🔴পথের পাঁচালী (পর্ব :৩৩, ৩৪)🔴
– বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
🔴পর্ব :৩৩🔴
পরের বাড়ি নিতান্ত পরাধীন অবস্থায় চোরের মতো থাকা সর্বজয়ার জীবনে এই প্রথম। সুখে হৌক, দুঃখে হৌক, সে এতদিন এক ঘরের এক গৃহিণী ছিল। দরিদ্র সংসারের রাজরানী—সেখানে তাহার হুকুম এই এত বড় বাড়ির গৃহিণী, বৌ-রানীদের চেয়ে কম কার্যকরী ছিল না। এ যেন সর্বদা জুজু হইয়া থাকা, সর্বদা মন যোগাইয়া চলা, আর একজনের মুখের দিকে চাহিয়া পথ হাঁটা, পান থেকে চুন না খসে!-ছোেটর ছোট তস্য ছোট!”. এ তাহার অসহ্য হইয়া উঠিতেছিল। খাটিতে খাটিতে মুখে রক্ত ওঠে-কিন্তু এখানে খাটার মূল্য নাই। প্রাণপণে খাটো-কেহ নাম করিবার নাই। উহারা যখন দিবে তখন গর্বের সঙ্গে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে ছুঁড়িয়া ফেলিয়া দিবে—তোমার খাটার মূল্য দিতেছে বলিয়া সমানে সমানে দিবে না। তোমাকে হাঁটু গাড়িয়া লইতে হইবেই।
এ ক্ৰমে তাহার অসহ্য হইয়া উঠিতেছে। কিন্তু উপায় কি?…বাহিরে যাইবার সুবিধা কই? আশ্রয় কে দিবে? কোথায় দাঁড়াইবে?…
চিরকাল এইরকম কাটিবে? যতদিন বাঁচিবে ততদিন? ওই বামনী মাসির মতো?…
বিবাহের উৎসবের জের এখনও মেটে নাই, আজ মেয়েদের প্রীতিভোজ, সন্ধ্যার পর হইতেই নিমন্ত্রিত মহিলাদের গাড়ি পিছনের গেটে আসিতে শুরু করিল। ভিতরের বড় দরজা পার হইয়া সম্মুখেই মেয়ে-মহলের দোতলার বারান্দায় উঠিবার চওড়া মার্বেলের সিঁড়িটা নীলফুলের কাজ-করা কার্পেট দিয়া মোড়া। সারা বারান্দাতে ও সিঁড়িতে গ্যাসের আলো, দোতলার বারান্দায় উঠিবার মুখে বড় গ্যাসের ঝাড় জ্বলিতেছে। দুই বৌ-রানী ও বাড়ির মেয়েরা অভ্যর্থনা করিয়া সকলকে উপরে পাঠাইয়া দিতেছিলেন। নিমন্ত্রিতা মেয়েরা কেহ মুচকি হাসিয়া, কেহ হাসির লহর তুলিয়া কেহ ধীর, কেহ ক্ষিপ্র, কেহ সুন্দর অপূর্ব গতি-ভঙ্গিতে সিঁড়ি বাহিয়া উপরে উঠিতেছেন।
অপু অনেকক্ষণ হইতে নিচের বারান্দায় একটা থামের কাছে দাঁড়াইয়া দেখিতেছিল। এ ধরনের দৃশ্য জীবনে সে এই প্রথম দেখিল, সেদিন বিবাহের রাত্ৰিতে ঘুমাইয়া পড়িবার দরুন সে বিশেষ কিছু দেখে নাই। সকলের চেয়ে তাহার ভালো লাগিতেছিল এ বাড়ির মেয়ে সুজাতাকে। সে কার্পেট-মোড়া মার্বেল পাথরের সিঁড়ি বাহিয়া এক-একবার নামিয়া আসিতেছে, নিমন্ত্রিতাদের মধ্যে কাহারও দিকে চাহিয়া হাসিমুখে বলিতেছে-বা বেশ তো মণি-দি? একেবারে রাত আটটা কোরে? বকুলবাগানের বৌদি এলেন না?
অভ্যর্থতা সুন্দরী হাসিয়া বলিলেন-গাড়ি সাজিয়ে বসে আছি বেলা ছটা থেকে…বেবুনো তো সোজা নয়। ভাই, সব তৈরি না হলে তো… জানোই তো সব
সুজাতা কাঞ্চনফুল রং-এর দামি চায়না কেপের হাতকটা জামার ফাঁক দিয়া বাহির হওয়া শুভ্ৰ, সুগোল, নিটোল বাহু দিয়া পিছন হইতে নিমন্ত্রিতাকে বেষ্টন করিয়া আদরের ধরনে তঁহার ডান কঁধে মুখ রাখিয়া একসঙ্গে উপরে উঠতে লাগিল। বলিতে বলিতে চলিল-মা বলছিলেন বকুলবাগানের বৌদি নাকি সামনের মাসে যাবেন কলকাতা-বুধবারে মা গেছলেন যে-ঠিক কিছু হল?
সিঁড়ির ওপরের ধাপে মেজ বৌ-রানী দেখা দিলেন। বয়স একটু বেশি, বোধ হয় ত্ৰিশের উপর, অপূর্ব সুন্দরী। র্তার বেশের কোনো বাহুল্য নাই, ফিকে চাঁপা রং-এর চওড়া লালপাড় রেশমী শাড়ির প্রান্ত মাথার চুলে হীরার ক্লিপ দিয়া আঁটা, সিঁড়ির বড় ঝাড়ের আলোয় গলার সরু সোনার চেন চিক চিক্ করিতেছিল, সুন্দর গড়ন, একটু ধীর, গভীর-এই বয়সেও দুধে আলতা রং-এর আভা অপূর্ব। মার্সখানেক হইল উপযুক্ত ভাই মারা যাওয়াতে একটুখানি বিষাদের ছায়া পরিণত মুখের সৌন্দর্যকে একটি সংযত শ্ৰী দান করিয়াছে।
মণি-দি উঠিতে উঠিতে মেজ বৌ-রানীকে সম্মুখে দেখিয়া সিঁড়ির ওপরই দাঁড়াইয়া গেলেনমেজ বৌদির শরীর আজকাল কেমন আছে? এই দেখুন না, একবার আসবো আসবো করে. কাল ওঁরা এটোয়া থেকে সব এলেন, তাই নিয়ে অনেক রাত অবধি…
এত সুন্দর দেখিতে মানুষ হয়, অপুর এ ধারণা ছিল না। অপুইহাকে এই প্রথম দেখিল কারণ ইনি এতদিন এখানে ছিলেন না, ভাইয়ের মৃত্যুর পর সবে দিনকয়েক হইল বাপের বাড়ি হইতে আসিয়াছেন—সে মুগ্ধ চোখে আপলক বিস্ময়ের দৃষ্টিতে চাহিয়া রহিল। এই আলো, চারিধারে সুন্দরীর মেলা, দামি পুষ্পসারের মৃদু, মনমাতানো সৌরভ, বীণার ঝংকারের মতো সুর ও হাসির লহরীতে তাহার কেমন এক নেশা জমিয়া গেল। এই যদি সারাদিন চলে?…
মেজ বৌ-রানী অনেকক্ষণ হইতে দেখিতেছিলেন সিড়ির কোণে একজন অপরিচিত ছেলে দাঁড়াইয়া আছে। সকলকে তিনি জানেন না-ৰ্তাহার বোপও খুব বড়লোক, প্রায়ই বাপের বাড়ি থাকেন। দু’ধােপ নামিয়া আসিয়া মৃদুকণ্ঠে ডাকিয়া বলিলেন-খোকা, এসো উঠে। দাঁড়িয়ে কেন? তুমি কোথেকে আসচ?…
অপু অন্যদিকে চাহিয়া অন্য একদল আগন্তুকদের লক্ষ করিতেছিল-হঠাৎ ফিরিয়া চাহিয়া তাহাকেই মেজ বৌ-রানী ডাকিতেছিলেন দেখিয়া প্রথমটা বিস্মিত হইল-যেন বিশ্বাস করিতে পারিল না। পরে রাজ্যের লজ্জা আসিয়া জুটিতেই সে উপরে উঠিয়া যাইবে কি ছুটিয়া পলাইবে ভাবিতেছে- এমন সময় মেজ বৌ-রানী নিজেই নামিয়া আসিলেন-কাছে আসিয়া বলিলেন–কোথেকে আসচ খোকা?…
অতি কষ্টে অনেক চেষ্টায় অপুর মুখ দিয়া বাহির হইল-আমি-আমি-ওই-আমার মা– এই বাড়ি থাকেন-সঙ্গে সঙ্গে তাহার অত্যন্ত ভয় হইল যে, এখানে সে দাঁড়াইয়া আছে-কোথাকার রাধুনীর ছেলে–একথা শুনিয়া এখনই হয়তো ইনি কাহাকেও ডাকিয়া বলিবেন-ইহাকে গলাধাক্কা দিয়া বাহির করিয়া দাও এখান থেকে!…
মেজ বৌ-রানী কিন্তু সে সব কিছুই করিলেন না-তিনি বিস্মিত মুখে বলিলেন–এ বাড়ি থাকেন তোমার মা?… কে বলো তো.. কি করেন? কতদিন তোমরা এসেচ?
অপু ভাঙা ভাঙা কথায় আবোলতাবোল ভাবে পরিচয় দিল। মেজ বৌ-রানী বোধ হয় ইহাদের কথা এবার আসিয়া শুনিয়াছেন—বলিলেন -ও তোমরা কাশী থেকে এসেছ বুঝি?…কি নাম তোমার?–তাহার সুন্দর, সরল চোখের দিকে চাহিয়া তাঁহার বোধ হয় কেমন করুণা হইল। বলিলেন–এসো না ওপরে দাঁড়াবে-এখানে কেন?—ওপরে এসো–
অপু চোরের মতো বৌ-রানীর পিছনে পিছনে উপরে উঠিয়া কোণ ঘোষিয়া দাঁড়াইয়া রহিল!
উপরে মেয়েদের বড় মজলিশ, সারা বারান্দাটা কার্পেট-মোড়া! ধারে পারে বড় বড় কাঁচকড়ার টবে গোলাপ গাছ, এরিকা পাম। কোণে বড় বৈঠকখানার অর্গানটা। একটি মেয়ে খানিকক্ষণ সাধাসাধির পর অগ্যানের ধারে ছোট গদি-আঁটা টুলে গিয়া বসিলেন ও দু’একবার হালকা হাতে চাবি টিপিয়া-খানিকক্ষণ চুপ করিয়া হাসিমুখে একটি গান ধরিলেন; মেয়েটি দেখিতে সুশ্ৰী নয়, রংটা মাঝামাঝি, কিন্তু গানের গল; ভাবি সুন্দর। তাহার পর আর একটি মেয়ে গান গাহিলেন, এ মেয়েটি দেখিতে তত ভালো নয়। মেজ বৌ রানীর মেয়ে লীলা একটি হাসির কবিতা ঘাড় নাড়িতে নাড়িতে আবৃত্তি করিয়া সকলকে খুব হাসাইল। ভারি সুন্দর মেয়ে, মায়ের মতো সুশ্ৰী। আর কি মিষ্টি হাসি।
অপু ভালিতেছিল। এই সময় তাহার মা একবার উপরে আসিয়া দেখিল না কেন? কোথায় রহিল মা কোন রান্নাঘরে পড়িয়া, হয়তো কাজ করিতেছে, এ সব মা আর কোথায় দেখিতে পাইবে? মেয়েদের মজলিশ চলিতেছে, এমন সময় নিচে এক হৈ চৈ উঠিল। গিরিশ সরকারের গলাটা খুব শোনা যাইতেছিল।
সদু ঝি হাসিতে হাসিতে উপরে উঠিয়া বলিল-পোড়ানি! কাণ্ড দ্যাখো… হি হি, বলে কিনা হুঁকোর মধ্যে…হি হি…।
দুই-তিনজন নিমন্ত্রিত মহিলা জিজ্ঞাসা করিলেন–কি হয়েচে রে? কি?
—-ওই ঠিকে ঠাকুর একটা এসেছিল কেত্থেকে…লুচি ভাজতে গিয়েচে…সরকারদের খাবার ঘরের উঠোনে বসে লুচি ভাজচে… বলে আসি বাইরে থেকে একবার… হুঁকোর মধ্যে… হিহি… নিয়ে যাচ্ছে পুরে চুরি করে… আধাসেরের ওপর… গোমস্ত মশায় ধরেচে… রামনিহোর সিং মার যা দিচ্চে…চুলের ঝুঁটি না ধরে
সর্বজয়ার আজ সকাল হইতে নিঃশ্বাস ফেলিবার অবকাশ ছিল না। প্রায় দুই মন মাছ ভাজার ভার তার একার উপর-সকল আটটা হইতে সে মাছের ঘরে এই কাজেই লাগিয়া আছে। চেঁচামেচি শুনিয়া সে ঘর হইতে বাহিরে আসিয়া দেখিল এক উঠান লোকের মধ্যে একজন পঁচিশ-ত্রিশ বছরের পাতলা ময়লা রং-এর ময়লা কাপড়-পরা বামুনের ছেলেকে দু-তিনজনে মিলিয়া কেহ কিল, কেহ চড় বর্ষণ করিতেছে-লোকটা ঠিকে রাঁধুনী, আদ্যকার কার্যের জন্যই বাহির হইতে আসিয়াছিল—সে নাকি হুঁকার ভিতর করিয়া ঘি চুরি করিয়া লইয়া যাইতেছে। তাহার সে হুঁকাটি একদিকে ছিটকাইয়া ঘিটুকু উঠানের একদিকে পড়িয়া গিয়াছে-কাছা মারের চোটে খুলিয়া গিয়াছে–লোকটা বিপন্নভাবে সাফাই গাহিবার চেষ্টা করিতেছে এবং হুঁকার ভিতরে ঘূত পাওয়া একটা যে খুব স্বাভাবিক এবং নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা বা ইহার মধ্যে সন্দেহের বা আশ্চর্য হইবার কথা কিছুই নাই-এই কথা উন্মত্ত জনসঙ্ঘকে বুঝাইবার চেষ্টা করিতেছে। কথা শেষ না করিতে দিয়াই শস্ত্ৰনাথ সিং দারোয়ান তাহাকে এমন এক ঠেলা মারিল যে, সে অস্পুট স্বরে ‘বাবা রে’ বলিয়া দালানের কোণের দিকে ঘুরিয়া পড়িয়া গেল এবং থামের কোণে মাথাটা ঠিক করিয়া জোরে লাগিয়া বোধ হয় রক্তও বাহির হইল। সর্বজয়া ক্ষেমি ঝিকে জিজ্ঞাসা করিল–কি হয়েচে ক্ষেমিমাসি?… আহা, ওরকম করে মারে?… বামুনের ছেলে…
ক্ষেমি বলিল-মারবে না! হাড় গুঁড়ো করে ছাড়বে… মারার হয়েছে কি এখনও… পুলিশে দেবে, বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা–
ক্ষেমি ঝির মুখের কথা মুখেই বুহিয়া গেল।
সে উপরে উঠিবার সিঁড়ির দিকে চাহিয়াই তটস্থ অবস্থায় দাঁড়াইয়া রহিল! সর্বজয়া চাহিয়া দেখিল একজন পঁয়ষট্টি-সত্তর বছরের বৃদ্ধা সিঁড়ি বাহিয়া নমিতেছেন, পাশাপাশি গৃহিণী, পিছনে দুই বৌ-রানী ও এ বাড়ির মেয়ে অরুণা ও সুজাতা। সকল ঝি চাকরের দল তটস্থ অবস্থায় সিঁড়ির নিচের বারান্দায় কাতার দিয়া দাঁড়াইয়া-এ উহার পিঠে উঁকি মারিয়া দেখিতে লাগিল। সর্বজয়া ক্ষেমি ঝিকে চুপি চুপি বলিল, কে ক্ষেমিমাসি? ক্ষেমি ঝি ফিসফিস করিয়া কি বলিল— কোথাকার রানীমা— সর্বজয়া ভালো শুনিতে পাইল না। কিন্তু তহার মনে হইল ঠিক এইরকম চেহারার মানুষ সে যেন কোথায় আগে দেখিয়াছে। গিন্নি কাহাকে বলিলেন—খিড়কির ফটকে ইঁহার পালকি আসিয়াছে কিনা দেখিয়া আসিতে। বৃদ্ধার নিজের সঙ্গে দুই তিনটি ঝি আসিয়াছে, তাহারা পিছনে পিছনে আছে। নানা বিদায় আপ্যায়নের বিনিময় হইল, বহু বিনীত হাস্য বিস্তার লাভ করিল, হঠাৎ এ বাড়ির ঝি-চাকরের দল মাটিতে গড় হইয়া প্ৰণাম করিয়া খানিকক্ষণ যেন মাটির সঙ্গে মিশিয়া রহিল। সর্বজয়া মনে মনে ভাবিল—এরা এর বড়লোক, এরা যখন এত খাতির করচে, তখন তো যে সে নয়…! বুদ্ধার ষোল বেহারার প্রকাণ্ড পালকিটা খিড়কির ফটকেই এতক্ষণ ছিল, বুদ্ধাও পালকিতে উঠিলেন। তাহার দারোয়ানেরা পালকির সামনে পিছনে দাড়াইল। তাঁহাকে বিদায় দিয়া গৃহিণী, অন্যান্য মেয়েরা উপরে উঠিয়া গেলেন।
মাসিমা রুটির ঘরে আসিয়া চুপি চুপি বলিলেন-পয়সা রে বাপু, দেখলে তো পয়সার আদরটা? নিজেরই মস্ত জমিদারি, দুলাখ টাকা দান করেছেন, বাঙাল দেশের কোথাকার কলেজের জন্যে—পয়সারই আদর—আর এই তো আমিও আছি…ওদের তো আপনার লোক…গেরাজ্জি করে কেউ!
সর্বজয়ার কিন্তু সেদিকে মন ছিল না। এই মাত্র তাহার মনে পড়িয়াছে; অনেকটা এই রকম চেহারার ও এইরকম বয়সের–সেই তাহার বুড়ি ঠাকুরঝি ইন্দির ঠাকরুন, সেই ছেড়া কাপড় গেরো দিয়া পরা, ভাঙা পাথরে আমড়া ভাতে ভাত, তুচ্ছ একটা নোনাফলের জন্য কত অপমান, কেউ পোঁছে মা, কেউ মানে না, দুপুর বেলায়, সেই বাড়ি হইতে বিদায় করিয়া দেওয়া, পথে পড়িয়া সেই দীন মৃত্যু…
সর্বজয়ার অশ্রু বাধা মানিল না।
মানুষের অন্তর-বেদনা মৃত্যুর পরপারে পৌঁছায় কিনা সর্বজয়া জানে না, তবু সে আজ বার বার মনে মনে ক্ষমা চাহিয়া অপরিণত বয়সের অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করিতে চাহিল।
পর্ব ৩৩ শেষ 📌
🔴পর্ব :৩৩🔴
পথের পাঁচালী – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৪. মেজ বৌ-রানীর মেয়ে লীলা
কয়েকদিন পরে অপু দালান দিয়া যাইতেছে, উপরের সিঁড়ি বাহিয়া মেজ বৌ-রানীর মেয়ে লীলা নামিতেছিল। তাহাকে দেখিতে পাইয়া বলিল–দাঁড়াও না? তোমার নাম কি-অপু না কি?
অপু বলিল-অপু বলে মা ডাকে–ভালো নাম শ্ৰীঅপূর্বকুমার রায়…
সে একটু অবাক হইল। এ বাড়ির ছেলেমেয়েরা কখনও ডাকিয়া তাহার সঙ্গে কথা কহে নাই। লীলা কাছে আসিয়া দাঁড়াইল। কি সুন্দর মুখ। রানুদি, অতসীদি, অমলাদি, সকলেই দেখিতে ভালো বটে। কিন্তু তখন সে তাহাদের চেয়ে ভালো কাহাকেও দেখে নাই। এ বাড়ি আসিয়া পর্যন্ত তাহার পূর্বেকার ধারণা একেবারে বদলাইয়া গিয়াছে। বিশেষ করিয়া মেজ বৌ-রানীর মতো সুন্দর কোনো মেয়ে কল্পনাও সে করে নাই। লীলাও মায়ের মতো সুন্দরী-সেদিন যখন লীলা মেয়ের মজলিশে হাসির কবিতা বলিতেছিল, তখন অপু একদৃষ্টি তাহার মুখের দিকে চাহিয়া ছিল, কবিতা সে ভালো শোনে নাই।
লীলা বলিল-তোমরা কতদিন এসেচ আমাদের বাড়ি? সেবার এসে তো দেখিনি?
-আমরা ফাল্লুন মাসে এইচি, এই ফাল্লুন মাসে–
–কোথেকে এসেচ তোমরা?
–কাশী থেকে। আমার বাবা সেইখানেই মারা গেলেন কিনা-তাই–
অপুর যেন বিশ্বাস হইতেছিল না। সারা ঘটনাটা এখনও যেন অবাস্তব, অসম্ভব ঠেকিতেছিল। লীলা, মেজ বৌ-রানীর মেয়ে লীলা তাহাকে ডাকিয়া যাচিয়া তাহার সঙ্গে কথা কহিতেছে! খুশিতে তাহার সারা গা কেমন করিতে লাগিল!
লীলা বলিল-চলো, আমার পড়ার ঘরে গিয়ে বসি, মাস্টার মশায়ের আসবার সময় হয়েচে—এসো–
অপু জিজ্ঞাসা করিল-আমি যাবো?
লীলা হাসিয়া বলিল-বারে, বলচি তো চলো, তুমি তো ভারি লাজুক?—এসো-তুমি দেখোনি আমার পড়ার ঘর? ওই পশ্চিমের দালানের কোণে?…
ঘর বেশি বড় নয়। কিন্তু বেশ সাজানো। একটি ছোট পাথরের টেবিলের দুপাশে দুখানা চামড়ার গদি-আঁটা চেয়ার পাতা। একখানা বড় ছবিওয়ালা ক্যালেন্ডার। সবুজ কাঁচকড়ার খোলে একটা ছোট টাইমপিস ঘড়ি। একটা বই রাখিবার ছোট দেরাজ। চার-পাঁচখানা বাঁধানো ফটোগ্রাফ এ দেওয়ালে, ও দেওয়ালে। লীলা একটা চামড়ার অ্যাটাশি কেস খুলিয়া বলিল—এই দ্যাখো আমার জলছবি, মাস্টার মশায় কিনে দিয়েছেন, ভাগ শিখলে আরও দেবেন, জলছবি ওঠাতে জানো?অনলাইনে বেস্টসেলিং বই কিনুন
অপু বলিল-তুমি ভাগ জানো না??
—তুমি জানো? ভাগ কষেচ?
অপু তাচ্ছিল্যের সহিত ঠোঁট উলটাইয়া বলিল-কবে!…
এই ভঙ্গিতে অপুর সুন্দর মুখখানি আরও ভারি সুন্দর দেখাইল।
লীলা হাসিয়া উঠিয়া বলিল-তুমি বেশ মজার কথা বলতে পারো তো? পরে সে অপুর ঠোঁটের নিচে হাত দিয়া বলিল-এটা কি? তিল? বেশ দেখায় তো তোমার মুখে, তিলে বেশ মানিয়েচে, তোমার বয়স কত? তেরো? আমার এগারো–তোমার চেয়ে দু’বছরের ছোট–
অপু বলিল-তুমি সেদিন মুখস্ত বলেছিলে, সেই একটা হাসির ছড়া, বেশ লেগেচে আমার–
–তুমি জানো কবিতা?
-জানি-বাবার একখানা বই আছে, তা থেকে শিখিচি—
অনলাইনে বেস্টসেলিং বই কিনুন
–বলো দিকি?
লীলার গলার সুর কি মিষ্টি, এমন সুর সে কোনো মেয়ের এ পর্যন্ত শোনে নাই।
অপু ঘাড় দুলাইয়া বলিল–
যে জনের খড় পেতে খেজুর চেটায় ঘুমিয়ে কাল কাটে, ।
তাকে খাট-পালঙ্ক থাসা মশারি খাটিয়ে দিলে কি খাটে?
কথার শেষে সে জিজ্ঞাসার ভঙ্গিতে ঘাড় নাড়ে। বলিল-দাশু রায়ের পাঁচালীর ছড়া, আমার কাছে বই আছে–
লীলা হাসিয়া গড়াইয়া পড়ে আর কি। বলিল-তুমি ভারি মজার কথা জানো তো? এমন হাসাতে পারো তুমি!…
লীলার মুখের প্রশংসায় অপুর মনে আহ্লাদ ধরে না। সে উৎসাহের সুরে বলিল—আর একটা বলবো? আমি আরও জানি-পরে সে কড়িকাঠের দিকে চোখ তুলিয়া একটুখানি ভাবিয়া লইয়া পরে আবার ঘাড় দুলাইয়া আরম্ভ করে–
মুনির চিন্তা চিন্তামণি নাই অন্য আশা
নিষ্কৰ্মা লোকের চিন্তা তাস আর পাশা।অনলাইনে বেস্টসেলিং বই কিনুন
ধনীর চিন্তা ধন আর নিরেনব্বই এর ধাক্কা
যোগীর চিন্তা জগন্নাথ, ফকিরের চিন্তা মক্কা,
গৃহস্থের চিন্তা বজায় রাখতে চারি চালের ঠাট্টা,
শিশুর চিন্তা সদাই মাকে, পশুর চিন্তা পেট্টা।
এ ছড়ার সকল কথার অর্থ লীলা বুঝিতে পারিল না। কিন্তু আবার হাসিয়া গড়াইয়া পড়িবার জোগাড় করিল। বলিল, দাঁড়াও লিখে নেবো–
লীলা অ্যাটাশি কেসটা হইতে একটা কলম বাহির করিয়া বলিল-বলো দিকি?
অপু আবার বলিতে শুরু করিল। খানিকটা পরে একটু অবাক হইয়া বলিল-কালি নেওনি তো লিখচো কেমন করে?
লীলা বলিল—এ তো ফাউন্টেন পেন-কালি তো লাগে না, এর মধ্যে ভরা আছে-জানো না?
অপুর হাতে লীলা কলামটা তুলিয়া দিল। অপু উলটাইয়া-পালটাইয়া দেখিয়া বলিল-এ তো বেশ, কালিতে মোটে ডোবাতে হয় না!
–তা নয়, কালি ভরা থাকে, ভরে নিতে হয়-এই দ্যাখো, দেখিয়ে দি–
–বাঃ বেশ তো! দেখি একবারটি—
লীলা কলমটা অপুর হাতে দিয়া হাসিমুখে বলিল—তোমায় দিয়ে দিলাম একেবারে—
অপু অবাক হইয়া লীলার দিকে চাহিল। পরে লজ্জিতমুখে বলিল-না। আমি নেবো না—
লীলা বলিল—কেন?
–উঁহু—
–কেন?
–নাঃ!
লীলা একটু দুঃখিত হইল। বলিল-নাও না?…আমি আর একটা বাবার কাছ থেকে নেবো, নাও তুমি এটা, দেখি তোমার হাত? বাস!… আর ফেরত দিতে পারবে না।
ব্যাপারটা অপুর সম্পূর্ণ অবাস্তব ঠেকিল। সে বলিল—কিন্তু তোমায় যদি কেউ বকে?
লীলা বলিল-ফাউন্টেন পেন দেবার জন্যে? কেউ বকবে না, আমি মাকে বলবো অপূর্বকে দিয়ে দিলাম-বাবার কাছ থেকে আর একটা নেবো-বাবার ফটো দেখবো?…ওই ক্যালেন্ডারের পাশে টাঙানো-দাঁড়াও পাড়ি–
তাহার পর লীলা আরও দু’তিনখানি ফটো দেখাইল। আলমারি হইতে খানকতক বই বাহির করিয়া বলিল-মাস্টার মশায় কিনে দিয়েছেন—তুমি কোন স্কুলে পড়ো?
অপু কাশীতে সেই যা দিনকতক স্কুলে পড়িয়াছিল, আর ঘটে নাই। বলিল-কাশীতে পড়তাম এখন আর পড়ি না-কথাটা বলিতে সে সংকোচ বোধ করিতেছিল বলিয়াই শেষের কথাটা এমন সুরে বলিল, যেন না পড়িয়া খুব একটা বাহাদুরি করিতেছে। একখানা বইয়ে অনেক ছবি। অপু বলিল-বইখানা পড়তে দেবে একবারটি?
লীলা বলিল-নাও না? আমার আরও অনেক ছবির বই আছে, তিন বছরের বাধানো মুকুল আছে, মায়ের ঘরের আলমারিতে, এনে দেবো, পড়ো—
অপু বলিল–আমার কাছেও বই আছে, আনবো?
লীলা বলিল-চলো, তোমাদের ঘরে যাই—
লীলাকে নিজেদের ঘরে লইয়া যাইতে অপুর লজ্জা করিতে লাগিল। আসবাবপত্র কিছু নাই, ছেড়া বালিশের ওয়াড়, আলনায় গায়ে দেওয়ার কাঁথা। লীলা তবুও গেল। অপু নিজের টিনের বাক্সটা খুলিয়া একখানা কি বই হাসি-হাসি মুখে দেখাইয়া গর্বের সুরে বলিল-আমার লেখা, এই দ্যাখো, ছাপার অক্ষরে লেখা আছে আমার নাম–
লীলা তাড়াতাড়ি হাত হইতে লইয়া বলিল – দেখি দেখি?
সেই কাশীর স্কুলের ম্যাগাজিনখানা। হরিহর ছেলের গল্প ছাপানো দেখিয়া যাইতে পারে নাই, তাহার মৃত্যুর তিন দিন পরে কাগজ বাহির হয়। লীলা পড়িতে লাগিল, অপু তাহার পাশে বসিয়া উৎফুল্ল মুখে লীলার চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করিয়া পঠিত লাইনগুলি নিজেও মনে মনে একবার করিয়া পড়িয়া যাইতেছিল। শেষ করিয়া লীলা প্রশংসমান চোখে অপুর মুখের দিকে খানিকটা চাহিয়া থাকিয়া বলিল-বেশ তো হয়েছে, আমি এখানা নিয়ে যাই, মাকে দেখাবো।–
অপুর ভারি লজ্জা হইল। বলিল-না—
লীলা শুনিল না। কাগজখানা হাতে করিয়া রাখিল। বলিল–নিশ্চিন্দিপুর লেখা আছে, নিশ্চিন্দিপুর কোথায়?
–নিশ্চিন্দিপুর যে আমাদের গাঁ-সেইখানেই তো আমাদের আসল বাড়ি – কাশীতে তো মোটে বছর খানেক হল আমরা–
এমন সময় ছোট মোক্ষদা দুয়ারের কাছে আসিয়া ঘরের মধ্যে মুখ বাড়াইয়া কহিল – -ওমা দিদিমণি, তুমি এখানে বসে? আমার পোড়ানি! ওদিকে মাস্টারবাবু বসে বসে হয়রান, আমি ওপর নিচে সব ঘর খুঁজে খুঁজে।–তা কে জানে তুমি এঁদো-পড়া কুঠুরিতে–এসো এসো–
লীলা বলিল—যা তুই, আমি যাচ্ছি, যা—
ছোট মোক্ষদা বলিল–তা বসবার কি এই জায়গা নাকি? বলে আমাদেরই তাই মাথা ধরে–তাই কি ওই আস্তাবলের খোট্টা মিন্সেরা ঘোড়ার জায়গাগুলো ঝাঁট দেয়, না ধোয়? উহু-হু, কি গন্ধ আসছে দ্যাখো-এসো দিদিমণি, শিগগির–
লীলা বলিল—যাবে না। যাঃ, আমি আজ পড়বো না, যা বলগে যা—কে তোকে বলেছে এখানে বকবক করতে? যা মাকে বলগে যা–
ছোট মোক্ষদা থর্ থর্ করিয়া চলিয়া গেল। অপু বলিল–তোমার মা বকবেন না? কেন ওকে ওরকম বল্লে?
পরদিন দুপুরে সে নিজেব ঘরে ঘুমাইতেছিল। কাহার ঠেলায় ঘুম ভাঙিয়া চোখ চাহিয়াই দেখিল-লীলা হাসিমুখে বিছানার পাশে। সে মেঝেতে মাদুর পাতিয়া ঘুমাইতেছিল, লীলা হাঁটু গাড়িয়া বসিয়া তাহাকে ঠেলা মারিয়া উঠাইয়াছে, এখনও সেই ভাবেই কৌতুকপূৰ্ণ ডাগর চোখে তাহার দিকে চাহিয়া আছে। হাসিমুখে বলিল-বেশ তো, দুপুর বেলায় বুঝি এমন ঘুমোয়? আমি বা’র থেকে ডাক দিলাম, এসে দেখি খুব ঘুম–
অপু কোঁচার খুঁটে চোখ মুছিতে মুছিতে তাড়াতাড়ি উঠিয়া বসিল। বলিল-সকালবেলা পড়তে আসোনি? আমি তো পড়ার ঘর-টর সব খুঁজে দেখি কেউ কোথাও নেই–
লীলা অপুর স্কুলের সেই কাগজখানা অপুর হাতে দিয়া বলিল-মাকে পড়ে শোনালাম কাল রাত্রে, মা নিজেও পড়ে দেখলেন।
অপুর সারা গা খুশিতে কেমন করিয়া উঠিল। অত্যন্ত লজ্জা ও সংকোচ বোধ হইল। মেজ বৌ-রানী তাহার লেখা পড়িয়াছেন।
লীলা বলিল-এসো আমার পড়ার ঘরে, ‘সখা-সখী’ বাঁধানো এনে রেখেচি তোমার জন্যে–
অপু আলনার দিকে চাহিল। তাহারা ভালো কাপড়খানা এখনও শুকায় নাই, যেখানা পরিয়া আছে সেখানা পরিয়া বাহিরে যাওয়া যায় না। বলিল-এখন যাবো না–
লীলা বিস্ময়ের সুরে বলিল-কেন?
অপু ঠোঁট চাপিয়া সকৌতুক হাসিমুখে ঘাড় নাড়িল। সে জানে না তাহার মুখ কি অপূর্ব সুন্দর দেখায় এই ভঙ্গিতে।
লীলা মিনতির সুরে বলিল—এসো এসো–
অপু আবার মুখ টিপিয়া হাসিল।
-বাবা, কি একগুঁয়ে ছেলে যে তুমি! না বল্পে আর হ্যাঁ হবার জো নেই বুঝি? আচ্ছা দাঁড়াও, বইটা এখানে–
অপু হাসি চাপিতে না পারিয়া খিলখিল করিয়া হাসিয়া ফেলিল।
লীলা বলিল-অত হাসি কেন? কি হয়েছে বলো-না বলতেই হবে–বলো ঠিক–
অপু আলনার দিকে হাসি ভরা চোখের ইঙ্গিত করিল মাত্র, কিছু বলিল না।
এবার লীলা বুঝিল। আলনার কাছে গিয়া হাত দিয়া বলিল—একটুখানি শুকিয়েছে, তুমি বসো, আমি বইখানা আনি-ফাউন্টেন পেনে লিখচো? কেমন, বেশ ভালো লেখা হয় তো?
তাহার পর অনেকক্ষণ ধরিয়া লীলার আনা বই দুজনে দেখিল। বই মাদুরে পাতিয়া দুইজনে পাশাপাশি হাঁটু গাড়িয়া বসিয়া উপুড় হইয়া বই-এর উপর ঝুঁকিয়া বই দেখিতেছিল। লীলার রেশমের মতো চিকন নরম চুলগুলি অপুর খোলা গায়ে লাগিয়া যেন গা সির সির করে। হঠাৎ লীলা বই হইতে মুখ তুলিয়া বলিল—তুমি গান জানো?
অপু ঘাড় নাড়িল।
–তবে একটা গাও—
—তুমি জানো?
-একটু একটু, কেন বিয়ের দিন শোনোনি?
ছোট মোক্ষদা ঝি ঘরে উঁকি মারিয়া কহিল–এই যে দিদিমণি এখানে। আমিও মনে ভেবেচি তাই, উপরে নেই, পড়ার ঘরে নেই, তবে ঠিক-এসো দিকি, এই দুধ টুকু খেয়ে যাও, জুড়িয়ে গেলা-হাতে করে খুঁজে খুঁজে হয়রান—
রূপার ছোট গ্লাসে এক গ্লাস দুধ! লীলা বলিল-রেখে যা-এসে এর পর গ্লাস নিয়ে যাস–
ঝি চলিয়া গেল। আরও খানিকটা বইয়ের ছবি দেখা চলিল। এক ফাঁকে লীলা দুধের গ্লাস হাতে তুলিয়া বলিল-তুমি খেয়ে নাও আদ্ধেকটা–
অপু লজ্জিত সুরে বলিল-না।
–তোমাকে ভারি খোশামোদ কর্তে হয় সব তাতে-কেন ওরকম? আমাদের মুলতানী গরুর দুধ-খেয়ে নাও-ক্ষীরের মতো দুধ, লক্ষ্মী ছেলে–
অপু চোখ কুচকাইয়া বলিল-ইঃ লক্ষ্মী ছেলে? ভারি ইয়ে কি না? উনি আবার–
লীলা দুধের গ্লাস অপুর মুখে তুলিয়া দিয়া ঘাড় নাড়িয়া বলিল-আর লজ্জায় কোজ নেই–আমি চোখ বুজে আছি, নাও–
অপু এক চুমুকে খানিকটা দুধ খাইয়া-ফেলিয়া মুখ নামাইয়া লইল ও ঠোঁটের উপরের দুধের দাগ তাড়াতাড়ি কোঁচার খুঁটে মুছিতে মুছিতে হাসিয়া ফেলিল।
লীলা গ্লাসে চুমুক দিয়া বাকি দুধ টুকু শেষ করিল, পরে সেও খিলখিল করিয়া হাসিয়া উঠিল।
বেশ মিষ্টি দুধ, না?
–আমার এঁটো খেলে কেন? খেতে আছে পরের এঁটো?
-আমার ইচ্ছে-একটুখানি থামিয়া কহিল-তুমি বল্লে জলছবি তুলতে জানো, ছাই জানো, দাও তো আজ আমার ক’খানা জলছবি তুলে?
৩৪ পর্ব শেষ 📌
চলবে।