নোলককন্যা পর্ব-০৭

0
36

#নোলককন্যা
#অক্ষরময়ী
সপ্তম পর্ব

চাকরি জীবনের শেষের দিকে এসে জনার্দান রায় প্রায় বছর খানিক সময় ভূবনভোলা থানার ওসির দায়িত্ব পালন করেছেন। দুহাজার সালের দিকে তিনি খুব শখ খানিকটা জমি কিনে দুতলা একটি বাড়ি বানালেন। বাড়ির নিচতলায় পুরোটা গ্যারেজ। যেখানে দুটো জিপ অনায়াসে রাখা যায়। একদম বামদিকে সিমেন্টের ছোট একটি সিঁড়ি বানিয়েছেন। সেই সিঁড়ি দিয়ে জনার্দান রায়ের মতো স্থুল স্বাস্থ্যের অধিকারী একজন মানুষের হাঁটাচলা করা সম্ভব। দোতলায় ‘এল’ প্যাটার্নে ছোট তিনটি কামরা রয়েছে। মাঝখানে অল্পবিস্তর জায়গা করে নিয়েছে ড্রয়িংরুম। তিনটে কামরার জন্য একটি মাত্র বাথরুম। বাড়িতে তিনি একাই থাকতেন বলে হয়তো এই কমন বাথরুমের ব্যবস্থা। একদিন এই বাড়ি ভাড়া দিয়ে চলে যাবেন এটা জানলে হয়তো দোতলার বাকি অর্ধেকটা জুড়ে খোলা ছাদ বানাতেন না। এই খোলা ছাদে বসে জনার্দান রায়ের বেশিরভাগ সময় কাটতো। তাই হয়তো তিনি ছাদটাই একটু বেশি স্থান জুড়ে করেছেন৷ ভবনটির চারপাশ দেয়াল দিয়ে ঘেরা। বাড়ির বাইরে দূর দূর পর্যন্ত ফাঁকা মাঠ। ধু ধু বিস্তর মাঠের মাঝখানে তবুও গর্বের সহিদ দাঁড়িয়ে আছে দোতলা বাড়িটি। শহর ছেড়ে একটু দূরে অবস্থানের কারনে তার আভিজাত্যে একটুখানি ভাটাও পরেনি। বরং শহুরে বিশালবহুল বাড়িগুলোকে খুব সহজে টেক্কা দিতে পারে এই বাড়িটি।
একাকী মানুষ জনার্দান রায় কী মনে করে এমন নির্জন মাঠের মাঝে বাড়ি তৈরি করেছিলেন, তিনিই জানেন। দুহাজার দশ সালে তিনি রিটায়ার্ড করলেন, তারপর চলে গেলেন গ্রামের বাড়ি যশোর। তার শখের বাড়িটি পরে রইলো শূন্য। তবে তিনি চলে গেছেন বলেই তো আজ পরখ এই বাড়িটিতে আশ্রয় নিতে পেরেছে। এমনিতেই বাবা ইবনূল ইবতেহাজের সাথে পরখের ঝামেলার শেষ নেই। প্রতিনিয়ত তর্ক বিতর্ক চলতেই থাকে। সব কাজেই মতবিরোধ। তাই উচ্চ মাধ্যমিকের পরে পরখ আর নিজ পৈতৃক বাসস্থানে থাকতে চায়নি। ভূবনভোলা একাডেমিকে স্নাতক ডিগ্রির অর্জনের সুযোগ যখন পেয়ে গেলো, তখন একেবারে বাড়ির পাট চুকিয়েই বেরিয়ে এসেছে। কারনও দর্শাতে হয়েছে বটে৷ বাড়িতে ঠিকঠাক পড়াশোনা হচ্ছে না বলে এ যাত্রায় বেঁচে গেছে৷ তা না হলে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইবনূল ইবতেহাজ একমাত্র সন্তানকে কখনো চোখের আড়াল হতে দিতেন না। বর্তমানে পরখ যে খুব একটা বাবার চোখ ফাঁকি দিতে পারছে তা ভাবা একেবারেই বৃথা। একই বাড়িতে না থাকলেও ইবনূল ইবতেহাজের চোখ সর্বদা ছেলের আশেপাশেই থাকে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাসযোগ্য স্থানের খোঁজ করতে গিয়ে জনার্দন রায়ের এই বাড়িটি পরখের নজরে আসে। শহুরে কোলাহল, যান্ত্রিক জীবন থেকে দূরে এমনই একটি পরিবেশ তার দরকার ছিলো। যেখানে নিজের মতো করে সময় কাটাতে পারবে, পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারবে। দুই বছর এই বিশাল বাড়িটিতে একাই ছিলো। তারপর ফ্লাটমেট হিসেবে যুক্ত হয়েছে তারই মতো নির্জনতার ভক্ত আরেকটি যুবক।
বিকেলের পরন্ত রোদে দোতলার খোলা ছাদে টেবিল চেয়ার নিয়ে এতোক্ষণ বই পড়ছিলো। রবিন নুনকো এর লেখা হ্যান্ডবুক অফ রিসার্চ মেথড ফর টুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বইটি অনলাইনে অর্ডার করেছিলো।৷ গত সপ্তাহে বই হাতে পাওয়ার পর থেকেই একটু একটু পড়ে নিচ্ছে৷ কোয়ানটাটিভ রিসার্চ মেথড চ্যাপ্টারটা বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলো। এর মাঝে বাথরুম থেকে উচ্চকন্ঠে ভেসে আসা গানের শব্দে বারবার মনোযোগ নষ্ট হয়ে অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নে মস্তিষ্ক ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। ড্রয়িংরুমে প্রবেশের দরজাটি খোলা থাকার বাড়ির ভিতকার শব্দ পরিষ্কারভাবে পরখের কানে আসছে।

“দেখি তোমাকে আছো দাঁড়িয়ে আনমনে নীল শাড়িতে
হাজার ভিড়ে সব ছাড়িয়ে শুধু তুমি আমার চোখে
পথের ধারে তোমার আশায় ভালোবাসার ধূসর আলোতে
আছি দাঁড়িয়ে স্বপ্ন নিয়ে তোমার আকাশে সুর ঝরাতে

এক গুচ্ছ কদম হাতে ভিজতে চাই তোমার সাথে
এক গুচ্ছ কদম হাতে ভিজতে চাই তোমার সাথে..”

বিস্ময়ের গলার স্বর খুব যে একটা খারাপ, তা কিন্তু নয়। বরং ভার্সিটিতে লোকাল সিঙ্গার হিসেবে তার ভালোই খ্যাতি রয়েছে। পরখ নিজেও কালেভদ্রে বিস্ময়ের গানে খানিকটা আগ্রহ দেখায়। তবে আজ গানের সুর কানে বিশ্রী ঠেকাচ্ছে। এলোমেলো প্রশ্নগুলোর উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত পড়ায় মন বসবে না। বই বন্ধ করে টেবিল চেয়ার ঘরে গুছিয়ে রেখে ড্রয়িংরুমের ডিভানে বসে বিস্ময়ের অপেক্ষা করতে লাগলো। খানিকবাদে বাথরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো অর্ধনগ্ন যুবক। ঊর্ধ্বাংঙ্গ অনাবৃত, নিম্নাঙ্গে একটি তোয়ালে প্যাচানো। ভেজা চুলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কপাল জুড়ে। এই পলক তাকিয়ে পরখ চোখ নামিয়ে নিলো। এই ছেলের লাজ লজ্জা স্বভাবতই কম। কোনোদিন হবে বলেও মনে হয় না। পরখের অবস্থা দেখে বিস্ময় মুচকি হেসে হাতে থাকা তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে লাগলো।

– ছেলে মানুষের এতো লজ্জা থাকতে নেই, জানিস তো? লজ্জা নারীর ভূষণ, সেই লজ্জা ভাঙ্গানোর দায়িত্ব পুরুষের। পুরুষ নিজেই যদি লজ্জা পেয়ে যায় তাহলে মানব সভ্যতা বিলীন হয়ে যাবে।

মুখে দুষ্ট হাসি ফুটিয়ে চোখ টিপে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো বিস্ময়। ঘরে গিয়ে কাপড় পরিধান করা পর্যন্ত পরখ ড্রয়িংরুমেই বসে রইলো। বিস্ময় জামা কাপড় পরে সভ্য হয়ে ডিভানের পাশে থাকা সোফায় বসে পরখের উদ্দেশ্যে আবার বললো,

– কি বলবি ঝটপট বলে ফেল।
– আমি আবার কি বললো?
– মাথায় তো অবশ্যই কিছু ঘুরছে। বই রেখে উঠে আসলি! দুনিয়া ভেসে গেলেও তুই বই পড়া শেষ না করে উঠিস না। আজকাল কার চিন্তায় বিভোর থাকা হচ্ছে, ইবতেহাজ পরখ?

মন পড়ে ফেলার অদ্ভুত বিদ্যার অধিকারী বিস্ময়, সে কথা পরখ ভালোভাবেই জানে। পরখের মনে কিছু জানার আগ্রহ জন্মেছে তা জেনেও বিস্ময় ইচ্ছে করে অন্য টপিক এনে জুড়ে দিবে, ফাজলামি করবে। সবকিছুতেই সে আনন্দ খুঁজে পায়৷ সারাক্ষণ হাসি তামাশায় মেতে থাকে। দুজনের জীবন একই রকম, তবুও পরখ কেনো যেনো সবকিছুর প্রতি খুবই বিরক্ত। অথচ পার্থিব কোনোকিছুর অভাব পরখের কোনোকালেই ছিলো না, আজও নেই৷ যাক, সেসব চিন্তা বাদ দিয়ে আপাতত বিস্ময়ের সন্দেহের তীরের গতিরোধ করা যাক।

– আমার কথা বাদ দে। তুই আজকাল খুব গান গেয়ে বেড়াচ্ছিস! এবার কার পিছনে ছুটলি?
– এবার সেবার বলে কিছু নেই। বিস্ময়ের মন এক সময় শুধু একজনের পেছনেই ছুটে। দ্বিচারিতা আমার স্বভাব নয়৷
– বড় কাব্যিক হয়ে গেছিস৷ ব্যাপার কি?
– প্রত্যেক প্রেমিক পুরুষ একজন কাব্যিক, প্রেমিকা তার বহু সাধনার কাব্য।
– নতুন কাব্য লিখা শুরু করেছিস। বাহ! বাহ! তা কতোদিন চলবে এই কাব্য লেখা?

বিস্ময় হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলো। গলার স্বরে দৃঢ়তা এনে বললো,
– আমি কখনো কাউকে অকারণ ছাড়িনি। যাকে ভালোবেসেছি, মন প্রাণ দিয়েই বেসেছি৷ কিন্তু মেয়েগুলো শালা বড্ড ত্যাদড়। প্রথম কয়েকদিন কচি ডগার মতো নুইয়ে চলবে৷ কিছুদিন যেতেই আসল রুপ বেরিয়ে আসে। এটা করা যাবে না, এখানে যাওয়া যাবে না, ওর সাথে মেশা যাবে না, আড্ডা দেওয়া না, বেশি রাত পর্যন্ত বাইরে থাকা যাবে না, সকালবেলা ঘুম বাদ দিয়ে তার সাথে দেখা করতে ছুটো ইত্যাদি, ইত্যাদি। হাজারখানা নিয়ম, লাখখানেক আবদার৷ এভাবে নিয়মনীতির দলিলে সম্পর্ক কন্টিনিউ করা অসম্ভব। আমার বাবা-মা এতোদিনে আমাকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। দুদিনের মেয়ে এসে আমাকে কন্ট্রোল করতে চায়! এভাবে ক্ষয়ে ক্ষয়ে জীবনযাপনের থেকে ছেড়ে দিয়ে দিলাম। অন্য কোনো পাখি খুঁজে খাঁচায় বন্দী করুক। আমাকে দিয়ে ওসব হবে না।
– তোকে দিয়ে ওসব হবে না, জানার পরেও গার্লফ্রেন্ড ছাড়া টানা একমাসও তো কখনো দেখলাম না। ন্যাড়া নাকি দ্বিতীয়বার বেলতলা যায় না। তুই বেলতলার নিচে ঠায় দাঁড়িয়ে আছিস।
– একজন মনমতো হয়নি বলে আশা ছেড়ে দিবো? একবার না পারিলে দেখো শতবার- কবিতাটা পড়িস নি? আমি বারবার চেষ্টা করবো, বারবার প্রেমে পরবো৷ একদিন ঠিকই সোলমেট খুঁজে পাবোই। সেই আশাতেই আমি নিত্যদিন বুক বাঁধি, বুঝলে বন্ধু?
– হুম বুঝলাম। এবারের কার খাঁচায় বন্দী হতে গেলি?
– হা হা হা। সোলমেট বুঝি পেয়েই গেলাম। মেয়েটা অন্য সবার থেকে আলাদা। ভীড়ের মাঝে দাঁড়িয়েও সহজেই পার্থক্য চোখে পরে৷ কাদামাটির মতো নরম। ঠিকঠাক গড়িয়ে নিতে পারলেই পারফেক্ট লাইফ পার্টনার।
– তুই এবার কুমোরের কাজ শুরু করলি তাহলে?
– বাচ্চা একটা মেয়ে। এবছর কলেজে উঠেছে ঠিকই কিন্তু মনটা কেজি স্কুলের বাচ্চার মতোন৷ মাথার উপরে বড় বোনের ছায়া আছে দেখে জীবনের কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন এখনো হয়নি। আশা করি কখনো হতেও হবে না। বাকিটা জীবন আমি আগলে রাখবো।
– এমন মেয়ে এখনো আছে নাকি? আজকাল হাইস্কুলের বাচ্চারাই যা পাকনামি করে!
– নিজে চোখে না দেখলে, নিজে খবর না যোগালে আমি নিজেই বিশ্বাস করতাম না। নিজে পরখ করে দেখেছি। অবিশ্বাসের অবকাশ নেই।
– এমন মেয়ে তোর সাথে প্রেম করতে রাজি হয়ে গেলো?
– বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। সেই কলেজের ভর্তির দিন থেকে পেছনে পরে ছিলাম। কতো অনুনয়-বিনয়, কতো কাকুতি-মিনতি করে তবেই না আজকে হ্যাঁ বললো।
– আজকে! মানে আজ থেকে অফিশিয়ালি সে তোর গার্লফ্রেন্ড পদে যুক্ত হলো? এতোদিন তোর চেহারায় যে চমক ছিলো, সেগুলো কার জন্য?
– ওকে এক ঝলক দেখলে, ওর সাথে একটু কথা হলেই আমার মন ভালো হয়ে যায়। মেয়েটা অন্যরকম। আশেপাশে থাকলে চারদিক আনন্দময় হয়ে যায়।
– তুই গেছিস, পুরোই ভেসে গেছিস। এই অনুভূতি দীর্ঘস্থায়ী হলেই হয় আরকি।
– আমার অনুভূতিকে পিষে ফেলার জন্য মেয়েগুলোই দায়ী৷ এ যাবৎ যতোগুলো গার্লফ্রেন্ড ছিলো, আমি সম্পর্কে থাকাকালীন সবার প্রতি লয়্যাল ছিলাম। আমার অনুভূতি, ভালোবাসা সত্যি ছিলো। কিন্তু ওদের আচরণের কারনে আমার ভেতরকার ভালোবাসা ধীরে ধীরে মরে গেছে। তেঁতো অনুভূতি জন্মেছে। প্রতিবার ওপর পাশের আচরণের কারনেই আমার মন উঠে গিয়েছিলো। জোর করে সম্পর্কের বোঝা বয়ে বেড়ানোর থেকে ছেড়ে দেওয়াই মঙ্গল।
– ভয় তো এখানেই বিস্ময়। তোর মন খুব দ্রুত উঠে যায়। যতো দ্রুত ফল করিস, তত দ্রুত মুভ অন করতে পারিস। তোর এক্স গার্লফ্রেন্ডগুলো না হয় ম্যাচিউর ছিলো, ব্রেকআপের বিষয়টা ইজিলি নিয়েছে। কিন্তু এখন যার কথা বললি, তার ব্যাপারে বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিস। বাচ্চা মানুষ, এসব নিতে পারবে না।
– ব্রেকআপের কথা আসতেছে কেনো? আমি সারাজীবনের কথা ভাবছি, আর তুই প্রেম শুরু হতে না হতেই ব্রেকআপের কথা তুলতেছিস!
– আগেই সাবধান করে দিচ্ছি।
– আমার বন্ধু হয়ে আরেকজনের তোর চিন্তার শেষ নাই। দেখলি না, চিনলি না, এমনকি নামটাও জানিস না। তাতেই তার জন্য চিন্তা হচ্ছে! এমন করে মাঝেমধ্যে আমার জন্য চিন্তা করলেও তো পারিস।
– তুই ছোট বাচ্চা না যে তোর জন্য চিন্তা করতে হবে। কিচেনে খাবার আছে, গিয়ে খেয়ে নে। সন্ধ্যে নেমে গেছে, তুই হোটেলে কখন যাবি? তোর ডিউটি কতোক্ষণ আজকে?
– রাত দশটা পর্যন্ত। তবে আমি ওতোক্ষণ থাকতে পারবো না। যাবো তো এটেন্ডেন্সের জন্য। সিগনেচার করে, একটু ঘুরাঘুরি করে চলে আসবো।
– এভাবে ইন্টার্নশীপ কমপ্লিট করলে তোর নিজেরই লস।
– ওহো! জ্ঞান দিস না। এসব হোটেলে ঘড়ি ধরে কাজকর্ম আমার দ্বারা হবে না। ইন্টার্নশিপ করতে হবে জন্য তাও এতোটুকু করতেছি। মার্ক নিয়ে আমার টেনশন নাই। আমার সার্টিফিকেট আটকাবে এমন সাহস কারো হবে না।
– ক্ষমতার অপব্যবহার।
– আমার বাপের দরকার সার্টিফিকেট, সেটা পাইলে তার হাতে তুলে দিবো। এরপর বিজনেস আমার হাতে। আমার রক্তে বিজনেস মিশে আছে৷ এরজন্য আলাদা করে পড়াশোনা, এক্সাম, ইন্টার্নশিপের প্রয়োজন হবে না। আর তো কয়েকটা দিন, তারপর দেখবি এসব হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট ফিল্ডে রাজ করবে এই বিস্ময়। সেই আমি নাকি অন্যের হোটেলে খাটতে যাবো!
– সেই তো বাবার তৈরি করা রাজত্বের রাজা।
– আমি ছাড়া রাজত্বের হাল ধরবে কে?পায়ে মাড়িয়ে চলে গেলে রাজাহীন রাজ্য ধসে পরবে৷ রাজ্যের দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নিয়ে আমি বরং তাদের উপর দয়া করতেছি। পজেটিভ চিন্তা কর। সব সময় নেগেটিভ চার্জে চার্জিত থাকিস কেন তুই?

এই প্রশ্নের উত্তর পরখের জানা নেই৷ প্রতিটি কাজ, প্রতিটি মুহূর্ত সে খারাপ কিছু আশংকায় কাটায়। শুভ চিন্তার আগেই অশুভ চিন্তা মস্তিষ্কে হানা দেয়। এর কারন পরখের জানা নেই৷ ভীতু বলেই হয়তো সাহস করে এগিয়ে যেতে পারে না। কীসের এতো ভয় তার! উত্তর জানা নেই। পরখ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে দেখে বিস্ময় দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিচেনের দিকে রওনা দিলো। পরখের সবদিক ভালো শুধু এই নেগেটিভ থিংকিং ব্যাপারটা ছাড়া। সবকিছুতেই খুঁদ খুঁদ ভাব। কাজ শুরুর আগেই আকাশ পাতাল ভেবে বসে থাকে। অদূর ভবিষ্যতের চিন্তা আর নীতিবাক্য দিয়েই তার জীবন পরিপূর্ণ। মাঝেমধ্যে দু চারটে নীতির প্যারা বিস্ময়কেও পড়ে শোনায়। বিস্ময় অবশ্য গায়ে মাখে না। পরখ বলে, আর বিস্ময় শুনে যায়। কিছুদিন হলো এক্সাম শেষ হয়েছে। কোথায় একটু রিলেক্স করবে, তা না। ইন্টার্নশিপের নামে গাধার মতো খাটাচ্ছে। পরখ তো সেই সকালে উঠে সাহেব বাবু সেজে হোটেলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে। ও মনিং শিফট চুজ করেছে। বিস্ময়ের সকালে ঘুম ভাঙে না দেখে নাইট শিফট নিয়েছে। বাবার অর্থের দাপট আর নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতার বলে ইন্টার্নশিপের প্যারা থেকে নিজেকে বাচিঁয়ে রেখেছে। নিজের সুবিধা মতো কাজে যায়, এক দু ঘন্টা থেকে বেরিয়ে আসে। ম্যানেজার ছেলেটা তো বিস্ময়কে স্যার, স্যার ডাকতেই কূল পায় না। আজও দুই ঘন্টার জন্য হোটেলে গিয়ে ম্যানেজারের কেবিনে বসে কফি খেয়ে চলে আসবে। এই তো চলছে জীবন।

(চলবে…)