#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব২০
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
তৃধা হাঁক ছেড়ে ডাকলো–,,মা ও মা শুনছো?দেখে যাও তোমার ছেলের বউ আর নাতনি এসেছে,বরণ করবে না!
আদাভান সিঁড়ি থেকে নেমেছে মাত্ররো তৃধার কথায় চোখ বড় বড় হয়ে গেলো আপনা আপনি,দৌড়ে গেলো দরজার সামনে,সে তো শুধু এমনি বলেছিলো সোনালী কে বিয়ে করার কথা,ঢাকা ফিরে তো সব ঝামে”লা মিটিয়ে নিতো,তৃধা এই জ”ঞ্জাল টাকে বাড়ি টেনে নিয়ে আসলো!
এবার বাড়ির মানুষ কি ভাববে!
এরই মধ্যে আমিনা বেগম আসলো,আদাভান কে পাশ কাটিয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,হাসি মুখে সোনালী কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,কেমন আছো? আমার ছেলের হবু বউ তুমি গা’ধা টা কিনা তোমাকে ওখানে একা রেখেই চলে আসলো!
সোনালী অবাক হলেও তার যেনো এখন নাট’ক করাটাই বেশি জরুরি, সে বলে উঠলো–,,আসলে মা,তৃধা তো বর্তমানে এরিশের ওয়াইফ তাই ও আমাকে আনতে চায় নি।
তৃধা হেসে বলে উঠলো–,,সোনালী আপনি ও না,সব কিছু জানার পর তো আমি আর আপনাদের মাঝে যাইনি, বাসায় এসেছি বলুন?এখানেও থাকবো না, মা উকিলের সাথে কথা বলেছে খুব শিগ্রই আমাদের ডি”ভোর্স হয়ে যাবে, তবে এর আগেই আপনাদের বিয়ে দিবো আমি।
বসার ঘরে সবাই ইতিমধ্যে হাজির হয়েছে,নিজের মায়ের অবস্থা দেখে আদাভান কথা বলতে ভুলে গেছে,কি হচ্ছে টা কি এখানে?
গোলজার মজুমদার কড়া ভাষায় বললেন–,,নাত বউ, কি হচ্ছে এখানে এরা কারা?কি নিয়ে কথা বলছো তোমরা!
আমিনা বেগম আদাভানের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো–,,আব্বা আপনার নাতির এই মেয়েটার সাথে সম্পর্ক ছিলো,কি ভাবে যে বলি আসলে আব্বা ওই বাচ্চাটা এরিশ আর সোনালীর বাচ্চা!
গোলবাহার চেঁচিয়ে উঠে বললো–,,কি কইতাছো বউ মা,এতো বড় বাচ্চা আদাভানের কি করে হলো?ওর তো বিয়ে হইছে এক বছর ও হয় নাই!
আশরাফ মজুমদার ছেলের গালে ঠা’স করে চ”ড় বসালেন।ঘৃ’ণায় মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো–,,নির্ল’জ্জ ছেলে,এসব দেখার জন্য তোমাকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছিলাম!তৃধার কি দোষ ওকে কেনো ঠকি’য়েছো তুমি?এ জন্যই বুঝি বিয়ে করতে চাও নি!মেয়েটার জীবন ন”ষ্ট করার আগে দু বার ভাবলে না?
তৃধা আশরাফ মজুমদারের দিকে তাকিয়ে বললো–,,বাবা যা হওয়ার তো হয়েই গেছে,আপনারা যত দ্রুত পারেন উনার সাথে সোনালীর বিয়ে দিয়ে দিন,আমি চলে যাবো!
আদাভানের শান্ত চাহনি তৃধার দিকে,সব কিছু জানার পরও এসব করাটা বাড়াবাড়ি না তৃধার?কেনো এমন করছে?
নাদিম,নোভা,আভা হা হয়ে তাকিয়ে আছে,আদিব মুখ চেপে হাসছে,মৃধা তৃধার হাত ধরে এক পাশে নিয়ে গিয়ে বললো–,,কি কাহিনি বল তো।
তৃধা বললো–,,পরে রুমে এসে বলছি।
জিদান গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো তৃধার পাশে,পিহুর দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো–,,খা”মনি এতা কে এতেছে?
জিদানের চোখে মুখে বিষ্ম”য়,তৃধা জিদান কে কোলে তুলে নিয়ে বললো–,,তোমার বোন।
জিদান বুঝদারের মতো করে বললো–,,আমাল আমাতের সাথে থাকবে?
তৃধা উপর নিচ মাথা ঝা’কালো।
সোনালী কে নিয়ে যাওয়া হলো, তৃধা বলে উঠলো–,,সোনালী একদিন পরই তো আপনাদের বিয়ে তার পর থেকে তো আপনি আদাভানের রুমে থাকবেন। দুইদিন গেস্ট রুমে কষ্ট করে থাকুন কেমন?
আলিজা,নাজিয়া সিরিয়াস হয়ে গেছে প্রচুর,হওয়ারই কথা বিষয়টা সেনসি”টিভ! দুজনই আচমকা তৃধা কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,ভাবিমনি তুমি সত্যি সত্যি চলে যাবে?থেকে যাও প্লিজ, আমাদের ছেড়ে যেও না, তোমার জায়গায় নতুন কাউকে মানতে পারবো না আমরা।
তৃধা আদাভানের দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বললো–,,যার জন্য আমি এখানে থাকতাম,সে যদি অন্য কাউকে নিয়ে থাকতে চায় তোমাদের ও তো তাকে মেনে নেওয়া উচিত বলো।
আলিজা তৃধার তুলনায় বয়সে বড়,তবুও মেয়েটার মন খারা’প হলো প্রচুর,চোখের কোনে জল জমলো তার।তৃধা কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,প্লিজ ভাবিমনি যেও না !
তৃধা আলিজা কে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে বললো–,,আপু দুলাভাই না দেখে তো যাচ্ছি না!
নাজিয়া বলে উঠলো–,,হুহ্!তুমি ব্যতিত অন্য কাউকে নিয়ে থাকতে হলে ভাইয়া কে অন্য কোথাও গিয়ে থাকতে বলো,তুমি আমাদের সাথে থাকবে!
আদাভান অবাকের চরম পর্যায় তার পরিবারের মানুষ তাকে রাখতে চায় না কিন্তু এই মাথা মো’টা টাকে ঠিকই রাখতে চায়! হায় আল্লাহ বাড়িতে আর টিকে থাকা হবে না।
আশরাফ মজুমদার তৃধার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো–,,ওই ছা’গল টার সাথে থাকা লাগবে না তোর,সুন্দর ভালো দেখতে একটা ছেলের কাছে তোকে বিয়ে দিবো আবার!
আদাভান এবার বিরক্ত হয়ে বললো–,,থামবে তোমরা,ওর জামাই কি ম’রে গেছে আরেকটা বিয়ে দিতে চাও কেনো?
আদাভানের কথায় কেউ পাত্তাই দিলো না,আদাভান কে পেছন দিয়ে দাড়িয়ে আছে ওরা, তৃধা আর আশরাফ মজুমদার দুজনেই মুচকি হাসলো।
আমিনা বেগম দুই জা কে উদ্দেশ্য করে বললো–,,তোরা দুজন যদি দয়া দেখিয়েছিস ওই গা”ধাটার উপর দেখবি কথা নাই তোদের সাথে!
আদাভান হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে এ কেমন অবিচার,মীরজা’ফরের মতো ব্যবহার।
গোলজার মজুমদার নাক সিটকে বললো–,, কি দিন দেখা লাগছে।
হাসি বেগমের তৃধার উপর থেকে যেনো রাগ উবে গেলো,তার ভাইপোরই তো চরিত্রে দোষ আছে,ভাগ্য ভালো মেয়ে বিয়ে দেয়নি নয়তো আজ তৃধার জায়গায় আজ তার মেয়ে থাকতো!তিনি মনে মনে শুকরিয়া আদায় করলেন।
আদাভান রুমে একা একা বসে আছে,বাড়িতে এতো গুলো মানুষ শুধু ওকেই কেউ পাত্তা দিচ্ছে না।যেনো বাড়িটা তৃধার ও এখানকার ভাড়া”টিয়া!
আদাভান সুযোগের অপেক্ষায় আছে কখন তৃধা কে একা পাবে আর সব ভন্ডা’মি ছুটাবে।
সোনালী কে এমন খাতির যত্ন করা হচ্ছে যেনো তাকে পরের দিন হাঁটে তোলা হবে,গরুর হাঁটের সবচেয়ে আকর্ষনীয় গরুটি সে!
পিহু তৃধার সাথে থাকছে,পিহু আর তৃধার সম্পর্ক অনেকটা স্বাভাবিক পিহু তৃধার সাথে এমন ভাবে মিশছে যেনো তারা বহু বছর ধরে পরিচিত!
নোভা,আভা,নাদিম,স্নিগ্ধা,আদিব, নিশি,রাদিফ বসে আছে এক সাথে।তৃধার গা ছাড়া ভাব দেখে বরাবরের মতোই বিরক্ত হলো নোভা।
আদিব বলে উঠলো–,,এতো কাহিনি করিস না তো,কালকে সোনালী বিদায় হবে তা নিয়ে খুশি থাক।
স্নিগ্ধা বিরক্ত হয়ে বললো–,,নিশ্চিত বুদ্ধি আপনার মাথা থেকে বের হয়েছে,ভাইয়া কষ্ট পাচ্ছে অযথা। আমি বলে দিবো তাকে এখনই!
তৃধা স্নিগ্ধার মাথায় একটা দিয়ে বললো–,,ঘরের শ’ত্রু বিভী”ষণ! তুই কথা বলবি না আমার সাথে।তোর পেয়ারের ভাই যে আমার সাথে ভাব নিয়েছে তার বেলা?কতো গুলো কথা শুনিয়েছে জানিস,আমার নাজু’ক গালটায় কি জোরে চ’ড় টা মে’রেছিলো, নির্দ’য় পাষা’ণ কোথাকার।এখন বসে বসে একটু কাঁদুক!
আভা বলে উঠলো–,, তুই যে সব সময় একটা না একটা ব্লান্ডা”র করিস তার বেলা কিছু না?
তৃধা বলে উঠলো–,,সন্ধ্যা হয়ে আসতেছে,তোরা থাক আমি রেডি হতে যাচ্ছি আজকে ডে’টে যাবো!
নাদিম চোখ ছোট ছোট করে বললো–,,কিহ্!ভাইয়া তোকে ধরে আছাড় মার’বে দেখিস।
তৃধা আদিব কে বললো–,,ভাইয়া তুমি তৈরি থাকবে কেমন।
স্নিগ্ধা বললো–,,তোমাদের দুই ভাই বোনের মাথায় আসলেই সমস্যা!
আদিব শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বললো–,,মাথায় সমস্যা যুক্ত মানুষ কে আপনার আবার মনে ধরলো ক্যান মহাশয়া?ব্রেনে গোলাপ ফুল ঝুলছে এমন একজন কে খুঁজবো নাকি বোনের জামাই হিসেবে!
স্নিগ্ধা রাগী চোখে তাকায়,রেগে হনহনিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।আদিব রসিকতা করে বললো–,,দেখলি আবারও প্রমান হলো মহিলা মানুষ মানেই কাজ কম তে’জ বেশি!
স্নিগ্ধা রেগে বললো–,,আদিবের বাচ্চা ভালো হবে না বলে দিচ্ছি!
তৃধা বলে উঠলো–,,বায় গাই’স শাশু মায়ের কাছে যাচ্ছি একটু সাজুগুজু করে আসি।উফ ভেবেই ভালো লাগছে জীবনে প্রথম ডে’টে যাবো।
নিশি বলে উঠলো–,,শা’লী তুই ম’রবি আজকে,ভুলেও ভাইয়ার সামনে পড়িস না কাঁচা খেয়ে ফেললেও অবাক হবো না আমরা!
তৃধা গুন গুন করতে করতে বললো–,,শকু’নের দোয়ায় গ”রু ম’রে না!
——————–
সোনালী অবাক হচ্ছে বাড়ি শুদ্ধ মানুষ তৃধা ভক্ত।তৃধা চলে যাবে জেনেও আবার কেউ মন খারাপ করছে না,কিন্তু কেনো?অদ্ভুত আচরন করছে কেনো সবাই,আবার আমাকেই বা এতো তোষামোদি করার কি আছে?
তৃধা সোনালীর সামনে এসে বিছানায় বসলো,তার চোখ মুখ জুড়ে খুশি।
সোনালী জিজ্ঞেস করলো–,,আদাভান কে ছাড়তে কষ্ট হবে না তোমার?
–,,আপনি চার বছরের রিলেশন শেষ করে দিয়ে আরেক বে’ডার সাথে,না মানে চার বছরের সম্পর্ক শেষ করে যদি আনন্দে থাকতে পারেন আমার টা তো মাত্ররো স্বল্প কিছু দিনের!তাছাড়াও আমাদের মাঝে তেমন কোনো গভীর সম্পর্ক নেই।
সোনালী জিজ্ঞেস করলো–,,আদাভান তো আপনাকে ভালোবাসে।
তৃধা হাসলো,পর পর শব্দ করে হেসে বললো–,,ভালোবাসলে আপনার কি?আপনি তো শুধু মেয়ের জন্য তার সাথে থাকতে চাইছেন,ভালোবাসা না বাসাতে তো কোনো কিছু যায় আসার কথা না!
সোনালী ভ্রু কুঁচকালো,তৃধা শান্ত ভাবে বললো–,,তা নিজের স্বামী কে মিস করছেন না?
সোনালী ভয়ার্ত চোখে তাকালো,তৃধা ঠিক দেখতে পেয়েছে দরজায় আদাভান দাঁড়িয়ে আছে,মনে মনে শা’লা বলে কয়েকবার গা’লি দিয়ে নিলো তৃধা।
তৃধা বলে উঠলো–,,আমার কাছে কিছু জিনিস আছে, আপনার অনেক কাজে লাগবে আশা করি।এই তো আপনার আর আপনার স্বামীর বিয়ের কাবি”ননামা, আপনাদের প্রথম সন্তান পৃথিবীতে আসার আগেই, তাকে খু’ন করার জন্য হসপিটালে যাওয়া আসা, ডক্টরের ডিটেইলস। ফে’ইক ডিএ”নএ টেস্টের রিপোর্ট, এতিমখানা থেকে একটা বাচ্চাকে ভালো বাবা মা হিসেবে দেখা শোনা করার নাম করে এনে দিনের পর দিন ট’চার করার প্রমান মানে কাজের লোকের দেওয়া জবান”বন্দি।
আরো…
সোনালী কাঁপা হাতে পানির গ্লাস নিয়ে মুখে ধরলো,তৃধা বলে উঠলো–,,ধীরে সুস্থে খান।তা পুরনো প্রেমিক কে বিয়ে করছেন কাল অনুভূতি কেমন?
সোনালী কাঁপা কন্ঠে বললো–,,তুমি এতো কিছু জানলে কি করে?
–,,এক সপ্তাহের ঘুম হারা’ম করে বহু কষ্টে জোগাড় করেছি, কি বলুন তো আপনি বরং আমার স্বামী কে নিয়ে নেন আমি আপনার টার সাথে আজকে একটু ঘুরে আসি।পরের দিন বিয়েতে আবার আপনাকে আপনার স্বামী ফেরত দিয়ে দিবো।তখন দুইজন জামাই নিয়ে আপনি সা’প লুডু খেলবেন আর নিজের ভাগ্য পরীক্ষা দিবেন।ভালো হলেও শ্বশুর বাড়ি খারা’প হলেও শ্বশুর বাড়ি,আজকে শান্তিতে ঘুমিয়ে নেন কেমন!
তৃধা বেরিয়ে গেলো, গিয়ে থামলো আমিনা বেগমের ঘরে।
আমিনা বেগম কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো–,,শাশু মা সাজিয়ে দাও, বলোতো কোন রঙের শাড়িতে আমাকে বেশি মানাবে?
আমিনা বেগম হেসে বললো–,,আমার ছেলেটাকে কাঁদিয়ে ছাড়বি দেখছি!
তৃধা হেসে বললো–,,তোমার ছেলে একটা অভদ্র কথায় কথায় ধম’ক দেয়, নাক উঁচু লোক একদিন কাঁদলে কিচ্ছু হবে না।দাও না সাজিয়ে আমি কিন্তু কোনো দিন সা”জিনি এর আগে।
আমিনা বেগম বলে উঠলো–,,দিচ্ছি তো, এতো অধৈর্য তুই।রোজিনা আপা কে জ্বা’লিয়েছিস তো কম না গতকাল ফোন দিয়ে গল্প করছিলো।
তৃধা আমিনা বেগমের চুড়ি দেখতে দেখতে বললো–,,তোমার বেয়াইন, তোমার ছেলের মতোই নাক উঁচু, তোমার ছেলেকে আবার বেশ পছন্দ তার, তিন বেলা শুধু আমাকে বলে ছেলেটাকে একদম বিরক্ত করবি না।আজব আমি কি উনাকে খোঁচা দেই নাকি।
আমিনা বেগম হাসলেন,তার কতো করে সখ ছিলো একটা মেয়ে সন্তান হবে,কিন্তু আল্লাহ সে সুখ কপালে রাখেননি।এখন মনে হচ্ছে ছেলের বউ হিসেবে মেয়ে পেয়ে গেছেন একটা,আঁচলে ধরে ঘুরা, আবদার করা, দুষ্টুমি করা কোনো কিছুই বাদ রাখে না এই মেয়েটা।তার ছেলেটাও নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান, এমন জীবন সঙ্গী কপাল গুনে পেতে হয়!
তৃধার সামনে আলমারি খুললো আমিনা বেগম, আশরাফ মজুমদার তখন আসলো ঘরে তৃধা খুঁজে খুঁজে তিনটা শাড়ি বের করলো।
আশরাফ মজুমদারের সামনে ধরে বললো–,,বাবা বলতো তোমার মেয়েকে কোনটা তে বেশি মানাবে?
আশরাফুল মজুমদার বললো–,,সাদা পারের গোলাপি শাড়িটা পড়।
তৃধা গদগদ হয়ে বললো–,,হাও কিউট, আমার ও সবচেয়ে পছন্দের রঙ পিংক!তুমি কতো ভালো বাবা,এখন যাও তুমি তোমার ছেলের রুমে আমি আর মা মিলে সাজবো।
আমিনা বেগম বললো–,,হ্যাঁ যাও তো যাও।
আশরাফ মজুমদার বললো-,, আমাদের বাপ ছেলের সাথে তোরা মা মেয়ে মিলে যা শুরু করেছিস না,পরে দেখে নিবো তোদের।
——–
তৃধা কে শাড়ি পড়াতে ব্যস্ত হলেন আমিনা বেগম,সুন্দর করে সাজিয়ে ও দিলেন,চুল গুলো ছেড়ে দিলেন অলংকার হিসেবে সিতি বরাবর একবা ছোট্ট টিকলি কানে সাদা পাথরের ঝুমকো,এক হাতে মোটা দেখতে পাথরের ব্রেসলেট।
তৃধা নিজেকে আয়নায় দেখে বললো–,,তোমার হাতে তো যা’দু আছে পে”ত্নী থেকে একেবারে মানুষ বানাইয়া দিলা।
আমিনা বেগম বললো–,,বা’জে কথা বলবি না তো তৃধা,আমার মেয়ে কি দেখতে কম সুন্দর?যা চুড়ি নিয়ে আয় রুম থেকে।
তৃধা ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো–,,তোমার ছেলে রুমে আছে,
যাওয়ার পর কয়টা চ’ড় মার’বে কোনো হিসাব আছে?আমি রি”ক্স নিতে পারবো না, নোভা কে বলছি এনে দিতে।
আমিনা বেগম আর কথা বাড়ালেন না,কাজ পড়ে আছে রান্না ঘরে তার।
তৃধা নোভার হাত ধরে বললো–,,বন্ধু এনে দে না প্লিজ দুই নম্বর ড্রয়ার টাতেই রাখা আছে।
নোভা আশেপাশে একবার তাকিয়ে বললো–,,ভাইয়া রুমে নেই,আদিব ভাইয়ার সাথে আছে আমি দরজায় পাহারা দিচ্ছি তুই দ্রুত গিয়ে নিয়ে আয়।
তৃধা এক ছুট লাগালো, ড্রয়ার খুলে খুঁজলো সময়ে কোনো কিছুই পাওয়া যায় না।সব জায়গায় খুঁজতে ব্যস্ত হলো তৃধা,চুল গুলোকে খোঁপা করে নিলো।
দরজায় খ’ট করে শব্দ হলো তৃধা ভাবলে নোভা,সে বলে উঠলো–,,নোভা ইয়ার খুঁজতে সাহায্য কর না একটু।
তৃধা আরো একটু খোঁজাখুঁজি করার পর কাঁচের চুড়ি গুলো পেয়ে গেলো,পেছন ঘুরে বললো–, দেখ নোভা এগুলো সুন্দর ন..!
আদাভান দাঁড়িয়ে আছে বুকে দু হাত গুঁজে, তৃধার হাত থেকে কাঁচের চুড়ি গুলো পড়ে গেলো,টুংটাং শব্দে মুখরিত হলো চারপাশ।তৃধা শুকনো ঢোক গিলে বললো–,,আপ..পনি?
আদাভান তৃধাকে ভালো করে পরখ করে বললো–,,বাহ্ বেশ ভালো তো,শাড়ি নাকি মশারি বুঝা মুসকিল। কার জন্য এতো সাজসজ্জা মেডাম?কাপড়”চোপড় বিহীন হয়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?
তৃধা রেগে বললো–,,এই দেখুন…!
আদাভান কথা কে’ড়ে নিয়ে বললো–,,দেখছিই তো,আমাকে দেখানোর জন্য সেজেছো বুঝি।
–,,উল্টো পাল্টা কথা বলবেন না একদম।সুন্দর একটা শাড়ি পড়েছি আপনার কি চোখে পড়ছে না?কাপড় নাই মানে কি?কোন দিক দিয়ে কি দেখা যাচ্ছে? আপনি আসলে চোখে কম দেখেন।সামনে থেকে সরুন আমি বাহিরে যাবো,এতোটাও খারা’প দিন আসেনি আমার আপনার জন্য সাজবো!
–,,এরকম ভু’তের মতো সেজে না আসলেই ভালো, হার্ট খুব প্রিয় আমার অকালে হার্ট অ্যা”টাক করে মর’তে চাই না!
তৃধা হেসে বললো–,,একদম ঠিক আমিও চাই না আপনি অকা’লে দুনিয়া ছাড়েন আপনার আর আপনার পেয়ারের সোনালীর তো এখনো সংসার করা বাকি। আমি পে”ত্নীর মতো সেজে মাহিরের কাছে যাচ্ছি,আপনাকে তো বলাই হয়নি মাহির আমাকে ইনবক্সে মেসেজ দিয়েছিলো, আমাদের বেশ অনেক সময় কথা বার্তা হয়েছে,আজকে রাতে কফি ডে”টে যাচ্ছি ওর সাথে!আপনি গিয়ে নিজের বিয়ের স্বপ্ন দেখুন কেমন।
আদাভানের রাগ ধরা ছোঁয়ার বাহিরে,মাহিরের নাম শুনতেই মেজা”জ বিগ’ড়ে গেলো।তৃধার মুখে এই নাম শুনে যেনো মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো।
তৃধা আদাভান কে পাশ কাটিয়ে যেতে নিবে তখনই আদাভান তৃধার শাড়ির আঁচল টেনে ধরলো।
তৃধা শুকনো ঢোক গিললো, পাগ’ল চে’তে গেছে তবুও ভয় পেলে চলবে না,তৃধা সাহস সঞ্চয় করে বললো–,,এটা কেমন অস”ভ্যতা, শাড়ির আঁচল ছাড়ুন বলছি!
আদাভান হেঁচকা টান মার’লো তাও মায়া দয়া করে না জোরেশোরে বসালো টান।তৃধা এক প্রকার উড়ে এসে পড়লো আদাভানের সামনে।
তৃধার চোখে মুখে বিরক্তি।আদাভান তৃধার দু গাল চেপে ধরে বললো–,,কি বলেছিস তুই?আবার বল!
তৃধার চোখ আপনাআপনি বড় হয়ে গেলো,তুইতো”কারি তে চলে গেছে একদম।
তৃধা আদাভানের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো–,,মাহিরের কথা বলেছি, শুনতে পাননি আপনি?কেনো আপনার জ্বল’ছে বুঝি?
আদাভান পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললো জোরে চেঁচিয়ে বললো –,,তৃধা তোমাকে মে’রে ফেলবো আমি,ওর নাম আর কোনো দিন মুখেও নিবা না।ওর জন্য সেজেছো তুমি?সাহস বেড়ে গেছে? কলিজা কতো বড় আমার বিবাহিত স্ত্রী হয়ে পরপু”রুষের জন্য এভাবে সেজেছো তুমি?আজ তোমার এমন অবস্থা করবো না মাহির কেনো অন্য কোনো পুরুষ মানুষের নামও মনে আসবে না!
তৃধা চোখ পিট পিট করে তাকালো আশ্চর্য এতো রাগ করার কি আছে?এতোটা জে’লাস বাপরে, তৃধা আগুনে ঘি ঢালার মতো করে বললো–,,শুধু দেখা করতে যাচ্ছি,প্রেম করতে তো আর যাচ্ছি না, এভাবে রিয়েক্ট কেনো করছেন!আর আমি গেলেই বা আপনার কি?আপনার কাজে কখনো বাঁধা দিয়েছি আমি,আমার বিষয়ে নাক….!
তৃধার কথা বলা বন্ধ করে দিলো আদাভান,তৃধার ছটফ”টানি বাড়লো,শক্তি প্রয়োগ করলো আদাভান কে ছাড়ানোর,ব্যর্থ হলো সে। তীব্র ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে নিলো।
কিছু সময় অতিক্রম হতেই তৃধার ঠোঁট ছেড়ে দিলো আদাভান তৃধা কে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো দূরে।
তৃধা রাগে দুঃখে শাড়ি চেপে ধরলো দু হাতে,আদাভান তাকিয়ে আছে তৃধার নত মুখের দিকে!
আদাভান শান্ত কন্ঠে বললো–,,শাড়ি পরিবর্তন করে তার পর যাও!
তৃধা টু শব্দ টুকু করলো না, আর না নড়াচড়া করলো।
আদাভান আবার বললো–,,যাও এখান থেকে,এভাবে আর একমিনিট ও দাঁড়িয়ে থাকলে, আস্ত থাকবে না বলে রাখছি।
তৃধা তেড়ে এসে আদাভানের কলার চেপে ধরে বললো–,,আমাকে চুমু দেওয়ার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে?অনুমতি ছাড়া আমার ঠোঁট ছুঁয়েছেন কেনো আপনি?অস’ভ্য লোক, অভদ্র কোথাকার।যখন তখন ধম”ক দেন, কথা শুনিয়ে দেন কি পেয়েছেন টা কি?সব দোষ শুধু একা আমার?আপনি কিছু করেননি আমি খারা”প আমি যা নয় তাই করি,আপনি সাধু পুরুষ!
আদাভান তৃধার ঠোঁটে আঙুল রেখে বললো–,,হুশ্!
আদাভান গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো–,,তৃধা, চলে যাও প্লিজ,আমি কন্ট্রো”ললেস হয়ে যাচ্ছি!
তৃধা কলার ছেড়ে দূরে দাঁড়ালো, অভিমানী কন্যার এলোমেলো চাহনি, আঁচলের অবাধ্য বিচরণ, চুলের খোঁপা, লেপ্টে আসা কাজল,কম্পনরত ওষ্ঠের উষ্ণতা মুহুর্তেই বিগ’ড়ে দিতে পারে প্রেমিক পুরুষের মনোভাব!
তৃধা পা বাড়ালো দরজার দিকে,আদাভান তৃধার হাত ধরে বলে উঠলো–,,
অভিমান ধুয়েমুছে তার পর যাও!
এই সাঝ সন্ধ্যা বেলা,
তুমি এক সাঝের সবিতা,
আমার হৃদয়ের আকুলতা,
আমার পরাজয়ের কথা শুনে যাও,
তুমি সাঝপূর্ণা সাজের অ”নিষ্ট করার অনুমতি দাও,
আমার ভালোবাসার দায়ভার সবটুকু নাও,
অভিমানী কন্যা আজ সম্পূর্ণ রূপে আমার হও!
তৃধার শরীর বেয়ে নেমে গেলো এক ঠান্ডা শ্রোত,তৃধার মাথায় দুষ্টুমি ভর করলো,ব্যাটা কে আজকে একটু জ্বা’লানো যাক,প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে তো, বের করছি প্রেম শা”লা নষ্ট”পুরুষ!
তৃধা আদাভানের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আরো কিছু কদম হেঁটে গেলো আদাভান দ্রুত পায়ে হেঁটে গিয়ে দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো।
তৃধা বিরক্তি নিয়ে বললো–,,কি চাই?
আদাভানের চাহনি,চোখের ভাষা বুঝতে একটুও অসুবিধে হচ্ছে না তৃধার,তারপরও ভাব দেখাচ্ছে।আদাভান এগিয়ে এসে তৃধার কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললো–,,তোমাকে!
তৃধা আদাভান কে মৃদু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলে উঠলো–,,কথায় কথায় এতো কাছে আসেন কেনো?আমার সুরসুরি লাগে!
তৃধার কথা শুনে আদাভান ভ্রু কুঁচকে তাকালো, তৃধার সামনে থাকা ব্যক্তিকে মোটেও সুবিধার মনে হলো না,নিজের শাড়ির কুঁচি এক হাতে চেপে ধরে দৌড়ে লাগালো।
আদাভান গাল এলিয়ে হাসলো,তৃধার পিছু নিয়ে বললো–,,কোথায় পালাবে শুনি?
তৃধা ঘরময় দৌড়াচ্ছে,খাট থেকে নামছে আবার উঠছে,আদাভান তৃধার পিছু পিছু,তৃধার হাঁপাতে হাঁপাতে বলছে-,,এমন করছেন কেনো বলুন তো,মাহিরের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি একটা কাজে,ভাইয়া ও যাবে সাথে!
আদাভান কিছু সময়ের ব্যবধানে তৃধার কোমর পেচিয়ে একেবারে শূন্য তুলে ফেলেছে তাকে, তৃধা পড়ে যাওয়ার ভয়ে আদাভানের গলা জড়িয়ে ধরলো দু হাতে।
আদাভান তৃধার চোখে চোখ রেখে নেশা’ভরা কন্ঠে বললো–,,আজ তুমি শেষ!ভালোয় ভালোয় রাজি হলে ভালো,না রাজি হলেও সমস্যা নাই,বউ যেহেতু আমার তাকে নিজের করে পাওয়ার সম্পূর্ণ অধিকার আমার আছে,একটু আগে কি যেনো বলছিলে?ঠোঁট কেনো ছুঁইয়েছি?কারন একটু পর নিজ থেকেই বুঝে যাবে!
তৃধা ঠোঁট উল্টে বললো–,,না…!আপনি জোর করতে পারেন না।
আদাভান এক হাতে তৃধার কপালের উপরে থাকা চুল গুলোকে সরিয়ে দিতে দিতে বলে—,,ওরে বাবা কি সুন্দর কথা,আপনি জোর করতে পারেন না!উস্কা’নি দেওয়ার সময় মনে ছিলো না?
তৃধা মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,ফাল’তু কথা বলবেন না।আমি কি করেছি?
আদাভান তৃধার কোমর চে’পে ধরে বললো–,,শাড়ি পড়ে অর্ধেক শরীর উন্মু”ক্ত করে রেখে কি প্রমান করতে চেয়েছিলে?একটা সুন্দর বউ পাশে রেখেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করি ভাবতে পারছো আমার কতো ধৈর্য? তবে আজকে আমি ইচ্ছে করেই ধৈর্য ধরা ছেড়ে দিয়েছি,তোমাকে আমার হতে হবে ব্যস আর কিছু জানি না।
তৃধা নাক ফুলিয়ে বললো–,,মামা বাড়ির আবদার?নামান বলছি।
আদাভান তৃধার ঘাড়ে হাত রাখতেই তৃধা কেঁপে উঠলো, আদাভান তৃধার কপালে গভীর চুমু একে দিয়ে বললো–,,কাঁপা-কাঁপি ন’ট অ্যা”লাও!
—-,,আসতাগফিরুল্লাহ!কি অ’শ্লীল কথা বার্তা!
—,,বউউউউ!
–,,কি সমস্যা?
–,,প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড!
–,,অসম্ভব!এই অভদ্র লোক আপনার না পরের দিন বিয়ে আজকে আরেকজনের সাথে অসভ্যতা করছেন কেনো?সরুন আপনার সতিন উরফে মাহিরের সাথে ডে’ট টা সেরে আসি!
আদাভান তৃধার গলায় জোরে এক কাম’র বসালো,তৃধা আদাভানের চুল টেনে ধরে বললো–,,শয়তা’ন কোনখানের!
আদাভান রাগী চোখে তাকিয়ে বললো–,,আমি ভালো করে রিকুয়েষ্ট করছি আমাকে ভালো লাগে না?কি আছে ওই মাহিরের মাঝে?বার বার ওর নাম নিচ্ছো কেনো তুমি?আমি দেখতে সুন্দর না?জামাই জামাই ফিলিংস আসে না?মাহির দেখতে কি খুব সুন্দর? ওর কাছে যাওয়ার জন্য এতো মরি’য়া হয়ে উঠছো কেনো?এমন মা’র মার’বো আজকে উঠে ওর কাছে যাওয়ার কথা টুকু বলতে পারবে না!
আদাভান বিছানার উপর তৃধা কে ছুঁড়ে মার’লো,তৃধা তৎক্ষনাৎ উঠে বসলো,বালিশ ছুঁড়ে মার’লো আদাভানের উপর।দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,হিং”সুটে!
আদাভান এগিয়ে এসে বললো–,,কি?
তৃধা পিছিয়ে গিয়ে বললো–,, আপনার মাথা!
আদাভান ধম’ক দিয়ে বললো–,, চুপ!
–,,ধম”কাচ্ছেন কেনো?
–,,আদর নিতে চাইছো না কেনো?
–,,ছি!
–,,ছি! টু
–,,আদাভান!
–,,ইয়েস মাই ডিয়ার ওয়াইফি!
–,,আমি কেঁদে দিবো!
আদাভান মুচকি হাসলো,তৃধার দিকে ঝুঁকে বলে উঠলো–,, তুমি চাইলে এতোক্ষণ চলে যেতে পারতে,কিন্তু যাও নি তার মানে,,।
তৃধা এবার ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো,আদাভান হকচকিয়ে গেলো কি হলো ব্যাপার টা?এক ফোঁটা কান্নার আওয়াজ যদি ওর গোষ্ঠী শুদ্ধ মানুষের কেউ একজনও শুনে, ওকে বাড়ি ছাড়া করতে দুবার ভাববে না।
আদাভান তৃধার গালে আলতো করে ছুঁয়ে বললো–,, বউ না ভালো এভাবে কাঁদে না লক্ষ্মীটি,আমার ভুল হয়ে গেছে,আর কিচ্ছু বলবো না প্রমি’জ।এই দেখো কান ধরছি আমি।
আদাভানের অবস্থা দেখে তৃধা হেসে উঠলো মুখে হাত দিয়ে বিছানা থেকে নামার পায়তারা করলো।আদাভান তৃধার শাড়ির আঁচল চেপে ধরে বললো–,,তবে রে।
তৃধা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো–,,যেতে দিন প্লিজ!
–,,এখানে থাকো কিছু করবো না,কিন্তু মাহিরের কাছে যাওয়ার অনুমতি ম’রে গেলেও দিবো না!
আদাভানের ঠান্ডা মাথায় দেওয়া হুম”কি তৃধা বেশ বুঝতে পারলো।
তৃধা বিছানার এক পাশে বসে বললো–,,শাড়িটা অন্তত ছাড়ুন ছিঁড়ে যাবে নয়তো।আদাভান আমি কিন্তু শব্দ করে কাঁদবো!
আদাভান বিরক্তি নিয়ে বললো–,,কাঁদো!
–,,নির্দ’য়!
তৃধা কে এক টানে নিজের কাছে এনে ফেললো আদাভান,তৃধাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,তৃধার বে’হুঁশ হয়ে যাওয়ার উপক্রম,আজকে তার মুক্তি নেই বেশ ভালো ভাবেই বুঝে গেছে ইতিমধ্যে, আদাভান বলছে চলে যাও কিন্তু হাত ধরে রেখেছে,এর দ্বারা কি বুঝা যায়?শা’লা দুরন্তপ”নায় মাস্টার!
তৃধার চুলের খোঁপা এলোমেলো করে দিয়ে আদাভান মুগ্ধ কন্ঠে বললো–,,অভিমানীনিরা অভিমান জমা রাখে চুলের খোঁপায়,গোলাপ রাঙা ঠোঁটে,আর আর কোমলমতি কায়ায়!
তৃধা আদাভানের শার্ট খামচে ধরে বললো–,,আদাভানের বাচ্চা, মুখ যে এতো পরিমাণ বেফাঁ”স কথা বলে আপনার আপনি কি তা জানেন!
আদাভান তৃধাকে জড়িয়ে নিলো আরো শক্ত করে,তৃধার ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিয়ে ধীর কন্ঠে বললো–,,প্রজাপতি!
তৃধাকে ছেড়ে তৃধার মুখ দু হাতে আলতো ভাবে ধরে অগুনিত চুমু খেলো আদাভান,চুমু দিতে দিতে বললো–,,একদিন আমি পাগ’ল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবো শুধু তোমার জন্য!
তৃধা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো, তার চোখ মুখ হাসছে,আদাভানের কাছে তৃধা কে এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম নারী মনে হলো।
আদাভান তৃধার হাত নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে বললো–,,আমার হৃদয়ের আকুলতা, শুনতে কি পাও না লাজুকলতা?
তৃধা আদাভানের গলা জড়িয়ে ধরে বললো–,,শুনতে পাই,সব কিছু বুঝতেও পারি। তবুও কষ্ট দেই এবার কি করবেন আপনি?
আদাভান চোখ ছোট ছোট করে বললো–,,আনরোমা”ন্টিক মহিলা!
তৃধা মুচকি মুচকি হাসলো,আদাভান তৃধার ঠোঁট জোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো তখনই।তৃধা আদাভানের পিঠে কি”ল বসালো,আদাভান তৃধার গালে চুমু একে দিয়ে বললো–,,বউদের বেশি বেশি আদর করতে হয়,দিনে তিন চার বার করলে আরো ভালো।নয়তো আমার মতো বিপ’দে পড়তে হবে তাদের, বউ অন্য কারো কাছে যাওয়ার জন্য বাহানা খুঁজবে।
তৃধা চোখ রাঙিয়ে তাকালো,আদাভান থোরাই তোয়াক্কা করে এসব,নিজের সম্পূর্ণ ভার তৃধার উপর ছেড়ে দিয়ে সটান হয়ে শুয়ে পড়লো আদাভান।
তৃধা দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,মটু কোথাকার!
আদাভান তৃধার গলায় মুখ গুঁজে দিলো চুলের ভাঁজে হাত রাখতেই তৃধা চুপ, আদাভান ওভাবেই থেকেই বললো–,,অনুমতি দিবে কিনা বলো?
তৃধার কন্ঠনালি কাঁপছে,কেঁপে উঠছে পাতলা গড়নের দেহ। তৃধার কাঁপা কাঁপি বেশ উপভোগ করছে আদাভান।
আদাভান আবার বললো–,,কথা কানে যায় না?কথা বলছো না কেনো?
তৃধার রাগ হচ্ছে প্রচুর,কতো পরিমাণ বেয়া”দব লোক হলে এমন করতে পারে?তৃধা লজ্জায় ম’রে যাচ্ছে তার উপর হে’রে যাওয়ার দুঃখ।ভালোবাসার মানুষের এতোটা নৈকট্য , তার গভীর আলিঙ্গন,তাকে নিজের করে পাওয়ার মতো আনন্দ,মিশ্র অনুভূতির জালে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে যাচ্ছে খুব করে।
তৃধা আদাভানের চুলে জোরেশোরে এক টান বসিয়ে বললো–,,থ্রে’ট দিচ্ছেন?আপনি তো সব কিছুই নিজের মর্জি মতো করেছেন, এখন অনুমতি চেয়ে মহান সাজছেন?
–,,ওই তৃধা,সোনা পাখি, মনা পাখি না ভালো।
তৃধা বিরক্তি নিয়ে বললো–,,নাটক’বাজ!দিবো না অনুমতি শালা দূরে গিয়ে ম’র।
আদাভান হাসলো,তৃধার গলায় ঘাড়ে ছোট ছোট চুমু দিতে দিতে বললো–,,তোর অনুমতি ধুয়ে তুই পানি খা!আমার তুই হলেই চলবে।
অনুভূতির মেলা বসেছে ঘটা করে,দুটি মন, দুটি স্বত্বা এক হওয়ায় মন দিয়েছে বেহিসাবে।ভালোবাসায় ভরে উঠেছে সময়,মুহুর্ত গুলো হয়ে উঠেছে মোহনীয়। ভালোবাসি এখনো হয়নি বলা তবুও ভালোবাসার কমতি নেই,নিস্তব্ধ প্রহর নৈঃশব্দ্যের কোলাহল,ভালোবাসার উষ্ণতায় জড়িয়ে যাওয়া দুমুঠো আদর,দুটি মনে বয়ে আনছে শীতলতা, পরিপূর্ণতার এক মুখোরতম রজনী।প্রেম অপ্রেমের উপাখ্যান, হৃদয় সমুদ্রে দুটি মনে সরল আবদার, করছে তারা প্রেমবিলাস, সরল অনুরোধে, তপ্ত নিঃশ্বাসে, উষ্ণ ছোঁয়াতে চলছে গভীর ভাবে আপন হয়ে যাওয়ার আলাপ।
এ যেনো এক নৈঃশব্দ্যের প্রেমালাপ!
আকাশ, বাতাস, চারদিকের নিঃস্তব্ধ প্রহর, চাঁদের লাজুক হাসি জানান দিচ্ছে ভালোবাসা সুন্দর গোপনে, একটু আদরে, ছেলেমানুষীতে, আবদারে, অভিমানে কিংবা নৈঃশব্দ্যের রজনীতে!
—————
ঘড়িতে সময় রাত দশটা,চুল মুছতে মুছতে তৃধার সামনে দিয়ে হাঁটছে আদাভান,মুখে তার বিশ্ব জয়ের হাসি,তৃধা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে,গায়ের উপর জড়ানো আদাভানের শার্ট,আদাভানের মুখ থেকে যেনো হাসি সরছেই না।
তৃধার গা জ্বা’লা করে উঠছে কি পরিমাণ নির্লজ্জ লোক হলে এভাবে দাঁত কেলিয়ে হাসতে পারে?
তৃধা একটা বালিশ ছুঁড়ে মার’লো আদাভানের উপর,আদাভান এবার শব্দ করে হেসে উঠলো। তৃধা চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,আদাভান হাসি বন্ধ করুন বলছি,আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি!
আদাভান মাথা মুছে তোয়ালে টা রাখলো, তৃধার কাছে এসে তৃধাকে কোলে তুলে নিলো। হঠাৎ করেই এমন হওয়ায় তৃধা হকচকিয়ে আদাভানের বাহু জড়িয়ে ধরলো।
আদাভান তৃধাকে নিয়ে ঘুরতে লাগলো,এক পর্যায়ে থেমে বললো–,,আমার অনেক খুশি খুশি লাগছে তৃধা,মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষটি হলাম আমি!
তৃধা মুখ ভেংচি কে’টে বললো-,,পাগ’লের সুখ মনে মনে!
আদাভান তৃধার দিকে ঝুঁকে বললো–,,পাগ”লের বউয়ের সুখ পা’গলের করা আদর গ্রহণে!
তৃধা আদাভানের মুখ চেপে ধরে বললো–,,চুপ নির্লজ্জ!আর একটা কথা বললে মুখে কস্টেপ লাগিয়ে দিবো।
আদাভানের চোখজোড়া হাসছে,সে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে তার
অর্ধাঙ্গিনীর দিকে!
চলবে….
#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব২১
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
রাতের খাবার টেবিলে তৃধা কে পাওয়া গেলো না,আজ একটু দেরিতেই খেতে বসেছে সবাই,কাজকর্ম সেরে রান্না চড়িয়েছে, সবাই ফ্রেশ হয়ে আসতে আসতে সময় লাগলো অনেকটা।
আদাভান হেলেদুলে এসে জোবানের পাশে বসলো,বাকি ছোটরাও বসে পড়েছে ইতিমধ্যে, মৃধা জিদান কে কোলে নিয়ে ঘুরছে ছেলেটা ঘুমিয়েছে ঠিকই যেই না বিছানাতে শুয়াতে যায় অমনি সে কি কান্না।তৃধাটাও সন্ধ্যার পর আর ঘর থেকে বের হয়নি, ওর কাছে দিয়ে যে একটু কাজে হাত লাগাবে সে জো নেই।
আমিনা,ফাহিমা,জোহরা বেগম হাতে হাতে সাহায্য করে সব খাবার টেবিলে রাখলো।
আমিনা বেগম আদাভান কে দেখে জিজ্ঞেস করলো–,,কিরে তৃধা কোথায়?
আদাভান মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে আবার মুখ ঘুরিয়ে নিলো,এটা মোটেও তার মা না, তৃধার মা!সব প’ল্টি বাজ যখন দেখো তৃধা তৃধা করে মাথা খারা’প করে দেয়।
আমিনা বেগম বিরক্ত হয়ে বললো–,,এই অস’ভ্য কথা কানে যায় না?মেয়েটা কে আবার কিছু করিস নাই তো তুই?তোর রুমে যেতেই তো কতো ভয় পাচ্ছিলো,শেষ বার তো তোর রুমে যাওয়ার কথা বলেই বের হয়েছিলো!
আদাভান অবাক না হয়ে পারলো না,তার মা কি বুঝাতে চাচ্ছে আসলে,সে তার বউকে মে’রে গু’ম করে দিয়েছে?
আদাভান দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,তোমার আদরের মেয়ে ঘুমাচ্ছে,আদর যত্ন করে করে তো মাথায় তুলে ফেলেছো,এমন ভাব করছো তোমরা আমি তোমাদের বাড়িতে ঘর জামাই থাকি,আর নিয়ম করে তোমাদের মেয়েকে চ’ড় থাপ্প’ড় মা’রি!যত্তসব, থাকবোই না আর বাড়িতে।
আশরাফ মজুমদার বলে উঠলো –,,হ্যাঁ, তাই ভালো চলে যাও,দু বেলা খেয়ে অন্ন ধ্বং”স করছো, আর কি যেনো বলছিলে আমার মেয়েকে তুমি চ’ড় দিবে?স্বপ্নেও দেওয়ার কথা ভেবো না, তোমার ওই হাত আর জায়গা মতো থাকবে না বলে দিচ্ছি!
আদাভানের অবস্থা দেখে বাকিরা হাসছে,বেশ জ’ব্দ হচ্ছে বেচারা।
আদাভান চেয়ার টেনে আবার বসলো,রাগে দুঃখে নিজের চুল টানতে মন চাচ্ছে, বাবা কে না হয় মানা যায় কিন্তু তার মা?ছেলে ভক্ত মা ছিলো তার, আর এখন দেখো যেনো চিনছেই না, মেয়েটা কালা’যাদু করছে ওর উপর তো করছে করছেই, ওর বাপ মারে ও ছাড়ে নাই,শিগগিরী বড় কোনো হুজু”রের কাছে যেতে হবে!
জোবান হেসে বললো–,,তা ভাই আমার শালিকা কি সন্ধ্যা থেকেই ঘুমোচ্ছে?
আদাভান বেশ বুঝতে পারলো কোন দিকে ইঙ্গি”ত করছে ভাই তার।
আদাভান প্লেটে ভাত নিতে নিতে বললো–,,করা ডো’জের ঘুমের ঔষধ দিয়েছি, আমার বউ হয়ে অন্য লোকের সাথে ডে’টিং ফে’টিং করা ছুটিয়ে দিতাম, বেয়া’দব হচ্ছে দিনকে দিন!
নাজিয়া বলে উঠলো–,,ভাইয়া খুব জ্ব’লছে তাই না?
আলিজা এদিকে ওদিক তাকিয়ে বললো–,,কি জ্ব’লছে?এই বড় মা গ্যাসের চু’লা অফ করো নাই?
অদ্ভুত চোখে তাকালো জোবান,বোনটা এতো মাথা মোটা কি করে হলো?
আদাভান মুখে খাবার তুলতেই নাদিম জিজ্ঞেস করলো–,,ভাইয়া কোন কোম্পা”নির ঘুমের ঔষ”ধ দিলা? বোন আমার সন্ধ্যা থেকে ঘুমাচ্ছে!
আদাভান স্বাভাবিক ভাবেই বললো–,,আমার নিজের তৈরি ঔ”ষধ, কোনো দোকানেই কিনতে পাওয়া যায় না।এক ডো’জেই তোর বোন ঘুমে বে”হুঁশ!
জোবান হো হো করে হেসে উঠলো, মৃধা চোখ পাকিয়ে তাকালো,আশ্চর্য লোক বড়রা ও তো সাথে আছে নাকি,খেতে বসেই এদের শুরু হয়ে যায়!
আলিজা আবার জিজ্ঞেস করলো–,, আজব হাসছো কেনো?সামান্য ঘু’মের ঔষ”ধ নিয়ে কি শুরু করলে তোমরা!
এবার আদিব হেসে উঠলো, পর পর নাদিম, নোভা,আভা।
স্নিগ্ধা চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করলো–,, তোমাদের আবার কি হলো?
আদাভান বিরক্ত হয়ে বললো–,,বেয়া’দবের দল সব!
নোভা বলে উঠলো–,,নিশি, তোরে তৃধা ঘুম থেকে উঠে সেই মাই’র লাগাবে দেখিস,তোর দোয়া তো কাজে লেগে গেছে!
চোখ ছোট ছোট করে তাকালো স্নিগ্ধা, মনে মনে বললো–,,সব কটাতে পা’গল হয়ে গেছে নিশ্চিত!
——————
আদাভান মৃধা কে বললো–,,মৃধা তৃধার জন্য খাবার দাও তো বোন।তোমার বোন খি’দেতে আমার মাথা ফাটা’তে দুবার ভাববে না!
মৃধা ছোট করে বললো–,,জেগে আছে নিচে নামলো না ক্যান?মেয়েটা দিন দিন ছোট হচ্ছে যেনো!
আদাভান খাবার সহ রুমে ঢুকলো,তৃধা ততক্ষণে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসেছে,বাহিরে আজ তেমন গরম পড়েনি,রাতের বেলা গোসল তাও ঠান্ডা পানিতে বেশ শীত লাগছে তৃধার।
সে কোনো রকম দৌড়ে এসে কাঁথার ভেতর ঢুকলো, আদাভান দেখলো মেয়েটার দৌড়াদৌড়ি।
টেবিলের এক পাশে খাবার রেখে বললো–,,খেয়ে তার পর ঘুমাও।
তৃধা নাক মুখ কুঁচকে বললো–,,দরদ দেখাতে হবে না আপনার,অসহ্য একটা লোক, বাড়ির সবাই কি ভাববে এখন,আমার মান সম্মান সব শেষ!
আদাভান তৃধার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো–,,সম্মান যাওয়ার মতো কি করেছি?একটু বউকে আদর ও করতে পারবো না?এ কেমন লজিক!বাড়িতে কি সবাই অবিবাহিত?তারা কিছু করে…
তৃধা দ্রুত এসে আদাভানের মুখ চেপে ধরে বললো–,,শা’লা বেহা’য়া পুরুষ, মুখের লাগাম তো সব বেঁচে দিয়েছেন।কিচ্ছু আটকায় না মুখে?এটা কে নিয়ে সারাজীবন থাকবো কি করে আমি!
আদাভান তৃধা কে সরিয়ে দিয়ে বললো–,,লাগাম তাও এখন আছে, স্টুডেন্ট লাইফে ইভটি”জিং করাটা বাকি রেখেছিলাম শুধু!
তৃধার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো,এ ব্যাটার তো শুধু চেহারা সুরতই সুন্দর বাকি সব তো পাতিলের তলা থেকেও বেশি কালা!
তৃধা কে হা হয়ে থাকতে দেখে আদাভান গিয়ে বসলো বিছানায়,তৃধা আকষ্মিক ভাবে বলে উঠলো–,,তার মানে ইয়ে টিয়ে সবই করে ফেলেছেন তখন?
আদাভান সরু চোখে তাকিয়ে বললো–,,হ্যাঁ করেছি তো?সবাই একটু আধটু করে ওই বয়েস!
তৃধার মন খারা’প হলো,মুখ ফুলিয়ে বললো–,,ভালো তো,একটু আগে আমার সাথে এসব নাটক কেনো করেছেন আপনি?অন্য মেয়েদের সাথে থেকে মন ভরেনি?আসতাগফিরুল্লাহ!আল্লাহ আমি তো জীবনে একটা প্রেম তো দূর পুরুষ মানুষের দিক ঠিকঠাক মতো তাকাই ও নি, তাহলে এমন আলুর মতো চরিত্রের জামাই আমারে ক্যান দিলা?
আদাভান বে”কুব হয়ে গেছে পুরো,কোন কথাকে কোথায় নিয়ে যায় মেয়েটা,ব্রে”ন এতো দ্রুত দৌড়ায়!
তৃধা বারান্দায় গিয়ে নিজের কাপড় গুলা এক প্রকার আ”ছাড় মে’রে দড়িতে মেলে দিচ্ছে।
আদাভান তৃধার কাছে গিয়ে বললো–,,বোকা মেয়ে মজা করছিলাম আমি,ওরকম কিছুই ঘটেনি সত্যি বলছি।
তৃধা কথা বললো না,আদাভান কে পাশ কাটিয়ে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
আদাভান হাত ধুয়ে আসলো,তৃধাকে টেনে তুলে প্লেট হাতে নিলো,তৃধা তো মুহুর্তেই মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।
আদাভান তৃধাকে টেনে যত্ন সহকারে বুকের সাথে ঠেস দিয়ে বসালো,মুখে তুলে দিলো ভাত।তৃধা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো তারপর মুখ ভেংচি কে’টে খেতে শুরু করলো।
খাওয়ার মাঝখানে আদাভান কে জ্বা’লাতে ভুললো না,একটু পর পর বলছে শীত লাগছে ফ্যান অফ করুন,আবার বলছে গরম করছে চালু করুন।ঝা’ল লাগছে, আপনি বেশি বেশি করে খাবার দেন কেনো?
আদাভান ধৈর্য সহকারে সব করে দিয়েছে একটা টু শব্দ ও করেনি।
তৃধার মুখ মুছিয়ে দিয়ে আদাভান মুখ খুললো–,,খাটা’নো শেষ?এবার সুন্দর মতো ঘুমাও!
তৃধা আদাভানের হাত চেপে ধরে বললো–,,না।
–,,মাই’র লাগাবো তৃধা,রাত ক’টা বাজে খেয়াল আছে?চুপচাপ ঘুমাও!
তৃধা শুয়ে পড়লো,আদাভান লাইট অফ করে এসে পাশে শুইয়ে তৃধার দিকে তাকিয়ে বললো–,,অবশেষে..
তৃধা আদাভানের দিকে তাকালো দুজন মুখোমুখি, তৃধা মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করলো–,,কি?
আদাভান তৃধাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো–,,তুমি আমার!
——————-
সকাল সকাল চেঁচামেচি তে ঘুম থেকে ধরফ'”রিয়ে উঠেছে বেশির ভাগ সদস্য।
রান্না ঘরে চা বসিয়ে ছিলেন ফাহিমা বেগম,শব্দ শুনে বসার ঘরে আসলেন,দারোয়ান পিছনে একজন আগন্তুকের সাথে টানা ত’র্ক করছে,আগুন্তক জোর গলায় ডাকলো–,,তৃধা তালুকদার, আমার সাথে চালাকি?বেরিয়ে আসো বলছি,আজ তোমাকে আমি দেখে নেবো!
মাহিরের কন্ঠ শুনে দৌড়ে আসলো সোনালী,ভয়ে হাত পা কাঁপছে তার, মাহির তো জানে না তৃধার কাছে সব প্রমান আছে!
আদাভান সিঁড়ির শেষ মাথায় দাড়িয়ে,গোলজার মজুমদার বিরক্তি নিয়ে বললো–,,এই অভদ্র ছেলে,আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমার নাত বউয়ের নাম ধরে উঁচু গলায় ডাকার সাহস কে দিয়েছে তোমায়?
তৃধা ততক্ষণে আদাভানের পেছনে এসে দাঁড়ালো,মাহির তাচ্ছিল্য করে বললো–,, এমন ভাব করছেন আপনার নাত বউ ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না?
আমিনা বেগম রেগে বললো–,, আমার বউমা কেমন তা আমরা বুঝে নিবো,তুমি কে বাপু?
গোলবাহার এসে দাঁড়ালো গোলজার মজুমদারের পাশে, কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো–,, এই বুড়ো তোমার গোষ্ঠীর কোন আপ’দ সাত সকালে আইসা চিল্লাই”তাছে?
গোলজার মজুমদার তেতে উঠে বললো–,,ওই বুড়ি সব কথায় বংশ টানো ক্যান?
গোলবাহার বলে উঠলো–,, তোমার বংশের মানুষ ছাড়া তাম’শা করার লোক দেশে কমই আছে!
মাহির বিরক্ত হয়ে বললো–,,আজব আপনারা ঝগ’ড়া করছেন কেনো?
গোলজার মজুমদার বলে উঠলো–,, এই ছোক’রা দুই’ডা মিনিট চুপ থাক তো,বুড়ির সাথে আজকে একটা বুঝাপড়া করে নেই,বিয়ে করে আসার পর থেকে মহিলা আমার বংশের পেছনে পড়ছে!সাধে কি বলি জী’নগত সমস্যা।
গোলবাহার বেগম রেগে বললো–,,বুড়ো ওইদিন ও আমার বংশ রে তুমি জি’নে ধরা কইছো, বার বার একই কথা মাইনা নিমু না আমি,করমু না তোমার সংসার,যামু গা যেদিক দু চোখ যায়!
তৃধা আদাভান কে খোঁচা মে’রে জিজ্ঞেস করলো–,,আপনার দাদা দাদি কি একই বংশের?একই দিনে উনাদের আকিকা দিয়ে নাম রাখছিলো?নাম দুইটা কেমন জম’জ,আবার ঝগ’ড়া করা দেখে মনে হয় ভাই বোন!
আদাভান অদ্ভুত চোখে তাকালো,নাম নাকি আবার জম’জ হয়!হায় আল্লাহ।
আদাভান চিবিয়ে চিবিয়ে বললো–,,ঝ’গড়া করতে একই বংশের হওয়া লাগে নাকি?তুমি যে সারাদিন এতো ঝ’গড়া করো তুমি তো তালুকদার বংশের মহিলা!
তৃধা চেঁচিয়ে উঠে বললো–,,কি বললেন আপনি আমি ঝগ’ড়া করি?সাহস তো কম না,সবাই জানে প্রথমে ঝ’গড়া কে শুরু করে!
সবাই এবার তৃধা আদাভানের দিকে তাকালো,আদাভান বুকে দু হাত গুঁজে বললো–,,ঝগড়ু’টে কোথাকার!
তৃধা রাগে ফোঁস ফোঁস করছে, রেগে বলে উঠলো–,,অস’ভ্য লোক, ঝগ’ড়া করে আপনার সতী’ন,আপনার নাতিন,আপনার চৌদ্দ গোষ্ঠী!
মাহির হা হয়ে তাকিয়ে, আরে কোথায় এসে পড়লো সে,একজনের পর আরেকজন শুরু হয়ে যায়!
গোলবাহার এসে বললো–,,ঠিক কইছছ নাত বউ এদের বংশেই যত দো’ষ,সব কটা হইছে ব’জ্জাত!
মাহির বলে উঠলো–,,আপনারা একটু থামবেন প্লিজ!
তৃধা কপাল কুঁচকে বললো–,, আরে মিয়া আপনি চুপ থাকেন,ফ্যামিলি ম্যা’টারে বা হাত ঢুকাচ্ছেন কেনো?
তৃধা আবার বলে উঠলো–,,মা তোমার ছেলেকে সাবধান করো বলে দিচ্ছি,আমার সাথে ঝ’গড়া করতে আসলে মুখে ক’স্টেপ লাগিয়ে দিবো বলে রাখলাম!
আমিনা বেগম বলে উঠলো–,,এই চুপ।আম্মা আব্বা আপনারা ও একটু শান্ত হন,এই ছেলে কেনো এসেছে আগে তা শুনি!
,,,,,,,,,
মাহির বলে উঠলো –,,আপনার বউ মা আমার সাথে প্রেম করেছে, কাল রাতে দেখা করবে বলে ডেকেছে,পরে আর আসেইনি!কেমন চিটিং”বাজ মেয়ে।
আদাভান দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,আমার বউ তোর সাথে প্রেম করবো?এ ও বিশ্বাস করার যোগ্য?ভার্সিটিতে পড়া কালিন তো একটু বয়স কম ছিলো তোর,দেখতে শুনতে মানুষ মানুষ লাগতো তখনই কেউ পাত্তা দেয় নাই,এখন দিবে ভাবিস কি করে?গা'”ঞ্জা খাইয়া আইসছছ নাকি সকাল সকাল!
মাহির রেগে বললো–,,আদাভান বেশি কথা বলার আগে নিজের বউ সামলা,তুই মনে হয় বউরে সুখে রাখতে পারস নাই,তোর গালফ্রেন্ড ও তো তোরে ছেড়ে আমার কাছে এসেছিলো,এবার আসতে চাচ্ছে বউ!আমার তো তোর পুরু”ষত্ব নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে।
তৃধা এবার বলে উঠলো–,,ওই ব্যাটা টাক’লা!বাসায় আয়না নাই?নাকি আয়না কেনার টাকা নাই।আপনার মতো বিবাহিত বে’ডার দিক আমগো বাড়ির কাজের আফা জরিনা ও তাকাইবো না!
মাহির বলে উঠলো–,,আমি বিবাহিত না!
তৃধা দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো–,,এটা তো হওয়ারই ছিলো,নিশ্চিত কোনো মেয়ে আপনাকে পছন্দ করে নাই,বিয়ে না করতে পারার শোকে এখন মাথায় সমস্যা দেখা দিয়েছে আপনার,ভদ্রলোকের বাড়িতে এসে অযথা ফালতু কথা বলছেন!পাবনা যান মিয়া এখানে আপনার কোনো কাজ নাই।
মাহির চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,, এই মেয়ে!
আদাভান মাহিরেরে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো–,,আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমার বউয়ের নামে উল্টো পাল্টা কথা বলবি তোকে ছেড়ে দিবো ভেবেছিস?জীবন নিয়ে ফিরতে চাইলে এখনই বেরিয়ে যা!
আদাভান এক প্রকার তেড়ে এসেছে, জোবান তার হাত টেনে ধরে বললো–,,কি করছো কি ভাইয়া।
আদাভান রাগ চেপে বললো–,,ওকে যেতে বল এক্ষুণি!
আদিব বলে উঠলো–,, আমার বোনের নামে এতো বড় অপবা’দ যখন দিয়েছে, প্রমান ও দেখিয়ে যেতে হবে,তা মিস্টার দেখি কি প্রমান আছে আপনার কাছে আমার বোনের বিরুদ্ধে!
মাহির নিজের ফোন বের করে ম্যাসেন্জারে ঢুকলো হাত উঁচিয়ে দেখালো কিছু একটা,আদিব ফোন তার থেকে টেনে নিয়ে সবার দিকে তাকালো।
নাদিম এসে বললো–,,দেখি কি আছে।
আদিব এক পর্যায়ে অট্টহা”সিতে ফে’টে পড়লো,হো হো করে হাসতে হাসতে বললো–,,একটা ছেলেকে আমার বোন মনে করেছে এই লোক,কি মা”রাত্মক মাথায় সমস্যা চিন্তা করা যায়!
নাদিম বলে উঠলো–,,আইডির নাম কুদ্দুস মিয়া,ওই আইডিতে মাহির নামক ব্যক্তি কুদ্দুস নামক ব্যক্তির সাথে টানা দশ দিন কথা বলেছে,মানে প্রেম করেছে!ছেলের সাথে ছেলের প্রেম?নাউজুবিল্লাহ!
মাহির হকচকিয়ে গেলো দ্রুত নিজের মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো সত্যি, নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না ও,তৃধা তালুকদার আইডিটা কি করে মুহুর্তেই পরিবর্তন হয়ে গেলো কিছুই মাথায় ঢুকছে না তার।
আদাভান ভ্রু কুঁচকে সবার দিকে তাকালো,এ নিশ্চিত এই সব গুলার মিলিত কাজ।
মাহির সোনালীর দিকে তাকালো, সোনালী ইশারা দিয়ে কিছু একটা বলছে।
তৃধা সোনালীর পাশে গিয়ে দাড়িয়ে পেছন থেকে তার হাত মুচড়ে ধরে বললো–,,স্বামির জন্য দরদ হচ্ছে নাকি আপা?
চিন্তা করবেন না,আপনার স্বামিকে একা ছাড়বো না,তার সাথে আপনাকে ও পাঠাবো!
মাহির হুট করে পকেট থেকে পিস্ত”ল বের করে আদাভানের দিকে ধরলো,তৃধা চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,পাগ’ল হয়ে গেছেন আপনি?কি করছেন টা কি?
মাহির তৃধার হাত চেপে ধরে বললো–,,তোকে আমার চাই মানে যে কোনো মূল্যে চাই!
তৃধা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো–,,ম’রে গেলেও তো তোর মতো শয়’তানের হবো না আমি।
মাহির হেসে বললো–,,তাই?কার জন্য আমার হবি না?ওই এরিশের জন্য? যদি ওকেই মে’রে দেই তো?তখন তুই আমার!
তৃধা বলে উঠলো–,,মাহির সোনালী আপনার স্ত্রী, তাকে নিয়ে বিদায় হন,আদাভানের উপর যদি একটা টোকাও পড়ে আপনাকে নিজ হাতে খু’ন করবো আমি!
আদিব বলে উঠলো–,,তৃধা শান্ত হ এটা রাগ করার সময় না,ওই মাহির একটা পা’গল,গু’লি চালিয়ে দিতে পারে!
তৃধা নিজের হাত এক ঝট’কায় ছাড়িয়ে নিয়ে আদাভানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো,মাহিরের হাতে থাকা বন্দু”কের নল নিজের মাথা বরাবর রেখে বললো–,,চালা গু’লি দেখি কতো সাহস!নাকি পিস্ত’লে গু’লি নাই।
আদাভানের ক’লিজা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম এই পাগ’ল মেয়ে করছে টা কি!
আদাভান বলে উঠলো–,,তৃধা কি করছো এসব,সরো সামনে থেকে!
তৃধা রেগে বললো–,,সব দোষ আপনার, চুপ থাকুন এবার আমাকে ম’রতে দিন!
আর মিস্টার মাহির আমাকে মা’রুন তার পর নিজের বউ কে নিয়ে সুখে থাকুন,এসব টানা হেঁচড়া একদম পছন্দ নয় আমার।
মাহির সোনালীর দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য করে বললো–,,সোনালী আর বউ?ওর মতো মেয়েকে কয়েকদিন বে”ড পার্ট”নার বানানো পর্যন্তই মানায়।সারাজীবন সাথে থাকার জন্য তো তোমার মতো মেয়ে দরকার,ক’চি, হ’ট….
আদাভান তেড়ে এসে মাহিরের গলা চেপে ধরে বললো–,,তোর ওই নোং’রা মুখে তৃধা কে নিয়ে আর একটা কথা বললে তোকে আজকে এখানেই শেষ করে ফেলবো!
সঙ্গে সঙ্গে একটা গু’লির আওয়াজ হলো,আদাভানের হাত আপনাআপনি ছিটকে সরে এলো,তার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে তৃধা!তৃধার উপর গু’লি লাগেনি তো!
চলবে….