#পদ্ম_ফুলের_অভিমান(পর্ব :14#বোনার্স_পর্ব)
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম
অভ্র ভাইয়াকে দেখে উনি রিকশা দাড় করাতে বললেন, আমি যেনো এক মূহুর্তের জন্য থমকে গেছি, পুরোনো ক্ষতটা মনে পরতে লাগলো। কিন্তু একটু পর মনে হলো,
ছিহ আমি এসব কেনো ভাবছি, আমার নিলয় ভাইয়ার মতো এতো ভালো স্বামি আছে অভ্র ভাইয়ার প্রতি আর কোনো রকম আসক্তি নেই আমার যা আছে সব ঘে*ন্না।
রিকশা থামতেই নিলয় ভাইয়া নেমে আমার দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিলেন আমিও ওনার হাত ধরে নেমে আসলাম। আমি মনে মনে ভাবছি এখানে কেনো নিয়ে এসেছে আমায়। ওনার মুখ ও তো দেখতে চাই না আমি। আমাকে অবাক করে দিয়ে অভ্র ভাইয়াকে পাশ কাটিয়ে নিলয় ভাইয়া আমার হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, অভ্র ভাইয়া এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,, একটু পর নিলয় ভাইয়া আমাকে রাস্তা থেকে কিছুটা ভেতরে একটা বাগানে নিয়ে আসে, বাহিরে থেকে বোঝা না গেলেও ভেতরে অনেক মানুষ, আমি চারদিকে তাকিয়ে দেখছি এতো লাইটের ভিরে মনেই হচ্ছে না এটা রাত। একপার্শে ফুসকার দোকান দেখে নিলয় ভাইয়া বললাম,
-ওগো চলো ফুসকা খাবো,,
উনি আমার দিকে চোখঁ বড় বড় করে তাকালো, সাথে আরো এক জোড়া চোখঁ ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে, আমি ওসবে পাত্তা না দিয়ে নিলয় ভাইয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে চেয়ার এ বসে,দোকানদারকে এক প্লেট ফুসকা দিতে বললাম।
নিলয়-এক প্লেট কেনো, আমিও তো খাবো
আমি কখন বললাম আপনি খাবেন না,
-তাহলে এক প্লেট এর কথা কেনো বললে,
– উফফ এতো আন রোমান্টিক কেনো আপনি
-কিইহহ আমি আনরোমান্টিক
-তা না তো কি
তারপর বিরবির করে বললো,নিজে তো খুব রোমান্টিক,বিয়ে করা বর কে কাছে যেতে দেয় না আর আমাকে বলছে আমি নাকি আনরোমান্টিক।
-আমি মুচকি হেসেঁ ফিসফিসিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম, মনে মনে আমাকে ব*কা দেওয়া শেষ হলে এবার হা করুন।
-আমার কথা শুনে সামনে তাকাতেই আমি ওনার মুখের কাছে একটা ফুসকা ধরলাম, উনি আমার দিকে তাকিয়ে আবারো বলছে, তুমি কি সত্যি পদ্ম।
-না আমি পদ্মর আত্না, হা করুন তো
যেই কিছু বলতে যাবে ওমনি ওনার মুখে একটা ফুসকা পূরে দিলাম। একটু পর আরো একটা।
নিলয়- সব আমাকে কেনো দিচ্ছো, নিজে তো খাচ্ছোই না
আমি ঢং করে বললাম, একবারো তো খাইয়ে দিলেন না।
উনি আর কিছু নি বলে একটু হেসেঁ আমাকে খাইয়ে দিতে লাগলো।
আমার কেনো জানি আজ খুব ভালো লাগতেছে, মনে হচ্ছে হালকা লাগছে নিজেকে, এতোদিন এমন হয় নি,আজ খুব খুশি আমি। আর আমার এই খুশির সময়ের সাক্ষী এক জোড়া অতৃপ্ত চোখঁ। হয়তো তার মনটাও হাহাকার করে জ্বলছে,যেমনটা আমি এতোদিন জ্বলেছি। তাই এখন একটু হলেও নিজের কাছে ভালো লাগছে।
খাওয়া শেষে চারিদিকটা ঘুরে ঘুরে দেখে, পার্শের এক রেস্টুরেন্ট এ রাতের খাবার খেয়ে, আবার একটা রিকশা নিয়ে চলে আসলাম বাড়িতে। বাড়িতে আসতেই মনে পরলো একেকটা রাত যাবে আর নিলয় ভাইয়ার চলে যাওয়ার সময় এগোবে,আবারো সেই চিনচিন ব্যথা অনুভূত হতে লাগলো। নিলয় ভাইয়া আমাকে রেখে কোথায় যেনো গেছে।
,,
সময়টা রাত এগারোটার কাছাকাছি, আমি এসে ফ্রেশ হয়ে বেলকোনিতে দাড়িয়ে আছি। কিছুদিন বাদেই শীত নামবে, এখনকার সময়টা হালকা ঠান্ডা বাতাস বইছে সময়টা বেশ উপভোগ করছি আমি, কিন্তু মনে হচ্ছে নিলয় ভাইয়া থাকলে আরো ভালো লাগতো, কেনো জানি না উনি সাথে থাকলে সবসময় ভালো লাগে। আমি রুমে আসার কিছুক্ষণ পর উনি আসলেন ।
-কোথায় গিয়েছিলেন
-একটু কাজ ছিলো
-ওওহহ
আগে ঘুমাইও না একটু অপেক্ষা করো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। আমাকে বলে উনি ওয়াশরুমে গেলেন,
আমি তো মনে মনে ভাবছি অন্য কিছু,মনের মধ্যে অজানা একটা ভয় কাজ করছে,কি না কি ভাবে নিলয় ভাইয়া আমাকে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমি ভুল করেছি, পরে যদি নিলয় ভাইয়া আমাকে রেখে অন্যকোনো মেয়ের কাছে যায় তাহলে আমার কি হবে। উনি আমাকে যতোটা ভালোবাসে কোনোদিন যদি একটু কমে যায় বা উনি একটূ পাল্টে যায় তাহলে আমি মনে হয় বাচ*তেই পারবো না আর। যা কিছুই হোক না কেনো ওনার কোনো পরিবর্তন মেনে নিতে পারবো না আমি।
বেশ কিছুক্ষণ পর নিলয় ভাইয়া রুমে আসলেন, আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসেঁ ড্রয়ার থেকে একটা বক্স বের করে একটা স্বর্ণের হার বের করে বললেন দেখোতো পছন্দ হয় কি না।
-দেখি, অনেক সুন্দর তো, কার জন্য এটা
-তোমার, তোমাকে বিয়ের সময় বলেছিলাম হার বানিয়ে দেবো, এখন যদি না দেই তাহলে একদিন আমাকে বলবে যে দিতে চেয়ে দেই নাই
-উমম আমি জীবনেও এমন বলতাম না
তাই, আচ্ছা আসো দেখি পরিয়ে দেই,,
একটা মানুষ কতোটা ভাবলে এতোসব কিছু মনে রাখে।উনি গলায় হার বসিয়ে চুলগুলো এক হাত দিয়ে সরিয়ে দিলেন। আজ ওনার প্রতিটা স্পর্শে যেনো আলাদা আলাদা অনুভূতি হচ্ছে, মন থেকে চাইছি উনি যেনো আজ আমার কাছে থেকে ভালোবাসা চায়,আজ যে আমি ওনার কোনো কথার অবাধ্য হবো না।
আমাকে সামনে থেকে দেখে বললেন,
তোমাকে মানিয়েছে ভালো,,
-আপনার পছন্দ বরাবরি ভালো
-তাই, আচ্ছা আজকে আমার বউয়ের কি হয়েছে, আমার সব কথা এতো ভালোভাবে শুনছে
-আমি তো আগেও সব কথা শুনতাম
-সব দিনের থেকে আজকে একটু ভিন্ন লাগছে, আর আমি এটা বুঝতে পেরেছি তখন অভ্র ছিলো বলে পার্কে আমাকে খাইয়ে দিয়েছিলে
-ওনার কথা শুনে, মনে মনে বললাম অভ্র ছিলো জন্য ওখানে খাইয়েছি ঠিক আছে কিন্তু এবার রুমের মধ্যে যা হবে সেটাতে আর কারো বাহনা দিতে পারবে না।
-কি হলো কি ভাবছো , ঘুমাবে
-আমি কিছু না বলে,চোখঁ বন্ধ করে শ্বাস নিয়ে দুই হাত নিলয় ভাইয়ার মাথার পেছনে দিয়ে ওনার ওষ্ঠদ্বয় দখল করে নিলাম।
এক মিনিট পর ওনাকে ছেড়ে দিয়ে এক দৌড়ে বেলকোনিতে চলে আসলাম।
এখন নিজের কাছে লজ্জা লাগছে, এটা এটা আমি কি করলাম।এখন নিলয় ভাইয়া আমাকে বা*জে মেয়ে না ভেবে নেয়। উঁকি দিয়ে দেখি নিলয় ভাইয়া যেভাবে বসে ছিলো এখনো সেভাবেই আছে। মনে হচ্ছে ঘোর কাঁটাতে পারছে না। যাই হোক যা করেছি একদম ঠিক করেছি, আমার স্বামীকে আমি কিস করেছি এতে লজ্জা পাওয়ার কি আছে। কথাগুলো নিজে নিজে ভাবছি আর হাঁসছি।
হটাৎ বেলকোনিতে নিলয় ভাইয়া আসলো, আমি অন্যদিকে চেয়ে রইলাম, ওনার দিকে তাকাতে পারবো না আমি।
উনি এসে পেছন পার্শে জরিয়ে ধরে ঘারে থুতনি রেখে ফিসফিসিয়ে বললো,
আমার বউটা এতো বড়ো হয়ে গেছে, আজ নিজে থেকেই আমাকে,
আর কিছু বলার আগেই আমি আবারো সেই একি কাজ করে বসলাম,,
এবার আমার সাথে নিলয় ভাইয়াও তাল দিলো। বেশ কিছুক্ষণ পর উনি আমায় কোলে তুলে নিয়ে বললো,,
ঘুমন্ত পুরুষ স্বত্বাকে জাগিয়ে দিয়েছো পদ্ম ফুল, এবার বাকীটা তোমাকেই সামলাতে হবে,,
আমি কিছু না বলে ওনার বুকে মুখ লুকালাম, আজ আর নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে কোনো স্ত্রীর উচিৎ নয় এভাবে তার স্বামীকে কষ্ট দেওয়া, এতোদিন এজন্যই নিজেকে অপরাধী লাগতো,আমি কেনো আমার স্বামীকে কষ্ট দিচ্ছি, কিন্তু অতীতের জন্য তা প্রকাশ করতে পারি নি, এখন মনে হচ্ছিল নিলয় ভাইয়া চলে গেলে আমার একটা আফসোস থেকেই যাবে। যে মনুষটা সবসময় আমাকে সাপোর্ট করেছে,আমার পাশে থেকে আমার দুঃখের সময়টাকে হাসিঁখুশিতে ভরিয়ে দিয়েছে, আমি তাকে খুশি করতে পারি নি।
চলবে,,