নৈঃশব্দ্যের প্রেমালাপ পর্ব-১৬+১৭

0
1

#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব১৬
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
আদাভান হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে আছে, বাবা মানে?কে এই মেয়ে!
আদাভানের চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসলো বিরক্তিতে রি রি করে উঠলো পুরুষালী দেহ,রাগে চোখ মুখের ধরন বদলালো, সোনালী শুকনো ঢোক গিললো,আদাভান রাগী তবে ওর ক্ষেত্রে কিছুতেই রাগ করে থাকতে পারে না এই ছেলে নিশ্চয়ই এখন ও তাই।

সোনালী আগ বাড়িয়ে বললো–,,এরিশ তোমার মনে নেই আমাকে?আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি!এই দেখো আমাদের মেয়ে আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন।

আদাভানের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গলো, ঠা”স করে একটা চ”ড় বসিয়ে দিলো সোনালীর গালে।
সোনালী গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে তাকালো,বাচ্চাটা দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে ড্যাব’ড্যাব করে।

আদাভান রেগে বললো–,,কি সব যা তা বলছিস?মাথা ঠিক আছে তোর?রাতের বেলা কোথা থেকে এসে হাজির হয়েছিস,কার পা”প আমার ঘাড়ে চাপাতে এসেছিস?তোর মতো মেয়েকে খুব ভালো করে চেনা আছে আমার!

সোনালী যেনো আটঘাট বেঁধে এসেছে, সে কেঁদে বলে উঠলো–,,তুই আমাদের সম্পর্ক কিভাবে অস্বীকার করতে পারিস?জানি আমি একটা ভুল করেছি, তোকে ছেড়ে চলে গেছি মানছি আমার অন্যায় হয়েছে কিন্তু যেদিন যেনেছি তোর সন্তান আমার পেটে সেদিনই তোর কাছে ফিরতে চেয়েছিলাম!

আদাভান বুকে দু হাত গুঁজে বললো–,,ওহ্!তাহলে আসিস নাই কেনো?এতো বছর পর কি মনে করে আসলি?আর কথা হলো তোর সাথে আমার সম্পর্ক কি আদোও এমন ছিলো যার জন্য একটা বাচ্চা আসার সম্ভবনা থাকতে পারে?কেনো এসেছিস আসল মতলব বলে বিদায় হ,একটা সত্যি কথা বলি তোকে এই মুহুর্তে দেখতে আমার শুধু ঘৃ’ণা হচ্ছে,সহানুভূতি তো দূর তোকে দেখার নূন্যতম ইচ্ছেও হচ্ছে না এখন!

সোনালী আদাভানের হাত চেপে ধরে বললো–,,আমাকে ফিরিয়ে দিস না এরিশ,আমি সত্যি বলছি তোকে, পিহু আমাদের দুজনের সন্তান, বিশ্বাস না হলে ডিএনএ টেস্ট করে দেখতে পারিস!
আদাভানের ভ্রু কুঁচকে গেলো আপনা-আপনি যে মেয়েটার হাত ব্যতিত কখনো জড়িয়ে ও ধরেনি সে মেয়ে এসে বলছে সে তার সন্তানের মা! আদাভান গম্ভীর হলো অনেকটা,তার চিন্তা হচ্ছে তৃধা কে নিয়ে, পাগ”লি টা কে সোনালীর বিষয়ে কিছু বলাও হয়নি আগে,কতোবড় ভুল করে বসে আছে সে,নিজেই মনে মনে বেশ বিরক্ত হলো আদাভান,তৃধা তাকে কতোটা বিশ্বাস করে, এখন কি হবে!

আদাভানের হৃদয়ে তীব্র ঝ”ড় উঠলো,তৃধাকে হারানোর ভয় আঁকড়ে ধরলো এই প্রথম!মেয়েটা ভুল বুঝে দূরে সরে যাবে না তো?
সোনালী আদাভান কে অন্যমনস্ক দেখে আরেকদফা জড়িয়ে ধরে বললো–,,তুমি বিশ্বাস করো আমায়, আমরা লাস্ট ইয়ারে ট্যুরে গিয়েছিলাম মনে নেই তোমার?তখনই তো ভুল বসত!

আদাভান এক ঝটকায় দূরে সরে বললো–,,একদম আমাকে ছোঁয়ার দুঃসাহস দেখাবি না,একজন ছাড়া অন্য কারো ছোঁয়া সহ্য হয় না আমার,তোর মতো নারীদের বিশ্বাস করার থেকে ভালো কাল’সাপ কে বিশ্বাস করা।তুই নিজেও ভালো করে জানিস আমি আমার লিমিট কোনো দিন ক্র’স করিনি,ইমোশনাল কথা বার্তা বলে আমার জীবনে অশান্তি করতে আসবি না,যা যেখান থেকে এসেছিস সেখানে ফিরে যা!ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেই এটা নিশ্চয়ই চাস না।

সোনালী ওড়নায় মুখ চেপে কেঁদে উঠলো, বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিয়ে আদাভানের পা জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো–,,আমাকে তুমি ফিরিয়ে দিলে ম’রা ছাড়া আমার আর কোনো পথ খোলা থাকবে না,মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবো বলো,এতোদিন যে কিভাবে কে”টেছে আমার, তোমার কাছে আসতে চেয়েছিলাম ওইদিন,এসেও ছিলাম এসে জানতে পারি তুমি সেদিনই সবার সাথে সম্পর্ক ছি’ন্ন করে চলে গেছো,কতো খুঁজেছি তোমাকে আমি, বিশ্বাস করো আমি সত্যি তোমাকে আজও ভালোবাসি,তুমি ও তো আমাকে ভালোবাসো বলো বাসো না?

আদাভানের শক্তপোক্ত জবাব–,,তোকে ভালোবাসার মতো যে ভুল আমি করেছিলাম তার জন্য আজও আমি অনুতপ্ত, যে আমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসেছে, তার হ’ক নষ্ট করায় তার কাছে আমি ল”জ্জিত! তবে বর্তমানে তোর জন্য আমার মনের কোথাও কোনো কিছু নেই, আমার মন প্রা’ণ সব কিছুই এখন অন্য কারো!তোকে ভালোবাসি না আমি!

সোনালী আহ’ত চোখে তাকালো কোলের দিক তাকিয়ে দেখলো পিহু ঘুমিয়ে পড়েছে!আদাভানের হাত ধরে বললো–,,এরিশ,তুই শুধু আমাকে ভালোবাসতে পারিস তোর জীবনে দ্বিতীয় কোনো নারী আসতেই পারে না এটা আমি…!

সোনালী মাথা ঘুরে পড়তে নিলো,বাচ্চাটা পড়তে যাবে তখনই আদাভান বাধ্য হয়ে দুজনকে ধরলো,আদাভান পড়লো অথৈজলে, কি একটা উ”টকো ঝা’মেলা, কি করবে এখন!
সোনালী আদাভানের বাহু আঁকড়ে ধরে বললো–,,প্লিজ আমাকে যেতে বলিস না, তুই আমার শেষ ভরসা!

আদাভান ঘৃ”ণা ভরা দৃষ্টিতে তাকালো,উপায়ন্তর না পেয়ে ভিতরে নিয়ে গেলো দুজনকে।
টেনশনে টেনশনে মা’থা ফে’টে যাচ্ছে ওর!আদাভানের এখন নিজের কাছে নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে,কি রকম একটা মেয়েকে ভালোবাসার মতো ভুল ও করেছিলো?কি করে একটা বাচ্চা নিয়ে হাজির হলো,যেখানে কোনো দিন খারা’প নজরেও তাকায়নি ওর দিকে সেখানে বাচ্চা!

আদাভান রাগে দেয়ালে ঘু’ষি মার’লো।সে জানে এই মেয়ে মিথ্যা বলছে,কিন্তু কেনো?
আদাভান রুমের বাহিরে এসে সোফায় বসলো,সোনালীর দিকে তাকিয়ে বললো–,,দেখ সোনালী কিছু কথা বলি,তুই একটা মেয়ে কেনো নিজের সম্মান এভাবে ন”ষ্ট করছিস?এর পেছনে কোনো কারন থাকলে আমায় বল তোকে আমি সাহায্য করবো,কিন্তু মিথ্যা অপ’বাদ দিবি না,যা আমি করিনি তুই ভালো করেই জানিস ম’রে গেলেও তা আমি স্বীকার করবো না!

সোনালী মাথা নিচু করে বসে আছে,চোখের জল ফেলে বললো–,,আমি মিথ্যা বলছি না এরিশ!

আদাভান রেগে বললো–,,তোর জন্য যদি আমার লাইফে আবার অশান্তি শুরু হয় না, একদম খু’ন করে ফেলবো তোকে আমি,একবার আমার জীবন টা ছাড় খাঁড় করে দিয়ে আস মিটেনি তোর?কি হলো ভ্যা ভ্যা করছিস কেনো?জবাব দে জবাব দে বলছি!

ভয়ে কেঁপে উঠলো সোনালী,তবুও এখান থেকে যেতে পারবে না,এরিশ কে চাই ওর যে কোনো মূল্যে!

সোনালী বেশ সুন্দর একটা মেয়ে,চেয়ারায় লাবন্য ভরপুর,যেকোনো ছেলে তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে বাধ্য!তবে চরিত্র টা তার ততোটাই কলু”ষিত।

সোনালী অবাক হলো যে মানুষ টা তার সাথে সামান্য উচ্চ বাক্য পর্যন্ত করতো না,আজ কতোটা বা’জে ব্যবহার করছে,কিন্তু কেনো?ভালোবাসা ফুরিয়ে গেছে এতো সহজে!

আদাভানের ফোন বেজে উঠলো, আদাভান মোবাইল উঠিয়ে কানে ধরলো আদিবের কল এসেছে।

–,,ভাইয়া তৃধা বাসায় এসেছে?

আদাভান তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বললো–,,এখনো আসেনি, চলে আসবে মনে হয় আমাকে ফোন করেছিলো বেশি সময় লাগবে না বললো, মেয়েটাও না এতো জে’দি কতো করে বলেছি নিতে যাই মানা করে দিলো।তুমি চিন্তা করো না আসলে আমি তোমাকে জানিয়ে দিবো!

আদিব ফোন কা’টলো,আদাভান ঘড়িতে সময় দেখলো এতোসময় লাগে আসতে?কতোদিন পর মেয়েটাকে দেখবে, তার মধ্যে আবার গলা’র কা’টা এসে হাজির!

সোনালী জিজ্ঞেস করে বসলো–,,কোন মেয়ে এরিশ?কার কথা বলছিলে তুমি?কাকে আনতে যেতে চাইছিলে তুমি!

আদাভান সোনালীর কথায় এক ফোঁটা ও পাত্তা দিলো না, কল করলো তৃধার নাম্বারে রিং হচ্ছে রিসিভ করছে না!

আদাভান সোনালীর দিকে তাকিয়ে বললো–,,তোর বাসা কোথায়?মানে কোথায় থাকিস!

সোনালী বলে উঠলো–,,তোর বাসাই তো আমার বাসা এরিশ,চল না আমাদের মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বিয়ে করে নেই আমরা!

আদাভান রাগে থরথর করে কাঁপছে, একটা বেহা’য়া মেয়ে মানুষ, বেহা”য়াপনার একটা সীমা থাকে,আদাভান রেগে বললো–,,বের হ আমার বাসা থেকে, না হয় আমি কি করবো তোর ধারনার ও বাহিরে,যার সাথে গিয়ে নষ্টা”মি করেছিস তার কাছে যা,আমাকে এরকম অসামা’জিক কাজে জড়ালে বেশি ভালো হবে না!

সোনালী বলে উঠলো–,,অনেক হয়েছে আদাভান,তুই যদি প্রমান করতে পারিস পিহু তোর সন্তান না তাহলে আমি চলে যাবো,কিন্তু তার আগে আমি এখানেই থাকবো, আমার সম্মান নিয়ে তুই খেলে’ছিস এখন বাচ্চার দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করছিস?তোরা পুরুষ মানুষ গুলা আসলে এমনই, সময় মতো ইউ’জ করে ছুঁড়ে ফেলে দিস,তবে এবার এমন কিচ্ছু হবে না,আমি আমার অধিকার নিয়ে তবেই ফিরবো!

সোনালী হেঁটে যাচ্ছে রুমের দিকে, আদাভান রেগে বললো–,,খবরদার আর এক পা ও আগাবি না,ওই রুমে তোর মতো মেয়ের প্রবেশ নিষে’ধ প্রমান চাই না তোর?আদাভান এরি’শ কা”পুরুষ নয় ভয়ে পালায় না সে,প্রমান তোর মুখের উপর ছুঁড়ে শুধু বাসা থেকে বের করবো না, একদম হাজ’তে ভরে দ’ম নিবো বলে রাখলাম!

সোনালী প্রথম রুমটায় ঢুকে পড়লো,আদাভান জোরে একটা লা’থি মার’লো টি টেবিল টায় মুহুর্তেই ভেঙ্গে চূড়”মার হয়ে গেলো সেটা!
———-
ঘড়িতে রাত এগারোটা নাদিম,তৃধা,নোভা,আভা,নিশি, রাদিফ এসে দাঁড়িয়েছে হোস্টেলের সামনে,আগে থেকে বলে রাখায় হোস্টেলে যেতে দিবে তাদের,নোভা বলে উঠলো–,,জানু আজ থেকে যা আমাদের সাথে।

আভা বলে উঠলো–,,আজ থেকে গেলে দুলাভাইয়ের কি হবে?বেচারা তো বউয়ের চিন্তায় শুকিয়ে যাচ্ছে দিন দিন।

তৃধা নাক মুখ কুঁচকে বললো–,,যা একটা মটু একটু শুকনা হলে ভালোই হয়!

নিশি বলে উঠলো–,,চিকন ছেলেগুলারে দেখলে গাঞ্জা”খোঁড় মনে হয়!স্যার তো হ্যান্ডসাম আছে একদম সুস্বাস্থ্যের অধিকারী।
নাদিম বলে উঠলো তৃধা চল তো তোকে বাসায় দিয়ে আমরা হোস্টেলে ফিরবো।

তৃধা ও বাকিদের বিদায় দিয়ে নাদিম,রাদিফ এর সাথে গেলো,বাসায় আজ সে কলিং বেল চেপে ঢুকবে না চাবি দিয়ে ঢুকে একেবারে আদাভান ব্যাটাকে চমকে দিবে।

তৃধা খুশি মনে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলো,দরজা খুলে রুমে ঢুকলো সন্তোর্পনে।

লাগেজ টা রেখে এক ছুটে ঢুকে পড়লো ঘরে।লাইট জ্ব’লছে ঘরময়,তৃধা যেই না আদাভান বলে ডাকতে যাবে, তার কন্ঠনালি তে কথা আঁটকে গেলো,দুকদম পিছিয়ে গেলো আপনাআপনি, আদাভানের দিকে তাকালো কপালে হাত রেখে আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়ে আছে।তার পাশে ঘুমিয়ে আছে এক রমনী,মেয়েটার সাদা ত্বক লাইটের আলোতে চক চক করছে,পাশেই বাচ্চা একটি মেয়ে,যে কেউ দেখলে নিঃসন্দেহে বলে দিবে তারা একটা পরিপূর্ণ পরিবার!তৃধা আদাভান কে বিশ্বাস করে,অনেক বলতে অনেক বিশ্বাস করে,দেখার ভুল হতে পারে তার,মন কে বুঝ দিতে ব্যস্ত হলো সে,ঠিক তখনই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটলো মেয়েটা আদাভানের বাহু জড়িয়ে ধরলো ঘুমের ঘোরে,তৃধার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিলো,ভুল ঠিক চিন্তা করার শক্তি লোপ পেলো,মাথা ঘুরে উঠলো তার,বুকের ভিতরটা অসহ্য ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো, এ কেমন মর’ণ যন্ত্র’ণা!
তৃধা চোখ বন্ধ করে ফেললো মস্তিষ্ক চিৎকার করে করে জানান দিলো–,,তোকে আদাভান ঠকিয়েছে তৃধা,তুই ঠ’কে গেছিস খুব বা’জে ভাবে!

তৃধা কাঁপা হাতে দরজার হাতল ধরলো শরীল খারা’প করছে তার,দুনিয়া টা কেমন যেনো ঘুরছে,তার জীবন কি এখানেই শেষ?পরমুহূর্তেই তৃধার মস্তিষ্ক জুড়ে খেলে গেলো তার মনে থাকা পুরুষদের প্রতি ক্ষো’ভ,সেই পুরনো স্মৃতি এসে হা’না দিলো মনে,যা এতোদিনে সে ভুলতে বসেছিলো!

তৃধা বসার ঘরে এসে ব্যাগ হাতরে বের করলো আংটির বক্স টা আংটির টার দিকে তাকিয়ে ওটা হাতের মুঠোয় পিষতে চাইলো,আংটিটার কিচ্ছু হলো না,উল্টো পাথরের খোঁচায় কে’টে গেলো তৃধার নরম হাত।চামড়া ছিলে র’ক্ত বেরিয়ে আসলো,তৃধা রক্ত’মাখা আংটি টি ছুঁড়ে মার’লো ময়লার ঝুড়িতে,নিজের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যে করে বললো–,,তোর জন্য এসব নয়,তুই তৃধা কেনো যে মিথ্যা স্বপ্ন বুনছিলি,দেখলি তো কি হলো তোর সাথে!

তৃধা লাগেজ টা হাতের ভাজে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো বাসা থেকে গন্তব্য অজানা,মন মস্তিষ্ক বি”ক্ষিপ্ত! চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে, এলোমেলো হয়ে গেলো মুহুর্তেই মেয়েটা।তৃধা মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে এবার হু হু শব্দ করে কেঁদে দিলো,নিজেকে শক্ত রাখতে পারছে না আর,কেমন দ’ম বন্ধ দ’ম বন্ধ লাগছে তার,সব খারা’প কেনো তার সাথেই হতে হয়?যদি এসবই হওয়ার ছিলো তাহলে কেনো এতো নাটকীয়তা? আদাভান নিজ থেকে এসেছিলো ওর জীবনে নিজ থেকে সব কিছু করেছে সে,তৃধা চিৎকার করে বলে উঠলো–,,কেনো আদাভান কেনো?আমাকে দুর্বল করে দিলেন কেনো আপনি?কি ক্ষ’তি করেছি আমি আপনার!

হাঁটু মুড়ে বসে পড়লো রাস্তায়,চারদিকে কেমন শুনশান নীরবতা, তৃধা হাতের উল্টো পাশে চোখ মুছে হাঁটা ধরলো কাঙ্ক্ষিত জায়গায়,সেই একটা জায়গাই আছে যেখানে কোনো মিথ্যা নেই,যারাই আসে সবাই এক! দুঃখ ভুলাতে আসে,তার মতো ভগ্ন হৃদয়ের মানুষের আনাগোনা সেখানে,স্বার্থপ’র দুনিয়া ওই জায়টাকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষ’না করে দিলো?কিন্তু কেনো?দুনিয়া কি জানে না হৃদয়ের পী’ড়ন কতোটা ব্যাথা দেয়, সবারই তো দুঃখ ভুলানোর অধিকার আছে তবে কেনো নিষি’দ্ধ করা হলো?সবাই তো দুঃখ দিতে চায় দুঃখ ভুলাতে কেনো চায় না!এ কেমন অসামঞ্জস্যতা,অবিচা’র?
———–
রাতের শহরের কোলাহল থামতে শুরু করেছে, বড়”লোকের বি”গড়ে যাওয়া সন্তানদের দেখা মিললো তখন সনামধন্য ম”দের আড্ডায়!
সেই আড্ডায় এসে হাজির হলো এলোকেশী তৃধা।ওয়েটার কে এক প্রকার হুং”কার ছেড়ে ডেকে বললো–,,হুই”স্কি প্লিজ!

শুভ্র রঙা কুর্তি,জিন্স, গলায় ঝুলানো একটা ওড়না,ওড়নাটার এক পাশ ঝুলে মেঝেতে লুটোপুটি খাচ্ছে।মেয়েটার উজ্জ্বল শ্যামলা মুখশ্রী লালচে হয়ে আছে।চোখ দুটি হালকা লালচে দেখাচ্ছে,বি”ধ্বংসী রূপ নাকি হৃদয় ভাঙ্গার তীব্র যন্ত্র”ণা? ঠাওর করা যে বড্ড কঠিন!

মেয়েটার পাশ ঘেঁষে এসে একজন তাচ্ছিল্য করে বললো–,,পুঁচকে মেয়ে ক’ড়া ডো’জ সামলাতে পারবে তো?

মেয়েটা গগন কাঁপিয়ে হেসে উঠলো যেনো,পাশে থাকা ব্যক্তির দিক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো–,,সন্দেহ থাকা ভালো তবে কাউকে শুরুতেই দু্র্বল মনে করাটা বোকামি!

সাদা শার্টের উপর কালো স্যুট পরিহিত যুবকটি এসে বললো–,,ম্যাম আপনার…!

–,,পুরো বোতল নিয়ে আসুন!

ওয়েটার ইতস্তত করে বললো–,, অনেক কস্টলি আপনি এফোর্ড করতে পারবেন না।

একটা ছেলে এসে বললো–,,ইয়াং লেডির জন্য ট্রিট না হয় আমিই দিলাম,ইউ নো টাকা আমার কাছে কোনো বিষয়ই না!

তৃধা গ”র্জে উঠে বললো–,,তৃধা তালুকদার কে টাকার গরম দেখাতে আসবেন না মিস্টার!এই রকম একশোটা বা’র কেনার মতো টাকা মাত্ররো আমার একটা কার্ডেই আছে!

চেচাঁমেচি তে বা’রের ম্যানেজার এসে হাজির হলো,তৃধা কে দেখেই মাথা নিচু করে বললো–,,ম্যাম আপনি?প্লিজ স্যার কে কিছু বলবেন না।ওয়েটার কে ধম’কে বললো ম্যাম কে এক্ষুনি যা চায় তাই দিয়ে দাও!

তৃধা আয়েশ করে চেয়ারে বসলো,তার ঠোঁট জুড়ে তাচ্ছিল্যের হাসি,পুরুষ মানুষ নাকি ভালোবাসা? কোন জিনিস টা আসলে নিকৃ”ষ্ট বুঝতে কেনো এতো সময় লাগছে!

তৃধা নিজের গালে কয়েকবার চ”ড় মার”লো,কি করে পারলো সে?এতো এতো বাস্তবতা জেনেও,একজন পুরুষের প্রেমে পড়তে,তাকে সবটুকু দিয়ো আহা”ম্মকের মতো ভালোবাসতে?যেখানে সে আগেই দেখেছে যে সবটুকু দিয়ে ভালোবাসে তার কপালে থাকে শুধু তু’চ্ছ, তাচ্ছি’ল্য, অবহেলা নয়তো ধোঁকা!

পর পর এক এক গ্লাস শেষ করেও ক্ষা’ন্ত হচ্ছে না তৃধা, নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে উঠলো,এখন তাকে দেখলে যে কেউ ব’দ্ধ উ’ন্মাদ বলবে।

তৃধা হাসতে হাসতেই এক সময় কেঁদে উঠলো বির বির করে বলে উঠলো–,,আমাকে কেনো ভালোবাসলেন না প্রফেসর!
তৃধা সত্যি বলছে সে আপনাকে ভীষণ রকম করে ভালোবেসেছে!
বিশ্বাস করুন আপনাকে অন্যের বক্ষপি”ঞ্জরায় দেখে তার হৃদয় টা ক্ষ’ত-বিক্ষ”ত হয়ে গেছে!আপনি তৃধার সব দুঃখের ভার নিতে নিতে কেনো এতো বড় নি”দারুণ যন্ত্র”ণা উপহার দিলেন?
আপনি চিনেন না তৃধা কে?মেয়েটা যে বড্ড বেশি উন্মা’দ,তার উষ্ণতা দেখেছেন,অল্প স্বল্প যত্ন দেখেছেন।আপনি কি তার জে’লাসির মাত্রা কখনো পরিমাপ করেছেন?তৃধা ভালোবাসতে জানে ঠিক তেমনই যে মানুষ টা অন্য কারো এক ফোঁটা ও হবে, শুধু বিন্দু পরিমান অন্য কারো দিকে হাত বাড়াবে, তাকে আর তৃধার চাই না!
তৃধার চাই না আপনাকে প্রফেসর।তৃধার মন আজ থেকে আপনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো তৃধা আপনাকে গোপনে সন্তর্পণে প্রত্যাখ্যান করলো!

ফোনের তীব্র আওয়াজে ঘুম ছুটে গেলো আদাভানের।নিজের পাশে ঘেঁষে সোনালী কে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে বিরক্তিতে মুখ দিয়ে চ শব্দটি বেরিয়ে আসলো,সোনালীর সাথে পাশেই ঘুমিয়ে আছে পিহু।
আদাভান রেগে দ্রুত উঠে গেলো,মেয়েটার কতোবড় সাহস তার ঘরে তার পাশে এসে ঘুমানোর মতো দুঃসাহস কি করে দেখালো!

হুট করেই সে সময়ের দিক তাকালো,তৃধার কথা মনে পড়তেই রাজ্যের চিন্তা এসে ভর করলো মাথায়।সে যে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতেই পারেনি।

দ্বিতীয় বারের মতো মোবাইলটা বেজে উঠতেই আদাভান রিসিভ করলো আন’নোন নাম্বার থেকে রাত দুটোর সময় কে কল করলো?
আদাভানের ভাবনার মাঝেই অপর প্রান্তের ব্যক্তি বলে উঠলো–,,আদাভান এরিশ বলছেন? সম্মানিত শিক্ষক মানুষ আপনি,আপনার ঘরের ব্যক্তিগত সম্মান এখন ম”দের ঠে’কে নিজের ইজ্জ’ত নিলাম করতে বসেছে!আপনার তো দেখছি কোনো খবরই নেই।

আদাভান গ’র্জে উঠে বললো–,,মাইন্ড ইউর ওয়ার্ড’স!

ফোনের অপর পাশের ব্যক্তি হেসে বললো–,,বিশ্বাস না হলে নিজে এসে দেখুন লোকেশন পাঠিয়ে দিচ্ছি!

আদাভান এলোমেলো শার্টের বোতাম লাগিয়ে ছুটলো গন্তব্যের উদ্দেশ্য।

তৃধা এখন নেশা’য় চূড় হয়ে বসে আছে,ঝাপসা লাগছে চারপাশ,হেলেদুলে বেরিয়ে যেতে নিলেই কেউ একজন এসে তৃধার ওড়না কে’ড়ে নিলো,তৃধা আঙুল উঁচিয়ে শাসিয়ে বললো–,, ডোন্ট টাচ মি ইডি’য়েট!

ছেলেটা তৃধা কে নানান ভাবে ছুঁয়ে দিতে চাইলো,মেয়েটা নিজেকে বাঁচাতে এদিক ওদিক হাটঁলো।এর মধ্যে কেউ এসে ছেলেটার হাত মুচড়ে ধরে বললো-,,না এর মানে নাই হয়।ও না করছে তার পর ও কেনো বিরক্ত করছিস?আশেপাশে কি মেয়ের অভাব পড়েছে!

তৃধা মানুষটার কড়া পারফিউমের গ্রান টা চিনতে ভুল করলো না,হেলেদুলে তার পেছনে গিয়ে দাড়িয়ে পড়লো।হাতের দিকে শার্ট খামচে ধরে চুপ করে পিঠের সাথে সেঁটে রইলো!

ছেলেটা উল্টো বিরক্ত হয়ে বললো–,,তোর যা আছে আমারও তো তাই আছে,তোর কাছে যদি যেতে পারে আমার কাছে আসতে কি সমস্যা? ছেলে হলেই তো হয়!

আদাভানের রাগে গা হাত পা কাঁপছে মেয়েটা নিজেকে কোথায় নামিয়েছে!খারা”প সব কিছুই তো ছেড়ে দিয়েছিলো তবে কেনো আবার আসার প্রয়োজন হলো ওর দিনেও তো কতোটা হাসিখুশি ছিলো আর এখন!
আদাভানের পেছন থেকে তৃধা কে টেনে নিতে চাইলো ছেলেটা,আদাভান রাগ আর সামলাতে পারলো না,লাগিয়ে দিলো কয়েকটা!

ছেলেটা তেড়ে এসে বললো–,,তুই মেয়েটার হয়ে এসব কেনো করছিস,ওকে আমার হাতে তুলে দে না হয় প্রা’ণে বেঁচে ফিরতে পারবি না!

আদাভান রাগে হিসহিসিয়ে ছেলেটার কলার চেপে ধরে বললো–,,সী ইজ মাই ওয়াইফ বাস্টা”র্ড!আর একবার ও যদি ওর দিকে চোখ তুলে তাকানোর মতো ভুল করিস, ওই চোখ তু”লে নিবো আমি তোর।

এর মধ্যেই তৃধা নে”শা তুর কন্ঠে ডেকে উঠলো–,,প্রফেসর!আই জাস্ট হেইট ইউ।

আদাভানের হাত থমকে গেলো,ম্যানেজার এসে ওই ছেলেটিকে সরিয়ে নিয়ে গেলো সোর”গোল দেখে বাকি ছেলে মেয়েরাও সেখান থেকে সরে পড়লো।

বা”রের ম্যানেজার বা”রের মালিক আজাদ তালুকদার কে ফোন করলো তিনি কিছু একটা বলতেই ওই ছেলেটা কে সাথে করে নিয়ে চলে গেলো দুজন লোক।

আদাভান তাকিয়ে আছে এলোমেলো তৃধার দিকে, মেয়েটা বার বার পড়ে যাচ্ছে কিন্তু আদাভান ধরতে আসলেই দূরে সরে গিয়ে বলছে –,,ডোন্ট টা’চ মি। আপনার ওই হাতে আমাকে স্পর্শ করবেন না!

আদাভান তৃধার দু গাল আলতো চেপে ধরে আদুরে কন্ঠে ডেকে উঠলো–,,প্রজাপতি!

তৃধার পূর্ণ দৃষ্টি আদাভানের দিকে,তৃধা টালমা”টাল চোখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললো–,,ভেবেই কষ্টে ভেতরটা আমার ফে’টে যাচ্ছে আদাভান।ওই চোখ জোড়ায় তাকিয়ে থাকার অধিকার আজ আমি হারিয়ে ফেলেছি!

আদাভান তৃধা কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,কি হয়েছে তৃধা?এমন পা’গলামো কেনো করছো?বাসায় না গিয়ে এখানে কেনো এসেছো?

তৃধা নিজের শরীলের ভার ছেড়ে দিলো তখনই, আদাভানের হৃদপি”ন্ডের উঠানামা বাড়লো, নিজের বুকের উপর থেকে তৃধার মাথা তুলে দেখলো তৃধা জ্ঞান হারিয়েছে,তৃধাতে দ্রুত কোলে তুলে নিলো সে,গাড়িতে নিজের পাশে সিটে বসিয়ে দিলো।

কি থেকে কি হয়ে গেলো?আদাভান স্টিয়ারিং এর উপর কপাল ঠেকিয়ে বললো–,,তোমার কষ্ট,ব্যাথিত নয়ন আমাকে যে পুড়ি”য়ে ছাড় খাঁড় করে দেয় মেয়ে,কেনো বিনা আগু’নে বার বার পুড়া’তে চাও আমাকে!
তোমার ভালোবাসার উত্তাপ সইতে সইতে বে’হাল দশা আমার, অবহেলা কি করে সইবো!

শেষ রাতে বাসায় ফিরলো আদাভান,তৃধাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো মেয়েটার গায়ের পোশাক থেকে ম’দের উট”কো গন্ধ টা বড্ড পীড়া দিচ্ছে,আদাভান নিরুপায় আজ,এই অনুচিত কাজ টা তাকে করতেই হবে।
নিজেদের ঘর থেকে নিজের একটা শার্ট নিয়ে হাজির হলো, মেয়েলি পোশাকে বেশ ঝা’মেলা!

আদাভান তপ্ত শ্বাস ছেড়ে রুমের লাইট অফ করে দিলো বাথরুমে গিয়ে মগ ভর্তি পানি নিয়ে আসলো,অন্ধকার আবছা আলো,তৃধা তার বিবাহিত স্ত্রী তবুও অনুমতি বিহীন কিছু করতে চায় না ও,নিজের চোখ ওড়না দিয়ে বেঁধে ফেললো শক্ত করে,তৃধার কানে কানে বলে উঠলো–,,স্যরি!

জামা টা পরিবর্তন করে নিজের শার্ট টা সুন্দর করে পরিয়ে দিলো চোখের বাঁধন খুলে, মুখ হাত পা সুন্দর করে মুছিয়ে দিলো।তৃধার চোখে পানির ঝাপটা দিলো, জ্ঞান ফিরে এসেছে তবে ঘুমের তোপে চোখ খোলা বড্ড দায়।তৃধা জড়ানো কন্ঠে বললো–,,আদা…ভান ঘু..মোতে দিন বলছি,না হয় আপনার চুল সব ক’টা….!

আদাভান হাসলো,মুগ্ধ চোখে দেখলো তৃধা কে আদাভানের শার্ট মেয়েটার গায়ে একেবারে পাঞ্জাবি হয়ে গেছে,এতো রোগা-সোগা মানুষ হলে চলে?এই মেয়েকে এখন থেকে বেশি করে খাওয়াতে হবে,অনেক অনিয়ম করছে!

আদাভান তৃধার কপালে গভীর চুম্বন করলো। চোখ বন্ধ করে বললো–,,আমাকে ভুল বুঝো না প্লিজ,তোমার বির’হে আমি ম’রেও যেতে পারি!
—————–
শক্তপোক্ত কিছু একটা নিজের উপর অনুভব করেই তৃধার ঘুম ভাঙ্গলো,এটা তো রোজকার নিয়ম যেদিনই এই খাটা”শ লোকের সাথে সে ঘুমায় সেদিন সকালের কাহিনি এরকমই হয়,আদাভান তৃধাতে পেঁচিয়ে ধরে ঘুমায় ঘুম থেকে উঠে বলে তার কোনো দোষ নেই,নে নিতান্তই ভদ্রলোক, সব দোষ ঘুমের,হাত পায়ের!

তবে প্রতিদিনকার মতো তৃধার খুশি খুশি লাগলো না, আদাভানের ছোঁয়ায় আজ মুগ্ধ হতে পারলো না,তৃধা নড়েচড়ে উঠতেই,আদাভান ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো–,,আর একটু ঘুমাই না,এমন নড়চড় করছো কেনো?

তৃধা চুপ করে রইলো অন্যদিনের মতো ঝ”গড়া শুরু করলো না,আদাভান তড়িৎ গতিতে চোখ খুললো,তৃধা শুয়ে আছে,কিছু বলছে না প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না!

আদাভান তৃধা কে ডেকে বললো–,,ক্ষুধা লেগেছে?

তৃধার কি যেনো হলো সে আদাভান কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,আপনাকে একটা বড়সড় শা’স্তি দিতেই হবে দেখছি!আগেই বলেছিলাম বিশ্বাসঘা’তক দের আমি অপছন্দ করি।

তৃধা দ্রুত উঠে গিয়ে দাঁড়ালো, আদাভান ও উঠলো দ্রুত বলে উঠলো–,,এই মেয়ে কি করেছি আমি,কিসের শা’স্তি?
এমনিতে কি কম জ্বা’লাও?রাতে ওখানে কেনো গিয়েছিলে?

তৃধা আয়নার পাশে দাড়িয়ে বললো–,,জ্বালা”নো ছেড়ে দিলে খুশি হবেন?আজকের পর আর জ্বা’লাবো না!

আদাভান এগিয়ে এসে যেই না কিছু বলতে যাবে,তৃধা আয়নার দিকে তাকিয়ে দিলো এক চিৎকার।

তৃধা ভয়া”র্ত চোখে নিজের দিকে তাকিয়ে আছে,মনে করার চেষ্টা করলো,কাল রাতের কথা তো কিছুই মনে নেই,উল্টো পাল্টা কিছু হয়ে যায়নি তো!

আদাভানের দিকে তাকাতেই আদাভান গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,যা ভাবছো তাই,আসলে তুমি এতোটা বেপ”রোয়া হয়ে যাবে কে জানতো?আমি ও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি!

তৃধা চোখ বড় বড় করে তাকালো,এবার বাচ্চাদের মতো শব্দ করে কেঁদে উঠলো আদাভানের কলার চেপে ধরে বললো–,, কেনো এমনটা করেছেন আপনি?কেনো এমন করেছেন আমার সাথে,আমার এখন কি হবে?

তৃধা আদাভানের কলার ছেড়ে বিছানায় বসে হাত পা ছুঁড়ে কান্নাকাটি জুড়ে দিলো!

আদাভান হাসি চেপে রেখে গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,তুমি আমার বিয়ে করার বউ,সম্পূর্ণ দেনমোহর পরিশোধ করেছি,তোমাকে ছোঁয়ার সম্পূর্ণ অধিকার আমার আছে!

তৃধা চোখ পাকিয়ে বললো–,,তাই বলে অনুমতি নিবেন না আপনি?

–,,তুমি নিজেই তো সব করেছো,অনুমতি কি বাদ রেখেছিলে?

তৃধা নিজের কান চেপে ধরে বললো–,,এটা হতে পারে না!এই মুহুর্তে তো আরো আগে অসম্ভব।

তৃধার চিল্লা”চিল্লি তে সজাগ হয়ে গেলো সোনালী মেয়ে মানুষের কন্ঠস্বর শুনে কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে আসলো।দরজা ভেতর থেকে বন্ধ,কি হচ্ছে ভেতরে কি করে জানবে এখন?

তৃধা গাল ফুলিয়ে বসে আছে,আদাভান তার সামনে গালে হাত রেখে বসে পড়লো–,,হাও কিউট ইউ আর!

তৃধা থমথমে কন্ঠে বললো–,,আমি হোস্টেলে ফিরে যাচ্ছি আজই, কেনো যাবো,এখানে কি সমস্যা এই প্রশ্ন করবেন না আপনি আমাকে,উত্তর দিতে বাধ্য নই আমি!

আদাভান থমকালো,তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে নিজের দু হাত বাড়িয়ে দিলো তৃধার দিকে,তৃধা আদাভানের গলা জড়িয়ে ধরে বললো–,,আজকের দিন টা আমার নামে উৎসর্গ করে দিন প্রফেসর!তার পর সারাজীবনের জন্য মুক্তি দিয়ে চলে যাবো,কথা দিচ্ছি বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো না।

আদাভানের হৃদ”পিণ্ড কেঁপে উঠলো–,,মুক্তি!কেনো কঠিন কঠিন কথাগুলো এতো সহজে বলে ফেলে এই নির্দ”য় মেয়েটা?

তৃধা আবার বললো—,,শুধুই আমার, মনে যেনো থাকে,আশেপাশে তাকানো নিষেধ সম্পূর্ণ মনোযোগ শুধু আমার দিকে থাকবে আপনার।বুঝেছেন?

আদাভানের বুঝতে বাকি রইলো না কিছুই,তবুও সে নিরব রইলো তৃধাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো–,,লুকানো উচিত হয়নি আমার,আসলে এতোটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলোই না বিষয়টা,কিন্তু কে জানতো এতটুকু অতীত আমার জীবনে সুচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হবে!

তৃধা নড়াচড়া করলো না,এই জিনিস টাকে এই লোক সামান্য মনে করছে?তৃধার হৃদয়ে যে রক্ত’ক্ষরন হচ্ছে, কষ্টে যে তার কলি”জা ফে’টে যাচ্ছে,নিজেকে তার পা’গল পা’গল লাগছে,আর উনি কিনা বলছে সামান্য?

তৃধাকে কোলে তুলে নিলো আদাভান দরজা খুলে রান্না ঘরের দিক ঢুকলো,কেবিনেটের উপর তৃধাকে বসিয়ে দিয়ে বললো—,,পছন্দের টোস্ট খাবে নাকি মেডাম?

তৃধা অন্য দিকে তাকিয়ে বললো–,, শা’লা তোর কলি’জা ভু’না করে খােবো!

আদাভান হাসলো,তৃধা দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,এই হাসি যদি চিরতরে বন্ধ না করি তো আমার নাম ও তৃধা না।

সোনালী দরজায় দাড়িয়ে বলে উঠলো—,, এই মেয়ে তুমি ওর হাসি বন্ধ করার কে?

তৃধা তাকিয়েও দেখলো না, যেনো কেউ নেই আশেপাশে, আদাভান একবার তৃধার দিকে আড়চোখে তাকালো,তৃধার চোখ বলে দিচ্ছে যদি কথার হের ফের হয় তো…

আদাভান ও কিছু বললো না খাবার তৈরি করে নিজ হাতে তৃধার মুখে ধরলো,তৃধা চুপচাপ খেয়ে নিলো,এখনো তৃধার গায়ে আদাভানের শার্ট জড়ানো,তৃধা কে আবার কোলে তুলে বসার ঘরে এনে বসালো আদাভান,সোনালী ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখলো না এখনো পিহু ঘুমাচ্ছে,এই বাচ্চাটা না তাকে আবার ফাঁসি”য়ে দেয়।

তৃধা নিজের পা আদাভানের কোলে তুলে দিয়ে বললো–,,টি’পে দিন তো,গা হাত পা কেমন যেনো মেজমেজ করছে!

আদাভান সংকোচ বিহীন ভাবে তাই করলো,সোনালী হা হয়ে তাকিয়ে, আদাভান কে এই বাচ্চা মেয়েটা অর্ডার করছে?আর সে কিনা বিনাবাক্য সব শুনছে কে এই মেয়ে?
রাতে তো ছিলো না কোথা থেকে আসলো।

তৃধা আদাভানের পেটে মুখ গুঁজে কোলে শুয়ে পড়লো, দুহাতে কোমর জড়িয়ে ধরে বললো–,,আমাকে একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরুন প্লিজ, আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আদাভান।আমি আর সহ্য করতে পারছি না,মনে হচ্ছে এই বুঝি ম’রে যাবো!

আদাভান জোড়ে এক ধমক দিয়ে বললো—,,আদর দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলে ফেলেছি তো,যা মুখে আসে বলছে কখন থেকে,বেয়া’দব মেয়ে কোন সাহসে এগুলো বলো তুমি?

তৃধা সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা ধমক’ দিয়ে বললো–,,চোরে’র মায়ের আবার বড় গলা।আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিবেন না প্রফেসর,আমার জিনিস আমার না হলে তাকে কেটে-কুটে নদীতে ভাসিয়ে দিতে ও দুবার ভাববো না আমি!

সোনালী এবার তৃধার কাছে এসে তাকে আদাভানের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো–,,এই মেয়ে কে তুমি?বয়স কম তাও কিনা এসব করে বেড়াও?একটা ছেলের সাথে এসে একই ঘরে রাত কাটা”চ্ছো লজ্জা করে না,আবার আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে বেহায়া”পনা করছো!ন”ষ্টা মেয়ে মানুষ কোথাকার?

তৃধার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেলো ঘৃ”ণায়, শেষ মেষ কিনা এসব শোনা লাগলো ওর?

আদাভান হুং”কার ছেড়ে বললো–,,তোর ওই নোং”রা জবা”ন দিয়ে যদি আমার স্ত্রীর নামে একটাএ আজে”বাজে কথা বলিস তো জি’ব কে’টে নিয়ে কু”ত্তা কে খাইয়ে দিবো।আশা করি তুই আমাকে ভালো করেই চিনিস!আমার পবিত্র ফুলকে শব্দের মাধ্যমেও কল”ঙ্কিত করা বরদাস্ত করবো না আমি,নিজের সীমা পার করবি না!

চলবে…..

#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব১৭
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
তৃধা রেগেমেগে বের হয় বাসা থেকে,আদাভান তার পিছু নিয়েছে,এক প্রকার দৌড়ে এসে আদাভান তৃধার হাত চেপে ধরে বললো–,,কি হয়েছে,এমন করছো কেনো?কথা টা তো শুনবে নাকি?

তৃধা বুকে দু হাত গুঁজে অন্য দিক মুখ করে তাকালো, আদাভান তৃধার দু বাহু ধরে তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো–,,আমার সাথে কথা বলবে না তুমি?

তৃধা দু হাতে আদাভান কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললো–,,অসহ্য লোক একটা,মন তো চায় কাঁচা খে’য়ে ফেলি।ওই মেয়েটা বাসায় থাকতে চাইবে আর আপনি তাকে থাকতে দিবেন?আশ্চর্য কেমন গায়ে পড়া স্বভাবের আমি কিন্তু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না বলে দিলাম!

আদাভান অনুনয় করে বললো–,,ওর তো প্রমান চাই দিয়ে দিলেই তো চলে যাবে,একটা দিনেরই তো ব্যপার।

তৃধা রেগে বললো–,,প্রমান কেনো দেওয়া লাগবে?আপনার মুখ নেই, কিছু বলতে পারলেন না?আর আমাকে ছুঁয়েছেন কেনো আপনি,আগে গিয়ে দশ বার পবিত্র পানি দিয়ে গোসল করে আসুন তার পর আমার কাছে আসবেন।গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ঘুমানো না খু’ন করে ফেলবো আমি আপনাকে!

আদাভান তৃধার গালে হাত রেখে বললো–,,আমি কি করে জানবো ও আমার সাথে এসে ঘুমাবে?আমি তো তোমার অপেক্ষায় বসে ছিলাম,ঘুমিয়ে পড়বো বুঝতেই পারিনি।

তৃধার রাগে নাকের ডগা কেঁপে উঠলো তে’জি কন্ঠে বললো–,,ঘুমের ঠিক নাই দেইখাই তো ওই মেয়ে এসে একটা বাচ্চার বাপ বানাইয়া দিতে পারে আপনাকে।আপনাকে আমার এখন শুধু অস’হ্য লাগছে সরুন সামনে থেকে!

তৃধা হনহনিয়ে ভার্সিটির গেইটের ভেতর ঢুকে পড়লো,নাদিম দৌড়ে আসলো আদাভানের কাছে, রসিকতা করে জিজ্ঞেস করলো–,,কি ব্যাপার ভাইয়া দিন কাল কেমন কা’টছে?

আদাভান মাথায় হাত দিয়ে গাড়ির উপর ঠেস দিয়ে বসে পড়লো, দুঃখ করে বললো–,,আর বলিস না ভাই,জীবন টা ছাড় খাঁড় করে দিচ্ছে এই মহিলারা!

নাদিম ভ্রু কুঁচকে বললো–,,তৃধা আপনাকে প্রোপোজ করেনি?

আদাভান যেনো আকাশ থেকে পড়লো,তৃধা তাকে প্রোপোজ করতে চেয়েছিলো?চিন্তায় কপালে ভাজ পড়লো তার,না জানি মেয়েটা কতো কষ্ট পেয়েছে রাতে!

আদাভান হতাশ কন্ঠে নাদিম কে সব খুলে বললো।
নাদিম চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো–,,আপনাকে এখনো তৃধা কিছু করেনি?

আদাভান চোখ ছোট ছোট করে বললো–,,কি করার কথা বলছো?

নাদিম ফোন বের করে হাতে নিয়ে বললো–,,বিপ’দ থেকে এখন শুধু আদিব ভাইয়াই বাঁচাতে পারে,ভাইয়ার এক্সপেরিয়েন্স ভালো।

আদাভান বলে উঠলো–,,আদিব ও কি ছেঁ”কা টে’কা খেয়েছে নাকি?

নাদিম মাথা নেড়ে বললো–,, তার থেকেও বড় বিষয়, অনেকটা আপনার মতো,বয়সে ছোট মানুষের প্রেমে পড়লে যা হয় আর কি।

আদিব কে কল করতেই, আদিব রেগেমেগে বললো–,,কেনো কল করেছিস?স্নিগ্ধা টাকে একবার হাতের কাছে পাই চ’ড়িয়ে যদি সোজা না করেছি তো দেখিস।

নাদিম শুকনো ঢোক গিললো, দুইদিকে দুই’টা বো’মা, ব্লা”স্ট হলে আর দেখতে হবে না!

নাদিম শান্ত ভাবে জিজ্ঞেস করলো–,,তুমি কোথায়?

আদিব রেগে বললো–,,তা জেনে তুই কি করবি?তৃধা বাসায় ফিরেছে?

নাদিম কিছু একটা ভেবে বললো–,,না মানে ও ভাইয়ার সাথে রাগ করে কোথায় যেনো চলে গেছে,আমরা ওকেই খুঁজতে যাচ্ছি!

আদিব জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,এই পাগ”ল মেয়ে মানুষ নিয়ে আর পারা যায় না।সব দাদুর মতো হয়েছে,তাঁর দুই একটা ছিঁ’ড়া মাথার,এক গা’ধী বাসায় বসে আমার মাথা খা”চ্ছে আরেকটা এখানে!

আদাভান পকেটে দু হাত গুঁজে বসে আছে, কি করবে এখন,না কথা শুনছে বউ আর না ভালো বর্তমানের ওর কপাল।লসে চলছে জীবন পুরোটাই!
————-
নিশি,নোভা,আভা সব কথা শুনে হা হয়ে বসে আছে,তৃধা চোখ বন্ধ করে বসে আছে।

নোভা শুকনো ঢোক গিলে বললো–,,এখন কি করবি?

তৃধা দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,ওই মহিলারে তেলাপোকার সাথে মিশিয়ে ব্লে’ন্ড করে জ্যুস বানিয়ে ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্টে ড্রিং”স হিসেবে সার্ভ করবো!

নিশি আমতা আমতা করে বললো–,,চেত’ছিস কেনো ভাই!

আভা বলে উঠলো–,,চেত’বো না তো কি করবো?সতি’ন পালবে বাসায় বসে!

তৃধা চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,, কিসের সতি’ন,আমার জামাই শুধু আমাকে বিয়ে করেছে,ওই ভ’ন্ডা মহিলার নাম ও নিবি না আমার সামনে,দেখলেই মন চায় স্যু’ট করে দেই!

নোভা বাতাস করে বললো–,,দোস্ত রেগে গেলি তো হেরে গেলি,ও চাইছেই এটা তুই রাগ করে উল্টো পাল্টা কিছু করবি, আর ও আরো বেশি পেয়ে বসবে!

তৃধা নোভা কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো, নিশির খারা”প লাগা শুরু হলো,কালকেও ওরা কতোটা হাসিখুশি ছিলো আর আজ?

আভা তৃধার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো–,,বোকার মতো কাঁদছিস কেনো?ভাইয়ার তো দোষ নেই,মানুষের অতীত থাকতেই পারে, ওই মেয়েটা ভাইয়া কে ফাঁসা”চ্ছে এই মুহুর্তে তুই ও যদি ভাইয়া কে ভুল বুঝে দূরে সরে যাস, তাহলে কিভাবে হবে বল?ভালোবাসার কথা বাদ দে, তুই আর ভাইয়া কতো ভালো বন্ধু, দুজন কে দুজন কতো ভালো করে বুঝিস, তুই চিনিস না ভাইয়াকে?বন্ধুর বিপ’দে তাকে একা করে রেখে আসা কি তোর উচিত হবে!

তৃধা চোখ মুছে বললো–,,আমি সহ্য করতে পারি না তো,ওই বাচ্চাটাকে দেখলে না চাইতেও আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেনো করে উঠে,যদি সত্যি সত্যি ওটা আদাভানের বাচ্চা হয় তখন আমি কি করবো?

নিশি বলে উঠলো–,,ওই বাচ্চাটাকে ভাড়া করে আনেনি তো আবার?

তৃধা ধম’কের সুরে বললো–,,কি বলছিস এসব ওটুকু বাচ্চা কি অভিনয় করতে পারবে?এই মেয়ের কি মত’লব আছে তা আগে জানতে হবে,এতোদিন পর তো এমনি এমনি আসেনি!

নোভা বললো–,,কি করবি এখন?

তৃধা নাম মুখ কুঁচকে বললো–,,প্ল্যান মোতাবেক কাজ করবো,কিন্তু আদাভানের বাচ্চা কে ইগ”নোর করবো আমি,একটা শা”স্তি তো পেতেই হবে উনাকে,ব”দ লোক প্রেমিকা ছিলো কথাটা লুকিয়ে রাখলো আমার থেকে।এতো সহজে উনার কাছে ধরা দিবো না আমি,আমাকে কষ্ট দেওয়ার ফল টে’র পাইয়ে ছাড়বো একেবারে ।

আভা চোখ ছোট ছোট করে বললো–,,ভাইয়া কে কষ্ট দিয়ে এসে আবার ম”রা কান্না শুরু করে দিবি জানা আছে আমার!

তৃধা আভার পিঠে ধা”মধুম লাগালো কতোক্ষন, শ”ত্রু এক একটা!
———————-
তৃধা বাসায় ফিরে আসে কিছুক্ষণ পরই,ক্লাস করবে না ছাই,পড়া কি মাথায় ঢুকবে আদেও?

তৃধা বাসায় ঢুকতেই পিহু এসে দাঁড়ালো ওর সামনে,তৃধা একবার তাকালো সরু চোখে,বাচ্চাটা এদিক ওদিক তাকিয়ে পেটে হাত দিয়ে বললো–,,আমাল খু”তা লেগেছে,খা..বো!

তৃধা টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস উঠিয়ে খেতে খেতে বললো–,,তোমার মা কোথায়?খেতে দেয়নি?

বাচ্চা মেয়েটি চোখে মুখে অসম্ভব মায়া,তৃধা শত চেষ্টা করেও শক্ত ভাষায় কথা বলতে পারছে না।

পিহু ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে, তৃধা জিজ্ঞেস করলো–,, কি খাবে?

মেয়েটা জামা চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে,তৃধা থমথমে কন্ঠে বললো–,,আসো আমার সাথে।

তৃধা ফ্রিজ থেকে পাস্তার বাটি বের করে গরম করতে দিলো,মেয়েটার দিকে একটু পর পর আঁড়চোখে তাকাচ্ছে।

তৃধা বাটিতে তুলে খাবার নিজের জন্য নিলো সাথে পিহু কেও দিলো।

পিহু কাঁপা হাতে বাটিটা ধরে বললো–,, তুমি ভালো!

তৃধা পিছু ফিরে তাকালো, জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো–,,আমি ভালো?

পিহু হাত দিয়ে মুখে খাবার দিতে দিতে বললো–,,হুম অলেক!

তৃধার হাসি পেয়ে গেলো,সাথে সাথে মন খারা”প ও হলো,ও নিশ্চিত এটা আদাভানের বাচ্চা নয়,তাহলে কে এই মেয়ে?কোন নির্দ”য় বাবা মা একা নিজের সন্তান কে এভাবে ছেড়ে দিলো!

তৃধা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বললো–,,দুপুরে কি খাবে?

পিহু বলে উঠলো- -,দু দুপুলে ও দিবে!

তৃধা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,জিদানের কথা মনে পড়লো তার,প্রায় জিদানের সমবয়সী এই মেয়েটা।
তৃধা কৌতুহল ধমা’তে না পেরে জিজ্ঞেস করলো–,,কেনো দুপুরে খাও না তুমি?

পিহু দু দিকে মাথা নাড়লো,আর কিছু বলতে যাবে এরই মধ্যে সোনালী এসে হাজির হলো।

পিহু সোনালী কে দেখতেই তার হাত থেকে খাবারের বাটি টা ছিটকে পড়ে গেলো,ভয়ে থরথর করে কাঁপছে বাচ্চাটা,তৃধা বেশ লক্ষ্য করলো বিষয়টা।সোনালী পিহু কে টেনে নিয়ে বললো–,,ওই মহিলার দেওয়া খাবার খেয়েছিস কেনো তুই?যদি বি’ষ মিশিয়ে দেয়!

তৃধার রাগ আর কে দেখে,সে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো–,,ছোট’লোকের মনোভাব ও ছোট”লোকি!একটা সামান্য বাচ্চা কে কখনো নিজের শ”ত্রু ভাবে না তৃধা।

তৃধা সেখান থেকে চলে গেলো,সোনালী পিহুর দিকে রাগী চোখে তাকালো হাত চেপে ধরে বললো–,,খেতে চাস আমাকে বলতে পারলি না?জীবনে খাবার খাস নাই তুই?

পিহু চুপসে গেলো,তৃধা রুমে যেতেই মৃধার কল আসলো।

রিসিভ করতেই জিদানের ছবি ভেসে উঠলো স্ক্রিনে,জিদান হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে,তৃধা আদুরে কন্ঠে ডাকলো–,,বাবাটা কি করছে?

জিদান গাল ফুলিয়ে বললো–,,তুমি প’তা খা’মনি!

মৃধা পেছন থেকে বললো–,,তোর কাছে যাবে বলে বলে মাথা খারা’প করে দেয় ছেলে আমার।খালামনি বলতে অজ্ঞান, কবে আসবি বল?না হয় আমরাই চলে আসবো তোর কাছে।

তৃধা শুকনো ঢোক গিলে বললো–,,আলিজা আপুর বিয়েতে আসবো।

জিদান বলে উঠলো–,,মি’ত ইউ খা’মনি!

তৃধা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিয়ে বললো–,,খালামনি ও তোমাকে এত্তোগুলা মিস করে বাবাই।

জিদান, তৃধার আড্ডা চললো বেশ কিছুক্ষণ। জিদানের সাথে কথা বলা শুরু করলে আশেপাশের কিছু আর মনে থাকে না তার দিনদুনিয়া ভুলে বক বক করে দুটোতে,যেন সমবয়সী দুই বন্ধু গল্প করতে বসেছে!

তৃধা কে হেসে হেসে কথা বলতে শুনলো সোনালী,সোনালীর রাগ বাড়লো,মেয়েটা তাকে গনায় ও ধরে না,তার স্বামীর আগে প্রেমিকা ছিলো একটা বাচ্চা ও আছে,তাও কিনা কোনো মাথা ব্যাথা নেই?আদাভান যে বিবাহিত এ কথাটাও তো গোপন করেছে তার কাছে মাহির,কিন্তু কেনো?মাহির কেনোই বা এতো সহজে তাকে এরিশের কাছে আসতে দিলো?যেখানে একটা সময় সে নিজেই এরিশের থেকে তাকে ছিনি”য়ে নিয়েছিলো,পিঠ পিছে বড়”সড় কোনো স্বরয”ন্ত্র নেই তো!

সোনালী ততদিন বিয়ে করতে পারবে না যতদিন না তার আর মাহিরের ডি”ভোর্স হচ্ছে,সোনালী যে বিবাহিত এই কথাটা এরিশ কে বলতে মানা করেছে মাহির।সোনালীর মাথায় কিছুই ঢুকছে না, সে চায় এরিশ তার হোক কারন এতোদিনে সে হারে হারে বুঝেছে কিসের জন্য কি হারিয়েছে, এরিশ তাকে কতোটা ভালোবাসতো কতোটা পাগ’ল ছিলো তার জন্য, সোনালীর কতো শতো আবদার পূরণ করেছে,সব কিছু করেছে সোনালীর জন্য, সোনালী রাত বললে দিনকেও রাত ধরে বসতো ছেলেটা,আর সে কিনা এমন একজন মানুষ কে ছেড়ে মাহিরের মতো শয়”তানটার মোহে আঁটকে গিয়েছিলো!নিজেকে ধিক্কার জানাতে ভুললো না আর।সময় থাকতে মূল্য দেয়নি এখন হারিয়ে দেউলি”য়া হয়ে গেছে সব দিক থেকেই!

তৃধা রান্না ঘরের দিক পা বাড়ালো, সোনালী পেছন থেকে এসে বললো–,,রান্না আমি করবো,যেহেতু সংসার টা কিছুদিন পর আমার হবে সেহেতু!

তৃধা হাই তুলে বললো–,,রান্না করবেন বেশ ভালো,ফ্রি ফ্রি কাজের লোক থাকলে মন্দ হয় না!
তবে আপনি যে হেঁটে চলেও স্বপ্ন দেখেন বিষয়টা কিন্তু খুবই চিন্তার,পাগ’লেরাও তো এতো ভয়া’নক স্বপ্ন জেগে জেগে দেখে না‌!

সোনালীর অপমানে চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো,সে রাগ দমি”য়ে জিজ্ঞেস করলো–,,তোমাদের বিয়ে কিভাবে হয়েছে?

তৃধা চেয়ারে আয়েশ করে বসে বললো–,,বাহিরের মানুষ কে নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কিছু বলা পছন্দ না আমার!

সোনালী আঙুল উঁচিয়ে বললো–,,এই মেয়ে,নিজের সীমার মধ্যে থাকো,আমাকে বাহিরের মানুষ বলার কে তুমি?আমি এরিশের বাচ্চার মা!

তৃধা হেসে বললো–,,ভালো, বাচ্চার মা হন বা খালা তাতে আমার বাপের কি?যান তো রান্না টা ফটাফট করে ফেলুন বড্ড খিদে পেয়েছে!

সোনালী আবার আঙুল উঁচিয়ে ধরতেই তৃধা তা মুচড়ে ধরে বললো–,,তৃধা তালুকদারের সামনে আঙুল উঁচিয়ে কথা বলার সাহস তার বাপ ও এখনো করেনি, আপনি কোথাকার কোন ম”ন্ত্রী মিনি”স্টার?

সোনালী হাতের ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো, তৃধা ধাক্কা দিয়ে সোনালী কে সরিয়ে দিয়ে বললো–,,আমি চাইছি বলেই এখনো এ বাসায় আছেন আপনি,নিজের সীমায় থাকুন নয়তো,আপনাকে আপনার আসল জায়গায় পাঠাতে দু মিনিট সময় ও লাগবে না আমার!

তৃধা রান্না ঘরে ঢুকলো রান্না করার জন্য সব আগেই রেডি করে রেখেছে এবার চুলার উপর চড়ি”য়ে দিলো বড় কড়াই তাতে রান্না হবে খিচুড়ি, বিকেলে সবাইকে আসতে বলেছে তৃধা,পরিবেশ টাও বেশ ঠান্ডা মনে হয় বৃষ্টি হবে!
তৃধা আপন মনে কাজ করতে ব্যস্ত, তবে সোনালী নামক আপ’দ টা পিছু ছাড়ার নামই নিচ্ছে না।

সোনালী এসে বলে উঠলো –,,আমি এরিশের প্রথম প্রেম প্রথম ভালোবাসা,তুই তার দ্বিতীয় চয়ে,জ প্রথমজন সব সময় স্পেশ্যাল হয়,তার কাছে নির্দ্বিধায় মানুষ ফিরে আসে,এখন তো আবার এরিশ পিহুর বাবা!

তৃধা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বললো–,,পিহুর বাবা হলে তার দায়িত্ব আদাভান নিশ্চয়ই পালন করবে, আমার স্বামী দায়িত্বের দিক দিয়ে খুবই নীতিবান, প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কে?রক্ষি”তা?

সোনালী চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,, তোর সাহস কি করে হয়,,!

তৃধা কানে দুহাত চেপে ধরে বললো–,,সাহস তো আমার পুরো শরীর জুড়েই।বিয়ের আগে পরপুরুষের সাথে ঘুমাতে পারবেন, নিজের শরীল বিলি’য়ে দিয়ে নীতিবাক্য শুনাবেন,একটা বাচ্চা নিয়ে এসে সবার ধারে ধারে হাজির হবেন, পরে কেই’স করার ভয় দেখাবেন।কোথায় এমন আইন আছে বলুন তো যেখানে স্বেচ্ছায় ধ”ষিত হয়ে বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর বাচ্চার বাবা দায়িত্ব নেয় না বলে তাকে পুলিশে দিবেন?চরি”ত্রের ঠিক নেই আপনার পড়ে আছেন প্রেম ভালোবাসা নিয়ে বলি লজ্জন শর’ম কি কিছু নাই?সব বিক্রি করে দিয়েছেন!

সোনালী রাগে কাঁপছে এতটুকু মেয়ের কথা বার্তা কতোটা ধারা”লো,সোনালী রেগে আবার বললো–,,তুই দেখে নিস আদাভান শুধু আমাকে ভালোবাসে,ছেলেরা তার প্রথম ভালোবাসার মানুষ কে কখনো ভুলে না।তোকে ছেড়ে দিবে, তোর এসব ভাব ছুটে যাবে দুদিনেই!

তৃধা শব্দ করে হাসলো।হাসি থামিয়ে এক পর্যায়ে বললো–,,মানুষের প্রথম প্রেম হওয়ার থেকে শেষ প্রেম হতে পারাটা পরম সৌভাগ্যের!
মানুষ তখনই দ্বিতীয় কারো প্রেমে পড়ে যখন তার হৃদয় তাকে জানান দেয় এই মানুষ টা তাকে ঠকাবে না!

প্রথমবার মানুষ আবেগে প্রেমে পড়ে,,

দ্বিতীয় বার হিসাব কষেও যখন গভীর প্রেমে পড়ে,তখন ওই প্রেম কে মিথ্যা বা মোহ বলার কোনো সুযোগ থাকে না।

আমি আদাভানের সেই প্রেম, আদাভানের শেষ আশ্রয়স্থল, আদাভানের শান্তি, ওনার সবচেয়ে বড় কমফোর্ট জোন।

আমরা মানুষ যেমনই হই না কেনো,নিজেদের কমফোর্ট জোন ছেড়ে কখনো বাহিরে যেতে চাই না।আমি সৌভাগ্যেবান কারন আদাভান তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দতম জিনিস গুলো আমাকে দিয়েছে।আমি যেমন তেমনই আমাকে সবচেয়ে বেশি সম্মান দিয়েছে!
একজন পুরুষের জীবনে সবার আগে প্রায়োরিটি পাওয়াটা চারটে খানে কথা নয়,আপনি যদি আদাভান কে জিজ্ঞেস করেন কে তার জীবনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নারী সে নিঃসন্দেহে আমার নাম নিবে!

সোনালী বলে উঠলো–,,আমাকে দেখে তোর রাগ হয় না?হিং’সে হয় না?আমি তো ভাগ বসাতে এসেছি!

তৃধা মুচকি হেসে বললো–,, আপনাকে দেখে আমার জে’লাস হওয়ার কোনো কারন নেই,আপনার সাথে নিজেকে কম্পেয়ার করার ও দরকার মনে করি না।
কারন আমি জানি আদাভান সম্পূর্ণটাই আমার,আমি চোখ বন্ধ করে ওনাকে বিশ্বাস করতে পারি,আমি ওনাকে ছেড়ে চলে গেলেও আপনার কোনো দিন হবে না।উনি শুধু আমার আর আমারই থাকবে!
যে পাখি কে মুক্ত করে দিলেও বার বার ফিরে আসে তাদের কে অবিশ্বাস করার মতো ভুল বোকারা করে।

আপনিও নিজেও জানেন আদাভান আপনাকে ভালোবাসে না,নিজের দুর্বলতার ভার আমার উপর চাপাতে আসবেন না,আমি মানুষ মোটেও সুবিধার না!

এরই মধ্যে বাসায় এসে হাজির হলো আদিব,নাদিম, আদাভান, আদিব তো প্রথেম সব শুনে আদাভানের উপরই রাগ দেখাচ্ছিলো,তার বোনকে কষ্ট দেওয়ার সাহস কি করে হয় আদাভানের,নাদিম কোনো মতে তাকে শান্ত করেছে,আদাভান লম্বা শ্বাস টেনে বলেছিলো–,, আল্লাহ ভাই বোন দুইটাই ডাকা”ত আমাকে বাঁচাও, কান ধরতেছি জীবনেও প্রেম করার নাম নিবো না।

নাদিম সবার পেছনে দাড়িয়ে বললো–,, আমি রি”ক্স নিতে চাই না তৃধা রেগে আমাকে মার”তেও পারে!

আদিব বলে উঠলো–,,ভ..য় কেনো পাবি আজব,ও কি কিছু…!

তখনই তৃধার গলার স্বর শোনা গেলো–,,আমার জামাই, আমি যা খুশি করবো, কা’টবো মার’বো,ঝা”ড়ু দিয়ে পেটাবো তাতে তোর কি?সম্মানের সহিত কথা বলছি তো ভালো লাগতেছে না?আমার স্বামী আমি চুমু খাবো নাকি পি’স পি”স করে ডিফ ফ্রিজে ভরে রাখবো তা সম্পূর্ণই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার,যদি আর এক বার আমাদের মাঝে কথা বলতে আসিস তো তোকে যে কি করবো আমি,অস’ভ্য মহিলা,সর আমার সামনে থেকে!

আদাভান ভয়ার্ত চোখে তাকালো কে’টে কু’টে একেবারে ডিফ ফ্রি’জে? আদিবের কানে ফিসফিসিয়ে বললো–,,ভাই কবুল বলার আগ মুহুর্তে কেনো বলিস নাই তোদের বোন জল”জ্যান্ত একটা ডাকা”ত,এই অদমের জীবন তো ছু’রির আগায় যে কোনো মুহুর্তে নাই হয়ে যেতে পারে!

তৃধার হাতে সবজি কাটা”র ছুরি,সোনালীর দিকে তাক করে রেখেছে এক পা করে আগাচ্ছে আর বলছে–,, ধৈর্য অনেক ধরেছি আর না ফাত’রা মহিলা শা’লা তোকে বললাম চুপ চাপ থাক যতদিন থাকবি না তুই শা’লী প্যান প্যান করতেই আছিস,কি সমস্যা রে কি সমস্যা তোর?তোর বাচ্চার বাপরেই তো পাত্তা দেই না তুই ভাবলি কি করে তোরে মাথায় তুলে নাচবো,একেবারে খু’নাখারা’বি হয়ে যাবে বলছি,যা বলছি, আমার সামনে যদি পড়েছিস আর কোনো দিন!

আদিব ভয়ার্ত কন্ঠে বললো–,,তৃধু কি করছিস বোন আমার ভালো মাথা ঠান্ডা কর,কেনো ছুঁচো মে’রে হাত গন্ধ করবি?

আদাভান চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,কি করছো তৃধা গলায় লেগে যাবে তো,কথাটা শোনো আমার!

সোনালী ভয়ে থরথর করে কাঁপছে, এরকম পাগ”ল মেয়ে জীবনেও দেখেনি ও,করতে চাইলো কি আর হয়ে গেলো কি।এবার প্রা”ণ টা বাঁচলেই হয়!

আদাভান এক পা দু পা করে এসে তৃধার কোমড় জড়িয়ে ধরলো এক টানে তৃধা কে সরিয়ে এনে ফেললো নিজের উপর,তৃধার হাতের ছু’রি গিয়ে লাগলো আদাভানের হাতে।

তৃধা চোখ মুখ খিঁচে পড়ে আছে,নাদিম দ’ম ফেলে বললো–,,তৃধা ইয়ার হার্ট অ্যা’টাক করিয়ে ছাড়বি নাকি?এমন কেউ করে?

আদাভানের হাতে রক্ত দেখে আদিব বলে উঠলো–,,ভাইয়ার হাত কে”টে গেছে।

তৃধা চকিত নয়নে তাকালো, আদাভানের উপর থেকে উঠে তার হাতের দিকে নজর দিলো,বেশ খানিকটা কে’টেছে তৃধা কাঁপা হাতে ধরে বললো–,,স্যরি,আমি ইচ্ছে করে দেইনি বিশ্বাস করুন,অনেক ব্যাথা করছে আপনার?খুব জোরে লেগেছে তাই না?
তৃধা এক ছুটে রুমে গিয়ে ফাস্টএইড বক্স টা নিয়ে আসলো,অগোছালো হাতে বে’ন্ডেজ করে দিয়ে তবেই থামলো,চো’ট সামান্য তৃধার ব্যস্ততা আকুলতা হয়েছে দেখার মতো,আদাভান পুরোটা সময় তৃধার দিকে অপলক তাকিয়ে ছিলো।
তৃধার চোখে জল চিকচিক করছে,আদাভান জানে কিছু বললেই এখন কেঁদে দুনিয়া ভাসিয়ে দিবে।
তাই সে নিরব রইলো,আদাভান উঠে দাড়িয়ে সোনালী কে শান্ত কন্ঠে বললো–,,তোকে আগেও বলেছি আমার স্ত্রীকে অসম্মান করার কথা চিন্তাও করবি না৷ না কোনো প্রকার বারাবাড়ি আমি সহ্য করবো,তাও যেহেতু তুই এমনটা করেছিস তোকে আর আমি বাসায় রাখতে পারবো না,তুই হোটেলে গিয়ে থাকবি রুম বুক করে দিবো তোকে আমি, যতদিন না সব কিছু প্রমান হচ্ছে ততোদিন তুই ওখানে থাকবি!

তৃধা ওড়না দু হাতে চেপে ধরে সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলো,কিছু কিছু সময় আসলেই আমাদের নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে যায়,আমরা চাইলেও তা ঠিক করতে পারি না,না পারি নিজেদের বুঝ দিতে।তৃধা জানে ওরই সব কিছু তবুও তার মন মানে না,মন চিৎকার চিৎকার করে বলে আদাভান হারিয়ে যাবে, পাওয়ার আগেই হারিয়ে ফেলার তীব্র ভয় তাকে ভেতরে ভেতরে নিঃস্ব করে দিচ্ছে।

গগন কাঁপিয়ে বজ্র পাত হলো,মেঘ ডাকলো,বৃষ্টির ধারা নামবে বলে,মেঘেরা নিজেদের শুভ্র রঙ পরিবর্তন করে ফেললো,অন্ধকার হয়ে আসতে শুরু করলো চারপাশ।

সিঁড়ি বেয়ে বাহিরে চলে এসেছে তৃধা তার পেছেন তার কাঙ্ক্ষিত পুরুষ, তৃধা জানতো আসবে,বিশ্বাস অবিশ্বাসের বাহিরেও বুঝি কিছু থাকে?

আদাভান আদুরে কন্ঠে ডাকলো–,,প্রজাপতি!

তৃধার পা থেমে গেলো,খোলা আকাশ, দখিনা বাতাস তৃধার এলোমেলো চুল উড়ে চলেছে দিক বেদিক।
আকাশের মনোমুগ্ধকর পরিবর্তন, বৃষ্টি নামার পূর্বে শীতল পরিবেশ তৃধার হৃদয় কে শীতল করে তুলছে প্রতিনিয়ত।

আদাভান কিছু কদম দূরে,তৃধা এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আদাভান চোখ বন্ধ করে গেয়ে উঠলো–,,

আকাশ এতো মেঘলা
যেও না কো একলা
এখনি নামবে অন্ধকার
ঝড়ের জল-তরঙ্গে
ভয় আছে পথ হারাবার!

গল্প করার এই তো দিন
মেঘ কালো হোক মন রঙিন
সময় দিয়ে হৃদয়টাকে বাঁধাবো নাকো আর,,

আকাশ এতো মেঘলা
যেও নাকো একলা
এখনি নামবে অন্ধকার
ঝড়ের জল-তরঙ্গে
ভয় আছে পথ হারাবার…!

আধাঁরো ছায়াতে চেয়েছি হারাতে
দুবাহু বাড়াতে তোমারি কাছে
যাক না এমন এইতো বেশ
হয় যদি হোক গল্প শেষ

পূর্ণ হৃদয় ভুলবে সেদিন সময় শূন্যতার!

আদাভান তৃধার দিকে দু বাহু প্রসারিত করে তাকিয়ে আছে,বৃষ্টি পড়ছে দুজন ভিজে চলেছে পুরো দমে,বৃষ্টির তীব্রতা অনুভূতির পরশা খুলে বসেছে।প্রেমের প্রজাপতি উড়ে উড়ে জানান দিচ্ছে এইতো সময় আঁকড়ে ধরার, ভালোবাসার, সময়রা থেমে যাক এখানেই।ভালোবাসারা বেঁচে থাকুক অটুট থাকুক তাদের বন্ধন আজীবনকাল!

তৃধা দৌড়ে এসে আদাভান কে জড়িয়ে ধরলো,বৃষ্টির শীতলতা কমাতে পারেনি ভালোবাসার উষ্ণতা।

আদাভান তৃধার গালে আলতো ছুঁয়ে বললো–,,এতো অভিমান আমার প্রতি?তোমার চোখের জল আমার হৃদয়ে কতোটা ঝ’ড় তুলে তুমি জানো না?জেনে-বুঝে কষ্ট দাও কেনো এতো?

তৃধা কেঁপে উঠলো, চোখ তুলে তাকালো আদাভানের চোখের দিকে,অভিমানে টইটম্বুর চোখজোরা,তৃধা ফুপিয়ে উঠে বললো–,,আপনি কতোটা খারা’প আপনি কি তা জানেন প্রফেসর?

আদাভান ঠোঁট এলিয়ে হাসলো,তৃধার এলোমেলো চুল গুলো গুছিয়ে দিয়ে বললো–,,কি অদ্ভুত ভালোবাসাবাসি হলো না কিচ্ছু হলো না,এর আগেই বউ আমার অভিমানে লাল হয়ে বসে আছে,এই অদম কি করে এতো অভিমানের ভার সামলাবে বলতে পারো?

তৃধা ঠোঁট উল্টে বলে উঠলো–,,সামলাতে না পারলে ছেড়ে দিন,জোর করিনি আমি!

আদাভান তৃধার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো–,,মে’রে ফেলবো একেবারে,ধরাধরি এখনো বাকি ছাড়াছাড়ির কথা বললে তুলে ধরে আছাড় দিবো পুঁচকে মেয়ে!
আদর,ভালোবাসা, যত্ন, এই পুরোটা আমাকেও দিয়ে দিবো যা বলবে তাই শুনবো,ম’রে যেতে বললে তাও করবো,ছেড়ে যাওয়ার নাম নিলে মিসেস তৃধা তালুকদার আপনাকে মুঠোয় নিয়ে পি’ষে ফেলতেও দুবার ভাববো না আমি!

তৃধা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বললো–,,শা’লা নির্দ”য়।

আদাভান তৃধার কোমর জড়িয়ে আরো কিছু টা দূরত্ব কমিয়ে নিয়ে বললো–,,এভাবে আরো কিছুক্ষণ থাকলে অঘ”টন ঘটাবো আমি,দায়ী থাকবে তুমি!

তৃধা আশেপাশে তাকিয়ে বললো–,,নির্ল’জ্জ লোক, রাস্তায় দাড়িয়ে কি শুরু করেছেন?

আদাভান হেসে বললো–,,দেখুক লোকে তাতে মন্দ কি?

তাছাড়াও বৃষ্টি মধ্যে রাস্তায় কেউ তাকাতে যাবে কেনো?

তৃধা নিজেকে ছাড়াতে চাইলে আদাভান তৃধার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালো, তৃধা মুখ দু হাতে ডেকে ফেললো নিজের।আদাভান হেসে উঠলো, তৃধার কপাল বরাবর হাতের উপর চুমু বসালো,তৃধার অবস্থা নাজে”হাল এতোটুকুতেই।

আদাভান তৃধার কান ঘেঁষে মুখ এনে বললো–,,ভালো….!

তৃধা আদাভানের বাহু চেপে ধরে বললো–,,এখন আমি কোনো কিছুই গ্রহন করবো না,আগে আমার অভিমান কমিয়ে শূন্য করে দিন,রাগ কমিয়ে শীতল বানিয়ে দিন, তার পর পুরো আপনিটাকেই সানন্দে গ্রহণ করে নিবো আমি!

আদাভান বন্ধন দৃঢ় করে বললো–,,অপেক্ষারা এতো লম্বা কেনো?আমি হৃদয় এতো অধৈর্য কেনো?তোমাকে পাওয়ার ইচ্ছেটা এতো গভীর কেনো?
এলোমেলো করে দিয়ে শর্ত বেঁধে দিলে তো?সুধে আসলে হিসাব যদি না নেই আমিও তোমার একমাত্র জামাই না!

তৃধা জোরে সোরে একটা কি’ল বসালো আদাভানের পিঠে রেগে বললো–,,অন্য বে”ডির জামাই হওয়ার স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে বদলে দেওয়ার জন্য আমিই যথেষ্ট!

আদাভান তৃধাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো–,,আমি তোমাতেই আবদ্ধ থাকতে চাই আজীবন, নতুন কাউকে আমার লা”শ ও গ্রহণ না করুক!

আদাভান তৃধাকে নিজের থেকে সরিয়ে দিলো আচমকা, চোখ মুখের রঙ পাল্টে বললো–,,তোমার অভিমান ভাঙ্গাতে ভাঙ্গাতে আমি চিঁড়েচ্যা’পটা হয়ে যাবো, আর আমার অভিমানের খবর কে রাখে?

তীব্র অভিমান আদাভানের কন্ঠে তৃধা আদাভান কে নিজ থেকে জড়িয়ে ধরে বললো–,,অভিমান টুকু বাঁচিয়ে রাখো প্রিয় এখনো একসাথে অনেকটা পথ চলা বাকি!

চলবে…….