নৈঃশব্দ্যের প্রেমালাপ পর্ব-২৪+২৫

0
1

#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব২৪
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সফিক তালুকদার গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন,তার সামনে দুদিকে মুখ করে দাড়িয়ে আছে আদিব, স্নিগ্ধা।
আবির নিজের বোনের দিকে তাকিয়ে আছে,এবার তো বাবা তাকে উপরে ট’পকে দিবে নিশ্চিত!
আবির ছুটলো বাকিদের ঘটনা জানানোর জন্য।

আদিব জোরেসোরে ধম’ক দিয়ে বললো–,,স্নিগ্ধা বাড়ির ভিতরে যা!

স্নিগ্ধা শুকনো ঢোক গিলে মেজো আব্বুর দিকে তাকালো।আরেকবার আদিবের দিকে!

আদিব আবার বললো–,,কি হলো যাচ্ছিস না কেনো?

স্নিগ্ধার হাত পা কাঁপছে কি হবে এবার।কিন্তু ঘটলো অন্য কাহিনি সফিক তালুকদার এক গাল হেসে স্নিগ্ধার মাথায় হাত রেখে বললো–,,আমার মেয়ে তোরা তিনজন তোদের খুশির জন্য আমি আর বড় ভাই ছোট ভাই সব করতে পারি,কিন্তু তুই এমন একজনকে পছন্দ করেছিস যার নিজের জীবনের প্রতি কোনো মায়া নেই, ছন্নছাড়া মানুষ!ওর হাতে মেয়ে তুলে দিতে পারবো না আমি,যা ঘরে যা মন খা”রাপ করিস না এর থেকেও হাজার গুন ভালো ছেলে এনে দিবো তোর জন্য!

স্নিগ্ধা অস্পষ্ট সুরে বলে উঠলো–,,মেজো আব্বু!

সফিক তালুকদার স্নিগ্ধা কে আস্বস্ত করে বললো–,,তোমার প্রতি রাগ করিনি বোকা মেয়ে,যাও সবার সাথে গিয়ে আনন্দ করো!

স্নিগ্ধা একবার আদিবের দিকে তাকিয়ে দৌড়ে ভেতরে চলে গেলো।

আদিব একই ভঙ্গিতে এখনো দাড়িয়ে আছে,সফিক তালুকদার থমথমে কন্ঠে বললো–,, আমার ভাইয়ের ভোলা ভালা মেয়েটাকে কি করে নিজের জা’লে ফাঁসি”য়েছিস?

আদিব নিজের বাপের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হলো কোন বাপ এমন করতে পারে তার জানা নেই!শুধু তার সাথেই শ”ত্রতা করতে পারে এই লোক।

আদিবের বিরক্তি মাখা কন্ঠস্বর–,,আপনার প্রিয় ভাইয়ের মেয়েকে মোটেও আমি কোনো ইশারা ইঙ্গি”ত দেইনি।মাথামোটা মেয়েকে রোজ নিয়ম করে ধম’ক দিয়েছে যতটুকু কঠোর ভাবে কথা বলেছি তাতে তো আমার দিকে ফিরে তাকানোও উচিত নয় ওর।কিন্তু ওর কপাল খারা’প,ওকে ইগ’নোর করতে করতে এখন আমি ক্লান্ত, তাই পছন্দ করে ফেলেছি।আমার মতো অসহ্য ছেলেকে যেহেতু এতোদিন নিয়ম করে সহ্য করতে পেরেছে আশা করি ভবিষ্যতেও পারবে।এখন আপনার চাওয়া না চাওয়াতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না নিজের বাড়ির মেয়েকে সামলাতে পারেননি আপনি, আপনার ব্যর্থতা।আমি বামুন হয়ে চাঁদে হাতও বাড়ায়নি চাঁদ নিজে হেঁটে আমার কাছে চলে এসেছে পরম সৌভাগ্যবান ব্যক্তি আমি।আপনি তো ভালো করেই জানেন আদিব তালুকদার যা চেয়েছে তা তার হয়েছে যে কোনো মূল্যে আপনার বাঁধা তো আগেও মানেনি,এবারও তো আরো আগে মানবে না,এটা তো ভালোবাসার মাম’লা!
জেনেই যখন গেছেন বাড়ি গিয়ে ভাইয়ের কাছে নিজের ছেলের বিয়ের প্রস্তাব টা রাখুন!বিয়ে করতে চাই আমি।

সফিক তালুকদার রেগে বললো–,, তোমার কাছে মেয়ে বিয়ে দিবো না আমি।

–,, আপনাকে বিয়েতে দাওয়াত ও করবো না আমি,শুধু প্রস্তাব টুকু রেখে বাপের দায়িত্বটা ঠিকঠাক পালন করলেই আপনার ছুটি!

–,,বাপের মুখের উপর বিয়ে করার কথা বলো বেয়া’দব ছেলে,বেশর’ম কোথাকার!

–,,আপনি বলতে পারবেন না তাই তো?তাহলে আমিই বলবো বিয়ে টা তো আমাকেই করতে হবে!

সফিক তালুকদার রেগে বললো–,,চুপ বেয়া’দব! স্নিগ্ধার মতো নরম মনের মেয়েটা তোমার মতো গো’য়ার তেঁদড় ছেলেকে পছন্দ কি করে করলো বুঝে আসে না আমার!তুমি তাবি’জ টাবি’জ করো নাই তো আবার?

আদিবের চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট থমথমে কন্ঠে বললো–,, আমার এতো ফাল’তু সময় নেই এসব করতে যাবো!ওকে তো আমি জোর করিনি আমাকে ভালোবাসতে,ও নিজ ইচ্ছেতে এই বিষা”ক্ত সমুদ্রে ঝাপ দিয়েছে এখন আমার কিছু করার নেই।আমার ভালোবাসার মানুষ কে আমি যে কোনো উপায়ে নিজের করবো। যদি মাঝখানে বাপ বাঁধা হয়ে আসে তাকেও দেখে নিবো!

আদিব হনহনিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো,সফিক তালুকদার চরম পর্যায়ে বিরক্ত হলেন।মানে মেয়েটার জীবন তিনি হাতে ধরে কিছুতেই নষ্ট হতে দিতে পারেন না,তার ছেলে হলে কি হবে জীবনের প্রতি সে বড্ড হেঁয়ালি করছে,অন্য একজন মানুষের দায়িত্ব নেওয়া মুখের কথা নয়।বিয়ে তো আর ছেলেখেলা নয় করলাম কিছুদিন পর আর ভালো না লাগলে ছেড়ে দিলাম!
আদিব যদি নিজেকে ঠিক করতে পারে, নিজের প্রতি কাজকর্মের প্রতি সিরিয়াস হয় তো তখন তিনি ভাইয়ের সাথে কথা বলবেন তার আগে না!
————–
নাদিম,স্নিগ্ধা,তৃধা,আভা,নোভা দাঁড়িয়ে আছে মূলত তারা টেনশনে আছে,আবিরের থেকে সব শুনেই নাদিম সবাইকে জানিয়েছে।নিজের বাবা কে ভালো করে চেনা আছে নাদিমের ছোট আব্বু মানলেও তার নিজের বাবাই ছেলের জীবনে ভিলে’নের ভূমিকা পালন করবে তা সে আগেই জানতো!

আদিবের দেখা নেই সে কোথায় গেছে কে জানে,এদিকে স্নিগ্ধা কেঁদেই যাচ্ছে,আর বলছে আব্বু জানলে আমাকে খুব করে ব’কা দিবে,আম্মু মার’বে।আমি তো শুধু একটু আদিবের সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম কে জানতো তখনই মেজো আব্বু আসবে!

তৃধা ধম’ক দিয়ে বললো–,,তুই চুপ করবি এবার?প্রেম করলে ওই একটু আধটু ব’কা আর মা’র খেতে হয়।কিচ্ছু হবে না চিন্তা করিস না, ভাইয়া সব সামলে নিবে!

আদাভান এসে থামলো ভাই বোনদের জট’লার মাঝে,সবাই কে এরকম সিরিয়াস দেখে বললো–,, কি হয়েছ?

তৃধা কোনো উত্তর দিলো না বাকিরাও চুপ।স্নিগ্ধা কান্না করছে,নাদিম এবার ধীরে সুস্থে সব খুলে বললো আদাভান কে।

আদাভান তৃধার দিকে তাকিয়ে বললো–,, সবাই চলো আলিজা কে হলুদ দেওয়া হচ্ছে,আর স্নিগ্ধা কান্না করবে না আর,আদিব ভালো ছেলে আংকেল অমত করবে না,আমি কথা বলবো উনাদের সাথে!

তৃধা মুখ ভেংচি কা’টলো এসেছে পন্ডি’তি করতে নিজের শ্বশুর তো হিট’লার তার ভাই গুলো কম যায় না এবার বুঝবে যাও না কথা বলতে কি’ক মে’রে বাউ”ন্ডারির বাহিরে ফেলে দিতে দুবার ভাববে না!

তৃধা দ্রুত পায়ে স্টেজের সামনে গেলো,সবাই মিলে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করলো।রাত বেড়েছে ঘুমাতে গেলো যে যার মতো,তৃধা আগে গেলো আলিজার ঘরে মেয়েটার মন খারা’প এতো আনন্দের মাঝেও মুখ ভার ছিলো তার!

তৃধা গিয়ে নক করতেই আলিজা মুখ মুছতে মুছতে এগিয়ে আসলো।
তৃধা তাকে দেখেই মিষ্টি করে হাসলো,আদাভানের সব ভাই বোন গুলোই সুন্দর ফর্সা।কি স্নিগ্ধ মায়াময় চেহারা আলিজার, তৃধা বার বারই মুগ্ধ হয় মেয়েটার ব্যবহারও সুন্দর, মাঝেমধ্যে বসে ভাবে জোবান আর আদাভান দুজনেরই গায়ের রং উজ্জ্বল! আর তারা দুই বোন উজ্জ্বল হলেও শ্যমলা বর্ণের!

তৃধা আলিজা কে জড়িয়ে ধরে বললো–,, মন খারা’প আপু?

আলিজা তৃধা কে জড়িয়ে ধরে বললো–,, তোমাদের কে ছেড়ে চলে যাবো তো তাই একটু মন কেমন করছে ভাবিমনি।

তৃধা আলিজার দিকে ছলছল চোখে তাকালো তৃধাকে সচারাচর কাঁদতে দেখেনি আলিজা,মেয়েটা বয়সে তার ছোট হলেও ম্যাচিউরিটি তে তার থেকে অনেক বড়।

তৃধা মন খারা’প করে বললো–,, তোমাকে তো আমি অনেক বেশি মি’স করবো,তোমার ভাই তো তিন বেলা ঝ’গড়া করে আমার সাথে তুমি চলে গেলে কার কাছে এসে বিচার দিবো বলোতো,আর কার সাথেই বা থাকবো।

আলিজা তৃধার কথা শুনে মৃদু হেসে বললো–,,আমি কি একেবারে চলে যাচ্ছি নাকি বো’কা আবার আসবো তো,তোমাদের জ্বা’লাতে আর আমার ভাইয়ের নাদুসনুদুস এক ড”র্জন বাচ্চাদের সাথে খেলতে!

তৃধা সত্যি সত্যি কেঁদে ফেললো,চোখ মুছে আলতো হেসে বললো–,,এতো বাচ্চা কোথায় পাবে?বাড়ি জুড়ে বাচ্চা তো শুধু একটা জিদান।

আলিজা হেসে বললো–,,আরে হবে হবে তোমার আর ভাইয়ার বেবি রা আসবে তো তখন দেখবে কতোগুলো বাচ্চা হয়!

তৃধা চকিত নয়নে তাকালো ওর আবার বাচ্চা?হায় খোদা নিজেকে সামলাতে ছয় বেলা উ’ষ্ঠা খায় আর আদাভান তো ওর রাগ ভাঙ্গাতে ভাঙ্গাতেই হাঁপিয়ে উঠে আরেকটা আসলে ওটা কে, কে সামলাবে?
তৃধার আকাশ কুসুম চিন্তায় ছে’দ ঘটলো মোবাইলের শব্দে, আলিজা মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো তার হবু বর কল করেছে।
তৃধা নিজের চিন্তা সাইডে রেখে ভ্রু নাচিয়ে আলিজা কে বললো–,,ভালো ভালো, হবু দুলাভাই কি বউ কে না দেখতে পেয়ে বেশ কষ্টে আছে?

ওপাশ থেকে আকাশের কন্ঠস্বর শোনা গেলো–,,আলিজার ভাবিমনি?

তৃধা হেসে বললো–,,হুম হবু বর মশাই তা আমার আপুকে রাতবিরেতে জ্বা’লাতন করছেন কেনো শুনি?এখন যদি না ঘুমিয়ে চোখের নিচে ডা’র্ক সার্কেল পড়ে তখন?লোকে তো বলবে ওই দেখো নতুন বউয়ের চোখের নিচে কালি পড়েছে সুন্দর লাগছে না!

আকাশ অমায়িক হেসে বললো–,,সামান্য চোখের নিচে কালি পড়লে কি আমার বউ অসুন্দর হয়ে যাবে নাকি?কার ঘাড়ে কটা মাথা আমার বউকে এসব বলে কষ্ট দিবে!দরকার পড়লে মুখ শুধু আমি দেখবো, সবার সামনে দু হাত লম্বা ঘোমটা দিয়ে থাকবে!

তৃধা আলিজা কে খোঁচা মে’রে বললো–,, বাব্বাহ্! কি ভালোবাসা।

আলিজা লজ্জা পেয়ে বললো–,,ভাবিমনি তুমিও না।

তৃধা আকাশের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে আর আদাভান দরজায় দাড়িয়ে দেখছে আর লুচির মতো ফুলছে,হোক বোনের জামাই তার বউ কেনো অন্য পুরুষের সাথে এভাবে কথা বলবে?জ্ব’লে পু’ড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা আদাভানের।

সে এবার আর না পেরে ডেকেই বসলো–,,তৃধা শুনো একটু!

আলিজা দরজার বাহিরে ভাইকে দেখে বলে উঠলো–,,ভাইয়া তুমি!

আদাভান হেসে বললো–,,ঘুমাসনি এখনো?রাত বেড়েছে ঘুমিয়ে পড় শরীর খারা’প করবে নয়তো।

তৃধা আলিজার হাতে মোবাইল গুঁজে দিয়ে বললো–,,কি দরকার শুনি?

আদাভান আলিজার দিকে একবার তাকালো তার পর তৃধার দিকে তাকিয়ে বললো–,, আদিবের ব্যাপারে কথা বলবো তুমি আসো,আলিজা তুই কথা শেষ করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়!

তৃধা সাথে সাথে বলে উঠলো–,,না আমি তো আজকে আপুর সাথে থাকবো,আপনার সাথে সকালে কথা বলছি যান গিয়ে শুয়ে পড়ুন!

আদাভান চোখ রাঙিয়ে তাকালো, তৃধা মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে হবে রাত করে ভাললাগে না,টাটা আপু।

আলিজা তৃধা তে বিদায় দিয়ে দরজা আটকে দিলো,তৃধা আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো না কেউ নেই সব ঘুম।

তৃধা আদাভানের দিকে দু হাত বাড়িয়ে দিয়ে দাঁড়ালো, আদাভান ভ্রু কুঁচকালো,তৃধা ইশারা করে বুঝালো কোলে নাও!
আদাভান না বুঝার ভান ধরে বললো–,,কি?
তৃধা ঠোঁট উল্টে বললো–,, কোলে নিতে বলেছি!

আদাভান বুকে দু হাত গুঁজে বললো–,, তুমি কি বাচ্চা?

তৃধা উপর নিচ মাথা নাড়ালো,আদাভান চোখ ছোট ছোট করে বললো–,,আকাশের সাথে এতো হেসে হেসে কথা বলার কি আছে?আমার সাথে তো জীবনে একবার সুন্দর করে কথা বলো না সারাক্ষণ শুধু ঝগ”ড়া করো!

তৃধা নাক ফুলিয়ে বললো–,, কখন?কোলে নিবেন না বলে মি’থ্যা দোষা”রোপ করছেন? উঠবো না আর আপনার কোলে কোনো দিন!

তৃধা আদাভান কে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলো,আদাভান তৃধার কোমর পেচিয়ে এক টানে কোলে তুলে নিলো।তৃধা মুখ ভেং’চি কে’টে অন্য দিকে মুখ ঘুরালো।

আদাভান তৃধার গলায় তার দাঁড়ি যুক্ত গাল ছোঁয়াতেই তৃধা তড়িঘড়ি তার দিকে ঘুরলো শিরশিরে অনুভূতিতে খিল খিলিয়ে হেসে উঠলো, বললো–,,আদাভান আমি পড়ে যাবো কিন্তু সুরসুরি লাগছে আমার!

আদাভান তৃধা কে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে বললো–,,দেখি তুমি কেমন আমার মন পড়তে পারো?যদি ভুল উত্তর দাও তো ফেলে দিবো,যদি সঠিক উত্তর দিতে পারো তো তোমার পছন্দ মতো একটা গিফট দিবো!

তৃধা বলে উঠলো–,,গিফট লাগবে না আমার, আর না কোনো উত্তর দিতে পারবো,আপনার যা মন এটা বুঝতে গেলে আমি অর্ধেক ম’রে ভুত হয়ে যাবো!

আদাভান তৃধার দিকে গম্ভীর হয়ে তাকালো,তৃধা চোখ ছোট ছোট করে বললো–,,এভাবে তাকাচ্ছেন কেনো?

আদাভান অভিমান করে বললো–,, কিছু না!

তৃধা আদাভানের গাল টেনে বললো–,,কিছু-মিছু!

আদাভান তৃধা কে নিয়ে রুমে এসে পায়ে ঠেলে দরজা আঁটকে দিলো,তৃধা আদাভানের গালে এক হাত রেখে বললো–,, রাগ করছেন আমার উপর?আচ্ছা আর কথা বলবো না আকাশ ভাইয়ার সাথে।

আদাভান নিশ্চুপ, তৃধা এবার ঘাড় এলিয়ে দিয়ে নিজের ঠোঁট কাম’ড়ে ধরে বললো–,, আপনি মনে মনে যা ভাবছেন তা সরাসরি বললে কি আমার মান ইজ্জ’ত কিছু থাকবে?আপনার মতো নির্ল’জ্জ তো আর আমি নই!

আদাভান তৃধার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসলো,মুখে মিছে গাম্ভীর্যতার ছাপ তৃধা বো’কাটা তা ধরতেই পারলো না!

তৃধা গাল ফুলালো,এক পর্যায়ে বললো–,,কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছেন কেনো?নামিয়ে দিন আমায়।

আদাভান তৃধা কে নরম তুলতুলে বিছানাটায় এক প্রকার ছুঁড়ে মার’লো তবে ব্যাথা পাবে এমন করে ফেলেনি।তৃধা বিছানায় পড়েই বলে উঠলো–,, জোর করে কোলে তুলে আবার আছা’ড় মা’রার কি দরকার ছিলো?আমি তো একবারও জোর করিনি তোলার জন্য। সব সময় শুধু আমার সাথেই এমন করেন!

আদাভান লাইট অফ করে গিয়ে সিঙ্গেল সোফাটায় শুয়ে পড়লো,তৃধা এবার সত্যি সত্যি বিরক্ত হলো। আশ্চর্য রাগ করার মতো কি করলো তৃধা?

তৃধা উঠেই আগে লাইট জ্বা’লিয়ে দিলো তারপর রাগে গজগজ করতে করতে এসে আদাভানের টি-শার্টের গলায় চেপে ধরে বললো–,, কি সমস্যা?আমার সাথে থাকতে অসুবিধে আপনার?

আদাভান তৃধার রাগী রাগী চোখ মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ।

তৃধা বিরক্তি নিয়ে বললো–,,চলে যাবো কিন্তু রুম থেকে!

আদাভান গম্ভীর কন্ঠে বললো–,, আগে বলো আমার মন এখন কি চাইছে?

তৃধা চোখ ছোট ছোট করে বললো–,, নির্ল”জ্জ পুরুষদের মন যা চায় তাই চাচ্ছে আপনার মন!

আদাভানের জড়ানো কন্ঠ –,,নিজ মুখ বলো!

তৃধার গলা কেঁপে উঠলো এবার, এগুলা কি মুখে বলার জিনিস?লোকটাও এতো ব’দ সেই সারাদিন রাত সন্ধ্যা জ্বা’লিয়েছে এসব বলে বলে।

তৃধা বলে উঠলো–,,রাগ করে বসে থাকুন আমি কিছু বলছি না!

আদাভান আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কিছু আছে কিনা যা দিয়ে আপাতত বউকে ব্লা’ক মেইল করা যাবে।

আদাভান ছোট একটা হাতল যুক্ত ব্লে’ড খুঁজে পেলো তবে তাতে যে ধার নেই তা তো শুধু ও নিজে জানে তৃধা তো জানে না।

আদাভান ওইটা আচমকা নিজের হাতের সামনে চেপে ধরে বললো–,,বলো নয়তো দিলাম হাত কে’টে!

তৃধা আঁতকে উঠে বললো–,,আদাভান, ছেলেমানুষী করছেন কেনো?হাত কে”টে যাবে তো।

আদাভান বাঁকা হেসে বললো–,, তাহলে বলো,এখন তুমি আমার মনের টা বলবে সাথে ওইটার উল্টোটাও বলবে!

তৃধা তড়িঘড়ি করে বললো–,, বলছি বলছি আপনি ওইটা সরান প্লিজ!এরকম কেউ করে পা”গল লোক,আমি তো নিজ থেকেই বলতাম।

আদাভান মৃদু হেসে বললো–,,তো বলো।

তৃধা শুকনো ঢোক গিলে বললো–,,আপনি এখন আপনার বউকে আদর করতে চাচ্ছেন!
দ্বিতীয়টা হচ্ছে…
আপনার বউ এখন আপনার আদর পেতে চায়!

আদাভান এবার হাতের থেকে জিনিস টা ছুঁড়ে মে’রে বললো–,, তাই?লজ্জাবতী বউ আমার মুখ ফুটে বলতে পারছিলে না বুঝি!

তৃধা বেশ বুঝতে পারলো আদাভানের শয়”তানি।তৃধা এক পা দু পা করে পিছিয়ে গিয়ে বালিশ তুলে আদাভান কে মা’রা শুরু করলো।
আদাভান হো হো করে হেসে বললো–,,কেমন লাগছে মিসেস?

তৃধা বলে উঠলো–,,জঘ”ন্য!

আদাভান তৃধার হাত চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো খুব কাছে যেখানে মাঝে কোনো দূরত্ব অবশিষ্ট নেই।তৃধা আদাভানের চোখে চোখ রেখে চুপ করে আছে!

আদাভান তৃধার কোমর জড়িয়ে ধরে কানের একপাশে চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বললো–,,আদর নিবে না বউ?

তৃধা লজ্জায় মুখ লুকিয়ে বললো–,,নিবো!

আদাভান তৃধাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলো, ধীরে ধীরে নিজের ঠোঁটের অধিপত্যে ছড়ালো সম্পূর্ণ তৃধাতে।আপন করে নিলো নিজের প্রিয়তমাকে,তাদের ছোট ছোট খুনসুটি ঝ’গড়া রাগ অভিমান কে দূরে ঠেলে দিয়ে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে নিলো নিজেদের কে।
দিনশেষে ভালোবাসা মানুষটির বুকে নিজের জায়গাটা ঠিকঠাক বুঝে নিয়ে তাতে মাথা রেখে চুপটি করে ঘুমানোটাই হয়তো মানুষের একান্ত চাওয়া, মানসিক শান্তির কারন!
—————
ভোর বেলাতে প্রোপোজাল দিবি?রাদিফের কথায় নাদিম ধু’ম করে ওর পিঠে এক কি’ল বসিয়ে দিলো।

নিশি বলে উঠলো–,,ওফ! তোরা কি মারা’মারি থামিয়ে আসল পয়েন্টে আসবি? নাকি চলে যাবো।

নাদিম বিরক্ত হয়ে বললো–,, তৃধার বাচ্চাটা এতো ঘুমায় ক্যান?ওর ব্রেন থেকে কিছু না কিছু একটা উপায় নিশ্চিত বের হতো।

আভা বলে উঠলো–,,নোভারে প্রোপোজ করতে মন চাইল কেন তোর হঠাৎ!

নাদিম কপাল চাপড়ে বললো–,,আমার কপা’ল খারা’প তাই!তোর বোন যে একসেপ্ট করবে না তাও জানি,তবে শেষ চেষ্টা তো করা যেতেই পারে।বিয়ে বাড়িতে কখন কে কোন দিক দিয়ে প্রস্তাব দিয়ে বসে বলা তো যায় না!

আভা খোঁচা মে’রে বললো–,, ওই দেখ নোভা চলে আসতেছে।ভাব কি কি বলবি।

নাদিম না’র্ভাস, এই সকাল বেলা ঠান্ডা পরিবেশেও ঘেমে যাচ্ছে বার বার।নোভা প্রথমে চ’ড় দিবে তার পর রিজেক্ট করবে সবই জানে নাদিম তার পরও ভয় হচ্ছে ওর!

নাদিম নোভার কাছে যেতেই বাকিরা সব লুকিয়ে পড়লো,নাদিমের কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে চুল লেপ্টে গেছে কপালের সাথে।নোভা আশেপাশে তাকিয়ে বললো–,,কিরে তুই একা বাকিরা কই?

নাদিমের কন্ঠনালী কাঁপছে, সে কাঁপা কন্ঠে বললো–,, একটা কথা বলার ছিলো তোকে!

নোভা ভ্রু কুঁচকে বললো–,, কি?

নাদিম আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো, হুট করেই হাঁটু মুড়ে বসে পড়লো নোভার সামনে, নোভা প্রতিক্রিয়া দেখায়নি তেমন।নাদিম বলে উঠলো–,,নোভা আই আই লা..!না মানে আমি তোকে ভালোবাসি!

নোভা চুপ রইলো কিছুক্ষণ পর নাদিম কে টেনে উঠিয়ে দাঁড় করালো সামনে,তার পর পরখ করলো নাদিম কে ভালো করে।

নোভা হাত বাড়াতেই নাদিম ধরেই নিয়েছে তার এখন চ’ড় খাওয়ার পালা,তবে তেমন কিছুই ঘটলো না নোভা নাদিমের গাল আলতো ছুঁয়ে দিয়ে বললো–,,ভিতু ছেলেদের পছন্দ না আমার! যার নিজেরই হাঁটু কাঁপে সে আমাকে আমার বাবার কাছে চাইবে কি করে?

নাদিম কপালের ঘাম মুছে বললো–,, সময় হোক তোর বাপ না মানলে তুলে এনে বিয়ে করে নিবো।তোকে হারিয়ে ফেলার তীব্র ভয় আছে আমার,তবে তোর বাবাকে ভয় পাওয়ার মতো কিছু নেই,তোকে ভালোবাসি তোকে একটু আধটু ভয় পেলে আমার কোনো দিক দিয়ে জা’ত চলে যাবে না!ভালোবাসার মানুষের কাছে আমি আজীবন পদে পদে হারতে রাজি তবুও তাকে ছাড়তে রাজি নই।এবার বল তুই কি আমার ভালোবাসা গ্রহন করবি?

নোভা থমথমে কন্ঠে বললো–,, আংটি যেটা এনেছিস পড়া!

নাদিম নোভার বাড়িয়ে দেওয়া হাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো, তার পর এক টানে হাত কাছে এনে আংটি পড়িয়ে টুপ করে চুমু দিয়ে হাত ছেড়ে দিলো!

নোভা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো–,,তবে রে শয়’তান!

নাদিম আগে আগে দৌড়াচ্ছে তার পেছনে নোভা।প্রোপোজাল শেষে কে বাচ্চাদের মতো মারা’মারি করে?
তবে প্রশ্ন মনে রেখেই তিন বন্ধু মিলে হাত মিলালো যাক ফাইনালি নোভা নাদিম কে ফিরিয়ে তো দেয় নি।তৃধা জানলে নিশ্চিত ওকে ছাড়া আসায় খুব করে চিল্লাচিল্লি করবে তবে খুব বেশি খুশিও হবে,ওর বেস্টফ্রেন্ড ওর ভাবি হয়ে যাবে যে!

চলবে….

#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব২৫
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
আলিজার বিয়ে আজ সকাল থেকেই কাজে ব্যস্ত সবাই,এগারোটা বাজে এতোক্ষণে পার্লার থেকে মেয়েরা আসলো আলিজা কে সাজানোর জন্য।
তৃধা,মৃধা আলিজার সাথে গিয়ে বসলো মূলত মেয়েটাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য, কিছুক্ষণ পর তো চলেই যাবে ভেবে মন ভার হলো তাদের।
আলিজা তো সুযোগ পেলেই কেঁদে কে’টে ভাসাচ্ছে, ফাহিমা বেগম ও মেয়ের সাথে তাল মিলিয়ে কেঁদেই যাচ্ছেন।আনন্দের মাঝেও কেমন শোক শোক পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে না চাইতেও।

তৃধার কাছে জিদান কে রেখে মৃধা গেলো তৈরি হতে, মেহমানদের ও তো সামলাতে হবে আবার। ছোটরা সব দল বেঁধে তৈরি হতে গেছে।গেইট ধরা নিয়ে তাদের প্ল্যানিং এর কোনো শেষ নেই।

আদাভান খুঁজতে খুঁজতে এসে পৌঁছালো আলিজার ঘরে মূলত সকাল থেকে সে বউ কে একবার ও দেখেনি ঘুম থেকে উঠে দেখলো বউ তার হাওয়া।একটা নজর দেখা ও দিলো না এতো বেলা হয়ে গেছে।

আদাভান এসে দেখলো মেয়ে মানুষের ঘর ভরা সে আর ভেতরে ঢুকলো না মৃদু কন্ঠে ডাকলো–,,তৃধা শুনো একটু।

তৃধা জোর গলায় জিজ্ঞেস করলো–,, কি দরকার?

আদাভানের এবার মেজা’জ গেলো চ”ড়ে মেয়েটা কোনো কাজ এক কথায় করে না সব কিছুতে কেনো?কি জন্য?কি দরকার?এতো এতো প্রশ্ন তার করাই লাগে।

আদাভান দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,বউকে সকাল থেকে এখন অব্ধি একটা চুমু ও দিতে পারিনি,চুমু দেওয়ার জন্য আমার ঠোঁট কেমন নিস”পিস করছে !তুমি আসো পর পর টুপটাপ হাজার খানা চুমু খেয়েই তোমাকে ছেড়ে দিবো।বেশি জ্বা’লাবো না আসো বউ তাড়াতাড়ি আসো!

আদাভানের কথা শোনা মাত্ররই ঘরের ভেতর থেকে দ’ম ফাটানো হাসির শব্দ শোনা গেলো, আর তৃধা বেচারি লজ্জায় শেষ,মানে এগুলা কেমন ধরনের কথা সবার সামনে!তৃধা জিদান কে নিশি কোলে দিয়ে তড়িঘড়ি করে বের হলো না হয় এই নির্লজ্জ পুরুষ তার মানসম্মান সব শেষ করে দিবে।

তৃধা দরজা খুলে বের হয়ে যেই না কিছু বলতে যাবে,তার আগেই আদাভান তৃধার মুখ চেপে ধরলো এক হাতে চোখ রাঙিয়ে বললো–,,চুপ!চলো আমার সাথে।

তৃধার হাত টেনে ধরে নিজের পেছন পেছন নিয়ে যেতে থাকলো।তৃধা বাধ্য মেয়ের মতো গেলো, আদাভান কে দেখে মনে হচ্ছে রেগে আছে,ও তো দু তিন দিন ধরে কোনো আকা’ম করেনি তবে এই ব্যাটা এতো চে’তলো ক্যান?তৃধার ভাবনার মাঝেই দরজা লাগানোর শব্দ হলো জোরেশোরে!

তৃধা কেঁপে উঠলো তখনই,আদাভান তৃধার দিকে এগোচ্ছে আর তৃধা জোর কদমে পেটাচ্ছে,তৃধা এবার চোখ ছোট ছোট করে বললো–,, আমি আবার কি করেছি এমন করছেন কেনো?

আদাভান তৃধার সামনে দু হাত রেখে তৃধাকে দেয়ালের সাথে আঁটকে ফেললো,তৃধা আবার জিজ্ঞেস করলো–,, কি হয়ে..

আদাভান তৃধা কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তার ঠোঁটে চুমু বসাল,তৃধা ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো, আশ্চর্য মানুষ বলা নেই কওয়া নেই চুমু দিচ্ছে!
তৃধা দিলো দু হাতে ঠেলে ধাক্কা,আদাভান চোখ ছোট ছোট করে তাকালো তৃধার দিকে,তৃধা আঙুল উঁচিয়ে বললো–,, অসহ্য লোক এগুলা কোন ধরনের অস’ভ্যতা?রাতে কি কম জ্বা”লিয়েছেন আমাকে?আর সবার সামনে এগুলা কোন ধরনের কথা?নি’র্লজ্জ একটা!

আদাভান আদুরে কন্ঠে বললো–,, বউ দেখলেই চুমু খেতে ইচ্ছে করে এখানে আমার কোনো দোষ নেই,বউ বেশি সুন্দর সব দোষ বউয়ের!

তৃধা বিরক্ত হয়ে গিয়ে বিছানায় বসলো,আদাভান পাশে এসে বসে বললো–,,তুমি নাকি আদিবের বিয়েতে বিরোধীতা করছো?

তৃধা অবাক হয়ে বললো–,, কি সব বলছেন,আমি আমার ভাইয়ার বিরুদ্ধে যাবো কোন দুঃখে?

আদাভান হেসে বললো–,,তার মানে পক্ষে? কিন্তু তোমার চাচ্চু তো রাজি না!

তৃধা মন খারাপ করে বললো–,, হুম,ছোট আব্বু মেয়ে দিতে রাজি হলেও মেজো আব্বু নিজের ছেলের সাথে স্নিগ্ধার বিয়ে হতে দিবে না!
তৃধা কথা বলতে বলতে আদাভানের কাঁধে মাথা রাখলো,আদাভান বউয়ের মন খারা’প হতে দেখে বললো–,,বিয়ে দিতে রাজি হবে,আমি রাজি করাবো!

তৃধা খুশি হয়ে বললো–,, সত্যি! কিন্তু?

আদাভান তৃধাকে জড়িয়ে ধরে বললো–,, কোনো কিন্তু নাই,আমার প্রতি বিশ্বাস নেই তোমার?

তৃধা আদাভানের গালে আঙুল ঘুরাতে ঘুরাতে বললো–,,বিশ্বাস তো আছে,তবে মেজো আব্বুকে বিশ্বাস নেই!

আদাভান তৃধার নাকে নাক ঘষে বললো–,,বোকা বউ আমার,এভাবে মন খারা”প করছো কেনো, আমি বললাম তো সমাধান করে দিবো।ওদের টা না হয় সমাধান করলে, নোভা আর নাদিমের টা কি করে সমাধান করবে?দুটোতে মিলে রিলেশনে গেছে!

তৃধা তড়িৎ গতিতে আদাভানের থেকে সরে এসে চেঁচিয়ে বললো–,, কিহ্?কখন, কবে,কোন সময়!

আদাভান তৃধার হাত চেপে ধরে আবার কাছাকাছি এনে বসালো,তৃধার চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বললো–,,সকালে!আপনি তখন ঘুমাচ্ছিলেন মেডাম তাই আপনাকে ডাকতে পারেনি।

তৃধা মুখ ভেং”চি কে’টে বললো–,,সব দোষ আপনার!আপনার জন্য তাড়াতাড়ি উঠতে পারিনি মিস হয়ে গেলো।

আদাভান হেসে বললো–,,মিস যাতে না হয় তার ব্যবস্থা তোমার জন্য করেই রেখেছে তোমার বন্ধুরা!

তৃধা উঠে বললো–,,আমি গিয়ে আগে জেনে আসি বিষয় টা।

আদাভান তৃধাকে টেনে নিজের কোলের উপর বসিয়ে বললো–,, নো লাফালাফি যাও গিয়ে রেডি হও।একেবারে রেডি হয়েই নিচে নামবে।

তৃধা সমান তালে বললো–,, না, না,না, না!

আদাভান তৃধাকে টেনে বিছানার সাথে চেপে ধরে বললো–,, কি?

তৃধা মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললো–,, না বলেছি কানে শুনেন না নাকি?

আদাভান ভালো করেই জানে তার বউকে কি করে ঠিক করতে হয়।সে সুযোগ বুঝে তৃধার বাঁকানো ঘাড়ের উপর মুখ গুঁজে শুয়ে পড়লো,শেষ তৃধা, কাঁপা কাঁপি শুরু হলো, ঠিক টের পেলো আদাভান তবুও সে নড়লো উল্টো তৃধাকে অশান্ত করতে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি যুক্ত গাল গলায় ঘাড়ে ঘষলো,চুমু দিতে থাকলো,তৃধা সহ্য করতে না পেরে আদাভানের শার্ট সহ বাহু খামচে ধরলো,আদাভান এবার একটা কাম”ড় বসিয়ে দিলো।
হয়ে গেলো তৃধা চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,আদাভানের বাচ্চা চুল সব টেনে ছিঁড়ে ফেলবো তোমার আমি!

আদাভানের ঠোঁট জুড়ে হাসি ফুটে উঠলো,তবুও সরলো না, অশান্তের মতো একের পর এক চুমু দিতেই থাকলো,তৃধা মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে, সহ্য হচ্ছে না তার এই মিষ্টি যন্ত্র”না। ছটফ”টিয়ে একবার এপাশ তো আরেকবার অন্যপাশে মাথা ঘুরাচ্ছে।
তৃধা হাঁপিয়ে উঠেছে,জেনে বুঝে লোকটা তার দুর্বলতায় হাত দিয়েছে কি মারা’ত্মক ব্যাপার স্যাপার।তৃধার চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে আদাভানের চুল খামচে ধরে কাঁপা কন্ঠে বললো–,, আদাভান প্লিজ ছাড়ুন, আমি সব কথা শুনবো, ছাড়ুন না,, ওই..!প্লিজ!

আদাভান থেমে গেলো মুখ উঠিয়ে তৃধার অশান্ত মুখের দিকে তাকালো,তৃধার কপালে, চোখে চুমু দিয়ে বললো–,,ডোজ কাজে দিয়েছে মেডাম?

তৃধার রাগ বাড়লো,এসব করে এখন আহ্লাদ দেখাচ্ছে এই লোক।
তৃধা রাগ নিয়ে বললো–,, মানুষের দুর্বলতায় আ”ঘাত করলে গুনাহ্ হয় গুনাহ্!

আদাভান শব্দ করে তৃধার গালে চুমু দিয়ে বললো–,,আমার মতো স্বামী জাতি এমন গুনাহ্ বার বার করতে প্রস্তুত!

–,,বেশি বেশি!

আদাভান তৃধার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো–,, বউ শোনো না।

–,,কান খোলাই আছে আমার।

–,,একটু আদর করি?বেশি না একটু!

তৃধার হাসি পাচ্ছে প্রচুর,কিন্তু এই মুহুর্তে কিছুতেই হাসা যাবে না,বেদ্দ’প টা ঠিক আদরের জন্য বিড়ালের মতো মিউ মিউ করছে।
তৃধা পাত্তা দিলো না,আদাভান তৃধার গালে হাত রাখলো আলতো করে,তৃধা মুখ বাঁকালো আদাভান হাসলো।

আদাভান তৃধার উপর নিজের পুরো ভার ছেড়ে দিতেই তৃধা চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,, ম’টু লোক কোথাকার।সরুন রেডি হবো আমি,তার পর আবার গেইট ও ধরতে যেতে হবে!

আদাভান ভ্রু কুঁচকে বললো–,, কিহ্!কতো ছেলে আসবে ধারনা আছে তোমার?আমার বউ এমনিতেই সুন্দর সবাই নজর দিবে এসব সহ্য করতে পারবো না আমি,গেইটে যাওয়া নিষেধ।

তৃধা আদাভানের গলা জড়িয়ে ধরে আদুরে কন্ঠে বললো–,, এই শোনো না!

আদাভান চোখ ছোট ছোট করে বললো–,, বাহ্! কি উন্নতি সোজা তুমি তে চলে গেছো?কিন্তু এসব আবদার মানবো না আমি।

তৃধা আদাভানের কলার চেপে ধরে বললো–,,এই…!শুনো না অনুমতি দিলে তোমাকে আমি আদর দিবো অনেক গুলা!

আদাভান অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো–,, আদর লাগবে না আমার, যাওয়া নিষেধ মানে নিষেধ!তার পরও যেতে দেখলে পা ভাঙ্গবো।

তৃধা এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলো আদাভান কে,কিন্তু পারলো না, সুস্বাস্থ্যের অধিকারি একজন পুরুষ মানুষ কে তৃধার মতো চুনোপুঁটি এক চুল ও নাড়াতে পারলো না!তৃধা গাল ফুলালো, ঠোঁট উল্টালো,কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকালো,আহ্লাদ করলো,আহ্লাদী হয়ে আদাভানের গলা জড়িয়ে ধরে গুটিসুটি মেরে পড়ে রইলো।

আদাভান বউয়ের আবদার বুঝলো,তাকে উঠিয়ে নিজের বুকের উপর শুয়িয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।

আদাভান তৃধার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল–,,প্লিজ জান!অবুঝের মতো করে না পাখি,তুমি তো জানো তোমাকে কেউ গভীর দৃষ্টিতে দেখুক তা আমার পছন্দ না!আমি চাই আমার ব্যক্তিগত চাঁদকে শুধু আমি দেখবো, অন্য কেউ দেখলে আমার হৃদয়ে জ্ব’লন হয়, তীব্র ব্যাথার সৃষ্টি হয়,প্লিজ সোনা এমন আবদার করো না যা পূরণ করতে পারবো না।তুমি বললে পুরো আমিটাকে দিয়ে দিবো সাথে জীবনটাও দিয়ে দিবো,তবুও অন্য কারো সাথে এক ফোঁটা ও ভাগ করতে পারবো না,অন্য কেউ তোমার দিকে তাকালে সহ্য করতে পারবো না,কেউ একটু ছুঁয়ে দিলে আমি মেনে নিতে পারবো না!
আমি আমি প্রচুর প্রচুর ভালোবাসি তোমাকে!বিশ্বাস করো অনেক মানে অনেক ভালোবাসি।ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসবো আজীবন, শুধু এইটুকুই অনুরোধ ছেড়ে যেও না কখনো,হয়তো মানুষ ছাড়াও মানুষ বাঁচে। তবে আমার কেনো যেনো মনে তুমি হারিয়ে গেলে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে,আমার হার্ট ফে’ইল হবে, আমি মা…!

তৃধা আদাভানের ঠোঁট চেপে ধরলো,গভীর দৃষ্টিতে তাকালো আদাভানের দিকে।আদাভান তৃধাকে নিয়ে বসে পড়লো তৃধা আদাভানের কোলে বসে আছে,তৃধার চোখের দৃষ্টি এলোমেলো, সে আদাভানের দিকে তাকিয়ে আছে হুট করেই তৃধা কেঁদে উঠলো, চোখ বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়া শুরু হলো।

আদাভান বিচলিত হলো,তৃধাকে বুকে টেনে নিয়ে ডাকলো–,,আমার প্রজাপতি!

তৃধা হেঁচকি তুলে বললো–,,আমাকে এতো এতো ভালো কেনো বাসেন আদাভান?আপনি জানেন আমাকে এতো বেশি ভালো কেউ বাসেনি,সব সময় সবার সর্বশেষ গুরুত্ব হয়েছি আমি,কেউ কখনো ভালোবেসে নিজের জীবনের প্রথম প্রায়োরিটি বানায়নি,আমার সব রাগ, অভিমান, ভুল মুখ বুঝে সহ্য করেনি।আমাকে আদর করে করে আহ্লাদী বানায়নি,আমার দুঃখ কষ্টের ভাগ নেয়নি,আমার ইচ্ছে গুলোকে মূল্য দেয়নি কিচ্ছু করেনি। আপনি আমাকে সব থেকে বেশি অপছন্দ করতেন একটা সময়,কিন্তু এখন এতোটা আপন কি করে বানিয়ে নিলেন,এতোটা আপন কি করে করলেন নিজের?এতো ভালোবাসায় কেনো জড়ালেন আমায়?আমার মাঝে খারা’প কিছু কেনো খুঁজে পাননা আপনি?এতো ভালোবাসা দেখলে আমার ভয় হয় আদাভান,সত্যি ভীষণ ভয় হয়,আমার জীবনে কিছুই ছিলো না হারানোর ভয়ও ছিলো না।এখন আমার প্রতি নিয়ত ভয় হয়, ভয় আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ন্যায় আর বার বার মনে হয় আপনাকে আমি হারিয়ে ফেলবো,
আপনাকে হারিয়ে ফেলবো ভেবেই আমার দ’ম বন্ধ হয়ে আসে আদাভান!আপনাকে হারিয়ে ফেললে তৃধা তালুকদার তার সব রাগ,জে’দ,তে’জ হারিয়ে ফেলবে।সে নিঃস্ব হয়ে যাবে আদাভান।
আপনি বিশ্বাস করুন আপনার প্রজাপতি আপনাকে ভীষণ ভীষণ রকম ভালোবেসে ফেলেছে।তার আপনাকে ছাড়া চলে না!তৃধা তালুকদারের তার প্রিয় শ”ত্রকে ছাড়া এখন এক মুহুর্তও চলে না, কি জা’দু করেছেন প্রফেসর?

আদাভান তৃধাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো–,,কেউ ভালোবাসতে হবে কেনো?আমার ভালোবাসায় পোষাবে না?কম পড়ে যাচ্ছে,পরিমাণ আরো বাড়াবো?কেউ সহ্য করতে হবে কেনো?আমি রাগ, অভিমান,তে”জ,জে”দ যা আছে সব সহ্য করবো।আমি আছি তো জান আর কাউকে কেনো লাগবে?আমি আমার তৃধারই থাকবো তার অনেক অনেক ভালোবাসবো!

তৃধা আদুরে বিড়াল ছানার মতো গুটিসুটি মেরে বললো–,,এতোটুকু ভালোবাসায় পোষাবে না আরো আরো চাই আমার!

–,, যত চাও ততই দিবো!

–,,আপনি পঁচা।

আদাভান হেসে ফেললো এবার,এই মেয়ে নাকি বড় হয়ে গেছে বয়স বেড়ে যাচ্ছে,তার কাছে তো পুরোপুরি বাচ্চা, বাচ্চাদের মতো গলা জড়িয়ে আবদার করে,দেখলেই কেমন আদর আদর পায়!ইশ্ কি আদুরে বউ তার, কপাল করে এমন বউ পেয়েছ,মনে মনে হাজার বার নিজের বাবাকে ধন্যবাদ দেয় আদাভান,জোর করে বিয়ে দিয়ে কি উপকারটাই না করলেন তিনি,এমন একটা চমৎকার মেয়েকে নিজে পছন্দ করেও তো কোনো দিন পেতো না!

আদাভান ডাকলো–,,এই পাখি।
তৃধা ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো–,, হুম!

–,,এখন ঘুমালে কি করে হবে?সময় দেখেছো?

–,,একটু।

আদাভান তৃধাকে নিয়ে এবার দাঁড়িয়ে পড়লো,তৃধা তড়িঘড়ি করে আদাভানের গলা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আগের মতোই রইলো।আদাভান তৃধাকে কোলে নিয়েই জিজ্ঞেস করলো–,, এই অধমকে এতো ভালোবাসার কারন?

তৃধার সোজাসাপটা জবাব–,,আমার স্বামী অসাধারণ একজন মানুষ, ভালো না বেসে উপায় নেই তাই ভালোবাসি!সে না করলেও ভালোবাসবো,আমার প্রতি বিরক্ত হয়ে ছেড়ে দিলেও ভালোবাসা কমাবো না!

আদাভান মৃদু ধম’ক দিলো তৃধাকে,তৃধা হেসে আদাভানের কপালে গাঢ় করে চুমু খেয়ে বললো–,,আপনি অনেক অনেক ভালো আদাভান।আর..

–,,কি?

–,,সুদর্শন পুরুষ!

আদাভান মুগ্ধ হয়ে তাকালো তৃধার দিকে,একে কি করে শুরুর দিকে অপছন্দ করেছিলো ভেবেই অবাক হয়।ডি”ভোর্স দেওয়ার মতো ভয়াবহ সিদ্ধান্ত ও নিতে চেয়েছিলো!জীবনসঙ্গী হিসেবে তৃধার থেকে বেস্ট কাউকে কোনো দিনও পেতো না আদাভান, সৃষ্টিকর্তা তো নিজে তার জন্য তৃধাকে রেখেছিলেন কি করে আলাদা হয়ে যেতো দুজন?আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করেন আদাভান প্রায় সময়ই।

আদাভান তৃধাকে নিয়ে ঘুরে গেলো আলমারির কাছে,গিয়ে ড্রেস বের করে আনলো, এই পাগ”ল না হয় আজকে আর তৈরি হবে না।

আদাভান তৃধাকে বিছানায় বসিয়ে দিতে চাইলো,কিন্তু তৃধা গলা ছাড়তে নারাজ,আদাভান হেসে ফেললো বাচ্চামোতে।
সে বলে উঠলো–,,নিজের বিপদ ডাকছেন কিন্তু মেডাম।ধরলে কিন্তু আজকে আর ছাড়বো না,মান সম্মানের পরোয়া কিন্তু আমি করি না,আপনারটাও কিন্তু সাথে যাবে!

তৃধা ছেড়ে দিলো সাথে সাথে কথার মর্মার্থ ধরতে পেয়ে লজ্জা ও পেলো। আজকাল সে লজ্জা পায় তাও আদাভানের সামনে বেশি, বিষয় টা তৃধার কাছে ইন্টারেস্টিং লাগে।

আদাভান জিজ্ঞেস করলো–,, যাবে গেইট ধরতে?

তৃধা চোখ তুলে তাকিয়ে বললো–,, আমি চাই আমার স্বামীর জিনিস শুধু সে একাই দেখুক,অন্য কাউকে দেখার সুযোগ করে দিবো না!

আদাভান প্রশান্তি ময় হাসি হাসলো,মনের ভেতর কেমন সুখ পাখি উড়ে গেলো।তৃধাকে ড্রেস পড়তে তাড়া দিয়ে বললো–,,পড়ো বাহির থেকে আসছি আমি,আর হ্যাঁ মুখ আর চুলের সাজ বাকি রাখবে আমি এসে সাজাবো!

আদাভান বেরিয়ে গেলো নিঃশব্দে, আর তৃধা চোখ বন্ধ করে হেসে উঠলো, তার জীবনটা কতোটা রঙিন করে তুলেছে এই একটা মানুষ!
—————-
বিয়ের সব কাজ শেষ হলো,আলিজা লাল টুকটুকে বউ সেজে বসে রইলো,মেয়েটাকে কি ভীষণ মিষ্টি দেখাচ্ছে সবাই তো দেখছে আর মাশাআল্লাহ বলছে!

তৃধা তৈরি হয়ে এসে আলিজার ঘরে ঢুকলো তার পড়নে গাঢ় সবুজ রঙের লেহেঙ্গা, আদাভানের পছন্দ তার বউকে এই রঙে দেখতে চায় সে।তৃধা ঘরে ঢুকতেই সবাই তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকালো, আমিনা বেগম ছেলের বউকে জড়িয়ে ধরে বললো–,, আমার মায়ের নজর না লাগুক!

আদাভান দরজা থেকে বলে উঠলো–,,আমি তো নজর দিবোই মা!

আমিনা বেগম ছেলের এমন কথায় মিছে রাগ দেখিয়ে বললো–,, তবে রে পাঁ”জি ছেলে!

আদাভান ভাব নিয়ে বললো–,, এতো সুন্দর লাগার পেছনে কারন হচ্ছে আমি নিজ হাতে সাজিয়েছি,নয়তো অন্য সময় তোমার বউ মা কে পে’ত্নীর মতো লাগে!

তৃধা চোখ রাঙিয়ে তাকালো,সাজিয়েছে এটা আবার সবাইকে বলে বেড়াতে হবে?

আদাভান তো বলেই কে’টে পড়েছে,তৃধা পড়েছে লজ্জায় নোভা,আভা,নিশি,নাজিয়া, স্নিগ্ধা এক প্রকার ঘিরে ধরেছে তাকে।আমিনা বেগম হাসলেন ছেলে মেয়ে দুটো যে এক সাথে ভালো আছে এতেই তারা খুশি!

তৃধা সব কিছু বাদ দিয়ে নোভাকে টেনে দূরে নিয়ে গিয়ে বললো–,,আমার ভাইয়ের সাথে তো ঠিকই প্রেম টেম করে বেড়াচ্ছিস শুধু আমাকেই বলার প্রয়োজন মনে করিসনি কেউ।

নোভা জানতো এমন কিছুই হবে,নিশি এসে বললো–,,ভাই তুই তো ঘুমাচ্ছিলি,ভোর বেলা যে তোর ভাই এসব করবে কে জানতো,কি শখ মাই’রি!

তৃধা গাল ফুলিয়ে রাখলো,আভা বলে উঠলো–,,দুলাভাই এখন তোকে দেখলে নিশ্চিত টুপ করে গি’লে ফেলবে কি যে কিউট লাগছে না!

তৃধা সরে গিয়ে বসলো আলিজার পাশে,তার সাথে টুকটাক কথা বলতে ব্যস্ত হলো।একটু পর মৃধা আসলো প্লেট নিয়ে আলিজা কে খাওয়াতে মেয়েটা সকাল থেকে খায়নি কিছু।

মৃধা এসেই তৃধাকে বললো–,,তৃধু নিচে যা তো খেতে ডাকছে তোকে ভাইয়া, এই বাকিরাও যা বর যাত্রী এসে পড়লে খাওয়ার সুযোগ পাবি না।

তৃধা বলে উঠলো–,,আপাই তুমি খাবে না?

মৃধা হেসে বললো–,, আমরা মা ছেলেতে খেয়েছি তুই যা,আমি আলিজার কাছে আছি এখন!

তৃধা সহ বাকিরা নেমে গেলো,উঠোনে স্টেজ করা হয়েছে দাওয়াতের মানুষের ছড়াছড়ি,তৃধা নিজের শ্বশুরের সাথে কথা বললো গিয়ে আগে,ওর বাবার থেকেও শ্বশুরের সাথে সম্পর্ক অনেক ভালো,তৃধা এখনো নিজের বাবার সাথে সহজ হতে পারেনি,না হতে পারাটাও স্বাভাবিক, পৃথিবীতে হয়তো কিছু জিনিস কখনো ঠিক হবার নয়, মুখে বললেই তো আর হয়ে যায় না,এতো গুলো বছরে যে সম্পর্কে দূরত্ব ছাড়া কিছু ছিলো সে সম্পর্কে হুট করে এসেই জড়তা কমে যাবে ধারনা করাটা ভুল।তৃধা জানে না কখনো ঠিক হবে কিনা, তবে এখন আর মন খারাপ করে না,তার বাবাকে সে ভালোবাসে সম্মান করে আজীবন করে যাবে হয়তো প্রকাশ করা হবে না তেমন করে তবুও এতো রাগ পুষে রেখে কি লাভ।

তৃধার বাবা দূর থেকে মেয়েকে হাসতে দেখলেন,দেখলেন আশরাফ মজুমদার কি করে নিজের মেয়ের মতো করে তার মেয়েকে আগলে রাখছেন,হৃদয় টা ভার হয়ে আসলো তার,রাজিয়া ঠিকই বলে হাসিখুশি ছোট্ট প্রাণ টাকে তিনি বড্ড অবহেলা করে ফেলেছেন।যার ফলে আজ এক অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হয়েছে তাদের মাঝে,বাবার কাছে মেয়েটা আবদার করে না, কতোদিন হলো মন ভরে ডেকে উঠে জড়িয়ে ধরে না, বাবা বলে,আশরাফ মজুমদার মেয়ের বলা একটা কথা আজও মনে রেখেছেন,আপনার অহং”কার একদিন আপনার থেকে সব কে’ড়ে নিবেন!তখন বুঝবেন ভালোবাসাই আসল সম্পদ!

আশরাফ মজুমদারের কাঁধে হাত রাখলো আদাভান,তার বউটার মতো যে শ্বশুর ও কষ্ট পাচ্ছে বেশ বুঝতে পারলো সে।
আশরাফ মজুমদার চকিত নয়নে তাকালো মেয়ে জামাইয়ের দিকে।আদাভান মৃদু হেসে বললো–,, বাবা!সন্তান ভুল করলে যেমন বাবা মা তাদের বিনা শর্তে ক্ষমা করে দেয়,রাগ পুষে রাখতে পারে না,ঠিক তেমনই বাবা মা সন্তানের সাথে যত যাই করুক তাদের একবার আদুরে ডাকে সন্তান সব কিছু ভুলে যায়,বাবা মায়ের মতো শান্তির আশ্রয় স্থল সবারই দরকার হয়, হবে।আপনার মেয়েটা আপনাকে ছাড়া ভালো নেই,তার নিজের বাবা কে প্রয়োজন,পৃথিবীতে বাকি সব ধরনের সুখ তাকে আমি এনে দিতে পারলেও আপনার ভালোবাসার অভাব কোনো দিন পূ্রণ করতে পারবো না।আপনার মেয়ের কষ্ট আমার কষ্ট বাবা,ওর ঘুমের মাঝে বাবা বলে কেঁদে উঠা, বাবার জন্য ছট”ফট করতে দেখা আমার জন্য বড্ড পীড়া”দায়ক, আমি অনুরোধ করবো আপনাকে বেশি করে না হলেও অল্প করে হলেও নিজের মেয়েটাকে ভালোবাসা দিন একটু আগলে রাখুন,সে ভালো থাকবে!

আজাদ তালুকদার আদাভান কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন,কঠিন ধাঁচের মানুষ টাকে কাঁদতে দেখে আদাভান চমকালো,তৃধা অনেকটাই তার বাবার মতো, নিজেকে সব সময় এক কঠিন আবরনে আবৃত রাখে।আজ কি হলো মানুষটার!

আজাদ তালুকদার বলে উঠলো–,, ও আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না এরিশ!আমি আমার মেয়ের সাথে জঘ’ন্য তম অন্যায় করে ফেলেছি।

আদাভান আজাদ তালুকদার কে সামলে নিয়ে বললো–,, কথা বলেই দেখুন না,আমি বলছি সব ঠিক হয়ে যাবে দেখবেন!

আজাদ তালুকদার মাথা নাড়লেন তিনি কথা বলবেন তার মেয়ের সাথে,যা হবে তা পরে দেখা যাবে।
———–
স্টেজে সব মেয়েরা একটা টেবিলে গোল হয়ে বসলো।
খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব নিয়েছে ছেলেরা।আদাভান, নাদিম,আদিব,জোবান,আরাফাত,আরো কিছু আত্মীয় সাথে যোগ দিয়েছে তাদের।
যেহেতু বাড়ির মেয়ে বউরা বসেছে সেহেতু বাহিরের কাউকে এই টেবিলের আশেপাশে ও ঘেঁষতে দিচ্ছে না আদাভান।

তৃধা তো খাওয়াব বাদ দিয়ে আশেপাশের টেবিলের আত্নীয়দের দেখতে ব্যস্ত, মেয়ে গুলা কি করে তাকাচ্ছে ছেলদের দিকে যেনো রোস্ট প্লেটে না সব তার ভাই আর জামাইয়ের গায়ের উপর।

তৃধা আদাভান কে জোরে ডাকলো,আদাভান এসে জিজ্ঞেস করলো–,, কি লাগবে?

তৃধা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো–,, শা’লা মা’ক্স নেই ঘরে?

আদাভান থমথত খেয়ে তাকালো,বহুদিন পর বউ গা’লি দেওয়া ধরেছে আবার তাও সবার সামনে।

তৃধা বলে উঠলো—,,মেয়ে গুলা আমার জামাই কে এভাবে চোখ দিয়ে গি’লে খাচ্ছে,দেখে আমার সহ্য হচ্ছে না, ভেতর দিয়ে জ্বল’ন শুরু হয়ে গেছে আমার।যান গিয়ে মা”ক্স পড়ে আসুন!

আদাভান হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝে উঠতে পারলো না,তবে যে মেয়ে গুলা তাকিয়ে ছিলো তারা সব চোখ নামিয়ে নিয়েছে লজ্জায়।

আদাভান চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে এখনো,আদিব নাদিম হেসে ফেললো এবার।

নোভা,স্নিগ্ধা এবার এক সাথে বলে উঠলো–,, এই তোমরাও পড়ে এসো!

ওদের কথা শুনতেই টেবিলের বাকিরা হো হো করে হেসে উঠলো।

আদাভান তৃধার দিকে ঝুঁকে বললো–,,ভীষণ গরম,মা”ক্স পড়ে কাজ করলে তো আর রক্ষা থাকবে না।এবারের মতো ছাড় দেওয়া যায় না বউ?আমি তো তাকাচ্ছি না।

তৃধা ও খেতে খেতে বললো–,,ঠিক আছে,আ”দর টা”দর চাইতে আসবেন না আবার, সত্যি ভীষণ গরম পড়েছে ওসব ও দিতে পারবো না আমার ও ভীষণ গরম লাগবে!

আদাভান থ্রে’ট সাদরে গ্রহণ করে বললো–,, খাইয়ে দাও খুদা লেগেছে আমার।

তৃধা মুখ ভেংচি কে’টে বললো–,,কাজ করুন গিয়ে এতো খাওয়া লাগবে না,সবাই তাকিয়ে আছে এমনিতেই।

আদাভান থমথমে কন্ঠে বললো–,, বউয়ের হাত খাবো,তাতে অন্য লোকের বাপের কি?

তৃধা আদাভান কে রাগতে দেখেই খাবার তুলে ধরলো মুখের কাছে,আদাভান তৃধার আঙুল সহ চেটেপুটে খেলো,তৃধার অবস্থা খারা’প কি বেয়া’দব লোক, লোকল”জ্জার ভয় নেই,এমন ভাবে খাচ্ছে যেনো জীবনে খায়নি।

ওদের অবস্থা দেখে বাকিরা মিটিমিটি হেসেই চলেছে,আশরাফ মজুমদার আজাদ তালুকদার কে বললো–,,তোর মেয়েটা সত্যি অসাধারণ আজাদ,আমার গোঁয়ার ছেলেটাকেও একদম সোজা বানিয়ে দিয়েছে!

আজাদ তালুকদার মুগ্ধ হয়ে হাসলেন,সারাজীবন ভাবতেন এই মেয়ে তার সম্মান ডুবিয়ে দিবে,কিন্তু এই মেয়েটাই তার সম্মান বাড়িয়ে দিলো সবার কাছে হাজার গুনে!

চলবে…..