#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব১৪
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
রূপার বাবা চশমা চোখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো–,,কি হয়েছে অফিসার?আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে না তো,আমার মেয়ে কেনো কাউকে মার’তে যাবে?
অফিসার গম্ভীর কন্ঠে বললো–,, আপনার কি মনে হয়?প্রমান ছাড়াই কারো উপর আমরা মিথ্যা দোষা”রোপ করছি?আপনার মেয়ে তার ভার্সিটির সহপাঠী তৃধা কে সমুদ্রে ধা”ক্কা দিয়েছে,তাছাড়াও আরো বিভিন্ন অ”সৎ কর্মকা”ন্ডে আপনার মেয়ে জড়িত,ভার্সিটি কমিটি থেকে জেনে এসেছি আমরা।আমাদের কে আমাদের কাজ করতে দিন!
রেজাউল মেয়ের দিকে তাকালেন,মেয়ের চোখে মুখে ভয়,তিনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন—,,কে”ইস ফাইল কে করেছে?
–,,প্রফেসর আদাভান এরিশ!
লেডিস কনস্টেবল রূপা কে টেনে নিয়ে গেলো,রূপা কেঁদে বলে উঠলো–,,বাবা আমাকে বাঁচাও প্লিজ ভুল হয়ে গেছে আমার,আর কখনো করবো না!
রেজাউল সোফায় বসে পড়লেন ধপ করে,শেষে কিনা তার মেয়ে এরকম একটা নী”চ কাজ করলো!
রূপার মা রূপার বাবাকে বলে উঠলো–,,ওগো যাও না দেখো না কি করতে পারো,মেয়েটা আমার অবুঝ!
রেজাউল গ’র্জে উঠে বললেন–,,চুপ করো, একটাও কথা বলবে না,তোমার মেয়ে কি ফি’টার খায়?এতো বড় মেয়ে লায় দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছো।তোমার বাচ্চা মেয়ে একজন কে মা’রতে চেয়েছে তুমি চিন্তা করতে পারছো?এর আগেও বিচার এসেছে ওর নামে আমি বেশি আমলে নেই নি যার ফল আজ ভুগতে হচ্ছে।সমাজে মুখ দেখানোর মতো কোনো অবস্থা রাখেনি তোমার মেয়ে,জেলে পঁচে মরু”ক এমন সন্তানের দরকার নেই আমার!
রূপার মা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন,কি করবেন এবার তিনি!
—————
বাবা কে ফোন করে আসতে বলুন।
তৃধার কথা আদাভান ভ্রু কুঁচকে বললো–,, আমি কেনো বলবো তোমার বাবা তুমি বলো!
তৃধা এগিয়ে এসে বললো–,, আপনার ও তো শ্বশুর আব্বা!যান গিয়ে কথা বলুন।
–,,অর্ডা’র করছো কোন সাহসে?
তৃধা দ’মে গেলো,সত্যিই তো এরকম ভাবে বলার অধিকার আদেও তো ওর নেই!তৃধা কিছুক্ষণ ওভাবেই তাকিয়ে থেকে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
আদাভান পিছু ডাকলো–,,কোথায় যাচ্ছো?রাত হয়েছে চোখে দেখছো না!
তৃধা শুনলো না, ঘড়িতে রাত দশটা বাজে,তৃধা গাল ফুলিয়ে বসে আছে আলিজার খাটের উপর,আলিজা কে সাফ সাফ বলে দিয়েছে–,,তোমার ভাই যদি আসে বলে দিবে আমি আসিনি এখানে,ব’জ্জাত লোক দুপুরের পর থেকে ঝা’রি মার’ছে,ওনার এসব ঢং দেখার কোনো ইচ্ছে আমার নেই,এখানেই থাকবো আজকে!
আলিজা তৃধার পাশে বসে হাত ধরে বললো–,,আচ্ছা ভাবিমনি,ভাইয়া কি তোমাকে ভালোবাসে?না মানে তোমাদের ও তো অ্যারেন্জ ম্যারেজ,আমার ও তো তাই হবে তাই জিজ্ঞেস করছি!
তৃধা মুখে জোর পূর্বক হাসি টেনে মনে মনে বললো–,,ভালো বাসে না ছাই,এসব কোনো দিন ও সম্ভব না এই ছেলের দ্বারা!
মুখে বললো–,,প্রথম প্রথম তো তোমার ভাই আমাকে দেখতেই পারতো না,এখন আমার মনে হয় ভালোবাসে, বাকিটা তো তোমার ভাই বলতে পারবে!
তৃধা মুখের উপর মিথ্যা কথাটা বলে নিজ মনেই নিজেকে গা”লি দিলো।
আলিজা হেসে বললো–,, আরে মনে হয় মানে,সত্যি সত্যি তোমাকে ভাইয়া ভালোবাসে তুমি দেখোনি সারাদিন কি করে তোমাকে চোখে হারায়,যখনই দেখি তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে,একেবারে মজ’নু হয়ে যাচ্ছে আমার ভাই!
তৃধার লজ্জা পাওয়ার বদলে এখন কান্না পাচ্ছে,আসলো ওই ছেলের থেকে বাঁচতে, সেই লোকের বোন তো এখন ভাইয়ের তারিফ করতে ব্যস্ত!কোথায় যাবে সে?
তৃধা আলিজা কে কড়া করে বলে দিয়েছে কিছুতেই যাতে না বলে।
এগারোটার দিকে আসলো আদাভান দরজায় ধা”ক্কা দিতেই আলিজা বলে উঠলো-,,কি হয়েছে ভাইয়া?
–,,তৃধা এসেছে এখানে?
–,,না তো ভাইয়া ভাবিমনি তো আসেনি!
আদাভান ধম’কের সুরে বললো–,, দরজা খোল বলছি!
তৃধা গিয়ে লুকালো খাটের অপর পাশে,আলিজা দরজা খুলে দিতেই আদাভান ভিতরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকালো, বেয়া’দব মেয়ে কথায় কথায় রাগ করাটা স্বভাব হয়ে দাড়িয়েছে!
আদাভানের চোখ আটকালো আলমারির পাশে ওড়নার দিকে,ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে খপ করে ধরে ফেললো ওড়নার এক পাশ!
–,,বের হও বলছি!লুকিয়ে আছো কেনো কি করেছি আমি?
তৃধা ওড়নার অপর পাশ গায়ের সাথে চেপে ধরে বের হলো,আদাভান এক পলক দেখে হাত টা শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে গেলো নিজের সাথে।
তৃধা বলে উঠলো–,, এই ছাড়ুন বলছি আমার হাত,আমি আপনার সাথে যাবো না,কালই বাড়ি চলে যাবো আমি আপনার মতো খারা’প লোকের সাথে থাকবো না!
আদাভান তৃধা কে রুমে এনে দরজা টা শব্দ করে বন্ধ করে দিলো, তৃধার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো–,,কোথায় যাবে?বলো?
তৃধা পেছাতে পেছাতে বললো–,,বাড়ি যাবো,কানে কম শুনেন আপনি?
তৃধা যেই না পা হড়কে পড়তে যাবে আদাভান তৃধার কোমর জড়িয়ে ধরে, তৃধা কেঁপে উঠে তৎক্ষনাৎ, এদিক ওদিক দৃষ্টি ফেলে বললো–,,অদ্ভুত আচর’ণ কেনো করছেন?
–,,কথায় কথায় রাগ করো কেনো?
–,,আমি যার তার উপর রাগ দেখাই না।আর করলেই বা আপনার কি!
আদাভান তৃধার মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো–,,আমার উপরই তো দেখাও!
–,,আর দেখাবো না,এবার সরুন!আমার ভুল হয়ে গেছে তাই করে ফেলেছি,আমি ভুলেই গেছিলাম আপনি আমাকে পছন্দ করেন না,সেকেন্ডে সেকেন্ডে ডি”ভোর্স দিতে চান,আর আমার সাথে থাকতে চাওয়ার ও তো কোনো কারন নেই,আর মাত্র রো কয়েকটা দিন,তার পরই চলে যাবো,তখন আপনাকে আর বিরক্ত করার মতো কেউ থাকবে না!
আদাভানের হাত আলগা হয়ে আসলো,কানে বাজছে এখনো “আপনাকে বিরক্ত করার মতো কেউ থাকবে না”!
তৃধা বিছানার উপর উঠে এক পাশ হয়ে শুয়ে পড়লো,মন খা”রাপ আবার খারা” প লাগা কাজ করছে না,দোটানায় পড়েছে মন,চোখ বন্ধ করলো তৃধা!
কিছুক্ষণ পর মুখের কাছে গরম কিছু অনুভব করলো তৃধা হকচকিয়ে উঠলো যেনো,চোখ খুলতেই দেখলো আদাভান বসে আছে পাশে।
তৃধার অবাকের শেষ চূড়ায়,আদাভান তৃধার কপালে থাকা চুল গুলো সরালো,তৃধার চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে,আদাভান কানের পাশে চুল গুঁজে দিয়ে আকষ্মিক ভাবে তৃধার কান টেনে ধরে বললো–,, বেয়া”দব মেয়ে,সুযোগ পেলেই মুখে খৈ ফুটে না?একটা চ”ড়ে দাঁত সব কটা ফেলে দিবো আর একদিন যদি এসব আজে”বাজে কথা বলেছো তো!মজা করে কিছু বললেও ওটা কে সিরিয়াস ভাবে নিয়ে মুখ ফুলিয়ে রাখো বুঝাতে আসলে আবার উল্টো ভাব দেখাও পেয়েছো টা কি?সব মানুষ কি এক রকম হয়?আমার বুঝানোর ধরন আলাদা আমি আলাদা,আমাকে বুঝার চেষ্টা কেনো করো না তুমি?
তৃধার আদাভানের হাত ছাড়িয়ে উঠে বসলো—,, আপনিই তো বলেছেন আমি কোথাকার কোন মেয়ে আপনি আমাকে চিনেনই না, আপনাকে জানার, বুঝার,কিছু বলার অধিকার টুকুই তো নেই!
আদাভান তৃধার গালে হাত রেখে বলে উঠলো–,,ওলে বাবা লে বাবু টার তো অধিকারই নেই আহারে!
অধিকার ছাড়াই আমার জীবনে এসে ডাক ঢোল পেটা”চ্ছে না জানি অধিকার পাওয়ার পর কি কি করে,অধিকার নেই উনার কিন্তু আমার সাথে ত”র্ক করতে পারে,কলা’র চেপে ধরতে পারে,একই বিছানায় ঘুমাতে পারে,আমার হাতে খাইতে পারে,কাপড় গুলা আমাকে দিয়ে আয়রন করাতে পারে,কথায় কথায় ঝা’রি মা’রে।পুরো বাড়িতে আমার জায়গা দখল করে বসে আছে অধিকার ছাড়াই,আমার বউ এর ট্যাগ নিয়ে ঘুরছে তাও নাকি অধিকার দেওয়া এখনো বাকি আছে, অধিকার কি এখন মসজিদের মাইকে বলে দিতে হবে মেডাম!
তৃধা আদাভানের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো–,,খোঁ”টা দিচ্ছেন?একদম ভালো হবে না বলে রাখছি, আমার রাগ উঠলে আপনার একটা চুল ও আস্ত রাখবো না আমি,শয়’তান বে”ডা যান আমার সামনে থেকে, অস”হ্য অস’ভ্য লোক কোথাকার!
আদাভান পিছিয়ে গিয়ে বললো–,,এই মেয়ে একদম গু’ন্ডামি এখানে করবা না!
তৃধা মুখ ভেংচি কে’টে শুয়ে পড়লো, আদাভান ও বলে উঠলো–,,পারো তো শুধু ওইটাই!
তৃধা উঠে এসে একেবারে টেনে ধরলো আদাভানের চুল।
আদাভানের শান্ত চাহনি,তৃধা আদাভানের একেবারে কাছাকাছি, রাগে ফোঁস ফোঁস করছে,নাক,ঠোঁট তিড়বিড়িয়ে কাঁপছে,নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে কপাল কুঁচকে আছে,চোখ জোড়া যেনো অশান্ত নদী।
আদাভান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, তৃধার হাত ধীরে ধীর আলগা হয়ে আসলো,আদাভান বলে উঠলো–,,আমাকে দেখে কি পুরুষ মানুষ মনে হয় না!
নিজ ইচ্ছেতে যে এতো কাছে এসেছো অঘ”টন ঘটলে দায়ী কে থাকবে!
তৃধার অন্তর আ”ত্মা কেঁপে উঠলো যেনো, একটু একটু করে পিছিয়ে গেলো সে,নিজের সীমা আসলেই অতিক্রম করে ফেলেছে আজ,কি লজ্জা জনক কাজ।
তৃধা লজ্জা পাবে না পাবে না করেও গাল দুটো লাল হয়ে গেছে ওর।
আদাভান একই ভাবে তাকিয়ে আছে,তৃধা আর মাথা তুলতে পারছে না!
আদাভানের শান্ত শীতল কন্ঠস্বর—,,এভাবে লজ্জা পেয়ো না প্রজাপতি, আমার হৃদয়ে কি যেনো হয়,অনুভূতির পরিচিতি খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে উঠে খুব!
তৃধা এবার জোরে বলে উঠলো –,,আদাভান লাইট অফ করুন ঘুমাবো!
আদাভান লাইট অফ করে দিলো সাথে সাথে,আদাভান এবার অন্ধকারে বসে উচ্চশব্দে হেসে উঠলো, মেয়েটা পারেও বটে!
————–
আলিজা কে দেখতে এসেছে আজ,বাড়ির সব কাজ গুছিয়ে নিয়েছে সবাই মিলে,জিদান আর তৃধা ম্যাচিং ম্যাচিং পড়বে বলে আদাভানের মাথা খারা’প করে দিয়েছে,গোলবাহার আবার বলে দিয়েছে শাড়ি পড়তে,তৃধা কপাল চাপড়ালো দশ মিনিট, আদাভান কে খোঁচা মে’রে বলেছিলো–,,না পড়লে হয় না,আত্নীয় স্বজনের সামনে খুলে গেলে আমার মানসম্মান থাকবে বলুন?
আদাভান হতাশ হয়ে বললো–,,মা কে বলবে ভালো করে পড়িয়ে দিবে,দাদী বলেছে কিছুক্ষণেরই তো কাজ!
তৃধা জিদানের চুল আঁচড়ে দিয়ে বললো–,,কি রঙ পছন্দ আমার বাবাইয়ের?
জিদান হাত উচিয়ে আদাভানের দিকে দেখালো, আদাভানের পড়নে আকাশী রঙের পাঞ্জাবি,তৃধা নাক মুখ কুঁচকে বললো–,, এটা কোনো রঙ হলো?আয় আমরা খয়েরী কালার পড়ি!
জিদান বলে উঠলো –,,নো নো নো নো,,,,,এটাই পববো!
তৃধা হাত পা ছুঁড়ে বললো–,,ভাললাগে না!
আদাভান জল”জ্যান্ত দুইটা বাচ্চা দেখতে পাচ্ছে,একটা উনিশ বছরের তার বিয়ে করা বউ,আরেকটা তার ভাইয়ের ছেলে,ওর মনে হলো জিদান তৃধার থেকে বেশি ম্যাচিউর!কে এভাবে হাত পা ছুঁড়ে কাঁদে?এটা নাকি আবার বাড়ির বড় বউ সবার সামনে উল্টো পাল্টা কিছু বললে আর দেখতে হবে না!
আদাভান এগিয়ে এসে বললো–,,তৃধা একদিনই তো আজ এই রঙ পড়লে কিচ্ছুটি হবে না।
তৃধা মুখ ফুলিয়ে বললো–,,এই রঙ পড়লে আমাকে নাকি দেখতে ভালো লাগে না!
আদাভান ভ্রু কুঁচকে বললো–,, কে বলেছে?
–,,আমাদের এক ক্লাসমেট ছিলো রিফাত কলেজে, সে বলেছে ভালো লাগে না!
আদাভান রেগে গেলো সাথে সাথে,তৃধার হাত শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে গটগট করে বেরিয়ে গেলো।
তৃধা মনে মনে বলে উঠলো –,,আশ্চর্য চেত’লো কেন?
—————–
দুপুরে মেহমানে ভরপুর হয়ে উঠলো বাড়ি, পাত্র পক্ষের আগে এসে হাজির হলো আজাদ তালুকদার তার সাথে রাজিয়া বেগম, জোছনা বেগম ও এসেছেন।
তৃধা কে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে মৃধা,চুল গুলো খোঁপা করে দিয়ে মৃধা বললো–,,মাশাআল্লাহ আজকে তো ভাইয়া বেহু”শ হয়ে যাবে রে তৃধা!
তৃধা লজ্জা পাওয়ার বদলে বিরক্ত হয়ে বললো–,, কচু হবে।তুমি রেডি হও আমি আমার পাখিটার সাথে নিচে যাচ্ছি!
মৃধা বলে উঠলো –,,আমার ছেলেটাকে তো হাত করে নিয়েছিস এখন আমাকে চিনেই না!
এরই মধ্যে জিদান এক গাল হেসে এগিয়ে আসলো, তৃধার হাত ধরে বললো–,,খা”মনি তলো।
তৃধা জিদান কে কোলে তুলে বেরিয়ে গেলো সিঁড়ির কাছে আসতেই রাজিয়া বেগম কে দেখে তৃধা সিঁড়িতে লাগালো দৌড় এরই মধ্যে ঘট’লো ভয়ান”ক কান্ড টা শাড়িতে পা পেচিয়ে পড়তে নিলো সে,আদাভানের তো কলিজা শুকিয়ে এসেছে দৌড়ে এসে কোনো রকম ধরলো দুজন কে!
তৃধা চোখ বন্ধ করে স্তব্ধ হয়ে গেছে।আদাভান তৃধা কে সোজা দাঁড় করিয়ে জিদান কে টেনে নিয়ে গেলো নিজের কোলে ফাহিমা বেগমের কোলে দিয়ে এসে, তৃধার সামনে দাঁড়িয়ে দিলো এক ধম’ক তৃধার সর্বা”ঙ্গ কেঁপে উঠলো।
আদাভান রাগে কাঁপছে, চোখ মুখের অবস্থা ভয়াবহ দাঁতে দাঁত চেপে বললো—,,একবার পড়লে কি হতো ধারনা আছে তোমার?দেখে চলতে পারো না সারাদিন শুধু লাফালাফি করা,বাচ্চা তুমি এখনো?একসাথে দুজন পড়লে কি হতো একবার ভাবো,দুজনের কিছু হয়ে গেলে তখন,,,বাহু চেপে ধরলো আদাভান।তৃধা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে, সত্যি ওর যেমন তেমন জিদানের কিছু হলে!
আমিনা বেগম বলে উঠলো–,,থাম এবার আদাভান ছোট মানুষ।
আদাভান বলে উঠলো –,,ছোট ছোট বলে মাথায় তুলো আরো,একদিন নিজে তো মর’বে সাথে আমাকেও মার’বে!
তৃধা চোখ তুলে তাকালো,আদাভান তাকিয়ে আছে এখনো তৃধার চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। আদাভান হন হন করে চলে গেলো।
রাজিয়া বেগম এসে মেয়েকে ধরে বললো–,, সাবধানে চলবি না একটু।
গোলজার মজুমদার সবার উদ্দেশ্য বললো–,, যা হওয়ার হয়েছে,নাত বউ যাও তো সবার জন্য সরবত করে নিয়ে আসো!
তৃধা মাথা নেড়ে গেলো,মৃধা নেমে আসলো তখনই।
জিদান ফাহিমা বেগমের কোলে বসে কাঁদছে –,,সব প”তা, বলো আব্বু প”তা খা’মনি কে বচে”ছে।
জিদান তৃধার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো,তৃধা ছলছল চোখে তাকালো ও নিজেও ভয় পেয়েছে জিদান কে কোলে নিলো না আর,ছেলেটা কেমন করে তাকিয়ে আছে তার দিকে তৃধার মন কেঁদে উঠলো, যদি ব্যাথা দিয়ে ফেলে আবার?তৃধা কে সরবত বানাতে হলো না আর জোহরা বেগম করে দিয়েছে ইতিমধ্যে, তৃধার হাতে তুলে দিলো ট্রে,তৃধা ঘোমটা টেনে নিয়ে গেলো সবার কাছে।
একে একে সরবত তুলে দিলো সবার হাতে আদাভানের দিকে ধরলো কিন্তু নিলো না সে,তৃধার কষ্টে ক’লিজা ফেটে যাচ্ছে যেনো,টেবিলের উপর রেখে ট্রে নিয়ে চলে আসলো আজ আর যাবে না কারো সামনে!
কিছু সময়ের ব্যবধানেই পাত্র পক্ষের আগমন ঘটলো
আলিজা কে নিয়ে নামলো মৃধা, তৃধা আসতে চায়নি রাজিয়া বেগম জোর করে পাঠালো,জোবান এক পাশে দাড়িয়ে মৃধার সাথে এখনো দেখা হয়নি কারোর।জিদান কে তা ও জানার সুযোগ হয়ে উঠেনি কারোর।
আদাভান এক পাশে দাড়িয়ে, তার থেকে বেশ দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে আছো তৃধা, জিদান সে কি বুঝ মানার পাত্র?খালামনি ছাড়া চলে না তার ঠিক ছুটে চলে এসেছে তৃধার আঁচল টেনে ধরলো সে,তৃধার দিকে তাকিয়ে আছে মায়াভরা চোখে,আদাভান খেয়াল করলো তৃধা কোলে নিচ্ছে না।
মৃধা যখন সবার সামনে আলিজা কে নিয়ে বসালো,তখন তাকে দেখে আজাদ তালুকদার বসা থেকে উঠে দাড়ালো,তার মনোভাব বুঝতে পেরে তাকে টেনে বসিয়ে দিলো আশরাফ মজুমদার!
আলিজাকে দেখলো পাত্রের মা বোনরা,দেখে মনে হচ্ছে সবারই মেয়ে পছন্দ হয়েছে।রাজিয়া বেগম ফাহিমা বেগমের পাশে দাঁড়াতেই ফাহিমা বেগম বললো–,,বেয়াইন হয়ে বসে আছি আমরা কিন্তু জানতে পারলাম এতোদিনে!
রাজিয়া বেগম বিস্ময়ে বলে উঠলো –,,মৃধা এখানে কি করছে আপা!
ফাহিমা বেগম হেসে বললো–,, আমার জোবানের বউ মৃধা,সব বলছি আপনাকে চলুন,আর জিদান কিন্তু আপনার নাতি!
রাজিয়া বেগমের চোখের কোনে অশ্রু জমলো কতোদিন পর মেয়েকে দেখছেন তিনি।
আলিজা কে ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো একেবারে আংটিবদলের পালা শেষ করেছেন তারা।
আদাভান তৃধা কে বলে উঠলো–,,জিদান কে মৃধার কাছে দিয়ে রুমে আসো।
তৃধা নড়লো না পর্যন্ত,আদাভান কটমট দৃষ্টিতে তাকালো পাত্র পক্ষের মধ্যে অনেকেই তৃধার দিকে তাকিয়ে আছে।আদাভান জিদান কে কোলে তুলে নিলো তৃধার হাত চেপে ধরে টেনে নিয়ে গেলো নিজের সাথে!
পাত্রের মা বলে উঠলো–,,ওরা কারা ভাবি?
আমিনা বেগম হেসে বললো–,,আমার বড় ছেলে আর ছেলের বউ!
পাত্রের বোন নাতাশা বলে উঠলো –,,বাবুটাও কি ওদের?
আমিনা বেগম বললো–,, না, ও তো আমাদের মেজো ছেলে জোবানের সন্তান।ওই তো জোবান আর মৃধা ওদেরই ছেলে!
আজাদ তালুকদার তাকালো মেয়ের দিকে!কতো বড় হয়ে গেছে মেয়েটা।বাবার প্রতি অভিমান কমেনি এখনো?
————-
জিদান কে আলিজার কাছে রেখে এসেছে আদাভান, ছেলের মায়ের থেকে ও বেশি যেনো খালা কে পছন্দ, সে কোনো মতেই থাকবে না ফুপ্পির কাছে,খা”মনি চাই তার।
তৃধা কে রুমে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করলো আদাভান, তৃধা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
আদাভান এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তৃধা কে,তৃধা বেআ”ক্কল বনে গেলো পুরোপুরি।
–,,কেনো ছেলেমানুষী করো বলো তো?যদি কিছু হয়ে যেতো?আমার কেমন লেগেছিলো জানো তুমি?এতো অবুঝ কেনো মেয়ে তুমি?
তৃধা এবার কেঁদে উঠলো, আদাভানের বুকে এলোপাতাড়ি মে’রে বললো–,, আপনি একটা খারা’প লোক।
তৃধার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদাভান বললো–,,স্যরি!
–,,লাগতো না স্যরি আপনার স্যরি আপনার পকেটে রাখুন!
আদাভান হেসে বললো–,,তাহলে কি লাগবে বলো?চুমু লাগবে চুমু!
তৃধা এক ঝটকায় দুরে সরে বললো–,, আপনি এতো লাজ’লজ্জাহীন কেনো?অস’ভ্য লোক!
তৃধা বের হতে নিলেই আদাভান বলে উঠলো –,, খবর”দার আর নিচে যাবে না,সুন্দর করে সেজেগুজে হার্ট অ্যা”টাক করানোর মতো রূপ নিয়ে,পরপুরুষের সামনে হাঁটবে এটা আমার মতো নিরিহ স্বামী কিছুতেই মেনে নিবে না!
চলবে……..
#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব১৫
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
বাড়িতে এসেছে বেশ কয়েক দিন হয়েছে তৃধা আদাভানের, মৃধা জোবানের সম্পর্কের কথা শুনে দুই পরিবারের মানুষই কিছুক্ষণ থ মে’রে ছিলো,ওরা ভেবেছে ছেলে মেয়ে দুটো নিশ্চিত খারা”প কোনো জীবনসঙ্গী বেছে নিয়েছে,রাগে ক্ষো’ভে তারা এতোটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলো ভেবেই দেখেনি কার পরিবার কেমন,কেনো একসাথে থাকার এতো বড় সিদ্ধান্ত টা নিয়েছে ছেলে মেয়ে দুটো।অবশেষে ত”র্ক বিতর্কের পর মৃধা জোবান কে ক্ষমা করা হলো,বাবা মায়েরাও স্বীকার করলো তাদেরও দোষ ছিলো,ছেলেমেয়েদের ইচ্ছে অনিচ্ছে পছন্দ অপছন্দ কে মূল্য দেওয়া উচিত ছিলো তাদের।
তৃধা ওইদিন মাঝখান থেকে বলে উঠেছিলো –,,আমার পছন্দ ও তো তোমরা দেখোনি এখন জামাই পরিবর্তন করে দাও এই লোককে আর সহ্য করতে পারছি না আমি!
আদাভান তেলে বেগুনে জ্ব’লে উঠে বলেছিলো–,,বে”য়াদব মেয়ে তিন বেলা গা’ধার মতো তোমার পেছনে খাটছি, এতো কিছু করছি তাও বলছো জামাই পছন্দ হয়নি?অনলাইনে অর্ডার করো মন মতো জামাই!
তৃধা হি হি করে হেসে বলেছিলো–,,অনলাইনে ভালো জামাই পাওয়া যায়?কোনটাতে লিং’ক টা দিন তো প্লিজ, আমি খুঁজে খুঁজে পাঁচ খানা অর্ডার করে দেই!
আদাভান গাল ফুলিয়ে তৃধার হাত শক্ত করে চেপে ধরে সবার উদ্দেশ্যে বলেছিলো–,,তোমরা আমাকে নির্ল”জ্জ বলো আর যাই বলো এই মেয়েকে এখন আমি রুমে নিয়ে যাচ্ছি,এর ডো’জের সময় হয়েছে, ডো’জ ঠিকঠাক না পড়লে এসব পাগ”লের প্রলা’প ব’কে এই মেয়ে!
তৃধা অসহায় হয়ে বললো–,,আশ্চর্য! ছাড়ুন বলছি ভালো হবে না কিন্তু।
বসার ঘরে দুজনের কান্ডকারখানা দেখে সে কি হাসিটাই না হেসেছিলো পরিবারের সবাই!
———-
কেটে গেছে আরো দু মাস, তৃধা তার ফ্রেন্ড নিশির বোনের বিয়েতে গিয়েছিলো খুলনা তে, সেখানে যেতে দিতে মোটেও রাজি হয়নি আদাভান,নাদিম,আভা, নোভা, নিশি, রাদিফ মিলে আদাভান কে রাজি করিয়েছে,আদাভান একশোটা শর্ত ধরিয়ে দিয়েছে।তার কথা হচ্ছে তার বউ সে যেভাবে দিচ্ছে সেভাবেই যেনো ফেরত পায়।
আদাভান আর তৃধার সম্পর্কটা এখন খুবই মিষ্টি,যে কেউ দেখলেই বলবে ওদের মতো সম্পর্ক আমাদের হলেও পারতো!দুজন মিলে সংসার?না!তারা নিজেদের জন্য সংসার গড়ে তুলেনি, তাদের সম্পর্ক স্বামী স্ত্রী রূপে স্বীকৃতি পায় নি।তবে তারা ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে নিজেদের ভালো মন্দ সব কাজকে একসাথে সেলিব্রেট করতে শিখেছে, শিখছে কিভাবে এক আকাশ সমান দুঃখ নিয়ে একসাথে হাসা যায়,ভালোবাসি না বলেও কতোটা আপন হওয়া যায়,একজনের হৃদয়ে অন্য জন কতোটা নিজের অস্তিত্ব ধরে রাখতে পারে।মনে মনে বলা কথা বুঝার অদৃশ্য শক্তি পাওয়া যায়।ব্যাথা পেলে তুমি তার আঁচ পেয়ে ছ’টফ’ট করি আমি!তোমার জ্ব’রের উত্তাপ পু”ড়িয়ে দেয় অপর ব্যক্তি কে।প্রেম আজোও লুকায়িত ভোরের আলোর চাদরে,শুরু টা করবে কে?মন কে প্রশ্ন করে করেও বলে হয়ে উঠা হয় না কারোই,হারিয়ে ফেলার ভয় নেই তাদের এই তো দুজন দুজনকে কি ভীষণ আগলে রাখে বিশ্বাস করে!
আদাভান চশমা খুলে টেবিলে রাখলো, মেয়েটা রওনা হয়েছে সকালের ট্রেনে চিন্তায় চিন্তায় সে ক্লান্ত মন কেমন যেনো করছে, নিজেকে বার বার বুঝ দিচ্ছে, আজে”বাজে চিন্তা করা বন্ধ কর তুই!
তৃধা ট্রেনে চেপেই ফোন করেছিলো।আদাভান স্বস্তির নিশ্বাস নিলেও তার মন এখনও অশান্ত!
তৃধা ট্রেনের বেঞ্চিতে বসলো আরাম করে পেছনে হেলান দিয়ে বলে উঠলো–,,গাই’স একটা সিরিয়াস কথা বলার আছে,তোরা পরামর্শ দিবি, লেগ”পুল করলে সোজা ট্রেনের বাহিরে ফেলে দিবো শা”লা!
নোভা হাই তোলে বললো–,,আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে ভাই!
রাদিফ বললো–,,নিশি হলুদের দিন তোকে কি যে সুন্দ…!
তৃধা থামিয়ে দিয়ে বললো—,,পরে আবার বলতে পারবি না বা’সর সেরে ফেললি আমাদের কিছু বললিও না!
এবার নড়েচড়ে বসলো সবাই,আভা মুখে চিপস পুরে বললো–,,প্রেম নামক জন্ডিসে আক্রা”ন্ত হয়েছো নাকি বান্ধবী!
তৃধা কিছুটা ঝুঁকে বসে বললো–,,আমি ভাবছিলাম।
নাদিম এক্সাইটেড হয়ে বললো–,,কি?
তৃধা এবার হাফ হেঁড়ে বললো–,,ভনিতা করতে পারতাম নাই ভাই,এসব ঢং টং আমারে দিয়া হইতো না।আমি আজকে যাওয়ার পর আমার জামাইরে প্রোপোজ করমু!আমার মনে হয় আমি খুব ভালো মতোই অসহ্য লোকটার প্রেমে পড়ছি!
নিশি এবার কথা না বলে থাকতে পারলো না, সে হা হয়ে জোরে চেঁচিয়ে বললো–,,কিহ্!সত্যি এ ও সম্ভব প্রতিদিন না এসে বলতি তোরা সারাদিন শুধু ঝগ’ড়াই করিস অন্য কিছু নাই,তাইলে….
নিশির মুখ চেপে ধরে নোভা বললো–,,কেমনে কি?আমি তো আন্দাজ করছিলাম কিন্তু এতো সিরিয়াস তা তো ভাবতেও পারি নাই!
নাদিম বলে উঠলো–,,তোরা সব ক’টা মাথামোটা আরে ভাই ওরে পুরো কথাটা শেষ করতে তো দে।
তৃধা ব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করে বললো–,,দেখ তো পছন্দ হয় কিনা নিজের জন্যই কিনেছি।
আভা বক্স ছিনিয়ে নিয়ে বললো–,,তুই কি নিজেরে নিজে প্রোপোজাল দিবি নাকি?
তৃধা চুল গুলো বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে বললো–,,নো,তৃধার প্রেমে পড়ার মুহুর্ত থেকে শুরু করে টেনে টুনে আজ প্রস্তাব দেওয়ায় এসে ঠেকেছি স্পেশ্যাল না হলে কি চলে?আমার স্টাইল হবে ইউনিক!
আভা উঠে এসে ঠেলেঠুলে তৃধার পাশে বসে বললো–,,হ্যাঁ বইন এবার ঠিক আছে, কি কি করবি বল শিখে রাখি, বিয়া করার পর আমিও জামাইরে প্রেম নিবেদন করমু!
তৃধা সিরিয়াস ভঙ্গিতে বসে বললো–,,শোন তবে,প্রথমে যাবো গিয়েই গলায় ঝু’লে পড়বো।মানে সব সময় যা করি!
নাদিম চোখ ছোট ছোট করে বললো–,,ভাগ্যিস তোর ওজন কম, না হয় ভাইয়ার কি হইতো ভেবে ভেবেই আমার ঘাম ছুটে যাচ্ছে!
নোভা গুঁ’তো মে’রে বললো–,,শা”লা বউরা তুলার মতো হালকা হয়,তুই বিয়া কর পরে বুঝতে পারবি!
রাদিফ বলে উঠলো–,,ভাগ্য কতো ভালো তোদের বন্ধু হতে পেরেছি, না হয় কতো কিছু মিস করে ফেলতাম!
নিশি ভাব নিয়ে বললো–,,শুকরিয়া কর ভাই শুকরিয়া কর!
রাদিফ বলে উঠলো–,,এটা কিন্তু বারাবাড়ি, আমি তোর কোন জন্মের ভাই!
আভা বলে উঠলো–,,থামবি তোরা।
তৃধা বিরক্ত হয়ে বললো–,,আমি আর কিছু কইতাম না যা।
নোভা তৃধার হাত ধরে বললো–,,মনু না ভালা বল বল পরে কি?
তৃধা বলে উঠলো—,,তার পর কিছু না, ঘুমাবো ধর রাত তিনটের দিকে টেনে তুলবো ঘুম থেকে এক বালতি পানি ঢালবো সাথে ফ্রি তে,তার পর টুপ করে দুটো চুমু খেয়ে টেনেটুনে বারান্দায় নিয়ে যাবো,বারান্দা টা কিউট করে সাজাবো, তার পর ব্যাটা’র ছেলেকে টেনে বসিয়ে দিয়ে হাতে বক্স টা ধরিয়ে দিয়ে বলবো–,,ভালোবাসি এবার আংটি টা পড়িয়ে দিয়ে হাতের পিঠে চুমু খেয়ে প্রমান করুন আপনিও আমায় ভালোবাসেন!
আভা হা হয়ে গেছে পুরো সে বলে উঠলো–,,তার পর!
তৃধা নাক মুখ কুঁচকে বললো–,,শেষ!
নাদিম মিন মিন করে বললো–,,এটা প্রোপোজাল?না মানে ডাকা’তি বললেও ভুল হবে না!
তৃধা ভাব নিয়ে বললো–,,এমন প্রেম নিবেদন দিয়ে কি লাভ যদি হার্ট অ্যা”টাক না করে?এমন কিছু করতে হবে যাতে সারা জীবন মনে থাকে এবার যে যার মতো ঘুমা তো, যা!
___________
গাড়ি চলছে আপন গতিতে রাত আটটা,সোনালী খুশিতে আত্নহারা,কতোদিন পর ভালোবাসার মানুষ টিকে দেখবে।
এরিশ তাকে কতোটা ভালোবাসে,যখন শুনবে ওদের একটা মেয়ে আছে তখন এরিশ কখনো তাকে ফেরাতে পারবে না।মাহির নামক কারা’গার থেকে মুক্তি পাবে আজ থেকে!
মাহির কু”টিল হেসে বললো–,,রাতটা তোর সকাল টা অন্য কারোর,তোর দুই কু’লই না আবার চলে যায়!
সোনালী হেসে বললো–,,এরিশ আমার হবে ভেবে কি তুই কষ্ট পাচ্ছিস?
মাহির হেসে বললো–,,তোর কি মনে হয়, আমার লাভ ছাড়া তোকে আমি ব্যব”হার করছি?
সোনালী চুপসে গেলো আসলেই তো এভাবে কেনো ভেবে দেখলো না ও এতোদিন ধরে যেহেতু এই ছেলের এতো আয়োজন নিশ্চিত কোনো বড় কারন আছে!
সোনালী মিন মিন করে বললো–,আমাকে বল,আমি ও তো এই কাজে তোর পার্টনার!
মাহির হো হো করে হেসে বললো–,,শেয়া’লের কাছে মুরগী ভা”গী দেওয়ার মতো লোক মাহির না!
ওই তো প্রায় চলে এসেছি,তৈরি হয়ে নে!
———
আদাভান তৃধার ছবির দিকে তাকিয়ে হাসলো,মেয়েটা আছে বলেই তার জীবনে সব কিছু আছে, নিজের ব্যবহারে আজকাল বেশ অবাক হয় সে, মেয়েটা নিজের সাথে সাথে তাকেও বাচ্চা করে ছেড়েছে,কোনো দিন যদি তৃধা না থাকে?আদাভানের হৃদয়ে ব্যাথা অনুভব হলো কথা টা ভেবেই তার কলি”জা ফে’টে যাওয়ার উপক্রম!মেয়েটা কে ছাড়া এই কয়দিন যে কিভাবে কাটিয়েছে আবার নাকি সারাজীবন! আদাভান আনমনেই তৃধার ছবিতে চুমু খেলো,পর পরই হেসে বলে
উঠলো–,,”কি এক রোগ হয়েছে আমার?তোমাকেই দেখি বার বার,তুমি কাছে নেই তবুও কেমন যেনো মনে হয় দূর থেকেও শাসন করছো আমায়,যত্নে, খুনসুটি তে মাতিয়ে রাখছো আমায়!মেয়ে তুমি এতোটা আপন কবে হলে আমার?তোমায় ভালো না বেসে উপায় আছে কি আর?আমি তে ফেঁ”সে গেছি পুরোটাই!”
আদাভান ঘরি দেখলো তৃধার আসার কথা যে কোনো সময়,কতো করে বললো–,স্টেশনে আসি, সে সাফ মানা করে দিয়ে বলেছে,একদম আসবেন না।আপনি আসবেন না,আমি আসছি সারপ্রাইজ দিবো,এমন একটা ভাব নিয়ে বসে থাকেন যেনো জানেন না আমি আসবো,হুট করে এসে চম’কে দিচ্ছি বুঝেছেন?
আদাভান কপাল চাপ’ড়ে রাজি হয়েছে,মেয়েটার সব অদ্ভুত ইচ্ছে, বায়না গুলো তবুও নাকি সব আদাভানের কাছেই করে সে,আদাভান কোন মুখে না করবে?আদোও কি সম্ভব তার দ্বারা!
কিছু সময় পার না হতেই কলিং বেল বেজে উঠলো, আদাভান তড়িঘড়ি উঠে গেলো, এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলো?আদাভান দরজা খুললো হাসি মুখে যেই না কিছু বলতে যাবে।
আচমকা সোনালী তাকে জড়িয়ে ধরে বললো–,,কেমন আছিস এরিশ?
আদাভান এক ঝটকায় সোনালী কে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো–,,সোনালী তুই এখান?এতো রাতে!
সোনালীর পেছন থেকে বাচ্চা মেয়েটি এসে আদাভান কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,বাবা!
চলবে…..