#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব১৮
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
আদাভানের গলা জড়িয়ে তার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে তৃধা।দুজন ভিজে একাকার অবস্থা, তৃধা কে কোলে নিয়ে সাবধানে পা ফেলছে আদাভান,তৃধা তো কোলে উঠতেই চায়নি,ওর কথা হলো ফেলে দিবেন তো,নিজে ও পড়বেন আমাকেও ফেলবেন!আদাভান এক প্রকার জোর করেই কোলে তুলেছে,পড়লে দুজন একসাথে পড়বে,কেমন বউ তুমি স্বামীর জন্য একটু কোমর ভাঙ্গতে পারবে না?
তৃধা মুখ বাঁকিয়ে রেখেছে কি আশ্চর্য লোক,সব সময় ভাব নিয়ে কেনো চলতে হবে?
দরজার কাছে চলে এসেছে দুজন,আদাভান ব্যস্ত হাতে কলিংবেল চাপলো,তৃধার এবার লজ্জা লাগছে আদিব নাদিম দুজনেই ভেতরে ছি ছি কি ভাববে!
তবে তৃধা কে অবাক করে দিয়ে সেখানে সবাই উপস্থিত, নোভা,আভা,নিশি,রাদিফ,নাদিম,আদিব দরজা খুলে সামনে দাঁড়ালো, নোভা তো ভ্রু উঁচিয়ে তাকায়,বাকিরাও মিটমিটিয়ে হাসছে।
তৃধা এবার আদাভানের বুকে মুখ লুকিয়ে জোরে বলে উঠলো–,,সর সবাই,এমনে তাকাবি না আমি কিন্তু অনেক লজ্জা পাচ্ছি!
আদাভান সহ বাকিরা ও হেসে ফেললো,তৃধা আদাভানের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো–,,দ্রুত রুমে নিয়ে নামান না হয় আপনাকে আমি কা”মরে দিবো অ’সভ্য লোক,সবার সামনে এখনো দাড়িয়ে আছেন কেনো?
আদাভান সবাই কে ইশারায় চুপ করতে বললো,তৃধা কে রুমে নিয়ে নামাতেই,তৃধা তেড়ে আসলো আদাভান দিকে,
আদাভান ভ্রু কুঁচকে তৃধার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে বললো–,,এভাবে, আর কতোক্ষণ থাকবে বলে ঠিক করেছো?
তৃধা নিজের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিললো,নিজের দিক কোনো খেয়াল নেই ওর,তৃধা আঁড়চোখে আদাভান কে একবার দেখলো,বুকে হাত গুঁজে তাকিয়ে আছে,তৃধা ওড়না টেনেটুনে বলে উঠলো –,,নির্ল”জ্জ লোক,ছি!ছি! কি বা’জে মত’লব আপনার।
তৃধা এক ছুটে বাথরুমে গিয়ে দরজা আটকালো।
আদাভান এবার হো হো করে হেসে উঠলো,বউ জুটেছে একেবারে লাখে একটা!
আদাভান জানে তৃধা তাকে আবার ডাকবে,অভদ্র মহিলা জামা কাপড় না নিয়ে গোসলে গেছে,আদাভান ও সুযোগে আছে এবার একটু মজা বুঝানো যাবে!
আদাভান নিজের পোশাক আগে পরিবর্তন করলো,রুম ভিজে গেছে এমনিতেই অনেকটা, আরো একটু ভিজলে তৃধা উঠতে বসতে কথা শোনাবে আবার।মেয়েটা পারেও বটে।
—————-
আড্ডা জমে উঠেছে সবার,সোনালী, পিহু কে নিয়ে রুমে বসে আছে, এসব কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না ওর।আদাভানের সাথে তৃধাকে দেখে জ্ব’লে উঠছে ওর প্রেমিকা স্ব”ত্বা!
আদিবের মোবাইলে কল এসেছে,আদিব রিসিভ করার আগেই তা ছোঁ মে’রে নিয়ে নিয়েছে নোভা।
উপরে নিক নেইম দেখে তো ওর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো
“মিষ্টি মাথা ব্যাথা”।
কিছু মুহুর্তের ব্যবধানে নোভা জোরে জোরে হাসা শুরু করলো, নাদিম ওর হাত থেকে মোবাইল ছি’নিয়ে নিয়ে বললো–,,রিসিভ না করে পা’গলের মতো হাসছিস কেনো?
নাদিম চোখ ছোট ছোট করে বড় ভাইয়ের দিকে তাকালো,আদিবের প্রতিক্রিয়া নিরপেক্ষ সে স্বাভাবিক আছে,যেনো আহামরি কিছু না।
নাদিম রিসিভ করে লাউডস্পিকারে দিলো,নাদিম নাম্বার দেখেই বুঝে ফেলেছে এটা স্নিগ্ধার নাম্বার।
আভা ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করলো–,,কে রে?
নোভা বললো সে বুঝতে পারছে না।
নিশি বলে উঠলো–,,কে ফোন করেছে?
নিশির কন্ঠটা জোরালো ছিলো স্নিগ্ধা শুনতে পেয়েছে ভালো করেই!
স্নিগ্ধার কন্ঠস্বর শোনা গেলো এবার–,,আদিব ভাইয়া!
আদিব কঠিন কন্ঠে বললো–,,বৃষ্টিতে ভিজে এসে এতোক্ষণে কোন আক্কে”লে ফোন করেছিস?এই অসময়ের বৃষ্টিতে ভিজতে মানা করেছিলাম না তোকে?বেয়া’দব কথা শুনবি কেনো?কাজের কাজ তো কিছু করিস না,যা পারিস শুধু মুখে মুখে ত’র্ক!
স্নিগ্ধা চুপসে গেলো,আভা বলে উঠলো–,,ওয় হয়, বাহ্ কি শাসন,হলে হতেও পারে প্রণয়ের আগমন!
স্নিগ্ধা জিজ্ঞেস করলো–,,কে আছে আপনার সাথে আদিব ভাইয়া?
আদিব ধম’ক দিয়ে বললো–,,তুই জেনে কি করবি?ফোন রেখে রুমে যা,ছাঁদে চুল ছেড়ে পে”ত্নীর মতো বসে থাকতে কে বলেছে তোকে?
স্নিগ্ধা কাঁপা কন্ঠে বললো–,,আপনি বলবেন না কে আছে সাথে?
আদিব এবার চোখ পাকিয়ে সবার দিকে তাকালো,নাদিম পাশ থেকে বলে উঠলো–,,আমি আপনার প্রিয় দেবর ভাবি সাহেবা!
স্নিগ্ধা আঁত”কে উঠলো যেনো ফট করে বলে উঠলো–,,নাদিম ভাইয়া!
নোভা,আভা বলে উঠলো–,,আর আমরা আপনার হত”ভাগা ননদ ভাবিজান!
বসার ঘরে হাসির ঢল নামলো যেনো,সবাই হাসছে আর আদিব গম্ভীর হয়ে বসে আছে,আসলেই বাচ্চাদের সাথে প্রেমে পড়ার মতো ভুল কিভাবে যে করলো,কথায় কথায় অভিমান করে বসে থাকে,অভিমান ভাঙ্গাতে পারে না আদিব এটা আরো বড় সমস্যা, কি যে হবে এর ভবিষ্যৎ কে জানে!
স্নিগ্ধা দ্রুত ফোন কা’টলো, আদিব টাও কতো খারা”প সবার সামনে ফোন রিসিভ করার কি দরকার ছিলো?যত্তসব!সবার সামনে কিভাবে কথা বললো ওর সাথে,আর কোনো দিন ফোন দিবে না আগ বাড়িয়ে, ওর এতো কিসের ঠে’কা পড়ছে,এই লোক সব সময় গাঁ ছাড়া ভাবে থাকলে স্নিগ্ধাও আর আগাবে না।
অভিমানের পারদ আকাশচুম্বী, স্নিগ্ধা মোবাইল বন্ধ করে দিলো,দৌড়ে গেলো রুমের দিকে।যত যাই হয়ে যাক এবার আর ফোন দিবেও না, জানে আদিব নামক পদার্থ তাকে কল করবে না,তাও মনকে বুঝ দিলো কল আসলেও আর ধরবে না!
————–
তৃধা বাথরুম থেকে উঁকি মে’রে আদাভানের দিকে তাকালো,আদাভান দরজা খোলার শব্দ পেয়েছে তাও প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
তৃধা নরম সুরে ডাকলো–,,স্যা……র!স্যার শুনছেন?প্রফেসর সাহেব একটু সাহায্য করবেন প্লী…..জ!
আদাভান বাঁকা চোখে তাকালো, স্বা”র্থ হাসিল করতে মহিলা কতো দরদ দেখাচ্ছে,কি সম্মান!
আদাভান বলে উঠলো–,,এটা কি ভার্সিটি?স্যার ডেকে কি প্রমান করতে চাইছো আমি পর’পুরুষ?
তৃধা এবার বিরক্ত হয়ে বললো–,,শা’লা পরপুরুষ হলে আরাম করে আবার খাটে বসে থাকতেন নাকি এখনও?কোন সময় এক কি’কে বাউন্ডারির বাহিরে ফেলে দিতাম, দেখুন আমার শীত লাগতেছে কথা না বাড়িয়ে আমার কাপড় দিন।
আদাভান বলে উঠলো–,,নিজে এসে নিয়ে যাও!
তৃধা নাক মুখ কুঁচকে বললো–,,জামাই,ঈদের দিনের সেমাই!
সাথে চালের রুটি আপনার চেহারা সুরত দেখতে অনেক কিউটি!
এরপর,,,,এরপরে ধুরু ছাতা এ ভাই দেন তো দেন কবিতা এখন মনে আসতেছে না!
আদাভান অবাক চোখে তাকিয়ে আছে,কি সব আজ”গুবি কবিতা!
আদাভান তপ্ত শ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো, জামা বের করে এগিয়ে গেলো বাথরুমের দিকে,তৃধা কে বললো–,,হাত বাড়াও!
তৃধা মিন মিন করে বললো–,,আপনি উল্টো ঘুরুন তার পরে দিন!
আদাভান বিরক্ত হয়ে বললো–,,আরেকটা কথা বললে, আমি দরজা ঠেলে ভিতরে আসবো তারপরে…!
তৃধা আদাভানের হাত থেকে জামা কাপড় নিয়ে দরজা আটকে দিলো,কিছু বললো না।
আদাভান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রুমের বাহিরে চলে গেলো, সবার সাথে গিয়ে বসে পড়লো।
কিছু সময় পর আসলো তৃধা সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমেছে,তৃধা রান্না ঘরে গিয়ে প্লেট নিয়ে আসলো তার পর একে একে সব কিছু, নোভা,আভা তৃধাকে সাহায্য করছে।
নোভা বলে উঠলো–,,তৃধা ভাইয়া স্নিগ্ধার নাম্বার কি দিয়ে সেইভ করে রেখেছে জানিস?
তৃধা বলে উঠলো–,,না তো,স্নিগ্ধা ও তো আমাকে এমন কিছু বলেনি কাহিনি টা কি?
নোভা সব বললো তৃধা কে তৃধা চোখ বড় করে তাকিয়ে বললো–,,ভাইয়া সত্যি সত্যি প্রেম করছে?
আভা বলে উঠলো–,ওটা কে প্রেম বলে নাকি?তোর ভাইরে চিনিস না তুই মেয়েটাকে জাস্ট ধম’কের উপর রাখে।
তৃধা নোভা কে বললো–,,শোন আমরা কিন্তু দুদিন পর হসপিটালে যাবো তুই আগে থেকে সব ব্যবস্থা করে রাখবি,বলা তো যায় না সোনালী যদি নজর রাখে আমার উপর!
রাতের খাবার খাওয়া শেষে সবাই বিদায় নিলো,তৃধা সে তো সবাই যাওয়ার পরই হাত পা ছড়িয়ে ঘুম দিয়েছে!
ঘড়িতে রাত দু’টো বাজে,কিছু একটা পড়ার শব্দ হলো,তৃধার ঘুম ছুটে গেলো,পাশে তাকিয়ে দেখলো আদাভান ঘুমাচ্ছে, সে নিঃশব্দে উঠে গেলো।
দরজা কিছুটা খুলে বুঝার চেষ্টা করলো কি হচ্ছে,তৃধার চোখ গেলো দরজার দিকে সদর দরজা দিয়ে ঢুকছে সোনালী হাতে কিছু একটা আছে,পা টিপে রুমে চলে গেলো সে,তৃধা সব কিছু দেখে আলতো হাতে দরজা আঁটকে পিছু ঘুরলো।
কি খিচুড়ি পাকাচ্ছে এই মহিলা, জানতেই হবে এতো রাতে কার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো?ওর সাথে কি কেউ যুক্ত আছে?বাচ্চাটা কার!মাথা ব্যাথা শুরু হলো তৃধার কি করে এতো প্রশ্নের উত্তর মিলবে?
———————
দুদিন কে’টে গেছে,সোনালী কে হোটেলে দিয়ে আসতে চাইছিলো আদাভান, তৃধাই শেষ মুহুর্তে বলে সোনালী এখানেই থাকবে, আদাভান অবাক হলেও কিছু বলেনি,তৃধা কারন ছাড়া রাখতে চাইবে না।তবে নজরে পড়ার মতো বিষয় হচ্ছে পিহুর সাথে তৃধার বেশ ভাব জমেছে দুদিনে।
দুপুর বারোটা, পিহু ছুটে আসলো তৃধার কাছে,আদাভান ক্লাস শেষ করে এসেছে সবে।
তৃধা পিহুকে জড়িয়ে ধরে বললো–,,তোমার মা কোথায়?
পিহু বললো–,,বাহিরে গেছে।
তৃধা আলমারি থেকে একটা সুন্দর জামা বের করে আনলো পিহু কে খাটে বসিয়ে আগের জামাটা খুলতে খুলতে বললো–,,মনে আছে তো মামনি আমরা আজকে ঘুরতে যাবো?
পিহু ভয় পেয়ে বললো–,,না, মা খুব বক’বে!
তৃধা পিহুর জামা খুলে আঁত,কে উঠলো, আদাভান কে ডেকে বললো–,,দেখে যান একটু।
আদাভান হাত মুখ ধুয়ে ছুটে আসলো বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো–,,কি হয়েছে?
তৃধা পিহুর পিঠের দিকে তাকাতে বললো,আদাভান বলে উঠলো–,,এতোটুকু বাচ্চাকে কে এমন ভাবে মে’রেছে!
কাল”সিটে দাগগুলো কেমন চকচক করছে ফর্সা পিঠে।
তৃধার বেশ মায়া লাগলো,বাচ্চাটা কে এমন করে কেনো মার’লো মায়া হয়নি অমানু”ষ গুলোর!
তৃধা পিহুর গালে হাত বুলিয়ে বললো–,,পিঠে কিভাবে ব্যাথা পেয়েছো মা?
পিহু কেঁদে উঠে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বললো–,,মা মা আর ওই আংকে’ল তি’লে মে’লেছে!
তৃধা পিহুকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো–,,আর কাঁদে না, ঔষধ লাগিয়ে দিলে ঠিক হয়ে যাবে, ব্যাথাও ভেনিস হয়ে যাবে। তোমাকে বাবা অনেক গুলো চকলেট এনে দিবে,আর কেঁদো না কেমন!
আদাভান তৃধার দিকে তাকিয়ে আছে,মেয়েটা আসলে কি দিয়ে তৈরি?শ’ত্রুর মেয়ে বলে ছয়বেলা নাক সিট’কায়, এখন পারলে কলিজায় ঢুকিয়ে রাখে!
পিহুর চোখ মুখ মুছিয়ে তাকে জামাটা পড়িয়ে দিলো তৃধা।তারপর গল্প করার ছলে জিজ্ঞেস করলো–,,আগে কোথায় থাকতে?
পিহু আশেপাশে তাকিয়ে দু হাত প্রসারিত করে বললো–,,অনেক বড়…!
তৃধা হেসে বললো–,,অনেক বড় জায়গা,বাহ তুমি একাই থাকতে?
পিহু দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বললো–,,অনে..কে থাকতো।সবাই আমা’ল মতো!
আদাভান মনোযোগ দিয়ে কান্ড দেখছিলো,হঠাৎ করে ওর পিহুর শেষ কথাটার দিক মনোযোগ গেলো বেশি ওর মতো দেখতে সবাই,মানে আরো বাচ্চা!
আদাভান তৃধার দিকে তাকিয়ে বললো–অনাথাশ্রম!
তৃধা পিহু কে আদর করে দিয়ে বললো–,,মামনি একটা কথা বলবে আন্টি কে?
পিহু মাথা ঝাঁকালো,তৃধা জিজ্ঞেস করলো–,,মায়ের কাছে আগে থেকেই থাকো?
পিহু বললো–,,না!
তৃধা হেসে বললো–,,আচ্ছা চলো আজকে দুপুরে আমরা মজার ফিস খাবো,টেস্টি টেস্টি!
পিহু ও খুশি হয়ে গেলো।তৃধা পিহু কে টেবিলে বসিয়ে দিয়ে এসে বললো–,, আপনার কি আর কোনো শ”ত্রু আছে?
আদাভান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো–,,অনেকই আছে,ভার্সিটিতে কম মানুষের সাথে তো ঝামে”লা
পাকা”ইনি!
তৃধা বালিশ ছুঁড়ে মার’লো আদাভানের দিকে,অসহ্য লোক!
——————
তৃধা আর নোভা বসে আছে হসপিটালে তৃধার চিন্তায় চিন্তায় এবার কান্না পাচ্ছে যদি পজি”টিভ আসে তখন!
নোভা তৃধাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে,বলছে এমন কিছুই হবে না।ওরা যে গোপ”ন ভাবে টেস্ট করছে এ কথা আদাভান কে ও জানায়নি।
বেশ সময় অপেক্ষা করার পর তৃধা ডাক্তারের রুমে ঢুকলো,অনেক সময় ধরে কথা হলো ডাক্তারের সাথে।
বেরিয়ে আসতেই নোভা চিন্তিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো–,,কি হয়েছে?
তৃধা হেসে বললো–,,চল হোস্টেলে যেতে হবে,নাদিম কে কল করে বল আসতে ওর সাথে কথা আছে!
হোস্টেলে এসে রুমে বসে আছে চার জন,নাদিমের সাথে রাস্তায় কথা শেষ করে নিয়েছে তৃধা।
তৃধা সবার দিকে তাকিয়ে আছে প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য। আভা রেগে তৃধার উপর বালিশ মে’রে বললো–,,পাগ’ল হয়ে গেছিস?ভাইয়ার কি হবে ভাবতে পারছিস তুই?ম’রে যাবে!উল্টো পাল্টা প্ল্যানিং করা বন্ধ কর!
তৃধা চুল খোঁপা করতে করতে বললো–,,আচ্ছা শোন আমার কথা টা,আমি আদাভানের প্রতিক্রিয়া দেখবো রিপোর্ট দেখার পর, তার পরে সিদ্ধান্ত নিবো,যদি ও নিশ্চিত থাকে এটা ভুল রিপোর্ট ওনার সাথে সোনালীর কিছু ছিলোই না তাহলে আমি সত্যি টা ওখানেই বলে দিবো।আর যদি অন্য কিছু হয় তবে মনে রাখিস ওনার সাথে আর একটা কথাও বলবো না আমি!
নোভা বলে উঠলো–,,অযথা ঝা’মেলা পাকাস না তো।
তৃধা বলে উঠলো–,,সোনালীর কাছে একটা রিপোর্ট আছে বর্তমানে, ওইদিন রাতে ওটা সাথে নিয়ে বাড়ি ফিরেছে কারো সাথে তো মিলে আছে এই মেয়ে।শোন আমরা যতই আসল রিপোর্ট বের করার চেষ্টা করি না কেনো,নিশ্চিত থাক ওরা ডাক্তার কে ঘু”ষ দিয়ে ঠিক ওদের মন মতো রিপোর্ট বের করে নিবে,তাই তো ওদের সুবিধা মতো প্ল্যান করেছি, যদি আমরাই নক’ল রিপোর্ট দেই তো খে’লা ঘুরে যাবে।
নিশি বিরক্ত হয়ে বললো–,,ভাইয়াকে সব বলে দিবি তারপর যা খুশি কর,ভাইয়া অযথা কষ্ট কেনো পাবে?
তৃধা বিরক্ত হয়ে বললো–,,বললাম তো বলবো যদি উনি পাশ করেন!
আভা রেগে মেগে বললো–,,তুই যা তো সামনে থেকে, সব কিছুকে কম্পলিকেটেড করে দিচ্ছিস!
——————
আদিব এসেছে আজ আদাভান তৃধাকে বললো–,,চলো আমাদের সাথে ডিএ”নএ টেস্ট করাতে যাচ্ছি।
তৃধা বলে উঠলো–,,আপনারা যান রিপোর্ট পাওয়ার পর আমাকে জানাবেন।
আদাভান তৃধার হাত ধরে বললো–,,চলো।
তৃধা না পারতে যেতে রাজি হলো,সোনালী অনেক জোড়াজুড়ি করেছিলো ওর পছন্দের হসপিটালে যাওয়ার জন্য, কিন্তু ওরা যেতে দেয়নি,সোনালী না পারছে মাহির কে কল করতে, না পারছে কিছু বলতে, নিশ্চিত এখন ধরা পড়ে যাবে!
সোনালী,আদাভান,পিহুর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ডাক্তার তাদের বাহিরে অপেক্ষা করতে বললো।
তৃধা চুপচাপ বসে আছে, আদাভান তৃধার হাত চেপে ধরে বললো–,,আমাকে বিশ্বাস করো না তুমি?
তৃধা আদাভানের হাতের উপর হাত রেখে বললো–,,আমি আপনাকে বিশ্বাস করি, আপনি নিজেকে বিশ্বাস করেন তো আদাভান?
আদাভান চমকে উঠলো, আসলেই তো নিজেকে বিশ্বাস করে তো ও,সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাবে না তো আবার!
আদিব থমথমে মুখে বের হলো, রিপোর্ট টা এক প্রকার ছুঁড়ে মার’লো আদাভানের উপর,আদাভান তা হাতে তুলে নিলো,তৃধা চোখ বন্ধ করে বসে আছে।সোনালী ভয়ে আছে প্রচুর!
আদিব কর্কষ কন্ঠে বলে উঠলো–,,ভাইয়া,আপনি আমার বোন কে ঠকিয়ে’ছেন!
আদিব তৃধার দিকে তাকিয়ে বললো–,,আমার সাথে চল তৃধা, এখানে আর এক মুহুর্ত ও নয়!
তৃধা আদাভানের দিকে শান্ত চোখে তাকালো,তৃধা আদিব কে বললো–,,ভাইয়া তুমি পিহু আর তার মাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে, হলে ফিরে যাও।
আমি আদাভানের সাথে কথা বলতে চাই!
আদিব বোনের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বের হলো,আদাভানের হাত কাঁপছে কি করে সম্ভব! তৃধার দিকে তাকানোর সাহস হচ্ছে না ওর, সোনালী অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে রিপোর্ট টা কি করে এমন আসলো?তবে এখন তার অভিনয় করার সময়, সে ন্যাকা কান্না জুড়ে দিয়ে বললো–,,এরিশ দেখলে তুমি?সত্যি সত্যি পিহু আমাদের সন্তান!
তৃধা মৃদু কন্ঠে বললো–,,সোনালী আপনি বাড়ি যান,যেহেতু পিহু আপনাদের সন্তান সেহেতু আপনারা এখন থেকে ওই বাসায়ই থাকবেন!
আদাভান গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,কি সব বলছো?এখানে থাকবে মানে!
তৃধা এবার চেঁচিয়ে বললো–,,সোনালী আপনি যাচ্ছেন না কেনো?ভাইয়া অপেক্ষা করছে যান।
সোনালী যেতেই তৃধা আদাভানের হাত চেপে ধরে বললো–,,চলুন আমার সাথে,ঘুরতে যাবো!
আদাভান হা হয়ে আছে এতো চিন্তার মাঝে ঘুরতে যাবে!
গাড়ি এসে থামলো নদীর ধারে,পড়ন্ত বিকেল,সূর্যের প্রতিচ্ছবি লালচে করে তুলেছে পানির রঙ।
তৃধা একমনে ওইদিকে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলো-,,রিপোর্ট দেখে কি ভাবছেন?
আদাভান বলে উঠলো–,,আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, কিন্তু!
তৃধার মেজাজ খা’রাপ হলো কিন্তু? কিন্তু কেনো থাকবে এতোটুকু বিশ্বাস নেই নিজের উপর!
তৃধা একেবারেই শান্ত,সে আবার জিজ্ঞেস করলো–,,কিন্ত কি আদাভান?আপনি বলতে চাচ্ছেন ভুলবসত আপনাদের মাঝে এমন কিছু হয়ে থাকতে পারে?যা আপনি পরবর্তী তে ভুলে গেছেন!
আদাভান মাথা নিচু করে ফেললো,আর তৃধার হৃদ”য়ে রক্তক্ষ”রণ হলো,সে জানে সত্যি টা কি, কিন্তু তার পাশের মানুষ টা কিভাবে অন্য কারো সাথে!মেনে নিতে বড্ড কষ্ট হলো তৃধার।
তৃধা আবার প্রশ্ন করলো, কি করতে চান এখন ভেবে চিন্তে উত্তর দিন আমি অপেক্ষা করছি!
আদাভান চোখ তুলে তাকালো তৃধা রাগ করছে না?আদাভানের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকাচ্ছে না!এতেটা চুপচাপ কেনো?
আদাভান বলে উঠলো–,,পিহু আমাদের সন্তান হয়ে থাকবে আমাদের সাথে!
তৃধার শান্ত কন্ঠস্বর–,,আর সোনালী?
–,,ওর ইচ্ছে হলে এসে মেয়েকে দেখে যাবে,কিন্তু আমি ওকে কখনো গ্রহন করতে পারবো না কারন টা তুমিও ভালো করে জানো,পিহু আমার দায়িত্ব তাই তার দায়িত্বটুকু আমি পালন করতে চাই!
তৃধা চুপ করে রইলো,কিছু সময় পর বললো–,,সন্তানের জন্য বাবা মা উভয়ের ভালোবাসাই গুরুত্বপূর্ণ!
আদাভান চমকে তাকালো তৃধার দিকে,তৃধা প্রাণ শূন্য চোখে তাকিয়ে আছে,আদাভান তৃধার বাহু আঁকড়ে ধরে বললো–,,এমন দেখাচ্ছে কেনো তোমাকে?
তৃধা স্বাভাবিক ভাবেই বললো–,,কিছুক্ষণ পূর্বে আপনি আমাকে মে’রে ফেলেছেন আদাভান!
আদাভান অগোছালো হাতে তৃধার গাল ছুঁয়ে বললো–,,এভাবে বলো না প্লীজ!
তৃধা ওমন ভাবে থেকেই বললো–,,আপনি সোনালী কে ভালোবাসেন?
আদাভানের কন্ঠনালি কেঁপে উঠলো কাঁপা কন্ঠে বললো–,,ভালোবাসতাম!অনেক ভালোবেসেছি একটা সময় এই কথাটা অস্বীকার করতে পারবো না!
তৃধা চোখ বন্ধ করে ফেললো সাথে সাথে,লম্বা করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো–,,তাহলে আবার নতুন করে ভালো বাসুন,আমাকে মুক্তি দিন!
আদাভান তৃধার গালে একটা চ’ড় বসিয়ে দিলো তৎক্ষনাৎ!
তৃধার বাহু ঝাঁকিয়ে বলে উঠলো–,,ছেড়ে যাওয়ার কথা কেনো কেনো বার বার বলিস!
তৃধা জিজ্ঞেস করে উঠলো–,,যদি আমি এখন আপনার জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতাম,তখন আপনি আমাকে চোখ বন্ধ করে গ্রহণ করে নিতেন আদাভান?
আমার সাথে সাথে অন্য একজনের অস্তিত্ব অন্য একজনের সন্তান গ্রহন করে নিতেন?আপনার কষ্ট হতো না আদাভান?
আপনার কলি”জা ফে’টে যাওয়ার মতো অনুভূতি হতো না?আপনার প্রিয় মানুষ টা অন্য কারোর সাথে এতোটা অন্ত’রঙ্গ অবস্থায় ছিলো,তার পুরো শরীর মন জুড়ে কেউ বিচরন করেছে, প্রান মন উজাড় করে ভালোবেসেছে, এসব জানার পরও আপনি তার এক কথায় তার সাথে স্বাভাবিক ভাবে থেকে যেতেন সারাটি জীবন?
অন্য সব কথা আমি মেনে নিতে পারবো আদাভান,কিন্তু! তৃধার কথার থেমে গেলো,তৃধা মুখ চেপে দাঁড়িয়ে রইলো কতক্ষণ তার পর আবার বললো–,, আদাভান আমি আপনাকে অন্য কারো সাথে এক বিন্দুও শেয়ার করতে পারবো না,আপনি কি করেছেন ভাবতে পারছেন একবার?আপনি বলছেন আপনি সোনালীর সাথে……!
নিজেকে প্রশ্ন করুন আদাভান আপনার ভালোবাসার মানুষ একটা সময় অন্য একজনকে এতোটা গভীর ভাবে ভালোবেসেছে যে তাদের মধ্যে এক সুতা পরিমান ও দূরত্ব ছিলো না,এটা জানার পরও আপনি স্বাভাবিক থাকতে পারবেন?এতোটা মহান আপনি হতে পারবেন?বলুন?জবাব দিন!
তৃধার চোখ মুখ লাল হয়ে এসেছে, আদাভান দাঁড়ানো থেকে বসে পড়লো, তৃধা ঠায় দাড়িয়ে আছে,সন্তান টা আদাভানের না এতটুকু তৃধা জানে, কিন্তু আদাভান কি বললো এটা তার প্রেমিকার সাথে সে একই বি…!
তৃধার পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো,আগে জানলে কখনো এমন জঘ”ন্যতম সত্যি জানতে চাইতো না ও!
তৃধা আদাভানের পাশে বসে ওর হাত চেপে ধরে বললো–,,আচ্ছা একটা কথা বলি।
আদাভান তৃধার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,দ”ম বন্ধ হয়ে আসছে তার,নিজেকে এখন পৃথিবীর সবচেয়ে খারা’প মানুষ মনে হচ্ছে, আল্লাহ তার জন্য এতো ভালো একজন মানুষ কে জীবন সঙ্গী হিসেবে রেখেছিলো,যার সব কিছুই পবিত্রতা দিয়ে মোড়ানো যার ভালোবাসায় একফোঁটা খাদ নেই,এই মেয়েটা তাকে কতোটা ভালোবাসে তা তার থেকে ভালো আর কে জানে?
এমন একজনের জন্য আজ সে সব কিছু হারাতে বসেছে যে মানুষ টা কোনো কালেই তার ছিলো না, স্বার্থের জন্য তাকে ছেড়ে চলে গেছে,আবারও স্বা’র্থের টানে ফিরে এসেছে,বার বার তার জীবন টাকে ধুমরে মুচড়ে দিয়েছে, একটা ভুল তার থেকে তৃধাকে কে’ড়ে নিবে ভেবেই তার বুকে ব্যাথা শুরু হলো,তীব্র ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো আদাভান, বুকের দিকে হাত চেপে ধরলো।
তৃধা আদাভান কে ধরে বললো–,,কি হয়েছে আপনার?এমন করছেন কেনো?কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমাকে বলুন!
আদাভানের চোখে পানি টলমল করছে, তৃধাকে জড়িয়ে ধরে বললো–,,আমাকে ছেড়ে চলে যেও না তৃধা,আমি সত্যি বলছি তোমাকে ছাড়া ম’রে যাবো!
তৃধা আদাভান কে শান্ত করে বললো–,,আজাইরা কথা বইলেন না তো, মানুষ ছাড়াও মানুষ বাঁচে, একজন চলে গেলে তার শূন্যতা পূরণ করতে অন্য একজন ঠিক চলে আসে।আমি তো আপনার ক্ষনিকের চাওয়া মাত্র, আপনার হৃদয়ে হাহাকার ছিলো, শূন্যতা ছিলো যা আমি আসায় পূর্ণতা পেয়েছিলো,অন্য কিছুই না।সোনালী যেমনই হোক আপনার ভালোবাসার মানুষ আপনার সন্তানের মা…!
তৃধা থামলো কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তার,চোখ বন্ধ করে আবার বললো–,,আপনি সোনালী কে বিয়ে করুন প্রফেসর!
আদাভান ছিটকে দূরে গিয়ে বললো–,,তৃধা মাথা খারা”প হয়ে গেছে তোমার?
তৃধা চুপচাপ উঠে দাড়িয়ে তে’জ ভরা কন্ঠে বললো–,,যেহেতু ভালোবেসে সন্তানের বাবা হতে পেরেছেন,এখন বিয়েও করতে হবে!
আদাভান রেগে বললো–,,তোমার কথায় হবে সব?ম’রে গেলেও দ্বিতীয় বার বিয়ে করবো না আমি!
তৃধা বলে উঠলো –,,আপনার যেমন ইচ্ছে,আসি ভালো থাকবেন।
আদাভান তৃধার হাত চেপে ধরে বললো–,,আমি তোমাকে যেতে দিবো না।
তৃধা চুপ রইলো,কিছু সময় পর বললো–,,আমি আমার বাবা মায়ের আদর দুদিক থেকে কখনো সমান পাইনি,আমি জানি বিষয় টা কতো কষ্টের!একই কষ্টে ওই বাচ্চাটাকে রাখতে চাই না আমি,আপনি যদি আমাকে একটুও কখনো ভালোবেসে থাকেন তো সোনালী কে বিয়ে করুন!
আদাভান তৃধা কে সরিয়ে দিয়ে বললো–,,যাও চলে যাও,তোমাকে লাগবে না আমার,কাউকে লাগবে না, আমার ভালোবাসা তোমার কাছে ক্ষনি’কের চাওয়া মনে হয়?থাকতে হবে না তোমাকে যাও চলে যাও!
তৃধা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আদাভানের পাগ’লামি দেখছে।
তৃধা উল্টো ঘুরে যেই না হাঁটা ধরবে আদাভান ছুটে এসে তৃধাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চামো করে বললো–,,এই কোথায় যাচ্ছো তুমি?আমাকে রেখে যেতে কষ্ট লাগছে না তোমার?দয়া মায়া বিহীন কেনো তুমি এতো?আমি ভুল করেছি শা’স্তি দাও, তবুও ছেড়ে যেও না!
তৃধা কাঁপা কন্ঠে বললো–,, আমাকে দুর্বল করে দিবেন না আদাভান,যেতে দিন!
আদাভান আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো–,,না!
তৃধার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গলো আদাভান কে দূরে সরিয়ে কলার চেপে ধরে বললো–,,মন তো চায় একেবারে এখানেই মে’রে ফেলি।এটাকে ভুল বলছেন আপনি?বলেছিলাম কিছু লুকাবেন না আমার থেকে,আপনি তো মহান।আমি যাই এখন একটা ছেলের সাথে রাত কা’টিয়ে আসি তার পর থেকে আপনার সাথে….
তৃধার কথা আর লম্বা হতে দিলো না আদাভান,তৃধার রাগে তিড়বিড়িয়ে উঠা লালচে ঠোঁট জোড়া আঁকড়ে ধরলো পরম আবেশে।তৃধা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে কান্না দলা পাকিয়ে যাচ্ছে গলায়।তৃধার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো দুই ফোঁটা জল, আদাভান তৃধার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো–,,আমি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পা’প করেছি চরিত্র’হীন হয়েছি, তোমার গায়ে কোনো কল”ঙ্ক লাগবে না,তুমি পবিত্র পবিত্রই থাকবে। আমার ছোঁয়াতে সমস্যা? আমি কোনো দিন ছুঁয়ে দিবো না তোমাকে,আমি কোনো ভাবেই বিরক্ত করবো না তোমায়,যেভাবে খুশি থেকো, শুধু আমার হয়ে থাকো, আমার সাথে থাকো!
তৃধা এতোটা কঠোর হচ্ছে কেনো?শুধু মাত্ররো অভিমান থেকে?তৃধা সরে আসলো আদাভান দিকে ফিরে তাকালো না আর দৌড়ে চলে গেলো সেখান থেকে,আদাভান হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে রইলো সেদিকে!
——————
তৃধার দিকে অ”গ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নোভা,গালের দিকে তাকিয়ে আছে নিশি,আভা বলে উঠলো–,,মাত্ররো একটা চ”ড় কম হয়ে গেলো না?আমি হলে আরো কয়েকটা বেশি দিতাম!
তৃধা চুপ করে রইলো,নোভা বলে উঠলো–,,ছা’গল! মানুষটাকে এতো কষ্ট দিচ্ছিস তুই?মানলাম কষ্ট হচ্ছে তোর তাই বলে এতোটা বারাবাড়ি!
তৃধা কথা বললো না,আভা বলে উঠলো–,,ওর যা খুশি করুক, ওরে আর কিছু বলে লাভ নাই!
তৃধা এবার শব্দ করে কেঁদে উঠলো–,,তোরা শুধু আমার দোষ দেখছিস?তোদের একেকটার জামাই যদি আইসা বলতো ভুলে প্রেমিকার সাথে বেড’রুমে ঘুমিয়ে গেছিলাম, তখন বুঝতি কেমন লাগে!
নিশি কপাল চাপড়ালো, –,,এ ভাই,শুধু ভেবেই এতো বড় কান্ড ঘটিয়েছিস?হায় খোদা ভাইয়া বলেছে হতেও পারে,তাও রিপোর্ট দেখে একথা বলেছে।
তৃধা চোখ মুছে বললো–,, বলবে কেনো?সর আমি আর যাবো না উনার বাসায় থাকুক ওই শাঁক”চুন্নিরে নিয়া!
নোভা বলে উঠলো–,,খেয়ে দেয়ে ঘুমা,শান্তি লাগবে!
তৃধা চোখ মুখ কাঁথা দিয়ে ডেকে শুয়ে পড়লো,তৃধা মাথায় হাত দিয়ে নাদিম কে কল করলো–,,এ ভাই তোর বোন রে নিয়া যা তো।অস’হ্য একবারে কি থেকে কি করছে,এটারে আর সামলাতে পারবো না আমি।
তৃধা ঘুমিয়ে পড়েছে এক পর্যায়ে,রাতের বেলা নোভার মোবাইলে কল আসলো আননোন নাম্বার নোভা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আদাভানের ভাঙ্গা কন্ঠস্বর ভেসে আসলো–,,তৃধা হোস্টেলে ফিরেছে নোভা?রাতে খেয়ে ঘুমিয়েছে তো?
নোভার খারা’প লাগলো অনেক–,,তৃধার ছেলেমানুষী এবার মাত্রা ছাড়াচ্ছে।
নোভা মৃদু কন্ঠে বললো–,, ভাইয়া আপনি বাসায় গিয়েছেন?
আদাভান জবাব দিলো না,ছোট করে বললো–,,তৃধার খেয়াল রেখো,রাখছি!
——————-
এক সপ্তাহ কে’টেছে তৃধা বাসা থেকে বের হয়নি, ভার্সিটি যায় নি।রুমে মট’কা মে’রে বসে ছিলো।
আদাভান কথা বলতে চেয়েও পারেনি,মেয়েটা এতো কঠোর!
কিছুদিন পরই আলিজার বিয়ে,বাসায় একা ফিরলে আদাভান কে সবাই একেবারে পি’ষে ফেলবে, ঘটনা জানলে আজীবনের জন্য বাড়ির দরজা ওর জন্য বন্ধ!
বাসা থেকে ফোন করে সবাই তৃধার কথা জিজ্ঞেস করে,আদাভান নিজের চুল ছিড়ছে বসে বসে। বাড়ি যাওয়ার কথা কি করে বলবে জীবনে যেতে রাজি হবে এই মহিলা?সাতদিন ধরে ভার্সিটি আসে না শুধু ওর ক্লাস করতে হবে দেখে।কতোটা এরিয়ে চলছে ভাবা যায়।এতো রাগ, এতো অভিমান!
আদাভান একাই রওনা দিয়েছে বাড়ির উদ্দেশ্য, একজন তো গিয়ে বুঝ দিতে হবে নাকি।সোনালীর সাথে এনিতেও একটা কথাও বলেনা আদাভান,কোথায় যাচ্ছে এসব কিছুই বলেনি,পর্যাপ্ত পরিমাণ বাজার থেকে শুরু করে যা যা লাগবে সব কিছু কিনে দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়েছে সে,বাড়িতে যাচ্ছে এ কথা বলেনি, কখন গিয়ে হাজির হয় কে জানে বোনের বিয়েতে কোনো ঝা’মেলা চায় না আদাভান।
বিয়ের এখনো এক সপ্তাহ বাকি,আদাভান বাড়ির গেইটে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো,যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না,কি জবাব দিবে সবাই কে?
আদাভান বাড়িতে ঢুকে আরো বেশি অবাক ভেতর থেকে অনেক মানুষের কথার শব্দ শোনা যাচ্ছে।কি হচ্ছে কি বাড়িতে?
আদাভান বসার ঘরে ঢুকে ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো, তার বউ তাকে বিরহে রেখে এখানে বসে তারই মায়ের হাতে আয়েস করে খাচ্ছে?এ কেমন অবিচার!
তৃধা খাচ্ছে আর জিদানের সাথে কথা বলছে,সোফায় বসে গল্প করছে নোভা,আভা,নাদিম,স্নিগ্ধা,আলিজা,নাজিয়া, আদিব আলিয়া,আরাফাত!
রাগে কাঁপছে আদাভান সব গুলোতে তাহলে জোট বেঁধেছে,ওর সাথে স্বর”যন্ত্র এবার তো মজা বুঝিয়ে ছাড়বে!
তৃধা আদাভান কে দেখে দৌড়ে গিয়ে লুকালো আমিনা বেগমের পেছনে,আমিনা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো–,, তুই এসেছিস?
আদাভান তেড়ে এসে তৃধার হাত খপ করে ধরে বললো–,,তোমাকে আজ কে বাঁচায় আমিও দেখবো!
তৃধা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো–,,আম্মু বাঁচাও তোমার রা”ক্ষস মার্কা ছেলে আমাকে খে”য়ে ফেলবে একেবারে।
আদাভান তৃধার হাত টেনে নিয়ে গিয়ে থামলো রুমের ভেতর।জোরে ধম’ক দিয়ে বললো–,,আদর চিনো আদর?একদম আদর করতে করতে মে’রে ফেলবো!
চলবে…..
#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব১৯
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
তৃধা আদাভান কে তোয়াক্কা করলো না,গিয়ে বসলো খাটের উপর,আদাভান রাগে কাঁপছে।
তৃধা বিছানায় পা তুলে বসে আঙুল নাড়িয়ে ইশারা করলো, আদাভান ভ্রু কুঁচকে তাকালো, তৃধা আঙুলের ইশারায় কাছে আসতে বললো,আদাভান আসলো দাঁড়ালো তৃধার সামনে।
তৃধা হাই তুলে বললো–,,আদাভান এরিশ দেখছি তৃধা তালুকদারের আঙুলের ইশারায় চলে!
আদাভান শান্ত চোখে তাকালো,দৃষ্টি স্থির হলো তৃধার দিকে,তৃধাকে আপাদমস্তক চোখ ঘুরিয়ে দেখছে সে।
তৃধা কিছু বলতে যাবে,আদাভান তৃধার দিকে ঝুঁকে তার ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরে বললো–,,তোমার আঙুলের ইশারায় কেনো শুধু? তোমার বোবা কথার নৈঃশব্দ্যেও আমি চোখ বন্ধ করে যেদিকে বলবে সেদিকে যাবো।ডানে বললে ডানে যাবো, খা’দের দিকে যেতে বললেও চলে যাবো বিনা বাক্য।আমাকে নাজে’হাল করার জন্য কষ্ট করে আঙুল তোলার ও দরকার নেই মেয়ে,আমি তোমার শান্ত চাহনিতেও এলোমেলো হয়ে যাই।
তোমার দেওয়া নিস্তব্ধ প্রহর আমাকে তি”লে তি’লে শেষ করে দিতে সক্ষম!
তৃধা চোখের পলক ফেলছে বার বার,আদাভান আর কিছুটা ঝুঁকে, তৃধা দু হাত পেছনে রেখে পুরো দমে পিছিয়ে যায়,চোখ রাঙিয়ে শাসায় যার অর্থ দূরে যান বলছি!
আদাভান হেসে বললো–,,মাত্ররোই মনে মনে বললে দূরে যাওয়ার কথা তাই না?
তৃধা বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকালো।আদাভান তৃধার চোখের নিচে আঙুল ছুঁইয়ে বললো–,,বেশ উন্নতি হয়েছে, সাত দিনে এক বস্তা কালি জমিয়েছো চোখের নিচে,চেহারা শুষ্ক হয়ে গেছে,চুল গুলো আঁচড়াও নি,অলস মহিলা একটা জামাও আয়রন করে পড়োনি।মুখে ফেইস ওয়াশ লাগাওনি ক্রিম তো দূরের কথা।দূরত্ব বাড়িয়েছো ভালো কথা নিজের প্রতি অবহেলা করার সাহস তোমায় কে দিয়েছে?আদর করি তো মাথায় চ”ড়ে বসেছো,একদিন এমন মা’র মার”বো না আজীবন মনে থাকবে!
তৃধা আদাভানের আঙুলে কাম”ড় দিয়ে বললো–,,ঘন্টা করবেন আপনি আমার। যা পারবেন না তা বলতে যান কেনো?আমাকে মারা”র আগে তো আপনি নিজেই ম’রে যাবেন অযথা ফালতু থ্রে”ট দিয়েন না তো।
আদাভান গম্ভীর হয়ে পাশে বসলো,তৃধা বলে উঠলো–,,,তা কথা হচ্ছে, বাচ্চার মাকে সাথে করে নিয়ে আসলেন না?
–,,কার বাচ্চার মা?
তৃধা নড়েচড়ে বসে বললো–,,কেনো আপনার!
আদাভান সিরিয়াস হয়ে বললো–,,সাত মাস হয়ে গেলো বিয়ে করেছি,না বউকে ছুঁইলাম আর না কিছু করলাম,আমার বউ প্রেগ”ন্যান্ট হবে কি করে?আমিই বা বাবা হবো কি করে?
আমার বউয়ের কি মা হওয়ার ইচ্ছে জেগেছে?লজ্জায় বলতে পারছে না?কি আর বলি বলো বউটা আমার এতো লাজুক!
তৃধা চেঁচিয়ে উঠলো—,,আদাভান!আপনি নিজেই তো,বলেছেন আপনি আর সোনালী একই রুমে।আপনি দায়িত্ব নিতে চান পিহুর।
–,,হুম বলেছি তো?
তৃধা রাগ দেখিয়ে বললো–,,কিছু না।
আদাভান দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,, আমার সাথে চালাকি না?বুদ্ধি তো থাকে হাঁটুতে।আমার ভালোবাসা নাটক মনে হয় তোমার?ফালতু একটা টপিক নিয়ে কতোবড় কান্ড টা ঘটিয়েছো ওইদিন।আমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে চেয়েছিলে?তা পরীক্ষায় কতো পেয়েছি মেডাম?
তৃধা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বললো–,,কি বলতে চাইছেন?
আদাভান মোবাইল হাতে নিয়ে বললো–,,দেখাতে চাচ্ছি!
তৃধা কাঁপা কন্ঠে বললো–,, কি?
আদাভান তীব্র রাগ নিয়ে বললো–,,আমার আর সোনালীর রো”মান্স!
তৃধা রেগে গেলো, রাগে লাল উঠলো নাক তিড়বিড়িয়ে কাঁপলো ঠোঁট। ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো সে।
আদাভান তৃধার হাতে জোর করে মোবাইল গুঁজে দিয়ে বললো–,,তাকাও বলছি,তাকাও!
আদাভানের কন্ঠে স্পষ্ট রাগ।তৃধা তাকাইতেই শুকনো ঢোক গিললো,এটা তো ওর আর নোভার হসপিটালে যাওয়ার সিসি”টিভি ফুটেজ।
তৃধা চোরা চোখে একবার আদাভানের দিকে তাকালো,আদাভান তাকিয়ে আছে এখনো,তৃধা মেকি হেসে আস্তে ধীরে পিছিয়ে গিয়ে বললো–,,হসপিটালে গিয়েছি তো কি হয়েছে,দেখানোর কি আছে।
আদাভান এগিয়ে আসতে আসতে বললো–,,কিছু যদি নাই থাকে পালাচ্ছো কেনো?
তৃধা তে’জ দেখিয়ে বললো–,,যদি সব জানতেনই, কেনো একটা সামান্য রিপোর্ট দেখেই পিহুর দায়িত্ব নিতে চাইলেন?নিজের প্রতি একটু বিশ্বাস নেই আপনার।আমাকে এখন রাগ দেখানো বন্ধ করেন,পরীক্ষা নিতে চেয়েছি বেশ করেছি,একশো বার নিবো,আপনি তো ডাহা বড় আ”ন্ডা পেয়েছেন, ভালোবাসা না কচুর ডগা,প্রেমিকার সাথে এক রুমে….!
আদাভান তৃধার মুখ চেপে ধরে বললো–,,আর একবার ও উচ্চারন করবা না এই কথা।তুমি যেমন আমার সাথে ফা”লতু নাটক টা করেছো,তেমনই আমিও তোমার মতো করেই নাট’ক করেছি।
তৃধা হাত সরিয়ে দিয়ে বললো–,,আমার ইমোশন আপনার কাছে নাটক মনে হয়?শাক দিয়ে একদম মাছ ঢাকার চেষ্টা করবেন না,ওই মেয়ের সাথে গিয়ে থাকুন তাকে বিয়ে করুন, সরুন আমার সামনে থেকে।
আদাভান সরে আসলো গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,তুমি চাও বিয়ে করি?তাহলে করবো যাও ব্যবস্থা করো,তোমাকে সামনে রেখে কবুল বলবো,বাস’র করবো আরো দুই চারটা বাচ্চা ডাউনলোড করবো।
তার আগে সব ক্লিয়ার করে নেই,আমি নিজেকে আর চরিত্র’হীন ভাবে মেনে নিতে পারছি না!
আদাভান ফোন করলো কাকে যেনো রিসিভ হতেই স্পিকারে দিলো–,,সোহান, ওইদিন রাতে মানে আমাদের ট্যুরে কি কি হয়েছিলো সব বল আবার,আমাকে যে ভাবে বলেছিস ঠিক সেভাবেই এক্সপ্লেইন কর, কিছু কিছু মানুষের মাথায় সমস্যা, নূন্যতম বিশ্বাস নেই!কিচ্ছু বাদ দিবি না!
তৃধা প্রতিক্রিয়া দেখালো না,সোহান বলতে শুরু করলো–,,ওইদিন আসলে আমরা সবাই অনেক পরিমানে ড্রিং”স করি, তবে এরিশ তুই করিস নি তার পরও তোকে বেশি মা’তাল মনে হচ্ছিলো!তুই সবার আগে ঘুমাতে যাস, সোনালী তোর সাথে গিয়েছিলো,পরে আর ফিরে আসেনি।
সকালে আমরা ভেবেছিলাম তুই আর সোনালী সারা রাত একসাথে ছিলি, এটা নিয়ে মজাও করেছিলাম তোর সাথে,তুই বলেছিলি তোর কিছুই মনে নেই,তবে সোনালীর কাছে ক্ষমা চাইবি যদি ভুলবসত কিছু করে থাকিস তো!
আমরা তো ট্যুর থেকে চলে আসি, তার পর তোর আর সোনালীর মধ্যে ঝা”মেলা হয়,সোনালী মাহিরের সাথে সম্পর্ক করে।তুই ভার্সিটি ছাড়ার পর আর কারো সাথেই যোগাযোগ রাখিসনি।
তাই তোকে বলার সুযোগ ও হয়নি,রুবি একদিন আমাদের কে বললো–,,ট্যুরে যাওয়াটা আসলে প্ল্যানিং ছিলো,কিসের কাহিনি ওসব জানি না,তবে ওইদিন রাতে সোনালী তোর সাথে ছিলোই না,ও তো মাহিরের সাথে ছিলো,রুবি নিজ চোখে দেখেছে ওদের কর্মকান্ড।তোর গালফ্রেন্ড ছিলো সোনালী, তাই রুবি ফিরেই বলতো সবাইকে কিন্তু তার আগেই তোদের ব্রেকআপ হয়ে যায়!
আদাভান গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,থ্যাংস দোস্ত!
ফট করে কল কে’টে দেয় আদাভান, তৃধা চুপচাপ বসে আছে,আদাভান বিরক্তি নিয়ে বললো–,,এবার খুশি?
তৃধা রুম থেকে বের হয়ে যেতে উদ্যোগ নেয়,আদাভান তৃধার হাত চেপে ধরে বলে–,,সোনালী কে আসতে বলছি, বিয়ে দেওয়ার সখ না তোমার?করবো বিয়ে জন্মের মতো বিয়ে খাওয়াবো তোমাকে!
তৃধা চাপা রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললো–,,প্যাঁচ আমি লাগাইনি,লাগিয়েছেন আপনি এতোই যখন স”তী পুরুষ, আমার ছেলেমানুষী তে যোগ কেনো দিয়েছেন?ভাগ্য ভালো পুরুষ মানুষের সতী”ত্ব পরীক্ষা করার কোনো মাধ্যম নাই!
আদাভান তৃধার কোমর চেপে ধরে আচমকা, চোখে মুখে উবছে পড়ছে রাগ –,,যদি পরীক্ষা সত্যিই করা যেতো,আমি সবার আগে করাতাম, ওই প্রমান তোমার মুখের উপর ছুঁড়ে মার’তাম তার পর শান্তি লাগতো আমার!
তৃধা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো ততক্ষণাৎ!চোখ মুখ লাল হয়ে এসেছে, কান্না দ’মিয়ে রাখার ফল।বিগত কয়েক মাসে আদাভান একবার ও ওর সাথে এতোটা রুড”লি কথা বলেনি,তৃধা আদাভান কে কখন অবিশ্বাস করেছে?আদাভান যদি ওসব কথা না বলতো তাহলে কি তৃধা কখনো অবিশ্বাস করতো?সব দোষ এখন কি সুন্দর করে ওর ঘাড়ে চাপিয়ে দিলো লোকটা।ঠিক আছে গিয়ে করে নাও বিয়ে, নাচো ম’রো যা খুশি করো তৃধা আর আগ বাড়িয়ে যাবে না আদাভানের কাছে।
সোজা গেস্ট রুমে গিয়ে থেমেছে তৃধা,চোখ মুখের অবস্থা বেহাল,সবাই আড্ডা দিচ্ছে এখনো, এই রুমে ছেলেরা থাকবে তবে এখন বাকিরা ও আছে।
তৃধা কে চুপ চাপ দেখে সবাই চিন্তিত হলো বেশ,আলিজা বলে উঠলো–,,ভাবি মনি কি হয়েছে?
তৃধা হালকা হেসে বললো–,,কই কিছু না তো।তোমরা আড্ডা দিচ্ছো আর আমি রুমে একা ছিলাম তাই একটু মন খারা”প হয়েছিলো,এখন এসে গেছি আবার খুশি হয়ে যাবো!
নোভা ভ্রু কুঁচকে তাকালো, অসম্ভব এই মেয়ের দ্বারা এই অব্দি মিথ্যা বলাটা ঠিক ঠাক হলো না।নিশ্চিত এক চো”ট ঝগ”ড়া করে এসেছে!
————–
আলিজার বিয়ের শপিং শুরু হয়েছে তোড়জোড় নিয়ে। তৃধার সব বন্ধুরা এসেছে তাতে অখুশি হয়নি বাড়ির কেউ উল্টো এতো মানুষ দেখে গোলজার, গোলবাহার ভীষণ খুশি!
বুড়া বুড়ির কথা বলার যেনো মানুষ হয়েছে,হেসে খেলে কাটবে বেশ কয়েকটা দিন।
আদাভানের ফুফু ফুফা এসেছে বিকেলে ছেলে মেয়েরা সকালে আসলেও কাজের চাপে তাদের আসতে দেরি হলো।তার উপর সপ্তাহ খানেক থাকবেন সব গুছিয়ে আসার ও তো একটা ব্যাপার আছে।
আদাভানের ফুফু এসেই বাড়ির বউদের দেখতে চাইলেন!
তৃধা, মৃধা কে ডাকা হলো,হাসি বেগম বরাবরই খুঁতখুঁতে।
তৃধা মৃধা এসে দাঁড়ালো উনার সামনে, সালাম ও দিলো দুই বোন।প্রথমেই হাসি বেগম নাক সি’টকে বললো–,,গায়ের রঙ এতো চাপা?হায় খোদা আমার ভাইপোদের সাথে কি যায়!তোমাদের ও চোখ বলিহারি একজন না হয় পছন্দ করে বিয়ে করেছে, অন্য জনকে বিয়ে করানোর সময় কি চোখ উবে গিয়েছিলো?একই বাড়ির দুই মেয়ে দেখো পরে তোমাদেরই না বের করে দেয়!
আদাভানের জন্য এইটুকুন বাচ্চা মেয়েটাকে কিভাবে পছন্দ করলে ভাবি?বয়সে বড়সড় মেয়ে বিয়ে করাতে, সংসারের বড় বউ হওয়া মুখের কথা নয়!এসব মেয়েদের তো আবার প্রে’মিক টেমি’ক থাকে কখন জানি কচি ছেলে দেখে ভেগে যায়!
আদাভানের কন্ঠস্বর শোনা গেলো তখনই–,, অনেক বলেছো ফুপ্পি আর কিছু বলো না, অপমা’ন করতে বাধ্য হবো আমি!
হাসি বেগম চুপ করলেন তবে রাগ কমলো না নিজের মেয়ের জন্য কতো করে বলেছিলেন ভাইকে,তার মেয়েটা কি কম?দেখতে শুনতে মাশাআল্লাহ গুনেরও কমতি নেই পড়াশোনায় আগানো তবুও ভাই তার বন্ধুর মেয়েকে বউ বানালো!একদম সহ্য করতে পারছেন না তিনি।
তৃধা চুপচাপ মাথা নিচু করে সেখান থেকে রান্না ঘরের দিকে গেলো,কথা বলতে বা শুনতে ইচ্ছে করছে না একদম।
বাড়িতে মানুষ বেশি কাজও বেশি,হাতে হাতে সাহায্য করছে তৃধা,এ বাড়ি আসার পর সবাই তাকে অনেক আদর যত্ন করেছে ভালোবাসা দিয়েছে,একজনের কথায় মন খারা’প করাটা বোকামি।তাছাড়াও উনি মেহমান এসেছেন চলে যাবেন অযথা ঝা’মেলা বাড়ানোর কি আছে।
মৃধা তৃধা কে জিজ্ঞেস করলো–,,কিরে চুপচাপ আছিস যে?মন খারা’প?
তৃধা অন্যমনস্ক এতোটাই যে শুনতে পেলো না,হঠাৎ হকচকিয়ে যাওয়ায় ফল কা’টার ছু’রি অনেক জোরে গেঁথে গেলো তার আঙুলের ভাজে,তৃধা ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে নিলো তবুও শব্দ করলো না।মৃধা আঁতকে উঠলো, কিছুটা জোরেই বললো–,,পা’গল দেখে কাজ করবি না।
মৃধা দ্রুত তুধার হাত পানির কলের নিচে রাখলো,তৃধা নিশ্চুপ হাত থেকে রক্ত পরা বন্ধ হওয়ার নামই নিচ্ছে না।
মৃধা তাড়া দেখিয়ে বললো–,,হাত চেপে ধরে রাখ,আমি বেন্ডে”জ নিয়ে আসি,কি যে করিস না আর একটু হলে তো আঙুু’লটাই পড়ে যেতো!
তৃধা চুপচাপ দাড়িয়ে আছে,মৃধা ফিরে আসলো কিছু সময়ের মধ্যে তৃধার হাতে ঔষধ লাগিয়ে বেন্ডে’জ করে দিয়ে বললো–,,যা রুমে যা আর কাজ করতে হবে না।আমরা বাকিটা করে নিবো,পাকা’মো করতে এসেছে সব কিছুতে অ”ঘটন,কে বলেছে এতো কাজ করতে আসতে মা,আর বড় মা তো সব করে দিচ্ছিলো।জিদান উঠেছে কিনা দেখ গিয়ে।
মৃধার ঝা”ড়ি খেয়ে তৃধা সোজা উপরে গেলো, জোবানের ট্রান্সফার হয়েছে নিজেদের জেলায় অসুবিধে হয় না বাড়ি থেকেই কাজ করতে পারে। চাপে আছে প্রচুর,জিদান রুমে ঘুমাচ্ছে।তৃধা গিয়ে দেখলো ঘুম থেকে উঠেনি এখনো,তাই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসলো।
রাতের খাবারের সময় হয়ে এসেছে,টেবিলে খাবার সাজালো সবাই মিলে, হাসি বেগম মেয়ের গুনের প্রচারনা করার জন্য তাকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে।
তৃধার মধ্যে কোনো হেলদোল নেই,কারো সাথে কোনো কথা বলছে না।
খাবার টেবিলে আগে বসেছে মেহমান রা,সাথে আদাভান,তার বাবা, চাচা, দাদা,দাদী।
তৃধা কে যেনো সহ্য হচ্ছে না হাসি বেগমের,অদৃশ্য এক ক্ষো”ভ পোষণ করছেন প্রতিনিয়ত।
তৃধার প্রতি এখনো কঠোর আদাভান,সবাইকে মৃধা একা সার্ভ করছে দেখে আদাভান কিছুটা রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বললো–,,একজনের কি হাতে ফো”স্কা পড়েছে? সবাই কে খাবার বেড়ে দিলে কি তার সম্মান কোনো অংশে কমে যাবে নাকি?
তৃধা তাকালো না আদাভানের দিকে,আমিনা বেগম ছেলেকে ধম’ক দিয়ে বললো–,,আদাভান এটা কেমন ধরনের কথা?আমরা আছি তো ও ছোটো মানুষ এসব করতে যাবে কেনো?
হাসি বেগম আবার কিছু বলতে যাবে গোলবাহার বলে উঠলো–,,চুপ কর হাসি,তৃধা সব সময় এখানে যেভাবে থাকে সেভাবেই থাকবে,তুই আসায় কি এখন ওর সব অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে নাকি?আর দাদু ভাই ভালো করে বললেই তো হয় আমরা সবাই জানি তৃধা ভাত বেড়ে দিলে তুমি খাও সেটা সুন্দর করে বললেও তো পারো,অযথা রাগ দেখাচ্ছো মেয়েটাকে।
তৃধা এখনো নিশ্চুপ, আদাভানের এই নিরবতা মোটেও ভালো লাগছে না,কথা বলে না কেন এই মেয়ে, প্রতি’বাদ করে ঝ”গড়া করে না কেনো?
তৃধার দিকে তাকিয়ে নোভা অবাক হচ্ছে তার বন্ধুরা বাকিরাও কি হলো কি এর তব্দা খেয়ে গেছে কেন?নিজের হয়ে একটা কথা ও বলছে না!
আভা খেয়াল করলো তৃধার দু আঙুলে বেন্ডে”জ জড়ানো,আভা নাদিম কে বললো–,,তৃধার বাচ্চার হাত কে’টেছে কখন?
নাদিম খেয়াল করে বললো–,,আমি কি করে জানবো,খাওয়া শেষে ওরে চেপে ধরতে হবে কিছু তো একটা হয়েছে!
হাসি বেগম হেসে বললো–,,তৃধা মা যাও তো ফুফু শাশুড়ীর জন্য নিজ হাতে লেবুর সরবত বানিয়ে নিয়ে আসো,হাত দিয়ে ভালো করে চট’কে দিও কেমন?সাথে মরিচ আর পেঁয়াজ দিয়ে একটু ঝাল ঝাল সালাদ বানিয়ে নিয়ে আসো।আবদার টুকু রাখবে না?
মৃধা হকচকিয়ে তাকালো,বোনের রাগ সম্পর্কে তার অনেক ধারনা আছে,মৃধা হেসে বললো–,,ফুপ্পি আমি করে দেই?একজন করলেই তো হয় তৃধা আর আমি তো একই!
তৃধা মৃধার হাত চেপে ধরে বললো–,,আমি করছি,সামান্য কাজই তো!
মৃধা চাপ সুরে বললো–,,ফালতু কথা বলবি না, ডান হাতের অবস্থা দেখেছিস?কার উপর রেগে আছিস বলতো?
তৃধা কথা বাড়ালো না ফ্রিজ থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস বের করে রাখলো।
মৃধা যাতে না যেতে পারে সে কৌশল ও বের করে ফেললো হাসি বেগম,তিনি ঠিক দেখে নিয়েছে তৃধার হাত কেটে’ছে,এই টুকু মেয়ে এবার নিশ্চয়ই কেঁদে কে’টে দুনিয়া ভাসাবে,তার পর তিনিও খোঁচা মার’তে পারবেন দুই একটা!
আদাভানের গলা দিয়ে খাবার নামছে না,সে তো জানে তৃধা প্রতিবা’দ করতে জানে তবে এখন কেটনো চুপ?
তৃধা নিজের সব রাগ নিয়ে বেন্ডে”জ খুলে কা’টা হাত দিয়েই লেবু চিপলো পেঁয়াজ মরিচ কে”টে ঢলে নিলো,হাতের জ্বল”ন দিয়ে যেনো মনের দুঃখ কমাচ্ছে সে।আদাভানের সব রাগ ঝাড়ছে হাতের উপর।কিছু সময় পর তৃধা হাজির হলো হাসি বেগমের সামনে সুন্দর করে রেখে হেসে জিজ্ঞেস করলো–,,আরো কিছু লাগবে ফুপ্পি?আপনার সেবায় আমি নিযুক্ত সব সময়, যা লাগবে বলবেন কোনো লজ্জা করবেন না কেমন?
হাসি বেগম হাসলেন,তৃধা ঝুঁকে কথা বলছিলো চাপা কন্ঠে ফিসফিস করে বললো–,,বি’ষ লাগলেও বলবেন কেমন?আপনাদের মতো মহিলাদের তো আবার সব কিছুতে চুল”কানি।
একটা ফ্রিতে টিপস দেই।হারপি’ক খেয়ে মন পরিষ্কার করবেন আর বিছুটি পাতা লাগিয়ে শরীরের কারে’ন্ট কমাইয়েন!
তৃধা আবার আগের জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালো, সবার খাওয়া শেষ হতেই চুপচাপ উপরে চলে আসলো।
নোভা,আভা,নাদিম অনেক কিছু জিজ্ঞেস করেছে তৃধা কিছু বলেনি শুধু এই টুকু বলেছে–,,আদাভান সোনালী কে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।
সবাইকে চিন্তায় ফেলে তৃধা বিদায় নিয়েছে।
———
আদাভান তৃধা কে রুমে ঢুকতে দেখেই বললো–,,তুমি এখানে এখন?
তৃধা বলে উঠলো–,,কেনো এখন থেকেই আসা নিষেধ নাকি?সোনালী ছাড়া অন্য কাউকে এখন স’হ্য হচ্ছে না?সিনক্রি”য়েট করতে চাইনি তাই এসেছি রুমে।তবে চিন্তা করবেন না থাকবো না আপনার সামনে,নিশ্চিন্তে ঘুমান।
তৃধা কোনো দিন এমন জায়গায় যায়নি, থাকেনি, জোর করেনি যেখানে তাকে অপর ব্যক্তি চক্ষু”শূল মনে করে!
তৃধা একটা বালিশ আর কাঁথা নিয় বারান্দায় ঢুকে পড়লো, মেঝে’তে সটান হয়ে শুয়ে পড়লো।আদাভান অসহায় হলো কেনো যে তখন রাগারাগি করতে গেলো,এই মেয়ের সব কিছুতেই এতো তে’জ!রাগ করে বসে আছে, কি করবে এখন।
আদাভান বারান্দায় ঢুকলো,তৃধার চোখ বন্ধ পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ঘুম?আদাভান তৃধার মাথার কাছে বসলো,লাইটের আলো তৃধার চোখে মুখে পড়লো তৃধা দু হাতে মুখ ঢাকে।
আদাভানের নজর যায় হাতের দিকে ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে আঙুল জোড়া,আদাভান ফোনের ফ্লাস অন করে আঁতকে উঠে,কিছু সময় আগের কথা চিন্তা করে ক’লিজা কেঁপে উঠে, এতো রাগ এই মেয়ের?নিজের রাগ সামলাতে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছে।
আদাভান তৃধার হাত আলতো করে উঠালো আঙুলে হাত রাখতেই তৃধা মৃদু আর্তনা’দ করে উঠলো।
আদাভান তৃধাকে কোলে তুলে নিলো তৃধা সজাগ, রেগে চোখ মুখ শক্ত করে তাকালো আদাভানের দিকে।
আদাভান তৃধা কে খাটের উপর এনে ফেললো বলে উঠলো–,,এক চ’ড়ে দাঁত ক’টা ফেলে দিবো,হাত কা’টলো কি করে?
তৃধা চুপ করে রইলো,আদাভান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধম’ক দিলো–,,এই তুমি বো’বা? কথা বলতে পারো না?জবাব দাও বলছি!
তৃধা কেঁপে উঠলো, আদাভান তৃধার হাতে ঔষধ লাগাতে যাবে, তৃধা গ’র্জে উঠে বললো –,,কা’টা গায়ে নুনের ছিটা দিতে এসেছেন?ম”লম যখন লাগিয়ে দিচ্ছেন একটু ম’লম আমার হৃদপি”ণ্ডে ও লাগিয়ে দিন,সেখানে এখানের থেকেও বেশি জ”খম হয়েছে, ব্যাথা ওখান টায় এখানের থেকেও হাজার গুন বেশি!
আদাভানের হাত থেমে গেলো,তৃধা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাড়িয়ে বললো–,,দয়া দেখাতে আসবেন না আমাকে,অনেক দেখিয়েছেন আর দেখাতে হবে না।আপনি এখনো আমাকে ভালো করে চিনতে পারেননি।
যতোটা যত্ন সহকারে ভালোবেসেছি,গভীর ভাবে জড়িয়েছি,ততোটাই কঠোর ভাবে দূরে সরে যাবো।আপনি আমাকে তো দূর আমার ছায়ার খোঁজ ও কোনো দিন পাবেন না!চিন্তা করবেন না আপনার বিয়ের আগের দিন অব্দি এখানে থাকবো।
তৃধা খাটে ঘুমাবে না মানে ঘুমাবে নাই,ফ্লোরে বালিশ পেতে চোখ বন্ধ করলো তৃধা,শরীল অবশ হয়ে আসছে ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠছে ভেতরে ভেতরে।
আদাভান নিজের গালেই নিজে চ”ড় বসালো,কি যে হয়েছে তার মেয়েটার সাথে এমন করা উচিত হয়নি।
কেনো যে বাকিদের কথা শুনতে গিয়েছিলো,এখন তো কেউ আবার বউয়ের মান ভাঙ্গাতে সাহায্য করবে না।
————-
সকালে যথারীতি তৃধার ঘুম ভাঙ্গলো আদাভানের বুকে।আদাভান ও নিচে ঘুমিয়েছে,তৃধার রাগ হলো না,সে চুপচাপ তাকিয়ে আছে।
আদাভান তৃধার কোমর পেচিয়ে বললো–,,শুভ সকাল বউ!
তৃধা উঠে বসলো,তার পর চুপচাপ বাথরুমে চলে গেলো।
তৃধা ফুরফুরে মেজাজে বসার ঘরে আসলো , এবার তো মজা শুরু হবে
সকালের নাস্তা খেতে বসবে সবে,তখনই কলিং বেল চাপলো কেউ তৃধা হেসে গিয়ে দেরজা খুললো।সোনালী আর পিহু কে দেখে তো তার হাসি দীর্ঘতম হলো।
চলবে….