নৈঃশব্দ্যের প্রেমালাপ পর্ব-৩১ এবং শেষ পর্ব

0
3

#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#শেষ_পর্ব(প্রথমাংশ)
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সময়ের পালা বদলে আবার ও এসেছে গ্রীষ্মকাল,রোদের উত্তাপে অতিষ্ঠ মানুষ, এখনই রোদে ভরা আকাশ তো আবার একটু পরই মেঘলা ,বদলে যেতে সময় নেয় না,বিনা নোটিশে কাল বৈশাখীরা এসে আছড়ে পড়ে ধরনীতে।তেমনই আজ জ্বলমলে রোদে মুখরিত চারপাশ,স্নিগ্ধা ভার্সিটি থেকে বেরিয়েছে গন্তব্য তার আদিবের কোচিং সেন্টারের সামনে যাওয়া।

স্মৃতির পাতা থেকে চলে গেছে তিন টা বছর,

আদিব এখন একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারি লেকচারার হিসেবে আছে,সাথে এডমিশন কোচিং এ ক্লাস করায়।
স্নিগ্ধা তপ্ত রোদের মাঝেও বেশ আনন্দিত, বিরক্তির ছিটেফোঁটা ও নেই চোখে মুখে,খুশি হওয়ারই তো কথা আজ যাবে তৃধা কে দেখতে, সারপ্রাইজ দেওয়া যাকে বলে।কতোদিন পর আবার সবাই এক সাথে হবে ভেবেই হেঁটে সামনে আগাচ্ছে সে,এরই মধ্যে আকাশে মেঘের গর্জ”ন শোনা গেলো,গুরুম গুরুম শব্দে গোমট হয়ে আসলো চারপাশ,স্নিগ্ধা দ্রুত ভঙ্গিতে রিকশা ডেকে তাতে উঠে পড়লো।ঝপঝপ করে বৃষ্টি নেমে ভিজিয়ে দিলো সব,পরিবেশে শীতলতা ছড়িয়ে পড়ছে মুহুর্তেই।
স্নিগ্ধা ভিজে গেছে প্রায়,কোচিং সেন্টারের সামনে এসে ভাড়া মিটিয়ে দ্রুত ছুটলো ভেতরে,নিজের জামা থেকে পানি ছাড়িয়ে ঠিক হয়ে প্রবেশ করলো। স্টুডেন্টদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে, আদিব হয়তো ক্লাসে তাও ছোট্ট করে একটা মেসেজ দিয়ে রাখলো স্নিগ্ধা
–“”মহাশয় আমি বাহিরে অপেক্ষা করছি কাজ শেষ করে আসুন দ্রুত!”

স্নিগ্ধা চুপচাপ বৃষ্টি দেখছে মাঝেমধ্যে ছুঁয়ে দিচ্ছে আনমনে,ভাবছে নিজেদের কথা, ভালোবাসায় মুড়িয়ে আছে সে আদিবের কাছে,মানুষ টা এতো ভালোবাসবে তাকে কখনো সে ভেবেছিলো? ভাবেনি, পাওয়ার সম্ভবনাটাই তো ছিলো ঠুনকো সেখানে তারা আজ কতোটা সময় এক সাথে পারি দিয়েছে।ভালোবাসাময় সংসার তাদের খুনসুটিতে মেতে থাকে দুজন।আল্লাহ সত্যি তাকে উত্তম জীবনসঙ্গী দান করেছেন,আদিব কে একটা সময় যারা বেখেয়ালি ছন্নছাড়া বলতো তারাও এখন চোখ বন্ধ করেই তাকে বিশ্বাস করে, এক কথায় বলে উঠে ওর মতো দায়িত্বশীল পুরুষ আর কটা আছে?
স্নিগ্ধার গর্বে বুকটা ভরে আসে, তার স্বামী তার ভালোবাসার মানুষটা শুধুই তার!এতোটা আদর যত্ন হয়তো সে নিজেও নিজেকে কোনো দিন করতো না, আর এই একটা মানুষ তার বাঁচার ইচ্ছে কে যেনো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

স্নিগ্ধা ভাবনার মাঝেই খেয়াল করলো,একঝাঁক স্টুডেন্টের আগে আগে বেরিয়ে আসছে আদিব,চোখে মুখে এক মুগ্ধ করার মতো ব্যক্তিত্ব মানুষটার,ইন করা সাদা শার্ট কালো প্যান্টে যেনো তার সৌন্দর্য হাজার গুনে বাড়িয়ে তুলেছে,স্নিগ্ধা বার বার মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে শুধু!

আদিব দ্রুত ভঙ্গিতে এগিয়ে এসে এক হাত কানে রেখে মৃদু স্বরে বলে উঠলো–,,স্যরি,অনেক সময় অপেক্ষায় রেখেছি বুঝি?

স্নিগ্ধা তাকে বিনিময়ে একটা মুচকি হাসি উপহার দিলো,স্টুডেন্টরা কৌতুহলি হয়ে দেখছে তাদের,কেউ কেউ তো ফিসফিস করে বলছে–,, মেয়েটা স্যারের জিএফ নয়তো?হতেও পারে!

নানা ভাবনায় স্টুডেন্টরা বেরিয়ে পড়ছে নিজেদের কাজে,স্নিগ্ধার দিকে আদিব নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো–,,চলো যাওয়া যাক!

স্নিগ্ধা বাড়িয়ে দেওয়া হাতে হাত রেখে মাথা নাড়লো, আদিব কিছুক্ষণ স্নিগ্ধার দিকে খেয়াল করে কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বললো–,, বৃষ্টি তে ভিজেছিস কেনো?

হয়ে গেলো এ যেনো ঝগ”ড়া করার পূর্বাভাস, স্নিগ্ধা কাচুমাচু ভঙ্গিতে বললো–,,রিকশায় উঠার পর বৃষ্টি এসেছে তাই পায়ের অংশটুকু একটু ভিজে গেছে নয়তো দেখুন আমি পুরোপুরি শুকনো!

আদিব ওকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো গেইট দিয়ে,বাহিরে বৃষ্টি থেমেছে,সেঁতসেঁতে হয়ে উঠেছে পিচ ঢালা রাস্তা,স্নিগ্ধাকে হুশিয়া”রি বার্তা দিতে দিতে সামনে আগাচ্ছে আদিব।

–,,সাবধানে পা ফেলবে,কাঁদা লেগে যাবে,পড়ে যাবে, দেখে পা ফেলো,আমার হাত শক্ত করে ধরো…

স্নিগ্ধা মাঝেমধ্যে বিরক্ত ও হয়,স্নিগ্ধা কি এখনো বাচ্চাই আছে?লোকটা বাচ্চাদের মতো ট্রিট করে সব সময়!

দুজন মিলে রিকশায় চড়ে বসলো,আদিব স্নিগ্ধা কে টেনে কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে চেপে ধরলো, যেনো স্নিগ্ধা পড়ে যাবে, স্নিগ্ধার ওড়না টেনে গুছিয়ে দিলো চাকায় যেনো না লাগে।স্নিগ্ধা বিমোহিত হয়ে শুধু তাকিয়ে থাকে বরাবরের মতো!

আদিব ফোন বের করে কল করলো নাদিম কে,নাদিম রিসিভ করে জানালো তারা ভার্সিটির ক্যাম্পাসেই আছে ক্যাম্পাস থেকে বেশি দূরে না তো বাসা, তোমরা আসো আমরাও রওনা করবো!

আদিব স্নিগ্ধা কে জিজ্ঞেস করলো–,, বোনের জন্য কি কি নিবি?

স্নিগ্ধা আপ্লূত হয়ে বললো–,,আপাইয়ের তো সব আছে, আমি যা নেওয়ার সব নিবো বাবুর জন্য!

আদিব চোখ বড় বড় করে তাকালো,তার অবাক হওয়া দেখে স্নিগ্ধা নিজের মুখ চেপে ধরলো,হায় আল্লাহ সাধে কি তৃধা ওকে পেট পাতলা বলে?বলেই তো দিলো আগে ভাগে কথাটা!

আদিব সন্দিহান কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো–,, তৃধু প্রেগনেন্ট?

স্নিগ্ধা বোকা বোকা হেসে বললো–,, না..না তো ভবিষ্যতে হবে তো তার জন্য নিবো বলছিলাম!

আদিব শব্দ করে হেসে বললো–,, মিথ্যা বলাটা এখনো শিখতে পারলি না মাথা”মোটা!

স্নিগ্ধা মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে ঘুরলো,,আদিব আহ্লাদী কন্ঠে বললো–,, হয়েছে হয়েছে আর রাগ করতে হবে না।আমি কাউকে বলবো না, যা যা কিনতে চাস বল, সামনেই শপিং মল কিনে নিয়ে যাবো একবারে।

স্নিগ্ধা ঠোঁট এলিয়ে হাসলো,খুশি হয়ে বললো–,, বাবুদের অনেক অনেক ড্রেস কিনবো,মেয়ে বাবুর ড্রেস গুলো কি সুন্দর, আমিই পড়ে ফেলতাম যদি ফিট হতো!

আদিব স্নিগ্ধার বোকা বোকা কথায় হাসলো, ও দোয়া করে ওর বউ যেনো সারাজীবন এমনই থেকে যায়,মেয়েটা পাল্টে গেলে হয়তো আদিবের বেঁচে থাকাটাই কষ্টের হয়ে উঠবে,স্নিগ্ধার বোকা বোকা হাসি,কথা,ওর চাল চলন চঞ্চলতায় বা’জে ভাবে অভ্যস্ত হয়ে গেছে আদিব, মৃত্যুর আগে চাইলে ও এই অভ্যাস ত্যাগ করা সম্ভব নয়!ভালোবেসে সারাজীবন আগলে রাখবে এই বা”জে স্বভাব গুলো সে!

স্নিগ্ধা খুশি তে দৌড়ে গিয়ে গিয়ে এমন এমন জিনিস কিনলো যা আদোতেও কোনো দরকার নেই,বাবু আসবে কবে কি বাবু হবে তা জানা নেই,মেয়েটা সব কিনছে মেয়ে বাচ্চার জিনিস, পাগ”লামি তে বাঁধা দিতে গেলেই কান্না করে গাল ফুলাবে অভিমানীর অভিমানে টইটম্বুর হয়ে উঠবে আঁখি জোড়া। ছলছল চোখে মায়া নিয়ে তাকাবে,আদিবের কি সহ্য হবে এসব?কখনো না সে এই মেয়ের মিছে মিছে পাওয়া কষ্টটাও ঠিক মেনে নিতে পারে না,মেয়েটার মুখে হাসিই বেশি মানায়!
আদিব সারাজীবন তার ঠোঁটের এক চিলতে হাসির কারন হয়েই থাকতে চায়!
———-
কলিং বেলের শব্দে ক্লান্ত শরীল নিয়েও দরজার কাছে এলো তৃধা,ভাবলো আদাভান এসেছে, সে আজ ভার্সিটি যায়নি শরীলটা ঠিক লাগছে না তেমন।তৃধা দরজা খুলতেই হা হয়ে গেলো,আদাভানের সাথে তার সব বন্ধুরা দাঁড়িয়ে আছে,আদাভান আগে ঘরে ঢুকলো তারপর একে একে বাকিরা।তৃধা দরজা আটকাতে গিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো স্নিগ্ধা আর আদিব ভাইয়া ও এসেছে!

তৃধা দৌড়ে যেতে চাইলো,স্নিগ্ধা হাত উঁচিয়ে বলে উঠলো –,, একদম লাফালাফি করবি না আপাই!আমিই আসছি।

স্নিগ্ধা গিয়ে তৃধাকে জড়িয়ে ধরলো,তৃধা ভাইকেও জড়িয়ে ধরলো, ভেতরে গিয়ে দেখলো সব গুলোতে আড্ডা দেওয়া শুরু করেছে ইতিমধ্যে!

আদিব গিয়ে বোনের মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো–,,কেমন আছিস? সত্যি করে বল, এই ভাইয়া তুমি কি আমার বোনের যত্ন নেওয়া ছেড়ে দিয়েছো নাকি?কেমন শুকনো লাগছে আমার বোনের মুখটা!

তৃধা সুর তুলে বললো–,,ভাইয়া একদম ঠিক কথা বলেছো,এই লোকটা আমাকে আর একটুও ভালোবাসে না।

আদাভান ভাই বোনের অভিযোগ শুনে হাসলো,তৃধা তো একদিন আদাভান কে বলেছে–,,আপনি যদি পৃথিবীর সব ভালোবাসাও আমাকে এনে দিয়ে দেন তাও আমার কম কম লাগবে,আমার তো ইচ্ছে হয় পুরো আপনিটাকেই নিজের ভিতর ঢুকিয়ে রেখে দেই,তখন ভালোবাসা এক ফোঁটাও কম পাওয়ার কোনো চান্স থাকবে না!

আদাভান সবার জন্য শরবত বানাতে গেছে গরমে ভালো লাগবে,তৃধা ভাই বোনের সাথে গল্প করছে করুক, একই শহরে থাকলেও কাজের ব্যস্ততায় তেমন সময় হয়ে উঠে না গিয়ে একটু গল্প করার।

আদাভান গ্লাস সবার হাতে ধরিয়ে দিতে দিতে বললো–,,আদিব তোমার বোনকে যেহেতু আমি ভালোবাসি না,এক কাজ করো সাথে করে নিয়ে চলে যাও।আমি নতুন কাউকে নিয়ে আসছি!

তৃধা মুহুর্তেই নাক মুখ ফুলিয়ে সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করা শুরু করে দিয়েছে,তা দেখে সবাই মুখ টি’পে হাসলো,তৃধা রেগেমেগে বললো–,, তাই না,আপনার নতুন কাউকে লাগবে?আমি পুরনো হয়ে গেছি?থাকবোই না আর সত্যি সত্যি চলে যাবো!

বলেই ধুপধাপ পা ফেলে রুমের ভেতর চলে গেলো,স্নিগ্ধা বললো–,,আমি গিয়ে দেখছি দাঁড়াও!

তৃধা বিছানার উপর বসে আছে মন খারাপ করে,একটা সামান্য কথায় ও গাল ফুলিয়েছে,বড় হচ্ছে না দিন দিন,আহ্লাদী হয়ে উঠছে মেয়েটা আরো বেশি।

তৃধা মোবাইল হাতে নিয়ে তার বাবা কে ফোন দিলো, আজাদ তালুকদার মেয়ের ফোন পেয়ে খুশি হলেন,তাদের বাবা মেয়েতে এখন অনেক কথা হয়,যা ছোট থেকে হয়নি তা যেনো বিগত বছর গুলোতে সম্ভব হয়ে উঠেছে, নিজেদের অভিযোগ গুলো শেয়ার করে, যদিও অভিযোগ গুলো বাচ্চাদের মতো,’-জানিস তৃধা তোর মা আমাকে ঝা’রি মেরে’ছে,কথায় কথায় মহিলা ঝা’টা হাতে তেড়ে আসে হুহ্!

তৃধা ও হেসে বলে-‘মা কে আমি ব’কে দিবো তুমি চিন্তা করো না।

আজাদ তালুকদার অফিসে বসে ফাইল দেখছিলেন, মেয়ের কল পেয়েই ছুটে বারান্দায় গিয়েছেন তিনি

তৃধা জোরে জোরেই বললো যাতে আদাভান শুনতে পায়
–,,বাবা আমি তোমার কাছে একবারে চলে আসলে কি তুমি আমাকে রাখবে না?তোমার জামাই নাকি আমাকে আর রাখতে পারবে না,তার আমাকে এখন আর পছন্দ না,নতুন কাউকে আনতে চেয়েছে!আমি আজই চলে আসবো।

আজাদ তালুকদার হাসলেন তারপর মেয়ের বাচ্চামোতে সায় দিয়ে বললেন–,,অবশ্যই আসবে মা, আমার মা আমার কাছে থাকবে এটা তো আনন্দের কথা,কখন যাবে বাবাকে বলবে ড্রাইভার কে বলবো গিয়ে নিয়ে আসতে।

তৃধা সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো–,,আজ বিকেল তিনটায় গাড়ি পাঠাবে বাবা,আমি সত্যি সত্যি যাবো!

এবার আদাভানের কপালে ভাজ পড়লো,এই মেয়েটা না কড়া কথার মানুষ, মজা করাটাকে সিরিয়াস নেওয়া শুরু করলো কবে থেকে!আজকে একটা ধ’মক দিতেই হবে আদর পেয়ে পেয়ে বাঁদরে পরিনত হয়েছে,বউ ছাড়া আদাভানের ঘুম আসে নাকি!

আদাভান দ্রুত ভঙ্গিতে ঘরে ঢুকে বলে উঠলো–, এই মেয়ে তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো নাকি?পা ভেঙ্গে বসিয়ে রাখবো বলে দিলাম,সব সময় এক লাইন বেশি বুঝো!

তৃধা ঠোঁট উল্টে এবার কেঁদে ফেললো,আদাভান হতবাক হয়ে তাকিয়ে হঠাৎ হলোটা কি?

নোভা ছাড়া বাকিরা বেশ অবাক হলো,নোভা চিনে তৃধাকে হাড়ে হাড়ে শয়”তানি নিজের প্ল্যান কাজে লাগাতে এসব নাটক করছে, ভ’ন্ড কোথাকার!
নোভা কে বিরবির করতে দেখে নাদিম জিজ্ঞেস করলো–,, এই কি লুকাচ্ছিস দুটোতে মিলে?

নোভা বলে উঠলো–,,তুই আব্বা হবি ওইটা লুকাচ্ছি!

নোভার কথায় বাকিরা হা হয়ে চোখ বড় বড় করে বললো–,, এই তোরা কি বিয়ে করেছিস নাকি?কিসব ন’ষ্ট কথা বার্তা!

আদিব বলে উঠলো–,, ভাই আমি তোর আগে বিয়ে করেছি এখন ও বাবা হইনি তুই ছক্কা কবে মার’লি!

স্নিগ্ধা কপাল কুঁচকে বললো–,, আপু তো মজা করেছে, তোমরা ও না!

আদিব স্নিগ্ধা কে টেনে সাইডে নিয়ে গিয়ে বললো–,,ভাইয়া কি জানে না?

স্নিগ্ধ ভ্রু কুঁচকালো,আদিব আবার বললো–,,ভাইয়া যে বাবা হচ্ছে এটা কি ভাইয়া জানে না?

স্নিগ্ধা দুদিকে মাথা নাড়ালো,যার অর্থ এখনো জানে না!

আদিব বোনের ছেলেমানুষীতে হতাশ হলো,তার পর জিজ্ঞেস করলো–,,বাবুর কয় মাস হয়েছে জানিস?

স্নিগ্ধা খুশিতে লাফিয়ে বলে উঠলো–,, চার মাস!

আদিব মুখে হাত দিয়ে বলে উঠলো–,, কিহ্!

স্নিগ্ধা আদিব কে খোঁচা মে’রে বললো–,, আস্তে বলো,তোমার জন্য সব প্ল্যান খারা”প হয়ে যাবে।আপু আমাকে বলেছে তাদের ভার্সিটিতে চার পাঁচ দিনের জন্য বন্ধ দিবে তখন বাড়ি যাবে সবাই কে একসাথে জানাবে,আর এখন ভাইয়াকে রেখে বাড়ি চলে যাবে মিথ্যা মিথ্যা রাগ করে!

আদিব নিজের কপালে ঠা’স করে একটা মার”লো, আদাভানের জন্য তার মায়া হচ্ছে, এমন মাস্টা’রপিস বোন কে এতোদিন ধরে সামলাচ্ছে এই লোকটা তার জন্য বড় মায়া হচ্ছে তার এই মুহুর্তে, বাবা হচ্ছে এই কথাটা চার মাস ধরে গোপন রেখে দিয়েছে এই মেয়ে!

আদিব কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলে উঠলো–,,আমি বাবা হলে আবার লুকিয়ে রাখিস না সোনা,তাড়াতাড়ি বলে দিস!

স্নিগ্ধা আদিবের বাহুতে মে’রে বললো–,,ধুর!

আদিব মুচকি হাসলো স্নিগ্ধার লজ্জা পাওয়া দেখে।

নোভা,আভা,রাদিফ,নিশি,নাদিম কথা বলছে চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা নিয়ে কয়েকদিন পরই তাদের ভার্সিটি জীবনের ইতি ঘটতে যাচ্ছে!

আদাভান তৃধার কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরতে চাইলো,তৃধা মুখ ফিরিয়ে নিলো,আদাভানের এবার রাগ উঠলো,সব সময় এগুলা কেমন আচরন?খারা”প কি বললো?যার জন্য এভাবে রিয়েক্ট করতে হবে!

আদাভান বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো–,,যাও আটকাবো না তোমাকে,যা খুশি করো!

আদিব বলে উঠলো–,,আগুনে ঘি ঢালা হলো অবশেষে।

নোভা বলে উঠলো–,,হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভবনা বেশি, আটকানো দরকার এদের!

তৃধা আদাভানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো–,,আপনি সত্যি সত্যি দ্বিতীয় বিয়ে করবেন?আরেকটা মেয়ে নিয়ে আসবেন বাসায়!

আদাভান হতাশ হয়ে তাকালো,দ্বিতীয় বিয়ে আসলো কোথা থেকে!আদাভান কে চুপ করে থাকতে দেখে তৃধা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

নোভা তৃধা কে টেনে নিজের কাছে নিয়ে বললো–,, সব সময় বারাবাড়ি করবি তুই?এগুলো কেমন আচরন?ভাইয়া জাস্ট মজা করেছে।কি প্ল্যানিং করতে আসতে বলেছিলি আর কি করছিস এসব?

তৃধা মুখ বাঁকিয়ে বললো–,, এখনই আমাকে ভালোবাসে না,বাবু কে পেলে দেখবি আমাকে আর মনেই করবে না!

নোভা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো–,,তুই নিজের বাচ্চাকে হিং”সে করছিস?

তৃধা ভেং”চি কে’টে বললো–,,করছি!

নোভা বিরক্তি নিয়ে বললো–,, উল্টো পাল্টা কিছু করবি না,চুপচাপ গিয়ে খেতে বস,শরীলের কি হাল করেছিস নিজে তো যত্ন নেস না যে ব্যক্তি যত্ন নিবে তার থেকে আবার সব লুকিয়ে রেখেছিস।ভাইয়া সব জানার পর না তোকে চ”ড় লাগাবে দেখিস,ভাগ্য ভালো ব”মি বমি ভাব হয় শুধু তোর না হয় এতোদিন চেপে রাখতে পারতি বিষয় টা?

তৃধা আদাভানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো–,,জানাবোই না ব”দ লোকটাকে সর সামনে থেকে!

নোভা বলে উঠলো-,-,বারাবারি করিস না তো,এমনিতেই চার মাস হয়ে গেছে আরো দেরি করলে সত্যি সত্যি ভাইয়া কষ্ট পাবে,রাগ করবে!

তৃধা ভেবে বললো–,,ঠিক আছে বলে দিবো!

বিকেল তিনটের সময় তৃধা সত্যি সত্যি সবাইকে অবাক করে দিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো,গাড়ি পাঠিয়েছেন আজাদ তালুকদার, তৃধা ফোন দিয়ে শ্বশুরের কাছে নালিশ জানিয়েছে ইতিমধ্যে।

আদাভান তৃধাকে জড়িয়ে ধরে বুঝিয়েছে,যেনো তাকে ছেড়ে না যায়,এরকম মজা আর কখনো করবে না সে।

তৃধা পাত্তা দেয়নি তার কথায়, সে চলে গেছে এক কাপড়ে!

স্নিগ্ধা ও অবাক বোনটা এতো কেয়ারলেস হয়ে গেছে!একা একা জার্নি করবে কি করে?ভেবে নিয়েছে বলেই দিবে আদাভান কে!

আদিব অদৃশ্য ভাবেই বোনের পক্ষ নিলো,সে নাদিম কে বললো–,,স্নিগ্ধাকে বাসায় পৌঁছে দিস আমি তৃধার সাথে যাচ্ছি!
স্নিগ্ধা বলে উঠলো–,, আমি কি বাসায় একা থাকবো নাকি?আমিও যাবো আপনাদের সাথে!
আদিব বলে উঠলো–,,তাহলে চল,ভাইয়া তুমিও পরের দিন চলে এসো বউয়ের রাগ ভাঙ্গাতে আমরা আজ আসি!

কি থেকে কি হলো সব যেনো মাথার উপর দিয়ে গেলো সবার।আরে এরা তিন ভাই বোন মিলে কি করতে চাইছে?

নোভা নিশ্চিন্ত হলো, একা গেলে ভয় লাগতো দুজন সাথে যাচ্ছে তেমন কোনো অসুবিধে হবে না এখন!
—————-
স্নিগ্ধার দেওয়া গিফট গুলো ভুল ক্রমে আদাভানের হাতেই পড়েছে,রাত নয়টা বাজে ঘড়িতে,সবাই সন্ধ্যার দিকে বেরিয়েছে,আর তার বউ!সে কি করলো এটা? বলা নেই কওয়া নেই বাপের বাড়ি চলে গেলো!

আদাভান গিফটের প্যাকেট উল্টে দিলো বিছানার উপর,একে একে বাচ্চাদের জিনিস পত্র বেরিয়ে আসলো, আদাভানের চক্ষু যেনো চড়কগাছ! এসব গিফট দেওয়ার কি মানে?মস্তিষ্কে একটা শব্দ বার বার বাড়ি খেলো,তার মানে কি ও বাবা হচ্ছে!কিন্তু তৃধা তো কিছু বলেনি আচরণে ও তেমন প্রকাশ পায়নি,শরীল দুর্বল ছিলো, খেতে না পারা এগুলো কি মা হওয়ার লক্ষ্মণ?

আদাভান দ্রুত ভঙ্গিতে গুগল করলো,উত্তে”জনায় হাত পা কাঁপছে তার,যদি সত্যি হয় তো তৃধা জানালো না কেনো?নাকি মেয়েটাই এখনো জানে না!

আদাভান ঘর ময় কিছু একটা খুঁজলো,ড্রয়ার চেক করলো অবশেষে কাঙ্ক্ষিত জিনিস না পেয়ে হতাশ শ্বাস ছাড়লো,নাটকবাজ বউটা কে কাল গিয়ে শায়ে”স্তা করতে হবে, চাইলেও সে এখন যেতে পারছে না,কাল মিটিং আছে ভার্সিটিতে।
—————–
তৃধা রাতে গিয়ে উঠেছে তালুকদার ভিলায়,সাথে তার বাবা,আদিব,স্নিগ্ধা।জামাই টাকে রেখে চলে এসেছে ভেবে ভেবে মন খারাপ হচ্ছে তার, বেচারা রাতে একদম ঘুমাতে পারবে না, আবার যদি না খেয়ে থাকে তখন?

তৃধা তড়িঘড়ি মোবাইল হাতে নিয়ে মেসেজ দিলো
“খেয়ে নিবেন না হয় কিন্তু আপনার বউ ও খাবে না,আর পরের দিন কাজ শেষ করে নিতে চলে আসবেন,আপনার বউ আপনি ছাড়া থাকতে পারে না, তার কষ্ট হয়!বুঝছেন?”

আদাভান বউয়ের মেসেজ পেয়ে মুচকি হাসলো,রিপ্লাই করলো না,ছেড়ে চলে যাবে আবার আদিখ্যেতা করবে।

তৃধা,স্নিগ্ধা কে পেয়ে মায়েরা কি রেখে কি করবেন খুঁজে পেলেন না,খাবার নিয়ে যুদ্ধ চলছে,তৃধা বেশ কিছু পদ দেখে নাক মুখ কুঁচকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

রাজিয়া বেগম রাগ দেখাচ্ছেন মেয়েকে–,,একবারে খেতে চাস না তুই তৃধা,মাছ,মাংস কিচ্ছু না খেলে শরীরে পুষ্টি আসবে কোথা থেকে,তোর পছন্দের ইলিশ মাছ রান্না করলাম পাতে ও তুললি না।

স্নিগ্ধা খেতে খেতে বললো–,,আপাই এখন মাছ খায় না বড়মা।

রাজিয়া বেগম মেয়ের দিকে তাকিয়ে তার মতিগতি বুঝতে চেষ্টা করলেন,তৃধা মায়ের ভাবুক চেহারার দিক তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো।

রাজিয়া বেগম কিছুক্ষণের মাঝেই খুশি তে মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন।জোছনা বেগম খেঁকিয়ে উঠে বললেন–,,করতাছো ডা কি বউ মা,খাওন পাতে এমনে ধরতাছো কেন?খাবার গলায় আটকাইবো তো!

রাজিয়া বেগমের চোখজোড়া খুশিতে চকচক করছে,তিনি খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়লেন যেনো,চোখে এসে জল জমলো, সুখের অশ্রুতে হানা দিলো যেনো, তিনি চেঁচিয়ে বলে উঠলেন–,,আম্মা আমি নানু হবো,আমার তৃধা মা হতে চলেছে!

তৃধা এই প্রথম মা হবে শুনে লজ্জা পেলো, সব ধরনের অনুভূতি এসে ঘিরে ধরলো তাকে।
তৃধার মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিলেন রাজিয়া বেগম, মেয়েকে পারলে ক’লিজায় ঢুকিয়ে ফেলতেন তিনি।

জোছনা বেগম হেসে বললেন–,,সুখবর দিবি, বাচ্চার বাপরে সাথে করে আনবি না তুই?আক্কে’ল জ্ঞান কিচ্ছু হইলো না মাইয়াডার!

আজাদ তালুকদার বলে উঠলেন–,,আম্মা আমার মারে বই’কেন না তো।

তৃধার দিকে তাকিয়ে তিনি আনন্দে ভরা হাসি উপহার দিয়ে বললেন–,,মা, খাও ঠিক মতো। একদম অনিয়ম করবে না আমার নানা ভাইকে সুস্থ ভাবে পৃথিবীর আলো দেখাতে হবে তো,বাবা তোমার পাশে আছে মা সব সময় থাকবে!

তৃধার চোখ জোড়া জ্ব’লে উঠলো যেনো,আমি তোর পাশে আছি তো মা কথাটা শোনার জন্য কতোগুলো বছর সে অপেক্ষা করেছে?বাবার আদর ভালোবাসার জন্য কতোটা ছট’ফট করেছে সে, আজ আল্লাহ তাকে সব দিক দিয়ে পূর্ণ করে দিয়েছেন,মনে মনে তৃধা বলে উঠলো আলহামদুলিল্লাহ!

জোছনা বেগম স্নিগ্ধা আর আদিবের দিকে তাকিয়ে বললো–,,তোরা কবে খুশির খবর দিবি বল তো?ঘরটা তো খাঁ খাঁ করে কেউ থাকিস না তোরা বাড়িতে।আমাদের দিন কাটে কেমনে ওইটা তো কেউ ভাবোস না।

দাদীর অভিমান দেখে আদিব হেসে বললো–,,বুড়ি তুমিও না,চেষ্টা করছি তো এদিকে চাকরি হয়ে গেলেই আর যাবো না ওখানে তোমাদের ছাড়া থাকতে ভালো লাগে না তো আমাদেরও!

রাজিয়া বেগম বলে উঠলেন–,,তোর শ্বশুর শাশুড়ী কে জানিয়েছিস তৃধা?

তৃধা বললো–,,না মা কাল সকালে তো যাবো, তোমাদের জামাই ও আসবে, তখন সবাইকে বলবো!

রাজিয়া বেগম বললেন–,,ভালোই হবে মিষ্টি সমেত হাজির হওয়া যাবে বেয়াইয়ের বাড়ি কি বলো তৃধার বাবা?

আজাদ তালুকদার স্ত্রীর কথায় সায় দিলেন।
খাবারের পাট চুকিয়ে ঘরে গেলো সবাই,তৃধাকে ধরে নিয়ে গেছেন রাজিয়া বেগম যদি সিঁড়ি তে গেলে মেয়েটা পড়ে টরে যায় তখন?তৃধা কে বিছানায় রেখে তিনি মোবাইল হাতে নিলেন নিজের বাবা কে কল করে খবর টা জানিয়ে বাবা মেয়েতে কিছুক্ষণ সুখ দুঃখের কথা সারলেন!

—————
ভার্সিটি শেষ করেই বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো,আদাভান তার সাথে যাবে আভা,নোভা, নাদিম।
নিশি, রাদিফ নিজেদের বাড়ি তে যাবে এবার ছুট কাটাতে।

শ্বশুর বাড়িতে তৃধার আদর আপ্যায়ান যেনো বহু গুনে বাড়লো,সবাই যেনো তাকে চোখে হারাচ্ছে।জিদান তো খালামনি কে ছাড়তে নারাজ।খালামনির কলি’জার টুকরো বলে কথা।

মৃধা বোনকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানিয়েছে,আলিজা ও এসেছে স্বামী সন্তান নিয়ে,তার ও পুত্র সন্তান হয়েছে বয়স এক বছর পেরিয়ে কয়েক মাস।

তৃধা কে পেয়ে আলিজাও খুশি,এবার যেনো পরিবার টা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠেছে।

আমিনা বেগম একটু পর পর নানান পদের খাবার মুখে তুলে দিচ্ছেন তৃধার।

তৃধা তো বলেই যাচ্ছে–,,আম্মু খাওয়াতে খাওয়াতে মা’রবে নাকি তোমরা আমাকে?সব দর”দ শুধু নাতি -নাতনির জন্য আমাকে কেউই ভালোবাসে না!

ছেলেমানুষী কথায় সবাই হাসছে বার বার।
আদাভানের বাবা তো ছেলেকে কল করে সকালেই থ্রে”ট দিয়েছেন–,,মেয়েটার এমন অবস্থায় তুমি তাকে তাড়িয়ে দিতে পারলে?তোমাকে আমি তে”জ্য পুত্র করবো বলে রাখলাম!
আদাভান হতাশ খুবই হতাশ এমন বউ পেলে শত্রু’র অভাব হবে না আর।

নাদিম,নোভা,আভাও এসেছে আদাভানের সাথে, তৃধাকে দেখে তারা বাড়ি ফিরবে।

বাড়ি ঢুকতেই আদাভানের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকালো সবাই।আদাভানের চোখ জোড়া তার প্রজাপ্রতি কে খুঁজতে ব্যস্ত।

নাজিয়া,আলিজা,নেহাল দরজায় দাঁড়িয়ে আছে কিছুটা দূরে সোফায় বসে আছে তৃধা,শাড়ি পড়েছে অনেক দিন পর বউ টা কে কি মিষ্টি দেখাচ্ছে।

আদাভান ভেতরে যেতে চাইলো,ভাই বোনরা দিলো না তাদের সাথে এসে এবার যোগ দিয়েছে মৃধা,জোবান।

আদাভান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো–,,কি চাই?

জোবান বলে উঠলো–,,হাদিয়া!

আদাভান সরু চোখে তাকিয়ে বললো–,, কোন মহান কাজ সেরেছিস তোরা?

জোবান ভাব নিয়ে বললো–,,চাচ্চু হচ্ছি সে খুশিতে তুমি হাদিয়া দিবে, ফটাফট টাকা বের করো।
একে একে নাজিয়া,নেহাল বললো ” আমরা ফুপিমনি আর চাচ্চু হবো, মৃধা বলে উঠলো–,,আমি খালামনি প্লাস ছোট আম্মু!আমি হিসাব মতো ডাবল টাকা পাই।

আদাভান কথা শুনে চমকালো,কিছুটা সময় লাগলো তার বুঝতে,তারপর যখন বোধগম্য হলো সবাই কে পাশ কাটিয়ে এক ছুটে গিয়ে তৃধাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো!

জোবান মৃধা মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো তার মানে কি ভাইয়া জানতো না?

আদাভান তৃধার কপালে চুমু একে দিলো,সবাই ছেলের কান্ড দেখে হাসছে,আদাভান আরেক দফা তৃধা কে জড়িয়ে ধরে কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো–,, এই তৃধা সত্যি সত্যি আমি বাবা হচ্ছি?তুমি আমাকে বলোনি কেনো?

তৃধা লজ্জায় হাস”ফাস করে উঠলো,এই পাগ’ল লোক সবার সামনে কি করছে দেখো!

তৃধা আদাভানের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো–,, এভাবে যে চেপে ধরেছেন বাবু তো ব্যাথা পাবে!

আদাভান মুগ্ধ নয়নে তাকালো,তারপর একে একে সবার দিকে তাকালো সে,আনন্দে চোখ ঝাপ’সা হয়ে এসেছে তার।

আশরাফ মজুমদার এগিয়ে এসে ছেলের কাঁধে হাত রাখলেন,আদাভান খুশিতে বাবা কে জড়িয়ে বলে উঠলো–,,বাবা আমিও বাবা হচ্ছি!

এ যেনো এক সুন্দর পরিনয়,বাবাকে বুকে জড়িয়ে নিজে বাবা হওয়ার খবর দিতে ক জন পারে?ছেলে মেয়ের সংসার সুখ দেখে যাওয়া যেনো বাবা মায়ের আত্না’র শান্তি। তারা তো এটাই চান তাদের সন্তানরা যেনো থাকে দুধে ভাতে,সর্বদা সুখে!

আদাভান নিজেকে ঠিক করে তৃধার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো–,, বাবা তোমার বউ মা অন্যায় করেছে! আমার সন্তান আসার খবর সবার শেষে আমাকে জানিয়েছে,এবার শা’স্তির ব্যবস্থা করো!

জিদান বলে উঠলো–,,বড় আব্বু কিছুতেই আমার খালামনি কে কিচ্ছু করতে পারবে না তুমি,আমি থাকতে!

তৃধা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো–,,আমার বাবাটা,তুই শুধু আমাকে ভালোবাসিস বাকিরা কেউ ভালোবাসে না!

জিদান তৃধা কে আগলে দু হাত ছড়িয়ে দাড়ালো,ওর কান্ড দেখে বাকিরা হেসেই চলেছে।

তৃধা বলে উঠলো–,, আমার মেয়ে হবে,আর তাকে আমি আমার বাবাই কে দিয়ে দিবো!

আদাভান জ্ব”লে উঠে বললো-,-,এই মহিলা, ওইটা আমার মেয়ে, তুমি কাউকে দেওয়ার কে?

জিদান চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে বললো–,, ছোট্ট বাবু আসবে আবার খালামনি?কোথায় আছে এখন?আমি দেখবো!

তৃধা তাকে টেনে নিজের কোল ঘেঁষে বসিয়ে বললো–,,খালামনির পেটের ভিতর লুকিয়ে আছে কয়েকদিন পর আসবে!

জিদান খুশি তে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো–,, আম্মু আমার বোন আসবে!

মৃধা ছেলেকে আদর দিয়ে বললো–,হ্যাঁ বাবা বোনকে অনেক আদর করতে হবে কিন্তু।

জিদান মাথা দুলালো সে অনেক আদর করবে!

আদাভান তৃধার দিকে তাকিয়ে বললো–,,তোমার সাথে আমার কোনো কথা নাই!

তৃধা ও বলে উঠলো–,,আমার ও নাই!

আদাভান গাল ফুলিয়ে রেখেছে,গোলজার, গোলবাহারের ঘরে একসাথে পাঠালেন তৃধা আদাভান কে বড়রা।

গোলজার মজুমদার কিছুটা অসুস্থ তার পাশেই বেশি থাকেন গোলবাহার বেগম।

নাতি আর নাত বউকে দেখে প্রশন্ন চিত্তে হাসলেন তিনি।
খবর শুনেছেন ইতিমধ্যে, নাতি,নাতনিকে ডেকে দোয়া করলেন।খুশিতে তার চোখ চকচক করছে,বাড়ির ছোটরা সুখে আছে,এবার যেনো তিনি ম’রে ও শান্তিতে থাকবেন।

তাদের সাথে কথা বলে তৃধা কে এক প্রকার জোর করেই নিজের সাথে ঘরে নিয়ে গেলো আদাভান,রুমে নিয়ে দরজা আঁটকে দিলো।তৃধা মুখ বাঁকিয়ে রেখে।

আদাভান এসে আবার বউকে জড়িয়ে ধরে এলোপাতাড়ি চুমু দেওয়া শুরু করেছে,তৃধা দ’ম নিয়ে কুলাতে পারছে না,
সে কোনো রকমের বললো–,,এই অসহ্য লোক মারা’র ধান্দা করছেন নাকি,ছাড়ুন বলছি!

আদাভান তৃধাকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো–,, জান জান,আমি কতোটা খুশি বলে বুঝাতে পারবো না।আমি সুখে ম’রে না যাই আবার!

তৃধা রাগ দেখিয়ে বললো–,, উল্টোপাল্টা কথা বলবেন না বলে দিচ্ছি।

–,,আমাকে জানাও নি কেনো বউ?একা একা নিজের কতো অযত্ন করেছো তুমি?আমি ভীষণ রাগ করেছি!

–,,দেখছিই তো রাগের নমুনা!যত্ন তো সব এখন ওই বাবুর জন্য, আমার ভালোবাসা যদি কম হয় না মে’রে হাত পা ভেঙ্গে দিবো, চুল আস্ত রাখবো না একটাও!

আদাভান তৃধার কপালে চুমু একে দিলো,গালে, গলায়,শেষে ঠোঁটে দীর্ঘ একটা চুমু খেয়ে বললো–,,তোমাকে ভালোবাসতে আমার বয়েই গেছে,সব তো দিবো বাবুকে, তাই না সোনা?তাড়াতাড়ি চলে আসো তো বাবার কাছে!

তৃধা মন খারাপ করে দূরে সরে গেলো,চুপচাপ বসে রইলো শুধু,কিছু সময়ের ব্যবধানে ফোঁপানোর শব্দ শুনতে পেলো আদাভান,তৃধা বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজে দিয়ে কাঁদছে।

আদাভান এগিয়ে গিয়ে তাকে টেনে তুললো,চোখ মুছে দিয়ে বললো–,,বোকা বউ আমার,আমার হৃদয়ের সাধ্য নেই তোমার থেকে বেশি কাউকে ভালোবাসার।সবার উর্ধে তুমি জানপাখি,তার পরে আমাদের সন্তান। বুঝেছেন!
আরেক দিন যদি কান্না করতে দেখেছি তো বুঝাবো মজা।

তৃধা আদাভান কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,আমরা বাবা মা হয়ে যাচ্ছি আদাভান!বাবুর ছোট ছোট হাত পা কি কিউট হবে দেখতে।

আদাভান স্ত্রী কে আরো কিছুটা আদর মিশিয়ে ধরলো নিজের সাথে,পর পর বলে উঠলো–,,আমাকে এতো বড় সুখের ভাগিদার বানানোর জন্য ধন্যবাদ মিসেস তৃধা তালুকদার, আমার ঝা’ল মরিচ,মিষ্টি চমচম!আমার টক, ঝা’ল মিষ্টি বউ,ভালোবাসি তো আপনাকে অনেক অনেক বেশি!

–,,আমিও আপনাকে ভালোবাসি মহাশয়!
——————
নোভা,আভা কে বাড়ি পৌঁছে দিতে এসেছে নাদিম,ধরনীতে রাত নেমেছে তখন ঘড়িতে সময় রাত আটটা।

নোভা,আভা কিছুটা টেনশনে আছে,যেভাবে তাদের মা ফোন দিয়ে বাড়ি আসতে বলেছ না জানি কি হয়!

নাদিম তাদের গেইট অব্দি এগিয়ে দিয়ে আসলো, পথেই দেখা হলো নোভার ফুফার সাথে, নোভা, আভা ভ্রু কুঁচকালো এরা এখানে কেনো এসেছে?

তাদের চিন্তার মাঝেই নোভার ফুফা জালাল বলে উঠলো–,,ছেলেটা কে?বাড়ি বয়ে নিয়ে এসেছো কেনো?

আভা বিরক্ত হলো,নোভা বলে উঠলো–,, বন্ধু, রাত হওয়ায় পৌঁছে দিতে এসেছে।

বলেই তারা হনহনিয়ে ভিতরে চলে গেলো,জালাল তাতে রেগে গিয়ে নাদিমের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন।

চলবে…

#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#শেষ_পর্ব(শেষাংশ)
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
একের পর এক কল করেই যাচ্ছে তৃধা নাদিমের মোবাইলে,মরা”র ঘুম দিয়েছি নাকি বেয়া’দবটা?

তৃধা হতাশ হয়ে ফোন করলো স্নিগ্ধাকে,রাত বাজে এগারোটা। ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো স্নিগ্ধা,আদিব বারান্দায় বসে ফোন চালাচ্ছে।

স্নিগ্ধাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো–,,এতো রাতে তোকে কে ফোন দিচ্ছে?

স্নিগ্ধা মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো তৃধা ফোন করেছে।
স্নিগ্ধা রিসিভ করেই জবাব দিলো–,,তৃধা আপাই।

তৃধা চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠলো–,,স্নিগ্ধা নাদিম কি ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি রে?কখন থেকে ফোন দিচ্ছি রিসিভই করছে না!

–,,হতে পারে, আপুদের দিয়ে এসেই তো রুমে গেলো পরে আর বের হয়নি!

ততক্ষণে আদিব বারান্দা ছেড়ে এসে দাঁড়িয়েছে স্নিগ্ধার পাশে,ভ্রু বাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করলো–,,কোনো সমস্যা?

তৃধা বলে উঠলো–,,একটু কষ্ট করে ওর কাছে ফোন টা নিয়ে যাবি সোনা?একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে হবে এখনই!

স্নিগ্ধা রুম থেকে বের হতে হতে বললো–,,আচ্ছা যাচ্ছি আমি একটু অপেক্ষা করো।

আদিব স্নিগ্ধার পেছনে গেলো,স্নিগ্ধা নাদিমের রুমের সামনে এসে দরজা ধাক্কা দিতে থাকলো,সাথে তাল মিলিয়ে ডাকলো–,,ভাইয়া তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছো?তৃধা আপু তোমার সাথে কথা বলতে চাইছে,দরজা টা খোলো একটু!

আদিব স্নিগ্ধার হাত থেকে ফোন নিয়ে কানে ধরে তৃধা কে জিজ্ঞেস করলো–,, কি হয়েছে রে তৃধু?

তৃধা বিচলিত কন্ঠে বললো–,,আর বলো না ভাইয়া,নোভা, আভার ফুপ্পিরা নোভার জন্য বিয়ের প্রস্তাব এনেছে,কালই নাকি পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে সাথে আংটি পড়িয়ে যাবেন,আংকেলের ও নাকি ছেলে পছন্দ! এই গা”ধা টাকে কখন থেকে ফোন দিচ্ছে রিসিভই করছে না।

আদিব শান্ত কন্ঠে বললো–,, তুই চিন্তা করিস না তো,একদম স্ট্রে”স নিবি না স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয় বাবুর ক্ষ’তি হতে পারে,আমি দেখছি বিষয়টা,যা ঘুমিয়ে পড়!

তৃধা ফোন কাট’লো,নাদিম ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে দরজা খোলে বেরিয়ে স্নিগ্ধা আর আদিব কে দেখে হাই তুলে চোখ কচলে বললো–,,কি হয়েছে ভাইয়া, তোমরা এখানে কি করছো?

আদিব দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,, তোকে নোভার বিয়েতে দাওয়াত করতে এসেছি!মোবাইল চালাস কোন দুঃখে?

নাদিমের ঘুম যেনো এক ঝট”কায় উবে গেছে,চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো–,, কিহ্! কি বলছো এসব নোভার বিয়ে মানে?

আদিব বিরক্ত হয়ে বললো–,, মানুষজন যে তোকে ফোন দিয়ে দিয়ে হতাশ হয়ে গেছে তা কি তুই শুনতে পাসনি?কেমন ঘুম ঘুমাচ্ছিলি শুনি?নোভা তোকে সামনে পেলে খু”ন করবে দেখিস!

নাদিম দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমে গেলো মোবাইল হাতে নিয়ে হা হয়ে গেলো ঊনত্রিশ টা মিসড কল শুধু নোভাই করেছে বাকি আরো পনেরো টা তৃধার নম্বর থেকে এসেছে, সিরিয়াস কিছু ঘটেছে বেশ বুঝতে পারলো।

নাদিম নোভাকে ফোন বেক করতেই,আভা রিসিভ করে রেগে বললো–,,এ ভাই তুই কি মানুষ!

নাদিম ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে উঠলো–,,আভা নোভা কই?ওর কাছে মোবাইল দে।

আভা বিরক্তি নিয়ে বললো–,, বাবার রুমে গেছে,কাল নোভা কে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে ছেলে ইন্জিনিয়ার, শুনেছি বাবার ও পছন্দ হয়েছে ছেলেকে!এবার তুই ভাব তুই কি করবি।

নাদিম বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো কি বলা উচিত এই মুহুর্তে বুঝে উঠতে পারলো না ঠিক।

আদিব ভাইয়ের অবস্থা বুঝে তার কাঁধে হাত রাখলো, নাদিম ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ।

নাদিম কে আস্বস্ত করে আদিব বললো–,, চিন্তা করিস না,কাল আমরাও যাবো মেয়ে দেখতে,একেবারে নোভাকে তোর করেই ফিরবো,আমি বাবার সাথে কথা বলছি যা গিয়ে শুয়ে পড়!

স্নিগ্ধা চুপচাপ সব টা দেখলো শুধু সত্যি পরিস্থিতিটা অনেক কঠিন, সে নাদিমের কষ্টটা বুঝতে পারছে তার আর আদিবের বিয়ের সময় ও তো মেজো চাচ্চু ঝা”মেলা করেছিলো,এখন তো আবার নোভা আপুর পরিবারও আছে দুই পরিবার কে মানানো টা মোটেও সহজ কাজ হবে না!তপ্ত শ্বাস ছেড়ে ভাইকে কোনো রকম বিদেয় দিলো স্নিগ্ধা।হৃদয়টা ভার হয়ে আসলো হঠাৎ, দোয়া করলো যাতে সব ঠিক হয়ে যায়।

আদিব ঢুকলো বাবা মায়ের ঘরে, সফিক তালুকদার আধ শোয়া হয়ে বই পড়ছেন,ফাহিমা বেগম রাতে ছেলেকে দেখে চিন্তিত হলেন কিছুটা।
আদিব গিয়ে বাবার পায়ের কাছে খাটে বসলো,সফিক তালুকদার ছেলের প্রতি সন্তুষ্ট, ছেলের সিদ্ধান্ত কে মেনে নিতে দ্বিধা করেন না এখন,চশমা খুলে বসে জিজ্ঞেস করলেন–,,কিছু বলবি বাবা?

আদিব অতি নরম কন্ঠে বললো–,, তোমার ছোট ছেলেকে নিয়ে কিছু বলার ছিলো!

ফাহিমা বেগম যেনো কিছুটা আচ করতে পারলেন।সফিক তালুকদার বললেন–,নাদিমের তো পড়াশোনা ভালোই আগাচ্ছে,ভালো সিজিপিএ নিয়ে পাশ করবে বলে আমরা সবাই আশাবাদী!চাকরি করলে করবে নয়তো আমাদের ব্যবসা তো তোমাদের তিন ভাইকেই সামলাতে হবে তাছাড়াও আবির এখনো ছোট,বড় ভাইয়ের ও বয়স হচ্ছে তিনি চাচ্ছিলেন তোমাদের সাথে কথা বলতে!

আদিব নড়েচড়ে বসলো–,,অন্য বিষয় বাবা!

সফিক তালুকদার গম্ভীর হলেন এবার,আদিব বলে উঠলো–,,নোভাকে তো চিনো?মেয়ে হিসেবে তোমাদের পছন্দ তো ওকে?

সফিক তালুকদার স্ত্রীর পানে তাকালেন,ফাহিমা বেগম আগেই তাকে বলে রেখেছেন ছোট ছেলে নোভা কে পছন্দ করে, যাতে পরবর্তীতে বাবা মা সহজে মানতে পারেন তার জন্য সে আগে ভাগেই মাকে জানিয়েছে মনের কথা।উনার ও অমত নেই মেয়েটা ভালো যোগ্য জীবনসঙ্গী হবে ছেলের কিন্তু হঠাৎ? পড়াশোনা টা অন্তত শেষ হোক ওদের!

তিনি বলে উঠলেন–,,নোভা ভালো মেয়ে অপছন্দ করার মতো কোনো কারন নেই,কোনো সমস্যা? এভাবে বলছো যে!

আদিব ভনিতা ছাড়াই বললো–,,বাবা আসলে নোভার বিয়ে দিতে চাইছেন আংকেল পাত্র ও নাকি দেখেছে, এখন তোমার ছেলেও তো নোভা কে পছন্দ করে!আমি চাইছিলাম আমরা গিয়ে আংকেলের সাথে কথা বলি উনি ভদ্রলোক নিশ্চয়ই বুঝবেন,মেয়ের মতামতের বিরুদ্ধে যাবেন না,ওদের বিয়েটা পাকাপাকি করে ফেললে হয় না?পরীক্ষার পর না হয় বিয়েটা হলো!

আদিব ভেবেই নিয়েছে বাবা এখনই বিরোধিতা করে বসবেন,যা করেছিলো না তার সময় এখনও ভুলেনি আদিব।

সফিক তালুকদার হেসে জবাব দিলো–,,কয়টার দিকে যেতে চাচ্ছো?কে কে যাবে বলে ঠিক করেছো?ছেলে বড় হয়েছে বিয়ে দিলে মন্দ হয় না!

আদিব অবাক হলেও সাথে খুশিও হয়েছে যাক কাহিনি করতে হয়নি,এবার নোভার বাবাকে রাজি করাতে পারলেই হলো!

–,,দুপুরের পর পরই যাবো,তুমি আমি নাদিম আর দুই বোনের জামাইকে খবর দিবো!

আদিব বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে,স্নিগ্ধা ঘরেই পায়চারি করছিলো,আদিব আসতেই আগে জিজ্ঞেস করলো–,, আব্বু রাজি হয়েছে?

আদিব মুখে হাসি ঝুলিয়ে স্নিগ্ধা বুকে টেনে নিলো,কপালে চুমু একে দিয়ে বললো–,, হুম! কাল যাচ্ছি আমরা দেখি ও বাড়িতে আবার কি অপেক্ষা করছে।

স্নিগ্ধা মুখ ছোট করে বললো–,, সব ঠিক হয়ে গেলেই হলো।

আদিব স্নিগ্ধার গালে হাত রেখে বললো–,, ঠিক হয়ে যাবে তো বোকা, অযথা চিন্তা করে মন খারা”প করার স্বভাব টা এখনো যায়নি তাই তো?

স্নিগ্ধা আদিবের থেকে দূরে সরে গাল ফুলিয়ে বললো–,, আমি অযথা চিন্তা করি?আপনার সাথে আর কথাই বলবো না!

আদিব স্নিগ্ধা কে টেনে নিয়ে বসালো খাটে লাইট অফ করে বুকের সাথে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়,স্নিগ্ধার কানে কানে ফিসফিস করে বললো–,,কথা বলতে হবে না,আদর উপভোগ কর!

স্নিগ্ধা লজ্জায় গুটিয়ে নিলো নিজেকে,তিনটা বছর তারা একসাথে থাকছে,এতোদিন পরও বউয়ের লজ্জা কমার নাম নেই,আদিব মুচকি হাসে মেয়েটার অবস্থা দেখে,
স্নিগ্ধার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বরাবরের মতোই আজও জিজ্ঞেস করলো–,, পাল্টে যাবি না তো কখনো স্নিগ্ধা?আমার ছোট্ট আদুরে বউ হয়ে থাকবি তো সব সময়?আমার ছোঁয়ায় সিক্ত হয়ে আমার বুকেই মুখ লুকিয়ে আজীবন থেকে যাবি তো?ছেড়ে যাবি না তো!

স্নিগ্ধা আদিবের গলা জড়িয়ে কাঙ্ক্ষিত উত্তর টি দেয় সবসময়ের মতো—,,আমি তো আপনারই,সব সময় আপনাতেই বিভোর থাকতে চাই আদিব,শুধু আপনারই থাকতে চাই!

আদিব গভীর চুমু আঁকলো বউয়ের কপালে,তারপর ধীরে ধীরে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে নিলো তাকে,একে অন্যের সাথে আজীবন থাকার এক নিরব চুক্তিতে স্বাক্ষর করলো তারা খুব যতনে!
————
তৃধার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আদাভান,তৃধা আদাভানের পিঠ জড়িয়ে বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে।

আদাভান শান্ত আদুরে কন্ঠে বললো–,, ঘুমাও জান,রাত জাগতে নেই এতো,কাল আমরা যাবো তো দেখবে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে!

তৃধা বন্ধন আর একটু দৃঢ় করে বললো–,, নাদিম নোভাকে অনেক ভালোবাসে।

আদাভান মুচকি হেসে বললো–,, আমিও তো আমার বউ কে অসম্ভব বেশি ভালোবাসি!কিন্তু সে যদি আমার কথা এবার না শুনে তো তাকে মা”ইর ও দিতে পারি।ঘুম আর কোনো কথা যেনো মুখ থেকে বের না হয়!

তৃধা একটা ভেংচি কে’টে চোখ বন্ধ করলো,কিছু সময়ের ব্যবধানেই আদাভান বুঝলো বউ তার ঘুমিয়ে পানি হয়ে গেছে,সে আলতো হেসে লাইট বন্ধ করে নিজেও চোখ বন্ধ করলো।আল্লাহর কাছে মনে মনে শুকরিয়া জানালো তার জীবনে এতোটা সুখ দেওয়ার জন্য, তাকে মনের মতো জীবনসঙ্গী দেওয়ার জন্য, দোয়া করলো তাদের অনাগত সন্তানের জন্য। তার জীবনকে রঙিন করার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো।
সৃষ্টিকর্তা তার জীবন কে পরিপূর্ণ সুখ দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছেন,সে ইহকালেই জা’ন্নাতি সুখ অনুভব করে বার বার,পরক্ষণেই আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠে–,,আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন!
যদি তার জীবনে অতীত টুকু না থাকতো,খারা’প অভিজ্ঞতা না হতো তবে হয়তো ভালোর মূল্য দিতে জানতো না সে,খারা”প ভুলের পার্থক্য করতে পারতো না।তার জীবন থেকে খারাপ গুলো কে সরিয়ে নিয়ে সব ভালো কিছুই দান করা হয়েছে তাকে!ভাগ্যবা’ন বলে মনে হয় নিজেকে আদাভানের,কি চমৎকার জীবনসঙ্গী পেয়েছে সে,মেয়েটা তাকে পা”গলের মতো ভালোবাসে, তাকে নিয়েই তার কতো শতো পাগ’লামো,আনমনেই এসব ভেবে ভেবে হাসে আদাভান,পরবর্তী দিন গুলোও এভাবেই হেসে খেলে কাটিয়ে দিতে চায় তার প্রজাপ্রতির সাথে!
————
দুপুর গড়াতেই নোভা আভার চিন্তা বাড়লো, নাদিম রা আসছে না কেনো এখনো?

দুপুর দুটো পেরিয়েছে কিছুক্ষণ হলো আভা ভেবে চিন্তে বললো–,,নোভা চিন্তা করছিস কেনো?আমরা দুজন তো দেখতে একই রকম কেউ বুঝবে না পাত্রের সামনে আমি যাবো দরকার পড়লে বিয়েটাও আমি করবো,এমনিতেও আমার বিশেষ কোনো পছন্দ নেই,একদিন তো বিয়ে করতেই হতো,আগে হোক বা পরে,বেশি ভাবিস না!

নোভা বোনের দিকে তাকালো সিক্ত চোখে, চোখ জোড়া ছলছল করে উঠেছে তার,বোনকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো সে।
আভা বোনে কে জড়িয়ে সান্ত্বনা দিতে ব্যস্ত হলো
–,,কাঁদিস না তো নোভা,ফুপ্পিরা শুনতে পেলে ঝা’মেলা বাঁধাবে তুই আমাকে তৈরি করে দে,শা”লা কুমড়ো মুখো বর টাকে আমিও একটু দেখে আসি,এসেছে আমার বোন কে বিয়ে করতে!

নোভা বলে উঠলো–,,আমার ভয় হচ্ছে আভা!

আভা নোভাকে বিরক্তি নিয়ে বললো–,, সব সময় সব দিক সামলে নিস তুই আর আজ কিনা ভয় পাচ্ছিস?বাবা কে সব বলতে বলেছিলাম বলেছিস?বাবা আমাদের বুঝেন, অমতে কিছু করবেন না বিশ্বাস রাখ।যে যাই বলুক বাবা কখনো তার মেয়েকে ভালোবাসার মানুষের থেকে দূরে সরাতে চাইবেন না!
নোভা চোখ মুছে জবাব দিলো–,, বাবা শুধু শুনলো, কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি আমার রাত থেকে চিন্তায় মাথা ফে’টে যাচ্ছে!

নিচ থেকে আভার ফুপি এসে বলে গেলো -‘ দ্রুত তৈরি হয়ে আয় নোভা ছেলেরা এসে পড়েছে।

নোভার বুকে ধ’ক করে উঠলো যেনো,আভা শাড়ি এগিয়ে দিয়ে বললো–,,পড়িয়ে দে নোভা দ্রুত কর।
নোভা মন খারাপ করে বললো–,, বাবা জানতে পারলে কষ্ট পাবেন!

আভা চোখ রাঙিয়ে বললো–,, পড়া তুই পরে আমি বুঝে নিবো!

নোভা বোনকে রেডি করে, মুগ্ধ চোখে তাকালো দুজন একই রকম তবুও তাদের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে চেহারা দেখে চেনার উপায় না থাকলে,আচরণে বিস্তর ফারাক তাদের।

আভাকে নিয়ে যাওয়া হলো নিজে,পাত্র কে দেখে আভা ভ্রু কুঁচকে তাকালো না সুন্দর আছে!

আভার উপস্থিতি টের পেয়েই চোখ তুলে তাকালো যুবকটি,তার চোখে মুখে খেলা করছে মুগ্ধকর হাসি।আভা চোখ নামিয়ে মেঝেতে রাখলো,তাকে পাত্রের মা,বোন, দাদী খুঁটিয়ে দেখলো প্রশংসা করতেও ভুললেন না।

এরই মধ্যে বসার ঘরে উপস্থিত হলো নাদিম,আদিব, আদাভান,সফিক তালুকদার!তৃধা ও এসেছে পাত্রীর আসনে বসে থাকা নোভার দিকে তাকালো সে, হঠাৎ কিছু একটা মস্তিষ্কে ধাক্কা দিলো, এটা নিশ্চিত আভা তার মানে নোভা ঘরে নেই তো?নিজের ভাবনা কে সত্যি প্রমান করতে আদাভান কে চুপিসারে বলে সে প্রস্থান করলো।

নোভার ঘরে ঢুকলো সে দ্রুত,নোভা তৃধা কে দেখেই জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো, তৃধা নোভাকে জড়িয়ে রেখেই বললো–,,কাঁদিস না মেজো আব্বুও এসেছে সাথে তোর বাবা কে বুঝাবেন তিনি, শান্ত হ এবার!

ম্যাচিউর মেয়েটাও কেঁদে কেঁদে হয়রান হয়ে গেছে বাচ্চাদের মতো,ভালোবাসার মানুষ কে হারানোর ভয়ে মেয়েটার মুখ শুকিয়ে একটু খানি হয়ে গেছে।তৃধা বলে কয়ে শান্ত করলো তাকে।
***—
আদিব নোভার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো–,, আংকেল আমাদের কিছু কথা ছিলো,যদি অনুমতি দেন তো বলতাম!

রাশেদ হক গম্ভীর কন্ঠে বললেন-,, বলো!

আদাভান এগিয়ে এসে নোভার দিকে তাকিয়ে বললো–,,আমরা আপনার মেয়েকে আমার শালার বউ করে নিতে চাই!

এরই মধ্যে পাত্রের আসনে বসে থাকা পাত্র আলভি বলে উঠলো–,,আংকেল আপনার মেয়ে আভাকে শুধু আমি বিয়ে করবো,তাকে আমার আগে থেকেই পছন্দ! এভাবে বলাতে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কিন্তু কিছু করার নেই আভাকে আমি পছন্দ করি তাকে আমিই বিয়ে করবো,উনাদের কে চলে যেতে বলুন!

নাদিম,আদিব দুজনই মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো,নোভার বিয়ে না?তখন যে বললো!

রাশেদ হক গম্ভীর থাকতে পারলেন না আর মুচকি হাসলেন তিনি।

রফিক তালুকদারের দিকে তাকিয়ে বললেন–,,ভাইজান এসে বসুন, বসে কথা বলি আমরা!

আলভি বিরক্ত হলেও চুপ থাকলো,আভা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সামনে থাকা ব্যক্তির দিকে নোভার জায়গায় ওর নাম নিলো কেনো এই ব্যাটা?কাহিনি কি আগে থেকে পছন্দ করে মানে!

রাশেদ হক আলভির দিকে তাকিয়ে বললো–,,আভার সাথে তো তোমার বিয়ে হবে আলভি তুমি নিশ্চিন্ত থাকো, কথা যখন দিয়েছি মেয়ের মত থাকলে বিয়ে তোমার সাথেই হবে!নাদিম তো আমার বড় মেয়ে নোভা কে পছন্দ করে,ভালোই হলো একই দিনে দুই মেয়ের বিয়ের বিষয় টা পাকা পোক্ত করা যাবে!

এখনো বোকার মতো সব দেখে যাচ্ছে নাদিম,হচ্ছে টা কি?

রাশেদ হক ভেতরে খবর পাঠালেন নোভা কে নিয়ে আসার জন্য, তৃধা নোভাকে সাথে নিয়ে বসার ঘরে হাজির হলো,নোভা নাদিমের চোখাচোখি হলো,নোভার কান্না ভেজা চোখ জোড়া ভীষণ ভাবে পী’ড়া দিলো নাদিম কে,মেয়েটা তার জন্য কাঁদছে? চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিলো সে,নোভার মন চাইলো এখনই গিয়ে সব বাঁধা পেরিয়ে নাদিম কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে।অনেক ইচ্ছে কিছু সময় দমিয়ে রাখতে হয় মানুষের তেমনই আজও অনুভূতি কিছুটা চেপে রাখলো দুই মানব মানবি!

রাশেদ হক মেয়েকে ডাকলেন,নোভা ওড়নার পাশ চেপে ধরে বাবার সামনে দাঁড়ালো, আলভি চোখ বড় বড় করে তাকালো দুজন দেখতে একই রকম!

আভা বেশ মজা পেলো আলভির অবস্থা দেখে,ছেলেটা খারাপ না সবার সামনে তাকে বিয়ে করতে চেয়েছে, মনে হয় ব্যক্তিত্বের দিক থেকেও সুন্দর হবে এই ছেলে, একটা চান্স দিলে মন্দ হয় না!
নোভা কে দেখিয়ে রাশেদ হক সব পরিষ্কার করে বললেন!

নাদিম,আলভি পাশাপাশি বসেছে।তাদের মুখোমুখি সোফায় নোভা,আভা।
তৃধা স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে আদাভানের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো, আদাভান তৃধার কপালের ঘাম মুছে দিয়ে বললো–,,বেশি খারা”প লাগছে?পানি খাবে?আসতে মানা করেছিলাম তাও জোর করে আসলে, কি গরম পড়েছে দেখেছো!

তৃধা মৃদু হেসে বললো–,, তেমন কিছু না,ঠিক আছি আংটি পড়ানো শেষ হলেই বাসায় ফিরবো আমরা!

আদাভান আর ঘাটলো না বউকে,হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো পাশে।

সফিক তালুকদারের সাথে রাশেদ হক কথা বার্তা সারলেন,আলভির পরিবারের সাথেও পরিচয় হলো তাদের।
রাশেদ হক মেয়েদের সিদ্ধান্ত জানতে চাইলেন সবার সামনেই, মেয়েদের তিনি ওভাবেই বড় করেছেন সব জায়গায় সত্যি কথা বলার মতো সৎ সাহস, কোনো কিছুই আজ অব্দি মেয়েদের উপর চাপিয়ে দেননি তিনি, বিয়ে বিষয় টাতে তো আরো আগেই জোরজব”রদস্তি খাটে না।

নোভা,আভার মা,ফুপি,চাচীরা এসে দাড়ালেন এবার পাশে,প্রথমেই আভা কে জিজ্ঞেস করলো–,, ছেলে পছন্দ হয়েছে তোমার মা?

আলভি চিন্তিত ভঙ্গিতে তাকালো মেয়েটা আবার না করে দিবে না তো?

নোভা আভার দিকে তাকালো,আভা কি বলবে তা সে নিজেও জানে না,পাত্রপক্ষ কি ভেবেছেন কিছুই জানা হয়নি এ অব্দি!

আভা মৃদু কন্ঠে বললো–,, আমার কোনো অমত নেই বাবা,আমি বিয়েতে রাজি!

নাদিম এখন কেউ না থাকলে একটা চা’টি মে’রে জিজ্ঞেস করতো–,,শা”লি তোর মনে এই ছিলো?বিয়ে করবি না করবি না করে একজন ছেলে দেখতে আসলো আর তাকেই হ্যাঁ বলে দিলি?বাহ্ বইন বাহ্!

কিন্তু সে এই মুহুর্তে নোভার জামাই হিসেবে অবস্থান করছে এসব বলা বেমানান হবে,আভার সিদ্ধান্তে আলভির ঠোঁটে হাসি ফুটলো,ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো ছেলেটা আভার একবার তাকিয়ে দেখলো সে হাসি পরেই চোখ নামিয়ে নিলো সে।

নোভা তো এমনিতেই রাজি বাবাকে আগেই জানিয়েছে সে,তারপরও জানতে চাওয়ায় লজ্জা মিশ্রত কন্ঠে বললো–,, আমারও অসুবিধে নেই বাবা,আমি রাজি!

তৃধা দুই বান্ধবীর খুশি দেখে হাসলো,যাক অবশেষে পূর্ণতা পাচ্ছে দুই বি’চ্ছুর ভালোবাসা।

আংটি পড়ানো হলো পর পর।সবাই মিষ্টি মুখ করলো খুশিতে,স্নিগ্ধাকে সব জানিয়েছে তৃধা, খুশিতে মেয়েটা আত্মহারা হয়ে পড়েছিলো একেবারে।
——-
ছাদের দুইদিকে দুই জোড়া কপোত-কপোতী, যাদের মনে উড়ছে রঙিন প্রজাপ্রতি,সুখেরা দখিনা বাতাসের সাথে সাথে দোলা দিয়ে যাচ্ছে তাদের মনে।

আভা চুপচাপ জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,আলভি হেসে বললো–,, যাক জমজ হলেও তোমাকে ঠিকঠাক চিনতে পেরেছি আমি এতেই খুশি!

আভা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো–,,আপনি আমাকে চিনতেন?

আলভি হেসে বললো–,, হুম, একদিন অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিলাম তখন তোমাকে দেখেছি, তুমি কারো সাথে ঝগ’ড়া করছিলে নিজের নামও বলেছিলে অপর ব্যক্তিকে। ইন্টারেস্টিং না ঝ’গড়া করতে থাকা একটা মেয়ের সরল মুখের মায়ায় আঁটকে গেলাম আমি!তারপর তাকে পেতে এতোদূর আশা অবশেষে তাকে পেয়ে ও গেলাম।

আভা চুল কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বিরবির করলো–,,ঝগ’ড়া করার সময় তো তাকে নাকি ডাকা’তের মতো লাগে বন্ধুরা সব সময় বলে তাকে,তাহলে এই লোক মায়া খুঁজে পেলো কোথায়?

আলভি আভার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো–,, তুমি রাজি হয়েছো কেনো?

আভা অকপটে বলে উঠলো–,,আপনাকে পছন্দ হয়েছে তাই!প্রথমে ভেবেছিলাম শুধু চেহারাই সুন্দর এখন মনে হচ্ছে আপনি মানুষ টাও ভীষণ সুন্দর হবেন,তাই একটা চান্স দিলাম বিয়ে হতে এখনো অনেক দেরি, বলা তো যায় না বিয়ের আগের দিনও মত বদলে ফেলতে পারি!

আলভি আচমকা আভার হাত চেপে ধরে বললো–,, চলো!

আভা অবাক চোখে তাকিয়ে থেকে বললো–,,কোথায়?

–,,এখনই বিয়ে করবো,রি”ক্স নিতে পারবো না আমি!

আভা হো হো করে হেসে ফেললো এবার,আলভি শীতল চোখে তাকালো, আভা আলভির ধরে রাখা হাতের উপর হাত রেখে বললো–,, মত বদল করবো না,কথা দিচ্ছি আপনাকেই বিয়ে করবো!এবার খুশি?

আলভি খুশিতে দু হাত ছড়িয়ে যেই না আভা কে জড়িয়ে ধরতে যাবে, আভা চোখ রাঙিয়ে বললো–,, এই যে মিস্টার বিয়ে করার আগে নো ছোঁয়াছুঁয়ি,খবরদার!

আলভি আভার চোখে চোখ রেখে বললো–,, যথাআজ্ঞা মেডাম!

আভা লাজুক ভঙ্গিতে হেসে উঠলো, মাথা নিচু করে অন্য দিকে ঘুরলো,আলভি বুকে দু হাত গুঁজে তাকিয়ে রইলো নিজের হবু স্ত্রীর দিকে!
__
নোভাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে নাদিম পাঁচ মিনিট হতে চললো ছাড়ার নাম নেই,নোভা এবার বলে উঠলো–,,ছাড় বেয়া’দব!

নাদিম নোভাকে ছেড়ে আবার আরেক দফা জড়িয়ে ধরে বললো–,, সত্যি সত্যি তুই আমার হয়ে গেছিস নোভা?

নোভা হাসলো পাগ’ল হয়ে গেছে ছেলেটা,রাতের বেলা মোবাইল কান থেকে নামাতে পারেনি নোভা পাগ’লামি করতে করতে ছেলেটা অতিষ্ঠ করে তুলেছিলো ওকে,কি সব কথা বার্তা যদি তুই পাত্র পক্ষের সামনেও গিয়েছিস না, আমি নিজেকে শেষ করে দিবো বলে দিলাম,এতো বড় হয়ে গেছে তবুও বাচ্চাদের মতো কথাবার্তা বলা বন্ধ হয় না এর।

নোভা নাদিম কে ছাড়িয়ে সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো, গালে হাত রেখে বললো–,,হয়েছে তোর?রাত থেকে উল্টো পাল্টা বক’ছিস তুই দিবো একটা কানের গোড়া”য় এখন?যা বাড়ি যা এবার!

নাদিম চোখ ছোট ছোট করে বললো–,, হবু শ্বশুর বাড়ি আমার তুই তাড়িয়ে দেওয়ার কে?

নোভা নাদিম কে রেখে হাঁটা ধরলো, নাদিম নোভার হাত ধরে টেনে সামনে দাঁড় করালো কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বললো–,,এবার যেতে পারিস,তবে কান্না করার পর তোকে পুরো পে’ত্নীর মতো লাগছে!

নোভা তেড়ে গিয়ে বললো-‘তবে রে আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন,নাদিম আগে আগে দৌড়াচ্ছে আর নোভা পিছে পিছে,ছাদময় ওদের হাসির কলতানে মুখোরিত হলো, চারপাশে ঝংকা’র তুললো তাদের সুখময় পূর্ণতার হাসি!
——————
সাত মাসের উঁচু পেট নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে তৃধা,আদাভান বউয়ের যত্নে কোনো কমতি রাখেনি,রাজিয়া বেগম, আমিনা বেগম প্রায় এসেই থেকে যান মেয়ের সাথে, বাকিরা ও আসে সময় করে।প্রেগনেন্সির সময়টা বেশ ভালোই কাটছে তার,আদাভানের ভালোবাসায় মেয়েটা বার বার বিমোহিত হয়ে তাকিয়ে রয়,একটা মানুষের চোখে মুখে কোনো বিরক্তির ছাপ নেই,ক্লান্তি নেই সারাটা দিন, রাত তৃধার খেয়াল রাখতে ব্যস্ত সে,কয়েকদিনেই নিজের যত্ন নিতে ভুলে গেছে একেবারে,তৃধা রাগ দেখিয়েছে বিধায় এখন একটু নিজের দিকে খেয়াল করে সে।প্রেগনেন্সির শেষ একমাস চলছে তার ডক্টরের বেঁধে দেওয়া সময় বাকি আরো দু সপ্তাহ!

আদাভান আজ বাসায়ই আছে,নাদিম,নোভা,আদিব,স্নিগ্ধা এসেছে তাকে দেখতে,সময়টা প্রায় বিকেল গোধূলি সন্ধ্যার দেখা মিলবে হয়তো আজ,তৃধার হঠাৎই খারা’প লাগা শুরু হলো পেটে হাত রেখে চিৎকার করে উঠলো হঠাৎ, আদাভান রান্না ঘরে বউয়ের জন্য সরবত বানাতে গিয়েছিলো চিৎকার শুনে তার কলি’জা শুকিয়ে গেছে।সব ফেলে দৌড়ে এসে থামলো তার সামনে, ব্যতিব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো–,, কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমাকে বলো?বেশি কষ্ট হচ্ছে পাখি?আদিব এম্বু’লেন্স খবর দে হসপিটালে যেতে হবে!

তৃধা আদাভানের কাঁধ চেপে ধরে ব্যাথা সহ্য করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে,রাজিয়া বেগম, আমিনা বেগম গতকালই বাড়ি গিয়েছে শুধু দুইদিন পরই ফিরতেন তারা এরই মধ্যে এমন কিছু হবে জানলে হয়তো কিছুতেই যেতেন না।

তৃধার বাঁধ ভাঙ্গা কান্নার রেশ ছিন্নবি”চ্ছিন্ন করে দিচ্ছে আদাভানের অন্ত’র, বউয়ের ব্যাথা যেনো অদৃশ্য ভাবে সে অনুভব করতে পারছে,বুকে জড়িয়ে ধরে রেখে পুরো রাস্তা,হসপিটালে পৌঁছে তৃধাকে নিয়ে গেলো নার্সরা,আদাভানের হাত পা ভেঙ্গে আসতে চাইলো, সে দুর্বল হয়ে বসে পড়লো বেঞ্চে, আদিব, নাদিম তার কাঁধে হাত রেখে ভরসা দিলো সব ঠিক হয়ে যাবে!
আদাভানের মনে হলো সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে শক্তপোক্ত পুরুষ টাও কেমন হেলেদুলে পড়ে যাচ্ছে বার বার।
বাড়িতে জানানো হয়েছে তখনই,সবাই রওনা দিয়ে দিয়েছে ইতিমধ্যে, স্নিগ্ধা, নোভা পায়চারি করছে ইমার”জেন্সি রুমের বাহিরে,বেশ কিছুটা দ’ম বন্ধ কর সময় কা’টলো, এমন পরিস্থিতিতে চিন্তা না আসতে চাইলেও এসে পড়ে!
স্নিগ্ধা হাত কচলাচ্ছে সমানে,নোভা ও টেনশনে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে এরই মধ্যে বাচ্চার কান্নার শব্দ পেয়ে থমকে গেলো কিছুটা সময়, স্নিগ্ধা খুশিতে নোভাকে জড়িয়ে ধরল, ততক্ষণাৎ,বাচ্চা হাতে বেরিয়ে আসলো নার্স!আদাভান এলোমেলো পায়ে এসে প্রথমেই জিজ্ঞেস করলো–,, আমার স্ত্রী ঠিক আছে তো সিস্টার?

মহিলা হেসে জবাব দিলেন–,,আপনার স্ত্রী সম্পূর্ণ সুস্থ আছে,তিনি একজন কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছেন,নিন সন্তান কে কোলে নিন!

আদাভান অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো বাচ্চাটার দিকে, বাবা হওয়ার অনুভূতি টা কেমন যদি বলে বুঝানো যেতো?কাঁপা হাতে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে বুকের সাথে চেপে ধরলো আদাভান,কলি’জা ঠান্ডা হয়ে আসলো যেনো তার।
একে একে সবার কোলে চড়লো ছোট্ট পরী,চোখ গোল গোল করে সবাই কে দেখতে ব্যস্ত সে পৃথিবীর আলো প্রথম চোখে পড়েছে তার।
আদাভান কেবিনের দরজা ঠেলে ভেতরে গেলো, তৃধা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে,স্নিগ্ধ মুখশ্রী ক্লান্তির রেশ বেশ স্পষ্ট! আদাভান তৃধার কপালে, দু গালে চুমু দিলো,তৃধা ঘুমাচ্ছে বুঝতে পারলো সে।

তৃধার এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আওড়ালো –,,মিসেস তৃধা তালুকদার, আজ আমরা দুই থেকে তিন হয়েই গেলাম,আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন আমাদের রাজকুমারী চলেই এসেছে আমাদের কাছে।অসংখ্য ধন্যবাদ বউ আমাকে দুনিয়ার বুকে এতোটা সুখের সন্ধান দেওয়ার জন্য! তাড়াতাড়ি ঠিক হও তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বুকটাকে একটু ঠান্ডা করি আমি,তুমি ছাড়া সব কিছুই ফিকে লাগে শূন্য শূন্য মনে হয়!

হাতের পিঠে চুমু দিয়ে সে নিজেও চোখ বুজলো।
———–
বাড়ির সবাই আসার পর কেবিনের ভেতরে যেনো আনন্দের ঝ’ড় বইছে,জিদান আগে বোন কে কোলে তুলে নিয়েছে এসেই, চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে সর্ব প্রথমই বলেছিলো–,,মাম্মা খালামনি পরী বোন এনেছে দেখো!আমি সাথে করে নিয়ে যাবো পরীকে।

আদাভান পাশ থেকে তড়িঘড়ি করে বলে উঠেছিলো—,,না…! আমার মেয়ে কাউকে দিবো না আমি!

তৃধা আদাভানের বাচ্চামো দেখে হাসছে, জিদান কে শ’ত্রু ভাবছে লোকটা!তৃধা কে আজকেই বাড়ি নিতে পারবে, তারপরও রাত হওয়াতে পরের দিন সকালে রওনা করবে তারা।

রাতে সবাইকে তৃধাদের ঢাকার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে,আদাভান স্ত্রী সন্তানের সাথে থেকে গেছে।

আদাভান মেয়েকে কোলে নিয়ে তৃধার পাশ ঘেঁষে বসে আছে তৃধা আধশোয়া হয়ে আদাভানের কাঁধের উপর মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে।

আদাভান বলে উঠলো–,, মেয়ে কে দেখে কি বুঝছো?

তৃধা ঠোঁটে হাসি বজায় রেখে বললো–,, আমার মেয়ে তার বাবার মতো হয়েছে,পুরোই বাবার কার্বন কপি!

আদাভান চোখ ছোট ছোট করে বললো–,, এতে কি আমার বউয়ের জেলা’স ফিল হচ্ছে?

–,,এই একটা বিষয়ে আমি মোটেও জে’লাস না,আমি খুব করে চাইতাম আমার সন্তান তার বাবার মতো হোক,আমি আমার সন্তানের বাবাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি, সবাই যখন বলবে মেয়ে বাবার মতো হয়েছে তখন আমার গর্বে প্রশান্তিতে বুক ভরে আসবে, আনন্দে আমি দিশেহারা হয়ে যাবো তখন!

আদাভান তৃধার দিকে তাকিয়ে বললো–,,এতো ভালোবাসা এই অধ’মের প্রতি?

–,,সন্দেহ আছে নাকি কোনো?

–,,কার ঘাড়ে কটা মাথা?

তৃধার হেসে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললো–,,বাবার মতোই ধৈর্যশীল হও আম্মু!

আদাভান চোখ বন্ধ করে বললো–,, আমার মা!নিজের মায়ের মতোই,ভালো মনের অধিকারী হও, সৎ এবং সাহসী হও। অনেক বেশি সুখি হও আল্লাহ তোমাকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুক, বাবা সব সময় তোমার পাশে থাকবে আর অনেক অনেক বেশি ভালোবাসবে!
————————
নাতনি প্রথম বারের মতো দাদা বাড়ি আসবে, আয়োজনের শেষ নেই কোনো,বাড়িতে কিছু আত্মীয় স্বজন ও এসেছে ছোট্ট পাখিকে দেখতে।

তৃধা সোফায় বসে আছে মেয়েকে কোলে নিয়ে, সবাই আদরে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে মা মেয়েকে।

সবার দেখা শেষ হতেই আদাভান বলে উঠলো–,,এবার আমার বউ বাচ্চাকে তোমরা একটু ছাড়ো,গরম লাগছে তো আমার মেয়ের দেখো দেখো এখনই কেঁদে দিবে!

সত্যি সত্যি শিশুটি কেঁদে উঠলো, তৃধার থেকে মেয়েকে নিজের কোলে তুলে নিলো আদাভান,বাবার কোলে চড়তেই সে পুরোপুরি ঠান্ডা।তৃধা তো নাক মুখ কুঁচকে বলতে থাকে আদাভান কে –,,পুরোই বাপের মতো নাট’কবাজ হচ্ছে মেয়েটা।
আদাভান ভাব দেখিয়ে বলে-‘তাতে তোমার কি?আমার মেয়ে আমার মতোই তো হবে!

বাবা মেয়ের এমন মধুর সম্পর্ক এখন থেকেই চোখে পড়ছে সবার, বরাবরই মুগ্ধ হয় সকলে!তৃধা নিঃসন্দেহে বলতে পারে আদাভান বাবা হিসেবে সেরা হবে।
****
আজ আকাশে পূর্ণিমার থালার মতো গোলগাল বড় চাঁদ উঠেছে,বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে নতুন বাবা মা হওয়া এক যুগল!চাঁদের আলো গায়ে মাখছে তারা তাদের সন্তান কে সাথে নিয়ে,স্নিগ্ধ পরিবেশ শরীর মন সব কিছুই যেনো আনন্দে মোড়া।

আদাভান তৃধা ও মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো–,, আমার জোড়া চন্দ্রিমা,আমার মতো বামু’নের ঘরে তো আজ দুই দুইটা পূর্ণিমা!
তৃধা মুগ্ধ চোখে স্বামীর পানে তাকিয়ে থেকে বললো–,,আপনার সাথে আমার সম্পর্কের সীমারেখা অনেক দীর্ঘ হোক,আমাদের ভালোবাসা এই চাঁদের মতোই চির সত্য হোক!

আদাভান তার ভালোবাসার মানুষকে জড়িয়ে ধরে মিশিয়ে নিলো বুকের সাথে।
নিস্তব্ধ পরিবেশ সব কিছু তে বিরাজমান নৈঃশব্দ্য, নৈঃশব্দ্যেরা নিরবেই তোলে ভালোবাসার ঝ’ড়!প্রেমের প্রজাপ্রতিরা চুপিসারে এসে জুড়ে দেয় দুটি হৃদয় দুটি মন, আনমনে, অজান্তে গড়ে তুলে প্রণয়,অতঃপর ভালোবাসার পরশা খুলে বসে পড়ে নৈঃশব্দ্যের প্রহরে,নিরবে প্রেমালাপ চালিয়ে যায় আজীবন আ’মৃত্যু! নিরবে প্রেম আসে, নৈঃশব্দ্যে হয় প্রেমালাপ, এভাবেই পৃথিবীতে কোথাও না কোথাও প্রতিনিয়ত প্রেম হয়,প্রণয়ের প্রজাপ্রতি উড়ে, বাতাসে বাতাসে নিরবে ছড়িয়ে পড়ে ভালোবাসারা!
~~~~~সমাপ্ত~~~~~~