#পরিণয়ে_নোলককন্যা (কপি নিষেধ)
[০২]
আজকাল সন্ধ্যে নামার মুখেই রাত নামে। এই সূর্য উঠলো, এই ডুবে গেলো। তাইতো হাতের কাজগুলো দ্রুত শেষ করে নিতে হয়৷ দুপুরের বাসি তরকারি গরম করে নিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকেছে নীহার। ঠান্ডা ভাতের সাথে গরম তরকারি এক প্লেটে মেখে নিজেও খেয়ে নিলো, আদ্রিকাকেও খাইয়ে দিলো। এই শীতের রাতে আটটা বাজতেই মা-মেয়ে দুজনে লেপের নিচে ঢুকে যায়। আজকেও খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে নীহার বিছানায় এসে বসলো৷ হাতে ধরে রাখা মোবাইলটির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সেটিকে বিছানার পাশের টেবিলের উপর রেখে দিলো৷ নীহারের দৃঢ় বিশ্বাস, আজ কিংবা কাল আদ্রতা তাকে কল করবেই। তখন যদি সে মোবাইলের আশেপাশে না থাকে তাহলে কলটি কেটে যাবে এবং আদ্রতার সাথে তার কথা হবে না। মেয়েটার সাথে কথা হয় না কতোদিন হয়ে গেলো! কথা জমে জমে নীহারের পেট ফুলে যাচ্ছে। আর কতো অপেক্ষা?
বিছানায় আধাশোয়া হয়ে শুয়ে বুক পর্যন্ত লেপ মুড়ে বই পড়ছিলো আদ্রিকা। বই তো বাহানা মাত্র৷ নিশ্চুপ বসে থাকতে দেখলে নীহার বকা দিবে বলে বই খুলে কালো অক্ষরের দিকে চেয়ে আছে। নীহার নিজের চিন্তায় বিভোর বলে সেভাবে খেয়াল করেনি। না হলো ঠিকই বুঝে পারতো, দীর্ঘ এক ঘন্টা ধরে আদ্রিকা বইয়ের একটি পাতার দিকে নিশ্চল চোখে চেয়ে আছে।
বালিশে মাথা এলিয়ে দিয়ে কাধ পর্যন্ত লেপ টেনে নিয়ে নীহার বললো,
– পড়া শেষ হলে আলো নিভিয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পরিস।
আলতো স্বরে হুম বলে সম্মতি জানালো আদ্রিকা। মায়ের ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ পাওয়া মাত্রই বই বন্ধ করে খাটে মাথা এলিয়ে চোখ বুজে রইলো৷
প্রায় মাসখানেক হতে চললো, বিস্ময়ের কোনো খবর নেই৷ সেদিনের ঘটনার পর বিস্ময়ের উপর তার কোনো অধিকারবোধ থাকে না। তবুও মন কি অধিকার বুঝে? নাহ তো। মন বুঝে অনুভূতি। যেই অনুভূতি সবসময় নিষিদ্ধ কিছুর প্রতি জন্মায়৷
এই যে অতি যত্নে সামলে রাখা তার মনটা আকৃষ্ট হলো বিস্ময়ের মতো একজন মানুষের প্রতি। মাকড়সার জালের মধ্যে বন্দী হয়ে সে মন দিলো, দেহ দিলো৷ তারপর?
তারপর সবটুকু হারিয়ে নিঃস্ব আদ্রিকা এখনো বিস্ময়ের প্রেমে মত্ত হয়ে দিন কাটাচ্ছে৷ এসব নিয়ে ভাবতে গেলে আদ্রিকার নিজের প্রতি ঘৃণা হয়। আবার কখনো নিজের প্রতি মায়া জন্মায়, করুণা জাগ্রত হয়।
কখনো কখনো একটু মন খুলে কাঁদতে ইচ্ছে করে। মনে জমে থাকা সমস্ত অভিযোগ, সকল কষ্ট গাথা কাউকে জানিয়ে হালকা হতে মন চায়। তারপর তাকে জড়িয়ে ধরে আকাশপাতাল এক করে অঝোর ধারায় কাঁদতে পারলে বোধহয় বুকের ভেতরটা একটু হালকা হতো।
আদ্রিকার মনে হয়, এমন গুমড়ে গুমড়ে সে বেশিদিন বাঁচবে না। হয় ব্রেন স্ট্রোক করবে নয়তো হার্ট অ্যাটাক হবে৷ অতিসত্বর তার কিছু একটা হয়ে যাবে। এভাবে মানুষ বাঁচে নাকি!
রোজ আদ্রিকার দিন শুরু হয় বিস্ময়ের কথা ভেবে, আবার শেষও হয়ে বিস্ময়ের ভাবনাকে কেন্দ্র করে৷
মনে পরে সেই প্রথমদিনের কথা। ভর্তির কাজে আদ্রতার সাথে কলেজে যাওয়া আসা চলছিলো প্রতিনিয়ত। পথে দেখা আদ্রতার সিনিয়র এর সাথে। পরিচয় থেকে সালাম, তারপর টুকটাক কথাবার্তা।
কলেজের নবীনবরণে আদ্রতার অনুপস্থিতিতে আদ্রিকার সামনে মানুষটা ঝড়ো হাওয়ার মতো সামনে এসে দাঁড়ালো। আদ্রিকার সামনে দাঁড়িয়ে নিঃসংকোচ আদেশ,
– আমার সাথে আয়।
সিনিয়রদের আদেশ অমান্য করলে কঠিন শাস্তি পেতে হয় সেটা আদ্রতার থেকেই জেনেছিল আদ্রিকা। তাই তো আগেপাছে কিছু না ভেবে ভীড় ঠেলে আদ্রিকা বেরিয়ে পরলো বিস্ময়ের সাথে।
সেদিন বাইকের সামনে দাঁড় করিয়ে বিস্ময় বলেছিল,
– তোর সাথে আমার জরুরি কথা আছে। কোলাহলপূর্ণ এই পরিবেশে সেসব আলোচনা হবার নয়। আমরা একটু বাইরে গিয়ে বসি?
ভীতু আদ্রিকা তখন লাউয়ের ঢগার মতো নরম। যেদিকে সূর্যের তেজীয়ান আলোকরশ্মি দেখে সেদিকে ছুটে যায়। সিনিয়র ভাইয়াটির প্রশ্নের বিপরীতে শুধু ঘাড় কাত করে সম্মতি জানিয়েছিল। সে কি জানতো নাকি যে বিস্ময়ের বাইকের পেছনে তাকে বসতে হবে? একদমই জানতো না৷
বাইকের পেছনে বসতে গিয়ে সে আরেক লজ্জাজনক পরিস্থিতি। কাঁপতে কাঁপতে মূর্ছা যাওয়ার দশা৷ বিস্ময় স্নিগ্ধ হেসে বলেছিল,
– আমার বাইকে উঠতে ভয় পাচ্ছিস? আমাদের এতোদিনের পরিচয়! তারপরেও?
দ্রুত গতিতে বারকয়েক দু দিকে মাথা দুলিয়ে চঞ্চল আদ্রিকা বলেছিল,
– নাহ, নাহ৷ তেমন কিছু না। প্রথমবার বাইকে উঠছি তো।
তারপর বিস্ময় খুব যত্ন সহকারে আদ্রিকাকে সবটা বুঝিয়ে দেয়। কোথায় পা রেখে উঠতে হবে, কোথায় ধরে বসতে হবে, কোথায় পা রাখতে হবে – সবকিছু৷
আদ্রিকার প্রথম বাইক ভ্রমন ছিলো গ্রীষ্মের কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়ার মতো। একদিকে তীব্র দাবদাহের পর শীতল বাতাসের স্বস্তি, অন্যদিকে আসন্ন প্রলয়কারী ঝড়ের আশংকায় উদ্বিগ্নতা।
আদ্রিকার খুব অস্বস্তি হচ্ছিলো। সদা তটস্থ ছিল পুরোটা রাস্তা। অবশ্য সবটুকু অস্বস্তি ফুড়ুৎ করে উড়ে গিয়েছিলো যখন বিস্ময় ওকে নিয়ে গিয়েছিলো মনতরীর চরে৷
বাড়ির কাছের মনতরীর চর৷ লোকে মুখে তার রুপের কতো বর্ণনাই না শুনেছে৷ শরৎ এর আগমনে কিশোর কিশোরীদের ঢল নামে মনতরীর চরে। কাশবনের শুভ্র কাশফুলের সাথে নানান ভঙ্গিমায় ছবি তুলতে যায় সবাই৷ আদ্রতার কাছে বেশ কয়েকবার আবদার করেও কখনো যাওয়ার সুযোগ হয়নি আদ্রিকার।
সেদিন বিনা আবদারে বিস্ময় তাকে নিয়ে গিয়েছিলো মনতরীর চরে। বাইক থামতেই আদ্রিকাকে কিছু বলে দিতে হয়নি৷ নেমেই চঞ্চলা প্রজাপতি এক ছুটে চলে গিয়েছিল মেঘের রাজ্যে।
মেঘের মতো সাদা কাশফুলগুলো নিজ হাতে ছুঁয়ে দেখছিলো, তখনি বিস্ময় ডেকে উঠে,
– আদ্রি?
হাসিমুখে আদ্রিকা সায় দেয়। পেছন ফিরে তাকায়। ওর চোখে মুখে ব্যস্ততা। শরীর জুড়ে ঝরে পরছে অধৈর্য্যশীলতা। বিস্ময়ের মাদকতাময় চাহনী আদ্রিকার চঞ্চলতা দেখে এবং উপভোগ করে। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে আদ্রিকার সামনে দাঁড়িয়ে জানায় নিজের মনের কথা।
– অনেকদিন ধরে বলি বলি করেও বলা হচ্ছে না। তোকে একলা পাওয়াই যায় না। আদ্রতা সবসময় তোর সাথেই থাকে। অবশেষে আজকে একটু সুযোগ মিললো।
আদ্রিকা চোখ বড় বড় করে কৌতুহল সহকারে তাকিয়ে আছে বিস্ময়ের দিকে৷ কি বলবে তাড়াতাড়ি বলে দিচ্ছে না কেনো? ওদিকটায় যেতে হবে তো। ওর ধৈর্য্যহীনতা দেখে বিস্ময় ঠোঁট চেপে হাসে। একটু নড়েচড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
– দেখ আদ্রি, তোকে আমি ভীষণ পছন্দ করি। প্রথম যেদিন দেখলাম, সেই তখন থেকেই ভালো লাগা শুরু। যা দিন দিন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার জন্ম নিতে খুব বেশি সময় লাগেনি৷ তাই আমিও বেশি সময় ব্যয় করতে চাই না। তোকে সরাসরি জানিয়ে দিতে চাই, আমি তোকে ভালোবাসি, আদ্রি। তোর সাথে ভালোবাসার এক সমুদ্র পাড়ি দিতে চাই। তুই কি আমাকে সেই সুযোগ দিবি?
বিস্ময় আর ডান হাতটি বাড়িয়ে প্রবল আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে ছিলো আদ্রিকার দিকে। আর আদ্রিকা? সে ক্ষণকাল হতবিহ্বল হয়ে চেয়েছিল বিস্ময়ের দিকে। তারপর লাজুক হেসে দৃষ্টি নামিয়ে মুখে রক্তিম আভা ফুটিয়ে কোনোরকমে বলেছিল,
– যাহ! কীসব বলছেন!
বিস্ময়কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পরক্ষণেই বিস্ময়ের পেছনের দিকে নির্দেশ করে লাফিয়ে উঠে উৎফুল্ল আদ্রিকা বলে,
– ওদিকে কতোগুলো কাশফুল! কত্তো বড় ওগুলো!
হতাশ বিস্ময় হাতের আঙ্গুলে মাথার চুল আঁচড়ে তাকিয়ে দেখে তার চঞ্চলা রঙিন প্রজাপতির ছোটাছুটি।
******
মেঘের ভেলার মতো রাজকীয় চলনে বহমান কুয়াশা। বৈদ্যুতিক আলোর নিচে ধোঁয়ার মতো উড়ছে যেনো। এ ধোঁয়া ছোঁয়া যায়, জমিয়ে রাখা যায়। সারারাত ধরে ধোঁয়াটে এই কুয়াশাকে নিজের পাতায় ঠাঁই দেয় বৃক্ষরাজি। জমে জমে বুক ভার হয়ে এলে তারা একসময় জল হয়ে ঝরে পরে। শুধু ঝরতে পারে না নীরব হৃদয়ের হাহাকার। ওরা জমে জমে পাহাড়ের মতো উঁচু হয়।
মাথার উপর কুয়াশার ভেলা নিয়ে প্রায় মধ্য রাতে বাড়ি ফিরলো মোকাররম। আজকের রাতটাও আড়তে কাটিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু রাত গভীর হতেই হাড় কাঁপানো শীত নামলো। দুটো কাথার নিচে গায়ের চাদরটা জড়িয়েও সেই শীতে গা কাঁপছিল ঠক ঠক। বাধ্য হয়ে আড়তের চৌকি ছেড়ে বাড়ির দিকে পা বাড়িয়েছে সে৷
সদর দরজা খোলাই ছিল। ধুপধাপ পা ফেলে নিজের ঘরে প্রবেশ করে দেখলো বিছানার উপর ভাঁজ করে রাখা রয়েছে মোটা কম্বল ও লেপ। মনে মনে খুশি হলো নিজ স্ত্রীর প্রতি৷ বাড়িতে নিজের উপস্থিতির জানান দিতে জোরালো শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো।
সারাদিনের হাড় ভাংগা পরিশ্রম শেষে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই রাজ্যের ঘুম নামে চোখের পাতায়। তবুও মস্তিষ্ক থাকে সচেতন। কখন কোন বিপদ এসে হানা দেয়, জানা নেই। পাশে কোথাও শব্দ হতেই বিছানা ছেড়ে হুড়মুড় করে উঠে বসলো নীহার।
নিকষকালো আঁধারে কিছু দেখা যাচ্ছে না৷ সে কোথায় আছে? ওটা শব্দটা কীসের ছিল?
দ্রুত ভাবতে গিয়ে মনে পরলো সে এখন মেয়েদের ঘরে। আদ্রিকার পাশে শুয়েছিল এতোক্ষণ। কিন্তু একি! আদ্রিকা কোথায়? আঁতকে উঠে দু হাতে অন্ধকারে হাতড়াতে শুরু করলো। বুকের ভেতর শব্দ হচ্ছে ধুক ধুক। গা কাঁপছে অনবরত। হাত বাড়িয়ে সুইচ চেপে বাতি জ্বালানোর কথা মাথায় আসেনি। অন্ধকারেই দু হাতে বিছানা হাতড়ে খুঁজে চলেছে মেয়েকে।
খানিকদূরে নরম তুলতুলে একটি শরীরকে স্পর্শ করার সাথে সাথে শান্ত হলো নীহার৷ নাহ, মেয়ে তার পাশেই আছে৷ অতদূরে বিছানার এককোনায় শুয়েছে কেনো মেয়েটা? এক হাতে মেয়েকে নিজের দিকে টেনে এনে বুকের সাথে জাপটে ধরে আবার শুয়ে পরলো। তখনি কানে এলো মোকাররমের কাশির শব্দ৷ তাতেই বুঝে গেলো কিছুক্ষণ আগে ওটা কীসের শব্দ ছিলো। স্বস্তির শ্বাস ফেলে নীহার আবারও পাড়ি দিলো ঘুমের রাজ্যে৷
ওপাশে মায়ের বুকে শান্ত হয়ে শুয়ে আছে আদ্রিকা। ওর সমস্ত মুখ ভিজে আছে চোখের জলে। ভাগ্যিস নীহার বাতি জ্বালায়নি৷ না হলে এই রাতের বেলায় মেয়ের চিন্তায় আবারও উদ্বিগ্ন হতো এই অবলা নারী।
মায়ের মমতাময়ী মুখটা কল্পনা করে আবারও চোখ ভিজে এলো। চোখের জল মুছবে সে উপায়ও নেই৷ একটুখানি নড়াচড়া করলে নীহার এখনি জেগে উঠবে। বাধ্য হয়ে ওভাবেই চোখের জল গড়িয়ে পরতে দিলো। শুধু মাঝেমধ্যে খুব সাবধানে নাক টানছে সে।
মায়ের কথা চিন্তা করে এখন পর্যন্ত নিজেকে ধরে রেখেছে সে। সেদিন বিস্ময়ের সাথে কথা বলার পর বেঁচে থাকার ইচ্ছাটা মরে গিয়েছিলো। পরখ ও মেঘা চলে যাওয়ার পর সে ধীর পায়ে কোনোরকমে টলতে টলতে এসেছিল প্রধান সড়ক পর্যন্ত।
ব্যস্ত রাস্তায় তখন নানান ধরনের গাড়ি ছুটে চলেছে। তাদেরই একপাশ দিয়ে আপনমনে গন্তব্যহীন হেঁটে যাচ্ছে আদ্রিকা। ঘোলাটে দৃষ্টি, ফাঁকা মস্তিষ্ক, উদ্দেশ্যহীন পদচারণা। আদ্রিকা খুব করে চাইছিলো, কোনো একটি দ্রুতগামী গাড়ি এসে সমাপ্তি ঘটিয়ে দিক তার নরক যন্ত্রণাময় জীবনের। কিন্তু ভাগ্য বুঝি ঐটুকু সময়ের জন্য সুপ্রসন্ন হয়েছিলো। গাড়িগুলো ওকে এড়িয়ে চলে গেলো। যেমনভাবে এড়িয়ে গিয়েছে বিস্ময়। ঠিক তেমনভাবেই সবাই স্বার্থপরের মতো নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে ছুটে চলেছে। অথচ ক্লান্ত, অবিশ্রান্ত আদ্রিকা পেছনের দিকে পিছিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত।
টুংটাং রিক্সার শব্দে আদ্রিকার ধ্যান ভাঙ্গলেও সে ফিরে তাকাল না। নিজের মতো মাথা নিচু করে উদ্ভ্রান্তের মতো গুটিগুটি পায়ে হেঁটে চলেছে। কিন্তু ওর শান্তি রিক্সাওয়ালার বোধহয় ঠিক পছন্দ হলো না৷ পাশ থেকে ডেকে উঠলো,
– আপা, যাইবেন?
আদ্রিকা তার ফোলা চোখের রক্তিম দৃষ্টি মেলে দেখলো রিক্সাওয়ালাকে। পঞ্চাশের ঘরের একজন বৃদ্ধ তাকে আপা ডাকছে! অন্য সময় হলে সে হেসে ফেলতো। কিন্তু এই মুহুর্তে হাসি আসছে না।
রিক্সাওয়ালাকে কোনো জবাব না দিয়ে আবারও সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করলো। কিন্তু বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালা ওর পিছু ছাড়লো না। আদ্রিকার পেছনে আসতে আসতে বললো,
– ভাড়া না হয় কম করেই দিয়েন। দুপুর পার হয়ে গেছে আপা, এখনো একটা যাত্রীও পাই নাই। চলেন আপনারে দিয়া আসি। খাবারের টাকাটা হবে তাহলে।
ওই মুহুর্তে দাঁড়িয়ে ওমন পরিস্থিতিতেও আদ্রিকার মনের মায়া জন্মালো। সে মুখে কিছু না বলে ধুপধাপ উঠে পরলো রিক্সায়৷ রিক্সাওয়ালাকে ঠিকানা জানিয়ে বাকিটা পথ নীরবে বসে রইলো। বাড়ির সামনে নেমে রিক্সাওয়ালার হাতে একশত টাকার একটা নোট দিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গিয়েছিল সেদিন।
আদ্রিকাকে দেখে বাইরের বারান্দা ছেড়ে নীহার ছুটে এলো। মেয়েকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে জানতে চাইলো,
– কোথায় গেছিলি তুই? কই ছিলি এতোক্ষণ? বাড়ি ফিরতে এতো দেরী হইলো কেন? সেই কখন থেকে পথ চেয়ে বসে আছি! আল্লাহ! ভয়ে আমার বুকের ভেতরটা জমে পাথর হয়ে গেছে৷ তোরা আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দিস না৷ সারাক্ষণ জ্বালাইস। কইছিলাম তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসবি। গোটা একটা দুপুর পার হয়ে গেলো মেয়ের খোঁজ খবর নাই। কবে একটু বুদ্ধিসুদ্ধি হবে রে তোর?
বাড়ি ফেরার পুরোটা পথ আদ্রিকা ভেবেছে, সে কীভাবে সহজ সরল উপায়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে পারবে? কিন্তু অনেক খুঁজেও সে কোনো সহজ পন্থা খুঁজে পায়নি। একমাত্র সৃষ্টিকর্তা পারে তার সৃষ্টির সহজ, স্বাভাবিক, যন্ত্রণাহীন মৃত্যু নিশ্চিত করতে। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার বাইরে মৃত্যুর সকল পন্থা কষ্টদায়ক, যন্ত্রণাদায়ক এবং বিভৎস।
তবুও আদ্রিকা নিজের সিদ্ধান্তে অটল। ছোট জীবনের এ বিশাল কষ্টের ভার সে আর বইতে পারছে না৷ তার মুক্তি চাই।
অনেক ভেবে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাড়ি ফিরে নিজের ঘরে গিয়ে গলায় দড়ি দিবে। বাড়ির এই পরিস্থিতিতে দড়ি খুঁজে বের করা একটু মুশকিল বটে। তবে হাতের কাছে একটা ওড়না ঠিক পাওয়া যাবে। আর মাথার উপরে ফ্যানটা তো রয়েছেই। ব্যাস, আর কে আটকায়?
কিন্তু বাড়ি ফিরে সে আটকে গেলো। ভীষণ ভাবে আটকে গেলো মায়ের বুকে। তার ভয়ার্ত মুখে, অশ্রুসিক্ত চোখে, ক্রন্দনরত মুখশ্রীতে, দু হাতের বাঁধনে, কাঁপতে থাকা দেহে।
সে যাত্রায় আর আদ্রিকার কষ্টের সমাপ্তি ঘটানো সম্ভব হলো না। নিজের কষ্ট ঘোচাতে গিয়ে মায়ের কষ্ট বাড়িয়ে দেওয়ার মতো স্বার্থপর সে কীভাবে হবে? তাহলে তো তার আর বিস্ময়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকলো না।
কষ্টের মাত্রা যখন আকাশ ছুঁয়ে ফেলে, মন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পরে, প্রাণপাখিটা মুক্তির আশায় অস্থিরভাবে দাপাদাপি করে বদ্ধ খাঁচায় তখন আদ্রিকার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। ছুটে যেতে চায় সকল বন্ধন, ভেঙে ফেলতে চায় সকল প্রতিজ্ঞা। অস্থির মুহুর্তগুলোতে খুব ইচ্ছে করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে। কিন্তু আদ্রিকা তা প্রতিরোধ করে শক্ত হাতে।
পার্থিব মায়া ত্যাগ করে যখনি আদ্রিকার মন তাকে প্ররোচনা দেয়, তখনি সে তাকায় নিজের মায়ের দিকে।
তার মা নীহার মজুমদার, জনম দুঃখিনী এক নারী। যার মাথার উপর বাবা-মায়ের ছায়া নেই। পাশে নেই স্বামী। শক্ত হাতে আগলে নেওয়ার মতো নেই কোনো যোগ্য সন্তান। তবুও সেই মহান রমণী দিনের পর দিন এই কণ্টকময় পৃথিবীতে টিকে আছে। দিব্যি শ্বাস নিচ্ছে পৃথিবীর কলুষিত বাতাসে। মুখে তার সর্বক্ষণ লেগে আছে প্রশান্তির হাসি। সে যদি এতোকিছু সহ্য করেও টিকে থাকতে পারে, সে যদি এতোকিছুর পরেও কখনো হতাশ না হয় তবে আদ্রিকা কীভাবে এতো তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দিবে? নাহ, সে কিছুতেই এই অবস্থায় মাকে একলা ছেড়ে যেতে পারবে না৷
আদ্রিকা জানে, ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে ওর মা এই সংসারের মাটি আঁকড়ে এতোকাল পরে ছিলো। কিন্তু দিনশেষে সে কি পেলো? দুটো মেয়ের জন্যই আজকে চরম বিপাকে পরেছে নীহার৷
দিনশেষে তাকে অথৈ দরিয়ায় ভেসে দিয়ে মেয়ে চলে গেছে নিজের সুখের সন্ধানে। একবারও কি ভেবেছে নিজের মায়ের কথা, ছোট বোনের কথা? ভাবেনি।
যদি ভাবতো, তাহলে অন্তত একবার মায়ের সাথে এই নিয়ে আলোচনা করতো। মা ওদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করে এসেছে সবসময়। তিন বন্ধুর মতো ওরা আড্ডা দিতো। নিজেদের মধ্যে কোনো গোপনীয়তা ছিলো না৷
হ্যাঁ, মানছে বিস্ময়ের ব্যাপারটি লুকিয়ে সে ভুল করেছে৷ কিন্তু আদ্রতা কেনো নিজের প্রেমের কথাটি মায়ের থেকে লুকালো? মা নিশ্চয়ই আদ্রতার প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতো এবং বাবাকে মানানোর কোনো উপায়ও বের করে ফেলতো। কিন্তু সেসব না করে আদ্রতা বেছে নিলো স্বার্থপরতার পথ।
সবাইকে ফেলে নিজে চলে গেলো সুখের সন্ধানে। ওর জন্য এখন মা-মেয়েকে নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে।
আদ্রিকার প্রিয় গাছগুলো বিক্রি করার জন্য সে তার বাবাকে ভীষণ ঘৃণা করে এবং মা’কে দুঃখ দেওয়ার জন্য, ওভাবে মাইর খাওয়ানোর জন্য আদ্রতাকেও মন থেকে ঘৃণা করতে শুরু করলো৷
এই জগতে কেউ ভালো না৷ সবাই নিজ নিজ স্বার্থে স্বার্থপর।
*****
রাতের বেলা হাসি মুখে বাড়ি ফিরলো মাহিন। ডাইনিং টেবিলে ভাত খেতে বসে গর্বের সহিত বর্ণনা করতে লাগলো নিজের কার্যকলাপ।
– বনসাইয়ের এমনিতেই যে দাম! তার উপর এক গাছে চার রকমের ফুলওয়ালা বাগানবিলাস, সাদা অপরাজিতা। এমন ইউনিক বনসাইয়ের দাম কেনো আকাশচুম্বী হবে না বলেন? আদ্রিকা বোকা হলেও গাছ সম্পর্কে ভালই জ্ঞান আছে।
পাশে দাঁড়িয়ে পরিবেশন করতে থাকা মনোয়ারা, ছেলের কথা শুনে আশ্চর্যান্বিত হলেন। বিস্ময়াভিভূত হয়ে জানতে চাইলেন,
– বনসাইগুলো আদ্রিকা তৈরি করছে?
মুখের খাবারগুলো গিলে ফেলে মাহিন বললো,
– হ্যাঁ। বাপের গুণ পাইছে৷ গাছপালা সম্পর্কে ভালোই জ্ঞান আছে। ওগুলা আজকে বিক্রি করে দিলাম। সব গাছ মিলে বারো লাখ টাকা হাতে পাইছি। চাচারে বলছি ছয় লাখের কথা।
– সেকি! হিসাব চাইলো না তোর কাছে?
– ও হিসাব আমি মিলায় দিছি। আমি যে এতো কষ্ট করে খদ্দের ম্যানেজ করে দিলাম, আমার সময়ের দাম নাই? বিয়ে ভাঙ্গার কারনে আমাদের যা অপমান হইছে তার বিনিময়ে উনি বিয়ের খরচ দিতে চেয়েছিলেন। এখন পাওনাদারের সাত লাখ টাকা উনি দিবে না? টাকা চাইতে গেলে নানান তালবাহানা দেখায়। এজন্য আমিও বুদ্ধি করে বনসাইগুলা বেঁচে দিলাম। উনার থেকে টাকাও আদায় করা হইলো, এদিকে আমারও কিছু লাভ হইলো।
– কি দরকার ছিলো বাচ্চা মেয়েটার গাছগুলা বিক্রি করার? কতো কষ্ট করে গাছগুলা বড় করছে!
– ওর নিজের বাপ বিক্রি করতে বলছে। আমিও বিক্রি করে দিছি। আমার কি দোষ? আমারে টাকা দিয়ে দিলেই হইতো।
– মোকাররম কেমন মানুষ আবার! টাকা না দিয়ে মেয়ের শখের জিনিস বিক্রি করে দিলো!
মোজাম্মেল মজুমদার এতোক্ষণ চুপ ছিলেন। স্ত্রী ও পুত্রের কথার মাঝখানে কিছু বলেননি। চুপচাপ নিজের খাবার খাচ্ছিলেন৷ কিন্তু এ পর্যায়ে আর চুপ থাকতে পারলেন না। নিজের গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
– টাকা কি গাছের পাতা? গাছ ঝাঁকি দিলেই টাকা পরে? এতো টাকা ও কই থেকে পাবে? চালের আড়ত এখন আর আগের মতো চলে না৷ লোকজন এখন বাকিতে মালপত্র কিনে। মোকাররমের জেদ, সে বাকিতে বেঁচবে না। এদিকে নার্সারির ব্যবসাও মৌসুমভিত্তিক। বর্ষাকাল ছাড়া তেমন একটা চলে না৷ এই শীতকালে কে গাছগাছালি কিনবে? সব মিলায় ওর হাতে কোনো টাকা নাই৷ বিপদের সময় গাছগুলা যদি কাজেই না লাগলো তাহলে ওগুলার পেছনে এতোদিন সময় নষ্ট করে কি লাভ?
মোজাম্মেলের কথায় মনোয়ারা একমত হতে পারলেন না। মিনমিনে বললেন,
– তাও, বাচ্চা মানুষের শখের জিনিস৷
– কীসের বাচ্চা মানুষ! দুদিন পরে ওই মেয়ের সাথে তোমার ছেলের বিয়ে। বাচ্চা বলা বন্ধ করো। যথেষ্ট বয়স হইছে ওর৷
মোজাম্মেলের ধমকে মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন মনোয়ারা। চোখের ইশারায় মাহিনকেও চুপ থাকতে বললেন৷ কিন্তু মাহিন উশখুশ করতে করতে বলেই ফেললো।
– আব্বা, বিয়ের ব্যাপারটা বাদ দিলে হয় না৷ টাকা যা খরচ হইছে, তার থেকে বেশি আদায় করে নিছি৷ এসব বিয়েশাদির কি দরকার? আদ্রিকার সাথে আমার যায় নাকি? বয়সে ও আমার থেকে অনেক ছোট৷ দুনিয়াদারি কিছুই বুঝে না। মেয়েটা অনেক সহজ সরল, বোকা টাইপের।
একটু সাহস যুগিয়ে মনোয়ারাও নিজের মতামত রাখলেন।
– নীহারের ছোট মেয়েটা একটু ভ্যাবলা টাইপের৷ ঘরের কাজকর্ম কিছুই করে না, ভীষণ অলস। রান্নাবান্না করা তো দূরের কথা, কোনোদিন রান্নাঘরে যাইতেও দেখি নাই৷ এমন মেয়েকে ছেলের বউ করে নিয়ে আসার কি দরকার? দেশে কি মেয়ের অভাব পরছে?
মোজাম্মেল মজুমদার বিরস মুখে ভাতের প্লেটে হাত ধুয়ে ফেলে চুপচাপ কিছুক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করলেন৷ তারপর শান্ত চোখে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে নিজের তেজী কন্ঠে বললেন,
– নির্বোধ মহিলামানুষ। কোথায় ছেলেকে বুঝাবে, তা বাদ দিয়ে আমাকে বুঝাইতে আসছে৷ আমার থেকে বেশি বুঝো তুমি? মা-ছেলে দুজনে আমার কথা কান খুলে শুনে রাখো৷ আদ্রিকার সাথেই মাহিনের বিয়ে হবে৷ এ ব্যাপারে আমি কারো কোনো কথা শুনবো না।
মাহিনও বাবার মতোই তেজী, একগুয়ে স্বভাবের। দমে যাওয়ার পাত্র সে নয়৷ বেয়াদবি করলো না ঠিকই কিন্তু প্রতিবাদ জানিয়ে বললো,
– আদ্রতাকে আমার পছন্দ ছিলো বলে আপনার কথা মতো বিয়েতে রাজি হইছি। কিন্তু আদ্রিকাকে আমার পছন্দ না আব্বা। এমন বোকাসোকা বউ দিয়ে সংসার হয় না। বিয়ে করায় দিয়ে আপনি কেটে পরবেন। জীবনভর ওই বউ নিয়ে তো আমারই সংসার করা লাগবে৷
ছেলের মূর্খতায় মোজাম্মেল ভারী বিরক্ত হলেন। এই বোকা ছেলেটির থেকে তার বড় ছেলে অনেকবেশি মেধাবী। বাবার এক ইশারায় সব বুঝে যায়৷ অথচ এই ছেলেকে হাতে কলমে সব বুঝিয়ে দেওয়া লাগে৷
ছেলের নির্বুদ্ধিতায় উনার রাগ করা উচিত। কিন্তু মাহিন উনার কনিষ্ঠ সন্তান৷ তাই তার প্রতি স্নেহ, ভালোবাসা সকলের থেকে বেশি অনুভব করেন। চাইলেও ছেলেকে কড়া ভাষায় ধমক দিতে পারেন না।
চেয়ারের পেছনে রাখা গামছায় হাত মুছতে মুছতে ছেলেকে বুঝালেন।
– মোকাররমের ছেলে সন্তান নাই৷ দুটোই মেয়ে৷ ওর সব সম্পত্তি ওই দুই মেয়ের নামেই হবে৷ আদ্রতাকে বিয়ে করলে মোকাররমের অর্ধেক সম্পত্তি তোমার হয়ে যেতো। সেই সাথে ভালো একটা বউ আসতো এ বাড়িতে৷ কিন্তু মেয়েটা যে এমন অসৎ পথে পা বাড়িয়েছে সেটা বুঝতে পারি নাই। একটু আচ পাইলে আরও আগেই তোমাদের বিয়েটা করায় ফেলতাম।
– আমি আপনাকে আগেই বলছিলাম আব্বা। কলেজে উঠার সময়ে বিয়েটা হয়ে গেলে এমন দিন দেখতে হইতো না।
– যা গেছে তা আর বদলানোর উপায় নাই। তাই বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকা যায় না। একটা গেলেও মোকাররমের আরেক মেয়ে আছে। আদ্রতার মতোই আদ্রিকাও বাপের সম্পত্তির অর্ধেক মালিকানা পাবে। হোক মেয়ে বোকাসোকা, আলাভোলা। মোকাররমের বাড়িটা দেখছো? রাস্তার পাশে কয়েক বিঘা জমির উপর বাড়িটা। আদ্রতা যে কাজ করছে, এরপর ওই বাড়িটার উত্তরাধিকার আদ্রিকাই পাবে৷ আদ্রিকাকে বিয়ে করে ওই বাড়িটা হাতিয়ে নেওয়া গেলে আর কিছু তোমার লাগবে না। কোটি টাকার মালিক হয়ে যাবা তুমি। এর বিনিময়ে একটা আলাভোলা বউয়ের সাথে সংসার করা কঠিন কোনো ব্যাপার না। তাছাড়া ঘরের বউ যতো বোকা হয় ততোই ভালো৷ বউ যতো কম বুঝে সংসার ততো বেশি সুখের হয়। বাকি থাকলো কাজকর্মের কথা। ওগুলা শিখায় পরায় নেওয়া যাবে। মেয়ের বয়স অল্প। কাজকর্ম শেখার দিন তো শেষ হয়ে যায় নাই। তোমার মা না হয় হাতে ধরে শিখায় দিলো। ধীরে ধীরে সব শিখে যাবে। ওসব নিয়ে চিন্তা করার দরকার নাই। আর কোনো সমস্যা আছে তোমাদের?
মন না মানলেও বাবার কূটিল পরিকল্পনার বিরুদ্ধে তার বলার কিছু নাই৷ বউ হিসেবে আদ্রিকাকে বাদ দিয়ে এই পরিকল্পনার সবকিছুই তার পছন্দ হয়েছে৷ যাই হোক, একজীবনে সব পাওয়া যায় না৷ একটা দিক না হয় কম্প্রোমাইজ করে নিলো৷ বিরসমুখে দু দিকে মাথা দুলিয়ে বললো,
– নাহ।
মনোয়ারা বললেন,
– আপনি যা ভালো বুঝেন, করেন।
টেবিল ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় মোজাম্মেল সিদ্ধান্ত নিলেন, আর দেরী করা ঠিক হবে না। ছেলের মন বিগড়ে যেতে সময় লাগবে না। যতো দ্রুত সম্ভব আদ্রিকার সাথে মাহিনের বিয়েরটা সেড়ে ফেলতে হবে৷ কালকেই যাবেন মোকাররমের সাথে কথা বলতে৷
চলবে…
লেখনীতে: অক্ষরময়ী