নৈঃশব্দ্যের প্রেমালাপ পর্ব-১৩

0
7

#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব১৩
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
মজুমদার বাড়ির সদর দরজায় দাড়িয়ে তৃধা,বিয়ের পর প্রথম শ্বশুর বাড়ি এসেছে সে,পাশে আদাভান দাঁড়িয়ে আছে।তৃধা কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখলো আশপাশ, আদাভানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো,ব্যা’টার বয়স বাড়ছে কিন্তু বুড়ো হচ্ছে না রূপের রহস্য টা জানতে হবে চেপে ধরে!
আদাভান তৃধা কে খোঁচা মে’রে ফিসফিসিয়ে বললো–,,দাঁত কেলানো বাদ দিয়ে ভাবো একটু পর কি কি হবে!

তৃধা বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকে বললো–,, আপনি আসলেই একটা অসহ্যকর লোক।

আদাভানের মা,মেজো মা,ছোটো মা সবাই এসে হাজির হলো দরজায়,গোলবাহারের সাথে করে আসলো এলিজা,নাজিয়া,নেহাল।

তৃধা সবাইকে সালাম দিলো,ছোটদের কে হেসে কুশলাদি বিনিময় করলো,আদাভানের সাথে তৃধা কে ধান দুর্বা দিয়ে বরণ করলেন আমিনা বেগম।
হেসে এলিজার মা ফাহিমা বেগম বললো–,, এবার ভিতরে আসো বউমা!

তৃধা আদাভানের দিকে তাকালো,আদাভান কে আড়ালে খোঁচা ও মার’লো বলার জন্য, না লোকটা মুখে আলু দিয়ে রেখেছে!
তৃধা মাথার ওড়নাটা আরো একটু চে’পে ধরে বললো–,,শুধু আমাদের বরণ করলেই হবে মেজো মা?আরো নতুন সদস্য ও তো আছে তাদের বরণ করতে হবে না!

আমিনা বেগম ফাহিমা বেগমের দিকে তাকালেন, আদাভানের ছোট মা জোহরা বেগম বললো–,,আবার কে এসেছে তোমাদের সাথে?

তৃধা আদাভান দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো তারা সরে পড়তেই জিদান কে দেখা গেলো,কালো স্যুট সাদা শার্টে অপূর্ব দেখাচ্ছে বাচ্চাটাকে।

ফাহিমা বেগম এগিয়ে গিয়ে কোলে তুলে বললো–,,কে এটা?চেহারা টা তো দেখতে ঠিক আমার জোবানের মতো!

ফাহিমা বেগম জোবানের নাম নিয়ে চুপসে গেলেন সবার দিকে তাকালেন একবার,জোবানের নাম শুনতেই সবার হাসি হাসি মুখে আঁধার নেমে আসলো!

বাচ্চাটি ফাহিমা বেগম কে চিনতে না পেরে ছোটাছুটি শুরু করলো, আদাভানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো–,,বলো আব্বু!

আদাভান দু হাত উঁচিয়ে হেসে বললো–,,হুম বলেন আব্বাজান!

উপস্থিত সবার চোখে মুখে বিষ্ময়!গোলবাহার তেঁতো কন্ঠে বললেন–,,কার বাচ্চা?তোরে আব্বা ডাকে ক্যান এরিশ?কার বাচ্চা সাথে কইরা লইয়া আইছছ!বাপ মা কই?

তৃধা জিদান কে কোলে নিয়ে বললো–,,জিদান সোনা আসো মাম্মামের কাছে!

জিদান ভয় পাচ্ছে সবার দিকে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে সে এবার তো ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো –,,খা”মনি!

তৃধা জিদান কে জড়িয়ে ধরে বললো–,, আমার বাবা টা কি ভয় পাচ্ছে?মা আসছে তো পাখিটা, খালামনি আছি তো!

এলিজা বলে উঠলো –,,ভাবিমনি তোমার বোনের ছেলে?কিন্তু তোমার তো কোনো বোন নেই!

তৃধা আদাভানের দিক চোখ পাকিয়ে তাকালো যার মানে হলো–,,শা’লা এবার কিছু বল না হয় তোর মাথা হা”তুড়ি দিয়ে ভাঙ্গবো!

আদাভান গম্ভীর কন্ঠে ডেকে উঠলো–,,ভিতরে আয়!

সবাই দরজার দিকে উৎসুক হয়ে তাকালো,জোবান ধীর পায়ে এগিয়ে আসলো,তার পেছনে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে মৃধা!

ফাহিমা বেগমের হাত থেকে প্লেট খসে পড়লো,এলিজা আকষ্মিক ভাবে চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,ভাইয়া!

গোলবাহারের চোখ ছলছল করে উঠলো তিনি ডাকলেন –,,দাদু ভাই!

গোলজার মজুমদার শব্দ শুনে বেরিয়েছেন ঘর থেকে,বাড়ির পুরুষ রা আপাতত বাড়িতে নেই,জোবান মৃধার হাত ধরে যেই না প্রবেশ করবে,গোলজার রাশভারি কন্ঠে বলে উঠলো–,,ওখানেই দাঁড়িয়ে যাও!

জোবান থেমে গেলো,মৃধার কান্না পেলো খুব করে,সেই আগের দিনটার কথা মনে পড়ে গেলো তার,আজ কিনা সন্তানের সামনে আবার অপমা’নিত হতে হবে!সে জন্যই তো আসতে চাইছিলো না।

গোলজার মজুমদার চেঁচিয়ে বলে উঠলেন–,,কোন সাহসে আমার বাড়িতে আবার পা রেখেছো তুমি! মু'”রোদ ফুরিয়ে গেছে?যার জন্য আবার ফিরে এলে?

আদাভান গম্ভীর কন্ঠে বললো–,, আমি নিয়ে এসেছি ওকে,নিজ ইচ্ছেতে তোমার রাজপ্রাসাদে আসেনি!তোমার বাড়ি টাকা পয়সা ছাড়াও ওর দিব্যি চলে যেতো,তবে কি বলোতো তোমার মতো পাষা”ণ ও হতে পারেনি।তুমি পরিবারের সবার কথা নাই ভাবতে পারো তবে ও ভাবে ওর বাবা মা বোনের সাথে থাকার পূর্ণ অধিকার ওর আছে। তুমি বাঁধা দেওয়ার কেউ না!

গোলজার মজুমদার দ’মবার পাত্র নয় সে বলে উঠলো–,,তোমার ভাই কে বাড়িতে রাখতে আমার কোনো সমস্যা নেই,কিন্তু যাকে সে বিয়ে করেছে তাকে নিয়ে এখানে থাকতে পারবে না!যে মেয়ে রাতের অন্ধকারে বাড়ি ছেড়ে পালাতে পারবে তার বংশ কেমন হবে বুঝা হয়ে গেছে আমার!

আদাভান বললো–,,মেয়েটির একার দোষ?তোমার নাতি যায়নি ওর সাথে?এক হাতে কখনো তালি বাজে?মেয়েটার দিকে সহজে আঙ্গুল তুলে ফেলছো তোমার নাতি কি ধোঁয়া তুলসি পাতা ছিলো?ওদের ভুল আছে আমিও মানছি কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করাটা ঠিক হয়নি, তবে ভালোবেসে বিয়ে করাতে তো কোনো অপরা’ধ নেই,বয়স কম ছিলো ভুল করে ফেলেছে!

জিদান নেমে দৌড়ে গিয়ে মায়ের কোলে উঠলো, মৃধা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে।
গোলজার মজুমদার উচ্চ বাক্যে করলেন–,,কোন বংশের মেয়ে? বাবা মা খোঁজ খবর রাখে না,এরকম মেয়েকে কিছুতেই আমি এ বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিবো না!

তৃধা এবার থমথমে কন্ঠে বললো–,,তাহলে আমাকে ও বের করে দিন দাদু!ওই মেয়েটির এই বাড়ির বউ হওয়ার যোগ্যতা না থাকলে আমারও নেই।

গোলবাহার বলে উঠলো–,,ওই মেয়ের সাথে নিজের তুলনা কেনো করছো নাত বউ!

তৃধার তে”জি কন্ঠস্বর–,,তালুকদার বাড়ির বড় মেয়ে আপনাদের বাড়ির বউ হতে না পারলে ছোট মেয়ে কি করে পারবে দাদী?

গোলজার মজুমদার হকচকিয়ে উঠলেন,বাকিরা বুঝার চেষ্টা করলেন।

মৃধা এবার ফুপিয়ে কেঁদে ফেললো,জিদান ও সাথে সাথে কেঁদে উঠলো, জিদানের জড়ানো কন্ঠ–,,মা কাঁ’তচো কে’নো?

জোবান আর চুপ থাকতে পারলো না সে বলে উঠলো –,,ভাইয়া তুমি জোর করায় এসেছি, না হয় কোনো দিন ও আসতাম না,অহং”কারী মানুষের বাড়িতে থাকার কোনো ইচ্ছে আমার নেই,আমার স্ত্রী সন্তান নিয়ে আমি বেশ ভালো আছি এখনই চলে যাচ্ছি আমরা!

ফাহিমা বেগম কেঁদে বললেন–,, মা কে ছেড়ে চলে যাচ্ছিস বাবা?মায়ের প্রতিও রাগ করেছিস!

বুলবুল মজুমদার পেছন থেকে বলে উঠলো–,,যাও এলিজার মা জিনিস পত্র গুছিয়ে নাও আমরা সবাই আজ জোবানের সাথে চলে যাবো!

আমিনা বেগম বলে উঠলো–,, কি বলছেন ভাইজান আমরা সবাই একসাথে থাকবো পরিবার ভাঙ্গার কথা কেনো তুলছেন!

বুলবুল হতাশ শ্বাস ছেড়ে বললো–,, পরিবার জুড়ে রাখতেই তো ছেলের পাশে দাড়াতে পারিনি ভাবি,তবে এখন মনে হয় এই পরিবার কোনো দিনই আমার ছিলো না,আমার ছেলের একটা সামান্য ভুল যদি আমার বাবার কাছে ক্ষ”মার অযোগ্য বলে মনে হয় তো এখান থেকে আমাদের সবার চলে যাওয়াই ভালো!

আদাভান নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে,তৃধা ও কিছু বলছে না।
এরই মধ্যে বাড়ি ফিরলো আশরাফ ও জায়েদ মজুমদার।

আশরাফ মজুমদার বলে উঠলেন–,,আব্বা আপনি আর কতোদিন জে’দ বজায় রাখবেন?পরিবার ভেঙ্গে যাচ্ছে আজও কি জে’দ ধরে রাখা মানায়!

আদাভান বলে উঠলো–,,আমি আর তৃধা ও চলে যাবো বাড়ি ছেড়ে!

গোলবাহার আহা”জারি করে বললো–,,তোরা কেউ কোথাও যাবি না।এই বাড়িতে সবাই থাকবে এটা আমার সিদ্ধান্ত, যদি কেউ বি’রোধীতা করে তো, তাকে একা এই বাড়িতে থাকতে হবে,সবার আগে বাড়ি আমি ছাড়বো!

তৃধা চোখ ছোট করে আদাভানের দিকে তাকালো, আদাভানের ঠোঁটে হাসি,তৃধার কেমন যেনো সন্দেহ হচ্ছে এই লোকটারে একটুও বিশ্বাস করা যায় না!

গোলজার মজুমদার বলে উঠলেন–,,হয়েছে তো? আমার এতোদিন পেলে পুষে বড় করা গি”ন্নি টাকে তো নিজেদের দলে টেনে নিয়েছে হতচ্ছা”ড়াটা!
আর কি বলার থাকবে আমার!যা খুশি করো,আর বাড়ির ছোট সদস্যের দিকে তাকিয়ে ওই বল’দটাকে ক্ষ’মা করে দিয়েছি।আজাদ তালুকদার কে কালকের মধ্যে দেখা করতে বলবে আমার সাথে!

বলেই হনহনিয়ে চলে গেলেন তিনি,গোলজার যেতেই হো হো করে হেসে উঠলেন গোলবাহার।
আলিজা হেসে বললো–,,দাদু ভাই দাদীর কাছে পুরাই ধরা হায় কি পিরি’ত কি পি’রিত!

আদাভান দিলো এক ধম”ক–,,বেয়া”দব দেখছিস বড়রা সবাই আছে!

গোলবাহার বলে উঠলো–,,আরে বকছি”স কেনো,দুইদিন পর বিয়া সা’দি দিমু বড় হইছে এখন স’তিন আমার!

আলিজা লজ্জায় কাজ আছে বলে পালালো।ও চলে যেতেই সবাই হেসে উঠলো,জোবান, মৃধা কে বাড়িতে বরণ করে নেওয়া হলো।

নাজিয়া,নেহাল জিদান কে নিয়ে ব্যস্ত হলো।রান্না চড়াতে গেলেন তিন গি’ন্নি।
ছেলেরা তাদের বউ নিয়ে এসেছে আয়োজন করতে হবে না?কতোদিন পর বাড়িতে আজ আনন্দ ফিরে এসেছে।

সবার মধ্যমনি হলো জিদান,চোখে হারাচ্ছে সবাই।মৃধা ফ্রেশ হয়ে ঢুকলো রান্না ঘরে।আর তৃধা?এটাকে বউ কে বলবে শ্বশুর বাড়িতে এসেও চিল করছে বাড়ির বড় বউ হয়ে তার কোনো দায়িত্ব নেই।আদাভান কপাল চাপড়ালো এই বাচ্চাটাকে আল্লাহ ওর কপালেই রাখলো!

জিদান আঙুল উঁচিয়ে বললো–,, তুপ তুপ চব পঁতা!

তৃধা হো হো করে হাসতে হাসতে পড়ে যাচ্ছে,আলিজা বলে উঠলো–,,ভাবিমনি ও কিন্তু অনেকটা তোমার মতো দেখতে!

তৃধা ভাব সাব নিয়ে বললো–,,থ্যাং”কু থ্যাং”কু আপু

আদাভান নিচে এসে বললো–,,এই যে মহিলা যাও তো কফি করে নিয়ে আসো।

তৃধা মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,কেনো আপনার হাত নেই নাকি?

আদাভান এগিয়ে এসে বললো–,, মুখ টা আবার চালানো শুরু করেছো তুমি?

তৃধা ন্যাকা কান্না করে ডেকে উঠলো–,,আম্মু ও আমার প্রিয় শা’শু মা দেখে যাও তোমার ছেলে আমাকে কিভাবে মা”রছে!

আলিজা,নাজিয়া মুখ টি”পে হাসছে।জিদান ছোট ছোট পায়ে এসে বলে উঠলো–,,নো নো খা”মনি খা”মনি কে মা”চ্চো কেনো বলো আলু!

তৃধা হেসে উঠলো বলে উঠলো–,,বাবাই পাখি একবারে ঠিক বলেছিস আলু,যা ম”টু হয়েছে না আলুকেও হার মানাবে।

আদাভান দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,, তৃধা!

তখনই হাজির হলো আমিনা বেগম আদাভানের কান টেনে বললো–,,এই কি রে মেয়েটার সাথে এভাবে কথা বলছিস কেনো?

আদাভান বলে উঠলো–,,মা এটা কি হলো? আমি তোমার ছেলে তুমি আমার পক্ষে থাকবে তা না। দুদিন হলো না এসেছে কোথাকার কোন মেয়ের জন্য তুমি আমার সাথে এমন করছো!

তৃধার বেশ গায়ে লাগলো তাকে কোথাকার কোন মেয়ে বলতে পারলো?অভিমান তিড়বিড়িয়ে বাড়লো তৃধার, নাকের ডগা ফুলে উঠলো জিদান কে আলিজার কোলে দিয়ে বড় বড় পা ফেলে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো।

আদাভান কোনা চোখে একবার দেখলো।মৃধা কে কিছু সময়ের মধ্যেই মনে ধরে গেলো সবার, তৃধা একটু দু”ষ্টু প্রকৃতির হলেও মৃধা শান্ত শিষ্ট। তৃধা মৃধা দুজন বোন শুনে যতোটা না খুশি হয়েছে তার থেকে বেশি খুশি হয়েছে মেয়ে দুটোর আচার ব্যবহারে!

তৃধা দরজায় গিয়ে বললো–,, শা”শু মা রা আমাকে কি ভুলে গেলে রান্না করতে করতে?

মৃধা বলে উঠলো–,,তৃধা তোকে আদাভান ভাইয়া কেমনে সহ্য করে বলতো?যে হারে কথা বলিস ভাইয়ার জন্য কষ্ট হচ্ছে আমার।

তৃধা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো–,, ছোট মা তুমিই বলো আমাকে দেখে কি একবার ও মনে হয় আমি কাউকে জ্বা”লাতে পারি?

জোহরা তৃধার গালে হাত রেখে বললো–,,না, না আমাদের তৃধা তো খুবই লক্ষ্মী মেয়ে!

মৃধা তৃধার হাতে জিদানের খাবার ধরিয়ে দিয়ে বললো–,,যা তোর ছেলেকে খাইয়ে দিয়ে আয়!দেখি কেমন পারিস।

তৃধা চোখ ছোট ছোট করে বললো–,,আমি?

আদাভান দরজায় হেলান দিয়ে বললো–,, আর কোনো মানুষ পেলে না, এই বান্দা তো নিজের খাবারই এখনো ঠিক মতো খেতে পারে না!

তৃধা আঙুল উঁচিয়ে বললো–,, এই দেখুন!

আদাভান বলে উঠলো –,, রুমে আসো দেখছি!

তৃধা চোখ বড় বড় করে তাকালো, ফাহিমা বেগম এ্যাহেম এ্যাহেম করে বললো–,, আমরাও এখানে আছি বাপজান!

তৃধা লজ্জায় শেষ, অসহ্য লোক বেশ’রম হলো কবে থেকে?আল্লাহ বাঁচাও।

তৃধার গাল লাল হয়ে গেছে ইতিমধ্যে কানে চুল গুঁজে দিয়ে কোনো রকম মৃধার হাত থেকে প্লেট টেনে নিয়ে ভাগলো।

ফাহিমা বেগম হেসে বললো–,,এই মৃধা যাও তো তোমার দাদু কে চা টা দিয়ে আসো।

মৃধা ভয়ে ঢোক গিলে বললো–,, মা আমি?যদি কিছু মনে করে?

ফাহিমা আশ্বাস দিয়ে বললো–,,যাও আব্বা উপর থেকেই কঠোর উনার মনটা অনেক ভালো!

মৃধা আঁচল টেনে ঘোমটা দিয়ে এগিয়ে গেলো।

গোলবাহারের কোলে জিদান,তৃধা ফ্লোরে বসে বললো–,,এটা কে খাবে?জিদান সোনা নাকি খালামনি?ইয়া”ম্মি ইয়া”ম্মি!

আদাভান ফোন কানে তুলে কথা বলছে,তৃধা একবার ও তাকাচ্ছে না পুরোপুরি ইগনোর করবে আজ থেকে এই লোককে।

আদাভান কথা বলছে আর তৃধা কে দেখছে,জোবান আদাভানের পাশে দাড়িয়ে বলে উঠলো–,, ভাইয়া এভাবে দেখছো যেনো কখনো দেখোনি, তোমারই তো বউ!

আদাভান চোখ পাকালো, জোবান হেসে জিদানের পাশে বসে বললো–,,পাপা খাওয়া শেষ?

জিদান মুখে হাত দিয়ে বললো–,,নো।

তৃধা খুশি হয়ে বললো–,,পেট ভরে খেতে হবে তাড়াতাড়ি বড় হতে হবে তো,আমার মেয়েকে আমার পাখিটার কাছে বিয়ে দিবো!

আদাভান সবে পানি খাচ্ছিলো তৃধার কথা শুনে খুক খুক করে কেশে উঠলো নাজিয়া বলে উঠলো–,, ভাইয়া ধীরে খাও!

আদাভানের কাঁশতে কাঁশতে চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে,মুখের চারদিকে পানি লেগে আছে,তৃধা পিছু ফিরে তাকালো,আদাভান উঠে এসে তৃধার ওড়না দিয়ে মুখ মুছে ফেলে। তৃধার দিকে তাকিয়ে থেকেই জোবান কে বলে–,,চল বাহির থেকে একটু ঘুরে আসি!

জোবান যেতে নিলেই জিদান দু হাত পাতে সে ও যাবে।

তৃধা জিদান কে কোলে নিয়ে বললো–,, না না একদম বাহিরে যেতে হবে না,তখন দেখা যাবে তুমিও তোমার বড় আব্বুর মতো কালা হয়ে গেছো!

আদাভান তেড়ে এসে বললো–,, কি বললে তুমি?আমি কালা?

তৃধা কথা না বলে জিদান কে নিয়ে চলে গেলো।আদাভান রেগে বললো–,, তোমাকে আমি তো পরে দেখে নিচ্ছি ঝগ”রুটে মহিলা!

গোলবাহার বলে উঠলো–,,যা তো যা,সারাদিন এমনে লাই’গা থাকলে পিরি’ত করবি কোন সময়?বউ গো লগে এমনে লাগতে নাই ভাই,বউ হইলো আদর সোহাগ করার মানুষ, একদম তে’জ দেখাবি না!
—————
বিয়ের পর এই প্রথম শ্বশুর বাড়ি এসেছে আজাদ তালুকদার, স্ত্রীর কাছে হার স্বীকার করতে এসেছেন তিনি।

দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে কলিং বেল চাপলেন তিনি, দুবার বাজানোর পর দরজা খুললো কেউ।

আজাদ ছোট করে জিজ্ঞেস করলো–,, নাসির উদ্দিন সাহেব বাড়ি আছেন?

ঘর থেকে নারি কন্ঠ ভেসে আসলো–,,কে এসেছে রে ময়না?

সুমনা বেগম এগিয়ে এসে আজাদ কে দেখে বিষ্ময়ে হা হয়ে গেলেন।অস্পষ্ট স্বরে বললো–,,আজাদ ভাই!

আজাদ তালুকদার ভিতরে প্রবেশ করলেন।সুমনা বেগম চা নাস্তা দিলেন,কিছু সময় পর বসার ঘরে আসলেন রাজিয়া বেগম আজাদ তালুকদার কে দেখে তার চক্ষু শীতল হলো,তবুও কোনো প্রতিক্রিয়া করলেন না তিনি।

আজাদ তালুকদার তাকালেন স্ত্রীর দিকে কয়েক দিনেই কেমন শুকিয়ে গেছে,বয়সটা যেনো একটু বেশিই বাড়িয়ে ফেলেছে নিজের।

আজাদ শান্ত কন্ঠে বললো–,, বাড়ি ফিরে চলো রাজিয়া!

নাসিরউদ্দিনের কর্ক’ষ কন্ঠ শোনা গেলো–,, তোমার বাড়িতে আমার মেয়ে আর ফিরবে না আজাদ!

আজাদ তালুকদার বসা থেকে দাড়িয়ে নাসিরউদ্দিন কে সালাম দিলো।

নাসিরউদ্দিন তাচ্ছিল্য করে বললো–,,বেশ উন্নতি হয়েছে দেখছি তোমার।

আজাদ তালুকদারের মধ্যে কোনো তে”জি ভাব দেখা গেলো না আজ,রাজিয়া বেগম এক প্রকার ছুটে ঘরে চলে গেলেন।

আজাদ তালুকদার বলে উঠলো–,,আব্বাজান আমি রাজিয়া কে নিতে এসেছি,আমার ভুল হয়ে গেছে ক্ষ’মা করে দিবেন।আগের মতো ভুল আর কখনো হবে না!

নাসিরউদ্দিন গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,রাজিয়া নিজ ইচ্ছেতে যেতে চাইলে আমি আটকাবো না।তবে তুমি ভালো বাবা হতে পারোনি এটা আমি হলফ করে বলতে পারি!

নাসিরউদ্দিন উঠে যেতে যেতে বললেন–,প্রথম বার শ্বশুর বাড়ি এসেছো, জামাই আদর না নিয়ে যেও না।তোমার শ্বশুর ছোট”লোক না, না খাইয়ে জামাই বিদায় করবে না সে!

সুমনা বেগম রান্নার তোড়জোড় শুরু করলেন।আজাদ তালুকদার হাসলো,শ্বশুর তার এক পিস খোঁ”চা মার’তে ভুলে না কখনো!

স্ত্রীর মান ভাঙ্গাতে পারবে তো?চিন্তায় চিন্তায় শেষ তিনি, শেষ বয়সে এসে এসব কি মানায়?তবুও স্ত্রী বলে কথা প্রিয়তমাদের বয়স বাড়ে না, আর না বাড়ে ভালোবাসার বয়স!

আজাদ এগিয়ে গেলেন রাজিয়া বেগমের ঘরের দিকে!
———–
দরজায় পুলিশ দেখে দূরে ছিট’কে যায় রূপা,তার মা এগিয়ে এসে মেয়ে কে জিজ্ঞেস করলো–,,কি হয়েছে এমন করছিস কেনো?

পুলিশ অফিসার বলে উঠলো–,,ইউ আ”র আন্ডা”র এ্যারে”স্ট মিস রূপা,মিসেস তৃধা কে প্রা’ণে মার’তে চাওয়ার অপরাধে আপনাকে গ্রেফ’তার করা হলো!

চলবে…..