নৈঃশব্দ্যের প্রেমালাপ পর্ব-৩০

0
1

#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব৩০
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
স্নিগ্ধা চোখ ছোট ছোট করে আদিবের দিকে তাকিয়ে আছে,আদিব স্নিগ্ধার দিকের তাকিয়ে তার মতি গতি বুঝার চেষ্টা করছে।
এতটুকু মেয়ের ভাবখানা দেখো একবার?ভালোবাসি বলে বলে ম’রে যাচ্ছিলো এখন আবার ভালোবাসতে দিচ্ছে না,মেয়ে মানুষের মন বুঝা আসলেই বহুত কঠিন কাজ।

আদিব ও নাছোড়বান্দা আজকে কোনো মতেই হাল ছাড়া যাবে না,বউ হয়েছিস কেনো?যদি জামাই সামলাতে না পারবি?

আদিবের কথা শুনে স্নিগ্ধা এদিক ওদিক তাকালো কি আশ্চর্য, মুখে কি কিচ্ছু আটকায় না?এমন কেনো এই ছেলে!

আদিব ধম’কের সুরে ডাকলো–,,এই মাথা মোটা তুই আমাকে ভালোবাসিস না?
তুই নিজ থেকে অনুমতি না দিলে জীবনেও তোকে ছুঁয়ে টুয়ে দিবো না আমি!
কন্ট্রোল হারিয়ে ফেললে ক’ড়া ডো”জের ঘু”মের ঔষধ খেয়ে ঘুমাবো তবুও অনুমতি বিহীন বউ কে টা’চ করবো না।

স্নিগ্ধা তাকিয়ে আছে শুধু কিছু বলছে না,আদিবের মেজা’জ এবার গরম হচ্ছে সে দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,হ্যাঁ অথবা না তে জবাব দে স্নিগ্ধা!তুই আমাকে ভালোবাসিস না?স্বামী রূপে এখন গ্রহণ করতে চাস না?

স্নিগ্ধা নিশ্চুপ,আদিব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার বলে উঠলো–,,উত্তর ”না” হলে ও সমস্যা নাই,গ্রহণ করতে না চাইলে ও সমস্যা নেই,সময় নে!তবে যতদিন না মন থেকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবি ততোদিন আমি তোর ত্রিসীমানায় ও আসবো না,যেদিন আমাকে সম্পূর্ণ রূপে মেনে নিতে পারবি,সব কিছু উজাড় করে ভালোবাসতে পারবি কোনো প্রকার দ্বিধা দ্ব”ন্দ্ব থাকবে না,সেদিন ফোন করে ডাকবি আমি তোর ডাকে সারা দিবো,চলে আসবো তোর কাছে।
সিদ্ধান্ত জানা আমি অপেক্ষা করছি!

স্নিগ্ধা হতবাক হয়ে তাকালো,সবাই কি সব কথা মুখে বলতে পারে নাকি?এখন কি স্নিগ্ধা লাজ লজ্জা ভুলে নাচতে নাচতে বলবে পেয়ারের স্বামী আদর করুন!কি একটা মারা”ত্মক পরিস্থিতি, স্নিগ্ধা নিজের জামার দু অংশ চেপে ধরলো শক্ত করে,এই মাথা গরম পাবলিক কে কি করে বুঝাবে এখন!
সব কিছুতে ত্যা”ড়ামি করাই লাগবে কেনো উনার?এমন একটা পরিস্থিতিতেও থ্রে’ট দেয় কোন মানুষ!

স্নিগ্ধা মাথা নিচু করে আছে,আদিব তার দিকেই তাকিয়ে আছে,দুজন সামনাসামনি বসে আছে দূরত্ব কম তবুও যেনো মাঝে হাজারো বাঁধার দেয়াল!

স্নিগ্ধা মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো–,,দাদী আসলে ঠিকই বলেছে।

আদিব ভ্রু কুঁচকে বললো–,, কি?

–,,বে”ডা মাইনসের ধৈর্য কম,তারা নিজেদের নিয়”ন্ত্রণ হারায় যে কোনো মুহুর্তে, সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা, বিকাল কোনো বাঁধ বিচার নেই!

আদিবের শান্ত জবাব–,, আসলেই!একদম ঠিক কথা,বিয়ে করার পর তো ধৈর্য একেবারে ডেনি”শ হয়ে যায় রে!তোকে দাদী বাকি টুকু বলেনি?

স্নিগ্ধা ঠোঁট বাঁকালো ‘বাকি যা যা বলেছে ওগুলা কি মুখে বলার মতো কথা নাকি?’

–,,কাজে প্রমান করার কথা ছিলো মনে হয়?

স্নিগ্ধা এবার চোখ তুলে তাকালো আদিবের দিকে,আদিব আবার বলে উঠলো–,,আপনার কাঙ্ক্ষিত জবাব টা যদি দিতেন বিবি সাহেবা,আপনার স্বামীর ধৈর্যের পারদ এখন শূন্যের কোঠায় হয় রেগে গিয়ে চ”ড় দিবে নয়তো আদর করবে!দিন দিন তাড়াতাড়ি উত্তর দিন।

স্নিগ্ধা আদিবের হাত চেপে ধরে চোখ খিঁচে বন্ধ করলো মিন মিন করে বললো–,,আমি আপনাকে ভালোবাসি তো!

আদিব স্নিগ্ধার অবস্থা দেখে হেসে ফেললো নিঃশব্দে।

তার পর নিজের হাত সরিয়ে উঠে যেতে যেতে বললো –,,ভালো!

স্নিগ্ধা চোখ তুলে তাকালো আদিবের দিকে,আদিব শার্টের হাত গোটাতে গোটাতে বললো–,,মু”ডের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিস তুই,এখন আমার মুড নেই পরে দেখছি বিষয়টা!

স্নিগ্ধা রেগে লাল হয়ে গেছে ইতিমধ্যে, কতো বড় ইত’র লোক,ভাব খানা এমন স্নিগ্ধা ম”রে যাচ্ছিলো এসবের জন্য! এতোক্ষণ ধরে নাট’ক করলো, কি সব আজে”বাজে কথা বললো আর এখন সব দোষ স্নিগ্ধার উপর চাপি”য়ে দিচ্ছে?

স্নিগ্ধা বিছানা ছেড়ে নেমে গিয়ে দাড়ালো আদিবের সামনে,রেগে বো”ম হয়ে গেছে সে,কোমরে দু হাত রেখে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বললো–,,এই আপনি কি বুঝাতে চেয়েছেন বলুন তো?আমি কি আপনার সান্নিধ্যে পাওয়ার জন্য ধৈই ধৈই করে নাচছিলাম নাকি?অসভ্য লু”চু মার্কা লোক কোথাকার,আপনার মতো ভাবেন আমাকে?লাজ লজ্জা আপনার না থাকতে পারে আমার আছে,আপনি এসেই বলবেন আয় চুমু খাই আমি ভ্যাব”লার মতো গিয়ে বলবো দিন দিন চুমু দিন!
অসহ্য কথা বার্তা বলছেন রুমে ঢুকার পর থেকেই,তার উপর আবার কি সব কথা বলে অনুমতি চাইছেন?অনুমতি দিবো না আমি জীবনেও, কি আশা করেন আমার থেকে? নিজ থেকে আপনাকে জড়াইয়া ধইরা চুমু খাবো আমি? তার পর নির্লজ্জের মতো বলবো আদর চাই আমার দিন আদর দিন!
ভালোবাসা চাই আমার ভালোবাসুন।এসব পারবো না আমি, বের হন আমার ঘর থেকে, যান বলছি যান!

আদিব রাগে লাল হয়ে উঠা বউ কে দেখে ফি”দা হয়ে গেছে, রাগালে যদি মনের কথা সব বের করা যায় তো নিয়ম করে রোজ রাগাবে আদিব,রাগলে যদি এতো মারা”ত্মক প্রেমে হাবুডুবু খাওয়ার মতো সুন্দর লাগে তো, রাগাতে রাগাতে অ”তিষ্ঠ করে ফেলবে বউ কে!
তার বউয়ের রাগ কি মিষ্টি কি আদুরে,হায় হার্টবি’ট মিস হয়ে গেলো বোধ হয়।

আদিব বুকের বা পাশে হাত রেখে বললো–,, হায়!আমি আজকে শেষ রে স্নিগ্ধা।

স্নিগ্ধা হতভম্ব চোখে তাকালো,আদিব স্নিগ্ধা কে টেনে এনে নিজের বুকের উপর ফেললো,স্নিগ্ধা বুঝার চেষ্টা করলো কি ঘটলো মাত্ররোই!আদিব স্নিগ্ধা কে এবার কোলে তুলে নিলো,স্নিগ্ধা চোখ বড় বড় করে দেখছে কান্ড।

আদিব স্নিগ্ধার দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বললো–,,বউ নিজ মুখে চুমু চেয়েছে,আদর ভালোবাসা চেয়েছে স্বামী হয়ে যদি দিতে কি”প্টামি করি অন্যায় হয়ে যাবে তো বউ!
তোমার স্বামী মোটেও কিপ্টামি করবে না,তার হৃদয় অনেক বড়,কতোটা বড় তা তুমি সকালের আগেই বুঝে যাবে!

স্নিগ্ধা লজ্জা পেয়ে যায় এবার, সাবলীল ভাষায় একটা মানুষ এসব কথা মুখের উপর কি করে বলতে পারে?লজ্জায় হাস”ফাস করে উঠলো মনের ভেতরে, অনুভূতিরা ঝ’টলা পাকিয়েছে,হৃদপি”ন্ডে যেনো কেউ দামা’মা বাজিয়ে চলেছে রীতিমতো, হার্ট’বিট এতো ফাস্ট হয়ে গেছে স্নিগ্ধা নিজেই নিজের হৃদয়ে’র কাঁপন টের পাচ্ছে।

–,,’ইশ্! কি লজ্জা কি লজ্জা, লজ্জা যত প্রকার আছে সব গুলাকে আজকে বিদায় করবো আমি,এটা তো আমার দায়িত্ব, দায়িত্ব পালনে আমি কোনো হেলা”ফেলা করি না।বলেই চোখ টিপ”লো আদিব!

স্নিগ্ধা আদিবের গলা জড়িয়ে ধরে কাঁপা কন্ঠে বললো–,, চু..প ক..রুন দয়া করে!

আদিব স্নিগ্ধার উপর আধশোয়া হয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো–,,প্রথম চুমু টা তুই দে…

স্নিগ্ধা কিছুটা চেঁচিয়ে বলে উঠলো–,,কিহ্!

আদিব ভাব নিয়ে বললো–,,এ অব্দি তো একটা ও দিলি না,জামাই লাগি না তোর?একটা দে,শুধু একটা…

স্নিগ্ধা দু হাতে কান চেপে ধরে বললো–,, দরজা টা ওইদিকে,আপনি এবার আসতে পারেন।

আদিব তৃধার কপাল থেকে গাল অব্দি আঙুল নাড়িয়ে বললো–,,আসার জন্য বলছিস?

স্নিগ্ধা বুঝতেই পারলো না ডাবল মি”নিং কথা বার্তা,সে আনমনেই বলে উঠলো–,,হুম!

–,,অনুমতি দিচ্ছিস?
–,,হুম!
–,,আদর চাই?
–,,হুম!
–,,আমাকে চাই?
–,,হুম!

আদিব ঠোঁট এলিয়ে হেসে বললো–,,এভাবে নিজের বর’বাদি চাইতে নেই সোনা!
পরে তো বিরহ সইতে পারবি না, আমার দূরত্ব তোকে পুড়া”বে,নিদারু”ণ যন্ত্র”ণা দিবে,আমার জন্য পুড়’তে রাজি তুই?আমি তো মানুষ ভালো না!বেখেয়ালি এই আমার জন্য তুই পুড়’তেও রাজি?

–,,রাজি!

–,, তোকে জ্ব’লে পু’ড়ে অঙ্গার হতে হবে আমার জন্য এটাও মঞ্জুর?

–,, মঞ্জুর!

আদিব মুগ্ধ চোখে তাকালো স্নিগ্ধার দিকে,তার চোখ জোড়া খুশিতে চকচক করছে,স্নিগ্ধা আদিবের দু গালে হাত রেখে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো,আদিবের কপালে গভীর চুম্বন একে স্বল্প আওয়াজে বলে উঠলো–,,আপনার জন্য, আমার মর’ণ ও মঞ্জুর আদিব!

আদিব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো স্নিগ্ধাকে,স্নিগ্ধা কেঁপে উঠলো ততক্ষণাৎ, তার গলায় মুখ গুঁজে চুপ করে আছে আদিব, স্নিগ্ধা স্পষ্ট টের পেলো তার কাঁধে তরল কিছুর স্পর্শ!

স্নিগ্ধা আদিবের চুলে হাত রেখে ডেকে উঠলো–,,আদিব!

আদিব স্নিগ্ধাকে আরো একটু শক্ত করে চেপে ধরলো,স্নিগ্ধা যদি হারিয়ে যায় কোথাও!এ যেনো নিঃশব্দে জানান দেওয়া একটা বাচ্চা’মোপনা আবদার,আদিব ধীর কন্ঠে বলছে”তুই সত্যি আমার?সত্যি সত্যি আমার?আমার বিশ্বাস হচ্ছে না!”

স্নিগ্ধা আদিবের পিঠ জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস টেনে বললো–,,আমার শরীর,মন,সব টুকু অস্তিত্ব তোমাকে দিলাম,আমার জীবনের সবটুকু চাওয়া, পাওয়া, সুখ,দুঃখের ভাগিদার তোমায় বানালাম,অতঃপর তোমাকে জীবন দিয়ে ভালোবাসলাম,আমি আজ এখন থেকে মৃ”ত্যুর আগ পর্যন্ত সম্পূর্ণ রূপে শুধু তোমার হইলাম!

আদিব মুখ তুলে স্নিগ্ধার মুখ পানে তাকালো,কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে উঠলো-,,আর কতো মুগ্ধ করবি আমায়?আর কতো ভালোবাসবি?আমি ভার সইতে পারবো না তো জান!

স্নিগ্ধা মিষ্টি করে হেসে বললো–,,তুমি চাও তোমার ভালোবাসার ভাগ অন্য কাউকে একটু দেই?

আদিব স্নিগ্ধার ঠোঁটের পাশে চুমু খেয়ে বললো–,, মর’তে চাস?

স্নিগ্ধা আদিবের গলা জড়িয়ে রেখেছে,তার চোখ জোড়া হাসছে,ভালোবাসার সন্ধিক্ষণে মন যেনো পুলকিত হচ্ছে আবেশে,হৃদয় প্রশান্ত নদীর ন্যায় শীতলা ছড়াচ্ছে, চারদিকে কেমন যেনো সুখ সুখ ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে।

সে রয়েসয়ে জবাব দিলো–,,তুমি মার’তে চাও?

–,,হুম!

–,,কিভাবে?

আদিব স্নিগ্ধার গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে বললো–,,ভালোবেসে!
——————–
ভার্সিটিতে বসে আছে সব বন্ধুরা,তৃধা,আভা, নোভা,নিশি, নাদিম, রাদিফ।

অনেকদিন পর ভার্সিটি এসে ভালোই লাগছে সবার,মৃদু মন্দ বাতাসে ছড়াচ্ছে বন্ধুত্বের মিষ্টতা,ভার্সিটি জীবনটায় ক্যারিয়ারে তীব্র চিন্তা,পড়াশোনা, মিষ্টি মধুর অনুভূতি তে মোড়া এক পা চা কিংবা এক মুঠো লাল গোলাপের ভালোবাসা! রিকশায় চড়ে দিক বেদিক ঘুরে বেড়ানো মুক্তমনা চিন্তা, আবেগ, বিবেগের সংমিশ্রণে এক সুন্দর সময়,সুন্দর অভিজ্ঞতা।

তারা আজ ক্লাস মিস দেওয়ার পরিকল্পনা সেরে ফেলেছে ইতিমধ্যে, আদাভান যেতে যেতে তাদের একবার দেখেছে গাছতলায়,শিক্ষক হিসেবে সে নিজের জায়গায় যথেষ্ট ঠিক ঠাক আছে,ভার্সিটির গেইটে পা দেওয়ার সাথে সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কটাকে পরিত্যাগ করে সে,তবে নজর বন্দি করতে ভুলে না কাউকে।

আদাভানের ক্লাস প্রথমে আজ,তারা জেনেও যাবে না ক্লাসে আর বাকি পাঁচ মিনিট,এরই মধ্যে তৃধার সেলফোন টা শব্দ করে বেজে উঠলো।

তৃধা ভ্রু কুঁচকে তাকালো ‘,আদাভান মশাইয়ের কল এসেছে।

সে তা দেখে মুখ বাঁকালো,রিসিভ করলো না।এরই মধ্যে ম্যাসেজ এলো–,, দু মিনিটের মধ্যে যদি ক্লাসে না দেখি,এসে ঠাটি”য়ে লাগাবো দুটো দু গালে!

তৃধা দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে বললো–,,এই জন্যই শিক্ষক জামাই গলায় ঝু”লাতে নেই!

তৃধার কথা শুনে সবাই হাসলো,তৃধা একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললো–,, ক্লাসে যাচ্ছি আমি,তোরা ইচ্ছে হলে আয় না হয় বসে থাক।অস’হ্য, শা”লার ব্যাটা একটা আস্ত খা”টাশ!

সবাই বুঝলো তৃধা ঝা”ড়ি খেয়েছে জামাইয়ের কাছে, তারাও উঠে হাঁটা ধরলো ক্লাসের দিকে।

কয়েকদিন পরই আবার শুরু হয়ে যাবে প্রথম সেমিস্টার এর ফাইনাল পরীক্ষা, এতোদিন আনন্দ করে পড়াশোনা যে একেক জনের চা”ঙ্গে উঠে গা’ঙে ভেসে গেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

তৃধার তার উপরে মহা জ্বা’লায় পড়েছে,আদাভান পড়াশোনার বিষয়ে ভীষণ কড়া। ফাঁকি দেওয়ার কোনো চান্স নাই,তার উপরে বউয়ের সিজিপিএ যেনো গর্ব করার মতো হয় সে দিকে সে বেশ মনোযোগী,তৃধা এসব শুনে শুধু নাক মুখ কুঁচকায়।ও কি ফেই”লটু স্টুডেন্ট নাকি?মোটামুটি একটা রেজাল্ট হলেই তো হয় এতো প্যারা খেয়ে সিজিপিএ এ তে চার এ চার পাওয়ার কি আছে,মাঝখান দিয়ে শুধু চিল করা টা মিস হয়ে যাবে!

ক্লাসে ঢুকে টেবিল দখল করে বসলো ছয়জন,ওদের দেখেই কারো কারো আবার সহ্য হলো না।মুখ বাঁকিয়ে রইলো,এতে অবশ্য তৃধাদের কোনো কিছু যায় আসে না।

ক্লাসে শিক্ষক আসতেই সকলে ঠান্ডা এতোদিন পর ক্লাস বাকি শিক্ষক রা এসে টুকটাক কথা বললেও আদাভান একেবারে ভিন্ন, প্রথম ক্লাসেই যে লোক এক গাদা পড়া ধরিয়ে দিয়েছে তার থেকে আর কি আশা করা যায়!

আদাভান সবাই কে বই বের করতে বললো,আজকের পড়ানোর টপিক নিয়ে বুঝানো শুরু করলো,সবাই মনোযোগ সহকারে তা শুনছে।

রূপার জে”ল হওয়ার পর জামিন করিয়েছে অনেক কষ্টে তার বাবা,তবে রূপা আর ভার্সিটি মুখো হয়নি।এখানে এসে বন্ধুদের মুখোমুখি হওয়ার সাহস তার নেই,তার বন্ধুদের মধ্যে জানাজানি হয়েছে তার জে”লে যাওয়ার বিষয়টা,তবে কেনো গেছে তা এখনো অনেকের অজানা।তৃধা আদাভানের স্ত্রী এ কথাটাও রূপা জানতো কেবল,তাছাড়া তৃধার বন্ধুরা জানে।তাই কোনো অসুবিধে হওয়ার কথা নয় ভার্সিটিতে,যদিও আদাভান তৃধার প্রতি কোনো এক্সট্রা কেয়ার দেখায় না এখানে,তার জন্য সবাই সমান।কাউকে জানাতেও চায়নি ভার্সিটিতে অযথাই একটা সিনক্রি”য়েট হবে এতে।

ক্লাস শেষের পথে পরবর্তী পরীক্ষার প্রস্তুতি ও ল্যাবের ক্লাস সম্পর্কে কথা বলছে আদাভান।
এরই ফাঁকে একজন বলে উঠলো–,,স্যার!আমার তো মনে হয় পরীক্ষায় আপনার বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর তৃধাই পাবে, আমার জানা মতে আপনারা তো আত্মীয়, তাই আপনি প্রশ্ন করলে তা তো ও জেনে যাবার কথা।এতে কি সবার সাথে অন্যায় করা হবে না?উচিত কথা বলছি তো এখন আবার আপনার গায়ে না লেগে যায়,সবাইকে তো জ্ঞান দিয়ে বেড়ান, নিজেও নিয়ম নীতি মানছেন তো!

আদাভানের চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো,রাগে সামনে থাকা টেবিলটা চেপে ধরলো সে,তৃধা স্বাভাবিকই আছে তার পরও এতো বড় একটা অপবা”দ মেনে নেওয়া যায় না কিছুতেই!আদাভান তাকে আগেই বলে রেখেছে এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে আমাদের,তৃধা যেনো চিন্তা না করে আদাভান আগে থেকেই ভার্সিটি অথরিটি কে সব জানিয়ে রেখেছে।

নাদিম সহ বাকিরাও বিরক্ত হলো, এরা আর কিছু পায় না নাকি?এসব কেমন প্রশ্ন ভাই সবাই কে নিজেদের মতো সুবিধা পাটি মনে করে, প্রশ্ন কি মুখের কথা?কেউ চাইলো আর এনে দিয়ে দিলো,হ্যাঁ হয় এরকমটা অহ”রহই টাকার বিনিময়ে বা অন্য বিশেষ কারনে কিছু কিছু অসৎ শিক্ষক এসব করে থাকে সবাই যে এমন টা করবে এটা ভাবা তো ঠিক না!

আদাভান প্রতিউত্তর করলো না,ক্লাসটা নিরবতায় ডুবে গেলো,আদাভান নিজেকে শান্ত করে লম্বা শ্বাস টেনে বাহিরে গেলো ক্লাস শেষ করে।

আদাভান চলে যেতেই সবাই কৌতূহলি দৃষ্টিতে তৃধা কে দেখতে ব্যস্ত হলো স্যার ক্লাসে এই মেয়ের সাথে যা ব্যবহার করেছে পূর্বে, মনে তো হয় না এরা আত্নীয়,আত্মীয় হলে কেউ এমন করতো?

তৃধা অস্বস্তিতে পড়লো, এভাবে দেখার মতো কি আছে? এমন ভাবে সবাই ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছে যেনো সে কোনো নামি-দামি শো”পিস!

এরই মধ্যে তাদের ডাক পড়লো ডিপার্টমেন্ট হে”ড এর রুমে।
তৃধা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বের হলো তার পেছনে কিছুক্ষণ পূর্বের বেয়া’দব ছেলেটা।

অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করলো দুজন,আজকে বাকি সব শিক্ষকরাই এখানে উপস্থিত তৃধা কিছুটা বিব্রত বোধ করলো,সালাম দিয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে রইলো।

রোহান নামক ছেলেটিও সালাম জানালো সবাইকে,সব শিক্ষক কে দেখে ছেলেটা কিছুটা ঘা”বড়ে ও গেলো।

মারুফ হক গম্ভীর কন্ঠে বললেন–,, রোহান রাইট?তা তোমার অভিযোগ টা আমাদের সবাইকে এবার বলতে পারো!

রোহান এবার আর কিছু বলতে পারলো না,
এনামুল হাসান বলে উঠলেন–,,আমার মেয়ে তো পদার্থে তৃতীয় বর্ষে পড়ছে বর্তমানে,তোমার আনা অভিযোগ অনুযায়ী তো আমার মেয়ে ও শুধু বাবার জোরে পাশ করে গেছে সে, পড়াশোনা করে না এমনি এমনি পড়াশোনা করতে চলে এসেছে এখানে,আর সব প্রশ্ন সে পরীক্ষার আগের রাতেই পেয়ে যায়!

রাসেল সাহেব বলে উঠলেন–,, আমার ভাগনে পড়ছে এবার দ্বিতীয় বর্ষে তোমাদের বিভাগই!সে ও তাহলে প্রশ্ন পেয়ে পেয়েই পাশ করেছে?

রোহান শুকনো ঢোক গিললো,কথা টা কেনো যে বলতে গিয়েছিলো।
একে একে সব শিক্ষকদের কথার নিচে পি’ষে গেলো রোহান।

রোহান বলে উঠলো–,,আ’ম স্যরি স্যার!ওভাবে বলা উচিত হয়নি আমার।

মারুফ হক তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো–,, তৃধা কি তোমাদের কখনো কোনো বিষয় নিয়ে ছোট করেছে?অন্য স্টুডেন্টদের নিজের দা’পট দেখিয়েছে?কিন্তু ও চাইলে কিন্তু পারতো, তুমি জানো ওর পরিচয়?

রোহান তৃধার দিকে আড়চোখে একবার তাকালো,একদম চুপচাপ এক কর্ণারে দাড়িয়ে আছে মেয়েটা।তৃধা তো তার বন্ধুদের ছাড়া অন্য কারো দিকে তাকায় ও না, অযথা লাগেও না কারো সাথে, রোহান তো রাগের ব’শে এসব বলেছে,তৃধা তাকে পাত্তা অব্দি দেয়নি সে তো মেয়েটাকে একটু পছন্দই করেছিলো,ভাব বেশি মেয়েটার তাই একটু কমাতে চেয়েছিলো!আর কি থেকে কি হলো।

মারুফ হক কিছুটা রাগ নিয়েই বললেন–,, ওর বাবা আজাদ তালুকদার এই ভার্সিটির সেভেনটি পার্সেন্ট শেয়ারের মালিক,বলতে গেলে তিনিই ভার্সিটির পরিচালক, এখানে আসেন কম তবে তার তত্বাবধানেই সব কিছু হয়!তোমার কি মনে হয় না ও যদি চাইতো তাহলে কতো কতো সুযোগ সুবিধা নিতে পারতো?ও তো তা করেনি সাধারন স্টুডেন্টদের মতোই আছে এখানে।তোমরা তো জানতে ও না ও কে, তৃধা চাইলে তোমাকে বহি”ষ্কার ও করতে পারে!
এসব কথা ছাড়ো, তুমি শুধু তৃধা কে বললেও কথাটা সব শিক্ষককের সততার উপর আঘা’ত করেছে,তোমার মতে তো তাহলে একাই তুমি সৎ বাকিরা সব অসৎ!

কিন্তু তোমার পড়াশোনা রেজাল্ট তো তা বলছে না, নিজে ফাঁকিবাজি করে ঘুরে বেড়াবে আর অন্য কেউ ভালো মার্কস পেলেই সে আত্নীয়ের দয়ায় পেয়েছে এটা বলে তাকে ছোট করবে ব্যাপারটা কতোটা যুক্তিযুক্ত?

শোন ছেলে বয়সের চাইতে বেশি বুঝতে যেও না,এখন কি সব শিক্ষকদের সন্তান,আত্মীয়রা পড়াশোনা ছেড়ে দিবে?না হয় তো অপমানিত হতে হবে তাদের বার বার নিজেদের সৎ প্রমান করতে করতেই তাদের জীবন যাবে!
একজন শিক্ষককের সাথে বেয়া’দবি করেছো তুমি সামান্য স্যরি বললেই তো সব সলভ হয়ে যাবে না।যা তা মুখে আসলো আর বলে দিলাম এমনটা হলে তো হবে না।বড় হচ্ছো বুঝে শুনে কথা বলবে,নেক্সট টাইম থেকে যেনো এসব কিছু না দেখি আমি।আর তৃধা কে স্যরি বলবে!

তৃধা বিরক্তি নিয়ে তাকালো আদাভানের দিকে,মানে ওর বাবার পরিচয় টা এখানে এভাবে দেওয়ার কি আছে,এখন ছেলেটা গিয়ে ক্লাসে সবাইকে বলবে ছড়াছড়ি হবে উট”কো ঝামে”লা!

তৃধা বলে উঠলো–,,স্যার।

মারুফ হক অভয় দিয়ে বললেন–,,বলো।

–,,স্যার আমি আমার বাবা বা অন্য কারো পরিচয় নিয়ে এখানে পড়তে আসিনি,আমি নিজের যোগ্যতায় চান্স পেয়েছি, বাকি সময়টাও নিজে যতটুকু পারি যতটুকু জ্ঞান আমার আছে তা দিয়েই নিজেকে প্রমান করার চেষ্টা করবো।রোহানের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে আমার পরিচয় টা যেনো সে বাহিরে গিয়ে কাউকে না বলে,সবাই আমাকে না চাইতেও বিশেষ কিছু ভাবুক তা আমি চাই না,আর ওর যদি এখনো মনে হয় আমি স্যারের থেকে প্রশ্ন নিয়ে পরীক্ষা দেই তো, আমি আলাদা প্রশ্নে একা সব শিক্ষকের সামনে বসে পরীক্ষা দিতেও প্রস্তুত,অযথা মিথ্যা অপবা’দ যেনো আমাকে না দেওয়া হয়!আর আমাদের সব শিক্ষকরাই তাদের নিজেদের জায়গায় সৎ কাউকে অপমা’ন করে কথা বলা আমাদের কারোই উচিত নয়!
রোহানের মনে যে প্রশ্নে উঠেছে তা হয়তো আরো অনেকের মনেই উঠেছে, তাদের সবার ধারনা আমরা চাইলেও পরিবর্তন করতে পারবো না,এখন আমার পরিচয় গোপন রাখাটাই ভালো, নয়তো অনেকেই আবার এটা নিয়ে বিশৃ”ঙ্খলার সৃষ্টি করবে,আমার জন্য আপনাদের বিশেষ করে আদাভান স্যার কে বার বার কথা শুনতে হচ্ছে তার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত স্যার।

রোহান নত মস্ত”কে দাঁড়িয়ে আছে,মেয়েটা সত্যি ভালো কেনো যে সে এমনটা করতে গেলো,ক্ষমা চাওয়ার মুখ ও তো নেই,তার পরও রোহান বলে উঠলো–,,আ’ম স্যরি তৃধা,আমার এভাবে বলা উচিত হয়নি, আমাকে ক্ষ’মা করো প্লিজ,স্যার আমাকে প্লিজ ক্ষ’মা করে দিন আর কখনো এমন বা’জে মন্তব্য করবো না!

মারুফ হক হাসলেন,তারপর গাম্ভীর্যতার রেশ টেনেই বললেন–,, ঠিক আছে এবারের মতো কিছু বললাম না,তারপর এসব যেনো আর না দেখি আমি,যাও গিয়ে ক্লাস করো!

তৃধা সালাম দিয়ে আগেই বের হলো তার পর পেছনে রোহান।

তৃধা বের হতেই পেছন থেকে রোহান তাকে ডেকে বললো–,,তৃধা আমার উপর এখনো রেগে আছো?আসলে তুমি কাউকে পাত্তা দেও না তেমন,আমি আসলে তোমাকে পছন্দ করি,যতবারই বলতে গিয়েছি ততোবারই তুমি এরিয়ে গেছো তাই তোমাকে অহং”কারি ভাবতাম, জানতে পারলাম তুমি স্যারের আত্মীয় হও তাই ভাবলাম এই জন্য তোমার ভা’ব একটু বেশি!আমি ভুল ছিলাম কিছু মনে করো না প্লিজ।

তৃধা বিরক্তির চর”ম পর্যায়ে চলে গেছে এবার, ওর সাথে কথা বলতে চেয়েছে তৃধা তাও কেনো গায়ে পড়ে কথা বলতে আসছে?আবার কি না পছন্দ করে, গোষ্ঠী কিলা”ই তোর পছন্দের উপর।

তৃধা বিরক্তিতে বলে উঠলো–,,ইট’স ওকে!
বলেই হাঁটা ধরলো সামনের দিকে রোহান এগিয়ে গিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে বললো-,,আরে শোনো শোনো,দাঁড়াও একটু..

তৃধা ক্লাসের সামনে দাঁড়ানো দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসলো নাদিম,নোভা,আভা।তৃধা যে রেগে গেছে তারা ঠিকই বুঝে গেছে ইতিমধ্যে।

রোহান বলে উঠলো–,,তৃধা আমি তোমাকে পছন্দ করি,আই থিংক আই লাভ ইউ!

নাদিম তৃধার পেছনে তাকিয়ে দেখলো আদাভান দাঁড়িয়ে আছে,ভেতরে কি হয়েছে ওইটাই জানতে পারলো না,এখন আবার আরেক জ”ঞ্জাল প্রোপোজাল দিচ্ছে।

তৃধা দু হাতে ওড়না চেপে ধরলো নিজের, রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে লম্বা শ্বাস টেনে বললো–,,মনে হয় ভালোবাসো?সিউর না তাই তো?

রোহান বোকার মতো হেসে বললো–,,ওই আরকি, ভালোলাগা ভালোবাসার মতোই।না হলেও হয়ে যাবে!

–,,ওহ তাই!ভালো তো,তাহলে তুমি সিউর হও আগে কেমন,তুমি সিউর হতে হতে আমি আর আমার জামাই মিলে দু চারটা বাচ্চা ও ডাউনলোড করে ফেলবো এর মধ্যে।
তুমি ভালোবাসো নাকি পছন্দ করো তা ভাবতে ভাবতেই আমি আমার বাচ্চা কাচ্চার বিয়ে দিয়ে ফেলবো ভাই।
মন তো চায় থাপ”ড়াইয়া দাঁত টা’ত সব ফেলে দেই।

শা’লা নাটক মারা’স আবার?তোর কি মনে হয় তোর মতো পটল কে তৃধা পছন্দ করবে?তোকে পাত্তা তো রাস্তা ঘাটে পড়ে থাকা আধ পা’গল সখিনারাও দিবে না!ক্লাসে অপমান করে বা’লের ভালোবাসা মারা”ও তুমি?বেয়া’দব ছেলে কোথাকার।আদাভান স্যার তোমার আত্নীয় লাগে তৃধা তাই তোমাকে খারা’প মনে করছিলাম!আত্মীয় ভেবেই খারা’প লাগছে তোর?ওই শা’লা প্রফেসর আমার জামাই লাগে বুঝছছ?এবার বুঝ আমি আরো কতোটা খারা’প, যদি আর কোনো দিন আমার সামনেও পড়িস তো….

আদাভান এবার নিজের হাসি থামিয়ে নিজেকে সামলে ডেকে উঠলো–,, তৃধা!

নাদিম, নোভা তৃধার কথা শুনে মুখ চেপে হাসছে,এর যে মুখের ভাষা, রাগ উঠলে তো মুখের ভাষার আ’ত্নার জানা’জা পড়িয়ে ছাড়ে।

তৃধা রেগে বলে উঠলো—,,কি সমস্যা ডাকছেন কেনো?

রোহান ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো, মেয়ে দেখতে শুনতে মাশাআল্লাহ মুখের ভাষা নাউজু”বিল্লাহ কেন?যতটুকু ভালোলাগা ছিলো তা যেনো মুহুর্তেই কর্পু’রের ন্যায় হাওয়া হয়ে গেছে।

তৃধা রেগে বেরিয়ে গেলো হন হন করে।তৃধা চলে যেতেই নাদিম গিয়ে দাঁড়ালো রোহানের সামনে,রোহান ঘাব’ড়ে গিয়ে বললো–,,কি চাই?

নাদিম বলে উঠলো–,,আমার বোনকে ক্লাসে অপমান আর দরজার বাহিরে প্রোপোজাল দিচ্ছিস আবার বলছিস কি চাই?তোর কলি”জা টা দে ভাই একটু পরিমাপ করে দেখি!

নোভা হেসে বললো–,,ছেড়ে দে ভাই,ওর যা অবস্থা এখনই কোন সময় জানি কাপড়ে চোপড়ে হয়ে যায়!দেখ দেখ হাঁটু কাঁপছে!

রোহান মনে মনে বললো–,, এবার পালাতে হবে একবার বেঁচে গেলে আর এদের ভাই বোনের চক্করে কেনো, ভার্সিটিতে কারো পেছনেই লাগবে না।

রোহান এদিক ওদিক তাকিয়ে দিলো দৌড়।

নোভা, আভা হেসে উঠলো,নাদিম নোভার হাত চেপে ধরে বললো–,,চল আমার সাথে।

আভা বলে উঠলো–,, কিরে, কই নিয়ে যাচ্ছিস আমার বোন কে?

নাদিম বলে উঠলো–,,বিয়ে করতে যাচ্ছি,তোর বোন যে হারে ভাই ভাই ডাকে, তা বন্ধ করতে বিয়েটাই করতে হবে!

নিশি,রাদিফ পেছন থেকে এসে এদের কান্ড দেখে হো হো করে হেসে দিলো!

নাদিম, নোভা কে নিয়ে যেতে যেতে বললো –,,এই রাদিফ ওদের দুজনকে হোস্টেলে দিয়ে তুই বাসায় যাবি,তৃধা মনে হয় ভাইয়ার সাথে চলে গেছে।আমি আর নোভা একটু বের হচ্ছি!

রাদিফ কপাল চাপড়ালো বলে উঠলো—,,হায় কপাল সবাই প্রেম টেম করছে শুধু আমার কপালেই কিচ্ছু নাই!

আভা হেসে বললো–,,তুই বরং কলেজ গুলার আশেপাশে একটু চক্ক’র কাট’তে পারিস যদি একটা দুইটা পটাতে পারিস তো।

নিশি বলে উঠলো-,-,ওর দ্বারা সম্ভব না এসব।

–,, তুই নিজেই তো রাজি হইলি না,নিজের মানুষ হয়ে রাজি হস না, অন্য কেউ কি পাত্তা দিবে।লাগবে না আমার প্রেম চিরকুমার থেকে যাবো আমি!

আভা বলে উঠলো–,, থাক মন খারা’প করিস না তোর জন্য বউ আমি খুঁজে দিবো, আজকে থেকেই মিশ’ন শুরু ফেইসবুকে সুন্দর মেয়ে দেখলেই নক দিয়ে বললো–,,ভাবি হবেন?ভাই আমাদের ক’ড়া জিনিস!

নিশি বলে উঠলো-,,তা যা বলেছিস,তখন ফেইসবুক প্রোফাইলের ছবি তে থাকবে নায়িকা চুমকি, বাস্তবে এসে দেখবি চুমকির জায়গায় রিংকি!
স্ট্র’ক করানের মতো রূপ নিয়ে সামনে আসলে তাকে দেখে যদি তোর ভাই বেঁচে থাকে তো বিয়ে সাদিতে আমি স্বাক্ষী দিবো!

রাদিফ বিরক্তি নিয়ে বললো–,,নির্দয়!তোদের সাহায্য লাগবে না আমার চল বাসার দিকে হাঁটা দেই ক্লাস করার মু”ড নাই।

দুজন ওর সাথে হাঁটা ধরলো,গল্প গল্প করতে করতে!
———
আদাভান তৃধার হাত ধরে হাঁটছে ফুটপাতে,বউ রেগে ছিলো অনেক তাকে ঠান্ডা করতে করতে পার হয়েছে আধঘন্টা। এখন তো কথা বলছে না শুধু হেঁটেই যাচ্ছে সামনের দিকে।

তৃধা হাঁটতে হাঁটতে থামলো ফুলের দোকানের সামনে,তারপর মুখ বাঁকিয়ে বললো–,, এ অব্দি তো একটা ফুল ও দিলেন না,আবার ভালোবাসা নাকি অফুরন্ত,হুহ্!

আদাভান হাসলো,দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে দোকানির কাছে যা যা ফুল ছিলো সব গুলো থেকে একটা একটা নিলো, মাঝরাস্তায় মানুষের ছড়াছড়ি যে যার গন্তব্য ছুটছে বেখেয়ালে।

তৃধা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছে, ব্যস্ত শহর দেখছে সে চুপ করে।কতো রঙের মানুষ এখানে, এক সাথে বসবাস সবার তবুও সবাই সবার অচেনা।স্বার্থ ছাড়া শহরের কোনো মূল্য নেই, এখানে সবাই নাকি স্বার্থপর!কথাটা হয়তো ভুল স্বার্থ’পর নয় পেটের দায়ে মানুষ স্বা’র্থপর উপাধি পায়। তবুও যেনো গা সওয়া হয়ে যায় এতো বড় অপবা”দ,মানুষ ছুটে চলে এই শহরের অলিতে গলিতে শুধু ভালো থাকার সন্ধানে।ইট পাথরের ভাঁজে বুঝি সুখও লুকিয়ে থাকে?থাকে হয়তো!

আদাভান ফুটপাত থেকে নেমে রাস্তায় দাঁড়ালো হাতে তার বাহারি ফুলের ছড়াছড়ি, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তার প্রেয়সি যেনো বড্ড আনমনা,তার সামনে সে হাঁটু মুড়ে বসলো খানিকটা,মিষ্টি হাসি মুখে ঝুলিয়ে বলে উঠলো–,, রাগ করে থেকো না মিষ্টি প্রজাপতি,তোমায় দিলাম তো একগুচ্ছ ফুলের হাসি!
ভালোবাসি ভালোবাসি, ভালোবাসার ফুলকুমারি।
গ্রহণ করুন আমার এই নিবেদন,আপনার অমূল্য হাসি থেকে একটু আধটু আমার জন্য ও ব্যয় করুন!

তৃধা আনমনেই খিল খিল করে হেসে উঠলো, হাত বাড়িয়ে ফুল গুলো টেনে নিলো নিজের কাছে, চোখ বন্ধ করে শ্বাস টেনে নিলো ফুলের সুভাষ,মুখে তার এক চিলতে হাসি,আদাভানের চোখের প্রশান্তি।সে মুগ্ধ চোখে দেখছে তার প্রিয়তমা কে।মেয়েটা খুশি তো সেও খুশি!
এ যেনো তোমার অসুখে আমি অসুস্থ, তোমার মন খারাপে আমার হৃদয় ভার,তুমি আমি দুটি মানুষ হাজারটা পার্থক্য তবুও যেনো অদৃশ্য ভাবে দুজন মিলে একজনই!

তাদের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে নোভা,নাদিম। নাদিমের হাতের ভাঁজে নোভার হাত।দুজনের চোখে মুগ্ধতা, মুগ্ধ হয়ে দেখছে তারা একজোড়া দম্পতি কে যাদের পায়ের কাছে সুখ এসে ধরা দিয়েছে মাঝ দুপুরে,কোলাহলে আনমনে অজান্তে!

নাদিম নোভার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো–,,তোর আর আমার পথ চলাও অনেক দীর্ঘ হোক,আমাদের পূর্ণতায় তারারা হাসুক, আকাশের চাঁদ পূর্ণিমা ছড়াক,আমার চাঁদ লজ্জা পেয়ে আমার বুকেই মুখ লুকাক,তবুও সে শুধু আমারই থাক!

চলবে…..