পরাণ দিয়ে ছুঁই ২ পর্ব-১০+১১

0
278

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ১০
#Jhorna_Islam

❝ডু ইউ ওয়ান্ট ডিভোর্স? ❞

সৌন্দর্যের এই একটা বাক্য নূরের কানে মনে হয় বারবার প্রতিদ্ধনিত হচ্ছে। এমনিতেই শরীর নাড়াচাড়া করতে পারছে না তারউপর এমন বাক্য কান ঝাঝড়া করে দিয়েছে। পুরো শরীর অবশ হয়ে গেছে। মনের কোণে খারাপ লাগা কাজ করছে।মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে ঘুম ভাঙলেই সব শেষ।

কি হলো বলো? আমার কথার আনসার দাও। তুমি কি চাও বিয়ে থেকে মুক্তি পেতে চাও তুমি?

সৌন্দর্যের এইরূপ কথায় নূরের খুশি হওয়ার কথা, সেতো বিয়েটা মন থেকে মানতেই পারেনি।অসহ্য হয়ে উঠেছিলো সব তাহলে আজ কেন এতো খারাপ লাগছে? কেন মনের মাঝে চিনচিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না নূর। না চাইতেও চোখের কার্ণিশ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।

তুমি যদি ডিভোর্স চাও তাহলে শুনে রাখো,,, সৌন্দর্যের কথা বলার মাঝে নূর দুই চোখ বন্ধ করে নেয়।বার বার এই ডিভোর্স শব্দ টা শুনতে একটুও ভালো লাগছে না আর না এরপর সৌন্দর্য কি বলে তা শোনার জন্য শক্তি পাচ্ছে।

তুমি যদি ডিভোর্স চাও তাহলে শুনে রাখো আমি সৌন্দর্য ওয়াহিদ তোমাকে ডিভোর্স দিচ্ছি না।তোমাকে এই সৌন্দর্যের সাথেই সারাজীবন কাটাতে হবে, সেটা তুমি চাও বা না চাও। কানে ভালো করে ঢুকিয়ে নাও কথাটা তোমার জীবনে একটাই পুরুষ থাকবে সেটা হচ্ছি আমি।

সৌন্দর্যের কথায় নূর যেনো থমকে যায়। এতোক্ষনের দ্রুত হার্টবিট যেনো স্বাভাবিক হতে থাকে।

সৌন্দর্য নূরের চোখের পানি নিজের আঙ্গুলের ডগায় নিয়ে দূরে ছিটকে মারে।নূরের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,,,

❝ এই চোখের পানি এমন ভাবে নষ্ট করো না পরাণ।তুমি কাঁদবে চোখ দিয়ে পানিও পরবে তবে সেটা সুখের কান্না, কষ্টের জন্য না।❞

আহ্ পুরো শরীর যেনো জুরিয়ে গেলো।শীতল হাওয়া বইছে মনে হচ্ছে আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে নূর৷ এতো শান্তি লাগছে কেন? আচ্ছা সত্যি শুনছে তো নূর? পরাণ? লোকটা কি তাকে পরাণ বলে ডাকলো? নূরের মনে হচ্ছে এই জীবনে প্রথম কোনো কথা শুনলো যেটায় এতো প্রশান্তি।

সৌন্দর্য নূরের কানের কাছ থেকে মুখ সরিয়ে নূরের চোখের দিকে দৃষ্টি দেয়। নূর ও চোখ মেলে তাকায়। সৌন্দর্য নূরের মুখে ফু দেয়। নূর চোখ বন্ধ করে নেয় , তারপর ধীরে ধীরে পিটপিট করে চোখ খুলে চোখে চোখ রাখে।নূরের এসব কান্ড দেখে সৌন্দর্য মুচকি হাসে। নূর সেই টোল পরা হাসির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।এই প্রথম এতো সুন্দর অনুভূতির উপভোগ করছে নূর। হার্টবিট যেনো ঘন্টার মতো আওয়াজ তুলছে, আচ্ছা এতো জোরে জোরে লাফাচ্ছে লোকটা কি টের পাচ্ছে?

সৌন্দর্য নূরের দুই সাইড থেকে নিজের হাত গুলো সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়। নিজের ভাজ করে রাখা শার্টের হাতাটা আরেকটু টেনে ঠিক করে নেয়।চুলে হাত ঢুকিয়ে এলোমেলো চুল সেট করে নেয়। নূরের দৃষ্টি এক মুহূর্তের জন্য ও ঐ লোকটার থেকে সরছে না।লোকটার প্রতিটি কর্মকান্ড আর্ট বলে মনে হচ্ছে। নূরের সাথে এসব কি হচ্ছে নূর নিজেও বুঝতে পারছে না।

এরমধ্যে ক্যাবিনে ডাক্তার প্রবেশ করে। সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে নূরের কাছে যায়। নূর কে আরেকবার চেক-আপ করে জানায় বাড়ি নিয়ে যেতে পারবে।তবে নিজের শরীর যত্ন নিতে হবে খুব ভালো করে। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া ও টেনশন ফ্রি থাকতে হবে।

সৌন্দর্যকে রিসেশনে গিয়ে যা যা ফর্মালিটি আছে সব পূরণ করে আসতে বলে ডাক্তার চলে যায়।
ডাক্তার এসে এতকিছু বলে গেলো নূরের খেয়াল কই সেতো একজনের মাঝে আঁটকে গেছে।

আমি তোমায় বলেছিনা মিসেস ওয়াহিদ একদম আমার দিকে এমন করে তাকাবে না? আমার বউয়ের একান্ত মানুষটার উপর কারো নজর লাগুক সেটা আমি চাই না। (সৌন্দর্য)

নূর অন্য দিকে চোখ ঘুরিয়ে নেয়। চোখ মুখ কোচকে বন্ধ করে রাখে। এরমধ্যে নিজের হাতে আবার হাতের স্পর্শ পায়।

আ-আমি মোটেও আপনার দিকে অমন করে তাকিয়ে ছিলাম না। আর আ-আপনি আ-আমার হা-হাত ছাড়ুন, হাত ধরেছেন কেন?

কি সব বলছিস নূর? কি তাকাস নি আর হাত ছাড়তে কেন বলছিস তুই? (ইসরাত)

নূর সৌন্দর্যের জায়গায় ইসরাতের কন্ঠ স্বর শুনে মাথা ঘুরিয়ে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে মুখে জোর পূর্বক হাসি আনার চেষ্টা করে আমতা আমতা করে বলে,, আ-আসলে হয়েছে কি ইসু আমার মনে হয়েছে অন্য কোনো লোক ধরেছে তাই মানে ইয়ে।

হয়েছে হয়েছে তাই আর ইয়ে মানে মানে করতে হবে না। অন্য কোনো লোক নাকি নিজের বর ধরেছে ভেবেছিস তা খুব ভালো করেই জানি আমি।

নূর মনে মনে বলে,, হ্যা সব সময় একটু বেশিই জানিস। মুখে আর কিছু বলে না চুপ হয়ে যায়। এমনিতেই ভালো লাগছে না কিছু। বাড়িতে কি কেউ কিছু জানে না নাকি? কেউ তো আসলো না। এতোটাই পর করে দিয়েছে? মেয়ে অসুস্থ জেনেও আসছে না দেখতে। অভিমানে দু-চোখ আবার ও ভরে আসে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আঁটকে ইসরাত কে বলে,,,,ইসু?

হ্যা দোস্ত বল,, এখন তোর কেমন লাগছেরে? ঠিকঠাক আছে না সব? সব দোষ আমারই কেন যে তোকে নিয়ে বের হলাম, আর কেনই বা ফুচকা খেতে গেলাম ঝাল দিয়ে। আমার মাথা থেকে একদম বের হয়ে গেছে তোর সমস্যার কথা। আর তুইও কম কিসে?

—– ইসু এসব কথা রাখ। বাড়ির কাউকে যে দেখছি না?

—– আসলে তো দেখবি। কেউ তো এখানে নাই।

— নূর চুপ হয়ে যায়।

— কি দোস্ত মিউট হয়ে গেছিস কেন?
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

— আরে তোর বাড়িতে কেউ জানেনা। জানলে নিশ্চয়ই এতক্ষনে হাসপাতালে তুলকালাম কান্ড ঘটিয়ে ফেলতো আংকেল।পাগল মেয়ে না জেনে সব সময় তুই অভিমান করিস। আগে সব জেনে তারপর অভিমান করতে হয়।

নূর ইসরাতের কথা শুনে কি যেনো ভাবতে বসে।

নূরকে সৌন্দর্য বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। অবশ্য নূরের সাথে ইসরাত ও ছিলো। ইসরাত কয়েকবার সৌন্দর্য কে বাড়িতে আসার কথা বলে কিন্তু লোকটা বারবার ইসরাতের কথা এড়িয়ে গেছে। নূরদের বাড়িতে আসা নিয়ে লোকটার কি সমস্যা বুঝলো না নূর।অবশ্য নূর ঐ সময়ের পর থেকে মুখে তালা লাগিয়েছে একটা কথা ও বলেনি।

সৌন্দর্য ঔষধ গুলো বুঝিয়ে দিয়ে খুব দ্রুত চলে যায়। ইসরাত আর নূর বাড়িতে প্রবেশ করে। নূর না করে দিয়েছে এসব ঘটনা নিয়ে কোনো কিছু বলতে। এখন যখন ঠিক আছে শুধু শুধু বলে কেন টেনশনে ফেলবে।

নূরের মা নূরের চেহারা দেখে বেশ বিচলিত হয়ে গিয়েছিল। দুইজন মিলে এটাওটা বলে কাটিয়ে দেয়। সারা বিকেল নূরের সাথে থেকে সন্ধার আগে আগে বাড়ি চলে যায় ইসরাত।

””””””””””””””””””””’
রাতে তারাতাড়ি খাবার খেয়ে তারপর ঔষধ খেয়ে শুয়ে পরে নূর। শরীরের উপর একটু বেশিই অত্যাচার করে ফেলেছিল এই কয়দিন তার ফল পাচ্ছে। বিছানায় শোয়ার সাথে সাথে চোখের পাতায় ঘুম এসে ভর করে।

কিন্তু ঐযে কারো সুখ কি কারো সহ্য হয় নাকি? নূরের এতো সুন্দর ঘুমের বারোটা বাজানোর জন্য মোবাইল টা কর্কশ শব্দে বেজে ওঠে। নূর ফোন টা কেটে দেয়। আরো কয়েকবার বাজতে থাকে। নূর ততক্ষণে ঘুমিয়ে কাঁদা। মোবাইলে টুংটাং শব্দ করে চলেছে। নূর এসবের শব্দ শুনে অতিষ্ট হয়ে ঘুম টা আবার ছুটে যায়। ঘুমের মাঝেই ফোনটা হাতে নেওয়ার চেষ্টা চালায়,কিন্তু ততক্ষণে মোবাইলই একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। সারাদিন চার্জে লাগানো হয় নি।

সকালে ঘুম থেকে উঠতে ও নূরের আজ বেশ দেরি হয়ে যায়। আজ ভার্সিটি বন্ধ তাই কোনো প্যারা নেই। নূর আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৯ টা বেজে গেছে। কি মনে করে ফোনটা হাতে নেয়। ফোন হাতে নিয়ে দেখে বন্ধ হয়ে আছে। চার্জে ফোন লাগিয়ে অন করতেই স্ক্রিনে ভেসে ওঠে কল আর মেসেজের ছড়াছড়ি। সবগুলো ঐদিনের ঐ অপরিচিত নাম্বার থেকে এসেছে।

লাস্ট মেসেজ টা এমন,,,আমাকে এমন করে ইগনোর করার ফল তুমি পাবে অবুঝ বালিকা।

চলবে,,,,?

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ১১
#Jhorna_Islam

আস্তে আস্তে ঘড়ির কাটা ঘুরে চলেছে। সময় বসে নেই তার নিজ দায়িত্বে অতিবাহিত হচ্ছে। নূর মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে কিছু সময় হ্যাং হয়ে বসে ছিলো।মন বারবার বলছে কল আর মেসেজ দেওয়া লোকটা মি.সৌন্দর্য ওয়াহিদ। এসব ভাবনার মাঝেই নূরের মায়ের ডাক আসে খাবার খাওয়ার জন্য। নূর আসছি বলে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে খাবার খাওয়ার জন্য চলে যায়।

খাবার টেবিলে কাউকেই দেখতে পায় না নূর। নূরের মা রান্না ঘরে কাজ করছিল নূর ডেকে জিজ্ঞেস করলো বাকি রা সব কোথায় মা?

-‘ বাকিরা কেউ বাসায় নেই।

-‘ কোথায় গেছে?

-‘ তূর প্রাইভেটে গেছে আর তোর বাবা সেই সকাল ৬ টায় ই বেরিয়ে গেছে না খেয়ে।

-‘ এতো সকাল সকাল যে? কোনো কাজ আছে নাকি?

-‘ আমাকে কি তোর বাপ কিছু বলে? এতো কথা জিজ্ঞেস করছিস কেন? চুপচাপ খাবার রাখা আছে টেবিলে খেয়ে নে।

নূর বুঝতে পারলো পরিবেশ গরম আছে। মা তার কোনো কারণে রেগে আছে তাই আর কথা বাড়ায় না। চুপচাপ খেতে বসে।

পুরোদিন নূরের শুয়ে বসেই কেটে যায়। একদিনেই যেনো শরীর টা অনেক ভালো হয়ে গেছে। ফ্রেশ লাগছে অনেক মনটা ও শান্ত আছে। এরমধ্যে ফোনের কথা একদম মাথা থেকে বের হয়ে গেছে। ফোন যে কোথায় রেখেছে সেটা ও হয়তো মনে নেই নূরের।

*********
পরের দিন সকাল হতেই ব্যস্ত জীবন শুরু। ক্লাস টিউশন, পড়াশোনা।ইসরাত সকাল সকাল ফোন দিয়ে বলেছে যেহেতু নূরের শরীর তেমন একটা ভালো না যেনো ভার্সিটিতে না যায়। নূর বলে দিয়েছে সে একদম ঠিক আছে এবং কলেজেও যাবে। ইসরাত সৌন্দর্যের ভয় ও দেখিয়েছে এই বলে যে,আজ যদি ভার্সিটি যায় তাহলে রাগারাগি করবে।নূর তাও জানিয়ে দিয়েছে সে যাবে।

যথাসময়ে ভার্সিটিতে আসে দুজন। প্রথম ক্লাস করার পরই পিওন এসে জানায় আর ক্লাস হবে না। আর নূরকে বলে যায় প্রিন্সিপাল তাকে ডাকছে অফিস রুমে।

নূর শুকনো ঢুক গিলে ইসরাতের দিকে তাকিয়ে বলে,, কি জন্য ডাকছেরে ইসু? আমি কি কিছু ভুল করেছি?

-‘ আগে গিয়ে দেখ কি জন্য ডাকছে পরে তো বুঝতে পারবি।এখন শুধু শুধু সাত-পাঁচ ভেবে টেনশন নিয়ে কি কোনো লাভ আছে?

-‘ আমি একা কিছুতেই যাবো না তুই ও চল আমার সাথে।

-‘ আমিতো যাবোই। আমি অফিস রুমের সামনে দাঁড়াবো তুই ভিতরে গিয়ে জিজ্ঞেস করবি কেন ডেকেছে ।

-‘ এই না দোস্ত তুই ও ভিতরে যাবি আমার সাথে।

-‘ স্যার ডেকেছে তোকে আমি গিয়ে কি করবো শুনি? পরে স্যার আমাকে কিছু বললে?

-‘ কিছু হবে না চল না দোস্ত।

-‘ আচ্ছা ঠিক আছে চল।
দুইজন বর্তমানে প্রিন্সিপালের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ইসরাত এতো করে বলছে ঢুকতে নূর কিছুতেই ঢুকছে না।উল্টো ইসরাত কে ঠেলছে আগে যাওয়ার জন্য নূর পিছনে পিছনে আসবে।

এরমধ্যে ভিতর থেকে ডাক আসে কি হলো ভিতরে এসো।

ইসরাত নূরকে ঠেলে ভিতরে পাঠিয়ে দেয়।নিজে আর যায় না। প্রথম পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে বুঝলো নূরের সময় লাগবে হয়তো বের হতে তাই সাইডে চলে যায়। অনেক দিন হলো তালহা কে জ্বালানো হয় না।

নূর প্রিন্সিপালের সামনে দাঁড়িয়ে আমতা আমতা করে বলে,, জ্বি – জ্বি স্যার।

-‘ বসো।

-‘ না না স্যার আমি এমনিই ঠিক আছি আপনি বলুন কিজন্য ডেকেছেন আমাকে।

-‘ আরে বসো তুমি।
নূর একটা চেয়ারে বসে। হাতের তালু গুলো ভয়ে ঘেমে গেছে কে জানে কি বলবে স্যার। পুরো ভার্সিটিতে দুইজন স্যার কে সকলেই ভয় পায় এক প্রিন্সিপাল স্যার আরেকটা সৌন্দর্য স্যার।কিছু স্যার ম্যাডাম পর্যন্ত ভয় পায়।

-‘ তুমি আমার নাম জানো?.

স্যারের এমন কথায় নূর মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানায়, সে জানে নাম। নূরের মাথা দোলানো দেখে স্যার মুচকি হাসে।

-‘ তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে আম্মু?

-‘ জ্বি স্যার ভালো।

গুড মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করো।তোমাকে নিয়ে আমাদের পুরো ভার্সিটির অনেক আশা। আর কোনো ঝামেলা হলে আমাকে জানাবে ঠিক আছে?

নূর মাথা নাড়ায়।

আচ্ছা তবে আজ বাড়ি যাও।আর আমার কিন্তু আরেকটা পরিচয় আছে সেটা তোমাকে এখন বলবো না। সেটা না-হয় সারপ্রাইজ রইলো।

নূর স্যারের কথায় মুচকি হেসে বের হয়ে যায়। এতো সময়ের আঁটকে রাখা নিশ্বাস টা যেনো এখন নিচ্ছে।
কিন্তু নূর স্বস্তিতে নিশ্বাস নিক এটা হয়তো কেউই চায় না তাইতো আবার ও পিওনের ডাক আসে।সৌন্দর্য স্যার তাকে দেখা করতে বলেছে।পাঁচ মিনিটের মধ্যে যেনো গিয়ে দেখা করে খুব আর্জেন্ট।এই লোকটা কি শুরু করছে নূর বুঝতে পারছে না। এটা যে একটা ভার্সিটি লোকটা কি জানে না?এইদিকে ইসরাত কে ও দেখতে পাচ্ছে না কোথাও।

-‘ ঠিক আছে আপনি যান আমি আসছি।পিওন কে বলে নূর।

-‘ না না এখনই আমার সাথে নিয়ে যেতে বলেছে স্যার।আপনি আমার সাথে চলুন।

লোকটা তো বেশ অসহ্য কি বজ্জাত। নূরের খুব রাগ লাগছে তবুও কিছু করার নেই স্যার বলে কথা। চলুন বলে নূর পিওনের আগে আগেই চলতে থাকে।নূর ভুলবশত অনুমতি ছাড়াই কক্ষে ঢুকে পরে।

“বুড়ো বয়সে কি তোমাকে এখন হাতে ধরে ধরে আদব কায়দা শিখাতে হবে পরাণ ?”

মা-মানে?

মানে স্যারদের রুম বা অন্য কোথাও প্রবেশ করতে গেলে যে পার্মিশন নিয়ে ঢুকতে হয় সেটা কি জানা আছে? ব্রু কোচকে জিজ্ঞেস করে সৌন্দর্য।

নূর যেনো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। ছাত্রীদেরকে ও যে পরাণ-ফরাণ বলে ডাকা যায় না সেটা মনে হয় আপনার জানা নেই। আমার নাম ইয়ানূর নট পরাণ।

ভেরি ইমপ্রেসিভ। আমিতো এটাই চাই।

নূর সৌন্দর্যের কথা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে কি চান আপনি?

— নাথিং। যে কাজের জন্য ডেকেছি আজতো আর ক্লাস নেই তাই না?

–হুু।

— ড্রাইভার কে বলা আছে গিয়ে গাড়িতে বসো।ফাতিহার স্কুলে যাও ওকে আজ তুমি স্কুল থেকে আনবে।আমিও যেতাম বাট আনফরচোনেটলি আমার কাজ পরে গেছে।

–কিন্তু?

— সাথে ইসরাত কেও নিয়ে যেতে পারো। যাও।

–ঠিক আছে কিন্তু আমি আপনাদের বাড়িতে যাবো না।

-তোমাকে আমি আমার বাড়িতে নিয়ে ও যাবো না। এতো সহজ না আমার বাড়িতে যাওয়া। কিছু সময় ফাতিহার সাথে কাটাবে দেন ড্রাইভার তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিবে।

নূর আর ইসরাত ফাতিহার স্কুলের যেতে থাকে। নূর মনে মনে ভাবছে কেন জানি মনে হচ্ছে সৌন্দর্য তাকে কনট্রোল করছে। কিছুই ভালো লাগছে না। ফাতিহা মেয়ে টা তো কোনো দোষ করেনি। আর যাই হোক ঐ বাচ্চা মেয়েটার সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করবে না নূর। মাম্মা ডাকে মেয়েটা তাকে সেই ডাকের মান সে রাখবে। আরো নানান ধরনের ভাবনা ভাবতে ভাবতে ফাতিহার স্কুলে এসে পরে দুজন।

স্কুলে গিয়ে জানতে পারে আরো এক ক্লাস আছে তারপর ছুটি হবে। যদিও বা স্কুল চলাকালীন সময়ে কেউ ভিতরে প্রবেশ করে হাঁটাহাটি করতে পারে না সম্পূর্ণ নিষেধ।অভিভাবকদের জন্য আলাদা জায়গা আছে। কিন্তু ইসরাত যেখানে আছে সেখানে কিছুই অসম্ভব না মনে হয়। স্কুল ম্যামকে বলে স্পেশাল পার্মিশন নিয়ে নিয়েছে।

দুইজন মিলে পুরো স্কুল ঘুরে ঘুরে দেখছে। বেশ পরিপাটি ও সুন্দর পরিবেশ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে বড়লোকদের ব্যাপার স্যাপার।ঘুরতে ঘুরতে দুইজনই হাঁপিয়ে যায়।এরমধ্যে ফাঁকা একটা ক্লাস রুম দেখতে পায়। ইসরাত কিছু না বলে গিয়ে বসে পরে খুব টায়ার্ড লাগছে।ইসরাতের পিছু পিছু নূর ও গিয়ে বসে। শুধু শুধু বসে থাকতে তো আর ভালো লাগে না তাই ইসরাত ফোন বের করে। তালহা কে মেসেজ দিবে তখন লোকটা কল ও ধরেনি মেসেজ ও সিন করেনি। ফোন বের করতে গিয়ে ব্যাগ থেকে কলম বেঞ্চের নিচে পরে যায়। ইসরাত ফোনের দিকে তাকিয়েই নিচু হয়ে সেটা উঠাতে যায় কিন্তু নাগাল পায় না। কলম আনতে বেঞ্চের ভিতর ঢুকে পরে।

কলম নিয়ে উঠতে যাবে তখন আঁটকে যায় আর উঠতে পারে না। ইসরাতের স্বাস্থ্য মোটামুটি ভালো আর এসব বেঞ্চ বাচ্চাদের তাই আঁটকে যায়।

নূর এই নূর দেখ না আমি আঁটকে গেছি।

তুই ঐখানে কি করতে গেছিস?

আগে আমাকে বের কর দোস্ত।

নূর ইসরাতের হাত ধরে টান দেয় কিন্তু কিছুই লাভ হয় না।

#চলবে,,,,?