পদ্ম ফুলের অভিমান পর্ব-০৯

0
255

#পদ্ম_ফুলের_অভিমান(পর্ব 9)
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম

আব্বুর রুমে গিয়ে আব্বুকে বললাম, আব্বু তোমার সাথে একটা কথা ছিলো

-হ্যাঁ মা বলো কি বলবে

-না মানে, বিয়েটা কি এখনি করতে হবে আব্বু।( ধুর আবারো কান্না পাচ্ছে, আব্বুর সামনে কিছু বলতে আসলেই শুধু কান্না পায়)

-আব্বু মুচকি হেসে বললো,
পদ্মমা আমি জানি নিলয় তোকে পছন্দ করে। অনেক আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম আমি। তারপর যখন তোর ফুপি বললো তখন আরো শিওর হয়ে গেলাম যে আমার ধারনা ঠিক ছিলো।
আর বিয়ের ব্যাপারটা এতো তারাতারি কেনো নীলাম, এখন তো নিলয় দেশে এসেছে, ও এখন বেশ কিছুদিন দেশেই থাকবে। আর তোর ক্লাস ও শুরু হবে কিছুদিনের মধ্যে। মানে তুই আর নিলয় এক বাড়িতে থাকবি।

–আব্বু আমাকে সবসময় তুমি করে বললেও কিছু কিছু সময় তুই করে বলে।

-আমাদের সমাজটা খুব উদ্ভট জানিস মা, মানুষের মূখে এক তো মনে আরেক। এই বাড়িতে এক কথা তো আরেক বাড়িতে আরেক কথা। তাই সবাই যখন শুনবে যে এক বাড়িতে প্রাপ্ত বয়স্ক দুটা ছেলেমেয়ে থাকে সেটা যদি আরো হয় ফুপাতো,মামাতো ভাই বোন তাহলে মানুষের মুখে আর হাত দেওয়া যাবে না।আমাদের নিজেদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক, বা যতোই ভাই বোনের মতো থাকি না কেনো মানুষ সেটা কখনোই দেখবে না।মানুষ বিনোদনের জন্য তিল কে তাল আর তাল কে তালিও বানিয়ে দেয় ।

তাই এখনি বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া। তোর ফুপিরো খুব ইচ্ছা ছিলো তোকে পুত্রবধূ করার। আর আমি জানি নিলয় অনেক ভালো ছেলে। আমার বোনের ছেলে হিসেবে না ও একজন মানুষ হিসেবেও অনেক ভালো। ও তোকে খুব ভালো রাখবে দেখিস।

-আব্বুর কথা শুনে আর কিছু বলার থাকলো না।চুপচাপ নিজের ঘরে চলে গেলাম।

কিছুই ভালো লাগছে না,ভালোবাসার মানুষটিকে ভোলা কি এতোই সহজ নাকি। অভ্র ভাইয়া না,হয় আমাকে ভালোবাসে নি,কিন্তু আমি তো ভালোবেসেছিলাম।আমার ভালোবাসা মিথ্যে ছিলো না তাই আমার কষ্ট হচ্ছে অন্যে একজনকে বিয়ে করতে।

দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে আসলো,নানু বাড়ির সকলেই চলে এসেছে,শুধু অভ্র ভাইয়ার আম্মু,অভ্র ভাইয়া আর ওনার বউ বাদে।
ফুপি,ফুপা নাকি কাছাকাছি এসেছে। নিলয় ভাইয়ার চাচাতো ভাই বোন গুলাও নাকি আসতেছে। রাগ করে না খেয়ে আছি কিন্তু এখন পেটের ভেতর ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। কাউকে বলতেও পারছি না লজ্জায়। কিভাবে বলবো আমি যে রাগ করে আছি।

-আব্বু এসে তারাতারি রেডি হতে বললো,শপিং করতে যাবো। কি আর করার সাধারন একটা এ্য্যস কালার জামার সাথে কালো প্যান্ট আর মাথায় কালো ওরনা পরে নিলাম। বাহিরে এসে দেখি সবাই গাড়িতে উঠতেছে আমি উঠতে গেলেই অভ্র ভাইয়া আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

-তুই একটু দাড়া,ওরা এই গাড়িতে যাক।আব্বু আম্মু যে গাড়িতে আসছে আমরা ওটাতে যাবো।

-আমার বয়ে গেছে আপনার সাথে যেতে,ভেবেছিলাম এই কথাটা বলবো কিন্তু বললাম না কারন আমি না জেনেই ওনাকে অনেক কথা বলেছি সকালে। এখন একবার সরি বলতে হবে। এছাড়া আরো কিছু কথা আছে।

একটু পর ফুপা ফুপি চলে আসলে ওনাদের সাথে দেখা করে ঐ গাড়িতে আমি আর নিলয় ভাইয়া আসলাম।

পুরোপুরি নীরবতা,কারো মুখে কোনো কথা নেই। আমি আড় চোখেঁ নিলয় ভাইয়ার দিকে তাকালাম, মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে,ঠোঁট দুটো বার বার জ্বিব দিয়ে ভিজিয়ে নিচ্ছে। হটাৎ আমার দিকে তাকাতেই চোখেঁ চোখঁ পরে গেলো। উনি সুন্দর করে একটু মুচকি হাসলেন। আমি চোখঁ সরিয়ে নিলাম।

-সরি ভাইয়া

-সরি কেনো

-আসলে তখন তোমাকে ঐভাবে বলার জন্য, আমি ভেবেছিলাম তুমি আব্বুকে বিয়ের কথা বলেছো

একটু হেসে উত্তর দিলেন, আরে পাগলি আমি কিছু মনে করি নি, আর হুম তোকে কিছু বলার আছে,

-জ্বি ভাইয়া বলো,,

-শোন তুই যদি চাস আমি বিয়েটা আটকাতে পারবো, কারন আমি চাই না জোর করে তোকে বাদ্ধ করতে। আমি চেয়েছিলাম আমার ভালোবাসা দিয়ে একদিন না একদিন ঠিক তোর মন জয় করে নেবো কিন্তু মামা তার আগেই বিয়ের কথা বলেছে।
আর যদি বিয়েটা হয়েও যায়, আমি কখনোই তোর থেকে স্বামীর অধিকার চাইবো না,কোনো কিছুতে বাদ্ধ ও করবো না তোকে। তোর যতোদিন ইচ্ছা সময় নিবি কিন্তু সবশেষে আমার একটাই চাওয়া তুই আমার হয়ে থাকবি। আমাদের মাঝে যা কিছুই হোক না কেনো দিন শেষে যেনো তুই আমারি থাকিস।
কথা দিচ্ছি আমি বেঁচে থাকতে কখনো কষ্ট পেতে দেবো না আমি তোকে। জানিস যখন মামা আমাকে বলেছে আমার আর তোর বিয়ে, যতোটা খুশী আমি হয়েছি বিশ্বাস কর এতোটা খুশী আমি জীবনেও হই নি। কিন্তু পরেক্ষনেই তোর কথা মনে হতেই আমার সব খুশী চলে গেছে,কারন আমি জানতাম যে তুই এখনি বিয়ে করতে চাস না। আমাকে তো একদমি না। বলেই একটা মিথ্যে হাসিঁ দিলেন।

-আমি খুব মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনলাম।আমি বুঝি ভালোবাসার মানুষটাকে না পাওয়ার যন্ত্রণা কি। আমি তো কেঁদে কেঁদে কষ্ট কমাতে পেরেছি,কিন্তু ছেলেরা তো সেটা পারে না। তাদের চোখেঁ জ্বল মানায় না।

কিছুক্ষণ পর একটা বড় রেস্টুরেন্ট এর সামনে গাড়ি থামালো। নিলয় ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমে আমাকে নামতে বললেন।

-আজ তো সারাদিন কিছু খাস নি, চল কিছু খেয়ে নিবি

-উফফ সবকিছুর মাঝে এতোক্ষন আমি এটাই চাচ্ছিলাম, কিন্তু আমি যে রাগ করে খাই নি, এখন কি এক কথাতে নামা যায় নাকি। তাই একটু বেকিয়ে বললাম আমি খাবো না।

-নিলয় ভাইয়া মুচকি হেসে বললো, আচ্ছা চু*রি
করে খেয়ে নে, আমি বাড়িতে কাউকে কিছু বলবো না

-মানে

-মানে আমি জানি তুই খিদা সহ্য করতে পাস না, আর আজকে অনেক জ্বিদ করেছিস এজন্য খাস নি। এখন তোর খুব খিদে পেয়েছে কিন্তু তুই সেটা প্রকাশ করতে চাচ্ছিস না তাই তো

-এই রে ধরা পরে গেলাম। কিভাবে বুঝলো উনি। কি আর করার আর কিছু বললে যদি সত্যি সত্যি খেতে না দেয় এই ভয়ে আর কিছু না বলে সুরসুর করে নেমে গেলাম।

-জানিস তো, আজ তোর জন্য আমারো খাওয়া হয় নি, খুব খিদে পেয়েছে

-আপনি কেনো খান নি

-বারে,বউ না খেয়ে আছে, আমি খেলে সবাই কি ভাববে

-ওনার কথা শুনে ছোট ছোট চোখঁ করে তাকালাম
এখনো বিয়েই হলো না আর উনি বউ বউ শুরু করছে, আর সাথে না খেয়েও আছে।

দুইজনে দুই প্লেট বিরিয়ানি খেয়ে পেট শান্তি করলাম, উনি আরো খেতে পারতো কিন্তু দেরি হয়ে যাচ্ছে জন্য আর খেলো না।
শপিং এ গিয়ে একে একে সবার জন্য ড্রেস কিনলেন, আমার জন্য ও চারটা শাড়ি,ম্যাচিং ব্লাউজ,আর সাথে পাথরের জুয়েলারি,আমি নিজে কিছুই পছন্দ করি নি সব,আমার সবকিছু নিলয় ভাইয়া পছন্দ করেছে,আর একটা ছেলেমানুষের পছন্দ যে এতো নিখুঁত হতে পারে এনাকে না দেখলে বুঝতাম না, শাড়িতে যদি শুতাও টান খেয়ে থাকে সেটাও বাদ দেয়,চৌদ্দটা দোকান ঘুরে ঘুরে দেখে তারপর কিনলো,আমি হলে তো যে কোনো একটাতেই সবকিছু কিনে বাড়ি ফিরতে পারলেই বাঁচি।
সবার কেনাকাটা শেষ করে সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। আমাদের গাড়িতে শুধুমাত্র আমার আর নিলয় ভাইয়ার শপিংগুলা রেখেছেন।
-পদ্ম চল একটু আমার সাথে

-আবার কোথায় যাবো ভাইয়া

-গেলেই দেখতে পারবি
এই বলে নিয়ে গেলেন স্বর্ণের দোকানে,

-এখানে কেনো আনলেন

-এখানে মানুষ কেনো আসে,স্বর্ণ নিতে

-না মানে,আমি স্বর্ণ নিয়ে কি করবো

-বিয়েতে পরবি

-অনেক জুয়েলারি নিয়েছেন তো

-তাতে কি হয়েছে,আমার বউ সব পরবে। তবে স্বর্ণ তুই তোর পছন্দ মতো নিতে পারিস কিন্তু আজ যেহেতু তোর সবকিছু আমি পছন্দ করেছি তোর মন চাইলে এটাও নিতে পারি।

-আমি জানি উনি যেহেতু বলেছে নিতে হবে, না নিয়ে ছাড়বে না। তবে আমার পছন্দের চেয়ে ওনার পছন্দ বেশি ভালো। তাই ওনাকেই বললাম।

উনি খুব ভালোভাবে দেখে একটা সাধারনের মাঝে অসাধারন চিক নিলেন। কেনো জানি সবগুলোর মধ্যে থেকে ঐটাই বেশি ভালো লাগছে। আর একটা আংটি নিলেন।

-পদ্ম ফুল শোননা,এখান থেকে আর কিছু নেই না, তোকে ডিজাইন দেখে বানিয়ে দেবো কেমন।

আমি কোনো কথাই বললাম না। চুপচাপ ওনার পেছন পেছন চলে আসলাম। উনি সবকিছু যেনো খুব দায়িত্ব নিয়ে করছে।
আসতে আসতে রাত প্রায় এগারোটা বেজে গেছে।
বাড়িতে এসে দেখি বাড়িটা হালকা সাজানো হয়েছে।

রাত প্রায় বারোটার কাছাকাছি,
হয়তো সবাই ঘুমিয়ে গেছে,নিলয় ভাইয়ার চাচাতো ভাই বোনেরাও এসেছে,হয়তো সবাই ঘুম।
আমি ছাঁদে দাড়িয়ে ভাবছি, কার জীবনে কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না। আমি কখনই ভাবি নি এখনি আমার বিয়ে হবে তাও সেটা নিলয় ভাইয়ার সাথে। তবে আমি যতোটা সম্ভব চেষ্টা করছি এই মানুষটাকে বোঝার। যতো দেখছি ততোই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। তবুও একজনকে ভুলে গিয়ে অন্য একজনকে মেনে নেওয়া এতোটাও সহজ না। যখনি অভ্র ভাইয়ার কথা মনে পরে তখনি বুকটা ভারী হয়ে আসে। আজ পুরানো বান্ধবীগুলোকে খুব মিস করছি, অনেকদিন ওদের সাথে কথা নেই,দেখা নেই। আসলে যতো কাছের বান্ধবী হোক না কেনো দূরে গেলে এমনি হয়ে যায়। ইচ্ছে থাকলেও রোজ রোজ নিয়ম করে আগের মতো কথা হয় না।

চলবে,,