নৈঃশব্দ্যের প্রেমালাপ পর্ব-০৯

0
2

#নৈঃশব্দ্যের_প্রেমালাপ
#পর্ব৯
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সকালে ঘুম থেকে উঠে তৃধা মাথা চেপে ধরলো,চোখ কচলে আশেপাশে তাকালো,আদাভান কে রুমের কোথাও দেখলো না।নিজের দিকে তাকালো গতকালের পোশাক এখনো গায়ে,ফোন হাতে নিয়েই আঁতকে উঠলো নয়টা চল্লিশ বাজে!আজ তো ক্লাসে পরীক্ষা নেওয়ার কথা,তৃধা নিজের চুল টেনে ধরলো,এই অসহ্য লোকটা ওকে একবার ডাক দিবে না,আবার পরীক্ষা না দিলেও একশো টা কথা শুনিয়ে দিবে।

তৃধা দৌড়ে গেলো বাথরুমে, কি একটা অবস্থা এখন বিশ মিনিটে কিভাবে কি করবে বুঝতে পারলো না।

মুখে পানি দিতে গিয়ে তৃধা নিজের হাতের দিকে তাকালো, শুভ্র রঙা একটা বেন্ডে”জ হাতে অবস্থান করছে।হাতে আবার কি হলো,পরক্ষণেই গতকালের সব কথা মনে পড়লো।তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বাম হাতে মুখ ধুয়ে ফেললো।
তাড়াতাড়ি করে ড্রেস চেঞ্জ করলো।
ব্যাগ হাতে নিয়ে ছুটলো বাহিরের দিকে,বসার ঘরে জোছনা বেগম বসে তৃধা কে তড়িঘড়ি করে বের হতে দেখে বললো–,,এই কই যাস এমনে?

তৃধা বলে উঠলো–,,ক্লাসে যেতে হবে দাদি,একদম সময় নেই!

জোছনা বেগম বলে উঠলো–,,এরিশ তো বললো তুই অসুস্থ,তোকে যাতে ডেকে বিরক্ত না করি।আর ছেলেটা কষ্ট করে সকাল সকাল রান্না ও করে গেলো,কড়া ভাষায় বলে গেছে তোকে যাতে খেতে বলি!
কপাল করে সোয়ামি পেয়েছিস,বউ অসুস্থ দেখে রান্না বারা করে রেখে গেছে।

তৃধা অবাক হলো, এই লোক রান্না ও করতে পারে?তৃধা দরজা দিয়ে বের হতে হতে বললো–,,আমি ওখানে গিয়ে খেয়ে নিবো দাদি,আমায় এখন যেতে হবে!

তৃধা ক্লাসের সামনে এসে পৌঁছালো ঠিক দশটা সাত এ।
আদাভান দরজার দিকে তাকালো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে, তৃধা ছোট করে বললো–,,স্যার আসবো?

–,,আসেন!

তৃধা দৌড়ে গিয়ে বসলো নোভার পাশে,নোভা মুখ ফুলিয়ে রেখেছে।তৃধা চাপা সুরে জিজ্ঞেস করলো–,,পরীক্ষা নিবে না স্যার?

নাদিম পেছন থেকে বলে উঠলো–,,না, তোর জামাই তোর প্রতি দয়া দেখিয়ে আজ পরীক্ষা নেয়নি!

তৃধা চোখ পাকিয়ে তাকালো,আদাভান স্বাভাবিক ভাবেই ক্লাস শেষ করলো।
ক্লাস থেকে বের হওয়ার আগে আদাভান নিজের হাতে বই নিলো, বইয়ের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো–,,তৃধা আপনি আমার রুমে এসে দেখা করুন!

তৃধা বেরিয়ে আসলো, পেছনে নোভা,আভা,নাদিম,নিশি।পরবর্তী ঘন্টায় তাদের ক্লাস নেই।

তৃধা নাদিম কে খোঁচা মে’রে বললো–,, ভাই কাল তো গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,রাতে তো কিছু বলতে পারেনি তাই মনে হয় হনু’মান টা এখন আমাকে কথা শোনানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছে!

নোভা, আভা চুপ করে আছে,তৃধা গাল ফুলিয়ে বললো-,, কিরে তোরা কথা বলছিস না কেনো?

নোভা রাগী কন্ঠে বললো–,,তুই আমাদের কেউ না, অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলি না আমরা।

তৃধা নোভা কে জড়িয়ে ধরে বললো–,, দোস্ত এমন করিস না,কি করেছি আমি?

আভা তৃধার গলা চে’পে ধরে বললো–,,শয়’তান কোথাকার,আকা’ম করে বলছিস কি করেছি?তোকে মানা করছিলাম না এসবে আর কোনো দিন যাবি না।আমাদের কে প্রমিজ করেছিস তুই, কিন্তু আবার একই কাজ করেছিস,আজ থেকে আমাদের বন্ধুত্ব এখানেই শেষ!

নাদিম বলে উঠলো–,,ঠিকই বলেছিস,এটাকে মে’রে বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়ে আয়!

তৃধা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো–,, বুড়িগঙ্গার পানি একবারে দূষিত প্লিজ অন্য কোথাও।

নোভা লাগিয়ে দিলো একটা তৃধার পিঠে,নিশি বলে উঠলো–,,স্যার তোকে ডেকেছে কখন,সময় মতো না গেলে পরে কথা শুনিয়ে দিবে।

আভা বললো–,, আগে যা, পরে তোকে দেখে নিচ্ছি আমি।

তৃধা অনিচ্ছা নিয়ে গেলো দরজার সামনে নক করবে ভেবে ও করতে পারছে না।তখনই ভেতর থেকে গম্ভীর কন্ঠে আদাভান বললো–,,আসো!

তৃধা দরজা খুলে এগিয়ে গেলো,আদাভান বইয়ে মুখ গুঁজে রেখেই বললো–,,দরজা লাগিয়ে দিয়ে এসো।

তৃধা চকিত কন্ঠে বললো–,,কেনো?

আদাভান বলে উঠলো–,,চুমু খাবো তাই,বউয়ের সাথে রোমা’ন্স করার সময় কেউ দেখুক আমি তা চাই না!

তৃধা চোখ বড় বড় করে তাকালো,আদাভান মুখের সামনে থেকে বইটা সরিয়ে তৃধার দিকে তাকিয়ে বললো–,,কি হলো আটকাও!

তৃধা ঠায় দাড়িয়ে আছে,আদাভান নিজেই উঠে আসলো দরজা টা ধাম করে আঁটকে দিলো,তৃধা শব্দে দু চোখ বন্ধ করে নিলো।আদাভান এগিয়ে এসে তৃধার দু বাহু চেপে ধরে আগাতে লাগলো,তৃধা অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে,কন্ঠনালিতে আটকে গেছে কথারা।
তোতলানোর সুরে বললো–,,কি করছেন স্যার!

আদাভান তৃধা কে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে নিজে মুখোমুখি আরেকটা চেয়ারে বসলো।
কিছুক্ষণ তৃধার দিকে তাকিয়ে থেকে হো হো করে হেসে উঠলো

তৃধা বোকা বনে গেলো,আদাভান তৃধার মাথায় টোকা মেরে বললো–,,তৃধা তালুকদার দেখছি বেশ বোকাসোকা!

তৃধার বুঝতে বাকি রইলো না এই ব্যাটা মজা নিচ্ছিলো ওর সাথে।তৃধা চোখ মুখ বাঁকালো,বিরক্তি নিয়ে বললো–,,কেনো ডেকেছেন বলুন।

–,,আমার বউ কে দেখতে ইচ্ছে হইছে তাই!

–,,একদম ফাইজ”লামো করবেন না আমার সাথে।

আদাভান তৃধার দিকে হাত বাড়াতেই তৃধা পুরো দমে পিছিয়ে গেলো, আদাভান তৃধার ডান পাশের গালে আলতো ছুঁয়ে দিয়ে বললো–,,কথা বার্তা চাল চলন এতো কঠোর শক্তপোক্ত,দেহ খানা এতো নরম কেন?

আদাভান কিছুটা ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বললো–,, হৃদয় টা ও কি কঠোর?তবে আমার মনে হয় কোমল একদম মাখনের মতো!

তৃধা নাক মুখ কুঁচকে বললো–,, ছি!আপনার ফ্লা”টিং স্কিল খুবই বা’জে!

আদাভান মৃদু হেসে বললো–,, কাল রাতে তুমি যা যা বলেছো,যা যা করেছো সব মন আছে তো?

তৃধা ভ্রু উঁচিয়ে বললো–,,কখন?

আদাভান সোজা হয়ে বসলো সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো–,,রুমে আসার পর!

তৃধা নিজেকেই প্রশ্ন করলো,কখন কি বললো?এই লোক নিশ্চিত মিথ্যা বলতেছে!

তৃধা ভাব নিয়ে বললো–,,আমার চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র, অসভ্য পুরুষ মানুষের ধারেও ঘেঁষি না কিছু করা তো দূরের কথা!

আদাভান এবার গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,বয়স কতো তোমার?

–,,উনিশ!

–,,কাল যা যা করেছো তোমার কি মনে হয়, এগুলো করা ঠিক?তোমার বাবা একজন সম্মানিত ব্যক্তি তার মেয়ে হয়ে তুমি এসব,,,

তৃধা থামিয়ে দিয়ে বললো–,,বা’রের মালিক আপনার শ্বশুর, আপনার শ্বশুর বা”র চালাতে পারলে আপনার শ্বশুরের মেয়ে ম”দ খোর হতেই পারে স্বাভাবিক ব্যাপার!

আদাভানের চাহনি শান্ত,তার মস্তিষ্ক অন্য কিছু ভাবছে,যতই তৃধার সাথে ওর শত্রু’তা থাকুক,তৃধা এখন ওর দায়িত্ব, ওকে ভালো পথে আনাটাও কর্তব্য।বয়স কম বুঝালে বুঝবে,আদাভান ভেবে নিলো সে আজ থেকে তৃধার সাথে বন্ধুর মতো মিশবে,তাহলে হয়তো তৃধার ব্যাপােরে জানতে পারবে,তৃধা কে বুঝিয়ে ভালো পথে আনতে পারবে।কিন্তু মেয়েটা যা ত্যাড়া আদাভানের ক্ষেত্রে বিষয়টা এতো ও সহজ হবে না!

আদাভান তৃধা কে বললো–,,বাবার উপর রাগ করে এসব করছো?

তৃধার চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসলো–,,আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন না করলেই বেশি খুশি হবো!

আদাভান চুপ করে গেলো,আসলেই তো কারো জীবনে এতোটা দখলদারি করার মতো অধিকা তো তার নেই।

আদাভান ভাবতে ভাবতে থেমে গেলো সত্যি কোনো অধিকার বোধ নেই?

আদাভান ছোট করে জিজ্ঞেস করলো–,,খাও নি কেনো সকালে?

–,,তা জেনে আপনার কি লাভ?

আদাভান এবার ধম’ক দিয়ে বললো–,,একদম চুপ।বেয়া’দব কি কোনো দিন ভালো হয়?ভালো কথার উত্তর ভালো ভাবে দিতে পারো না তুমি?

তৃধা চেয়ার ছেড়ে উঠে বললো–,,না পারি না,আপনাকে বলেছি আমার জন্য চিন্তা করতে?আমার জীবন আমি দেখে নিবো!

আদাভান তৃধার হাত চেপে ধরে বললো–,,একটা চ”ড়ে দেখি কাজ হয়নি,সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে না আমিও চামচ কিনে আনতে পারি!

তৃধা আদাভানের হাতে বসিয়ে দিলো এক কাম”ড়, আদাভান হাত সরায়নি,তৃধার রাগে নাক ফুলে উঠেছে।

দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,ছাড়ুন আমার হাত!

আদাভানের শক্ত জবাব–,,আমি পরপুরুষ নই,হাত ধরার মতো এইটুকু অধিকার আমার আছে।

তৃধা আদাভানের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে।

–,,এটা আপনার বেড রুম না,ভার্সিটি।নিজের সীমান মধ্যে থাকুন আমাকেও থাকতে দিন!

আদাভান তৃধার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকেই অন্য হাতে তৃধার কোমড় জড়িয়ে ধরলো। তৃধার জারিজুরি শেষ হয়ে গেলো নিমিষেই, আদাভান বেশ টের পেলো তৃধার কাঁপা-কাঁপি তার পেট ফেলে হাসি আসতে চাইলো,তবে এখন এরকম কিছু করা যাবে না।
আদাভান নিজের মুখ এগিয়ে আনলো তৃধার দিকে,তৃধার হৃদপিন্ডের উঠা নামা বাড়লো,তবুও শক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো আদাভানের দিকে। আদাভান তৃধার হাত ছেড়ে দিলো, আর একটু আগালেই তৃধার ঘাড় ছুঁয়ে দিবে আদাভানের ঠোঁট, তৃধা দু হাতে জামা চেপে ধরে বললো–,,বাড়াবাড়ি করবেন না আদাভান!

আদাভান দাঁতে দাঁত চেপে বললো–,,তোমার মতো মেয়েকে আদাভান কোনো দিন ছোঁয়া তো দূর ছোঁয়ার কল্পনাও করে না!

তৃধা আচমকা আদাভানের কলার চেপে ধরে বললো–,, এতোক্ষণ কি করছিলেন মিস্টার সাধু, রঙ্গ”লীলা?আর কখনো যদি আমাকে এভাবে ছুঁয়েছেন তো যে যে স্থানে আপনার ছোঁয়া থাকবে সে সে স্থান আমি পুড়ি”য়ে ফেলবো!

আদাভান নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললো–,,তবে তুমি ঠিক একদিন জ্ব”লসে যাবে আমার ছোঁয়ায়!

তৃধা রাগে হাত পা কাঁপছে, নিজেকে নিজেই চ”ড় মার’তে মন চাচ্ছে,কেনো বেয়া’হা হয় ওর মন কি আছে এই লোকটার মধ্যে? এর কাছে আসা কেনো দমিয়ে দিবে তৃধা কে?এতোটা দুর্বলতা কিসের প্রতীক!

তৃধা বেরিয়ে যেতে নিলো,আদাভান গম্ভীর কন্ঠে বললো–,,চুপ চাপ সামনে এসে বসো,যেতে বলেছি তোমাকে?

তৃধা দরজার হাতল ছেড়ে আবার ফিরে আসলো আগের জায়গায়,
আদাভান তাকালো তৃধার দিকে,চোখ দুটি দিয়ে যেনো আগু’ন ঝরছে,আদাভান টেবিলের উপর একটা টিফিন বক্স রাখলো ঢাকনা খুলে বললো–,,আপনাকে এক লক্ষ এক টাকা দেনমোহর দিয়ে যেই ব্যক্তি বিবাহ করে নিজের জীবনের শান্তি নষ্ট করেছেন।সেই ব্যক্তি আপনার জন্য রান্না করে এনেছে ম্যাম দয়া করে খেয়ে তাকে উদ্ধার করুন!
না বলবেন না প্লিজ তার রান্নার হাত নেহাৎ মন্দ নয়,খিচুড়ি টা সে খুব ভালো রান্না করতে পারে!

তৃধা টেবিলের দিকে ঝুঁকে বললো–,,শত্রু জামাই হোক বা অন্য কেউ বি”ষ মিশিয়ে এ যে দেয়নি তার কি গ্যারান্টি?

—,,আমি আগে খেয়ে প্রমান করবো ম্যাম এটা সম্পূর্ণ অথেন্টিক, পিউর ফ্রেশ খাবার!

তৃধা দু হাতে মাথা চেপে ধরলো নিজের, চোখ মুখ মুছে বললো–,,স্যার,আমি জানি আপনি আমাকে পছন্দ করেন না।আমিও আপনাকে পছন্দ করি না,তাই বলি কি আমরা আর কথা না বাড়াই,বিশ্বাস করুন আমি শান্তি প্রিয় মানুষ, ঝ’গড়া করতে একটু ভালো লাগে না।দাদি কালই বাড়ি চলে যাবে, তার পর থেকে আমরা আর কারো মুখোমুখি হবো না, ক্লাসে আমি শুধু আপনার স্টুডেন্ট বাকিরা যেমন।দয়া করে এসব নাটক আমার সাথে করবেন না।মিথ্যা জিনিস টা আমার একেবারে পছন্দ না, এই যে আপনি আমাকে দেখান আমি না খেলে আপনার কষ্ট লাগে এগুলো দয়া করে আর দেখাবেন না।আমি মানুষের দয়া নেই না স্যার।খাওয়ার হলে নিজে থেকেই খেতে পারবো,আপনার কষ্ট করতে হবে না।
দুইদিনের মুসাফিরের জন্য যতটুকু করেছেন তাতেই আমি খুশি,নিজের বিছানা শেয়ার করাটা চারটে খানে কথা না।আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ, আর ঋণী বানাবেন না দয়া করে।শিক্ষক সম্মানের ওই জায়গাতেই থাকা,,,,,

আদাভান তৃধার ঠোঁটে আঙুল রেখে বললো–,, এতো জ্ঞান নেওয়ার অভ্যাস আমার নেই, খেয়ে চুপচাপ বিদায় হও,তোমাকে দেখতে আমার অসহ্য লাগে!

তৃধা এবার বলে উঠলো–,,শা’লা তোর খাবার তুই খা।ভালো কথা কানে যায় না?

আদাভান তৃধার হাত চেপে ধরে বললো–,,ওই মাইয়া বেশি ফটর”ফটর করবি না,যতদিন আমার দায়িত্বে আছিস ততোদিন আমার কথা শুনতেই হবে, হা কর বলছি!

—————
নাদিম,নোভা,আভা চিন্তায় চিন্তায় শেষ আধ ঘন্টা হলো তৃধার বের হওয়ার নাম নেই,দুজন মিলে আবার মারা”মারি করে মাথা ফাটিয়ে ফেলেনি তো।

নিশি বলে উঠলো –,,আজাই”রা কথা বলিস না তো,গিয়ে দেখি দাঁড়া।

রাদিফ এসে বললো–,,হেই নিশি কোথায় যাচ্ছো?

নিশি মুখ বাকিয়ে বললো–,, শ্বশুর বাড়ি, যাবে?

রাদিফের মুখ ছোট হয়ে গেলো মুহুর্তেই,নাদিম বললো–,,রাদিফ তুই চুপ থাক তো,এই নিশি যা দেখ।

নোভা বলে উঠলো আমরাও আসছি পেছনে!

নিশি দরজার সামনে দাড়িয়ে হা হয়ে গেলো,রাদিফ এসে বললো–,,দেখি কি হচ্ছে ভিতরে?

নিশি দ্রুত ঘুরে দু হাত দু দিকে ছড়িয়ে দিয়ে
বললো–,, না……..!

রাদিফ ভ্রু কুঁচকে বললো–,,কেনো?

নিশি মুখ ফসকে বলে উঠলো–,,অন্যের খাওয়ায় নজর দিতে নেই গু,নাহ্ হবে!

আভা চোখ বড় বড় করে তাকালো,নোভা বলে উঠলো–,,হ্যাঁ হ্যাঁ রাদিফ তুমি তাকিয়ো না পাপ হবে পাপ!

নাদিম বলে উঠলো–,,কিন্তু কে কি খাচ্ছে?

নিশি বলে উঠলো–,,চুম্মা তুই খাবি?

নোভা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো নিশির মুখ চেপে ধরে বললো–,, এই জন্যই বলে অবিবাহিতদের রোমান্টিক সিনেমা দেখতে দেওয়া উচিত না!নাদিমের বাচ্চা তুই রাদিফ কে নিয়ে যা এখান থেকে।

আভা বলে উঠলো–,,কিন্তু চুমু দেওয়ার পার্ট পর্যন্ত চলে গেছে ও আমাদের কিছু জানাবে না?

নাদিম চোখ পাকিয়ে বললো–,,গা”ধী তুই কি আমাগো দাওয়াত দিয়া নিয়া যাবি তোর বাস”র ঘরে?

নোভা বলে উঠলো–,,শয়”তান ভর করেছে, আই”তুল কুর”সি পড়।পরিবেশ টা নষ্ট হয়ে গেছে!

এরই মধ্যে তৃধা বেরিয়ে আসলো,নাদিম রাদিফের চোখ চেপে ধরলো।তৃধা কে টেনে নিয়ে গেলো আভা।

রাদিফ বলে উঠলো –,,আরে আজ তো আমার বার্থডে না চোখ চেপে ধরলি কেন?

নিশি বলে উঠলো–,,বার্থডে তে চোখ চেপে ধরে এটা আবার কেমন লজিক?

নাদিম বলে উঠলো –,,নষ্ট লজিক তুই বুঝবি না।

তৃধা কে চেপে ধরলো নোভা–,,কি করছিলি ভিতরে?

তৃধা বিরক্তি নিয়ে বললো–,,খাচ্ছিলাম!

আভা চোখ ছোট ছোট করে বললো–,,তার মানে সত্যি সত্যি চুমু?

তৃধা রাম ধম’ক দিয়ে বললো–,,মাথা খারা”প তোর?আমি আর ওই খচ্চ’র ব্যাটা!আসতাগ”ফিরুল্লাহ আমার এখনই কেমন ব”মি ব”মি পাচ্ছে!

নাদিম এসে বললো–,, একদিনে, একটা চুমুতে প্র্যাগনে”ন্ট কেমনে হয়!

নিশি বলে উঠলো –,,এই সব গুলা চুপ কর বলছি, আমি তো ওই সময় এমনি বলছিলাম ওই কথা!

আভা তেড়ে এসে ধাম ধুম লাগালো নিশির পিঠে।পরবর্তী ক্লাসের ঘন্টা পড়তেই সবাই দৌড়ে গেলো ক্লাসে!
——————-
ঠিক পাঁচ দিন পর বিদায় নিয়েছে তৃধা, আদাভানের দাদা দাদু।তৃধা বলেছে ওদের তো ভার্সিটি বন্ধ দিবে দুই সপ্তাহ পর তখন ওরা বাড়ি যাবে।তাই তারা আর বেশি দিন থাকে নি।

তিন বৃদ্ধা যেতে দেরি তৃধা বের হতে দেরি করেনি।সে তো নাচতে নাচতে হোস্টেলে চলে এসেছে,আদাভান ও মুখের উপর বলেছিলো তোমার মতো আপ’দ কে আমি নিজে গিয়ে রেখে আসতাম যদি নিজ থেকে না বের হতে!
তৃধা অপমান গায়ে মাখেনি এর সাথে থাকতে হবে না এটাই অনেক!

তৃধা নানা বাড়িতে এসেছে আজ,মায়ের সাথে সারাদিন গল্প করবে ভেবেই তার খুশি লাগছে।সকাল সকাল এসে হাজির,তার নানা মামা মামি ও খুশি ভীষণ।

রাজিয়া বেগম তো ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে শুধু জিজ্ঞেস করছে–,,আদাভান কেনো আসেনি?

তৃধা উল্টো পাল্টা বুঝিয়ে শান্ত করেছে,আসলে তৃধাও জানে না আদাভান কোথায়, এই লোকের সাথে ক্লাসের পর আর দেখাই হয় না ওর।
————-
পিহু বলোতো তোমার মা কে?
সারে তিন বছরের বাচ্চা মেয়ে পিহু,খিল খিল করে হেসে আঙুল উঁচিয়ে সামনে থাকা মানুষটি কে দেখালো।

লোকটি হেসে বললো–,,দ্যাট’স গুড!

যুবতী মেয়েটি এসে রেগে বললো–,,কি পাগ”লামো করছো তুমি এই মেয়ে আমার সন্তান হয় কি করে?

যুবকটি বলে উঠলো–,,যেভাবে তুই আমার কাছে প’ড়ে আছিস, ঠিক ওই ভাবেই এই মেয়েটি ও আজ থেকে তোর সন্তান!

সোনালি রেগে বললো–,,তোমার লজ্জা করে না?নিজের পা’পের ফস’ল আমার কাঁধে চাপাতে!

সামনে থাকা যুব’ক রেগে সোনালির গালে চ”ড় বসিয়ে দিয়ে বললো–,তোর মতো চরিত্র”হীনার মুখে নীতি কথা মানায় না।যদি আমার কথার একটু ও নড়চড় করেছিস তো কি কি করবো তোর সাথে, তোর ভালো করেই জানা আছে!

সোনালি চুপ করে চোখের জল ফেলছে।বাচ্চা মেয়েটি ফ্যাল’ফ্যাল করে তাকিয়ে বললো-,,মা!

সোনালির কানে মা ডাকটা বি’ষের মতো ঠেকলো,এইটুকু বাচ্চার প্রতি তার মমতা কাজ করলো না,সে দূরে সরে গেলো।

মাহির অট্ট হাসি দিয়ে বললো–,,এরিশ কে আবার নিজের কে পেতে চাস?তাহলে আমার কথা মতো কাজ কর!

সোনালির চোখে মুখে খুশির ঝল”ক দেখা গেলো–,,কি করতে হবে বলো আমি সব করবো,আমি নিশ্চিত এরিশ আমাকে এখনো ভালোবাসে সব সত্যি জানলে সে আমাকে কিছুতেই ফেরাতে পারবে না!

মাহিরের ঠোঁট জুড়ে বাঁকা হাসি,সে বলে উঠলো–,,তবে তাই হোক,এরিশ তোর আর তৃধা আমার!
————–
তৃধার ফোন বেজে উঠতেই তা রিসিভ করলো রাজিয়া বেগম আদাভান রাজিয়ার কন্ঠ শুনেই সালাম দিলো।আদাভান সুযোগ বুঝে রাজিয়া বেগম কে বললো–,,মা তৃধা কে বলুন না একটু দ্রুত বাসায় আসতে,আসলে আজকে আমার বড় মামার বাসায় আমাদের সব ভাই বোন কে ইনভাইট করেছে,তৃধা আমার সাথে ঝ’গড়া করেছে তাই এখন যেতে চাচ্ছে না,আপনার ওখানে গিয়ে বসে আছে।

তৃধা লাউডস্পিকারে সবই শুনছে আর সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করছে,কি খারা’প লোক।রাজিয়া বেগম চোখ পাকিয়ে তৃধার দিকে তাকালো।
রাজিয়া বেগম বললো–,,বাবা তুমি চিন্তা করো না আমি তৃধা কে পাঠিয়ে দিচ্ছি এখনই!

তৃধার মা ফোন কেটেই তৃধা কে দিলো ধম’ক,জামাইয়ের সাথে সামান্য রাগ করে এখানে চলে এসেছিস?তোর মামা শ্বশুর কি ভাববে না গেলে,আর এমন ছেলেমানুষী করবি না।যা আমি ড্রাইভার কে বলছি তোকে পৌঁছে দিয়ে আসবে!
তৃধা পরাজিত সৈনিকের মতো সব শুনলো,তার পর গাড়ি দিয়ে আদাভানের বাসায় ও গেলো কি দিন আসলো তার!

তৃধা ভিতরে আসতেই আদাভান দাঁত কেলিয়ে হাসলো,তৃধা গিয়ে চুপচাপ সোফার উপর বসলো সময় এখন এগারোটা ত্রিশ,আজ শুক্রবার ক্লাস নেই তাই দুজনই ফ্রি!

তৃধা কে চুপচাপ দেখে আদাভান নিশ্চিত ঝ’ড়ের আগের পরিবেশ!
তৃধার পড়নে আকাশী রঙের কুর্তি সাথে সাদা ওড়না।

আদাভান বলে উঠলো –,,শাড়ি পড়বে প্লিজ?

তৃধা মুখ তুলে তাকালো তার সহজ সরল স্বীকারোক্তি –,,আমি শাড়ি পড়তে পারি না আদাভান!

আদাভান ভ্রু কুঁচকে বললো–,, মন খারাপ?

তৃধা কিছু বললো না।আদাভান এসে তৃধার পাশে বসলো ইতস্তত করে তৃধার হাতে হাত রেখে বললো–,,কি হয়েছে আমাকে বলো!

তৃধা চোখ বন্ধ করে বললো–,, এতো ভালো ব্যবহার করছেন যে মতলব কি?

আদাভান নিঃশব্দে হাসলো–,,ভাবছি একটা ব্রেন ছাড়া বল”দ মহিলার সাথে বন্ধুত্ব করে নিবো!

তৃধা চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বললো–,, আপনি আসলে শান্তির মানুষ না,কোথায় যাবেন চলুন না হয় আমি এখন ঘুমিয়ে পড়বো আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে!

আদাভান তৈরি হয়ে বসে আছে,কিছু একটা ভেবে রুমের ভিতর গেলো।আলমারিতে কিছু একটা খুঁজলো, তৃধা পেছনে গেলো,একবার জিজ্ঞেস ও করলো কি খুঁজছেন?

আদাভান কাঙ্ক্ষিত জিনিস হাতে পেয়ে মৃদু হাসলো।তার পর তৃধার দিকে ব্যাগ টা এগিয়ে দিয়ে বললো–,,এটা পড়ে আসো,আমার মনে হয় তোমার গায়ে ফিট হবে!

তৃধা সন্দেহজনক চোখে তাকালো,আদাভান বললো–,,একজনের জন্য খুব যত্ন করে কিনেছিলাম,কিন্তু দেওয়ার সৌভাগ্য হয়নি।তাই তোমায় দিলাম!

তৃধা ব্যাগটা নিয়ে বললো–,, তাই তো বলি,সৌভাগ্য হাতছাড়া হয়ে গেলো তাই শা”লার ব্যা’টা এখন দুর্ভা’গ্যের সাথে বন্ধুত্ব করতে চাচ্ছে!

আদাভান তৃধা কে ঠেলে বাথরুমে পাঠিয়ে দিলো।তৃধা বের হলো পড়নে তার সাদা রঙের চুড়িদার, আদাভান হাত ঘড়ি পড়তে পড়তে পিছনে তাকালো তৃধার দিকে তাকিয়ে থমকে গেলো,হাত থেকে খসে পড়ে গেলো হাত ঘড়িটা, তৃধা ঘড়িটার দিক তাকিয়ে নিচু হয়ে তুলে নিলো।

তৃধা ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বললো–,,টাকা আছে দেখেই যে জিনিস পত্র এভাবে ভাঙ্গবেন এমন তো কোনো কথা নেই।সাবধানে কাজ করতে পারেন না?

আদাভান হুট করেই হেসে বললো–,, দেখেছো আজ আমরা ম্যাচিং ম্যাচিং!

তৃধা ভেংচি কেটে বললো–,,মর’ন!শত্রু’র শ’ত্রু বন্ধু হয় শুনেছিলাম।শ”ত্রু শ”ত্রু বন্ধু হয়ে যায় তা তো কোনো দিন শুনিনি!

আদাভান তৃধার হাত টেনে বললো–,,দেরি হচ্ছে আমাদের!
,,,,,,,,,,,,,
আদাভানের মামার বাসায় এসে তৃধা অবাক,আদাভানের সব কাজিন রা এখানে আছে।

আদাভানের মামা মামির সাথে কথা হলো তৃধার।দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই সব ভাই বোন রা আদাভান কে চেপে ধরলো।সবার একটাই কথা চুপি চুপি বিয়ে করে নিয়েছো ভাইয়া কাহিনি কি?
তৃধা বুঝতে পারলো, তার চেনা আদাভান আর এখনকার আদাভানে অনেক অমিল,এই আদাভান অন্য রকম, ভাই বোনদের কাছে একজন আদর্শ বড় ভাই,এই আদাভান হাসতে জানে,মজা করতে জানে।সবার সাথে মিশতে জানে তার মাঝে গম্ভীরর্যতার ছিটেফোঁটা ও নেই,একজন চঞ্চল প্রাণবন্ত মানুষ!তবে তৃধার সামনে এতোটা কঠোর কেনো থাকে?শুধু তৃধা কে তার পছন্দ নয় বলে!

তৃধার ভাবনার এক ফাঁকে আদাভানের কাজিন নাজিয়া উৎসুক হয়ে বললো–,,ভাইয়া ভাবি তোমাদের লাভ স্টরি টা ফটাফট বলে ফেলো দেখি!

আরাফাত নাজিয়া কে ধম’ক দিয়ে বললো–,,বেয়া”দব,ছোট ছোটর মতো থাক!বেশি পে’কে গেছিস?বলবো নাকি মামি কে!

নাজিয়া মন খারা’প করলো না মোটেও সে দ্বিগুণ চেঁচিয়ে বললো–,,আরাফাইত্তা ওরফে হালকা পাতলা বড় ভাই,আমি মোটেও ছোট না গুনে গুনে সতেরো বছর আমার!তা ভাবিমনি বলে ফেলো তো তাড়াতাড়ি।

এলিজা বলে উঠলো–,,হ্যাঁ ভাবি বলে ফেলো,দাদু আর দাদি বাড়ি গিয়ে তো আমাদের কান পঁচি’য়ে ফেলেছে তোমাদের প্রেমের নমুনা বলতে বলতে, এখন শুরু থেকে সব বলো,আমার তো মনে হয় তোমাদের আগে থেকেই কিছু মিছু চলছিলো,কি বলিস বাকিরা?

সব ভাই বোন রা সম্মতি দিলো,ফে’সাদ পড়লো আদাভান, তৃধা ওদের মধ্যে তো প্রেমের প ও নেই!

তৃধা মনে মনে বললো–,,শা’লা এর সাথে আবার প্রেম হইবো কেমনে?রুচি এতো ডাস্ট”বিন হয়ে যায়নি আমার!

সবার জোড়াজুড়ি তে তৃধা বলে উঠলো–,,ওই আসলে,ইয়ে মানে,প্রেম কাহিনি মানে, ওমমমমমম আআ,,,!

আদাভান বলে উঠলো—,,হ্যাঁ হ্যাঁ ওইটাই!

নাজিয়া বলে উঠলো প্রেম কাহিনি মানে–,,ইয়ে মানে হ্যাঁ মানে?

তৃধা শুকনো ঢোক গিলে বললো–,,আসলে প্রেম কাহিনি টা চাইনিজ ভাষায় তো তাই বলতে পারছি না!

আদাভান অদ্ভুত ভাবে তাকালো তৃধার দিকে,বলে কি এই মেয়ে।আদাভান বলে উঠলো–,,ওই হয়েছে কি তোদের ভাবির যা মুখ মানে উঠতে বইতে খাইতে ঘুমাইতে সব সময় খালি গালিগা”লাজ করে,শা”লা ছাড়া তো কথাই বলে না,আহ্ কি বলবো কি যে মধুর লাগে শুনতে ইশ্!জানিস তো আমি আবার গালি-গালাজ লাভার,সেই ক্ষেত্রে তোদের ভাবি কে ভালো লেগেছে, গালি দেওয়া মানুষ ইকুয়ালস টু গালি পছন্দ করা মানুষ মানে বেস্ট কাপল তো বেস্ট লাভ স্টরি!কি বলিস?

সব ভাই বোনেরা হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে, অন্য দিকে তৃধার চোখে যেনো আগু”ন ঝরছে, যা স্পষ্ট জানান দিচ্ছে তোকে একবার হাতের কাছে পাই লবন ছাড়াই চি”বিয়ে খাবো শা”লা প্রফেসর!

চলবে…….