নৈঃশব্দ্যের প্রেমালাপ পর্ব-০৭

0
1

#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব৭
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
নাতি,নাতনির সংসার কেমন চলছে,কিভাবে সব গুছিয়ে নিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা করছিলেন,গোলজার মজুমদার,গোলবাহার আর জোছনা বেগম।
কলিং বেলের শব্দে কথার ইতি টানলো তিন জন,খুশি হয়ে গোলজার মজুমদার বলে উঠলেন–,,ওই বুঝি ওরা দুজন এসেছে,আমার নাতিটাও না বউ কে একা একা সকালে পাঠিয়ে দিলো?সাথে করে নিয়ে যাবে না ছেলেটার আক্কেল জ্ঞান হলো না এখনো!

জোছনা বেগম বললো–,,আগে দরজাটা খুলে আসি ভাইসাব।

তৃধা চোখ পাকাচ্ছে আদাভান কে,আদাভান ও বিরক্ত হয়ে তৃধা কে শা’সাচ্ছে।এরই মধ্যে দরজা খুলে বের হলেন জোছনা বেগম,তৃধা কে দেখে হেসে বললো–,,তোরা আইছছ?আমরা কোন সক্কা’লে আইছি,এরিশ দাদু ভাই কইলো তুই নাকি আজকা আগে আগেই পড়তে গেছছ গা!

আদাভান তৃধা কে খোঁচা মে’রে চাপা সুরে বললো–,,সালাম দাও বেয়া’দব!

তৃধার তো মনেই ছিলো না,সে মুখে হাসি ঝুলিয়ে পেছনে দাড়িয়ে থাকা গোলজার মজুমদার কে সালাম দিলো।
জিজ্ঞেস করলো–,,কেমন আছেন দাদু?দাদী কেমন আছেন?

জোছনা বেগম বলে উঠলো–,,এখন নতুন দাদা দাদী পেয়ে আমাকে ভুলে গেছিস?

আদাভান বললো-,, আহা দাদী তুমি ও না, তোমার নাতনি ভুলে গেলে কি হবে তোমার নাতি আছে না?সে তো তোমার কথাই ভাবে বেশি!

গোলবাহার তাড়া দিয়ে বললেন–,,ভিতরে আয় দুজন, আমরা কি চলে যাচ্ছি নাকি,গল্প করার আরো সময় পাওয়া যাবে।যা ভিতরে গিয়ে আগে হাত মুখ ধুয়ে নে।

তৃধা এর আগেও একবার এখানে এসেছে তবে কোনটা তে আদাভান থাকে তা সে জানে না।তৃধা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে বেড রুম দুইটা,একটা আবার কমন বাথরুম ও আছে, বসার ঘরের এক পাশেই ফ্লোরে একটা মাঝারি সাইজের ম্যাট্রেস পাতা,তার সাথে সুন্দর গোছানো বুক শেল্ফ। রান্না ঘরটাও উঁকি দিয়ে দেখলো একবার, মনে মনে বললো–,,না শা’লার ব্যাটা দেখছি বেশ গুছানো!

এরই মধ্যে জোছনা বেগম এসে পেছন থেকে বলে উঠলো–,,এমনে কইরা কি দেখছ?ঘর তো তোরই,মনে হইতাছে প্রথম আইছছ!

তৃধা চমকালো,এই বুড়িটার গাঁটে গাঁটে বুদ্ধি ঠিক আঁচ করে ফেলেছ,তবে তৃধা ও ছাড়বার পাত্রী নয়,ধরা পড়লে চলবে না!
তৃধা চ’ট করে বললো–,,প্রথম আসতে যাবো কেনো বুড়ি?তুমি আসলে অযথাই আমাকে সন্দেহ করো।আমি তো আরো ভাবছিলাম তোমাদের কথা।

জোছনা বেগম কপাল কুঁচকে বললো–,,এ ও সম্ভব তুই ভাবছিস আমার কথা?

তৃধা বলে উঠলো–,,তোমার কথা কে ভাবতে যাবে,আমি তো আমার কিউট দাদীর কথা ভাবছিলাম।

গোলবাহার এসে বললো-,,কি লইয়া কথা হইতাছে নাত বউ?

তৃধা মন খারা’প করে বললো–,,আর বইলো না তো দাদী,আমার সতী”ন টা শুধু আমার সাথে ঝগ’ড়া করার ধান্দা”য় থাকে!

জোছনা বেগম বলে উঠলো–,,তয় করমু না?আমার কি সুন্দর জামাই খানা,এমনে এমনে তো তোর কাছে ছাই”ড়া দিতে পারি না।

তৃধা নাক ফুলিয়ে বললো–,,তো যাও আঁচলে বাই”ন্ধা রাখো গিয়া।

জোছনা বেগম তৃধার হাত চেপে ধরে বললো–,, সত্যি কইরা বল তো আসলেই তোদের মাঝে সব ঠিক হইছে?আমার তো দুইটার একটারে ও বিশ্বাস হয় না।

তৃধা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো–,, দাদী তুমিও না।আমি তো এরকম করে সব দেখছিলাম আর ভাবছিলাম,রুম তো দুইটা এখন তোমাদের কে কিভাবে রাখা যায়।সিদ্ধান্ত নিলাম তোমাদের নাতি আর দাদু একসাথে থাকবে, আমরা তিন জন একসাথে!

আদাভান দরজায় দাড়িয়ে সব শুনছিলো,কি বি”চ্ছু মেয়ে ঠিক একটা উপায় বের করে ফেললো,তাও শান্তি, এর সাথে থাকার চাইতে ভালো দাদুর নাক ডাকাকে সাথে নিয়ে ঘুমানো!

কিন্তু না আদাভানের শান্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না,গোলবাহার যেনো কথা টা বলে একটা বড় সড় বো”মা ফাটা’লেন।

–,,সে কি কথা তৃধা?তোদের নতুন নতুন বিয়ে হয়েছে এখনই আলাদা থাকবি?তোর দাদু বসার ঘরে থাকবে আমি আর তোর দাদী ওই ঘরে থাকমু,তোরে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না।যা তো ঘরে যা নাতিটা আমার কখন থেকে একলা বইসা রইছে!

তৃধা অদৃশ্য ভাবে নিজের কপালে নিজেই জোরে কয়েকটা মার”লো,তোমার নাতি কে কি আমি এখন কোলে বসাইয়া রাখবো?যত্তসব,এই ব্যা’টার মুখ দেখতে ইচ্ছে করে না তার সাথে নাকি এখন থাকতে হবে,এ কেমন অবিচার তোমার খোদা?কেনো এসব আমার সাথেই হয়। মনের কথা মনে রেখে মুখে জোর পূর্বক হাসি ফুটিয়ে তৃধা আদাভানের ঘরের দিক পা বাড়ালো,আদাভান দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ানো,তৃধা তার দিকে বাঁকা চোখে তাকালো, ইশারায় বুঝালো দরজা থেকে সরুন!
আদাভান কথা বাড়ালো না আর,সরে ভিতরে গেলো।তৃধা গিয়েই আদাভানের সুন্দর গুছানো বিছানাটায় ধা’ম করে শুয়ে পড়লো,যার ফলে বিছানার চাদর গেলো কুঁচকে, সাথে সাথে আদাভানের কপাল ও!

সে তো সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো–,,এই মেয়ে তুমি এতো অপরিষ্কার কেনো?বাহির থেকে এসে হাত পা না ধুয়েই সোজা বিছানায়?

তৃধা ভ্রু কুঁচকে বললো–,, তো?

আদাভান এগিয়ে গিয়ে বললো–,,আমার বিছানায় কোনো অপরিষ্কার জিনিস আমি বরদাস্ত করবো না!

তৃধা গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো–,, না করলে নাই,আমি কি এখানে সখ করে এসেছি?আপনি নিয়ে এসেছেন এখন সমস্যা হলে নিয়ে হোস্টেলে দিয়ে আসেন।তবুও নিজেকে বদলাতে পারবো না আমি!

আদাভান নিজের ঘরের দিকে তাকালো কতোটা সুন্দর পরিপাটি গুছানো,শুধু একটা জিনিস ছাড়া তা হলো তার দুর্ভা”গ্য ক্রমে পাওয়া বউ!

আদাভান এগিয়ে গিয়ে বসলো বিছানায় তৃধা দ্রুত উঠে বললো–,,এই আপনি এখানে বসেছেন কোন সাহসে?

আদাভান বলে উঠলো–,,এক্সকিউজ মি, তুমি ভুলে যাচ্ছো এটা আমার বাসা আমার রুম!

তৃধা হাত উঁচিয়ে হাই তুলে বললো–,,সুরন তো ঘুম পাচ্ছে।
একদম বিরক্ত করবেন না।

তৃধার ঘুম হারা’ম করে দিয়ে তার ফোন টা বেজে উঠলো তৃধার চোখে মুখে রাজ্যের বিরক্তি এসে ভর করলো।

আদাভান যে খুশি হয়েছে তা বলাই বাহুল্য, তৃধা একটা মুখ ভেংচি কেটে ফোন রিসিভ করে বললো–,, শা’লা তোর আসলে বংশের দোষ,আমার শান্তি তো তোদের বংশের একটার ও সহ্য হয় না।এবার বল ফোন কেনো করেছিস?

নাদিম বলে উঠলো–,,সত্যি কি দাদী আসছে?

–,, কি আর বলবো দুঃখের কথা ভাই,এই মহিলা টাকে কি কোনো ভাবে অন্য দেশে পা’চার করে দেওয়া যায় না বল?আমি এই জে’ল খানায় কেমনে থাকমু বলতে পারোস?এই জীবন আর রাখবোই না!

আদাভান বলে উঠলো–,,একদম সুন্দর সিদ্ধান্ত উপরে ট’পকে যাও আমি অন্তত বেঁচে যাই!

তৃধা হাতের কাছে থাকা বালিশ টা ছুঁড়ে মার’লো আদাভানের উপর,কি বেয়া’দব লোক ওর মৃ’ত্যু কামনা করে!

তৃধা নাদিমের সাথে আরো কিছুক্ষণ বক বক করে বললো,যাতে বিকেলে এসে ওর কিছু কাপড় দিয়ে যায়,যতই হোক বুড়িটা দাদী হয়, একটু যাতে দেখে যায় এই সুযোগে!

তৃধা আদাভানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো–,,নিজের বাসায় এনেছেন এখন খেতে দিচ্ছেন না এটা কেমন ভদ্রতা?খেতে দেন বলছি!

আদাভান বুকে দু হাত গুঁজে বললো–,,তোমার জন্য কি আমি রান্না করে রেখেছি নাকি?চাক’র পেয়েছো, পেটু’ক মেয়ে কোথাকার, কিভাবে খাবার চাইছে দেখো যেনো উনি রান্না করে রেখে গেছেন, আমি উনার সা’র্ভেন্ট!নিজে গিয়ে রান্না করে খাও পারলে, নয়তো না খেয়ে থাকো।

তৃধা ইনোসেন্ট ফেইস বানিয়ে ফেললো মুহুর্তে বলে উঠলো–,,আপনি এতোটা নির্দ’য় হবেন আগে তো বুঝিনি,সামান্য খাবারের জন্য এমন করতে পারলেন?খাবোই না আপনার বাসায়!

তৃধার সত্যি ক্ষুধা লেগেছে,তবে এখন খাওয়ার থেকে বড় কাজ ই’গো ধরে রাখা।সে মুখ ফিরিয়ে বাথরুমে চলে গেলো।
আদাভান দেখলো,মেয়েটার বয়স হলে কি হবে এখনো বুদ্ধি হয়নি,কিছু কিছু সময় এমন ভাবে কথা বলে যেনো ম্যাচিউর কোনো ব্যাক্তি কথা বলছে।আর বাকি সময়?বাচ্চা কে ও হার মানাবে এরকম সব কর্মকান্ড করে।দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আদাভান,তার দাদা,দাদু অনেক খাবার নিয়ে এসেছে বাসা থেকে।এগুলো সব গরম করে দিয়ে গেছেন নিলুর মা,তিনিই আদাভানের রান্না থেকে শুরু করে বাকি কাজ করে দেন।
দুপুর বাজে দুইটা,দাদু দাদী খেয়ে নিয়েছে ইতিমধ্যে বাকি তারা দুজনই।
তৃধা বাথরুম থেকে এসে সোজা বিছানায় শুয়ে পড়লো, নিজের ওড়না টা ভালো করে দিয়ে নিলো,মুখ ও ঢেকে ফেললো,এখন না খেয়ে থাকার একটিই উপায় ঘুম।

আদাভান বলে উঠলো–,,এই মেয়ে,কি সমস্যা তোমার?

তৃধা চুপ রইলো,আদাভান আবার বললো–,,খেতে চলো।

তৃধা এবার ও চুপ রইলো,আদাভানের কোথায় এতো ঠেকা পড়েছে সে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। খাইলে খাও না খাইলে নাই!
——————-
তোমার অফিসে কি এমন কাজ থাকে তৃধার বাবা?সফিক,রফিক ভাই ও তো কাজ করে তারা তো এতো ব্যস্ততা দেখায় না।তোমার আসলে সমস্যা টা কোথায় বলবে?

আজাদ তালুকদার গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,সমস্যা কি তুমি জানো না?তুমি নিজেই তো একটা বড় সমস্যা, তোমাকে বিয়ে করাটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো।

রাজিয়া বেগমের চোখ ছলছল করে উঠলো,কোথায় হারিয়ে গেলো তাদের মধ্যেকার ভালোবাসা?এই মানুষ টাই তো তাকে একটা সময় ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো।তার পর কতো সুন্দর ছিলো তাদের সম্পর্ক।তাদের প্রথম সন্তান এসেছিলো তাদের ঘর আলো করে,কতো আয়োজন করে তার নাম দিয়েছিলেন সবাই,খুশিতে আটখানা হয়ে তার শাশুড়ী মাও সেদিন তাকে আপন করে নিয়েছিলেন।তার সবচেয়ে আদরের কলি’জার টুকরা তার মৃধা!যে মেয়েটা আসার পর সে সব কিছু পেয়েছে,আদর স্নেহ ভালোবাসায় সবাই তাকে মুড়িয়ে রেখেছে,আজ সে মেয়েটা তার কাছে নেই!মেয়েটা হারিয়ে গেলো, সাথে নিয়ে গেলো রাজিয়া বেগমের সব টুকু সুখ,তবুও তিনি মেয়েটার কথা ভেবে ভেবে কি সুন্দর নিদাঁরুণ যন্ত্র”ণা পুষছেন রোজ!

রাজিয়া বেগম চোখ মুছে বললেন–,,এখানে আমার দোষটা কোথায় আজাদ?

আজাদা তালুকদার রেগে বললেন–,,তোমাকে আমি কি দেইনি বলো রাজিয়া?সব কিছু দিয়েছি আর তুমি?আমার সম্মান টুকু রক্ষা করতে পারলে না?মেয়ে কে সামলে রাখতে পারলে না?সারাদিন বাড়ি বসে কি করেছো তুমি?আসলে আদর যত্ন দিয়ে একটা কাল’সাপ পুষে’ছিলাম আমি,সুযোগ বুঝে আমাকেই ছোব’ল মে’রে দিয়েছে।ওইদিন আমাকে কতোটা অসম্মানীত হতে হয়েছিলো জানো তুমি?আমার কতোটা কষ্ট লেগেছিলো তার খবর তুমি রেখেছো?রাখোনি তো তুমি তোমার মেয়ে কে তখনও সাপোর্ট করেছো আমার আদেশ অমান্য করেছো,তার ফল এখন ভুগছো এইটুকুই!

–,,আমাদের এক সন্তানের শা’স্তি তুমি আরেক সন্তান কে কেনো দিচ্ছো আজাদ?তৃধার কি অপরা’ধ?মেয়েটার সাথে ঠিক করে কথা ও বলো না তুমি,তোমার অবহেলায় কতোটা বেপ’রোয়া হয়ে গেছে তা তোমার চোখে পড়ে না?নাকি তোমার কাজ,তোমার সম্পদের পাহা’ড় তোমাকে অন্ধ করে দিয়েছে? সাধারণ জিনিস গুলো ও এখন অদেখা করে দিচ্ছো!তোমাকে তোমার মেয়ে ঘৃ’ণা করে আজাদ সন্তানের চোখে নিজেকে এতোটা খারা’প না বানালেও পারতে,তৃধা তো মৃধার মতো নয়,তোমার সম্মান বাঁচাতে তোমার পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করে নিলো।তাও কি তুমি বলবে আমার দুই মেয়েই খারা’প,আমি ভালো মা হতে পারিনি!

আজাদ তালুকদার গম্ভীর কন্ঠে বললো-,,একজন কে সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে ঠকে’ছি,আবার ঠক’তে পারবো না,ওর দায়িত্ব নিচ্ছি যা চেয়েছে সব দিয়েছি বাবা হিসেবে সব করেছি।আর কি চাই ওর?

রাজিয়া বেগম ঘৃ’ণায় মুখ ফিরিয়ে নিয়ো বললো–,,দায়িত্ব মানুষ কুকু”রের ও নেয়!তোমার টাকা পয়সার জন্য না খেয়ে ম’রে যাবো না আমরা,অনেক করেছো আর করার দরকার নেই!আমার মেয়েকে তো বিয়ে দিয়ে দিয়েছো এবার আমাকে ও মুক্তি দিয়ে দাও,তোমার ভালোবাসা, সংসারের বোঝ উঠাতে উঠাতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি,আমার দ্বারা আর সম্ভব নয়!

আজাদ তালুকদার রেগে বললেন–,,আমার সংসার এখন তোমার বোঝা মনে হয়?কষ্ট করে তোমাকে আর থাকতে হবে না যাও চলে যাও!যাওয়ার তো কোনো জায়গা নেই সেই তো আবার আমার কাছেই ফিরতে হবে তোমায়।

রাজিয়া বেগমের গায়ে লাগলো আজ কথাটা,এ মানুষ টাকে কেনো তার বাবা পাত্র হিসেবে প্রত্যাখান করেছিলো তা আজ বেশ বুঝতে পারছে।এর হাত ধরে ঘর ছাড়া টা কতো বড় বোকামি ছিলো এখন হারে হারে টের পাচ্ছে।

রাজিয়া বেগম তে’জি কন্ঠে বলে উঠলো–,,তবে তাই হোক,রইলো তোমার সংসার।আমি চলে যাচ্ছি, সংসারের সাথে সাথে তোমাকে গোছানোর মতো যোগ্যা কাউকে খুঁজে নিও,আমি ব্যর্থ হয়েছি তাই পরাজিত সৈনিকের মতো আজ এতো গুলো বছর পর চলে যাচ্ছি।কোনো দিন যদি আমার কাছে ফিরতে মনে ও চায় তবুও যাবে না,আমি তোমাকে প্রত্যাখান করছি আজ এখন এই মুহুর্ত থেকে!
বলেই বা কি লাভ তোমার জীবনে আমি কোনো দিন গুরুত্বপূর্ণ ছিলামই না, যে জোর গলায় বলতে পারবো আমাকে ছাড়া তোমার চলবে না, তুমি ঠিক ফিরবেই!

রাজিয়া বেগম ছুটে চলে গেলেন সেখান থেকে,আজাদ বিমূঢ় হয়ে দেখলো স্ত্রীর প্রস্থান,তবুও সে চুপ রইলো।
তার জানা মতে যতই রাগ করুক রাজিয়া বেগমের তার মতো কঠিন হৃদয়ের ব্যক্তিটাকে ছাড়া চলে না,সে ঘুরে ফিরে তার কাছেই থেকে যায় বার বার!তবে হয়তো আজাদ সাহেব সম্পূর্ণই ভুল,ভালোবাসার এক দিক দেখে তিনি অভ্যস্ত,তিনি ভুলেই বসেছেন মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ দুপিঠই থাকে!
———————
তৃধার মুখের উপর এপানি পড়তেই সে লাফিয়ে উঠলো।চোখ মুখ কঁচলে বলে উঠলো–,,কি সমস্যা নোভা?

নাদিম বলে উঠলো –,,গা’ধী যদি এখন আমার জায়গায় দাদী থাকতো তুই নিশ্চিত ধরা খাইতি!

তৃধা মুখ মুছতে মুছতে বললো–,,আর পে’ইন দিছ না তো,এমনিতেই এখানে কেউ আমাকে খেতে পর্যন্ত দেয় না!

নোভা,আভা কে এখনো দেখেনি তৃধা।নোভা বলে উঠলো–,,ইশ্ শি রে দুলাভাই না খাওয়াইয়া রাখলো বান্ধবী টা কে।

তৃধা উঠে গিয়ে নোভা কে জড়িয়ে ধরে বললো–,,দোস্ত তোকে আমি বেশি মিস করছিলাম!

নাদিম বলে উঠলো –,,আদিখ্যেতা, তোরা মেয়েরা এতো নাটক করতে পারিস ভাই,মানে চার ঘন্টা হলো না দেখা হয়নি এইটুকু সময়ে নাকি আবার মিস করতে করতে নাই হয়ে যাচ্ছে!

আভা বললো–,,তুই বুঝবি না এসব,তুই গিয়া তোর দাদীর সাথে পিরি’ত কর!
তৃধা টি”প্পনী কে’টে বললো–,,আহা কি কষ্ট দুনিয়ায় মাইয়ার অকা’ল পড়লো!

নোভা আর আভা হেসে উঠলো, নাদিম বলে উঠলো –,,তোরা আসলে একেক টা যা তা।

পুরো বিকেল জুড়ে আড্ডা দিয়ে বিদায় নিলো নাদিম,নোভা,আভা।
রাতের বেলা সবাই কে খাবার বেড়ে দিলো তৃধা বিছানা গুছিয়ে দিয়ে এসে বসলো বিছানায়, ভাব খানা এমন দুনিয়ার সব কাজ করে ফেলেছে একদিনেই,হওয়ারই কথা তৃধার মতো অলস মানুষ কিনা এতো সুন্দর ভাবে এসব কাজ করেছে চারটে খানি কথা নয়,এখন সে ভাবছে হোস্টেলে থাকলে কি করতো?খাওয়ার পর প্লেট টা কোনো রকম ধুয়েই সাবার পরে আর ওকে কে পায়!

তৃধা আগে গিয়ে গোসল করলো ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা তার।

আদাভান এখনো রুমে আসেনি,তৃধা নিজের চুলের আসল রূপ উন্মোচন করবে এখন,চুলগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই এগুলো এতোটা লম্বা, তৃধা চুল বেশির ভাগ সময় আটকে রাখে।চুল খুলে রাখা অত্যন্ত বিরক্তিকর কাজের মধ্যে একটা।
তৃধা চুলের কাটা সরাতেই ঝরঝর করে পিঠের উপর ছড়িয়ে পড়লো একঝাঁক অধিক কালো কেশ!

আদাভান সবেই রুমে এসেছে,তৃধার চুল দেখে কিছুক্ষণ হা হয়ে তাকিয়ে ছিলো,এই মেয়ের চুল তো এর মতোই মিনিটে মিনিটে রঙ পাল্টায়!ভার্সিটি তে দেখলো খয়েরী এখন আবার কালো,তখন ছিলো কাঁধ পর্যন্ত এখন একদম হাঁটু ছাড়িয়ে গেছে!এ যেনো ভেলকি দেখিয়ে ছাড়লো মেয়েটা।

আদাভান এগিয়ে গিয়ে চুলে হাত দিয়ে বললো–,,আসল নাকি নকল?

তৃধা আঁতকে উঠলো যেনো এই লোক কবে জানি হার্ট অ্যা’টাক করিয়ে ছাড়ে!
তৃধা দু কদম পিছিয়ে গিয়ে বললো–,,কি সমস্যা? এমনে কেউ রুমে আসে।
নিজের বুকে থু থু দিয়ে উঠলো তৃধা।আদাভানের পড়নে ব্লু কালারের টি-শার্ট আর ট্রাউ”জার।তৃধার মনের অসৎ চিন্তা গুলো উঁকি মার’লো বলে উঠলো–,,ছেলেটা দেখতে শুনতে কিউট আছে,ফর্মাল সর্মা’ল সব আউট ফিটেই মানায়!

তৃধা নিজের ভাবনায় নিজেকেই গা’লি দিয়ে উঠলো।

আদাভান বিছানায় গিয়ে বসে বললো–,, তোমার চুলের রহস্য কি?

তৃধা চুল মুছতে ব্যস্ত,কিছুটা অন্যমনস্ক হয়েই জিজ্ঞেস করলো–,,কিসের আবার রহস্য?

–,,দিনে দেখি লাল, এখন আবার কালা,আসলে আসল কোনটা?লাল”ডা নাকি কালা”ডা?

–,,কালা”ডা!

–,,তাহলে লালের কি রহস্য?

–,,ওইটা নকল চুল!

আদাভান মুখ ফসকে বলেই ফেললো–,,এতো সুন্দর চুল থাকতে নকল চুল কেনো?

তৃধার সহজ উত্তর–,,এই চুল গুলো আমার পছন্দ না তাই!

আদাভানের ত্যাঁড়া জবাব –,,তাহলে কে’টে ফেলো!

-,,মায়া লাগে!

আদাভান ভ্রু কুঁচকে বললো—,,পছন্দ না আবার মায়া লাগে এটা কোন ধরনের কথা?

তৃধা চিরনি হাতে নিয়ে বললো—-,,হক কথা!

আদাভান বললো–,,অদ্ভুত!

–,,আশ্চর্য!

–,,এই চুপ।

–,দ্বিগুণ চুপ।

আদাভান উঠে এসে বললো–,,একদম ঝগ’ড়া করবে না!

তৃধা পাশ কাটি”য়ে চলে গিয়ে বললো–,,যাকে তাকে মুখ লাগাই না আমি!

–,,কি?

–,, ঘুমাবো!

–,,তাহলে খাবে কে?তোমার নানা!

তৃধা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বললো–,,খবর’দার আমার নানা ভাই কে নিয়ে কোনো কথা বলবেন না।আর বিছানায় ও আসবেন না।

–,,বিছানায় না আসলে ঘুমাবো কোথায়?

–,,আমি কি জানি?এই একটা বিছানা পুরোটা আমারই লাগবে।

আদাভান চোখ ছোট ছোট করে বললো–,,শরীরে দুই ছটা’ক মাং’স নাই তার নাকি একটা বিছানা পুরো লাগে!

তৃধা তেড়ে এসে বললো–,,এই আপনি আমাকে চিকন বলে অপমান করছেন?ম’টু একটা!

আদাভান অবাকের শেষ চূড়ায় এতো সুন্দর ব’ডি তার,জিমে গিয়ে কতো খাটুনি করে বানালো আর এই মেয়ে কিনা বলে ম’টু!

তৃধা আর কথা বলার শক্তি টুকু পেলো না,পেটে ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে,সকাল থেকে পেটে কিছু পড়েনি রাগ করে বসে ছিলো এই অ’সহ্য লোকটা আসলেই নির্দ’য় একবার বললো না পর্যন্ত খাওয়ার কথা!

তৃধা পেটের এক পাশে চেপে ধরে বিছানায় বসে পড়লো।
আদাভান কে নাদিম বলে দিয়ে গেছে,স্যার তৃধা কিন্তু খিদে সহ্য করতে পারে না,আবার রাগ করলে নিজে থেকে খাবেও না,এবার আপনি ভাবুন কিভাবে খাওয়ানো যায়!
আদাভান ও চায় তৃধা খেয়ে নিক,কিন্তু সে ও বলবে না, এই মেয়ের সামনে কিছুতেই ঝুঁকবে না।

আদাভান খাবার সাথে করে নিয়ে ও এসেছে,তার মধ্যে থেকে একটু নিজের হাতে তুলে নিলো,তৃধার সামনে গিয়ে বললো–,,এই মেয়ে!

তৃধা ব্যাথাতুর চোখে তাকালো, আদাভানের এবার সত্যি খারা”প লাগলো,ওভাবে বলা উচিত হয়নি মেয়েটাকে।

–,,দেখি তোমার দাঁত আছে কিনা?

তৃধা দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,ফাইজ”লামি করেন আমার সাথে?

আদাভান সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো–,,আরে না রে বোকা,ওইদিন একজন বলছিলো ক্লাসে তোমার নাকি দাঁত নাই,যদি থাকে তো দেখিয়ে দাও তাহলেই তো হয়!নাকি তুমি দাঁত ব্রাশ করো না দাঁত অসুন্দর তাই কাউকে দেখাও না লজ্জা পাও।আবার আমি লক্ষ্য করেছি তুমি কখনো দাঁত বের করে হাসো না সব সময় মুচকি হাসি!

তৃধার মেজা’জ হাইটে’ম্পারেচারে পৌঁছালো এমনিতেই ক্ষুধা তার উপরে ফালতু কথা,বলে উঠলো–,, নিন দেখুন জন্মের মতো ভালো করে দেখুন!

তৃধা হা করতেই আদাভান সুযোগ বুঝে মুখে খাবার পুরে দিলো!
তৃধা বের করতে নিলে আদাভান বলে উঠলো–,,আমার মা তার একমাত্র ছেলের বউয়ের জন্য রান্না করে পাঠিয়েছে, এখন সে আমাকে অনেক করে বলেছে যাতে তোমাকে খেতে বলি।তুমি যদি না খেয়ে তাকে কষ্ট দিতে চাও তো আমি আর কিছু বলবো না!

তৃধা ভাব নিয়ে বললো–,,ঠিক আছে ঠিক আছে অতো করে বলতে হবে না,আন্টি নিতান্তই ভালো মানুষ তার কথা ভেবে আমি খেয়ে নিবো যান নিয়ে আসুন!

আদাভান মনে মনে বললো–,,ভাঙ্গবে কিন্তু মচকাবে না!

তৃধা প্লেট নিয়ে খেতে শুরু করলো, খাওয়ার ধরন দেখে আদাভান হেসে উঠলো। একটা একটা মরিচ,ধনেপাতার টুকরো বেছে আলাদা করছে আর একটু একটু করে খাচ্ছে!

চলবে…..