নোলককন্যা পর্ব-০২

0
65

#নোলককন্যা
দ্বিতীয় পর্ব
#অক্ষরময়ী

মেইন রোডের সাথে ইটের দেয়াল ঘেরা বাড়িটায় মস্ত একটা লাল রঙের লোহার গেট। লাল রঙের ইটগুলো শ্যাওলা, ধুলো-ময়লা জমে আর লাল নেই। কালচে রঙ ধারণ করেছে। কালোর সাথে লাল রঙের দরজা, একটু বেশিই ফুটে ওঠে। দরজার পাশেই দেয়ালে সাদা নেমপ্লেটে‌ কালো গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ” চুপকথা “।
লিখাটায় হাত বুলাতেই তাচ্ছিল্যের হাসি দেখা গেলো আদ্রিকার মুখে। গেট পেরিয়েই বিশাল উঠোন। উঠোনের মাঝে ইট বিছানো রাস্তা সোজা চলে গিয়ে ঠেকেছে সামনের একতলা ভবনে। আদ্রিকা ইট বিছানো রাস্তায় খুব ধীরে ধীরে হাঁটছে। ওর চোখ দুটো আলতো করে বুজানো। নাক টেনে লম্বা শ্বাসের সাথে বাতাসে ভেসে বেড়ানো মিষ্টি ঘ্রাণ নিচ্ছে। ইট বিছানো রাস্তার দুপাশে যেনো সবুজ ঘাসের মাদুর বিছানো। সবুজের মাঝে লাল, সাদা, হলুদ নানান রঙের ফুল ফুটে আছে। ইটের রাস্তার দুধারে এই বাগান আদ্রিকার খুবই পছন্দের। পুরো বাড়ির মধ্যেই এই জায়গাটা এবং ছাদে শান্তি খুঁজে পায় সে।
একতলা ভবনের সামনের অংশটুকু বারান্দার মতো। বারান্দায় দুটো বেতের চেয়ার রাখা আছে। আদ্রিকার বাবা মোকাররম মজুমদার দিন-রাতের বেশির সময় এখানেই কাটায়। বারান্দা পেরিয়ে কাঠের সদর দরজা। দরজার সামনের দাঁড়াতেই আদ্রিকা নিজের পায়ের দিকে তাকালো, পায়ে স্যান্ডেল না থাকায় পা ধুলোয় মাখামাখি হয়ে গেছে। দরজা থেকে বাগানের দিকে ফিরে এলো। বাগানে গাছে পানি দেওয়ার জন্য একটি পানির লাইনের ব্যবস্থা করা আছে সেখানে দাঁড়িয়ে পা দুটো ধুয়ে নিলো। তারপর খুব সতর্কতার সাথে পা টিপে টিপে দরজা পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলো। দরজা পেরিয়ে ড্রইংরুমের একপাশে কিচেন এবং খাবার টেবিল। অপরপাশে কয়েকটি সোফা এবং সামনের টেবিলে একটি টিভি রাখা। ড্রইং রুমের সামনে দুটি বেডরুম, একটি গেস্টরুম। আদ্রিকা বাম পাশের রুমের দরজা খুলে ভেতরে তাকিয়ে দেখলো রুমের লাইট বন্ধ তবে সন্ধ্যার হালকা আলোয় বিছানায় কাউকে শুয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। পা থেকে মাথা অব্দি কম্বল মুড়ে শুয়ে থাকায় মানুষটিকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। আদ্রিকা খুব সাবধানে পা টিপে টিপে বিছানার কাছে গিয়ে নিজেও কম্বলের ভিতরে ঢুকে শুয়ে পড়ল। এক হাত, এক পা মানুষটির শরীরের উপর উঠিয়ে দিয়ে মানুষটিকে জাপটে ধরলো। তারপর আহ্লাদী কন্ঠে বলল,

– ‘ইউ মিস মাই ডান্স।’

আদ্রিকার কথা শুনে মৃদু হেসে তার পাশে মুখ ফিরে আদ্রতা বলল,

– ‘তোকে নাচ শিখিয়েছে কে?’

দুষ্টু বাচ্চারা দুষ্টামি করে ধরা পরলে যেমন ভাবে তাকায় সেরকম মুখখানা করে হালকা হেসে আদ্রিকা বলল,

– ‘তুমি।’

আদ্রিকার মাথায় হাত দিয়ে হালকা বারি মেরে আদ্রতা বলল,

– ‘তোকে এত কষ্ট করে নাচ শিখাইলাম আমি।‌ তোর নাচের প্রতিটি মুদ্রা আমি জানি। সেখানে মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে তোর নাচ দেখতে হবে! তোকে নাচ শিখাতে গিয়ে কমপক্ষে সবার শ’বার তোকে নাচতে দেখেছি। মঞ্চে দাঁড়িয়ে তোর নাচ দেখার প্রয়োজন নেই।’

আদ্রিকা গুরুগম্ভীর ভাব নিয়ে বলল,

– ‘ রিহার্সেল এর সময় নাচ দেখা আর মঞ্চে দাঁড়িয়ে নাচার সময় দেখা দুটোর মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।’

– ‘সেটা আমি জানি। আমার খুব ইচ্ছে ছিল নৃত্যরত অবস্থায় মঞ্চে দাঁড়ানো তোকে দেখবো। মঞ্চে তুই নাচবি আর আমি দর্শক সারিতে বসে মুগ্ধ হয়ে হাত তালি দেবো। কিন্তু পোড়ামুখো জ্বরের জন্য কিছুই হলো না।’

– ‘আমার যা নাচের শ্রী! তা দেখে হাত তালি দেওয়া দূরের কথা, তুমি হাসতে হাসতে কূল পাবে না। এমন জঘন্য..’

গা দুলিয়ে হাসতে হাসতে কথাগুলো বলতে গিয়ে মাঝপথে থেমে গেলো আদ্রিকা। আদ্রতার জ্বরের কথা তো সে ভুলেই গিয়েছিলো। কপালে হাত দিয়ে দেখলো, এখনও‌ গায়ে ভীষণ জ্বর। চিন্তায় কপালে মৃদু ভাঁজ পরলো।

– ‘ জ্বরে তো গা পুরে যাচ্ছে। কমে তো নি, উল্টো বেড়েছে। ঔষধ খাওনি?’

কপাল থেকে আদ্রিকার হাতটি সড়িয়ে দিয়ে আদ্রতা বললো,

– ‘ ঔষধ খেয়েছি আমি। ঔষধ কাজ করতে সময় লাগবে। সেই সময়টুকু দিতে হবে তো। আর আমি জ্বরে পরলে জানিস না সহজে সেরে উঠি না। চিন্তা করিস না আমি ঠিক আছি।’

– ‘খুব ঠিক আছো তুমি। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।’

বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো আদ্রিকা। এসব রোগ সম্পর্কে তার ধারণা নিতান্তই কম। বাড়ির ছোট সদস্য হওয়ায় এসবে তার মাথা ঘামাতে হয় না। রোগ, রোগীর সেবার জন্য ওর বড় বোন আদ্রতা আছে। বাড়ির সমস্ত দায়িত্ব একা হাতে সামলাতে পারে সে। অথচ আদ্রতার থেকে মাত্র দু’বছরের ছোট হয়েও আদ্রিকার বাস্তবিক জ্ঞান শূণ্যের কোঠায়। আদ্রতার অসুস্থতায় চিন্তিত হলেও তাকে সুস্থ হতে সাহায্য করার কাজে আদ্রিকা একদম ভূমিকা রাখতে পারবে না। এসময় একমাত্র ভরসা, ওদের মা নীহার মজুমদার। বাড়িতে প্রবেশের সময় নীহারকে সে দেখতে পায়নি। অথচ নীহার বেশির ভাগ সময় রান্নাঘরেই ব্যস্ত থাকেন। কোথায় যেতে পারে এই ভর সন্ধ্যে বেলায়। একটু ভাবতেই আদ্রিকার মাথায় এলো, ‘ছাদে আছে নিশ্চয়ই।’ রোজ সকাল-সন্ধ্যা ছাদের বাগানের গাছগুলোতে পানি দিতে হয়। এই কাজটা অবশ্য আদ্রিকাই করে। এটিই একমাত্র কাজ যা এ বাড়িতে আদ্রিকাকে করতে বলা হয়েছে। আজকে বাড়ি ফিরতে দেরী হওয়াতে নীহার বাগানের পরিচর্যায় হাত দিয়েছেন। আদ্রতার জ্বর বাড়ছে। ঔষধ খাওয়ার পরও জ্বর কমছে না। এসময় কি করণীয় তা একমাত্র মা-ই বলতে পারবে। মাকে ডাকতে দরজার দিকে পা বাড়ালো আদ্রিকা। কিছু একটা মনে পরতেই আবার আদ্রতার দিকে তাকালো। আদ্রতা অবশ্য আদ্রিকার দিকে তাকিয়ে ছিলো। শাড়ি পরায় আদ্রিকার বয়সটা একটু বেড়ে গিয়েছে মনে হয়। বাচ্চা মেয়েটাকে কেমন সদ্য যুবতী মনে হচ্ছে। আদ্রিকার সাথে চোখাচোখি হতেই আদ্রতা ঠোঁট টেনে হাসার চেষ্টা করলো। কিন্তু জ্বরের তাপে ঠোঁট পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে। আদ্রিকা হাসলো না। গম্ভীরভাবে জিজ্ঞাসা করলো,

– ‘তুমি সত্যি ঔষধ খেয়েছো?’

আদ্রতা এবার আর কিছু বললো না। আদ্রিকার দিকে চেয়ে রইলো।

– ‘আমি সকালে দেখেছিলাম ঔষধ শেষ হয়ে গেছে। মাকে বলেও গিয়েছিলাম। আব্বু কি ওষুধ নিয়ে এসেছে?’

এবারও আদ্রতা কিছু বললো না। কিন্তু আদ্রিকার দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সাদা সিলিং এর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আদ্রিকা ফিরে গিয়ে বিছানায় আদ্রতার গা ঘেঁষে বসে রইলো। সে জানে আব্বু ঔষধ নিয়ে আসেনি। এসব ব্যাপারে তার উদাসীনতা সীমাহীন। নিজেদের খেয়াল নিজেরই রাখতে হয়। আদ্রিকার স্কুলব্যাগে জমানো কিছু টাকা আছে। সেই টাকা দিয়ে জ্বরের জন্য ঔষধ কেনা যাবে। কিন্তু আদ্রিকা তো দোকান চিনে না। বাড়ি থেকে মার্কেট অবশ্য বেশি দূরে না। মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ। মার্কেটে খুঁজলে একটা ঔষধের দোকান ঠিক পেয়ে যাবে। কিন্তু জ্বরের জন্য কোন ঔষধটা কিনবে? দোকানীকে কি বলবে? কীভাবে বললে? সে তো কখনো কোনো কিছু কিনেনি। ওর সবকিছু তো আদ্রতা সামলায়। যখন যেটা প্রয়োজন মাকে বা আদ্রতাকে বললেই পেয়ে যায়। নিজেকে কিছু করতে হয় না। আদ্রতার সাথে থেকে একটু একটু করে শিখে নিলে আজকে সে নিজে আদ্রতার জন্য ঔষধ আনতে পারতো।
আদ্রিকা ঘাড় ঘুরে বোনের দিকে তাকালো। জ্বরে কেমন লাল হয়ে গেছে মুখটা। ফর্সা মানুষ, একটু যন্ত্রণাতেই লাল হয়ে যায়। যেনো কেউ‌ রক্তার্ত করে দিয়েছে। আদ্রতার রক্তবর্ণ মুখটার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ আদ্রিকার মনে হলো,
‘বিস্ময় ভাই তো সাথে ছিলো। উনাকে বললেই তো ঔষধ এনে দিতো। কেনাকাটার মতো ঝামেলার কাজ আদ্রিকার শিখতে হবে কেনো? বিস্ময় নিশ্চয়ই আদ্রতার মতোই তার সব কাজ সামলে নিবে।’

নিজের ভাবনায় নিজেই খানিকটা থমকে গেলো আদ্রিকা। কী ভাবছে এসব! মনতরীর চরে থাকাকালীন তো ওই মানুষটিকে নিয়ে কোনো ভাবনাচিন্তায় মাথায় আসেনি, তবে বাড়ি ফিরে তাকেই কেনো মনে পরছে! ছোটবেলা থেকেই প্রেম, ভালোবাসা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা নিয়েই বড় হয়েছে। যারা প্রেম করে তারা কেউ ভালো মেয়ে নয়। ভালো মেয়ে হতে হলে বাবা মায়ের বাধ্যগত থাকতে হবে, প্রেম, ভালোবাসা, ছেলে বন্ধু এসব থেকে দূরে থাকতে হবে। এমনকি বান্ধবী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও মা নীহার বরাবর সতর্কবার্তা দিয়ে গেছেন। তারই ফলস্বরুপ কারো সাথে কথা বলা কিংবা সখ্যতায় আদ্রিকার অসীম ভয়৷ না জানি ব্যক্তিটি কেমন? যদি দুষ্টু প্রকৃতির কেউ হয়, তবে তার সাথে মিশে আদ্রিকা নিজেও দুষ্টু হয়ে যাবে। তাই কোনোপ্রকার ঝুঁকি না নিয়ে, একমাত্র পরিবারের গন্ডির ভেতরেই নিজেকে বন্দী রাখাই আদ্রিকার কাছে ঠিক মনে হয়েছে।
নিজের ভাবনাগুলোকে হাওয়া না দিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো। বারান্দার শেষ মাথায় ছাদে উঠার একটা লোহার সিঁড়ি আছে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠতেই দেখা গেলো সন্ধ্যে পেরিয়ে যাওয়া হালকা আলোয় ঝাঁঝরি হাতে গাছে পানি দিচ্ছে নীহার। আদ্রিকাকে আসতে দেখে নীহার বললো,

– এতো দেরী করে ফিরলে যে?
– অনুষ্টান শেষ হতে দেরী হয়ে গিয়েছিলো।
– অনুষ্টান শেষ হবার অপেক্ষা করতে হবে কেনো? কতোবার বলেছি আগেই বেরিয়ে আসবি। শেষের দিয়ে ভীড় বেড়ে যায়। মানুষজন সব একসাথে বেরিয়ে আসতে গিয়ে হুটোপুটি লাগিয়ে দেয়। তখন ধাক্কাধাক্কি করে বেরিয়ে আসতেও পারবি না। সেই সাহসও তো তোর নেই। কবে যে বুদ্ধিশুদ্ধি হবে! এতো বয়স হয়ে গেলো তবুও ঘটে বুদ্ধির বালাই নেই।

মায়ের কাছে নিজের বোকামির নমুনা শুনতে আদ্রিকার কখনোই ভালো লাগে না। সব কাজে আদ্রতা সেরা, কিন্তু আদ্রিকা লবডঙ্কা। আদ্রিকা নিজেও অবশ্য সে কথা অস্বীকার করে না।সে আসলেই বোকা প্রকৃতির একটি প্রাণী। বোন আর মায়ের ছায়া ছাড়া বাঁচতেই পারে না। তবুও এভাবে মুখে উপর বললে মন খারাপ হওয়া তো স্বাভাবিক। মন খারাপ করেই বললো,

– আমাদের দলীয় নৃত্যটা শেষের দিকে ছিলো। আমাদের পরে অবশ্য আরও কিছু আয়োজন বাকি ছিলো। কিন্তু আমি প্রোগ্রাম শেষ করার আগেই বেরিয়ে এসেছি।

– তবুও এতো দেরী! একা ফিরতে যে পেরেছিস, সেই অনেক। না হলে তো বোনের আঁচল তলেই লুকিয়ে থাকিস।

– শুনো না, আপুর তো ভীষণ জ্বর। তোমাকে যে ঔষধের কথা বলে গিয়েছিলাম, আব্বুকে বলোনি?

– বললেই বুঝি সে শুনে? দুপুরবেলা তো খালি হাতেই এলো। দেখা যাক রাতে আনে কিনা!

– তুমি আরেকবার মনে করিয়ে দিতে তো পারতে?

– তোর মুখ নেই? তোদের বাপকে তোরা সরাসরি বলতে পারিস না? আমাকে কেনো বলতে হবে? কোনো খরচের কথা বলতে গেলেই তো একগাদা কথা শুনিয়ে দিবে, সেসব তো আমাকেই শুনতে হয়৷ যতো জ্বালা হয়েছে আমার।

ঝাঁঝরিটা সেখানেই ফেলে রাগে গজগজ করতে করতে ছাদ থেকে নেমে গেলো নীহার। সকালে ঔষধের কথা বলতে গেলেই মোকাররম নানান কথা শুনিয়ে দিয়েছে। সংসারের পেছনে তার উপার্জনের সবটুকু ঢেলে দিতে হচ্ছে। তার রক্ত জল করা পরিশ্রমের অর্থ সে কেনো তাদের পিছনে ব্যয় করবে! এতে তার কী লাভ! এই সংসারের জন্য গাধার মতো খাটতে সে পারবে না। ঘরবাড়ি ছেড়ে কোনো একদিন বেরিয়ে পরবে। নীহার অবশ্য এসবে অভ্যস্ত। শুধু নীহার কেনো, বাড়ির প্রতিটি সদস্য এহন আচরণের সাথে পরিচিত। কিন্তু অভ্যস্ত হতে হতেও কেনো যেনো অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেনি। প্রতিবার এই কথাগুলো আত্মসম্মানে আঘাত হানে। বারংবার অপমানিত হয়েও চাহিদার প্রকোপে ফিরে আসতেই হয়, হাত পাততেই হয়৷ নীহার অবশ্য এসবে ওতোটা তোয়াক্কা করে না। স্বামী দু-চারটে কথা বলতেই পারে৷ দুনিয়াতে এই একটা মানুষই তার আপনজন। তার দয়াতেই তিনবেলা খেতে পারছে, মাথার উপরে ছাদ আছে, গায়ে কাপড় উঠছে, সমাজে সুরক্ষিত আছে। কিন্তু আজকে মন মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে আদ্রতার কারনে। মেয়েটা চোখের সামনেই জ্বরে কাঁতরাচ্ছে। অথচ মা হয়ে সে কিছু করতে পারছে না। নীহার তাই নিজের অপারগতার দন্ড সবাইকে দিচ্ছে। দুপুরের খাবারের পর মোকাররম বেরিয়ে গেলে আদ্রতার মাথায় অনেকক্ষণ জল পট্টি দিয়েছিল। তখন জ্বর কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছিলো। এখন মনে হয় আরও বেড়েছে। আবার জলপট্টি দিতে হবে। মেয়েটার এতো সহনশক্তি দেখে নীহার মাঝেমধ্যে অবাক হয়। একদম নীহারের প্রতিবিম্ব যেনো। মায়ের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সুখ দুঃখ ভাগ করে নেয়। আচার আচরণে মায়ের গুণের পরিচয় পাওয়া যায়, তবে নীহার প্রতিমুহূর্তে আল্লাহর কাছে দোয়া করে, মায়ের মতো ভাগ্য যেনো আদ্রতার না হয়।

(চলবে)