি কাজ টা সহজ হবে না তবে আমরা দুজন একসাথে থাকলে ভালো কিছুও হতে পারে!

তৃধা আদাভানের বাড়িয়ে দেওয়া হাতের দিকে তাকিয়ে, আস্তেধীরে সে নিজের হাত টাও রাখলো আদাভানের হাতে মৃদু স্বরে বললো–,,সব সময় সব কাজে পাশে থাকবো।শুধু মিথ্যা কথা বলবেন না কখনো আর বিশ্বাসঘা’তকতা, দুটোই আমার ভীষণ অপছন্দের!

গল্প করলো তৃধা আদাভান সারারাত,বারান্দায় স্নিগ্ধ বাতাস সমুদ্রের গর্জ’ন সব কিছুকে স্বাক্ষী রেখে জন্ম নিলো এক সুন্দর সম্পর্কের,আকাশের চাঁদ বলে উঠলো
–,এভাবেও পাশে থাকা যায়?মায়া, মোহ, ভালোবাসা ছাড়াও, শুরুতে থাক কিছু অপূর্ণতা,শেষটায় পূর্ণতা থাকলে ক্ষ’তি কি!

————-
সমুদ্রের পা ডুবিয়ে বসে সব বন্ধুরা কালো পাথর গুলো স্বচ্ছ পানিতে হীরের মতো চক চক করছে,এখানে আসলে যেনো দিন দুনিয়া ভুলতে বাধ্য মানুষ।

রূপা ও তার বন্ধুরা দূরে দাড়িয়ে, রূপা সেদিনের অপমান এখনো ভুলতে পারেনি,সুযোগ বুঝে তৃধা কে একবার সমুদ্রে ফেলতে পারলে কেল্লা”ফতে!
আশেপাশে তাকালো সে ধীর পায়ে পাথর ঠেঙ্গি’য়ে ওখানে গেলো ছবি তোলার বাহানায় সুযোগ বুঝে মে’রে দিলো ধা”ক্কা।
তৃধা সাথে সাথে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো, চেঁচিয়ে উঠলো নোভা,তৃধার হাত পা ছিলে গেছে ব্যাথাতুর শব্দ করে উঠলো তৃধা,কপালের এক অংশ থেকে ছি’টকে বেরিয়ে আসলো র’ক্ত।

তীরে দাঁড়িয়ে জিদানের সাথে খেলা করছিলো আদাভান হাতে তার মোবাইল, জিদান কে সবার ছবি দেখাচ্ছিলো এক এক করে।
নোভার চিৎকার করা দেখে সামনে তাকালো তৃধাকে দেখে মনে হচ্ছে ঢেউয়ের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে, তার হৃৎস্প”ন্দন থেমে গেলো কিছু সময়ের জন্য হাত থেকে খসে পড়লো মোবাইল ফোন,মনের ভিতরটা চেঁচিয়ে উঠে বললো–,,তোর বেঁচে থাকার কারনটা হারি’য়ে যাচ্ছে এরিশ, তাকেও আগলে রাখতে পারলি না!

জোবান, মৃধা একত্রে ডাকলো তৃধা। নাদিম, নোভা,আভা তৃধার হাত ধরে টেনে তুললো,আদাভান দিকভ্রান্তের ন্যায় ছুটলো,দৌড়ে গিয়ে তৃধা কে ধরলো কাঁপা হাতে।

তৃধার ওড়নার এক অংশ ছিড়ে ফেলল জোর প্রয়োগে,কপাল বেঁধে দিয়ে ডাকলো–,,তু…মি ঠিক আছো?

তৃধা চোখ তুলে তাকিয়ে মাথা নাড়লো,নাদিম বলে উঠলো –,,পড়ে গেলি কি করে?

তৃধার কন্ঠনালি কাঁপছে আদাভান শক্ত ভাবে বললো–,,এখন কিছু বলতে হবে না।

আদাভান তৃধা কে কোলে তুলতে নিলেই তৃধা কোমরের দিকটা চেপে ধরে বললো–,, আদাভান আমার জামা ছিড়ে গেছে মনে হয়!

আদাভান তাকালো তৃধার হাতের দিকে,আদাভান বাক্য ব্যয় না করে নিজের পড়নের শার্ট খুলে ফেললো, নোভা কে ইশারা করলো তৃধার পেছনে আড়াল করে দাড়াতে।

আদাভান নিজের শার্ট তৃধাকে নিজ হাতে পড়িয়ে দিলো।
প্রশ্ন করলো –,,এবার ঠিক আছে?

আশেপাশের সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে, তৃধার লজ্জায় মাথা কা’টা যাচ্ছে তার উপর আদাভান শার্ট খুলে পড়িয়ে দিলো,এবার যেনো তৃধা এখান থেকে পালাতে পারলে বাঁচে এতো গুলো স্টুডেন্ট পর্যটক,শিক্ষকদের সামনে।
শরীরের ব্যাথার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো লজ্জা।

মারুফ হক দূরে ছিলেন কিছুটা দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করলো–,,কি হয়েছে?তৃধা মামনি কি হয়েছে!

তৃধাকে চরম লজ্জায় ফেলে আদাভান তাকে কোলে তুলে নিলো।তৃধার চোখ তুলে তাকানোর মতো শক্তি নেই,এক হাতে আদাভানের গলা জড়িয়ে ধরে মুখ লুকালো আদাভানের বুকে।

রূপাতো রাগে ফুঁসছে,সবচেয়ে বড় কথা সব গুলো শিক্ষক তৃধা কে এতো আদর দেখাচ্ছে কেনো?ডিপার্টমেন্ট হেড সরাসরি মামনি তে চলে গেছে আদাভান স্যার তো এটাকে পছন্দ ও করেন না, তবে দেখে মনে হচ্ছিলো এই মেয়ের জন্য ম’রে যাচ্ছে সে,একটু বারাবাড়ি হয়ে গেলো না!

রূপার কথায় একটুও পাত্তা দিলো না নিপা,সে কঠিন কন্ঠে বললো–,, দেখ ভাই অযথা ওর পেছনে আর লাগতে যাস না,অন্য কেউ হলেও তো স্যাররা সাহায্য করতো নাকি?

রূপা সেখান থেকে চলে গেলো,বাকি স্টুডেন্টদের সাথে বাকি শিক্ষকরা থেকে গেলো এক জনের জন্য সবার আনন্দ মাটি করার মানেই হয় না।
*******
তৃধা কে নিয়ে হোটেলে ফিরে আসলো আদাভান, জিদান কে ঘুম পারিয়ে দৌড়ে আসলো আদাভানের রুমের কাছে।

আদাভান নোভাকে বললো–,,তৃধার ড্রেস চেঞ্জ করতে সাহায্যে করতে।

মারুফ হক আদাভান কে চেপে ধরে নিয়ে গিয়ে বললো–,,এই সত্যি করে বলতো তোদের মাঝে আদেও স্বামী স্ত্রীর মতো সম্পর্ক আছে কিনা!

আদাভান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো–,, না নেই!

মারুফ হক চ’টে গেলেন বেশ কড়া ভাষায় বললেন—,,পরিবারের সবাইকে ধোঁ’কায় রাখাটাও এক ধরনের অপরা’ধ,যা তোরা দুজন মিলে করেছিস।আশা করবো পরের বার যেনো সব ঠিকঠাক দেখতে পাই!

আদাভান নিশ্চুপ রইলো বলার মতো কিছু নেই ওর কাছে।
———–
ঔষধ খেয়ে গভীর নিদ্রায় মগ্ন তৃধা,আদাভান বসে আছে এক পাশে হাতে তার মোবাইল ফোন,স্ক্রিনটি জ্ব’লে উঠলো হঠাৎ নোটিফিকেশন চেক করলো আদাভান, ভিডিও পাঠানো হয়েছে তাকে যা দেখে মুহূর্তেই রাগে কেঁপে উঠলো সে,কপালের এক ভাগের শিরা ফুলে উঠেছে দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বললো–,, এর শা”স্তি তো তোমাকে পেতেই হবে,দরকার পড়লে নিজ হাতে শা’স্তি দিবো আমি!

সকাল সকাল তৃধা বায়না ধরেছে একটু ঘুরতে যাবে,আদাভান সাফ মানা করে দিয়ে বললো —,,রাতে বাড়ি ফিরবো আমরা এর আগে কোথাও যাওয়া নিষেধ।

তৃধা গাল ফুলিয়ে বসে আছে শেষে হার মেনে তৃধা কে নিয়ে বের হলো আদাভান বাকিরা এখনো বের হয়নি সকালের নাস্তা করে তার পর বের হবে।

তৃধা মনে সুখে দৌড়াদৌড়ি করছে,আদাভান ও খুশি মনে দেখছে।
তৃধা হেঁটে এসে বললো–,,আদাভান আপনি ও আসুন এক সাথে লাফালাফি করি,দেখবেন মন ভালো হয়ে যাবে।

আদাভান চোখ পাকিয়ে বললো–,আর না অনেক করেছো,পায়ে যে কাল ব্যাথা পেয়েছো মনে নেই?ভালো করে কথা বলছি তো মাথায় চ’ড়ছো দিন দিন।

তৃধা মুখ ভেং”চি কা’টলো, মুখ ঘুরিয়ে অন্য পাশে তাকালো,আদাভান আদর মাখা কন্ঠে ডাকলো–,,প্রজাপতি!

তৃধা চমকে তাকালো তৎক্ষনাৎ, আদাভান হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

তৃধা একটা জিনিস দেখে দৌড় লাগালো, আদাভান ডাকতেই যাবে দেখলো তৃধা ঝিনুক তুলতে ব্যস্ত, কাঙ্ক্ষিত জিনিস টা পেয়ে তার চোখে মুখে খুশি যেনো উপচে পড়ছে, তৃধা অনেক গুলো নিলো হাত ভর্তি হয়ে গেলো কিন্তু রাখার জায়গা পেলো না।আশেপাশে তাকিয়ে আদাভান কে দেখলো দৌড়ে আসার সময় পায়ে কিছু একটা লাগলো,ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো তৃধা জোঁ’ক টো’ক চলে আসেনি তো আবার,তৃধার মুখ ভয়ে নীল হয়ে আসলো,এই জিনিস টা ও অনেক ভয় পায়!
তৃধা দিলো এক দৌড় ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো আদাভান কে কাঁপা কন্ঠে বললো–,, আমার পা!

আদাভান তৃধা কে শান্ত করে বললো–,, কি হয়েছে দেখি।

তৃধা কেঁদে দিবে প্রায় অবস্থা—,,জোঁ”ক!

আদাভানের হাসি পেলো তবে এখন হাসলে তৃধা যে ওর মাথা ফা”টিয়ে দিবে না তার কি গ্যারান্টি।

আদাভান নিচে হাঁটু মুড়ে বসে বললো–,, বোকা লবনাক্ত পানিতে জোঁ’ক আসবে কোত্থেকে? দেখি পা টা আমার হাঁটুর উপর রাখো।

তৃধা ছি”টকে দূরে সরে বললো–,,অসম্ভব! কি বলছেন এসব।

আদাভান তৃধার পা জোর পূর্বক উঠিয়ে রাখলো, চেক করে দেখলো পায়ের তালুতে সামান্য লাল হয়েছে,সে বললো–,,কাঁকড়ার বাচ্চা কে মনে হয় পারা দিয়েছো,অন্য কিছু নেই রি”লাক্স!

তৃধা হাফ ছেড়ে বাঁচলো,তখনই পেছন থেকে রূপার বিচ্ছি”রি মন্তব্য –,,ভালো তো তৃধা,আমি আর আমার ফ্রেন্ডরা নাকি শিক্ষক কে নিয়ে আজে”বাজে চিন্তা করি,তুমি তো দেখছি একেবারে র”ঙ্গ লী”লা শুরু করেছো,স্যারে কোলে করে ঘুরছো,একই রুমে না জানি কি কি করছো!

আদাভানের কঠিন কন্ঠস্বর ধম’ক দিয়ে বললো–,,একদম চুপ,আর একটা আজে”বাজে কথা বললে জি”ব টে’নে ছি”ড়ে ফেলবো তোমার।
আমার বউ কে কোলে করে নিয়ে ঘুরবো নাকি রুমে বসিয়ে চুমু খাবো তা নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত বিষয়!
ওর দিকে যদি আর এক বার হাত বাড়ানোর চেষ্টা ও করো না,এখানেই পুঁ”তে রেখে দিবো বলে দিলাম!

চলবে…..