পরাণ দিয়ে ছুঁই ২ পর্ব-২৯

0
508

#পরাণ_দিয়ে_ছুঁই (২য় পরিচ্ছেদ)
#পর্বঃ২৯
#Jhorna_Islam

বাড়িতে ভালোভাবেই আয়োজন চলছে। কম সময় হলেও মোটামোটি সবকিছুই করে ফেলেছে ইসরাতের বাবা মা। হাত চালিয়ে দ্রুত কাজ করছে যেনো অতিথিদের কোনো দিক দিয়ে কোনো অসুবিধা না হয়। ইসরাত সে তো সেই যে নিজেকে ঘর বন্দি করেছে আর বের হওয়ার নাম নেই। বিয়ের তোরজোরে তারা এটাও খেয়াল করলো না হুট করে একটা প্রানবন্ত মেয়ে কেন এমন চুপ হয়ে গেলো।তারা তো ভালো সম্বন্ধ নিয়ে পরে আছে। এটা হাত ছাড়া হয়ে গেলে যেনো তারা আর পাত্র পক্ষ পাবে না। দেশে যেনো একটাই ছেলে আছে। ইসরাত বিয়ে নিয়ে একটা টু শব্দ ও মুখ দিয়ে উচ্চারণ করেনি।

নূর দেরি করে নি।সৌন্দর্যের সাথে কথা বলেই বেরিয়ে পরেছে ইসরাতদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।দেখা যাক লাস্ট মোমেন্টে কিছু করতে পারে কি না মেয়েটার জন্য। কেন যে ইসরাত এমন হয়ে গেলো নূর কিছুই বুঝতে পারছে না। তালহা স্যার মনে হয় ইসরাত কে রিজেক্ট করে দিয়েছে। এজন্য মেয়েটা এমন চুপ হয়ে গেছে। আর বিয়েতেও বাঁধা দেয় নি এটাই মনে হলো নূরের। তালহার প্রতি একটু মনক্ষুন্ন ও হলো তার। এজন্য বোধয় বলে কাউকে এতো ভালো বাসতে নেই।বিয়েতো একদিন না একদিন করতে হবেই তাহলে ইসরাত কে করলে কি এমন হতো? এমনও না যে তালহা স্যার কোথাও কমিটেড আছে আর না ইসরাত দেখতে খারাপ। ইসরাত মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরী, পড়াশোনায় ভালো আর ফ্যামিলি ব্যকগ্রাউন্ড ও ভালো তাহলে কি সমস্যা বুঝলো না। নূর হাজার ধরনের ভাবনা ভাবতে ভাবতে ইসরাতদের বাড়ির সামনে এসে পৌঁছায়। রিকশা থেকে নেমে সৌন্দর্য কে একটা মেসেজ দিয়ে জানায় পৌঁছে গেছে। ভিতরের পরিস্থিতি গিয়ে দেখছে। বাড়িতে ঢুকতেই দেখতে পেলো সকলেই ব্যস্ত এটা ওটা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। নূরের মা হাতে বড় এক থাল নিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পায় নূর কে। নূর কে দেখে বেশ খুশি হয়ে যায়।

–নূর মা তুই এসেছিস? আমি জানতাম আসবি।তুই আমার কথা ফেলতেই পারবি না। যা যা ভিতরের রুমে যা।ইসরাত ঐখানেই বসে আছে। মেয়েটার আজ এতো বড় একটা দিন তাও কেমন হয়ে বসে আছে দেখনা মা। মানলাম বিয়ে বলে মন খারাপ তাই বলে এমন ঘর বন্দি হয়ে বসে থাকবে বলতো? তুই একটু গিয়ে বোঝা।আর আজকে কিন্তু তুই ই সাজিয়ে দিবি ঠিক আছে? যা আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি দুইজনে খেয়ে নিস। কথাগুলো বলে ইসরাতের মা থামে।

— নূর হাসার চেষ্টা করে বলে,, ঠিক আছে আন্টি আমি যাই বলেই নূর ইসরাতের রুমের দিকে যায়।

ইসরাত দুই হাটু ভাজ করে বসে আছে নূর রুমে ঢুকেই দরজা আঁটকে দেয়। দরজার শব্দ শুনেও ইসরাত দেখার চেষ্টা ও করে নি কে এসেছে।

” এসবের মানে কি? নাটক শুরু করেছিস? জীবন নিয়ে খেলা করছিস?”

“ওহ নূর তুই এসেছিস? আমি বেশ খুশি হয়েছি।আমিতো ভেবেছিলাম আসবিই না। আজ আমার বিয়ে তুই কিন্তু আমায় সাজিয়ে দিবি ঠিক আছে? ”

” নাটক বন্ধ কর ইসু।এটা মশকরা করার সময় না কি হয়েছে আমায় বল।”

” হয়নি তো এখনো হবে আমার বিয়ে বলেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠে ইসরাত।”

“তুই কিন্তু আমার হাতে মা’র খাবি এবার ইসরাত।সবকিছুর একটা লিমিট আছে। নিজের জীবন টা নিয়ে কেন এভাবে খেলছিস?”

ইসরাত বিরবির করে বলে,, আমি আর কি খেলবোরে নূর জীবন ই আমাকে নিয়ে সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম খেলা খেলে দিয়েছে।

আমায় বল না দোস্ত। দেখ আমি সবকিছু ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো।এই বিয়ে নিয়ে কি তোকে বাড়ি থেকে ফোর্স করা হয়েছে বা অন্য কোনো সমস্যা হয়েছে? কি হয়েছে আমায় বল ইসু বল। তালহা স্যার কে বলেছিলি?

” কি বলবো আমি ঐ লোকটা কে? লোকটা তো আমার না অন্য কারো। বলেই ইসরাত মাথায় হাত দিয়ে বসে ডুকরে কেঁদে উঠে। ”

নূর কিছু সময় ইসরাতের দিকে তাকিয়ে তোতলাতে তোতলাতে বলে,,ম-মা-মানে? কি-কি বলছিস কি ইসু তুই? আমি কিছু বুঝতে পারছি না তুই প্লিজ আমাকে সব খুলে বল।

ইসরাত কাদতে কাদতে বলে কিছু বলার নাই। আমার ভালোবাসা অন্য কারো অন্য কাউকে ভালোবাসে সে। ইসরাত নূর কে সব খুলে বলে। কিন্তু এটা বলে না যে ঐ মেয়ে টা আর কেউ নয় তূর।

তুই কি সিউর ইসু? এমনও হতে পারে তুই ভুল দেখেছিস।

আমি কোনো ভুল দেখিনি নূর।(ইসরাত)

স্যার কি তোকে নিজের মুখে বলেছে এসব?

” নাহ্ উনার নিজের মুখে বলতে হবে কেন? আমার এতটুকু বোঝার ক্ষমতা আছে। ”

“সব সময় আমাদের চোখের দেখা ও কিন্তু সত্যি হয় না ইসরাত। মাঝে মাঝে আমরা ভুল কিছু ও দেখি।”

ইসরাত তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। এসব কথা বাদ দে নূর আমার বিয়েতে এসেছিস ইনজয় কর আর আমাকে সাজিয়ে দে।সুন্দর করে সাজাবি সবাই যেনো দেখে প্রসংসা করে বুঝলি?

ইসু এখনও সময় আছে।

–‘ হু সময় আছে তাই তারাতাড়ি সাজানো শুরু কর যেনো সুন্দর করে সাজাতে পারিস
ধীরে সুস্থে।’

নূর অনেক বলেও কিছু করতে পারলো না। মেয়ে টা ঠিক করে নিয়েছে মনে হয় নূরের কথা শুনবে না। অগত্যা নিজের বিরুদ্ধে গিয়ে ইসরাতের কথা মতো সাজাতে থাকে। মনে মনে একটা ইচ্ছে পোষণ হচ্ছে ঠাটিয়ে একটা চড় মে’রে মাথার ভূত নামানোর।

নূর ইসরাত কে সাজাচ্ছে আর বারবার ফোনের
দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু নূর কে বার বার নিরাশ হতে হচ্ছে সৌন্দর্য না কল দিচ্ছে আর না কোনো মেসেজ। অনেক সময় নিয়ে নূর সাজানো শেষ করে। ইসরাত আয়নার কাছে গিয়ে ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখছে। অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছিস নূর কিন্তু চোখের নিচটা কেমন যেনো দেখা যাচ্ছে বুঝলি?

নূর দাঁতে দাঁত চেপে বলে,, কারণ তুই কান্না করে নিজের চোখ ফুলিয়ে ফেলেছিস তাই।

ইসরাত কিছু সময়ের জন্য চুপ হয়ে যায়। তারপর নিজেকে সামলে বলে ছার না ইয়ার।আজ আমার আকদ অথচ দেখ তারাহুরোতে কাউকেই বলতে পারলাম না। এরমধ্যে বাইরে গাড়ির হর্ণের আওয়াজ কানে আসে।

ইসরাত উত্তেজিত হয়ে বলে,,নূর দেখ ওরা মনে হয় এসে পরেছে। দেখ সময়ের আগেই এসে পরেছে। অন্যদের মতো লেট করে নি।এই দেখ না আমার সব ঠিক আছে? আচ্ছা আমি যাই ওদের কে সালাম দিয়ে আসি বুঝলি?

নূরকে কিছু বলতেও দিলো না, বেরিয়ে যায় ইসরাত। এটা মাথায় আসেনি যে বরপক্ষ না ডাকার আগ পর্যন্ত ওদের সামনে যেতে নেই। নূর ও ইসরাত কে ডাকতে ডাকতে ওর পিছন পিছন যায়।

বসার ঘরে এসে দেখে সব কেমন শান্ত। ইসু তুই চল বলেই ইসরাতের কাঁধে হাত দিয়ে সামনে তাকিয়ে নূর নিজেও চুপ হয়ে যায়।

ইসরাতের মা এগিয়ে আসে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজনকে চিনতে পারলেও ওপর জনকে চিনতে পারছেন না তিনি।
“তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না বাবা”

সৌন্দর্য মুচকি হেসে কিছু বলতে নিবে তার আগেই নূর বলে,,আন্টি উনি আমার হাসবেন্ড তোমাদের জামাই।

ওহ আচ্ছা আচ্ছা বসো তোমরা বাবা আমার কি সৌভাগ্য নিজের মেয়ের স্যার,বর সবাই এসেছে। আমি অনেক খুশি হয়েছি তোমরা আসায়।এই কে কোথায় আসিস ওদের বসতে দিয়ে খাবার দে।

আন্টি এতো ব্যস্ত হতে হবে না আপনাকে। আর আমরা এতো সহজে যাচ্ছি না তাই না তালহা? ব্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে সৌন্দর্য। তালহা কি বলবে বুঝতে পারে না। এমনিতেও তার সব তালগোল পাকিয়ে আছে। একদিকে বাড়ির পরিস্থিতি আর অন্য দিকে ইসরাতের বিয়ে। সব ঝামেলা কি এক সাথেই আসতে হলো? জীবন মরনের প্রশ্ন।

আসলে হয়েছে কি আন্টি ইসরাতের সাথে তালহার খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে। ওদের একটু আলাদা কথা বলার সুযোগ দেওয়া যাবে কি? প্লিজ আন্টি না করবেন না খুব দরকারী কথা । বেশি সময় লাগবে না প্লিজ আন্টি প্লিজ প্লিজ। সৌন্দর্য ইসরাতের মা কে বলে।

ইসরাতের মা কিছুই বুঝতে পারছে না। কিসের জরুরি কথা যে আলাদা করে আজ এমন একটা দিন বলতে হবে। এক নজর ইসরাতের দিকে তাকায় মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বুকে মোচড় দেয়।বিয়ের তোরজোরে মেয়ের মত বা মেয়ের দিকে তাকানোর ও সময় পাননি তিনি। কেন জানি কোনো প্রশ্ন ছাড়াই ওদের আলাদা করে অনুমতি দিয়ে দেন তিনি। সকলেই যেনো স্বস্থির নিশ্বাস নেয়। এর মধ্যে ইসরাত কিছু বলতে নিলে নূর দাঁতে দাঁত চেপে বলে,, একদম বারাবাড়ি করবিনা চুপচাপ যা।এইদিকে সৌন্দর্য ও তালহার কানের কাছে গিয়ে বলে,,সব মিটমাট করে নে এইদিক টা আমি দেখে নিচ্ছি। এইদিক টা আমি সামলাতে পারলেও ঐ দিক টা তোকে সামলাতে হবে। বলেই চোখের ইশারায় যেতে বলে। দুইজনই যায়। ইসরাতের মা গিয়ে সোফায় বসে পরে। কেন জানি সব কিছু মনে হচ্ছে খারাপ হতে যাচ্ছিল। ভিতরটা কেমন কেমন করছে। সৌন্দর্য আর নূর দুইজন ইসরাতের মায়ের দুই পাশে বসে সব খুলে বলতে থাকে।

তালহা ইসরাতের রুমের দিকে ঢুকেই দরজা আঁটকে দেয়।
ইসরাত তালহার দিকে তাকিয়ে বলে,, একটু পরে আমার বিয়ে আর আপনি অন্যজনের বউকে নিয়ে দরজা আঁটকে কি এমন গোপন কথা বলবেন শুনি?

খবরদার ঐ মুখ দিয়ে আরেকবার অন্য জনকে বিয়ের কথা বললে তোমাকে মে’রে ফেলবো বলে দিলাম।

#চলবে,,?