#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব২৮
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে ধরনীতে,আজকের সন্ধ্যার আকাশ টা ভীষণ সুন্দর, চোখ ধাধানো হলুদাভ মেঘেরা উড়ে যাচ্ছে,সাথে মনমাতানো দখিনা হাওয়া।মন মেজাজ সবই যেনো ফুরফুরে হয়ে গেছে নিমিষেই।
ছাদের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে নোভা,বাবা মায়ের সাথে দেখা করে এসেছে দুবোন,তখন থেকেই তার মন টা কেমন বিষন্ন,আভা জানে কেনো এতোটা চিন্তিত তার বোন,কি আর করার?সমাজের মানুষের মুখ তো আর বন্ধ করা যাবে না!মেয়ে হয়ে যখন জন্মেছে যতদিন বিয়ে নামক ট্যাগ লাইন গায়ে না লাগবে ততোদিন কথা শুনে যেতেই হয়,বিয়ে করার পরও শান্তি নেই সংসার টিকবে কি টিকবে না ওসব নিয়েও কথা বলতে চলে আসে পাড়া প্রতিবেশি! আভা বরাবরের মতই নোভার থেকে বিপরীত,আভা নিজেও স্বীকার করে নোভা তার থেকে বেশি বুদ্ধিমান, মেয়েটা পরিস্থিতি কতো সহজে সামলে নিতে পারে,বেশ শক্ত ব্যক্তিত্বের মেয়ে নোভা,আভা তো আগে কেঁদে কে’টে ভাসায়,বোনটাই তো তাকে সেই ছোট থেকে আগলে আগলে রাখছে বয়সের পার্থক্য বেশি থাকতে হয় না দায়িত্ব নেওয়ার জন্য, এটা যেনো ভাই বোনদের আল্লাহ প্রদত্ত একটা নেয়ামত, তারা ছোট ভাইবোনদের আগলে রাখার দায়িত্ব টা নিতে শিখে যায় নিজে নিজেই।
কিছুটা দূরে বসেই আদিব,স্নিগ্ধার বিয়ে নিয়ে আলাপ আলোচনা জুড়ে দিয়েছে বাকিরা,আভা ওখানে বসেই বোনের দিকে তাকিয়ে আছে,নাদিম আদাভান ভাইয়ের সাথে বাহিরে গেছে তাদের কি যেনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে গেছে কে জানে?স্নিগ্ধা কে খনে খনে লজ্জায় ডুবিয়ে দিচ্ছে সকলে।
তৃধা নোভার কাঁধে হাত রাখতেই নোভা চমকে উঠলো, নিজের ভাবনায় সে এতোটাই বিভোর ছিলো খেয়ালই করেনি কিছু।
তৃধা নোভা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, নোভা চুপ করে পড়ে রইলো।
তৃধা মৃদু হেসে বললো–,,আমার ভাইকে হারিয়ে ফেলার ভয় হচ্ছে বুঝি?
নোভা মুচকি হাসলো,পাগ”ল মেয়েটা মাঝেমধ্যেই বুঝদার হয়ে উঠে এই তো ঠিক বুঝে গেলো মনের কথা,যদিও ঘটা করে কোনো কিছুই নোভা তৃধা কে বলেনি।
তৃধা নোভার হাতে হাত রেখে বললো–,,তোর ফুপ্পিরা আবার কাহিনি জুড়ে দিয়েছে তাই তো?আংকেল কি বললো?
নোভা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বললো–,, এর জন্যই তো তোর ভাইকে এরিয়ে চলতাম,সম্পর্কে জড়াতে চাইনি আমি,এখন যদি অনাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটে তো তার দায়ভার সারাজীবন বয়ে চলতে হবে আমায়!
তৃধা ও জানে বিষয় টা কতোটা জটিল,নোভা নাদিম দুজনই সমবয়সী, চাইলেই বিয়ে করার মতো সিদ্ধান্তে যেতে পারবে না তার ভাই,বাস্তবতা টা অনেক সময় বেশ কড়া ভাবেই আঘা’ত হানে জীবনে!
তৃধা আস্বস্ত করে বললো–,, আংকেল তো তোদের দুজনকেই অনার্স কমপ্লিট করার পর বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন,সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এসেছে নাকি?
নোভা লম্বা শ্বাস টেনে বললো–,,আব্বু নিজের কথায় অনড় তবে আম্মু বাকিদের কথায় কিছুটা পিছুপা হয়ে গেছেন,তবে আমিও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি আমি এই মুহুর্তে বিয়ে করবো না,এ নিয়ে তর্ক বেঁধে গেছে মায়ের সাথে আমার, উনি রাগের বসে বললেন আমাদের বোঝা আর টানতে পারবেন না মেয়েদের বিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত নাকি বাবা মায়ের শান্তি নেই,উনার মতে মেয়ে মানুষ কে বিশ্বাস নেই, দাদী ফুপির ও একই কথা যদি মেয়ে সম্মান খুইয়ে আসে তখন?সমাজে মুখ দেখাতে পারবেন না তারা!
বাবা চুপচাপ ছিলেন তার পরও তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অটল আছেন,তিনি বলছেন মেয়েরা কখনো বোঝ হয় না, যদি বাবা মা হয়েই বোঝ মনে করেন তো পরের বাড়ির মানুষ কি মনে করবেন?ফেলনা নয় তার মেয়েরা, সমাজের মেয়েদের যেমন বিশ্বাস নেই তার মতে ছেলেদের ও বিশ্বাস নেই,যদি ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দেওয়ার পর ছেলেটা খারাপ হয় তখন তার মেয়ের জীবনের কি হবে?তাই তিনি মেয়েদের যোগ্য বানাতে চান যাতে নিজের জীবন একা চলার মতো সাহস ও সামর্থ্য দুটোই তাদের থাকে,জীবনসঙ্গীর দরকার আছে জীবনে তবে তা নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে নয়!তিনি চান তার মেয়েরা বড় হোক তার মুখ উজ্জ্বল করুক, তার পর তিনি বিয়ে দিবেন এর আগে নয়,বাড়ি যেতে না যেতেই বাবা মায়ের এরকম মত বিরোধ দেখে কেমন যেনো অশান্তি লাগছে আমার!
তৃধা নোভার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বললো–,, আংকেল কে নিয়ে তোর গর্ব করা উচিত,উনার মন মানসিকতা সত্যি প্রসংশা যোগ্য!চিন্তা করিস না বোকা এটা তো রোজকার কাহিনি,হোস্টেলে ফিরে গেলে দেখবি আবার সব আগের মতো হয়ে যাবে, বাড়িতে যতদিন থাকবি ততোদিন কানে তুলো গুঁজে বসে থাকবি, মানুষের কথায় কান দিয়ে নিজের জীবন ধ্বং”স করার কোনো মানেই হয় না!
নাদিম এসে দাঁড়ালো ওদের পেছেন কখন এসেছে দুজনের কেউ তাকে খেয়াল করেনি এতোক্ষণ, কপাল বেয়ে ঘামের স্রোত নেমে যাচ্ছে ছেলেটার।
নাদিমের শান্ত চাহনি,তৃধা কে উদ্দেশ্য করে বললো–,,তোকে ভাইয়া নিচে ডাকছে যা।
তৃধা পা বাড়ালো নিচে যাওয়ার জন্য, আজান পড়বে কিছুক্ষণের মধ্যে, তাই বাকিদের কে বললো–,, সব নিচে চল তো, এই স্নিগ্ধা আয় দাদী দেখলে রাগ করবে, শুধু শুধু কথা শুনবি পড়ে।
বাকিরা ও তৃধার পেছন পেছন নেমে গেলো,নোভা চলে যেতে নিলেই নাদিম তার হাত চেপে ধরে দাঁড় করায়।
নোভা কিছু বললো না, চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো নাদিমের পাশে।
নাদিম হঠাৎ করেই হেসে উঠলো, নোভা এবার চোখ তুলে তাকে দেখলো,ছেলেটা দেখতে সুন্দর সুদর্শন!চোখজোড়ার মায়ায় আটকে গেছে নোভা,মায়া কাটিয়ে তুলতে পারবে তো কোনো দিন?নোভার মনে কেমন চাপা কষ্টরা ভীড় জমালো,সব কিছু কেমন এলোমেলো লাগলো হঠাৎ যদিও জানে কিছুই ঘটেনি সব কিছুই ঠিক আছে,তবুও মন কু ডাকছে যদি ভবিষ্যতে কোনো দিন এমন কোনো পরিস্থিতি আসে যাতে নাদিম নামক এই ছেলেটা তার জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে যায় তখন?নোভার এবার ভীষণ রকম কান্না পাচ্ছে,ঠোঁট চেপে ধরলো দাঁত দিয়ে, কান্না আটকানোর প্রবল চেষ্টা তার মাঝে!
নাদিম নোভার দিকে নিজের দু বাহু প্রসারিত করে বললো–,,”তোর কান্না ভেজা মুখ, আমার হৃদয়ের তীব্র অসুখ”!ভালোবাসার দাবান’লে পুড়’ছে যে আমাদের সুখ!
এই বুকখানা না হয় তোকে দিলাম কেঁদে কে’টে এখানেই শান্ত হয়ে যা তুই!তোর সব গন্তব্য এখানেই এসে থেমে যাক সবসময়, অভাগা প্রেমিকের ফাঁকা বুক ছাড়া অন্য কিছুই নেই তোকে দেওয়ার মতো!
আয়, নিজেও শান্ত হ আমাকে ও শান্ত কর!
নোভা এক ছুটে ঝাপিয়ে পড়ল নাদিমের বুকে, কান্নার স্রোত যেনো থামবার নয়,মেয়েটা থরে থরে কেঁপে কেঁপে উঠছে,কান্নারা লেপ্টে যাচ্ছে প্রেমিক নামক ছেলেটির শার্টের ভাঁজে, এ কেমন সুখ?এতো অসুখের ভীড়েও এই বুকে কেনো এতো সুখ?এই বুকে মাথা রাখার সময়টা দীর্ঘ হোক খুব বেশি দীর্ঘ হোক!
নোভা নাদিমের পিঠের দিকে শার্ট খামচে ধরে পড়ে আছে,নাদিম নোভার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো–,, ইশ্! কি করেছিস অবস্থাটা?বোকা আমি কি ম’রে গেছি?যা হয়নি তা নিয়ে এতো ভেবে মন খারা’প করছিস কেনো?দুজন মিলে সামলে নিবো তো,বিশ্বাস নেই আমার উপর!আম্মুকে তো ইতিমধ্যে তোর কথা বলে দিয়েছি, ছেলের বউ হিসেবে তোকে তার পছন্দ হয়েছে এবার আম্মু বলেছে ছেলে আর ছেলের বউ বড় হয়ে গেলেই নাকি তাদের বিয়ে দিবে,ততোদিন আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবি না?
নোভা বাচ্চাদের মতো গুটিয়ে গেছে যেনো,নাদিম নোভাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে চোখের পানি মুছলো,অগোছালো চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিলো স্বযত্নে, গালে আলতো করে হাত রেখে বললো–,,আর কোনো দিন যদি কাঁদতে দেখেছি তো..
নোভা ঠোঁট উল্টে ফেললো,কান্না থামতেই চাচ্ছে না কেনো যেনো,,,”তো..কে ছাড়া অন্য কারো হবো ভেবেই আমার শুধু কান্না পাচ্ছে”!
“ভালোবাসিস তাহলে?”
নোভা কপট রাগ দেখিয়ে বললো–,, রসিকতা করছি নাকি আমি তোর সাথে?
“ভালোবাসি ও তো বলিস নি একবার ও!”
“শুনে কি করবি শুনি?”
“মনের ব্যাথা দূর করতাম আর কি!”
নোভা মুখ বাঁকালো,নাদিম বুকে দু হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে রইলো,বাতাসে উড়ছে দুজনের চুল,মনে থাকা গভীর অনুভূতি, ছড়িয়ে পড়ার আভাস তবুও যেনো ভয় হারিয়ে ফেলার!
উত্তপ্ত হৃদয়ের সুপ্ত বাসনা পূ্রণ করলে কি খুব বেশি ভুল হয়ে যাবে নাদিম?ভালোবাসা তো ধরা বাঁধা নিয়ম মানে না,আমাদের বারণ শুনে না, সে নিজ মর্জি মতো আসে, থেকে যায়,নিরবে পু’ড়িয়ে যায় মানব মানবীর হৃদয়!তবুও মানুষ ভালোবাসতে চায়,জ্বল’সে যাওয়ার ভয় নেই তাদের, কল”ঙ্ক লেগে যাবে জেনেও কেনো পিছপা হতে পারে না কেনো বলতে পারিস?তোর হতে চাইনি, তবে নিজেকে আর আটকাতে পারলাম কই,সেই ভুলে আবার তোর সাথেই তো জড়িয়ে গেলাম। ভুলের মাশুল তো দিতেই হবে বল,তারপরও এতো ভয় কেনো হয় আমার?
নাদিম হাসলো,প্রানবন্ত হাসি ছেলেটার।চোখ বন্ধ করে শ্বাস ছেড়ে বললো–,,একবার ভালোবাসি বলে তো দেখ,ভুল করেও কিছু কিছু সময় ভালো কিছু হয়!অনুভূতি কে চাপা দিতে চাওয়া অন্যায়,ভুলের ক্ষমা হয় অন্যায়ের কোনো ক্ষমা হয় না জানিস না?
নোভা হাসলো, কথার জা’লে ফাঁ’সিয়ে দিতে উস্তাদ এই ছেলে,নোভা রয়েসয়ে এক পা দু পা করে আগালো নাদিমের কলার চেপে ধরে নিজের দিকে কিছুটা টেনে এনে চোখে চোখ রেখে বললো–,, “যা হে’রে গেলাম আমি,ভালোবাসাল তোকে!যাতনা সইতে হলে না হয় সইলাম তবুও তরই না হয় থাকলাম।”
নাদিম চোখ বন্ধ করে বললো– ,,তোকে জড়িয়ে ধরি অনুমতি দিবি?
নোভা কলার ছেড়ে নিজ থেকেই জড়িয়ে ধরলো নাদিম কে,নাদিম স্নিগ্ধ ঠোঁটে হাসলো,গোধূলির মেঘেরা উড়ে গেলো অজানায় স্বাক্ষী হলো বুঝি নব্য প্রেমের সূচনায়!
———————-
চুপিচুপি রাদিফ,নাদিম,আদাভান,আবির মিলে আদিবের বাসর ঘর সাজিয়েছে। মেয়েরা কেউই এই বিষয়ে কিছু জানে না এমনকি আদিব নিজেও জানে না,সে তো কোনো কাজে সেই বিকেলে বেরিয়েছে এখনো আসার নাম নেই,আসলেও যে ঘরে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। সেই ভাবনা অনুযায়ী ড্রয়িং রুমে বসে পাহারা দিচ্ছে রাদিফ,আবির।
স্নিগ্ধা বসে আছে মায়ের ঘরে,সেখানে তাকে কি কি যেনো বুঝাচ্ছেন তিন গৃহিণী মিলে,তৃধা তো সুযোগ বুঝে কে’টে পড়েছে,তার বিয়েতে এসব কিছু বলেনি দেখে সে অন্তত খুশি,কি সব কথা বলে শুনেই কান গরম হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।
তৃধা গিয়ে বসলো গেস্ট রুমে,সেখানে আপাতত বাকিরা আছে,সাথে যোগ দিয়েছে জোছনা বেগম।তাকে নিয়েই হাসিঠাট্টায় মেতে উঠেছে সকলে।
রাতের খাবারের পাঠ চুকেছে বেশ কিছুক্ষণ হলো,আদিব কে এক প্রকার ধরে বেঁধে গেস্ট রুমে এনে বসিয়ে দিয়েছে নাদিম।সে এতে বেজায় বিরক্ত, এই মুহুর্তে তার ঘুম পেয়েছে ভেবেছিলো রুমে গিয়েই একটা ঘুম দিবে,মনে হচ্ছে না এরা তা আর হতে দিবে।
স্নিগ্ধাও এখানেই আছে,এক পাশে চুপটি করে বসে আছে সে,যে মেয়ে হুড়োহুড়ি করে কুল পায় না সে এখন শান্তশিষ্ট থাকার ভান ধরেছে ব্যাপারটা খারাপ না,বিয়ের পর থেকেই মেয়েটা দিগুণ বেশি লজ্জা পাচ্ছে ভেবেই হাসলো আদিব!
এরই মধ্যে তৃধা বলে উঠলো–,,আজকে স্নিগ্ধা আর আমি একসাথে ঘুমাবো!
আদিব শান্ত চোখে তাকিয়ে থেকে বললো–,,মন চাইলে থাকবি, এটা বলার কি আছে!
নাদিম ভ্রু বাঁকালো আগেই বুঝা উচিত ছিলো, ওর ভাই একটা আস্ত নিরামিষ। বাসর নিয়ে মানুষের স্বপ্নের শেষ নেই আর এই ছেলেকে দেখো বিয়ে করেই শেষ এখন যেনো অন্য কিছু ভাবাও তার জন্য পাপ আগের মতোই গোমড়া মুখো হয়ে আছে!আরে ভাই বিয়ে সাদি করেছিস একটু তো হাস।
আদাভান মুখ কাচুমাচু করে বলে উঠলো–,,দেখো ভা”য়রা ভাই তুমি বউ ছাড়া থাকতেই পারো, আমি আমার বউ ছাড়া থাকতে পারবো না বলে দিচ্ছি!
জোছনা বেগম হেসে বললেন–,,নাত জামাই তো পুরাই আমার বুড়োর মতো হইছে বউ ছাড়া থাকতেই পারতো না।
নোভা বলে উঠলো–,,তাই নাকি দাদী?তোমার বুড়ো তো দেখছি সেই রোমান্টিক!
তৃধা বেঁকে বসলো,সে আজকে যাবে না কিছুতেই।তৃধা বলে উঠলো–,,আপনি গিয়ে আদিব ভাইয়ার সাথে থাকুন, আমরা এক সাথে থাকবো আজকে।
আদাভান তৃধার হাত চেপে ধরে বললো–,, অসম্ভব!এই ভাই আদিব ক্যাচা’ল করিস না তো বউ নিয়ে ভাগ,আমার বউ ছাড়া ঘুম আসে না!
স্নিগ্ধা এদের কান্ড দেখে হা হয়ে তাকিয়ে আছে,স্নিগ্ধা বলে উঠলো–,,আপু তুমি ভাইয়ার সাথে যাও আমি আমার রুমে গেলাম!
আদাভান সরু চোখে তাকালো,আশ্চর্য বিয়ে করার জন্য দুটো পাগ’ল হয়ে যাচ্ছিলো এখন এক সাথে থাকতে চাচ্ছে না কেনো?হসপিটাল থেকে আসার পর কি সম্বন্ধি মশাই বউ পিটি”য়েছে!
নাদিম বলে উঠলো–,,চুপ বেয়া’দব, যা ভাইয়ার ঘরে গিয়ে ঘুমা!
স্নিগ্ধা ফুঁসে উঠে বললো–,,তোমার ভাইয়া তার ঘরে আমাকে থাকতে দিবে না,আমি কি ছেঁছ”ড়া নাকি আমার ঘর নাই?আমি ওখানেই থাকতে পারবো কারো অনিচ্ছা স্বত্বে আমি তার ঘরে যাবো না!
জোছনা বেগম সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললো–,,এই বাচ্চাদের মতো এগুলো কেমন কথা? বিয়ের প্রথম রাত স্বামী স্ত্রী একসাথে থাকতে হয়,কথা বাড়াবি না বেশি, আমার কথাই শেষ কথা।এই যা তো স্নিগ্ধা কে সাজিয়ে নিয়ে আয় শাড়ি পড়াবি!
স্নিগ্ধা বিরক্ত হয়ে বললো–,, দাদী!
আদিব শান্ত চোখে তাকালো, না বউয়ের তে’জ আছে বলতে হবে!এক ফাঁকে কিছুটা হেসে ও নিলো সে।
আদিব উঠতে যাবে তখনই জোছনা বেগম বলে উঠলেন–,,দাদু ভাই, বিয়ে তো করে নিয়েছো এবার বউয়ের দায়িত্ব নিতে শিখো,বউয়ের সাথে সুন্দর ব্যবহার করবে,কোনো উচ্চবাক্য করবে না।আর স্নিগ্ধা তুই ও স্বামীকে অপমান করে কথা বলবি না দুজন মিলে মিশে সব সমস্যার সমাধান করবি, দুজনই জে’দ ধরে বসে থাকলে সমাধান হবে কি করে?একেক সময় এক জন না একজন কে নরম হতেই হবে,মনে রাখবি সম্পর্ক টা তোদের এটাকে ঠিক রাখার দায়িত্ব ও তোদের!
স্নিগ্ধা চুপ রইলো কিছু বললো না,আদিব সেই দুপুরেই তাকে বলে দিয়েছে,পরীক্ষার আগে আমার ঘরের ত্রিসীমানায় ও যেনো তোকে না দেখি,বিয়ে তো করে নিয়েছিস লাফিয়ে লাফিয়ে আর যেনো কোনো ফাঁকি বাজি না দেখি আমি!স্নিগ্ধাও অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ভাব খানা এমন স্নিগ্ধা একা ভালোবেসেছে একাই বিয়ে করতে চেয়েছে অন্য কারো কোনো আগ্রহ নেই ইচ্ছে নেই!
তৃধা স্নিগ্ধাকে নিয়ে চলে যাচ্ছিলো,পেছন থেকে তখনই আদিব বলে উঠলো–,,দয়া করে শাড়ি টারি পড়িয়ে আমার কাছে পাঠাস না,তোদের বোনের বয়স টয়স তখন ভুলে যেতে বাধ্য হবো আমি!
আদাভান এবার শব্দ করে হেসে দিলো,পর পর চাপা হাসির রোল পড়লো ঘরে,জোছনা বেগম শাড়ির আঁচল টেনে বললেন–,,দাদু ভাই আমার নাতনির বয়সে আমি দুই সন্তানের মা হয়েছি,তালুকদার বংশের মেয়ে সে এতোটাও দুর্বল ভাবিস না, চুনোপুঁটির মতো স্বামী ঠিক সামলে নিতে পারবে দেখিস!
আদিব চোখ বড় বড় করে তাকালো চুনোপুঁটির মতো স্বামী?কি ভয়া’বহ অপমান!আদিবের অবস্থা দেখে আর না হেসে পারলো না আদাভান,তার যেনো আজকে হাসির দিন,হেসেই চলেছে সকাল থেকে।
স্নিগ্ধা কিছুতেই সাজবে না,এমন ফা’লতু লোকের জন্য ঘটা করে সাজতে পারবে না ও।নোভা,তৃধা মিলে ওকে বুঝালো,এরই মধ্যে কল আসলো মৃধার সে আসতে চেয়েছিলো পরে আর আসা হয়নি তাই কাল আসবে জিদান কে নিয়ে।জিদান ভিডিও কলে খালামনি কে দেখে উতলা হয়ে উঠলো,তৃধার কলি”জা যেনো এই ছেলে, মৃধার ভাষ্যমতে তৃধা তার ছেলেকে ক”ব্জা করেছে!স্নিগ্ধা ও হাসিমুখে কথা বললো,কথা বলা শেষ হতেই ঘরে ঢুকলেন রাজিয়া বেগম তার সাথে সুফিয়া ও রুনা বেগম।
রুনা বেগম মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন–,,মা আমার জে’দ ধরতে নেই, বিয়েটা যেভাবেই হোক হয়েছে তো।যা তৈরি হয়ে নে।
সুফিয়া বেগম স্নিগ্ধাকে টেনে কাছে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন–,,মা টা আমার ছেলের বউ হয়ে গেলো এর থেকে খুশির আর কি আছে রে রুনা?এমন চাঁদের টুকরো বউ মা আমি কই পেতাম বল তো?ছেলেটা হয়েছে একটা অপ”দার্থ ওর কথায় মন খারাপ করিস না তুই,সকালে ঠিক ব’কে দিবো আমি ওকে যা মা রাত অনেক হয়েছে এবার তৈরি হ!
রাজিয়া বেগম হেসে এগিয়ে দিলেন গহনার বাক্স, তৃধার দিকে দিয়ে বললো–,,মন মতো সাজিয়ে দে ভাইয়ের বউকে।
স্নিগ্ধা মন খারা’প করে বললো–,, এভাবে পর করে দিচ্ছো বড় আম্মু?এখন ছেলের বউ হয়ে গেলাম, মেয়ে আর নই তাই না?
রাজিয়া বেগম হেসে ফেললেন,বোকা মেয়ে ওটা তো এমনি বললাম আগে তো তুই আমার মেয়ে। মেয়ে আর ছেলের বউ কি আলাদা হলো নাকি?পাগ’লী মেয়ে যখন দেখো অভিমান করে বসে!
স্নিগ্ধা হাসলো,তারপর মনে মনে বুদ্ধি আটলো সেজেগুজে যাবে ঠিকই, পরে আদিব কে এক ঝ’লক দেখা দিয়েই কে’টে পড়বে।
আদিব কে এখনো রুমে যেতেই দেয়নি কেউ,স্নিগ্ধা কে মোটেও লাল টুকটুকে বউ সাজায়নি তৃধা,ভাইয়ের পছন্দের নীল পরী সাজিয়ে দিয়েছে।স্নিগ্ধা গাল ফুলিয়ে অভিযোগ করেই যাচ্ছে,আপাই তুই আমাকে একদম নীল টি”ল পড়াবি না, পছন্দ না আমার!
তৃধা বোনকে সম্পূর্ণ তৈরি করে বলে উঠলো “মাশাআল্লাহ!” আমার ভাইয়ের ঘরের এক মাত্র চাঁদ।
স্নিগ্ধা লজ্জায় জুবুথুবু হয়ে গেলো, মেয়েটা লজ্জা ও পায় বেশি।
তৃধা ওকে নিয়ে ঢুকলো আদিবের ঘরে,ঢুকতেই হা হয়ে গেলো,ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখা ঘর,মোমবাতির আলো গুলো নিভু নিভু করছে,কয়েকটা আবার দীপ্ত শিখা ছড়িয়ে যাচ্ছে আনমনে।
তৃধা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থেকে বললো-,,এসব কখন করা হলো?
স্নিগ্ধা নিজেও হা হয়ে তাকিয়ে আছে,আভা বলে উঠলো–,,মনে হয় ভাইয়া আর নাদিম মিলে করেছে, আদিব ভাইয়া তো বাড়িতেই ছিলো না!
এরই মধ্যে দরজার বাহির থেকে ছেলেদের কন্ঠস্বর শোনা গেলো,তৃধা স্নিগ্ধা কে বসিয়ে দিয়ে দরজার কাছে দাঁড়ালো,নোভা,আভা,নিশিও বেরিয়ে গেছে ততক্ষণে,
আদিব বলে উঠলো–,,আমায় যেতে দাও তো এবার, মাথা ব্যাথা করছে।
তৃধা রসিকতা করে বললো–,, শুধুই ব্যাথা যাও যাও ঘরে যাওয়ার পর মাথা সহ দুনিয়া ঘুরবে তোমার!
আদিব পকেটে হাত রেখে বললো–,, এই প্রথম দেখলাম শেয়ালের কাছে জেনে-বুঝে মানুষ মুরগী রেখে যায়,কি আর করার!
আদাভান বলে উঠলো–,, শেয়ালের বিড়াল হতেও বেশি দিন লাগে না!
তৃধা চোখ পাকিয়ে তাকালো, আদাভান বলে উঠলো–,,যাও ভায়”রা ভাই আমার শালিকা তোমারই অপেক্ষায়!
তৃধার হাত টেনে ধরে সামনে এগিয়ে যেতে যেতে বললো–,,বাকিরাও গিয়ে ঘুমাও,আমি গেলাম আমার বউ নিয়ে!
তৃধার রাগে দুঃখে ফোঁস ফোঁস করছে, এই লোক মান সম্মান শেষ করে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে একেবারে!
——————
তৃধা ঘরে গিয়ে আগে আদাভানের চুল টেনে ধরলো সারাদিনের রাগ এবার ঝাড়বে বউ আদাভান ঠিক বুঝতে পারলো।
তৃধার থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলো আদাভান, তারপর কিছু একটা ভেবে জোরেশোরে একটা ধম’ক দিয়ে বসলো,তৃধা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো ধম’ক দেওয়ার মতো কি এমন করেছে তৃধা?
মন খারা’প হয়ে গেলো সাথে সাথে,বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো চুপচাপ। আদাভান কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাসলো,এখন তো কিছুতেই রাগ ভাঙ্গানো যাবে না। সে নিজে গিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পড়লো পাশে তবে তৃধার থেকে অনেকটা দূরত্ব বজায় রেখে।
তৃধার এবার খুব জোর কান্না পেলো,কি এমন হলো?যার জন্য আদাভানের এমন করা লাগলো?দূরত্ব চাইছে তাহলে থাকুক দূরে তৃধা ও যাবে না কাছে!
——————-
স্নিগ্ধা উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে,আদিব ঘরে ঢুকে বড়সড় একটা টা’স্কি খেয়েছে, কি হাল তার ঘরের?ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে আছে পুরোপুরি। নিজেকে ধাতস্থ করে এগোলো সামনে, ভুলেও ভুল করা যাবে না। স্নিগ্ধার পরীক্ষার আগে তো নরম হওয়া যাবেই না, পরে দেখা যাবে এই মেয়ে আবেগে গা ভাসিয়ে পরীক্ষায় বড় সাইজের একটা আ”ন্ডা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে,পড়াশোনায় এক ফোঁটা ও ছাড় দেওয়া যাবে না!আদিব তো ভেবেছিলো একেবারে পরীক্ষার পর বিয়েটা সারবে না মেয়েটা কি কান্ড করে বসলো!
স্নিগ্ধা বুঝলো ঘরে আদিব এসেছে তাও কথা বললো না আর না ঘুরে দাড়ানোর প্রয়োজন মনে করলো,মানুষ টা তাকে কি ভাবে?সে অবুঝ বাচ্চা শিশু?আবেগের বসে সব করে,তার ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই?পড়াশোনা তে তো তেমন ফাঁকি”বাজ না স্নিগ্ধা তার পরও এতো ক’ড়া শাস’ন,স্নিগ্ধা সবই মেনে নিতো,তাই বলে কি হসপিটাল থেকে এনে ওভাবে অপমান করার খুব দরকার ছিলো?স্নিগ্ধা কি একবারও বলেছে সে আদিবের সাথে থাকার জন্য ম’রিয়া হয়ে উঠেছে?শুধু তো বিয়েই হয়েছে সে তো এমন কিছু ভাবেও নি, কি সুন্দর করে মুখের উপর বলে দিলো তোর জন্য বিয়েটা হয়েছে শুধু মেনে নিতে আমার সময় লাগবে!আসলে মেজো আব্বু ঠিকই বলেছিলো এমন ছেলেকে ভালোবাসাটাই ভুল হয়েছে তার।
স্নিগ্ধা শান্ত চোখে তাকালো এবার, সালাম দিতে পই পই করে বলা হয়েছে তাকে, তবুও দিলো না মৌনতা বজায় রেখেছে সে।
আদিব শান্ত অথচ গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, নিজ থেকেই সালাম দিলো স্নিগ্ধা কে।
স্নিগ্ধা সালামের জবাব দিয়ে আবার চুপ করে গেলো।
তারপর কিছু সময় অতিবাহিত হতেই সে বলে উঠলো
”সবাই চলে গেছে? এবার আমিও চলে যাচ্ছি এতোক্ষণ আপনার ঘরে বসে আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখীত”!
আদিব তাকিয়েই রইলো,স্নিগ্ধা হাঁটা ধরলো বের হওয়ার জন্য, আদিব শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো–,,কোথায় যাচ্ছিস?নামাজ পড়তে হবে যা অযু করে আয়!
স্নিগ্ধা থেমে গেলো বুঝে উঠতে পারছে না কি করা উচিত!অভিমান তো বাহানা মাত্র এই ছেলেকে ছাড়া থাকতে তো তার নিজেরই কষ্ট হবে বেশি!
স্নিগ্ধা কঠিন কন্ঠে বললো–,, ভেবে বলছেন তো?
আদিব এবার হাসলো,পিছু ঘুরে স্নিগ্ধার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,স্নিগ্ধা নির্বিকার আদিব স্নিগ্ধার গালে আলতো ছুঁয়ে দিয়ে বললো–,,অভিমান কি একটু বেশিই হয়েছে নাকি আমার বউ এর?
স্নিগ্ধা দ্রুত ভঙ্গিতে চোখের পলক ফেললো শুধু এভাবে কথা বলতে থাকলে তো শক্ত থাকতে পারবে না স্নিগ্ধা বহু কষ্টে এরকম ভাবে কথা বলছে,সে তো মোটেও এমন না!
আদিব অভিমানে টইটম্বুর অর্ধাঙ্গিনী কে দেখে আরেকবার হাসলো।স্নিগ্ধার এবার গা জ্বা”লা করে উঠলো এসব হাসি মোটেও সহ্য করার মতো না!
রেগে বললো–“নাটক বন্ধ করুন বলছি!”নামাজ পড়ে ফর্মালিটি পালন করতে কেনো চাইছেন?বিয়েটা তো আমার ছেলেমানুষীর ফল,আপনি তো আমার মতো মেয়েকে বিয়েই করতে চাননি,আমি তো আপনার যোগ্যই না,আমি ম’রে যাই আমার যা খুশি হোক আপনাকে বিয়ে করতে জোর করেছিলাম আমি?বিয়ে করে মহান সেজেছেন এখন ভুল বুঝতে পেরে মু”ক্তি ও চাইছেন!আমার ভালোবাসা তো নিতান্তই আবেগ আপনার কাছে,যেহেতু ভালোবাসা আমার একার তার দায়ভার ও আমার একারই আপনাকে তো বলিনি আমার সাথে জড়িয়ে যান,তাহলে কেনো এমন করেছেন বলুন?আমি..
স্নিগ্ধার কথা আঁটকে গেলো গলার কাছেই, তার কথা বন্ধ করে দিয়েছে আদিব কৌশলে,ভালোবাসার পরশে আবদ্ধ করে নিয়েছে স্নিগ্ধার গোলাপের পাপড়ির ন্যায় ঠোঁট জোড়া!
স্নিগ্ধার মনে হলো আবেশে এবার অবচেতন অসার হয়ে পড়বে তার শরীর,চোখ বন্ধ হয়ে গেছে আপনাআপনি, সহ্য করতে পারছে না এই মধুর স্পর্শ, মানুষটিকে ঠেলে দূরে সরানোর শক্তিটুকুও যেনো লোপ পেয়েছে তার।
স্নিগ্ধার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আদিব,ঢলে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে গেছে একটা চুমুতেই?আর কিছু করলে এই মেয়ে ঠিক থাকতে পারবে তো!আদিব খেয়াল করলো স্নিগ্ধা একবারের জন্য ও আদিব কে আঁকড়ে ধরেনি,পড়ে যাওয়া মঞ্জুর তবুও তাকে ছুঁয়ে দিবে না?এতো অভিমান!
আদিবের ঠোঁটের কোনে ফুটে উঠলো হাসি,স্নিগ্ধা চোখ তুলে তাকালো,ঝাপ’সা হয়ে আসছে রীতিমতো চোখজোড়া,মুখ ঘুরিয়ে নিতে গিয়েও পারলো না আদিব দুহাতে তা আগলে ধরেছে।
স্নিগ্ধার কন্ঠনালি কাঁপছে, কথা বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না,অসহনীয় হয়ে উঠছে সব কিছু।
আদিব বড্ড নরম আদুরে সুরে ডাকলো–,, স্নিগ্ধপ্রিয়া!
স্নিগ্ধার সর্বাঙ্গে কাঁপন ধরলো এমন সম্বোধনে,বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের মতো চোখ থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়লো।আদিব স্নিগ্ধাকে বুকের সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠলো–,,রাগের মাথায় বলে ফেলেছি,তা ছাড়া তুই এমন একটা কাজ করতে পারলি?যদি সত্যি সত্যি কিছু হয়ে যেতো তোর, আমি কি নিয়ে বাঁচতাম বল?স্যরি তো আর কখনো রাগ দেখাবো না প্রমিজ!
স্নিগ্ধা ভেজা কন্ঠে বলে উঠলো–,, খারা’প লোক একটা।
ঠিকই প্রমিজ টমি’জ ভুল একটু পরই ধম’কানো শুরু করবেন, চেনা আছে আমার আপনাকে!
“এতো ভালো করে যখন চিনিস,তাহলে ভাবলি কি করে তোকে ভালোবাসি না আমি,তোকে ছাড়া অন্য কারো হবো আমি?”
স্নিগ্ধা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো আদিবকে,বুকের সাথে মিশে যেতে চাইলো যেনো,আদিব স্নিগ্ধার কপালে মাথায় ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো–,,রাগ কমেনি নাকি মেডাম?চলুন নতুন জীবনের শুরুটা সৃষ্টিকর্তা কে বলে শুরু করি।
স্নিগ্ধা আদিব কে ছেড়ে দিয়ে ধুপধাপ পায়ে বাথরুমে চলে গেলো,স্নিগ্ধা চলে যেতেই আদিব হো হো করে হেসে দিলো।বোকাটা সারাজীবন বোকাই রয়ে গেলো!
———-
রাতের শেষ প্রহর আকাশে চাঁদের দেখা নেই আজ,তবে তারারা জ্বল জ্বল করছে মৃদু আলোতে রাতের অন্ধকার কে দেখতে বেশ মোহনীয় লাগছে।
আদাভান তৃধা কে ডাকলো,তৃধা গভীর ঘুমে এরকম বার বার ডাকায় বিরক্ত হয়ে তাকালো,তার উপর ঘুমের আগে এই লোক তাকে ধম’ক দিয়েছে।পরক্ষণেই অন্য চিন্তা মাথায় আসলো তৃধার আদাভানের শরীল খারাপ না তো?
তৃধা চকিত নয়নে তাকিয়ে বললো–,,আদাভান আপনি ঠিক আছেন তো,কি হয়েছে?কয়টা বাজে!
আদাভান চিন্তিত তৃধাকে কিছুটা সময় নিয়ে দেখলো,তার পর নিজের হাত টা বাড়িয়ে দিলো তার দিকে,তৃধা দ্বিধাগ্রস্তের ন্যায় হাতে হাত রাখলো,আদাভান তৃধাকে টেনে নিয়ে গেলো বারান্দায়।
তৃধা বুঝার চেষ্টা করছে কি হচ্ছে,সে ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে হুট করেই আদাভান হাঁটু ভাজ করে তৃধার সামনে বসে পড়লো, মৃদু আলোতে আদাভানের হাতে থাকা সাদা পাথরের আংটিটা চকচক করছে।
তৃধা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আংটির দিকে এটা তো সেই আংটিটা যেটা তৃধা নিয়ে গিয়েছিলো আদাভান কে দিয়ে প্রোপোজ করাবে বলে পরে তো ওটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলো ময়লার ঝুড়িতে, এই লোকটা এটা কই পেয়েছে!
তৃধার চিন্তার মাঝেই আদাভান বলে উঠলো
“আমার রাগীনি,প্রেয়সী,শ্রেয়সী,চঞ্চলাবতী, অভিমানীনি, অনুরাগীনি, প্রেমময়ী, কেশবতী,প্রজাপতি, প্রিয়র চেয়ে ও প্রিয় আমার প্রিয়তমা, আমার অর্ধাঙ্গিনী!
ভালোবাসার এক নতুন রূপ হয়ে আমার কাছে ধরা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ বউ,তুমি আমার ধূসর মলাটে আবৃত জীবনের রংধনু তুমি আমার হাসির কারন,তুমি আমার জীবনের নতুন বসন্ত,তুমি এসেছো গোপনে, ভালোবেসে রাঙিয়ে দিয়েছো আমাকে নিঃশব্দে নিরবে।আমার কি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত নয় মিসেস?
তবে আমি তো স্বার্থপরের মতো আবদার করতে এসেছি ফিরিয়ে দিবে?
আমাকে রেখে দিবে তোমার জীবনে চিরসাথী করে?আমি থাকতে চাই একান্ত তোমার হয়ে,রাখবে না আমায় জীবনের শেষ সময় অব্দি?আমি থেকে যেতে চাই তোমার মায়ায়,রোজ সকালে তোমার দেওয়া এক কাপ চায়ের ধোঁয়া উঠা উষ্ণতায়, তোমার ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখবে না আমায়?রাখলে কি খুব ক্ষ’তি হবে বউ!একটুই তো জ্বালা”ই তোমায় বেশি না তো।
তোমার অনামিকায় সঁপতে চাই নিজেকে, হাত টা বাড়িয়ে আমাকে ব’ন্দি বানিয়ে নাও না প্লিজ!
তৃধা ঠোঁট জুড়ে বসন্তের ফুলেদের মতো হাসি,কি স্নিগ্ধ সুন্দর হাসি,জীবনের বড় প্রাপ্তীর সবচেয়ে বড় সুখ যেনো তার সামনে হাত পেতে বসে আছে,তাকে ফেরানোর সাধ্য কি তৃধার আছে?যেখানে সে আগে থেকেই এই মানুষটার কাছে বন্দি”নী,সে মানুষটা তার কাছে ব”ন্দি হবার আবদার করছে?
তৃধা হাত বাড়িয়ে দিলো নিজের তার চোখে মুখে উবছে পড়া খুশি,আদাভান তৃধার আঙুলে আংটিটা গুঁজে দিয়ে হাতের উল্টো পিঠে চুমু আঁকলো।
তৃধাকে জড়িয়ে ধরে বললো–,, আমার বউয়ের ইচ্ছে অপূর্ণ রাখি কি করে বলো,এই তো রাতের শেষ প্রহর ঘড়িতে সময় তিনটে, তুমি আমি বারান্দায় আর একটা ঘুম ঘুম চোখের প্রস্তাবনা আর একটু শীতল ভেজা চুমু!
চলবে….
#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব২৯
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সকালে মিষ্টি রোদের কিরণ সরাসরি এসে মুখে পড়লো আদিবের,চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো সে,এতো আলো কোথা থেকে আসলো,দেখার জন্য চোখ মেলে আরো অবাক হলো, বারান্দার মধ্যে ঘুমিয়ে গেছে কখন?
আদিব দ্রুত উঠতে চাইলো, তখনই বুঝতে পারলো তার উপর কিছু একটা আছে মস্তিষ্ক যেনো বেমালুম ভুলে বসে আছে কাল তার বিয়ে হয়েছে, আজ তার ঘরে তার বউ ও থাকবে!
আদিব স্নিগ্ধা কে নিজের কোলের উপর দেখে ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো, আদিব স্নিগ্ধার বাহু ধরে ধাক্কা দিয়ে ডাকলো–,,এই মাথা মোটা উঠ বলছি,এখানে কি করছিস তুই?
স্নিগ্ধা বিরক্তি নিয়ে চোখ খোললো “সকাল সকাল কে ম’রে গেছে ভাই? এমনে কেউ ডাকে নাকি আশ্চর্য!
” তুই আমার ঘরে কি করছিস?”
স্নিগ্ধা অবাক না হয়ে পারলো না, বিয়ে করা বউকে ভুলে গেছে এক রাতের মধ্যেই হায় আল্লাহ কতো কি দেখা লাগবে জীবনে?
স্নিগ্ধা দাঁতে দাঁত চেপে বললো–“নাচতে এসেছিলাম আমি আপনার ঘরে,নাচতে নাচতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল করিনি আদিব!
স্নিগ্ধা তড়িঘড়ি করে উঠে দাড়ালো, মেঝেতে বসে আছে আদিব, সরু চোখে স্নিগ্ধাকে দেখছে সে।
স্নিগ্ধা চলে যেতে নিলেই আদিব পিছু ডাকলো–,,সত্যি করে বল কেনো এসেছিলি?কি কি করেছিস আমার সাথে?
স্নিগ্ধা এবার রেগে গেলো চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,এই আপনি কি আমার সাথে সকাল সকাল ফাজ’লামো শুরু করে দিছেন?নিজে থেকে জোর করে রাখলেন কাল রাতে আর এখনই ভুলে গেছেন!মাতা’লদের ও তো নে’শা কাটার পর কিছু কিছু ঘটনা আবছা মনে থাকে,আপনার তো তাদের থেকেও বেশি খারা”প অবস্থা!
আদিব হাসলো,স্নিগ্ধা বিরক্তি নিয়ে চলে যেতে চাইলো আবার, আদিব স্নিগ্ধার হাত টেনে ধরলো আদুরে কন্ঠে ডাকলো–,,শোন না!
স্নিগ্ধা মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,তার মানে এতোক্ষণ নাটক করছিলেন?
আদিব স্নিগ্ধাকে টেনে আবার কোলের উপর বসিয়ে দিলো, স্নিগ্ধার কোমর দু হাতে জড়িয়ে ধরে বললো–,,বিয়ের পর প্রথম সকাল কেমন লাগছে জান?
স্নিগ্ধা মুখ ঘুরিয়ে বললো–,, খু’বই বা’জে। আপনি সাথে থাকলে কোনো কিছু আবার সুন্দর রোমাঞ্চকর হবে নাকি?দিলেন তো মু’ডের বারোটা বাজিয়ে!
–,,আয় মুড ঠিক করে দেই।
–,,কই যাবো?
আদিব স্নিগ্ধাকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,স্নিগ্ধা গুটিসুটি মেরে পড়ে রইলো সেখানেই।
আদিব হাসলো,বুকটা যেনো পূর্ণতার সুখ অনুভব করতে ব্যস্ত,কি শান্তি লাগে মেয়েটা তার কাছে থাকলে।যদি তা শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যেতো?
স্নিগ্ধা বলে উঠলো–,,আপনি কি কাজ করেন বর্তমানে?
–,,তুই জেনে কি করবি?বউ বউ সাজার চেষ্টা করছিস?
স্নিগ্ধা আলতো চাপড় মার”লো আদিবের বাহুতে।ঘুম কাটেনি তার এখনো,ঘুম ঘুম কন্ঠেই বললো–,,এমনি জানতে চাইলাম,এভাবে বলার কি আছে?আপনার মন চাইলে বলুন না হয় বলার দরকার নেই!
–,, ওলে বাবা, এইটুকুতেই রাগ করে নিয়েছিস?রাগ করতেও সময় লাগে না তোর?
স্নিগ্ধা আদিবের বাঁধন থেকে মুক্ত হতে চাইলো,আদিব আরো শক্ত করে জড়িয়ে রাখলো তাকে।
স্নিগ্ধা বলে উঠলো–,,ছাড়ুন বলছি ছাড়ুন।
–,, একটা কো”চিং সেন্টারে তিন বছর ধরে,বায়োলজি পড়াচ্ছি!
স্নিগ্ধা চোখ বড় বড় করে তাকালো আদিবের মুখের দিকে,অবাক কন্ঠে বললো–,,বায়োলজি!
আদিব স্নিগ্ধার বলার ধরন দেখে হেসে দিলো,স্নিগ্ধা বিরবির করে বললো–,,তা তো আমিও জানি,খাটা’শ লোক একটা, কি হেসে হেসে তুমি ক্লাস করাও, আর যত ধম’কা ধম’কি আছে সব আমার সাথেই করো!মেয়েগুলা তো লাইভ ক্লাস অ্যাটেন্ড করে শুধু তোমাকে দেখতেই, কমেন্ট দেখলে তো আমার গা পি’ত্তি জ্ব’লে উঠে!
আদিব জিজ্ঞেস করলো–,, কিছু বলছিস?
স্নিগ্ধা বিরক্তি নিয়ে বললো–,,না!
আদিব স্নিগ্ধা কে হুট করেই মেঝেতে পাতা ছোট্ট বিছানাটার উপর ফেলে দিলো,স্নিগ্ধা মৃদু আর্ত’নাদ করে উঠলো,আদিব স্নিগ্ধার উপর আধ শোয়া হয়ে শুয়ে পড়লো। তার পর ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো–,,তুই জানলি কে করে আমি লাইভ ক্লাস করাই?আর কে কি কমেন্ট করে?
স্নিগ্ধা আমতা আমতা করে বললো–,,আমি জান…বো কি করে?তুমি ভুল শুনেছো!
আদিব ঠোঁট কাম’ড়ে ধরে হেসে ফেললো,স্নিগ্ধার শাড়ি ভেদ করে কোমরে হাত রেখে বললো–,,তুমি?
স্নিগ্ধা আদিবের অবাধ্য স্পর্শ পেয়ে নড়াচড়া করতে ভুলে গেছে,তার উপর আবার ভুল ও বুঝতে পেরেছে,তুমি করে বলে ফেলেছে আদিব কে,কি মসি’বত ঠিকঠাক মিথ্যা টাও বলতে পারে না ও!
স্নিগ্ধা পুরো দ’মে বলে উঠলো–,, স্যরি স্যরি আপনি!
আদিব স্নিগ্ধার চঞ্চলতা বেশ উপভোগ করছে,আরো একটু জ্বা’লাতে নিজের হাতের আঙুল গুলো নাড়াচাড়া করা শুরু করলো,স্নিগ্ধা ছট’ফট করে উঠলো মুহুর্তেই।
কাঁপা কন্ঠে দ্রুত ভঙ্গিতে বললো–,,বলছি বলছি।
–,,কি?
স্নিগ্ধা চোখ জোড়া বন্ধ করে বললো–,, ওই আসলে ক্লাস তো আমিও করি, তাই জানি!
–,,আমার সাথে চালা’কি করতে এসেছিলি তুই?জানার পরও আবার জিজ্ঞেস করলি কেনো কি কাজ করি?কিন্তু তোকে তো ক্লাসে দেখলাম না একবার ও স্নিগ্ধা নামে তো কেউ নেই!
স্নিগ্ধা চোখ পাকিয়ে তাকালো –,, তার মানে আপনি মেয়েদের নামও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন তাই তো? সাথে ওই মেয়ে গুলোকেও!
–,,একটু আধটু দেখলে কি সমস্যা?
স্নিগ্ধা আদিব কে ধাক্কা মে’রে নিজের উপর থেকে সরাতে চাইলো, আদিব তাল সামলাতে না পেরে শেষে স্নিগ্ধার উপরই পড়ে গেলো!
স্নিগ্ধা মুখ বাঁকিয়ে বললো–,,অসহ্য,অসভ্য লোক একটা!
আদিব স্নিগ্ধার নাকে নাক ঘঁষে বললো–,,বাপরে, তুই কতো হিং’সুটেরে স্নিগ্ধা!
–,,আপনি তাকাতে পারবেন আর আমি বলতে পারবো না?মুখ থেকে তো হাসিই সরে না আপনার,আর আমাকে শুধু ধম’ক দেন,মেয়েদের কমেন্টের রিপ্লাই ও তো করেন হেসে হেসে!সরুন আমি বাহিরে যাবো।
–,,পড়াশোনায় ফাঁকি দেস না তাহলে?আমার ব্যাচের সব স্টুডেন্টই তো ভালো মার্কস পায় পরীক্ষায়,যাক চিন্তা মুক্ত!
–,,এর পরবর্তী একটা ক্লাস ও করবো না আমি,আপনার ক্লাস তো ভুলেও না!
–,,ভেবে বলছিস তো?শা’স্তি কিন্তু এখন অন্য ভাবে দিবো বুঝে শুনে বল!
স্নিগ্ধা ঠোঁট উল্টে মুখ কালো করে রইলো,আদিব স্নিগ্ধা কপালে পড়ে থাকা চুল গুলো ঠিক করে কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বললো–,,এই বোকা রানী, একদিন ও দেখেছিস উল্টো পাল্টা কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে আমাকে?ইনবক্স চেক করে দেখ হাজার টা ম্যাসেজ পড়ে আছে সিন ও করিনি।ক্লাস করাতে হলে তো হাসিখুশি হয়েই পড়াতে হয় এটা রুলস।
আর রইলো, তোর জামাই যে বিবাহিত ওটা এখন জানানো যাবে না কাউকে,এর পেছনে ও কারন আছে কাউকে তো দাওয়াত করা হয়নি, যেখানে পড়াই ওখানকার সবাই আমাকে নিয়ে মজা উড়া”ক তুই এটা চাস বল?তিন মাস পর তো আনুষ্ঠানিক ভাবে সব করা হবে তখন জানিয়ে দিবো,পরে করবো দেখে কি তুই রাগ করবি আমার উপর?
স্নিগ্ধা চোখ তুলে তাকালো আদিবের দিকে,দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো রাগ করবে না।
–,,মন খারা’প করে আছিস কেনো তাহলে এখনও?
স্নিগ্ধা আদিব কে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে উঠলো–,,আপনি অন্য মেয়েদের দিকে তাকালে আমার খারা’প লাগবে,কষ্ট হবে তো।আপনি আমাকে ভালোবাসেন না?
আদিব স্নিগ্ধা উঠিয়ে বসালো,দু গালে দুটো চুমু খেয়ে বললো–,,ভালোবাসি তো পাগ”লী।আমি কারো দিকে তাকাবো না তো,শুধু তোকেই দেখবো সত্যি সত্যি সত্যি তিন সত্যি!আমার বউ কি কম সুন্দর নাকি?তাকে দেখতে দেখতেই তো আমার জনম শেষ হয়ে যাবে, তবুও মন ভরবে না আ’শ মিটবে না!
স্নিগ্ধা লজ্জায় মাথা নিচু করে বলে উঠলো–,,ধুর!তুমি ও না।
আদিব ঠোঁট চেপে হেসে বললো–,,আবারও তুমি?মন্দ না তুমি ডাকটা তোর মুখে বেশ মানিয়েছে, এখন থেকে তুমি করেই বলবি মনে থাকে যেনো!
স্নিগ্ধা লজ্জায় ভো দৌড় মার’লো,কি জ্বা”লা এই ছেলের মুখে কিচ্ছু আটকায় না নাকি!
————–
খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে আদিবের অপেক্ষায়, কখন সে আসবে আর তারা তাকে চেপে ধরবে।
খেয়ে দেয়ে আবার তারা বেরিয়ে পড়বে ঢাকার উদ্দেশ্যে।তা নিয়ে একটু মন খারা’প ও হচ্ছে আবার সেই ব্যস্ত জীবন পড়াশোনা, ক্লাস,পরীক্ষা!
রাজিয়া বেগম খাবার তুলে দিলো একে একে সবার প্লেটে,স্নিগ্ধা এসে বসলো নোভার পাশের চেয়ারটায়।
আদাভান বলে উঠলো–,, কি হাল চাল শালিকা?
স্নিগ্ধা মিষ্টি করে হেসে বললো–,,দারুণ!
নাদিম হাই তুলে বললো–,,কতো কিছু দেখতে হবে দুনিয়ায়,আচ্ছা হো কি মে আ”ন্ধা হো!
তৃধা বিরক্তি নিয়ে বললো–,, নাটক কম কর।
আদিব এসে বসতে যাবে তখনই সবাই তার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেনো সে কোনো জোকা’র।
আদিব বলে উঠলো—,,এভাবে দেখছো কেনো সবাই?
আদাভান খাবার মুখে তুলতে তুলতে বললো–,,বিয়ের পর নাকি মানুষের সৌন্দর্য বাড়ে, রূপ নগরের রূপালী হয়ে যায় তাই দেখছিলাম,রূপ টু’প কতোখানি বাড়লো!
নাদিম বলে উঠলো–,,ভাইয়া রূপ নগরের রূপালী না তো রূপালা হবে ভাইয়া তো ছেলে!
তৃধা দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,তা আপনার ও কি বিয়ের পর রূপ টু’প বেড়েছিলো নাকি?আমার তো চোখে পড়েনি!
সেই একই দেখছি আগের মতোই ঝগড়ু”টে, আ”ড়া,ত্যাড়া ভে”ড়াই রয়ে গেছেন!
আবির চোখ ছোট ছোট করে বললো–,, ভে”ড়া!
আদাভান ডেকে উঠলো–,, মা! শাশুড়ী আম্মু আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন,আপনার মেয়ে আপনার দুইমাত্র মেয়ের জামাই কে কি করে অপ’মান করছে!
রাজিয়া বেগম এসে তৃধার কান টেনে ধরলো–,,এই বেয়া”দব জামাইয়ের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে?কবে ভদ্রতা শিখবি তুই!
আদাভানের দিকে রাগী চোখে তাকালো তৃধা।আদাভান ভালো মানুষীর ভোল ধরে বললো–,, মা, কান ছেড়ে দিন আমার বউ ব্যাথা পাবে!
রাজিয়া বেগম হেসে চলে গেলেন,এই ছোটদের মাঝে এসে লজ্জায় পড়তে হয় তাকে,ছেলেমেয়ে গুলাও না কি সব কথা বার্তা বলে বসে মুখের উপর!
————
মৃধা এসেছে কিছুক্ষণ হলো,তৃধারা এখনই চলে যাবে,জিদান খালামনি কে ছাড়তে নারাজ,ছেলেটার চোখ ছলছল করে উঠছে, তৃধা ও যেনো সমানে বাচ্চা হয়ে গেছে সেই আগে কেঁদে দিয়েছে। আদাভান হতাশ চোখে তাকালো এমন বাচ্চা বউ নিয়ে যাবে কোথাও?
বহু কষ্টে জিদান কে মৃধার কাছে দেওয়া হলো,সবার থেকে বিদায় নিয়ে একে একে সকলে গাড়িতে উঠে বসলো।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে যদিও সাময়িক দূ্রত্ব তবুও আপন মানুষদের ছেড়ে যাওয়ার কষ্টটা একটু বেশিই হয়।
তৃধা ঘুমিয়ে আছে আদাভানের কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে, পেছনের সিটে বসেছে বাকিরা,আদাভান দক্ষ হাতে গাড়ি চালাচ্ছে,টুকটাক কথা বলছে বাকিরা।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হতে হতেই তারা পৌঁছে গেলো গন্তব্যে।বাকিদের হোস্টেলে নামিয়ে দিয়ে বাসার সামনে এসে গাড়ি থামালো আদাভান।
লাগেজ নামালো,তৃধা নেমে লম্বা শ্বাস টানলো।
দারোয়ানের সাথে ভালো মন্দ কিছু কথা বলেই রুমে চলে আসলো দুজন,রাতের খাবার রাজিয়া দিয়ে দিয়েছে সাথে করে।সে গুলো গুছিয়ে রেখে তৃধা ঢুকলো বাথরুমে গোসল না করলেই নয়।
বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে দাঁড়ালো আয়নার সামনে, আদাভান গোসল সেরে বিছানায় বসে আছে।কোলের উপর ল্যাপটপ চাপিয়ে কি যেনো করছে মনোযোগ দিয়ে।
তৃধা আড়চোখে কয়েকবার দেখে নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।
আদাভান কাজ সেরে উঠে দাঁড়ালো বিছানা ছেড়ে তৃধার পেছেনে এসে দাড়ালো আয়নায় চোখ স্থির করে দেখতে লাগলো স্নিগ্ধ তৃধা কে!
তৃধা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আদাভান কে দেখতে দেখতে বললো–,,ভাবছি আবার হোস্টেলে ফিরে যাবো প্রফেসর!
আদাভান সরু চোখে তাকালো, এই মেয়ে আসলে বিশ্ব বেয়া”দব,না হয় কি একটা জল”জ্যান্ত জামাই ফেলে যাওয়ার চিন্তা করতে পারে?নির্দয়!তালুকদার বংশের সব গুলাই এক একটা দজ্জা”ল।শ্বশুর, শালা,সম্বন্ধি খাঁড়ার উপর থ্রে”ট দেয়,বউ তো তাদের থেকেও এক কাঠি উপরে!
আদাভান ও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয় বউ ছাড়া সে থাকতে পারবে না মানে পারবে না,যে কোনো উপায়ে বউ তার কাছেই রাখবে সে।
তৃধার কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিলো মুহুর্তেই চোখে চোখ রেখে বললো–,, আমি আমার এক মাত্র বউয়ের উপর পুরোপুরি আসক্ত জানো না তুমি?
তাকে ছাড়া কিছু ভালো লাগে না আমার, সে আমার প্রশান্তি, বেঁচে থাকার অক্সিজেন!
তালুকদারের মেয়ে শোনো! আদাভান এরিশ একজন বড্ড উন্মা”দ স্বামী,বউ পা’গল সে।
শুনছেন আপনি মিসেস তৃধা তালুকদার?
আমি বউ পাগ’ল, আমি বউ পাগ’ল,আপনার জন্য পা’গল আমি!
তৃধা সরু চোখে তাকিয়ে রইলো তার দিকে, যেনো কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই এসবে!
আদাভান ফের বললো–,,শুনতে পাচ্ছেন না বুঝি?মসজিদের মাইকে এলান করতে হবে নাকি?
আপনি এতো অবুঝ কেনো?কেনো বুঝছেন না, আপনি ছাড়া আমার চলে না!
তৃধা ভ্রু উঁচিয়ে বললো–,, তাই?
আদাভান তৃধার গালে চুমু বসিয়ে বললো–,,হুম!
তৃধা আনমনে বলে উঠলো–,,আরো একটা জিনিস ভেবেছি!
আদাভান তৃধার দিকে তাকিয়ে আছে মনোযোগ দিয়ে,তৃধা যা বলে সব সময়ই তার দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ রেখে কথা বলে কোনো লুকোচুরি করে না,এখন অন্য দিকে তাকিয়ে কথা বলছে কেনো?যদিও বিষয় টা স্বাভাবিক তার পরও আদাভানের মন মানতে চাইছে না।
তৃধা বিছানায় গিয়ে বসলো, আঙুল দিয়ে জামার উপর আঁকিবুঁকি করতে করতে বললো–,, পড়াশোনা করবো না আর!
আদাভান গম্ভীর হয়ে বললো–,, কেনো?
–,,ইচ্ছে নেই!
–,,ভালো,তাহলে আর এখানে থেকে কি করবে?বাড়ি চলে যাও, তোমার তো কথাটা আমাকে আগে বলা উচিত ছিলো তাহলে তোমাকে রেখেই আসতাম আমি!
তৃধা চোখ তুলে তাকালো আদাভানের দিকে,আদাভান বুকে দু হাত গুঁজে তার দিকেই তাকিয়ে আছে,এবার আদাভান আরো গম্ভীর হলো,থমথমে কন্ঠে বলে উঠলো–,,অযোগ্য বউয়ের দরকার নেই আমার,তুমি বাড়ি যাবে তার পর আর আমার কাছে ফিরবে না!
তৃধা কাঁপা কন্ঠে বললো–,, পড়াশোনা না করলে আমি আপনার অযোগ্য হয়ে যাবো?বউ বলে পরিচয় দিতে পারবেন না বলে তাড়িয়ে দিচ্ছেন?
আদাভানের সোজাসাপটা জবাব–,,হ্যাঁ!
তৃধা মুখ ঘুরিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো, আদাভান রাশভারি কন্ঠে ধম”ক দিয়ে বললো–,,যারা অন্যের কথা শুনে নিজের স্বপ্নের কথা ভুলে যায়,নিজের সিদ্ধান্ত কে সম্মান না দিয়ে মানুষের কথায় কান দিয়ে উল্টো পাল্টা চিন্তা ভাবনা করে,ওরকম মানুষের সাথে আমি একই বিছানায় থাকতে পারবো না,অন্য কোথাও গিয়ে ঘুমাও!
তৃধা বিছানা ছেড়ে নেমে গেলো,গাল ফুলিয়ে বললো–,, থাকলাম না আপনার বিছানায়,থাকুন একা একা!
আদাভান তৃধার হাত টেনে নিজের মুখোমুখি দাঁড় করালো,শক্ত ভাষায় জিজ্ঞেস করলো–,, কে কি বলেছে?এ টু জেট সব বলবে একটুও যাতে বাদ না পড়ে!
–,,বলবো না!
–,,তৃধা রাগাবে না আমায়,বলো কে কি বলেছে?মা কিছু বলেছে?দাদি বা শাশুড়ী মা?কে কি বলেছে বলো!
–,,উনারা কেউ কিছু বলেনি!আপনার আত্নীয়রা বলেছে।
তৃধা ঠোঁটে দাঁত চেপে মাথা নিচু করে আছে,আদাভান বিরক্ত হলো,এই মেয়ে কবে থেকে আবার লোকের কথা শোনা শুরু করে দিয়েছে?
–,,তৃধা তাকাও আমার দিকে,এরকম কম আত্নবিশ্বাসী তৃধাকে পছন্দ করি না আমি,আমি সেই তৃধাকেই সব সময় দেখতে চাই যে আত্নবিশ্বাসী, নিজের সিদ্ধান্তে চলে, অন্যায়ে’র বিরুদ্ধে কথা বলতে জানে,নিজের জন্য বাঁচতে পারে!
তৃধা চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,না পারবে না তৃধা নিজের জন্য বাঁচতে, কারন আগের তৃধার জীবনে আদাভান নামক কোনো ব্যক্তি ছিলো না এখনকার তৃধার জীবনে আছে।সেই ব্যক্তিকে হারিয়ে তৃধা বাঁচতে পারবে না! আগের তৃধার জীবনে পিছুটান ছিলো না,এখনকার তৃধার পিছুটান আছে,সে জড়িয়ে গেছে একজনের সাথে তার মায়ায় পড়ে গেছে সে, মায়া কাটিয়ে উঠাতে পারবে না। শুনেছেন আপনি!
আদাভান তৃধার বিচলিত কন্ঠস্বরে অবাক হলো,কি এমন কথা থাকতে পারে যার জন্য মেয়েটা এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবছে।
আদাভান তৃধার গালে হাত রেখে নরম কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো–,, কি হয়েছে বলো আমায়,কোনো কথাই তো লুকাও না এ কথাটা লুকাবে আমার থেকে?
তৃধা আদাভানের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো–,, আমার একটা বাবু লাগবে,তা আপনাকে দিতেই হবে!
আদাভান অবাক হয়ে বলে উঠলো–,, কিহ্!
তৃধা বিরক্তি নিয়ে বললো–,, বাচ্চা লাগবে আমার।
আদাভান তৃধাকে টেনে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো–,,পানি খাও,তোমার মাথার তা’ড় ছিঁ”ড়ে গেছে মনে হয় কয়েকটা,আল্লাহ কে আমার ভোলাভালা বউটাকে পা’গল করে দিলো?এবার আমার কি হবে খোদা,বউ ছাড়া তো আমি দুই মিনিটও থাকতে পারি না,পাব’না পাঠিয়ে থাকবো কি করে!
তৃধা আদাভানের গলার দিকের টি-শার্ট চেপে ধরে বললো–,, এই আমি পা’গল?পাবনা পাঠাবেন আমায়?এমন মা’র মারবো না সারাজীবন মনে থাকবে বলে দিচ্ছি!
আদাভান খুশি হয়ে বললো–,,ইয়াহু!বউ আমার ফিরে এসেছে!
তৃধা দ্বিগুণ রেগে বললো–,, আপনি তো এটাই চান,পরবর্তীতে যদি বাবু না হয় তাহলে আপনি আরেকটা বিয়ে করে নিবেন বাচ্চার জন্য, আর আমাকে তাড়িয়ে দিবেন।অন্য মেয়েকে রুমের মধ্যে নিয়ে থাকবেন তাকে ভালোবাসবেন,আমাকে ভুলে যাবেন!আপনাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না পড়াশোনা করা লাগবে না আমার,আমার বাচ্চা চাই মানে চাই,তুই অন্য কারো কাছে যেতে চাস তাই তো?বুঝি না মনে করেছিস!খারা’প লোক কোথাকার।
তৃধা শব্দ করে কান্না করে দিলো এবার,আদাভান হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে, কি সব আজে”বাজে চিন্তা করে বসে আছে এই মেয়ে!
তৃধাকে জড়িয়ে ধরলো আদাভান, মাথায় হাত রেখে বললো–,, তৃধা কাঁদবে না একদম, রাগ করবো কিন্তু আমি!
তৃধা কান্না ভেজা গলায় বললো–,,যা খুশি করুন,আমি আপনাকে কারো সাথে শেয়ার টেয়া”র করতে পারবো না!
আদাভান অধৈর্য হয়ে বললো–,, আমিও যাচ্ছি না অন্য কারো কাছে,তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি না কয়েক ঘন্টা, তাড়িয়ে দিলে তো হার্ট ফেই’ল করে ম’রে যাবো!
–,,ম’রে যান তাও ভালো তবুও অন্য নারীর কাছে যাওয়া মে’নে নিতে পারবো না আমি!
আদাভান এবার হো হো করে হেসে দিলো,এ কোন পাগ’লের পাল্লায় পড়লো, না কথা শুনছে আর না বুঝার চেষ্টা করছে!
আদাভান তৃধাকে থামানোর জন্য ঘাড়ে ছোটখাটো একটা কা’মর বসিয়ে দিলো।
তৃধা এবার নিজ থেকে সরে যেতে চাইলো,আদাভান চেপে ধরে রাখলো বুকের সাথে।তার পর তৃধার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো–,, তুমি যে আস্ত একটা বোকা আগে তো জানতাম না।কে না কে কি সব বললো আর তুমি সত্যি সত্যি এসব ভেবে বসে আছো?ওদের কাজই তো ছিলো তোমার ব্রেন ওয়া”শ করা,আর তুমিও ওদের কথায় যোগ দিয়েছো।পড়াশোনা করবে মনোযোগ দিয়ে কোনো হেয়া’লি করতে যেনো না দেখি,তোমার স্বপ্ন কিন্তু আমারও স্বপ্ন, আমার স্বপ্ন পূ্রণ করবে না তুমি?তোমার স্বামী তোমাকে অনেক বড় পর্যায়ে দেখতে চায়,তার গর্ব তুমি, তার সম্মান তুমি,তার সব কিছুই তো তুমি।ছেলেমানুষী করে না পাখি,সন্তান তো আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত,আমরা আল্লাহর কাছে সময় হলে চেয়ে নিবো, যদি আল্লাহ খুশি হয়ে দেন তো পরেও দিবে এসব ভেবে মন খারা’প করে নাকি কেউ?
এসব কথা যদি আবার কোনো দিন ভেবেছো তো তোমার খবর আছে।মৃ’ত্যুর আগে তোমাকে ছাড়ার কথা চিন্তাও করতে পারি না আমি।
আর রইলো দ্বিতীয় কোনো নারীর কথা,আল্লাহ না করুক তুমি যদি আমাকে ছেড়ে আমার মৃ”ত্যুর আগে আল্লাহর কাছে চলে যাও, তার পরও আমি অন্য কারো হবো না কথা দিলাম!তুমি আমার স্ত্রী আছো, থাকবে সব সময়,তোমার জায়গা আমি অবচে”তনেও অন্য কাউকে দিতে পারবো না!তুমিই তোমার প্রফেসারের একমাত্র অর্ধাঙ্গিনী,এই জায়গা কোনো দিন অন্য কারো হবে না, আমি হতে দিবো না কথা দিলাম!
তৃধা আদাভানের বুক থেকে মাথা তুলে তাকালো, আদাভানের কপালে গভীর চুম্বন একে দিয়ে বললো–,,আমিও কোনো দিন অন্য কারো হবো না কথা দিলাম!
আদাভান তৃধার নাকে টোকা মে’রে বললো–,,,কান্না করতে করতে কি করেছো নিজের?একবারে টমেটো হয়ে গেছো তো!
তৃধা নাক চেপে ধরে বললো–,,আবার আপনি আমার নাকে টোকা দিয়েছেন?উফ,নাক টা কি সরকারি?ভেঙ্গে শান্ত হবেন নাকি!আজকে তো আমি আপনাকে মজা বুঝিয়েই ছাড়বো!
তৃধা বালিশ তুলে আদাভান কে মার”তে ব্যস্ত হলো আদাভান হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে বিছানার এই প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে।তাদের খুনসুটিতে মুখরিত হচ্ছে ইট পাথরের তৈরি দেয়াল,বন্দি হচ্ছে ভালোবাসারা চার দেয়ালের সীমানায়!
——————–
স্নিগ্ধা এই নিয়ে সারাদিনে বিশ বার খোঁচা মে’রেছে আদিব কে,আদিব বলেছে তিন দিন পর সে ঢাকা ফিরবে, পরে স্নিগ্ধার পরীক্ষা শেষ না হওয়া অব্দি ফিরবে না!
স্নিগ্ধার এই নিয়ে মন খারা’পের শেষ নেই,সে মুখে বলছে না ঠিকই কিন্তু খোঁচা মার’ছে আদিব কে,আসবে কেনো?সেখানে তো মেয়ে স্টুডেন্টের অভাব নেই, সিঙ্গেল সেজে ঘুরা পাবলিক,সুন্দর মুখখানা মেয়েদের দেখাতে হবে না!
আরো বিভিন্ন ভাবে কথা শুনিয়ে ধরা পড়ার ভয়ে আবার গিয়ে নিজের ঘরে দরজা আঁটকে বসে আছে,আদিব যে রেগেছে সামনে পেলে আস্ত চিবি’য়ে খাবে এতো রি’ক্স কে নিতে যাবে বাবা তার থেকে ভালো স্নিগ্ধা এই তিন দিন নিজের ঘরে বসে বসে মশা মার’বে।
এমনিতেও আদিব তাকে ঘরে যাওয়া নিয়ে কথা শুনিয়েছে ভুলে যায়নি সে কিছুই,ওই লোকের কাছে যাওয়ার এতো ঠেকা পড়েনি স্নিগ্ধার, দরকার পড়লে নিজেই আসবে!স্নিগ্ধাও এবার বুঝিয়ে ছাড়বে, তার কোনো তাড়া নেই, সে দিব্যি আছে আদিব কে ছাড়া!
ঘড়িতে রাত এগারোটা, আদিব স্নিগ্ধার দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে বললো–,,দরজা খোল বেয়া’দব,দেখি তোর কলি”জা কতো বড় হয়েছে।উল্টো পা’ল্টা কাজ করতে মানা করেছিলাম না তোকে?
স্নিগ্ধা শুকনো ঢোক গিললো,তবুও শব্দ করলো না।আদিব এবার চাপা সুরে ধম’ক দিয়ে বললো–,,ভালোয় ভালোয় দরজা খোল বলছি,না হয় জোরে জোরে ডাকবো তখন সবাই শুনবে, আমার কিন্তু লজ্জা শর’ম কিচ্ছু নাই,যদি সবার সামনে লজ্জা পেতে না চাস তো দরজা খোল!
স্নিগ্ধা দ্রুত পায়ে এসে দরজা খুলে দিলো,আদিব ভিতরে ঢুকেই দরজা টা ঠা’স করে বন্ধ করে দিলো।স্নিগ্ধা কেঁপে উঠলো সঙ্গে সঙ্গে। আদিব কোমরে দুহাত রেখে স্নিগ্ধাকে পর্যবেক্ষন করলো কিছুক্ষণ। তার পর বললো–,,বউ আয় আমার অনেক প্রেম প্রেম পাচ্ছে!
স্নিগ্ধা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো–,, ছিঃ!আপনি কেমন অশ্লী”ল হয়ে যাচ্ছেন দিন দিন আদিব!
আদিব এগিয়ে আসতে আসতে বললো–,, বাহিরের মানুষের সামনে তো হইনি, একমাত্র বউয়ের সামনে সবাই অশ্লী”ল, শালীন”তা বজায় রাখতে দিলি কই?ক্ষণে ক্ষ’ণে এসে মাথা টা ন’ষ্ট করে দিবি আর আমি বললেই দোষ?
স্নিগ্ধা পেছাতে পেছাতে গিয়ে বিছানার উপর ধপ করে পড়লো।
আদিব এগিয়ে গিয়ে খাটের পাশে দাঁড়ালো,স্নিগ্ধা চোখ ছোট ছোট করে বসে থেকেই পিছিয়ে গেলো,আদিব নিজের চুল টেনে ঠিক করে বললো–,,আজকে নো ছাড়াছাড়ি, তুমি পুঁচকে মেয়ে বয়সের তুলনায় বেশিই করে ফেলেছো বাড়াবাড়ি!
স্নিগ্ধা মুখ ভেং’চি কে’টে বললো–,,আপনার রুমে তো যাইনি,কথা রেখেছি আমি আপনি রুলস ভাঙ্গতে চাইছেন কেনো এখন?যান তো গিয়ে ঘুমান!
আদিব স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে দুষ্ট চোখে হাসলো,স্নিগ্ধা ভেবা”চেকা খেয়ে আশেপাশে তাকালো।হুট করেই আদিব তার ওড়না টেনে ধরলো স্নিগ্ধা ওড়না সহ এগিয়ে পড়লো আদিবের সামনে,আদিব স্নিগ্ধার দিকে নেশাভ’রা চোখে তাকিয়ে, কাঁপা কন্ঠে আদুরে সুরে ডাকলো
“স্নিগ্ধপ্রিয়া”
“হুম”
” আমার হবি?”
“আমি তো আপনারই”
“আরো একটু বেশি,অনেকটা বেশি..!”
স্নিগ্ধা চোখ তুলে তাকালো আদিবের দিকে,থমকে যেতে চাইলো তার হৃৎস্পন্দ,আদিবের দৃষ্টির গভীরতা বুঝতে সময় লাগলো সামান্য,অনূভুতির জোয়ারে কেমন হাস”ফাস করে উঠলো তার অন্তরা”ত্মা, চোখ নামিয়ে নিতে চাইলো দ্রুত।
আদিব স্বযত্নে স্নিগ্ধার কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দিলো,আবার ও সেই সম্মোহনী সুরে ডাকলো–,,স্নিগ্ধপ্রিয়া!
স্নিগ্ধা চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিলো জোরে, নিজের ঠোঁট কাম’ড়ে ধরে নিজেকে ঠিক রাখার বৃথা চেষ্টাও করলো।
আদিব স্নিগ্ধার দিকে একই ভাবে তাকিয়ে থেকে বললো–,,সম্পূর্ণ রূপে আমার হয়ে যা না!আমরা তো কাছাকাছিই আছি আর একটু কাছাকাছি আসলে কি খুব বেশি ভুল হয়ে যাবে?
স্নিগ্ধা শান্ত চোখে তাকালো,লোকটা কে জ্বা’লানো যাবে এখন,বেশ সিরিয়াস মুডে আছে বলে মনে হয়!
স্নিগ্ধা বলে উঠলো–,,যদি আপনার না হতে চাই তো কি করবেন?এতো সহজে আমি আপনার কাছে আত্নসমর্পণ করবো না!লাগবে না আপনাকে আমার…
আদিব ভ্রু যুগল কুঁচকে দাঁতে দাঁত চাপলো,কপালে ভাঁজ পড়েছে তার “সত্যি?”
স্নিগ্ধা উপর নিচ মাথা নাড়লো,আদিব ঠোঁট এলিয়ে হেসে বললো–,,আমার হবি না তাই তো?
আমাকে না করার সাহস তো তোর মতো মাথা মোটারই হবে, কিন্তু আমি তো অপবাদ সইতে পারবো না জান।
একজন মানুষ আমাকে নিয়ে ইনসি’কিউর ফিল করবে সব সময় তা তো আমি চাই না!
চরিত্রের দিক দিয়ে এক্কেবারে খাঁটি সোনা আমি,বউ ছাড়া পর’নারী ছোঁয়া তো দূর তাকানোও নিষিদ্ধ আমার জন্য!
তারপরও কেউ একজন খোঁচা মে’রে মে’রে সন্দেহ করবে আমাকে তা তো মেনে নিবো না আমি!
তাই সে আমার না হলেও সমস্যা নেই,আমি আমার দিক থেকে লয়াল থাকতে চাই!আমি সম্পূর্ণ নিজেকে তার কাছে সঁপে দিতে চাই,আমি সম্পূর্ণ তার হতে চাই!
আদিব তালুকদার, সম্পূর্ণ তার বউয়ের না হয়ে বাড়ি ছাড়বে না,শুনেছিস তুই?এবার তুই যা পারিস করে নে,
তুই আমার হইলে হ না হইলে নাই, আমি তো তোর হবোই,পারলে আঁটকে দেখা!
স্নিগ্ধা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো,লজ্জায় কোথাও লুকিয়ে পড়তে পারলে বাঁচতো হয়তো,আশ্চর্য লোক!আমার তার হওয়া আর তার আমার হওয়া তো একই কথা।কি পরিমান ঠোঁট কা’টা লোক মাই’রি!
এই লোক যে এতো নির্লজ্জ আগে তো জানা ছিলো না,পুরুষ মানুষ কি আগে থেকেই এমন থাকে নাকি বিয়ে করার পর এমন হয়ে যায়,হায় আল্লাহ মুখে লাগামের ল ও তো নেই!এটাকে নিয়ে বাকি জীবন পারি দিবো কি করে?
স্নিগ্ধার ভাবনার মাঝেই তার ওড়নায় আরো জোরেশোরে একটা টান পড়লো!
চলবে…..