#পদ্ম_ফুলের_অভিমান(পর্ব 13)
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম
পদ্ম ফুল আমি জানি তুমি কেনো এই কথাটা বললে, আমি তোমাকে ইগনোর করার চেষ্টা করতেছি এজন্য তো।
ওনার কথা শুনে আমি মাথা ওপর নিচ করে হুমম বললাম
উনে একটু হেসেঁ বললেন, দেখো আমি তোমাকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসলেও তখন কিন্তু সম্পর্কে তুমি আমার বোন এ ছিলে। সেটা আমি মানি বা না মানি মামাতো বোন তুমি আমার। তাই আমি তোমাকে ভালোবাসলেও তোমাকে কখনো অন্য নজরে দেখি নি।কিন্তু,,
কিন্তু কি নিলয় ভাইয়া,
কিন্তু এখন তুমি আমার বিয়ে করা বউ। আর কেউ যখন কালেমা পরে সাক্ষী রেখে বিয়ে নামক এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয় তখন দুজনার মধ্যে আল্লাহর তরফ থেকে মায়ার সৃষ্টি হয়। আর এই মায়ার বড্ড শক্তি জানো, আমি আগে তোমার কাছাকাছি থাকলেও কখনোই আমার এমন লাগে নি ,,
আমি একটু অবাক হয়ে বললাম কেমন লাগে,,
-খুব কাছে টানে তোমার প্রতি, হয়তো তুমি আমাকে নিয়ে ভাবো নি তাই তুমি বুঝবে না কিন্তু আমি তো তোমাকে নিয়ে সবসময় ভাবি,আমার মধ্যে তুমি ছাড়া আর কোনো ভাবনা নেই, তাই তোমাকে দেখলে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে তোমার মাঝে, তোমার চোখঁ তোমার ঠোঁট খুব করে আকৃষ্ট করে তোমার প্রতি।
শেষের কথাগুলো কেমন ঘোর লাগা কন্ঠে বললেন।
তারপর আবারো একটু হেসেঁ বলতে লাগলেন,,
তোমার ভয় নেই পদ্ম ফুল আমি তোমাকে কখনোই অবহেলা করবো না, তোমার কোনো সমস্যা হোক এমন কাজ ও আমি করবো না। তুমি চাইলে এরপর থেকে আমি আবারো আগের মতো হয়ে যাবো, কিন্তু এটাই যে আমার হয়তো একটু অস্বস্তি হবে, কেনোনা কোনো পুরুষ মানুষ তার বউয়ের কাছাকাছি থাকলে নিজেকে ধরে রাখতে পারবে না।
-ওনার কথা শুনে আমি যথেষ্ট বুঝতে পেরেছি, তাই কথা ঘুরিয়ে বললাম আচ্ছা এখন চলুন অনেক দেরি হয়ে গেলো।
-হুমম চলো
উনি আমাকে খুশির বাড়িতে রেখে চলে আসে,তারপর খুশিকে সাথে নিয়ে লাইব্রেরিতে গিয়ে বই কিনে নিজের জন্য কিছু শপিং ও করে নেই, আসার সময় নিলয় ভাইয়া বলেছে আমি যেনো কখনো জিন্স না পরি, কি আর করার বউ যেহেতু হয়েছি কথা তো শুনতে হবে। দুপুরের মধ্যে বাড়িতে চলে আসলাম, কড়া রোদে মাথাটা কেমন ব্যাথা করছে।বাড়িতে এসে গোসল করে খাওয়া দাওয়া করে এক ঘুম।এর মধ্যে নিলয় ভাইয়াকে একবারও দেখিনি ফুপি শুধু বললো তোর বাবার সাথে কোথায় যেনো গেছে।
বিকালের দিকে ঘুম ভেঙে গেলো,হটাৎ নিলয় ভাইয়া কথা গুলো মনে হতে লাগলো,আসলেই তো বিয়ের পর এক ঘরে থেকেও কয়জন ছেলে এমন টা মেনে নিবে। কেনো জানি না ভালো লাগা কাজ করছে, নিলয় ভাইয়া শুধু আমার ভালোর জন্য আমাকে কোনো কিছুতেই চাপ দেয়না। স্বামী স্ত্রী হওয়া সত্বেও আমার কাছে স্বামির অধিকার ফলায় না, আমি আসলেই অনেক ভাগ্যবতি, তা না হলে নিলয় ভাইয়ার মতো এতো ভালো স্বামি আমার ভাগ্যে থাকতো না।
দেখতে দেখতে আমার এক মাস চলে গিয়েছে, এতোদিন অবশ্য নিলয় ভাইয়া আমার সাথে স্বাভাবিক ছিলো, আগে যেমন ছিলাম তেমন, রুমে থাকতে তুই করে বলছে আর বাহিরে গেলে তুমি, তিনদিন বাহিরে ঘুরতে নিয়ে গেছিলো, হয়তো আর কয়েকদিন পর আবার আমেরিকা চলে যাবে, ওনার চলে যাবার কথা শুনে বুকের মধ্যে কেমন যেনো চিন চিন করে ব্যথা অনুভব করি। নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে। আসলে মন থেকে কাউকে আপন করতে চাইলে সময় লাগে না। তার ওপর সেই মানুষটা যদি
এতো ভালোবাসা দেয় তাহলে তো কথায় নেই।
এখন আমার অভ্র ভাইয়ার কথা খুব একটা মনে পরে না, মনে পরলেও সেই সময়টা আমি আর মন খারাপ করে আগের মতো ঘরে বসে থাকি না, বাহিরে গিয়ে ফুপি বা নিলয় ভাইয়া এনাদের সাথে কাটাই বা নতুন কিছু রান্না শিখি। এই জিনিসগুলো করতে গিয়ে সময় কেটে যায়, আগে মন খারাপ হলে একা একা ঘরে বসে থাকতাম এজন্য আরো বেশি খারাপ লাগতো কিন্তু এখন সেই ভুলটা করি না।
এতোক্ষন একা একা ছাঁদে বসে ছিলাম, নিলয় ভাইয়া পাশে এসে দাড়িয়ে বললো,,
-কি রে এই সন্ধ্যা বেলা ছাঁদে কেনো,মন খারাপ
-কই না তো
-উমমম বুঝতে পারছি তো
-কি বুঝতে পারছো
-বুঝতে পারছি যে আমার বউটা এতোক্ষন আমার কথাই ভাবছিলো
-না,আমি তো ঐ যে হাত দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে দিয়ে বললাম ওই পিচ্চি মেয়েটাকে দেখছিলাম,ওর বাবা বের হয়ে কোথায় যেনো গেলো আর বাচ্চাটা দৌড়ে এসে রাস্তায় বসে পরলো।আর ওর মা এসে বোঝাতে লাগলো যে তোমার বাবা একটু পরেই আসবে।
-বাহ এতোদুর থেকে এতোকিছু বুঝলি কেমনে
-আমি বুঝেছি হু
-বাহ আমার বউ দেখি খুব বোঝে
তারপর কিছুক্ষণ নিরবতা,একটু পর নিলয় ভাইয়া গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
পদ্ম ফুল
-হুমম
-আমি চলে গেলে তোর খারাপ লাগবে না
আমি কি বলবো বুঝতেছি না,নিলয় ভাইয়া স্থির চোখেঁ গাছের দিকে তাকিয়ে আছে,আর হয়তো আমার উত্তরে অপেক্ষা করছে,,
-আমি আসতে করে বললাম, লাগবে
উনি একটু হাসলো,তারপর বললো,কেনো লাগবে
-এই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই, আমিও ভাবতে লাগলাম উনি চলে গেলে আমার কেনো খারাপ লাগবে, আর ওনার চলে যাওয়ার কথা শুনেই বা এমন কেনো লাগতেছে, মনে হচ্ছে দূরে গেলে আমি হারিয়ে ফেলবো ওনাকে,, আমি যদি ভালোই না বাসি তাহলে এমন কেনো হবে।
উনি আবার জিজ্ঞেস করলেন মিস করবি আমাকে,,
থমথমে গলায় বললাম, এতোদিন একসাথে থেকেছি,খেয়েছি চলে গেলে মিস তো করবোই,একা একা এখন থাকতে হবে আমার, আমার খারাপ লাগলে কেউ আর ঘুরতে নিয়ে যাবে না, মাঝরাতে আইসক্রিম খাওয়াবে না, কাউকে জ্বালাতে পারবো না এজন্য মিস করবো
-শুধুই কি এজন্য
-আমতা আমতা করে বললাম, এছাড়া আর কি হবে, এসবের জন্যই তো মিস করবো।
এমন সময় নিলয় ভাইয়ার ফোনে একটা কল আসলো, উনি সাইডে গিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে এসে বললেন, ডেট ঠিক হয়েছে, আর সাতদিন পর যেতে হবে,
-সাতদিন পর
-হুমম
-আর কিছুদিন থাকলে তো হতো
-উনি আবারো হেসেঁ মজা করার ছলে বললেন, বউ ভালোবাসে না থেকে কি হবে
এই কথাটা শুনে নিজের কাছে নিজেকে অপ*রাধী মনে হতে লাগলো, কেনো যে বললাম থাকার কথা,
-এই চল নিচে,আজকে ঘুরতে নিয়ে যাবো এরপর হয়তো আর সময় হবে না,কবে আসবো তার ও ঠিক নেই
আমি চুপচাপ নিচে আসলাম, ভালো লাগছে না কিছু,অন্যদিন হলে ঘুরতে যেতাম না,কিন্তু উনি যে বললো আজকেই যেতে আর সময় পাবে না, আমি এই কয়দিন ওনার একটা কথারো অবাদ্ধ হবো না, যেটুকু সময় পাই ওনার কাছাকাছি থাকবো। হাতমুখ ধুয়ে একটা কালো রঙের শাড়ি বের করলাম, নিলয় ভাইয়া বাহিরে ছিলো, আমি শাড়ি বের করতেই উনি ভেতরে এসে আলমারি থেকে একটা প্যাকেট বের করে আমার হাতে দিয়ে বললো পদ্ম ফুল আজকে এই ব্যাগে রাখা সবকিছু পরবি প্লিজ। বলেই আবার বাহিরে চলে গেলো।
আমি কিছু না বলে,প্যাকেট খুলে দেখি,একটা সুরমা কালার শাড়ি, আচলটা লাল খয়েরি,একপার্শে দিয়ে অসম্ভব সুন্দর ছোট করে হাতের কাজ করা,শাড়িটা দেখেই ভালো লাগছে, আর একটা লাল খয়েরি ব্লাউজ, খয়েরি কালার দুই ডজন কাঁচের চুরি আর একজোড়া নূপুর, আমি শাড়ি চুরি পরে,চোখেঁ কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়ে মাথার চুল খোঁপা করে বেঁধে আয়নার দিকে তাকালাম, কি যেনো একটা নেই মনে হচ্ছে, ভালো করে দেখতেই মনে পরলো খোঁপায় দেওয়ার জন্য ফুল। যাই হোক নেই যখন কি করার, বিছানায় বসে নুপুরগুলো বের করেছি মাত্র তখনি নিলয় ভাইয়া দুইটা গোলাপ হাতে করে নিয়ে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো, আশেপাশে কোথাও বকুল ফুল নেই শেষে দুইটা গোলাপ নিয়ে আসলাম, আসো তোমার খোঁপায় লাগিয়ে দেই।তারপর আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে ক্লিপ দিয়ে যত্ন করে ফুলদুটো খোঁপার একপার্শে লাগিয়ে দিয়ে বললো মন্দ লাগছে না,তাকিয়ে দেখো একবার, আমি আয়নায় নিজেকে দেখতে লাগলাম, সত্যি কি আমি এতো সুন্দর নাকি ওনার হাত থেকে গোলাপদুটো পরার পর এতোটা ভালো লাগছে, আজ মনে হচ্ছে বকুলের থেকে খোঁপায় গোলাপ দিলেই বুঝি বেশি ভালো লাগে,
এরপর আমাকে বিছানায় বসিয়ে পায়ে নূপুর গুলো পরিয়ে দিলো,
-তাহলে এবির যাওয়া যাক
-হুমম
নিচে এসে ফুপিকে বলার জন্য ফুপির রুমে গেলাম,
মা একটু বাহিরে যাচ্ছি তোমার ছেলের সাথে,
ফুপি-হ্যাঁ রে মা নিলয় বলেছে, ও মা আজ কি সুন্দর লাগছে আমার মেয়েটাকে
-আমি মাথা নিচু করে ফেললাম, ফুপিকে মা না বললে রাগ করে তাই বাদ্ধ হয়ে সবসময় মা ডাকতে হয়,আর নিলয় ভাইয়া তো সেদিনের পর থেকে সবসময় আব্বুকে ফোন দিয়ে বাবা করে ডাকে, আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে জোড়ে জোড়ে বলে বাবা এইটা বাবা ওইটা।
,,
রিকশায় পাশাপাশি বসে আছি অথচ কারো মুখে কথা নেই, নিলয় ভাইয়া ফোন বের করে একসাথে ছবি তুলতেছে,আবার দেখতেছে যে ভালো হচ্ছে না ডিলেট করে আবার তুলতেছে, এক হাত আমার পেছন দিক দিয়ে আমার কোমরের পাশে রেখেছে কিন্তু ধরছে না, ব্যাপারটা প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পেরে আমি একটু চেপে বসলাম ওনার দিকে, উনি আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসেঁ বললো, আসলে চলে যাবো তো একসাথে আমাদের কোনো ছবি নেই, তোমার আলাদা ছবি আছে তাই তুলঠিলাম,
-সমস্যা নেই তুলুন,বউ এর সাথেই তো তুলবেন
উনি যেনো চমকে উঠলো আমার কথা শুনে, এই প্রথম নিজের মুখে ওনাকে বললাম আমি ওনার বউ।
ছবি তুলতে তুলতে উনি হেসেঁ উঠলেন,আমি মুগ্ধ হয়ে ওনার হাসিঁ দেখছি।
হটাৎ রাস্তার একপার্শে ব্যাগ ঘারে নিয়ে অভ্র ভাইয়াকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলাম,,