নোলককন্যা পর্ব-১৪+১৫

0
37

#নোলককন্যা
#অক্ষরময়ী
চতুর্দশতম পর্ব

– মনতরীর বুকে নতুন নাও এসেছে। ময়ূরপঙ্খী নাও। পুরো নৌকা নীল রঙের। মনতরীর স্বচ্ছ জলে পাল তুলে যখন ভেসে বেড়ায় মনে হয় নদীর বুকে নীল আকাশ নেমে এসেছে৷ দেখতে যাবি?

ফোনের এপাশে আদ্রিকা দু চোখ বুঝে কল্পনায় হারিয়ে গেলো। নীল রঙ এর একটা ময়ূরপঙ্খী নৌকা, গাঢ় নীল রঙা বিশাল পাল তুলে মনতরীর স্বচ্ছ জলের মধ্যে ভাসছে। নৌকার কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিকা ও বিস্ময়। নৌকায় কোনো মাঝি নেই। হাওয়ার তালে পালের সাহায্যে নৌকা চলছে। বিস্ময়ের হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে দু চোখ বুজে বাতাসের ঘ্রাণ নিচ্ছে সে। পাশে দাড়ানো বিস্ময়ের চোখ আদ্রিকার দিকে। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য তাকে আকর্ষিত করতে পারছে না৷ পাশে দাড়িয়ে থাকা এক টুকরো মেঘের কাছে সৌন্দর্য নস্যি।

– কিরে যাবি?
বিস্ময়ের ডাকে আদ্রিকার ঘোর ভাঙ্গে। খাতায় আঁকা বুকি করা হাতটা থেমে যায়। দাতের ফাকে কলম কামড়ে ধরে কিছুক্ষণ ভাবে৷

– কীভাবে যাবো? ইমপোর্টেন্ট ক্লাস আছে। কোনোভাবে মিস দেওয়া যাবে না। কলেজ ছুটির পর আপুর সাথে ফিরতে হবে৷
– একদিন না হয় ক্লাস মিস দিলি?
– এভাবে ঘন ঘন ক্লাস মিস দিলে ধরা পরে যাবো৷
– ঘন ঘন মানে? কয়দিন ক্লাস মিস দিয়েছিস তুই? ওই তো সপ্তাহে একদিন৷ তার জন্য এখন আমাকে কথা শোনাচ্ছিস! আমার একার দায় পরেছে না? তোকে আমি জোর করে নিয়ে যাই? শোন, তোর যেতে ইচ্ছে না হলে সরাসরি বলে দিবি৷
– আহা! রাগছেন কেনো?
– কারন আছে তাই৷ সপ্তাহে একটা দিন তোর সাথে সময় কাটানোর সুযোগ পাই। তাও আবার সময় ধরে পয়তাল্লিশ মিনিট৷ এখন তুই এমনভাবে বলতেছিস যেনো আমি তোর পড়াশোনার খুব ক্ষতি করে দিচ্ছি৷ আমার জন্য তোকে বাধ্য হয়ে যেতে হয়৷ সত্যি, বল তো। তোর ইচ্ছে করে না, তাই না?
– আমি এমন কিছু বলতে চাইনি৷ সপ্তাহভর আপনার সাথে দেখা হওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনি। আমার অবস্থা আপনি বুঝবেন না। থাক সেসব কথা। কালকে ছুটির পরে কোনোভাবে ম্যানেজ করে নিবো। আপনি গেটে অপেক্ষা করিয়েন। আপু আসতেছে এখন রাখি।

বিস্ময়কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আদ্রিকা ফোন কেটে দিলো। ততোক্ষণে আদ্রতা ঘরে চলে এসেছে। ফোন হাতে আদ্রিকাকে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করলো,
– পড়তে বসে ফোন হাতে কেন তোর?

প্রেম করলে মানুষ মিথ্যা কথা বলা শিখে যায়৷ বোকারাও চালাক হয়ে যায়। আদ্রিকাও শিখে গেছে। ঝটপট বলে দিলো,
– মেঘা কল দিয়েছিলো। ওর সাথেই কথা বলতেছিলাম।
– মেঘা কে?
– আমার কলেজ ফ্রেন্ড।
– ফোন নাম্বার পেলো কোথায়?
– আমি দিয়েছি।
– মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর। আব্বার সামনে ফোন বাজলে সে আরেক কাহিনী শুরু হয়ে যাবে৷
– যখন তখন ফোন দিতে বারণ করেছি। জরুরি দরকার থাকলে কল দিবে৷ প্রয়োজনে যদি এই ফোনটা কাজেই না লাগে তাহলে এটা রেখেছো কেনো?
– অবুঝের মত কথা বলতেছিস কেন? বাড়ির পরিস্থিতি তুই জানিস না? ফোন ব্যবহার করা আব্বার পছন্দ না।
– পছন্দ না কিন্তু নিজের প্রয়োজনে ঠিকই এসে বলে একে কল দেও, ওকে কল দেও। আজব হিপোক্রেসি!

আদ্রিকার কথা শুনে আদ্রতা সুক্ষ্ম চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। বাড়ির পরিবেশটাই কেমন গোলমেলে হয়ে যাচ্ছে৷ যদিও আগে থেকেই অস্বাভাবিক ছিলো খানিকটা। তবুও ভালো, খারাপ যেমনটাই হোক, দিন কেটে যাচ্ছিলো। কিন্তু এখন হঠাৎ করেই পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। এর প্রধান কারন আদ্রতার বিয়ে। মাহিন প্রতিদিন চালের আড়তে গিয়ে মোকাররমের মাথায় কুবুদ্ধি দান করে আসে। মাঝেমধ্যে আদ্রতার ইচ্ছে করে নিজের সুখের বিনিময়ে মায়ের, আদ্রিকার জীবন গুছিয়ে দিতে। কিন্তু পরক্ষণে মাহিনের সাথে একটা নরকময় সংসার কল্পনা করে শিউরে উঠে। এ স্বার্থপরতা নয় তো কি? নিজের সুখের কথা ভেবেই তো সে বিয়েতে রাজি হচ্ছে না। তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে পুরো পরিবারকে। হতাশ আদ্রতা আস্তে-ধীরে বিছানায় গিয়ে বসলো। বালিশে মাথা ঠেকিয়ে বললো,
– দিনদিন তুই অনেক খিটমিটে মেজাজের হয়ে যাচ্ছিস। আগের কিউট বাচ্চাটাকে মিস করি।

জ্বরের পরে শারীরিক ক্লান্তি থাকে অনেকখানি। কিছুক্ষণের মধ্যে আদ্রতা ঘুমিয়ে গেলো। পরার টেবিলে বসে থাকলেও আদ্রিকার পড়া হলো না। বোনের বলা কথাগুলো মাথায় ঘুরছে। সত্যি কি সে খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে? কি জানি! ও বুঝতে পারে না। তবে অনেকদিন সেই আগের আদ্রতার পাশে বসা হয়না। এখন শুধু সবার থেকে আলাদা হয়ে একাকী মুহুর্তে বিস্ময়ের সাথে কথা বলার সুযোগ খুঁজে।
আগে নীহারের সাথে দু বোনে মিলে কতো কতো গল্প করতো। এখন পড়ার বাহানায় আড্ডার আসর থেকে উঠে আসে। বইয়ের পাতার নিচে ফোন লুকিয়ে চলে মেসেজিং। নিজের মধ্যকার পরিবর্তনের কথা ভেবে আদ্রিকার ভারী মন খারাপ হলো৷ এভাবে দূরে সরে যাওয়ায় সকলের সন্দেহের দৃষ্টিতে পরে গেলে সমস্যা। বইপত্র গুছিয়ে রেখে আদ্রতার পাশে গিয়ে শুয়ে পরলো। বোনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর গায়ের গন্ধ নিলো প্রাণভরে। অন্যরা যেখানে মায়ের গায়ের গন্ধে স্বস্তি খুঁজে পায়, আদ্রিকা সেই মা, মা গন্ধটা পায় আদ্রতার দেহ থেকে।

****

আজ কলেজে যাওয়ার সময় আদ্রিকার পাশ দিয়ে হুশ করে একটা বাইক চলে গেলো। চমকে আদ্রতার হাত চেপে ধরার আগেই আদ্রতা দ্রুত টান দিয়ে ওকে রাস্তার থেকে সরিয়ে নিজের বামদিকে নিয়ে এলো। দ্রুতগামী বাইকটিকে উদ্দেশ্য করে কয়েকটি গালি দিতেও ভুললো না। বোনের পাশে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে আদ্রিকা। চলতেও ভুলে গেছে। তা দেখে আদ্রতা বললো,
– থামলি কেনো? দেরী হচ্ছে না! চল।
– বাইকটা চেনা লাগছে।
– আমাদের পরিচিত কার এমন দামী বাইক আছে?
– পরিচিত না। কোথায় যেনো দেখেছি!
– একই ব্রান্ডের কতো বাইক রাস্তায় চলে। এভাবে চেনা যায় নাকি। নে, আয়৷

আদ্রিকার মন থেকে সন্দেহ দূর হলো না। বাইকটাকে সে চিনে। ওই যে ওদের বাড়ির গেটের সামনে সকাল-সন্ধ্যা দেখা যায়। সেই কালো পালসার ওয়ান ফিসটি বাইকটা। এই প্রথম আদ্রিকার এতো কাছাকাছি এসেছে। ভয়কে মনের মধ্যে চেপে রেখে বোনের সাথে পা মিলালো। আদ্রতা সেসব খেয়াল করলো না। সে চিন্তিত আদ্রিকার একলা বাড়ি ফেরা নিয়ে। গতকাল নাকি মেঘা ফোনে বলেছে, ক্লাস শেষে আইসিটি ল্যাব আছে। তাই আদ্রিকা বলছে, এতোক্ষণ অপেক্ষা না করে বাড়ি চলে যেতে। সে একাই ফিরতে পারবে। কিন্তু আদ্রতার চিন্তা দূর হচ্ছে না।
– সত্যি একলা যেতে পারবি?
– সেদিন তোমার জ্বর ছিলো যে, আমি একলা বাড়ি ফিরি নি?
– তা ফিরেছিস। ল্যাব আর কতোক্ষণ হবে! ওই এক দু ঘন্টা৷ আমি মাঠে বসে না হয় অপেক্ষা করে নিবো।
– শুধু শুধু কেন অপেক্ষা করবা! তোমরা আমাকে একলা ছাড়োও না, আবার বলো আমি নাকি একলা চলতে পারি না৷ চলতে দিলে তো শিখবো।
– আচ্ছা ঠিক আছে। তবে সাবধানে থাকবি। কলেজ থেকে বেরিয়ে রিক্সা নিয়ে নিবি। হেটে যেতে হবে না।

রিক্সা ভাড়া এবং টিফিন বাবদ কিছু টাকা আদ্রিকার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আদ্রতা চলে গেলো।
অন্যদিনের তুলনায় আজকে সময় যেনো একটু ধীরেই চলছে। ক্লাস রুমের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সেরকমই মনে হলো আদ্রিকার৷ এতোদিন ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বিস্ময়ের সাথে ঘুরতে গিয়েছিলো। কিন্তু আজকে যাবে স্কুল শেষে। আবার সেই মনতরীর পাড়ে। যেখানে ওদের প্রথমবার একান্তে আলাপ হয়েছিলো। অজানা শিহরণ বয়ে যাচ্ছে আদ্রিকার শরীর জুড়ে৷ প্রথম প্রেমের অনুভূতি এমন হয় বুঝি! সবকিছুতেই রোমাঞ্চকর অনুভূতি। মিঠা মিঠা অভিজ্ঞতা। সবকিছুর অভিজ্ঞতা হোক, শুধু ঝগড়াটা ছাড়া। ব্যস্ত ক্লাসের মাঝে আনমনে মুচকি হাসে আদ্রিকা।
ঠিক সময়ে ক্লাস শেষ হলেও আদ্রিকার মনে হলো দীর্ঘ রজনী পার হতে হলো। ক্লাস থেকে বের হওয়ার তাড়া যেনো আর সইছে না। ছুটির ঘন্টা বাজতেই অন্য সকল শিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে আদ্রিকা দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে এলো। ধুপধাপ সিড়ি পেরিয়ে বাইরে এসে সতর্ক দৃষ্টি মেলে তাকালো চতুর্দিকে। নাহ, আশেপাশে পরিচিত কাউকে দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া কলেজ ড্রেস পরিহিতা প্রতিটি মেয়েকেই দূর থেকে একইরকম দেখায়। তবুও কীভাবে যেনো বিস্ময় ওকে চিনে ফেলে। এই ভেবে আরেকবার পুলকিত হলো আদ্রিকা। ভূবনভোলার মেইন গেটের বামপাশে অপেক্ষা করছিলো বিস্ময়। আদ্রিকাকে দেখতে পেয়ে মুচকি হাসলো। বিপরীতে আদ্রিকার মুখের হাসি আরও চওড়া হলো। লাজুকতা নেমে এলো মুখ জুড়ে। যা দেখে বিস্ময়ের হৃদয় শতবার পুলকিত হয়।
বিস্ময়ের বাইকের কাছাকাছি এসে আদ্রিকা নিচু কন্ঠে জানালো,
– এখানে বাইকে উঠা যাবে না৷ আরেকটু সামনে আসুন।

ধুপধাপ পা ফেলে আদ্রিকা সামনে এগিয়ে গেলো। বাইকের উপরে বসে সেদিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো বিস্ময়। মেয়েটা দিনদিন চালাক হয়ে যাচ্ছে৷ বুদ্ধির উন্নতি ঘটতে দেখে বিস্ময় নিজেকে বাহবা দিলো। বাহ! বিস্ময়, বাহ! তোমার সঙ্গ পেয়ে বোকা মেয়েটা কতোকিছু শিখে গেলো! অল ক্রেডিট গোজ টু ইউ এন্ড ইউর লাভ।
বাইকের ইঞ্জিত চালু করতেই বিস্ময়ের ফোন বেজে উঠলো পকেটে। স্ক্রীনে প্রদর্শিত কলার আইডির নাম দেখে ভ্রু কুঞ্চিত হলো বিস্ময়ের। আবার কোন ঝামেলা পাকিয়েছে কে জানে! বিরক্ত হলেও ফোন রিসিভ করলো।
কলেজ থেকে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিকা। এ পথে কয়েকজন শিক্ষার্থী বাড়ির দিকে ফিরছিলো। তাই রাস্তার দিকে পিঠ করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সে। কয়েক মিনিট পর দ্রুত বেগে এসে থামলো বিস্ময়ের বাইক। আদ্রিকা এগিয়ে এসে দেখলো বিস্ময় কেমন কাচুমাচু করছে। কপাল কুঞ্চিত করে সেদিকে তাকিয়ে আদ্রিকা জানতে চাইলো,
– কি হয়েছে?
– আসলে হয়েছে কি, আজকে আর নদীর পাড়ে যাওয়া হচ্ছে না। তুই বাড়ি চলে যা।
– মানে কি! আপনি নিজে অপেক্ষা করতে বলে এখন এই কথা বলছেন কেনো?
– নিজে অপেক্ষা করতে বলেছি, এখন যেতে পারছি না তাই চলে যেতে বলছি। তার মানে অবশ্যই কোনো কারন আছে। তাই না? এইটুকু তো বুঝ।
– বুঝতেছি এবং কারন জানতে চাইছি।

বিস্ময় তার চোখজোড়া ক্ষণিকক্ষণ বন্ধ করে মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করলো। প্রেম করলে এই এক সমস্যা। সব কাজের কারন দর্শাতে হয়৷ মেয়েগুলা কিছু বুঝবে না, তবুও কারন জানা চাই৷
– পার্টি অফিস থেকে কল এসেছিলো। জরুরি মিটিং আছে। আমাকে উপস্থিত থাকতেই হবে। খুব প্রয়োজন না হলে, আমি নিজেই প্ল্যান করে সেটা ক্যান্সেল করতাম, বল? ঘুরতে যাবো বলে কালকেই না তোকে কতো জোর করলাম!

বিস্ময় ভেবেছিলো আদ্রিকা মানবে না। ঝামেলা করবে, রাগারাগি করবে। অন্য মেয়ে হলে তো এমনটাই করতো। মেয়েরা সহজে ছেলেদের পরিস্থিতি বুঝে না। মেয়েদের সামাজিক জীবনটা অনেক সহজ, সরল। কিন্তু ছেলের সামাজিক জীবনে অনেক কিছু মেনে চলতে হয়। অনেকসময় এক কাপ চায়ের দাওয়াতও ভীষণ জরুরি হয়ে উঠে। গণ্যমান্য ব্যক্তির থেকে চায়ের দাওয়াত অফিসের জরুরি মিটিং এর মতোই প্রয়োজনীয়। মেয়েরা শুনলে বলে, এক কাপ চা খাওয়া তোমার কাছে আমার থেকেও জরুরি হয়ে গেলো? আরে গাধা মেয়ে, তোরা কি বুঝবি বাইরের জীবনের প্যারা। থাকিস তো চার দেয়ালের মাঝে। বাবার টাকায় খাওয়া চলছে। মাথার উপর বাবার ছায়া রয়েছে। বাবার ঘর থেকে বেরিয়ে আবার স্বামীর ছত্রছায়ায় চলে আসিস। পুরুষের সুরক্ষা বেষ্টনীতে থাকা নারীরা কী করে বুঝবে পুরুষের টিকে থাকার লড়াইয়ের কষ্ট!
কিন্তু বিস্ময়কে অবাক করে দিয়ে আদ্রিকা এক কথাতেই বুঝে গেলো।
– ওহ। জরুরি মিটিং থাকলে তো যেতেই হবে। কিন্তু আমি এখন বাড়ি ফিরে গিয়ে কি বলবো?
– বলবি কলেজে এমারজেন্সি মিটিং থাকায় ক্লাস ক্যান্সেল হয়ে গেছে। এমন কতো ক্লাস ক্যান্সেল হয়!
– আচ্ছা ঠিক আছে। আমি এখন যাই। রাতে কথা হবে।
– রিক্সায় তুলে দেই?
– লাগবে না। আমি যেতে পারবো।

যেতে পারবো বললেও আদ্রিকার যাওয়া হলো না। বিস্ময় তার বাইক নিয়ে হাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে ছুটে চলে গেলো। এদিকে ভর দুপুরে রাস্তায় কোনো রিক্সার দেখা মিললো না। দুপুর দুটো বাজতে চলেছে। শ্রমজীবী মানুষেরা নিশ্চয়ই রাস্তার পাশের কোনো সস্তা হোটেলে দু মুঠো ভাতের খোঁজে থেমেছে। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে একটি অটো এসে থামলো আদ্রিকার সামনে৷ চালকের আসনে বসে থাকা যুবকটি আদ্রিকাকে বললো,
– এই সময় রিক্সা পাইবেন না আপা। উঠেন আমি দিয়া আসি।

আদ্রিকা খুশি মনে ফাঁকা অটোতে উঠে বসল। কিন্তু অটো চলতে শুরু করলো তার বাড়ির বিপরীত দিকে।
– উল্টাদিকে কেনো যাচ্ছেন?
– আপা, এই সামনেই একটা দোকানে এই বস্তাটা দিতে হবে। দুই মিনিট লাগবে মাত্র। বস্তাটা ওখানে নামায় দিয়া আপনারে দিয়ে আসতেছি।
– আচ্ছা। তাড়াতাড়ি চলেন।

এমনিতেই বিস্ময়ের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকার কারনে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে। এখন আবার অটোওয়ালার আরেক ঝামেলা। মনে মনে বিরক্ত হলেও আদ্রিকা কিছু বললো না। ফাঁকা রাস্তার মৃদু বাতাস উপভোগ করতে লাগলো। মিরর ভিউয়ে সে দৃশ্য দেখে বাকা হাসলো যুবকটি। বোকা মেয়েটা একবার দেখলোও না অটোতে কোনো বস্তা নেই। সে বললো আর মেয়েটা বিশ্বাস করে নিলো! জম্পেশ একটা পাখি জুটেছে আজকে।

চলবে….

#নোলককন্যা
#অক্ষরময়ী
১৫

‘চুপকথা’য় আজকে আলোচনা সভা বসেছে। খুব বেশি লোকজন নেই সেই সভায়। মোকাররমের বড় ভাই মোজাম্মেল এসেছে ভাইয়ের সাথে কথা বলতে। সাথে ডেকে নিয়েছেন নীহারকে। দ্রুত হাতে নাস্তা গুছিয়ে ট্রে হাতে তুলে নিলো নীহার। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আদ্রতার দিকে তাকিয়ে বললো,
– কিছুক্ষণ পর চায়ের কাপগুলো ট্রেতে সাজিয়ে নিয়ে আসিস। ওড়না দিয়ে ভালোভাবে মাথা ঢেকে নিবি।

আদ্রতা মাথা নাড়িয়ে নীরব সম্মতি জানালো। মেয়ে মুখে কিছু না বললেও নীহার জানে, ওর মেয়েটা ভেতরে ভেতরে ভেঙ্গে চূড়মার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নীহারের কি বা করার আছে। ওর হাত পা বাঁধা। পাশের ঘর থেকে আদ্রতা দু বেণী দুলিয়ে নাচতে নাচতে রান্না ঘরে আসলো। নীহারের হাতের ট্রে থেকে এক পিচ বিস্কুট তুলে তাতে কামড় বসিয়ে বললো,
– আপুর বিয়ে কথা চলতেছে? বড় চাচাকে দেখলাম বারান্দায়।

এই মেয়েকে নিয়ে নীহারের অশান্তির শেষ নাই। পরিস্থিতি বুঝবার ক্ষমতা কোনদিন হবে কে জানে! পিরিচে সাজানো বিস্কুট টান দিয়ে তুলে নিলো। বোনের বিয়ে নিয়ে উৎসাহের শেষ নেই। অথচ এটা ভাবছে না, বিয়ে হয়ে গেলে এ বাড়িতে একা থাকবে কি করে? সারাক্ষণ বোনের ওড়না ধরে ঘুরে বেড়ানো বন্ধ হলে যদি একটু হুশ হয়। বিরক্ত ঝেড়ে নীহার বললো,
– সামনেই বিস্কুটের প্যাকেট পরে আছে। ওখান থেকে নিয়ে খা। বুদ্ধিসুদ্ধি কোনোদিন হবে তোর! ঠ্যাং ঠ্যাং করে নাচতে নাচতে বাইরে আসবি না। ঘরে চুপচাপ বসে থাক।
– আচ্ছা যাবো না। বিয়ের ডেট করতে আসছে? বলো না।
– আমি কি জানি। গিয়ে দেখি কি বলে।
– বিয়ে উপলক্ষে আমাকে কিন্তু নতুন ড্রেস কিনে দিবা।
– যা তো সামনে থেকে।

বাইরের বারান্দায় বসে কথা বলছিলো মোকাররম ও মোজাম্মেল। নীহারকে দেখে থেমে গেলো। নাস্তা এগিয়ে দিয়ে নীহার চুপচাপ মোকাররমের পাশে দাড়িয়ে রইলো। সে জানে এখানে তার মতামতের কোনো গুরুত্ব নেই। তবুও ওকে ডেকে এনে দাঁড় করিয়ে রাখা।

– পোলাপান মানুষের কথা সবসময় হেলাফেলা করা ঠিক না। কখন কোন কথাতে মন বিগড়ে যায় কে জানে! এমনিতেই বিয়ের আলোচনা নতুন করে করার তো কিছু নাই। মাহিনকে তোমরা চিনোই। চোখের সামনে বড় হইছে। আমার ছেলে মানে তোমাদের ছেলে। আমাদের বংশের দ্বিতীয় ছেলে। আমার যা কিছু আছে সব তো আমার দুই ছেলেই পাবে। মোকাররম তোমারও বয়স হইতেছে। আল্লাহ চায়নি, তাই তোমার ঘরে কোনো ছেলে সন্তান নাই। মনে দুঃখ নিয়ো না। এই নিয়ে আফসোস করা ঠিক হবে না। সব আল্লাহর ইচ্ছা। কিন্তু তোমাদের শেষ বয়সে দেখাশোনার জন্য কাউকে তো দরকার। মাহিনের সাথে আদ্রতার বিয়ে হইলে মেয়েটাও কাছাকাছি থাকলো আর জামাই একদিক থেকে নিজের বাড়ির লোক-ই। তোমার ব্যবসা সামলানোর কাজ তো আর মেয়েমানুষ করতে পারবে না। এগুলা ওই মাহিনকে সামলাইতে হবে।

মোজাম্মেলের কথা বিপরীতে অনেক সাহস সঞ্চয় করে নীহার নিজের কথা রাখলো। হাজার হোক মায়ের মন। উপেক্ষা করে গেলো মোকাররমের কড়া দৃষ্টি।
– আম্মা বেঁচে থাকতেই বিয়ের কথা ঠিক করে গেছেন।এখানে আমাদের নতুন করে কিছু বলার নাই। কিন্তু ভাইজান, কথা ছিলো আদ্রতার পড়াশোনা শেষ করার পর বিয়ে দেওয়া হবে। মাহিনের মাত্রই পড়াশোনা শেষ হলো। আদ্রতার তো মাত্র অনার্স শুরু। এখনি বিয়ে কীভাবে সম্ভব?
– পড়াশোনা আটকাবে না। আদ্রতা ওর মতো করে পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের আয়োজন করার ইচ্ছা আমাদেরও ছিলো না। কিন্তু বুঝোই তো আজকালকার ছেলেমেয়েদের ব্যাপার। বিয়ে করবে বলে মাহিন ওর মায়েরে বিরক্ত করে ফেলতেছে। বউকে দূরে রেখে ওর মন টিকে না। ছেলের মন গেছে বিয়ের দিকে। বুঝতেই পারতেছো, জোয়ান ছেলে যখন নিজে মুখে বলছে তখন হেলাফেলা করা ঠিক হবে না। তাড়াতাড়ি বিয়ে না দিলে আবার কোনো অঘটন ঘটায় ফালাইলে! শুভ কাজে দেরী না করাই ভালো। সম্পর্কটা হালাল হয়ে থাকলে ক্ষতি নাই, বরং লাভই আছে।
– আদ্রতা এখনো ঘর সংসার কিছু বুঝে না। ভার্সিটি যাওয়ার আগে এখনো আমি নিজ হাতে খাওয়াই দেই। বিয়ের পর আস্ত একটা সংসার কেমনে সামলাবে?
– আহা নীহার! তুমি অযথা চিন্তা করতেছো। আদ্রতা কি আমার মেয়ে না? আমার ভাইয়ের মেয়ে মানে আমারও মেয়ে। তোমার ভাবী কি ওমন মানুষ নাকি যে ঘরের বউকে দিয়ে রাজ্যের কাজ করায় নিবে। ঘরের কাজে তোমাকে যেমন সাহায্য করে তোমার ভাবীকেও ওভাবে সাহায্য করলেই সে খুশি। তবুও সেটা পরের ব্যাপার। এখন আপাতত বিয়েটা হোক। তোমাদের বেশি অসুবিধা হলে মেয়ে নিজের বাড়িতেই রাখিও। পাশাপাশি দুইটা বাড়িই তো। যখন যেখানে মন থাকবে। বিষয়টা এতো জটিল করে দেখার কিছু নাই।

নীহারের আর কিছুই বলার রইলো না৷ মোকাররম মুখ কুচকে বসে আছে। এতো আলোচনা ওর পছন্দ হচ্ছে না। সামান্য একটা বিষয়ে এতো না করার কি আছে কে জানে! আলোচনায় দ্রুত ইতি টানার জন্য বললো,
– ভাইজান, লেনদেনের বিষয়ে কিছু বলার থাকলে এখনি বলে দেন।
– হা হা হা। হাসালে মোকাররম। কীসের লেনদেন? নিজের মধ্যে পরিস্থিতি জটিল করো না। ছেলে মেয়েদের জন্য মন ভরে দোয়া দিও, তাতেই চলবে। তোমার যা কিছু আছে সেগুলো তো তোমার মেয়েরাই পাবে।

এ আলোচনায় নীহারের প্রয়োজন ফুরালো। কন্ঠ সামান্য উঁচু করে আদ্রতাকে ডাকলো চা নিয়ে আসার জন্য। ভীরু পায়ে আদ্রতা চায়ের ট্রে নিয়ে বারান্দায় এসে বড় চাচাকে সালাম দিলো। ওকে টুকটাক ভালোমন্দ জিজ্ঞাসা করে মোজাম্মেল বললেন,
– আজকাল কি জানি নতুন নিয়ম চালু হইছে। আংটিবদল না কি যেনো। আমার ইচ্ছা ছিলো একেবারে বিয়ের আয়োজন করে ঘরে বউ তুলে নিয়ে যাবো। কিন্তু মাহিনের বড় শখ আংটিবদলের অনুষ্ঠান করবে। তোমার চাচীর আবার এসব পছন্দ না। এখন ছেলে আবদার করছে, ফেলতেও পারতেছে না। মাহিন নিজে থেকে একটা আংটি কিনছে। নীহার, কালকে সন্ধ্যার দিকে ঘরোয়াভাবে আংটিবদলের সামান্য আয়োজন করিও। মাহিনকে সাথে নিয়ে তোমার ভাবী আর আমি আসবো। আদ্রতাকে আংটি পরিয়ে যাবো। মোকাররম তুমি সময় করে মাহিনের হাতের মাপ নিয়ে একটা আংটি কিনে নিও। একদিনের মধ্যে বানায় নিতে পারবা না। সিম্পল ডিজাইনের রেডিমেড একটা আংটি নিবা। নিজে না পারলে মাহিনকে সাথে নিয়ে যাইয়ো। ও দেখেশুনে নিজেই পছন্দে নিলো।

মোজাম্মেলের কথার বিপরীতে কারো কিছু বলা হলো না। এ বিয়েতে মন থেকে কারো সায় নেই, আগ্রহ নেই। কেমন নির্জীব লাগছে সবাইকে। মোকাররম শুধু মেয়ের বিয়ের দিয়ে পিতার দায়িত্ব পালন করলেই বেঁচে যায়। অন্যদিকে নীহার এসব থেকে দূরে কোথাও মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চায়। আদ্রতার অবশ্য কোনোকিছু অনুভব হচ্ছে না। কেমন অনুভূতি শূণ্য লাগছে নিজেকে। মাহিনের সাথে নিজেকে কল্পনা করতে গেলে আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে না। এজন্য ভবিষ্যৎ কল্পনা করা বাদ দিয়ে দিয়েছে৷ সৃষ্টিকর্তার হাতে নিজেকে সঁপে দিয়ে শুধু বসে বসে ভবিষ্যতের অপেক্ষা করছে।

অন্যদিকে বোনের বিয়ে নিয়ে অনেক খুশি আদ্রিকা। বাড়ির সবাই বিয়ের আলোচনায় ব্যস্ত হতেই সে নিজের ঘরে বসে কল দিলো বিস্ময়ের ফোনে। সতর্ক দৃষ্টি দরজার দিকে, মনোযোগ পুরোপুরি ফোনে। কল কেটে দিয়ে বিস্ময় কলব্যাক করলো সাথে সাথেই৷ সেদিন মনতরীর পাড়ে যাওয়া হয়নি। এরপর ব্যস্ততায় আদ্রিকার সাথে দেখাও হয়নি, ফোনেও কথা হয়নি৷ মূলত আদ্রিকা একান্তে সময় পায়নি। সারাক্ষণ কেউ না কেউ সাথে থাকতো। এদিকে আদ্রিকার মন ছটফট করতো বিস্ময়ের সাথে প্রেমালাপের জন্য। আজ সুযোগ পেয়ে একদম হাতছাড়া করতে চায়নি। কল রিসিভ করতেই বিস্ময় অভিমানের তীর ছুড়ে দিলো।
– তোর যে একটা বয়ফ্রেন্ড আছে সেটা এতোদিনে মনে পরেছে?
– আপনি সারাক্ষণ মন মস্তিষ্ক জুড়ে থাকেন। আলাদা করে মনে করার প্রয়োজন নেই৷
– ওসব প্রেমালাপে মন গলছে না। কতোদিন পর কল দিয়েছিস সেই হিসাব দে। আমাকে কয়েকটা মিনিট সময় দিতে পারিস না তুই। এতো কীসের ব্যস্ততা?
– সময় থাকলেও সুযোগ হয়ে উঠেনি৷ মা অথবা আপু কেউ না কেউ সাথে ছিলোই৷ এখন আবার নতুন করে যখন তখন মাহিন ভাইয়ার মা আসতেছে, ভাবী আসতেছে।
– উনারা কেনো আসে?
– আপুর বিয়ের কথা চলতেছে। সেই নিয়ে কতো আলাপ আলোচনা!
– বিয়ে কবে?
– আমি জানি না। তবে মনে হচ্ছে খুব দ্রুতই হবে। মাহিন ভাইয়া অনেক তাড়া দিচ্ছে৷
– তা তো দিবেই। বিয়ের তাড়া ছেলেদেরই বেশি থাকে।
– তাই নাকি? কই আপনি আজ পর্যন্ত একবারও বিয়ের কথা বললেন না!
– আমি বললেই তুই বিয়ে করবি নাকি?
– বলে দেখতেন। রাজি হবো কিনা সেটা পরের ব্যাপার।
– বাচ্চা একটা মেয়ে, সে আবার বিয়ে করবে!
– আমি মোটেও বাচ্চা নই। আপুর বিয়ের পর আমিও তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নিবো৷ একা একা এ বাড়িতে আমার ভালো লাগবে না। পড়াশোনা করতে ভালো লাগে না আমার। মন দিয়ে সংসার করবো।

আদ্রিকার পাকনামি কথা শুনে বিস্ময়ের বেশ হাসি পেলো। কিন্তু সে হাসলো না। খোলা ছাদে পায়েচারি করতে করতে বললো,
– সংসার করবি! রান্না পারিস? ঘর গুছানো, থালাবাসন মাজা, কাপড় ধোয়া, আয়রন করা কিংবা ঝাড়ু দেওয়া কোনোটা করেছিস কখনো?

এর একটাও আদ্রিকা কখনো করেনি। মাঝেমধ্যে নীহার জোর করে চা বানিয়ে নেয় কিংবা তরকারি নাড়াচাড়া করতে দেয়। এতোটুকু করা হয়েছে ছোট্ট জীবনকালে। তবে হার সে মানলো না।

– কখনো করিনি। কিন্তু এসবকিছু মাকে করতে দেখেছি। চেষ্টা করলেই পারবো৷ না পারলে আপনি শিখিয়ে দিবেন।
– নিজে পারলে তারপর ন্স তোকে শেখাবো। আমার হাতের রান্না খাওয়ার অযোগ্য। নিজেই এলোমেলো একটা মানুষ। তোকে কি সামলাবো!
– ঘুরিয়ে ফিরিয়ে না করে দিচ্ছেন? ঠিক আছে, না করলাম আপনাকে বিয়ে। লক্ষ্মীমন্ত একটা ছেলে দেখে বিয়ে করে নিবো৷
– খবরদার বলছি, উল্টাপাল্টা কথা বলে আমাকে রাগাবি না।

বিস্ময়ের ধমকে আদ্রিকা চুপ হয়ে গেলো। এতোক্ষণ নিজের মতো করে একটা সংসারের কল্পনা করছিলো। যার প্রতি বিস্ময় কোনো আগ্রহ দেখালো না। মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। ও কিছু বলছে না দেখে বিস্ময় বুঝতে পারলো মেয়েটার মন খারাপ হয়েছে। কন্ঠে কোমলতা আনার চেষ্টা করলেও খুব একটা কোমল শোনালো না সে কন্ঠস্বর।
– সংসারের গল্প শোনাচ্ছিলি না, ওটাই বরং শোনা। শুনতে ভালোই লাগছে।

ফোনের এপাশে আদ্রিকা গাল ফুলিয়ে বললো,
– কোনো গল্প নেই। না বিয়ে করবো, না করবো সংসার। এমন রাগী মানুষকে নিয়ে সংসার করতে আমার বয়েই গেছে।
– রাগ করবো না। রোজ অফিস থেকে ফিরে অনেক আদর করে দিবো৷
– বাজে কথা।
– রান্না করতে না পারলে হোটেল থেকে নিয়ে এসে খাবো। উম, না। খুব বেশি কস্টলি হয়ে যাবে। রান্নার লোক রেখে দিলে কেমন হয়?
– কাপড় কেঁচে দিবে কে?
– তার জন্যও লোক রেখে দিবো।
– ঘর পরিষ্কার করা, থালাবাসন মাজা?
– সেটার জন্যেও লোক রেখে দিবো।
– কাজের লোক দিয়ে ঘর ভরে যাবে।
– তাহলে একজন কাজের লোক রাখবো যে সব কাজ করে দিবে।
– বেতন দিতে হবে অনেক। এতো টাকা কই থেকে আসবে?
– তোর বয়ফ্রেন্ড পথের ভিখারি নয়। এমন শ’খানেক কাজের লোক রাখার সামর্থ্য তার আছে। তোর জন্য আমি হাসিমুখে আমার সব অর্থসম্পদ ব্যয় করতে রাজি আছি। বিনিময়ে তুই শুধু আমাকে সময় দিবি। অফিস থেকে ফেরা পর থেকে পরদিন অফিস যাওয়া পর্যন্ত সবটুকু সময় আমার সাথে থাকবি, পাশে থাকবি।

লাজে রাঙা হলে আদ্রিকার মুখ। এমন ভালোবাসাময় একটা সংসার হলে মন্দ হয় না। বিস্ময়ের বুকে মাথা রেখে কেটে যাবে অন্ধকার রাত। নতুন দিনের বার্তা নিয়ে আসবে ভোর৷ ছোট একটা নীড় হবে ওদের। দুজনার মাঝে থাকবে না কোনো দূরত্ব। দিনে পর দিন অপেক্ষা করতে হবে না একটি কন্ঠস্বর শোনার জন্য৷ দূর হতে এক ঝলক দেখার অপেক্ষায় তৃষ্ণার্ত হবে দুটো আখি।
সেদিনগুলোতে এমন লুকিয়ে কথা বলতে হবে না। যখন মনে পরবে তখনি কল দিয়ে বলা যাবে, এই তুমি অফিস থেকে কখন ফিরবে? আজকে একটু তাড়াতাড়ি চলে আসো না।

চলবে…