নোলককন্যা পর্ব-১৮

0
27

#নোলককন্যা
#অক্ষরময়ী
১৮

নাস্তার টেবিলে আদ্রিকার পছন্দের পায়েস। আদ্রিকার চোখ চকচক করে উঠলো। চেয়ার টেনে বসে হামলে পরলো নাস্তার টেবিলে। মোকাররমকে যখন এক বাটি পায়েস এগিয়ে দেওয়া হলে সে চোখ মুখ কুচকে বললো,
– এগুলা আবার কি?
– পায়েস।
– সকালবেলা এতো মিষ্টি খাবার কে খায়! সরাও এগুলা সামনে থেকে।

বিনাবাক্যে বাটিটি সরিয়ে নিলো নীহার। কেউ কিছু না বললেও সবারই মন খারাপ হলো। তিক্ত অনুভূতি নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরলো আদ্রিকা। পুরোটা সময় দু বোন-ই চুপচাপ ছিলো। ভূবনভোলা একাডেমির সামনে এসে ব্যাগ থেকে টাকা বের করে আদ্রিকার হাতে দিয়ে আদ্রতা বললো,
– ফ্রেন্ডরা জন্মদিনের ট্রিট চাইলে এটা দিয়ে ক্যান্টিন থেকে কিছু কিনে দিস।

জন্মদিনের কথা কাউকে জানাতে না চাইলেও মুখ ফসকে মেঘাকে বলে ফেলেছে। চুপচাপ থাকতে গিয়েও কীভাবে যেনো পাঁচজন বান্ধবীর কান পর্যন্ত চলে গেলো সে কথা। টিফিনের সময় ওরা চেপে ধরলো আদ্রিকাকে। বাধ্য হয়ে ক্যান্টিনের ডালপুরি, সিঙ্গারা খাওয়াতে হলো ওদের। ফেরার পথে ওর হাত টেনে ধরে মেঘা ফিসফিসিয়ে বললো,
– বিল্ডিংয়ের পেছনে চলে যা। বিস্ময় ভাইয়া অপেক্ষা করছে। আমি এদের সামলে নিচ্ছি।

ফড়িং এর মতো ফুড়ুৎ করে উড়ে বিল্ডিংয়ের পেছনে চলে এলো আদ্রিকা। বিস্ময় দাঁড়িয়েছিলো চিরচেনা ভঙ্গিতে। ঠোঁট জুড়ে হৃদয় প্রলয়ংকরী হাসি। দ্রুত পায়ে আদ্রিকা এগিয়ে গেলো বিস্ময়ের কাছে। ওকে দেয়ালের দিকে পিঠে করে দাঁড় করিয়ে দিয়ে সামনে দাঁড়ালো বিস্ময়।

– চোখ বন্ধ কর।
– কেনো?
– প্রশ্ন না করে যা বলছি তাই কর।

আদ্রিকা চোখ বন্ধ করে নিলো। বিস্ময় যখন চোখ খুলতে বললো, সামনের দিকে তাকিয়ে হতবাক আদ্রিকা। বিস্ময়ের ডান হাতের তালুতে একটি ছোট্ট কেক। কাপকেক নয় বরং একটা বার্থডে কেক। চকলেট ফ্লেভারের কেকটি সাইজে খুবই ছোট। যার উপরে ছোট একটি ক্যান্ডেল জ্বলছে। আদ্রিকাকে অবাক চোখে চেয়ে থাকতে দেখে বিস্ময় বললো,
– হা করে তাকিয়ে না থেকে ক্যান্ডেলে ফুঁ দে। তার আগে চোখ বন্ধ করে একটা উইশ কর।

বাধ্যগত আদ্রিকা দু চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করলো,
– ভালোবাসার মানুষটির সাথে আমার একটা সুন্দর সংসার হোক। সুখ সমৃদ্ধিতে ভরপুর নিজস্ব একটা নীড় হোক।

ক্যান্ডেলে ফু দিয়ে নিভিয়ে দিলো। ছোট কেকটি ছু রি দিয়ে কা টার প্রয়োজন নেই। বিস্ময় খাইয়ে দিলো আদ্রিকাকে। আদ্রিকা যখন বিস্ময়ের দিকে আধা খাওয়া কেকটি এগিয়ে দিলো তখন বিস্ময় মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো,
– আমি এভাবে খাবো না। তুই খা৷ চকলেট ফ্লেভারের কেক তোর না খুব পছন্দ।

আরেকবার সাধলো না আদ্রিকা। আয়েশ করে কেক খেতে লাগলো। অপলক চেয়ে চেয়ে হৃদয় প্রশান্তকারী সে দৃশ্যটি উপভোগ করছে বিস্ময়। কখন যে আদ্রিকার খুব কাছাকাছি চলে এসেছে দুজনের কেউ খেয়াল করেনি। প্রথম বুঝতে পারলো আদ্রিকা। লাজুক হেসে দৃষ্টি নত করে ফেললো। এক হাত দেয়ালে ঠেকিয়ে ওর দিকে খানিকটা ঝুকে এলো বিস্ময়। একহাতে থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে ধরে আলতো করে ঠোঁট ছোয়ালো আদ্রিকার ঠোটে।
কেকের উপরে থাকা চকলেট ফ্লেভারের ক্রিম লেগে আছে আদ্রিকার ঠোঁটে। বড্ড মাদকতাময় দৃশ্য। যার নেশা এড়াতে পারেনি বিস্ময়।
কি হচ্ছে বুঝতে খানিকটা সময় নিলো মস্তিষ্ক। যতোক্ষণে বুঝে এসেছে বিস্ময় ওকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ওর চোখের মাঝে প্রতিক্রিয়া খুঁজতে গিয়ে পেলো হতবিহ্বলতা। কিছু বলতে যাবে তখনি চারপাশ কাঁপিয়ে বেজে উঠলো কলেজের ঘন্টা। জানিয়ে দিলো টিফিন পিরিয়ড শেষ হয়েছে। এক মুহুর্ত দেরী করলো না আদ্রিকা। দৌড়ে চলে গেলো সেখান থেকে।

বাজারের মাঝখানে একটা কনফেকশনারি আছে। খুবই সাধারণ ডিজাইনের কিছু কেক বানিয়ে সাজিয়ে রাখে। বেশিরভাগই ভ্যানিলা ফ্লেভারের। আদ্রতা আলাদা করে চকলেট ফ্লেভারের কেক অর্ডার করেছিলো। একাডেমি থেকে ফেরার সময় সেখান থেকে কেকটা নিলো। যেই কেকের জন্য এতো লাফালাফি করলো সপ্তাহভর সেটা হাতে আসার পর কোনো উচ্ছ্বাস দেখা গেলো না আদ্রিকার মাঝে।
– কি হয়েছে তোর? এমন মনমরা হয়ে আছিস কেনো?
– কিছু না।
– চুপচাপ কেনো?
– টানা ক্লাস করে ক্লান্ত লাগতেছে।
– কেক পছন্দ হয়েছে।
– হ্যাঁ।
এরপর আদ্রতা যেনো কি কি বলেই চলেছে। সেসব আদ্রিকার কানে পৌঁছালো না। সে আদ্রতার মুখের দিকে তাকিয়ে অপলক কি যেনো দেখছে! হাঁটতে হাঁটতেই আবার কোথাও হারিয়ে গিয়েছে। কাঁধে হাত রেখে আদ্রতা প্রশ্ন করলো,
– এই, কি হয়েছে? ক্লাসে কেউ কিছু বলেছে?
– কে কি বলবে! কিছুই হয়নি।

বিকালবেলা কেক কাটার সময়ও আদ্রিকার মাঝে চঞ্চলতার ঘাটতি খেয়াল করেছে আদ্রতা। হঠাৎ কি হলো কে জানে! রাতের বেলা নীহার রান্নায় আদ্রিকার পছন্দের পদগুলো বেছে নিলেন। যা নীরবে খেয়ে উঠলো আদ্রিকা। আজকে আর বই খাতা কিছু ছুয়ে দেখলো না। আদ্রতার আগেই বিছনায় শুয়ে পরলো। ঘুম না এলেও সারারাত চোখ বুঝে পরে রইলো বিছানায়।

এর পরের কয়েকটা দিন খুব বিশ্রী কেটেছে বিস্ময়ের। দিন রাত সব এলোমেলো। সিগারেটের আগুনে হাত পুড়তে পুড়তে বেঁচেছে। অলস বিকাল, দীর্ঘ রাত কেটে যায়। ওর দেবদাস রুপ থেকে পরখ বলেছে, সামনাসামনি কথা বললে সমস্যা জানতে পারবি সেই সাথে সমাধানও হবে।
সকালবেলা ছুটে যায় ভূবনভোলা একাডেমিতে। সদর দরজায় দাঁড়িয়ে আদ্রিকাকে দেখে কিন্তু কথা বলার সুযোগ হয় না। মানবিক বিভাগের বিল্ডিং এর সামনে পর্যন্ত দিয়ে আসে আদ্রতা। রাতে অনবরত কল দিতে থাকে আদ্রিকার ফোনে কিন্তু সেটি বন্ধ দেখায়।
আদ্রতা নিজেও জানে না হঠাৎ কি হয়েছে আদ্রিকার। সারাক্ষণ মনমরা হয়ে থাকে। রাতে ঘুমানোর সময় আদ্রতার বুকের সাথে লেপ্টে ঘুমায়। সেদিন হঠাৎ করেই বলে বসলো,
– তোমার না ক্লাসের দেরী আছে। চলো আমাকে ক্লাস পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসবে।

অবাক হয়ে আদ্রতা জিজ্ঞাসা করেছিলো,
– কি হয়েছে তোর? ক্যাম্পাসে কেউ বিরক্ত করছে? আমাকে বল।

সেরকম কিছু জানায়নি আদ্রিকা। তবুও সতর্ক দৃষ্টি রাখে আদ্রতা। ভার্সিটি আসতে ইচ্ছে না করলেও আদ্রিকার জন্য আসে। আদ্রিকার ক্লাস শেষ হওয়ার পাচ মিনিট আগেই এসে বিল্ডিং এর সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। আজকেও আদ্রিকাকে বিল্ডিংয়ের সামনে পৌছে দিয়ে নিচে দাঁড়িয়ে রইলো। দোতলায় মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাসরুমে আদ্রিকা প্রবেশ করার পর নিজের ডিপার্টমেন্টে ফিরে গেলো। রোজকার মতোন দেখা হয় বিকল্পের সাথে। ছেলেটা আগের মতো সরাসরি তাকিয়ে থাকে না। এখনো তাকায়, তবে সেটা আড়চোখে। দৃষ্টি সংযত করতে চায় প্রাণপণে কিন্তু মন তো মানে না। আদ্রতা মনে মনে হাসে। এই ছেলেটাকে কেনো যেনো সে খোলা বইয়ের মতো পড়তে পারে।

মেঘা একটা মিরিন্ডা কিনেছে। সেটা কিছুক্ষণ পর পর নিজেও খাচ্ছে, আদ্রিকাকেও খাওয়াচ্ছে। অতিরিক্ত পানীয় পান করার ফলে অসময়ে বাথরুমের চাপ চলে এলো। ওয়াশরুমে যাওয়ার অনুমতি চাইতেই বাংলা ক্লাস টিচার এমন করে চাইলো যেনো আদ্রিকা উনার সম্পত্তি লিখে নিতে চাইছে। মুখে আঁধার নামিয়ে কোনোরকম অনুমতি দিলো। ক্লাস রুমে থেকে বেরিয়ে মেঘা ও আদ্রিকা হাসতে হাসতে ছুটে গেলো ওয়াশরুমের দিকে। দোতলার সিড়ির একদম উল্টোদিকের শেষ অংশে ওয়াশরুম। ঢুকতেই সামনে কয়েকটা বেসিন। যার আয়নাগুলোতে লাল রঙের লিপস্টিকের অসংখ্য দাগ। এরপর সারি করে তিনটি টয়লেট। দুজনে দুটোতে ঢুকে পরলো।

বাথরুমে থেকে বেরিয়ে বেসিনে হাত ধুয়ে ফিরে তাকাতেই পেছন থেকে কেউ আদ্রিকার মুখ চিপে ধরলো। টানতে টানতে দেয়ালে কাছে নিয়ে এসে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড় করালো। আগন্তুক যখন পেছন থেকে সামনে এসে দাঁড়ালো, আদ্রিকা অবাক হয়ে দেখলো বিস্ময়কে। গালে খোঁচা দাড়ি, এলোমেলো চুল, কুচকানো শার্ট। অগ্নিদৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে আদ্রিকার দিকে। ভয়ে আদ্রিকার গলা শুকিয়ে এলো। কলেজ বিল্ডিং এর ভেতরে কি করে এলো বিস্ময়? লেডিস ওয়াশরুমে কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে। আতংকিত আদ্রিকা জানতে চাইলো,
– তুমি এখানে কি করছো?
– তোর সাথে দেখা করতে এসেছি।
– এখানে? লেডিস ওয়াশরুমে?
– আর কোনো উপায় বাকি রেখেছিস তুই?

আদ্রিকা কোনো উত্তর দিলো না। মাথা নিচু করে ফেললে চোয়াল চেপে ধরে সরাসরি চোখে চোখ রাখলো বিস্ময়। ধমকে উঠলো বিনাদ্বিধায়,
– টিফিন পিরিয়ডে বিল্ডিংয়ের পেছনে চলে আসবি। আজকে যদি তোর সাথে আমি কথা বলার সুযোগ না পাই, খোদার কসম আদ্রি আমি এমন কিছু করে ফেলবো যা কারোর জন্যই ভালো হবে না।

সেদিনের কথা এমনিতেই ভুলতে পারেনি আদ্রিকা। আবার সেই বিল্ডিংয়ের পেছনে যাওয়ার কথা শুনে ভয়ে সরাসরি না করে দিলো।
– যেতে পারবো না। আপু আছে ক্যাম্পাসে।
– আগেও ছিলো। তখন আমরা বিল্ডিংয়ের পেছনে দেখা করেছি৷ আজকে কি সমস্যা? সমস্যা থাকলেও আমি শুনতে চাই না। হয় তুই আসবি দেখা করতে না হলে আমি চলে যাবো তোর সাথে দেখা করতে। দরকার হলে তোর বাড়িতে গিয়ে দেখা করে আসবো। তবুও যে করে হোক, আজকে আমি আলোচনায় বসবোই।

আদ্রিকাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বিস্ময় চলে গেলো। বাইরে বের হয়ে আদ্রিকা দেখলো মেঘা দাঁড়িয়ে আছে। দুজনের কেউ এই বিষয়ে আর কোনো কথা বললো না।
বিল্ডিংয়ের পেছনে আজকে আদ্রিকা গেলো ধীর পায়ে। কোথায় যেনো হারিয়ে গিয়েছে চঞ্চলতা। বিস্ময় অন্যদিনের মতোই দেয়ালে দেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিকা গিয়ে ওর সামনে দাঁড়ালো কিন্তু মুখে কিছু বললো না। বিস্ময় অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলো কিছু শোনার জন্য। অন্ততপক্ষে একবার চোখ তুলে তাকাবে তো মেয়েটা৷ সেটাও করলো না। মেজাজ খারাপের কারনে জোরসে একটা ধমক দিলো,
– কী সমস্যা? এমন কয়েদিদের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? মনে হচ্ছে তোকে ধরে বেধে নিয়ে এসেছি।

একে তো এখানে এসে গা ছমছম করছে তার উপর বিস্ময়ের ধমকে কেঁপে উঠলো আদ্রিকা। ছিচকাদুনের মতো কেঁদে ফেললো হঠাৎ। ভড়কালো বিস্ময়। বেচারা কিছু বুঝতে পারছে না। যাই বলছে, যাই করছে তাতেই উল্টো ফলাফল হচ্ছে। আদ্রিকার দিকে এগিয়ে এসে কোমল কন্ঠে জানতে চাইলো,
– কি হয়েছে আদ্রি? কি সমস্যা হচ্ছে না বললে বুঝবো কীভাবে বল? দেখা করতেছিস না, ফোন ধরতেছিস না। আমার একেকটা দিন কীভাবে কাটতেছে সেই সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে তোর? রেগে থাকলে এডলিস্ট এটা তো জানাবি, কেনো রেগে আছিস। রাগ কর, তর্ক কর, ঝগড়া কর তবুও কথা বল। এভাবে চুপ করে থাকিস না। তোর সাথে কথা না হলে আমার হাঁশফাঁশ লাগে।

কথাগুলো বলে আদ্রিকার হাত ধরার জন্য যেই না হাত বাড়িয়েছে, ওমনি এক পা পিছিয়ে গেলো আদ্রিকা। অবাক হয়ে বিস্ময় স্বগোতক্তি করলো,
– তুই আমাকে ভয় পাচ্ছিস!

বিমূঢ় হয়ে রইলো ক্ষণকাল। এই দিনও দেখার বাকি ছিলো! কী করেছে ও যার কারনে আদ্রিকা ওকে ভয় পাচ্ছে? মাঝখানে কিছুটা দূরত্ব রেখে বিস্ময় দেয়ালে হেলান দিয়ে অপেক্ষা করলো। বেশি চাপাচাপি করলে ভয় কমবে না বরং বাড়বে। আদ্রিকাকে ধাতস্থ হওয়ার সময় দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। বেশ কিছুক্ষণ কান্নাকাটির পর আদ্রিকার ভয় কেটে গেলো ধীরে ধীরে। মাথা তুলে চেয়ে দেখলো কেমন অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে বিস্ময়। এই মানুষটাকে হঠাৎ ভয় হতে শুরু করলো, সামনে দাঁড়াতে অস্বস্তি হচ্ছিলো। আদ্রিকা নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়ে আবার মাথা নিচু করে বললো,
– আমি আয়নার সামনের দাঁড়িয়ে নিজের দিকে তাকাতে পারি না।
– কেনো?
– নোংরা লাগে নিজেকে। আয়নায় একজন অপরাধীকে দেখতে পাই।
– কেনো?
– আমি যা করেছি মোটেও ঠিক করিনি।
– কি করেছিস? আমার সাথে প্রেম করার কথা বলছিস? এতোগুলো মাস প্রেম করার পর এ কথা তোর মনে হলো! ভালোবাসা অন্যায়, এটা কে বলেছে?
– ভালোবাসা অন্যায় নয়। ভালোবাসা পবিত্র। কিন্তু আমরা সেটাকে কলুষিত করেছি। যা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না।
– কি বলতেছিস বুঝতেছি না।
– তুমি সেদিন ঐ কাজটা কেনো করলে? মোটেও ঠিক করোনি।
– কোন কাজ? চুমু খেয়েছি সেটা?

আদ্রিকা মাথা উপর নিচ করে সায় দিলো। বিস্ময় তার দমিয়ে রাখা শ্বাসটা ছেড়ে হালকা হেসে জানতে চাইলো,
– কিস করেছি বলে রাগ করেছিস?
– আমার নিজেকে নোংরা লাগে।
– ফালতু কথা বলবি না। প্রেমে এতোটুকু ছোয়াছুয়ি সবাই করে। সামান্য কিস করেছি বলে এখন উনার নিজেকে ঘৃণা হচ্ছে। কিস করা অন্যায়। এদিকে যে সবার থেকে লুকিয়ে প্রেম করছিস, সেটা খুবই ন্যায় কাজ তাই না?

আদ্রিকা জানতো, ওর অনুভূতি বিস্ময় বুঝবে না। প্রেম করছে বলেই কি এসব করতে হবে! কিস করতে দিতে হবে, ছুঁতে দিতে হবে। হাত ধরা পর্যন্ত আপত্তি ছিলো না আদ্রিকার। কিন্তু এর বেশি কিছু মেনে নিতে পারবে না। আজকাল নিজেকে জঘন্য পাপী মনে হয়।

– তুই খুবই গেঁয়োর প্রকৃতির মানুষের কথা বলছিস৷ টিপিক্যাল রেস্ট্রিকটেড ফ্যামিলিতে বড় হলে যা হয় আরকি। আধুনিক হতে পারলি না।
– আমি এতোটা আধুনিক হতে পারবো না৷ আমার পারিবারিক শিক্ষা, ন্যায়নীতিবোধ আমার এতোটা অধঃপতন মেনে নিতে পারছে না।
– ভালোবাসা থাকলে সেখানে শারীরিক চাহিদা জন্মায়। এটাই স্বাভাবিক। এতে এমন নাক ছিটকানোর কি আছে?
– আমার শিক্ষামতে, একজন নারীকে নিবিড়ভাবে ছোঁয়ার অধিকার একমাত্র তার স্বামী রাখে। বিয়ের আগে এতোটা ঘনিষ্ট হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।
– আচ্ছা। সেদিনের জন্য আ’ম স্যরি। আমার নিজেকে কন্ট্রোল করা উচিত ছিলো। আর হবে না। এখন অন্তত স্বাভাবিক হ।
– আমি না ভুলতে পারছি না। কেমন পাগল পাগল লাগছে। সারারাত ঘুমাতে পারি না, দিনে দু দন্ড স্বস্তি পাই না। এমন কেনো হচ্ছে আমার সাথে?

দু হাতে নিজের চুল টেনে ধরে অসহায় আদ্রিকা মাথা নিচু করে ফেললো। ভীষণ মায়া হলো বিস্ময়ের। ভরসা হতে চাইলো আদ্রিকার।
– আদ্রি, শান্ত হ। অন্যায় যা করার আমি করেছি। খুব বেশি অন্যায় করিসনি তুই। যা হয়েছে অজান্তে হয়েছে। আর হবে না। আমি ওয়াদা করছি। আমার উপর ভরসা রাখ। আমি সব ঠিক করে দিবো৷ যাস্ট কিছুটা সময় দে। এভাবে অস্থির হস না, প্লিজ।

চলবে….