নোলককন্যা পর্ব-১৬

0
26

#নোলককন্যা
#অক্ষরময়ী
১৬

আদ্রিকার পরীক্ষা চলছে। লুকিয়ে প্রেম করার শাস্তিস্বরূপ এখন দিনরাত এক করেও সিলেবাস শেষ করা যাচ্ছে না। সারাক্ষণ বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে থাকলেও রাতে ঘুমানোর আগে নিয়ম করে বিস্ময়ের সাথে কথা হয়। পরীক্ষার কারণে রাত জেগে বই পড়ায় বাড়ির কেউ আপত্তি করেনা। সব গুছিয়ে দিয়ে আদ্রতা ঘুমিয়ে পরে। এদিকে টেবিলে বসে ফিসফিসিয়ে প্রেমালাপ চালিয়ে যায় আদ্রিকা। খুব বেশিক্ষণ কথা হয় না। বড়জোর আধা ঘন্টা। এরমধ্যে বেশির ভাগ সময় আদ্রিকা চুপ করে থাকে। বেশি কথা বললে আদ্রতা টের পেয়ে যায় যদি।

– তোর পরীক্ষা শেষ হতে আর কতোদিন?
– দু সপ্তাহ।
– এর মাঝে একদিন দেখা কর।
– সম্ভব না।
– পরীক্ষা শেষে?
– কলেজ বন্ধ থাকবে। বাড়ি থেকে বের হওয়া নিষেধ।
– দেখা না করে এতোদিন কীভাবে থাকবো?
– পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় দেখা তো হচ্ছেই।
– ওটা দেখা হলো? চোখের সামনে দিয়ে হুশ করে বেরিয়ে যাস। আমার সাথে দেখা করার কোনো আগ্রহই নেই। আমাকে আধাঘন্টা সময় দে। কীভাবে দিবি তোর ব্যাপার।
– আপনি জানেন না, আমার অবস্থা? বাইরে গেলে সারাক্ষণ আপু সাথে থাকে।
– হ্যাঁ, আপনি তো ছোট বাচ্চা। একা ছেড়ে দিলে হারিয়ে যাবেন। যতো সব ন্যাকামি। সবার থেকে এক কাঠি উপরে তোর বাপ। নিজে কোনো দায়িত্ব পালন করবে না কিন্তু সম্মানের বেলায় একচুল পরিমাণ ছাড় দিতে রাজি নয়। যা করবা করো, আমার সম্মানে যেনো সামান্যতম আঘাত না লাগে।
– আমার পরিবার নিয়ে বাজে কথা বলবেন না।
– একশবার বলবো। ওদের জন্য আমাকে ভুগতে হচ্ছে। ন্যাকামির অত্যাচারে গার্লফ্রেন্ডকে পাশে পাচ্ছি না। আমার কপালটাই খারাপ, ন্যাকাষষ্ঠী জুটেছে কপালে।
– এখন খুব আফসোস হচ্ছে আপনার?
– অবশ্যই হচ্ছে। আর হওয়াটাই স্বাভাবিক।

ছুড়ে দেওয়া তীর এবং মুখের কথা একবার বেরিয়ে গেলে আর ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। রাগের মাথায় বলা কথাটা বিস্ময়ও আর ফিরিয়ে নিতে পারলো না। ফোনের এপাশে নিশ্চুপ আদ্রিকা। চোখ ভিজে এসেছে মুহুর্তেই। নাক টানার মৃদু শব্দ ভেসে আসতেই হুশ ফিরলো বিস্ময়ের।

– স্যরি। আমার কথার মানে ওটা ছিলো না। কথার তালে মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেছে।

সেসব মানলো না আদ্রিকা। নিঃশব্দে গড়িয়ে পরা চোখের জল ভিজিয়ে দিচ্ছে বইয়ের পাতা। কতো সহজে বলে দিলো, আফসোস হচ্ছে। মাত্র ছয় মাস কাটিয়েই যদি আফসোস হয় তাহলে বাকিটা জীবন একসাথে কাটানোর স্বপ্ন কেনো দেখিয়েছিলো? বড্ড জানতে ইচ্ছে করলো আদ্রিকার। কিন্তু মুখে কিছু বললো না। অতিরিক্ত কষ্টে শব্দ হারিয়ে গেছে। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো বিস্ময়। খোলা ছাদে অন্ধকারে বসে নিজের এলোমেলো চুলগুলো টেনে ধরে নিজেকে শাসালো।

কী দরকার ছিলো মেয়েটাকে এভাবে বলার? ও কি অন্যসব মেয়েদের মতো বেপরোয়া নাকি যে বিস্ময়ের কথা শুনে রেগেমেগে ঝগড়া বাঁধিয়ে দিবে। তারপর উন্মাদের মতো দিন দুনিয়া সব ভুলে আদেশ করবে, কালকে সকালে উঠেই তুমি আমার সাথে দেখা করবা। কালকে একটা বিহিত করেই ছাড়বো। তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে এভাবে বলার?

বিপরীতে বিস্ময় হেয়ালি করে বলবে,
– এতো সকালে উঠতে পারবো না আমি।
– তুমি উঠবে, দরকার পরলে তোমার চৌদ্দগুষ্টিও উঠবে।

কাঁদা মাটির মতো নরম মনের মেয়েটাকে কষ্ট দেওয়ার অপরাধে অপরাধী বিস্ময়। মায়া ভরা কন্ঠে ডাক দিলো,
– আদ্রি, আজকে অন্য একটা গান শুনবি?

আদ্রিকা কিছু বলবো না। আলতো করে নাক টানলো শুধু। মুচকি হেসে বিস্ময় তার সুরেলা কন্ঠে গান ধরলো,

চুল খোলা লাল শাড়ি, স্কুল ছুটির ঈশিতা…

উপস! স্যরি স্যরি। ঈশিতা হবে না। ঈসিতার জায়গায় তোর নাম বসিয়ে দিলে আদ্রিকা হবে।

চুল খোলা লাল শাড়ি, স্কুল ছুটির আদ্রিকা…
আনমনা রাগ ভীষণ, মন কেমন আদ্রিকা…
প্রেমেরই মানে বই থেকে, বয়েছে উদাসী হাওয়া
বিকেলে ক্লাসের অযুহাত, ঠোঁটের প্রহর গোনা।
থামবে না কোনো স্টেশনেই, সেই ট্রেনে হারিয়ে যাওয়া।
পরিযায়ী আর্দ্র মেঘেদের মতোন গল্প বোনা।
আমি ভবঘুরে, জানি খুব বেসুরে
তবুও শুনবে কি এই গান?

স্লো টোনে অনেকক্ষণ ধরে গুনগুন করে গান গেয়ে গেলো বিস্ময়। গানের তালে কখন কান্না থেমে গেছে আদ্রিকা টের না পেলোও বিস্ময় ঠিকই খেয়াল করেছে। গান শেষ হতেই জানতে চাইলো,
– মন ভালো হয়েছে, আমার মেঘমালা?
– হুম।
– স্যরি রে। মুখ ফসকে বেরিয়ে গিয়েছে। তুই জানিস, আমি এমনটা ভাবি না। তবুও স্যরি বলছি।

গাল ফুলিয়ে ভাব দেখিয়ে আদ্রিকা বলবো,
– পরীক্ষা শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে বেরিয়ে আসবো। ক্লাস বিল্ডিং এর পেছনে চলে আসবেন।
– সব লেখা শেষ না করে বের হয়ে আসবি না। দেখা করাটা এতোটাই জরুরি না। আবেগে ভেসে আমি এমন অনেক বোকা বোকা কথা বলি। খুব ভালোবাসি তো তোকে। তাই বেশি বেশি আবেগ কাজ করে।
– আমি বুঝি ভালোবাসি না?
– বাসিস নাকি? জানতাম না তো। কখনো বলিসও নি।
– বেশ মজা নিচ্ছেন।
– হা হা হা। একটুখানি নিচ্ছি। অনেক হয়েছে কথা বলা। পড়তে বস। আর কিছুক্ষণ পড়ে ঘুমাতে যাবি। ঘুম না এলে কল দিবি, ঘুমপাড়ানি পাখি হাজির হয়ে যাবে।

সেমিস্টার ফাইনালের আগে কমে এসেছে ক্লাস সংখ্যা। জরুরি ক্লাস না থাকায় এতোদিন ভার্সিটি আসেনি বিকল্প। পড়াশোনার পাশাপাশি সুপারশপে একাউন্টটেন্ট এর পার্টটাইম জব করে সে। সময় পেলেই এক্সট্রা টাইম কাজ করে বাড়তি ইনকামের সুযোগ হাতিয়ে নেয়। এক সপ্তাহের বেশি হয়ে গেলো শেষবার ক্লাসে এসেছিলো। দেখেছিলো আদ্রতার মুখখানা। হালকা শ্যামলা মায়াবী মুখটার দিকে তাকালেই বিকল্পের মনটা আদ্র হয়ে উঠে। দুজনার পথ কখনো এক হওয়ার নয়। সেসব জেনেও কীভাবে ভালোবেসে ফেললো, সেটা জানা নেই। শুধু জানে পরিচিত মুখগুলোর মাঝে আদ্রতার মুখের দিকে তাকালেই কেনো যেনো চঞ্চল দৃষ্টি থেমে যায়। উষ্ণ হয়ে উঠে কানের লতি। বিকল্প ভেবেছিলো, এটা মোহ। সময়ের সাথে একসময় কেটে যাবে। কিন্তু হলো তার বিপরীত। ভয়ানক ভাবে বাড়তে লাগলো আদ্রতা নামের রোগ। ধীরে ধীরে নির্লজ্জ, বেহায়া হতে থাকলো বিকল্প। ক্লাসে সবার মাঝে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতো আদ্রতার দিকে। ওর মনের অবস্থা বুঝে ফেলতে খুব একটা সময় লাগলো না সহপাঠীদের। এ কান ও কান থেকে সেই খবর পৌঁছে গেলো আদ্রতার কানে। তখন থেকেই বিকল্পকে দেখেই চোখ মুখ শক্ত করে চোখ পাকিয়ে তাকায় সে। নীরব সেই তীব্র শাসন বড্ড উপভোগ করে বিকল্প। নিজেকে আরও হ্যাংলার পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে বেশি করে তাকিয়ে থাকে। একজনের মনে তীব্র ভালোবাসা, অন্যজনের মনে ভালোবেসে ফেলার ভয়।

বিকল্পকে দেখতে পেয়ে নিজের সীটে জড়সড় হয়ে বসে রইলো আদ্রতা। ক্লাস শেষে সবার নজর এড়িয়ে দ্রুত বেড়িয়ে গেলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজে হয়রান হলো বিকল্প। না পেয়ে বান্ধবীদের কাছে জানতে চাইলো। ওরা কেমন করুণ চোখে চাইলো বিকল্পের দিকে। এই ছেলেটা আদ্রতার দিকে কতোটা ভালোবেসে তাকায় তা সবার জানা। নিঃস্বার্থ, পবিত্র ভালোবাসাগুলোর এভাবেই সমাপ্তি ঘটে।

– আদ্রতার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে, বিকল্প। পরের মাসে বিয়ে।

বিশ্বাস হতে চাইলো না বিকল্পের। এরা নিশ্চয়ই মজা করছে। ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে অস্থিরভাবে আদ্রতার খোঁজ করলো। ঐ তো ডিপার্টমেন্টের রাস্তা ধরে বেরিয়ে যাচ্ছে। একছুটে আদ্রতা কাছে চলে গেলো। বিকল্পকে দেখেও হাঁটার গতির কমালো না আদ্রতা। যেনোই দেখতেই পায়নি এমনভাবে চলতে থাকলো। তালে তাল মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একপলক দেখে নিলো আদ্রতার অনামিকায় স্থান পাওয়া স্বর্ণের আংটিকে। নিজের চোখের সামনে ধ্বংস দেখতে পেলো এতোদিনের সাজানো স্বপ্নগুলোর। হাল ছাড়লো না বিকল্প। অনুরোধ করতে লাগলো।

– তোমার সাথে আমার কথা আছে আদ্রতা। পাঁচ মিনিট সময় দেও প্লিজ। একটু দয়া করো আমার উপর। আমার কথাগুলো একটু শোনো।

কন্ঠ রোধ হয়ে আসতে চাইছে। কান্নাভেজা কন্ঠের আকুতি আদ্রতার শক্ত খোলসে একের পর এক আঘাত হানলো। হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে শান্ত নজরে তাকালো বিকল্পের দিকে। অস্থির চোখ দুটোর দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে কাঠ কাঠ স্বরে বললো,
– ক্যান্টিনে এসো।

শেষের দিকে কোণার টেবিলের দুপাশে দুজন বসে আছে চুপচাপ। আদ্রতার হাত দুটো টেবিলের উপরে রাখা। আংটিটির দিকে বিকল্পকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে আলগোছে হাত নামিয়ে কোলের উপর রাখলো। নিষ্ঠুর মানবীর খোলসে নিজেকে আপাত মস্তক মুড়ে নিয়ে অনুভূতিহীন কন্ঠটা শুধালো,
– কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো।

নিজেকে সামলে নিয়ে বিকল্প বললো,
– এসব কবে হলো?
– কোন সব?
– আংটি। আমাকে কিছুই জানালে না।
– তোমাকে জানাবো কেনো? আমার বিয়ের কথা তোমাকে জানাতে হবে কেনো?
– তুমি কি সত্যিই বুঝতে পারো না আদ্রতা? আমি তোমাকে ভালোবাসি।
– মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার। কারো নামের আংটি আমার হাতে। এখন তুমি আমাকে ভালোবাসার কথা জানতে এসেছো।
– আমি না বললেও তুমি জানতে। না জানলেও ফিল করতে পারতে।
– জানার পরেও কোনো রেসপন্স করিনি এর মানে বুঝার মতো বয়স তোমার হয়েছে।
– তোমার চোখে আমি অন্য কিছু দেখেছি আদ্রতা। সেটা তুমি অস্বীকার করতে পারবে না।
– বাজে কথা বলবে না।
– কেনো করছো বিয়েটা? এমন করো না প্লিজ। আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলবো?
– কি বলবে? আমি আপনার মেয়ের সাথে একসাথে পড়ি। আপনার মেয়েকে ভালোবাসি, বিয়ে করতে চাই। আপনার ঠিক করা ছেলের থেকেও খুব ভালো রাখবো আপনার মেয়েকে। যদিও আমি পার্টটাইম জব করে কোনোরকম নিজের খরচ চালাই। এসব শুনে আমার বাবা নাচতে নাচতে তোমার হাতে মেয়ে তুলে দিবে?

বিকল্প মাথা নিচু করে নিলো। আদ্রতার দিকে তাকানোর সাহস হচ্ছে না। অভাবে বড় হয়েও ভালোবাসার কথা আসতেই বাস্তবতা ভুলতে বসেছিলো। যা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো আদ্রতা। কিন্তু কি করবে বিকল্প? মনের কাছে বড্ড অসহায় যে সে।

– এভাবে বলো না আদ্রতা। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। মনে হচ্ছে বুকের ভেতরটা কেউ ছু রি দিয়ে ফালাফালা করে দিচ্ছে। দূর থেকে একটুখানি ভালোই তো বেসেছিলাম। এতেই এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো বলো তো? দীর্ঘ সময় পুষে রাখা ভালোবাসা হারালে যেমন কষ্ট লাগে, একদিনের ভালোবাসা হারালে তেমনি কষ্ট হয়। ভালোবাসার যন্ত্রণায় নতুন পুরাতন বলে কিছু নেই। এখানে সব ব্যথার রং একই। তোমার চেহারাতে আমি একই রঙের ব্যথা দেখতে পাচ্ছি।

চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে আদ্রতা খানিকটা ঝুঁকলো বিকল্পের দিকে।
– এসবের জন্য তুমি দায়ী। কেনো তাকাতে ওভাবে? অপাত্রে নিজের মূল্যবান ভালোবাসা দান করো না। এর মান আমি রাখতে পারবো না। সেই সুযোগ আমার নেই। ক্ষমা করো।

বিকল্পকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে একছুটে বেরিয়ে গেলো আদ্রতা।

মানবিক ভবনের পেছনের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিস্ময়। চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে সেখানে পৌছে গেলো আদ্রিকা। হাত ধরে ওকে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে দু চোখ ভরে দেখতে থাকলো। টানা তিনঘণ্টা পরীক্ষা দিয়ে ক্লান্ত আদ্রিকা। গরমে ঘেমে গেছে দেহ। তেলতেলে হয়ে আছে মুখটা। নিশ্চয়ই বাজে দেখাছে। তবুও কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে বিস্ময়। মাথা নিচু করে নিলো সে৷ পকেট থেকে রুমাল বের করে যত্নসহকারে আদ্রিকার সেই ঘামার্ত মুখ মুছে দিলো বিস্ময়৷
– পরীক্ষা কেমন হলো?
– আলহামদুলিল্লাহ। মোটামুটি ভালো।
– সব না লিখে বেড়িয়ে আসিসনি তো আবার? পরে রেজাল্ট খারাপ হলে আমার দোষ না হয় যেনো।
– আপনি আবার খোঁচা মেরে কথা বলছেন। এজন্যই কালকে ঝগড়া লেগেছিলো।
– তোর বড্ড সাহস বেড়েছে। এজন্য আমার সাথে তর্ক করতে আসিস৷ ঝগড়া লেগে যাওয়ার পর আবার একটু কথাতেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্নাকাটি করে দিয়ে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল শুরু। অনেক জ্বালাচ্ছিস আজকাল। এরজন্য তোর শাস্তি হওয়া উচিত৷
– আপনি এখনো আমাকে বকতেছেন।

মুখ ফুলিয়ে বললো আদ্রিকা। দেখতে ভীষণ আদুরে দেখাচ্ছে। দু হাতে গাল টেনে দিয়ে বিস্ময় বললো,
– আহ্লাদ করে পার পেয়ে যেতে পারবি না। শাস্তি পেতেই হবে।
– কী শাস্তি দিবেন?
– প্রথমবার ঝগড়া হিসেবে কঠিন কোনো টাস্ক দিবো না। একদম সহজ কাজ। এখন থেকে আমাকে তুমি বলে ডাকতে হবে।

ফিক করে হেসে ফেললো আদ্রতা। ক্লান্তি দূরে সরে গিয়ে লাজে রাঙা হলো মুখ।
– ইশ! আমি পারবো না।
– রিলেশনের এতোদিনেও আপনি থেকে বের হতে পারলি না। ছাতার মাথা ভালোবাসিস তুই আমাকে। আপন ভাবলে আপনি, আপনি ডেকে দূরে সরিয়ে রাখতি না।
– কীসের সাথে কীসের তুলনা করছেন! আপনি ডাকার সাথে ভালোবাসার কি সম্পর্ক?
– অবশ্যই সম্পর্ক আছে। তুমি হচ্ছে ভীষণ কাছের ডাক। নিজের মানুষদের আমরা তুমি বলেই সম্মোধন করি। আমি আবদার করেছি, এখন তোর ইচ্ছে হলে তুমি ডাকবি। না হলে আপনি ডেকে প্রতিমুহূর্তে আমাকে বুঝিয়ে দিবি আমি তোর ঠিক কতোটা দূরের।
– বড্ড জেদ করেন আপনি।
– ভালোবাসি বলেই তোর কাছে জেদ করি।
– আচ্ছা ঠিক আছে। এখন যাই। আপু নিতে আসবে।

যাই বলেও গেলো না আদ্রিকা। পায়ের পাতা উঁচু করে বিস্ময়ের কাধ পর্যন্ত পৌছাতে চাইলো৷ বুঝতে পেরে খানিকটা ঝুকে দাড়ালো বিস্ময়। কানের কাছে মুখ নিয়ে আদ্রিকা বললো,
– আমিও তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। তুমি দূরের কেউ নও। আমার দেহের ভেতর বুকের বামপাশের বাসিন্দা শুধু তুমি।

চলবে…