নৈঃশব্দ্যের প্রেমালাপ পর্ব-২৬+২৭

0
10

#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব২৬
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
বেশ শোরগোল শোনা গেলো স্টেজের ভেতর থেকে,সব বেয়াইন বিয়ানের মাঝে কথা কা’টা কাটি চলছে।
বর পক্ষের খাওয়া শেষ হয়েছে,বরের হাত ধোঁয়ানো নিয়ে বেশ তর্ক চলছে।
ছেলে পক্ষ বেশ কায়দা করে প্যাচে ফেলেছে মেয়েদের।আভা,নিশি ফোঁস করে উঠলো, কিছুতেই হেরে গেলে চলবে না।
নাজিয়া বলে উঠলো–,,আকাশ ভাইয়া এগুলো কিন্তু একদম ঠিক না,আপনার বন্ধু গুলা এক একটা ফাউল!

আকাশের যেনো কথা বলা বারণ তার মুখ থেকে কোনো কথা বেরই হতে দিচ্ছে না তার বন্ধু গুলা।
আকাশের বন্ধু লিমন বলে উঠলো–,,ভাবিদের ছাড়া আমার বন্ধুর হাত অন্য কাউকে দিয়ে ধোঁয়াতে দিবো না।যদি আমাদের ভাবির দুই ভাইয়ের বউয়ের মধ্যে কেউ একজন এসে ধোঁয়ায় তো টাকা যা চাচ্ছেন তাই পাবেন।

নাজিয়া বেশ বিরক্ত হলো,তার ভাইয়েরা ম’রে গেলেও তো বউদের কে পরপুরুষের হাত ধরতে দিবে না।সবচেয়ে বড় কথা গেইটেই যেতে দেয়নি,এখানে এসে হাত ধোঁয়ানো তো আরো আগে অসম্ভব ব্যাপার।

আভা,নিশি বেশ রাগলো,বলে উঠলো–,,কথার নড়চড় যেনো না হয়,আপুর ভাবিরাই হাত ধোঁয়াবে অপেক্ষা করুন!

আকাশ তার বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বললো–,, কেনো এমন করছিস ভাই,যদি সত্যি সত্যি ভাবিরা আসে তখন তোরাই হারবি দেখিস।

আমির বলে উঠলো–,,এরিশ,আর জোবান জীবনেও বউ আসতে দিবে না বুঝা হয়ে গেছে আমার,জিতবো তো আমরাই টাকা ও বেঁচে যাবে তোর।

আকাশ হতাশ নিঃশ্বাস ছাড়লো বিয়ের চক্করে এখন হাত জ্ব’লা শুরু হয়েছে ওর।বন্ধু গুলাও হয়েছে মীরজাফর!

আভা,নিশি মিলে নোভা আর তৃধা কে ধরে এনেছে এক প্রকার।স্নিগ্ধা, তৃধা,নোভা তিনজনই ঘরের মধ্যে গাপ’টি মে’রে পরে ছিলো এতোক্ষণ।

তৃধা ভয়ে ভয়ে আশেপাশে তাকালো আদাভান দেখলে একেবারে খবর করে ছাড়বে,পাঁ”জি লোক থ্রে’ট দিয়েছে যদি ছেলেদের সামনেও একবার দেখেছি তো হা,পা ভেঙ্গে বসিয়ে রাখবো!

তৃধা বিরক্ত হয়ে বললো–,, আমাকে কেনো ধরে এনেছিস ভাই?

নাজিয়া বলে উঠলো–,, ভাবিমনি, ভাইয়ার হাত ধোঁয়াতে সাহায্য করো প্লিজ!

তৃধা কে দেখে সবাই ভ্রু কুঁচকে তাকালো, এইটুকুন মেয়ে ভাবি?মেয়ে গুলো নিশ্চিত কোনো বান্ধবী কে ধরে এনেছে!

লিমন বলে উঠলো–,,মজা করেন আমাদের সাথে?বেয়াইন সাহেবারা,আমাদের কে বোকা মনে হয়?এই মেয়েটা কে দেখে কোন দিক দিয়ে বিবাহিত মনে হয়?ও নিশ্চিত আপনাদের কোনো ফ্রেন্ড!

আকাশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমির বলে উঠলো –,,এই যে মেডাম,কে আপনি?

তৃধা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো,আজব তো অবিবাহিতদের মতো লাগার কি আছে,ছেলে গুলা কেমন কেমন জানি।

নাজিয়া বলে উঠলো–,,আমাদের বড় ভাইয়ার বউ উনি। এরিশ ভাইয়ার বউ তৃধা ভাবি!

আমির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো,এরিশের বউ এই পিচ্চি মেয়ে!

লিমন মজা করে বললো–,, কোন ক্লাসে পড়েন ভাবি?ক্লাস টেন নাকি নাইন?

তৃধা বিরক্ত হলো প্রচুর,সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো–,,ভাইয়া, এগুলো কি?

আকাশ চোখ পাকিয়ে বন্ধুদের দিকে তাকালো, তার পর বললো–,,ভাবিমনি,কিছু মনে করবেন না প্লিজ ওরা আসলে এমনই মজা করে বেশি।

তৃধা চলে যেতে নিলে দেখলো আদাভান দাড়িয়ে আছে কিছুটা দূরে, বুকে দু হাত গুঁজে রেখে চোখ মুখ শক্ত করে রেখেছে।তৃধা শুকনো ঢোক গিললো।

এরই মধ্যে মৃধা আর স্নিগ্ধা আসলো,তৃধা বলে উঠলো–,,আপাই, ভাইয়ার হাত ধুইয়ে দে!

মৃধা তৃধার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো,যার মানে তৃধা বুঝলো,জোবান ভাইয়া ক্লাস নিয়ে ছাড়বেন!

তৃধা স্নিগ্ধার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো–,, বাঁচা বইন রাক্ষ”স টা কি ভাবে তাকিয়ে আছে দেখ।

স্নিগ্ধা আড়চোখে দেখলো আদাভান তাকিয়ে আছে।

নোভা বলে উঠলো–,,হাতই তো একজন ধোঁয়ালেই হয়,এই আভা নিশি দুলাভাই এর হাত ধোঁয়া!

ছেলে গুলো তখনই এক সাথে বলে উঠলো–,,রুলস ইজ রুলস!শর্ত না মানলে টাকা ও দিবে না।

তৃধা জিজ্ঞেস করলো কতো টাকা চেয়েছিস তোরা?

নাজিয়া বলে উঠলো–,,ভাবিমনি বেশি না সাত হাজার!

তৃধা ভ্রু কুঁচকে বললো–,, এ্যাহ্!সামান্য হাত ধোঁয়াতে সাত হাজার!

নিশি তৃধার মুখ চেপে ধরে বললো–,, তুই কার পক্ষে, বেদ্দ’প মহিলা!

তৃধা আলতো হাসার চেষ্টা করে বললো–,, তোদের টাকা আমি দিবো, তবুও হাত ধোঁয়া তার পর এসব খ”তম কর।না হয় আমি রুমে যাওয়ার পর খত’ম হয়ে যাবো!

তৃধার কথায় স্নিগ্ধা ফিক করে হেসে দিলো।নিশি নাকোচ করে বলে উঠলো –,,তোর টাকা নিবো না, ভাবি হয়েছিস কি করতে ননদের একমাত্র জামাইয়ের হাত ধোঁয়াতে পারবি না।

লিমন টিপ্প”নী কে’টে বললো–,, একদম তাই বেয়াইন সাহেবা।তৃধা ভাবি কে বেশ মনে ধরেছে আমাদের!

তৃধা চোখ বড় বড় করে তাকালো, বলে কি এই ব্যাটা!

আমির বলে উঠলো–,,ভাবি হিসেবে পছন্দ হয়েছে আর কি,তা ভাবি হাত টা ধুইয়ে দিন,ননদের জামাই কে আর কতোক্ষণ অপেক্ষা করাবেন?চাইলে আমাদের টাও ধোঁয়াতে পারেন!

তৃধা শুকনো ঢোক গিললো,আদাভান কিছু বলছেও না শুধু দেখেই যাচ্ছে।

তৃধা ঘেমে উঠছে ভয়ে,মৃধা কে মিন মিন করে বললো–,, আপাই বাঁচাও আমি রুমে যাবো হাত টাত ধোঁয়ানো অসম্ভব!

মৃধা মৃদু হেসে বললো–,, নাজিয়া তুমি করো, টাকা দিবে আকাশ!

মৃধা হেসে জিজ্ঞেস করলো–,, কি বর মশাই শালিদের টাকা দিবেন না?

আকাশ বলতে যাবে দিবো তার আগেই লিমন বলো উঠলো–,,পল্টি খেয়ে যাচ্ছেন কেনো ভাবি সাহেবা!এসবে কাজ হবে না, আমরা বড় ভাবির থেকেই আশা করছি,আমাদের বন্ধু কি ফেলনা নাকি!

তৃধা মাথা চেপে ধরে ভাবলো কি করা যায়,তার পর চমৎকার একটা বুদ্ধি পেয়ে লাফিয়ে উঠে মৃদু!

তার পর ভাব নিয়ে বললো–,,এ আর এমন কি ব্যাপার!

আদাভানের চোখ মুখ এবার শক্ত হলো,বেয়া’দবটার সাহস বেড়েছে!সে রাগলো প্রচুর,তার বউ হয়ে কিনা…

এরই মধ্যে তৃধা ডেকে উঠলো–,,ওই একটু শুনুন তো।

আদাভান আশেপাশে তাকালো, তৃধা আবার বললো–,,এখানে আসুন!

আদাভান এগিয়ে আসলো,তৃধা বলে উঠলো–,,নিশি সাবান দে।

লিমন,আমির,আকাশ ও অবাক হলো,আদাভান চোখ রাঙালো তৃধার দিকে তাকিয়ে, তৃধা সাবান আদাভানের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো–,,বোনের জামাইয়ের হাতে লাগিয়ে দিন।

আদাভান তাকিয়ে রইলো তৃধার দিকে,তৃধা দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,কি চাইছেন বলুন তো আমি ধরবো?

আদাভান পাল্টা চোখ দিয়ে শাঁসালো, তৃধা আদাভানের হাত এগিয়ে নিয়ে গিয়ে আকাশের সামনে দাঁড়ালো, আদাভান বউয়ের কথা মতো সাবান লাগিয়ে দিলো সিন”ক্রিয়েট করা উচিত হবে না এখানে।

লিমন বলে উঠলো —,,এটা কি হচ্ছে, ভাবির বদলে ভাই কেনো?

তৃধা এবার আদাভানের হাতের উপর হাত রাখলো, আদাভানের ঠোঁটে ফুটে উঠলো হাসি,বউ কি করতে চাচ্ছে এতোক্ষণে বুঝতে পেরেছে সে।

আদাভান তৃধাকে টেনে নিজের সামনে এনে বুকের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড় করিয়ে আকাশের হাতে পানি ঢাললো,তৃধা আদাভানের হাত দিয়ে আকাশের হাত ধুইয়ে দিয়ে বললো–,,ডান!

মৃধা মুচকি হাসলো, বোনের বুদ্ধি আছে বলতে হবে।
লিমন বলে উঠলো–,,কি হলো এটা, ভাবি এটা তো চি’টিং!

তৃধা হেসে বললো–,,চি”টিং কেনো হবে আপনারা বলেছেন আমার হাত দিয়ে ধোঁয়াতে হবে, এখন আমি হাত কিভাবে কোথায় রাখবো তা তো বলে দেননি।তাছাড়াও আমি আর আমার স্বামী কি আলাদা নাকি?উনার হাত মানেই আমার হাত,বুঝেছেন বেয়াই মশাই!এবার ফটাফট টাকা দিয়ে দিন তো!

আদাভান তৃধার হাত টেনে একটু পিছিয়ে গিয়ে বললো–,,এখানে আসতে মানা করেছিলাম না?

তৃধা মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,ছেলে গুলা তো সুন্দর তাই।

আদাভান রেগে তৃধা কে ছেড়ে সামনে হাঁটা ধরলো, তৃধা এগিয়ে বললো–,,ওই খাটা”শ মার্কা লোক,আমি ইচ্ছে করে এসেছি নাকি?শুধু শুধু রাগ দেখান!

আদাভানের মুখে হাসি,পিছু ফিরলো না সে,বিয়ে পড়ানো হবে কিছুক্ষণের মধ্যে কাজি এসেছে কিনা সে দিকটা দেখতে গেলো।

লিমন বলে উঠলো–,,ভাবির বুদ্ধি তো সেই।

আকাশ বলে উঠলো–,,আগেই বলেছিলাম আমি ঝা’মেলা করিস না, আলিজা বলেছে ভাইয়া এসব পছন্দ করেন না বেশি বিশেষ করে ভাবির প্রতি নাকি সে ভীষণ সিরিয়াস।আর তোরা যা যা মন্তব্য করলি নেহাৎ মেহমান বলে হয়তো পাড় পেয়েছিস, না হয় উল্টো ঝুলি’য়ে রাখতো!

আমির পানি খেতে খেতে বললো–,,তোর স’মোন্ধি তো কড়া জিনিস!

নিশি, আভা,নাজিয়া টাকা পেয়ে মহা খুশি,তৃধা কে জড়িয়ে ধরেছে খুশিতে।

বিয়ে পড়ানো হবে বলে তৃধা, মৃধা বাড়ির ভেতর ঢুকলো, আলিজার পাশে তাদের এখন থাকাটা দরকার।

কিছু সময়ের মধ্যেই বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হলো,বিদায়ের সময় যেনো চলেই আসলো।ফাহিমা বেগম আঁচলে মুখ ঢেকে কেঁদেই চলেছে।

সবারই মন ভার হলো,আমিনা বেগমের চোখ ও ছলছল করে উঠলো,নিজের মেয়ে না হোক বাড়ির মেয়ে তো মেয়ে টাকে চোখের সামনে বড় হতে দেখেছেন, পরের বাড়ি চলে যাবে আজ সব কিছু ছেড়ে দিয়ে।এ কেমন নি”ষ্ঠুর নিয়ম, আজ বিয়ে পরের দিন মেহমান!নিজেদের মেয়ে অন্যের বাড়ির সম্মান হয়ে যায় চোখের পলকেই,পরে যতই বলা হয় এ বাড়ি তার সে তো আসবেই সময় সুযোগ করে,কিন্তু তা আর হয়ে উঠে না কখনো,বাবার বাড়ি পরিনত হয় বেড়াতে যাওয়ার জায়গায়!যে বাড়িতে ছোট থেকে বড় হলো সব কিছু নিজের মনে করে,অধিকার ফলিয়ে, সে বাড়িটিই ছেড়ে দিতে হয় হাসি মুখে!নতুনত্ব কে বরণ করে নিয়ে এগিয়ে চলতে হয় নতুন এক পরিবেশে,একটা মানুষের হাত ধরে, শুধু সংসার ধর্ম পালন করার আশায়!

আদাভান দাঁড়িয়ে আছে দরজায়,বোন বিদায় দিচ্ছে সে,কষ্ট কি কম হচ্ছে?ছোট থেকে আদর দিয়ে বড় করা আদুরে পুতুল তার বোন,সব ভাই বোনের বড় সে, সবাইকেই আদরে আহ্লাদে বড় করেছে,এই বোনটা তার নেও”টা হয়েছে পুরো,সব কিছুতেই সে ভাইয়া বলতে অজ্ঞান!

সবার সামনে নিজেকে শক্ত রেখেছে সে,বোন সব ভাইদের কলি”জা টুকরো,জোবান আদাভানের পাশে দাঁড়ালো।

আদাভান করুন চোখে চাইলো ভাইয়ের পানে,কষ্ট টুকু বুঝাতে চাইলো হয়তো,জোবান ভাইয়ের বাহু জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।

আলিজার বাবা মেয়েকে তুলে দিলেন মেয়ে জামাইয়ের হাতে,আলিজা ঢুকরে কেঁদে উঠলো, বাবা কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদলো, ফাহিমা বেগম কে সামলাচ্ছেন আমিনা বেগম,তৃধা মৃধার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

তৃধার চোখে পানি টলমল করছে,কিছুদিনেই কতো আপন হয়ে গিয়েছিলো মানুষ টা!বাড়িতে তার সাথে কতো গল্প করতো, দুজন মিলে সময় টা দারুন কাট’তো তাদের বয়সের পার্থক্য বাদ দিয়ে দুজন দুজনের বন্ধুর মতোই ছিলো, আলিজার থেকে তৃধা বয়সে ছোট হলেও আলিজা সব সময় তৃধাকে বড় ভাবির মতোই সম্মান করেছে, আবার বড় বোনের মতো আদর যত্ন ও করতো!

তৃধা কেঁদে উঠলো শব্দ বিহীন আদাভান এগিয়ে আসলো তৃধার কাছে,তৃধা চোখ তুলে দেখলো মানুষ টাকে,তৃধা আদাভানের দিকে ঘুরে তার বাহু জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।

কাঁপা কন্ঠে বললো–,, আপু চলে যাচ্ছে আদাভান,রেখে দিন না!প্লিজ!

বাচ্চাদের মতো আবদার করে বসলো যেনো মেয়েটা, আমিনা বেগম এসে তৃধার মাথায় হাত বুলালো,মেয়েটা যতটা শক্ত ততটাই নরম মনের অধিকারী,কারো কষ্টই যেনো সহ্য করতে পারে না সে!

আলিজা ফিরে তাকালো বাকিদের দিকে,ইশ্!কি নিদারুণ য”ন্ত্রণায় পু’ড়ছে প্রতিটি হৃদয়? পিছুটান বড্ড খারা’প জিনিস,মায়া কাটিয়ে তোলা বুঝি এতোই সোজা?

আলিজা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো ভাইদের,জোবান নিজেকে শক্ত রাখতে হিমসিম খাচ্ছে, ছোট্ট বোন টা তার, কি করে পারে নিজেকে আটকাতে,বোনকে যেতে দিতে? তবুও যে এটাই নিয়ম!

আলিজা তৃধা কে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে উঠলো–,, ভাবিমনি তোমাকে খুব মিস করবো!

লোকে না বলে ননদিনী রায় বাঘিনী?ননদ ভাবিতে সম্পর্ক কখনো মিষ্টি মধুর হয় না,তবে এরা কেনো নিজেদের এতোটা আপন করে নিলো,এক জনের বিদায়ে অন্য জন খুশি হওয়ার বদলে কেঁদে কে’টে হয়’রান হয়ে যাচ্ছে?

তৃধা শব্দ করে কেঁদে উঠলো এবার,বাচ্চাদের মতো করে বললো–,,থেকে যাও আপু,তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার কষ্ট হবে!

আদাভান এবার কঠোর হলো,লোকে কি ভাববে?ভাবি হয়ে ননদকে বুঝানোর বদলে এই বল’দ তাকে আরো উস”কে দিচ্ছে?কি অবুঝ শিশুর মতো শুরু করেছে দুজন!

আদাভান মৃদু ধম’কের সুরে বললো–,,কি হচ্ছে কি তৃধা?আকাশ অপেক্ষা করছে যেতে দাও ওকে।

আলিজার হাত স্বযত্নে আকাশের হাতে তুলে দিয়ে আদাভান থমকালো,কন্ঠ কাঁপলো যেনো তার।কন্ঠনালি বেধ করে কথা আসতে চাইলো না তবুও বললো–,,আমার বোনকে তোমায় দিলাম,”যত্নে বৃক্ষ ভালো থাকে,বৃক্ষ ভালো থাকলেই তার ফুলে মাধুরি ছড়ায়”!
আমাদের বাড়ির যত্ন,আদর,সম্মান,ভাইদের কলি’জা তোমার হাতে তুলে দিলাম,বো’ঝ মনে হলে যেভাবে নিচ্ছো সেভাবেই নিঃশব্দে ফেরত দিয়ে যেও কোনো অভিযোগ করবো না।তবে আমাদের ফুলে সামান্য আচর লাগলেও ছেড়ে কথা বলবো না মনে রেখো!

আকাশ কৃতজ্ঞ চোখে হাসল,আলিজার হাত চেপে ধরে বললো–,,চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখবো না ভাইয়া,দোয়া করবেন!

আদাভান বোনের মাথায় হাত রেখে গাড়ি অব্দি তুলে দিলেন,পরিবেশ টা চাপা কান্নায় কেমন গুমোট হয়ে আসলো,ছলছল নয়নে বাবার রাজকন্যার বিদেয়ে হলো, সে হয়ে উঠলো অন্য কারোর ঘরের ঘরণী!
——————–
সময় কেমন যেনো চোখের পলকেই পার হয়ে যায়,সপ্তাহ খানেক কে’টে গেছে মুহুর্তেই এবার যেনো ফেরার পালা যার যার গন্তব্যে।আদাভান চাকরি ফেলে এসেছে ছোটরা পড়াশোনা,সবই যেনো নিয়ম মাফিক চলবে চলছে।

আজ থেকেই পরের দিন রওনা হবে সকলে,আজকের দিনটা তালুকদার বাড়িতে থাকবে সকলে,আজাদ তালুকদার নিজে দাওয়াত করেছেন মেয়েকে।তৃধা চুপচাপ দেখেছে শুধু বাবার ছটফ’টানি তবুও সাহস হয়ে উঠে না যেনো।

দুপুরে নিজের শ্বশুর কেও প্রথমবারের মতো দাওয়াত করেছে আজাদ তালুকদার, ভেবেই হাসলো তিনি মেয়েদের বিয়ে দিয়ে ফেললেন তবুও শ্বশুর কে একবার ও এ পর্যন্ত বাড়িতে পাত বেড়ে খাওয়াতে পারেনি,লোকের চোখে তো তার অর্থ সম্পদের অভাব নেই,তবুও কেনো যেনো সুখ নেই তার, শ্বশুর কে মানাতে পেরে যেনো বুক থেকে পাথর টা সরেছে তার, লোকে শুনলে হাসবে নিশ্চয়ই?শ্বশুর জামাইয়ে ঠুকা’ঠুকি বেশ জমে তাদের, সখ্যতা টা তাই গড়ে উঠেনি ওভাবে!

দুপুরে খাওয়া দাওয়া চলেছে পুরো দমে, বেশ ভালোই আয়োজন করেছেন তালুকদার সাহেব,এটা নিয়েও তার শ্বশুর মশাই তাকে খোঁচা মার’তে ভুলেননি।

জোছনা বেগম খুশিতে আটখানা হয়ে আছেন, নাতির মুখ থেকে যখন সব শুনলেন তার পর যেনো আর খুশিই ধরছে না তার,ছেলের প্রতি তিনি প্রায় সময়ই বিরক্ত হোন ছেলেটা তার নাতিটাকে সব সময় ছোট করে।স্নিগ্ধার জন্য আদিব কোন দিক দিয়ে খারা’প?ছেলেটা এতোদিন ধরে রাগ করে ছিলো বাড়ি ফিরেনি,এবার যদি বউয়ের টানে বাড়ি ফিরতে চায় তো দোষের কি আছে?ছেলের সাথে একটা বোঝাপড়া করতেই হচ্ছে এবার,নাতির তার চোখের মনি,কিছুতেই নাতিকে বাড়ি থেকে দূরে রাখতে চান না তিনি।

আদিব দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো সবাই তার বিয়েতে খুশি, শুধু মাঝে দিয়ে তার বাপটাই বাগড়া দিচ্ছে,বাপ হয়ে ছেলের সাথে কোন জন্মের শত্রু’তা তিনি মেটাচ্ছে তিনিই ভালো জানেন!

বিকেলের আড্ডায় কথাটা তুলে বসলেন জোছনা বেগম,
সফিক তালুকদার বেজায় চ’টলেন,এই ছেলের কি মুরোদ আছে তার ভাতিজি কে বিয়ে করার?

সুফিয়া বেগম চট’লেন উল্টো স্বামীর উপর,নিজের ছেলের প্রতি তার এতো কিসের ক্ষো’ভ?তিনি রাশভারি কন্ঠে বললো–,,আমার ছেলে কি তোমার চক্ষু’শূল?বাবা হয়ে এসব কেমন ধরনের কথা তোমার কি কম আছে?কাদের খাওয়াবে এত সম্পদ?

রফিক সাহেব মেয়ের দিকে তাকালেন, আদিব ও সোনার টুকরো ছেলে, যদিও তার রাগ জে’দ বরাবরই বেশি ত্যাড়া গোছের ছেলে সে।পাত্র হিসেবে নেহাৎ মন্দ নয়!

আজাদ তালুকদার কিছুটা হেসে বললো–,,সফিক সাহেব আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে আমার ছেলের কি কি যোগ্যতা থাকা লাগবে শুনি একটু?

বিরক্ত হলো, জোছনা বেগম।মেয়ের বাপ মেয়ে দিচ্ছে কিন্তু ছেলের বাপ ঢং পেরে বসেছে এসব কি সহ্য হয়?বুড়ো বয়সে আক্কে”লগুড়ুম হয়েছে ছেলের!তিনি চুপ রইলেন তামশা দেখার আশায়।

সফিক তালুকদার ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো–,, ছেলে বড়ই বেপরোয়া, তাকে বুঝতে হবে বিয়েটা কোনো ছেলেখেলা না,বিয়ে হলো একজন মানুষের দায়িত্ব ভালো মন্দের ভার সারাজীবনের জন্য গ্রহন করে নেওয়া।সে উদাসীন নিজের প্রতি এরকম হলে তো চলবে না,নিজেই উদাসীন হয়ে অন্য একজনের দায়িত্ব কি করে নিতে পারবে?

আদিব দাঁতে দাঁত চেপে অপমান সহ্য করলো, বাপ তাকে সুক্ষ্ম খোঁচা মে’রে বুঝালো সে দায়িত্বজ্ঞা’নহীন?

সফিক তালুকদার তার পর কায়দা করে বললো–,,আমাদের বাড়ির মেয়েকে চালাতে হলে তো ছেলেকে রোজগার পাতি কিছু করতে হবে নাকি?বেকার ছেলের হাতে মেয়ে দিবো না আমি!

আদিব বলে উঠলো–,, আপনাদের মেয়ে কতো কেজি চালের ভাত খায় বলুন তো?হিসেব করে বলবেন বেকার মানুষ আমি চাল কেনার মতো সামর্থ্য না থাকলে তো আর বিয়ে করা যায় না!

স্নিগ্ধা চকিত নয়নে তাকালো,তার ছোট্ট মস্তিষ্কে তো এতো কিছু এসে হা”না দেয়নি কখনো,সে তো ভালোবেসেই খা”লাস,সংসার বিয়ে এতো দূর তো ভাবেনি এখনো দায়িত্ব জিনিস টা বড়ই কঠিন শব্দ!

আদিবের কথায তীব্র ভ্যা’ঙ্গ করার আভাস পেলো সফিক তালুকদার, রফিক তালুকদার কপাল চেপে ধরলেন,মেয়ে তার কিন্তু বড় ভাইয়ের মুখের উপর তো কিছু বলা ও যায় না।আজাদ তালুকদার বেশ মজা নিয়ে ত’র্ক শুনছেন,তার শ্বশুরের ঠোঁটের কোনেও হাসি দুজনের এই চাপা স্বভাব টায় বড্ড মিল।

ছোটরা কিছুটা দূরে দাড়িয়ে কথা গিল’ছে,আদাভান বড়দের সাথেই বসা,সে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।

সফিক তালুকদার এবার কাঠ কাঠ কন্ঠে বললো–,, চাকরি করো তুমি ছেলে?মেয়ের ভরনপোষণ দিতে পারবে তো?বুঝতেই পারছো আদরের মেয়ে আমাদের কোনো কিছুর কমতি কিন্তু ছিলো না এতো খরচা উঠাতে পারবে তো?

আদিব একবার স্নিগ্ধার দিতে তাকালো পর পর সম্পূর্ণ বিরক্ত মাখা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো–,, আপনাদের মেয়ের মাসে হাত খরচ কতো শুনি?খাওয়া দাওয়া সহ কতো টাকা লাগে তাকে পালতে?

স্নিগ্ধা নড়েচড়ে দাঁড়ালো অপমা’নিত বোধ করলো যেনো, এভাবে তাকে নিয়ে দাম কষা”কষি চলছে?সে কি সত্যি বেশি খায় না পড়ে!

সফিক তালুকদার মৃদু হাসলেন এবার ভাগে পাওয়া গেছে তিনি বলে উঠলেন–,,ছেলেকে মাসে মিনিমাম দেঢ়-দু লাখ টাকা তো কামাতেই হবে!

নাদিম তড়িৎ গতিতে তাকালো নোভার দিকে,এতো টাকা ইনকাম না করলে কি তারও কোনো দিন বিয়ে হবে না?

আদাভান এবার যেনো বেশ বিরক্ত হলো এতো টাকা তো সে নিজেও প্রথম দিকে ইনকাম করেনি।আদিব তো সেখানে স্টুডেন্ট পড়াশোনা এখনো বাকি তার বাবা হয়ে কি ধরনের আচরণ এসব?

আদিব অমায়িক হেসে বললো–,, আপনাদের বাড়ির মেয়েকে করলাম না বিয়ে!যার এতো এতো চা’হিদা তাকে বিয়ে করার থেকে ভালো আমি যেদিন অতো অংকের টাকা ইনকাম করবো ওইদিন ওই টাকাকেই বিয়ে করে নিবো!যেখানে ভালোবাসার মূল্য নেই, টাকার কাছে সব হেরে যায়, সেখানে বিয়ে করারও কোনো দরকার নেই আমার!আমার এতো বড়লোক বাবার দুলালির দরকার নেই,আমি সাধারণ মানুষ সাধারন কাউকেই জীবন সঙ্গী করতে পারলে করবো না করতে পারলে বিয়েকে এখানেই ইস্তফা দিয়ে দিলাম,করলাম না বিয়ে!

স্নিগ্ধা এবার গ’র্জে উঠে বললো–,,বেয়া’দবি মাফ করবেন মেজো আব্বু!তবে আপনারা বাবা ছেলে মিলে আমাকে সবার সামনে অপমান না করলেও পারতেন,আমি কখনো বলিনি আমার স্বামীর ব্যাংক ভর্তি টাকা থাকতে হবে,আমি একজন মানুষের জীবনসঙ্গী হতে চাই কোনো টাকার মেশিনের না!আপনি আমার কথা ভাবছেন তার জন্য কৃতজ্ঞ,আমি ছোট হতেই পারি,তবে আমার ভালোবাসা কে টাকা দিয়ে কেনার চেষ্টা করা আপনাদের ভুল হয়েছে।করবো না আমি বিয়ে,সেখানে আমার সম্মান নেই সেখানে আমিও নেই!

স্নিগ্ধা হনহনিয়ে ঘরে গিয়ে দরজা আটকালো,দরজা আটকানোর শব্দ বসার ঘর অব্দি এলো।

সফিক তালুকদার বললো–,,তুমি আমার ব্যবসায় যোগ দিলেই তো পারো?বিয়েতে অমত ও থাকবে না আমার।

আদাভানের রাশভারি কন্ঠ এবার শোনা গেলো–,,বিয়েটা কি আপনার হচ্ছে চাচ্চু?আপনার মত অমতের প্রয়োজন দেখছি কোথাও!

হাসলেন এবার রফিক তালুকদার, আজাদ তালুকদার ও মেয়ে জামাইয়ের কথায় হাসলেন।

আদিব বিরক্ত হয়ে বললো–,, তবে ভাইয়া এখন আমারই বিয়ে করার ইচ্ছে চলে গেছে।

আদাভান থমথমে কন্ঠে বললো–,, স্নিগ্ধা কে ভালোবাসো না তুমি?বিয়ে সত্যি করতে চাচ্ছো না!

আদিব বলে উঠলো—,, ভালোবাসা দিয়ে পে’ট চলবে ভাইয়া?আমার চাচা শ্বশুরের মতে আমার বউ তো এক মন চালের ভাত একবারেই খায়,যার জন্য তাকে পালতে মাসে লাখ লাখ টাকা কামাতে হবে আমায়!নিজের বাপকে চাচা শ্বশুর বানিয়ে দিলো এই ছেলে।

আদাভান বিরক্ত নিয়ে তৃধাকে জিজ্ঞেস করলো–,, এই আমার বউ,সবাইকে বলো তো তোমাকে কি না খাইয়ে রাখি?তোমার স্বামী তো অতোটাও বড়লোক না, তুমি কি সুখে নেই!

তৃধা থতমত খেলো কি ধরনের সম্বোধন এটা সবার সামনে?বেয়া’দব কি আর সে সাধে বলে!

তৃধা মাথা নিচু করে বললো–,,আপনি যদি এই মুহুর্তে রাস্তার ফকির ও হয়ে যান তার পরও আমি মনে করি আমি আপনার সাথে থাকলে সর্বোচ্চ সুখী থাকবো,আমার স্বামী আমাকে সম্মান করে,যথেষ্ট ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখে যদি আমি দু বেলা না খেয়েও থাকি তবুও আমি তার সাথেই সুখী থাকবো,সুখ কখনো টাকা দিয়ে কেনা যায় না!
নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে বললো,অনেক টাকার মালিকের মনেও অনেক সময় সুখ থাকে না।তারা অন্যকে সুখে রাখতে পারে না!

তৃধার উত্তর শুনে আদাভান শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলো,মেয়েটা এতো মন্ত্রমু”গ্ধকর কেনো?আদাভান ঠোঁট এলিয়ে হাসলো,আদিব ঠোঁট চেপে ধরে রাগ নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করছে,বাবার সাথে কেনো যেনো তার বনিবনা হয় না!

রফিক সাহেব এবার রয়েসয়ে জিজ্ঞেস করলো–,, তা বাবাজি এতো কিছু বুঝি না আমি, বড় ভাইয়ের কথা বাদ দিলাম,মেয়ে দিতে আপত্তি নেই আমার!তবে দায়িত্ব এরিয়ে যেতে পারবে না এতটুকু কথা দিতে হবে,বাবা হয়ে মেয়ের এতোটুকু নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অধিকার নিশ্চয়ই আমার আছে!

আদিব পকেটে দু হাত গুঁজে বাবার দিকে তাকিয়ে চাচ্চুকে সুন্দর করে জবাব দিলো–,,দায়িত্ব নিতে না পারলে বিয়ে করার কথা তুলতাম না আমি,আর রইলো বউ কে ভরনপোষণ দেওয়ার কথা সেটুকু করার মতো সামর্থ্য আছে আমার,নিজেই বাপের টাকায় খাই না বউ খাওয়ানো তো দূরের কথা!তবুও কিছু মানুষ গলা’বাজি করতেই থাকে।তাকে বুঝতে বলুন তার ছেলে কাপু’রুষ না!

সফিক তালুকদার ছেলের দিকে কঠোর দৃষ্টি রাখলো,তখনই উপরের ঘর থেকে কিছু পড়ার শব্দ হলো, আদিব স্নিগ্ধা কে খুব ভালো করে চিনে আবেগে গা ভাসিয়ে দেয় মেয়েটা মুহুর্তেই এতোটা অবুঝ হলে হয়!

আদিব তড়িঘড়ি তরে সিঁড়ি বেয়ে উঠলো,হৃদয় টা কেমন যেনো করছে,হাত পা কাঁপছে তার কাঁপা কন্ঠে ডেকে উঠলো–,,স্নিগ্ধা,দরজা খোল কি করছিস ভেতরে?এ…ই স্নিগ্ধা নিজের কোনো ক্ষ’তি করলে তোর খবর আছে বলে রাখলাম।
দরজা খোলার নাম গন্ধ নেই,আদিবের অন্ত’র জ্বা’লা করে উঠলো,এ মেয়ে একদিন পা”গল করে ছেড়ে দিবে।

আদিবের উৎকন্ঠিত কথা–, দরজা খোল বেয়া,দব, চ’ড়িয়ে ঠিক করবো তোকে দরজা খোল নয়তো ভাঙ্গবো!এই এই সোনা পাখি আমার দরজা খোল,এই স্নিগ্ধা কথা বলছিস না কেনো?
আমার কিন্তু এবার মেজা’জ খারা’প হচ্ছে খুলবি নাকি ভাঙ্গবো!

আদিবের অস্থিরতা দেখে কেঁপে উঠলো সফিক সাহেব, ছেলে কে কথা শোনাতে গিয়ে মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছেন তিনি।ছেলে তার সত্যি ভাইয়ের মেয়েকে ভালোবাসেন!

আজাদ তালুকদার ডেকে উঠলো–,,মামনি দরজা খোল মা,বড় আব্বুর কথা অমান্য করবে তুমি?

তৃধা দেখলো আদাভানের মাঝে কোনো ভাবান্তর নেই সে চুপচাপ সিড়িতে দাড়িয়ে আছে, তৃধার কেমন যেনো খটকা লাগলো,লোকটাকে আলিজার বিয়ের দিন থেকে লক্ষ্য করছে কিছু তো লুকাচ্ছে তার থেকে!

তৃধা বোনের চিন্তায় ডুবলো আবার পরে এই ছেলেকে দেখা যাবে।

তৃধা দরজা ধাক্কা দিলো –,,স্নিগ্ধা দরজা খোল বোন আমার,ভাইয়ার সাথে তোর বিয়ে আমি দিবো কারো কথা শোনা লাগবে না তোর,দরজা টা খোল লক্ষ্মীটি!

আদিব দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা দিতে থাকলো এবার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। উদভ্রান্তের মতো দরজা ভাঙ্গতে উদ্ধত হলো,তখনই দরজা খুলে দিলো স্নিগ্ধা!

আদিবের জানে জান আমলো যেনো,সে এক ছুটে জড়িয়ে ধরলো স্নিগ্ধাকে শক্ত করে,স্নিগ্ধা স্পষ্ট টের পেলো আদিবের হৃৎস্পন্দন!হৃদ’য়টা লাফাচ্ছে যেনো বেরি”য়ে এসে শান্ত হবে।

স্নিগ্ধা কে এ অব্দি আদিব কখনো ছুঁয়ে টুয়ে দেখেনি যে ছেলে ধম’ক দিয়েই কুল পায় না,তাদের প্রেম হয়েছে তাও কেউ কাউকে এখনো ঠিকঠাক বলেনি ভালোবাসি!

স্নিগ্ধার দিকে নজর যেতেই কেঁপে উঠলো আদিব,মনে হলো তার নিজের কলি’জায় হয়তো কেউ নিপুণ ভাবে আঘা’ত করেছে!

স্নিগ্ধার হাত থেকে টপটপ করে রক্ত পড়ছে,সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে,আদিব স্নিগ্ধার হাত চেপে ধরে বললো–,, কি….কি করেছিস এসব!

স্নিগ্ধা হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলো,চোখে কেমন ঝাপ’সা দেখছে সে,তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো–,, আমার ভালোবাসা তোমাদের কাছে নেহাৎ ছেলেমানুষী মনে হয়?আমি আবেগে গা ভাসাই?বিয়ে করতে চাও না তুমি আমায়?জোর করেছি তোমাকে আমি?আমি বেশি খাই?বেশি চা’হিদা আমার?আমাকে বাপের দুলা’লী মনে হয় তোমার?কোন সাধারণ মেয়েকে পছন্দ তোমার?যাও না তাকে গিয়ে বিয়ে করে নাও,মুক্ত করে দিলাম তোমাকে যদিও আমাদের মাঝে তেমন গভীর কোনো সম্পর্ক নেই!

বলতে বলতে স্নিগ্ধা ঢলে পড়লো আদিবের উপর।রাজিয়া বেগম চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,ওকে হসপিটালে নিয় চল বাপ,কি করে বসলো বোকাটা।সব দোষ আপনাদের এসব কথা মেয়েটার সামনে বলার কি এমন দরকার ছিলো?ছোট মানুষ কি করেছে নিজের!

আদিব যেনো পাথর বনে গেছে,আদাভান এবার উঠে এসে বললো–,,তুলো ওকে হসপিটালে নিতে হবে!

আদিব তাই করলো,বাকিরা হা হয় তাকিয়ে আছেন,স্নিগ্ধার মা এবার কেঁদে উঠলেন আদরের মেয়ে তার যতোই বকু”ক মেয়ের কষ্ট মা হয়ে সহ্য করবেন কি করে!

তৃধা আদাভানের হাত চেপে ধরে বললো–,, কি লুকাচ্ছেন আমার থেকে?

চলবে….

#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব২৭
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
আদাভান আচমকা তৃধার কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিলো,তৃধা প্রচন্ড পরিমান বিরক্ত হলো,মানে ওর বোন ওইদিকে হসপিটালে এইদিকে এই লোক নাটক শুরু করে দিয়েছে!

তৃধা দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,আপনার কাছে কি সব কিছুই মজা মনে হচ্ছে?স্নিগ্ধা কে হসপিটালে নেওয়া হচ্ছে, ছাড়ুন আমাকে যেতে হবে!

আদাভানের চোখ হাসছে,তাতে যেনো তৃধা আর ক্ষি”প্ত হলো,ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলো,তবে পারলো না সবসময়ের মতোই বলে উঠলো–,,মটু কোনখানের!

আদাভান গা দুলিয়ে হেসে বললো–,, নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা!

তৃধা রেগে আদাভানের হাতে কাম’ড় বসিয়ে দিলো।

আদাভান কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না,তবে তৃধা কে টেনে আর একটু কাছে নিয়ে বললো–,, জান তোমার কাছ থেকে কি লুকাবো বলো?সবই তো তোমায় উ’জাড় করে দিয়ে দিলাম,কিই বা বাকি আছে এই অধ’মের!

তৃধা রেগে বললো–,,আদাভান এবার কিন্তু…

–,,ইশ্!এভাবে রাগছো কেনো পাখি?জানো না রাগলে তোমায় বেশি কিউট লাগে আর আমার বেশি বেশি প্রেম প্রেম পায়!

তৃধার সহ্যের বাঁধ ভাঙ্গলো যেনো,সে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো–,, যদি আর একটা ফাল”তু কথা বলেন তো,সাত দিন আপনাকে আমি আমার মুখ ও দেখাবো না, ছোঁয়া তো বহু দূর ভেবে দেখুন আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেন কি না!

আদাভান এক ঝট’কায় সরে পড়লো,বউ তার একটা দজ্জা’ল মহিলা সত্যি সত্যি যে দূরে গিয়ে থাকবে তাতে কোনো সন্দেহ নাই।

আদাভান মুখ ছোট করে বললো–,, সব সময় তুমি এমন করো!

তৃধা আদাভানের চুল টেনে ধরলো এবার,নিজের ঠোঁট কাম’ড়ে ধরে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বললো–,, শা’লা ভাঙ্গির সরবত, ঝিঙার তরকারি, পটলের চচ্চড়ি।
এমন মা’র মার’বো না সারাজীবন মনে থাকবে বলে রাখছি,সত্যি সত্যি বল কি আকা’ম ঘটিয়েছিস!

আদাভান তৃধার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিচে নামতে নামতে বললো–,, একমাত্র জামাইয়ের গায়ে হাত?এই অপমান মেনে নিবো না আমি,তোমাকে দেখে নিবো একদম পা থেকে মাথা অব্দি!

তৃধা রাগে কিড়মি’ড়িয়ে উঠলো, আদাভানের থেকে কথা তো বের করেই ছাড়বে যে কোনো মূল্যে।

তৃধা গিয়ে দেখলো আদাভান গাড়িতে উঠে বসেছে সে ও গিয়ে পাশে উঠে বসলো,তৃধা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদাভান তৃধার মুখ চেপে ধরলো এক হাতে আরেক হাত স্টিয়ারিং এ রেখে বললো–,, কথা বলবে আর চুমু দিবো,ভেবে দেখো কি করবে!রাস্তা ঘাট বলে একটুও ছাড় দিবো না,সম্মান খোয়াবে নাকি চুপ থাকবে জান?ভেবে চিন্তে উত্তর দাও!

তৃধা ভ্রু কুঁচকে তাকালো, বেশ বিরক্ত হলো সে তবে আপাতত চুপ থাকতে হবে বেশ বুঝলো,আদাভান বলবে না মানে বলবেই না।
তৃধা আদাভানের পায়ের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো গুটিসুটি মেরে, তার পর আদাভানের পিঠ জড়িয়ে ধরে পেটে মুখ গুঁজে পড়ে রইলো।

আদাভান তৃধার মাথায় এক হাত রাখলো, হেসে উঠলো নিঃশব্দে, মাঝেমধ্যে ও চিন্তায় ডুবে যায় বউ পেলো নাকি বউয়ের জায়গায় একটা ছোট্ট আদুরে বিড়াল ছানা?হুটহাট গা জড়িয়ে শুয়ে পড়ে, নিরবতায় যেনো আবদার করে বসে আপনার গা ঘেঁষে ঘুমাবো আমি, মাথায় হাত বুলিয়ে দিন নিজ দায়িত্বে!

আদাভান ভেবেই আবার হাসলো,সে স্পষ্ট টের পাচ্ছে তার বউ তার পেটের মধ্যে নাক মুখ ঘঁষছে।
আদাভান গাড়ি চালানোর ফাঁকে ফাঁকে তৃধার চুলের ভাজে বিলি কে’টে দিচ্ছে।

তৃধার ধৈর্য যে কতো বেশি তা আদাভান ভালো করেই জানে,তাও যে চুপ আছে এটাই অনেক!

আদাভান আদুরে স্বরে ডাকলো–,,বউউ!

তৃধা রাগ দেখিয়ে বললো–,, আহ্লাদ করবেন না একদম,রাগ করেছি আমি!

–,,রাগ আবার ভাঙ্গাবো তো,আর একটু অপেক্ষা করা যায় না?

তৃধা নিশ্চুপ রইলো,আদাভান হেসে বললো–,,হসপিটালে চলে এসেছি উঠুন।

তৃধা উঠতে চাইলো তড়িঘড়ি, আদাভান যেনো সুযোগটাই খুঁজছিলো, তৃধার হাত দুটো থামিয়ে তাকে আঁটকে নিলো,তৃধা চোখ বড় বড় করে তাকালো,যার মানে না,নিরব হুম”কি ধম”কি, এই মুহুর্তে কিস করলে আপনার ঠোঁট কে’টে দিবো আমি!

আদাভান এসবের তোয়াক্কা কবে করেছে যে এখন করবে?সে মুখ বাড়িয়ে তৃধার কপাল, গাল,ঠোঁটে শব্দ করে পর পর চার টা চুমু খেলে,তৃধা এবার রেগে বো’মা কোনো রকমে উঠে গাড়ি থেকে নেমে গেলো।

আদাভান হেসেই চলেছে,সে বউয়ের পেছনে হসপিটালে ঢুকলো।

ডাক্তার বেরিয়ে এসেছে কেবিন থেকে,আদিব মাথায় হাত ঠেকিয়ে বসে আছে বেঞ্চিতে,বড়রা এক পাশে দাঁড়িয়ে।

আদিব দৌড়ে ছুটে গেলো ডাক্তারের কাছে,ডাক্তার কে পর পর জিজ্ঞেস করলো–,, ওর জ্ঞান ফিরেছে ডাক্তার?সেলাই দিয়েছেন আপনারা হাতে?ওর কষ্ট লেগেছে বুঝি খুব?ওর ইনজে”কশনে ভীষণ ভয় ডক্টর!আমার স্নিগ্ধা ঠিক আছে তো!

ডক্টর বলে উঠলেন–,,উত্তেজি’ত হবেন না পেসেন্ট ঠিক আছে,এখন ঘুমাচ্ছে।

ছেলেকে উতলা দেখে বেশ মুগ্ধ হলেন সফিক সাহেব,না ছেলেটার এলেম আছে বলতে হবে,যতই ফাত’রামি করে বেড়াক অন্তত ভালোবাসার মানুষের জন্য সে সিরিয়াস!

রফিক সাহেব নরম মনের মানুষ, মেয়ের কষ্টে এবার তিনি ভেঙ্গে পড়লেন,দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো চোখের কার্নি’শ বেয়ে,তিনি বলে উঠলেন–,,,ভাইজান আমার মেয়ের কষ্ট আমি কিছুতেই দেখতে পারবো না,সে যদি আদিবের সাথে সুখে থাকে তো তাই হবে,আমি ওদের বিয়ে দিবো কয়েকদিনের মধ্যে!

আজাদ তালুকদার ছোট ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো–,, অবশ্যই মেয়ে বিয়ে দিবো,আগে তো সুস্থ সবল ভাবে মেয়েটাকে বাড়ি নিতে হবে তার পর অন্য কিছু ভাবা যাবে!

আদিব কেবিনে ছুট লাগাতে যাবে তখনই বাঁধ সাধলেন সফিক সাহেব, বিয়ে হয়ে যায়নি এখনো।ওর সাথে এক রুমে থাকার পারমিশন দিতে পারবো না তোমায়!

মেজা’জ যা খারা’প হওয়ার এইটুকু কথায়ই খারাপ হয়ে গেলো আদিবের,ও তো শুধু দেখতে যাচ্ছিলো মেয়েটাকে, আর ওর বাপ আসলে কি মিন করতে চাইলো?আদিব গমগমে গলায় বলে উঠলো–,,হসপিটালের কেবিনে বাসর সারতে যাচ্ছি না নিশ্চয়ই!

চোখ বড় বড় করে তাকালো বাকিরা, আদাভান এসেই কথাটা শুনলো,তার ঠোঁটের কোনে হাসি শা’লা, সমন্ধী হোক বা ভায়রা ভাই একদম মন মতো পেয়েছে আদাভান।

আজাদ তালুকদার আশেপাশে তাকালেন ভাইটা তো আছেই মাথা গরম ভাই পো তার থেকে দুই কাঠি এগিয়ে!

তিনি কিছু বলতে যাবেন,এর আগেই আদিব মোবাইল বের করে কাকে যেনো কল করলো,কাঠকাঠ কন্ঠে বললো–,,কাজি না আসতে চাইলে তুলে নিয়ে আসবি, না শুনতে চাচ্ছি না আমি, বিয়ে এখানেই এখনই করবো!

সরু চোখে তাকালো তৃধা,হসপিটালে কেউ বিয়ে করে?মানে সব পাগ’ল কি ওর আশেপাশেই বসবাস করে নাকি!

তৃধা ছুটে স্নিগ্ধার কেবিনে ঢুকলো,স্নিগ্ধার হাতে বেন্ডে’জ চোখ বন্ধ মেয়েটার,তৃধার খারা’প লাগা যেনো বেড়েই চলেছে,তাদের বয়সের পার্থক্য বেশি না পিঠাপিঠি বোন দুজন।মৃধা শুনেই জোবান ভাইয়ার সাথে আসছে বলে জানিয়েছে,মেয়েটা বোকাই রয়ে গেলো এমন কেউ করে নাকি?কথা কাটাকা’টি তো হয়েই থাকে তাই বলে নিজের ক্ষ’তি করবে!

তৃধা কেবিনে বসে রইলো চুপচাপ, বাহির থেকে কিছুটা ত’র্ক শোনা গেলো,আবার লেগে গেছে নাকি এই বাপ ছেলে!

তৃধা বেরিয়ে আসলো দরজায়,আদিব কোনো কথা বলছে না,বাকি তিন ভাই আদিবের দিকে বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে আছে,আদিব এবার বলে উঠলো–,,চাচ্চু মেয়ে বিয়ে দিবে না আমার কাছে?হ্যাঁ অথবা না তে জবাব দিবে!

রফিক সাহেব বলে উঠলো–,,দিবো তো বাবা বাড়ি চল..

আদিব তে’জ ভরা কন্ঠে বললো–,,হ্যাঁ অথবা না!

রফিক সাহেব দ’ম নিলেন,তার পর ভাইদের দিকে তাকিয়ে বললো–,, হ্যাঁ!

আদিব আলতো করে হাসলো,আদাভান চুপ করে আছে যাক প্ল্যান তাহলে সাকসেসফুল!কিন্তু হসপিটালে বিয়েটা একটু বারাবাড়ি হয়ে গেলো না?কিছুই বললো না আদাভান সে বুকে দু হাত গুঁজে কাহিনি দেখতে ব্যস্ত।

আদিব তৃধার দিকে তাকিয়ে বললো–,, আম্মুদের কে কল করে জানা উনাদের মেয়ের বিয়ে হচ্ছে কিছুক্ষণ পর!

তৃধা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো আদাভানের দিকে,কেনো যেনো বার বার মনে হচ্ছে ওর এই ভোলাভালা ফেইসের পেছনে থাকা ইব’লিশ মার্কা জামাই টাই কোনো না কোনো কলকা’ঠি নেড়েছে।

তৃধা মৃদু স্বরে বললো–,, ভাইয়া বাড়িতে গিয়ে বিয়ে করলে হয় না?আমরা তো স্নিগ্ধাকে নিয়ে বাড়ি চলে যাবোই..

আদিব তৃধা কে থামিয়ে দিয়ে বললো–,,কোনো একজনের আবার মনে হতে পারে বিয়ে ছাড়াই তাদের মেয়ের সাথে আমি যা নয় তাই করছি,আগে অধিকারবোধের দরকার আছে আমি স্নিগ্ধার থেকে দূরে থাকতে পারবো না,তাই বিয়ে করবো এখনই, তুই গিয়ে তোর বোন কে টেনে তুল, বেয়া”দপটা একবার সুস্থ হোক একশো টা চ’ড় যদি না মেরে’ছি তখন দেখিস!বয়স কত ওর এখনই পাক’নামি করতে হবে কেনো এতো?একদমই চাচাদের মতো স্বভাব পাইছে!

ব্যাস খোঁচা মে’রে খালা’স আদিব, অন্য দিকে তেলেবেগুনে জ্ব’লে উঠলেন সফিক সাহেব!আজাদ তালুকদার তাকে সামলালেন এমনিতেই কম সিনক্রি’য়েট হয়নি হসপিটালে এসে মানুষ জন কিভাবে তাকিয়ে দেখছে, এখন আবার ছেলে করবে হসপিটালে বিয়ে মান সম্মান টা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারলে হয়!

তৃধা কেবিনে ঢুকে দেখলো স্নিগ্ধা বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে,তৃধা গিয়ে স্নিগ্ধাকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে বললো–,, পাগ’লী এমন কেউ করে?জানিস বাহিরে সবাই কতো টেন’শন করছে?

স্নিগ্ধা গাল ফুলিয়ে বললো–,, তোমার ভাই তো করছে না,তার তো ভালোই হয়েছে আমার মতো আপ’দ ঘাড়ে তুলতে হবে না,আমিই বোকা তাই এমন মানুষ কে ভালোবেসেছি!

তৃধা বোনের অভিমান বুঝলো,মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো–,,এভাবে বলছিস কেনো?তুই জানিস ভাইয়ার পাগ’ল প্রায় অবস্থা হয়েছ,মেজো আব্বুর সাথে এক প্রকার ত’র্ক বিতর্ক চলছে তার, ভাইয়া তোকে একটু পরই বিয়ে করবে জানাতে বললো আমায়!

স্নিগ্ধা চোখ বড় বড় করে তাকালো,কি বলে এসব এখানে আবার বিয়ে হয় নাকি?
স্নিগ্ধার চোখ পড়লো কেবিনের দরজায় আদাভান দাঁড়িয়ে,তৃধাও তাকালো তবে কেউই কিছু বললো না।
———
বাড়িতে সব জানানো হলো,রাজিয়া বেগম ছেলেমেয়েদের এতো সব অদ্ভুত কান্ডকা”রখানার কথা শুনে বাকরুদ্ধ, আদিব ছেলেটা ছোট থেকেই একটু ঘাড়”ত্যাড়া, যা বলেছে করেই ছেড়েছে,যে ছেলে বাবার সাথে রাগ করে এক কাপড়ে ঘড় ছাড়তে পারে, হাত খরচের টাকা তো দূর দুই তিন দিন না খেয়ে থেকেছে তাও তার বাবার থেকে এক টাকাও নেয়নি।সেই যে বাবা ছেলের মধ্যে বিরোধিতা শুরু হলো তা এখনো থামেনি,এদের যে কি হবে উপরঅলাই ভালো জানেন।

নোভা,আভা,নিশি বসে আছে আর এসব নিয়ে কথা বলছে,রাদিফ কে সাথে করে নিয়ে নাদিম বেরিয়েছে কিছুক্ষণ আগে।
————
কেবিনের ভেতর হুড়মুড়িয়ে ঢুকলো নাদিম এসেই একরাশ হতাশা নিয়ে বললো–,,একেই বলে কপাল বুঝলি তৃধু?তুই আমার সমবয়সী হয়েও বিয়ে করে নিয়েছিস এবার স্নিগ্ধার বাচ্চা গে’দা হয়েও বিয়ে করে নিচ্ছে মাঝখানে আমি একাই সিঙ্গেল!আহ্ মানুষের রাজ কপাল ভাই, শুধু আমারটাই পু’ড়া ছাই কপাল।

রাদিফ বলে উঠলো–,,তাও ভালো তোমার কপালে প্রেম রাশি আছে,আমাকে কি বলবি?নিশির বাচ্চা তো হ্যাঁ ও বলে না আবার না ও করে না মাঝে ঝুলিয়ে রেখে দিয়েছে আমায়!

তৃধা নাক মুখ কুঁচকে বললো–,, তোরা কি নিজেদের ফালতু কথা গুলো একটু সাইডে রাখবি?আগে বল বাহিরে কি হচ্ছে।

নাদিম ভাব নিয়ে বললো–,, কাজিকে ধরে এনেছি,বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে!

স্নিগ্ধার এবার সত্যি সত্যি নিজের কপাল ভারি দিয়ে ভাঙ্গতে মন চাইলো, এ কেমন ত্যাড়া ছেলে হসপিটালে বিয়ে কেনো করতে হবে?বাড়িতে কি জায়গার অভাব পড়েছে আশ্চর্য!

তৃধা কপাল চাপড়ালো, তবে আর সময় দেওয়া হলো না বেশি, অদ্ভুত ভাবে বিয়ে দেখার সখ পূরণ হতে যাচ্ছে তার।
স্নিগ্ধা কে ওড়না টেনে ঘোমটা দিয়ে দেওয়া হলো,সে বেজায় বিরক্ত চোখে মুখে তার স্পষ্ট আভাস।ছিঃ!লোকে কি বলবে?লজ্জায় হাস”ফাস করার মতো পরিস্থিতি হলো যেনো স্নিগ্ধার।

কিছু সময়ের ব্যবধানে তার বাবা সহ চাচ্চুরা আসলো কেবিনে,পাশেই কাজি সাহেব।স্নিগ্ধা মাথা নিচু করে বসে আছে, তার বাবা এসে পাশে বসলো,মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন তিনি,স্নিগ্ধা ছলছল চোখে তাকালো, রফিক সাহেব মেয়ে আস্বস্ত করলেন তিনি রাগ করেননি, তার ইচ্ছেতেই হচ্ছে সব।
স্নিগ্ধা নিজের বাবাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে উঠলো,তৃধা স্নিগ্ধার হাত চেপে ধরলো, রফিক সাহেব বলে উঠলো–,,মা, বাবার সিদ্ধান্তে তোমার কোনো আপত্তি আছে?

স্নিগ্ধা কথা বলতে পারছে না দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে সব টাই শুনছে আদিব,স্নিগ্ধার দেরি করা দেখে এবার রাগ হচ্ছে তার, এ জন্যই বাচ্চা মেয়েদের সাথে কোনো সম্পর্কে যাওয়া উচিত না, অতিরিক্ত ইমোশনাল হয়ে ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদে, বাবা মায়ের সামনে ভালোবাসার মানুষ কে স্বীকার করে নিতে তাদের যত সমস্যা, লজ্জা ট’জ্জা পেয়ে এক বালতি সমান পানিতে ডুবে যায়!

স্নিগ্ধার কন্ঠটা এতোক্ষণে শোনা গেলো–,, না বাবা কোনো আপত্তি নেই!

রফিক সাহেব হাসলেন,কাজি সাহেব বেরস মুখে বসে আছেন,হসপিটালে বিয়ে পড়ানো টা তার কাছে নতুন।কতো রকমের বিয়ে পড়িয়েছেন জীবনে এবার নতুন অভিজ্ঞতা যুক্ত হলো আরেকটা।পালিয়ে বিয়ে সাদি করলেও মানা যেতো, এখানে তো সয়ং বাবা রা মিলে বিয়ে দিচ্ছে,এদের মায়েরা কি বিরোধীতা করছিলো নাকি?কাজি সাহেব বিড়বিড়িয়ে বললেন–,,মহিলা মানুষের বিশ্বাস নেই হইতেও পারে!

তিনি রেজিস্ট্রি পেপার এগিয়ে দিলেন স্নিগ্ধার দিকে, তৃধা স্নিগ্ধার এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে রেখেছে,স্নিগ্ধা ভেজা চোখে হেসে উঠলো, রফিক সাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।স্নিগ্ধা সাইন করে দিলো,তার নামের পাশে বরের নামটা যেনো জ্বল জ্বল করছে আদিব তালুকদার! স্নিগ্ধা মিশ্র অনুভূতিতে কুঁকড়ে উঠলো, মাথা নিচু করে নিলো অনেকটা।

তৃধা ভাবছে নিজের বিয়ের কথা, লজ্জা তো এক ফোঁটা ও পায়নি, জামাই দেখেই মস্তি’ষ্কে বি’স্ফোরণ ঘটেছিলো তার,রাগ ছাড়া অন্য কোনো অনুভূতিই আসেনি, আর বাসর রাতে ঝ’গড়া!পরের দিন পালিয়ে যাওয়া,তৃধা এই মুহুর্তে হাসি পেলো, আদাভান আর তার পথ চলা যে এতোদূর অব্দি আসবে কোনো দিন তো কল্পানায় ও ভাবেনি তৃধা,আর এখন এই অপছন্দের পুরুষ টাকেই সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে মন দেওয়া নেওয়া হয়ে গেলো কখন বুঝতেই পারেনি!

আদাভান পাশেই দাড়িয়ে ছিলো বউয়ের মুচকি হাসির কারন বুঝতে পেরে নিজেও হাসলো।

রেজিষ্ট্রি হওয়ার পরও আদিব তার কথায় অটল শরিয়া মোতাবেক কবুল ও সে এখনই বলবে!
আজাদ তালুকদার এবার বলে উঠলো–,, আদিব ছেলেমানুষী করবে না,বাড়িতে তোমার দাদী আছে, মায়েরা আছেন তাদের নিয়ে আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত করেই পরে ওইটুকু করা হবে,এখন তো তোমরা বিবাহিতই এতো সমস্যা হওয়ার কথা না!

আদিবের সোজাসাপটা জবাব–,,বড় আব্বু,আপনার ভাই কিছুক্ষণ আগে কি বললো শুনেননি আপনি?আর আমি তো বলিনি সামাজিক স্বীকৃতির আমার দরকার নেই!পরবর্তীতে যদি আপনারা অনুষ্ঠান করতে চান তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই,এখন আমি দেহমোহর পরিশোধ করেই আমার বউয়ের মুখ দেখবো, যাতে কেউ আঙুল তুলে,ইনি বিনিয়ে ও না বলতে পারে স্নিগ্ধার থেকে দূরে থাকো!আমার বউ অসুস্থ তাকে সেবা করা আমার দায়িত্ব, দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে হলে সম্পূর্ণ বিয়ে এখনই সারতে হবে আমায়,অন্যথায় আমি আপনাদের মেয়ের সামনে ও যাবো না,বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো আমি!

তৃধা ভাইয়ের পাগ’লামি তে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না,কিন্তু তার জামাইয়ের মুখ থেকে আজ হাসি সরছে না,সাধে কি ব্যাটাকে তার সহ্য হয় না?এতো এতো টেনশনের মাঝে শুরু থেকে শুধু দাঁত কেলিয়েই যাচ্ছে!

সফিক সাহেব রাশভারি কন্ঠে বললো–,, কবুল ও এখানেই বলানো হবে, বেয়া’দব ছেলে পয়’দা করেছি আমি খেসারত তো দিতেই হবে!

নাদিম ফিক করে হেসে দিলো, এতে যেনো সফিক সাহেবের রাগ আরো বাড়লো।ছেলে দুটো কার মতো হয়েছে?বিরবির করে নিজের শ্বশুরের নাম নিতে ভুললেন না তিনি!
আদিব এখনও কেবিনের ভেতর আসেনি,বাহিরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে, এই লোকের কথা বার্তা শুনে মনে হচ্ছে জীবনে স্নিগ্ধার দিকে তাকায়নি তার সাথে কথা বলেনি।এখন তার দেনমোহর পরিশোধ করার কতো তাড়া!

আদিবের কথা মতো কবুল বলা হলো তাদের বিয়ে সম্পূর্ণ হতেই বাকিরা আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো , হসপিটালে নাদিম, আদাভান,রাদিফ মিলে খেজুর বিলি করেছে।

কিন্তু সফিক তালুকদার সেখানে আর এক মুহুর্ত ও দাড়ালেন না,মান সম্মান কিচ্ছু রাখেনি বেয়া’দব ছেলেটা হসপিটালে এতো এতো রোগী তার মাঝে নাকি বিয়ে?তার সাথে রফিক,আজাদ তালুকদার ও বাড়ির দিকে রওনা দিলেন,দায়িত্ব দিয়ে গেলেন মেয়ে জামাইয়ের হাতে।

বাহিরে আদিবের সাথে বসে আছে নাদিম রাদিফ,ভেতরে তৃধা স্নিগ্ধা বসে।

আদাভান আদিবের সাথে কথা বলে এসে আবার ঢুকলো কেবিনে,স্নিগ্ধা মিষ্টি করে হেসে বললো–,,থ্যাংকস ভাইয়া!আপনার বুদ্ধি তে যে একেবারে বিয়ে হয়ে যাবে তা তো বুঝিনি।

আদাভান হাসলো,তৃধা কোমরে দু হাত গুঁজে ভ্রু কুঁচকে বললো–,, কি চলছে যদি আমাকে না বলো না এবার..

আদাভান স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বললো–,, শালিকা তোমার জন্য বউয়ের হাতে মা’র খেতে খেতে আমার জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে,দেখো দেখো কিভাবে তাকাচ্ছে মনে কয় কাঁচাই গি’লে খাবে!

তৃধা বলে উঠলো–,,বলা লাগবে না,কারো ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করি না আমি, জানতে চেয়েছি তার জন্য স্যরি!

আদাভান তৃধার হাত চেপে ধরে আটকালো,মেয়েটা রাগ করতে ও সময় নেয় না।

তৃধা হাত মোচড়ানো শুরু করলো–,, ছাড়ুন আমি বাড়ি যাবো!

স্নিগ্ধা বলে উঠলো–,, শোন না আপাই,,,

“কিচ্ছু শুনতে চাই না এখন!

আদাভান বলে উঠলো–,, শালিকা চোখ জোড়া একটু বন্ধ করো তো।

তৃধা বিরক্ত হলো,স্নিগ্ধা হেসে বললো–,, ওকে ভাইয়া,আমি কিছু দেখবো না!

তৃধা চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,, নাটক করবি না আমার সাথে।

আদাভান তৃধার ঠোঁটের পাশে চুমু দিলো,তৃধা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো, লজ্জা শরমহীন পুরুষ বোধ হয় একমাত্র এই লোকটাই,সাথে যুক্ত হয়েছে বর্তমানে তার ভাই!

আদাভান তৃধাকে জড়িয়ে ধরে বললো–,,এভাবে রাগ করতে নেই লক্ষ্মীটি!বসো বলছি সবটা।

তৃধা ফোঁস ফোঁস করতে করতে গিয়ে বেডে বসলো।আদাভান আশেপাশে খুঁজে দেখলো একটা বলের মতো দেখতে জিনিস রাখা সাইডে, সেটাই তুলে স্নিগ্ধার দিকে ছুঁড়ে মার’লো, তৃধা আ”তঙ্কে হা হয়ে গেছে,তবে স্নিগ্ধা হেসে বলটা ক্যাচ করে নিলো তাও বে’ন্ডেজ করা হাতে!

তৃধা বলে উঠলো–,,কি করছিস পাগ’ল হাতে লেগে যাবে তো!
আদাভান হেসে বললো–,, হাত তো সুস্থই আছে, এমনকি আমার শালিকা সম্পূর্ণ সুস্থ আছে বুঝলে বউ!

তৃধা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো দুজনের দিকে।

স্নিগ্ধা বলতে শুরু করলো–,,ভাইয়া জানতো, মেজো আব্বুর আর আদিব ভাইয়ার মধ্যে নিশ্চিত কোনো ঝামে’লা হবে,আর তা তো হলোই দেখলে না?আর আদিবের তো জন্মগত স্বভাব রেগে বাড়ি ছেড়ে দেওয়া। ওনারা দুজন ঝ’গড়া করতো মাঝখানে আমার কি হতো বলো তো?তার পরও তো তোমার ভাই কি বললো শুনলে না অন্য কাউকে বিয়ে করে নিবে!তাই আগে ভাগেই ভাইয়া আমাকে বুদ্ধি দিয়েছিলো যদি সবাই রাজি হয়ে যায় তো ভালো,নয়তো আমাকে সুইসা”ইড করার অভিনয় করতে হবে!

তৃধা মুখে হাত দিয়ে বলে উঠলো–,,কিহ্!

আদাভান বললো–,,হ্যাঁ!

তৃধা বিস্মিত হয়ে বললো–,, তাহলে রক্ত যে দেখলাম হাতে?কাটা’র দাগ সবই কি নক’ল?

স্নিগ্ধা বললো–,,হুম,ভাইয়া আগে থেকেই ওসব জিনিস আমাকে এনে দিয়েছিলো, দেখো কাজে লেগে গেছে, আর তোমার পাগ’ল ভাই এখন আমাকে বিয়ে ও করে নিয়েছে!

তৃধা কপাল চেপে ধরে বললো–,, এটা কি ঠিক করেছেন আপনি আদাভান?এখন যদি আমিও সেইম কাজটা করতাম আপনার কেমন লাগতো?ধরুন আমিও হাতে তিন চার টা টান দিলাম ছু’রি দিয়ে তারপর র’ক্তের বন্যা বইয়ে গেলো হাতের উপর দিয়ে কেমন লাগবে আপনার?

আদাভান দ্রুত ভঙ্গিতে বললো–,,তৃধা এরকম আজে”বাজে কথা আর কোনো দিন মুখ দিয়েও বের করবে না বলে দিচ্ছি!

তৃধা থমথমে কন্ঠে বললো–,, আপনাদের উচিত ছিলো আগে ভাইয়াকে জানিয়ে নেওয়া,আপনার কষ্ট হচ্ছে আপনার ভালোবাসার মানুষের জন্য আমার ভাইয়ের হয়নি?তার ফিলিংসের কোনো দাম নেই নাকি?কি করেছেন দুজন মিলে ভাবুন একবার,মানলাম ভালোর জন্য করেছেন কিন্তু ভাইয়ার কি অবস্থা হয়েছিলো দেখেছেন?স্নিগ্ধা তুই ও ওনার সাথে মিলে ভাইয়ার ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে গেলি?তোর বিশ্বাস নেই নিজের ভালোবাসার উপর?ভাইয়া কি তোকে ছেড়ে দিতো কোনো দিন!

আদাভান তৃধার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে বললো–,,মানলাম আমি ভুল,কিন্তু তোমার চাচ্চুকি সহজে সব কিছু হতে দিতো নাকি?বিয়ে হয়ে গেছে এবার আমি নিজে কথা বলবো আদিবের সাথে!

স্নিগ্ধা হা হয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে আদাভান,তৃধা ও তাকালো ওইদিকে।

আদিব দরজায় ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে আছে,সম্পূর্ণ মনোযোগ তাদের দিকেই,স্নিগ্ধা এবার ভয় পাচ্ছে সব কিছু শুনেও চুপ আছে!

স্নিগ্ধা তাকালো তৃধার দিকে,তৃধা গা ছাড়া ভাবে বললো–,,প্ল্যানিং করার সময় তো আমাকে জানাসনি, এবার যা হবে তা ও তুই আর তোর ভাই মিলে সামলা!

আদিব নিশ্চুপ কথা না বলে এগিয়ে এসে দাড়ালো বেডের সামনে,তার পর এক ঝট’কায় স্নিগ্ধাকে কোলে তুলে নিলো,স্নিগ্ধা নিজেকে সামলাতে আদিবের গলা জড়িয়ে ধরলো, আদিব একটা শান্ত দৃষ্টি উপহার দিলো আদাভান কে,আদাভান মুচকি হাসলো।

স্নিগ্ধা কে নিয়ে বেরিয়ে গেলো সে,তৃধা আদাভানের দিকে চোখ গরম করে তাকালো,এই জন্যই স্নিগ্ধা কে হসপিটালে নিয়ে আসা হয়েছে জেনেও কোনো ভাবান্তর হয়নি এর মাঝে!

তৃধা বেরিয়ে গেলো মেজা’জ দেখিয়ে,আদাভান তপ্ত শ্বাস ছাড়লো,এরা ভাই বোন সহ পুরো গোষ্ঠীই হয়েছে ত্যাড়ামি করা পাবলিক,কি আর করার মানুষের ভালো করতে নেই জীবনে!
————–
বাড়িতে বসার ঘরে বসে আছে সব বড়রা, ছেলে তো বিয়ে করে নিয়েছে,এখন বাবা মায়ের ও তো একটা দায়িত্ব আছে,আত্নীয় স্বজনরা অন্যের মুখে শুনলে বিষয় টা খুবই বা’জে দেখাবে, তাই ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিলেন স্নিগ্ধার পরীক্ষার পরই বড় করে অনুষ্ঠান সারবেন তাড়া,তিন মাস পর!

এরই মাঝে বাড়িতে ঢুকলো আদিব চোখে মুখে উবছে পড়া রাগ,স্নিগ্ধা সারা রাস্তা চুপ ছিলো এবার মুখ খুললো সে–,, নামিয়ে দিন,সবাই আছে এখানে!

আদিব কারো দিকেই তাকালো না,স্নিগ্ধা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো, এভাবে লজ্জা পেতে পেতে কবে জানি অ”জ্ঞান হয়ে যায় বেচারি!আদিব যে এতোটা নির্লজ্জ আগে কেনো বুঝেনি।

আদিব সোজা সিঁড়ি বেয়ে নিজের ঘরে ঢুকলো,এক প্রকার ছুঁড়ে মার’লো স্নিগ্ধাকে বিছানার উপর!

ঠা’স করে দরজা বন্ধ করলো, রাগে তার হাতের শিরা ফুলে উঠেছে,কপাল কুঁচকে আছে চোখ জোড়া লাল হয়ে আসছে রীতিমতো, স্নিগ্ধা ভয়ে সেটিয়ে গেছে বিছানার সাথে।

আদিব টানা দশ মিনিট ধরে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে,না কিছু বলছে আর না জায়গা থেকে নড়ছে।

স্নিগ্ধার ভয়ার্ত চেহারা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে সে,চোখের পলক ফেলছে গুনে গুনে।স্নিগ্ধা হাসফা’স করছে ওড়নার দুপাশ চেপে ধরে মাথা নিচু করে বসে আছে।

আদিব বলে উঠলো–,, তাকা আমার দিকে!

স্নিগ্ধা কাঁপা কন্ঠে বললো–,, আমার ভয় করছে!

আদিবের ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো হাসি,এতো কান্ড ঘটিয়ে এখন নাকি তার ভয় করছে,আগে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলো ভয়?

আদিব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো–,,আমাকে বিয়ে করার জন্য এতো ছলচা’তুরীর কি দরকার ছিলো সুইটহার্ট!

স্নিগ্ধা ভয়ে বার কয়েক শুকনো ঢোক গিললো, থর থর করে কাঁপছে তার ছোট্ট দেহ।সে ভাঙ্গা গলায় বলতে চাইলো—,,আদিব ভাই…!

আদিব রাশভারী কন্ঠে বলে উঠলো–,,তিন কবুল বলে বিয়ে করার পরও ভাই?স্বামীকে ভাই ডাকতে নেই সোনা,পাপ লাগে পাপ!
আমি চাই না আমার পবিত্র অর্ধাঙ্গিনীর গায়ে পাপের ছিটেফোঁটা ও লাগুক!

স্নিগ্ধা ভেজা চোখে তাকিয়ে আছে আদিবের দিকে,চোখে মুখে অপরাধ বোধ তীব্র হচ্ছে ধীরে ধীরে,বর্ষণের পূর্বাভাস দিচ্ছে যেনো মায়াবী চোখ জোড়া!

আদিব এগিয়ে আসলো খাটের উপর স্নিগ্ধার মুখোমুখি বসলো,স্নিগ্ধা থাপ্প”ড় খাওয়ার ভয়ে বিছানায় হাত ভর দিয়ে রেখেই পিছিয়ে গেলো,চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে গেছে আপনাআপনি!

আদিবের শান্ত চাহনি,মনের কোনে থাকা সুখের প্রজাপতি যেনো উড়ে বেড়াচ্ছে, এতোটা সুখ সুখ লাগছে কেনো তার?সামনে বসে থাকা মেয়েটা তার বউ?বউ করে পেয়ে যাবে কখনো ভেবেছিলো কি আদিব?মেয়েটাও যে তাকে কখনো ভালোবাসবে, এতোটা বেশি ভালোবাসবে কল্পনা করেছিলো আদিব?হৃদয় পুলকিত হলো অনুভূতির ফোয়ারা এসে জমতে শুরু হলো যেনো।

স্নিগ্ধা কোনো প্রকার মা’রের আভাস না পেয়ে চোখ খুললো,ঠোঁট ভিজিয়ে ঢোক গিলে বললো–,,আপনি আমাকে এখন মার’বেন আদিব ভা..!

ভাই বলতে গিয়েও আর বলতে পারলো না,লজ্জারা এসে ভর করলো চোখে মুখে,আদিব স্নিগ্ধার গাল দু হাতে আলতো চেপে ধরে কাছে টানলো কপালে ঠোঁট চেপে ধরে গভীর চুম্বন করলো!

স্নিগ্ধার পুরো শরীলে শিরশিরে অনুভূতি খেলা করলো,অসার হয়ে আসতে চাইলো পাতলা গড়নের দেহটি,এতো ভালোবাসার ভর সইতে পারলো না হয়তো,একটা চুমুতেও কি ভালোবাসার গভীরতা টের পাওয়া যায়?
আদিব স্নিগ্ধাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁপা কন্ঠে বললো–,,আমার ও ভয় করেছে জান,হৃদয় উথাল-পাতাল করে ফেলার মতো ভয় আমাকে ঘিরে ধরেছিলো জানিস,আমিও ভয় পেয়েছিলাম তিব্র ভয়, তোকে হারিয়ে ফেলার ভয়!

চলবে…….