#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব২২
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
আদাভান এদিকে ওদিক মুহুর্তেই উদভ্রান্তের ন্যায় তৃধাকে খুঁজলো,ওর মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে এখন, আশেপাশে অন্য কেউ আছে কিনা মনে নেই,চোখজোড়া তৃধা কে খুঁজতে ব্যস্ত।
তৃধা আগের জায়গা থেকে ছিটকে কিছু কদম দূরে গিয়ে দাড়িয়ে আছে,আদাভান তৃধার মাথা থেকে শুরু করে হাত, পা সব ভালো করে পরখ করে বললো–,,তো..মার লাগেনি তো?ব্যাথা পেয়েছো?
তৃধা হতবাক হয়ে আদাভানের দিকে তাকিয়ে আছে,আদাভান এক পর্যায়ে তৃধাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।ছাড়ার নাম গন্ধ নেই,যেনো ছেড়ে দিলেই তৃধা হারিয়ে যাবে।
তৃধা আদাভানের পিঠে এক হাত রেখে শান্ত কন্ঠে বললো–,,আমি ঠিক আছি আদাভান,সবাই দেখছে ছাড়ুন!
আদাভানের একরোখা জবাব–,,দেখুক,সামান্য জড়িয়ে ধরেছি, খেয়ে ফেলছি না তোমাকে,কথা বলবা না!
তৃধা ব্যস্ত চোখে আশেপাশে তাকালো যতটুকু দেখা যায়,গু”লি টা লাগলো কার?
তৃধা এক প্রকার জোর করেই নিজেকে আদাভানের থেকে ছাড়ালো,বাড়ির সবাই এখনো শক’ড দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
মৃধা জিদান আর পিহুর সাথে ঘরে ছিলো।শব্দ পেয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসলো বাচ্চাদের রেখে।
মেজেতে পড়ে আছে সোনালী!আদাভান, মাহিরের ধস্তা”ধস্তির ফলে মাহিরের হাত অন্যদিকে ঘুরে যায়, ফলস্ব”রূপ গু”লি গিয়ে লাগে সোনালীর উপর।
এরই মধ্যে পু’লিশ এসে হাজির হয় বাড়িতে,তৃধা সোনালীর পাশে গিয়ে বসে,আদাভান কে ডেকে বললো–,, আদাভান সোনালী কে হসপিটালে নিতে হবে!
মাহির নিজেও অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,ও তো সত্যি সত্যি কাউকে গু”লি করতে চায়নি,শুধুই ভয় দেখাতে এনেছিলো!
সোনালীর র’ক্তে ভিজে উঠেছে সাদা মেজে, তৃধা দাঁতে দাঁত চেপে আদাভানের দিকে তাকিয়ে, কি অদ্ভুত লোক এটা,একটা মানুষ মা”রা যাচ্ছে যতই শত্রু’তা থাকুক নূন্যতম সাহায্য টুকু করবে না?
তবে তার আর প্রয়োজন পড়েনি,সোনালীর সেখানেই মৃ”ত্যু ঘটে!তৃধা হা হয়ে তাকিয়ে আছে এমন মৃ”ত্যু তো কেউই কামনা করেনি,তারা তো চেয়েছিলো যাতে সোনালী আর মাহির নিজেদের অপরা’ধের শা’স্তি পাক শুধু।কিন্তু এভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় কিছু সময়ের জন্য সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে যায়!
কনস্টেবল এসে সোনালীর লা”শ নিয়ে যায়,মাহির কে সাথে করে নিয়ে যায় তারা,এতোদিন হলে বড়জোর প্রতা’রনা করার জন্য কেই’স হতো,এখন নিজের কর্ম দো’ষে মা’ডার কেই’সের আসা”মি হয়ে গেছে মাহির!
কেইস ফাইল সহ যাবতীয় ফর্মালিটি পালন করার জন্য গেলো আশরাফ মজুমদার, সাথে আদিব,জোবান।
মুহুর্তেই গুমোট হয়ে এলো পরিবেশ,নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেলো মনের মাঝে,সবাই চেয়েছিলো সোনালী এখান থেকে চলে যাক, শা’স্তি পাক, এখন তারই মৃ”ত্যুর শোক পালন করছে মনে মনে,এ কেমন যেনো অদ্ভুত মানুষের হৃদয়, কখন কি চায় বুঝা বড় কঠিন!
———————–
আমরা মানুষ, সব কিছুর স্মৃতি ভুলে সামনে এগিয়ে যাওয়াই হয়তো আমাদের ভবিতব্য!
সহজেই খারা’প দৃশ্যপট কে মন থেকে দূরে সরিয়ে আনন্দে মেতে উঠি,জানা অজানা সব স্মৃতির ভিড়ে এসব ঠুন’কো বিষয় আঁকড়ে ধরে মন খারা’প করে বসে থাকাটা বোকামি।
পরের দিন আলিজার গায়ে হলুদ,সবাই মিলে বাড়ির কাজে হাত লাগিয়েছে,মেহমানের পরিমান বাড়ছে,বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে,অন্যের জন্য দুঃখ বিলাস করে মেয়েটার জীবনের সুন্দর মুহুর্ত গুলো কেউই ন”ষ্ট করতে চায় না।
পুরো দমে কাজে লেগে পড়েছে ভাই বোনেরা,সবাই ম্যাচিং করে, শাড়ি,পাঞ্জাবি কিনেছে।কে কিভাবে সাজবে তা নিয়ে প্ল্যানিং তো কখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে।
শুধ মুখ ভার করে রেখেছে তৃধা,তার পেছনে অবশ্য কারন আছে,আদাভান তৃধাকে আচ্ছামতো কথা শুনিয়েছে আগের ঘটনা নিয়ে,কেনো তৃধা পাকামো করে মাহিরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলো?কিছু হয়নি যদি কিছু হয়ে যেতো?এতো দয়ার সাগর হতে ওকে কে বলেছে?আদাভান কি তৃধা কে একবার ও বলেছে ওর জন্য ম’রতে?সব সময় তো বাচ্চামো করে ওইদিন এতো বড় হতে কে বলেছিলো? কাজকর্ম তো কিছু নাই সারাদিন লাফা”লাফি করে আর উল্টোপাল্টা কাজ করে আদাভানের মাথা খারা’প করে।
সব কিছু শুনে তৃধা আদাভান কে কিছু বলেনি তবে আদাভানের সাথে রাগ করে বসে আছে,যা সে সব সময় করে,তবে আজকে আদাভান তৃধার রাগ ভাঙ্গা”য়নি উল্টো সে নিজেও রাগ করে বসে আছে।
দুদিকে দুজনের মন খারা’প তবে কেউই আগ বাড়িয়ে কথা বলতে রাজি নয়,তৃধা তো আদাভানের কথা গুলোকে খোঁচা মা’রা বলে ধরে নিয়েছে।
কতোবড় কথা তৃধা কোনো কাজ করে না!তৃধা ও কম কিসে রাগ করে রান্না ঘরে ঢুকেছে, সে কি রান্না করতে পারে না নাকি?সবাই তো তাকে কিছু করতে দেয় না,আর তাদের আদরের ছেলের এসব সহ্য হয় না, সরাসরি বললেই তো পারে বিয়ে করে এনেছি কি সাজিয়ে রাখার জন্য? যাও গিয়ে কা’মলা খাটো!
তৃধা সবাইকে রান্না ঘর থেকে বের করে দিয়েছে,সে একাই আজকে রাতের জন্য সব রান্না করবে।আদাভান কে দেখিয়ে দিবে সে ও পারে।
আমিনা বেগম কপাল চাপড়ালেন ছেলেটা এমন হলো কি করে?আর মেয়েটার ও কি রাগ কম,দুটোতে সংসার কি করে করবে?কেউ কাউকে এক চুল ছা’ড় দিতে রাজি নয়।
এতো মানুষের রান্না করা কি মুখের কথা?করতে পারলেও ও তো ছোট মানুষ কেনই বা করতে যাবে,সবাই মিলে করুক।
আমিনা বেগম রান্না ঘরের দরজায় ধাক্কা দিয়ে বললো–,,তৃধা মা না ভালো দরজা খোল,ওই গা”ধাটার উপর রাগ দেখিয়ে এতো কাজ করা লাগবে না তোর,বের হ মা সবাই মিলে করবো!
আদাভান সিঁড়ি দিয়ে নামছিলো তখন গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,করছে যখন করতে দাও মা,হাত টা’ত কা”টুক ঠিক বেরিয়ে আসবে!
তৃধা ভেতর থেকে চেচিয়ে বলে উঠলো–,, আমার হাত কা’টুক না হয় আগু”নে জ্ব’লে যাক তাতে আপনার কি?যদি আরেকবার আমার বিষয় কথা বলতে আসেন তো বেশি ভালো হবে না!
আদাভান ও রাগে হনহন করতে করতে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।
সোফায় গিয়ে বসলো আমিনা বেগম,মৃধা গিয়ে ডাকলো–,,তৃধা ছেলেমানুষী করবি না বের হ,আচ্ছা তুই করিস সব আমাকে জায়গা দে সাহায্য করবো শুধু!
তৃধা প্রায় দু ঘন্টা পর দরজা খুললো,হাফ ছেড়ে বাঁচলেন যেনো আমিনা বেগম, তৃধার ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা,
হা হয়ে তাকিয়ে আছে রোজিনা বেগম।
ফাহিমা বেগম বললো–,,কি করেছিস পা’গল মেয়ে,দেখি দেখি সর সর বাকি টুকু আমরা করে নিবো অনেক করেছিস আর করা লাগবে না!
তৃধা সবজি কা’টা থেকে শুরু করে ধোয়া সব কিছু শেষ করে চুলায় রান্না চাপিয়ে দিয়েছে ইতিমধ্যে, মৃধা তৃধার দিকে তাকিয়ে বললো–,,মা দেখলে অ”জ্ঞান হয়ে যেতো রে তৃধু,তার যে মেয়ে এক গ্লাস পানি উঠিয়ে খায়নি সে আজ এতো গুলো মানুষের রান্না একা হাতে করছে!
তৃধা নাক ফুলিয়ে বললো–,,মজা নিবা না আপাই!
মৃধা বুঝলো তৃধা বেশ চ’টে আছে।বাকি কাজ শেষ না হওয়া অব্দি রান্না ঘর থেকে বের ও হলো না।
তৃধা রান্না ঘর থেকে বের হয়ে রুমে গেলো রাত নয়টায়,তৃধা বাথরুম থেকে গোসল করে এসেই বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়লো। সত্যি কাজটা বেশিই করা হয়ে গেছে,জীবনে এতো কাজ এক সাথে করেনি কখনো।
গা হাত পা সব ব্যাথায় টন’টন করছে।
আদাভান রুমে আসলো আরো কিছু সময় পড়,সব ভাই বোনরা মিলে ঘুরেছে সারাদিন,শপিং টুকটাক বাকি ছিলো ও গুলোও গুছিয়ে নিয়েছে এর মধ্যে, সারা বিকেল সন্ধ্যা ওরা সবাই আড্ডা দিয়েছে কিন্তু সেখানে তৃধা ছিলো না,তৃধা না থাকলে নাকি জমে না বলে বলে আফসোসের আর কোনো বাকি রাখেনি একজনও,সবাই আদাভানের দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছিলো আর তৃধার কথা বলছিলো যেনো আদাভানই সবচেয়ে বড় ভিলে”ন!
আদাভান কম মিস করেনি তৃধা কে,একাই একশো লাফা’লাফি করার জন্য, কি ভাবখানা নিয়ে রান্না ঘরে গেলো পরে আর মহাশয়ার কোনো দেখাই মিললো না।বেশ উন্নতি হয়েছে যা বলছে ঠিকঠাক মনোযোগ সহকারে করছে, ভালো!
আদাভান রুমে এসেই দেখেছে লাইট বন্ধ, বিছানায় তৃধা শুয়ে আছে,আদাভান লাইট জ্বা’লালো তখনই,এতো আরামে ঘুম বের করে দিবে এই মেয়ের।
তৃধা কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না,চোখ বন্ধ তার।আদাভান ভ্রু কুঁচকালো এতো তাড়াতাড়ি ঘুম?
আদাভান নিশ্চিত হওয়ার জন্য চোখের সামনে দুই তিনবার হাত নাড়ালো।
তখনই তৃধা চোখ খুলে তাকালো,আদাভান ভরকে গেলো তৃধার চোখ দেখে লাল হয়ে আছে পুরো।মেয়েটা কান্না করেছে? নাকি ঘুম পেয়েছে?
তৃধা এক পাশ ফিরে আবার চোখ বন্ধ করলো।আদাভান ভাব নিতে গিয়েও পারলো না,সে ছোট করে জিজ্ঞেস করলো–,,রাতে না খেয়ে ঘুমাচ্ছো কেনো?
তৃধা কোনো ঝা’মেলা করলো না জড়ানো কন্ঠে বললো–,,খিদে নেই,অনেক ঘুম পাচ্ছে!
আদাভান অবাক হয়ে তাকালো,ঝ’গড়া করেনি তৃধা?এ ও হওয়ার ছিলো!
তৃধা ঘুমিয়ে পড়লো মুহুর্তেই,আদাভানের কেমন কেমন যেনো লাগছে,তৃধা কেনো চুপ করে থাকবে?ওর কথা না শুনলে আদাভানের ভালো লাগে না,এ মেয়ে কে চুপ করে থাকা মানায় না,এতোদিন ঠিক রাগ করতো আর যাই করতো জোর করে হলেও কথা বলতো,তাহলে আজ কেনো চুপ থাকবে?
আদাভানের ইচ্ছে হলো তৃধা কে টে’নে তুলে ইচ্ছে করে ঝ’গড়া করবে,যা খুশি হোক তৃধা ওর মাথা ফাটি’য়ে দিলেও আপত্তি নেই।
তৃধার বাহুতে আলতো ঠেলে আদাভান বলে উঠলো–,,এই উঠো বলছি,বিছানায় আমার আগে ঘুমাতে পারবে না তুমি।যতক্ষণ না আমি ঘুমাচ্ছি ততক্ষণ তাকিয়ে থাকতে হবে তোমায়!না হয় তুলে নিয়ে বাথরুমে ছুঁড়ে মার’বো!
তৃধা কপাল কুঁচকে নিলো,ধীর কন্ঠে বললো–,, আদাভান কেনো এমন করছেন?আমাকে এখানে দেখে বিরক্ত লাগছে আপনার?চলে যেতে বলছেন?
আদাভান তৃধার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো–,,তা কখন বললাম।
তৃধা দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে গেলো,ওড়না গায়ে জড়িয়ে রুম থেকে বের হতে হতে বললো–,,এবার শান্তিতে থাকুন!
আদাভানের সামনে থেকে তৃধা চলে গেলো,আর আদাভান হা হয়ে তাকিয়ে কি আশ্চর্য ব’কা দিয়েছে দেখে এমন করবে?একটুও মায়া নেই এই মেয়ের মনে?অসহায় জামাই টাকে ফেলে চলে যেতে পারলো?সবাই কে গিয়ে তো বলবে আমি তাড়িয়ে দিয়েছি,তখন?
তৃধা গিয়ে ঢুকলো গোলবাহারের ঘরে।
গোলবাহার তৃধা কে দেখেই বললো–,,তা বইন কি মনে কইরা আমার কাছে?
তৃধা বিছানায় বসে বললো–,,তোমার নাতি ঘর থেকে বের করে দিছে!তার নাকি এই মুহুর্তে আমার মুখ দেখতে ইচ্ছে করছে না, বিছানায় ঘুমাতে দিবে না। তাই চলে এসেছি!
গোলবাহার বেগম তৃধা কে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে বললো–,,বোন সো”য়ামীর লগে রাগ কইরা থাকন ভালা না।
তৃধা গোলবাহার বেগম কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,আমি এক ফোঁটাও রাগ দেখাইনি রাতে,ভদ্রলোকের মতো কথা বলেছি তাও তোমার নাতির তে’জ কমেনি,রুমে গিয়ে ভালো ম’ন্দ কিছু না, রুম থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে,তুমিও কি থাকতে দিবে না নাকি?
তৃধা ইমোশনাল ব্লা’কমেইল করলো অনেকটা,গোলবাহার বলে উঠলো–,,দেখো কি বলে মেয়েটা,তুই এখানেই থাকবি আমার লগে।ওই বুড়ো টাকে নাতির কাছে পাঠিয়ে দিবো,দুটো হয়েছে এক জাতের, একই রক্ত কিনা গায়ে।
তৃধা খুশি হয়ে বললো–,,তাহলে আমি শুয়ে পড়ি এখন,আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে!
গোলবাহার হাসলেন,মেয়েটা বাচ্চাই রয়ে গেলো।
———————
আমিনা বেগম তৃধার খুঁজে ঘরে গিয়ে দেখলো আদাভান বিছানায় বসে আছে।
আমিনা বেগম জিজ্ঞেস করলো–,, কিরে তৃধা না ঘরে এসেছিলো?
আদাভান বললো–,,উঠে কোথায় যেনো গেছে।
আমিনা বেগম আদাভানের পাশে বসে বললো–,,কিছু কথা বলি রাগ করবি না তো?
আদাভান নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো–,, কি যে বলো না রাগ করবো কেনো?
আমিনা বেগম হেসে বললো–,,তৃধার সাথে আমরা তোকে এক প্রকার জোরজ”বরদস্তি করেই বিয়ে দিয়েছি,মানছি এটা আমাদের ভুল,তৃধার অতো বয়স নয়, বয়সেও তোর থেকে অনেকটা ছোট ভুল করবে বেশি এটাই স্বাভাবিক, তুই যেমন মেয়ে পছন্দ করিস তৃধা তেমন নয় সম্পূর্ণ বিপরীত ও বলা চলে! তেমন কোনো চাওয়া পাওয়া নেই মেয়েটার,যেমনই হোক তোকে বুঝার চেষ্টা করে,তোর বিপ’দে তোকে ছেড়ে চলে যায় নি।ছেলেমানুষী করে হোক বা যেভাবেই হোক তোকে সাহায্য করেছে,ওর কাজ করার ধরন ভিন্ন, হাসিখুশি যেমন তেমন রাগ, জে’দ অভিমান টাও বেশি।তৃধা খুব চা’পা স্বভাবের মেয়ে, যদি এমন কোনো কিছু করিস জীবনে যা ওর পছন্দ হয়নি বা তোর প্রতি তীব্র অভিমান হয়েছে ওর তোকে কোনো দিন বলবে না।চুপচাপ ধীরে ধীরে তোর থেকে দূরে চলে যাবে সেদিন শত চেষ্টা করেও ফেরাতে পারবি না।
মানলাম তোর রাগ হয় ওর প্রতি, বুঝিয়ে বলবি একবার দুইবার না হোক তিন বারের মাথায় বুঝবে তোর কথা শুনবে।সব সময় রাগ দেখিয়ে যদি ব’কা ঝকা করিস তো ও আর তোর কাছে ওর নিজের কথা বলবে না,তোকে মূল্য দিবে না।মেয়ে মানুষ আহ্লাদী তাদের সাথে যত বেশি নরম হওয়া যায় তত ভালো,কঠোর হলে ওরা নিজেদের ও কঠোর বানিয়ে নেয়,তখন আর কিছু করার থাকবে না।থাকতে মূল্য দে, হারিয়ে গেলে ফিরে পাবি না।তৃধা জীবন সঙ্গী হিসেবে ম’ন্দ নয়!
আদাভান তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো–,, কি এমন করলাম যার জন্য এগুলো শুনাচ্ছো?
ওকে শুরুর দিকে আমি একদমই সহ্য করতে পারতাম না এটা সত্যি, আর আমরা একসাথে থাকি ও নি প্রথম কয়েক মাস।দাদু দাদি যাওয়ার পর এক সপ্তাহের জন্য এসেছিলো,তার পর আবার ও ওর মতো আর আমি আমার মতো থাকতাম।তোমাদের আমরা মি’থ্যা বলেছিলাম!
তারপর আমার মন পরিবর্তন হলো ওকে একপ্রকার জোড় করে নিয়ে এসে নিজের সাথে থাকতে বলি,ও যেমনই হোক ওর সঙ্গ আমাকে এতোটাই মুগ্ধ করেছে এখন ওকে ছাড়া থাকার কথা কল্পনাতে ও ভাবতে পারি না আমি, হারিয়ে গেলে কি করে থাকবো মা?
আমিনা বেগম মৃদু রাগ দেখিয়ে বললো–,,থাকতে যখন পারবে না,রাগ কমাও, দুজন মানুষ এক সাথে থাকতে হলে একজনকে একটু বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, মানিয়ে নিতে হবে এটাই স্বাভাবিক। যদি দুজনের একজনও মানিয়ে না নিতে পারো তো যতই ভালোবাসা থাকুক এক সাথে থাকতে পারবে না!
আদাভান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো–,,একটু ব’কাও দেওয়ার অধিকার নেই আমার?
আমিনা বেগম উঠে দাড়িয়ে বললো–,,তৃধা তোমার প্রতি রাগ করে সারাদিন কাজ করলো,ওর শরীল কেমন আছে একবারও জানতে চেয়েছিস?ওর কিছু হয়েছে কিনা বুঝতে পেরেছিস?পারিসনি তো পারবি কি করে,ই’গো কমা জীবনে শান্তি আসবে!
আমিনা বেগম বেরিয়ে যেতে যেতে বললো–,,তৃধার দু হাতে দুটো করে চারটা ফো’স্কা পড়েছে,এক হাত বা’জে ভাবে কে’টে গেছে।তুই জানতে পেরেছিস?এবার নিজেকে প্রশ্ন কর তোর ভালোবাসা কতোটুকু খাটি!
আমিনা বেগম যে আদাভানের মনের ভি’তর নিয়ে বো’মা টা ফাটি’য়েছেন তা আর বুঝতে বাকি রইলো না তার।
তৃধা অভিমান করে কথা বলেনি এটা আদাভান বুঝতে পেরেছে ও তো সব সময় মেয়েটার রাগ ভাঙ্গায়, যা বলে তাই করে,আর আজ দেখো একদিন মাত্ররো ও রাগ দেখিয়েছে,এতেই এতো কিছু, এতো অভিমান?আর হবেই না কেনো,নিজ মনে ভেবে ভেবে যে ব্যক্তি সাত দিন দূরে গিয়ে বসে থাকতে পারে তার দ্বারা সব সম্ভব। এখন আগে তৃধা কে খুঁজতে হবে আদাভানের!
আদাভান ঘর থেকে বের হতে যাবে তখনই গোলজার মজুমদার ভিতরে আসলেন।আদাভান দাদুকে ঘরে আসতে দেখে বললো–,,তুমি এখানে?
গোলজার মজুমদার বিছানায় গিয়ে বসে বললো–,,তোর দাদী বের করে দিছে বললো তোর সাথে এসে থাকার জন্য।
আদাভান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো–,,দাদু আমি বিবাহিত, আমার বউ আছে একমাত্র বউ ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে বিছানায় থাকতে পারবো না আমি!
গোলজার আশেপাশে তাকিয়ে বললো–,,তোর বউ তো এখানে নেই,এখন থাকতে সমস্যা ও নেই তুই বেশি কথা বাড়াস না।
আদাভান কোমরে দু হাত রেখে বললো–,,দাদু দেখো ভালোয় ভালোয় যাও বলছি,তুমি তোমার বউ নিয়ে সুখে থাকো আমি আমার বউ নিয়ে,অযথা সতী”নের মতো ব্যবহার করবা না।
গোলজার এবার বিরক্ত হয়ে বললো–,, বউ বাইর কইরা দেওয়ার সময় মনে ছিলো না হত”চ্ছাড়া? তোর বউ এখন আমার বউয়ের লগে থাকবো,তুই আগে ঝা’মেলা করেছিস তোর জন্য আজ আমি বউ ছাড়া!
আদাভান ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো–,,আমার বউ আমি নিতে যাচ্ছি,তুমি বের হও বুড়ো!
তৃধা রাতে ছাদে আড্ডায় ও আসেনি কারো সাথে দেখাও করেনি এটা নিয়ে ছোটদের মধ্যে বেশ কথা বার্তা হচ্ছে।
আলিজা বললো–,,ভাইয়াটাও না বেশি বেশি।ভাবিমনি ভাইয়াকে কতো ভালোবাসে তাই তো তাকে বাঁচাতে চেয়েছিলো,আর ভাইয়া কিনা এই বিষয় নিয়ে তাকে কথা শুনিয়ে দিলো?নিশ্চিত ভাবি মনির অনেক মন খারা’প তাই আসেনি একবারও।
নোভা বলে উঠলো–,, এতো সময় রাগ করে থাকার মতো মানুষ তো তৃধা না,অন্য কোনো কাহিনি নেই তো!
নাদিম বলে উঠলো –,,যত সব ফাল”তু চিন্তা।দেখবি সকাল সকাল পে”ত্নীটা হাজির।
স্নিগ্ধা বলে উঠলো–,,তোমরা কি মনে করো আপুকে বলোতো? সে কি একটু মন খারা’প ও করতে পারবে না?সব সময় নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে কথা বলে দেখে মূল্য দাও না যেদিন আর বলবে না সেদিন বুঝবে!
স্নিগ্ধা উঠে চলে আসলো,আদিব বিরবির করে বললো–,, পুরাই তৃধার মতো হয়েছে!
—————-
আদাভান কে ঘরে ঢুকতে দিবে না গোলবাহার বেগম,আদাভান গোলবাহারের পা জড়িয়ে ধরে বসে পড়লো নিচে,ছোটরা নিচে নেমে দেখলো আদাভানের এসব কান্ড,গোলবাহারের মন গললো না তিনি নিজের কথায় অনড়।
আদাভান আকুতি মিনতি করে বললো–,,দাদী বিশ্বাস করো শুধু একবার দেখেই চলে আসবো,তুমি দরজায় দাঁড়াও আমি যাবো আর আসবো!
গোলবাহার অবশেষে এক পলক দেখার সুযোগ দিলো আদাভান কে,আদাভান সুযোগ বুঝে ঘরে ঢুকেই দরজা আটকে দিলো,সবাই আদাভানের অবস্থা দেখে হো হো করে হাসলো,গোলবাহার বেগম মিথ্যা রাগ দেখিয়ে বললো–,,দাদু ভাই কাম”ডা ভালা হইলো না কিন্তু, বাইর হ ঘর থাইকা।
আদাভান বলে উঠলো–,,তুমি যাও তোমার সোয়া”মী তোমার অপেক্ষায় বুড়ি।
আদাভান তৃধা ফ্যাকা’শে মুখের দিকে তাকালো,বেঘো”রে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা,আদাভান ধীর পায়ে গিয়ে পাশে বসলো।তৃধার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ালো,পর পর চোখের পাতা, গাল, থুতনি স্পর্শ করলো।
তৃধা চোখ মুখ কুঁচকালো খানিক টা,আদাভান তৃধার হাত ধরলো বেন্ডে”জ টা চকচক করছে হাতে,আদাভানের হৃদয় ক্ষতবি”ক্ষত হলো মুহুর্তেই, তৃধার হাতের দিকে তাকিয়ে থেকেই এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে, গিয়ে পড়লো তৃধার হাতে!
আদাভান তৃধার দু হাতের তালুতে চুমুতে ভরিয়ে দিলো।
তৃধার দু হাত বুকের সাথে চেপে ধরে বললো–,,এটা তুমি কি করলে প্রজাপ্রতি!আমার রাগ সব সময় নিজের উপর কেনো ফলাও?
তৃধা নড়েচড়ে উঠলো,আদাভান তৃধার গালে হাত রেখে তাকিয়ে রইলো বেশ কিছুক্ষণ।
তৃধার পা দুটো নিজের কোলের উপর রেখে আলতো হাত টি’পে দিতে লাগলো,তৃধা তো সেই কখনই সজাগ হয়েছে শুধু চোখ মেলেনি,সে ও দেখতে চায় পাগ,লটা কি কি করতে পারে।
হুট করেই আদাভান তৃধার পা নামিয়ে রাখলো,তৃধার দিকে ঝুঁকে পিঠের নিচে হাত রেখে টেনে এনে বুকের সাথে চেপে ধরলো শক্ত করে।উষ্ণ আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিয়ে বললো–,, আমার সাথে চালাকি?বেয়া’দব হয়ে যাচ্ছো দিন দিন।
তৃধা হেসে উঠলো এবার,আদাভান তৃধার দিকে তাকিয়ে বললো–,,জ্ব’রের ঔষধ খেতে হবে এক্ষুনি!
তৃধা আদাভান কে সরিয়ে দিয়ে বিছানা থেকে নামতে চাইলো,আদাভান তৃধাকে চে’পে ধরে বললো–,,মা”র খেতে চাচ্ছো এখন আমার হাতে?
তৃধা অবাক চোখে তাকিয়ে বললো–,,আপনি জীবনেও বদলাবেন না!
আদাভান তৃধা কে বসিয়ে বললো–,,জ্ব’রের মৌসুমে প্রেম বাড়ে জানো তুমি?
তৃধা নাক মুখ কুঁচকে বললো–,,আমি অসুস্থ চোখে পড়ছে না আপনার?পড়বেই বা কেনো আপনি তো নিজের মন যা বলে তাই করেন,অন্য মানুষের ইচ্ছের মূল্য কবেই বা দিয়েছেন!
আদাভান তৃধার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে বললো–,,তাই তো!ঘুমাও,নয়তো এখন…
তৃধা ফটাফট শুয়ে পড়লো,আদাভান সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
————-
সকালে ঘুম থেকে উঠেই আদাভানের চেঁচামেচি শোনা গেলো–,, মা ও মা তুমি কোথায়?আমার বউকে খুঁজে পাচ্ছি না কেনো?ও আমাকে ছেড়ে চলে গেলে কিন্তু আমি বসে বসে কাঁদবো! মা ওই মা তৃধা চলে গেছে আমাকে ছেড়ে আমি খারা’প তাই বলে এভাবে চলে যাবে?আমাকে দুটো চ’ড় দিতো রাগ হলে।এবার আমি কি নিয়ে থাকবো!
আশরাফ মজুমদার বিরক্তি নিয়ে বললো–,,ষাঁ’ড়ের মতো চিল্লা”চিল্লি করছিস কেনো?
আদাভান জোরে ডেকে বললো–,, বাবা আমার বউ কে খুঁজে পাচ্ছি না, চলে গেছে তাকে এনে দাও প্লিজ!
চলবে…..
#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব২৩
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
আদাভান সোফায় হতাশ চিত্তে বসে আছ,বাড়ির কেউ তার কথা গুলো যেনো কানেই নেয়নি।সকাল পরিয়ে গেছে সেই কখন,সকালের নাস্তা টুকু মুখে তুলেনি আদাভান,সে
একই ভঙ্গিতে বসে আছে,তৃধা কে ফোন দিয়েছে এতোগুলা বার বার ফোনটা নিজেদের ঘরেই বেজে বন্ধ হয়েছে,আদাভান তৃধার বাবা মা কে ও ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেছে।কোথায় গেলো মেয়েটা?এতো রাগ করতে হবে সামান্য ব্যাপারে?আদাভান ঠিক করে নিয়েছে তৃধার কাছে গিয়ে মাফ চাইবে,মিনতি করবে আর জীবনেও ব’কা দেওয়া তো দূর, কোনো প্রকার উচ্চ বাক্য সে করবে না।
আদিব,নাদিম, জোবান এসে বসলো আদাভানের পাশে,তারা এতোক্ষণ বাড়ি ছিলো না।
আদাভানের এরকম মুখভঙ্গি দেখে তিনজনই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো।
জোবান জিজ্ঞেস করলো–,,কি হয়েছে ভাইয়া?মুখটা অমন করে রেখেছো কেনো?
আদাভান বিরক্তি নিয়ে তেতে উঠে বললো–,, তোর বউ তোকে ছেড়ে চলে গেলে তুই কি খুশিতে লুঙ্গি ডান্স করবি?তার উপর কেউ আমার কোনো কথা কানে যেনো শুনছেই না!
নাদিম চোখ ছোট ছোট করে বললো–,, ওহ্! এই কথা?
আদিব বলে উঠলো–,,ওই তো তোমার বউ চলে এসেছে!
আদাভান ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকালো,তৃধার পড়নে সবুজ গোল্ডেন কম্বিনেশনে চমৎকার একটা শাড়ি,চুল গুলো খোঁপা করা তার উপরে সাদা মধ্যে হালকা গোলাপি রঙের গোলাপের গাজ”রা!
মুখে প্রসাধনির পরিমান খুবই সামান্য,তার পাশে সব মেয়েরা,মানে সব গুলোতে এক সাথে ছিলো!আর সে কিনা চিন্তায় চিন্তায় হয়রা”ন।
আদাভান শান্ত তবে যথেষ্ট গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,আমাকে বলে গেলে কি যেতে দিতাম না?কথা নেই বার্তা নেই যেখানে খুশি যাওয়ার পারমিশন নেওয়ার ও দরকার মনে করে না মানুষ !
আদাভান হনহনিয়ে ঘরের দিকে চলে গেলো,এতোক্ষণ হাসি খুশি থাকা তৃধার মুখে মুহুর্তেই আঁধার নামলো,সে তো বলে যেতেই চেয়েছিলো,আদাভান রাতে ঘুমাতে পারেনি তাই আর সকালে ডাকেনি।এমন তো নয় সে একা কোথাও গেছে সবার সাথেই তো গিয়েছিলো।
আলিজাসহ বাকিরা গিয়ে বসলো আলিজার ঘরে।
তৃধা সিঁড়ি বেয়ে রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো,আমিনা বেগম ডেকে বললো–,, তৃধা শোন একটু।
তৃধা গেলো,রান্নাঘরের কাছটায় আমিনা বেগম তৃধার হাতে প্লেট ধরিয়ে দিয়ে বললো–,,যা গিয়ে খেতে দে সকাল থেকে কিছু খায়নি ঘুম থেকে উঠেই তোর নাম নিয়ে চিল্লাচ্ছে।
তৃধা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে রুমের দিকে গেলো,পা’গল জুটেছে কপালে একটা।
তৃধা রুমে গিয়ে প্লেট রাখলো,বাথরুমে গিয়ে হাত ধুয়ে এসে বিছানায় বসলো আদাভানের পাশে।
তৃধা বলে উঠলো—,,না খেয়ে থাকার মতো কিছু হয়নি,সবার সাথেই তো গিয়েছিলাম,আপনি ঘুমিয়েছিলেন তাই ডাকিনি মোবাইল নেওয়ার কথা মনে ছিলো না।
আদাভান এখনো চুপচাপ, তৃধা মুখের সামনে খাবার ধরলো,আদাভান পাশ ফিরে গেলো।তৃধা প্লেট রেখে উঠে যেতে যেতে বললো–,,ভেবে চিন্তে না খেয়ে থাকুন,আমিও কিছু খাইনি যতক্ষণ না আপনি খাচ্ছেন ততক্ষণ আমিও খাবো না!
আদাভান তৃধার হাতে আচমকা টান বসালো তৃধা হু”মড়ি খেয়ে পড়লো আদাভানের উপর।
আদাভান তৃধার চোখে চোখ রেখে বললো–,,কথা দাও আমাকে কোনো দিন ছেড়ে যাবে না,যা খুশি হয়ে যাক তুমি যাবে না!
তৃধা মনে মনে হাসলো,আদাভান মুহুর্তেই আবার বললো–,,জবাব দিচ্ছো না কেনো?তার মানে সত্যি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে!
তৃধা আদাভানের হাতে হাত রেখে বললো-ট্রা’স্ট মি! আমি আপনারই থাকবো,মৃ’ত্যুর আগে আপনাকে ছেড়ে যাবো না।
আদাভান তৃধা কে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ বসে রইলো কিছুক্ষণ। দুজনই চুপ কথা বলার প্রয়োজন নেই, নিস্তব্ধ প্রহর ও কখনো কখনো সব উত্তর খুঁজে নেয়।
তৃধা দুষ্টুমি করে বললো–,, একটা সুন্দর ছেলে দেখেছি আজকে,আপু কে যখন পার্লারে নিয়ে গিয়েছিলাম তখন।আমার সাথে তো কথা বলতেও এসেছিলো।
আদাভান দ্রুত তৃধা কে সোজা করে নিজের মুখোমুখি বসালো,ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেছে তার,তৃধার চোখ মুখ হাসছে।আদাভান তৃধার দু গালে হাত রেখে বললো–,, বউ, এরকম রসিকতা করতে নেই তুমি জানো না তোমার জামাই কতোটা সেনসি”টিভ, তোমাকে কিছু না করতে পারলেও সে নিজেকে করতে পারবে, তোমার মুখে অন্য কারো নাম শুনলে তার হার্ট অ্যা”টাক হবে,বুক ধর’ফর করবে আর আর ম’রেও যেতে পারে!
তৃধা বিরক্তি নিয়ে তাকালো,কতো বড় শয়’তান।এসব কথা কেউ মুখের উপর বলে।
তৃধার মুখের অবস্থা দেখে আদাভান হাসলো,তৃধা সরে আসতে চাইলো।
আদাভান তৃধার দিকে তাকিয়ে বললো–,, বউউউ আমার অনেক প্রেম প্রেম পাচ্ছে,এতো সুন্দর করে সেজেগুজে সামনে আসলে আমার মতো একটা নিরীহ স্বামী কি নিজেকে ঠিক রাখতে পারে?
তৃধা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো-,,বেশি প্রেম প্রেম পাইলে প্রেম নিয়ে হাঁটে বেচে দিয়ে আসুন।
আদাভান তৃধার হাত চেপে ধরে বললো–,, রাগ করছো কেনো?শুধু একটা চুমু দিবো আর কিছু না।
তৃধা চোখ পাকিয়ে তাকালো, আদাভান ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো করে তাকালো বললো–,,তাহলে তুমি একটা দাও, তার পর আর জ্বা’লাবো না!
তৃধা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো–,, পারবো না।
আদাভান সুযোগ বুঝে তৃধার শাড়ির আঁচল টেনে ধরলো,তৃধা চোখ বড় বড় করে তাকালো শাড়ি সামলাতে সে বরাবরই কাঁচা, দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে এই ব্যাটা?তৃধা তড়িঘড়ি করে বললো–,, আদাভান টান দিবেন না বলে রাখছি,অনেক কষ্টে অনেক গুলো পিন দিয়ে আটকেছি এটা পড়ে আমাকে রাত পর্যন্ত থাকতে হবে,খুলে যাবে এরকম টানাটানি করলে!
আদাভান দাঁত বের করে শয়’তানি হাসি দিলো।তৃধার মাথা থেকে পা অব্দি দেখলো,হাত দুটো খালি, গলায় একটা স্বর্নের ছোট চোকার, কানেও ছোট সাইজের দুল।
তৃধার চোখে মুখে অসহায়ত্ব, সাদা বে’ন্ডেজ এখনো হাতে লাগানো।
আদাভান তৃধাকে ইশারা করলো নিজ থেকে এসে ওর কোলে বসার জন্য, তৃধা এমন ভাবে তাকালো যেনো ছাড়া পেলেই আদাভানের মাথার চুল একটা একটা টেনে ছিঁড়”বে।
তৃধা বাধ্য মেয়ের মতো তাই করলো, তৃধা আদাভানের কোলে বসতেই সে দু হাতে তৃধার কোমর জড়িয়ে ধরলো।
তৃধা সঙ্গে সঙ্গে কেঁপে উঠলো, আদাভানের হাত চেপে ধরে বললো–,, অ”সভ্য লোক হাত এতো ঠান্ডা কেনো?স্বাভাবিক মানুষের হাত পা কি এমন থাকে!
আদাভান তৃধার ঘাড়ে থুতনি ঠেকিয়ে বললো–,, তুমি বার বার নিজের সর্ব’নাশ নিজে ডেকে আনো,ওইদিনও শাড়ি পড়েছিলে আবার আজকেও!
তৃধা বেশ লজ্জায় পড়লো,তবে তা প্রকাশ করতে নারা’জ।তৃধা যে লজ্জা পাচ্ছে আদাভান তা বুঝতে পেরে গেছে প্রথমেই, আদাভান তৃধা কে আরো কিছুটা টেনে কাছে নিলো,তৃধার কন্ঠ কাঁপছে তার পরও ধীরে ধীরে বললো–,, আদাভান আমি আপনার উপর রাগ করে আছি এখন ছাড়ুন,আপনি আমাকে কতোগুলো কথা শুনিয়েছেন ভুলে যাইনি কিন্তু!
আদাভান গম্ভীর কন্ঠে বললো–,, তো যাও সাহস থাকলে উঠে চলে যাও!
তৃধার এবার রাগ লাগছে,আদাভানের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বললো–,, ছা..ড়ুন চলে যাচ্ছি!
আদাভান গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো–,, ধরলাম কোন সময়?তুমি যাও চলে যাও!
তৃধা চেঁচিয়ে বললো–,,আদাভান!
–,,কি?
–,,বারাবাড়ি করছেন কিন্তু এবার!
আদাভান তৃধা কে একটানে বিছানার উপর ফেলে দিয়ে বললো–,,কিছু না করে অপ’বাদ নিতে ভালো লাগে না জান।বারাবাড়ি করবো এখন, পারলে আটকাও!
তৃধা ভয়া’র্ত চোখে তাকালো,আদাভান থোরাই এসবের তোয়াক্কা করে, তৃধার দিকে তাকিয়ে বললো–,, আমি এখনো গোসল করিনি!
তৃধা পুরোদমে বললো–,,কিন্তু আমি করেছি, আরেকবার করতে পারবো না!আর না আমার সাজ আপনাকে নষ্ট করতে দিবো।
আদাভান ফিক করে হেসে বললো–,, তাই?তাহলে এ পর্যন্ত একবারও বাঁধা দিলে না কেনো!
তৃধা আদাভানের বুকে এক হাত রেখে ঠেলে তাকে সরিয়ে উঠে বসলো, রেগে আদাভানের চুল টেনে ধরে বললো–,, অ”সভ্য বেহা’য়া নির্লজ্জ পুরুষ!
আদাভান তৃধার কোমরে হাত রেখে বললো–,,একটা চুমু চেয়েছি শুধু দিয়ে দাও তাহলেই তো হয়।
–,,আপনাকে চুমু খাওয়ার এতো ঠেকা পড়ে নাই আমার!
–,,ভেবে বলছো?
–,,ভাবা ভাবির কি আছে?
–,,আলিজার শ্বশুর বাড়িতে ওর হবু বরের একটা কাজিন আছে দেখতে শুনতে ভালো,বয়সটাও পারফেক্ট!বাচ্চামো করে না বেশ বুঝদার,শান্তশিষ্ট, বউ হিসেবে ভালো মানাবে।
তৃধা আহ’ত চোখে তাকালো,রাগ হওয়ার থেকে বেশি সে কষ্ট পেয়েছে,আদাভান তৃধার প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষায়।
তৃধা বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করলো,আদাভানের এবার চিন্তা হচ্ছে,এই মেয়ে চুপ থাকা মানে অনেক কিছু ঘটে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে!
তৃধা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বললো–,,খেয়ে নিন, তারপর রেডি হন।মা, বাবা,দাদী সবাই আসবে একটু পর।
আদাভান তৃধার হাত ধরে বললো–,, তাকাও আমার দিকে।
তৃধা তাই করলো।আদাভান ভ্রু কুঁচকে বললো–,, কথা বলছো না কেনো?
–,,কি কথা বলবো?
–,,চলো এক সাথে খাই।
তৃধা উঠে গিয়ে বললো–,,নিচে গিয়ে খাবো,আপনি খান।
আদাভান তৃধা কে বললো–,,মেয়েটাকে আদিবের জন্য পছন্দ করেছি দুজন কে বেশ ভালো,মানাবে!
তৃধা দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,, আমার ভাই যতই ম্যাচিউর হোক, তার জীবনসঙ্গী হিসেবে সে ওই বাচ্চা ইম”ম্যাচিউর চঞ্চল বোকা মেয়েটাকেই বেশি পছন্দ করে।ভালোবাসলে মানুষ এতো কিছু বিচার করে ভালোবাসে না,প্রিয় মানুষটার ব্যক্তিত্ব যেমনই হোক সে ওই মানুষটার ভালো খারা’প উভয় গুনকেই ভালোবাসে!ভাইয়া স্নিগ্ধা কে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে হয়তো কোনো দিন ঘ’টা করে প্রকাশ করেনি তবে তার ভালোবাসার মানুষ কষ্ট পায় এমন কিছু করেনি,তাকে কোনো দিন অসম্মান করেনি, অন্য কারো সাথে তুলনা করেনি!সে যেরকম সে রকমই ভালোবেসেছে!
আপনি নিজের মন মতো মেয়ে যখন পেয়ে গেছেন এবার নিজে বিয়ে করে ফেলুন।আপনাদের জন্য শুভকামনা সুন্দর ঝঞ্জা”ট মুক্ত জীবন গড়ুন!
জোড় করে যাকে আপনার জীবনে জুড়ে দেওয়া হয়েছে তাকে একদম গোড়া থেকে উপরে ফেলে দিন,অযথা তার সাথে ইচ্ছের বিরুদ্ধে থাকার দরকার নেই!
তৃধা দ্রুত পায়ে ঘর ছাড়লো,আদাভান এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে,মেয়েটা সব সময় কঠিন কথা গুলো মুখে উপর বলে চলে যায়,অপর পাশের ব্যক্তির উপর কি রকম প্রভাব ফেলবে তা কখনো ভেবে দেখে না!
তৃধা আলিজার ঘরে ঢুকলো,হৃদয় ভার তার তবে মুখে হাসি নিজেদের ঝা’মেলার জের ধরে অন্য একজনের সুন্দর দিন খারা’প করার মতো বোকা তৃধা নয়।
স্নিগ্ধা মন খারা’প করে বললো–,, জানিস তৃধা আপা তোর ভাইকে আমি বলেছিলাম কি সুন্দর করে মিষ্টি করে বললাম–,,আদিব ভাইয়া হাতে পড়ার জন্য দুইটা বেলি গা’জরা এনে দিবা প্লিজ মাঝে একটা করে লাল গোলাপ দিতে বইলো।কিন্তু তোমার ভাই মুখের উপর না করে দিলো উল্টো ধ’মক দিয়ে বললো–“যা এখান থেকে শখ কতো এসব জিনিস কেনার মতো টাকা নেই আমার!তোর জামাই কে গিয়ে বল কিনে দিতে।
নোভা হেসে বললো–,, এনে দিবে দেখিস।
স্নিগ্ধা ঠোঁট উল্টে বললো–,, চিনো না তো ওই ব’দ লোকটাকে,জীবনেও এনে দিবে না!
তৃধা বলে উঠলো–,,ভাইয়া সত্যি এনে দিবে না বলেছে?তোর জামাই কে এনে দিতে বলছে?
স্নিগ্ধা উপর নিচে মাথা নাড়লো,তৃধা হেসে বললো–,, ভাইয়াকে ফোন দিয়ে বল তোকে সত্যি সত্যি তোর জামাই গাজরা পাঠিয়েছে,তুই হাতে পড়ে উনাকে ছবি দিবি কিনা জিজ্ঞেস কর!
স্নিগ্ধা গাল ফুলিয়ে বললো–,, মাথা খারা’প আব্বুর কাছে বিচার দিয়ে দিবে পরে,সাথে চ’ড় টর ফ্রিতে দিবে ভাই!
আভা বলে উঠলো–,আদিব ভাই তোকে এই পর্যন্ত কয়বার চ’ড় মে’রেছে?
স্নিগ্ধা ফটাফট জবাব দিলো–,, একবারও না!
তৃধা হেসে বললো–,, তোরে যা বলছি তাই কর।
স্নিগ্ধা ফোন করলো আদিব কে,তৃধা যা যা বললো তাই তাই আদিব কে বললো।
স্পিকারে দেওয়া মোবাইল,আদিব কি বলে তা সবাই শুনতে পাবে!
আদিবের শক্ত পোক্ত গলায় ধ’মক প্রথমে শোনা গেলো–,,বেয়া’দব!তোর হা’ত কে’টে ফেলবো আমি।
স্নিগ্ধা চোখ বড় বড় করে তাকালো, তৃধা ফোন টেনে কানে ধরে বললো–,, ভাইয়া তাহলে নিজে কিনে দাও!শুনো কিছু কিছু ক্ষেত্রে জায়গা খালি থাকলে অন্য কেউ এসে খুব তাড়াতাড়ি সে জায়গা দখল করে নেয়।যেমন:প্রিয় মানুষের শূন্যস্থান!
তৃধা ফট করে কল কেটে দিলো,এরই মধ্যে দরজায় নক করলো নাদিম।
আলিজা বিছানায় বসে মোবাইলে কি যেনো করছে,হলুদ জামদানি পড়েছে সে,বেশ মিষ্টি দেখাচ্ছে তাকে।বিকেলের দিকে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে রাতে ছোটরা মিলে আড্ডা দিবে তাই তাড়াতাড়ি এ অনুষ্ঠান টা শেষ করতে চায় তারা।ফাহিমা বেগম যেনো ধৈর্য হারা হয়েছিলেন তাই সকাল সকাল ঠেলেঠুলে সব গুলোকে সাজাতে পাঠিয়েছিলেন।
তৃধা নাদিম কে বললো–,,কি চাই তোর এখানে?
নাদিম বলে উঠলো–,,ভেতরে আসার পারমিশন দিবি?তো বলবো।
আলিজা বলে উঠলো–,, অনুমতি নেওয়ার কি আছে আসো।
নাদিম এক গাল হেসে ডাকলো–,,ভাবি….!পেয়ারের ভাবি এই গিফট টা আপনার জন্য বিশেষ ভাবে পাঠানো হয়েছে,আমার ভাইয়ের পক্ষ থেকে।
তৃধা ঠোঁট কাম’ড়ে ধরে হাসলো,নোভা, আভা, নিশি নাদিমের কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে হাসছে।
স্নিগ্ধা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে,নাদিম এতোক্ষণ এভাবে বললেও এবার স্নিগ্ধার হাতে এক প্রকার জোর করে ধরিয়ে দিয়ে বললো–,,জীবনে কি আর মানুষ পাসনি প্রেম করার জন্য? আদিব ভাইকেই কেনো পছন্দ হতে হবে তোর, তোদের জ্বা’লায় বাঁচি না এখন ছোট বোনকে ভাবি ডাকতে হবে!
স্নিগ্ধা নাক মুখ কুঁচকে বললো–,,সেইম টু ইউ!
আলিজা হেসে জিজ্ঞেস করলো–,, স্নিগ্ধা তোমার ছোট বোনের সাথে নাদিম প্রেম করে নাকি?
স্নিগ্ধা হেসে বললো–,, না আপু,তবে আপুকে ভাবি ডাকতে হবে!ওই এক হিসাবে মিলে।
নাদিম আভা,নিশি,নাজিয়া কে ও দিলো গাজরা হাতে আছে আর একটা নোভা ভেবেছে তাকে দিবে, নাদিম তৃধার দিকে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো।
তৃধা ভ্রু নেড়ে জিজ্ঞেস করলো–,, আমারে দিবি?
নাদিম ঠে’স মে’রে বললো–,, বিবাহিতদের জন্য এসব না,তাদের দেওয়ার জন্য তাদের জামাই আছে!
তৃধা মুখ বাঁকালো,তারপর জিজ্ঞেস করলো–,, তাহলে এটা কার জন্য?
নাদিম গদগদ হয়ে বললো–,,অবশ্যই আমার বউয়ের জন্য!
তৃধা বিরক্ত হয়ে বললো–,, তাহলে গিয়ে দিয়ে দে, আমার সামনে দাঁড়িয়ে ঢং করছিস কেনো?
নাদিম তৃধার হাতে দিয়ে বললো–,,আমি দিলে যদি না নেয়,তুই আমার হয়ে একটু দিয়ে দিস।
তৃধা রেগে বললো–,, এ ভাই তোমরা সবাই মিল্লা গোপনে প্রেম প্রেম খে’লবা মাঝে দিয়া আমারে ফাঁসা’ইবা এসব কিন্তু আর মেনে নেওয়া যায় না!
নাদিম ততক্ষণে ভেগেছে তৃধা গাজরা দুটো নোভার হাতে দিয়ে বললো–,,শা’লা আর কতোদিন?দুইটাই হয়েছিস গোঁয়ার!
নোভা হা হয়ে তাকিয়ে আশ্চর্য ওর আবার কি হলো!
তৃধা সুন্দর মতো হেঁটে গিয়ে রান্না ঘরে ঢুকলো,মৃধা রেডি হতে গেছে জিদান ঘুমিয়েছে কিছুক্ষণ আগে।
হাসি বেগম এসে বললো–,,তৃধা এক গ্লাস পানি দাও তো।
তৃধা হেসে তার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো।
আজ থেকে গৃহিণীদের ছুটি বাড়ির বাহিরে উঠোনে বাবু”র্চিরা রান্না করছে।
আমিনা বেগম বললো–,,তৃধা মা একটু শোনে যা তো।
তৃধা আমিনা বেগমের ঘরে গেলো,তৃধাকে সামনে বসিয়ে আমিনা বেগম কিভাবে কোন মেহমান কে আপ্যায়ান করতে হবে এসব শিখাচ্ছেন,বড় ভাবি হিসেবে কি কি দায়িত্ব আছে সব একে একে তাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে।তৃধা মনোযোগ সহকারে শুনছে যেহেতু ওর কিছু জানা নেই শিখতে তো কোনো অসুবিধে নেই।তা ছাড়াও তৃধা চায় না বাড়ির মানুষের কোনো অসম্মান হোক তার জন্য।পরিবর্তী তিন দিন সে ভদ্র হয়ে থাকবে।মানুষ গুলো যেমন তাকে ভালোবাসে তাদের ভালোবাসার মান সে রক্ষা করবে!
তৃধা নিজের দায়িত্ব পালন ও করছে ঠিকঠাক।আদাভানদের কাছের আত্মীয় রা এসেছে তাদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে সে।
আদাভান, জোবান বোনের বিয়ের সব দায়িত্ব পালন করছে। তাদের কাজ তো শেষ কিন্তু আদাভানের মনে হলো তার বউ এখন আর তার বউয়ের জায়গায় নেই,সে সম্পূর্ণ বাড়ির বড় বউমার মুডে আছে।
আদিব স্টেজ সাজানোর কাজে একটু সাহায্য করছে,শেষ হতেই এসে দাঁড়ালো আদাভানের পাশে।
আদাভান জিজ্ঞেস করলো–,, তোমার বোন এতো রেগে থেকেও হেসে হেসে মানুষের সাথে কথা বলে কি করে?ওর এতো রাগ তোমরা সামলাতে কি করে?
আদিব আলতো হেসে বললো–,, ওর তো এটা পুরনো অভ্যাস।আর ওর রাগ ভাঙ্গানোর মতো কেউ ছিলো না,আগেও আমরা কেউ ওর রাগ ভাঙ্গাইনি,আর না ও কারো উপর রাগ প্রকাশ করতো যা করার নিজের উপর করতো।আর বলতো ওর কোনো একান্ত আপন মানুষ নেই যার কাছে সে রাগ প্রকাশ করবে,তাকে রাগ দেখাবে।যেদিন এরকম মানুষ ওর জীবনে আসবে সেদিন নাকি সে অবশ্যই রাগ প্রকাশ করবে আর এরকম মিথ্যা হাসি ঝুলিয়ে ঘুরবে না!
তবে আমার মনে হয় ও ওর জীবনে এমন কোনো মানুষ এখনো পায়নি যার প্রতি রাগ, অভিমান করবে আর সে ব্যক্তি ওর মতে ওর রাগ ভাঙ্গাবে, যত্ন করে ওর অভিমানের দায় ভার গ্রহণ করবে!
আদাভান আদিবের দিকে তাকালো ততক্ষণাৎ আদিবের ঠোঁটের কোনে হাসি।ভাই বোন দুটোই কেমন রহস্য করে কথা বলে!
বিকেল হয়ে এসেছে,অনুষ্ঠান শুরু হবে কিছুক্ষণের মধ্যে।
তৃধা বেশ ক্লান্ত কাজ করতে করতে,তবুও আলিজার খুশির জন্য উঠোনে গিয়ে বসবে ঠিক করলো।
জিদান ছুটে এসে তৃধাকে জড়িয়ে ধরলো, তৃধা হেসে তাকে কোলে তুলে নিলো।হুট করেই ওর পিহুর কথা মনে পড়লো,পিহু নিজ থেকে এখানে থাকতে চায়নি, সে নাকি তার আগের বন্ধুদের কাছে ফিরতে চায় যেখান থেকে সে এসেছে,আদাভান তৃধা গিয়ে ওকে ওখানে রেখে এসেছে আর বলেছে মাঝেমধ্যে গিয়ে দেখা করে আসবে।
জিদান তৃধার দিকে দুটো বেলি ফুলের গাজরা এগিয়ে দিয়ে বললো–,,খা’মনি এতা এতা তোমাল জন্য!
তৃধা জিদানের গালে চুমু দিয়ে বললো–,,সত্যি বাবাই পাখিটা?আমার জন্য এনেছো?
জিদান এক গাল হেসে বললো–,,প’লবে না?মাম্মাম ও পলে’ছে!
তৃধা দুই ভ্রু কুঁচকে বললো–,, কোথায় পেয়েছিস আগে বল দুষ্টু!
মৃধা এগিয়ে এসে তৃধার সামনে দাঁড়িয়ে বললো-,,হাত দে পড়িয়ে দেই।
তৃধা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে,পরে বললো–,,না আমি পড়বো না!
মৃধা তৃধার কথা শুনলো না হাত টেনে নিজ দায়িত্ব পড়িয়ে দিলো।
মৃধা পড়িয়ে দিতেই জিদান হাত তালি দিয়ে বললো–,,সুন্দর!
আদাভান কিছু দূর দাঁড়িয়ে হাসলো,হেঁটে এসে তৃধার সামনে দাড়ালো,জিদানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো জিদান আদাভানের হাতের তালুতে ছোট করে হাত রাখলো যার মানে তারা হাই”ফাই দিলো।
আদাভান হেসে বললো–,,শুধুই কি হাত সুন্দর?তোমার খালামনি হাত,পা থেকে শুরু করে তার কথা বলার ধরন,তার চোখের চাহনি,তার হাসি,তার রাগ,তার অভিমান সব কিছুই এতো এতো সুন্দর যা দেকে আমি বার বার মুগ্ধ হই।মুগ্ধতার রেশ কাটি’য়ে তোলার আগেই আবার মুগ্ধ হই মায়ায় পড়ি এতোটাই মায়ায় পড়েছি যে আর পিছু ফেরার পথ নেই!
তৃধা আদাভানের দিকে একবারও তাকালো না,জিদান বললো–,,বলো আব্বু তোমাল ফুল তাই খা’মনির হাত সু’ন্দর!
তৃধার দাঁতে দাঁত পিষলো নিজের রাগে স’র্বাঙ্গ জ্ব’লছে তার।তৃধা জিদান কে বললো–,,যাও বাবা মায়ের কাছে যাও বাহিরে খালামনি আসছি একটু পর।
জিদান দৌড়ে ছুটে গেলো,তৃধা আদাভানের দিকে এখনো তাকালো না,ডান হাত দিয়ে বাম হাতের গাজরাটায় টান বসালো ছিঁ’ড়ার জন্য মনে মনে মৃধাকে গা’লি ও দিলো এতো টা’ইট করে কেউ বাঁধে?
টানতে টানতে উল্টো আরেক ঘটনা ঘটলো তৃধার হাতের বেন্ডে’জ বেধ করে র’ক্ত বেরিয়ে আসলো।
তৃধা তবুও থামছে না, রাগে দুঃখে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।
আদাভান তৃধার সামনে দাড়িয়ে এখনো,রাজিয়া বেগমের কন্ঠস্বর শুনে সেদিকে তাকালো তৃধা।
রাজিয়া বেগম বললো—-,, তৃধা তোর নানা ভাই তোকে ফোন করছে কখন থেকে রিসিভ করিস না কেনো?
তৃধা শান্ত কন্ঠে বললো–,, তুমি যাও আমি মোবাইল আনছি ঘর থেকে।
তৃধা ছুটে চলে গেলো ঘরের দিকে,আগে গিয়ে ঢুকলো বাথরুমে বেন্ডে’জ টেনে খুলে হাত ধুয়ে নিলো।
মোবাইল বের করে কথাও বলে নিলো নানার সাথে।
তৃধা বের হওয়ার সময় দেখলো আদাভান দাড়িয়ে আছে দরজায়,চোখে মুখ লাল হয়ে আছে তৃধা তো এতোক্ষণে একবারও তাকায়নি এর দিকে,ফর্সা ত্বকে উবছে পড়া রাগ।চুল গুলো এলোমেলো সাদা পাঞ্জাবি গায়ে হাতা গুটিয়ে রেখেছে। এ কেমন যেনো অদ্ভুত সৌন্দর্য ছড়িয়েছে পুরুষটার মাঝে!
আদাভান শান্ত কন্ঠে বললো–,, তৃধা আমার অপরা’ধ?
তৃধা থতথম খেলে গেলো কন্ঠস্বর শুনে। তৃধা আমতা আমতা করে বললো–,, কিছু না তো!
আদাভান এগিয়ে এসে বললো–,, তাহলে এরিয়ে চলছো কেনো?
তৃধার ভা’ঙ্গা কন্ঠস্বর –,,কইই না তো!
–,,আমার দেওয়া কোনো কিছু পছন্দ নয় তোমার?সামান্য ফুল ও না?সব কিছু ধুয়ে মুছে ফেলতে চাও আমার নামের?তাহলে দাও সব ফেরত দিবে, তার পর যেখানে খুশি যাবে যা খুশি করবে। সব মানে সব ফেরত দিবে যা যা আমার নামের আছে।
তৃধা কাঁপা কন্ঠে বললো–,, এমন করছেন কেনো আদাভান,আপনাকে এমনই বা দেখাচ্ছে কেনো?
আদাভান ধ’মক দিয়ে বললো–,,চুপ!তুই কথা বলবি না!
তৃধা হা হয়ে তাকিয়ে আছে,আদাভান তৃধার মধ্যেকার দূরত্ব অনেক কম আদাভান আবারও জড়ানো কন্ঠে বললো–,,সব মানে সব পাই টু পাই হিসাব বরাবর চাই আমার!
প্রথমত আমার মন যা তুই চুরি করেছিস,আমার রাতের ঘুম যা তুই কে’ড়ে নিয়েছিস,আমার সব সুখ শান্তি যার সব কিছু তোকে ঘিরে,আমার দেওয়া ওই ছয়টা মাসের প্রতিটা দিন প্রতিটা মুহুর্ত যা তোর সাথে কা’টিয়েছি।আমার মায়া যার সম্পূর্ণ মালিকানা তোর কাছে,আমার দেওয়া আদর ও ফেরত দিবি গুনে গুনে দিবি!আমার দেওয়া সব কিছু ফেরত দে মিসেস তৃধা তালুকদার।
আমি ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারি না,রাগ অভিমান ভাঙ্গাতে পারি না,আমি তোর মন মতো নই সব কিছু মানলাম।আমি অপরা’ধী এটাও মানলাম,তুই সব কিছু করতে পারবি আমি কিছু করলেই দোষ?শুধু একটা কথার কথা বলেছি সকালে,আর তুমি যে ছয়বেলা ছেলেদের কথা মুখে নিয়ে ঘুরো,বলো ওই ছেলে সুন্দর ওই ছেলে ওরকম।তখন আমার খারা’প লাগে না?আমাকে অনুভূতি শূন্য মনে হয় তোর?দূরে দূরে থাকবি তো থাক যা খুশি কর শুধু আমার দেওয়া সব কিছু ফেরত দে!
আমার ভালোবাসা পছন্দ নয়?আর বাসবো না ভালো যদি এতেই তোর সুখ হয় তো সুখে থাক!যা তোকে মু..
তৃধা আদাভানের গলা জড়িয়ে তার ঠোঁট আঁকড়ে ধরলো তখনই।আদাভান তাকিয়ে আছে তৃধার বদ্ধ চোখের দিকে।
তৃধা আদাভান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো–,, আমার মুক্তি চাই না!
আদাভান তৃধা কে জড়িয়ে ধরলো না,জিজ্ঞেস করলো–,,কি চাই?
তৃধা কাঁপা কন্ঠে বললো–,, আপ..নাকে আপনাকে চাই আমার!
আদাভান তৃধা কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বললো–,, আমার তোমাকে চাই না এখন!
তৃধা শব্দ করে কেঁদে দিলো এবার,আদাভানের পিঠের দিকে পাঞ্জাবি চেপে ধরে বললো–,, স্যরি!
–,,স্যরি গ্রহণ যোগ্য নয়।
–,, আদাভান!
আদাভান তৃধা কে ছাড়িয়ে হাঁটা ধরলো বের হওয়ার জন্য
তৃধা চোখ মুছে বললো–,,কি করলে আপনার রাগ কমবে শুনি?
আদাভান হাঁটা বন্ধ করে দাড়িয়ে পড়লো,তৃধা নিজের চুলের খোঁপা থেকে একটা একটা ফুল টেনে খুলতে লাগলো, খুলছে আর ছুঁড়ে মা’রছে দূরে।
আদাভান তৃধার দিকে ঘুরলো, তৃধা টেনেটুনে খুলছে আর আরেক হাতে চোখ মুছছে।
আদাভান তৃধার সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো, ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো–,,কি হয়েছে?
তৃধা শান্ত ভাবে বললো–,,চুল খুলছি দেখতে পাচ্ছেন না?
–,,এতো রাগ কেনো তোমার?
–,,রাগ করা ছেড়ে দিলে খুশি হবেন নাকি?
আদাভান তৃধার দু হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে তার কপালে টুপ করে চুমু দিয়ে বললো–,,না।রাগ করে নিজের ক্ষ’তি না করলে খুশি হবো!
তৃধা বললো–,,বাড়ি চলে যাবো আমি আপুর বিয়ের পরের দিন।
–,,ঠিক আছে!
তৃধা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে,একটু পর পর হেঁচকি তুলছে।আদাভান বলে উঠলো–,,কাঁদো আরো কাঁদো যত কাঁদবে ততো বেশি কিউট দেখাবে,আর আমি ততো বেশি কন্ট্রো”ললেস হবো তারপর একটা সময় তোমাতে টুপ করে খে’য়ে ফেলবো!
তৃধা আদাভান কে মার’তে শুরু করলো এবার, আদাভান তৃধার হাত থেকে বাঁচার জন্য রুম জুড়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করলো।তৃধা এক সময় হাঁপিয়ে দাড়িয়ে পড়লো।
আদাভান তৃধাকে এসেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,তৃধা কে ছেড়ে ওর মুখে অগুনিত চুমু দিতে থাকলো।তৃধার শ্বাস আঁটকে আসার উপক্রম।
তৃধা আদাভান কে সরিয়ে দিয়ে বললো–,,পা’গল মে’রে ফেলবেন নাকি!মেজাজ কি সাধে খারা’প হয় আমার?
আদাভান গাল ফুলিয়ে বললো–,, আমার রাগ কমেনি এখনো!
তৃধা উঠে গিয়ে বললো–,, রাগ নিয়ে বসে থাকেন। আমি বাহিরে যাচ্ছি!
আদাভান আবদার করে বললো–,, মাত্ররো চারটা চুমু।
–,,বিরক্তিকর!
তৃধা আদাভানের গাল কপাল থুতনিতে চুমু দিয়ে বললো,এবার চলুন ছোঁ”চা ব্যাটা!
–,,সান্ত্বনা পুরষ্কারে মন ভরে না আমার,প্রথম পুরষ্কার চাই!
আদাভান নিজের ঠোঁটের দিকে আঙুল দিয়ে বুঝালো।তৃধা বাধ্য মেয়ের মতো এসে আদাভানের সামনে দাড়ালো, তার পর বললো–,,চোখ বন্ধ করুন!
আদাভান তৃধার কোমর জড়িয়ে ধরে বললো–,,না।
তৃধা আদাভানের মাথার পেছনের চুল টেনে ধরে নিজের মুখোমুখি নিয়ে আসলো,আদাভানের নিচের ঠোঁটে জোরেসোরে এক কা’মড় বসিয়ে দিলো ততক্ষনাৎ।
আকষ্মিক আক্র’মনে আদাভান থ হয়ে গেলো,তৃধা তার পর থেমে বেশ কয়েকবার চুমু দিলো ঠোঁটে। আদাভান কে ছেড়ে উল্টো ঘুরে দাঁড়ালো।
আদাভান ঠোঁটে হাত রেখে দাড়িয়ে আছে,নিজের মনেই বললো–,,ভালো!তার যা বউ নরম শীতল আদর পাওয়া তো অসম্ভব,তার বউ তো টক ঝাল মিষ্টি, ব্যাথা’য় জর্জরিত চুমুই তো আশা করা যায়।
আদাভান ডেকে উঠলো–,,তৃধা!
তৃধা দু হাতে মুখ চেপে ধরে বললো–,,আদাভান আমার এই মুহুর্তে অনেক লজ্জা লাগছে,প্লিজ এখন আপনার দিকে তাকাতে বলবেন না!
আদাভান তৃধার সামনে দাড়িয়ে তার কপালে অব্দি ঘোমটা টেনে ধরে বললো–,, কিন্তু আমার তো লাজে রাঙা কন্যা কে দেখার তীব্র ইচ্ছে, হাত সরাও লাজুকলতা তোমায় একটু মন ভরে দেখি!
চলবে….