নোলককন্যা পর্ব-০১

0
64

#নোলককন্যা
সূচনা পর্ব
#অক্ষরময়ী

শরৎ এর আকাশে দল বেঁধে ছুটোছুটি করছে মেঘদল। ছোঁয়াছুয়ি খেলায় মেতেছে তারা। প্রকৃতি-ও নিশ্চয়ই আজ কোনো উৎসবে মেতেছে। বাতাসেরা ছন্দ মিলিয়ে নাচছে। সুর তুলেছে নাম না জানা একঝাঁক পাখি। ঝাঁকে ঝাঁকে অবলিলায় উড়ছে মুক্ত আকাশে। নদীর চরের বালির বুকে কাশফুল বাতাসের প্রবল বেগের সাথে লড়াইয়ে হেরে গিয়ে লুটিয়ে পরছে ভূমিতে। সারি সারি কাশফুল দেখে মনে হচ্ছে কেউ কাশবনগুলো নিজে হাতে যত্ন করে সাজিয়ে রোপণ করেছে। নির্দিষ্ট স্থান পর পর কাশবন, আর তাতে ফুটে আছে টুকরো টুকরো সাদা মেঘ। এ যেনো কাশফুল নয়, বরং মাটিতে খন্ডিত মেঘের লুটোপুটি। শরতের আকাশ-ভূমি উভয়ে সেজেছে শুভ্রতায়।

নদীর পানিও বিস্ময়কর ছন্দ তুলে নাচছে। কিছু সময় পর পর নদীর পানি তীরে এসে চরের বালিতে ধাক্কা খাচ্ছে। ছলছল মৃদু শব্দও শোনা যাচ্ছে। পদ্মা নদীর ছোট্ট শাখা মনতরী, মনতরীর বুকে জেগেছে চর। চরের বালুতে পা ফেলতেই বালি কণা চারদিকে সড়ে গিয়ে বালির ভিতরে তলিয়ে যাচ্ছে পা। শরীরের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে পা ঠেলে বের করে আবারও সামনে পা ফেলে কাশবনের মাঝে হেঁটে বেড়াচ্ছে আদ্রিকা। নীল আকাশের মেঘ, আকাশের বুকে ডানা মেলে উড়ে চলা পাখি, মাটিতে বাতাসের তালে কোমড় দুলিয়ে নেচে ওঠা কাশফুল কিংবা নদীর বুকে বয়ে চলা জলের ঢেউ। আজ সবকিছুই শৃঙ্খলা মেনেছে। সবই মনোমুগ্ধকর এক ছন্দ মেনে চলছে।

ছন্দ নেই শুধু আদ্রিকার চলার গতিতে, সে ডানে- বায়ে, সামনে-পিছনে দিশেহারার মতো ছুটোছুটি করছে। ঠোঁটের কোণে সর্বজয়ের হাসি, চোখে-মুখে বিস্ময়।
শরতের শুভ্রমেঘ শুধু আকাশেই নয়, বিস্ময়ের চোখের সামনে মনতরী চরের বালিতেও নেমে এসেছে, এ‌ যেনো এক টুকরো শুভ্র মেঘ।
আধাঘন্টা যাবৎ অনবরত ছুটোছুটি করেও একটুও ক্লান্ত হয়নি আদ্রিকা। ফিরে তাকায়ও নি পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিস্ময়ের দিকে। বিস্ময়ের উপস্থিতি সে বেমালুম ভুলে গেছে। ধীরপায়ে সামনে এগিয়ে এলো বিস্ময়। আদ্রিকার খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,

– ‘আমার আকাশের একটুকরো নিজস্ব মেঘ।’

হঠাৎ কানের কাছে কারো আওয়াজে চমকে পিছনে তাকাতে গিয়েও থেমে গেলো আদ্রিকা। বিস্ময় তার খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে। এতোক্ষণের হারিয়ে যাওয়া ভয়টা আরো জেঁকে বসলো। শুকিয়ে যাওয়া গলা থেকে ফ্যাসফ্যাস আওয়াজ বের করে মৃদুস্বরে ডাকলো,

– ‘ বিস্ময় ভাই..’

সাদা শাড়ি নীল পাড়, নীল ব্লাউজ পরিহীতা সদ্য তরুনী। চুলগুলো খোঁপা বাঁধা, খোঁপায় বেলীফুলের গাজরা। কানে ঝুমকা, কপালে টিকলী, গলায় ঝুলছে লম্বা নেলকেস। দু’হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি। দেশাত্মবোধক গানের দলীয় নাচের একদম পারফেক্ট সাজসজ্জা। বিস্ময় তার হাতটা তুলে আদ্রিকার কানের ঝুমকায় আঙ্গুল দিয়ে আস্তে করে টোকা দিতেই দুলতে শুরু করলো ঝুমকো।
দুলতে থাকা ঝুমকোর দিকে তাকিয়ে আদ্রিকার আরেকটু কাছে এসে বিস্ময় বললো,

– ‘আজকের আবহাওয়া এবং এই পরিবেশে তোর সাজটা একদম ঠিক আছে। তুই কি আগে থেকে কোনোভাবে জানতি, আজকে আমি তোকে চরে‌ নিয়ে আসবো?’

– বিস্ময় ভাই, আমি বাড়ি যাবো।

একা একজন পরপুরুষের সাথে জনমানব শুণ্য চরে এতোক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিকা। শরতের মনোমুগ্ধকর, ছবির মতোন এমন রুপ দেখে তা ভুলেই গিয়েছিল সে। বিস্ময়ের এভাবে পাশে এসে দাঁড়াতেই হুশ ফিরে আসে। এই মুহূর্তে সব ছেড়ে একছুটে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে আদ্রিকার। কিন্তু উপায় নেই, বাড়ি বহুদূরের পথ। কমপক্ষে তিনমাইল। পশ্চিমাকাশের সূর্য হেলে পড়তে পড়তে নদীর বুকে তলিয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যে নামতে আর বাকি নেই। আলো কমে আসলে স্বর্গপুরী রাক্ষসরাজ্যে পরিণত হবে। সময় থাকতে বেরিয়ে যেতে হবে মনতরীর চর থেকে। বিস্ময়ের আচরণে একটুও হেলদুল নেই। তার চলা ফেরা নির্বিকার। আদ্রিকার কথা শুনেও যেনো সে শুনতে পায়নি এমন ভঙ্গিমা। আদ্রিকা যতই ফিসফিস করে কথা বলুক, নিরবতায় ভরা এই চরে আদ্রিকার এতো কাছে দাঁড়িয়ে সব কথাই শুনতে পাচ্ছে বিস্ময়। কিন্তু সে আদ্রিকার কানের ঝুমকোর সাথে খেলায় ব্যস্ত।
আদ্রিকা মনে মনে প্রচুর বিরক্ত হলেও, মনের সবটুকু সাহস সঞ্চার করে ঘুরে দাঁড়াতেই বিস্ময়ের বুকের সাথে ধাক্কা খেলো। তড়িৎ গতিতে এক পা পেছনে গিয়ে বিস্ময়ের দিকে চেয়ে দেখলো। বিস্ময়ের ঠোঁটে দুষ্টু হাসি। চোখ নামিয়ে নিলো আদ্রিকা। মিনমিনিয়ে বললো,

– ‘সন্ধ্যে নামছে। ফিরে চলুন।’

– ‘নামুক সন্ধ্যা। আমার প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে আমি কোথাও যাচ্ছি না।’

দু’হাত বুকের উপর আবদ্ধ করে মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়ালো বিস্ময়। দৃষ্টি রাখলো নদীর বুকে ঢেউয়ের দিকে। ছলছল শব্দ করে বয়ে চলা ছোট ছোট ঢেউ আছড়ে পরছে নদীর তীরে। সাথে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে চরের চারদিকের বালুকণা।

– ‘সময়মতো বাড়ি না পৌঁছালে মা খুব বকবে বিস্ময় ভাই। আমার যেতে হবে এক্ষুনি।’

– ‘তোকে কে আটকিয়ে রেখেছে? আমি কি তোর পা বেঁধে রেখেছি? কই দেখি? তোর পা তো ঠিকঠাকই আছে। ‘

চিন্তাভরা চোখে আদ্রিকার পায়ের দিকে তাকালো বিস্ময়। টকটকে লাল আলতা রাঙা পা’দুটো। আদ্রিকার নগ্নপায়ের দিকে তাকাতেই বিস্ময়ের মনে ভয়ানক একটা ইচ্ছে জাগলো। আলতা রাঙ্গা পায়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেওয়ার ইচ্ছে।
বিস্ময়ের দৃষ্টি লক্ষ্য করে আদ্রিকা তার পায়ের দিকে তাকালো। চোখে নেমে আসছে উপচে পরা জলের ঢেউ। বিস্ময় হাত ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসার সময় স্যান্ডেল জোড়া পরার সময়ও পায়নি সে। পায়ের গোড়ালি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নগ্ন পা জোড়াকে বালুর আরো গভীরে নিয়ে গেলো আদ্রিকা।

– ‘আমি একা কিভাবে যাবো? আপনি নিয়ে এলেন। ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াটা কি আপনার দায়িত্বে পরে না?’

– ‘আমি তো বলিনি ফিরিয়ে নিয়ে যাবো না। আমার সময় হলে, আমি তোকে সহী-সালামত বাড়ি পৌঁছে দিবো।’

– ‘আপনার সময় কখন হবে?’

– ‘যখন আমি আমার কাঙ্খিত উত্তর পাবো।’

– ‘আপনি আমাকে জোর করছেন, বিস্ময় ভাই।’

অসহায় সুরে আদ্রিকার বলা কথায় বিস্ময় মুহূর্তেই ফোঁস করে রেগে গেলো। আচমকা আদ্রিকার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে নিজের দিকে টেনে আনলো। আদ্রিকার মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে গিয়ে দাঁতে দাঁত চিপে বললো,

– ‘জোর করছি আমি তোকে? হুম? কখন জোর করলাম? কীভাবে করলাম? আমি এখনও তোর সাথে যথেষ্ট ডিসেন্ট বিহেইভ করছি।’

বাহুতে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলেও, সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করলো না আদ্রিকা। জীবনে প্রথম কোনো পুরুষের ছোঁয়া তার আত্মা পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিয়েছে। চারদিকের মোহনীয় রুপ কেটে সন্ধ্যার আবহাওয়ায় কেমন গা ছমছমে অনুভুতি ছড়াচ্ছে। ছন্নছাড়া পাখিরা নীড়ে ফেরায় ব্যস্ত। নীল আকাশের সাদা মেঘের নিচে একদল সাদা বক ত্রিভুজ আকৃতিতে দল বেঁধে উড়ে যাচ্ছে। সবার প্রথমে থাকা বকটি প্রচন্ড শব্দ করে ডেকে উঠলো। হয়তো সাথীদের পথের দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। পাখিদের মধুর ডাক এখন আর্তনাদের মতো শোনাচ্ছে। কানের পর্দায় আঘাত আনছে, মস্তিষ্ক ভনভন করছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃতি তার সামনে থাকা যুবকের রাগে ভয়ংকর হয়ে উঠা চেহারা দেখে নিজেকে সামলাতে পারলোনা। আসন্ন কোনো বিপদের আশংকায় এবং ভয়ে হু হু করে কেঁদে উঠলো।
আদ্রিকার কান্না বিস্ময়ের বিগড়ে যাওয়া মেজাজে আরো হাওয়া দিলো। হালকা ধাক্কা দিয়ে আদ্রিকার বাহু থেকে হাত সড়িয়ে নিলো। সামনে থাকা কাশবনে পরপর কয়েকটা লাথি দিয়ে রাগ কমানোর চেষ্টা করলো। এতোদিন আদ্রিকা শুধু লোকমুখে বিস্ময়ের রাগের কিছুটা বর্ণনা শুনেছে। আজকে হঠাৎ সামনাসামনি এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। বিস্ময়ের এমন রুপ তার কাছে নতুন।
ভয়ে কুঁকড়ে একপাশে দাঁড়িয়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদছে আদ্রিকা। ইচ্ছে করছে একছুটে এখান থেকে পালিয়ে যেতে। স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দলীয় একটি নৃত্যে অংশগ্রহণ করেছিলো সে। আদ্রিকা কখনোই নাচের সাথে জড়িত ছিলো না। বান্ধবীদের জোড়াজুড়িতে কোনো রকম হাত-পা চালিয়েছে গানের তালে। সে জানে মঞ্চে যথেষ্ট বিদঘুটে দেখতে লাগছিলো তাকে। তবুও গানের তালে নাচের দলের সাথে তাকেও নাচতে হয়েছে। যে কখনোই নাচের একটা মুদ্রাতেও অঙ্গ দুলায়নি, সে হঠাৎ সম্পুর্ণ একটি গানে নেচেছে। এখন সারা শরীর জুড়ে তীব্র ব্যাথা। মনে হচ্ছে কেউ তাকে বেধরম পিটিয়েছে।
হাঁটা তো দূরের কথা, দাঁড়িয়ে থাকতেই কষ্ট হচ্ছে তার। এমন অবস্থায় তিন কিলোমিটার হেঁটে বাড়ি যাওয়ার কথা ভাবতেই পারছে না।

মনতরীর চরের সাজানো কাশফুল বাগানের সর্বনাশ করে, কিছুক্ষণ পর শান্ত হলো বিস্ময়। অস্থিরভাবে ডানহাতের আঙ্গুল চালাচ্ছে মাথার চুলে। কখনো মাথার চুল টেনে এলোমেলো করছে, আবার কখনো আঙ্গুল দিয়েই চুলগুলো পেছনের দিকে গুছিয়ে রাখছে।

বিস্ময় শান্ত চোখে আদ্রিকার কান্না ও ভয়ে ফ্যাকাশে চেহারার দিকে তাকিয়ে তার দিকে এগিয়ে যেতেই ভয়ে আদ্রিকা আরোও দু’পা পিছিয়ে গেলো। বিস্ময় দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেখানেই দাঁড়িয়ে আদ্রিকাকে ডাকলো।

– ‘এদিকে আয়।’

আদ্রিকা চোখ তুলে তাকালেও, একটুও নড়লো না।

– ‘কি হলো? ডাকছি তো। আয় এদিকে। আমি বাঘ না ভাল্লুক, এতো ভয় পাচ্ছিস কেন?’

দ্বিধা-দ্বন্দভরা গুটিগুটি পা ফেলে আদ্রিকা বিস্ময়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু বিস্ময়ের দিকে তাকালো না। নিচের দিকে নজর রেখে দাড়িয়ে রইলো।
বিস্ময় আদ্রিকার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,

– ‘আমাকে ভালোবাসা যায় না, আদ্রি? কেনো যায় না? আমি কি এতোই অযোগ্য? কিসে কমতি আমার? এতো অবহেলা কেনো করছিস?’

বিস্ময়ের করুণ কন্ঠ আদ্রিকার কিশোরী হৃদয়ে শীতল প্রবাহ বইয়ে দিলো। এসব কিছু তার কাছে একদম নতুন। কখনো এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি। এতো করুণ স্বরে কেউ ভালোবাসা চায়নি। কেমন অনুভব করা উচিত? কি জবাব দেওয়া উচিত? কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। মাথার ভিতর কেমন গন্ডগোল বেঁধে গেছে। কান গরম হয়ে গেছে। গা ঘামছে।

উত্তরের অপেক্ষায় সময় বয়ে যাচ্ছে, কিন্তু উত্তর আসছে না। ধৈর্য্যহারা বিস্ময় আবার রেগে গেলো।

– ‘কিছু বলবি না তো। ঠিক আছে। এভাবেই চুপ করে দাঁড়িয়ে থাক। আমিও বলে দিচ্ছি, উত্তর না পেলে এখান থেকে কেউ ফিরছে না। কারো কান্নাকাটিতে আমার মন গলছে না আর।’

আদ্রিকা এমনিতেই অথৈই জলে হাবুডুবু খাচ্ছে, বিস্ময় তার কথার জালে তাকে আরো চুবিয়ে মারছে। আরেকটু ভয় দেখিয়ে বললো,

– ‘একটু পরেই এখানে নেশাখোর- মাতালদের আড্ডা বসবে। এমন ফাঁকা জায়গাই তো তাদের চাই। আমি প্রেমের প্রস্তাবে রিজেক্টেট হয়ে, কষ্ট ভুলতে তাদের সাথে যোগ দিবো। মাতাল হয়ে এই বালির উপর শুয়ে রাত কাটিয়ে দিবো। তুই নিজেরটা ভেবে নে।’

আসন্ন বিপদের কল্পনা করেই আদ্রিকার জ্ঞান হারাবার উপক্রম। একদল মাতালের সাথে চরে অবস্থানের পর নিজের করুণ পরিণতির শেষটা ভাবতেই পারছেনা।

– কি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে বলুন। এক্ষুণি দিচ্ছি। তবু দয়া করে এখান থেকে আমাকে নিয়ে চলুন।

– ‘আমাকে ভালোবাসিস, আদ্রি?’

ভালোবাসা নিয়ে কখনো ভাবার সময়ই পায়নি আদ্রিকা। কাউকে কখনো ভালোও লাগেনি। ভালোলাগা বা ভালোবাসার অনুভুতি কেমনটা সেটাও সে জানে না। বিস্ময়কে নিয়ে কখনোই সেভাবে ভাবে নি। সবসময় তাকে কলেজের সিনিয়র ভাই হিসেবেই শ্রদ্ধার নজরে দেখে এসেছে। তাই উত্তর অবশ্যই “না” হবে। কিন্তু উত্তর দেওয়া আগেই, বিস্ময় বলে উঠলো,

– ‘উত্তর অবশ্যই আমার পছন্দের হতে হবে।’

আদ্রিকা অপরাধী স্বরে বললো,

– ‘আমি আপনাকে নিয়ে কখনো ওভাবে ভাবি নি। ভালোবাসার অনুভুতিও আমার অজানা।’

– ‘উত্তর আমার পছন্দ হয়নি। আমি এখন মনতরীর চরে এলোমেলো হয়ে ঘুরে বেড়াবো। প্রেমের সংগ্রামে হেরে যাওয়া সৈনিক।’

বিস্ময় সামনের দিকে হাঁটা শুরু করতেই আদ্রিকা চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

– ‘ভালোবাসি না তো বলি নি। ভালোবাসবো। শুধু একটু সময় দরকার। আপনার প্রতি অনুভুতিটা ঠিক কেমন, বুঝতে পারছি না।’

যে করেই হোক বাড়ি ফিরতে হবে। সত্য- মিথ্যা সবকিছুই প্রয়োগ করে দেখছে আদ্রিকা। একটা মিথ্যে আশায় ভর করে বিপদ থেকে উদ্ধারের চেষ্টা অন্যায় নয়।

আদ্রিকার মুখে ‘ভালোবাসি’ শুনতে না পেলেও, বিস্ময় প্রেমের নতুন সম্ভাবনা দেখতে পেলো। ভালো যখন বেসেই ফেলেছে, আদ্রিকার থেকে ভালোবাসা আদায় করে তবেই নিস্তার। আদ্রিকার কথার জবাবে কিছু না বলে, নতুন ভবিষ্যত গড়ার পরিকল্পনায় চরের শুরুর দিকে রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা বাইকের দিকে চললো বিস্ময়। স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে তার পিছু ছুটলো আদ্রিকা। অবশেষে সে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে চলেছে।

(চলবে)
রামাদান মুবারক